HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. সমাজকর্মী মিজানুর রহমান মনে করেন, নিরক্ষরতার মতো অভিশাপ আর নেই। নিরক্ষর হলে সামাজিকভাবে নানা বঞ্চনার শিকার হতে হয়। মেনাজ সাহেবের চর এলাকার অধিকাংশ লোকই নিরক্ষর, যার প্রভাবে সমাজে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও দারিদ্র্য ইত্যাদি সমস্যা ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে। সমাজের এ অবস্থা দেখে মিজান সাহেব সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে কয়েকজন যুবককে নিয়ে নিরক্ষরদের একটি তালিকা তৈরি করেন এবং এ সমস্যার মূল কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন। এরপর তিনি ‘শতদল' নামক একটি নৈশকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। 
ক. কাকে ক্রিয়াবাদের জনক বলা হয়?
খ. ব্যুৎপত্তিগত অর্থে শিক্ষা বলতে কী বুঝায়? 
গ. সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভূমিকা ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বিবৃত সমস্যা অনুসন্ধানের সমাজবিজ্ঞানের কোন ধরনের গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় তা বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমকে ক্রিয়াবাদের জনক বলা হয়।

খ. শিক্ষা শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিক্ষা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'শাস' ধাতু থেকে। এর অর্থ হলো শাসন করা, শৃঙ্খলিত করা, নিয়ন্ত্রিত করা, শিক্ষা দেওয়া বা নির্দেশনা দেওয়া। অর্থাৎ বাংলা ভাষায় আমরা যে শিক্ষা কথাটা ব্যবহার করি, তা বিশেষভাবে শিক্ষা কৌশলকেই বোঝায়।

গ. সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম।
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবার থেকে গঠিত মৌলিক ব্যক্তিত্ব সহযোগে শিশুরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসে। সেখানে নতুন পরিবেশে নানা নিয়ম-কানুনের মধ্যে নতুন সহপাঠী ও অন্যান্যদের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয়। শিশুর মূল্যবোধ সৃষ্টিতে পরিারের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম, শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা ইত্যাদি শিশুর মূল্যবোধ বিকাশে সহায়ক হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা নানা প্রকারের হলে শিশুর ব্যক্তিত্বও নানাভাবে গড়ে ওঠে। যেমনত আমাদের দেশেও প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন। তাই ব্যক্তির সামাজিকীকরণের ধরনও বিভিন্ন রকম পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অতএব আমরা বলতে পারি যে, সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ঘ. উদ্দীপকে অন্যতম সামাজিক সমস্যা নিরক্ষরতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সমাজে নিরক্ষরতার মতো সমস্যা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের যে গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে তা হলো সামাজিক জরিপ পদ্ধতি।
সামাজিক গবেষণার জন্য যে সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার মধ্যে সামাজিক জরিপ অন্যতম। জরিপ কথাটির অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সরেজমিনে পরিমাপ বা নিরূপণ করা। কোনো সমাজের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন কৌশলে তথ্যাবলি সংগ্রহ, তথ্যাবলির ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, অনুসন্ধান ও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে জরিপ পদ্ধতি। সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বাছাই, তথ্য যাচাই ইত্যাদি ক্ষেত্রে জরিপ একটি কার্যকরী পদ্ধতি। বস্তুত জরিপ পদ্ধতির সাহায্যে কোনো একটি বিষয়ের সামগ্রিক চিত্র লাভ করা সম্ভব। সামাজিক জরিপ সামাজিক অনুসন্ধানের একটি পদ্ধতি যা বর্ণনা, বিবরণ, উদ্ঘাটন ও ব্যাখ্যামূলক বিভিন্ন সামাজিক তথ্য সরবরাহ করে। এছাড়া উন্নয়নমূলক সামাজিক কর্মসূচির পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে।
অতএব আমরা বলতে পারি যে, নিরক্ষরতার মতো সামাজিক সমস্যার অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সামাজিক জরিপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

২. গেল বছর হজব্রত পালন করে এ বছর নিয়মিত তাবলিগ জামাতে শরিক হচ্ছেন জনাব কেরামত আলী। এদিকে তার স্ত্রী মুন্নি বেগম দৈনিক পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন। পাঁচ কন্যা ও চার পুত্রের সংসার তাদের। মেয়েগুলো মাদরাসায় আদব কায়দা শিখে সচ্চরিত্রের অধিকারী হলেও পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনজনই দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয়েছে। তাদের পিতা প্রায়শ চিল্লায় থাকায় তারা তাদের মায়ের চোখের আড়ালে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। 
ক. ICT-এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. বিশ্বায়ন কী? বুঝিয়ে লিখ।
গ. ‘‘উদ্দীপকের মুন্নি বেগমের ভূমিকা তার কন্যাদেরকে সভ্য মানুষে পরিণত করেছে’’- ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সামাজিকীকরণের কোন উপাদানের অনুপস্থিতি হাজী কেরামত আলীর তিন পুত্রকে বিপথগামী করেছে? ব্যাখ্যা করো। 

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক ICT - এর পূর্ণরূপ - Information and Communication Technology.

