HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরিতে সহপাঠীদের সাথে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায় নিলয়। এরপর এ দিনটি উপলক্ষে কলেজে আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে একজন স্যার বলেন, আজ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন। এই দিনটিতে বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছেন ছাত্র-শিক্ষকসহ বাংলার জনতা। 
ক. যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন কত সালে হয়?
খ. ছয় দফা কর্মসূচি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকটি কোন আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত আন্দোলনটির সফলতায় বাঙালির জাতীয়তাবাদের বীজ রোপিত হয়েছিল' - বিশ্লেষণ করো। 

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

খ. পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন লাভের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে যে দাবি উত্থাপন করেছিলেন তাই 'ছয় দফা কর্মসূচি' হিসেবে পরিচিত। 
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নানাভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হতে থাকে। এ অবস্থার অবসান এবং পূর্ববাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর এক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে দাবিসমূহ পেশ করেন, তা ছয়দফা কর্মসূচি হিসেবে অভিহিত। ছয় দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালি জাতির ‘মুক্তির সনদ' বা 'ম্যাগনাকাটা'।

গ. উদ্দীপকটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ভাষা আন্দোলন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই শাসকগোষ্ঠী ভাষার প্রশ্নে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর প্রবল আঘাত হানে। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান. এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন, 'Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan.' সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্র-জনতা এ উক্তির তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানও উর্দুকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। পাকিস্তান সরকারের এরূপ অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' কর্তৃক সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা আয়োজনের কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে সে মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। নিহত হন সালাম, বরকত, জববার প্রমুখ। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র-জনতার জীবনদানকে স্মরণ করার জন্য ১৯৫৩ সাল থেকে 'শহিদ দিবস' পালন করা হয়। দিবসটিতে বাঙালি আপামর জনসাধারণ প্রভাত ফেরিতে অংশ নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার মাধ্যমে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, নিলয় ২১ ফেব্রুয়ারিতে সহপাঠীদের সাথে প্রভাত ফেরিতে অংশ নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায়। পরবর্তীতে নিলয়দের একজন শিক্ষক দিবসটির ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। পূর্বে বর্ণিত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং উদ্দীপকের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্ট যে, উদ্দীপকটি ভাষা আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত আন্দোলন তথা ভাষা আন্দোলনের সফলতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ রোপিত হয়েছিল।- উক্তিটি ঐতিহাসিকভাবেই যথার্থ এবং প্রমাণিত। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কেননা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পূর্ব বাংলার জনগণ সর্বপ্রথম অধিকার সচেতন হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানিরা যে পশ্চিম পাকিস্তানদের থেকে স্বাতন্ত্র এবং তাদের দাবি যে স্বাতন্ত্র খাতে প্রবাহিত হতে পারে, এ শিক্ষা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। এ আন্দোলন পূর্ব বাংলার জনগণকে সর্বপ্রথম সংগ্রামের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করে। সংগ্রাম ব্যতীত কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব না, তা এ আন্দোলনের ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার শিক্ষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, বুদ্ধিজীবী, কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হন এবং দাবি আদায়ের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ আন্দোলনের ফলে আপামর বাঙালির ভেতর এই চেতনা জাগ্রত হয় যে, ধর্মের দিক থেকে বিভিন্নতা থাকলেও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাঙালিরা একই জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ- ভাষা আন্দোলনের ফলেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার পরিবর্তে ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায় যে, ভাষা আন্দোলনের ফলে সর্বপ্রথম পৃথক জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বাঙালির চেতনা জাগ্রত হয়েছিল, আর এর ওপর ভিত্তি করেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ রোপিত হয়েছিল।

