HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে পরিবারের সম্মতিতে মানিক মারুফাকে বিবাহ করে। এর দুবছরের মধ্যে তাদের ঘরে এক ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। সারাদিন মারুফা সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ ও লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করলেও মানিক একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করে সংসারের অর্থ উপার্জনের জন্য। সংসারের দরিদ্রতার জন্যে তারা উভয়েই একটি সন্তান রাখতেই সম্মত হয়েছে। 
ক. নৈতিকতা কী?
খ. আদিম সমাজে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন ছিল? 
গ. মানিকের কার্যাবলির মধ্যে পরিবারের কোন কার্যাবলির ইঙ্গিত পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানসমূহ সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্তু তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? মতামত দাও।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম অনুভূতি।

খ. আদিম সমাজে মানুষে মানুষে সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল আদিম সমাজে সংহতি ও সম্প্রীতিবোধ ছিল দৃঢ়। সময় সংগৃহীত খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য জিনিসপত্র জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দান ও উপহার হিসেবে লেনদেন চলত। জিনিসপত্র ক্রয় বা সঞ্চয় করে রাখার মন মানসিকতা মানুষের মধ্যে গড়ে উঠে নি। এ ধরনের লেনদেন সমাজের সংহতি রক্ষায় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ. উদ্দীপকে মানিকের কাজের মধ্যে পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
পরিবারের ভরণপোষণ করার জন্য আয় ও উৎপাদন করতে হয় এবং তা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। আয়ের কিছু অংশ দুর্দিনের জন্য জমা করেও রাখা হয়। জীবন বিমা, শিল্পে লগ্নি, ব্যবসা, জমি ক্রয় অথবা চাকরি ইত্যাদি যেভাবেই হোক, কিছু না কিছু সঞ্চয় করতেই হয়। এসব আয় ব্যয় ও সঞ্চয় মূলত পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। মানিক সংসারের অর্থ 'উপার্জনের জন্য একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করে। আর এ কাজ পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, মানিকের কাজে পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলির ইঙ্গিত রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থাৎ বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত- আমি এ বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত।
মানবসমাজের সবচেয়ে আদিম সংগঠন হলো পরিবার। প্রাচীনকালে পরিবারকে কেন্দ্র করেই মানবসমাজের সব কর্মকান্ড পরিচালিত হতো। সমাজবিজ্ঞান হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং এগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে আলোকপাত করে।
সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো পরিবার সমাজবিজ্ঞান। পরিবারের উৎপত্তি, বিবর্তন, বিকাশ, ধরন, পরিবর্তনশীল পরিবারের কার্যাবলি ও পরিবারের সমস্যা সম্পর্কে খ সমাজবিজ্ঞানের এ শাখায় আলোচনা করা হয়। তাছাড়া পরিবার গঠিত হওয়ার মূল ভিত্তি বিবাহ নিয়েও সমাজবিজ্ঞানের এ শাখা আলোচনা করে। বিবাহ সম্পর্কিত আলোচনায় স্থান, কাল ও পাত্রভেদে বিবাহের ধরন, প্রকৃতি, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য লাভ করে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, বিবাহ ও পরিবার নিশ্চিতভাবেই সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।

২. চাকরিজীবী বাবা-মার একমাত্র সন্তান সাফোয়ান ছেলে বেলা থেকেই দাদির আদর-যত্নে বড় হয়েছে। বাবাকে সে খুব ভয় পেত এবং মায়ের সাথেও সম্পর্কটা তেমন গাঢ় নয়। দাদি ছিলেন তার জীবনের ভালোবাসা আর ভরসার মানুষ। সাফোয়ানের মাধ্যমিক পরীক্ষা চলার সময় তার দাদি মারা যান। তার দুনিয়াটা যেন অন্ধকারে ঢেকে যায়। দাদিকে হারানোর প্রভাব পড়ে মাধ্যমিকের রেজাল্টে। বাবাকে কীভাবে মুখ দেখাবে ভেবে না পেয়ে শেষে দাদির কাছেই আশ্রয় নেবার সিদ্ধান্ত নেয় সাফোয়ান। পরদিন সিলিং ফ্যান থেকে তার নিথর দেহটা ঝুলতে দেখা যায়।
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য কী?
খ. সমাজ গবেষণায় অনুসৃত পরীক্ষণ পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের সাফোয়ানের মৃত্যুতে এমিল ডুর্খেইম-এর কোন তত্ত্বের প্রতিফলন দেখা যায়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. পরিবারের কোন ধরনের ভূমিকার অভাবে সাফোয়ানের এমন পরিণতি বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও। 

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো সুসংবদ্ধ জ্ঞান আহরণ।

খ. একটি সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দুই বা ততোধিক সামাজিক ঘটনা বা প্রপঞ্চের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার পদ্ধতিকে সমাজ গবেষণায় ব্যবহৃত পরীক্ষণ পদ্ধতি নামে অভিহিত করা হয়। সমাজ গবেষণায় দুটি চলকের মধ্যকার সম্পর্কের রূপ-প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো কল্পনা, যাচাই বা পরীক্ষা করে দেখার জন্য পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্য নেয়া হয়। এর একটি চলক হলো। স্বাধীন, যার প্রভাব লক্ষ করা যায় আরেকটি নির্ভরশীল চলকের ওপর। যেমনত পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে স্বাধীন চলক এবং এর ফলে পরিবর্তনকে নির্ভরশীল চলক বলে আখ্যায়িত করা যায়।
 
