HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. সনু রানি দাস নারায়ণগঞ্জের হরিজনদের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। ছোট থেকে তিনি দারিদ্র্য এবং সমাজের বাঁকা চোখকে উপেক্ষা করে আজ এ পর্যায়ে পৌঁছেছেন। একবার তিনি আর্থিক সাহায্যের জন্য স্থানীয় ধনী রুদ্রাক্ষ চক্রবর্তীর বাড়িতে গেলে নিচু জাতের বলে তাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেদিন সনু বুঝতে পারেন, 'সবার ওপরে মানুষ সত্য' কথাটা শুধু বইয়ে আছে বাস্তবে নেই। 
ক. টি.বি. বটোমোর-এর মতে সামাজিক স্তরবিন্যাস কী? 
খ. মার্কসবাদ বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সনু রানি দাসের পরিচয় সমাজবিজ্ঞানের কোন প্রত্যয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সনু ও রুদ্রাক্ষ চক্রবর্তীর সামাজিক পার্থক্যের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. টি. বি. বটোমোর- এর মতে ‘‘সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে সমাজের শ্রেণি বা স্তরভিত্তিক বিভাজন যা মর্যাদা ও ক্ষমতা গঠন করে।"

খ. মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষাই হচ্ছে মার্কসবাদ। কার্ল মার্কসের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে 'মার্কসবাদ'। মার্কসবাদ হলো একটি সামগ্রিক চিন্তাধারা, একটি সমাজদর্শন। মার্কসবাদ হলো দ্বানি্দ্বক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ। এটি একটি সামগ্রিক তত্ত্বচিন্তা। যেকোনো জ্ঞান শৃঙ্খলাতেই এর প্রয়োগ সম্ভব। একে পৃথকভাবে কেবল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতি অথবা ইতিহাস বা দর্শন তত্ত্ব বলা ঠিক নয়। জগৎকে ব্যাখ্যা করা নয়, তাকে বদলে দেওয়াটাই আসল কথা- মার্কসবাদী চিন্তার সারকথা এটাই।

গ. উদ্দীপকের সনু রানি দাসের পরিচয় সমাজবিজ্ঞানের সম্প্রদায় প্রত্যয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হলো সম্প্রদায়। কিছুসংখ্যক মানুষ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে দীর্ঘকাল বসবাস করতে থাকলে তাদের মধ্যে অভিন্ন চিন্তাভাবনা, সামাজিক বিষয়াদিতে অভিন্নতা, ঐতিহ্যগত অভিন্নতাবোধ, গভীর সংহতিবোধ দেখা দেয়। নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে একটি জনগোষ্ঠীর এভাবে সুসংহত সামাজিক জীবনযাপনের সূত্রেই সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয় বর্তমানে সম্প্রদায় হলো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী মানবগোষ্ঠী যারা পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে সমজাতীয় জীবনযাপন করে এবং যার ফলে সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে সংহতিবোধ বিরাজ করে। একই নীতি, আদর্শ ও ধর্মীয় চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্প্রদায় সৃষ্টি হতে পারে, যেমনত মুসলিম সম্প্রদায়। আবার ঐতিহ্যবাহী সমজাতীয় পেশা ও জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করেও সম্প্রদায় গড়ে় উঠতে পারে। যেমন- তাতি ও জেলে সম্প্রদায়। উদ্দীপকেও এমন একটি শ্রেণি লক্ষণীয়।
উদ্দীপকের সনু রানি দাস নারায়ণগঞ্জের হরিজন সমাজের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। অর্থাৎ সনু রানি দাস হরিজন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। যারা একটি নির্দিষ্ট ঐতিহ্যবাহী পেশা ও সমজাতীয় জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত এবং এর ওপর ভিত্তি করেই তারা একটি পৃথক সম্প্রদায় গড়ে় তুলেছে। উপরের আলোচনা ও উদ্দীপকের তুলনামূলক বিশ্লেষণে বলা যায় সনু রানি দাসের পরিচয় সমাজবিজ্ঞানের সম্প্রদায় নামক প্রত্যয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সনু রানি দাস ও রুদ্রাক্ষ চক্রবর্তীর সামাজিক পার্থক্যের ক্ষেত্রে সামাজিক মর্যাদাগত প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যা সাংস্কৃতিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত।
বাংলাদেশের সমাজ শ্রেণিভিত্তিক বা স্তরায়িত সমাজ। অর্থাৎ এ সমাজ শ্রেণিবিভক্ত। এ শ্রেণি বিভাজন কখনো উৎপাদনের উপায়ের মালিকানা, কখনো উঁচু-নিচু মর্যাদা আবার কখনো ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে ক্রমোচ্চভাবে বিভক্ত। একটি শ্রেণি অথবা মর্যাদা গোষ্ঠীর জীবনাচরণ এবং পদ্ধতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য শ্রেণি অথবা মর্যাদা গোষ্ঠীর জীবনধারণের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। এ ধরনের স্তরবিন্যাস মূলত শিক্ষা, অর্থ, প্রতিপত্তি, বংশ মর্যাদা, পেশা। ইত্যাদির ভিত্তিতে হয় এবং সংস্কৃতি দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত।
উদ্দীপকের সনু রানি দাস হরিজন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সমাজব্যবস্থায় সুইপার সমাজের মানুষকে নিম্ন মর্যাদার মনে করা হয়। অন্যদিকে রুদ্রাক্ষ চক্রবর্তী ধনী ব্যক্তি। আমাদের সমাজে ধনী শ্রেণির মর্যাদাগত অবস্থান উঁচু স্তরে। তাই দেখা যায়, সনু রানি দাস ও রুদ্রাক্ষ চক্রবর্তীর মধ্যে একটি মর্যাদাগত ব্যবধান রয়েছে। যা সামাজিক স্তরবিন্যাসের পাশাপাশি সংস্কৃতির ভূমিকাকে তুলে ধরে।
উপরের আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সনু রানি দাস ও রুদ্রাক্ষ চক্রবর্তীর সামাজিক পার্থক্যের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক উপাদান প্রভাব বিস্তার করেছে।


