HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. প্রবাসী কমল দীর্ঘদিন পর গ্রামে ফিরে এসে অবাক হয়ে যান। গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। ডিস-অ্যান্টেনার কারণে গ্রামের মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুষ্ঠান উপভোগ করছে। মেয়েরা বিদ্যালয় ও কলেজে যাচ্ছে। গ্রামের অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় চাকুরি করছে। কৃষকরা ঘরে বসেই কৃষির বিভিন্ন তথ্য জানতে পারছে মোবাইলের মাধ্যমে। 
ক. Globalization শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ কী?
খ. জেন্ডার ধারণাটি কেন ব্যবহৃত হয়?
গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ সমাজজীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের গ্রামের মানুষের পেশা পরিবর্তনের কারণ বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. Globalization শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ 'বিশ্বায়ন'।

খ. নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান সামাজিক পার্থক্যকে বোঝাতে জেন্ডার Gender ধারণাটি ব্যবহৃত হয়। বিংশ শতাব্দীর ৭০-এর দশকে নারীবাদী চিন্তাবিদদের ফ্রাসোয়া দ্যো এবোনে, মারাই বুকিন, ডেল প্লামউড প্রমুখ. দ্বারা জেন্ডার ধারণাটি বিকাশ লাভ করে। জেন্ডার শব্দটির আভিধানিক অর্থ লিঙ্গ। কিন্তু উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে জেন্ডার শব্দটি ভিন্ন ও ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়। মূলত নারী-পুরুষের মধ্যে সমাজসৃষ্ট প্রভেদ বা পার্থক্যকে বোঝাতেই জেন্ডার ধারণার অবতারণা হয়। এছাড়া নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রেও জেন্ডার ধারণাটি ব্যবহৃত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত গ্রামীণ সমাজজীবনের আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে শহুরে জীবনের পাশাপাশি গ্রামীণ দেখা যায়। আবার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলেই গ্রামের মানুষ এখন ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থ-সামাজিক ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে।
সমাজজীবনেও মানব জীবনের ধারা পাল্টে গেছে। যেমন- প্রযুক্তির অন্যতম ফল হচ্ছে বিদ্যুতের আবিষ্কার। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুতের ব্যবহার ফলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে এবং তারা আত্মসচেতন হয়ে উঠছে। এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে গ্রামীণ সমাজজীবনে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় নিজেদের শিক্ষিত করে তুলছে। এসব শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছে, যা কি না গ্রামীণ সমাজজীবনের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর ক্ষেত্রেও মৌলিক পরিবর্তন সাধন করছে।
উদ্দীপকের প্রবাসী কমল দীর্ঘদিন পর গ্রামে ফিরে এসে গ্রামীণ সমাজজীবনে যে সকল পরিবর্তন লক্ষ করছেন, তা মূলত পূর্বে আলোচিত গ্রামীণ সমাজজীবনের আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকেই নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকের গ্রামের মানুষের পেশা পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হলো-
তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন। আমরা জানি, গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে গ্রামীণ সমাজজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আর এ পরিবর্তন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। এসব পরিবর্তনের মধ্যে পেশাগত পরিবর্তন অন্যতম।
এ পরিবর্তনের পেছনে তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নই মূল ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির চরম উন্নয়নের ফলে সমগ্র বিশ্ব এখন হাতের নাগালে। যেমনটা আমরা উদ্দীপকের গ্রামে দেখতে পাই। সেখানকার সমাজজীবনে বিদ্যুৎ ও ডিস-অ্যান্টেনার ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনধারা পাল্টে গেছে। বিভিন্ন দেশের সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের ফলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে তারা কুসংস্কার ও গোড়ামি ছেড়ে আধুনিক জীবনযাপনে আগ্রহী উঠছে। আর আধুনিক জীবনযাপনে আগ্রহী হওয়ায় গ্রামবাসীরা তাদের সনাতন পেশা কৃষি ছেড়ে অন্য পেশা গ্রহণ করছে। শুধু তাই নয়, তাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে এবং এসকল শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছে।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতির ফলে গ্রামবাসীদের চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, যার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে তারা তাদের পেশা পরিবর্তন করছে। যেমনটা উদ্দীপকের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়।

২. তাসলিমা একটি বস্তিতে রুম নিয়ে বসবাস করে। পোশাক তৈরির কারখানায় সে কাজ করে। কোনো রকমে তার দিন চলে যায়। তার ছোট ভাই রফিককেও তার শঙ্গে এনে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু সে রাজি নয়, কারণ মাঠে ফসল ফলানোতেই সে বেশি আনন্দ পায়।
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব কোন সমাজে বেশি?
খ. ‘প্রান্তিক চাষী বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকের তাসলিমা যে সমাজে বসবাস করে সেই সমাজের মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রফিকের বসবাসকৃত সমাজের পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণ বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জনসংখ্যার ঘনত্ব শহুরে সমাজে বেশি।

খ. যেসব কৃষক নিজ জমিতে চাষবাস করে কোনোরকমে নিজেদের ভরনপোষণ করে তারাই প্রান্তিক কৃষক। এ শ্রেণির কৃষকদের জমির পরিমাণ ১ একরের নিচে হয়, যার উৎপাদন থেকে তারা শুধু ভরণপোষণ চালিয়ে যেতে পারে। প্রান্তিক কৃষকরা কেঠার পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করে। ভূমিহীন দিনমজুরদের সাথে এদের সম্পর্ক মোটামুটি নিবিড়। কেননা, প্রান্তিক কৃষক ও ভূমিহীনদের আর্থিক ব্যবধান খুব কম।