খ. বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে বিশ্বায়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীর সকল দেশকে একটি ছাতার নিচে। সমবেত করা। মূলত তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিশ্বায়নের। পথচলা। (১) তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ (২) আন্তর্জাতিক শ্রম বাজার এবং (৩) উৎপাদিত পণ্যের অবাধ প্রবাহ। সাধারণত সারাবিশ্বে এই তিনটি বিষয়ের অবাধ প্রচলন উপস্থিতি থাকলেই সেই প্রক্রিয়াকে বিশ্বায়ন বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।

গ. উদ্দীপকের মুন্নি বেগমের ভূমিকা তার কন্যাদেরকে সভ্য মানুষে পরিণত করেছে। একটি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু এদের মধ্যে মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ একটি শিশু তার মায়ের সাথেই অধিকাংশ সময় কাটায়। তাই তার আচার-আচরণ, মূল্যবোধ ও শিক্ষা শিশুকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। একটি শিশু জন্মের পর থেকে মায়ের সান্নিধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। মা একটি শিশুকে আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলেন। তাই শিশুর সামাজিকীকরণে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। তবে এক্ষেত্রে শিশুর মাকে মুন্নি বেগমের মতো আদর্শ মহিলা হতে হবে। মুন্নি বেগম নিজের ধর্মের প্রতি অনুরাগী এবং তিনি তার মেয়েদেরকে সেভাবেই গড়ে তোলেন। এ জন্য তিনি তার কন্যাদেরকে আদব কায়দা শিক্ষা দেন। তাদের বিবেকবোধ জাগ্রত করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা দেন। এর ফলে তাদের চেতনা বিকশিত হয়। কিন্তু মুন্নি বেগম যদি ধর্মানুরাগী না হতেন তাহলে কন্যাদেরকে সঠিকভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে পারতেন না। এর ফলে তাদের মূল্যবোধ বিকশিত হতো না। তারা আদর্শ সামাজিক মানুষে পরিণত হতে পারতো না। সুতরাং আলোচনা শেষে বলা যায়, একজন আদর্শ মা-ই পারেনসন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে় তুলতে।

ঘ. সামাজিকীকরণের অন্যতম উপাদান পারিবারিক ভূমিকার অনুপস্থিতি হাজী কেরামত আলীর তিন পুত্রকে বিপথগামী করেছে।
সামাজিকীকরণের প্রাথমিক ক্ষেত্র পরিবার। পরিবারে শিশু লালিত-পালিত হয় এবং পরিবারই শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরিবারে শিশুর সামাজিকীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাবা-মা। এদের মধ্যে মায়ের ভূমিকা মুখ্য হলেও পিতার ভূমিকাকেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পিতার ভালোবাসা, আদেশ-নিষেধ, উপদেশ শিশুর সামাজিকীকরণে 'বিরাট প্রভাব ফেলে। আদর্শবান পিতা সবসময়ই চেষ্টা করেন সন্তানদেরকেও আদর্শবান করে তুলতে। তাই পরিবারের অভিভাবক হিসেবে সামাজিকীকরণে পিতার ভূমিকা অগ্রগণ্য।
উদ্দীপকের কেরামত আলী প্রায়ই তাবলিগের চিল্লায় থাকার কারণে এই সুযোগে তার ছেলেরা বিভিন্ন অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ এখানে কেরামত আলী পরিবারের প্রধান ও পিতা হিসেবে সন্তানদের সামাজিকীকরণে যে ভূমিকা রাখার কথা, তা তিনি। রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, পারিবারিক ভূমিকার অনুপস্থিতির কারণেই কেরামত আলীর সন্তানরা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে।

৩. পারিবারিকভাবে রিফাত ও শায়লা বিয়ের পর কানাডায় চলে যায়। তাদের ছেলে আকাশ বাবা-মার আদর যত্নে বড় হতে থাকে। কিন্তু সে বাংলা বলতে পারে না। রিফাত ও শায়লা দশ বছরের আকাশকে নিয়ে দেশে ফিরে আসে। তারা রিফাতের বাবার বাড়িতে ওঠে। সেখানে রিফাতের বাবা-মা, ভাই, ভাইয়ের ছেলে মেয়ে, চাচা-চাচী, চাচাতো ভাই-বোনদের সাহচর্যে আকাশ দ্রুত বাংলা ভাষায় কথা বলতে এবং বাঙালিদের আদব-কায়দা রপ্ত করতে শুরু করে। 
ক. সমাজের মূল চালিকাশক্তি কোনটি? 
খ. ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আকাশের সামাজিকীকরণে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজের মূল চালিকাশক্তি অর্থনীতি।

খ. ব্যক্তিগত সম্পত্তি হলো সেই সম্পত্তি যার ওপর ব্যক্তির স্বত্ব বর্তমান। যে সব বস্তু বা বিষয় ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ক্রয় বিক্রয় করতে পারে তাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে গণ্য করা যায়। ব্যক্তিমালিকানার সম্পত্তি ব্যক্তি তার ইচ্ছানুযায়ী ভোগ, দান, লগ্নি ইত্যাদি কাজেও ব্যবহার করতে পারে। বস্তুত ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর ব্যক্তির সর্বোচ্চ ভোগাধিকার ক্ষমতা থাকে যা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত বা অনুমোদিত।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান পরিবারের ভূমিকার প্রতিফলন ঘটেছে।
সন্তান-সন্ততির জন্মদানের সাথে সাথে পরিবারে তাদের দৈহিক ও মানসিক পরিচর্যা এবং আত্মবিকাশের শিক্ষা শুরু হয়। এক্ষেত্রে পিতামাতা কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা শিশুদের আচার-ব্যবহারের সার্বিক শিক্ষাদান করে। প্রাচীন ও মধ্যযুগেও পারিবারিক পরিমন্ডলে সন্তানদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া হতো। পরিবারই অনানুষ্ঠানিক পন্থায় শিশুদের প্রাথমিক বর্ণ পরিচয় বা হাতেখড়ি এবং নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। সন্তান-সন্ততির মধ্যে নিজস্ব ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে পরিবারের আদর্শ প্রকাশ পায়। ব্যক্তিগত লোভ-লালসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং উত্তম চরিত্র গঠনে ধর্মের সঠিক শিক্ষা পরিবার প্রদান করে। ফলে পরিবার থেকেই মানুষ সৎ, নীতিবান ও সত্যনুসন্ধানী হয়ে ওঠে। পরিবারের গন্ডিতেই সন্তান-সন্ততি যোগ্য নেতৃত্ব, দায়িত্ব, কর্তব্য, নিয়মশৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে। 'আদেশ ও আনুগত্য' রাজনীতির এ মূল কথা শিশুরা পরিবার থেকেই অর্জন করে। শিষ্টাচার, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, নিয়মনিষ্ঠা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ইত্যাদি গুণাবলি শিশুরা পরিবার থেকেই পায়।
উদ্দীপকে রিফাত ও শায়লার ছেলে আকাশের মাতৃভাষা শেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পারিবারিক পরিমন্ডলে। একই সাথে আদব কায়দাও শিখছে। এক্ষেত্রে আমরা পরিবার নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার প্রতিফলন লক্ষ করি। পরিবার তার বহুমুখী। কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমেই এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তাই মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশ এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরিতে পরিবারের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।