২. ১৯১০ সালে মেক্সিকোতে একটি সশস্ত্র বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। দেশটির সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এ বিপ্লবের অভিঘাত ব্যাপক। বিপ্লবের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে শিল্পীরা নতুন সৃষ্টিতে মেতে উঠেছিলেন, যার উল্লেখযোগ্য নিদর্শন দিয়েগো রিতেরা, ফ্রিদা কাহলো এবং ওরাসকোর আঁকা বিখ্যাত ম্যুরালগুলো। এসব সৃষ্টিকর্ম নিয়ে লন্ডনের আর্টস একাডেমিতে চলছে ‘মেক্সিকো: এ রেভল্যুশন ইন আর্ট' নামের একটি শিল্প প্রদর্শনী। 
ক. সমাজজীবনে কোন উপাদানের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়?
খ. সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে খেলার মাঠ কীভাবে ভূমিকা রাখে?
গ. উদ্দীপকের শিল্পকর্মগুলো সামাজিক নিয়ন্ত্রণে কীরূপ ভূমিকা রাখে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, সামাজিক উন্নয়ন ও গতিশীলতার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত উপাদানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখে? যৌক্তিক মতামত দাও।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজজীবনে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।

খ. সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে খেলার মাঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পরিবারের নির্দিষ্ট ও সীমিত গন্ডি পেরিয়ে শিশু খেলার মাঠে প্রতিবেশীদের সংস্পর্শে আসে। খেলার মাঠে সঙ্গী-সাথীদের মাধ্যমে সে প্রভাবিত হয়। নিজেও অন্যান্যদের প্রভাবিত করে। এতে করে তার মধ্যে নেতৃত্ব, নিয়ম-শৃঙ্খলা, দায়িত্ব-কর্তব্য, সহনশীলতা ইত্যাদি গুণাবলির সূচনা ও বিকাশ ঘটে। তাই সমাজজীবনের রূপায়ণ ও সামাজিকীকরণে মানুষের জীবনে খেলার মাঠের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

গ. উদ্দীপকের উক্ত শিল্পকর্মগুলো সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাহন।
শিল্পকলার মাধ্যমে শিল্পী সমাজজীবনের নানা দিক এবং অসংগতিকে তুলে ধরেন। ফলে শিল্পকলা বা শিল্পকর্মের মাধ্যমে মানুষের আবেগ ও চেতনা জাগ্রত হয়। এছাড়া শিল্পকলা নানাভাবে জাতির পরিচয় তুলে ধরে।
শিল্পকলা চলমান সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ললিতকলাও একই ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণস্বরূপ, বিগত বছরগুলোতে সিডর ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করে রচিত গানগুলো গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে তা মানুষকে ব্যথিত করে এবং মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে অনুপ্রেরণা জোগায়। অনুরূপভাবে পাবলো পিকাসোর ‘গোয়ের্নিকা' শীর্ষক চিত্র যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের আবেগকে জাগিয়ে তোলে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, শিল্পকলা সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাহন।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি যে, সামাজিক উন্নয়ন ও গতিশীলতার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত উপাদানগুলো তথা শিল্পকর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সামাজিক উন্নয়ন ও গতিশীলতার ক্ষেত্রে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক উপাদান শিল্পকলার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, শিল্পকলার এসব উপাদানের প্রত্যক্ষ প্রভাবে মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন সূচিত হয়। তাছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে মানুষের মধ্যে আধুনিক চিন্তা ও চেতনার প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা মূলত সাংস্কৃতিক উপাদানেরই ফল। যেমন- এক সময় লাঙল দিয়ে জমি চাষ করা হলেও বর্তমানে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। আবার হাতের চেয়ে যন্ত্রের সাহায্যে উৎপাদন অধিক ফলপ্রসূ এবং এতে সময় কম লাগে ও উৎপাদন বেশি হয়। অবস্তুগত শিল্পকলার মধ্যে যেমন সাহিত্য, কাব্য, সংগীত, নৃত্য ইত্যাদি মানবসমাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এগুলো সমাজেরই প্রতিচ্ছবি, আবার সমাজ এগুলোর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। শিল্পকলা ছাড়াও সকল বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনই সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে এবং সামাজিক উন্নয়ন ও গতিশীলতা বৃদ্ধি করে।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, শিল্পকলা বা সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রভাবে সমাজজীবনে পরিবর্তন ঘটে। আবার সমাজজীবনে গতিশীলতা আনয়ন বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৩. ইউসুফ সাহেব কন্যা আয়েশাকে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। আয়েশাকে সবাই বিদেশি ভেবে ভুল করে। কারণ সে দেখতে অনেকটাই জার্মান মায়ের মতো। ইউসুফ সাহেব কন্যাকে বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দেখাতে চান এবং বিদেশি স্ত্রীকে দেশি শাডw় উপহার দিতে চান। তিনি স্ত্রীর জন্য রাজশাহী থেকে সিল্ক শাড়ি, টাঙ্গাইল থেকে তাঁত শাড়ি এবং নারায়ণগঞ্জের ডেমরা থেকে জামদানী শাড়ি কিনেন। বাংলাদেশের এসব বৈচিত্রে্য আয়েশা মুগ্ধ। 
ক. সংস্কৃতি কাকে বলে?
খ. কাব্য ও কাব্যগ্রন্থের সংস্কৃতিগত পার্থক্য কী? বুঝিয়ে লিখ। 
গ. উদ্দীপকের আয়েশা সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী কোন উপাদানের ফল? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে আয়েশার মুগ্ধ হওয়া সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবের ফল- ব্যাখ্যা দাও।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজের সদস্য হিসাবে মানুষ যেসব জ্ঞান-বিজ্ঞান, আচার বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতিবোধ, আইনকানুন ও অভ্যাস অর্জন করে তার জটিল সমষ্টিকেই সংস্কৃতি বলে।

খ. কাব্য ও কাব্যগ্রন্থ যথাক্রমে অবস্তুগত ও বস্তুগত সংস্কৃতির উদাহরণ।
আমরা জানি, সংস্কৃতির যে অংশ অদৃশ্য বা উপলব্ধির ওপর নির্ভরশীল তা অবস্তুগত সংস্কৃতি। অন্যদিকে মানুষ দৃশ্যমান যা কিছু তৈরি ও ব্যবহার করে তা বস্তুগত সংস্কৃতি। সুতরাং একজন কবি যখন কবিতা বা কাব্যের কথা চিন্তা করেন তখন তা অবস্তুগত সংস্কৃতির পর্যায়ে থাকে। কিন্তু যখন তিনি কবিতাটি লিখে বইয়ে ছাপান তখন তা বস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

