HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৯

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ বিভিন্ন সমস্যা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আসছে। এর মধ্যে কিছু সমস্যা ও প্রশ্নের ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী দিতে পারেনি। ফলে তাঁরা সৃষ্টির শুরু থেকেই এক মহা-শক্তির কাছে মাথানত করে এবং নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে তাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করে। যার মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষগুলো তাদের দুর্বোধ্য প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে ফেরে। মানুষের এই ধরনের অতি প্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের আছে একটি সাধারণ নাম।
ক. 'Authority' শব্দের অর্থ কী?
খ. সামাজিক অসমতা বলতে কী বোঝ? বুঝিয়ে লেখো। 
গ. উদ্দীপকে কোন সর্বজনীন প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মানব সৃষ্টির শুরু থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'Authority' শব্দের অর্থ কর্তৃত্ব/ কর্তৃপক্ষ।

খ. সমাজস্থ কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীর মধ্যে সাম্যের অভাবই সামাজিক অসমতা। অসমতা বলতে মূলত সমতার অভাবকে বোঝায়। মানুষের পদমর্যাদা, ক্ষমতা, সম্পদ, সুযোগ প্রভৃতির ভিত্তিতে সামাজিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট অসম ও অনাকাঙি্ক্ষত পার্থক্যই হলো সামাজিক অসমতা। মানবসমাজ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা বৈচিত্র্যময় বিষয়ের ভিত্তিতে বিভাজিত। মানবসমাজের এ বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভাজন সমাজজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়।

গ. উদ্দীপকে ধর্ম নামক সর্বজনীন প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মানবসমাজে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Religion' যার অর্থ বন্ধন বা সংহতি। ধর্মের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, ধর্ম হলো এমন একটি ধারণা যা কোনো একটি বিশেষ শক্তিধর সত্তায় বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে অভিন্ন ধারণা পোষণকারীদের ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ করে রাখে। নৃবিজ্ঞানী জেমস ফ্রেজার বলেন, ‘‘ধর্ম হচ্ছে অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস। আর এ শক্তি মানবজীবন ও প্রকৃতির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।" সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার বলেন, ‘‘ধর্ম কেবল মানুষের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে তা নয়, ধর্ম মানুষ ও অন্য কোনো উর্ধ্ব শক্তির মধ্যে সম্পর্কের সৃষ্টি করে।’’ মানব সমাজের বিভিন্ন পাঠে বিভিন্ন স্থানে ধর্মের বিচিত্র রূপ লক্ষ করা যায়। প্রাচীনকাল হতেই মানুষ কোনো শক্তির ওপর ভয় ও বিশ্বাস স্থাপন করে মনস্তাত্ত্বিক পরিতৃপ্তির সাথে ধর্মীয় কর্মকান্ড সম্পাদন করে আসছে। বিপদ আপদ হতে মুক্তি পাবার আশায় মানুষ প্রার্থনা করছে। আর এ প্রার্থনাকে কেন্দ্র করে ইহজাগতিক মুক্তির লক্ষ্যে নির্মিত সংস্কৃতি থেকেই ধর্মের উৎপত্তি।
উপরের আলোচনা ও ধর্মের সংজ্ঞা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকে ধর্ম নামক সর্বজনীন প্রতিষ্ঠানকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ঘ. মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই উক্ত প্রতিষ্ঠান তথা ধর্ম; সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেত আমি এ উক্তির সাথে একমত।
ধর্মের একটি সামাজিক দিক রয়েছে। সামাজিক সংহতি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে ধর্ম তার সামাজিক ভূমিকা পালন করে থাকে। ব্যক্তি মানুষের আচার-আচরণ এবং সমাজজীবনের ধারা ধর্মীয় অনুশাসনের দ্বারা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন প্রভাব সামাজিক ব্যক্তিবর্গের পারিবারিক ও গোষ্ঠীজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে। বিশেষ করে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনধারার ওপর ধর্মীয় অনুশাসনের প্রভাব অপরিসীম। ধর্ম মানুষকে নীতিবান করে তুলে এবং সামাজিক বিধি-নিষেধ মেনে চলতে উৎসাহিত করে। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে পারে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মানুষের আচার-ব্যবহার স্বভাবতই সংযত হয়ে পড়া়। ধর্ম বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মনে উদয় হয় ভয় মিশ্রিত এক শ্রদ্ধা-ভক্তির মনোভাব। এই মনোভাবের ভিত্তিতে ব্যক্তি মানুষ তার বাহ্যিক আচার-আচরণকে সংযত ও নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়। সমগ্র সমাজকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ধর্মের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় অনুশাসনের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সমাজজীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায় যে, মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আর এ কারণেই আমি প্রশ্নোল্লিখিত উক্তির সাথে সহমত পোষণ করি।

২. মঙ্গোলরা যুগ যুগ ধরে মধ্য এশিয়ার বিসত্মীর্ণ স্তেপ ভূমিতে ঘুরে বেড়াতো। ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে চেঙ্গিস খান মঙ্গোলদের একত্রিত করে স্বাধীন মোঙ্গল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন অন্যান্য রাজ্য নতুন এ সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল। চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তার সন্তানরা ১৩৬৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখেন। 
ক. সংস্কৃতি কী? 
খ. সামাজিক পরিবর্তনশীলতা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো। 
গ. কোন উপাদান থাকার কারণে চেঙ্গিস খান মোঙ্গল সাম্রাজ্য গঠন করতে পেরেছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মোঙ্গল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের পিছনে জ্ঞাতিসম্পর্কের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মানবসৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি।

