HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. তানভীর ও রাশেদ দুই বন্ধু। তারা দু'জনে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ছে। রাষ্ট্র, সরকার সংবিধান, নাগরিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সব বিষয়ের প্রতি তানভীরের আগ্রহ বেশি। অন্যদিকে, রাশেদ সব সময় মুদ্রাব্যবস্থা, আয়-ব্যয়, বাজেট তৈরি, সম্পদের সুষম বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। তাই কলেজে তারা পছন্দমত বিষয় নির্বাচন করে। তানভীর ও রাশেদ পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলোচনা করে লক্ষ করল বিষয় দু'টি ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য এক।
ক. রাষ্ট্র কী?
খ. শব্দগত অর্থে পৌরনীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. তানভীর ও রাশেদ কোন দু'টি বিষয়ের প্রতি আগ্রহী? তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে নির্ণয় কর।
ঘ. তানভীর ও রাশেদের মত তুমিও কি মনে কর বিষয় দুইটি ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য অভিন্ন? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. রাষ্ট্র এমন একটি রাজনৈতিক সংগঠন যার নির্দিষ্ট ভূখ-, সংগঠিত সরকার, সার্বভৌমত্ব এবং কম অথবা বিপুল জনসমষ্টি রয়েছে।

খ. শব্দগত অর্থে পৌরনীতি হলো নগররাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের আচরণ ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান।
পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ঈরারপং শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে দুটি ল্যাটিন শব্দ- Civis ও Civitas থেকে। Civis অর্থ 'নাগরিক', আর Civitas অর্থ ‘নগররাষ্ট্র’। সুতরাং উৎপত্তিগত অর্থে নগররাষ্ট্র ও নগরবাসী সম্পর্কিত রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে জ্ঞানের যে শাখা গড়ে উঠেছে তাই পৌরনীতি। সংস্কৃত ভাষায় নগরকে 'পুর' বা 'পুরী' এবং নগরের অধিবাসীদের 'পুরবাসী' বলা হয়। আর পৌর হচ্ছে 'পুর' এর বিশেষণ যার অর্থ পুর বা নগর সংক্রান্ত বিষয়। প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স, স্পার্টা ইত্যাদি ছিল এক একটি নগররাষ্ট্র। তবে বিশ্বের বর্তমান রাষ্ট্রগুলো প্রাচীন গ্রিসের 'নগররাষ্ট্রের' (City-State) মতো ছোট ও সরল নয়।

গ. উদ্দীপকের বর্ণনা অনুযায়ী, তানভীর পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রতি, আর রাশেদ অর্থনীতি বিষয়ের প্রতি আগ্রহী।
পৌরনীতি ও সুশাসন হচ্ছে সামাজিক বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে সরকারের সংগঠন ও পদ্ধতি, সংবিধান এবং নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি এটি নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে। অন্যদিকে, অর্থনীতি বা অর্থশাস্ত্র সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ, ভোগ ও ভোক্তার আচরণ এবং মানুষের অভাব ও বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সীমিত সম্পদ সম্পর্কে আলোচনা করে।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, দুই বন্ধু তানভীর ও রাশেদ একই কলেজে দুটি ভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ছে। রাষ্ট্র সরকার, সংবিধান, নাগরিক, আন্তর্জাতিক সংম্বা এগুলোর প্রতি তানভীরের আগ্রহ থাকায় সে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়টি নিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে মানুষ যেসব কাজ করে তার সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। আবার পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি বা বিষয়বস্তু কেবল সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি নাগরিকতার সাথে সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, মুদ্রা ব্যবস্থা, আয়-ব্যয়, বাজেট তৈরি, সম্পদের সুষম বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি রাশেদ বেশি আগ্রহী। এটি অর্থনীতি বিষয়টিকেই নির্দেশ করে। কেননা, অর্থনীতি নাগরিকদের অর্থ উপার্জন, অর্থ ব্যয় এবং সীমিত অর্থে কীভাবে বহুবিধ চাহিদা পূরণ করতে হয় সে সম্পর্কে জ্ঞান দান করে।

ঘ. হ্যাঁ, তানভীর ও রাশেদের মত আমিও মনে করি বিষয় দুইটি ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য অভিন্ন।
উদ্দীপকে উল্লিখিত পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি বিষয় দুটি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। উভয়ই সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। পৌরনীতি ও সুশাসনকে বলা হয় নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান, আর অর্থনীতিকে বলা হয় অর্থনীতি বিষয়ক বিজ্ঞান। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য, আচরণ, প্রত্যাশা প্রভৃতি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে। আর অর্থনীতি নাগরিকের সুবিধার্থে বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। উভয়ের লক্ষ্য নাগরিকের কল্যাণ সাধন করা।
প্রতিটি রাজনৈতিক সমস্যার যেমন অর্থনৈতিক দিক রয়েছে, তেমনি প্রতিটি অর্থনৈতিক সমস্যার রয়েছে রাজনৈতিক দিক। তাই রাজনীতিবিদদের অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং অর্থনীতিবিদদের রাজনৈতিক জ্ঞান থাকা দরকার। সমাজসেবা, সমবায়, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সম্পদের বণ্টন, উৎপাদন ইত্যাদি পৌরনীতি ও অর্থনীতি উভয় শাস্ত্রেই গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিককে অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন করে। অন্যদিকে, অর্থনীতি মানুষের জীবনে অভাব ও চাহিদার মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করে সুন্দর ও সুখী জীবনযাপনে সহায়তা করে থাকে। এভাবে এ দুটি বিষয় নাগরিক জীবনকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য কাজ করে। একটি দেশের রাজনৈতিক সংগঠনের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি সে দেশের অর্থনৈতিক সংগঠনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। আবার কোনো দেশের আর্থিক উন্নতি ও অবনতি সমানভাবে সে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলো নাগরিকের সার্বিক মঙ্গলের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসংস্থান, মজুরি, সমবায় আন্দোলন, কর-খাজনা ইত্যাদি অর্থনৈতিক কাজগুলো রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। এদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়,। পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি প্রকৃতপক্ষে গভীরভাবে পরস্পর সম্পর্কিত দুটি বিষয়। 