গ. উদ্দীপকের আয়েশা সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী বংশগতি উপাদানের ফল।
বংশানুক্রমে জৈব ও মানবিক যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য অধস্তন পুরুষের মধ্যে সঞ্চালিত হয় তাই বংশগতি। বংশগতি মানুষের দৈহিক আকার ও গঠনে প্রকাশ পায়, বিভিন্ন গোত্র বা বর্ণভেদ তার সাক্ষ্য বহন করে। জীব বিজ্ঞানীদের মতে, বংশগত প্রভাবঘটিত গুণাগুণ শুক্রকীটের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে থাকে এবং এ শুক্রকীট হতে যে শিশুর জন্ম হয় তার মধ্যে বংশগত গুণাগুণ আপনা হতেই প্রকাশ পায়। এ জন্যই দেখা যায় যে, চুলের বর্ণ, হাতের আঙ্গুল, মাথার আকৃতি, দৈহিক গঠন, গায়ের রং, দৈহিক ও মানসিক শক্তি, কর্মদক্ষতা প্রভৃতি গুণাবলি মানুষ পুরুষানুক্রমে লাভ করে থাকে। আবার মানুষের আচার ব্যবহার ও মানসিক অবস্থা এমন অনেক শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে যা স্পষ্টত বংশগত, যাদের প্রতিক্রিয়া কোনো ধরনের পরিবেশেই বদলানো সম্ভব নয়। চোখের রঙ, রক্তের বিভাগ, আঙ্গুলের ছাপ প্রভৃতি নির্ধারণকারী বংশগতির উপাদান সব পরিবেশে একই থাকে।
উদ্দীপকে আয়েশার মা হলো বংশগতভাবে জার্মান কিন্তু তার বাবা হলো বাঙালি। আয়েশা দেখতে তার মায়ের মতো হয়েছে। যা বংশগতি উপাদানকে নির্দেশ করে। তাই বলা যায় যে, আয়েশা বংশগতি উপাদানেরই ফল।

ঘ. উদ্দীপকে আয়েশার মুগ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী ভৌগোলিক উপাদান কাজ করেছে। সমাজজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পোশাক-পরিচ্ছেদ এর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ু ও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোশাক ব্যবহার করে। যেমন- শীতপ্রধান অঞ্চলের মানুষ তুলনামূলক মোটা কাপড় এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষ হালকা সুতি কাপড় ব্যবহার করে। আবার একই দেশে ঋতুভেদে গরম, বা হালকা কাপড় ব্যবহার করতে দেখা যায়। অর্থাৎ ভৌগোলিক কারণে কোনো কোনো অঞ্চলে কোনো কোনো পোশাক বিশেষ পরিচিতি লাভ করে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের রাজশাহী সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁত, নারায়ণগঞ্জের জামদানির কথা বলা যায়। এদেশের রাজশাহী অঞ্চলে তুঁতে গাছ বেশি জন্মায়। তাই এ অঞ্চলে রেশম চাষ বেশি হয়, যা সিল্ক কাপড় তৈরিতে অবদান রাখছে। আবার নারায়ণগঞ্জে বিশেষ আবহাওয়া এ অঞ্চলে জামদানি শাড়ি তৈরিতে ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে উপযুক্ত আবহাওয়া সে অঞ্চলের পোশাক-পরিচ্ছেদের ধরনে প্রভাব বিস্তার করে।
উদ্দীপকে লক্ষণীয়, আয়েশার বাবা তার মায়ের জন্য রাজশাহীর সিল্ক, টাঙ্গাইলের তাঁতের শড়ি এবং নারায়ণগঞ্জের জামদানি কাপড় কেনে। আয়েশা এদেশের পোশাকের বৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হয় যা ভৌগোলিক উপাদানেরই প্রত্যক্ষ ফল।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের পোশাক-পরিচ্ছেদের ধরনের উপর ভৌগোলিক পরিবেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করে।

৪. ঘটনা-এক: দীনা টেলিভিশনের একটি নাচের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ধ্রুপদী, আধুনিকসহ নৃত্যের প্রতিটি শাখায় সে নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছে। তার মাও খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী ছিলেন।
ঘটনা-দুই: জলদিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কর্ণফুলী নদী। এখানকার উর্বর ভূমিতে প্রচুর ফসল জন্মে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল শহরে বিক্রি করে। গ্রামে জেলেদের সংখ্যাও কম নয়। তবে মাঝে মাঝে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস গ্রামবাসীর স্বাভাবিক জীবনকে বিপর্যস্থ করে। 
ক. সংস্কৃতি কী?
খ. পরিবারের ওপর শিল্পায়নের প্রভাব বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকের ঘটনা-এক এ সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী কোন উপাদানটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের জলদিয়া গ্রামের অর্থনীতিতে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সংস্কৃতি হলো সার্বিক জীবনপ্রণালি।

খ. পরিবারের ওপর শিল্পায়নের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। যেমন যৌথ পরিবার ভাঙন এবং একক পরিবার সৃষ্টির মূল কারণ শিল্পায়ন। সাধারণত শিল্প অঞ্চলগুলো শহর ও নগরকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। যার কারণে অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ কর্মস্থলের পাশাপাশি বসবাস করার চেষ্টা করে এবং কাজের সুবিধার্থে সেখানেই পরিবার গড়ে় তোলে। তাই বলা যায়, শিল্পায়ন দ্বারা পরিবার প্রভাবিত হয়।

