HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. অনিন্দিতাকে জোর করে তার ফুপাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনিন্দিতা যাকে পছন্দ করত তার সাথে বিয়ে হলে সে ও তার পরিবার ধর্মীয় কারণে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাতো। বিয়ের দশ বছর পর অনিন্দিতা এখন তিন সন্তানের মা। সন্তানদের লালন-পালন করতে গিয়ে সে অতীতের সবকিছু ভুলে গেছে।
ক. উন্নয়ন কী?
খ. পিতৃসূত্রীয় পরিবার বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো। 
গ. অনিন্দিতার বিয়ের ঘটনা সামাজিক স্তরবিন্যাসের কোন ধরনকে প্রকাশ করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. 'অনিন্দিতার বর্তমান জীবনের আলোকে পরিবারের কার্যাবলি বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া হলো উন্নয়ন।

খ. বংশমর্যাদা ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার সন্তান সন্ততি যদি পিতার কাছ থেকে পায়, সেক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবারকে পিতৃসূত্রীয় পরিবার বলে।
পিতৃসূত্রীয় পরিবারের নেতৃত্ব, সম্পত্তি, বংশমর্যাদা ইত্যাদি উত্তরাধিকারসূত্রে পিতা থেকে পুত্রের কাছে আসে। এখানে দাদা, বাবা, পুত্র ও নাতিকে নানা, মাতা, মেয়ে ও নাতনির চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের প্রচলিত সমাজ ও চাকমা সমাজে এ ধরনের পরিবার প্রচলিত।

গ. উদ্দীপকে অনিন্দিতার বিয়ের ঘটনা সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্যতম ধরন জাতিবর্ণ প্রথাকে নির্দেশ করে। সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধরন জাতিবর্ণ প্রথা। জাতিবর্ণ বলতে আন্তঃগোত্র বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠীকে বোঝায় যার একটি সাধারণ নাম থাকে; জন্মসূত্রে এর সদস্যপদ লাভ করতে হয়। সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে এর সদস্যদের কিছু নিয়মবিধি মেনে চলতে হয় এবং এই নিয়মবিধির মধ্যে জন্মগতভাবে প্রাপ্ত একই ঐতিহ্যবাহী পেশায় রত থাকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। ভারতীয় হিন্দু সমাজ সনাতন জাতি ও বর্ণব্যবস্থা এর একটি আদর্শ রূপ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র-এ চতুর্বর্ণের বিভক্তির সূত্র ধরে হিন্দু সমাজে অসংখ্য জাতি বর্ণের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এ প্রথায় নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে কোন শ্রেণির সাথে কোন শ্রেণির সম্পর্ক তৈরি হবে এবং ব্যক্তির পেশা ও কর্ম অনুযায়ী সামাজিক শ্রেণি ও মর্যাদা নির্ধারিত হয়। এছাড়া জাতিবর্ণের সদস্যদেরকে তাদের স্বজাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যেই বিয়ে করতে হয়। যেমন- ব্রাহ্মণের মেয়ের সাথে কখনো শূদ্রের ছেলের বিবাহ স্বীকৃত নয়। উদ্দীপকে দেখা যায় অনিন্দিতাকে জোর করে তার ফুপাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পছন্দের ছেলেটির সাথে বিয়ে হলে সে ও তার পরিবার ধর্মীয় কারণে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাতো। তাই বলা যায়, অনিন্দিতার বিয়ের ঘটনা সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতিবর্ণ প্রথাকে ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকের অনিন্দিতার বর্তমান জীবনে পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ ও শিক্ষামূলক কার্যাবলি প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের অন্যান্য সংগঠনের মতো পরিবার বিভিন্ন সামাজিক প্রয়োজন বা চাহিদা মেটাতে নানান ধরনের কাজ সম্পন্ন করে। পরিবার গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান প্রজনন ও লালন পালন করা। শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় পরিবার মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাকে একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে় তোলার দায়িত্ব পরিবারের।
পরিবারকে কেন্দ্র করেই মানুষের সামাজিক জীবন পরিচালিত হয়। এটা শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। সন্তান যতদিন সাবলম্বী না হয় ততদিন পরিবার তার দায়িত্ব নেয় এবং তাকে বৃহত্তর সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ শিশু সামাজিকীকরণের প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার থেকেই পায়। এখান থেকেই শিশু সমাজের প্রচলিত নিয়ম, বিধি-ব্যবস্থা, নৈতিক আদর্শ, আচার-আচরণ প্রভৃতি শিক্ষা লাভ করে। উদ্দীপকের অনিন্দিতা তিন সন্তানের মা। বর্তমানে সে সন্তান লালন-পালনে আত্মনিয়োগ করেছে। যা পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ ও শিক্ষামূলক কার্যাবলিকে তুলে ধরেছে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, একটি শিশুর প্রকৃত সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে পরিবার বহুমুখী কার্যাবলি সম্পাদন করে।

২. মাজেদ একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপনে দেখল, 'সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার একমাত্র কন্যার জন্য সুদর্শন সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের ব্রাহ্মণ পাত্র চাই।' মাজেদ ভাবতে থাকে, সমাজ ও ধর্মভেদেও বিবাহ পদ্ধতির তারতম্য লক্ষ করা যায়। 
ক. যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম কয়টি?
খ. সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ বলতে কী বোঝায়?
গ. মাজেদের দেখা বিজ্ঞাপনে সামাজিক স্তরবিন্যাসের যে ধরনটি ফুটে উঠেছে সেটির ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের উক্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি সভ্য সমাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ - তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম তিনটি।

খ. সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় তাকে সম্পত্তিসংক্রান্ত অপরাধ বলে।
সম্পদ অর্জনের স্পৃহা মানুষের মধ্যে যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন এ ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ধরনের অপরাধ অনেক সময় একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার চুরি, ব্যাংক ডাকাতি, মোবাইল চুরি কিংবা ছিনতাই, গাড়ি চুরি ইত্যাদি এ ধরনের অপরাধের উদাহরণ।