২. রাফি একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে সে তার বাবার কাছে পরামর্শ চাইল। তিনি তার সমত্মানকে সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জন এবং নাগরিক অধিকার ভোগ ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের জন্য নাগরিকতা সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়কে পাঠ্য হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। তখন রাফি তার বাবাকে বলল, এ বিষয়ে অনার্স পড়ার তো কোনো সুযোগ নেই। রাফির বাবা বললেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতর একটি বিষয়ে অনার্স পড়ার সুযোগ আছে।
ক. সুশাসন কী?
খ. আইনের শাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে রাফির বাবা যে বিষয়টি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তার বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। 

◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন।

খ. আইনের শাসন বলতে আইনের চোখে সবার সমান হওয়া এবং সব কিছুর ওপরে আইনের প্রাধান্যের স্বীকৃতিকে বোঝায়। আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি এবং ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবেত এটাই আইনের শাসনের বিধান। আইনের শাসন ব্যক্তির সাম্য ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।

গ. উদ্দীপকে রাফির বাবা তাকে পাঠ্য হিসেবে যে বিষয়টি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন সেটি হলো পৌরনীতি ও সুশাসন। মানুষ যেসব প্রতিষ্ঠান, অভ্যাস ও কার্যাবলি এবং চেতনার মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে পৌরনীতি ও সুশাসন সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া বিশবায়নের যুগে প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি নাগরিকদের সামনে সমস্যা ও জটিলতা বাড়ছে। তাই পৌরনীতির আলোচনার পরিধি বিসত্মৃত হচ্ছে। আগের মতো এর বিষয়বস্তু শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই, বরং নাগরিকের কল্যাণসংশ্লিষ্ট সব দিকে বিসত্মৃত হয়েছে। সুনাগরিকের গুণাবলি এবং নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য পৌরনীতি ও সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।
উদ্দীপকের রাফি একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছে। বিষয় বেছে নেওয়ার জন্য সমস্যায় পড়লে সে তার বাবার কাছে পরামর্শ চায়। রাফির বাবা তাকে সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জন এবং নাগরিক অধিকার ভোগ ও কর্তব্য পালনের জন্য নাগরিকতা সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়কে পাঠা হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেন, যা পৌরনীতি ও সুশাসনকেই ইঙ্গিত করে। এছাড়া তিনি বলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতর একটি বিষয়ে অনার্স পড়ার সুযোগ আছে, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে। রাফির বাবার আলোচ্য বিষয়গুলো অর্থাৎ নাগরিকতা সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে। তাই কোনো নাগরিক যদি সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে চায় তবে তার উচিত পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানা।

ঘ. উদ্দীপকের দু'টি বিষয় তথা পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর বক্তব্যটি যথার্থ। 'পৌরনীতি ও সুশাসন' এবং 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান' সামাজিক বিজ্ঞানের একই শাখার দু'টি অংশ। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অধিকার, কর্তব্য এবং নাগরিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করে। অপরদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিকের রাজনৈতিক সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রাষ্ট্র, সরকার, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ, নির্বাচকম-লী, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি পৌরনীতি ও সুশাসনেও আলোচিত হয়। সুতরাং, উভয়ের আলোচ্য বিষয় কার্যত এক ও অভিন্ন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাফির বাবা তাকে নাগরিকতা সংশ্লিষ্ট একটি বিষয় পাঠ্য হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি বিষয়ে অনার্স পড়ার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ, তিনি বিষয়বস্তুগত দিক থেকে বিষয় দুটির মধ্যে সম্পর্কের কথা বলেছেন। পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুগত ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। উভয় শাস্ত্রেই সাধারণ কিছু বিষয় আলোচনা করা হয়। যেমন- সংবিধান, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকার প্রশাসন, স্বাধীনতা, আইন, সাম্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। তবে পৌরনীতি ও সুশাসন অপেক্ষা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ব্যাপক এবং তার পরিসর দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্তুত, পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতা বিষয়ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিজ্ঞান। আর নাগরিক ও রাষ্ট্র একটি অবিচ্ছেদ্য ধারণা। রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান নাগরিক। নাগরিক ছাড়া রাষ্ট্র হতে পারে না। আবার রাষ্ট্র ছাড়া নাগরিকের ধারণা অর্থহীন। এ হিসেবে পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।

৩. জাহিন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। সে তার পাঠ্যবিষয় হিসেবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বেছে নিয়েছে। এর প্রথমটি রাষ্ট্রে একজন নাগরিক হিসেবে ব্যক্তির কার্যাবলি ও অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করে, আর অন্যটি শিক্ষা দেয় কীভাবে একজন নাগরিক আয় ও ব্যয়ের সঠিক জ্ঞান লাভের মাধ্যমে জীবনকে সমৃদ্ধ করবে।
ক. নাগরিকতা কী?
খ. তুমি কীভাবে একজন স্থানীয় নাগরিক?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত প্রথম বিষয়টি অধ্যয়নের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয় দুটি পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত ব্যাখ্যা করো।

◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি যে মর্যাদা ও সম্মান পায় তাকে নাগরিকা বলে।

খ. আমি স্থানীয়ভাবে রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করি এবং এর বিনিময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করি। এ সূত্রে আমি একজন স্থানীয় নাগরিক।
স্থানীয়ভাবেই ব্যক্তির নাগরিক জীবন শুরু হয়। স্থানীয় এলাকায় বসবাস করতে গিয়ে নাগরিকের সাথে কতগুলো প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নাগরিক কতগুলো সেবা গ্রহণ করে এবং এই সেবার বিনিময়ে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা নাগরিক সনদ, জন্মসনদসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করি। বিনিময়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের কর দেই।

গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত প্রথম বিষয়টি হচ্ছে পৌরনীতি ও সুশাসন। বর্তমান সময়ে এ বিষয়টি অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
পৌরনীতি ও সুশাসন হচ্ছে সেই শাস্ত্র যা নাগরিক অধিকার ও কর্তব্যের পাশাপাশি নাগরিক জীবনের সাথে যুক্ত সব প্রতিষ্ঠান ও আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করে। সুনাগরিক হিসেবে সুসংহত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন লাভ করতে হলে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রথম বিষয়টি নাগরিক হিসেবে ব্যক্তির কার্যাবলি ও অধিকার নিয়ে আলোচনা করে। বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি পৌরনীতি ও সুশাসন। এ বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে নাগরিকতার যাবতীয় দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়। অতীতে নাগরিক জীবনের সূত্রপাড়, নাগরিকতার স্বরূপ, বর্তমান যুগে নাগরিকতার ধরন, নাগরিকতা অর্জনের পদ্ধতি এবং ভবিষ্যতে নাগরিকের সম্ভাব্য আচরণ ও কার্যাবলি ইত্যাদি। বিষয় পৌরনীতি পাঠের মাধ্যমে জানা যায়। পৌরনীতি ও সুশাসন ব্যক্তিকে সুনাগরিকে পরিণত হওয়ার জন্য অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞানদান করে। একইসঙ্গে কর্তব্য পালনের মাধ্যমে অধিকার ভোগে সচেষ্ট হতে তাগিদ দেয়। এ সচেতনতার ফলে নাগরিকরা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল হয়। আদর্শ নাগরিক হতে হলে ব্যক্তির বিচক্ষণতা থাকা প্রয়োজন। পৌরনীতি পাঠের মাধ্যমে নাগরিকরা এ গুণ অর্জন করতে সক্ষম হয়। উপরের আলোচনার ভিত্তিতে একথা জোর দিয়েই বলা যায়, উত্তম। নাগরিক হয়ে আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করা অত্যাবশ্যক।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি বিষয় দুটি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। উভয়ই সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। পৌরনীতি ও সুশাসনকে বলা হয় নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। আর অর্থনীতিকে বলা হয় অর্থনীতি বিষয়ক বিজ্ঞান।
পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য, আচরণ, প্রত্যাশা প্রভৃতি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে। আর অর্থনীতি নাগরিকের কল্যাণে বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। উভয়ের লক্ষ্য নাগরিকের কল্যাণ সাধন করা।
প্রতিটি রাজনৈতিক সমস্যার যেমন অর্থনৈতিক দিক রয়েছে, তেমনি প্রতিটি অর্থনৈতিক সমস্যার রয়েছে রাজনৈতিক দিক। তাই রাজনীতিবিদদের অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং অর্থনীতিবিদদের রাজনৈতিক জ্ঞান থাকা দরকার। সমাজসেবা, সমবায়, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সম্পদের বণ্টন, উৎপাদন ইত্যাদি বিষয়গুলো পৌরনীতি ও অর্থনীতি উভয় শাস্ত্রেই গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিককে অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন করে। অন্যদিকে অর্থনীতি মানুষের জীবনের অভাব ও চাহিদার মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করে সুন্দর ও সুখী জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। এভাবে এ দুটি বিষয় নাগরিক জীবনকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য কাজ করে। একটি দেশের রাজনৈতিক সংগঠনের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি সে দেশের অর্থনৈতিক সংগঠনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। আবার কোনো দেশের আর্থিক উন্নতি ও অবনতি সমানভাবে সে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলো নাগরিকের সার্বিক মঙ্গলের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করে। সমবায় আন্দোলন, কর্মসংস্থান, মজুরি, খাজনা প্রভৃতি অর্থনৈতিক কাজগুলো রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং অর্থনীতি প্রকৃতই গভীরভাবে পরস্পর সম্পর্কিত দুটি বিষয়। 

৪. কামালের বাবা একজন সুনাগরিক। তিনি সমত্মানকে তার আদর্শে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে দুটি বিষয় অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। প্রথম বিষয়টি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার পাশাপাশি রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। আর দ্বিতীয় বিষয়টি রাষ্ট্রের অতীত ঘটনাবলির আলোকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে সহায়তা করবে।
ক. Civitas শব্দের অর্থ কী?
খ. পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয় কেন? 
গ. প্রথম বিষয়টি কীভাবে কামালকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে? ব্যাখ্যা দাও। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. Civitas শব্দের অর্থ 'নগররাষ্ট্র' (City State).

খ. নাগরিক ও নাগরিকের জীবনের সাথে যুক্ত সব বিষয় আলোচনা করে বলে পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয়। 
নাগরিক জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকার কার্যকলাপ নিয়ে পৌরনীতি অনুশীলন চালায়। নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের সাথে যুক্ত ঘটনাবলি ও কার্যকলাপ এ শাস্ত্রে আলোচিত হয়। নাগরিক জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, নৈতিক তথা সার্বিক দিকের আলোচনা পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

গ. উদ্দীপকের প্রথম বিষয়টি দ্বারা 'পৌরনীতি ও সুশাসন' কে বোঝানো হয়েছে। নাগরিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত স্থানীয়, জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানের যে শাখা আলোচনা করে তাকে পৌরনীতি বলে। পৌরনীতি নাগরিক হিসেবে মানুষের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তাদের কার্যাবলি, অভ্যাস ও আচরণকেও বিশ্লেষণ করে। আবার রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পর্যালোচনার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক হবার শিক্ষা দান করে।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, কামালের বাবা একজন সুনাগরিক। তিনি তার আদর্শে কামালকে গড়ে তোলার জন্য সুনাগরিকতা শিক্ষাদানের পাশাপাশি রাষ্ট্র সরকার, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা প্রদান ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। কেননা, পৌরনীতির মূল বিষয়বস্তু হলো সুনাগরিকতার সুষ্ঠু শিক্ষাদান করা। ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ এবং উদার রাজনীতিবিদ লর্ভ ড্রাইসের মতে, সেই ব্যক্তি সুনাগরিক যার মধ্যে বুদ্ধিমত্তা (Intelligence), আত্মসংযম (Self Control) ও বিবেক (Conscience)। একজন সুনাগরিকের চরিত্রে এ তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকার ফলে তার মধ্যে অধিকার ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে জাতীয় ও সামাজিক স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দেওয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠে। আর পৌরনীতির জ্ঞান লাভের মাধ্যমেই এসকল নাগরিক গুণ অর্জন করা সম্ভব হয়। সুতরাং, বলা যায়, সভ্য ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার যান্য একজন নাগরিকের পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করা আবশ্যক।