গ. উদ্দীপকের ঘটনা-এক-এ সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী সাংস্কৃতিক উপাদানটি প্রতিফলিত হয়েছে।
সমাজজীবনকে যেসব উপাদান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে সেসবের মধ্যে সংস্কৃতি তথা কৃৎকৌশল অন্যতম। সংস্কৃতি বলতে সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা মানবসৃষ্ট সব বস্তুগত ও অবস্তুগত উপকরণকে বুঝিয়ে থাকেন। সংস্কৃতির যে উপাদান বাস্তবরূপ ধারণ করে তাকে সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান বলা হয়। যেমন- ঘরবাড়ি, কলকারখানা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি অন্যদিকে সংস্কৃতির যে উপাদানটি উপলব্ধি করা যায় তাকে সংস্কৃতি অবস্তুগত উপাদান বলে। যেমনত গান-বাজনা, নৃত্য, চিত্রশিল্প কবিতা ইত্যাদি। উদ্দীপকের ঘটনা-এক এ দেখা যায়, দীনা একটি নাচের প্রতিযোগিতায় ধ্রুপদী ও আধুনিক নৃত্যসহ প্রতিটি শাখায় নৈপুণ্য রেখে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দীনার এ প্রতিভা সাংস্কৃতিক উপাদানেরই অংশ, যা উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনা-এক এ সাংস্কৃতিক উপাদানই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের জলদিয়া গ্রামের অর্থনীতিতে ভৌগোলিক উপাদানের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম দিক কৃষি ব্যবস্থা। এ কৃষি বহুলাংশে ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভৌগোলিক কারণে নানা প্রকার খাদ্যশস্যের চাষ হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বরিশাল ও ময়মনসিংহের কথা বলা যায়। এ অঞ্চলে প্রচুর ধান জন্মে এবং এর গুণগত মানও অন্যান্য এলাকার চেয়ে উন্নত। অর্থাৎ ধান চাষের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া সেখানে বিদ্যমান। ঠিক তেমনিভাবে যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায় সবজি এবং কুষ্টিয়া জেলায় প্রচুর তামাক জন্ম। যেমনটি উদ্দীপকের গ্রামেও। একইভাবে নদন্ডনদী ভৌগোলিক উপাদানের অংশ। এদেশের জনজীবনে নদন্ডনদীর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের একটি বিরাট অংশ মৎস্যজীবী। উদ্দীপকের গ্রামটি কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এ গ্রামের মাটিতে প্রচুর পলি পড়ে, যা এখানকার মাটির উর্বরতা শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে সেখানে প্রচুর ফসল জন্মে। উল্লিখিত জলদিয়া গ্রামে জেলেদের সংখ্যাও কম নয়। মাঝে মাঝে বন্যার ফলে গ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের জলদিয়া গ্রামের অর্থনীতি ভৌগোলিক উপাদান দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত।

৫. ড. বি আর আম্বেদকর ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা। তিনি এ উপমহাদেশের ব্রিটিশ শাসনকালের সমসাময়িক সময়ে এশিয়ার ছয়জন প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবীর মধ্যে অন্যতম। তার প্রতিভা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতার কারণে পন্ডিত জওহরলাল নেহরু তাকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত বিধায় তিনি যথাযথ মর্যাদা ও প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়ন পান নি। এক্ষেত্রে তার মেধাশক্তি সামাজিক একটি উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
ক. ‘‘শীতল জলবায়ু স্বাধীনতার অনুকূল’-এ উক্তিটি কার? 
খ. সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে যে উপাদানটির ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. সমাজজীবনের ওপর উক্ত উপাদানটির প্রভাব কীরূপ? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘শীতল জলবায়ু স্বাধীনতার অনুকূল' উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানী মন্টেস্কুর।

খ. মানবসৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি। সংস্কৃতি বলতে মানুষের আচার-আচরণ, ধ্যান-ধারণা, আদর্শ, মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, নিয়ম-প্রথা এবং আইন অনুশাসনকে বোঝায়। সংস্কৃতি বলতে আমরা সামগ্রিক জীবন প্রণালিকে বুঝি। সংস্কৃতি মূলত অর্জিত আচরণ। অর্থাৎ সংস্কৃতি জৈবিকভাবে নয় বরং সামাজিক উত্তরাধিকার হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মে খতিয়ে থাকে। সংস্কৃতি অত্যন্ত গতিশীল এবং সৃষ্টিশীল।

গ. উদ্দীপকে যে উপাদানটির ইঙ্গিত করা হয়েছে তা হলো বংশগতি। প্রাকৃতিক নিয়মে পূর্ববর্তী বংশধরদের দৈহিক ও মানসিক গড়ন। পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে বর্তিয়ে থাকে। তাই বংশগতি বা জৈবিক প্রভাব বলতে বোঝায় এমন কিছু জৈবিক বা মানসিক যা মানুষ পূর্ববর্তী বংশ বা পিতামাতা থেকে জন্মসূত্রে লাভ করে। মানুষ যেসব দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য পিতামাতা থেকে জন্মসূত্রে লাভ করে সেগুলো হলো লিঙ্গ, চোখ, চুলের রং, চুলের ধরন, হাত-পায়ের গড়ন, দেহের উচ্চতা, রক্তের শ্রেণি, জ্ঞান, মেধা, পারদর্শিতা ইত্যাদি। মানুষ জন্মসূত্রেই তার বংশগত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। তাই ব্যক্তির সঙ্গে তার বংশের। বৈশিষ্ট্য ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ও অন্তর্নিহিত থাকে। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই ড. আম্বেদকর তার প্রতিভা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতার কারণে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু অনেকেই মনে করেন দলীয় সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার কারণে তিনি যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান পাননি। দলীয় সম্প্রদায়ভুক্তের অধিকারী হওয়াকে বংশগতির প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কারণ বংশগত কারণেই তিনি এ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হন। সুতরাং আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকে বংশগতির প্রভাব ফুটে উঠেছে।

ঘ. সমাজজীবনের ওপর বংশগতির প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত বংশগতির মাধ্যমে পূর্ববর্তী বংশধরদের দৈহিক ও মানসিক গড়ন পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে বর্তায়। এর মধ্যে লিঙ্গ, চোখ, চুলের রং ও ধরন, গায়ের রং, দেহের গড়ন, রক্তের শ্রেণি ও মস্তিষ্কের পারদর্শিতা ইত্যাদি পরবর্তী বংশে অনুরূপভাবে হয়ে থাকে।
মানবসমাজ ও সভ্যতার বিকাশে বংশগতির প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ণবাদী নৃবিজ্ঞানীদের মতে, শ্বেতকায় বা শ্বেতবর্ণের মানুষ উৎকৃষ্ট এবং বাকি সব বাদামী ও কৃষ্ণবর্ণের মানুষ নিকৃষ্ট। তাদের মতে, উৎকৃষ্ট নরগোষ্ঠীর লোকেরা কর্মঠ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক। বাহক আর নিকৃষ্ট নরগোষ্ঠী শাসিত ও অসভ্য প্রকৃতির।
বংশগতি মানব আচরণকে প্রভাবিত করে। অপরাধবিজ্ঞানী লমব্রোসো, গারোফেলো অপরাধমূলক আচরণের জন্যে বংশগতিকে দায়ী করেছেন। বংশগতির প্রভাবেই পূর্ববর্তী বংশধরদের বুদ্ধিমত্তা, বলশক্তি এবং লোভ লালসা মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে অসমভাবে বণ্টিত। বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বংশগতি প্রভাব বিস্তার করে। যেমনত উৎকৃষ্ট নরগোষ্ঠী ও নিকৃষ্ট নরগোষ্ঠীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেও সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতি কিংবা ব্যাহত হতে পারে। এফ. গাল্টন বলেন, প্রতিভা ও দক্ষতা বংশগতিসূত্রে প্রাপ্ত। প্রতিভাবান পিতামাতার ঘরেই প্রতিভাবান সন্তান জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজজীবনে বংশগতির প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