গ. উদ্দীপকের সাফোয়ানের মৃত্যুতে এমিল ডুর্খেইমের আত্মহত্যা তত্ত্বের প্রতিফলন দেখা যায়। আত্মহত্যা তত্ত্ব এমিল ডুর্খেইমের সৃষ্টিকর্মের এক অনন্য সাধারণ বিষয় এর মাধ্যমে তিনি সামাজিক ঘটনাবলিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ডুর্খেইম আত্মহত্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, প্রতিটি মৃত্যু যিনি মারা গেলেন তার দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পাদিত কাজ। সেটা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক হতে পারে। এরকম কোনো কাজের ফলশ্রুতিতে কেউ মারা গেলে সে মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে। যেমন- কোনো ব্যক্তি যদি নিজের বুকে গুলি করে নিজেকে হত্যা করে তবে তা আত্মহত্যা হিসেবে বিবেচিত হবে। ডুর্খেইম আত্মহত্যাকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথাত আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা, পরার্থমূলক আত্মহত্যা এবং নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা। আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা সংঘটিত হয় সামাজিক অবচিতির ফলে। এ অবস্থার সৃষ্টি তখনই হতে পারে যখন ব্যক্তি, সমাজ ও জীবন থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ব্যক্তিস্বার্থ যখন সমাজে কল্যাণ চিন্তাকে ছাপিয়ে ওঠে। যেমনত প্রোটেস্ট্যান্টরা তাদের ধর্মীয় গোষ্ঠীর সাথে কম সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাদের মধ্যে ক্যাথলিকদের চেয়ে আত্মহত্যার হার বেশি। পরার্থমূলক আত্মহত্যা সংঘটিত হয় সমষ্টির ইচ্ছায়, সমাজের স্বার্থে। যেমন- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন। অন্যদিকে সমাজে যখন কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন মানুষের মনে বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়। এ বিতৃষ্ণা থেকে যে আত্মহত্যা সংঘটিত হয় তাই নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা। যেমনত যৌতুকের দাবিতে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার আত্মহত্যা।
উদ্দীপকের সাফোয়ান মাধ্যমিকের রেজাল্ট খারাপ করে সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করে। সাফোয়ানের এ আত্মহত্যাটি আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যাকে নির্দেশ করে, যা ডুর্খেইমের আত্মহত্যা তত্ত্বের অন্যতম দিক। তাই বলা যায়, সাফোয়ানের মৃত্যুতে ডুর্খেইমের আত্মহত্যা তত্ত্বের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

ঘ. পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক ও রক্ষণাবেক্ষণমূলক কাজের অভাবে সাফোয়ানের এমন পরিণতি বলে আমি মনে করি।
প্রতিটি পরিবারেরই একটি মনস্তাত্ত্বিক ভূমিকা রয়েছে। সন্তান সন্ততি জন্মদান করেই পিতা-মাতার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সন্তানকে উপযুক্ত মানুষ করার জন্য স্নেহ-মমতা, আদর যত্নসহকারে লালন-পালন করতে হয়। পরিবারের যে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতায় একটি শিশু মানুষ হয় তা জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। অনাদরে শিশুরা মানুষ হলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করে। ভবিষ্যতে বেপরোয়া জীবনযাপন করে এবং অপরাধপ্রবণ হয়।
শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জন্মের পর বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে সন্তানকে রক্ষার জন্য পরিবার নানা কাজ করে। তাছাড়া সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে কীভাবে চলাফেরা করছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে, সন্তান বিপথগামী হচ্ছে কি না- এসব দিকে লক্ষ রাখাও পরিবারের দায়িত্ব। কারণ পরিবার এসব রক্ষণাবেক্ষণমূলক কাজের মাধ্যমে সন্তানের নিরাপত্তা বিধান করে। কিন্তু উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, সাফোয়ান বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তাদের আদর-যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যা তার মনস্তাত্ত্বিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার সন্তানের প্রতি পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণমূলক যে দায়িত্ব রয়েছে তা থেকেও সে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে সাফোয়ানের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করেছে বলেই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
পরিশেষে বলা যায়, পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক ও রক্ষণাবেক্ষণমূলক ভূমিকার অভাবেই সাফোয়ানের এমন পরিণতি হয়েছে।

৩. ব্যাংকার রফিক সাহেব তার চাচাতো বোন শোভাকে। বিবাহ করে। তার স্ত্রী শোভা ২ বৎসরের ১টি ছোট সন্তান রেখে হঠাৎ করেই মৃত্যুবরণ করে। আকস্মিক এ মৃত্যুতে পরিবারের সবাই মুষড়ে পড়ে। ছোট সন্তানটির ভবিষ্যত নিয়ে সবাই চিন্তিত। শোভা'র ছোট বোন দিবা রফিক সাহেবের বাসায় থেকেই মাস্টার্সে। পড়ছে এবং ছোট সন্তানটির দেখাশুনা করছে। পরিবারের সবাই দিবার সাথে রফিকের বিবাহের চিন্তা করছে। 
ক. ‘জৈবিক বন্ধনের সামাজিক স্বীকৃতিই জ্ঞাতিসম্পর্ক' উক্তিটি কার?
খ. বিবাহ কীভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে? 
গ. উদ্দীপকে শোভার সাথে রফিক সাহেবের বিবাহটি কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত দিবার সাথে রফিকের বিবাহ কেন গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘জৈবিক বন্ধনের সামাজিক স্বীকৃতিই জ্ঞাতিসম্পর্কুউক্তিটি ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী রিভার্স-এর। 