ঘ. আকাশের সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরিবারই শিশুর সমাজিকীকরণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সন্তান-সন্ততিকে উপযুক্ত সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সমাজের কাঙি্ক্ষত মূল্যবোধ অনুযায়ী পরিবার শিশুকে গড়ে তোলে। তাদেরকে সামাজিক মূল্যবোধ, আচার-প্রথা, রীতিনীতি তথা সাংস্কৃতিক ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান সরবরাহ করে। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে বসবাস করতে গেলে মানুষকে প্রতিনিয়তই তার চারপাশের মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। পরিবার তার শিশু কিশোরদের এসব সামাজিক গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করে। ফলে শিশু এসব সামাজিক গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে নিজেকে সমাজ কাঙি্ক্ষত ধারায় পরিচালিত করতে সচেষ্ট হয়।
উদ্দীপকের রিফাত ও শায়লা তাদের সন্তান আকাশকে নিয়ে কানাডা থেকে এসে রিফাতের বাবার বাড়িতে ওঠে। সেখানে রিফাতের বাবা-মা, ভাই, ভাইয়ের ছেলেমেয়ে, চাচা-চাচি, চাচাতো ভাই-বোন একত্রে বাস করে। এদের সাহচর্যে আকাশ দ্রুত বাংলায় কথা বলতে এবং বাঙালি আদব-কায়দা রপ্ত করতে শুরু করে, যা সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের আকাশের মতো যেকোনো শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. রাশেদ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী। ব্যস্ততার কারণে তারা রাশেদকে সময় দিতে পারেন না। রাশেদদের বাড়ি়র আশে পাশে কোনো খেলার মাঠ না থাকায় সে বিকেলে খেলতেও পারে না। তার বেশিরভাগ সময় কাটে টিভি দেখে, কম্পিউটার গেম খেলে। ইদানীং তার মধ্যে আচরণগত নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 
ক. কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়ে ওঠে? 
খ. সামাজিকীকরণে অর্থনীতি কীরূপ ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সামাজিকীকরণে পরিবর্তনশীল বাহনসমূহের কোন ধরনের প্রভাবের চিত্র ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সামাজিকীকরণে উদ্দীপকে নির্দেশিত বাহনসমূহের ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় প্রভাবই বিদ্যমান- বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়।

খ. অর্থনৈতিক সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের দ্বারা সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
একটি সমাজে যদি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়, তবে সেই সমাজের মানুষের জীবনযাত্রার মানও পরিবর্তিত হয়। সেইসাথে পরিবর্তিত হয় সামাজিক রীতি-নীতি ও আচার-অভ্যাস এবং উৎপাদন ব্যবস্থা। এসব বিষয় সামাজিকীকরণে বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে মানুষ আর্থিক লেনদেন, অর্থব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় শিখে থাকে।