খ. সামাজিক পরিবর্তনশীলতা বলতে সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনকে বোঝায়।
আমরা জানি, সমাজ সবসময় পরিবর্তনশীল। এ কারণে আদিম। সমাজের সাথে বর্তমান সমাজের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সামাজিক পরিবর্তনশীলতার ক্ষেত্রে সামাজিক সম্পর্ক প্রধান ভূমিকা পালন করে।

গ. সার্বভৌমত্ব নামক উপাদান থাকার কারণে চেঙ্গিস খান মোঙ্গল সাম্রাজ্য গঠন করতে পেরেছিলেন। 
সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি রাষ্ট্রের চরম, চূড়ান্ত ও অসীম ক্ষমতা। এ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরে সব ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর কর্তৃত্ব করে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র সবাইকে তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বাধ্য করতে পারে। এটি এমন এক উপাদান যা রাষ্ট্রকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংঘ থেকে আলাদা করে। এটি রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ। সার্বভৌমত্বের দুটি দিক রয়েছে; অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দিক। অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার নিয়ন্ত্রণাধীন এবং বাহ্যিক ক্ষমতাবলে সার্বভৌমত্ব দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
উদ্দীপকে দেখতে পাই, ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে চেঙ্গিস খান মোঙ্গলদের একত্রিত করে স্বাধীন মোঙ্গল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন অন্যান্য রাজ্য ও নতুন এ সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল। কারণ মোঙ্গল রাজ্য ছিল সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। এ ক্ষমতার কারণেই তারা রাজ্যের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে একে রক্ষা করতে পেরেছিল। তাই বলা যায়, সার্বভৌমত্ব উপাদান থাকার কারণেই চেঙ্গিস খান মোঙ্গল সাম্রাজ্য গঠন করতে পেরেছিলেন।

ঘ. মোঙ্গল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের পেছনে জ্ঞাতিসম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ সাম্রাজ্য সংকটে পড়লেও জ্ঞাতিসম্পর্কের ভূমিকার কারণে তা রক্ষা পায়।
পরিবার ও সামাজিক জীবনে মানুষ প্রতিনিয়ত নানাবিধ সংকটে পড়ে। যেমন- আর্থিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, অসুস্থতা, মৃত্যু ইত্যাদি। এসব সংকটের সময় জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসে। এসব সংকটে জাতিগোষ্ঠীর সাহায্য সহযোগিতার বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায় না। আর্থিক সংকটে অর্থ সম্পদ দিয়ে সাহায্য করা, রাজনৈতিক সংকটে। ভোট কিংবা বুদ্ধি দিয়ে অথবা অন্য কোনো সহযোগিতার মাধ্যমে, রোগব্যধিতে সেবাযত্ন করে, জ্ঞাতিজনের মৃত্যুতে সমবেদনা ও সান্তবনাদানে এগিয়ে আসা একটি সর্বজনীন সামাজিক রীতি।
উদ্দীপকে দেখতে পাই, চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত। সাম্রাজ্য সংকটে পড়লেও সন্তানরা ১৩৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোজাল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখেন। অর্থাৎ চেঙ্গিস খানের সন্তানদের মোঙ্গল সাম্রাজ্য স্থায়িত্ব লাভ করে। এর মধ্য দিয়ে মূলত জ্ঞাতিসম্পর্কের ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়েছে।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, মোঙ্গল সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের পিছনে জ্ঞাতিসম্পৰ&কই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

৩. আসিফ মনে করে, ধর্ম হলো ক্ষমতাশালীদের একটি হাতিয়ার এবং ধর্ম সমাজে কোনো ভূমিকা রাখে না। অন্যদিকে, তনিমা যথেষ্ট ধার্মিক এবং তার ধারণা হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবর্তনে ধর্মের ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। 
ক. জাতিবর্ণ কোন ধরনের ব্যবস্থা? 
খ. বাংলাদেশের সমাজে প্রবীণ প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবর্তনে ভূমিকা রাখে। তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? মতের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জাতিবর্ণ একটি বদ্ধ ব্যবস্থা।