২. যতিন বাবু এবং শফিক সাহেব একই অফিসে চাকরি করেন। যতিন বাবুর জন্ম ১৯৪৮ সালে এবং শফিক সাহেবের জন্ম ১৯৫২ সালে। বয়স এবং ধর্মের পার্থক্য থাকলেও তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে তারা এক সাথে না থাকলেও ঐ সময়কালে একই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা তারা নিজেদের মধ্যে মাঝে মাঝে শেয়ার করেন।
ক. ছয়-দফা কত সালে উত্থাপন করা হয়?
খ. জাতীয়তাবাদ বলতে কী বুঝো?
গ. যতিন বাবু এবং শফিক সাহেবের জন্ম সাল আমাদের কোন আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. যতিন বাবু ও শফিক সাহেবের একই অভিজ্ঞতার সময়কালটি ছিল আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তুমি কি একমত? যুক্তিসহ মূল্যায়ন করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ছয়দফা ১৯৬৬ সালে উত্থাপন করা হয়।

খ. জাতীয়তাবাদ হচ্ছে একধরনের মানসিক চেতনা বা অনুভূতি। জাতীয়তাবাদ বলতে একটি আদর্শকে বোঝানো হয় যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অনান্য সামাজিক ও রাজনেতিক আদর্শকে পরে স্থান দেওয়া হয়। স্বদেশ তথা মাতৃভূমির গৌরব ও অগৌরবকে কেন্দ্র করে সেই দেশের মানুষ বা জাতির অন্তরে যে উল্লাস স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, আতমমর্যাদা ইত্যাদি সঞ্চারিত হয় তাকেই জাতীয়তাবাদ বলে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যতিন বাবু ও শফিক সাহেবের জনমসাল আমাদের ভাষা আনেদালনের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভাষা আন্দোলন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম ধাপ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা আসে। কিন্তু, বাঙালিরা তা মেনে নেয়নি এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৪৮ সালে ২৫ মার্চ 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করা হয় এবং ভাষার দাবিতে আন্দোলন পরিচালনা করা হয়। ১৯৫২ সালে জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসেন এবং এক জনসভায় ঘোষণা দেনু উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এই ঘোষণার পর পরই ৩০ জানুয়ারী ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করা হয় যার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন আরো বেগ পায়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশব্যাপী হরতাল ও ভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি জারিকৃত ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশের গুলিতে জববার, বরকত, শফিকসহ অনেকে শহিদ হন। আর তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। উদ্দীপকে উল্লিখিত যতিন বাবুর ১৯৪৮ সালে এবং শফিক সাহেব ১৯৫২ সালে জনম গ্রহণ করেন যা ভাষা আনেদালনের সূত্রপাত ও ভাষা আন্দোলনের চরম পর্যায়কে তথা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকালব্যাপী ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. যতিন বাবু ও শফিক সাহেবের একই ধরনের অভিজ্ঞতার সময়কাল অর্থাৎ, ১৯৭১ সালটি ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ বক্তব্যের সাথে আমি একমত।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে এক স্মরণীয় ঘটনা। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের সাথে সাথেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, যা পরবর্তী ৯ মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জন ছিল সময়ের দাবিমাত্র। ত্রিশলক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ ও নির্যাতনের অবসান ঘটে। বিশ্বের বুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করে। উদ্দীপকে যতিন বাবু ও শফিক সাহেবের মধ্যে বয়স ও ধর্মের পার্থক্য থাকলেও তারা উভয়ই ১৯৭১ সালে যে ঘটনার অভিজ্ঞতা লাভ করেন তা মূলত উপরে আলোচিত মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. শ্যামলপুর ও কমলগঞ্জ একটি রাষ্ট্রের দুটি অঞ্চল। দুটি অঞ্চলের সকল অধিবাসী মুসলিম হলেও তাদের জীবনধারায় পার্থক্য সুস্পষ্ট। শ্যামলপুরে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে যে অর্থ উপার্জিত হয় তার সবটাই কমলগঞ্জের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় হয়। এমনকি ব্যাংক-বীমাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ কমলগঞ্জে গড়ে উঠে। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমলগঞ্জের মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় শ্যামলপুরের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী একসময় বিক্ষুব্ধ হয়ে স্বাধিকারের দাবি জানায়। 
ক. লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন কে?
খ. ভাষা আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা উল্লেখ কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শ্যামলপুর কমলগঞ্জের মধ্যকার বৈষম্যের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের কোন বৈষম্যের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পিছনে উদ্দীপকের অনুরূপ পরিস্থিতি চালিকাশক্তি হিসেবে প্রেরণা যুগিয়েছিল'ত উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন।