গ. উদ্দীপকে মাজেদের দেখা বিজ্ঞাপনে সামাজিক স্তরবিন্যাসের যে ধরনটি ফুটে উঠেছে তা হলো জাতিবর্ণ প্রথা। কারণ, বিজ্ঞাপনটি হলো 'সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার একমাত্র কন্যার জন্য সুদর্শন সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের পাত্র চাই’ যা জাতিবর্ণ প্রথাকে নির্দেশ করে।
জাতিবর্ণ প্রথা সামাজিক স্তরবিন্যাসের এক অদ্বিতীয় ধরন হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী এ কে নাজমুল করিম বলেন, ‘জাতিবর্ণ ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষিতে এক বিশেষ রূপ ধারণ করেছে। ফলে জাতিবর্ণ বলতে অনেক সময় হিন্দু জাতিবর্ণকেই বোঝায়। যদিও একথা সত্য যে, জাতিবর্ণ হিন্দু সমাজের একটি বিশেষ দিক, কিন্তু সব সমাজেই কিছু না কিছু জাতিবর্ণ দেখা যায়।
জাতিবর্ণ প্রথা মূলত একটি ধর্মীয় ব্যবস্থা যে ব্যবস্থায় মানুষ বিভিন্নভাবে বিভক্ত থাকে। ভারতীয় ইতিহাসবিদ ডি ডি কোসান্বি বলেন, জাতিবর্ণ প্রথা বলতে আমাদের সামনে এমন একটি ব্যবস্থা হাজির হয় যা সমাজের নিম্ন শ্রেণিকে নির্দেশ করে। তাই বলা যায়, মাজেদের দেখা বিজ্ঞাপনে সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতিবর্ণ প্রথার ধরনটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি হলো বিবাহ। বিবাহ সভ্য সমাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ - আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত।
সভ্য সমাজে বিবাহের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যেমনত বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত রীতি অনুসারে পরিবার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সুতরাং পরিবার প্রতিষ্ঠা করাই হলো বিবাহের সামাজিক উদ্দেশ্য।
পরিবারের ভিত্তি হিসেবে বিবাহের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের স্থায়িত্ব ও সংহতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী সন্তান উৎপাদন করে। ফলে তাদের পারিবারিক জীবনের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। মানুষের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বিবাহের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। বিবাহের মাধ্যমে নতুন আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। এসব আত্মীয় পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা ও প্রয়োজনে এগিয়ে আসে।
ব্যক্তি জীবনে বিবাহের নৈতিক মূল্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ সামাজিক প্রতিষ্ঠানটির ধর্মীয় তাৎপর্যও অপরিসীম। উপরে আলোচিত কারণগুলোর প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, বিবাহ সভ্য সমাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

৩. সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের মাত্র ৯৮ জন মানুষ বিশ্বের অর্ধেক সম্পদের মালিক। তাদের কারো কারো ব্যক্তিগত সম্পদ/সম্পত্তি কোনো কোনো রাষ্ট্রের সম্পত্তির থেকেও বেশি। অর্থাৎ বিশ্বে সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থা। অত্যন্ত অসম, যা মানুষের মধ্যে ব্যাপক সামাজিক বিভাজন তৈরি করেছে।
ক. CEDAW এর পূর্ণরূপ লেখ। 
খ. অগবার্ন ও নিমরুফ সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিষয়ের প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. লিঙ্গ বৈষম্য কীভাবে উদ্দীপকে উল্লেখিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত? মতামত দাও।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. CEDAW-এর পূর্ণরূপ হলো Convention on the Elimination of all forms of Discrimination Against Women.
 