খ. সাধারণত প্রবীণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচার-আচরণের কারণ হলো-- তাদেরকে অনুৎপাদনশীল, অক্ষম, দুর্বল ও ব্যধিগ্রস্ত মনে করা।
বাংলাদেশের সমাজে প্রবীণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বেশকিছু কারণ রয়েছে। যেমন- চিন্তা-চেতনায় সেকেলে, প্রবীণরা আজ আছেন- কাল নেই, তাই তাদের জন্য আর কি করার আছে- এমন মনোভাব পোষণ করা; তাদের থেকে আর কিছুই পাবার নেই, তারা কেবলই বোঝা এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণ ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে তা হলো। ধর্ম। আর ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিটি ধর্মেরই সর্বজনীন আবেদন থাকে যা মানুষকে ন্যায়ের পথে এগিয়ে যেতে এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকতে উৎসাহ জোগায়। পৃথিবীতে প্রচলিত প্রায় সব ধর্মেই ইহজগতে সৎকর্মের মাধ্যমে পরজগতে অনন্ত সুখের ধারণা দেওয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে অসৎ কর্মের শাস্তিও বর্ণিত রয়েছে। ফলে পরজগতে সুখের প্রত্যাশা ও শাস্তির ভয় মানুষকে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চল নির্বিশেষে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. উদ্দীপকের বর্ণিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ধর্ম সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবর্তনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। আমি এ বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত। 
পরিবার বর্ধিত হওয়ার ধারায় যখন বৃহত্তর সমাজের সৃষ্টি হয়, তখন আত্মীয়তার বন্ধন দুর্বল হতে থাকে এবং ধর্মীয় বন্ধন বেশি গুরুত্ব পায়। ধর্ম তখন সামাজিক সংগঠনের ভিত্তিতে পরিণত হয়। রাজনৈতিক সমাজের মৌলিক বিষয় আদেশ ও মান্যতা দুটোই ধর্মের মাধ্যমে জোরদার হয়। ফলে ধর্ম তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়।
মানুষের আচার-আচরণ ধর্মীয় বিধি-নিষেধ দ্বারা প্রভাবিত হয়। যখন মানুষের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক শিথিল হয় তখন ধর্ম রক্তের বন্ধনের ভূমিকা গ্রহণ করে। শক্তিশালী কোনো কালজয়ী পুরুষের নামে পূজা-অর্চণা ও স্রষ্টার প্রতি গভীর বিশ্বাসবোধ একই প্রকার ধর্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। মোটকথা ধর্মীয় নেতা তখন সমাজের নেতা হিসেবে গণ্য হন। রাজা তখন হন পুরোহিত রাজা। তার নির্দেশই ধর্মীয় নির্দেশ হিসেবে পালিত হয়। ধর্মচর্চা ও ধর্মগুরুর বিধানাবলি রাষ্ট্রের অবকাঠামো গড়ে় তোলে। এভাবেই ধর্ম রাষ্ট্রের বিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
উপরের আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবর্তনে ধর্মের ভূমিকা মোটেই তুচ্ছ করার মতো নয়; বরং এক্ষেত্রে ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪. মি. সোহেল চৌধুরী উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তা করেন না। তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে অফিসিয়াল ও ব্যক্তি জীবনের সকল দায়িত্ব পালন করেন এবং সহকর্মীদেরও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন। ব্যক্তিজীবনে মি. সোহেল চৌধুরী নিজে সৎভাবে জীবনযাপন করেন। এজন্যে তিনি সকলের কাছে নীতিবান ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত।
ক. জাতিবর্ণ প্রথা কী?
খ. সম্পত্তি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের মি. সোহেল চৌধুরীর মধ্যে যে মানবিক গুণের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সমাজজীবনে উক্ত গুণটির প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বংশানুক্রমকে ভিত্তি করে সমাজে যে শ্রেণি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে জাতিবর্ণ প্রথা বলে

খ. সম্পত্তি হলো এমন বিষয় বা বস্তু যার উপযোগিতা রয়েছে এবং যার ওপর সমাজ কর্তৃক মানুষের অধিকার স্বীকৃত।
সম্পত্তি শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন বস্তুকে সম্পত্তি বলা হয়। যেমন- জমি জমা, ঘরবাড়ি ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, সম্পত্তি বলতে দ্রব্য বা বস্তুকে ব্যবহার করার অধিকারকে বোঝায়। সব মিলিয়ে বলা চলে, সম্পত্তি বলতে কোনো বিশেষ বস্তুর ওপর সমাজস্বীকৃত চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারকে বোঝায়, যার ফলে ব্যক্তি ঐ সম্পত্তিকে যথেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। এ অধিকার বলে ব্যক্তি তার সম্পত্তি ভোগ, দান, বন্ধক বা বিক্রি করতে পারে।

গ. উদ্দীপকের মি. সোহেল চৌধুরীর মধ্যে নৈতিক গুণের প্রতিফলন ঘটেছে।
নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম অনুভূতি। এটি ভালো ও মন্দের মধ্যকার ইচ্ছা, সিদ্ধান্ত ও কর্মগত বিভাজন। নির্দিষ্ট দর্শন, ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুযায়ী নৈতিক বিধানই নৈতিক ব্যবস্থা। সাধারণ অর্থে নৈতিকতা বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট জনগণ বা সংস্কৃতির মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল কোনো কিছুর সত্যিকার ভালো বা মন্দের অবস্থা। বিস্তারিতভাবে বলা যায়, নৈতিকতা ব্যক্তিগত বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, আচারবিধি বা সামাজিক লোকরীতি। যার মধ্যে এ গুণ রয়েছে সে বা তারা ভালো এবং মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে।
উদ্দীপকের মি. সোহেল চৌধুরী উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। ঘুষ, দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি তা করেন না। বরং তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে তার অফিসিয়াল ও ব্যক্তি জীবনের সব দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সহকর্মীদেরও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। সোহেল চৌধুরীর পক্ষে এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তার নৈতিক গুণের কারণে। তাই বলা যায়, মি. সোহেল চৌধুরীর মধ্যে নৈতিক গুণের প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. সমাজজীবনে উক্ত গুণটি অর্থাৎ নৈতিকতার প্রভাব অপরিসীম। সামাজিক কল্যাণার্থে নৈতিকতার উদ্ভব ঘটে। এটি ব্যক্তি এবং সমাজকে ভালো ও সঠিক পথে পরিচালিত করে। যেসব কারণে মানুষের জীবনে হতাশা ও অধঃপতনের সৃষ্টি হয়, নৈতিকতা সেসব থেকে মানুষকে দূরে রাখে। তাই নৈতিকতা মানুষের জীবনকে প্রতিটি পর্যায়ে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। এ গুনটি ব্যক্তির চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। ব্যক্তি কী ধরনের চরিত্রের অধিকারী হবেন, তা নির্ভর করে তিনি কোন ধরনের নৈতিকতার অধিকারী তার ওপর। সর্বোপরি নৈতিকতা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে ভূমিকা পালন করে থাকে।
উদ্দীপকের মি. সোহেল একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুষ নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যা তার উন্নত নৈতিকতার পরিচয় বহন করে। বস্তুত নৈতিক আদর্শ ছাড়া ব্যক্তিগত ও মানবিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না। সামাজিক দুর্নীতি প্রতিরোধেও নৈতিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া গোষ্ঠীর কল্যাণমূলক কাজেও এ শিক্ষা অন্যতম বাহন হিসেবে কাজ করে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনকে কলুষতামুক্ত করার জন্য নৈতিকতা চর্চার কোনো বিকল্প নেই।