গ. উদ্দীপকে সামাজিকীকরণের পরিবর্তনশীল বাহনসমূহের নেতিবাচক প্রভাব ফুটে উঠেছে।
বাবা-মা শিশুর সামাজিকীরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বাবা-মা যদি ব্যস্ততার কারণে ছেলেমেয়েদের সময় দিতে না পারেন তাহলে শিশুদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ব্যাহত হয়। ভালো মন্দ, ঠিক-বেঠিক সম্পর্কে তারা সচেতন হয়ে ওঠে না। ফলে তাদের সামাজিকীকরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনুরূপভাবে খেলার সাথীরাও শিশুদের সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের মাধ্যমেই শিশুরা সহযোগিতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, নেতৃত্ব প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করে। কিন্তু যদি শিশুরা খেলার সাথীদের সাথে মেশার সুযোগ না পায় তাহলে তার সামাজিকীকরণ ব্যাহত হবে। আবার শিশু যদি টিভি, কম্পিউটার প্রভৃতি নিয়ে বেশি সময় কাটায় তাহলে তাদের মধ্যে সংকীর্ণ ও অসহিষ্ণু মানসিকতার জন্ম হয় যা পরবর্তীতে বৃহত্তর সমাজে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক বিবেচিত হয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত রাশেদের বাবা-মা ব্যস্ততার কারণে তাকে সময় দিতে পারে না। খেলার মাঠের অভাবে সে বিকালে বাইরে খেলতে যেতে পারে না। এজন্যে সে বাড়ি়তে বসে টিভি দেখে, কম্পিউটারে গেম খেলে। এর ফলে তার মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা যা সামাজিকীকরণের পরিবর্তনশীল বাহনের নেতিবাচক প্রভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. সামাজিকীকরণের পরিবর্তনশীল বাহনসমূহের ইতিবাচক নেতিবাচক উভয় প্রভাবই বিদ্যমান। নিচে এ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হলো-
পরিবার যেহেতু সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেহেতু এর পরিবর্তনশীলতা সামাজিকীকরণের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় শিশুরা সহজে অন্যের সাথে মানিয়ে চলার বিষয়টি আত্মস্থ করতে শেখে। পক্ষান্তরে, একক পরিবারে শিশুরা পিতা-মাতার ব্যস্ততার কারণে খানিকটা একা একা বেড়ে ওঠে। এছাড়া নানা সমস্যার কারণে তারা বাইরের মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ কম পায়। এর ফলে তাদের মধ্যে সহনশীল মানসিকতার পরিবর্তে সংকীর্ণ মানসিকতার জন্ম হয়।
সামাজিকীকরণে সঙ্গীদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর প্রভাবে শিশু সহযোগিতা, সহনশীলতা সহমর্মিতা, নেতৃত্ব প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করে। কিন্তু বর্তমানে খেলার মাঠের স্বল্পতা, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ইত্যাদি কারণে শিশুরা অলস সময় কাটাতে কাটাতে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড- জড়িয়ে পড়ছে।
পরিবার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, নৈতিকতা, মূল্যবোধ এসকল বিষয়ে চর্চা করে থাকে। এর ফলে শিশুদের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ সঠিকভাবে বিকশিত হয়। কিন্তু বর্তমানে একক পরিবারের ব্যস্ততার মধ্যে ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন অনেকটাই কমে গেছে। ফলে ধর্মীয় অনুভূতি ও জীবনধারা নিয়ে শিশুরা তেমনভাবে বেড়ে উঠছেনা।
সুতরাং উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সামাজিকীকরণে পরিবর্তনশীল বাহনসমূহের ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় প্রভাব বিদ্যমান।

৫. মানব শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন অন্যান্য প্রাণী শাবকের সাথে তার মৌলিক পার্থক্য খুব কম। কিন্তু শিশুটি যত বড় হতে থাকে অন্যান্য প্রাণী থেকে তার মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং পার্থক্য ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে। এ পার্থক্যের মূলে সামাজিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজই তাকে সামাজিক করে।। তোলে। আর তাই এটি জন্ম থেকে শুরু হয়ে বিরামহীনভাবে ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত চলে। 
ক. সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় কোনটি?
খ. প্রতিষ্ঠান বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের কোন প্রক্রিয়াটির ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘‘এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানবশিশু সমাজের একজন কাঙি্ক্ষত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে"। বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হলো সমাজ।

খ. ব্যক্তির আচরণের প্রতিষ্ঠিত রূপই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান এমন এক ধরনের যন্ত্র যার মাধ্যমে সমাজ তার কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে মানুষ তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু এরূপ প্রতিষ্ঠান না থাকলে মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও বিশৃঙ্খল আচরণের বহি:প্রকাশ ঘটতো।

গ. উদ্দীপকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। সামাজিকীকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন মানুষ সমাজে বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠে। এটি একটি আজীবন প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। এ প্রক্রিয়া ব্যক্তিকে গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে মিলেমিশে থাকার গোত্র সহায়তা করে। সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন ও নিমফক এর মতে ‘‘ব্যক্তি যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলের আদর্শ মেনে চলতে শেখে তাকে সামাজিকীকরণ বলে।
উদ্দীপকে স্পষ্টভাবে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে যেখানে একটি শিশুর উদাহরণ দেওয়ার মাধ্যমে উক্ত প্রক্রিয়াটির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, সমাজই শিশুকে সামাজিক করে তোলে। এ প্রক্রিয়াটি ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে় ওঠে।

ঘ. সামাজিকীকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানবশিশু সমাজের একজন কাঙি্ক্ষত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে।
একটি মানবশিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার মুখ্য পরিবারেই সম্পন্ন হয়। এ প্রক্রিয়ায় সে সমাজের মানুষের সাথে মিলেমিশে চলতে শেখে এবং শেখে কীভাবে সবার সাথে আচরণ করতে হয়। এছাড়া সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সমাজস্থ ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে উৎসাহ যোগায়। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু সামাজিক শিক্ষা গ্রহণ করে। সমাজের বিভিন্ন প্রথা, রীতিনীতি, বিধি-নিষেধ, নিয়ম কানুন প্রভৃতি সম্পর্কে সে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করে। শিশুর সামাজিকীকরণে বিভিন্ন উপাদান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে, যেমন-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সঙ্গীদল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, জ্ঞাতিগোষ্ঠী ইত্যাদি। এসব উপাদান বিভিন্নভাবে তাকে সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহযোগিতা করে। উক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে একমাত্র সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে পূর্ণাঙ্গ সামাজিক সদস্য হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

৬. আলম তার বাবা মায়ের সাথে বসে টিভিতে মিনা কার্টুন উপভোগ করে। তার ছোট বোনও এসবের খুব ভক্ত। তাদের বাবা-মা আলম ও তার ছোট বোনকে পত্র-পত্রিকা থেকে বিশেষ বিশেষ প্রযুক্তি সম্পর্কে পড়ে শোনায়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা অল্পবয়সেই পত্র-পত্রিকা পড়া ও শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র উপভোগ করে। ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য তারা শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার করা শিখে ফেলেছে। 
ক. সামাজিকীকরণ কাকে বলে?
খ. মানুষের মেধার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানটি ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে সামাজিকীকরণের কোন মাধ্যমটির প্রতি ইংগিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের অবস্থা বিশ্বায়নের ফলত বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়।