খ. ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে মহিলাদের সভা-সমিতিতে, মিছিলে যোগদান সমাজে নতুন চিন্তাধারার সৃষ্টি করে।
ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে অনেক ছাত্রীই প্রথমে গোপনে পোস্টার লিখে, চাঁদা দিয়ে সহযোগিতা করতেন। অবশ্য ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অনেক মেয়ে সরাসরি মিছিল, মিটিং-এ ছেলেদের সঙ্গে অংশ নেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের শোভাযাত্রায় মেয়েরাই প্রথমে ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের আন্দোলনের অগ্নিকন্যা ছিলেন মর্গান বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, দিনাজপুর, সৈয়দপুরে নারী সমাজের ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

গ. উদ্দীপকের বর্ণিত শ্যামলপুর ও কমলগঞ্জের মধ্যকার বৈষম্যের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পকিস্তান ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুটি অঞ্চল। শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছিল। পাকিস্তানের মোট রপ্তানির ফলে যে অর্থ আসতো, তাতে পূর্ব পাকিস্তানের অবদান ছিল অনেক বেশি। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত এ বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তান শিল্প গড়ে উঠত। সকল গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীরা পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে সব সময় বিভোর থাকত। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি তাদের কোনো খেয়াল ছিল না। চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য বিরাজমান ছিল। উদ্দীপকে বর্ণিত শ্যামলপুরে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে যা অর্থ উপার্জিত হয় তার সবটাই কমলগঞ্জের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় হয়। এ ঘটনাটি উপরের আলোচিত পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিমের পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তাই এটা সুস্পষ্ট যে, উদ্দীপকে দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণকেই নির্দেশ করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের অনুরূপ পরিস্থিতি তথা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে প্রেরণা যুগিয়েছিলোত উক্তিটি যথার্থ বলে আমি মনে করি। পশ্চিম পাকিস্তানিরা অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাশাপাশি অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানিরা প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করতো। বিশেষ করে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছিলো। পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিলো। অবকাঠামোগত বৈষম্য, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য প্রভৃতি চরম আকার ধারণ করেছিল। সাংস্কৃতিক বৈষম্যমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাভাষাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে অধিকার সচেতন করে। এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের ফলে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী একসময় অধিকার সচেতন হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পেছনে উদ্দীপকের অনুপরূপ পরিস্থিতি চালিকাশক্তি হিসেবে বাঙালিদের প্রেরণা যুগিয়েছিলো।

৪. জনাব নজরুল উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান ক্লাসে একটি অধ্যায় পড়াতে গিয়ে বললেন, ‘‘আজকে আমি কতকগুলো সালের কথা বলব যার সাথে একজন নেতা ও একটি জাতির মুক্তি আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনা জড়িয়ে আছে।’’ এ সময় তিনি ১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ও ১৯৭১ সালের কথা বলেন এবং সেগুলোকে ব্যাখ্যা করেন। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা বলল, ‘‘সত্যি! উক্ত জাতির মুক্তি ও উক্ত সালগুলো পরস্পর জড়িয়ে আছে।’’ 
ক. কোনটিকে 'বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ' বলে অভিহিত করা হয়? 
খ. বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ভাষা আন্দোলনের মাঝে নিহিত ছিল- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কোন নেতার দিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, উক্ত জাতির মুক্তি ও উক্ত সালগুলো পরস্পর জড়িয়ে আছেত বক্তব্যটি কতটুকু যৌক্তিক? বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৬৬ সালের ছয় দফাকে ‘বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ' বলে অভিহিত করা হয়।

খ. বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ভাষা আন্দোলনের মধ্যে নিহিত ছিল।
১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। এই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পাকিস্তান সরকার উর্দুর সাথে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। একুশ বাঙালির চেতনায় জাগ্রত করে জাতীয়তাবোধের। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হলেও পরবর্তীতে তা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের শক্তি অর্জন করে। ভাষা আন্দোলনের ফলেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার পরিবর্তে ভাষা ও সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়। ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশের ভিত্তি ও প্রথম সোপান।