৫. বিশাল বিশাল কলকারখানার জাফর সাহেব সমাজের উন্নয়নেও ভূমিকা পালন করেন। গ্রামে নিজের জমিতে তিনি বিদ্যালয় ও চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করেছেন। এক একটি কলকারখানা থেকে তার মুনাফা দিয়ে তিনি নতুন নতুন ব্যবসা বাণিজ্য চালু করেন। গ্রামের শিক্ষিত তরুণদের তিনি চাকরি দিয়ে সহায়তা করেন। তার সাধারণ জীবনযাপন মানুষকে আকৃষ্ট করে।
ক. রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?
খ. বৈধ ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন সমাজের সম্পত্তির উল্লেখ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. রাষ্ট্রের উপাদান চারটি।

খ. ক্ষমতার সাথে কর্তৃত্ব যুক্ত হলেই বৈধ ক্ষমতার উৎপত্তি ঘটে। সাধারণত ক্ষমতা হলো অধস্তনদের দিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য, অন্যদিকে কর্তৃত্ব হলো সেই কাজটি করিয়ে নেওয়ার আইনগত অধিকার। কর্তৃত্বও এক প্রকার ক্ষমতা। তবে এ ক্ষমতার সাথে বৈধতার বিষয়টিও জড়িত। অর্থাৎ ক্ষমতা যখন আইন ও সমাজস্বীকৃত পন্থায় ব্যবহার ও প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে বৈধ ক্ষমতা বলে।

গ. উদ্দীপকে শিল্প সমাজের সম্পত্তির উল্লেখ করা হয়েছে। শিল্প সমাজকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সমাজ। উদ্দীপকে মূলত ধনতান্ত্রিক সমাজের কথা বলা হয়েছে। এ সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির পূর্ণ বিকাশ হয়েছে। ধনতন্ত্র ও ব্যক্তিগত মালিকানা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাণিজ্যিক ধনতন্ত্রে বাণিজ্যের মাধ্যমে যে পুঁজি সঞ্চয় হয় তা ব্যবহৃত হয় শিল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। পুঁজি বিনিয়োগের ফলে গড়ে ওঠে বড় বড় শিল্পকারখানা। এ পর্যায়ে পুঁজিপতিরা নগদ অর্থ লগ্নি ও অর্থ নিয়ন্ত্রণ করে মুনাফা অর্জনের অবাধ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।
উদ্দীপকের জাফর সাহেব বড় বড় কলকারখানার মালিক। তিনি এই কলকারখানার মুনাফা দিয়ে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করেন। জাফর সাহেবের এই সম্পত্তি ও মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে আরো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লগ্নিকরণ শিল্প সমাজকেই ইঙ্গিত করে। কারণ জাফর সাহেবের এমন ভূমিকা উপরে উল্লিখিত শিল্প সমাজের আলোচনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে শিল্প সমাজের সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে।

ঘ. সামাজিক কল্যাণার্থে নৈতিকতার উদ্ভব ঘটে। এমন নৈতিকতা পরিলক্ষিত হয় উদ্দীপকের জাফর সাহেবের কর্মকান্ড-। সুতরাং সামাজিক কল্যাণ ও নৈতিকতা গভীরভাবে সম্পর্কিত।
নৈতিকতা সবসময় ভালো কিছুর সন্ধান দেয়। নৈতিকতা চায় সামাজিক সংহতি, সহনশীলতা ও সম্প্রীতি। এটি ব্যক্তি এবং সমাজকে সর্বদা ভালো পথে পরিচালিত করে। নৈতিকতার একটি অন্যতম দিক কল্যাণমূলক কাজ করা। নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে অর্থাৎ নৈতিক চেতনার ফলে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ দিকগুলো পর্যবেক্ষণ করে এবং মন্দের প্রতিকারে সর্বদা আত্মনিয়োগ করতে ব্যাকুল থাকে। কারণ এটি এমন এক শিক্ষা যা ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব এড়াতে দেয় না। তার নিজের ভেতর লুক্কায়িত মানবিক দিকগুলোকে সজাগ রাখে। ফলে সে দায়িত্ব কর্তব্য থেকে দূরে থাকতে চাইলেও সেটি আর সম্ভব হয় না। এজন্য সে নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই সামাজিক কল্যাণে এগিয়ে আসে। যেমনটি উদ্দীপকের জাফর সাহেবের ক্ষেত্রে দেখা যায়। উদ্দীপকের জাফর সাহেব সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিজের জমিতে বিদ্যালয় ও চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করেছেন এবং গ্রামের শিক্ষিত তরুণদের চাকরি দিয়ে সহায়তা করেন। জাফর সাহেবের পক্ষে এমন সামাজিক কল্যাণ সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র নৈতিক গুণের ফলে। তাই বলা যায়, নৈতিকতা ও সামাজিক কল্যাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
 
৬. জনাব কলিম উদ্দিন একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। ব্যবসার উন্নয়ন তার মূল ভাবনা। তিনি পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার পক্ষে। কেননা তিনি মনে করেন অন্যান্য অর্থব্যবস্থা যেমন- মিশ্র অর্থব্যবস্থা, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার চেয়ে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ব্যবসার জন্য বেশি অনুকূল। এতে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। 
ক. রুশোর মতে, প্রকৃতির রাজ্য কেমন ছিল? 
খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কী বোঝায়?
গ. জনাব কলিম উদ্দিন কেন পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার পক্ষে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার চেয়ে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ব্যবসার জন্য বেশী অনুকূল।' তুমি কি এ কথার সাথে একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. রুশোর মতে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল অনাবিল সুখ শান্তিতে পরিপূর্ণ।