খ. বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন ও নিমকফ সামাজিক স্তরবিন্যাসকে নিয়ন্ত্রিত অসাম্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক ভূমিকা ও কার্যাবলির ভিত্তিতে জনগোষ্ঠী উঁচু নীচু স্তরে সংগঠিত। তাদের মতে, স্তরবিন্যাস বা বস্তুরায়ন হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকে মোটামুটি স্থায়ীভাবে উঁচুনীচু মর্যাদার ক্রমানুসারে সাজানো হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি হচ্ছে সামাজিক অসমতা। সামাজিক অসমতা বলতে প্রাতিষ্ঠানিক অসমতাকেই বোঝায়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজে বসবাসরত দুই বা ততোধিক জনগোষ্ঠী মর্যাদা, শ্রেণি, বর্ণপ্রথা এবং লিঙ্গের ভিত্তিতে একে অন্যের থেকে পৃথক। যখন একটি গোষ্ঠীর সাথে অন্য একটি গোষ্ঠীর তুলনা করা হয় তখন তাদের মাঝে সুযোগ-সুবিধা, দান-অনুদান, বিধি-নিষেধ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তাই হচ্ছে সামাজিক বৈষম্য। সমাজে বিভিন্ন প্রকার অসমতা দেখা যায়। যেমন- লিঙ্গভিত্তিক অসমতা। লিঙ্গ সামাজিক অসমতার অন্যতম নির্ধারক। পুরুষ ও নারীর লিঙ্গ ভেদাভেদের দোহাই দিয়ে সমাজ নারী-পুরুষের সম্পর্কে অসমতা সৃষ্টি করেছে। বয়সভেদেও সামাজিক অসমতা তৈরি হয়। বয়সভিত্তিক অসমতা প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট মনে হলেও এর পেছনে শক্তিশালী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে। আবার, ক্ষমতা, সম্পত্তি, মালিকানা, প্রতিপত্তি, মর্যাদা ইত্যাদির ভিত্তিতেও সামাজিক অসমতা তৈরি হয়। ক্ষমতার মাত্রার ওপর মানুষ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়।
উদ্দীপকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বিশ্বের মাত্র ৯৮ জন মানুষ পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদের মালিক। অর্থাৎ উদ্দীপকটি সামাজিক অসমতাকেই নির্দেশ করে। আর এই অসমতা সমাজে বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যা উপরের আলোচনায় তুলে ধরা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি হচ্ছে সামাজিক অসমতা, যার সাথে লিঙ্গ বৈষম্যের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সামাজিক অসমতা হচ্ছে সেই ব্যবস্থা যেখানে মর্যাদার দিক থেকে সব মানুষ সমান অধিকার পায় না। অর্থাৎ সামাজিক অসমতা বলতে আমরা বুঝি, কাঙি্ক্ষত বিষয়বস্তুতে অসম অধিকার। লিঙ্গ সামাজিক অসমতার অন্যতম নির্ধারক। নারী ও পুরুষের মাঝে র জীববিজ্ঞানের নিয়মে যে পার্থক্য তাকে লিঙ্গ বলে চিহ্নিত করা র হয়। এই লিঙ্গ পার্থক্যের জন্যই মানবজাতি দুইটি অংশে বিভক্ত। গ্রা প্রাকৃতিক কারণে লিঙ্গভিত্তিক অসমতার উদ্ভব হলেও র সমাজজীবনে এর একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সম্পদের অসম বন্টন যে লিঙ্গ বৈষম্যের সাথে সম্পর্কিত তা আমাদের সমাজব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি দিলেই স্পষ্ট হওয়া যায়। যেমন- ইসলাম ধর্মে লিঙ্গভেদে সম্পদের বণ্টন করা হয়েছে। একটি ছেলে পিতার সম্পত্তিতে যে অংশ পায় একটি মেয়ে পায় তার অর্ধেক। আবার হিন্দুধর্মে মেয়েদেরকে পিতার সম্পত্তি থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। এমনিভাবে সম্পদ অর্জনের প্রতিযোগিতায় নেমেও মেয়েরা পিছিয়ে পড়ে বা পুরুষশাসিত সমাজ তাদের পিছিয়ে রাখে। যেমন- একটি কারখানায় পুরুষ শ্রমিক ও মেয়ে শ্রমিক সমান কাজ করলেও পারিশ্রমিকের বেলায় পুরুষ শ্রমিককে প্রধান্য দেওয়া হয়। উদ্দীপকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে যে বিষয়টি হয়েছে তা হলো সামাজিক অসমতা। এই অসমতার সাথে লিঙ্গ বৈষম্য সরাসরি সম্পর্কযুক্ত যা উপরের আলোচনার প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী মৌমিতা পুরুষতন্ত্রের সংকীর্ণ মতবাদকে অস্বীকার করে সমতা ও স্বাধীনতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। অপরদিকে সুমি নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ককে অগ্রাহ্য করে শুধু নারীকেন্দ্রিক বিশ্ব গড়ে তোলায় বিশ্বাসী।
ক. আদর্শ আমলাতন্ত্রের রূপরেখা প্রদান করেন কে?
খ. ‘টোটেম’ বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে মৌমিতা জেন্ডার সম্পর্কিত কোন মতবাদের সমর্থনকারী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মৌমিতা ও সুমির দুটি মতবাদের মধ্যে কোন মতবাদকে তুমি সমর্থন করবে? যুক্তিসহ উপস্থাপন করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আদর্শ আমলাতন্ত্রের রূপরেখা প্রদান করেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার।

খ. টোটেম হলো মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্কগত এক ধরনের বিশ্বাস।
আদিম মানুষের বিশ্বাস হচ্ছে। টোটেম তাদের পূর্বপুরুষ ও গোত্রের প্রতীক। এটি গোত্রকে বিপদন্ডআপদে সাহায্য করে এবং বিপদ হতে উদ্ধার করে। গোত্রের সঙ্গে টোটেমের এই সম্পর্ক হতেই আদিম সমাজে পূর্ব-পুরুষ পূজার সূচনা এবং অন্যান্য সামাজিক আচার, প্রথা, রীতিনীতি, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, বিধি-নিষেধ ইত্যাদির উদ্ভব ঘটে, যা টোটেমবাদ নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকের মৌমিতা জেন্ডার সম্পর্কিত মতবাদ উদারপন্থি নারীবাদের সমর্থনকারী।
উদারপন্থি নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের সংকীর্ণ মতবাদকে অস্বীকার করে সমতা ও স্বাধীনতাভিত্তিক সামাজিক কাঠামো সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেয়। এই দর্শনে ব্যক্তির সমানাধিকার, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্বে এই নারীবাদ বিভিন্ন নাগরিক অধিকার যেমন- ভোটের অধিকার, বাক-স্বাধীনতার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। তবে সাম্প্রতিককালে উদারপন্থি নারীবাদের মূলকথা হলো জেন্ডার ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে নির্যাতনমূলক বৈষম্যধর্মী জেন্ডার ভূমিকার বিলোপ সাধন করা। জন লক, রুশো, বেন্থাম ও মিলের ধ্রুপদী উদারনৈতিক দর্শন হলো উদারপন্থি নারীবাদের উৎস।
উদ্দীপকের মৌমিতা পুরুষতন্ত্রের সংকীর্ণ মতবাদকে অস্বীকার করে সমতা ও স্বাধীনতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। তার এ চিন্তাধারা উপরে আলোচিত উদারপন্থি নারীবাদ মতবাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, মৌমিতা উদারপন্থি নারীবাদের সমর্থনকারী।

ঘ. মৌমিতা ও সুমির মতবাদের মধ্যে আমি মৌমিতার মতবাদকে সমর্থন করব।
উদ্দীপকের সুমি চরমপন্থি মতবাদের সমর্থক। এ নারীবাদে পুরুষ শ্রেণিকে শত্রু মনে করে নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ককে অগ্রাহ্য করা হয়। এ মতবাদে বিশ্বাসীরা মনে করেন নারীর শুধু নারীকেন্দ্রিক পৃথিবী গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু বাস্তবে এটি সম্ভব নয়। কারণ পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই নারী-পুরুষের সম্পর্ক ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কেননা, এই নারী-পুরুষের সম্পর্ক থেকেই মানব সমাজের সৃষ্টি। তাছাড়া এ সমাজ ও পৃথিবীর উন্নয়নে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ আবশ্যক। কিন্তু এ মতবাদে নারীকেন্দ্রিক বিশ্বের কথা বলা হয়েছে, যা সমীচীন নয়। অন্যদিকে উদারপন্থি নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের সংকীর্ণ মতবাদকে অস্বীকার করে সমতা ও স্বাধীনতাভিত্তিক সামাজিক কাঠামো সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেয়। বিদ্যমান সমাজকাঠামোর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের একটি সমতাভিত্তিক অবস্থান তৈরি করা সম্ভব। তাই উল্লিখিত কারণেই আমি উদারপন্থি নারীবাদকে সমর্থন করি।