গ. উদ্দীপকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম সারির নেতা। ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজবন্দির মুক্তি ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আমরণ অনশন শুরু করেন। এর ফলে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়।
১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে বিরোধীদলীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান অধিকার বঞ্চিত বাঙালির পক্ষে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। এই ছয় দফা দাবি সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে ৬ দফা কর্মসূচি এবং উক্ত কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের মুখে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও আহবানে সমগ্র বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ যুদ্ধে সফল হয় বাঙালি জাতি।
উদ্দীপকে নজরুল স্যারের উল্লিখিত সালগুলো হলো ১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৬৯ ও ১৯৭১। এ সালগুলোর সাথে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িয়ে আছে। যার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা বলা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, 'বাঙালি জাতির মুক্তি এবং উক্ত সালগুলো পরস্পর জড়িয়ে আছে'। বক্তব্যটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। নিচে এ সম্পর্কে আমার যুক্তি তুলে ধরা হলো ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের গণচেতনার প্রথম সংগঠিত বহিঃপ্রকাশ এবং পরবর্তীকালে শাসকচক্রের বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। আর এ স্বাধিকার আন্দোলন পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপনে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে, পূর্ব পাকিস্তান কেবল একটি প্রদেশ নয়; এটি একটি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক অঞ্চল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ সুগমকরণে ৬ দফা কর্মসূচি এবং উক্ত কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের দুটি দল এবং জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এ পরিষদ ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং ৬ দফা কর্মসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার বিরুদ্ধে এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। এ গণঅভ্যুত্থানে পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের বিজয় অর্জিত হয়। পরবর্তীতে এ আন্দোলনের পথ ধরে বীর বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু মুক্তির সংগ্রামের উদাত্ত আহবান জানান। ২৫ মার্চ মাঝরাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার নির্দেশে বাঙালিরা মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে। শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। এ যুদ্ধে সফল হয় বাঙালি জাতি। এর ফলে আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত সালগুলো পরস্পর সম্পর্কিত এবং এর মাধ্যমেই বাঙালি জাতি মুক্তি লাভ করে।

৫. কাজল তার বন্ধুদের সাথে পাকিস্তান শাসনামলের একটি নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করার সময় জানায় যে, সে নির্বাচনে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০৯টি। মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলো নিয়ে গঠিত 'যুক্তফ্রন্ট' জয়লাভ করে। উক্ত নির্বাচনে জয়ী হয়ে একজন নেতা কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের পরে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন পূর্ব বাংলার নাগরিকদের রাজনৈতিক চেতনাকে আরও বৃদ্ধি করে। 
ক. মুসলিম লীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? 
খ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল বর্ণনা করো।
গ. কাজল যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছিল সে নির্বাচনে উদ্দীপকে বর্ণিত কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, এই ধরনের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল? মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. ১৯৫৪ সালের মার্চের নির্বাচন ছিল পূর্ব বাংলায় প্রথম অবাধ ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে শতকরা ৩৭.১৯ ভাগ ভোটার ভোট দেয়। ২ এপ্রিল সরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়। মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন, পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস ২৪টি, তফসিলি ফেডারেশন ২৭টি, খেলাফতে রববানী ২টি, খ্রিস্টান ১টি, বৌদ্ধ ১টি, কম্যুনিস্ট পার্টি ৪টি আসন লাভ করে।

গ. কাজল ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছিল।
উদ্দীপকে বর্ণিত কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনিই কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে জেল থেকে মুক্তি লাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন একজন কোটিপতি মুসলিম লীগ নেতার বিরুদ্ধে তিনি ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ১৯৫৪ সালে শেখ মুজিব কেন্দ্রীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৫৪ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালিদের জাতীয়তাবোধ আরও সুদৃঢ় হয়। ফলে তারা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখতে থাকে যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের পাহাড়সম ষড়যন্ত্র বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। এর অন্যতম উদাহরণ হলো ১৯৬২ সালের শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ইংরেজি পাঠ বাধ্যতামূলক, উর্দুকে জনগণের ভাষায় পরিণত করা এবং একই সাথে জাতীয় ভাষার জন্য একটি সাধারণ বর্ণমালা প্রবর্তনের চেষ্টা ইত্যাদি। তবে এসব বিষয়াবলির বিরুদ্ধে ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। বাংলার ছাত্র শিক্ষক রাজনীতিবিদসহ সাধারণ লোকজন ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের অর্জিত আস্থার প্রতি বিশ্বাসী হতে শুরু করে। এই নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব ও প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার রায় প্রদান করে। পূর্ব বাংলায় বাঙালিদের শাসন দেখতে তারা যে আগ্রহী তা প্রকাশিত হয়। এবং চূড়ান্তভাবে অনেকেই দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন দেখতে থাকে। ফলে দিন দিন আন্দোলন বৃদ্ধি পায় এবং একসময় দেশ স্বাধীন হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি প্রমাণ করে যে, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস যা তাদের স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিতে পরিণত করে।

