HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিষয়ে ভর্তি হয় রুনা। বিষয়টির আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিভাগের নীতিশাস্ত্রের সাথে সমাজবিজ্ঞানের কিছু বিষয়বস্তু পড়ানোর মাধ্যমে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথেও বিষয়টি পড়ানো হয়। ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি সর্বপ্রথম স্বতন্ত্র একটি বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন একজন ফরাসি নৃবিজ্ঞানী। 
ক. সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?
খ. বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করো।
গ. উদ্দীপকে রুনা যে বিষয়টি অধ্যয়ন করার জন্য ভর্তি হয়েছে তার বিকাশধারা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত বিষয়টি অধ্যয়ন করে কী কী জ্ঞান অর্জন করা যাবে বলে তুমি মনে কর? তোমার মতামত বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজবিজ্ঞানের জনক হলেন ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ।

খ. বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য পাঁচজন হলেন- ১. ফরাসি সামাজিক নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্লদ লেভি স্ট্রস, ২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ. কে. নাজমুল করিম, ৩. ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞ ও ফরাসি সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ড. পেরি বেসাইনি, ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অজিত কুমার সেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক রংগলাল সেন।

গ. উদ্দীপকে রুনা যে বিষয়টি অধ্যয়ন করার জন্য ভর্তি হয়েছে তা হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান। কারণ আমরা জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিভাগের নীতিশাস্ত্রের সাথে সমাজবিজ্ঞানের কিছু বিষয়বস্তু পড়ানোর মাধ্যমে। পরবর্তীতে ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ফরাসি সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ড. পেরি বেসাইনি। আর এ তথ্যগুলো উদ্দীপকের রুনা যে বিষয়ে ভর্তি হয়েছে তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি বিকাশের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বৃহৎ বঙ্গে সমাজবিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সে সময় স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে নয়, বরং অর্থনীতি বিভাগের এম.এ কোর্সের একটি পত্র হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পথ চলা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বর্তমান বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে দর্শন বিভাগে এম.এ কোর্সের পাঠ্যসূচি হিসেবে Ethics and Sociology নামে সমাজবিজ্ঞানের পঠন পাঠন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৩৯-৪০ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের আওতায় Elements of Sociology শিরোনামে সমাজবিজ্ঞান-এর কিছু বিষয় পড়ানো হতো। পরবর্তীতে ইউনেস্কো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান সর্বপ্রথম একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে তার যাত্রা শুরু করে। উল্লেখ্য, সমাজবিজ্ঞানকে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে অধ্যাপক অজিত কুমার সেন ও ড. এ. কে. নাজমুল করিমের অবদান অপরিসীম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সমাজবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে নাজমুল করিমের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব হঠাৎ করেই হয়নি, বরং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের একান্ত প্রচেষ্টায় শাস্ত্রটি বাংলাদেশে তার বিকাশ ঘটিয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয় তথা সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে সমাজ সম্পর্কিত সকল ধরনের জ্ঞান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সমাজকাঠামো তথা ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভূমিকা, কার্যাবলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন শ্রেণি, তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক, উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক, ভূমিকা ও অবদান সম্পর্কে জ্ঞানও সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে লাভ করা যাবে। সমাজবিজ্ঞান সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও সামাজিক সমস্যা দূরীকরণের উপায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বিদ্যমান অন্তরায় ও তা সমাধানের উপায় প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি সমাজজীবনে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের প্রভাব এবং বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা কীভাবে, কতটা ফলপ্রসূ করা যাবে সমাজবিজ্ঞান পাঠ করে সে সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করা যায়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য, কৃষি কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে বিদ্যমান সমস্যা দূরীকরণের সঠিক পথ নির্দেশনাও সমাজবিজ্ঞান পাঠ করে জানা যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে নিশ্চিতরূপে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি অধ্যয়নের মাধ্যমে সমাজ সম্পর্কিত সকল ধরনের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সমাজসচেতন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠা সম্ভব।

২. সুমন যে বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিল সেখানে সমাজের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা ছিল, যেমনত পরিবার, বিবাহ, রাষ্ট্র, ক্ষমতা, সামাজিক রীতিনীতি, সামাজিক সমস্যা ইত্যাদি। তাই সুমন তার অর্জিত জ্ঞান গ্রামের সার্বিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য গ্রামে গেলো। কিন্তু কাজের শুরুতেই সমাজের মানুষের অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অসচেতনতা এবং ক্ষমতার দম্ভ তাকে বাধাগ্রস্ত করল। তবু দমে না গিয়ে সে তার অর্জিত জ্ঞান দিয়ে যুবকদের সচেতন করে তুলল। কারণ সে ভেবেছে, ঐ জ্ঞানই মানুষকে সচেতন করে তুলবে এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে তা কার্যকর হবে।
ক. কত সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান আত্মপ্রকাশ করে?
খ. ‘‘সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞান’’ বুঝিয়ে লেখ।
গ. সুমনের পঠিত বিষয়টির বাংলাদেশে গোড়াপত্তনের ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর ভূমিকা উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সুমনের ভাবনা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বকেই তুলে ধরে বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান আত্মপ্রকাশ করে।