৬. উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব সাইবেরিয়া অঞ্চলের অধিবাসীদের এস্কিমো নামে অভিহিত করা হয়। গরমকালে এস্কিমোরা বলগা হরিণ ও সীল মাছের চামড়ায় তৈরি তাঁবুতে বাস করে। আর যখন শীত পড়ে তখন তারা বরফ খুড়ে পাথর বা ঢাকনা দিয়ে আবাসস্থল তৈরি করে। এই ঘরকে বলা হয় ‘ইগলু'। এস্কিমোরা স্থলপথে চলাচলের জন্যে কুকুরে টানা ‘স্লেজ’ নামক গাড়ি ব্যবহার করে। 
ক. কোনটি ব্যবহার করে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে সচেষ্ট হয়েছে? 
খ. ব্যক্তিজীবনে বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জাতিগোষ্ঠীর সমাজজীবনে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জাতিগোষ্ঠীর অর্থনীতি ও পোশাক পরিচছদে ভৌগোলিক উপাদান কেমন ভূমিকা প ালন করবে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও। 

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিজ্ঞানের কলাকৌশল ব্যবহার করে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে সচেষ্ট হয়েছে।

খ. বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যক্তির সামাজিক জীবনে বৈচিত্র্য আনে। বিদ্যালয়ে শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে শিশু বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রদের সংস্পর্শে আসে। শিক্ষক, কর্মচারী, ইত্যাদির সান্নিধ্যে আসে। এখানে সে নিয়ম-শৃঙ্খলা, দায়িত্ব কর্তব্য ছাড়াও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাজজীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। এই ধারণা তার জীবনবোধের রূপায়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত এস্কিমো জাতিগোষ্ঠীর সমাজজীবনে ভৌগোলিক উপাদান তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে উদ্দীপকের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, এস্কিমোদের বাসস্থান ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক উপাদান প্রত্যক্ষ প্রভাব রেখেছে। আমরা জানি, ঘরবাড়ির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য প্রধানত ভৌগোলিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাপান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হওয়ায় সেখানে ঘরবাড়ি তৈরিতে কাঠের ব্যবহার সর্বাধিক। আবার যানবাহনের ওপরও ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- মরুভূমি অঞ্চলে উট চলাচলের প্রধান মাধ্যম হিসেবে গণ্য হয়। উদ্দীপকে আমরা দেখি, উত্তর আমেরিকা ও সাইবেরিয়া অঞ্চলের এস্কিমোরা গরমকালে হরিণ ও সীল মাছের চামড়ায় তৈরি তাবু এবং শীতকালে 'ইগলু' নামক বরফের ঘরে বাস করে। অর্থাৎ তাদের ঘরের ধরন নির্ভর করে প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর। এস্কিমোরা স্থলপথে চলাচলের জন্য 'স্লেজ' নামক গাড়ি ব্যবহার করে। কেননা বরফের ওপর চলাচলের জন্য ‘স্লেজ’ গাড়ির বিকল্প নাই। উপরের আলোচনায় সুস্পষ্ট যে, উদ্দীপকে বর্ণিত এস্কিমো জাতির সমাজজীবনে ভৌগোলিক পরিবেশ প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত এস্কিমো জাতির অর্থনীতি ও পোশাক পরিচছদে ভৌগোলিক উপাদান প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি। নিচে এ বিষয়ে আমার মতামত উপস্থাপন করা হলো মানুষের অর্থনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন- উৎপাদন কৌশল, শিল্প, পেশা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব অনস্বীকার্য। উৎপাদন কৌশল কী হবে তা মূলত ভৌগোলিক পরিবেশের ওপরই নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন কৌশল গ্রহণ করা হয়। আবার শিল্পক্ষেত্রও ভৌগোলিক উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। যেমনত পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং পানি নিষ্কাশনযোগ্য পাহাড়ি এলাকা চা চাষের উপযোগী বিধায় সিলেট অঞ্চলে চা শিল্প গড়ে উঠেছে। এমনিভাবে পেশা নির্ধারণের ক্ষেত্রও প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। ঢাকার দোহার অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত হওয়ায় সেখানে তাঁতি পেশার আধিক্য দেখা যায়। অর্থনীতির পাশাপাশি পোশাক-পরিচ্ছদের ধরনও ভৌগোলিক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমনত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মানুষ হালকা সুতি কাপড় এবং শীতপ্রধান অঞ্চলের জনগোষ্ঠী মোটা পশমি কাপড় ব্যবহার করে। উদ্দীপকের এস্কিমো জাতিগোষ্ঠীর অর্থনীতি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ওপরও ভৌগোলিক অবদান মৌলিক প্রভাব ফেলেছে। বরফ প্রধান অঞ্চলে বাস করায় এস্কিমোরা সিল ও বিভিন্ন ধরনের মাছ শিকার করে জীবনধারণ করে। আবার শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা প্রধানত লম্বা লোমযুক্ত সীলের চামড়ার জামা ও পাজামা পরে। এছাড়াও চামড়ার তৈরি এক ধরনের জুতা পরে, যা তাদের হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখে। মাথায় পরে লোমের টুপি, সঙ্গে মোটা চামড়ার হাতমোজা।
উপরের আলোচনায় সুস্পষ্ট যে, এস্কিামোদের অর্থনীতি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ধরন নির্ধারণে ভৌগোলিক উপাদান প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

৭. দশ বছরের শিশু সিফাত প্রতিদিন বিকেলে মাঠে খেলতে যায়। খেলার মাঠে সে দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। বাড়িতে তার বাবা-মা তাকে সামাজিক আদর্শ, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষাদান করেন।
ক. সাধারণত কোন অঞ্চলের মানুষ কৃষ্ণবর্ণের হয়ে থাকে?
খ. জনসংখ্যার বণ্টনে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সামাজিক গোষ্ঠীর কোন কোন উপাদানের প্রভাব ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সমাজের ওপর উদ্দীপকে উল্লিখিত উপাদানগুলো ছাড়া সামাজিক গোষ্ঠীর অন্যান্য উপাদানগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সাধারণত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মানুষ কৃষ্ণবর্ণের হয়ে থাকে।