খ. সমাজের উঁচু-নিচু বিভিন্ন শ্রেণি বা মর্যাদার মানুষকে বোঝাতে সমাজবিজ্ঞানে যে প্রত্যয়টি গৃহীত হয়েছে তা সামাজিক স্তরবিন্যাস হিসেবে পরিচিত।
সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে মর্যাদা, শ্রেণি ও অন্যান্য আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী পিতিরিম এ. সরোকিন বলেন সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো একটি নির্দিষ্ট জনসমষ্টির ওপর চাপিয়ে দেয়া মানুষের উঁচু-নিচু ভেদাভেদ। অর্থাৎ, সমাজের বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে সমাজের মানুষের সাথে মানুষের যে পার্থক্য, তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস।

গ. উদ্দীপকের জনাব কলিম উদ্দিন বিশেষ কিছু কারণের জন্যই পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার পক্ষে। আমরা জানি, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে এবং পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে যে কেউ উদ্যোক্তা হতে পারে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছাশক্তি দ্বারা নির্ধারিত হয়। উদ্যোক্তার প্রধান লক্ষ্য থাকে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। এ ব্যবস্থায় ভোক্তা তার রুচি, ইচ্ছা ও চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী ভোগ করতে পারে। অর্থাৎ, ভোক্তার ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। এ ব্যবস্থায় উৎপাদকদের মধ্যে নতুন কলাকৌশল, মুনাফা বৃদ্ধি, কম খরচে উৎপাদন ও কম মূল্যে ভোক্তাদের কাছে দ্রব্য সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকে। মূলত এ সমস্ত কারণেই উদ্দীপকের কলিম উদ্দিন পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার পক্ষে।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, বর্তমান সময় পুঁজিবাদী একটি জনপ্রিয় অর্থব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার নেতিবাচক কিছু দিক থাকলেও এর ইতিবাচক দিকটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই উদ্দীপকের কলিম উদ্দিন এই অর্থব্যবস্থাকে সমর্থন করেন।

ঘ. সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার চেয়ে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ব্যবসার জন্য বেশি অনুকূল- এ কথার সাথে আমি একমত পোষণ করি। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় অর্থব্যবস্থা এবং লাভজনক অর্থব্যবস্থা। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ব্যবসার জন্য বেশি অনুকূল হওয়ার পিছনে কতগুলো কারণ বিদ্যমান। যেমনত পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে ফলে সম্পদ অপচয়ের সম্ভাবনা কম থাকে। এ ব্যবস্থায় পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে যে কেউ উদ্যোক্তা হতে পারে। ফলে এখান থেকে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। এ অর্থব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছাশক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, ফলে এখানে লাভ লোকসান ব্যক্তি নিজেই ভোগ করে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে অধিক লাভবান হওয়া যার কারণে পুঁজিপতিরা অধিক পণ্য কম মূল্যে উৎপাদনের চেষ্টা করে। পুঁজিপতিরা সব সময়ই বাজার ধরে রাখার জন্য গুণগত পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করে এবং এর ফলে বেশি পণ্য বিক্রি হয়, যা তাদেরকে আর্থিকভাবে লাভবান করে তোলে। তাছাড়া এ ব্যবস্থায় পুঁজিপতিরা কম মূল্যে শ্রমিক ব্যবহার করতে পারে, যা তাদের ব্যবসার জন্য অনুকূল। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন পদ্ধতি ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হয়। এ ব্যবস্থার নিয়ম হলো প্রত্যেকে তার সাধ্য অনুযায়ী কাজ করবে এবং কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে। যেহেতু এ ব্যবস্থা যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয় সেহেতু এখান থেকে বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত উল্লিখিত দুই অর্থব্যবস্থার বিচার-বিশ্লেষণ করেই আমি পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার পক্ষে।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, ব্যবসার জন্য সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার চেয়ে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাই বেশি অনুকূল।

৭. মাহমুদ সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা। একদিন একটি প্রভাবশালী মহল তাদের একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য তাকে ঘুষ দিতে চায়। কিন্তু মাহমুদ সাহেব তাদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং তিনি তাদের বোঝান, যোগ্যতা থাকলে কাজ পেতে ঘুষ দেওয়া লাগে না। 
ক. 'Ageism' শব্দের অর্থ কী? 
খ. পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে মাহমুদ সাহেবের মধ্যে যে গুণটির উপস্থিতি লক্ষ করা যায় তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. 'সমাজজীবনকে কলুষতামুক্ত করতে উক্ত বিষয়ের বিকল্প নেই' - তুমি কি এই বক্তব্যের সাথে একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও। 

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'Ageism' শব্দের অর্থ হলো বয়স বৈষম্যবাদ।

খ. পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ বলতে বোঝায়, শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করা। শিশুর গোসল করানো, খাওয়ানো, পরিচর্যা, আদর-যত্ন সর্বোপরি তাকে স্নেহের পরশে লালন-পালনের কাজটি মূলত মনস্তাত্ত্বিক। এসব কাজ শিশুর প্রতি স্নেহ, আদর, ভালোবাসা ও আবেগের কারণেই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। আধুনিক সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে পারিবারিক অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব দেন। বস্তুত পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা শিশুর ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব গঠনে যত্নবান থাকেন। শুধু শৈশব কালে নয়, কৈশোরে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। আর এসবই হচ্ছে পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ।