গ. উদ্দীপকের তাসলিমা যে সমাজে বাস করে সেটি শহুরে সমাজকে নির্দেশ করে। শহুরে সমাজের জীবনজীবিকা অত্যন্ত গতিময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।
শহুরে সমাজ প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তে কৃত্রিম পরিবেশে গড়ে ওঠে। শহুরে সমাজজীবন আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আশীর্বাদ পুষ্ট হওয়ায় এখানকার জীবন-জীবিকা অত্যন্ত গতিশীল ও অগ্রসরমান। শহর সমাজে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বসবাস করায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। ফলে বাসগৃহজনিত সংকট অতি প্রকট। শহর সমাজে মধ্য ও নিম্ন আয়ের জনগণ বেশি এবং এদের বৃহৎ একটা অংশ বস্তিতে বসবাস করে। বৈচিত্র্যময় অকৃষি পেশা ও জীবনজীবিকা শহুরে সমাজের অন্যতম = বৈশিষ্ট্য। শহরাঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানাতে কাজ করে। শহুরে। কারখানাগুলোতে মূলত নারী শ্রমিকের আধিক্য লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকের তাসলিমা একটি বস্তিতে রুম নিয়ে বসবাস করে।। জীবিকার্জনের জন্য সে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে, যার মাধ্যমে তার দিন কোনো রকমে চলে যায়। তাসলিমার জীবন ব্যবস্থা উপরে। আলোচিত শহুরে সমাজের জীবন ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শহুরে জীবনব্যবস্থা স্বাধীন, সংগ্রামী ও প্রতিযোগিতামূলক।

ঘ. রফিকের বসবাসকৃত সমাজ অর্থাৎ, গ্রামীণ সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান।। প্রথমত, যোগাযোগ ব্যবস্থা অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে গ্রামীন সমাজ জীবনে এসেছে আধুনিকতার ছোয়া। গ্রামের মানুষ এখন সহজে একস্থান হতে অন্যত্র যেতে পারছে যা শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছে। ফলাফলস্বরূপ, গ্রামের মানুষ ভূমির ওপর নির্ভর না করে অন্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার হার বৃদ্ধির ফলে মানুষ আত্মসচেতন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গ্রামীণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অকৃষিজ পেশায় বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত, দেশে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে কর্মসংস্থানের বহুবিধ খাত সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামীন মানুষ চাষাবাদের তুলনায় অন্যান্য পেশার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। উপর্যুক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গ্রামীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারকে দায়ী করা যায়।

৩. রসুলপুর গ্রামের করিম শেখ বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক। তিনি অনেক জমি বর্গা দেন, আবার কিছু জমি ক্ষেতমজুর দিয়ে চাষ করান। স্বচ্ছল ব্যক্তি করিম শেখের গ্রামে যথেষ্ট প্রভাব-প্রতিপত্তি। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা জামালের প্রভাব-প্রতিপত্তিও কম নয়। করিম শেখকে কয়েকবার জমি সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসার জন্য জামালের নিকট যেতে হয়েছে। এদিকে গ্রামের উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজকর্মী মাজেদ সম্প্রতি বিপুল ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। 
ক. গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা কোনটি?
খ. গ্রামীণ সমাজে সামাজিক গতিশীলতা তুলনামূলকভাবে কম কেন?
গ. গ্রামীণ সমাজের ভূমিভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাসে উদ্দীপকের করিম শেখের অবস্থান ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. ‘‘উদ্দীপকে রসুলপুর গ্রামের ক্ষমতা কাঠামোয় সনাতন উপাদানের গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে"ত তোমার মতামত দাও। 

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা কৃষি।

খ. গ্রামীণ সমাজে সামাজিক গতিশীলতা তুলনামূলকভাবে কম, কেননা এখানে সুনির্দিষ্ট সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে চলতে হয়। সামাজিক গতিশীলতা নির্ভর করে পেশার পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ওপর। কৃষি নির্ভর গ্রামীণ সমাজে একই পেশার ওপর সকলে নির্ভরশীল বলে সামাজিক গতিশীলতার হার তুলনামূলক কম। এছাড়া গ্রামীণ সমাজে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ছোয়া কম পড়ে বলেও সামাজিক গতিশীলতা অনেকাংশে কম থাকে।

গ. গ্রামীণ সমাজের ভূমিভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাসে করিম শেখের অবস্থান গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার ধনী কৃষককে ইঙ্গিত প্রদান করে। গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় যারা অনেক ভূ-সম্পত্তির মালিক এবং ভূমির ওপর নির্ভর করে যথেষ্ট সচ্ছলভাবে দিনযাপন করতে পারে তাদেরকে ধনী কৃষক বলে। এদের অনেকেই আবার অন্যদেরকে ভাগে জমি চাষ করতে দেয় এবং মহাজনী কারবার অর্থাৎ, ঋণ প্রদান বা বন্ধকী কারবারের সাথে জড়িত থাকে। গ্রামে ধনী কৃষকেরা প্রভাবশালী হয়ে থাকেন।
উদ্দীপকেও দেখতে পাই, রসুলপুর গ্রামের করিম শেখ বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক। তিনি অনেক জমি বর্গা দেন এবং কিছু জমি ক্ষেত মজুর দিয়ে চাষ করান। স্বচ্ছল ব্যক্তি করিম শেখের গ্রামে যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তির ফলে তার অবস্থান গ্রামীন সামাজিক স্তর বিন্যাসের ধনী কৃষক শ্রেণির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে।
তাই বলা যায়, ভূমিভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাসে করিম শেখের অবস্থানকে ধনী কৃষক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। 