খ. জনসংখ্যার বণ্টনে ভৌগোলিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ভর করে মানুষের মৌল চাহিদা পূরণের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর। সাধারণত যেখানে খাদ্যের যোগান ও বসবাসের উপযোগী সেখানেই লোকজনের উপস্থিতি বেশি। অর্থাৎ ভৌগোলিক আবহাওয়ার জন্যই লোকজন একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমনাগমন করে যা জনসংখ্যার বণ্টনকেই নির্দেশ করে। আবার যেখানে অনুকূল জলবায়ু ভারসাম্যপূর্ণ ভৌগোলিক পরিবেশ বিদ্যমান সেখানেও লোকজনের আনা-গোনা বেশি হয়। সুতরাং বলা যায় ভৌগোলিক উপাদানই জনসংখ্যাকে ভাগ বা বণ্টন করে থাকে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সিফাত মাঠে খেলতে গিয়ে খেলার মাঠে দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। এর দ্বারা সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গীদলের প্রভাব ফুটে উঠেছে। আর বাড়িতে তার বাবা-মা তাকে সামাজিক আদর্শ, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষাদান করে। এর দ্বারা সামাজিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত পরিবারের প্রভাব ফুটে উঠেছে।
পরিবারে মানব শিশুর জন্ম হয়। সমাজের সাথে খাপ খেয়ে চলার শিক্ষাও পরিবার থেকেই শুরু হয়। বস্তুত পরিবার থেকেই মানব শিশু সামাজিক আদর্শ, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ, প্রথা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে যা তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক হয় এবং তাকে সামাজিক জীবনে মানিয়ে চলার উপযোগী করে তোলে।
পরিবারের সীমার বাইরে শিশুর প্রথম পদচারণা ঘটে তার খেলার বন্ধুদের তথা সঙ্গীদলের সাথে। এই সঙ্গীদলের সাথে খেলতে গিয়ে শিশু যেমন অন্যদেরকে তার আচরণ দ্বারা প্রভাবিত করে, তেমনি অন্যের আচরণ দ্বারা প্রভাবিতও হয়। সঙ্গীদের সাথে মেলামেশার ফলে পরিবারের বাইরে যে একটি জগৎ আছে সে সম্পর্কে শিশু সচেতন হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিবার ও সঙ্গীদল ছাড়া সামাজিক গোষ্ঠীর অন্যান্য উপাদানগুলোর প্রভাব নিচে বিশ্লেষণ করা হলো পরিবার ও খেলার সঙ্গীদের পাশাপাশি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও গুরুতবপূর্ণ সময় অতিবাহিত করে। এখানে শিশু শিক্ষক ও সহপাঠীদের সংস্পর্শে এসে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। শিক্ষকদের আদর্শ ও সহপাঠীদের আচরণ উভয়ই শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে ভূমিকা পালন করে।
পরিবারই ধর্মীয় শিক্ষাদানের প্রাথমিক স্থান। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমনতমসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ইত্যাদি থেকে স্ব স্ব ধর্মের অনুসারীরা ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অর্জন করে, যা তার সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। সংঘের সদস্য হিসেবে ব্যক্তির সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে ঠিক-বেঠিক সম্পর্কে ব্যক্তির জ্ঞান প্রসারিত হয়। সংঘ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে স্বাধীন চিন্তাধারায় সহায়ক হয়। ফলে সংঘ ব্যক্তির সামাজিক জীবন রূপায়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে।
এগুলো ছাড়াও আরও অনেক সামাজিক উপাদান আছে যা দ্বারা মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয়। যেমনত পত্র-পত্রিকা, সিনেমা, নাটক, আত্মীয়-স্বজন ও সহকর্মীদের আচরণ ইত্যাদি। সমাজের বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠী, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ, বিচার ব্যবস্থা দ্বারাও ব্যক্তি প্রভাবিত হয়।

৮. এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশের পিতা-মাতাও অনেক মেধাবী। গবেষকগণ মনে করেন, অনুকূল পরিবেশের সামান্য সহায়তা এবং উত্তরাধিকারসূত্রে ছাত্রছাত্রীরা এ মেধা লাভ করেছে। 
ক. ব্যক্তির অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনটি? 
খ. কুটিরশিল্প ও দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের ওপর ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী কোন উপাদান ভূমিকা রেখেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সমাজজীবনে উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত উপাদানের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পরিবার ব্যক্তির অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

খ. কুটিরশিল্প ও দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের ওপর ভৌগোলিক প্রভাব অনস্বীকার্য। 
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকার ডেমরা অঞ্চলে তাঁতিদের বাস এবং এখানেই বিখ্যাত ঢাকাই শাড়ি তৈরি হয়। অঞ্চলটি নদীবহুল এবং আবহাওয়া ঐ কুটিরশিল্প গড়ে ওঠার অনুকূল। মুর্শিদাবাদ ও রাজশাহীকে কেন্দ্র করে রেশমি শাড়ি শিল্প গড়ে উঠেছে। কারণ ঐ অঞ্চলে তুঁত গাছে রেশমি কীট জন্মাতে পারে। সমাজের আচার অনুষ্ঠান ও ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাবে অঞ্চলভেদে পৃথক হয়। যেমন- হাওড় অঞ্চলের সামাজিক অনুষ্ঠান ও পাহাড়ি অঞ্চলের সামাজিক অনুষ্ঠানের চেয়ে ভিন্ন ধরনের।