খ. সমাজস্থ মানুষের ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করায় সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞান বলা হয়।
সমাজবিজ্ঞান সমাজ কাঠামো তথা ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভূমিকা, কার্যাবলি সম্পর্কে পঠন-পাঠন ও গবেষণা করে। এছাড়াও সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক, উৎপাদন যন্ত্রের সাথে তাদের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয় নিয়েও আলোচনা করে। অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান সমাজ ও সমাজ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় ও তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করে থাকে। এজন্যই সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞান বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমনের পঠিত বিষয়টি হলো সমাজবিজ্ঞান। উক্ত বিষয়টির গোড়াপত্তনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনেস্কোর ভূমিকা অপরিসীম।
১৮৩৯ সালে ফ্রান্সে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে উক্ত বিষয়টির যাত্রা শুরু হয় মূলত বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। শিল্প বিপ্লবোত্তর যুগে সমাজে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে, সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করতে গিয়ে সুদূর ইউরোপে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ লাভ হয়। এ পটভূমিতে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে প্রখ্যাত ফরাসি নৃবিজ্ঞানী লেভি স্ট্রসের নেতৃত্বে ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞ মিশন সমাজবিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন এবং সমাজবিজ্ঞান ও সামাজিক নৃবিজ্ঞান পঠন-পাঠনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিদর্শন করে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহবান জানান এবং সমাজবিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপনের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশববিদ্যালয় ও ইউনেস্কোর সহযোগিতায় ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের গোড়াপত্তনের ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর ভূমিকা অপরিসীম।

ঘ. উদ্দীপকের সুমনের ভাবনা বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বকেই তুলে ধরেত উক্তিটি যথার্থ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা যেমনত অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অসচেতনতা প্রভৃতিতে জর্জরিত। সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান আমাদেরকে আত্মসচেতন, শ্রেণি সচেতন, সমাজ সচেতন এবং সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। অর্থাৎ, ব্যক্তি হিসেবে আমাদের পরিচয় কী, সমাজে আমাদের অবস্থান, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞান জ্ঞান দান করে। এছাড়াও সামাজিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমস্যাবলির গভীরতা অনুধাবন করা এবং উক্ত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও সমাজবিজ্ঞান জ্ঞান দান করে থাকে। পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নে নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা আছে।
উদ্দীপকে সুমন গ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তার পঠিত বিষয়ের জ্ঞান প্রয়োগ করতে গিয়ে প্রথমে বাধাপ্রাপ্ত হলেও, সে দমে না গিয়ে উক্ত বিষয়ের জ্ঞান দ্বারাই গ্রামের যুবকদের সচেতন করে তোলে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে আত্মপ্রত্যয়ী হয়। কারণ সুমন জানত যে, একমাত্র উক্ত বিষয়টি মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারবে যা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

৩. 'রায়পুর ডিগ্রি কলেজ'-এ সম্প্রতি অনার্স, মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কলেজটিতে দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের সহায়ক কোর্স হিসেবে একটি বিষয় পাঠ দান করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিষয়টি থাকলেও স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে এর অস্তিত্ব এই কলেজে নেই। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে কর্তৃপক্ষ উক্ত বিষয়ে অনার্স পর্যায়ে আলাদা একটি বিভাগ খোলেন। সম্পূর্ণ ঘটনাটি উক্ত বিষয়ের কোর্স শিক্ষক জনাব তাওহীদুর রহমানকে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলার ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘‘নিজ দেশের সমাজ-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানার জন্য এই বিষয়ের অধ্যয়ন প্রয়োজন।
ক. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের অগ্রপথিক কে?
খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি বাংলাদেশে কোন বিষয়ের সূচনার কথা মনে করিয়ে দেয়? বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের তাওহীদ স্যারের মন্তব্যের সাথে তুমি কি একমত? মতামত দাও।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের অগ্রপথিক হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে নাজমুল করিম।

