এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
প্রাথমিক আলোচনাঃ
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়
বাঙালি জাতির জীবনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক বৈষম্য দূরীকরণে তথা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হলেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এর ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে না দিয়ে বিভিন্ন কূটকৌশল অনুসরণ করেন। ফলে বাঙালি জাতি স্বায়ত্বশাসন থেকে ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতার দিকে ঝুকে পড়ে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের দীর্ঘদিনের লাঞ্চনা-বঞ্চনা, নির্যাতন নিপীড়ণের থেকে মুক্তির মহামাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে।
কেবল তাই নয়, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, দাবি আদায়ের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে একটি স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধের ময়দানে হাজির হয়। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেখা দেয় সেই বহু আকাঙ্খিত মহামুক্তি। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের চেতনার ইতিহাস রচনার বীজ বপন হয় সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। যেখানে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছিল রক্তের বিনিময়ে হলেও তারা তাদের দাবি আদায় থেকে পিছপা হবে না। বাঙালি জাতি তাদের আন্দোলন সংগ্রামের মূলমন্ত্র খুঁজে পায় ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফার ভিত্তিতে। আবার ছাত্ররাও সুনির্দিষ্ট এগারো দফার ভিত্তিতে আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকে।
আইয়ূব খান সরকার আগরতলা মামলার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে নেতৃত্ব শূণ্য করার অপচেষ্টা চালালে তা বাঙালিদেরকে বারূদের মত বিস্ফোরিত করে এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চরমভাবে উত্তেজিত করে। বাঙালিরা বুঝতে পেরেছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার যেকোন মূল্যেই হোক দমন করতে চাচ্ছে এবং তা বাস্তবায়িত হলে বাঙালিদেরকে আরো কিছুদিন শাসনের নামে শোষণ করা যাবে।
ফলে বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামির মুক্তির দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে আইয়ূব খান সরকারের পতন ঘটায় এবং বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামী মুক্তি পায়। এভাবে বাঙালির অনুপ্রেরণা এবং সাহস দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনকে ঘিরে তারা নতুন দিনের সোনালী সূর্যের আশায় দিন গুনতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানে জনগণ এতই জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে তারা নির্বাচনে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এর বিশাল বিজয় এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির ভরাডুবিতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ভীষণভাবে শঙ্কিত হয়। এজন্য ক্ষমতা হস্তান্তর নানা প্রতারনার আশ্রয় নেয়। বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেন্দ্রিয় সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
৭ মার্চের ভাষণ
১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হলেও তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে গড়িমসি করায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ২ ও ৩ মার্চে সারা দেশে হরতাল পালিত হয় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। যা ছিল বাঙালি জাতির জন্য দিকনির্দেশনা মূলক একটি ভাষণ।
এই ভাষণে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহবান জানান। তিনি অকুণ্ঠচিত্তে ঘোষণা করেন- --- ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’’।
এই ভাষণ বাঙালি জাতির মনে চরমভাবে আশার সঞ্চারিত করে। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ৮ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, যানবাহন, শিল্প কারখানা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা বেগতিক দেখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার কথা বলে কালক্ষেপণ করার বন্দোবস্ত করেন। যাতে করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রয়োজনীয় রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র পূর্ব পাকিস্তানে আনা যায়। তবে অন্তরে যাই থাক প্রকাশ্যে ইয়াহিয়া এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেন ১৬ মার্চ।
২৫ মার্চের গণহত্যা