খ. বিবাহ একজন নারী ও পুরুষের একত্রে বসবাসের বৈধতা প্রদান ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
বিবাহ হচ্ছে নারী-পুরুষের সমাজস্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে ব্যক্তি জৈবিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এটি নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করে। ব্যক্তি এ বন্ধনের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে সন্তান জন্মদান করে ও তার লালন পালন করে। এভাবেই বিবাহ সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকে শোভার সাথে রফিক সাহেবের বিবাহটি হলো সমান্তরাল কাজিন বিবাহ।
সমান্তরাল কাজিন বলতে চাচাতো বা খালাতো ভাইবোনকে বোঝায়। একই লিঙ্গের ভাই বা বোনের সন্তানরা পরস্পর সমান্তরাল কাজিন। যেমনত দুই ভাইয়ের সন্তানরা পরস্পর চাচাতো ভাইবোন আবার দুই বোনের সন্তানরা পরস্পর খালাতো ভাইবোন। চাচাতো বা খালাতো ভাইবোনের মধ্যে বিবাহকে বলা হয় সমান্তরাল কাজিন বিবাহ। বাংলাদেশের মুসলিম সমাজসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের বিবাহ লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকে লক্ষণীয় শোভা তার চাচাতো ভাই রফিককে বিবাহ করেছে। তাদের এ বিবাহটি সমান্তরাল কাজিন বিবাহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। পূর্বোক্ত বিবাহ সম্পর্কিত আলোচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায়।

ঘ. পারিবারিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা ও সন্তান লালন-পালন করার জন্য উদ্দীপকের রফিক সাহেবের সাথে দিবার বিবাহটি গুরুত্বপূর্ণ। সরোরেট বিবাহ প্রথায় কোনো ব্যক্তি তার মৃত স্ত্রীর বোনকে বিবাহ করে। এ প্রথাটি অবশ্য পালনীয় হয় যদি ঐ মৃত স্ত্রী কোনো সন্তান রেখে যান। এক্ষেত্রে স্ত্রীর মৃত্যুর পরপরই গোষ্ঠীদ্বয়ের মধ্যকার সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় না। বাবা-মা সন্তান রেখে গেলে তার জন্যও এটি মঙ্গলজনক হয়।
উদ্দীপকে শোভা একটি সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করার পর তার ছোট বোন দিবা ঐ সন্তানটিকে দেখাশুনা করে। দিবার সাথে রফিক সাহেবের বিবাহ সম্পন্ন হলে উক্ত সন্তানটি যথাযথ স্নেহ পাবে। এ ধরনের বিবাহ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর ফলে পূর্বের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় থাকে এবং মা হারা সন্তান সঠিক যত্নে ই বড় হয়ে ওঠে পাশপাশি এ ধরনের বিবাহের ফলে সমাজে পারিবারিক ও গোষ্ঠীগত সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। অতএব, উত্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, সরোরেট বিবাহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে।

৪. মা-বাবা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানসহ নকীবের বসবাস। এছাড়া গ্রাম হতে তাদের নিঃসন্তান বিধবা ফুফু ২ বছর যাবৎ তাদের সাথে আছে। পরিবারের সমস্ত ব্যয় নির্বাহ করে নকীব ও তার বাবা। ন নকীবের সন্তানরা প্রতিদিন সকালে তাদের দাদির কাছে আরবী পড়ে। মা ও ফুফু তাদের স্কুলের পড়া তৈরি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন বিকেলে তারা চাচার সাথে মাঠে বা পার্কে যায়। নকীবের ফুফু বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়ার কাজটি করে। 
ক. পরিবারের সংজ্ঞা দাও।
খ. ‘একক পরিবার শিল্পায়নের ফল।' ব্যাখ্যা করো। গ. আকারের ভিত্তিতে নকীবের পরিবারের ধরনটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিবারের কার্যাবলি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে- তুমি কি একমত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পরিবার হলো বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোকের যৌথভাবে বসবাস করার একটি সংগঠন।

খ. একক পরিবার সৃষ্টিতে শিল্পায়নের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সাধারণত শিল্প অঞ্চলগুলো গড়ে ওঠে নগরকে কেন্দ্র করে। ফলে শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা আবাসন সুবিধা ও কাজের সুবিধার্থে নগরে একক পরিবার গড়ে তোলে। তাছাড়া অনেকে নগরের উন্নত চিকিৎসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সর্বোপরি চাকচিক্যময় জীবনের মোহে পড়ে গ্রামের যৌথ পরিবার ভেঙে শহরে এসে একক পরিবার গড়ে তোলে।

গ. আকারের ভিত্তিতে নকীবের পরিবার একটি যৌথ পরিবার। যৌথ পরিবার আকার ও আয়তনের দিক থেকে বৃহদায়তন বিশিষ্ট। যৌথ পরিবারে বিবাহিত পুত্ররা স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি সহযোগে পিতামাতার সাথে বসবাস করে। অর্থাৎ রক্তসম্পর্কীয় যোগসূত্রের ভিত্তিতে কয়েকটি একক পরিবারের সমষ্টি হলো যৌথ পরিবার। পাশাপাশি এ পরিবারে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যেমন- দাদা দাদি, চাচা-চাচি, ফুফু ও তাদের সন্তান-সন্ততিরাও বসবাস করতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামের পরিবারগুলো ঐতিহ্যগতভাবে যৌথ পরিবার।
উদ্দীপকে নকীব তার বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও তার ফুফুকে নিয়ে একই পরিবারে বাস করে, যা যৌথ পরিবারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, নকীবের পরিবারটি যৌথ পরিবার।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যৌথ পরিবারের কার্যাবলি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছেত উক্তিটির সাথে আমি একমত। পরিবার মানুষের গোষ্ঠীগত জীবনে বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদন করে। থাকে। যেমন- সন্তান প্রজনন ও লালন-পালন, সামাজিকীকরণ, নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি। তবে বর্তমানে শিল্পায়ন, নগরায়ণ, অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিবারের স্থলে একক পরিবার জায়গা করে নিচ্ছে। ফলে যৌথ পরিবারের কর্মকান্ডতে এসেছে নানা পরিবর্তন।
ব্যক্তির সামাজিকীকরণ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম পরিবার। যৌথ পরিবারব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়ার ফলে এখন আর আগের মতো পরিবারের সবাই মিলে ভোজে অংশ নেওয়া, সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া, আনন্দ ভাগাভাগি করা প্রভৃতি বিষয়গুলো হচ্ছে না। এছাড়া বর্তমানে একক পরিবার ব্যবস্থায় শিশুর লালন-পালন, রক্ষণাবেক্ষণে দাদা-দাদি, চাচা-চাচির স্থানে জায়গা করে নিচ্ছে ডে কেয়ার হোম, যা শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলছে।
উপরের আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান পরিবর্তিত সমাজ কাঠামোর প্রেক্ষাপটে যৌথ পরিবারের কার্যাবলিতে এসেছে নানা পরিবর্তন।