খ. পৃথিবীর প্রত্যেক সমাজেই স্তরবিন্যাস রয়েছে। এসব স্তরবিন্যাসের ধরন সম্পর্কে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, সমাজবিজ্ঞান সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক, সমাজের উৎপাদন যন্ত্রের সাথে শ্রেণির সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। আর শ্রেণি সম্পর্কিত আলোচনাই মূলত সামাজিক স্তরবিন্যাসকে স্পষ্ট করে তোলে। আর এ জন্যই সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সূচনার কথা মনে করিয়ে দেয়।
১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের এম.এ কোর্সে Ethics and Sociology শিরোনামে সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞান পড়ানো শুরু হয়। এরপর ১৯৩৯-৪০ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স কোর্সের ৫ম পত্র হিসেবে 'ঊষবসবহঃ ড়ভ ঝড়পরড়ষড়মু' শিরোনামে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। এ পটভূমিতে ১৯৫৪ সালে প্রখ্যাত ফরাসি সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ও ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞ ক্লদ লেভি স্ট্রসের নেতৃত্বে ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞ মিশন সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ঢাকায় আসেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার সেন ও অধ্যাপক নাজমুল করিম পৃথক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য অধ্যাপক লেভি স্ট্রসের সাথে দেখা করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনেস্কোর যৌথ সহযোগিতা ও সাহায্যে ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ সর্বপ্রথম একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে।
উদ্দীপকের 'রায়পুর ডিগ্রি কলেজ’-এর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের সহায়ক কোর্স হিসেবে যে বিষয়টি পড়ানো হয়, উক্ত কলেজে ঐ বিষয়টির স্বতন্ত্র কোনো বিভাগ নেই। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ উক্ত বিষয়ে অনার্স পর্যায়ে আলাদা একটি বিভাগ খোলেন, যা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সূচনা সম্পর্কিত ঘটনার অনুরূপ। সুতরাং বলা যায়, রায়পুর ডিগ্রি কলেজে নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সূচনার কথা মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. নিজ দেশের সমাজ-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যয়ন প্রয়োজন তাওহীদ স্যারের এ মন্তব্যের সাথে আমি একমত পোষণ করি। কেননা সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে যে কোনো কৌতূহলী ব্যক্তি সমাজ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জন করতে পারেন। এর ফলে সে ব্যক্তি সমাজের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারেন না। আবার সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই সমাজের মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, জীবনপ্রণালি ইত্যাদি বিষয়ে জানা আবশ্যক। আর সমাজের মানুষের জীবনপ্রণালি, রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজের গঠন, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, বিকাশ ও সার্বিক সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে জানা যায়। আমরা জানি, বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য আমাদেরকে জাতি হিসেবে একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করেছে। আর বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত পরিচয়ের ধারাবাহিক বিবরণ বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। এভাবে প্রতিটি দেশের সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সে দেশের সমাজ-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গতি প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, বাংলাদেশের সমাজসংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠের কোনো বিকল্প নেই। আর এ জন্যই আমি উদ্দীপকের তাওহীদ স্যারের মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করি।

৪. প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. ওসমান গণি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি। তার নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে স্থাপিত হয় 'মৃত্তিকা বিজ্ঞান' নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ। ড. গনি এ বিভাগের উন্নয়নে অনেক সহযোগিতা করেন। তার প্রচেষ্টায় এ বিভাগটি যোগ্যতাসম্পন্ন মৃত্তিকা গবেষক তৈরি করতে পেরেছিল। যে ধারা আজও সফল গতিতে প্রবাহমান।
ক. সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ' বইয়ের লেখক কে?
খ. সমাজ গবেষণায় নিরপেক্ষতা আবশ্যক-ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ড. গণির সাথে ড. নাজমুল করিমের সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ন্যায় মানুষগুলো নবদিগন্তে আলোর দিশারী বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের বিবর্তনের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ' বইয়ের লেখক হলেন অধ্যাপক ড. এ. কে. নাজমুল করিম।

খ. সমাজবিজ্ঞান সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করে। সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরতে গিয়ে সমাজের কোনটি ভালো, কোনটি মন্দ, কী হওয়া উচিত, কী হওয়া অনুচিত, কোনটি ঠিক, কোনটি ঠিক নয়; ইত্যকার প্রশ্নে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে। আর সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানীকে এ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হয়, কেননা সমাজবিজ্ঞানী যদি পক্ষপাতমূলক গবেষণা করেন, তাহলে সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে না, ফলে সমাজের নানা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া যাবে না। আর এ জন্যই সমাজ গবেষণায় নিরপেক্ষতা আবশ্যক।

