HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. সুখেন দাস তার জীবিকার প্রয়োজনে হাস-মুরগি, গরু-ছাগল লালন পালন করে। এর পাশাপাশি তার নিজস্ব জমিতে ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে থাকে। এটাই তার পেশা। তার স্ত্রী সংসারের কাজের ফাঁকে স্বামী ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় বিভিন্ন দেবতার উপাসনা করে থাকে যা তার কাছে খুবই পছন্দের কাজ।
ক. চাকার আবিষ্কার হয় কোন যুগে?
খ. ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে কোন ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত, হয়? বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকে সুখেন দাসের স্ত্রীর পছন্দের কাজটির সাথে সি সভ্যতার সমাজ জীবনের কোন দিকটি মিল লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সুখেন দাসের পেশা সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক ব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি। তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নব্যপ্রস্তর যুগে চাকার আবিষ্কার হয়।

খ. ময়নামতির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ময়নামতিতে খনন কাজের ফলে প্রাপ্ত নিদর্শন সমূহের মধ্যে শালবনবিহার অন্যতম। মূলত এটি একটি বৌদ্ধ বিহার যেখানে ১১৫টি কক্ষের সন্ধান পাওয়া যায় যা পূজা অর্চনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হত। এছাড়াও প্রাপ্ত অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ যেমনত কোটিলা মুড়া, আনন্দ বিহার থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহের ধর্মীয় তাৎপর্য দেখে মনে হয় তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক ছিল এবং বৌদ্ধ শু ধর্মের ব্যাপ্তি ও প্রসারে সমাজপতিরা কাজ করেছিল।

গ. উদ্দীপকে সুখেন দাসের স্ত্রীর পছন্দের কাজটির সাথে সিন্ধু সভ্যতার সমাজজীবনের ধর্মীয় দিকটির মিল লক্ষ করা যায়। সিন্ধু সমাজে ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। কেননা, এখানে কোনো মন্দির বা মঠের চিহ্ন পাওয়া যায় নি। তবে তাদের মধ্যে যে ধর্মবিশ্বাস ছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত পোড়ামাটির মূর্তি থেকে বোঝা যায়, তাদের ধর্মীয় জীবনে মূর্তি পূজার প্রভাব ছিল। প্রাপ্ত মূর্তিসমূহ মূল নারী মূর্তি যা থেকে ধারণা করা হয় তাঁদের মাঝে মাতৃপূজার প্রচলন ছিল। এছাড়াও প্রাপ্ত সিলমোহর থেকে বোঝা যায় তারা বিভিন্ন দেবতার পূজা করে থাকত। উদ্দীপকে দেখা যায়, সুখেন দাসের স্ত্রী তার স্বামী ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় বিভিন্ন দেবতার উপাসনা করে থাকে যা উপরে আলোচিত সিন্ধু সভ্যতার ধর্মীয় জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. সুখেন দাসের পেশা সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক ব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি বক্তব্যটির সাথে আমি একমত। সিন্ধু সভ্যতা নগরকেন্দ্রিক হলেও অধিকাংশ মানুষ গ্রামে থাকত। কৃষিই ছিল তাদের প্রধান পেশা। অর্থাৎ, সিন্ধু সভ্যতার অর্থনীতির ভিত্তি হলো কৃষি। বৃহৎ শস্যাগার সভ্যতার কৃষি সমৃদ্ধির সাক্ষ্য দেয়। সিন্ধু নদের বন্যার জল জমিকে উর্বর করত; সেই উর্বর জমিতে তারা গম, যব, মুগ, মসুর, তিল প্রভৃতি শস্য চাষ করত। কৃষিকাজের পাশাপাশি সিন্ধু জনগণ পশুপালন করত। তারা মেষ, গরু, ছাগল, প্রভৃতি গৃহপালিত পশু লালন-পালন করত। মূলত সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল কৃষি ও পশুপালন নির্ভর।
উদ্দীপকে উল্লেখিত সুখেন দাস জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের গৃহপালিত পশু পালন করেন। পাশাপাশি, নিজস্ব জমিতে ধান, গম, ভুট্টাসহ প্রভৃতি চাষ করে থাকেন যা উপরে আলোচিত সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। পরিশেষে, সুখেন দাসের পেশা সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি-এ বক্তব্যটি যথার্থ।

২. মিথিলা তার বাবা-মার সাথে নানা বাড়ি বেড়াতে যায়। বাড়ির পাশেইত ঐতিহাসিক পানাম নগর। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত চারশত বছরের প্রাচীন এই নগরের ধ্বংসাবশেষ দেখে মিথিলা রোমাঞ্চিত হয়। সারি সারি ছোট-বড় ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা, সুপ্রশস্ত রাস্তা, সড়কবাতি,। এসেম্বলি হল, স্নানাগার, সুদৃশ্য প্রাসাদ প্রভৃতি নিদর্শনসমূহের সাথে মিথিলা অন্য একটি সভ্যতার মিল খুঁজে পায়।
ক. কষির আবিষ্কার হয় কোন যুগে?
খ. লৌহকে আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের পানাম নগরীর সাথে তোমার পঠিত কোন সভ্যতার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সমাজ ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কৃষির আবিষ্কার হয় নব্যপ্রস্তর যুগে।