ঘ. পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাসের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। পৌরনীতি ও সুশাসনের সাহায্য ছাড়া ইতিহাসের পথচলা যেমন কঠিন তেমনই ইতিহাসের সাহায্য ছাড়াও পৌরনীতি ও সুশাসনের পথচলা কঠিন। ইতিহাস মানবজাতির অতীতের স্মারকলিপি, সামগ্রিক জীবন-দর্পণ। অন্যদিকে, পৌরনীতি ও সুশাসনের যে অংশ সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকারের সাথে সম্পর্কিত সেসব ক্ষেত্রে ইতিহাসের সাথে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। এছাড়া এ দুটি শাঘ্রই পরস্পর পরস্পরকে পূর্ণতা প্রদান করেছে। ইতিহাসের তথ্য দ্বারা পৌরনীতি যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে ঠিক তেমনি পৌরনীতির জ্ঞান দ্বারা ইতিহাসও সঞ্জীবিত হয়েছে। একইসাথে পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয়সমূহ যেমন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃতি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে কীরূপ ছিল, কীভাবে তা বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপে পরিগ্রহ করেছে ইতিহাস পাঠ করলে তা জানা যায়। এমনকি ঐতিহাসিক তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা অসম্পূর্ণ, আবার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচিত না হলে ইতিহাসের আলোচনাও নিরর্থক হয়ে পড়ে।
ইতিহাস যেমন পৌরনীতি ও সুশাসনকে তার অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান দেয়, তেমনি পৌরনীতি ও সুশাসন ইতিহাসের আলোচনাকে পরিপূর্ণতা দান করে। পৌরনীতি ও সুশাসন ছাড়া ইতিহাস পাঠ সার্থক হতে পারে না। পৌরনীতি ও সুশাসনের তথ্যগুলো পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ওপর আলোকপাত করে এবং ইতিহাসের স্বরূপ উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়সমূহের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যায়, ইতিহাস এবং পৌরনীতি ও সুশাসন পরস্পর পরিপূরক ও সহায়ক। উভয় শাস্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ওপর।

৫. একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী নায়লা বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত তার বান্ধবীকে বলছিল, দেশের উন্নতি করতে হলে আমাদের এমন কিছু গুণাবলি অর্জন করা প্রয়োজন, যা একটি বিশেষ বিষয় অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি।
ক. ‘Natus’ শব্দের অর্থ কী? 
খ. জাতি বলতে কী বোঝায়?
গ. নায়লা যে গুণাবলি অর্জনের কথা বলছিল সেগুলোর বর্ণনা দাও। 
ঘ. উক্ত গুণাবলি রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে আবশ্যক- বিশ্লেষণ করো।

◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. Natus একটি ল্যাটিন শ। যার অর্থ জন্ম।

খ. রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত সমাজকে জাতি বলে। জাতি বলতে আমরা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ সেই জনসমাজকে বুঝি যারা একটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে বসবাস করে, যাদের মধ্যে বংশ, ধর্ম, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যগত এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঐক্য বিদ্যমান। এসব ক্ষেত্রে ঐক্যের সূত্রে তারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে নিজেদের আলাদা ভাবে। পাশাপাশি তারা স্বাতমত্ম্র্য বজায় রাখতে সংঘবদ্ধ হয়। ওই জনগোষ্ঠী প্রয়োজনে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত থাকে। উদাহরণস্বরূপ- বাঙালি জাতি, জার্মান জাতি, ইংরেজ জাতির কথা বলা যায়।

গ. নায়লা সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জনের কথা বলেছে। সুনাগরিক একটি জাতির গৌরব। সমাজ জীবনের কল্যাণ ও রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য সুনাগরিক একান্ত অপরিহার্য। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অপরিহার্য গুণাবলি যে নাগরিকের মধ্যে আছে তাকেই সুনাগরিক বলা হয়। অনেকেই তাই অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন নাগরিককে সুনাগরিক বলে অভিহিত করেন। উদ্দীপকের নায়লাও এসকল গুণাবলির প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, নায়লা তার বান্ধবীকে দেশের উন্নতি করার জন্য কিছু গুণাবলি অর্জন করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছিল। সে মূলত একজন সুনাগরিকের গুণাবলির কথা বলছিল। বুদ্ধি সুনাগরিকের অন্যতম একটি গুণ। আধুনিক রাষ্ট্রের জটিল সমস্যাবলি অনুধাবন করে। তার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বুদ্ধিমান নাগরিক অবশ্যই অপরিহার্য। আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকারের সফলতা নির্ভর করে নাগরিকের বুদ্ধিমত্তার উপর। আত্মসংযম সুনাগরিকের একটি বড় গুণ। এই মহৎ গুণ নাগরিককে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দেয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। আবার সুনাগরিকের জাগ্রত আত্মশক্তি হলো তার বিবেক। বিবেক একজন পথ প্রদর্শকের ন্যায় ব্যক্তির জীবনকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে। বিবেক ব্যক্তিকে একজন আদর্শ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। এছাড়াও একজন সুনাগরিকের দায়িত্ববোধ, অধিকার সচেতনতা, রাজনৈতিক সচেতনতা, দেশপ্রেম প্রভৃতি গুণাবলি থাকা প্রয়োজন। আর নায়লাও নাগরিকের এ গুণাবলির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নায়লা সুনাগরিকের কিছু গুণাবলি অর্জনের কথা বলেছে যা রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে আবশ্যক।
সুসভ্য ও সুনাগরিক প্রতিটি রাষ্ট্রেরই কাম্য। একজন সুনাগরিক বুদ্ধিমান, আত্মসংযমী বিবেকবান ও নিষ্ঠাবান। তার মাঝে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে সামাজিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠে। সুনাগরিকের অন্তরে গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, সংকীর্ণতা, কুসংস্কার, পরশ্রীকাতরতা প্রভৃতি থাকে না। তার দৃষ্টিভঙ্গি হয় উদার ও প্রসারিত। এদের মধ্যে অধিকারবোধ এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কতর্ববোধ্য জাগ্রত থাকে। অধিকারবোধ নাগরিককে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। এছাড়া, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নাগরিকের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে এবং কর্তব্য পালনে আগ্রহী করে তোলে।
রাজনৈতিক চেতনা নাগরিককে রাজনীতি সচেতন করে তোলে যা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্র গঠনে ভূমিকা পালন করে। দেশপ্রেম নাগরিকদের একটি অন্যতম গুণ। এর ফলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একজন নাগরিক প্রয়োজনে জীবন দান করতেও কুণ্ঠিত হয় না।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উক্ত গুণাবলি নাগরিকদের মাঝে যে চেতনার সৃষ্টি করে তা রাষ্ট্রের জন্য সুফল বয়ে আনে। সুতরাং উক্ত গুণাবলি রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে আবশ্যক।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৬. একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আনিকা পাঠ্যবিষয় হিসেবে পৌরনীতির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত একটি বিষয় নিয়েছে। সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে মানুষের অসীম অভাব দূর করা যায় বিষয়টি সেই শিক্ষা দিয়ে থাকে। সম্পদ, উৎপাদন, বণ্টন ব্যবস্থা, বাজেট প্রভৃতি নিয়ে বিষয়টি আলোচনা করে। বস্তুত এ বিষয়ের জ্ঞান ছাড়া নাগরিকদের কল্যাণ সাধন করা কঠিন।
ক. পৌরনীতি কী?
খ. পৌরনীতির সাথে ইতিহাসের দুটি সম্পর্ক লেখো।
গ. আনিকা পাঠ্যবিষয় হিসেবে পৌরনীতির সাথে যে বিষয়টি নিয়েছে তার উপযোগিতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আনিকার পক্ষে কি সুনাগরিক হওয়া সম্ভব? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. পৌরনীতি হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা নাগরিকতার সাথে সম্পর্কিত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