আলোচনা কালেই ২৩ মার্চ ‘পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে’ পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ানো হয়। রাগে-ক্ষোভে ২৫ মার্চ কোন ঘোষণা না দিয়েই ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। তার নির্দেশেই বাঙালির আন্দোলন চিরতরে দমন করতে ঐদিন রাতেই ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এই কাপুরুষোচিত অতর্কিত হামলাকে তারা নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এই অপারেশনের দায়িত্বে এবং পরিকল্পনায় ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের নবনিযুক্ত গভর্ণর টিক্কা খান এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। ২৫ মার্চ মধ্যরাতেই ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার খবরাখবর পেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই সংবাদ দ্রুত পৌঁছে যায় নেতৃবৃন্দের কাছে। এরপর ২৭ মার্চ তারিখে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালিন মেজর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী গঠন এবং চূড়ান্ত বিজয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশ হিসেবে ভারতের ভূমিকা অপরিসীম এবং অনস্বীকার্য ছিল। ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী গঠিত হলে যুদ্ধের মোড় দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী ৩ ডিসেম্বর ভারত আক্রমণ করার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কাড়ার অপচেষ্টা চালায়। এদেশীয় মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীকে যৌথ কমান্ডের অধীনে আনা হয়।
বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশীয় মিত্র আল বদর, আল শামস প্রভৃতি বাহিনীর সহযোগিতায় আরেক দফা গণহত্যা চালায়। যেখানে বাঙালিদের মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা চালানো হয় এবং হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর তারিখে তারা ব্যাপকভাবে শিক্ষিত শ্রেণি তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বনামধন্য অধ্যাপকদের হত্যা করে।
কিন্তু ঐদিনই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী ঢাকার খুব নিকটে পৌঁছে গেলে হানাদার বাহিনী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর অধিনায়ক লেফট্যান্যান্ট জেনারেল নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ রেসকোর্স ময়দানে তথা বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ বাহিনীর নিকট নিঃশর্ত আত্মসমর্থন করে। ফলে লাখো শহীদের রক্ত, হাজারো মা বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিশ্বের বুকে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতা প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দাস প্রথা বিলোপ এবং গণতন্ত্রের নবজাগরণের উদ্দেশ্যে গ্যাটিসবার্গ নামক স্থানে এক যুগান্তকারী ভাষণ প্রদান করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে 'গ্যাটিসবার্গ এড্রেস' নামে খ্যাত। তার এ ভাষণের ব্যাপ্তি ছিল মাত্র তিন মিনিট। ভাষণে তিনি গণতন্ত্র, শোষিত মানুষের মুক্তি ও অধিকারের কথা বলেছেন। পৃথিবীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং দাস প্রথা বিলোপে এটি একটি মাইলফলক।
ক. লাহোর প্রস্তাব কত সালে পেশ করা হয়?
খ. দ্বিজাতি তত্ত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের সাথে বাংলাদেশের কোন মহান নেতার ভাষণের সামঞ্জস্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় উভয় নেতার ভাষণ তাৎপর্যপূর্ণ হলেও বাংলার মহান নেতার ভাষণ ছিল আরও দিক নির্দেশনামূলক ও চেতনায় উদ্দীপ্ত বিশ্লেষণ কর।
❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. লাহোর প্রস্তাব ১৯৪০ সালে পেশ করা হয়।
খ. হিন্দু ও মুসলিম দুটি আলাদা জাতি- কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উত্থাপিত এ তত্ত্বই দ্বি-জাতি তত্ত্ব নামে পরিচিত।
১৯৪০ সালের ২২-২৩ মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের ২৭তম অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন। এ তত্ত্বের মূলকথা হলো হিন্দু-মুসলিম আলাদা জাতি। তাদের ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক রীতি-প্রথা এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পূর্ণ আলাদা। সুতরাং সাম্প্রদায়িক জটিলতা নিরসনে ভারতের দুই প্রধান সম্প্রদায়ের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন অপরিহার্য বলে তিনি মনে করেন। এ মতামতই ছি জাতিতত্ত্ব নামে পরিচিতি।
গ. উদ্দীপকের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের তুলনা করা যায়।
১৮৬৩ সালে আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একটি মূল্যবান ভাষণ প্রদান করেন। তাঁর ভাষণের দৈর্ঘ্য মাত্র তিন মিনিট হলেও ঐ ভাষণটি আজও ইতিহাস হয়ে আছে। তার এ ভাষণটি ছিল গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। ঠিক একইভাবে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল বাঙালির ইতিহাসে একটি তাৎপর্যবহুল ঘটনা। এ ভাষণটি ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধের অনুপ্রেরণা। এ ভাষণের পরপরই জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এ ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে তৃতীয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়। কিন্তু পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে। এর ফলে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহসাকি ভাষণ প্রদান করেন। এ ভাষণে তিনি চলমান সামরিক আইন প্রত্যাহার ও সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। এছাড়াও তিনি এ ভাষণে গণহত্যার তদন্ত এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেন। এ ভাষণে তিনি পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঐতিহাসিক এ ভাষণে তিনি বলেছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। আর বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের এ ভাষণেরই প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে আব্রাহাম লিংকনের ভাষণে।