খ. লৌহের ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক সভ্যতা গড়ে় ওঠার কারণে লৌহকে আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি বলা হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে মধ্যপ্রাচ্যে লৌহের ব্যবহার শুরু হয়। এশিয়া মাইনরে বসবাসকারী হিট্রাইটদের (Hittite) মধ্যে সর্বপ্রথম লৌহ শিল্পের ব্যবহার শুরু হয়। লৌহের ব্যবহার শুরু করা ছিল মানবসভ্যতার বিকাশে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কৃষিকাজের উদ্ভব যেমন মানুষের জীবনধারাকে পাল্টে দিয়েছিল, তেমনি লৌহের ব্যবহার মানুষের জীবনধারায় বিরাট পরিবর্তন এনেছে। লৌহ আবিষ্কারের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় যন্ত্রচালিত শক্তির ব্যবহার সম্ভব হয়েছে এবং শিল্পবিপ্লব তবরান্বিত হয়েছে। আর এসব কারণেই লৌহকে আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের পানাম নগরের সাথে আমার পাঠ্যপুস্তকে পঠিত সিন্ধু সভ্যতার সাদৃশ্য রয়েছে। কেননা উদ্দীপকে বর্ণিত ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা, সুপ্রশস্থ রাস্তা, সড়কবাতি, এসেম্বলি হল, স্নানাগার প্রভৃতি নিদর্শনসমূহ সিন্ধু সভ্যতায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
আমরা জানি, সিন্ধু নদের তীরে গড়ে উঠা সভ্যতা 'সিন্ধু সভ্যতা' নামে পরিচিত। সিন্ধু সভ্যতাকে 'মহেঞ্জোদারো' বা 'হরপ্পা' সভ্যতাও বলা হয় বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্গত সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় 'মহেঞ্জোদারো' এবং পাঞ্জাবের মন্টগোমারি জেলায় ‘হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন আকৃতির অট্টালিকা, সুপ্রশস্ত রাস্তা, হলঘর, বৃহৎ আকৃতির স্নানাগার, রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্ট, বড় আকারের প্রাসাদ ইত্যাদি। সিন্ধু সভ্যতার শাসকরা স্বাস্থ্যকর নাগরিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য পুরো নগর জুড়েই স্নানাগার, শস্যাগার, পরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালি, উন্নত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি স্থাপন করেছিল। উপর্যুক্ত তুলনামূলক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের পানাম নগরের সাথে সিন্ধু সভ্যতার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত পানাম নগরের ছোট-বড় ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা, সুপ্রশস্ত রাস্তা, সড়কবাতি, এসেম্বলি হল, স্নানাগার ও সুদৃশ্য প্রাসাদ প্রভৃতি দ্বারা সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সমাজ-ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে বোঝা যায় যে, আর্য সভ্যতার পূর্বেও উপমহাদেশে উন্নত নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। এ সভ্যতা কেবল মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, তা সিন্ধুর অন্যান্য অঞ্চল যেমন- হায়দারাবাদ, জ্যাকিবাদ পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। ফলে এসব অঞ্চলেও এ সভ্যতার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের উল্লেখ রয়েছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায়, বর্তমানে আমরা যে আধুনিক নগর সভ্যতাকেন্দ্রিক জীবনযাপন করি তা অনেকাংশেই সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা দ্বারা প্রভাবিত। এ সভ্যতার নগরগুলোর মতোই আধুনিক শহরগুলোতে অট্টালিকা, সুপ্রশস্ত রাস্তা, সড়কবাতি, এসেম্বলি হল প্রভৃতি দেখা যায়। বস্তুত সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসী বা দ্রাবিড়দের প্রথা, রীতিনীতি ও নির্মাণ কৌশল আর্যরা গ্রহণ করেছিল, যা বিবর্তিত হতে হতে বর্তমান ভারতীয় সমাজ গড়ে উঠেছে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সমাজ-ঐতিহাসিক গুরুতব অপরিসীম।

৩. বন্ধুদের এক আড্ডায় আনিস সহপাঠী শাহিনের সাথে শ্রেণির পাঠ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল। আনিসের মতে, ব্রোঞ্জযুগের আগে লৌহ যুগের সূচনা হয় এবং আধুনিক সভ্যতার বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান লৌহ যুগের। শাহিন এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে মতামত দিল যে, লৌহ যুগের আগে ব্রোঞ্জযুগের শুরু এবং আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার বিকাশধারার সূচনা হয় ব্রোঞ্জযুগে।
ক. সোমপুর বিহার কোথায় অবস্থিত?
খ. নবোপলীয় বিপ্লব বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের যুগ ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে আনিস ও শাহিনের বক্তব্যের কোনটিকে তুমি সঠিক মনে কর? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আধুনিক সভ্যতার উন্মেষে উদ্দীপকে উল্লিখিত ধাতু দুটির অবদান অনস্বীকার্য বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সোমপুর বিহার নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত।

খ. নবোপলীয় বিপ্লব বলতে নব্যপ্রস্তর যুগে সংঘটিত সমাজ ও সভ্যতার বৈপ্লবিক অগ্রগতিকে বোঝায়।
নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষ প্রকৃতিকে আয়ত্তে এনে কৃষিকাজ ও পশুপালন শুরু করে। এ যুগের মানুষ তাঁতের কাজ, ঘরবাড়ি নির্মাণ শুরু করে, সেইসাথে নৌকা, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি তৈরি করতে সক্ষম হয়। পাশাপশি কৃষিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফসল ফলায় সমাজের অনেকেই ব্যবসায়-বাণিজ্য আরম্ভ করে। ফলে এ সময় বাজার ও শহর গড়ে উঠে। এসব উন্নতি লক্ষ করে অস্ট্রেলিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক ও ভাষাতত্ত্ববিদ ভের গর্ডন চাইল্ড নব্যপ্রস্তর যুগের সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতিকে ‘নবোপলীয় বিপ্লব' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

গ. উদ্দীপকের যুগ ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে আনিস ও শাহিনের বক্তব্যের মধ্যে শাহিনের বক্তব্য সঠিক বলে আমি মনে করি। প্রাচীন ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের তৃতীয় পর্যায় হলো 'ব্রোঞ্জযুগ'। এ যুগকে প্রথম ধাতুর যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে ব্রোঞ্জ যুগের সূচনা ঘটে। আর খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে লৌহ আবিষ্কারের সাথে সাথে এ যুগের অবসান ঘটে। সমাজ ও সভ্যতার বিকাশধারার মূল সূচনা হয়েছিল ব্রোঞ্জযুগে। এ যুগেই সর্বপ্রথম ব্যবসায়-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে এবং উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ স্থায়ীভাবে একত্রে বসবাস বৃহৎ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে। অন্যদিকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে এশিয়া মাইনরে লৌহযুগের সূচনা হয় এবং তা এখনও অব্যাহত আছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আনিস সহপাঠী শাহিনের সাথে ব্রোঞ্জ ও লৌহ যুগের সূচনাকাল নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে। আনিসের মতে, ব্রোঞ্জযুগের আগে লৌহযুগের সূচনা হয় এবং আধুনিক সভ্যতার বিকাশে সবচেয়ে বেশি অবদান লৌহযুগের। কিন্তু পাঠ্যবইয়ে দেওয়া তথ্যে আমরা জানতে পারি, লৌহযুগের আগে ব্রোঞ্জযুগের সূচনা হয়েছে। তাই বলা যায়, আনিসের বক্তব্য সঠিক নয়। অন্যদিকে, শাহিন সহপাঠী আনিসের বক্তব্যের বিরোধিতা করে এবং বলে যে, লৌহযুগের আগে ব্রোঞ্জযুগের শুরু এবং সমাজ ও সভ্যতার বিকাশধারার মূল সূচনা হয় ব্রোঞ্জযুগে। পাঠ্যবইয়ে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী যা সঠিক।
পরিশেষে বলা যায়, ব্রোঞ্জ ও লৌহযুগের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে শাহিনের বক্তব্য সঠিক। কেননা ব্রোঞ্জযুগের শুরু হয়েছিল লৌহযুগের আগে।