৫. নূর আলী একজন ভূমিহীন কৃষক। সে অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ওসমান মিয়া একই গ্রামের ধনী কৃষক। তার প্রচুর ভূসম্পত্তি থাকলেও তিনি নিজে তা চাষ করেন না। গরিব কৃষকদের দিয়ে মজুরির বিনিময়ে তিনি জমিতে কাজ করান। গ্রামের লোকজন ওসমান মিয়াকে মর্যাদার চোখে দেখে এবং সম্মান করে। 
ক. Strata কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়?
খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কী বোঝায়?
গ. নূর আলী ও ওসমান মিয়ার সামাজিক স্তরের ভিত্তি বা উপাদান বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সূত্র ধরে সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. Strata প্রত্যয়টি মাটি বা শিলার বিভিন্ন স্তর বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে সমাজের অভ্যন্তরে বিদ্যমান ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সামাজিক শ্রেণির ক্রমানুযায়ী অবস্থান।
স্তরবিন্যাস বলতে বোঝায় যেখানে স্তরগুলো সজ্জিত ও বিন্যস্ত। অতএব সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা শ্রেণির উঁচু-নিচু অবস্থান বা বিন্যাস ব্যবস্থাকে বোঝায়।

গ. উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, ওসমান মিয়া গ্রামের ধনী কৃষক। তার প্রচুর ধনসম্পত্তি তথা অর্থবিত্ত রয়েছে। গ্রামের লোকজন তাকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করে। এ কারণে সামাজিক স্তরবিন্যাসের দিক থেকে তার স্থান উঁচু পর্যায়ে। অন্যদিকে, নূর আলী গ্রামের ভূমিহীন কৃষক। সে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করে থাকে। ফলে গ্রামে তার মর্যাদা কম বা নিম্নস্তরে। মূলত মানুষ হিসাবে নূর আলী এবং ওসমান মিয়ার মর্যাদা সমান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমাজের সদস্যরাই স্তরবিন্যাসে বিশ্বাসী। তারা তাদের মনোভাব, মতামত বা মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্তরবিন্যাস করে থাকে। যার ফলে ওসমান মিয়ার অবস্থান সামাজিক স্তরবিন্যাসের উঁচু পর্যায়, অন্যদিকে নূর আলীর অবস্থান সামাজিক স্তরবিন্যাসের নিম্নস্তরে। সুতরাং সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, নূর আলী ও ওসমান মিয়ার সামাজিক স্তরের ভিত্তি সামাজিক উপাদান অর্থাৎ ভূমি।

ঘ. উদ্দীপকে দেখা যায়, ওসমান মিয়া প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। ফলে সামাজিক স্তরের দিক থেকে তাঁর অবস্থান উঁচু স্তরে। অন্যদিকে নূর আলী গ্রামের ভূমিহীন কৃষক। যার কারণে সামাজিক, স্তরের দিক থেকে তার অবস্থান নিচু স্তরে। আলী এবং ওসমান মিয়ার এ মর্যাদাভিত্তিক অবস্থান সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। সেটি হচ্ছে সম্পত্তির ভিত্তিতে সৃষ্ট অবস্থান। মানুষের সঙ্গে মানুষের যে অসমতা দেখা যায় তা সমাজেরই সৃষ্টি। উদ্দীপকের ওসমান মিয়া ধনী কৃষক হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা, যেমন- উন্নত খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা, বিনোদন ইত্যাদি ভোগ করে থাকেন। অন্যদিকে ভূমিহীন কৃষক নূর আলীর পক্ষে অনেক সময় জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সামাজিক স্তরবিন্যাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সেটি হচ্ছে, স্তরবিন্যাসের সামাজিক ফলাফল, যা দুটি দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে। যথা: জীবনে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা এবং জীবনযাপনের রীতি। উদ্দীপকের নূর আলী এবং ওসমান মিয়ার মধ্যে যে স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায় তা প্রত্যেক সমাজেই বিদ্যমান ছিল অর্থাৎ প্রাচীন, আধুনিক, কৃষি এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজেও এর অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়, যা সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সর্বব্যাপিতাকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ এমন কোনো সমাজ ব্যবস্থা নেই, যেখানে সামাজিক স্তরবিন্যাস অস্তিত্বহীন। মোটকথা, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো সমাজের পরিচয় পাওয়া যায় না, যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের কোনো পার্থক্য বা বৈষম্য নেই।

৬. মৎস্যজীবী নৃপেন মাঝি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাত্রাপালা দেখতে গিয়ে সুব্রত ভট্টাচার্যের পাশে বসেন। এতে সুব্রত বাবু বিরক্ত হন এবং যাত্রাপালা না দেখেই চলে যান। বিষয়টি বুঝতে পেরে নৃপেন লজ্জিত হন। অন্যদিকে নৃপেনের বন্ধু রহমতের বাবা বর্গাচাষি হলেও রহমত সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তির মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়।
ক. 'Social Organization' গ্রন্থটির লেখক কে?
খ. বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা দেখা দেয়- বুঝিয়ে লেখ। 
গ. উদ্দীপকে রহমতের সামাজিক অবস্থান সামাজিক স্তরবিন্যাসের কোন ধরনকে নির্দেশ করে?
ঘ. নৃপেনের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন রহমতের তুলনায় মন্থর - তুমি কি এ বিষয়ে একমত? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'Social Organization' গ্রন্থের লেখক সমাজবিজ্ঞানী চার্লস হরটন কুলি।

