এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.
সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১০
HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
১. খাবার হোটেলের কর্মী রহমতের স্বল্প উপার্জনে পরিবারের খাওয়া-পরা চললেও অসুস্থ বাবার চিকিৎসা চলে না। একদিন সুযোগ বুঝে সে ক্যাশ বাক্স থেকে কিছু টাকা সরিয়ে নেয়। পরদিন পত্রিকায় একটি সংবাদে তার চোখ আটকে যায়। একজন রিকশাচালক তার রিকশায় ফেলে যাওয়া টাকার ব্যাগ আত্মসাৎ না করে মালিকের কাছে পৌঁছে দেয়। রহমত সংবাদটি পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় চুরি করা টাকা ক্যাশ বাক্সে রেখে দিবে।
ক. ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত একটি মতবাদের নাম লিখ।
খ. ‘ধর্ম মানসিক শান্তি প্রদান করে।'- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সংঘটিত অপরাধের জন্য কোন কারণ দায়ী? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে রহমতের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমের ভূমিকা মূল্যায়ন করো।
❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত একটি মতবাদ হলো সর্বপ্রাণবাদ।
খ. ধর্ম হলো পবিত্র বস্তু সম্পর্কিত কতগুলো বিশ্বাস ও প্রথার সমষ্টি। মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই অতিমাত্রায় কোনো শক্তির উপর ভর বা বিশ্বাস করে মনস্তাত্ত্বিক পরিতৃপ্তির সাথে ধর্মীয় কর্মকান্ড সম্পাদন করে আসছে। ধর্ম জ্ঞান অপেক্ষা বিশ্বাস দ্বারা অধিকতর নিয়ন্ত্রিত। বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির আশায় মানুষ প্রার্থনা করে। ধর্ম যেহেতু মনস্তাত্ত্বিক বিষয় দ্বারা অধিকতর নিয়ন্ত্রিত সেহেতু এটি মানসিক শান্তি প্রদান করে।
গ. উদ্দীপকে সংঘটিত অপরাধের জন্য অর্থনৈতিক কারণ দায়ী। অপরাধের একটি অন্যতম কারণ হলো অর্থনীতি। যেমনটি মার্কস বলেছেন পুঁজিবাদী অর্থনীতির শোষণের ফলশ্রুতিই অপরাধ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সমাজে আর্থিক অনটন দেখা গেলে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে় যায়। গরিব শ্রেণির মানুষের মধ্যে অপরাধী বেশি দেখা যায়। কারণ ধন-সম্পদের অধিকারীরাই আইন প্রণয়ন করে এবং অপরাধীদের বিচার তাদের এখতিয়ারে। তাই তারা অপরাধ করেও শাস্তি ভোগ থেকে রেহাই পেতে পারে। আর গরিবরা অনেক সময় আর্থিক কারণে অপরাধ করে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যেমন অপরাধ সংঘটিত হতে পারে তেমনি অত্যধিক ধন লাভের আকাঙ্ক্ষা থেকেও অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। আর্থ সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষের একটি অংশ তাদের পেশাগত কাজের মাধ্যমে অপরাধ করে থাকে যাকে ভদ্রবেশী অপরাধ বলে। যেমন- ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি।
উদ্দীপকের রহমত তার স্বল্প উপার্জনে পরিবারের ব্যয়ভার চালাতে সক্ষম হলেও অসুস্থ বাবার চিকিৎসা খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়। বাবার চিকিৎসার অর্থ যোগানের জন্যই সে টাকা চুরি করে। অতএব এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, রহমতের অপরাধ সংগঠনের পিছনে অর্থনৈতিক কারণটিই দায়ী।
ঘ. উদ্দীপকে রহমতের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সমাজজীবনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে শৃঙ্খলা থাকা প্রয়োজন। তাই প্রতিটি সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রচলিত থাকে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ মূলত দুটি মাধ্যমে তথা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে হতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবার, শিক্ষা, ধর্ম, মূল্যবোধ, রীতিনীতি, আইন, প্রথা প্রভৃতি মাধ্যম ভূমিকা রাখে। সমাজের প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পরিবারের আদর্শ, মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা, জীবনযাপন পদ্ধতি ব্যক্তির জীবনে স্থায়ী ছাপ ফেলে যা সামাজিক জীবনকেও প্রভাবিত করে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো শিক্ষা। শিক্ষা মানুষকে ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দের ভেদাভেদ শেখায় এবং তার পারিবারিক ও সামাজিক আদর্শ-মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ফলশ্রুতিতে মানুষের সামাজিক আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সমাজ কাঙি্ক্ষত পন্থায় গড়ে ওঠে। এছাড়া সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিটি ধর্মেরই সর্বজনীন আবেদন থাকে যা মানুষকে ন্যায়ের পথে এগিয়ে যেতে এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকতে উৎসাহ যোগায়। সুষ্ঠু সমাজজীবনের স্বার্থে একটি সমাজে আইন ব্যবস্থা প্রচলিত হয়। আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আইন অমান্যকারীর শাস্তির বিধান করা হয়, যা সামাজিক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। এছাড়া এসকল বিষয় ছাড়াও ব্যক্তির নিজস্ব মূল্যবোধ, আদর্শ, রীতি-নীতির পাশাপাশি সমাজের আদর্শ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব, লোকাচার ও লোকরীতি, প্রচার ও বিজ্ঞাপন প্রভৃতি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।
উদ্দীপকে রহমত টাকা চুরি করার পর পত্রিকায় একজন রিকশাচালকের সততার সংবাদ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়। যার ফলে সে সিদ্ধান্ত নেয় চুরি করা টাকা পুনরায় নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিবে। রহমতের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে তার নিজস্ব মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, আদর্শ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব, প্রচার মাধ্যম ভূমিকা রেখেছে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যক্তিকে সমাজ স্বীকৃত রীতিনীতির মাধ্যমে সমাজে বসবাসের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমগুলোর উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিদ্যমান।
২. সালাম সাহেব পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরে বাস করেন। তার একমাত্র কলেজপড়ুয়া ছেলে পাড়ার বন্ধুদের সাথে মিলে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। মাঝেমধ্যে বাবার অজান্তে তার পকেট থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে থাকে এবং দেরি করে বাড়ি ফেরে।
ক. ‘‘সমাজবিজ্ঞান একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে।"- উক্ত সংজ্ঞাটি কোন সমাজবিজ্ঞানীর?