ঘ. আধুনিক সভ্যতার উন্মেষে উদ্দীপকে উল্লিখিত ধাতু দুটি তথা লৌহ ও ব্রোঞ্জের অবদান অনস্বীকার্য। পাথরের যুগ ও লৌহযুগের মধ্যবর্তী যুগকে বলা হয় ব্রোঞ্জযুগ। এ যুগে ব্রোঞ্জ দিয়ে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ও অস্ত্র তৈরি করা হয়, যা মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলে। ব্রোঞ্জযুগে কৃষি উৎপাদনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হয়। ব্রোঞ্জ নির্মিত লাঙলের ফলা, কাস্তে, নিড়ানি কৃষিকাজকে সহজ করে দেয়। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এ উদ্বৃত্ত উৎপাদনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে এবং তা আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। নব্যপ্রস্তর যুগে যে চাকার আবিষ্কার হয় তাতে ব্রোঞ্জের বেড় লাগিয়ে আরও উন্নত করা হয়। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে, যা আধুনিক সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অন্যদিকে, লৌহের ব্যবহার মানবসভ্যতার বিকাশে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কৃষিকাজের উদ্ভব যেমন মানুষের জীবনধারাকে পাল্টে দিয়েছিল, লৌহের ব্যবহার তেমনি মানুষের জীবনধারায় বিরাট পরিবর্তন এনেছে। লৌহের উদ্ভবের ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় যন্ত্রচালিত শক্তির ব্যবহার সম্ভব হয়েছে এবং শিল্পবিপ্লব তবরান্বিত হয়েছে। আমরা জানি, শিল্প নির্ভর সভ্যতার ভিত্তি যন্ত্রচালিত শক্তি এবং সেই শক্তিকে কাজে লাগাতে লৌহ অপরিহার্য। এছাড়া লোহার হাতিয়ার মানুষের কর্মশক্তিকে বর্ধিত করে এবং কার্যদক্ষতা বাড়ি়য়ে দেয়। এ যুগে ব্যবসায়ের প্রয়োজনে লিখিত ভাষার উদ্ভব হয়। কেননা ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য লেনদেন, বাণিজ্যিক চুক্তি, হিসাবপত্র প্রভৃতি বিষয়ে লিখিত দলিলের প্রয়োজন হয়। সর্বোপরি লৌহযুগে যুক্তিনির্ভর চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। বিশেষ করে এ যুগে লৌহ নির্মিত ছাপাখানা আবিষ্কার হওয়ায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনীষীরা তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করতে শুরু করেন, যার ফলে অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক বিশ্বাসের স্থলে যৌক্তিক এবং বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়। উপরের আলোচনা হতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে, আধুনিক সভ্যতার বিকাশে ব্রোঞ্জ ও লৌহ উভয় ধাতুর অবদানই অপরিসীম।

৪. অহন ও সিফাত দুই ভাই। তারা একাদশ শ্রেণির ছাত্র। একদিন অহন সিফাতকে বলল, ‘‘সিফাত জানিস, পৃথিবীতে এমন একটি যুগ চলে গিয়েছে, যে যুগে প্রত্যেকটি গ্রাম সংগঠন ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সমস্ত খাদ্য ও উপকরণ গ্রামের মানুষজন নিজেরাই উৎপাদন করত। সে যুগের মানুষ কৃষি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে এবং প্রকৃতিকে বশে আনতে সক্ষম হয়।"
ক. 'হাইডেলবার্গ মানব' কোন যুগের প্রতিনিধি?
খ. 'চাকা আবিষ্কারে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়' -বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকের অহন কোন যুগের বর্ণনা দিয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, বর্তমান সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে অহনের বর্ণনাকৃত যুগের অবদান রয়েছে? মূল্যায়ন করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘হাইডেলবার্গ মানব' নিম্ন প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রতিনিধি।

খ. চাকা আবিষ্কারের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০-৩০০০ অব্দের মধ্যে মেসোপটেমিয়া, মিশর, ভারত এবং চীনে ব্রোঞ্জযুগের শুরু হয়। ব্রোঞ্জ এমন একটি ধাতব পদার্থ যা তামা ও টিনের সংমিশ্রণে তৈরি। এ যুগে হাতিয়ার নির্মাণে ব্রোঞ্জের ব্যবহার দেখা যায়। এ যুগে চাকার আবিষ্কার সম্ভব হয়। ফলে ষাঁড় চালিত গাড়ির প্রবর্তন হয়। এর ফলে যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য যায় এবং বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক লেনদেন ও ভাবের আদান প্ৰদান বৃদ্ধি পায়।