৫. ঘটনা-১: সুমন তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ছোট বোনকে বিয়ে করে।
ঘটনা-২: ফরিদ তার মামাতো বোনকে বিয়ে করে।
ক. ‘The History of Human Marriage’ বইটি কার লেখা?
খ. প্রথাগত জ্ঞাতি কী? বুঝিয়ে বল। 
গ. ঘটনা-২ কোন ধরনের বিবাহ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ঘটনা-১-এর বিবাহের সামাজিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘The History of Human Marriage’ বইটি ফিনল্যান্ডের সমাজবিজ্ঞানী ওয়েস্টারমার্ক এর লেখা।

খ. প্রথাগত জ্ঞাতি হলো কাউকে প্রথাগত সূত্রে আত্মীয় করে নেয়া। প্রথাগত জ্ঞাতি সম্পর্ক নির্ধারিত হয় একই স্থানে বা এলাকায় বসবাসরত মানুষদের মধ্যে। যেমন- একই পাড়ায় বসবাসকারী বাবা-চাচার বয়সী ব্যক্তিকে চাচা ডাকা। এ জ্ঞাতিসম্পর্কের ক্ষেত্রে রক্ত সম্পর্ক নির্দিষ্ট হতেও পারে নাও পারে।

গ. ঘটনা-২ হলো বিষম কাজিন বা ক্রস কাজিন বিবাহ বিবাহের যেসব প্রকারভেদ রয়েছে তার মধ্যে বিষম কাজিন বিবাহ একটি। যখন মামাতো-ফুপাতো ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ সংঘটিত হয় তখন তাকে বিষম কাজিন বিবাহ বলে। পারিবারিক সম্পর্ককে আরো জোরদার ও সুদীর্ঘ করার জন্য এ বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। মুসলিম সমাজে এ ধরনের বিবাহ বিদ্যমান। বিষম কাজিন বিবাহ রীতিতে সম্পতি নিকট জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে বলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা থাকে না।
উদ্দীপকে ফরিদ তার মামাতো বোনকে বিবাহ করে। বিবাহ রীতি অনুযায়ী এটি বিষম কাজিন বিবাহ। কেননা মামাতো ফুফাতো ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ সংঘটিত হলে তাকে বিষম কাজিন বিবাহ বলে, উপরের আলোচনায়ও ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনা-২ বিষম কাজিন বিবাহ নির্দেশ করছে।

ঘ. ঘটনা-১ উল্লিখিত বিবাহটি হলো সরোরেট বিবাহ। কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা গেলে ঐ ব্যক্তি তার মৃত স্ত্রীর বোনকে বিবাহ করলে তাকে সরোরেট বিবাহ বলে। এ বিবাহ প্রথাটি অবশ্য পালনীয় হয় যদি মৃত স্ত্রী কোনো সন্তান রেখে যান। উক্ত বিবাহ প্রথাটিকে শালিকা বিবাহ রীতিও বলা হয়।
উদ্দীপকের ঘটনা-১ এ সুমন তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ছোট বোনকে বিবাহ করে যেটি সরোরেট বিবাহ বলে অভিহিত। এ বিবাহের বিভিন্ন সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। এ ধরনের বিবাহের ফলে দুই পরিবারের মধ্যকার স্থাপিত আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ন থাকে। দুই পরিবারের মধ্যে আগে থেকে আত্মীয়তার বন্ধন থাকায় তাদের মধ্যে সমঝোতা ভালো হয়। এছাড়া মৃত স্ত্রী যদি কোনো সন্তান রেখে যান ঐ সন্তানের সঠিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়। উল্লিখিত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, বিবাহের অন্যান্য প্রকারভেদের মতোই সরোরেট বিবাহ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
 
৬. কামাল তার তিন ভাই, দুই বোন ও মা-বাবাসহ গ্রামে বাস করত। কামাল বিয়ে করে চাকুরিসূত্রে শহরে বসবাস শুরু করে। তার ভাইদেরকেও একে একে চাকুরির আশায় শহরে নিয়ে আসে এবং তারা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকে। বোনদের বিয়ে হয়ে গেলে শুধু তার বৃদ্ধ বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছে।
ক. প্রতিষ্ঠান কী?
খ. কাল্পনিক জ্ঞাতি বলতে কী বোঝ?
গ. কামালের শহরের পরিবারটি কোন ধরনের পরিবার? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. কামালের গ্রামের পরিবারটি ভেঙ্গে যাওয়ার আর্থ সামাজিক কারণ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. প্রতিষ্ঠান হলো সমাজ কর্তৃক গৃহীত এমন এক স্থায়ী ব্যবস্থা যা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. যে ব্যাক্তি রক্ত বা বৈবাহিক সূত্রে জ্ঞাতি নয় কিন্তু তার সাথে রক্ত সম্পর্কীয় বা বৈবাহিক জ্ঞাতিদের মতো আচরণ করা হয় তাই কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ক। কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ক দুই ধরনের হয়। যথা- পাতানো সম্পর্ক এবং ধর্মীয় সম্পর্ক। পাতানো সম্পর্ক সাধারণত দুজন পুরুষ বা দুজন মহিলা, অথবা একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে গড়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে ধর্মীয় সম্পর্ক ধর্মের নামে গড়ে তোলা হয়। যেমন- ধর্ম মা, ধর্ম বাবা ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের কামালের শহরের পরিবারটি একক পরিবার বা অণু পরিবার।
একক পরিবার গঠিত হয় স্বামী-স্ত্রী সহযোগে অথবা স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের এক বা একাধিক অবিবাহিত সন্তানকে নিয়ে। গঠনগত দিক থেকে এই পরিবার ক্ষুদ্রায়তন। এ ধরনের পরিবারকে অণু পরিবারও বলা হয়ে থাকে। পাশ্চাত্যে এ ধরনের পরিবার সবচেয়ে বেশি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশেও এ ধরনের পরিবার সর্বাধিক। আর্থ-সামাজিক কারণে আধুনিককালে বাংলাদেশে একক পরিবারই সময়োপযোগী বলে বিবেচিত হয়েছে এবং বর্তমানে এ সমাজে একক পরিবারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
উদ্দীপকের কামাল বিয়ে করে চাকরিসূত্রে শহরে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে তার ভাইদেরকেও চাকরির আশায় শহরে নিয়ে আসে এবং তারা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকে যা মূলত উপরের আলোচিত অণু পরিবারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, কামালের পরিবারটি একক বা অণু পরিবার।