খ. মানুষের মেধার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানটি হলো বংশগতি ব্যক্তির প্রতিভা ও দক্ষতা বংশগত উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ব্যক্তির প্রতিভা ও দক্ষতা বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত। এ প্রসঙ্গে গ্যালটন (Galton) বলেন, প্রতিভাবান পিতা-মাতার ঘরেই প্রতিভাবান সন্তানের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রতিভাবান লোকেরা অনেক প্রতিকূল পরিবেশে বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে সামাজিকীকরণের তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
প্রযুক্তির অগ্রসরমান উদ্ভাবন মানব জীবনযাত্রার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কারণ মানুষের জীবনে প্রতিটি বিষয় এখন তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। যেমন- অনেক পরিবারেই এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এমন পরিবারের শিশুরা এসব উপকরণ ব্যবহার করে। শিশুরা এসব উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়।
আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশের কারণে বিজ্ঞাপন, জনপ্রিয় সিনেমা, নাটক, বিখ্যাত ক্রীড়া ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যা শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে।
উদ্দীপকের আলম ও তার ছোট বোন ইন্টারনেট ব্যবহার করে অল্প বয়সেই পত্র-পত্রিকা পড়ে এবং শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র উপভোগ করে। ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তারা সেগুলোকে শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার করছে, যা তাদের সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলছে। তাই বলা যায়, তথ্য প্রযুক্তি সামাজিকীকরণে ভূমিকা রাখে এবং উদ্দীপকে এ বিষয়টির প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অবস্থা অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির প্রসার বিশবায়নের ফল। কারণ বিশ্বায়নকে ঘিরেই তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয় বিশ্বায়ন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিশ্বের সব মানুষকে জাতি রাষ্ট্রের সীমানার ঊর্ধ্বে এক বৈশ্বিক গ্রাম এনে দিয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্বায়নে বাস্তব রূপ এনে দিয়েছে। তাই আজ সারা বিশ্বের মানুষ যেন একটি পরিবারের সদস্য। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথে ঘরে বসে যোগযোগ করা সম্ভব হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে।
স্যাটেলাইট, ক্যাবল, অপটিক্যাল ফাইবার, ইন্টারনেট প্রভৃতি আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী তথ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। মানুষের জীবনের প্রতিটি বিষয় এখন তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আর একটি কম্পিউটারে ছবিসহ যাবতীয় তথ্য দ্রুত প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে পৌছে যাচ্ছে সবার কাছে। বিশ্বায়নের যুগে নিরাপত্তাকে আরও জোরদার করতে ব্যবহৃত হয় গোপন ক্যামেরা।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলম ও তার ছোট বোন ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষামূলক কাজে ব্যবহার করছে। এছাড়া তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা পাঠ করছে, যা মূলত সম্ভব হয়েছে বিশ্বায়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ব্যবস্থা অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির প্রসার বিশ্বায়নের ফল।

৭. রানা ও সোমার মা-বাবা সরকারি চাকরিজীবী। দিনের বেলায় অফিসের কাজকর্মের কারণে তারা সন্তানদের সময় দিতে পারে না। বাড়ি ফেরার পর অধিকাংশ সময়ই তাদের মা-বাবা ঝগড়ায় লিপ্ত হন। সোমা নিয়মিত পড়ালেখা করলেও ষোল বছর বয়সী রানা পাড়ার খারাপ ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। স্কুলে ঠিকমতো যায় না এবং পড়ালেখার ব্যাপারে একেবারেই অমনোযোগী। 
ক. সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম কোনটি?
খ. সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভূমিকা রাখে? 
গ. উদ্দীপকে রানার সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে যে মাধ্যমটির ভূমিকা অনুপস্থিত তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রানাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে কী কী করণীয় রয়েছে বলে তুমি মনে কর? যুক্তি দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম পরিবার।

খ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে নৈতিক গুণাবলির শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিকীকরণে ভূমিকা রাখে।
শিশু যখন প্রথম বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে তার দীক্ষিতকরণ শুরু হয় এবং সে বৃহত্তর সমাজে প্রচলিত আদবকায়দা এবং আচার-আচরণের সাথে পরিচিত হতে আরম্ভ করে। তার সহপাঠীরা বিভিন্ন পরিবার ও পরিবেশ থেকে আসে। কাজেই বৃহত্তর পটভূমিকায় সে সমাজের মূল্যবোধ, ভাবাদর্শ, সমাজ অনুমোদিত আচার-আচরণ এবং সমাজে নিষিদ্ধ কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। শিক্ষকদের নৈতিক বাণীও তার সামাজিকীকরণে সাহায্য করে। এরূপ ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিকীকরণে ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকের রানার সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে যে মাধ্যমটি অনুপস্থিত সেটা হলো পরিবার।
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবার প্রধান ভূমিকা পালন করে। পরিবারকে জ্ঞানার্জনের প্রাথমিক সূতিকাগার বলা হয়। শিশু তার পরিবার থেকে যে আদর্শ, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ শিক্ষা লাভ করে থাকে সে হিসেবেই তার ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে উঠে। যে শিশু দুর্বল এবং ক্ষয়িষ্ণু পারিবারিক কাঠামোতে বেড়ে উঠে, সে দুর্বলচিত্তের অধিকারী হয় এবং অপরাধপ্রবণ হয়। পিতামাতার মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকলে পরিবারে শান্তি বিরাজ করে। আর এ ধরনের সম্পর্ক ও পরিবেশ শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পিতামাতা যদি তাদের সন্তানের সাথে ভালো আচরণ করেন তবে তারা আত্মপ্রত্যয়ী হয় আর খারাপ আচরণ করলে তারা নিঃসঙ্গ বোধ করে। পরিবারের ভাইবোনদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকলে পরস্পর পরস্পরকে শ্রদ্ধা করে ও ভালোবাসে এবং সমাজে আদর্শ সদস্য হিসেবে গড়ে় ওঠে। উদ্দীপকে আমরা দেখি, রানা ও সোমার বাবা-মা উভয়ই চাকরিজীবী হওয়ায় সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। উপরন্তু তারা অধিকাংশ সময়ই ঝগড়ায় লিপ্ত থাকেন। অর্থাৎ তারা বাবা মা হিসেবে সঠিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। তাদের তথা পরিবারের এরূপ ভূমিকার ফলেই রানা সঠিকভাবে বেড়ে উঠেনি। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে রানার সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অনুপস্থিত ছিল বলেই রানা অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ে।