খ. বুদ্ধিমত্তা সামাজিক অসমতার অন্যতম নির্ধারক। কেননা বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, ধীশক্তি এগুলোর ভিত্তিতে সমাজের মানুষের মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয় এবং সামাজিক অসমতা দেখা দেয়। এরিস্টটলের মতে, জন্মগতভাবেই মানুষ প্রজ্ঞাবান ও প্রজ্ঞাহীন হয় এবং বুদ্ধিমত্তার এরূপ পার্থক্যের জন্যেই সমাজে দাস ও মনিবের সৃষ্টি হয়। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে যে সামাজিক শ্রেণিসমূহের কথা বলা হয়েছে তা মূলত বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য থেকেই সৃষ্ট।

গ. উদ্দীপকে রহমত সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় তার সামাজিক অবস্থান স্তরবিন্যাসের অন্যতম প্রকরণ সামাজিক শ্রেণিকে নির্দেশ করে।
সমাজের সদস্যদের আয়, মর্যাদা, শিক্ষা, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার ভিত্তিতে ব্যক্তির যে সামাজিক অবস্থান, তা-ই মর্যাদা। সমাজের মানুষের কাছে কোনো ব্যক্তি অবস্থানটা কেমন সেটাই তার মর্যাদা। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজে শুধু অর্থনীতির ভিত্তিতেই শ্রেণি আছে তা নয়, বরং মানসিকতা, বিবেক, মননশীলতা ইত্যাদির ভিত্তিতে শ্রেণি আছে। অনেক সময় বলা হয়, লোকটা ছোটলোক। এর অর্থ হলো লোকটার আচার-আচরণ ও মানসিকতা নিচু মানের। সামাজিক মর্যাদা অর্জনযোগ্য অবস্থান। ব্যক্তি তার কর্মের দ্বারা সমাজের সর্বোচ্চ মর্যাদার অবস্থানে নিজেকে উন্নীত করতে পারেন। এক্ষেত্রে অতীতে যে কোন সামাজিক শ্রেণ বা অবস্থানে ছিল, সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে রহমতের বিশেষ অবস্থান সামাজিক মর্যাদাকে নির্দেশ করে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকে উল্লিখিত নৃপেণের আর্থ সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন রহমতের তুলনায় মন্থর। সমাজের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মর্যাদা, শ্রেণি, আয়, শিক্ষা, কর্তৃত্ব, শক্তি ও অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত থাকে। সর্বশ্রেণির মানুষ সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে না বা সব শ্রেণির মানুষ সমান মর্যাদার অধিকারী হয় না। রহমত শিক্ষিত এবং তার সামাজিক মর্যাদা আছে। ব্যক্তি তার কর্মের দ্বারা সমাজের সর্বোচ্চ মর্যাদার অবস্থানে নিজেকে আসীন করতে পারেন। এক্ষেত্রে অতীতে কোন সামাজিক শ্রেণি বা অবস্থানে ছিল, সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। নৃপেন অশিক্ষিত লোক, পেশায় সে মাঝি। তাই সমাজে তার আর্থ-সামাজিক অবস্থান খুবই নিচু। নিজের অবস্থান পরিবর্তনের গতিও খুব কম। কারণ অশিক্ষিত হওয়ার কারণে জীবনে ভালো সিদ্ধান্তকে নিতে পারে না। অপরপক্ষে রহমত শিক্ষিত লোক। তার সামাজিক মর্যাদা আছে, সে সরকারি চাকরিজীবী। সে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে নৃপেন মাঝির থেকে অনেক দ্রুত এগিয়ে আছে। নিজে শিক্ষিত হওয়ার কারণে তার আত্মীয়তা হবে মর্যাদাসম্পন্ন পরিবারে এবং সে তার ছেলেমেয়েকে শিক্ষিত করে তুলতে পারবে যা নৃপেন মাঝির পক্ষে সম্ভব হবে না। সুতরাং বলা যায়, নৃপেন মাঝির আর্থ-সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন রহমতের তুলনায় মন্থর।

৭. অষ্টম শ্রেণী পাশ করার পর দীপক কর্মকার নিজের পেশায় যোগ দেয়। ফলে লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন তার পূরণ হয়নি। দীপকের বন্ধু রিপন দরিদ্র কৃষকের সন্তান হয়েও কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে ডাক্তারী পাশ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তার ও তার পরিবারের অর্থসম্পদ, খ্যাতি সবই বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক. এস্টেট প্রথার শ্রেণীসমূহ কী কী? 
খ. শ্রেণি একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা'-বুঝিয়ে লেখো।
গ. সামাজিক স্তরবিন্যাসে উদ্দীপকের দীপক কর্মকারের অবস্থান নির্ণয় করো।
ঘ. 'সামাজিক স্তরবিন্যাস সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় - উদ্দীপকের আলোকে এই উক্তির পক্ষে অথবা বিপক্ষে তোমার মতামত দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. এস্টেট প্রথার শ্রেণিসমূহ হচ্ছে- ভূমি মালিক বা অভিজাত শ্রেণি, যাজক শ্রেণী এবং ভূমিদাস শ্রেণি।

খ. শ্রেণি অর্জিত সামাজিক অবস্থান বলে এটি একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা।
সমাজে সুনির্দিষ্ট মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিই হচ্ছে। শ্রেণি। সামাজিক পরিমাপে শ্রেণির অবস্থান মর্যাদার সাথে সম্পর্কযুক্ত। শ্রেণি মূলত আয়, ক্ষমতা, সম্পত্তি, পেশা, শিক্ষা ও বংশ মর্যাদার উপর নির্ভর করে। ব্যক্তি নিজের কর্মদক্ষতার মাধ্যমে সামাজিক অবস্থা নির্ণয় করতে পারে। এ কারণেই মূলত শ্রেণিকে উন্মুক্ত ব্যবস্থা বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের দীপক কর্মকারের অবস্থান সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতিবর্ণ প্রথায়। জাতিবর্ণ বলতে বোঝায় অন্তর্গোত্র বিবাহভিত্তিক এমন এক গোষ্ঠী যার একটি সাধারণ নাম থাকে; যার সদস্যতা জন্মসূত্রে লাভ করতে হয়; যার সদস্যদের সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে কতিপয় নিয়মবিধি মেনে চলতে হয়। এই নিয়ম বিধির মাধ্যমে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত একই ঐতিহ্যবাহী পেশায় রত থাকা অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত।
উদ্দীপকে দেখা যায়, দীপক কর্মকার অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর তার পিতার পেশায় যোগ দেয়। জাতিবর্ণ প্রথায় পিতার পেশা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক বলে দীপক কর্মকার সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতিবর্ণ প্রথায় অবস্থান করছে এবং দীপকের পেশার মাধ্যমে জাতিবর্ণকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, উদ্দীপকের দীপক কর্মকার সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতিবর্ণ প্রথায় অবস্থান করেছে।