ঘ. উদ্দীপকে রসুলপুর গ্রামের ক্ষমতা কাঠামোয় সনাতন উপাদানের গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছেত বক্তব্যটির সাথে আমি একমত। রসুলপুর গ্রামের ক্ষমতা কাঠামোয় সনাতন উপাদান বলতে ভূমি মালিকানাকে বোঝানো হয়েছে। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর গবেষণায় ভূমি মালিকানা একটা স্বাধীন চলক হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। ভূমি মালিকানা ছাড়াও আরও কয়েকটি সনাতন উপাদান রয়েছে, যেমন- নেতৃত্ব, বংশ মর্যাদা, জ্ঞাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি। গ্রামীণ সমাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। যদিও বর্তমানে এক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। গ্রামীণ সমাজে যাদের বংশ মর্যাদা উঁচুতে তারাই ক্ষমতাবান এবং জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সাহায্যে সহজে নেতৃত্ব লাভ করে। তবে বর্তমানে গ্রামের ক্ষমতা কাঠামোয় সব সনাতন উপাদানের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, রসুলপুর গ্রামের স্বচ্ছল প্রভাবশালী ব্যক্তি করিম শেখ প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক। গ্রামে তার যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা জামালের কাছে জমিসংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসার জন্য করিম শেখের যেতে হয়। উদ্দীপকের শেষে দেখা যায়, উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজকর্মী মাজেদ বিপুল ভোটে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। এইসব ঘটনা গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোয় সনাতন উপাদানের গুরুত্ব হ্রাসকে ইংগিত করে।
আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, গ্রামের ক্ষমতা কাঠামোয় সনাতন উপাদান তথা বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তি, বংশমর্যাদা, জ্ঞাতিগোষ্ঠীর আধিক্যতা ইত্যাদির গুরুত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

৪. মির্জাপুর গ্রামের অর্ধেকটা জুড়েই তালুকদার বংশের আবাস। হাসান তালুকদার তাদের মধ্যে প্রভাবশালী এবং সারা এলাকায় তার অনেক দাপট। গ্রামে তিনি অনেক ভূ-সম্পত্তির মালিক। শহরেও তার বিশাল বাড়ি ও সম্পত্তি আছে বিধায় মাঝে মাঝেই শহরে থাকেন। একদিন শহরের এক বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেন তার গ্রাম থেকেই শহরে আসা সাধারণ পরিবারের সন্তান সরকারদল সাংসদ মহিবুর রহমান প্রধান অতিথি। সেই অনুষ্ঠানে তিনি শুধুই একজন সাধারণ সুধী। 
ক. সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্রস্থল কোথায় অবস্থিত? 
খ. জেন্ডার বৈষম্য বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ সমাজে হাসান তালুকদারের দাপুটে ভূমিকার কারণ কী বলে তুমি মনে কর? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে গ্রামীণ ও শহুরে সমাজে হাসান তালুকদারের অবস্থানগত যে বৈপরীত্য ফুটে উঠেছে তার পেছনের কারণগুলো যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্রস্থল পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় সিন্ধু নদের উপকূলে অবস্থিত।

খ. সমাজে নারী ও পুরুষকে সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার, শ্রম বিভাজনসহ অনেক বিষয়ে তাদের ভূমিকার পার্থক্য বিবেচনা করাকে জেন্ডার বৈষম্য বলা হয়।
জেন্ডার হলো সামাজিকভাবে গড়ে ওঠা নারী-পুরুষের পরিচয়। সমাজ ও। নৃবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, নারী ও পুরুষের মধ্যকার পার্থক্য শারীরিক নয়, বরং সামাজিক। কেউ কেউ মনে করেন, তোল্ডার বৈষম্য একটি শ্রেণি সমস্যা যা পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত।

গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ সমাজে হাসান তালুকদারের দাপুটে ভূমিকার কারণ বংশ মর্যাদা, প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক হওয়া ইত্যাদি বলে মনে করি। গ্রামীণ সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে বংশ মর্যাদার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চবংশীয় লোকেরা সেখানে প্রভাব খাটান এবং সমাজে উচ্চ মর্যাদা লাভ করেন। সম্পত্তিও সামাজিক স্তরবিন্যাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। প্রচুর ভূ-সম্পত্তির অধিকারী গ্রামীণ সমাজে দাপুটে ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং সমাজের নেতৃত্ব দেন। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, মির্জাপুর গ্রামের অর্ধেকটা জুড়েই তালুকদার বংশের আবাস এবং হাসান তালুকদার সেই গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক। তাছাড়া শহরেও তার বিশাল বাড়ি় আছে এবং মাঝে মাঝেই তিনি শহরে বসবাস করেন।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে গ্রামীণ সমাজের প্রেক্ষাপটে উচ্চ বংশ মর্যাদা, অধিক ভূ-সম্পত্তি ইত্যাদির কারণে হাসান তালুকদার প্রভাবশালী ও দাপুটে ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

ঘ. উদ্দীপকে গ্রামীণ ও শহুরে সমাজে হাসান তালুকদারের অবস্থানগত বৈপরীত্য ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে দেখতে পাই, হাসান তালুকদার গ্রামের একজন প্রভাবশালী ও দাপুটে ব্যক্তি। তিনি অনেক ভূ-সম্পত্তির মালিক এবং শহরেও তার বাড়ি রয়েছে। মাঝে মাঝেই তিনি শহরে এসে বসবাস করেন এবং একদিন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দেখেন শহুরে সমাজে তার কোনো প্রভাব কিংবা দাপট নেই, বরং তারই গ্রামের সাধারণ পরিবারের ছেলে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান সেখানে প্রধান অতিথি। গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের শহুরে সমাজে দাপটে না থাকার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
প্রথমত, গ্রামে ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব ভূ-সম্পত্তির ওপর নির্ভর করলেও শহুরে সমাজে ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব সম্পত্তি ছাড়াও শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ সমাজে বংশমর্যাদার ওপর সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করে। কিন্তু শহুরে আধুনিক সমাজে বংশ মর্যাদার চেয়ে ব্যক্তিগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
উপর্যুক্ত কারণগুলোর জন্য উদ্দীপকের হাসান তালুকদার গ্রামীণ সমাজের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার পরও শহরের একটি অনুষ্ঠানে সাধারণ সুধী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