ঘ. রানাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে তার পরিবারের সদস্যদের সঠিক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
আমরা জানি, পরিবার হলো শিশুর সামাজিকীকরণের প্রাথমিক বাহন। শিশু গৃহ-পরিবেশে তার পিতামাতার ধ্যানধারণা ও মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত হয়। শিশু পিতামাতার মাধ্যমে সামাজিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়। পরিবারের ধারা কী রকম, সেখানে কী ধরনের প্রথা, রীতিনীতি প্রচলিত তার ওপর ভিত্তি করে শিশুর একটা নিজস্ব জীবনধারা গড়ে ওঠে।
উদ্দীপকে রানাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে তার পিতামাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে পিতামাতার মধ্যে। সুস্থ সম্পর্ক, সন্তানদের সময় দেওয়া এবং তারা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে ইত্যাদি সম্পর্কে পিতা-মাতার খবর রাখা ইত্যাদি। একটি সুস্থ সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যা রানাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সামাজিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিবারের সদস্যরা যদি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং তা যথারীতি পালন করেন। তাহলে উদ্দীপকের রানার মতো কিশোররা সুস্থ জীবনযাপন করতে। সক্ষম হবে।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

৮. শিক্ষিত বেকার মামুন দিনরাত তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে একসময় নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পিতা মামুনকে নিরস্ত করতে না পেরে ইমাম সাহেবের শরণাপন্ন হন। ইমাম সাহেব মাদকাসক্তির পরিণাম, পরকালে এর শাস্তি এবং নৈতিকতার বিষয়ে শিক্ষা দেন এবং বেশ কিছুদিন তাকে সাথে সাথে রাখেন। মামুন এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে এবং ব্যবসা করছে। 
ক. মানব জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদান কী? 
খ. ‘‘পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান’’ ব্যাখ্যা করো।
গ. মামুনের নেশাগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের কোন বাহন দায়ী? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. মামুনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে যে বাহনটি ভূমিকা রেখেছে সামাজিকীকরণে তার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে- বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মানব জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদান হচ্ছে ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক উপাদান।

খ. পরিবার হলো সবচেয়ে প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার অস্তিত্ব আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সকল সমাজেই বিদ্যমান। সমাজ কাঠামোয় বিদ্যমান সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পরিবার হলো সংঘবদ্ধ জীবনের সবচেয়ে সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠান। পরিবারেই মানুষ জন্মগ্রহণ করে, বেড়ে ওঠে এবং বৃহত্তর সমাজে প্রবেশের শিক্ষা লাভ করে। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি সাধিত হলেও পরিবার নামক ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান কখনো বিলুপ্ত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ সমাজ বিকাশের প্রতিটি পর্যায়েই পরিবারের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত। আর এ জন্যই পরিবারকে একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করা হয়।

গ. মামুনের নেশাগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ 'সঙ্গীদল' বাহনটি দায়ী।
পরিবারের পরে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সমবয়সী বা সঙ্গীদলের ভূমিকা অপরিসীম। শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন তার সঙ্গী সাথীরা নানাভাবে তাকে প্রভাবিত করে। পড়াশোনার সময় বাদ দিয়ে। অবসর সময় সে খেলার মাঠে অথবা গল্পগুজব করে বন্ধুদের সাথে। সময় কাটায়। বন্ধুদের আকর্ষণ তার কাছে অপ্রতিরোধ্য। সমবয়সী দলের প্রভাবে মাদকাসক্তির মতো বিষয়ে কিশোর বয়সীরা সহজেই জড়িয়ে পড়ে। পূর্বে গ্রামীণ সমাজে শিশু-কিশোররা সমবয়সীদের সাথে নানারকম খেলায় মেতে উঠত। ইদানিং খেলার মাঠের স্বল্পতা, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব ইত্যাদি কারণে কিশোর বয়সীরা অলস সময় কাটাতে কাটাতে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড- জড়িয়ে পড়ে। নগর জীবনেও কিশোররা সমবয়সী দলের সাথে মিশে মাদকাসক্তিসহ নানা রকম অপরাধমূলক কাজে জড়িত হচ্ছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, মামুন দিনরাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে একসময় নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তার এ মাদকাসক্তির পেছনে উপরে আলোচিত সামাজিকীকরণের সমবয়সী বা সঙ্গীদল প্রত্যয়টি দায়ী। সুতরাং বলা যায় যে, মামুনের নেশাগ্রস্ত হওয়ার পেছনে সামাজিকীকরণের সঙ্গীদল বাহনটি দায়ী।