ঘ. সামাজিক স্তরবিন্যাস সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দীপকের আলোকে এই উক্তির পক্ষে আমার মতামত উপস্থাপন করা হলো। স্তরবিন্যাস হলো সামাজিক অর্থাৎ সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো মানবিক সম্পর্কের স্তরবিন্যাস। এই স্তরবিন্যাস সামাজিক মান ও রীতির নির্ধারক। সামাজিক মান বা রীতি সামাজিক স্তরবিন্যাসের মাধ্যমে পুরুষাণুক্রমে সঞ্চারিত হয়। এ কারণে স্তরবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা আছে। স্তরবিন্যাস সামাজিক মিথস্ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ স্তরের একটি অন্তর্মুখী বা ব্যক্তির মনোভাব সম্পৃক্ত দিক আছে। বিশেষ ধরনের কিছু মিথস্ক্রিয়া কেবল একই স্তরভুক্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যই সংগঠিত হয়।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, দীপক কর্মকার এক ধরণের সামাজিক স্তরবিন্যাসে রয়েছে। অন্যদিকে দীপকের বন্ধু রিপন ডাক্তার পাশ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ এখানেও সামাজিক স্তরবিন্যাস পরিলক্ষিত হয়। কারণ সর্বযুগে সর্বকালে সর্বজনীন সামাজিক কাঠামোরই স্বাভাবিক রূপ হচ্ছে সমাজের স্তরবিন্যাস। সকল স্থায়ী সমাজেই মানুষের বিভিন্ন স্তরবিন্যাস রয়েছে।
উপরের আলোচনা শেষে বলতে পারি, উল্লিখিত কারণেই আমি স্তরবিন্যাসের পক্ষে মত পোষণ করি।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

৮. জগলুর এক ছেলে ও এক মেয়ে। সে তার ছেলের লেখাপড়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন কিন্তু মেয়ের প্রতি মোটেও যত্নশীল নয়। সে মনে করে লেখাপড়া করা ছেলেদের কাজ এবং মেয়েদের কাজ রান্নাবান্না ও ঘরসংসার করা। তাই সে তার মেয়েকে লেখাপড়া না শিখিয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য উদগ্রীব। 
ক. জেন্ডার কী?
খ. সামাজিক সমস্যা বলতে কী বোঝ?
গ. জগলুর মনোভাব তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বর্ণনা করো।
ঘ. জগলুর মনোভাব নারীদের দুর্বল করার জন্য দায়ী তোমার মতামত ব্যক্ত করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নারী ও পুরুষের মধ্যে জীববিজ্ঞানের নিয়মে যে পার্থক্য তাকে জেন্ডার বলে চিহ্নিত করা হয়।

খ. সামাজিক সমস্যা সমাজকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়। সামাজিক সমস্যা বলতে সমাজের এমন অবস্থাকে বোঝায় যে অবস্থাকে সমাজের অনেক লোকই অনাকাঙি্ক্ষত মনে করে, যে অবস্থা অনেকের ওপর অবাঞ্ছিত প্রভাব রাখে এবং যার। সমাধানের লক্ষ্যে অনেকেই যৌথ প্রয়াস চালানোর প্রয়োজন অনুভব করে।

গ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বলা যায়, জগলুর মনোভাব জেন্ডার বৈষম্যকে নির্দেশ করে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে নারী বা পুরুষ হিসেবে আমাদের সামাজিক পরিচয় যে ভিন্ন সেটি বোঝানোর জন্যই জেন্ডার শব্দটি ব্যবহৃত হয়। জেন্ডার হচ্ছে নারী ও পুরুষের প্রভেদ। এ প্রভেদ সৃষ্টি করেছে মানুষ। মানুষের কাজকর্মের ক্ষেত্রে মানুষের জৈবিক কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ সীমাবদ্ধতা বা পার্থক্য সৃষ্টি করেছে সমাজ। অর্থাৎ সন্তানধারণ হচ্ছে নারীর সেক্স ভূমিকা আর রান্নাবান্না করা, সন্তান লালন-পালন করা এগুলো নারীর জেন্ডার ভূমিকা। জেন্ডার ধারণায় সামাজিকভাবে নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করা হয়, যা সম্পূর্ণভাবে মানুষের তৈরি। এ ধারণায় নারীকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়। ঘরের বাইরে নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করা হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত জগলুর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, সে তার ছেলের লেখাপড়ার ব্যাপারে খুব সচেতন হলেও মেয়ের লেখাপড়ার প্রতি মোটেও যত্নশীল নয়। সে মনে করে, লেখাপড়া করা ছেলেদের কাজ। আর মেয়েদের কাজ হলো রান্নাবান্না ও ঘর সংসার করা। এ কারণে সে তার মেয়েকে লেখাপড়া না শিখিয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য উদগ্রীব। জগলুর এরূপ মনোভাবে জেন্ডার বৈষম্যের বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ঘ. জেন্ডার বৈষম্যভিত্তিক জগলুর মনোভাব নারীদের দুর্বল করার জন্য দায়ী বলে আমি মনে করি। দৈহিক পার্থক্যের ওপরে ভিত্তি করে সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণে বিভিন্নভাবে নারীদের মেধা ও মননশীলতাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এর ফলে সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীরা এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। এ ধরনের বৈষম্য সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখে। আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুন্নয়নের জন্য লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক বৈষম্য দায়ী। নারীদেরকে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড- নারীদের অংশগ্রহণ নেই বলে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক বৈষম্যের কারণে আমাদের দেশের নারীদের উচ্চশিক্ষায় নিরুৎসাহিত করা হয়। জেন্ডারের ভিত্তিতে সৃষ্ট সামাজিক বৈষম্যের কারণে নারীরা সমাজের সকল স্তরেই উপেক্ষিত হচ্ছে। তাদের মতামতের কোনো মূল্য দেয়া হয় না। জেন্ডারের ভিত্তিতে সৃষ্ট সামাজিক বৈষম্যের কারণে পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রেই নারীরা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হয়। ফলে আমাদের বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দিক দিয়ে এখনও পিছিয়ে রয়েছে, যা সামাজিক অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। পরিশেষে বলা যায় যে, জেন্ডারের ভিত্তিতেই নারী ও পুরুষের। সামাজিকভাবে নির্ধারিত পরিচয়, ভূমিকা, মর্যাদা এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈসাদৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে।