গ. মাহমুদ সাহেবের মধ্যে নৈতিকতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম অনুভূতি। নৈতিকতা ভালো ও মন্দের মধ্যকার ইচ্ছা, সিদ্ধান্ত ও কর্মগত বিভাজন। নির্দিষ্ট দর্শন, ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুযায়ী নৈতিক বিধানই নৈতিক ব্যবস্থা। সাধারণ অর্থে নৈতিকতা বলতে বুঝায় কোনো নির্দিষ্ট জনগণ বা সংস্কৃতির মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল কোনো কিছুর সত্যিকার ভালো বা মন্দের অবস্থা। বিস্তারিতভাবে বলা যায়, নৈতিকতা ব্যক্তিগত বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, আচারবিধি বা সামাজিক লোকরীতি। যার মধ্যে নৈতিকতা নামক গুণ রয়েছে সে। বা তারা ভালো এবং মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে। মাহমুদ সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও প্রভাবশালী মহলের প্রলোভনে কোনো অবৈধ কাজ করেননি। মাহমুদ সাহেব তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বোঝান যোগ্যতা থাকলে কাজ পাইয়ে দেওয়া লাগে না। যা কিনা তার নৈতিকতার পরিচয় বহন করে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মাহমুদ সাহেবের মধ্যে নৈতিকতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, যা মানব চরিত্রের অন্যতম ইতিবাচক গুণ।

ঘ. সমাজজীবনকে কলুষতামুক্ত করতে উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত বিষয় তথা নৈতিকতার বিকল্প নেই - আমি এই বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত।
সামাজিক কল্যাণার্থেই নৈতিকতার উদ্ভব ঘটে থাকে। নৈতিকতা সর্বদা ভালো কিছুর সন্ধান দেয়। এটি ব্যক্তি এবং সমাজকে ভালো পথে পরিচালিত করে। যেসব কারণে মানুষের জীবনে হতাশা ও অধঃপতন সৃষ্টি হয় সেসব কারণ ও কাজ থেকে মানুষকে দূরে রাখে। তাই নৈতিকতা মানুষের জীবনকে প্রতিটি পর্যায়ে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। নৈতিকতা ব্যক্তির চরিত্র গঠনে সহায়তা করে থাকে। ব্যক্তি কী ধরনের চরিত্রের অধিকারী হবেন, তা নির্ভর করে তিনি কোন ধরনের নৈতিকতার অধিকারী তার ওপর। সর্বোপরি নৈতিকতা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে ভূমিকা পালন করে থাকে।
উদ্দীপকের মাহমুদ সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঘুষ নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। যা কি না তার উন্নত নৈতিকতার পরিচয় বহন করে। বস্তুত নৈতিক আদর্শ ছাড়া ব্যক্তিগত ও মানবিক উন্নয়ন সম্ভবপর হয় না। সামাজিক দুর্নীতি প্রতিরোধেও নৈতিক শিক্ষা গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া গোষ্ঠীর কল্যাণমূলক কাজেও নৈতিক শিক্ষা অন্যতম বাহন হিসেবে কাজ করে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়,ব্যক্তি জীবন, গোষ্ঠী জীবন, সমাজ জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনকে কলুষতামুক্ত করার জন্য নৈতিকতা চর্চার কোনো বিকল্প নেই। আর এ কারণেই আমি প্রশ্নে উল্লিখিত বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করি।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

৮. পাঁচশত বছর পূর্বের একটি জনপদে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সম্পদের স্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে শুরু হয় তাদের নিজেদের মধ্যে হানাহানি। আবার অনেক সময় ভিন্ন জনপদের লোকও তাদের ওপর আক্রমণ করত। এসব সমস্যা মীমাংসার জন্য জনপদবাসী সংগঠিত হয়ে সামাজিক নিয়ম তৈরি করে কিছু লোকের নিকট তাদের নিয়ন্ত্রণভার তুলে দেয়। 
ক. কৃষি সমাজের উদ্বৃত্ত ফসল কীসের সূচনা করে? 
খ. কর্তৃত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনপদের জনগোষ্ঠীর উদ্যোগ রাষ্ট্রের উৎপত্তির কোন তত্ত্বের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সামাজিক নিয়ম তৈরির পূর্বে উদ্দীপকের জনপদটি কি রাষ্ট্র ছিল? এ সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কৃষি সমাজের উদ্বৃত্ত ফসল সভ্যতার সূচনা করে।