খ. পৌরনীতি ও সুশাসন হচ্ছে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান, আর ইতিহাস হলো মানবজাতির সামগ্রিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। তাই এ দুই বিষয়ের সম্পর্ক নিবিড়। পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাসের দুটি সম্পর্ক নিচে দেওয়া হলো-
১. পৌরনীতি ও সুশাসনে আলোচিত বিষয়সমূহ যেমন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃতি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ অতীতে কেমন ছিল, কীভাবে তা বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে ইতিহাস পাঠ করলে তা জানা যায়।
২. ঐতিহাসিক তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকে। তেমনি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচিত না হলে ইতিহাসের আলোচনাও খন্ডেত ও অনেকাংশে নিরর্থক।

গ. আলোচ্য উদ্দীপকে আনিকা পাঠাবিষয় হিসেবে পৌরনীতির সাথে গভীর সম্পর্কিত অর্থনীতি বিষয়টি গ্রহণ করেছে। কেননা অর্থনীতি সম্পদ, উৎপাদন, বণ্টনব্যবস্থা, বাজেট এবং সর্বোপরি সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়ে মানবকল্যাণের তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে।
প্ৰকৃত বাস্তবতায় অর্থনৈতিক কল্যাণ ব্যতীত কোনো ধরনের নাগরিক কল্যাণ সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে বহুমুখী অভাবের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এসব অভাব পূরণের সম্পদ সীমিত। সীমিত সম্পদ দিয়ে কীভাবে অসীম অভাবের মধ্যে প্রয়োজনীয় অভাবগুলোকে পূরণ করা যায় তা অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমে জানা যায়। আবার যেহেতু মানুষের অসীম অভাবের তুলনায় সম্পদ সীমিত, তাই এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার আবশ্যক। অর্থনীতি সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের শিক্ষা প্রদান করে। তাছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একজন রাজনীতিবিদের অর্থনীতির জ্ঞান থাকাও আবশ্যক। আর অর্থনীতি পাঠে মানুষের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ ও সুনাগরিকের গুণাবলি বিকশিত হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসনের পাশাপাশি অর্থনীতি পাঠ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও কার্যকর।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের আনিকার পক্ষে সুনাগরিক হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।
রাষ্ট্রের সব নাগরিক সুনাগরিক নয়। যে বুদ্ধিমান, বিবেকবান ও আত্মসংযমী কেবল তাকেই সুনাগরিক বলা যায়। এসব গুণের অধিকারী ব্যক্তি রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকে, আইন মান্য করে, যথাসময়ে কর দেয়, নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়, নিজের স্বার্থের আগে রাষ্ট্রের মঙ্গল ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করে।
উদ্দীপকের আনিকা পাঠ্যবিষয় হিসেবে পৌরনীতির সাথে অর্থনীতি নিয়েছে। এ দুটি বিষয়ের জ্ঞানই তাকে সুনাগরিক হতে সাহায্য করবে। উভয় বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে আমরা এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা পাব। 
প্রথমত: পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিক হিসেবে মানুষের দায়িত্ব, কর্তব্য ও আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, সীমিত সম্পদ দিয়ে কীভাবে মানুষ ও রাষ্ট্রের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করা যায়, অর্থনীতি তা নিয়ে আলোচনা করে। মূলত নাগরিকই উভয় শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়। 
দ্বিতীয়ত: দেশের শাসনকার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে শুধু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজ নয়, বরং অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক, যেমন- উৎপাদন, বণ্টন, বিনিময়, বাজেট প্রণয়ন ইত্যাদির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারা যদি জাতীয় চরিত্র ও নাগরিক আচরণের প্রতি লক্ষ না রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন, তবে তা ফলপ্রসূ হবে না। তাই পৌরনীতি ও অর্থনীতি উভয় শাস্ত্রের শিক্ষা সুনাগরিক ও সফল নেতৃত্ব গঠনে সমান্তরালভাবে ভূমিকা রাখে।
তৃতীয়ত: সীমিত সম্পদ দিয়ে সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাজনীতিবিদদের অর্থনীতির জ্ঞান প্রয়োজন। আবার সফলভাবে প্রশাসন পরিচালনা ও নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করতে অর্থনীতিবিদদের পৌরনীতির জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
ওপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, আনিকা পৌরনীতির পাশাপাশি অর্থনীতির পাঠ নিয়ে উল্লিখিত গুণগুলো আয়ত ও বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করলে অবশ্যই সুনাগরিক হতে পারবে।