খ. সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সালাম সাহেবের ছেলের আচরণ সমাজবিজ্ঞানের কোন শাখায় আলোচনা করা হয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান কীভাবে সাহায্য করতে পারে? তোমার মতামত দাও।
❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘‘সমাজবিজ্ঞান একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে।"- সংজ্ঞাটি সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজের।
খ. সমাজবিজ্ঞানে গোটা সমাজের নিখুঁত বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা থাকে বলে সমাজবিজ্ঞানকে বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান বলা হয়। আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান কেবল সমাজের প্রপঞ্চ বা ঘটনাবলির আলোচনাই করে না, বরং ঐ প্রপঞ্চ বা ঘটনাসমূহের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের প্রচেষ্টাও চালায়। এক্ষেত্রে যুক্তিবাদী বিচার বিশ্লেষণের সহায়তা নেয়া হয়। তাই সমাজবিজ্ঞানকে একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের সালাম সাহেবের ছেলের আচরণ সমাজবিজ্ঞানের 'অপরাধ সমাজবিজ্ঞান' শাখায় আলোচনা করা হয়। অপরাধ, অপরাধ প্রবণতা, দারিদ্র্য, কিশোর অপরাধ, ভদ্রবেশী অপরাধ, অপরাধ সংঘটনে পরিবেশের প্রভাব, অপরাধের কারণ, অপরাধের তত্ত্ব, অপরাধের স্বরূপ, পতিতাবৃত্তি, সামাজিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়া প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনার জন্য অপরাধ সমাজবিজ্ঞান নামে সমাজবিজ্ঞানে আলাদা একটি ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত সালাম সাহেব পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরে বাস করেন। তাঁর একমাত্র কলেজপড়ুয়া ছেলে পাড়ার বন্ধুদের সাথে মিলে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে বাবার অজান্তে তাঁর পকেট থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে থাকে এবং দেরি করে বাড়ি ফেরে। সালাম সাহেবের ছেলে যেহেতু কলেজে পড়ে, সেহেতু বয়স বিচারে আমরা তাকে কিশোর বলতে পারি। আর তার সংঘটিত কাজগুলোও কিশোর অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। তাই আমরা বলতে পারি, সালাম সাহেবের ছেলে কিশোর অপরাধী। আর কিশোর অপরাধের কারণ, প্রকৃতি ও ফলাফল নিয়ে অপরাধ সমাজবিজ্ঞান বিস্তারিত আলোচনা করে।
ঘ. উদ্দীপকের সালাম সাহেবের ছেলের ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে কিশোর অপরাধকে নির্দেশ করা হয়েছে। আর এ ধরনের সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি।
আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন সমস্যার কারণ এবং তা সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। উদ্দীপকের সালাম সাহেবের ছেলে কিশোর অপরাধের সাথে যুক্ত। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান তার অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে পারবে। এছাড়া তার অপরাধী হওয়ার পেছনে পরিবার ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব কতটুকু সে সম্পর্কেও তথ্য খুঁজে বের করতে পারবে। অপরাধের যথার্থ কারণ খুঁজে বের করার পর সমাজবিজ্ঞান তা সমাধানে উপযুক্ত উপায় সম্পর্কে জ্ঞানদান করে । কীভাবে সালাম সাহেবের ছেলেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে, সে সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞান কার্যকরী উপায় সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে। সমাজবিজ্ঞানের এ উপায়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সালাম সাহেবের ছেলেকে কিশোর অপরাধ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান পরিবারের ভূমিকার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করবে। অনেক সময় দেখা যায়, সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর সঠিক পরিচর্যা ও তত্ত্বাবধানের অভাবে কিশোর অপরাধীরা পুনরায় অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সালাম সাহেবের ছেলে যাতে পুনরায় অপরাধকর্মে জড়িয়ে না পড়ে সে সম্পর্কেও সমাজবিজ্ঞান করণীয় আলোচনা করে থাকে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সালাম সাহেবের ছেলের আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে তাকে সমাজে পুনর্বাসিত করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
৩. মহসিন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। অতিরিক্ত আদর পেয়ে সে ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে সিনেমা হলে যায়, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে যেখানে সেখানে ঘোরাফেরা করে, মেয়েদের সাথে অশালীন ব্যবহার করে এবং গুরুজনদের অমান্য করে। তার এসব আচরণে অনেকেই রুষ্ট ও বিরক্ত।
ক. বাংলাদেশের পরিবার মূলত কীরূপ?