ঘ. প্রেসিডেন্ট লিংকনের ভাষণের মতো বাংলাদেশের উত্ত মহান নেতা অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটিও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হলেও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অধিক নির্দেশনামূলক ও চেতনায় উদ্দীপ্ত- উদ্ভিটি যথার্থ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল অব্রাহাম লিংকনের ভাষণটির মতোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৬৩ সালের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ৩ মিনিটের ভাষণ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উভয়ই ইতিহাসের মূল্যবান দলিল লিংকনের কন্ঠে ধ্বনিত হলো গণতন্ত্র সম্বন্ধে তার বিখ্যাত উক্তি, ‘This Government of the people, by the people and for the people will never perish from the earth’ আর বঙ্গবন্ধু বললেন, 'সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না'। ৭ মার্চের এ ৭টি শব্দ বাঙালিকে দুর্বার করে তুলেছিল।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। একটি ভাষণ একটি জাতিকে কতটা উদ্দীপ্ত করতে পারে তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। অনেকে এই ভাষণকে বাংলাদেশের জন্মের প্রাক্কালে সাধারণ জনগণের সাথে তাদের অবিসংবাদিত নেতার সংলাপ হিসেবে আখ্যা দেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি বিশ্বের অন্যতম সেরা ভাষণগুলোর একটি বলে বিবেচনা করা হয়। এর মাধ্যমে বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যস্ত হয়। যদিও বঙ্গবন্ধু এ ভাষণে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তারপরও মুক্তিপাগল বাঙালি এই ভাষণের মধ্যে স্বাধীনতার সবুজ সংকেত দেখতে পান। তিনি স্বার্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। তার এ ঘোষণা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে। পরবর্তীতে বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধে এ ভাষণটি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।
পরিশেষে বলা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে যে অসহযোগ আন্দোলনের বিস্তার ঘটেছিল, তা থেকেই আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সূচনা হয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আর এদিক থেকেই আব্রাহাম লিংকনের চেয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অধিক নির্দেশনামূলক ও গুরুত্ববহ।
২. ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা রেল ব্রিজের পাশে একটি গণকবর আছে। এটি সম্পর্কে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, 'কোদাল দিয়ে মাটি খুড়তেই বের হয়ে আসল মানুষের হাড়-গোড় আর পঁচা লাশ। পাশাপাশি দুইটা বিশাল গর্ত। আনুমানিক তিন চারণ মানুষের মরদেহ এখানে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। এগুলো স্বাধীনতা সংগ্রামী ও নিরপরাধ মানুষের সমাধি। হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার আল বদরদের হাতে তারা শহিদ হয়েছেন'।
ক. ছয়দফা কর্মসূচি কে পেশ করেন?
খ. ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য আমাদের কোন সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের আলোকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতন ও গণহত্যার বিবরণ দাও।
❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা কর্মসূচি পেশ করেন।
খ. ১৯৮৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে যে মামলা দায়ের করা হয় তাই আগরতলা মামলা নামে পরিচিত।
আগরতলা মামলাটি দায়ের করা হয় ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলাতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠক হয়। সেখানে ভারতের সহায়তায় সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য মামলাটির নাম হয় আগরতলা মামলা।
গ. উদ্দীপকের প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য আমাদেরকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের ২৩ বছরের দ্বৈরশাসন ও শোষণের বেড়াজাল ভেঙ্গে বংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের এ যুদ্ধে বাঙালি জাতিকে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে স্বাধীনতা। উদ্দীপকে এ সময়ের চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা রেল ব্রিজের পাশে একটি গণকবর আছে। এটি সম্পর্কে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়তেই বের হয়ে আসল মানুষের হাড়-গোড় আর পঁচা লাশ। প্রত্যক্ষদর্শীর এ বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের কথা মনে করিয়ে দেয়। জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় কিছু চিহ্নিত দল বা ব্যক্তি ছাড়া দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক এবং আপামর জনতা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তি সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করে দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের অপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। তারা নির্বিচারে সাধারণ জনগণকে হত্যা করে উদ্দীপকের প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যেও এ সময়কার হানাদার বাহিনীর নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের প্রতিচ্ছবিই ফুটে উঠেছে।
ঘ. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিকামী বাঙালি জাতির ওপর অমানবিক নির্যাতন ও গণহত্যা পরিচালনা করে।