খ. ক্ষমতার প্রত্যাশিত ও বৈধ প্রভুত্বকারিকে কর্তৃত্ব বলে। সংজ্ঞায় প্রত্যাশিত কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে নীতি বা রাজনৈতিক ফর্মূলা অনুযায়ী কর্তৃত্ব যার বা যাদের ওপর ন্যস্ত করা উচিত এই অর্থে। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার কর্তৃত্বের সংজ্ঞা প্রদানে, বলেন, 'কর্তৃত্ব প্রায়শই ক্ষমতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়, যে ক্ষমতা অন্যকে মেনে চলতে বাধ্য করে। তবে কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োগই শেষ কথা নয়, বরং ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার যখন স্বীকৃতি লাভ করে তখনই প্রকৃত কর্তৃত্বের উদ্ভব সম্ভব হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনপদের জনগোষ্ঠীর উদ্যোগ রাষ্ট্রের উৎপত্তির সামাজিক চুক্তি তত্ত্বের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সামাজিক চুক্তি মতবাদ অনুযায়ী জনসাধারণের মধ্যকার চুক্তি, আইনসম্মত চুক্তিপত্ৰ-অথবা মতৈক্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র জন্ম হয়েছে। এ বিষয়ে যেমন প্লেটো, এরিস্টটলের মতামত জানা যায়, তেমনি আধুনিককালে হবস, লক, রুশো এর জোরালো সমর্থক। তাদের মতানুসারে রাষ্ট্র জন্মের পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত। কিন্তু প্রকৃতির রাজ্যের অবস্থা সমেত্মাষজনক না হওয়ায় মানুষ তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত পাঁচশত বছর পূর্বের একটি জনপদে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সম্পদের স্বল্পতা দেখা দেয়। এর ফলে নিজেদের মধ্যে হানাহানি সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ভিন্ন জনপদের লোক এদের ওপর আক্রমণ করত। তাই এসব সমস্যা মীমাংসার জন্য জনপদবাসী সংগঠিত হয়ে সামাজিক নিয়ম তৈরি করে কিছু লোকের নিকট তাদের নিয়ন্ত্রণভার তুলে দেয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে রাষ্ট্রের উৎপত্তির সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. না, সামাজিক নিয়ম তৈরির পূর্বে উদ্দীপকের জনপদটি রাষ্ট্র ছিল না। এ সম্পর্কে আমার মতামত তুলে ধরা হলো আমরা জানি রাষ্ট্র গঠনের জন্য চারটি উপাদান অপরিহার্য। যথাত জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূ-খ-, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব।
উদ্দীপকে উল্লিখিত জনপদটির নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড ও জনসংখ্যা থাকলেও সরকার ও সার্বভৌম ক্ষমতা ছিল না। তাই জনপদটিকে রাষ্ট্র বলা যায় না। সরকার হচ্ছে রাষ্ট্রের বাহক। সরকার রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও নীতি প্রণয়ন করে রাষ্ট্রের সকল ক্রিয়াকর্ম পরিচালন করে। এক কথায় সরকার হলো রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। আর সার্বভৌমত্ব হলো সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত আইনানুগ কর্তৃত্ব। এটা এমন এক অবিভাজ্য নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব যার দ্বারা অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বহিঃশত্রুর হস্তক্ষেপ থেকে দেশকে রক্ষার চূড়ান্ত ক্ষমতা। সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো সংগঠনই রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় না। উদ্দীপকের জনপদটির সরকার ছিল না। কারণ জনপদটি পরিচালনার জন্য কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। ফলে প্রায়ই সেখানে হানাহানি লেগে থাকত। এছাড়া জনপদটি প্রায়। বহিঃশক্তির দ্বারা আক্রান্ত হতো। সার্বভৌম ক্ষমতার অভাবে মূলত ১ এরূপ হয়েছে। সার্বভৌম ক্ষমতা থাকলে সরকার অবশ্যই ঙ বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে জনগণকে রক্ষা করত।
পরিশেষে বলা যায়, সরকার এবং সার্বভৌম ক্ষমতার অভাবে উদ্দীপকের জনপদটি সামাজিক নিয়ম তৈরির আগে রাষ্ট্র ছিল না।

৯. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষকে যেমন ভালবাসতেন, তেমনি বাংলার জনগণের অন্তরেও ছিল তার জন্য অসামান্য ভালবাসা। তাঁর আবেগ, বাগ্মীতা, তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, এগিয়ে যাবার মানসিকতা ইত্যাদি সাধারণ মানুষকে অতি সহজেই বিমোহিত করতো। তাঁর নেতৃত্বের ওপর আস্থা রেখেই বাংলার জনগণ তাঁর ডাকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। 
ক. সামাজিক বিবর্তনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা কে ছিলেন? 
খ. আদর্শ নমুনা কী? বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত নেতার ভূমিকা ম্যাক্স ওয়েবারের আলোচিত কোন ধরনের কর্তৃত্বকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত কর্তৃতব মানবসমাজ পরিবর্তনের যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষমত বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক বিবর্তনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা ইংরেজ সমাজবিজ্ঞানী হার্বাট স্পেন্সার।

খ. ম্যাক্স ওয়েবারের সমাজ বিশ্লেষণের পদ্ধতি হলো আদর্শ নমুনা। কোনো সামাজিক প্রপঞ্চ বা ঐতিহাসিক সত্তাকে জানতে হলে, বিশ্লেষণ করতে হলে তার আদর্শ নমুনা তৈরি করতে হবে। আর এ নমুনা তৈরির জন্য বিজ্ঞানীকে অন্তর্দৃষ্টির আশ্রয় নিতে হবে। একটি প্রপঞ্চকে সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও যৌক্তিকতাকে আদর্শ ধরে নিয়ে অন্য প্রপঞ্চকে তার সাথে মিল বা অমিলের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। ম্যাক্স ওয়েবারের আদর্শ নমুনা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির প্রবর্তন। তিনি আমলাতন্ত্রকে আদর্শ নমুনার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করেছেন।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত নেতার ভূমিকা ম্যাক্স ওয়েবার প্রদত্ত ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বকে নির্দেশ করে।
ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব ব্যক্তির দুর্লভ প্রতিভা, মেধাশক্তি ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের গুণাবলি দ্বারা অর্জিত হয়। ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব ব্যক্তির আবেগ-আপ্লুত মনোভঙ্গি, বীরতব ও স্মরণীয় চারিত্রিক দৃঢ়তার ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রচলিত ধারণায় এটি বিধাতা প্রদত্ত বলে মেনে নেওয়া হয়। সততা, সৎসাহস, বাকশক্তি ইত্যাদি দ্বারা ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব লাভ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আবেগ, বাগ্মীতা, তড়িৎ সিন্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, এগিয়ে যাবার মানসিকতা ইত্যাদির মাধ্যমে সমস্ত বাংলার মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছিলেন, যার ফলে তার ডাকে সমস্ত বাংলার মানুষ যুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া়ছিল। আর এটি সম্ভব হয়েছিল তার ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বের কারণেই। উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, উদ্দীপকের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কর্তৃত্ব রয়েছে। রহমানের মধ্যে ম্যাক্স ওয়েবার বর্ণিত ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্তৃতব অর্থাৎ ঐনদ্রজালিক কর্তৃত্ব মানবসমাজ পরিবর্তনে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষম বক্তব্যটি যৌক্তিক।
বিশ্ব ইতিহাসে অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র ব্যক্তির গুণাবলির মাধ্যমে মানবসমাজ পরিবর্তন হয়েছে। আমেরিকার দিকে তাকালে দেখা যায়, আব্রাহাম লিংকন তার ব্যক্তিগত গুণাবলির মাধ্যমে আমেরিকার দাস প্রথা বিলুপ্ত করেছিলেন, যা তার সম্মোহনী কর্তৃত্ব বা ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বের ফলেই সম্ভব হয়েছিল। আবার আফ্রিকার দিকে তাকালে দেখা যায়, নেলসন ম্যান্ডেলা তার ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ববলে দেশ থেকে বর্ণ প্রথা উচ্ছেদ করেছিলেন। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বের অধিকারী। তার ডাকে সমস্ত বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল। আর এটি সম্ভব হয়েছিল তার গুণাবলির স কারণেই। সর্বোপরি আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সা.. তাঁর ম মহান গুণাবলির মাধ্যমে মানবসমাজে ব্যাপক পরিবর্তন বা এনেছিলেন। তার আবির্ভাবের পূর্বে সমস্ত আরববাসীরা ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। সেখান থেকে তিনি তাদেরকে আলোর পথে স নিয়ে এসেছিলেন শুধুমাত্র তাঁর ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব বলে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বের মাধ্যমে মানবসমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