৫. গণি মিয়া গ্রামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার ক্ষেত খামারে গ্রামের বেশির ভাগ কৃষক কাজ করে থাকে। মূলত তার জমিতে সবাই বর্গাচাষি হিসাবে কাজ করে। তারই এক বন্ধু শহরে থাকে। তিনি শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ। এলাকায় নেতা হিসেবে তার বেশ নামডাক। তার কথায় মুহূর্তেই হাজার লোক জড়ো হয়।
ক. গ্রামীণ সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূল ভিত্তি কী?
খ. বর্গাচাষি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ ও শহরে স্তরবিন্যাসের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. গণি মিয়া ও তার বন্ধুর সামাজিক স্তরবিন্যাসে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান কাজ করে'- বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. গ্রামীণ সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূল ভিত্তি হলো ভূমি মালিকানা।

খ. বর্গাচাষী বলতে যারা ধনী কৃষকদের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে। তাদেরকে বোঝায়।
যারা ভূমি মালিকদের জমি চাষাবাদ করে বিনিময়ে কিছু পরিমাণ টাকা বা কিছু পরিমাণ ফসল পায়। তবে এদের নিজস্ব কিছু জমি আছে কিন্তু এর ভিত্তিতে তাদের অন্ন সংস্থান হয় না তারাই বর্গাচাষি।

গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ সমাজের ভূমি মালিকানার ভিত্তিতে স্তরবিন্যাস এবং শহরে স্তরবিন্যাসের ক্ষমতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। গ্রামীণ সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূলভিত্তি হলো ভূমি মালিকানা। ভূমি মালিকানার ভিত্তিতে গ্রামে ধনী কৃষক, প্রান্তিক কৃষক, বর্গাচাষি, ভূমিহীন কৃষক এই চার ধরনের শ্রেণি দেখা যায়। গ্রাম সমাজে যারা বেশি জমির মালিক তারা ধনী কৃষক রূপে প্রতিপন্ন হয়। এদের অনেকেই আবার অন্যদেরকে ভাগে জমি চাষ করতে দেয়। গণি মিয়ার ক্ষেত খামারে গ্রামের বেশির ভাগ কৃষক কাজ করে। তারা জমিতে বর্গাচাষি হিসাবে কাজ করে। তাই বলা যায়, গণি মিয়া ধনী কৃষকের প্রতনিধিত্ব করছেন। অন্যদিকে তার বন্ধু শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ। নেতা হিসেবে এলাকায় তিনি সুপরিচিত। অর্থাৎ, তিনি অশাসক এলিটের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কারণ পাঠ্য বইয়ের তথ্য অনুযায়ী অশাসক এলিট হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা যারা ক্ষমতায় নেই এবং আগামীতে ক্ষমতায় যাবার অপেক্ষায় আছে। এরা সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে গ্রামীণ সমাজের ধনী কৃষক এবং শহরে সমাজের অশাসক এলিটের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. গ্রামীণ এবং শহরের সামাজিক স্তরবিন্যাসে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান কাজ করে- বক্তব্যটি যথার্থ।
গ্রামীণ স্তরবিন্যাসে ভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত। অধিক ভূমির মালিকরা বর্গাদার এবং ক্ষেতমজুরদের ওপর ক্ষমতার প্রভাব দেখায়। অনেক সময় তারা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বা চেয়ারম্যানের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। গ্রামের সাধারণ মানুষ কোনো সৎ পরামর্শের জন্য, বিভিন্ন আইনি জটিলতা থেকে রেহাই পাবার জন্য শিক্ষিত লোকের কাছে ছুটে যায়। এভাবে গ্রামের শিক্ষিতরা গ্রামীণ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহর সমাজে সম্পত্তি, শিল্প ও কারখানার মালিকগণ বিভিন্নভাবে সমাজে ক্ষমতা প্রদর্শন করে থাকে। শহর জীবনে ক্ষমতা চর্চার অন্যতম উৎস হলো রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাধারণত ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে অবস্থান করে। এছাড়া শহরের শিক্ষিত শ্রেণিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন। তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করে থাকেন। শহর সমাজের সদস্যরা প্রায়শ সহজে এক মর্যাদা থেকে অন্য মর্যাদায় উপনীত হতে পারে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি সমাজে যথেষ্ঠ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে স্বীকৃত হয়ে থাকে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, গণি মিয়া ও তার বন্ধু গ্রামীণ ও শহরের সামাজিক স্তরবিন্যাসে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান কাজ করে।

৬. সুমির দাদা গ্রামে অনেক জমির মালিক। প্রায় ১০-১২ জন বর্গাচাষি তার জমিতে কাজ করে। এবার শীতকালীন ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে গিয়ে সুমি লক্ষ করল, এখানকার মানুষ বেশ আন্তরিক। তারা বেশ সহজ-সরল ও ধর্মভীরু। পাড়া-প্রতিবেশীরা পিঠা বানানোর সময় তার দাদিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য করছে। তবে বেশিরভাগ পরিবার কৃষিনির্ভর হওয়ায় বর্ধিত পরিবারই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। 
ক. বর্গাচাষি কারা?
খ. চাপসৃষ্টিকারী দল বলতে কী বোঝ? 
গ. গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাসে উদ্দীপকের সুমির দাদার অবস্থান ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহের সাথে নগর সমাজের বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক আলোচনা করো। 