উদ্দীপকের প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাক-হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালিদের ওপর চালানো গণহত্যা ও নির্যাতনের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। বাঙালি জাতির নয় মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এদেশের আপামর জনসাধারণের উপর গণহত্যা ও অমানবিক নির্যাতন চালায়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালিদের বিজয় লাভের পূর্ব পর্যন্ত পাক-হানাদার বহিনী বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনী বাংলার ঘুমন্ত, নিরন্ত, নিরীহ জনগণের ওপর গণহত্যা চালায়। এর মাধ্যমে শুরু আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মার্চ থেকে শুরু করে দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলে এ যুদ্ধ। এ সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সাধারণ বাঙালিদের ওপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। তাদের এ সকল অপকর্মে তাদেরকে সার্বিকভাবে সহায়তা করে এদেশের কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল। তারা নিজেদের রাজাকার বাহিনী, আল-বদর, আল-শামস সহ বিভিন্ন নাম দিয়ে সংগঠিত করে এবং পাক বাহিনীকে বাঙালিদের বিরুদ্ধে নানাভাবে সহয়তা দান করে। তাদের সহয়তায় পাক বাহিনী আরও হিংস্র হয়ে ওঠে। পাক-বাহিনী হত্যা, লুণ্ঠন, মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। তারা এদেশের মা-বোনদের সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়ার মত জঘন্য কাজ থেকেও বিরত থাকেনি। মুক্তিবাহিনীর উপর্যুপরি আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাক হানাদার বাহিনী তাদের দোসর রাজাকারদের সহায়তায় ১৪ ডিসেম্বর আরেক দফা বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দেওয়ার জন্য তারা ঐ দিন এদেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের বাঙালিদের ওপর পাক-বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন ও গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসে এক নির্মম অধ্যায় সংযোজন করেছে। অবশেষে বহু নির্যাতন ও ৩০ লক্ষ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে বীর বাঙালি দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাক বাহিনীকে পরাজিত করে নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন করে। বাঙালির এ আত্মত্যাগের চিত্রই উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে।
৩. সীমাহীন বৈষম্য, অত্যাচার ও নিপীড়নের কারণে ভিয়েতনামের দুই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিশাল অসমতা তৈরি হয়। এর ফলে গত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ভিয়েতনামের দুই অংশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে দক্ষিণ ভিয়েতনামের একজন সামরিক কর্মকর্তার নির্দেশে উত্তর ভিয়েতনামের একটি অংশে মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য ও বর্বর হত্যাকান্ড চালানো হয়। এতে বহু নিরাপরাধ ও নিরস্ত্র নারী-পুরুষ এবং শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই জঘন্য হত্যাকান্ডটি তাদেরকে বিশ্ববাসীর ঘৃণার পাত্রে পরিণত করে। অবশেষে একটি চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান হয়।
ক. বাংলাদেশকে কোন দেশ সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে?
খ. মুজিবনগর সরকার কেন গঠিত হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হত্যাকান্ডটি দুই পাকিস্তানের কোন হত্যাকান্ডকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের হত্যাকান্ডের মতো উক্ত হত্যাকান্ডটি মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি খন্ডিত চিত্রমাত্র বিশ্লেষণ করো।
❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সর্বপ্রথম ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সুষ্ঠুভাবে ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে দ্রুত পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকে গতিময় ও সুসংহত করা, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ বাঙালির দেখাশোনা এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত তৈরি করা ছিল মুজিবনগর সরকার গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া মুক্তাঞ্চলে প্রশাসন পরিচালনা করার বিষয়টিও এ সরকার গঠনের পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হত্যাকান্ডটি পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর পরিচালিত হত্যাকান্ডকে নির্দেশ করে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পৃথিবীর ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়। সে সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত, নিরীহ, স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনগণের ওপর হামলা করে এবং নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৫ মার্চ রাতে এ অভিযান পরিচালনা করলেও মূলত মার্চের প্রথম থেকেই তারা এর পরিকল্পনা করে। পাকিস্তানি সামারিক বাহিনী তাদের এ ঘৃণ্য অভিযানের নাম দেয় 'অপারেশন সার্চলাইট'। উদ্দীপকেও এ ধরনের জঘন্য হত্যাকান্ডের প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, সীমাহীন বৈষম্য, অত্যাচার ও নিপীড়নের কারণে ভিয়েতনামের দুই অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিশাল অসমতা তৈরি হয়। ফলে দুই ভিয়েতনামের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধের একপর্যায়ে দক্ষিণ ভিয়েতনামের এক সামরিক কর্মকর্তার নির্দেশে উত্তর ভিয়েতনামের একটি অংশে নিরপরাধ ও নিরস্ত্র নারী-পুরুষ ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঠিক একইভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্য, অত্যাচার ও নিপীড়নের কারণে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিশাল অসমতা সৃষ্টি হয়। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করে। এ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার ভীত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক) সাথে আলোচনার নামে তারা কালক্ষেপণ করে পূর্ব পাকিস্তানে সমর প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে বাঙালির ওপর আক্রমণের নির্দেশ জারি করে ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার নির্দেশ অনুযায়ী রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে পাকবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় এক গণহত্যার তা-বলীলায় মেতে ওঠে। ওই রাতে অসংখ্য নিরস্ত্র নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এ সংখ্যা ৩৫,০০০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দীপকের গণহত্যায়ও বাঙালির এ নির্মম দৃশ্যপট ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকের হত্যাকান্ডের মতো উদ্ভ হত্যাকান্ড অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের ২৫ মার্চের গণহত্যাটি মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি খন্ডচিত্র মাত্র- উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, দক্ষিণ ভিয়েতনাম উত্তর ভিয়েতনামের একটি অংশে মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য ও বর্বর হত্যাকান্ড চালায়। এ হত্যাকান্ডটি ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের একটি চিত্র মাত্র। একইভাবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক-হানাদার বাহিনী পূর্বপাকিস্তানের নিরীহ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর এক ঘৃণ্য হত্যাকান্ড চালায়। এ হত্যাকান্ডটিও ছিল মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি খন্ডিত চিত্র।
২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার পরই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিসেনাদের গেরিলা আক্রমণে জনসমর্থনহীন পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। বর্বর পাকিস্তানিরা এ সময় নিরীহ বেসামরিক জনতার ওপর আক্রমণ করে তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করতে থাকে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে থাকে। ছাত্র-যুবকদের দেখামাত্রই তারা গুলি করে হত্যা করে। সমগ্র বাংলাদেশকে ধ্বংস করার নেশায় পাকবাহিনী মেতে ওঠে। শহর গ্রাম, সমগ্র দেশেই তারা অমানবিক হত্যাকান্ড পরিচালনা করে। যুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস (স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী) প্রভৃতি বাহিনীর সহায়তায় এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন করে এবং অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমহানি ঘটায়। যুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যায়ে যৌথবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাক হানাদার বাহিনী তাদের দোসরদের নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর আরেক দফা বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্যই ঐদিন পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ২৫ মার্চ রাতের হত্যাকান্ডটি ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। কেননা দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকবাহিনী এ দেশের আরও লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে।
৪. ইউরোপীয় রাষ্ট্র যুগোশ্লাভিয়ার বসনিয়া অঞ্চলটি মুসলিম অধ্যুষিত। বিদ্যমান খ্রিস্টান রাজশক্তির কাছে বসনীয় জনগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই শোষিত ও নিগৃহীত হতে থাকে। এতে বসনীয় জনগণ বিক্ষুদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজশক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের ডাক দেয়। ফলে যুগোশ্লাভিয়া সরকার তাদের দমনে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। রাজকীয় সেনাবাহিনী নৃশংসভাবে অসংখ্য নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা করে। বাড়িঘর লুণ্ঠন করে। নারীর ইজ্জত লুটে নেয়। শিশুরাও রেহাই পায় না, তারপরও বসনীয়দের দমাতে পারেনি। তারা তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এখনও সেখানে বসনীয়দের বহু গণকবর আবিষ্কৃত হচ্ছে।
ক. ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ কে?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের বসনীয় জনগণের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একটি সাদৃশ্য ব্যাখ্যাসহ লেখো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত বসনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের আলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিবরণ দাও।
❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ হলেন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান।
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রধান কারণ ছিল পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও বৈষম্য বর্ণনা করার জবাব দেওয়া।