১০. মনির ও ছগির দুই ভাই। মনির শিক্ষিত হলেও ছগির লেখাপড়া করতে পারেননি। মনিরের ছেলেমেয়েরা সবাই শিক্ষিত হয়ে বাবা-মাকে শ্রদ্ধা এবং দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন। অন্যদিকে ছগিরের সন্তানরা সবাই অশিক্ষিত তাই তাদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতার অভাব থাকায় পিতা-মাতার প্রতি বিরূপ আচরণ করে থাকে। 
ক. ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণার পূর্ণ বিকাশ ঘটে কোন সমাজে? 
খ. ‘সার্বভৌমত্ব হল সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত আইনানুগ কর্তৃত্ব’ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে মনিরের সন্তানদের মধ্যে কোন বিষয়টির উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে মনে কর? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. নীতি-নৈতিকতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ছগিরের সন্তানদের মধ্যে উদ্দীপকের উক্ত বিষয়টির অভাবই মুখ্য- তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণার পূর্ণ বিকাশ ঘটে শিল্প সমাজে।

খ. সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত আইনানুগ কর্তৃত্ব। সার্বভৌমত্ব এমন এক অবিভাজ্য নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব যার দ্বারা অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বহিঃশত্রুর হস্তক্ষেপ থেকে দেশকে রক্ষার চূড়ান্ত ক্ষমতা জন্ম নেয়। সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো সংগঠনই রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না। যেমন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনসংখ্যা এবং সরকার আছে; কিন্তু সার্বভৌমত্ব নেই বিধায় এটি রাষ্ট্র নয়। অন্যদিকে সার্বভৌমত্ব আছে বলেই বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র।

গ. উদ্দীপকের মনিরের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি। কেননা শিক্ষার উদ্দেশ্যসমূহ মনিরের সন্তানদের মধ্যে নিহিত। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের নৈতিক, মানবিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে মানবিক সৎ গুণাবলির বিকাশ সাধন এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জন ও বিকাশে সহায়তা করে। শিক্ষা সকল মানুষের প্রতি সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতাবোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। শিক্ষার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সমাজসচেতনতা সৃষ্টি এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিন্তা ও মননে দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করা হয় শিক্ষার মাধ্যমে। এটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে। তাই বলা যায়, মনিরের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার উদ্দেশ্যসমূহ নিহিত রয়েছে। এ কারণে তারা মা বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের দেখাশোনা করে।

ঘ. ‘নীতি-নৈতিকতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ছগিরের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার অভাবই মুখ্য।' আমি এ বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণরূপে একমত। শিক্ষার সর্বজনীন ভূমিকা সর্বব্যাপী। অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে সভ্যতাকে ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করাই শিক্ষার আসল কাজ। এছাড়া শিক্ষার কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিশ্রমের অভ্যাস, আত্ম-শৃঙ্খলা, সততা সৃষ্টি, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং উপকারধর্মী কাজে অংশগ্রহণের অভ্যাস সৃষ্টি করা। সেবা ও সহযোগিতার মনোভাব এবং স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তব জীবনের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাঙ্গনকে সম্পর্কিত করা প্রয়োজন। আমাদের এমন ধরনের শিক্ষা অর্জন করতে হবে যার মূল জাতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মধ্যে নিহিত রয়েছে। দেশ ও জাতির সেবা করার ইচ্ছা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের উপলব্ধি ও আন্তর্জাতিক সমঝোতার সৃষ্টি করা শিক্ষার উদ্দেশ্য। অনেক শিক্ষাবিদগণ মনে করেন, শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য হবে ব্যক্তির নৈতিক মান উন্নত করা বা আদর্শ চরিত্র গঠন করা। তাই শিক্ষার মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জন এবং মানবীয় গুণাবলির বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়। এজন্যে মানুষের ভেতর মানবীয় গুণাবলির বিকাশ না ঘটলে তাকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
উপরে উল্লিখিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, নীতি-নৈতিকতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ছগিরের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার অভাবই মুখ্য।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post