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যেসব কৃষক সামান্য পরিমাণ ভূমির মালিক এবং তার সাথে ধনী কৃষকের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে তারাই বর্গাচাষি।

খ. চাপসৃষ্টিকারী দল বলতে একটি সংগঠিত জনসমষ্টিকে বোঝায় যারা সাধারণত দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। তারা বিশেষ বিশেষ সময়ে বা ক্ষেত্রে নিজেদের গণতান্ত্রিক তথা মৌলিক অধিকার বলে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মন্তব্য প্রকাশ করে, বিবৃতি প্রদান করে বা সাক্ষাৎকার দেয়। আমাদের নগরসমাজ কাঠামোর ক্ষমতা বিন্যাসের ক্ষেত্র ও নেতৃত্বের গতি প্রকৃতি-নির্ধারণে চাপসৃষ্টিকারী দলসমূহের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।

গ. গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাসে ভূমির মালিকানার ভিত্তিতে উদ্দীপকের সুমির দাদা ধনী কৃষকের অন্তর্ভুক্ত।
গ্রামীণ সমাজে যারা অধিক জমির মালিক এবং যারা ভূমির উপর নির্ভর করে যথেষ্ট সচ্ছলভাবে দিনযাপন করে তারাই ধনী কৃষক। এদের নিয়ন্ত্রণে একাধিক বর্গাচাষি থাকে, যারা এদের জমিতে চাষাবাদ করে। আর্থিক ক্ষমতার কারণে তারাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, স্থানীয় ক্ষমতা কাঠামো ইত্যাদিতে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পায় এবং সমাজের উচ্চ স্তরে আসীন হয়। গ্রামের অনেক ধনী কৃষক আবার মহাজনী কারবার অর্থাৎ ঋণ প্রদান বা বন্ধকী কারবারের সাথে জড়িত। অনুরূপভাবে উদ্দীপকের সুমির দাদাও গ্রামে অনেক জমির মালিক। প্রায় ১০-১২ জন বর্গাচাষি তার জমিতে কাজ করে।
তাই সুমির দাদাকে ধনী কৃষক হিসেবে অভিহিত করা যায়। 

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত গ্রামীণ সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহের সাথে নগর সমাজের বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো গ্রামীণ সমাজের অধিক সংখ্যক লোকের পেশা হচ্ছে কৃষি। সেখানকার জনগণ ঐতিহ্যগত প্রথা, বিশবাস, দৃষ্টিভঙ্গি, রীতি-নীতি এবং মূল্যবোধে বিশবাসী। এ সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমষ্টিগত চেতনা, ঐক্য এবং এখানে বসবাসরত জনগণের মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক সামাজিক সম্পর্ক বিদ্যমান। গ্রামীণ সমাজে সংখ্যাগত দিক থেকে যৌথ পরিবারের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই লক্ষণীয়। গ্রামীণ এলাকায় ভূমির তুলনায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। এ ছাড়া সেখানে স্তরবিন্যাসের আধিক্য, সামাজিক গতিশীলতার হার এবং সামাজিক পরিবর্তনের গতি কম থাকে।
অন্যদিকে শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। সেখানকার জনগণ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। তবে অধিকাংশ জনগণের পেশাই অকৃষিজ। শহর এলাকায় একক পরিবারের প্রাধান্য বেশি পরিলক্ষিত হয়। এখানকার জনগণ জ্ঞান, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মর্যাদা লাভ করে থাকে। শহুরে সমাজে শিক্ষা, চাকরি সব ক্ষেত্রেই নারী পুরুষের সহাবস্থান লক্ষণীয়। শহরে প্রযুক্তির পর্যাপ্ত ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, গ্রামীণ ও নগর সমাজের মধ্যে উক্ত পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও দ্রুত নগরায়ণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার। কারণে পার্থক্য দ্রুতই কমে আসছে।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

৭. আবহমানকাল থেকেই রূপনারায়ণপুরের মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। পার্শ্ববর্তী হরিচন্দ্রপুর এলাকার তুলনায়। রূপনারায়ণপুরের জনবসতি অনেক কম। অন্যদিকে হরিচন্দ্রপুরের জনসংখ্যা বেশি হলেও নাগরিক জীবনের প্রায় সকল সুযোগ-সুবিধা সেখানে পাওয়া যায়। 
ক. বাংলাদেশে কত শতাংশ লোক গ্রামে বাস করে?
খ. মহাজনি দাদন ব্যবসায় বলতে কী বুঝ? 
গ. উদ্দীপকের রূপনারায়ণপুর এলাকার বিবরণ দ্বারা কীরূপ সমাজের পরিচয় ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রূপনারায়ণপুর ও হরিচন্দ্রপুর এলাকার মধ্যে চমৎকার আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান- তুমি কি বক্তব্যটি সমর্থন কর? সুচিন্তিত মতামত দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশে তিন-চতুর্থাংশ লোক গ্রামে বাস করে।

খ. বাংলাদেশে গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষ বেশি রাজনীতি সচেতন হলেও বর্তমানে গ্রামেও রাজনীতিচর্চা হয়ে থাকে।
গ্রামাঞ্চলের রাজনীতি অনেকাংশেই পরিবার প্রভাবিত। সেখানে প্রভাবশালী পরিবার লোকজনকে বংশ পরম্পরায় স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। তবে গ্রামীণ জীবনের তুলনায় শহুরে সমাজে রাজনীতি চর্চা বেশি হয়ে থাকে। এখানে মানুষ নিজ দক্ষতায় রাজনীতি চর্চা করে থাকে। অর্থাৎ, শহরাঞ্চল প্রধানত জাতীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