ঘ. উদ্দীপকের কামালের গ্রামের পরিবার অর্থাৎ যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার পেছনে আর্থ-সামাজিক কারণ অনেকাংশে ভূমিকা রেখেছে।
যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার অর্থনৈতিক কারণটির সাথে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাধারণত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নগরকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের খোঁজে বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। তাছাড়া গ্রামীণ আর্থিক কাঠামো মূলত কৃষিনির্ভর। ফলে পেশাগত জীবনে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনে অনেক মানুষ শহরে পাড়ি জমায় এবং এর প্রভাব পড়ে যৌথ পরিবার ব্যবস্থার ওপর। ফলে দিন দিন যৌথ পরিবার ব্যবস্থা সংকুচিত হচ্ছে।
যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভাঙনের সামাজিক কারণগুলোর মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী মনোভাব, উন্নত জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি ক্রীয়াশীল। তাছাড়া বর্তমান সময়ে মানুষ নিজেকে সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ মানুষ উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা, উন্নত জীবনযাপন ইত্যাদির প্রত্যাশায় যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার গঠন করছে। যেমনটি উদ্দীপকের কামালের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। উন্নত জীবন যাপনের স্বপ্ন তথা ভাইদের চাকরি পাওয়ার প্রত্যাশাই তার গ্রামের যৌথ পরিবারটিকে ভেঙে শহর কেন্দ্রিক করেছে।
উপরের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভাঙনে আর্থ-সামাজিক কারণ দায়ী।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. চৈতির বিয়ে হঠাৎ করে ঠিক হয়েছে। গত মাসে তার বড় বোন সুরভী মারা গিয়েছে। বোনের দুটি সন্তানের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে চৈতি বাবা-মার কথামতো তার বোনের স্বামীকে বিয়ে করতে রাজি হয়।
ক. সমাজের ক্ষুদ্র একক কী?
খ. সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কোন ধরনের বিবাহের চিত্র ফুটে উঠেছে? এর বিপরীতধর্মী বিবাহের উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকে উল্লিখিত বিবাহের ধরন ব্যতীত বাংলাদেশে আরও বিভিনণ ধরনের বিবাহ প্রচলিত আছে।’’ বক্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পরিবার হলো সমাজের ক্ষুদ্র একক।

খ. সমাজে নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেই সমাজের শৃঙ্খলা, ভারসাম্য টিকে আছে। এগুলো মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের বিভিন্ন অভাব ও প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন- অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি মানুষের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি সাধনের উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে।