খ. সন্তান প্রতিপালনে পরিবারের ভূমিকা কীরূপ? ব্যাখ্যা করো।
গ. মহসিনের উল্লিখিত সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে পরিবার কোন ধরনের কার্যসম্পাদন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘‘সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ মহসিনের সুন্দর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য’’ উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃপ্রধান।
খ. সন্তান পালনে পরিবারই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। নবজাতকের লালন-পালনের দায়-দায়িত্ব পরিবারকেই সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অসহায় অবস্থা থেকে শিশুর স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত শিশুর সুষ্ঠু সেবা-যত্ন ও লালন-পালনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য এবং কেবল পরিবারেই এ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হতে পারে।
গ. মহসিনের উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে পরিবার অনেক কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। আমরা সকলে পরিবার থেকেই সামাজিকীকরণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে পারি। পরিবার শিশুদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করে। শিশুর সামাজিকীকরণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ প্রথম পরিবার থেকেই সূচনা হয়। এজন্যে পরিবারকে সামাজিকীকরণের আধার বলা হয়ে থাকে। পরিবার শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জন্মের পর বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে সন্তানদের রক্ষার্থে পরিবার বহুবিধ ভূমিকা রাখে।
সুতরাং বলা যায়, মহসিনের সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে পরিবার যথেষ্ট ভূমিকা সম্পাদন করে।
ঘ. সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ মহসিনের সুন্দর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্যে অপরিহার্য বক্তব্যটি যথার্থ।
পরিবার যদি শিশুকে সুনির্দিষ্টভাবে সমাজকাঙি্ক্ষত পন্থায় গড়ে তুলতে না পারে তা হলে তার মধ্যে সুষ্ঠু ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব হয় না। ফলে একজন মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। এজন্য সন্তান-সন্ততিদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করা, তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় না রাখা, পিতা-মাতার মধ্যে যাতে বিবাহ বিচ্ছেদ না ঘটে সেদিকে যত্নবান হওয়া এবং শিশুরা যাতে অশান্তিপ্রবণ পরিবার ও অপরাধী পরিবারে বড় না হয় সেদিকে পিতামাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের লক্ষ রাখতে হবে। তাহলে শিশুৎ পরবর্তীতে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠবে না বরং সমাজকাঙি্ক্ষত সদস্যে পরিণত হয়ে বেড়ে উঠবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশই মহসিনের সুন্দর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্যে অপরিহার্য।
৪. বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নতুন আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। শিক্ষিত পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট দলে সংগঠিত হয়ে এসব গ্যাং বানাচ্ছে। তারা দলবদ্ধভাবে বিকট শব্দে বাইক চালিয়ে দেয়ালে নিজেদের গ্যাংয়ের নাম সম্বলিত আঁকি-বুকি করে, অন্য গ্যাংয়ের সাথে মারামারি বা শক্তি প্রদর্শন করে আধিপত্য প্রকাশ করে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং, মাদকসেবন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও খুনের মতো অপরাধ করতেও দ্বিধা করে না।
ক. ব্যক্তির জন্য সংঘ কীরূপ সংগঠন?
খ. টমাস হবসের মতে প্রকৃতি রাজ্য কেমন ছিল?
গ. উদ্দীপকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার কোন উপাদানের ভূমিকার প্রভাব লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কিশোর গ্যাংগুলোকে সমাজের গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও।
❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ব্যক্তির জন্য সংঘ ঐচ্ছিক সংগঠন।
খ. টমাস হবসের মতে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল বিরতিহীন সংঘাতের । এ পর্যায়ে মানুষ ছিল স্বার্থপর, অহংকারী, নিষ্ঠুর, পরধন লোলুপ ও কলহ প্রিয়। সে সময় জনসাধারণের ভয় ও শ্রদ্ধামিশ্রিত সম্মানবোধ অর্জনের মতো উপরস্থ কেউ ছিল না বিধায় মানুষ একে অপরের শত্রুরূপে দিন কাটাত। ফলে মানবজীবন ছিল নিঃসঙ্গতায় পরিপূর্ণ, অসহায়, নোংরা এবং পাশবিক।
গ. উদ্দীপকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম উপাদান সঙ্গীদল এর ভূমিকার প্রভাব লক্ষ করা যায়।
শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব বা সমবয়সী সঙ্গীদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুরা তাদের সমবয়সীদের সাথে পারস্পরিক আবেগ ও অনুভূতি আদান-প্রদান করে; এতে সহজেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যার ফলে তারা একে অপরের আচার-আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এভাবে সমবয়সী সঙ্গীদল শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে। এমনকি শিশুদের মাদকাসক্তি, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, ছিনতাই এর মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ড- জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রেও সঙ্গীদল খুব শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। যেমনটি উদ্দীপকেও দেখা যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষিত পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট দলে সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাং বানাচ্ছে। তারা দলবদ্ধভাবে দেয়ালে নিজেদের গ্যাংয়ের নাম সম্বলিত আঁকি-বুকি করে, অন্য গ্যাংয়ের সাথে মারামারি বা শক্তি প্রদর্শন করে আধিপত্য বিস্তার করে। বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও তারা জড়িত। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, এ কিশোর গ্যাংগুলোর অপরাধমূলক কর্মকান্ডের পেছনে সামাজিকীকরণের অন্যতম উপাদান সঙ্গীদলের প্রভাব রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের কিশোর গ্যাংগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নানা পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
উদ্দীপকের কিশোর গ্যাংগুলোর সদস্যরা মাদকসেবন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই-এর মতো বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। সামাজিক এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিহত করার ক্ষেত্রে পরিবার মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য শিশু-কিশোরদের সাথে শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলতে হবে এবং একটি সুষ্ঠু পারিবারিক জীবন নিশ্চিত করতে হবে। পরিবার থেকে তাদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং সন্তানদের চারপাশ তাদের অনুকূল করে গড়ে তুলতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড- উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক ক্লাব, পাঠাগার, বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এছাড়া শিশু কিশোরদের বিপথগামীতা রোধ করতে গণমাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নানা সচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের কিশোর গ্যাংগুলোকে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. মি. সাকিব চৌধুরী একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। মালামাল ক্রয়ে তিনি প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্য দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেন। অপরদিকে বস্তিতে বসবাসরত স্বামীহারা হাজেরা খাতুন নিজের সন্তানদের জন্য খাদ্যের জোগান না করতে পেরে মালিকের বাসা থেকে চাল-ডাল চুরির অপরাধে পুলিশ কর্তৃক ধৃত হন।
ক. সামাজিক প্রগতি কী?