৯. বিজয় কৃষ্ণ একজন ব্রাহ্মণ। হিন্দুধর্মের সকল নিয়ম কানুন তিনি কঠোরভাবে মেনে চলেন। কোনো নীচু বর্ণের হিন্দুদের সাথে খাওয়া-দাওয়া এমনকি মেলামেশা পর্যন্ত করেন না। বিজয় কৃষ্ণের এমন হীন মানসিকতা মেনে নিতে পারে না তার ছেলে গৌরাঙ্গ। সে মনে করে ধর্মের নামে কাউকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। 
ক. ভারতীয় সমাজে কয় ধরনের জাতিবর্ণ প্রথা দেখতে পাওয়া যায়?
খ. দাস প্রথা বলতে কী বোঝ? 
গ. বিজয় কৃষ্ণের মানসিকতায় সামাজিক স্তরবিন্যাসের কোন ধারণাটির পরিচয় পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. গৌরাঙ্গের ধারণা কতটুকু সঠিক বলে তুমি মনে কর? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ভারতীয় সমাজে চার ধরনের জাতিবর্ণ প্রথা দেখা যায়। যথা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।

খ. দাসপ্রথা বলতে এমন এক অসমতার সমাজব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে কিছু লোক সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে অধিকারবিহীন।
দাসপ্রথা পৃথিবীর প্রাচীন শ্রেণি ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। দাসপ্রথার একমাত্র পরিচয় হলো দাসরা তার প্রভু বা মনিবের সম্পত্তি। সামাজিক ক্ষেত্রে দাসরা ঘৃণার পাত্র। দাসপ্রথা ছিল একটি অর্থনৈতিক সম্পর্কনির্ভর সমাজব্যবস্থা। দাসপ্রথায় দাসদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য ছিল না।

গ. বিজয় কৃষ্ণের মানসিকতায় সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতিবর্ণ ধারণাটির পরিচয় পাওয়া যায়।
ভারতীয় সমাজে জাতিবর্ণের যে স্বরূপ দেখা যায় তাতে বোঝা যায়। যে, জাতিবর্ণ একটি আন্তঃগোত্র ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। এ সমাজে চারটি শ্রেণি বা বর্ণ রয়েছে। যথাত ব্রাহ্মণ, ক্ষৈত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। জন্ম থেকেই এ বর্ণগুলো ধর্ম কর্তৃক নির্ধারিত। বর্ণপ্রথায় ব্রহ্মণরাও সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করেন এবং তারা সাধারণত নিচু বর্ণের কারো সাথে সামাজিকভাবে মেলামেশা করেন না।
বিজয় কৃষ্ণ একজন ব্রাহ্মণ। তিনি কঠোরভাবে ধর্মের ক্রমানুযায়ী সর্বোচ্চ ধাপে অবস্থান করছেন। তিনি নীচুবর্ণের হিন্দুর সাথে খাদ্যগ্রহণ তো দূরের কথা, মেলামেশা পর্যন্ত করেন না। তার এরূপ মানসিকতা জাতিবর্ণেন দাম্ভিকতার পরিচায়ক। তিনি নিজে উচ্চবর্ণের হিন্দু বিধায় নীচুবর্ণের হিন্দুদের সাথে মেলামেশা করেন না। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিজয় কৃষ্ণের মানসিকতায় সামাজিক স্তরবিন্যাসের জাতিবর্ণের মানসিকতা প্রস্ফুটিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত গৌরাঙ্গের ধারণাকে বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি সঠিক ও যথার্থ এবং সমর্থনযোগ্য বলে মনে করি।
বর্তমানে নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও উদারনৈতিক আধুনিক শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে জাতিবর্ণের ভিত দুর্বল হয়ে পড়া়ছে এবং যে কোনো জাতিবর্ণের লোক যে কোনো পেশা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। অর্থাৎ বর্তমান আধুনিক বিশ্বে জাতিবর্ণ প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে জাতিবর্ণের দৃঢ় রূপটি তিরোহিত হয়েছে। বিজয় কৃষ্ণ একজন কট্টরপন্থী হিন্দু। তিনি নীচুবর্ণের হিন্দুদের সাথে মেলামেশা করেন না। তার এ কঠোর জাতিভেদনীতি মেনে নিতে পারে না তার ছেলে গৌরাঙ্গ। বর্তমানে প্রগতিশীল এবং উন্নয়ন মুখর বিশ্বে আধুনিকতা এবং শিক্ষার ছোঁয়ার জাতিবর্ণ প্রথা তিরোহিত হওয়ায় গৌরাঙ্গের মানসিকতায় এসেছে নতুন ধ্যানধারণা। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমি মনে করি, গৌরাঙ্গের ধারণা সঠিক ও যুক্তিসংগত।