গ. উদ্দীপকে সরোরেট বিবাহের চিত্র ফুটে উঠেছে।
সরোরেট বিবাহ প্রথায় কোনো ব্যক্তি তার মৃত স্ত্রীর বোনকে বিবাহ করেন। আমাদের সমাজে এর উদাহরণ পাওয়া যায়। বৈবাহিক সম্পর্ককে স্থায়ী করতে অথবা অল্পবয়সী শিশুসন্তানদের লালন - পালনের সুবিধার্থে অনেকে এ বিবাহ করেন। প্রথাটিকে শ্যালিকা বিধবা রীতি বলেও অভিহিত করা যায়।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, চৈতির বিয়ে হঠাৎ করে ঠিক হয়েছে। গত মাসে তার বড় বোন সুরভী মারা গিয়েছে। বোনের দুটি সন্তানের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে চৈতি বাবা-মার কথামতো তার বোনের স্বামীকে বিয়ে করতে রাজি হয়। পাঠ্যবইয়ের তথ্য অনুসারে চৈতির এ বিবাহ সরোরেট বিবাহের অন্তর্ভুক্ত, কারণ চৈতি তার মৃত বোনের সন্তানের কথা চিন্তা করে তার বোনের স্বামীকে বিয়ে করতে রাজি হয়। প্রথাটি অবশ্য পালনীয় হয় কোনো সন্তান থাকে। বর্তমানে আমাদের মুসলমান সমাজেও এ ধরনের বিবাহরীতি লক্ষ করা যায়।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জ্ঞাতিসম্পর্ক টিকিয়ে রাখা এবং সন্তান লালন-পালনের উদ্দেশ্যে সরোরেট বিবাহ হয়ে থাকে যা বাংলাদেশের সুপরিচিত একটি বিবাহের প্রকারভেদ।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিকৃত বিবাহ তথা সরোরেট বিবাহ ব্যতীত রাংলাদেশে আরও বিভিন্ন ধরনের বিবাহ প্রচলিত আছে।
পাত্র-পাত্রীর সংখ্যার ভিত্তিতে বিবাহ তিন প্রকার যেমন- একক বিবাহ, বহু বিবাহ ও গোষ্ঠীগত বিবাহ। একক বিবাহে একজন মহিলা ও একজন পুরুষের মধ্যে সংঘঠিত হয় কিন্তু বহু বিবাহে একজন পুরুষের সাথে যখন একাধিক মহিলা কিংবা একজন মহিলার সাথে একাধিক পুরুষের বিবাহ সংঘটিত হয় তখন তাকে বহু বিবাহ বলে। আর একাধিক পুরুষের সাথে একাধিক মহিলার বিবাহকে বলে গোষ্ঠীগত বিবাহ।
পাত্র-পাত্রীর পরিচিতির ভিত্তিতে চার প্রকার বিবাহ রয়েছে যেমন লেভিরেট, সরোরেট, সমান্তরাল কাজিন ও বিষম কাজিন বিবাহ। লেভিরেট প্রথায় কোনো ব্যক্তি তার মৃত ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করে কিন্তু সরোরেট প্রথায় কোনো ব্যক্তি তার মৃত স্ত্রীর বোনকে বিবাহ করে। আবার চাচাতো বা খালাতা ভাই-বোনের মধ্যে সংঘঠিত বিবাহকে সমান্তরাল কাজিন বিবাহ বলে এবং মামাতো ও ফুফাতো ভাইবোনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিবাহকে বিষম কাজিন বিবাহ বলে।
এছাড়া পাত্র-পাত্রীর ইচ্ছার ভিত্তিতে বিবাহ দু’ প্রকার যেমন বন্দোবস্ত বিবাহ ও রোমান্টিক বিবাহ। বন্দোবস্ত বিবাহের ক্ষেত্রে পুত্র-কন্যার অভিভাবকেরা পাত্র-পাত্রী মনোনয়ন করে কিন্তু রোমান্টিক বিবাহে পাত্র-পাত্রীর স্বাধীন ইচ্ছায় বিবাহ সম্পাদিত হয়। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের বিবাহ ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে।

৮. মমিন সাহেবের পরিবার একটি আদর্শ পরিবার। ছেলেমেয়েদেরকে তিনি নম্রতা, ভদ্রতা, আদব-কায়দা এবং নৈতিকতার জ্ঞান রপ্ত করিয়েছেন। এতে ছেলেমেয়েরা আদর্শবান হিসেবে গড়ে উঠেছে। 
ক. প্রথা কী?
খ. পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে পরিবারের কোন কাজটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? আলোচনা করো। 
ঘ. সামাজিক নিয়ন্ত্রণে পরিবারের উক্ত কাজটি কী ভূমিকা পালন করতে পারে? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজের সুনির্দিষ্ট কতকগুলো নিয়ম, যা অনুসরণ করা সমাজবাসীর কর্তব্য, তা-ই হচ্ছে প্রথা।

খ. পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান, কেননা মানবসমাজের বিকাশের প্রতিটি পর্যায়েই পরিবারের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। পরিবারেই মানুষ জন্মগ্রহণ করে, বেড়ে ওঠে এবং বৃহত্তর সমাজজীবনে প্রবেশের শিক্ষা লাভ করে। সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের কাঠামো ও কার্যাবলিতে পরিবর্তন এলেও তা কখনো বিলুপ্ত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না।

গ. উদ্দীপকের মাধ্যমে পরিবারের সামাজিকীকরণ কাজের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সন্তানসন্ততিদের উপযুক্ত সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে় তোলা। এ কাজটি প্রাথমিকভাবে পরিবারের ওপরই বর্তায়। সমাজের কাঙি্ক্ষত মূল্যবোধ অনুযায়ী পরিবার শিশুকে গড়ে় তোলে। পরিবারই তার শিশু-কিশোরদের সামাজিক মূল্যবোধ, আচার-প্রথা, রীতিনীতি তথা সাংস্কৃতি ধ্যানধারণা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান সরবরাহ করে। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে বসবাস করতে গেলে মানুষকে প্রতিনিয়তই তার চারপাশের মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। পরিবার তার শিশু কিশোরদের এসব সামাজিক গুণাবলি অর্জন করতে তথা সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত মমিন সাহেবের পরিবার একটি আদর্শ পরিবার। তিনি ছেলেমেয়েদেরকে নম্রতা-ভদ্রতা, আদব-কায়দা এবং নৈতিকতার জ্ঞান রপ্ত করিয়েছেন। এতে ছেলেমেয়েরা আদর্শবান হিসেবে গড়ে় উঠেছে। অর্থাৎ মমিন সাহেব তার ছেলে। মেয়েদেরকে সামাজিকীকরণের শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই শিশুরা সমাজ উপযোগী আচার আচরণ, মূল্যবোধের শিক্ষা লাভ করে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে় ওঠে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবে পরিবারের শিক্ষামূলক কাজেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকের মমিন সাহেবের পরিবারের মাধ্যমে মূলত পরিবারের সামাজিকীকরণ কার্যাবলির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণে পরিবারের উক্ত কাজ তথা সামাজিকীকরণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজ ব্যক্তিকে সমাজস্বীকৃত রীতিনীতির মাধ্যমে উপযুক্ত আচরণ করতে বাধ্য করে এবং তাকে সমাজে বসবাস করার উপযুক্ত করে তোলে। আর সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার সমাজে কর্তব্য সম্পাদনকারী এবং সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণকারী সদস্যরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
সামাজিকীকরণ ব্যাক্তিকে তার সামাজিক নানা ধরনের কাজকর্মে অংশগ্রহণকারী হিসেবে গড়ে তোলে এবং সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ গ্রহণে তাকে প্রবৃত্ত করে। আর এ মূল্যবোধ-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার সমাজে প্রচলিত প্রথা, মূল্যবোধ, রীতিনীতি, আচার-আচরণ তথা সমগ্র সমাজের সাথে সঙ্গতি সাধনের উপায় ও ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং এর মাধ্যমেই সে সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম হয়।
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যক্তিকে দলের অন্য সদস্যদের সাথে মিলেমিশে থাকার ক্ষেত্রে সক্ষম করে তোলে। সামাজিকীকরণের জন্যই ব্যক্তি সমাজের সদস্য হিসেবে তার নিজের জন্য অসম্মানজনক বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কাজ করতে উৎসাহী হয় না। সামাজিকীকৃত ব্যক্তি তার শ্রমের মাধ্যমে উৎপাদনমূলক কাজ করার চেষ্টা করে। এমনকি ব্যক্তি যদি পুরোপুরি সামাজিক হয় তবে সে সমাজের গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝতে শেখে এবং ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে সমাজের স্বার্থকে স্থান দেয়। এর ফলে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কাজ সহজ হয়। সমাজে মানুষ সুন্দরভাবে একে অপরের সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে পারে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের মূল্যবোধ, আদর্শ, শৃঙ্খলা, দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা পায়। আর এ শিক্ষাই সামাজিক নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