৬. মুক্তিযোদ্ধা রহমান সাহেব একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ছেলের সাথে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার আজ চাকরি জীবনের প্রথম দিকের কথা বেশ মনে পড়ছে। তখন দেশ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। অফিসের চিঠিপত্রগুলো বিদেশি ভাষাতেই লিখতে হতো। বিদেশি ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার স্কুল জীবনের সহপাঠী রফিক জীবনদান করেছিলেন। তিনি মনে করেন, রফিককে অনুসরণ করেই পরবর্তীতে তার বাল্যবন্ধু গফুর, আশীষ এবং নাম না জানা আরও অনেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। 
ক. পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন? 
খ. যুক্তফ্রন্ট কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. রফিকের জীবনদান বাংলাদেশের ইতিহাসের কোন ঘটনাকে নির্দেশ করেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের রহমান সাহেব, গফুর এবং আশীষ আমাদের গর্ব- বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

খ. যুক্তফ্রন্ট হলো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জোট। ১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসে আওয়ামী লীগসহ সমমনা কতিপয় দল নিয়ে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি নির্বাচনি জোট গঠিত হয়। ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় পূর্ব বাংলার নাগরিকদের রাজনৈতিক চেতনাকে আরও বৃদ্ধি করে।

গ. রফিকের জীবনদান বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে নির্দেশ করে।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এদেশের মাতৃভাষা বাংলাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়। এতে বাঙালিরা ভাষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং ভাষা আন্দোলন ধীরে ধীরে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পুনরায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলার' দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনে ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, জনতা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলে তৎকালীন পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে এদেশের অনেক যুবক প্রাণ হারায়।
উদ্দীপকের রফিকও বিদেশি ভাষা অর্থাৎ, উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দান করেন। এ থেকে বোঝা যায়, রফিক ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে মাতৃভাষার জন্য শহিদ হন। সুতরাং বলা যায়, রফিকের জীবন দান ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মুক্তিযোদ্ধা রহমান সাহেব, গফুর এবং আশীষ আমাদের গর্ব। কারণ তাদের মতো অনেকের তাজা প্রাণ এবং ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের আজকের এই স্বাধীনতা এবং এই অর্জন দীর্ঘ আন্দোলনের পরিক্রমার ফসল।
দেশ বিভাগের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের ওপর অন্যায় ও জুলুম করতে থাকে। বাঙালিদের মুখের ভাষা নিশ্চিহ্ন করতে তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে অনেকের জীবনের বিনিময়ে অনেক আন্দোলনের মুখে বাংলাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। পূর্ব পাকিস্তানকে নিরক্ষর রাখার অভিপ্রায়ে তারা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিম পাকিস্তানে স্থাপন করতে থাকে। অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক সকল আয়ের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়। মোট কথা সবদিক থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা নিজেদের অধিকারের চেতনায় জাগ্রত হয়। তাদের মধ্যে পাকিস্তানি শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বেগবান হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং '৬৯-এর গণআন্দোলন সংঘটিত হয়। বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তীব্র আকার ধারণ করে। অবশেষে ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয় মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় কাঙি্ক্ষত স্বাধীনতা। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রহমান সাহেব, গফুর এবং আশীষের মতো মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা সকলেই আমাদের গর্ব।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. ২০১৭ সালের ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের কর্মসূচি অনুযায়ী কার্জন হলে আচার্যের বক্তব্য প্রদানকালে সাবিবরের একটি ঐতিহাসিক ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। ঘটনাটি হচ্ছে, তৎকালীন সময়ে একজন অতিথি কার্জন হলে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তার প্রতিবাদে ছাত্ররা 'না-না-না' ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল, তাতে সর্বস্তরের বাঙালিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ক. কখন পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্ম হয়?
খ. শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে যে আন্দোলনের ইঙ্গিত করা হয়েছে তার পটভূমি বর্ণনা করো।
ঘ. উক্ত আন্দোলন থেকে বাঙালি জাতির অর্জন বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্ম হয়।