খ. ‘‘সকল সমাজই ছিল স্তরায়িত’’ ত ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মি. সাকিব চৌধুরীর অপরাধ কী ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের মি. সাকিব চৌধুরীর এবং হাজেরা খাতুনের অপরাধের সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্নত উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কাঙি্ক্ষত বা বাঞ্ছিত পরিবর্তনই হলো সামাজিক প্রগতি।
খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো চিরন্তন ও সর্বজনীন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন কোনো সমাজ খুঁজে পাওয়া যায় না যা পরিপূর্ণভাবে সাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ।
আদিম অধিবাসীদের গোষ্ঠীজীবনেও দলপতির প্রভাব-প্রতিপত্তি । প্রতিষ্ঠিত ছিল। এসব প্রভাব-প্রতিপত্তিকে কেন্দ্র করে কিছু সংখ্যক । ব্যক্তি অধিকতর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। কালের বিবর্তনের ধারায় সামাজিক স্তর বিন্যাসের আকৃতি-প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু স্তরবিন্যাস কখনও বিলুপ্ত হয়নি। সকল সমাজেই এটি বিদ্যমান।
গ. উদ্দীপকে মি. সাকিব চৌধুরীর অপরাধটি হলো 'ভদ্রবেশী অপরাধ’। ভদ্রবেশী অপরাধ হচ্ছে এমন অপরাধকে বোঝায় যেগুলো সমাজের উচ্চপদস্থ ও মর্যাদাসম্পন্ন লোকজন নিজের পোশাককে ব্যবহার করে সংঘটিত করে থাকে। এর উদাহরণ হচ্ছে ট্রেডমার্ক নকল করা, আয়কর ফাঁকি দেওয়া, জালিয়াতি করা, ইত্যাদি। মোটকথা সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি তাদের পেশাগত কাজের কপিরাইট প্রক্রিয়ায় আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যেসব অপরাধ করে থাকে, সেসব অপরাধকেই ভদ্রবেশী অপরাধ বলে।
উদ্দীপকের মি. সাকিব চৌধুরীর তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রয়কৃত । দ্রব্যসামগ্রীর প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেন। যা একটি শাস্তিমূলক অপরাধ। অথচ অফিসের কাগজপত্র এমনভাবে তৈরি করেন যা থেকে মি. সাকিব চৌধুরীর এ প্রতারণা প্রমাণের কোনো উপায় নেই। তাই এটি একটি ভদ্রবেশী অপরাধ। পরিশেষে বলা যায়, মি. সাকিব চৌধুরীর অপরাধ হলো। ভদ্রবেশী অপরাধ।
ঘ. উদ্দীপকের মি. সাকিব চৌধুরীর এবং হাজেরা খাতুনের অপরাধের সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্নত উক্তিটি যথার্থ ও সঠিক। উদ্দীপকের উল্লিখিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মি. সাকিব চৌধুরী এবং বস্তিবাসী হাজেরা খাতুন উভয়েই আইনের চোখে অপরাধী। কিন্তু উভয়ের অপরাধের সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
উদ্দীপকের মি. সাকিব চৌধুরী এর অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তিনি ভদ্রবেশি অপরাধে লিপ্ত। এর পিছনের কারণ হিসেবে তার সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও উচ্চাভিলাষী জীবনের স্বপ্নকেই দায়ী করা যায়। একটা সময় ছিল যখন একজন ধনীর চেয়ে একজন সৎ ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা বেশি ছিল। কিন্তু এখন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদেরকে শ্রদ্ধা করলেও তাদেরকে সবাই বোকা ভাবে। আর নিজেদেরকে বোকা হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্যই প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও মি. সাকিব চৌধুরী -এর মতো ব্যক্তিরা অপরাধে লিপ্ত হন। আবার অনেকেই রাতারাতি নিজেকে সমাজের উচ্চ ও মর্যাদাবান শ্রেণিতে উন্নীত করতে চায়। ফলে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে বিভিন্ন অসৎ উপায়ে টাকা রোজগারের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। যেমনটা উদ্দীপকের মি. সাকিব চৌধুরী করেছেন।
অন্যদিকে হাজেরা খাতুন-এর অপরাধের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণই ভিন্ন। সে মূলত চরম দারিদ্রের কারণেই অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। হাজেরা খাতুন তার সন্তানের জন্য খাবার যোগাড় করতে না পেরে খাদ্য চুরি করেছে। যদিও কোনো অপরাধকেই সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়, তারপরও এতটুকু বলা যায় যে, হাজেরা খাতুন এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ভালো হতো তাহলে হয়তো সে চুরি করতো না।
উপরের আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, মি. সাকিব চৌধুরী এবং হাজেরা খাতুন উভয়েই অপরাধী, কিন্তু উভয়ের অপরাধের সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতএব প্রশ্নের উক্তিটি যথার্থ।
৬. মাসুদ সাহেব এলাকায় খুব একটি ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত নন। তিনি মিথ্যা কথা বলেন, যে কোনো অবৈধ কাজ করার জন্য তিনি ঘুষ নেন। তিনি আয়করও ঠিকমত পরিশোধ করেন না। প্রতিদিন রাতে ক্লাবে গিয়ে জুয়া খেলেন ও মদ্যপান করেন। তার বাবা-মাকেও তিনি ঠিকমতো দেখাশোনা করেন না। বাসায় নিয়োজিত কাজের ছেলেটিকেও সে প্রায়ই মারধর করে।
ক. ‘Polygamy' শব্দের অর্থ কী?