৯. নিজাম সাহেবের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের অভিযোগ আছে। তার আর্থিক অবস্থা যেমন ভালো, তেমনি। আত্মীয়স্বজনের বহরও বেশ লম্বা। যদিও এলাকাবাসীর চোখে। তিনি ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত নন, কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাস। টাকা এবং আত্মীয়স্বজনের প্রভাব খাটিয়ে সামনের ইউপি নির্বাচনে তিনিই জিতবেন।
ক. মাতৃপ্রধান পরিবার কী? 
খ. মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে সমাজজীবনে জ্ঞাতিসম্পর্কের কোন গুরুত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘‘জ্ঞাতিসম্পর্কের উক্ত ব্যবহার যোগ্য নেতৃত্ব গঠনের অন্তরায়’’ - তুমি কি একমত? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যে পরিবারে পারিবারিক ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা পরিবারের বয়স্ক মেয়েদের ওপর ন্যস্ত থাকে তাকে মাতৃপ্রধান পরিবার বলে।

খ. যে পরিবারে পারিবারিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বয়স্ক মহিলা যেমন স্ত্রী বা মাতার ওপর ন্যস্ত থাকে তাকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে।
মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে নারীর অধিকার পুরুষ অপেক্ষা বেশি থাকে এবং মায়ের পরিচয়ে বংশ পরিচয় নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের গারো উপজাতিদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়।

গ. উদ্দীপকে সমাজজীবনে জ্ঞাতিসম্পর্কের রাজনৈতিক গুরুত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। গ্রামীণ রাজনৈতিক কর্মকান্ড- জ্ঞাতিদের ভূমিকা অপরিসীম। ব্যক্তি হোক আর গোষ্ঠী হোক জ্ঞাতিদের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া গ্রামীণ রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা কষ্টসাধ্য। গ্রামের রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রধানত গোষ্ঠীসমূহের মধ্যকার ঐক্য এবং অনৈক্যের ফলশ্রুতি। যেমনত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন, জাতীয় রাজনীতি, সামাজিক কর্মকান্ড ইত্যাদি।
উদ্দীপকের নিজাম সাহেবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিশ্বাস আত্মীয়স্বজনের প্রভাবে তিনি ইউপি নির্বাচনে জিতবেন, যা রাজনৈতিক কর্মকান্ড- জ্ঞাতিসম্পর্কের গুরুত্বকেই ইঙ্গিত করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজজীবনে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জ্ঞাতিসম্পর্কের গুরুত্বই নির্দেশিত হয়েছে।

ঘ. জ্ঞাতিসম্পর্কের রাজনৈতিক অপব্যবহার যোগ্য নেতৃত্ব গঠনের অন্তরায়- আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত। বিশ্বের যেকোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই আত্মীয়স্বজনের ভূমিকা কম-বেশি পরিলক্ষিত হয়। এটি তৃতীয় বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আরও বেশি লক্ষণীয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে এর ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই নেতিবাচক হয়। বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচন ব্যবস্থাতেই যে প্রার্থীর আত্মীয়স্বজন বেশি কিংবা অনেক আত্মীয়স্বজন থাকে অথবা কালো টাকার জোর থাকে তারা নির্বাচিত হয়। তাতে প্রার্থী যোগ্য হোক। আর অযোগ্য হোক। যেমনটি উদ্দীপকের নিজাম সাহেবের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। কিন্তু জ্ঞাতিদের এ ধরনের ভূমিকা যোগ্য। নেতৃত্ব তৈরিতে বাধা হয়ে দাড়ায়। ফলে দেশ পরিচালিত হয়। অযোগ্য নেতৃত্বে এবং দেশ পারে না তার কাঙি্ক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। কারণ একটি দেশের সফলতায় যোগ্য নেতৃত্ব পারে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে। সে কারণে নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বজনপ্রীতিমুক্ত থেকে দক্ষ, যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। তাই প্রশ্নোত্ত বক্তব্যের সাথে আমি একমত যে, নির্বাচনে জ্ঞাতিদের স্বজনপ্রীতি যোগ্য নেতৃত্ব গঠনের অন্তরায়।