গ. উদ্দীপকের ড. গণির সাথে সমাজবিজ্ঞানী ড. এ. কে. নাজমুল করিমের বেশকিছু সাদৃশ্য রয়েছে। প্রথমত, উদ্দীপকের ড. গণি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি তথা শিক্ষক। আর ড. নাজমুল করিমও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সুতরাং পেশাগত দিক দিয়ে উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
দ্বিতীয়, ড. গণির নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে স্থাপিত হয়েছিল 'মৃত্তিকা বিজ্ঞান' নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ। আর ড. এ. কে. নাজমুল করিমের চেষ্টায় ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তৃতীয়ত, ড. গণি মৃত্তিকা বিভাগের উন্নয়নে অনেক সহযোগিতা করেন।
তার প্রচেষ্টায় এ বিভাগটি যোগ্যতাসম্পন্ন মৃত্তিকা গবেষক তৈরি করতে পেরেছিল। ঠিক একইভাবে ড. এ. কে. নাজমুল করিমও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উন্নয়নে অনেক সহযোগিতা করেন। তারই নিরলস পরিশ্রমের কারণে এ বিভাগটি যোগ্যতাসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী তৈরি করতে পেরেছিল। উপরিউক্ত তুলনামূলক আলোচনায় সুস্পষ্ট যে, পেশাগত অবস্থান ও অবদানের দিক থেকে উদ্দীপকের ড. ওসমান গনি ও ড. এ. কে. নাজমুল করিমের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকের ন্যায় মানুষগুলো তথা ড. গণি এবং ড. এ. কে. নাজমুল করিমের মতো মানুষরা নবদিগন্তে আলোর দিশারী। বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের বিবর্তনের আলোকে এ বিষয়টি দিবালোকের মতো প্রমাণিত।
বাংলাদেশে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের শিক্ষায় যেমন ড. গণি অসামান্য অবদান রেখেছেন, তেমনি ড. এ. কে. নাজমুল করিম বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ১৯৪৯-৫০ সালে ড. এ.কে. নাজমুল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খ-কালীন লেকচারার এবং পরের বছর পূর্ণকালীন লেকচারার নিযুক্ত হন। এ সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি কোর্স হিসেবে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হতো। কিন্তু তাতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন সম্পূর্ণ হতো না। ১৯৫০ সালে প্রখ্যাত ফরাসি প্রফেসর লেভি স্ট্রস বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের পঠন পাঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিদর্শন করেন। এ সময় ড. এ. কে. নাজমুল করিম অধ্যাপক অজিত কুমার সেনকে সঙ্গে নিয়ে তার সাথে দেখা করেন এবং সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় ইউনেস্কোর সাহায্য-সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এরই ফলশ্রুতিতে লেভি স্ট্রসের সক্রিয় আগ্রহে ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান নামে স্বতন্ত্র বিভাগ চালু হয়। ড. এ. কে. নাজমুল করিম এখানে শিক্ষাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ' নামে একটি বই রচনা করে তিনি সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে সহায়তা করেন। অর্থাৎ তারই উদ্যোগে এদেশে সমাজবিজ্ঞান নামক শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। এটি নতুন জ্ঞানের আলোর পথ প্রশস্ত করে।

৫. রোমেল উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে বিজ্ঞানের ছাত্র ছিল। গত বছর এইচ এস সি পাস করে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি বিভাগে ভর্তি হয়েছে, যা তার পছন্দের বিষয় ছিল না। কিন্তু কিছুদিন ক্লাস করার পরই তার মধ্যে পরিবর্তন দেখা গেল। সে দেখল, ক্লাসে তার চারপাশের বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনাকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এমনকি . শিক্ষক তার গ্রামের সমাজের অনেক কিছু ক্লাসে আলোচনা করছেন। এসব আলোচনার মধ্যে সে তার দেখা অভিজ্ঞতার মিল খুঁজে পেল, এর ফলে সে পড়াশোনায় আনন্দ পেতে শুরু করল।
ক. ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজচিন্তার ইতিহাস কত বছরের পুরোনো?
খ. সামাজিক বিজ্ঞানের জন্ম ইতিহাস বর্ণনা করো।
গ. রোমেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে ভর্তি হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয়ের জ্ঞান বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে- তুমি কি বক্তব্যটি সমর্থন কর? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজচিন্তার ইতিহাস প্রায় দু'হাজার বছরের পুরোনো।

খ. সমাজ সম্পর্কে মানুষের ধারাবাহিক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে সামাজিক বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষ প্রকৃতিকে জয় করার চেষ্টা করে আসছে এবং সমাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। মানুষের এ অদম্য আগ্রহ ও প্রচেষ্টাকে সফল হতে সহায়তা করেছে তার বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও দক্ষতা। আর এ থেকেই উদ্ভব ঘটেছে বিভিন্ন কৌশল, যা পরবর্তীতে সমাজকেন্দ্রিক জ্ঞানের স্বতন্ত্র এর একটি শাখার রূপ নিয়েছে।
আর এরূপ জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই জন্ম হয়েছে সামাজিক বিজ্ঞানের।

গ. রোমেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হয়েছে। আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান আমাদের সমসাময়িক এবং অতীত সমাজের বিভিন্ন ঘটনা বা অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া সমাজবিজ্ঞান গ্রামীণ এবং শহুরে সমাজকাঠামো, শ্রেণিবিন্যাস, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় নিয়েও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। এর পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সামাজিক তত্ত্বের বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগ নিয়েও বিসত্মৃত আলোচনা করে থাকে।
উদ্দীপকের রোমেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে ভর্তি হয়েছে সে বিষয়ের ক্লাশেও শিক্ষক তার চারপাশের বিভিন্ন সমসাময়িক এবং অতীত সমাজের বিভিন্ন ঘটনা বা অবস্থা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। এছাড়া শিক্ষক গ্রামীণ সমাজের এমন অনেক কিছুই আলোচনা করেন, রোমেলের গ্রামে দেখা অভিজ্ঞতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, রোমেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয় তথা সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের জ্ঞান বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছেু বক্তব্যটি আমি সমর্থন করি। কেননা আমরা জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠন শুরু হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য বিশববিদ্যালয়েও এটি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ক্রমশ সম্প্রসারিত হতে থাকে। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২৬-২৮ শিক্ষাবর্ষে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষাদানের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম 'সমাজবিজ্ঞান' নামে একটি নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সালের ২৪ আগস্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠন শুরু হয়। ১৯৭০ সালে এখানে, সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান কোর্স চালু হয়। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭০ সালে 'সমাজতত্ত্ব' নামে আলাদা একটি বিভাগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে সিলেটে অবস্থিত শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। এর পরবর্তী দশকে ২০০২ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান ডিসিপিস্ননের কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া ২০১২ সাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছে। এর পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কিছু কলেজে স্নাতক [সম্মান] ও স্নাতকোত্তর স্তরে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হচ্ছে। দেশের উল্লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাজবিজ্ঞান বিষয় পড়ানোর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয় শিক্ষাদানের ফলে এ বিষয়ের জ্ঞান বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর কারণেই প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি আমি সমর্থন করি।