খ. নৈতিকতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কয় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আইনের দৃষ্টিতে মাসুদ সাহেবের সব কর্মকান্ড অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে কি না? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'Polygamy' শব্দের অর্থ বহুবিবাহ।
খ. নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম অনুভূতি। নৈতিকতা হলো ভালো ও মন্দের মধ্যকার ইচ্ছা, সিদ্ধান্ত ও কর্মগত বিভাজন। নির্দিষ্ট দর্শন, ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুযায়ী নৈতিক বিধানই নৈতিক ব্যবস্থা। সাধারণ অর্থে নৈতিকতা বলতে বোঝায়, কোনো নির্দিষ্ট জনগণ বা সংস্কৃতির মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল কোনো কিছুর সত্যিকার ভালো বা মন্দের অবস্থা। যার মধ্যে নৈতিকতা নামক গুণ রয়েছে সে বা তারা ভালো এবং মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে।
গ. উদ্দীপকে চার ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি রয়েছেন যারা তাদের পেশাগত প্রক্রিয়ায় এমন অপরাধমূলক কাজ করেন যেগুলো মানুষের দ্বারা করা সচরাচর সম্ভব নয়। যেমন-আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, ঘুষ নেওয়া ইত্যাদি। এগুলোকে বলা হয় ভদ্রবেশী অপরাধ। আবার একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত অপরাধকে সংঘটিত অপরাধ বলা হয়। যেমন-জুয়া, মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি। এছাড়া সম্পত্তি এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের উদাহরণ হচ্ছে সম্পত্তি আত্মসাৎ, চুরি, ছিনতাই, মারধর, মানহানি ইত্যাদি। ব্যক্তির স্বভাবজনিত কারণে স্বভাবজাত অপরাধ সংঘটিত হয়। যেমন-মিথ্যা কথা বলা ।
উদ্দীপকে মাসুদ সাহেবের ঘুষ নেওয়া, আয়কর ঠিকমতো পরিশোধ না করা, জুয়া খেলা, মদ্যপান করা, বাবা-মাকে দেখাশোনা না করা, কাজের ছেলেকে মারধর করা, মিথ্যা কথা বলা যথাক্রমে ভদ্রবেশী অপরাধ, সংঘটিত অপরাধ, ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ এবং স্বভাবজাত অপরাধের মধ্যে পড়ে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে মূলত চার ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
ঘ. আইনের দৃষ্টিতে মাসুদ সাহেবের সব কর্মকান্ড অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
আইন ভঙ্গমূলক কাজই অপরাধ। কোনো রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ বা আচরণ প্রদর্শন করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হয়। কিন্তু সমাজে এমন অনেক কাজ ও আচরণ লক্ষ করা যায়, যা আইনে নিষিদ্ধ না হলেও সমাজের কাঙি্ক্ষত আচরণের পরিপন্থি। অর্থাৎ সমাজের মূল্যবোধ, রীতিনীতি, ঐতিহ্য ইত্যাদির মাপকাঠিতে যেসব কাজ বা আচরণ অনাকাঙি্ক্ষত এবং অসমর্থিত অথচ আইনে নিষিদ্ধ নয় তা অবশ্যই সামাজিক বিচ্যুতি, তবে তা অপরাধ নয়। যেমনত পাপাচার, নীতিহীনতা, মিথ্যাচার, দরিদ্র, এতিম, অনাথের প্রতি অবিচার, পিতা-মাতার প্রতি সামাজিকভাবে কাঙি্ক্ষত আচরণ প্রদর্শন না করা ইত্যাদি সামাজিকভাবে অপরাধমূলক হলেও তা আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বদাই অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না।
উদ্দীপকে মাসুদ সাহেবের মিথ্যা কথা বলা, জুয়া খেলা, মদ্যপান করা ও বাবা-মাকে ঠিকমতো দেখাশোনা না করা সামাজিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অনাকাঙি্ক্ষত হলেও আইন নিষিদ্ধ নয়। এগুলোকে বিচ্যুত আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। পক্ষান্তরে, ঘুষ নেওয়া, আয়কর ঠিকমতো পরিশোধ না করা এবং গৃহকর্মীকে শারীরিক নির্যাতন করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মাসুদ সাহেবের সর্ব কর্মকান্ড বিচ্যুত আচরণ হিসেবে গণ্য হলেও আইনের দৃষ্টিতে সব কর্মকান্ড অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
৭. আমজাদ সাহেব সরকারি চাকরি করেন। সীমিত আয়ের চাকরিজীবী হয়েও তিনি দামি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। অথচ গ্রামে থাকা বৃদ্ধ পিতামাতার খোঁজখবর রাখেন না। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়া একমাত্র সন্তান জনির কোনো চাহিদাই তিনি অপূর্ণ রাখেন নি। ছেলের পড়াশুনা ও হাত খরচ বাবদ তিনি বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। জনি পড়াশুনার চেয়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা ও ক্লাব-পার্টি নিয়েই বেশী ব্যস্ত থাকে। আমজাদ সাহেব বা তার স্ত্রী কারোরই এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। ফলে সে মাদকাশক্তি ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে।
ক. আদর্শহীনতা কী?
খ. আয়কর ফাঁকি দেয়া কোন ধরনের অপরাধ এবং কেন?
গ. উদ্দীপকে বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি আমজাদ সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি তোমার পঠিত কোন ধরনের সামাজিক আচরণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় এবং কেন?
ঘ. উদ্দীপকে জনির অপরাধী হয়ে উঠার সমাজতাত্ত্বিক কারণ বিশ্লেষণ করো।
❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ব্যক্তির মধ্যে সমাজে প্রচলিত নৈতিকতার বিপরীত চরিত্র সৃষ্টি হওয়াই আদর্শহীনতা।
খ. আয়কর ফাঁকি ভদ্রবেশী অপরাধ। আর্থ-সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কর্তৃক তাদের পেশাগত কাজের প্রক্রিয়ায় এমন কিছু অপরাধমূলক কাজ করে থাকে যা ভদ্রবেশী অপরাধ বলে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, ট্রেডমার্ক নকল করা ইত্যাদি। এই ভদ্রবেশী অপরাধের প্রভাব সমাজে নেতিবাচক।
গ. উদ্দীপকে বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি আমজাদ সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক আচরণ বিচ্যুতি দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। প্রতিটি সমাজেই কিছু রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও আদর্শ থাকে; থাকে আচরণবিধি। সমাজ আশা করে আমরা যেন সমাজ কাঙি্ক্ষত আচরণ করি, সমাজের মূল্যবোধ ও আচরণ-বিধি মেনে চলি। আমাদের সমাজ আশা করে আমরা যেন বাবা-মা, শিক্ষক ও গুরুজনকে মান্য করি। তাদেরকে সম্মান করি, তাদের পরামর্শ, আদেশ, নিষেধ মেনে চলি। বাবা-মার বার্ধক্যে সেবা যত্ন করি। এসব যদি না করি এবং তাদের প্রতি যদি অসম্মানজন আচরণ করি তবে তা হবে বিচ্যুতিমূলক আচরণ। অর্থাৎ সমাজ কর্তৃক কাঙি্ক্ষত আচরণ না করে নিয়মনীতি ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গিয়ে। অনাকাঙি্ক্ষত আচরণ করাই হলো বিচ্যুতি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আমজাদ সাহেব সরকারি চাকরি করেন। তিনি দামী ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের সকল চাহিদা পূরণ করেন। কিন্তু গ্রামে থাকা তার বৃদ্ধ বাবা-মার কোনো খোঁজ খবর রাখেন না। তাদের দেখাশোনাও করেন না। আমজাদ সাহেবের এ আচরণটি বিচ্যুতিমূলক আচরণ।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, পিতামাতার প্রতি আমজাদ সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক আচরণ বিচ্যুতি দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
ঘ. উদ্দীপকে জনির অপরাধী হয়ে উঠার কারণটিকে সমাজতাত্ত্বিক কারণ দ্বারা বিশ্লেষণ করা হলো।
অপরাধের সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মূল বক্তব্য হলো এই যে, অপরাধমূলক আচরণ অন্যান্য সামাজিক আচরণের মতো সামাজিক পরিমন্ডলেই সৃষ্টি হয়। অপরাধের সামাজিক কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে- গৃহ, খেলাধুলার মাঠ, স্কুল এবং শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক রীতিনীতি, শ্রেণি বিদ্বেষ, বিচারালয় ও জেলখানার প্রভাব এবং বর্তমান জটিল সমাজের অবদান।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আমজাদ সাহেবের ছেলে জনি পড়াশুনার চেয়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা ও ক্লাব-পাটি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। ফলে সে মাদকাশক্তি ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। যেহেতু অপরাধের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে অপরাধ সংঘটনে বন্ধুবান্ধবের ভূমিকা রয়েছে সেহেতু জনির অপরাধকে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের জনির অপরাধী হয়ে উঠার কারণটি অপরাধের সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৮. জনি ও পিনু দুজন বন্ধু হলেও তাদের আচরণে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। জনি বড়দের সম্মান করে না, কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলে না, কথায় কথায় খারাপ শব্দ ব্যবহার করে। এমনকি তার বাবা-মায়ের সেবাও করে না। অপরদিকে পিনু সহপাঠীদের সাথে মিশে মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে মাঝে মাঝে ছিনতাই ও চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
ক. ভদ্রবেশী অপরাধ কী?