গ. উদ্দীপকের অহন নব্যপ্রস্তর যুগের বর্ণনা দিয়েছে। প্লাইস্টোসিন যুগের শেষভাগ বা হলোসিন যুগের প্রারম্ভ থেকে খ্রিষ্ট পূর্ব সাড়ে তিন হাজার বছর পর্যন্ত নব্যপ্রস্তর যুগের সময়কাল ব্যপ্ত ছিল। এ যুগের মানুষের প্রধান অবদান কৃষিকাজ ও পশুপালন শুরু করা। এ যুগের মানুষ প্রকৃতিকে সম্পূর্ণভাবে নয়, বরং কিছুটা আয়ত্তে এনে কৃষি কাজের মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে শিখেছিল। মানব সভ্যতার বিকাশে কৃষির মতো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে পশুপালন। নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষ বন্য পশুকে পোষ মানানোর মধ্য দিয়ে প্রকৃতির ওপর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব শুরু করেছিল। নব্যপ্রস্তর যুগেই স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল। এ যুগের এক একটি গ্রাম ছিল এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথক ইউনিটের মতো। নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্রামবাসীদের অন্য গ্রামের ওপর নির্ভর করতে হতো না। নিজেদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারত। এছাড়া বাসস্থানের নিশ্চয়তা, খাদ্যের নিয়মিত যোগান, বিনিময় ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রভৃতির ফলে এ যুগের মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ী বসবাসের জীবন শুরু করেছিল। আর স্থায়ী বসবাসের জীবন শুরু হওয়ায় সমাজে পারিবারিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল।
উদ্দীপকের অহন তার ভাই সিফাতকে বলে, পৃথিবীতে এমন একটি যুগ চলে গিয়েছে, যে যুগে প্রত্যেকটি গ্রাম সংগঠন ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সমস্ত খাদ্য ও উপকরণ গ্রামের মানুষজন নিজেরাই উৎপাদন করতো। এ যুগের মানুষ কৃষির আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে এবং প্রকৃতিকে বশে আনতে সক্ষম হয়।
উপরে আলোচিত নব্যপ্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য এবং উদ্দীপকের অহনের বক্তব্য লক্ষ করলে বোঝা যায় যে, অহন নব্যপ্রস্তর যুগের বর্ণনা দিয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, বর্তমান সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে অহনের বর্ণনাকৃত যুগ অর্থাৎ নব্যপ্রস্তর যুগের অবদান রয়েছে বলে আমি মনে করি। নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষরা খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতির স্থলে খাদ্য উৎপাদন অর্থনীতির সূচনা করে। নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষরা বীজবপণের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসল কাটা এবং তা প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে কৃষিকাজের সূচনা করে। এ যুগেই প্রথম পশুপালন অর্থনীতির উদ্ভব হয়। পশু শিকারের পাশাপাশি পশুপালন করার ফলে খাদ্যের নিশ্চয়তা আসে। নব্যপ্রস্তর যুগে হাতিয়ারেরও উন্নতি সাধিত হয়। এ যুগের মানুষ পাথরকে ঘষে একদিক ধারালো করে ফসল কাটার জন্য চাকু তৈরি করত। এছাড়াও কৃষিকাজের জন্য নিড়ানি, পাথরের কোদাল, আঁচড়া, গর্ত করার জন্য লাঠি প্রভৃতি ব্যবহার করত। এ সকল হাতিয়ারের বিভিন্নতা যেমন ছিল, তেমনি এর মধ্যে প্রকৌশলগত দক্ষতার পরিচয়ও মেলে। নব্যপ্রস্তর যুগে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে, বয়ন শিল্প। বয়ন শিল্পের সাহায্যে এ যুগের মানুষ পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করে সুসভ্য হতে সক্ষম হয়েছিল। সেইসাথে বাসস্থানের নিশ্চয়তা, খাদ্যের সঠিক যোগান, প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুকূল অবস্থা নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষকে সভ্য জীবন গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল। এ যুগেই মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ী বসবাসের জীবন শুরু করে এবং সমাজে পারিবারিক কাঠামো গড়ে ওঠে। নব্যপ্রস্তর যুগের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হলো চাকা। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসে যুগান্তকারী পরিবর্তন। নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষ আগুন জ্বালানো, আগুন দিয়ে খাবার সিদ্ধ করা, আগুন জ্বেলে বন্য পশুকে ভয় দেখানো এবং অস্ত্র তৈরিতে আগুনের ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করে।
পরিশেষে বলা যায়, নব্যপ্রস্তর যুগ মানবসমাজের ইতিহাসে পরিবর্তনের দিক থেকে একটি বৈপ্লবিক যুগ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ যুগের কৃষি, পশুপালন, ঘরবাড়ি তৈরি, মৃৎশিল্প, বয়ন শিল্প এবং বিভিন্ন ধরনের আবিষ্কার বর্তমান সমাজ ও সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে।

৫. সুমি টিভি খুলে লক্ষ করল যে, একজন সংবাদ পাঠ করছে, তার পাশে আরেকজন ইংগিতে বুঝাচ্ছে উক্ত বিষয়। সুমি তার মাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলো। তার মা তাকে বললো এটাকে সাংকেতিক ভাষা বলে, যা অনেক পূর্বে সমাজে প্রচলিত ছিল। যার মাধ্যমে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করত।
ক. পশুপালন অর্থনীতির প্রবর্তন হয় কোন যুগে?
খ. নব্যপ্রস্তর যুগে কৃষি অর্থনীতি প্রবর্তনের ফলে সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাংকেতিক ভাষা সমাজের প্রত্নতাত্ত্বিক কোন স্তরে ছিল? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সুমি প্রত্নতাত্ত্বিক যে স্তরে অবস্থান করছে তার গুরুত্ব পর্যালোচনা করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পশু পালন অর্থনীতির প্রবর্তন হয় নব্যপ্রস্তর যুগে।

খ. নব্যপ্রস্তর যুগে কৃষি অর্থনীতি প্রবর্তনের ফলে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
কৃষিকাজে ব্যবহার করার জন্য এ যুগে উন্নত হাতিয়ার তৈরি করা হয়। কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থায় নব্যপ্রস্তর যুগে খাদ্যের নিশ্চয়তা বেড়ে যায়। এ যুগে উদ্বৃত্ত ফসল সঞ্চয় করা হতো। কৃষিজ দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য এ যুগে মৃৎপাত্রের ব্যবহার শুরু হয়। কৃষি বিকাশের সাথে সাথে নব্যপ্রস্তর যুগে অর্থনৈতিক সফলতা আসে। আর এ অর্থনৈতিক ফলশ্রুতিতে সমাজে পরিবারের উদ্ভব ঘটে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাংকেতিক ভাষা সমাজের প্রাচীন প্রস্তর যুগে ছিল। প্রাচীন প্রস্তর যুগ খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ/ছয় লক্ষ বছর থেকে শুরু হয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ১০ হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই যুগটিকে মানব ইতিহাসের সব থেকে দীর্ঘতম যুগ বলা হয়। এ যুগের মানুষের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল খাদ্য সংগ্রহ করা। খাদ্য সংগ্রহের কৌশল আয়ত্তে আনতে গিয়েই তারা নানা প্রকার হাতিয়ার উদ্ভাবন করে। এ যুগের মানুষ কেবল শিকারের জন্য বা খাদ্য সংগ্রহের জন্য একত্রিত হতো। প্রয়োজন শেষে এ জোট ভেঙে যেত। ফলে তাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়নি। এ যুগে মানুষের প্রধান আবিষ্কার আগুন। তারা পাথর পাথর ঘষে আগুন জ্বালাতে পারত। এ যুগের মানুষের ভাষা ছিল অক্ষরহীন। তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য জোটবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন শব্দের সাহায্যে ও আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে তাদের মনোভাব প্রকাশ করতো।
উদ্দীপকের সুমি টিভিতে খবর দেখার সময় লক্ষ করে আরেকজন আকার ইঙ্গিতে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ টিভির ব্যক্তিটি সাংকেতিক ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করছে। যা সমাজের প্রাচীন প্রস্তর যুগকে নির্দেশ করে। কারণ সে যুগেও মানুষ আকার-ইঙ্গিতে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করত।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমি আধুনিক সভ্যতার আবিষ্কার ব্যবহার করছে। তাই বলা যায়, সুমি আধুনিক সভ্যতা তথা লৌহ সভ্যতার স্তরে অবস্থান করছে।
লৌহ সভ্যতা মানব সমাজের ইতিহাসে সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। লৌহের আবিষ্কার মানব সভ্যতার ক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করে। আমরা জানি, ব্রোঞ্জের তুলনায় লৌহ মজবুত এবং দামে সস্তা। এর ব্যবহারও সহজসাধ্য। তাই লৌহের ব্যবহারও অধিক। বস্তুত লৌহের ব্যাপক ব্যবহার মানব সভ্যতার অভাবনীয় উন্নতিতে অবদান রাখে। ধাতুকে কেন্দ্র করে কৃষি যন্ত্রপাতিতে যে পরিবর্তন আসে। তাতে লৌহের ভূমিকা অন্যতম। লৌহ কৃষি যন্ত্রপাতিতে এক নবতর বিপ্লব আনে। লৌহ নির্মিত কুঠার, লাঙলের ফলা, দা, কাস্তে, নিড়ানি ইত্যাদি অকর্ষিত ভূমি পরিষ্কার ও কৃষি কাজকে আরো সহজতর করে। তোলে। লোহার যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জমির ফসল আগের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি ঘরবাড়ি নির্মাণে এবং নানা ধরনের গৃহ সামগ্রী, আসবাবপত্র তৈরিতে লৌহের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। শিল্প কারখানা এবং বিভিন্ন ভারী ও হালকা যন্ত্রপাতি লৌহ দ্বারা নির্মিত হয়। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, শিল্পকলা ও স্থাপত্য শিল্পে লৌহের ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। আধুনিক যুগে অস্ত্র শিল্পও লৌহের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
সুতরাং বলা যায়, মানব সভ্যতাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে উদ্দীপকে উল্লিখিত লৌহ যুগের অবদান অনস্বীকার্য।
 