৭. একাদশ শ্রেণির পাঠ্য বিষয়গুলোর মধ্যে প্রতীকের ভাল লাগে রাষ্ট্র, সরকার, নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা। ক্লাসের শিক্ষক যখন সুন্দর করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলি নিয়ে আলোচনা করে তখন সে ভাবে ভবিষ্যতে সে পৌরনীতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে রাজনীতি বিশ্লেষক হবে।
ক. 'সিভিটাস' শব্দের অর্থ কী? 
খ. স্বজনপ্রীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে প্রতীকের ভাল লাগার বিষয়গুলো। কর। 
ঘ. রাজনীতি বিশ্লেষক হওয়ার জন্য পৌরনীতি পাঠ করা প্রয়োজন কেন? বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর

◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. ‘সিভিটাস' শব্দের অর্থ নগররাষ্ট্র (City State)।

খ. স্বজনপ্রীতির সাধারণ অর্থ হলো আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠজনের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসনে এ বিষয়টি এক ধরনের দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে প্রচলিত নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে এবং যোগ্য লোককে বঞ্চিত করে নিজের আত্মীয়-স্বজন বা ঘনিষ্ঠদের সুযোগ-সুবিধা দিলে তাকে স্বজনপ্রীতি (Nepotism) বলা হয়। যেমন- সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাধারণত উচ্চপদের কর্তারা অনেক সময় স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অদক্ষ ও অযোগ্য লোক নিযুক্তি পায়। অন্যদিকে যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী ব্যক্তিদের সেবা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয়।

গ. উদ্দীপকের প্রতীকের ভাল লাগার বিষয়গুলো হলো রাষ্ট্র, সরকার ও নেতৃত্ব।
রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের মানুষ কোনো না কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করে। প্রতিটি রাষ্ট্রেরই নির্দিষ্ট ভূখ- ও জনসংখ্যা রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আরও রয়েছে সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব। এ চারটি উপাদানের সমন্বয়েই রাষ্ট্র গঠিত হয়। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অধ্যাপক গার্নার বলেন, সুনির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী, সুসংগঠিত সরকারের প্রতি স্বভাবজাতভাবে আনুগত্যশীল, বহিঃশত্রুর নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত, স্বাধীন জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সরকার গঠিত হয় তিনটি বিভাগ নিয়ে। যথা- আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ। রাষ্ট্র ও সরকারের পাশাপাশি প্রতীকের ভালো লাগার অন্য আরেকটি বিষয় হলো নেতৃত্ব।

ঘ. রাজনীতি বিশ্লেষক হওয়ার জন্য পৌরনীতি পাঠ করা প্রয়োজন। 
একজন রাজনীতি বিশ্লেষককে রাষ্ট্র ও সরকারের নানাদিক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হয়। আর পৌরনীতি রাষ্ট্র ও সরকারের এসব দিক যেমন রাষ্ট্রের উৎপত্তি, বিকাশ, রাষ্ট্রীয় সংঠনের গঠন কাঠামো, রাষ্ট্রের কার্যাবলি, সরকার, এর শ্রেণিবিভাগ, সরকারের বিভিন্ন রূপ, বৈশিষ্ট্য, প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। পৌরনীতি পাঠে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের গঠনপ্রণালি, ক্ষমতা ও কার্যাবলি, রাজনৈতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা, নির্বাচনব্যবস্থা। নির্বাচকম-লী, জনমত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে বিশদজ্ঞান লাভ করা যায়, যা একজন রাজনীতি বিশ্লেষকের জন্য খুবই প্রয়োজন।
রাজনৈতিক উন্নয়নের (Political Development) ধারণা থেকেই উন্নত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। আর এই রাজনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে, পৌরনীতি। উন্নয়নের ধারা ও পদ্ধতি-কৌশল সম্পর্কে পৌরনীতি সবিসত্মারে আলোচনা করে। আর রাজনীতি বিশ্লেষক হিসেবে উন্নয়নের ধারা ও পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ অপরিহার্য। একজন রাজনীতি বিশ্লেষকের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, সুশাসন, নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে হয়। পৌরনীতি পাঠের মাধ্যমে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। সুশাসন কী এবং কীভাবে সুশাসন নিশ্চিত করা যায়- এ সম্পর্কে পৌরনীতি অধিকার গুরুত্বারোপ করে থাকে। এছাড়া অতীতে বিভিন্ন রাষ্ট্রে নাগরিক জীবনের ধরনা কেমন ছিল, বর্তমানে কীরূপ পরিগ্রহ করেছে এবং অতীত সও বর্তমানের আলোকে নাগরিকের ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কেও পৌরনীতি সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়।
উল্লিখিত কারণে রাজনীতি বিশ্লেষক হওয়ার জন্য পৌরনীতি পাঠ করা প্রয়োজন।

৮. শাহানা বেগম গত সংসদ নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেছেন। তিনি তার সমত্মানদের এবং পাড়াপড়শীদের ভোটদানে আগ্রহী করে তুলেছেন। অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত শাহানা বেগম দেশ ও জাতির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত আছেন। সেই কারণে শাহানা বেগমকে একজন সুনাগরিক হিসাবে গণ্য করা যায়।
ক. ল্যাটিন শব্দ ঈরারং এর অর্থ কী?
খ. পৌরনীতির সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক কেমন?
গ. উদ্দীপকে শাহানা বেগমকে অধিকার ও কর্তব্য সচেতন করার পেছনে কোন বিষয়ের পাঠ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সুনাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সচেতন করার ক্ষেত্রে যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তার পরিধি বিশ্লেষণ করো।

◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. ল্যাটিন শব্দ ঈরারং এর অর্থ নাগরিক।