খ. বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখায় শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের কর্মকান্ড, আন্দোলন সংগ্রাম নির্দেশিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে। এই লক্ষ্য নিয়ে তিনি ১৯৪৮ ও ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষাতে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদান, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান প্রভৃতি আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। তাই ১৯৬৯ সালে ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল ছাত্র-জনতার সভায় শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিত ভূষিত করা হয়।

গ. উদ্দীপকে পাঠ্যপুস্তকের যে ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে তা হলো ভাষা আন্দোলন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা না করার সিদ্ধান্তে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণ প্রতিবাদ জানান। তদুপরি ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ। আলী জিন্নাহ একমাত্র উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ছাত্রসমাজের সাথে উপজাতিসহ পূর্ববাংলার সকল শ্রেণির মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা। বাংলার দাবিতে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এবং রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ঐদিন ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পূর্ববাংলার জনগণ মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। গুলিতে আবুল বরকত, জববার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

ঘ. উক্ত আন্দোলন তথা ভাষা আন্দোলন থেকে বাঙালি জাতির অর্জন নিচে বিশ্লেষণ করা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাঙালি জীবন ও বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা রেনেসাঁর মতোই তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রয়াস এবং সে সময়কার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হঠকারিতা থেকে মুক্তির জন্য অঙ্গুলি নির্দেশ করা। পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জনের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। তাই তারা পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে গণআন্দোলনের সূত্রপাত হয় তাই ভাষা আন্দোলন নামে খ্যাত। মূলত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সামাজিক বঞ্চনা ও বৈষম্য বাংলার সাধারণ মানুষের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে এসে তার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই সর্বপ্রথম পূর্ব বাংলার জনগণ অধিকার সচেতন হয়ে ওঠে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিদের মধ্যে যে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে তা পরবর্তীকালে অন্যান্য আন্দোলনে অনুপ্রেরণা প্রদান করে যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি কাঙি্ক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করে।

৮. ১৯৬০ সালে ভারতের আসামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা ঘোষণা করেন যে, 'অসমিয়া' ভাষা হবে আসামের একমাত্র রাজ্য ভাষা। এ প্রস্তাবের বিপক্ষে আসামের বাংলাভাষীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করে। আন্দোলন পরিচালনার জন্যে গঠন করা হয় 'কাছাড় জেলা গণসংগ্রাম পরিষদ'। এ পরিষদ ১৯৬১ সালের ১৯ মে হরতালের ডাক দেয়। রাজ্য সরকার এ দিন কারফিউ ঘোষণা করে। কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে, শহিদ হন ১ জন তরুণী ও ১০ জন তরুণ।
ক. ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মোট ভোটারের সংখ্যা কত ছিল? 
খ. ভাষা আন্দোলনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
গ. বিমলা প্রসাদ চালিহার ঘোষণার সাথে কোন পাকিস্তানি নেতার ঘোষণা সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি বাংলাদেশের যে আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়, সে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ।

খ. রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভূমিকা অসামান্য। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। কিন্তু তার এ যৌক্তিক দাবি অগ্রাহ্য হয়। তার দাবি অগ্রাহ্য হলে ২৬ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়। অর্থাৎ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব উত্থাপনের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন গতিশীল হয়।