১০. জনাব মোস্তফা স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন। সংসারে তার বৃদ্ধ মা-বাবাও আছেন যাদের তিনি সবসময় যত্নের সাথে দেখাশুনা করেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরাও তার বাবা-মায়ের সাথে আনন্দে সময় কাটায়। এছাড়াও প্রতিবেশীদের সাথেও মোস্তফা সাহেবের সম্পর্ক একেবারে আত্মীয়ের মতো। মোস্তফা সাহেবের ছোট ছেলে তো পাশের বাড়ির পলাশ সাহেবের ছোট ছেলেকে নিজের ভাই বলেই মনে করেন।
ক. একক বিবাহ কী?
খ. পরিবার বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে কয় ধরনের জ্ঞাতিসম্পর্কের উল্লেখ আছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. জনাব মোস্তফার পারিবারিক সুখ-শান্তির নেপথ্যে রয়েছে জ্ঞাতিসম্পর্ক- বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে একক বিবাহ বলে।

খ. পরিবার হলো মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের সর্বজনীন রূপ। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী সমাজের নিয়মকানুন সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং সন্তান-সন্ততি জন্মদান ও লালনপালন করে। পরিবার সদস্যদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করে। সদস্যদের মধ্যে মানসিক ঐক্য গড়ে় তোলে এবং পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় একটি অভিন্ন সংস্কৃতির জন্ম দেয়। সুতরাং বলা যায় পরিবার হলো সাধারণত বাসস্থান, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সন্তান উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন সামাজিক দল বা সংস্থা।

গ. উদ্দীপকে তিন ধরনের জ্ঞাতিসম্পর্কের উল্লেখ আছে। যথা জৈবিক বা রক্ত সম্পর্কীয় জ্ঞাতিসম্পর্ক, বৈবাহিক জ্ঞাতিসম্পর্ক ও প্রথাগত জ্ঞাতিসম্পর্ক।
রক্তের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে যে জ্ঞাতিসম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে বলে জৈবিক বা রক্ত সম্পর্কীয় জ্ঞাতিসম্পর্ক। পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাইবোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-চাচি, খালা-খালু, ফুফু-ফুফা ইত্যাদি সম্পর্কগুলো হচ্ছে জৈবিক সম্পর্কীয়। রক্তসম্পর্কীয় জ্ঞাতিসম্পর্ক আবার দুই প্রকার যথাত পিতৃসূত্রীয় ও মাতৃসূত্রীয়। মূলত পিতা ও মাতার সম্পর্কের জের ধরেই জৈবিক বা রক্ত সম্পর্কীয় জ্ঞাতি সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার বিবাহের মাধ্যমে যে সম্পর্ক তৈরি হয় তাকে বলে বৈবাহিক জ্ঞাতি সম্পর্ক। স্বামী বা স্ত্রীর সাথে তার শ্বশুর বাড়ির পরিজনের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয় বৈবাহিক জ্ঞাতি সম্পর্ক দ্বারা। অন্যদিকে স্থানীয় প্রথাগত সূত্রে কাউকে আত্মীয় করে নেবার যে বন্ধন তাই প্রথাগত জ্ঞাতি সম্পর্ক। একই পাড়ায় বসবাসকারী প্রতিবেশীদের সাথে এই সম্পর্কে গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের মধ্যে বাবার বয়সীদের চাচা এবং সমবয়সী ছেলে নিজের ভাই হিসেবে পরিচিত হয়।
উদ্দীপকে জনাব মোস্তফা স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং তার বাবা-মায়ের সাথে বেশ সুখে আছে। তাছাড়া তার প্রতিবেশীর সাথে সু-সম্পর্ক রয়েছে, এমনকী প্রতিবেশী পলাশ সাহেবের ছোট ছেলেকে তার ছোট ছেলে নিজের ভাই বলে মনে করে।
উপরের আলোচনায় যে তিন ধরনের জ্ঞাতিসম্পর্কের ব্যাখ্যা করা হয়েছে তা উদ্দীপকের বর্ণনায় নির্দেশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের জনাব মোস্তফার পারিবারিক সুখ-শান্তির নেপথ্যে রয়েছে জ্ঞাতিসম্পর্ক কথাটি যথার্থ।
জ্ঞাতিসম্পর্ক হচ্ছে সব সমাজের চাবিকাঠি অর্থাৎ আদিম থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সব সমাজেই জ্ঞাতিসম্পর্কের অস্তিত্ব লক্ষণীয়। পারিবারিক জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী করতে জৈবিক বা রক্ত সম্পর্কীয় জ্ঞাতিসম্পর্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা সবচেয়ে নির্ভরশীল এবং বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক হচ্ছে রক্তের সম্পর্ক। তাছাড়া বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ জ্ঞাতিসম্পর্কের জালও থাকে নিরবচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্য। কারণ ব্যক্তির একার পক্ষে কখনোই সুখি হওয়া সম্ভব নয় কিংবা একক ব্যক্তি কখনো পরিবার গঠন করতে পারেনা। পরিবার গঠনের পূর্বসূত্র হচ্ছে জৈবিক ও বৈবাহিক সূত্রের জ্ঞাতিসম্পর্ক। তাছাড়া ব্যক্তিকে সমাজে বসবাস করতে হলে তার আশপাশের প্রতিবেশীদের সাথেও মিশতে হয়, যাকে সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্রথাগত জ্ঞাতিসম্পর্ক। পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধির নেপথ্যে এই প্রথাগত জ্ঞাতিসম্পর্ক তথা প্রতিবেশীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
উদ্দীপকের মোস্তফাও তার পারিবারিক জীবনে বেশ সুখি। স্ত্রী সন্তান, বাবা-মা এবং প্রতিবেশীদের নিয়ে তিনি বেশ সুখময় জীবনযাপন করছেন যার মূল ভিত্তি হচ্ছে জ্ঞাতিসম্পর্ক।
উপরের আলোচনার শেষে বলা যায়, পারিবারিক সুখ শান্তির নেপথ্যে জ্ঞাতিসম্পর্ক এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে যা উদ্দীপকের জনাব মোস্তফার পারিবারিক জীবন দ্বারা প্রমাণিত।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post