৬. ভারতের ছত্তিশগড় অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী মাওবাদী গ্রুপ অপতৎপরতায় লিপ্ত। তারা নিজেদের মতামতকে অস্ত্রের জোরে সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। তারা সমাজের উৎপাদন যন্ত্রের সাথে তাদের সম্পর্ক, সমাজে তাদের ভূমিকা, অবদান এবং অধিকার সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখে না। অথচ সমাজের এসব মৌলিক বিষয় সম্পর্কে যদি তাদের মাওবাদী. ধারণা থাকত, তাহলে ভারতের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দেশে তারা এই ধরনের অপতৎপরতা শুরু করত না। 
ক. কত সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. প্লেটো ও এরিস্টটলকে সামাজিক বিজ্ঞান চর্চার অগ্রনায়ক বলা হয় কেন?
গ. ছত্তিশগড়ের মাওবাদীদের কোন ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. বাংলাদেশে এই ধরনের মানবিক ও যৌক্তিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শাস্ত্র পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম- বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. প্লেটো ও এরিস্টটল মানবিক সম্পর্ক ও আচরণ তথা সমাজ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সুসংবদ্ধ চিন্তাভাবনা ও বিশ্লেষণ করেন বিধায় তাদেরকে সামাজিক বিজ্ঞান চর্চার অগ্রনায়ক বলা হয়।
মূলত সামাজিক বিজ্ঞান সম্পর্কিত সুসংবদ্ধ চিন্তাভাবনা গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটলের দ্বারাই সূচিত হয়। তাদের সৃষ্টিকর্মে পৃথিবীর মানুষ সম্পর্কে অতীন্দ্রিয় ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন দেখা গেলেও সমাজ সম্পর্কে তাদের যে গভীর চিন্তা-ভাবনা, তার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জন্ম হয়েছে। আর এজন্যই গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটলকে সামাজিক বিজ্ঞান চর্চার অগ্রনায়ক বলা হয়।

গ. ছত্তিশগড়ের মাওবাদীদের সমাজবিজ্ঞানের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার অভাব রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সমাজের উৎপাদন যন্ত্রের সাথে তাদের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে পারে। সমাজে তাদের ভূমিকা, অবদান এবং অধিকার সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করতে পারে। ফলে সমাজের প্রতি তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে এবং সমাজবিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত হয় না।
উদ্দীপকে উল্লিখিত ভারতের ছত্তিশগড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী মাওবাদীদের সমাজের উৎপাদন যন্ত্রের সাথে তাদের সম্পর্ক, সমাজে তাদের ভূমিকা, অবদান এবং অধিকার সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই। তাই তারা শক্তি ও অস্ত্রের মাধ্যমে সমাজে তাদের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। মাওবাদীদের এরূপ আচরণ থেকে বোঝা যায়, তাদের সমাজবিজ্ঞানের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। আর এজন্য তারা সমাজের প্রতি সঠিকভাবে দায়িত্ব কর্তব্য পালন না করে বরং সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়েছে।

ঘ. বাংলাদেশে এই ধরনের মানবিক ও যৌক্তিক মূল্যবোধের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ তথা সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা নিঃসন্দেহে অপরিসীম। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ সমাজের একজন আত্মসচেতন ও শ্রেণিসচেতন সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। এই বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে জানা যায়, সমাজের সমস্ত সুযোগ সুবিধাগুলো কারা, কতটা, কীভাবে ভোগ করছে, আর কারাই বা সমাজের সম্পদ ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কেও সমাজবিজ্ঞান প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনা প্রদান করে। আধুনিক যুগে সামাজিক অগ্রগতিকে দ্রুত ত্বরান্বিত করতেও সমাজবিজ্ঞান ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ একটি অনুন্নত ও কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। এদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য, কৃষি সম্পর্ক, কৃষি কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের সমস্যা দূরীকরণে সমাজবিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সম্পর্কের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান অনুসন্ধানের জন্যেও সমাজবিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন।
পরিশেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান মানুষকে সমাজে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। তাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা অপাকে খুব পীড়া দেয়। তাই সে এসব সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায়। বিষয়টি অর্পা তার বাবার সাথে আলোচনা করলে তার বাবা বলেন, এ কাজের জন্য একটি বিষয় পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 
ক. 'আইবিএস'-এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. অধ্যাপক নাজমুল করিমকে বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন? 
গ. অর্পার বাবার বক্তব্যে কোন বিষয়টি পাঠের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত বিষয়টি কি কেবল সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূরীকরণের জন্যই পাঠ করা প্রয়োজন? মতামত দাও। 