গ. উদ্দীপকে রূপনারায়ণপুর এলাকার বিবরণ দ্বারা গ্রামীণ সমাজের পরিচয় ফুটে উঠেছে। গ্রাম সমাজ আপেক্ষিকভাবে কৃষিনির্ভর পেশার প্রাধান্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। অধ্যাপক সিমন্সের মতে, কৃষি ও কৃষি সন্নিহিত পেশায় জড়িত জনসাধারণের জীবনযাত্রা গ্রাম হিসেবে বিবেচিত। গ্রামীণ সমাজ বলতে মূলত কৃষিকাজ ও কৃষক সমাজ নিয়ে গঠিত জনপদকে বোঝায়। অনুরূপভাবে উদ্দীপকেও দেখা যায়, রূপনারায়নপুরের অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া রূপনারায়নপুর এলাকায় জনবসতি কম যা গ্রামীণ সমাজকে নির্দেশ করে। কেননা গ্রামীণ সমাজ হলো ক্ষুদ্রায়তনের এবং কম বসতিপূর্ণ। আবার রূপনারায়নপুর এলাকার ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেখানে নগর জীবনের বিপরীত চিত্র বিদ্যমান যা গ্রামীণ সমাজের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা নগর সমাজের বিপরীতে যে সমাজ তাই গ্রামীণ সমাজ। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে গ্রামীণ সমাজের পরিচয় ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে রূপনারায়ণপুর গ্রামীণ সমাজ ও হরিচন্দ্রপুর শহর সমাজকে নির্দেশ করে। উক্ত সমাজের তথা গ্রামীণ সমাজ ও শহর সমাজের মধ্যে চমৎকার আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান- বক্তব্যটি আমি সমর্থন করি। বাংলাদেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ সরাসরি কৃষির সাথে সম্পর্কিত। ফলে শহুরে সমাজকে গ্রামীণ সমাজের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে গ্রামীণ ও শহুরে সমাজ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
গ্রাম ও শহর সমাজের অধিবাসীদের সমাজজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকলেও তাদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। উভয় ধরনের জীবনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই সম্পর্ক সম্বন্ধে অবহিত হওয়া যায়।
শহরে জাতীয় উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করে থাকে। অনেক সময় এসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনেকেই শহরে আসে। ইদানীং গ্রাম সমাজেও এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ সকল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাম ও শহর সমাজের আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হয়।
সম্প্রতি শহর সমাজের মতো গ্রামীণ সমাজেও রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। গ্রামীণ পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার। নির্বাচনেও দলীয় প্রভাব চোখে পড়ে। তাছাড়া অনেকেই শিক্ষিত হয়ে। গ্রামে ফিরে এসে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং উপযুক্ত আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, গ্রাম ও শহর সমাজের মধ্যে চমৎকার আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান।

৮. মেহের মন্ডল একজন ধনী কৃষক ও স্বনামধন্য মাতববর। কালিপুর মৌজায় তার অনেক জমিজমা রয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করলেও তিনি সন্তান-সন্ততিদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তার বড় ছেলে জাহিদ ঢাকায় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক।
ক. মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলতে কাদেরকে বোঝায়? 
খ. ক্ষমতার ভিত্তিতে নগর সমাজের সামাজিক স্তরগুলো কী কী? বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকের মেহের মন্ডলের অবস্থানের ভিত্তিতে কোন সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসের রূপ ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের জাহিদ সাহেব যে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন, তার সাথে মেহের মন্ডলের সমাজের পার্থক্য তুলে ধরো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলতে সাধারণত সীমিত আয়ের শিক্ষিত চাকরিজীবী শ্রেণিকে বোঝায়।

খ. ক্ষমতার ভিত্তিতে নগর সমাজের স্তরায়নগুলো হলো- 
১. শাসক এলিট,
২. অশাসক এলিট এবং
৩. সাধারণ চাপসৃষ্টিকারী দলসমূহ।
• শাসক এলিট তারাই যারা শাসন ক্ষমতার অধিষ্ঠিত থাকে। যেমন- ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল।
• অশাসক এলিট সমাজের শীর্ষে অবস্থান করে কিন্তু তাদের শাসন ক্ষমতা থাকে না। যেমন- বিরোধী রাজনৈতিক দল। 
• সাধারণ চাপ সৃষ্টিকারী দলসমূহ রাজনৈতিক দল না হলেও দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি নির্ধারণে শাসকের উপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