৬. ঢাকায় আন্তঃকলেজ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নটরডেম কলেজ ছয় উইকেটে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এ খেলায় বিজয়ী দলের হাতে পুরস্কারের চিহ্নস্বরূপ যে পদকটি দেওয়া হয় সেটা তামা ও টিনের তৈরি। এ ধাতব পদার্থটিকে কেন্দ্র করে একসময় যে যুগটির আবির্ভাব ঘটে সেখানে চাকার আবিষ্কার সম্ভব হয়। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তাছাড়া বড় বড় স্থায়ী সমাজ এ সময়ে গড়ে ওঠে।
ক. প্রথম লৌহশিল্পের ব্যবহার শুরু করে কারা?
খ. 'Iron Civilization' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে যে যুগটির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত যুগের আর্থ- সামাজিক সাফল্য বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. প্রথম লৌহশিল্পের ব্যবহার শুরু করে এশিয়া মাইনরের হিট্রাইটরা।

খ. Iron Civilization অর্থাৎ লৌহ সভ্যতা বলতে বুঝায়, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোতে লৌহের ব্যাপক প্রচলন।
লৌহের ব্যবহার সভ্যতার বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি হচ্ছে লৌহ। শিল্পায়ন ও নগরায়ণে লৌহের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা কলকারখানা ও সেগুলোর খুচরা যন্ত্রপাতি নির্মাণে এবং নগর গড়ে তুলতে রাস্তাঘাট পুল ও বিল্ডিং তৈরি করতে লৌহের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমান সময়েও লৌহের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

গ. উদ্দীপকে যে যুগটির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে, তা হলো ব্রোঞ্জ যুগ। কেননা ব্রোঞ্জ যুগে তামা ও টিনের ব্যবহার হত এবং এই যুগে চাকা আবিষ্কার হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩,৫০০ থেকে ১,১০০ অব্দের মধ্যে ব্রোঞ্জ যুগ মেসোপটেমিয়া, মিসর, ভারত এবং চীনে শুরু হয়। অতঃপর ধীরে ধীরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে এ যুগটির আবির্ভাব ঘটে। যেমনত খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ অব্দে ব্রিটেনে ব্রোঞ্জ যুগের সূচনা হয় এবং ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়।
ব্রোঞ্জ একটি ধাতর পদার্থ। এটি তামা ও টিনের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। এ কারণে এ ধাতুকে সংকর ধাতুও বলা হয়। নব্যপ্রস্তর যুগের পর মাত্র কয়েকশত বছর তাম্র যুগ কাটে। তারপরেই ব্রোঞ্জ যুগের সূচনা হয়। সময় হাতিয়ার নির্মাণে ব্রোঞ্জের ব্যবহার দেখা যায়। এ কারণে শিকার করা মানুষের জন্য সহজ হয়। তবে একথা ঠিক যে, নতুন প্রস্তর যুগের পাথর নির্মিত হাতিয়ার একেবারে লোপ পেয়ে যায়নি তখনও। বরং শিকারের ক্ষেত্রে এবং গৃহস্থলীর কাজে পাথর নির্মিত দ্রব্যের ব্যবহারে বৈচিত্র্য আসে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ব্রোঞ্জযুগে ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক রূপ পরিগ্রহ করে। যা কিনা একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের ফলে বিনিময় ব্যবস্থা শুরু হয়। বিনিময় ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে মুদ্রা ও অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। ব্রোঞ্জযুগে চাকার আবিষ্কার হয়। ফলে ষাড় চালিত গাড়ির প্রবর্তন হয়। ঢাকা আবিষ্কারের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হয়। এই যুগে উৎপাদন ব্যবস্থার কিছু উন্নতি হওয়ায় মানুষ স্থায়ীভাবে একত্রে বসবাস করার চিন্তা-ভাবনা করে। অধিক জনসমষ্টি মিলে বড় বড় স্থায়ী মানবসমাজ গড়ে তোলে। ব্রোঞ্জযুগের অন্যতম আরেকটি দিক হলো লেখা আবিষ্কার। লেখা আবিষ্কার হওয়ায় শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসার ঘটে। ব্রোঞ্জ যুগে ব্রোঞ্জের অস্ত্র তৈরি হতো। আর সেগুলো সামন্ত প্রভুরা যুদ্ধে ব্যবহার করত। ব্রোঞ্জ যুগে সংস্কৃতির বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অলংকারের প্রচলন হওয়া। নারীপুরুষরা অলংকার ব্যবহার করত। উপরিউক্ত সাংস্কৃতিক সাফল্যের গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বলা যায়, মানব সভ্যতায় উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত যুগের অর্থাৎ ব্রোঞ্জযুগের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. রাজু বন্ধুদের নিয়ে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় একটি প্রত্ননিদর্শন দেখতে যায়। এটি পালবংশের দ্বিতীয় শাসক রাজা ধর্মপাল প্রতিষ্ঠিা করেন। এখানে একটি বৃহৎ বৌদ্ধ বিহার আছে। এতবড় বৌদ্ধ বিহার ভারতবর্ষের আর কোথাও আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
ক. লৌহ যুগের প্রচলন শুরু হয় কত অব্দ হতে?
খ. গর্ডন চাইল্ড কোন যুগকে নবোপলীয় বিপ্লব বলেছেন? বর্ণনা করো।
গ. রাজু যে প্রত্ননিদর্শনটি দেখতে গিয়েছিল তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত নিদর্শনটির প্রধান প্রধান স্থাপনা গুলির বর্ণনা দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. লৌহ যুগের প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ হতে।