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘আইবিএস'-এর পূর্ণরূপ হলো 'ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ Institute of Bangladesh Studies.

খ. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে অধ্যাপক নাজমুল করিমের অসামান্য অবদানের জন্যই তাকে বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। মূলত অধ্যাপক নাজমুল করিমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সাধনার ফলেই বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠন ও আলোচনা বিস্তৃতি লাভ করেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে নাজমুল করিমই সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছেন। তাই তাকে বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়।

গ. অর্পার বাবার বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি পাঠের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত রয়েছে। আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সমাজের গলদ তথা সামাজিক সমস্যাবলি চিহ্নিত করা যায়। অর্থাৎ যেকোনো রকমের সমাজসংস্কার বা সামাজিক সমস্যা দূর করতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজন হয়। কারণ, সমাজবিজ্ঞান সামাজিক সমস্যার কারণ, স্বরূপ ও প্রভাব খুঁজে বের করে। যা সমস্যা সমাধানের উপায় চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। উদ্দীপকে দেখা যায়, সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা অপাকে খুব পীড়া দেয়। তাই সে এসব সামাজিক সমস্যা প্রকৃতি চিহ্নিত করে তা দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায়। বিষয়টি অর্পা তার বাবার সাথে আলোচনা করলে তার বাবা বলেন, এ কাজের জন্য একটি বিষয় পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, অর্পার বাবার এ বক্তব্য মূলত সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি পাঠের প্রয়োজনীয়তাকেই নির্দেশ করে।

ঘ. আমি মনে করি, উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয় তথ্য সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূরীকরণের পাশাপাশি আরও অনেক কারণেই পাঠ করা প্রয়োজন। যেমন- 
প্রথমত: সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের সমাজ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা প্রয়োজন। আর সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সমাজ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা যায়।
দ্বিতীয়ত: সমাজে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার কারা, কতটা, কীভাবে ভোগ করছে, আর কারাই বা সমাজের সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নির্ণয় করে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানমূলক সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
তৃতীয়ত: বাংলাদেশ একটি অনুন্নত ও কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য, কৃষি সম্পর্ক, কৃষি কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের সমস্যা দূরীকরণে সমাজবিজ্ঞান পথ নির্দেশ করে থাকে। 
চতুর্থত: বাংলাদেশের দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জন অসমেত্মাষ, সম্পদহীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য সমাধান সূত্র নির্ণয়ে সমাজবিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পঞ্চমত: সমাজ যেহেতু প্রধানত স্তরায়িত, তাই সমাজ উন্নয়নে কোনো শ্রেণির বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠীর কী ভূমিকা থাকে তা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা দূরীকরণ করা ব্যতীত আরও সমাজ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কারণেও।সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি পাঠ করা প্রয়োজন।

৮. ফাহিম যে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করে তা মানুষের একত্রে বসবাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। বিষয়টি মূল্যবোধ নিরপেক্ষভাবে যৌথ জীবন, কার্যাবলি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কেও সচেতন হওয়া যায়। 
ক. কত সাল থেকে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের পড়াশোনা শুরু হয়?
খ. মানুষের গোষ্ঠী জীবন বা যৌথ জীবন গবেষণায় নিরপেক্ষতার প্রয়োজনত ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
গ. ফাহিম কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমাজেও উক্ত বিষয়টির অধ্যয়ন গুরুত্বপূর্ণ? মতামত দাও। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৫৭ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের পড়াশোনা শুরু হয়।

খ. মানুষের গোষ্ঠী জীবন বা যৌথ জীবন গবেষণায় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নিরপেক্ষতা প্রয়োজন। মানুষের গোষ্ঠী বা যৌথ জীবনের নানা সমস্যার সঠিক কারণ এবং তা প্রতিকারের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এ গবেষণা পরিচালনায় নিরপেক্ষতা আবশ্যক। কারণ গবেষণা নিরপেক্ষ না হলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না। আর সঠিক তথ্য না পেলে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবমুখী হবে না। তাই বাস্তবমুখী ও কার্যকরী পদক্ষেপের জন্য মানুষের গোষ্ঠী বা যৌথ জীবন গবেষণায় অবশ্যই নিরপেক্ষতা প্রয়োজন।