ঘ. মামুনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে যে বাহনটি ভূমিকা রেখেছে তা হলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্মের পর থেকেই একজন মানুষ নিজ ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। শিশু পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেই প্রথম নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সাথে পরিচিত হয়। শিশু পিতামাতা ও দাদা-দাদিকে মসজিদ, মন্দির কিংবা প্যাগোডায় যেতে ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলো পালন করতে দেখে। এতে শিশু ধীরে ধীরে নিজ ধর্মীয় রীতিনীতিগুলো শিখে নেয়। আর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে সত্যবাদিতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, পরোপকারিতা, মাদকমুক্ত জীবনযাপন ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি অর্জিত হয়। আবার সমাজে ব্যক্তির নৈতিকতার মানদন্ড কী হবে তা ধর্ম নির্দেশ করে। ধর্ম মানুষকে মন্দ পথ বা মন্দ অভ্যাস পরিহার করে সৎপথে চলার নির্দেশ দেয়। ধর্ম ব্যক্তিকে আচরণে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হতেও শিক্ষা দেয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মামুন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে তার পিতা তাকে নিয়ে ইমাম সাহেবের শরণাপন্ন হন। ইমাম সাহেব মাদকাসক্তির পরিণাম, পরকালে এর শাস্তি এবং নৈতিকতার বিষয়ে শিক্ষা দেন এবং বেশকিছু দিন মামুনকে তার সাথে রাখেন। ফলশ্রুতিতে মামুন এখন মাদকাসক্ত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। মূলত ইমাম সাহেব কর্তৃক ধর্মীয় উপদেশ ও দিকনির্দেশনা প্রদানই। মামুনকে নেশাগ্রস্ত জীবন থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে। সুতরাং বলা যায় যে, মামুনের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাহনটি ভূমিকা রেখেছে। আর সামাজিকীকরণে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

৯. জন্মের পর একটি মানবশিশুকে তার বোবা মা একটি আলাদা ঘরে দীর্ঘ ছয় বছর লালন-পালন করতে বাধ্য হন। ঐ শিশুকে তিনি অন্য কোনো মানুষের সংস্পর্শে আনতে পারেননি। শিশুটির মা যেহেতু বোবা, তাই তিনি কথাও বলতে পারতেন না এবং। কানেও শুনতে পারতেন না। এ কারণে তার শিশুর সঙ্গে তিনি নিজে বাকশক্তি ব্যবহার করে কোনো ভাব বিনিময় করতে পারেননি। ছয়। বছর পর শিশুটিকে তার মাসহ উদ্ধার করা হলো। তখন দেখা গেল শিশুটি কোনো কথা বলতে শেখেনি এবং জনসমক্ষে এসে চার পাশের লোকজন দেখে শিশুটি অস্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করছিল। শিশুটির আচার-আচরণ এবং বুদ্ধিমত্তা ছয় মাসের শিশুর মতো মনে হচ্ছিল। 
ক. Positive Philosophy গ্রন্থের লেখক কে? 
খ. নমুনা জরিপ পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে সমাজের কোন প্রক্রিয়াটির অভাবে শিশুটির স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটির বাহনগুলো ব্যক্তিকে সমাজের সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখে? বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. Positive Philosophy গ্রন্থের লেখক ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ।

খ. সামাজিক গবেষণার জন্য যে সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে নমুনা জরিপ অন্যতম।
জরিপ কথাটির অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সরেজমিনে দেখা, পরিমাপ বা নিরূপণ করা। নমুনা হলো গোটা জিনিসের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ। একটি এলাকার বা কোনো দেশের সমগ্র জনসংখ্যা সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত ঐ এলাকা বা দেশের জনসংখ্যার একটি প্রতিনিধিত্বকারী অংশকে নমুনা হিসেবে বেছে নেন এবং নমুনাভুক্ত জনসংখ্যার ওপর একটি প্রশ্নমালা প্রয়োগ করে গবেষণা চালান। এই পদ্ধতিতে গবেষণা কর্ম পরিচালনাকে ‘নমুনা জরিপ পদ্ধতি’ বলা হয়।