খ. অস্ট্রেলিয়ান গর্ডন চাইল্ড নব্য প্রস্তর যুগকে নবোপলীয় বিপ্লব বলে আখ্যা দেন। প্রত্নতত্ত্ববিদ নব্যপ্রস্তর যুগে মানুষ প্রকৃতিকে কিছুটা আয়ত্তে এনে কৃষিকাজ ও পশুপালন শুরু করে। এ যুগে মানুষ তাঁতের কাজ, ঘরবাড়ি নির্মাণ, নৌকা তৈরি, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি তৈরি করতে সক্ষম হয়। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিময় প্রথার প্রচলন করে। এসব উন্নতি লক্ষ করে ভের গর্ডন চাইল্ড নব্যপ্রস্তর যুগকে নবোপলীয় বিপ্লব বলে আখ্যা দেন।

গ. রাজু যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি দেখতে গিয়েছিল তা হলো পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনস্থল।
পাহাড়পুর বা সোমপুর বিহার বাংলাদেশে বৌদ্ধ ও হিন্দু সংস্কৃতির এক আকর্ষণীয় নিদর্শন। অষ্টম শতাব্দীতে বরেন্দ্রভূমিতে সোমপুর নামক স্থানে পালবংশের দ্বিতীয় শাসক রাজা ধর্মপাল একটি মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত নওগাঁ জেলার বদলগাছী সদর উপজেলার অন্তর্গত পাহাড়পুর নামক স্থানে এর বিরাট ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এত বড় বৌদ্ধ বিহার ভারতবর্ষের আর কোথাও আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি। বলা হয় যে, হিমালয়ের দক্ষিণে এটিই বৃহৎ একক বৌদ্ধ বিহার।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, রাজু তার বন্ধুদের নিয়ে নওগাঁ জেলার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে যায়। যেটি ধর্মপাল প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে কটি বৃহৎ বৌদ্ধ বিহার আছে। আর এ বৌদ্ধবিহারের মত এত বড় বৌদ্ধ বিহার ভারতবর্ষে আজও কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি। সুতরাং বলা যায় যে, রাজু ও তার বন্ধুরা মিলে নওগাঁয় যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে গিয়েছে তা হলো সোমপুর বা পাহাড়পুর বিহার।

ঘ. উক্ত নিদর্শন অর্থাৎ পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো সোমপুর বিহার। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার। এর আয়তন উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ২৮১ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ২৮০ মিটার। এর চারপাশে ১৭৭টি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। বিহারে রয়েছে সাতটি প্রবেশ পথ, একটি মন্দির ও কিছু স্তুপ। এ বিহারের পূর্ব দেয়াল থেকে ৪০০ গজ পূর্বে যে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সেটির নাম 'সত্যপীর ভিটা।' এটি একটি বৌদ্ধ মন্দির। এর আয়তন ৮০০ ফুট দ্ধ ৪৮ ফুট। এতে রয়েছে একটি পূজার ঘর ও হল ঘর। মন্দির অঙ্গনে ১৩২টি নিবেদন সত্মূপ আছে।
পাহাড়পুরের অন্যতম বিখ্যাত নিদর্শন হলো স্নানঘাট। এটি সোমপুর বিহার থেকে ৪৯ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এ ঘাটের সিড়ি চুনা পাথর দিয়ে বাধানো ছিল। স্নানঘাট সম্পর্কে স্থানীয় বিশ্বাস হচ্ছে, এ ঘাটে রাজা মহিপালের কন্যা সন্ধাবতী স্নান করতো। স্নানঘাটের ১২.২ মিটার দূরে গন্ধেশ্বরীর মন্দির অবস্থিত। এর ভিতরে ৬.৭ মিটার দ্ধ ৩.৬৫ মিটার আয়তনের হল ঘর এবং একদিকে ছোট কক্ষে পূজার স্থান নির্দিষ্ট ছিল। মন্দিরের সম্মুখে ৭.৩১ মিটার ব্যাসবিশিষ্ট চত্ত্বরের মেঝে খাড়া ইট দিয়ে গাঁথা। এ গাঁথুনিটি পাহাড়পুরের অন্যান্য স্থাপত্য নিদর্শন থেকে পৃথক।

৮. লোকমান প্রতিবছর বগুড়ায় অবস্থিত শাহ সুলতান বলছি। মাহিসওয়ার.-এর মাজার শরিফ জিয়ারত করেন। এই মাজার এলাকাতেই একসময় বাংলাদেশের প্রাচীন একটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত সেই সভ্যতার প্রধান নগরে থাকতেন ক্ষত্রিয় নরপতি পরশুরাম। তাকে পরাজিত করে শাহ সুলতান বলখি মাহিসওয়ার ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন।
ক. উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের বৌদ্ধবিহারের নাম কী?
খ. পাহাড়পুরে কী কী পোড়ামাটির ফলক পাওয়া গিয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মাজার এলাকায় যে সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে তা বর্ণনা করো।
ঘ. উক্ত সভ্যতার সমাজ-ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের বৌদ্ধবিহারের নাম পাহাড়পুরের 'সোমপুর বিহার'।