গ. ফাহিম সমাজবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে। আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান একটি মূল্যবোধ নিরপেক্ষ বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। বিষয়টি সমাজবদ্ধ মানুষের একত্রে বসবাসের বিভিন্ন দিক নিয়েও বিসত্মৃত আলোচনা করে। সর্বোপরি সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি যৌথ জীবন, ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে।
উদ্দীপকের ফাহিম যে বিষয়টি নিয়ে পড়াশানা করছে, সেটিও মানুষের একত্রে বসবাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া বিষয়টি মূল্যবোধ নিরপেক্ষভাবে যৌথ জীবন, কার্যাবলি এবং সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। তাছাড়া বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কেও সচেতন হওয়া যায়। সুতরাং বলা যায়, ফাহিম সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি নিয়ে পড়ালেখা করছে।

ঘ. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয় তথা সমাজবিজ্ঞান কেননা অধ্যয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। সমাজবিজ্ঞান সমাজকাঠামো তথা ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভূমিকা ও কার্যাবলি সম্পর্কে পঠন পাঠন ও গবেষণা করে। তাই সমাজবিজ্ঞান পাঠ করে সমাজ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জন করা যায়। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক, সমাজের উৎপাদন যন্ত্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক, তাদের ভূমিকা, অবদান এবং অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞান সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কেও প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনা প্রদান করে। আবার সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাবলি চিহ্নিত করার অবকাশ ঘটে। আমরা জানি, বাংলাদেশ একটি অনুন্নত ও কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে চিহ্নিত। এদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য, কৃষির সম্পর্ক, কৃষির কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নের সমস্যা দূরীকরণে সমাজবিজ্ঞান পথ নির্দেশ করে থাকে। এছাড়া আমাদের সমাজে বিভিন্ন স্তরবিন্যাস বিদ্যমান। এসব স্তরের ভিত্তিতে সমাজ উন্নয়নে শ্রেণির বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠীর কী ভূমিকা থাকে তা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিক সমাজ প্রযুক্তি নির্ভর হলেও উল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান দানের জন্য সমাজবিজ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। আর এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমাজেও শাস্ত্রটির অধ্যয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৯. জনাব রায়হান ও ফেরদৌস সহকর্মী। তারা উভয়ে একটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে একই পদে কর্মরত। রায়হান সাহেব সময়মতো অফিসে আসেন এবং নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করেন। অন্যদিকে ফেরদৌস সাহেব প্রায়ই দেরি করেন এবং নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। 
ক. ‘সিয়ারুল মোতাখখেরিন' গ্রন্থের রচয়িতা কে? 
খ. টেকসই উন্নয়ন করার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠ প্রয়োজনীয় কেন?
গ. সমাজবিজ্ঞান পাঠ কীভাবে জনাব ফেরদৌসকে দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সজাগ করতে পারে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. তুমি কি মনে কর জনাব রায়হান ও ফেরদৌস সাহেব সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্র পাঠ করলে তাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন? মতামত দাও।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'সিয়ারুল মোতাখখেরিন' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন সৈয়দ গোলাম হোসেন খাঁ।

খ. টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠ করা প্রয়োজন। সামাজিক সমস্যার মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা। ফলে অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তিত হলে সমাজ কাঠামো পরিবর্তন হবে, আবার এর বিপরীত ঘটনাও ঘটবে। তাই সমাজ কাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন জরুরি। এক্ষেত্রে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা দূরীকরণ ও একটি সমাজের টেকসই উন্নয়নের জন্য সমাজতাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

গ. সমাজবিজ্ঞান পাঠ করে জনাব ফেরদৌস নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন। আর এ জ্ঞানই তাকে দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সজাগ করতে পারে। সমাজের সদস্য হিসাবে প্রত্যেক মানুষের উচিত তার দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারি তবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না এবং আমরা আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে অন্যরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করতে পারবে না বা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকবে। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকরা দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবে এবং সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জন করতে পারবে।
উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, জনাব রায়হান সাহেব সময়মত অফিসে আসাসহ সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করলেও তার সহকর্মী জনাব ফেরদৌস সাহেব দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অফিসের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। তার এরূপ কর্মকান্ডের পেছনে দায়ী সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানের অভাব।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান পাঠ করে জনাব ফেরদৌস সাহেব নিজের দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে সজাগ থাকবেন।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি জনাব রায়হান ও ফেরদৌস সাহেব সমাজবিজ্ঞান পাঠ করলে তাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
যে কোনো সমাজকে উন্নত করতে হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করতে হবে। সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার সাথে সংগতিপূর্ণ না হলে যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে বর্তমানে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ হচ্ছে, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ঢেউ এসেছে। তাই নতুন পরিকল্পনার সাথে সাথে সমাজব্যবস্থায় যেসব নতুন মূল্যবোধের সৃষ্টি হবে এবং পুরাতন মূল্যবোধের সাথে সেগুলোর যে বিরোধ তৈরি হবে তা দূর করার জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। জনাব ফেরদৌস ও জনাব রায়হান সহকর্মী। তার উভয়ই একটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে একই পদে কর্মরত। তারা সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে তাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। কেননা এটা সর্বজনস্বীকৃত যে, সমাববিজ্ঞান পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করে। উপর্যন্ত আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলতে পারি যে, সমাজবিজ্ঞান যেহেতু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করে সেহেতু জনাব রায়হান ও ফেরদৌস সাহেব শাস্ত্রটি পাঠের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