গ. সমাজের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটির অভাবে উদ্দীপকের শিশুটির স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়া ব্যক্তিকে তার সামাজিক জগতে অনুপ্রবেশ করায়, তাকে সমাজের নানা ধরনের কাজকর্মে অংশগ্রহণকারী সভ্য হিসেবে গড়ে তোলে এবং সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ গ্রহণে তাকে প্রবৃত্ত করায়। ব্যক্তি সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত প্রথা, মূল্যবোধ, রীতিনীতি, আচরণ তথা সমগ্র সমাজের সাথে সঙ্গতি সাধনের উপায় ও ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং এর মাধ্যমেই সে সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য সাধনে সক্ষম হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জন্মের পর শিশুটিকে তার বোবা মা একটি আলাদা ঘরে দীর্ঘ দুই বছর লালন-পালন করতে বাধ্য হন। শিশুটি অন্য কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসেনি। শিশুটির মা শিশুর সঙ্গে নিজের বাকশক্তি ব্যবহার করে কোনো ভাব বিনিময় করতে পারেননি। ছয় বছর পর শিশুটিকে তার মাসহ উদ্ধার করা হলে দেখা গেল, শিশুটি কথা বলতে শেখেনি, লোকজন দেখে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করে এবং শিশুটির আচরণ ও বুদ্ধিমত্তা ছয় মাসের শিশুর মতো মনে হচ্ছিল। পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মূলত সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটির অভাবই শিশুটির এমন অস্বাভাবিক আচরণের কারণ।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা দ্বারা সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করা হয়েছে। একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার বাহনগুলো ব্যক্তিকে সমাজের সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবার প্রাথমিক বাহন হিসেবে কাজ করে। পারিবারিক পরিবেশে শিশু যা শেখে, ব্যক্তিত্ব গঠনে তা আজীবন ভূমিকা পালন করে। একটা অসুখী পরিবার শিশুর সুস্থ ব্যক্তিত্ব গঠনের পথে অন্তরায়স্বরূপ। পরিবারের পিতা-মাতা তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে বিভিন্ন রকম আচরণ করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিত্বও বিভিন্ন রকমের হতে পারে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও শিশুর সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষকের চিন্তাধারা, আচার-ব্যবহার, কথা বলার ভঙ্গি প্রভৃতি শিশুর আচরণকে প্রভাবিত করে থাকে। স্কুলের পাঠ্যপুস্তক, নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতিও শিশুর মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিশুর সামাজিকীকরণের বিষয়ে তার সঙ্গী বা খেলার সাথীরাও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশু সঙ্গীদল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পেশাগত সংজ্ঞা, গ্রন্থাবলি ও পত্র-পত্রিকা, প্রচার মাধ্যম, রাষ্ট্র, জ্ঞাতিগোষ্ঠী সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্দীপকে উল্লিখিত শিশুটির মধ্যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার উক্ত বাহনগুলোর কার্যক্রম অনুপস্থিত। যার কারণে শিশুটির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটির বাহনগুলো ব্যক্তিকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১০. শামীম ও সজীব দুই বন্ধু। ছুটির দিনগুলোতে শামীম পরিবারের সাথে সময় কাটাতে, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিশতে ও আড্ডা দিতে পছন্দ করে। অন্যদিকে সজীব ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতেই বেশি পছন্দ করে।
ক. পুঁজিবাদ কী?
খ. বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলতে কী বোঝায়? 
গ. শামীমের সামাজিকীকরণে কোন কোন উপাদানের প্রভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সজীবের সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে যে উপাদানের ভূমিকা রয়েছে তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পুঁজিবাদ হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাভিত্তিক অর্থব্যবস্থা।

খ. সমাজে প্রচলিত আইন-কানুন, মূল্যবোধ ও রীতিনীতির পরিপন্থি আচরণকে বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলে। প্রতিটি সমাজেই কতকগুলো নিজস্ব আচার-আচরণ, রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ থাকে। সে অনুসারে সমাজ ব্যক্তির কাছ থেকে যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে বলা হয় কাঙি্ক্ষত বা প্রত্যাশিত আচরণ। এই প্রত্যাশিত আচরণের বাইরে ব্যক্তি যে সকল আচরণ করে তাই বিচ্যুতি আচরণ। সুতরাং, বিচ্যুতি বলতে মূলত এমন সব আচরণকে বোঝায় যা স্বাভাবিক ও কাঙি্ক্ষত আচরণের পরিপন্থি।

গ. উদ্দীপকে শামীমের সামাজিকীকরণে পরিবার ও বন্ধু বান্ধবের প্রভাব রয়েছে। সামাজিকীকরণের যতগুলো বাহন রয়েছে তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়ে থাকে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করে। কারণ শিশুর সব দৈহিক, মানসিক, বস্তুগত ও অবস্তুগত প্রয়োজন মেটায় পরিবার। যার মাধ্যমে শিশু তার চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠন করে। এভাবেই পারিবারিক জীবনের মধ্য দিয়ে শিশু তার ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপন করে। শিশুর সামাজিকীকরণে বন্ধু বান্ধব বা সঙ্গীদলের ভূমিকাও নেহায়েত কম নয়। শিশু তার সমবয়সী বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিশতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। বন্ধু-বান্ধব বা সমবয়সী গোষ্ঠী প্রতিযোগিতা তৈরি করে, সমাজের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করে আর এই মূল্যবোধ আধুনিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া সমবয়সী বা বন্ধু বান্ধবদের সাথে মেশার কারণে শিশুর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হয়।
উদ্দীপকের শামীম পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে। আর এ পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব সামাজিকীকরণের দুটি মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, শামীমের সামাজিকীকরণে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব উপাদানের প্রভাব রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের সজীবের সামাজিকীকরণে তথ্য প্রযুক্তিগত উপাদানের প্রভাব রয়েছে। এ উপাদানের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়দিকই পরিলক্ষিত হয়।
প্রযুক্তির অগ্রসরমান উদ্ভাবন মানব জীবনযাত্রার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কারণ মানুষের জীবনে প্রতিটি বিষয় এখন তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। যেমন- অনেক পরিবারেই এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। পরিবারের শিশুরা এসব উপকরণ ব্যবহার করে। এসব উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কারণে বিজ্ঞাপন, জনপ্রিয় সিনেমা, নাটক, বিখ্যাত ক্রীড়া ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি প্রচার মাধ্যমে কল্যাণে দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যা শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে।
তথ্য প্রযুক্তির কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন- অনেক সময় শিশু পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে স্যাটেলাইট চ্যানেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে কম্পিউটারে গেমস খেলে, রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর ফলে তাদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে এছাড়া শিশুরা অনেক সময় অশ্লীল ভিডিও দেখে, যা তাদের সামাজিকীকরণে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রয়োগে আমরা সহজেই অন্য দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারছি। কিন্তু অনেক সময় অন্য দেশের সংস্কৃতির প্রভাবে আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করি। এর ফলে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারাতে বসে যা আমাদের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিকীকরণে তথ্য প্রযুক্তি ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয়ভাবেই প্রভাব বিস্তার করে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post