১০. 'ক' দেশের সরকার দেশটিতে সর্বজনীন রাষ্ট্রীয় অবসর ভাতা চালু, সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে শিশুদের চাকরিতে নিয়োগ নিষিদ্ধ এবং গণমাধ্যমগুলো প্রবীণদের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরছে। এছাড়া ম্যাগাজিনগুলোতে প্রবীণদের পছন্দের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লেখাও প্রকাশিত করছে।
ক. কোন আন্তর্জাতিক সংগঠন শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে?
খ. বয়স বৈষম্যবাদ বলতে কী বোঝায়?
গ. 'ক' দেশে বয়স বৈষম্যবাদ সম্পর্কিত কোন কোন মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. বয়স বৈষম্যবাদ সম্পর্কিত উক্ত মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যতীত আরও কোনো মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে কি? সুচিন্তিত মতামত দাও।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জাতিসংঘ শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

খ. বয়স বৈষম্যবাদ বলতে কেবল বয়সের কারণে কোনো বয়স গোষ্ঠী বা তার কোনো সদস্যের প্রতি নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা বা মনোভাবপোষণ ও বৈষম্যমূলক আচরণ করাকে বুঝায়। বয়স বিদ্বেষী ব্যক্তি বা সমাজ প্রবীণদেরকে জৈবিক ও সামাজিকভাবে অযোগ্য বলে মনে করে। তাদেরকে বিচ্ছিন্ন, নির্ভরশীল, আবেগীয় দিক থেকে অস্থিতিশীল এবং দুর্বলচিত্তের অধিকারী বলে গণ্য করে। আর এ ধরনের মনোভাব থেকেই প্রবীণদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ তৈরি হয়।

গ. 'ক' দেশে বয়স বৈষম্যবাদ সম্পর্কিত যেসব মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে তাহলো ক্রিয়াবাদ এবং উত্তর আধুনিকতাবাদ।
ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে বয়সের স্তরবিন্যাসকে আধুনিকায়নের ভিত্তিতে দেখা হয়। যেমন- শিশুদের চাকরি ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা এবং সর্বজনীন রাষ্ট্রীয় অবসর ভাতা। এক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রত্যয় হলো প্রবীণদের প্রতিকীকরণ। প্রবীণরা এক্ষেত্রে তাদের সামাজিক ভূমিকা ত্যাগ করে যাতে তরুণরা সেই স্থান পূরণ করতে পারে। এই ধারার প্রবক্ততা হলেন, ট্যালকট পারসন্স, আইজেস্যাড, হান্ট প্রমুখ অন্যতম। আবার উত্তর আধুনিকতাবাদের মতে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র এবং একটি ধ্বংসাত্মক সমাজে বয়সকে একটি খন্ডিত ও নানারকম শ্রেণি হিসেবে তৈরি করেছে। এন্ড বন্ডকি যুক্তি দেন যে, ভোক্তা সংস্কৃতি পরবর্তনশীল গদবাঁধা ধারণার জন্য দায়ী। বাণিজ্যিক ম্যাগাজিনসমূহে এমন অনেক কিছু লেখা হচ্ছে যেখানে অবসরের আনন্দ ও তার সঙ্গে জড়িত পছন্দসমূহকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো প্রবীণদের একটি বৃহত্তর অংশের ক্রয় ক্ষমতাকে চিহ্নিত করেছে। বন্ডকি যুক্তি দেন যে, মানুষের অসংখ্য স্বকীয়তা আছে এবং সেই পরিচয় বয়স দ্বারা নির্ধারিত হবার চেয়ে বরং পছন্দ করে নেবার বিষয়।
উদ্দীপকে উল্লেখিত 'ক' দেশের সরকার সর্বজনীন রাষ্ট্রীয় অবসর ভাতা চালু করেছে এবং চাকরিতে শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও গণমাধ্যমগুলো প্রবীণদের ইতিবাচক দিকগুলো বেশি তুলে ধরছে এবং ম্যাগাজিনগুলোতে প্রবীণদের পছন্দের বিষয় প্রকাশিত হচ্ছে- যেগুলো ক্রিয়াবাদ ও উত্তর আধুনিকতাবাদের সাথে জড়িত।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ক্রিয়াবাদ ও উত্তর আধুনিকতাবাদ বয়স বৈষম্য সম্পর্কিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটো মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি।

ঘ. হ্যাঁ, বয়স বৈষম্যবাদ সম্পর্কিত ক্রিয়াবাদ এবং উত্তর আধুনিকতাবাদ মতবাদ ব্যতীত মার্কসবাদ ও ওয়েবারীয় তত্ত্ব নামে আরও দুটি মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
মার্কসবাদ অনুসারে, শিশু সুবিধা এবং রাষ্ট্রীয় অবসরভাতাকে সমাজে শক্তিশালী আইন প্রণেতারূপে শাসক শ্রেণি নিজেদের অবস্থানকে বৈধ করার জন্য ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে কল্যাণ কর্মসূচি আদর্শিক রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের অংশ। সুতরাং পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা যখন অবহেলিত মানুষকে সাহায্য করে, সেটাও প্রকৃত সাহায্য নয়। মার্ক্সবাদীরা এটাও বিশ্বাস করে যে এটি আদর্শিক রাষ্ট্রীয় যন্ত্রপাতির অংশ তথা সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণের এবং পুঁজিবাদী সমাজের ন্যায্যতা প্রতিপাদনের একটি পথ।
ওয়েবারীয় মতবাদ অনুযায়ী প্রবীণরাও অবসর সমাজে মর্যাদা ও ক্ষমতা হারানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত। বয়স হলো অসমতার একটি উৎস। এই অসমতা অর্থনৈতিক তো বটেই, সাংস্কৃতিকও। মানসিক স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হলো প্রবীণদের প্রতি সমাজের মানুষের মনোভাবের উন্নতি ঘটানো।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বয়স বৈষম্য সম্পর্কিত চারটি মতবাদের মধ্যে মাকসীয় ও ওয়েবারীয় তত্ত্ব দুটোর মাধ্যমে বয়স বৈষম্যকে অনেক সুন্দরভাবে বুঝা যায়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post