গ. উদ্দীপকের ছাত্রছাত্রীর জীবনে বংশগতি প্রভাব বিস্তার করেছে। বংশানুক্রমে জৈব ও মানবিক যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য অধস্তন পুরুষের মধ্যে সঞ্চালিত হয় তাই বংশগতি। অন্যকথায় বংশগতি বলতে মানুষের দৈহিক মানবিক গুণাবলির সমন্বিত ক্ষমতাকে বোঝায়, যে ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে মানুষ আজ প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব করছে। মানুষের এই বংশগতি উত্তরাধিকারসূত্রে বর্তায় এবং এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বিস্তার লাভ করে। ব্যক্তির দেহে যে রক্ত বা বৈশিষ্ট্য প্রবাহিত হয় সেজন্য সে তার পিতামাতা ও পূর্বপুরুষ উভয় শাখার কাছে ঋণী। পিতা ও মাতার। দুটি অণুর সংমিশ্রণেরই এক ফল হলো ব্যক্তি। ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য প্র নিরূপণ করে ক্রোমোসোম ও জিন নামক এক মৌলিক উপাদানসমূহ। বস্তুত সন্তানের দেহে বংশধারা সংক্রমিত হয় ক্রোমোসোমের জোটগুলোর মাধ্যমে। এ বংশধারায় সন্তানের আকৃতি ও স্বভাব-চরিত্র গঠিত হয়। মূলত এ ধারাকেই বংশগতি বলা হয়। প্রতিটি ব্যক্তিই তার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যেমন মানসিকতা, বুদ্ধিবৃত্তির সহজাতপ্রবণতা, প্রতিবর্তী ক্রিয়া প্রভৃতি বংশগতির মাধ্যমেই লাভ করে। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, তাদের পিতা মাতাও অনেক মেধাবী ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। গবেষকরা মনে করেন, অনুকূল পরিবেশের সামান্য সহায়তা সর্বোপরি উত্তরাধিকারসূত্রে তারা এ মেধা অর্জন করেছে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা তাদের মেধার এ বৈশিষ্ট্য বংশগতির মাধ্যমে তাদের পিতামাতার কাছ থেকে লাভ করেছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে বংশগতি প্রভাব বিস্তার করেছে।

ঘ. সমাজজীবনে উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত উপাদান তথা বংশগতির প্রভাব অপরিসীম। সব রকম বংশগতি ও প্রকৃতি বাবা-মার কাছ থেকে আমাদের মধ্যে আসে ক্ষুদ্র একরকম জীবকোষ জিনের মধ্য দিয়ে এবং আমাদের সাথে পূর্বপুরুষের সম্পর্ক বজায় রাখে। বংশগতি বা জৈবিক উপাদান কারো কাছ হতে কেড়ে নেয়া যায় না। এটি উত্তরাধিকারসূত্রে সঞ্চালিত হয়। যেমন- শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ বংশগত উপাদানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সমাজজীবনে ভূমিকা রাখে।
মানুষ যে পরিবেশেই অবস্থান করুক না কেন বংশগতি চিরন্তনভাবে কার্যকরী হবে। পরিবেশ দ্বারা কখনোই বংশগতি প্রভাবিত হবে না। মানুষের আচার-ব্যবহার ও মানসিক অবস্থা এমন অনেক শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে যা স্পষ্টত বংশগত। কোনো ধরনের পরিবেশেই তা বদলানো সম্ভব নয়। যেমন চোখের রং, রক্তের বিভাগ, আঙ্গুলের ছাপ প্রভৃতি নির্ধারণকারী বংশগতি সব পরিবেশে একই থাকে।
বংশগত উপাদানের ওপর পরিবেশের প্রভাব রয়েছে। একই বংশগতিসম্পন্ন লোকদের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে রাখা হলে তাদের মধ্যে যেসব পার্থক্য দেখা দেবে সেগুলোকে পরিবেশগত বলেই আমাদেরকে ধরে নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাঙালি কোনো পরিবারের ভাই-বোনদের কেউ যদি ইংল্যান্ডে বা আমেরিকার কোনো শহরে বসবাস করে তাহলে তাদের মধ্যে বংশগতির ছোটখাটো গরমিল দেখা দিতে পারে। এটি মূলত পরিবেশগত কারণে হবে। ব্যক্তির প্রতিভা ও দক্ষতা বংশগত উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ব্যক্তির প্রতিভা ও দক্ষতা বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত।
আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, আমাদের সমাজজীবনে বংশগতির প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৯. নদীর নাম ময়ূরাক্ষি। স্বচ্ছ জল নিয়ে মাঝারি। গ্রাম। এ নদীটি বয়ে চলেছে। আজ থেকে দশ বছর আগেও এ নদীর আশপাশে জনবসতি ছিল না। কিন্তু এখন নদীটির তীরে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি গ্রাম। এ গ্রামের মানুষগুলোর সুখ দুঃখের সাথী নদীটি। নদীর বুকে গ্রামের মানুষ মাছ ধরে, নদীর বুকে যাতায়াত করে, এমনকি নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষি কাজও করে। 
ক. ভৌগোলিক উপাদান কী?
খ. সমাজজীবনে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব ব্যাখ্যা করো। 
গ. ময়ূরাক্ষি নদীর তীরে জনবসতি গড়ে় ওঠার কারণ কী? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. ময়ূরাক্ষি নদী তীরের মানুষের জীবনযাত্রা ভৌগোলিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত- বিশ্লেষণ করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী প্রাকৃতিক উপাদানগুলোই হলো ভৌগোলিক উপাদান।