১০. রিয়া এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিলেবাস পর্যালোচনা করে সে দেখলো যে জ্ঞানের একটি শাখা সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। বাংলাদেশেও শ্রেণিবৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই রিয়া সিদ্ধান্ত নিল এইচএসসিতে সে এ বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করবে। 
ক. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের অগ্রপথিক কে?
খ. বাংলাদেশে সামাজিক উন্নয়নে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকের জ্ঞানের যে শাখাটি নিয়ে রিয়া পড়াশোনা করতে চায় সেটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনায় উক্ত জ্ঞানের শাখাটির ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের অগ্রপথিক ড. এ. কে. নাজমুল করিম।

খ. বাংলাদেশে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের সামাজিক উন্নয়নে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন ব্যতীত সমাজস্থ মানুষের চাহিদা, উপভোগ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ সম্ভব হয় না। তাছাড়া বর্তমানে সমাজ উন্নয়নে যে সমস্ত উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তার সাথে যদি সামাজিক জ্ঞান না থাকে তবে সমাজে তার বাস্তব রূপ দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ নতুন পরিকল্পনার সাথে সাথে সমাজ ব্যবস্থায় যে নতুন মূল্যবোধের সৃষ্টি হবে তার সাথে পুরনো মূল্যবোধের বিরোধ বাধার সম্ভাবনা থাকবে। যার জন্য এ সমস্ত সমস্যা দূরীকরণে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অতি জরুরি।

গ. উদ্দীপকের রিয়া জ্ঞানের যে শাখাটি নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় তা হলো সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান সমাজস্থ মানুষের কর্মকান্ডের বিজ্ঞান। অর্থাৎ, যে বিজ্ঞান সমাজের মানুষের বিভিন্ন কার্যাবলির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করে তাই সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান তার আলোচনায় সমাজের মানুষের মানবিক সম্পর্কের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। কারণ সামাজিক সম্পর্কসমূহই হলো সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মূল ভিত্তি। সমাজবিজ্ঞান সমাজের সমগ্র সম্পর্কের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। এ কারণে এ বিজ্ঞানটিকে এক কথায় ব্যাখ্যা করা সহজসাধ্য নয়। এজন্য সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে একটি বা দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমনত সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস বলেন, সমাজবিজ্ঞান সামাজিক ঘটনাবলির বিজ্ঞান। এমিল ডুর্খেইম বলেন, সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান। কিংসলে ডেভিস বলেন, সমাজবিজ্ঞান সমাজের সাধারণ বিজ্ঞান। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এমন বিজ্ঞান যে বিজ্ঞান সমাজের সকল দিক নিয়ে। বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা ও ব্যাখ্যা করে থাকে।
উদ্দীপকের রিয়া এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে সিলেবাস পর্যালোচনা করে দেখলো জ্ঞানের একটি শাখা সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। রিয়া সিদ্ধান্ত নিল এইচএসসিতে এই বিষয়টি সে পড়বে। অর্থাৎ, রিয়ার সিদ্ধান্তকৃত বিষয়টি হলো সমাজবিজ্ঞান। কারণ সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজের বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং সমাজের শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক ইত্যাদি সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার আওতাভুক্ত।

ঘ. বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় জ্ঞানের উক্ত শাখা অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ কারণে এদেশের উন্নয়ন হওয়া উচিত পরিকল্পনাভিত্তিক। আর এ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অপরিহার্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান। এজন্যই সমাজবিজ্ঞানকে বলা হয় সমাজ উন্নয়নের হাতিয়ার। কারণ সমাজবিজ্ঞান সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়নের বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে আলোচনা করে। আবার এ পরিকল্পনা কীভাবে সফল করা যায় তার আলোচনাও এ বিজ্ঞান করে থাকে।
সমাজবিজ্ঞান মানবসমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুসন্ধান পরিচালনা করে এবং এ অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে সমাজের বা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এ উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সাধিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধিরোধে সাধারণত পরিবার পরিকল্পনার কথা হয়। কিন্তু কেবল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে এ পরিকল্পনাকে কার্যকর করা যাবে না। এ ধরনের পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য কতকগুলো বিষয় বিবেচনায় আনার প্রয়োজন হয়। যেমনত সনাতন মূল্যবোধ, বিভিন্ন সংস্কারমূলক ধারণা, পরিবার গঠন, প্রচলিত প্রথা প্রভৃতি। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান। সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনা বিশ্লেষণপূর্বক বলা যায়, বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সমাজবিজ্ঞানের ভূমিকা ব্যাপক। সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post