গ. উদ্দীপকের বিমলা প্রসাদের ঘোষণার সাথে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণা সাদৃশ্যপূর্ণ। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরে আসেন। তিনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষাকে উপেক্ষা করে ২৪ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন যে, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।' তিনদিন পর কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও তিনি একই বক্তব্য রাখলে ছাত্ররা 'না, না' বলে এ ঘোষণার প্রতিবাদ করে। এরপর ছাত্ররা বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলে। এভাবে ভাষার দাবি একটি সুস্পষ্ট আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের প্রথম স্তরেই 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ১৯৬০ সালে ভারতের আসামের তৎকালীন মখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ 'অসামিয়া' ভাষাকে আসামের একমাত্র রাজ্য ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। এ প্রস্তাবের প্রতিবাদে আসামের বাংলা ভাষাভাষী জনগণ আন্দোলন পরিচালনার জন্য 'কাছাড় জেলা গণসংগ্রাম পরিষদ' গঠন করে যা উপরে আলোচিত ঘটনার অনুরূপ। সুতরাং, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বিমলা প্রসাদ চাহিলার ঘোষণার সাথে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ঘোষণার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই শুরু হলেও এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় ১৯৫২ সালে। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন জিন্নাহকে অনুকরণ করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ ৩০ জানুয়ারি ধর্মঘট পালন করে। আব্দুল মতিনকে আহবায়ক করে পূর্বে গঠিত 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' নতুনভাবে গঠিত হয়। নতুনভাবে আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোও যুক্ত হতে থাকে। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল আহবান করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে সরকারি এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা-সমাবেশ, মিছিল একমাসের জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিদ্ধান্ত হয় যে, ১০ জন ১০ জন করে মিছিল শুরু করা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে আবুল বরকত, রফিক ও আবদুল জববার ঘটনাস্থলে মারা যান। অবশেষে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ সালে শুরু হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে রূপ নেয় ১৯৫২ সালে।

৯. রহমতপুর উপজেলাটি ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলার মধ্যদিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হওয়ায় ৩টি ইউনিয়ন নদীর অন্য পাড়ে অবস্থিত। উপজেলা চেয়ারম্যান নদীর এ পাড়ের বাসিন্দা হওয়ায় সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তার এ পাড়ের ৫টি ইউনিয়নে হয়ে থাকে।
পক্ষান্তরে অন্য পাড়ের লোকেরা নিয়মিত কর, খাজনা দিয়ে থাকে এবং নানা প্রকার ফসল উৎপাদন করে উপজেলার চাহিদা পূরণ করে। সে পাড়ে তেমন কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করা হয় না। ফলে সে পাড়ের জননেতা খলিলুর রহমান এলাকাবাসীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। 
ক. জাতীয়তাবাদ কী?
খ. ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির কাছে কেন স্মরণীয়?
গ. উদ্দীপকের অন্য পাড়ের লোকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের আচরণের কী মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে খলিলুর রহমানের কী কী দাবি উত্থাপন করা উচিত বলে তুমি মনে কর?

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জাতীয়তাবাদ হচ্ছে মানসিক চেতনা বা অনুভূতি।

খ. স্বাধীনতা সংগ্রামের দিক নির্দেশনা থাকার কারণে ৭ মার্চ বাঙালি জাতির কাছে স্মরণীয়। ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিল এবং সশ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণসহ জাতীয় স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ ভাষণের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। তাই ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির কাছে স্মরণীয়।