খ. সমাজজীবনের ওপর ভৌগোলিক তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অনস্বীকার্য।
সমাজজীবন ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক পরিবেশের এক অন্যতম ফসল। যেকোনো সমাজেরই একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকে, যে পরিবেশ সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মানব আচরণের বিভিন্ন দিক মৌলিকভাবে প্রভাবিত করে। দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের, নীতিবোধের এমনকি মানুষের ভাষা, সাহিত্য, বেশভূষা, খাদ্যাভাস, রাজনীতি ও প্রশাসন ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ময়ূরাক্ষি নদীর তীর বসবাসের উপযোগী হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত খাদ্যের যোগান থাকায় সেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে।
সাধারণত নদীর তীর অন্যান্য এলাকার চেয়ে বসবাসের উপযোগী। বলে সেখানে মানব বসতি গড়ে ওঠে। আর তাই ময়ূরাক্ষি নদীর তীরেও জনবসতি গড়ে উঠেছে। যেখানে পর্যাপ্ত ঘাস, ব্যবস্থা আছে এবং যেখানে উপযুক্ত জলবায়ু ও পরিবেশ বিদ্যমান সেখানেই কেবল মানুষ বসবাস করতে পারে। পানির প্রাচীন সভ্যতা যেমন মিসরীয় সভ্যতা, মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, ভৌগোলিক সিন্ধু সভ্যতা ইত্যাদি নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। নদী তীরবর্তী অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় ময়ূরাক্ষি নদীর তীরে মানুষ জনবসতি গড়ে় তুলেছে।
সুতরাং সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ কথা বলা যায়, বসবাসের উপযোগী পরিবেশ, উপযুক্ত জলবায়ু, খাদ্য ও পানির সুব্যবস্থার কারণে ময়ূরাক্ষি নদীর তীরে জনবসতি গড়ে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ময়ূরাক্ষি নদীর তীরবর্তী গ্রামটির মানুষের কৃষি, অর্থনীতি, যাতায়াত ব্যবস্থা সর্বোপরি এই গ্রামে মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে ভৌগোলিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। ফসল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন। মাটি ও জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যের ওপর ফসলের ধরন ও প্রকৃতি নির্ভর করে। ময়ূরাক্ষি গ্রামবাসী ভৌগোলিক উপাদান নদীকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকাজ করে। তারা নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ অর্থাৎ ফসল উৎপাদন করে। ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব এখানে স্পষ্ট। আবার ময়ূরাক্ষির তীরবর্তী গ্রামটির মানুষ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে তাদের যাতায়াতও ভৌগোলিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত। উল্লিখিত গ্রামের মানুষদের জলবায়ুর উপযোগী পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করতে হয়। এক্ষেত্রেও তাদের জীবনযাপন ভৌগোলিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। তাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে নদী। আর নদী মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টিকারী ভৌগোলিক উপাদান। অতএব বলা যায়, ময়ুরাক্ষি নদীর তীরের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা ভৌগোলিক পরিবেশ দ্বারা সম্পূর্ণ প্রভাবিত। 

১০. সিলেটের চা-বাগানগুলো গড়ে উঠেছে সে অঞ্চলের ভূমির গঠনকে ভিত্তি করে। এই অঞ্চলে কিছু নির্দিষ্ট নৃগোষ্ঠীর লোক রয়েছে, যারা এখানে নিয়মিত চা-শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। বর্তমান সময়ে চা-বাগানের মালিকশ্রেণি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্মত চা উৎপাদন করছে। যার ফলে নিজ দেশের চাহিদা পূরণ করার পর বিদেশে চা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হচ্ছে। 
ক. কোন অঞ্চল মানবসভ্যতার উপযোগী পরিবেশ? 
খ. ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশে পারিবারিক পরিবেশ কীভাবে ভূমিকা পালন করে? 
গ. উদ্দীপকে যে উপাদানের প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সমাজজীবনে উদ্দীপকে উল্লিখিত উপাদানের প্রভাব মূল্যায়ন করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল মানবসভ্যতার উপযোগী পরিবেশ।

খ. সচেতনমূলক শিক্ষার মাধ্যমে পারিবারিক পরিবেশ ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলি বিকাশে ভূমিকা পালন করে ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির, সমাজের প্রতি ব্যক্তির, প্রতিবেশীর প্রতি ব্যক্তির আচার-ব্যবহার কী হবে, তার শিক্ষাজীবন, তার সামাজিক জীবন কীভাবে গড়ে উঠবে- এসব কিছুর জ্ঞান সে প্রাথমিকভাবে পরিবার থেকেই অর্জন করে। বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব কীরূপ হবে তাও সে পরিবার থেকেই আয়ত্ত করে। সর্বোপরি একজন মানুষের সার্বিক ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলি। পারিবারিক পরিবেশেই বিকশিত হয়।

গ. উদ্দীপকে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজজীবনে প্রভাববিস্তারকারী মৌলিক উপাদানসমূহের মধ্যে ভৌগোলিক পরিবেশ অন্যতম। ভৌগোলিক পরিবেশ বলতে ভূপ্রকৃতির অবস্থা, জলবায়ু, মাটির উর্বরতা, নদন্ডনদী, পাহাড় পর্বত, নিবিড় অরণ্য, মরুভূমি এসবের সামগ্রিক অস্তিত্বকে বোঝায়। ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাবের কারণেই সমাজব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো এবং মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকের তথ্য থেকে জানা যায়, সিলেটের চা বাগানগুলো সে অঞ্চলের ভূমির গঠনকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা ভৌগোলিক উপাদানকে নির্দেশ করে। কারণ মাটির গঠন ভৌগোলিক উপাদানের অন্তর্ভুক্ত। ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাবের কারণেই সিলেটে চা বাগানগুলো গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এসব বাগানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানসম্মত চা উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে নিজ দেশের চাহিদা পূরণ করে এসব চা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।
সুতরাং উপরের আরোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় শহরে চা শিল্পের প্রসারের পেছনে ভৌগলিক উপাদানের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঘ. সমাজজীবনে উদ্দীপকে নির্দেশিত বিষয় তথা ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব ব্যাপক।
সমাজজীবনে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাবকে মানুষ কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারে না। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল এবং সংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। পরিবেশের প্রভাবে মানুষের দৈহিক গড়ন তথা চোখের রঙ, গড়ন, নাকের আয়তন ইত্যাদি অনেকটা নির্ধারিত হয়ে থাকে। এস্কিমোদের সাংস্কৃতিক জীবনের ওপর ভৌগোলিক পরিবেশের গভীর প্রভাব রয়েছে। যেসব জীবজন্তু শিকারে পাওয়া যায় সেগুলো থেকেই এস্কিমোরা হাতিয়ার ও পরিধেয় তৈরি করে। যেমন- বলগাহরিণ ও সিল মাছের চামড়া দিয়ে পরিধেয় তৈরি করে। বরফ দিয়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করে। ভৌগোলিক পরিবেশের উপাদানগুলো মানুষের উপলব্ধিকে নাড়া দেয়। সৃষ্টিশীল কাজের মধ্য দিয়ে একই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটে। ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক পরিবেশকে কেন্দ্র করে সভ্যতার বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন ধরনের ভৌগোলিক পরিবেশে তথা মাটি, জলবায়ু ও তাপমাত্রার বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য উৎপন্ন হয়। ভৌগোলিক পরিবেশের বৈচিত্রে্যর কারণে স্থানভেদে পেশাজীবীর বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। ভৌগোলিক পরিবেশ যোগাযোগব্যবস্থা, শিল্প ও কুটির শিল্প, বাসস্থান ও ঘরবাড়ি, রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতির ওপরও প্রভাব বিস্তার করে।
উপরের আলোচনা থেকে এটি স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, সমাজজীবনে ভৌগোলিক উপাদানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post