গ. উদ্দীপকে মেহের মন্ডলের অবস্থানের ভিত্তিতে গ্রামীণ সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসের রূপ ফুটে উঠেছে। গ্রামীণ সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূল ভিত্তি হলো ভূমি মালিকানা। ভূমি মালিকানার ভিত্তিতে গ্রামীণ সমাজের চারটি শ্রেণি দেখা যায়। এসব শ্রেণি হলো- ১. ধনী কৃষক, ২. প্রান্তিক কৃষক, ৩. বর্গাচাষি কৃষক, ৪. ভূমিহীন কৃষক বা কৃষি শ্রমিক। এক্ষেত্রে গ্রাম সমাজে যারা বেশি জমির মালিক তাদেরকে ধনী কৃষক বলা হয়। ধনী কৃষক শ্রেণি ভূমির ওপর নির্ভর করে যথেষ্ট সচ্ছলভাবে দিনযাপন করতে পারে। এদের অনেকেই আবার অন্যদেরকে ভাগে জমি চাষ করতে দেয়। তাছাড়া এদের অনেককে আবার ঋণ প্রদান বা বন্ধকী কারবারের সাথে জড়িত থাকতে দেখা যায়। উদ্দীপকে দেখা যায় মেহের মন্ডল একজন ধনী কৃষক ও স্বনামধন্য মাতববর। কালিপুর মৌজায় তার অনেক জমিজমা রয়েছে যা গ্রামীণ সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্তর্ভুক্ত ধনী কৃষক শ্রেণির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে জাহিদ সাহেবের প্রতিনিধিত্বকারী সমাজ অর্থাৎ, শহুরে সমাজের সাথে মেহের মন্ডলের সমাজ অর্থাৎ, গ্রামীণ সমাজের তুলনামূলক আলোচনা নিম্নরূপ-
গ্রাম সমাজে অর্থনীতির ভিত্তি হলো ভূমি এবং অধিকাংশ মানুষই কৃষিভিত্তিক পেশানির্ভর। অল্প কিছু ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবী লক্ষণীয় হলেও পেশার বৈচিত্র্য দেখা যায় কম। অন্যদিকে শহরে অকৃষিভিত্তিক এবং শিল্পমুখী পেশা গ্রহণের প্রবণতা বেশি। শহরে শ্রমবিভাজনও দৃশ্যমান।
গ্রামীণ সমাজের ভিত্তি গড়ে ওঠে অধিবাসীদের রক্তের সম্পর্কের ওপর, অন্যদিকে শহরে সামাজিক সম্পর্কের পরিধি বিসত্মৃত, জটিল ও বৈচিত্র্যময়। গ্রামীণ সমাজের রাজনীতি পরিবার প্রভাবিত হলেও স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রাধান্যও লক্ষণীয়। অন্যদিকে শহুরে সমাজে রাজনীতির চর্চা বেশি হয়ে থাকে এবং তা জাতীয় রাজনীতির সাথেই বেশি যুক্ত থাকে।
গ্রামীণ সমাজে সাংস্কৃতিক জীবনে বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় দিক থেকে পার্থক্য দেখা যায় এবং শিক্ষার হারও তুলনামূলকভাবে কম। গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা সরকারনির্ভর। অন্যদিকে, শহর সমাজে শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে বেশি এবং সাংস্কৃতিক জীবনে শহরবাসীর মানসিকতা ও রুচির ছাপ দেখা যায়। তাই বলা যায়, জাহিদ সাহেবের প্রতিনিধিত্বকারী সমাজের সাথে মেহের মন্ডলের গ্রামীণ সমাজের তুলনামূলক মৌলিক পার্থক্য দৃশ্যমান।

৯. দীপনের বসবাসরত এলাকাটি গতিময় ও নিত্য পরিবর্তনশীল বিকাশমুখী জীবনযাত্রার মূর্ত প্রতীক। এখানে পাশাপাশি বসবাসরত মানুষের মধ্যেও তেমন পরিচয় নেই। সমাজবিজ্ঞানী ওয়েবার এরূপ এলাকাকে কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
ক. কোন দেশের ভূগোলবিদ নগরীয় জনপদের ব্যবহারিক শ্রেণিবিন্যাস উপস্থাপন করেছেন? 
খ. শহুরে সমাজে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতি কীরূপ?
গ. উদ্দীপকে কীরূপ সমাজের পরিচয় ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আমেরিকান ভূগোলবিদ হ্যারিস নগরীয় জনপদের ব্যবহারিক শ্রেণিবিন্যাস উপস্থাপন করেছেন।

খ. শহুরে সমাজে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ তুলনামূলক কম। বাংলাদেশের শহুরে সমাজ সাধারণত বৃহৎ এবং অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট। ফলে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ কম। শহরের মানুষেরা অত্যন্ত যান্ত্রিক ও কৃত্রিম প্রকৃতির হওয়ায় পারস্পরিক আলাপ তেমন হয় না। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের সামাজিক দূরত্ব লক্ষ করা যায়।

গ. উদ্দীপকে শহুরে সমাজের পরিচয় ফুটে উঠেছে।
শহর হচ্ছে গতিময় ও নিত্য পরিবর্তনশীল বিকাশমুখী জীবনযাত্রার মূর্তপ্রতীক। শহরের লোকেরা পাশাপাশি বাস করলেও তাদের মধ্যে পরিচয় থাকে না। আবার শহুরে সমাজের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞানী ওয়েবার কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শহরকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। শহর অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি বসবাসের স্থান, বৃক্ষ, বাজার বিদ্যমান, শহরে আংশিক রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন বিদ্যমান। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ওয়েবারের নির্দেশনা থেকেই পাওয়া যায়। এগুলো দীপনের বসবাসরত এলাকার সাথেও সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা দীপনের বসবাসরত এলাকাটি গতিময় ও নিত্য পরিবর্তনশীল বিকাশমুখী জীবনযাত্রার মূর্তপ্রতীক। এছাড়া দীপনের এলাকায় পাশাপাশি বসবাসরত মানুষের মধ্যেও তেমন পরিচয় নেই, যা শহুরে সমাজকে নির্দেশ করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে শহুরে সমাজের পরিচয় ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজ হলো শহরে সমাজ। এ সমাজের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- শহরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে শহরের আকারও অনেক বেশি হয়ে থাকে। শহরের মাটি অনেক শক্ত সেখানে কৃষি কাজের পরিবর্তে অকৃষিজ যেমন- শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে। এ সমাজে একক বা অনু পরিবারের অস্তিত্ব বেশি লক্ষণীয়। এ সমাজে জ্ঞাতি সম্পর্ক তেমন একটি প্রভাব বিস্তার করে না। শহুর সমাজে ধর্মের প্রভাব কম থাকে। এখানকার মানুষ উদারনৈতিক, প্রগতিশীল এবং সামাজিক পরিবর্তনের পক্ষে। এ সমাজের অন্যতম সমস্যা হলো বাসগৃহের সমস্যা। এছাড়া এ সমাজের সদস্যদের মধ্যে সামাজিক দুরুত্ব অনেক বেশি, তবে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাও বহুলাংশে যান্ত্রিক প্রকৃতির। বাংলাদেশের শহরগুলোতে অধিবাসীদের মধ্যে জীবনের গতিবেগ অনেক বেশি তারা উচ্চভিলাষী।
সুতরাং শহুরে সমাজের বৈশিষ্ট্য হলো- জনবহুল, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, উচ্চ শিক্ষা ও সুচিকিৎসার কেন্দ্রস্থল, অকৃষিভিত্তিক পেশা বিচিত্র মানবগোষ্ঠীর সমাবেশস্থল ইত্যাদি।