খ. প্যারোল বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের জনি ও পিনুর আচরণ তোমার পাঠ্যবইয়ের যে দুটি প্রত্যয়কে নির্দেশ করে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পিনু যে কাজে জড়িত তা প্রতিকারের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? তোমার সুচিন্তিত মতামত দাও।
❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আর্থ-সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি যখন পেশাগত কাজের মাধ্যমে অপরাধ করে তখন তাকে ভদ্রবেশী অপরাধ বলে।
খ. কোনো অপরাধী কারাগারে শাস্তি ভোগের একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থাকে প্যারোল বলা হয়। এ ব্যবস্থায় সাধারণত শাস্তির এক-তৃতীয়াংশ ভোগ করার পর অপরাধীকে প্যারোলে আনা হয়। কারাগারে শাস্তি ভোগকালে অপরাধীর মধ্যে যদি তার অপরাধকর্মের জন্য অনুশোচনা হয় এবং তার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তবেই তাকে প্যারোলে এনে চারিত্রিক সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গ. উদ্দীপকে জনি ও পিনুর আচরণ যথাক্রমে আমার পাঠ্যবইয়ের বিচ্যুতি ও অপরাধ প্রত্যয়কে নির্দেশ করে।
বিচ্যুতি বলতে বোঝায় সমাজের স্বাভাবিক এবং বাঙ্খিত আচরণের । বিরোধী বা পরিপন্থি কোনো কাজ। অপরাধবিজ্ঞানী পোপেনো বলেন, বিচ্যুতি হলো এমন এক আচরণ যা কোনো গোষ্ঠী বা সমাজের সামাজিক আদর্শকে ভঙ্গ করে। মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী এ. রস বলেন, বিচ্যুত আচরণ হলো সেই আচরণ, সমাজ আশা-আকাঙ্ক্ষা করে না। অর্থাৎ বিচ্যুতি হলো সেই আচরণ যার জন্য আইন কর্তৃক কোনো শাস্তির বিধান নেই কিন্তু এটি সামাজিকভাবে ঘৃণিত। যেমন- মদপান করা, জুয়া খেলা ইত্যাদি। অন্যদিকে অপরাধ হলো সেই আচরণ যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত নয় এবং এর জন্য আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, অপরাধ হচ্ছে সেই আচরণ যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং এর মোকাবিলা করার জন্য সংঘবদ্ধ সমষ্টির প্রয়োজন হয়। অপরাধ প্রসঙ্গে স্টিফেন বলেন, অপরাধ হচ্ছে যেসব কাজ করা বা না করা যার জন্য আইন শাস্তির বিধান করে। অপরাধের উদাহরণ হচ্ছে- চুরি, ডাকাতি, খুন, ছিনতাই ইত্যাদি।
উদ্দীপকে জনি বড়দের সম্মান করে না, কথায় কথায় খারাপ শব্দ ব্যবহার করে, এমনকি বাবা মায়ের সেবাও করে না। পূর্বোক্ত বিচ্যুতি সম্পর্কিত আলোচনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, জনির আচরণ বিচ্যুতি। অন্যদিকে পিনু সহপাঠীদের সাথে মিশে মাদক সেবন করে এবং মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। পূর্বোক্ত অপরাধ সম্পর্কিত আলোচনার বিশ্লেষণ করলে সহজেই বোঝা যায়, পিনুর আচরণ অপরাধের সাথে সম্পর্কিত। উপরের আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, অপরাধ হচ্ছে সেই কাজ যার জন্য আইন শাস্তির বিধান করে। পক্ষান্তরে বিচ্যুতি হলো সমাজ অনাকাঙি্ক্ষত আচরণ যার জন্য আইন কর্তৃক শাস্তির বিধান নেই।
ঘ. পিনু অপরাধ কার্যে জড়িত। এটি প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। একাধিক উপায়েই অপরাধ নিবারণ করা যায়। সভ্য সমাজে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তিবিধান অপরাধ নিবারণের প্রধান উপায়। কিন্তু শুধুমাত্র শাস্তি দ্বারা অপরাধ সম্পূর্ণভাবে নিবারণ হতে পারে না। সুস্থ সামাজিক পরিবেশ অপরাধ নিবারণে বিশেষভাবে সহায়ক হতে পারে। সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা জীবনধারণের মানের উন্নতি সাধনে অপরাধ নিবারিত হয়। দারিদ্র্য অপরাধপ্রবণতা সৃষ্টি করে। যদি সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি জীবিকা অর্জনের সুযোগ পায় এবং বেকারত্ব, দারিদ্র্য, ভিক্ষাবৃত্তি প্রভৃতির বিলোপ সাধন করা হয়, তাহলে অপরাধ অনেকাংশেই নিবারিত হবে। তাছাড়াও সুন্দর জীবনযাপনের উপযোগী ব্যবস্থা, খেলাধুলা ও শরীরচর্চার ব্যবস্থা, সুস্থ আমোদ-প্রমোদ, পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা, শক্তিশালী সরকার, নিরপেক্ষ বিচারকমন্ডলী প্রভৃতি সুস্থ সামাজিক পরিবেশ অপরাধের সংখ্যা হ্রাসে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। অপরাধ নিবারণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সমাজের সদস্যদের মনে সামাজিক নৈতিক চেতনা ও মূল্যবোধের সঞ্চার করা। সামাজিক আদর্শের সাথে তাদের পরিচিত করা। যে সমাজে ব্যক্তির নৈতিক চেতনা তীব্র এবং যে সমাজ সমবেতভাবে জনকল্যাণ সাধনে প্রণোদিত হয়, সে সমাজে স্বাভাবিকভাবেই অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পায়।
পরিশেষে বলা যায়, উল্লিখিত নিবারণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিকার করা যায়।
৯. নিষ্ফল চৌধুরী তার পরিচিতজনের নিকট খুব একটা ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত নন। তিনি কথায় কথায় প্রায়ই মিথ্যা বলেন। যেকোনো কাজ করার জন্য তিনি ঘুষ নেন। তিনি আয়করও ঠিকমতো পরিশোধ করেন না। প্রতিদিন রাতে ক্লাবে গিয়ে জুয়া খেলেন এবং মদ্যপান করেন। তার বাবা-মাকেও ঠিকমতো দেখাশোনা করেন না। তার বাসায় গরিব একটা ছেলে কাজ করে। যাকে তিনি প্রায়ই মারধর করেন।
ক. ধর্ম কী?