খ. পাহাড়পুরের মন্দিরগাত্রে দুই হাজারেরও অধিক পোড়ামাটির ফলক পাওয়া গিয়েছে। এসব পোড়ামাটির ফলকে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা অপূর্ব ও অতুলনীয়। এর মধ্যে রয়েছে- সন্তান কোলে জননী, কলসি কাঁখে রমণী, লাঠি হতে দাড়িওয়ালা পথিক পূজারত ব্রাহ্মণ ইত্যাদি চিত্র। এছাড়া পাহাড়পুরে কিছু পোড়ামাটির ফলকে বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য দেব-দেবীর চিত্র দেখা যায়। এখানে যেমন বোধিসত্তা, পদ্মাপাণি, মঞ্জুশ্রী, তারা ইত্যাদি মহাযানপন্থি বৌদ্ধ দেব দেবীর চিত্র পাওয়া গিয়েছে তেমনি শিব, ব্রহ্ম, বিষ্ণু, গণেশ, সূর্য প্রভৃতি ব্রাহ্মণ্য দেবতার ফলকও পাওয়া গিয়েছে।

গ. উদ্দীপকে দ্বারা মহাস্থানগড় সভ্যতার ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহাস্থানগড় বর্তমান বগুড়া জেলা শহর থেকে ৮ মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী ক্ষত্রীয় রাজা পরশুরামকে পরাজিত করে শাহ সুলতান বলখি মাহিসওয়ার র. নামের একজন আওলিয়া মহাস্থানগড়ে ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। উদ্দীপকে দেখা যায়, লোকমান প্রতিবছর বগুড়ায় অবস্থিত শাহ সুলতান বলখি মাহিসওয়ার (র.)-এর মাজার শরিফ জিয়ারত করেন। এই মাজার ও মহাস্থানগড়ের 'সভ্যতা একই অঞ্চলে অবস্থিত। আবার উদ্দীপকে মাহিসওয়ার (র.)-এর বিজয়ের যে কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে, তাও মহাস্থানগড় অঞ্চলে প্রচলিত কিংবদন্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
চীন দেশের পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর বর্ণনা এবং মৌর্য বংশীয় সম্রাট অশোকের একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, মহাস্থানগড়ের প্রাচীন নাম ছিল 'পুন্ড্রনগর’ বা ‘পুন্ড্রবর্ধন'। এখানে অবস্থিত সভ্যতার উত্থান, সমৃদ্ধি ও পতনকাল হচ্ছে খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় ১৫শ শতাব্দী পর্যন্ত। মহাস্থানগড়ে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ছাড়াও হিন্দু সামন্ত রাজা বলরাম, পরশুরামের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। আর্যদের আগমনের পূর্বে এখানে ‘পুন্ড্র' নামের আদিবাসীরা বাস করত। ইতিহাসবিদ ড. শ্রী রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘‘পুন্ড্র জাতির নামানুসারে পুন্ড্রবর্ধন নগরীর নামকরণ করা হয়েছে।’’

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা বগুড়ার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত প্রাচীন সভ্যতাকে নির্দেশ করা হয়েছে। মহাস্থানগড়ে একসময় গড়ে উঠেছিল বাংলার প্রাচীনতম নগর পুন্ড্রবর্ধন। এ প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে বিবেচিত হয়।
মহাস্থানগড়ে খননের ফলে একটি প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গেছে, যার সময়সীমা যীশুখ্রিষ্টের জন্মেরও ৩০০/৪০০ বছর আগের বলে ধারণা করা হয়। ব্রাহ্মী অক্ষরে খোদিত এ শিলালিপি মৌর্য বংশীয় সম্রাট অশোকের আমলের। এ শিলালিপির পাঠ বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়া-দিনাজপুর অঞ্চলে একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
মহাস্থানগড় থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো তৎকালীন সমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা অর্জন করতে সাহায্য করে। এখানে প্রাপ্ত মুদ্রা থেকে বোঝা যায় যে, তৎকালীন সমাজের বিনিময় ব্যবস্থায় মুদ্রা অর্থনীতির প্রচলন এবং বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।
মহাস্থানগড় এলাকায় প্রাচীন বৌদ্ধ ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ করা যায়। পরবর্তীতে মহাস্থানগড় অঞ্চলটি শাহ সুলতান বলখি মাহিসওয়ার র.-এর বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের দখলে আসে। ফলে সমাজজীবনে মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, বর্তমান বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার ইতিহাস রচনায় উদ্দীপকে উল্লিখিত মহাস্থানগড়ের সামাজিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।

৯. বিচিত্র এ দুনিয়াতে কত মানুষ যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। এমনই এক যুগের মানুষ শিকারি এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজে সংগঠিত ছিল। তারা তীর-ধনুক ব্যবহারের পাশাপাশি পাথরের হাতিয়ারকে আরও উন্নত করেছিল। তারা গুহার দেয়ালে ছবি আঁকত। তাদের মধ্যে বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক শ্রেণি বিভাজনও ছিল।
ক. উয়ারি-বটেশ্বর কোথায় অবস্থিত?
খ. প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ বিভাগ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে কোন যুগের জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যুগ কি নব্যপ্রস্তর যুগ থেকে ভিনণ? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উয়ারি-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলায় অবস্থিত।

খ. প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ বিভাগ বলতে ব্যবহৃত হাতিয়ার নির্মাণ উপকরণের ভিত্তিতে মানুষের ইতিহাসের যুগ-বিভাজনকে বোঝায়। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং হাতিয়ার তৈরির উপাদানের ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মানুষের ইতিহাসকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- ১. প্রাচীন প্রস্তর যুগ, ২. নব্যপ্রস্তর যুগ, ৩. তাম্র যুগ, ৪. ব্রোঞ্জ যুগ এবং ৫. লৌহ যুগ। হাতিয়ার তৈরির উপকরণ ও কৌশল যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক যুগ বিভাগের মূল ভিত্তি, তবুও এ ক্ষেত্রে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উপাদানকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়।