১০. কালু, শেখ সুন্দরপুর গ্রামের সবচেয়ে বেশি জমির মালিক জমি থেকে প্রাপ্ত ফসল দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণের প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত যা থাকে তা বিক্রি করে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। একই গ্রামের মামুন মিয়া নিজের সবটুকু জমিতে কঠিন পরিশ্রম করে পরিবারের ভরণপোষণ চালান। কিন্তু তিনি কারও জমি বর্গায় চাষ করেন। না।
ক. বাংলাদেশের প্রকৃত পরিচয় কোনটি?
খ. শহর বলতে কী বোঝায়?
গ. কালু শেখ কোন শ্রেণির কৃষক? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত কৃষক শ্রেণি ব্যতীত অন্য কোনো কৃষক শ্রেণির কথা তোমার জানা আছে কি? পঠিত বিষয়ের আলোকে মতামত দাও।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. গ্রামীণ বাংলাদেশই হলো বাংলাদেশের প্রকৃত পরিচয়।

খ. শহর বলতে গতিশীল ও পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার প্রতীককে বোঝায়। ইংরেজি Urban শব্দটির বাংলা রূপ হলো শহর। শহর বলতে এমন একটি সীমিত এলাকাকে বোঝায়, যেখানে উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী মোটামুটি স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং কৃষিকাজ ব্যতীত অন্যান্য পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।

গ. কালু শেখ ধনী ও মালিক শ্রেণির কৃষক। ধনী কৃষক হচ্ছে, যারা গ্রামের সর্বাধিক জমির মালিক এবং জমি থেকে এমন আয় হয় যা তাদের পরিবারের ভরণপোষণের খরচ মিটিয়েও প্রচুর উদ্বৃত্ত থাকে। অর্থাৎ, তারা ভূমির ওপর নির্ভর করে যথেষ্ট সচ্ছলভাবে দিনযাপন করতে পারে। আর যে কৃষক বা চাষি তার নিজ ভূমিতে চাষাবাদ করে ফসল ফলায় তিনি মালিক চাষি। প্রায় সব জমির মালিকরাই মালিক চাষির অন্তর্ভুক্ত।
কালু শেখ সুন্দরপুর গ্রামের সবচেয়ে বেশি জমির মালিক। জমি থেকে প্রাপ্ত ফসল দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণের প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত যা থাকে তা বিক্রি করে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।
সুতরাং বলা যায়, কালু শেখ একজন ধনী মালিক শ্রেণির চাষি।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে নির্দেশিত কৃষক ব্যতীত অন্য আরও কৃষক শ্রেণির কথা আমার জানা আছে।
ভূমি মালিকানার ভিত্তিতে গ্রামীণ সমাজে চার শ্রেণির কৃষক দেখতে পাওয়া যায়। যথা-১. ধনী কৃষক, ২. প্রান্তিক কৃষক, ৩. বর্গাচাষি ও ৪. ভূমিহীন কৃষক।
উদ্দীপকে যে দুজন কৃষকের বর্ণনা রয়েছে তাদের মধ্যে কালু শেখ হলো ধনী কৃষক আর মামুন মিয়া হলো প্রান্তিক কৃষক। সুতরাং উদ্দীপকে নির্দেশিত কৃষক শ্রেণি ব্যতীত আরও যে দুটি শ্রেণি রয়েছে তারা হলো বর্গাচাষি ও ভূমিহীন কৃষক বা কৃষি শ্রমিক। বর্গাচাষি হলো তারা যাদের কোনো জমি নেই। তারা ধনী কৃষকের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে। উল্লেখ্য, বাড়তি উৎপাদনের লক্ষ্যে বৃহৎ খামার মালিক কিংবা অনুপস্থিত অকৃষক ভূমি মালিক থেকে চাষের জন্য ভূমি গ্রহণ করে চাষাবাদ প্রক্রিয়াকে বর্গা পথ বলে উল্লেখ করা হয়। একজন কৃষককে তখনই বর্গাচাষি বলে চিহ্নিত করা যাবে, যখন সে তার চাষাধীন জমির ২৫ শতাংশ অন্যের থেকে বর্গা নেয়।
আর যাদের কোনো ভূমি নেই তারাই ভূমিহীন শ্রেণির কৃষক। তবে সর্বোচ্চ ০.৫ একর পর্যন্ত ভূমি থাকলেও তাকে ভূমিহীন বলে মনে করা হয়। আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে ভূমির মালিকানা হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে এমন অনেক কৃষকই গ্রামাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এরা ধনী বা প্রান্তিক কৃষকদের জমিতে মজুরির বিনিময়ে কাজ করে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে নির্দেশিত কৃষক শ্রেণি ব্যতীত আমার জানা কৃষক শ্রেণিদ্বয় হলো ভূমিহীন কৃষক বর্গাচাষি।

Post a Comment

Previous Post Next Post