খ. অপরাধ ও বিচ্যুতির পার্থক্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কয় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আইনের দৃষ্টিতে নিহাল চৌধুরীর সব কর্মকান্ড অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ধর্ম বলতে কতকগুলো নিয়মকানুন, আচার অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসকে বোঝায়।
খ. আইন ভঙ্গমূলক কাজ হচ্ছে অপরাধ অন্যদিকে বিচ্যুতি হচ্ছে সমাজে অনাকাঙি্ক্ষত আচরণ।
বিচ্যুতি ও অপরাধ ঘনিষ্ঠ হলেও এরা এক নয়, প্রকৃতপক্ষে বচ্যুতির ধারণা অপরাধের চেয়ে বড়। অপরাধ হলো কেবল আইনের লঙ্ঘন। অপরাধের শাস্তি রাষ্ট্র কতৃক নির্ধারিত। সে শাস্তি হতে পারে লঘু অথবা গুরু। কিন্তু বিচ্যুতি হচ্ছে সেই আচরণ যা আইন লঙ্ঘন করে না তবে বিচ্যুতিমূলক আচরণকে সমাজের অধিকাংশ মানুষ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এর মাধ্যমে সামাজিক সংহতি কিছুটা হলেও বিনষ্ট হয়। তাই বলা যায়, অপরাধ ও বিচ্যুতি মূলত দুটি আলাদা বিষয় এবং উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়।
গ. নিহাল চৌধুরীর কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে দু ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তা হলো ভদ্রবেশী অপরাধ এবং ক্ষতিগ্রস্তবিহীন অপরাধ।
আমাদের দেশে কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি রয়েছেন, যারা তাদের পেশাগত প্রক্রিয়ায় এমন কিছু অপরাধমূলক কাজ করে যেগুলো সাধারণ মানুষের দ্বারা সচরাচর করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো ভদ্রবেশী অপরাধ। ভদ্রবেশী অপরাধ হলো আয়কর ফাঁকি, ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান ইত্যাদি। ভদ্রবেশী অপরাধগুলো অনেকটা নীরবে ও গোপনে সংঘটিত হয়। এসব দিক বিচারে নিহাল চৌধুরীর আয়কর ফাঁকি ও ঘুষ গ্রহণ প্রভৃতি কর্মকান্ড হলো ভদ্রবেশী অপরাধের অন্তর্ভুক্ত।
আবার নিহাল চৌধুরী জুয়া খেলেন এবং মদ্যপান করেন, যা থেকে তিনি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কিন্তু তার এ কর্ম দ্বারা অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ আনয়ন করে না। তাই তার এ অপরাধ হলো ক্ষতিগ্রস্তবিহীন অপরাধ।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে দু ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়।
ঘ. না, আইনের দৃষ্টিতে নিহাল চৌধুরীর সব কর্মকান্ড অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
সামাজিক দৃষ্টিকোণ বা নৈতিকতার দিক থেকে সকল অপরাধ আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ নাও হতে পারে। যেমন কথায় কথায় মিথ্যা বলা, বাবা-মায়ের দেখাশুনা না করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধের অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বা ও নৈতিকতার দিক থেকে এগুলো বিচ্যুতি বা গর্হিত কাজ। নিহাল চৌধুরী ঘুষ গ্রহণ, আয়কর ফাঁকি, জুয়াখেলা, মদ্যপান প্রভৃতি অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। অপরাধের ধরন বিচারে তার উক্ত কর্মকান্ডগুলোকে অপরাধ বলা যায়। কিন্তু কথায় কথায় মিথ্যা বলা, বাবা-মায়ের দেখাশুনা না করা অপরাধের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা বিচ্যুতি। নিহাল চৌধুরীর মিথ্যাচার বা বৃদ্ধ - বাবা-মাকে দেখাশুনা না করা অপরাধ নয় কারণ এটি সমাজের দৃষ্টিতে অনাকাঙি্ক্ষত হলেও আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু কাজের ছেলেকে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে গরিব অসহায়দের প্রতি তার নেতিবাচক মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়, যা অপরাধের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ নিহাল চৌধুরীর কিছু কর্মকান্ড আছে যা আইনে নিষিদ্ধ নয় কিন্তু সমাজের দ্বারা অনাকাঙি্ক্ষত ও অসমর্থিত। আর এগুলো অপরাধ নয় বিচ্যুতি।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, উদ্দীপকের নিহাল চৌধুরী কর্তৃক সংঘটিত সব কর্মকান্ড অপরাধের শর্ত বিচারে অপরাধের অন্তর্ভুক্ত নয়।
১০. রুম্মানের পিতা-মাতা অর্থলোভে পড়ে যৌতুক নিয়ে রুম্মানকে বিয়ে করায়। কিন্তু রুম্মানের পিতা-মাতা যে সুখের আশায় যৌতুক নিয়ে বিয়ে করিয়েছিল সে আশা গুড়েবালিতে পরিণত হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই রুম্মান ও তার স্ত্রী পিতা-মাতা থেকে আলাদা হয়ে যায়। এমনকি পিতা-মাতার ভরণপোষণও করে না। ফলে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা অসহায় হয়ে পড়ে।
ক. ডুর্খেইম কয় ধরনের নৈরাজ্যের কথা বলেছেন?