খ. পৌরনীতি ও অর্থনীতি দুটি স্বতন্ত্র বিষয় হলেও এদের বিচ্ছিন্ন করে দেখার অবকাশ নেই।
কারণ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকারের রূপ অর্থনৈতিকব্যবস্থার দ্বারা নির্ণয় করা হচ্ছে। ব্যক্তিস্বাতমত্ম্র্যবাদ, পুঁজিবাপ, সমাজবাদ ও মিশ্র অর্থনীতির মাধ্যমে পুঁজিবাদী সমাজবাদী ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। দেশের আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা ও অবস্থান, শিল্প, বাণিজ্য, উৎপাদন, বণ্টন ও ভূমি ব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এভাবেই পৌরনীতি ও অর্থনীতি পরস্পর সম্পর্কিত।

গ. উদ্দীপকে শাহানা বেগমকে অধিকার ও কর্তব্য সচেতন করার পেছনে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের পাঠ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। 
মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য কিছু কিছু সুযোগ-সুবিধা বা অধিকার একান্ত প্রয়োজন। পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের ফলে নাগরিকগণ তাদের এসব সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সম্পর্কে অবহিত ও সচেতন হতে পারে। আবার অধিকারের ধারণার মধ্যেই কর্তবের ধারণা নিহিত থাকে। প্রত্যেক নাগরিককে তার কর্তব্য কী কী, কেন কর্তব্য পালন করতে হয়, অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক কী এসব সম্পর্কে জানতে হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং ব্যক্তিকে অধিকার উপভোগের পাশাপাশি কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে। উদ্দীপকের লক্ষ করা যায়, শাহানা বেগম গত সংসদ নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেছেন। তিনি তার সমত্মানদের এবং পাড়াপড়শীদের ভোটদানে আগ্রহী করে তুলেছেন। অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত শাহানা বেগম দেশ ও জাতির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও প্রস্তুত আছেন। যেহেতু পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করে নাগরিককে সুনাগরিকতার শিক্ষা দান করে সেহেতু বলা যায় উদ্দীপকে শাহানা বেগমকে অধিকার ও কর্তব্য সচেতন করার পেছনে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের পাঠ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

ঘ. উদ্দীপকে সুনাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সচেতন করার ক্ষেত্রে যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তাহলো 'পৌরনীতি ও সুশাসন, যার পরিধি ব্যাপক।
পৌরনীতি ও সুশাসন হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। তবে ব্যক্তির নাগরিকজীবন ছাড়াও রয়েছে সমাজজীবন। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে কেবল রাষ্ট্রের সদস্যই নয় বরং একই সাথে বহু সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য। এজন্য পৌরনীতি ও সুশাসন সমাজজীবনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়ে আলোচনা করে। পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য। অধিকার কর্তব্য এবং অধিকার ভোগ করতে হলে কী কী কর্তব্য পালন করতে হয় তা পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে জানা যায়। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতার সাথে সম্পর্কিত স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ, জাতীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। পৌরনীতি ও সুশাসন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়েও আলোচনা করে। রাষ্ট্র, সরকার নির্বাচন, রাজনৈতিক দল, জনমত প্রভৃতি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহও পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয়।
এছাড়া পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতার বর্তমান নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা করে। অতীতকালে নাগরিকতা কীভাবে নির্ণয় করা হতো, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য কেমন ছিল এবং বর্তমানে নাগরিকের মর্যাদা কীরূপ তার ওপর ভিত্তি করে পৌরনীতি ও সুশাসন ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের ইঙ্গিত দান করে পরিশেষে বলা যায়, পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি বা বিষয়বস্তু কেবল সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, আরও বহুবিধ বিষয় এ শাস্ত্রে আলোচিত হয়। তাই এ বিষয়ের পরিধি ব্যাপক ও বিসত্মৃত।

৯. জহিরের চাচা সুইজারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘ বহু বছর পর দেশে ফিরে এসে এখানাকার নিয়ম-কানুন মানতে তার খুব অসুবিধা মনে হয়। তাই পদে পদে তার সমস্যা হচ্ছে। 
ক. সুশাসন কী?
খ. স্বচ্ছতা বলতে কী বুঝ? 
গ. পৌরনীতি ও ইতিহাসের সম্পর্ক কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বর্তমানে পৌরনীতি স্থানীয়, জাতীয় বিষয় পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিসত্মৃতি লাভ করেছে। উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো। 

◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শাসনকাজ পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন।

খ. স্বচ্ছতা হলো এমন একটি বিমূর্ত ধারণা যা দ্বারা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে যে, কোনো কর্মকা- কতটুকু নীতিসলত বা বৈধ। এককথায় স্বচ্ছতা হলো সুস্পষ্টতা। এটি সুশাসনের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সরকারি কর্মকান্ডর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর সুশাসন নির্ভর করে। তাই স্বচ্ছতা তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন সরকার তাদের কর্মকা-, নীতিমালা ও সিদ্ধান্ত জনগণকে অবহিত করতে পারবে।

গ. পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। উভয়ের সম্পর্কও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নিম্নে পৌরনীতি ও ইতিহাসের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হলো পৌরনীতির জ্ঞান ছাড়া ইতিহাস যেমন অর্থহীন তেমনি ইতিহাসের তথ্য ছাড়া পৌরনীতির আলোচনাও অর্থহীন। এ কারণেই জন সিনী বলেছেন, পৌরনীতি ব্যতীত ইতহাস মূল্যহীন, আর ইতিহাস ব্যতীত পৌরনীতি ভিত্তিহীন।
ইতিহাস অতীতের ঘটনাবলি, আন্দোলন, বিপ্লব সম্পর্কে আলোচনা করে এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিবর্তন ও তত্ত্বসমূহ আলোচনা করে। আর যখন বিভিন্ন ঘটনাবলি ও ধারণাসমূহ পৌরনীতিতে আলোচনা করা হয়, তখন তাদের ঐতিহাসিক বিকাশ ধারাও বিবেচনা করতে হয়। এ কারণে বলা হয় ইতিহাস পৌরনীতির গবেষণাগার। নাগরিকের অতীতের ঘটনাবলি যেমন বর্তমানে ইতিহাস, তেমনি বর্তমানের ঘটনাবলিও ভবিষ্যতে ইতিহাসে পরিণত হবে। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রভৃতি কোন আর্থ-সামাজিক পরিবেশে সংঘটিত হয়েছে, ইতিহাস তা জানতে সাহায্য করে।
পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। ঐতিহাসিক তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ ব্যতীত পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনা সম্পূর্ণ হয় না। তেমনি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচিত না হলে ইতিহাসের আলোচনা নিরর্থক হয়ে পড়ে। পৌরনীতি ও সুশাসন এবং ইতিহাস একে অপরকে পূর্ণতা দান করে। ইতিহাস প্রদত্ত তথ্য, ঘটনাবলির দ্বারা যেমন পৌরনীতি ও সুশাসন পূর্ণতা লাভ করে। ঠিক তেমনি পৌরনীতির জ্ঞান দ্বারা ইতিহাসও সমৃদ্ধি লাভ করে।