গ. উদ্দীপকে উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটেছে, যা প্রাচীন প্রস্তর যুগের শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হয়। উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল খ্রিষ্টপূর্ব ৩০,০০০ বছর থেকে ১০,০০০ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগের মধ্যে এটাই সবচেয়ে আধুনিককাল। কারণ, এ যুগে মানুষ পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারে বেশ পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিকারি সমাজে সংঘবদ্ধ ছিল। এ সময় মানুষের মাঝে তীর-ধনুক দিয়ে শিকার জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ যুগের মানুষ পাথরের হাতিয়ারকে আরও ছোট, ধারালো এবং কার্যকর করে নির্মাণ করতে শিখেছিল। লিঙ্গ ও বয়সভেদে শ্রম বিভাজন এ যুগের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এছাড়া এ যুগের মানুষ গুহাচিত্র নির্মাণেও বেশ দক্ষ ছিল। ক্রো-ম্যাগনন মানব এ যুগের মানব প্রতিনিধি ছিল। উদ্দীপকে যে যুগের কথা বলা হয়েছে, সে যুগের মানুষরাও শিকারি ছিল এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজে সংগঠিত ছিল। তারা তীর ধনুকের পাশাপাশি পাথরের হাতিয়ারকে উন্নত করেছিল। শুধু তাই নয় তারা গুহার দেয়ালে ছবি আঁকত এবং তাদের মধ্যে শ্রেণি বিভাজন ছিল। সুতরাং বোঝা গেল যে, উদ্দীপকে উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে যে সমাজের আলোচনা করা হয়েছে তার বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, সমাজটি উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের নির্দেশক। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এ যুগ বিভাগটি নব্যপ্রস্তর যুগ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়সীমা হলো খ্রিস্টপূর্ব ৩০,০০০ বছর থেকে ১০,০০০ বছর পর্যন্ত। এর পরবর্তী সময় থেকে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ১০,০০০ বছর থেকে ৩,৫০০ বছর পর্যন্ত নব্যপ্রস্তর যুগ স্থায়ী ছিল। উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে নব্যপ্রস্তর যুগ অনেক আধুনিক জীবনমানকে নির্দেশ করে। উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন, যেমন- বর্শা, হারপুন, হাড়ের তৈরি সুচ, তীর, ধনুক ইত্যাদি। এ যুগের মানুষরা ছবি আঁকতে জানত। এসব ছবির মধ্যে সে যুগের মানুষের শিল্পবোধ ও নানা বিশ্বাসের পরিচয় মেলে। এছাড়া এ যুগের মানুষ বিশ্বাস করত যে, মৃত্যু হলে আত্মা দেহ থেকে চলে যায়। উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিকারি সমাজে বাস করলেও মূলত যাযাবর ছিল। অন্যদিকে নব্যপ্রস্তর যুগের প্রধান দিকগুলো ছিল- সামাজিক সংগঠনের উদ্ভব, হাতিয়ার আবিষ্কারের দক্ষতা, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ইত্যাদি। এ ছাড়া কৃষির আবিষ্কার, ব্যক্তি মালিকানার উদ্ভব ও বিনিময় প্রথার উৎপত্তি-এ যুগের প্রধান উদ্ভাবন হিসেবে বিবেচিত। এ যুগেই মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ী বসবাসের জীবন শুরু করে এবং সমাজে পারিবারিক কাঠামো গড়ে ওঠে।
উপরে বর্ণিত উভয় যুগের বৈশিষ্ট্যের তুলনা করে বলা যায় যে, উচ্চ প্রাচীন প্রস্তর যুগ সম্পূর্ণভাবেই নব্য প্রস্তর যুগের চেয়ে আলাদা একটি যুগ বিভাগ।

১০. আরাধ্য সম্প্রতি তার মামার সাথে ঢাকা শহরে এসেছে। শহরের বড় বড় রাস্তা, সুউচ্চ অট্টালিকা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা ইত্যাদি দেখে সে মুগ্ধ হলো এবং বাসায় গিয়ে গোসল খানার শাওয়ারে গোসল করে আরও আনন্দিত হলো এবং ভাবলো এখানে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা রয়েছে।
ক. নব্যপ্রস্তর যুগের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্যরা বাংলাদেশের কোথায় অবস্থান করেছিল বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নগরজীবন কোন সভ্যতার নগরজীবনের সাদৃশ্যস্বরূপ? - ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'বাংলাদেশের শিল্পের ক্ষেত্রে উক্ত সভ্যতার অবদান ছিল অপরিসীম'- বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নব্য প্রস্তর যুগের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে 'Neolithic age' বা 'New stone age.

খ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্যরা বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থান করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা বিমানবনদর নির্মাণ এবং ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য ময়নামতি ধ্বংসাবশেষ থেকে ইট এনে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখানে তারা দীর্ঘদিন বসবাস করেছিলেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নগরজীবন সিন্ধু সভ্যতার নগর জীবনের সাদৃশ্যস্বরূপ।
পৃথিবীর প্রাচীনতম নগর পরিকল্পনার প্রকাশ ঘটেছিল সিন্ধু সভ্যতায়। পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা সিন্ধু সভ্যতার বিশেষ অবদান। নগরের প্রশস্ত রাস্তা, পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, পয়ঃপ্রণালি, ডাস্টবিনের ব্যবস্থা, সড়কবাতি এবং নগর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত নগর পরিকল্পনার পরিচায়ক। উদ্দীপকের আরাধ্য ঢাকা শহরে এসে বড় বড় রাস্তা, সুউচ্চ অট্টালিকা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হয়। এছাড়া গোসলখানার শাওয়ার দেখে সে বুঝতে পারে ঢাকায় নাগরিক জীবনের সকল সুবিধা রয়েছে।
ঢাকার নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধার সাথে সিন্ধু সভ্যতার সম্পূর্ণ সাদৃশ্য থাকায় বলা যায় যে, উদ্দীপকে উল্লিখিত নগর ব্যবস্থা সিন্ধু সভ্যতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. বাংলাদেশে শিল্পের ক্ষেত্রে সিন্ধু সভ্যতার অবদান ছিল অপরিসীম সিন্ধু সভ্যতায় বয়ন শিল্প, স্থাপত্য শিল্প, হস্ত ও কুটির শিল্প, অলঙ্কার শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সুরম্য ও কারুকার্যখচিত অট্টালিকা। তাছাড়া এ সভ্যতায় তুলানির্ভর তাঁতশিল্প গড়ে উঠেছিল। চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য নির্মাণে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা পারদর্শী ছিল। এছাড়া সুন্দর ডিজাইনের মৃৎপাত্র, হাতির দাঁতের দ্রব্যসামগ্রী, স্বর্ণ-রৌপ্য, তামা ও ঝিনুকের অলঙ্কার তৈরি করতে পারতো এ সিন্ধু সভ্যতার মানুষ আধুনিক বাংলাদেশের শিল্পের ধরন এবং বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে একথা সহজেই অনুমেয় যে, এসব শিল্পের উৎপত্তি সমসাময়িক সময়ে নয়, বরং সিন্ধু সভ্যতার মতো প্রাচীন সভ্যতার শিল্পের ধারণা থেকেই এসব শিল্পের প্রচলন হয়েছে।
সুতরাং উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, বাংলাদেশের শিল্পের ক্ষেত্রে সিন্ধু সভ্যতার অবদান ছিল অপরিসীম।

Post a Comment

Previous Post Next Post