খ. এমিল ডুর্খেইমের বিচ্যুতিমূলক আচরণ বিশ্লেষণের তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো।
গ. পিতা-মাতার প্রতি রুম্মান ও তার স্ত্রী যে আচরণ করে সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রুম্মানের পিতা-মাতার উচ্চাভিলাষই কি তাদেরকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে কর? যুক্তিসহ উত্তর দাও।
❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ডুর্খেইম দুই ধরনের নৈরাজ্যের কথা বলেছেন।
খ. এমিল ডুর্খেইম নৈরাজ্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সমাজে যখন নৈরাজ্য দেখা দেয় তখন মানুষ বিচ্যুত আচরণ করে। নৈরাজ্য বলতে বুঝায় সমাজের আদর্শ বা মূল্যবোধহীনতা। অর্থাৎ নৈরাজ্যজনক বা বিশৃঙ্খল অবস্থায় সমাজে রীতিনীতি, আইন-কানুন, বিশ্বাস প্রভৃতি ভেঙে পড়ে, ব্যক্তির ওপর সমাজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না তখন মানুষ বিচ্যুত আচরণ করে। ডুর্খেইম আরও দেখান বিচ্যুতির উচ্চ হারের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ডুর্খেইমের মতানুযায়ী বিচ্যুতি দুটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে থাকে। এগুলো হলোত প্রথমত: বিচ্যুতির রয়েছে অভিযোজন ক্রিয়া। দ্বিতীয়ত: বিচ্যুতি সমাজে ভালো এবং মন্দ আচরণের মধ্যে সীমা নির্ধারণে সহায়তা করে।
গ. পিতামাতার প্রতি উদ্দীপকের রুম্মান ও তার স্ত্রী যে আচরণ করে সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তা বিচ্যুত আচরণ হিসেবে বিবেচিত।
প্রতিটি সমাজে কতকগুলো আচার-আচরণ, রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ থাকে। সে অনুসারে সমাজ ব্যক্তির কাছ থেকে যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে বলা হয় কাঙি্ক্ষত বা প্রত্যাশিত আচরণ। এই প্রত্যাশিত আচরণের বাইরে ব্যক্তি যে সকল আচরণ করে তাই বিচ্যুতি আচরণ। বিচ্যুতি বলতে এমন সব আচরণকে বোঝায় যা স্বাভাবিক ও কাঙি্ক্ষত আচরণের পরিপন্থি। বিচ্যুতিমূলক আচরণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন আচরণের বিচ্যুতি, অভ্যাসের বিচ্যুতি, মনস্তাত্ত্বিক বিচ্যুতি, সাংস্কৃতিক বিচ্যুতি ইত্যাদি।
উদ্দীপকে উল্লিখিত রুম্মানের পিতামাতা থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াটাও এক ধরনের বিচ্যুতি আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ যা আমাদের সমাজের মূল্যবোধ পরিপন্থি এবং অনাকাঙি্ক্ষত ও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান রুম্মান ও তার স্ত্রীর আচরণকে বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলে আখ্যায়িত করা যায়।
ঘ. রুম্মানের পিতামাতার উচ্চাভিলাষের ফলেই তারা অসহায়ত্বের শিকার হয়েছে বলে আমি মনে করি না।
উদ্দীপকে উল্লিখিত রুম্মানের পিতামাতা অর্থলোভে পড়ে যৌতুক নিয়ে রুম্মানকে বিয়ে করায়। যৌতুক নিয়ে বিয়ে করানো বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অপরাধ। সাধারণত আইনবিরোধী কাজ ও আচরণকে অপরাধ বলা হয়।
যেহেতু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ যৌতুক গ্রহণকে আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সেহেতু রুম্মানের পিতামাতার যৌতুক গ্রহণের বিষয়টি অপরাধের অন্তর্ভুক্ত এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য। সমাজবিজ্ঞানীগণ অপরাধকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। তন্মধ্যে যৌতুক গ্রহণকে সম্পত্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ বলে চিহ্নিত করা যায়। রুম্মানের পিতামাতার এ অপরাধ সংগঠনের কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে উচ্চাভিলাষী স্বপ্নের মোহে তারা এ অপরাধ সংঘটিত করেছিলেন। অর্থাৎ রুম্মানের স্ত্রীর পিতা থেকে অর্থ গ্রহণ করে রাতারাতি ধনী হওয়ার এবং বাকি জীবন সুখে কাটানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে তারা এ কাজটি করেছিলেন। কিন্তু উদ্দীপকে দেখতে পাই যে, তাদের এ স্বপ্ন বিফল হয়েছে এবং উল্টো রুম্মান ও তার স্ত্রী তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
রুম্মানের পিতামাতা যৌতুক গ্রহণের ফলস্বরূপ অসহায় হয়ে পড়েছেন, এ বিষয়টিকে আমি সমর্থন করি না। কারণ যৌতুক গ্রহণ আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ তাই এটির শাস্তির বিধান করবে আদালত এবং বাংলাদেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থা। কিন্তু তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন রুম্মান ও তার স্ত্রীর বিচ্যুতিমূলক আচরণের ফলে। তাই সবশেষে বলতে পারি যে, রুম্মানের পিতামাতার উচ্চাভিলাষ তাদেরকে অপরাধ সংগঠনে তাড়িত করেছে। তাদের অসহায়ত্বের জন্যে তাদের উচ্চাভিলাস দায়ী নয়; বরং দায়ী রুম্মান ও তার স্ত্রীর বিচ্যুতিমূলক আচরণ।
0 Comments:
Post a Comment