গ. উদ্দীপকের অন্য পাড়ের লোকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের পুরোপুরি মিল রয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান নদীর এ পাড়ের বাসিন্দা হওয়াতে সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এ পাড়েই হয়ে থাকে এবং অন্য পাড়ের বাসিন্দাদের বঞ্চিত করা হয়। যদিও অন্যপাড়ের বাসিন্দারা নিয়মিত কর ও খাজনা প্রদান করে এবং উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ফসল উৎপাদন করে। অনুরূপভাবে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তানে কোনো উন্নয়ন করেনি। দেশের সকল ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত ছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ শক্তি, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে শিল্পায়নের পথ সুগম করে। শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের উৎপাদিত ফসল নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে শিল্প কারখানার উৎপাদিত দ্রব্য দ্বিগুণ দামে পূর্ব পাকিস্তান বিক্রি করতো। পূর্ব পাকিস্তানকে রাখার অভিপ্রা সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিম পাকিস্তানে স্থাপন করা হয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের অন্য পাড়ের লোকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের আচরণের পুরোপুরি মিল লক্ষণীয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত খলিলুর রহমান তার এলাকাবাসীকে বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে বাঁচানোর জন্য ন্যায়সঙ্গত বিভিন্ন ধরনের দাবি উত্থাপন করা উচিত বলে আমি মনে করি।
খলিলুর রহমানের দাবি উত্থাপন করা উচিত যে, উপজেলা উন্নয়নের জন্য যেসব অনুদান বা সাহায্য আসবে তা প্রতিটি ইউনিয়নে সমানভাবে ব্যয় করতে হবে যেন সবকটি ইউনিয়ন সমভাবে উন্নত হতে পারে। খলিলুর রহমান আরও দাবি করতে পারেন যে, তাদের ওপারের ইউনিয়নে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেন সেসব ইউনিয়নগুলো শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে পারে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, ডাকঘর, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রাপ্যতা অনুযায়ী স্থাপন করতে হবে যাতে ওপারের লোকজন উপজেলা প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা সমহারে ভোগ করতে পারে। উপজেলাতে যে ফসল ফলানো হয় তা সব ইউনিয়নে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। কর ও খাজনা আদায় করে যে অর্থ জমা হয় তা সকল ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। নদীর এপারের সাথে ওপারের যোগাযোগ সুগম করার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আঞ্চলিক সংহতি রক্ষার্থে চেয়ারম্যানকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে বাধ্য করতে হবে।

১০. রাজু একটি গার্মেন্টস কোম্পানীতে চাকরি করে। সেখানে গিয়ে সে শ্রমিক আন্দোলন দেখতে পায়। শ্রমিক নেতার দেওয়া কয়েক দফার সাথে শ্রমিকরা আরো কয়েক দফা জুড়ে দিয়ে ১১ দফা দাবি করে। আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে মালিক শ্রেণি তাদের দাবি মেনে নয়।
ক. কত সালে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কীরূপ ছিল?
গ. উদ্দীপকে রাজুর কোম্পানির আন্দোলনের সাথে তোমার পঠিত কোন আন্দোলনের মিল খুঁজে পাও তা ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে উক্ত আন্দোলনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।

খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬২টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার বক্তৃতা, বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সাহায্য করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আনেদালনটি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রতিচছবি। ৬ দফা আনেদালনের সাথে আরো ১১ দফা জুড়ে দিয়ে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এ ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথকে সুগম করেছিল। বস্তুত, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালিদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এর পক্ষে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ছয় দফাকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ মনে করে। তারা একে রাষ্ট্রবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলে অভিহিত করে। ছয় দফা কর্মসূচিভিত্তিক গণজাগরণকে নসাৎ করার উদ্দেশ্যে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আগরতলা মামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ দুর্বার আন্দোলনের ফলেই ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। উদ্দীপকের রাজুর কর্মরত গার্মেন্টস কোম্পানিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা তাদের নেতার দেওয়া কয়েক দফার সাথে আরো কয়েক দফা জুড়ে ১১ দফা দাবি করে যা উপরে আলোচিত গণ-অভ্যুত্থানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানেরই প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে উক্ত আন্দোলন তথা উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাস ও স্বাধীনতার্জনের প্রস্তুতির কাল-পূর্ব ছিল ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান। বাঙালির রাজনৈতিক মানসে নতুন সূর্য উদয় হয়েছিল এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। পূর্ব বাংলার জনগণ বুঝতে পেরেছিলো, পূর্ব বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্তরায় হলো পশ্চিম পাকিস্তানিদের কালানিয়াল প্রশাসন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের মন্ত্রণা জুগিয়েছিলো, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল '৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান তাই পরবর্তী গণ-আন্দোলন ও ১৯৭১-এর মুক্তি সংগ্রামের পথে এগিয়ে নিতে মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে। বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে পিছপা হবে না, তা প্রমাণিত হয়েছিল ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানি কর্তৃক নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত পূর্ব বাংলার বাঙালিরা ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভে উদ্দ্যত হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post