ঘ. বর্তমানে পৌরনীতি স্থানীয়, জাতীয় বিষয় পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিসত্মৃতি লাভ করেছে। উক্তিটি যথার্থ। 
পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সবকিছু পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয়। নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান হিসেবে পৌরনীতি শুধুমাত্র নাগরিকের স্থানীয় ও জাতীয় বিষয় নিয়েই আলোচনা করে না, বরং এটি নাগরিকের আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিকেও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
নাগরিক জীবন আজ স্থানীয় ও জাতীয় গ--র সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করেছে। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই বর্তমানে প্রতিবেশী ও দূরের সব রাষ্ট্রের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করে বিশ্ব শান্তি ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্যই গড়ে তুলেছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য বহু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। পৌরনীতি ও সুশাসন জাতিসংঘসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব, বিকাশ, উদ্দেশ্য কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করে। ফলে এসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে মানুষের আচরণ ও কার্যাবলি কীরূপ হওয়া উচিত তা জানতে পৌরনীতি ও সুশাসন সাহায্য করে।
আন্তর্জাতিক পরিম-লে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় তা নিয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে থাকে। অতীতে দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে বিশ্বশান্তি বিনষ্ট করেছে, বিশ্বের শান্তিকামী নেতাগণ কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ, জাতিসংঘ প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তুলেছে এবং এসব সংগঠন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কী ভূমিকা পালন করছে, পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করে তা জানা যায়। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বর্তমানে পৌরনীতির আলোচনা শুধুমাত্র স্থানীয় ও জাতীয় বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়; বর্তমানে এটি স্থানীয় ও জাতীয় বিষয় পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিসত্মৃতি লাভ করেছে।

১০. মারুফ সাহেব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সত্য। কিন্তু নাগরিক ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে তার যথেষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হন।
ক. পৌরনীতি কী?
খ. 'পৌরনীতি একটি অন্যতম সামাজিক বিজ্ঞান' উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মারুফের বাস্তব জীবনে উত্ত বিষয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. আদর্শ চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মারুফ সাহেবের কী করা উচিত? এবং কেন? যথার্থতা বিচার করো। 

◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. পৌরনীতি হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা নাগরিকতার সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

খ. সমাজবদ্ধ মানুষের নাগরিক জীবনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রথা, আইন, আচার-অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে। সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সমাজ ও নাগরিকতার সাথে জড়িত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। পৌরনীতি একটি নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান হিসেবে নাগরিকতার সাথে জড়িত স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। তাই পৌরনীতিকে একটি অন্যতম সামাজিক বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের মারুফের মধ্যে পৌরনীতি ও সুশাসনের জ্ঞানের অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই মারুফের বাস্তব জীবনে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের জ্ঞান অপরিহার্য।
পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। এটি নাগরিকের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। নাগরিকতার অর্থ ও প্রকৃতি, নাগরিকতা অর্জন ও বিলোপ, সুনাগরিকতা, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যবোধ প্রভৃতি পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচ্য বিষয়। একজন নাগরিক স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের এ সকল স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, গঠন, কার্যাবলি ও বিকাশ নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়াও পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নাগরিকতার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে থাকে। পৌরনীতি ও সুশাসনের এসকল আলোচনা নাগরিকদের সুনাগকিতার গুনাবলি, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যবোধের শিক্ষা দিয়ে সুস্থ, সুন্দর জীবন গঠনের শিক্ষা দান করে। নাগরিক দৃষ্টিভঙ্গি উদার করে, সংকীর্ণতা দূর করে। পৌরনীতি ও সুশাসনের পাঠ নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি করে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগঠনে সহায়তা করে। নাগরিকদের সামনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ের দিগন্ত উন্মোচন করে। ফলে নাগরিকদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়। দেশপ্রেমের শিক্ষাও পৌরনীতি ও সুশাসনের পাঠ থেকে লাভ করা যায়। সর্বোপরি পৌরনীতি ও সুশাসনের শিক্ষা রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকের মারুফ রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে উক্ত বিষয়গুলোর সাথে সম্পৃক্ত। তাই তার বাস্তব জীবনে সুনাগরিকতার শিক্ষা, নাগরিকের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রূপ, নাগরিক চেতনা বৃদ্ধি ও দেশপ্রেম সৃষ্টিতে পৌরনীতি ও সুশাসনের শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের মারুফ সাহেবের মধ্যে পৌরনীতি ও সুশাসনের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তাই আদর্শ চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মারুফ সাহেবের পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করা উচিত।
পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতা বিষয়ক সামাজিক বিজ্ঞান। নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয় পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে থাকে। পৌরনীতি ও সুশাসনের এ সকল পাঠ নাগরিকদেরকে সুনাগরিকতার গুণাবলি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যবোধ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ থেকে। একজন নাগরিক স্থানীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের সাথে সংশ্লিষ্ট এ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, গঠন, কার্যাবলি, বিকাশ নিয়ে আলোচনা করে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে নাগরিকদের সম্পর্ক কেমন হবে তাও পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
উদ্দীপকের মারুফ সাহেব একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান হলেও তিনি নাগরিক ও নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে জানেন না। ফলে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে তিনি যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হন। মারুফ সাহেবের এই সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কারণ হলো পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ে তার কোনো ধারণা বা জ্ঞান নেই। তাই মারুফ সাহেবের এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ও আদর্শ চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়টি পাঠ করা উচিত। কেননা পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে নাগরিকের অধিকার-কর্তব্য এবং বিভিন্ন স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post

Comments