১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন প্রদান করে। এই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তান শাসনের বৈধতা হারায়।
গ. উদ্দীপকের বসনীয় জনগণের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একটি সাদৃশ্য হলো বসনীয় জনগণের মতো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণও কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শোষিত ও বঞ্চিত হয়েছিল।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শাসন, শোষণের শিকার হতে থাকে। তারা সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে থাকে। একইভাবে উদ্দীপকেও আমরা লক্ষ করি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই খ্রিষ্টান রাজশক্তির কাছে বসনীয় জনগণ শোষিত, নিগৃহীত ও বঞ্চিত হতে থাকে।
প্রথম থেকেই বাংলার প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের নীতি ছিল বৈষম্যমূলক। পাকিস্তানের জনসংখ্যার ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও স্বাধিকারের প্রশ্নে ক্রমাগত উপেক্ষিত হতে থাকে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিরাই ছিল প্রকৃত অর্থে শাসনক্ষমতার কর্ণধার। পূর্ব বাংলার জননেতা এ কে ফজলুল হকসহ এ অঞ্চলের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নিষি্ক্রয় করে রাখা হয়। পশ্চিমাদের এ বৈষম্য নীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় বরং সামরিক সামাজিক, শিক্ষাক্ষেত্রসহ প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাদের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। আর পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এরূপ নির্লজ্জ বৈষম্যনীতিই পূর্ব পাকিস্তানের জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। এ বখনার দিকটিই উদ্দীপকের সাথে পূর্ব পাকিস্তানিদের সাদৃশ্য রচনা করেছে।
ঘ. উদ্দীপকের বসনিয়ার মতোই বাংলাদেশও সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে।
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বর্ণনায় অতিষ্ঠ হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবন্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার পর বাঙালিরা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। পাক সরকার বাঙালিদের দমনের জন্য বাংলার অসংখ্য নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা করে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং নারী ও শিশুদের ওপর চালায় নির্যাতন। এতসব অত্যাচারের পরও পাক সরকার বাঙালিদের দমাতে পারেনি। তারা তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়। উদ্দীপকে বসনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামেও এ ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে।
বসনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের ওপর যুগোশ্লাভিয়া সরকার যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে একইভাবে বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তান সরকার। বাঙালির স্বাধীনতার চেতনাকে মুখ করে দিতে তারা নানা অপতৎপরতা চালায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণায় উজ্জীবিত অদম্য বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার শক্তির বিরুদ্ধে দেশের সর্বত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলে। এই যুদ্ধে সারা দেশের আপামর জনগণ অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তান সরকার স্বাধীনতাকামী জনগণকে দমনের জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেও ব্যর্থ হয়। সকল অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পিছু হটতে বাধ্য করে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে হানাদার বাহিনী ১৪ ডিসেম্বর এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে অঙ্কিত হয় বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের চিত্র।
৫. কুমারি নদীর দুই পাড়ে অবস্থিত বসুমতি গ্রাম। নদীর উত্তর পাড়ে গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের বসবাস সত্ত্বেও দক্ষিণ পাড়ের লোকেরা তাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন করতে থাকে। ফলে উত্তর পাড়ের লোকেরা তাদের নেতা শরিফ খানের নেতৃত্বে প্রতিবাদমুখর হতে থাকে। তারা স্বতন্ত্র গ্রাম প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে। দক্ষিণ পাড়ের লোকেরা তাদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালায় এবং তাদের নেতাকে ধরে নিয়ে যায়। নেতার অবর্তমানে তারা গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে। তারা সুষ্ঠু নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনা করে স্বতন্ত্র গ্রাম প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় 'চরমপত্র' কে পাঠ করতেন?
খ. অপারেশন সার্চলাইট বলতে কী বোঝায়?
গ. অনুচ্ছেদটি বাংলাদেশের কোন ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবদান পাঠ্যবইয়ের আলোকে মূল্যায়ন করো।
❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় চরমপত্র পাঠ করতেন এম আর আখতার মুকুল।
খ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালায় তা অপারেশন সার্চলাইট হিসেবে পরিচিত।
এ হত্যাযজ্ঞের নীল নকশা তৈরি করেন মেজর জেনারেল টিক্কা খান, খাদিম হোসেন ও রাও ফরমান আলী প্রমুখ। এ ঘৃণ্য অপারেশনে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকা নগরীকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে। রাতের অন্ধকারে শহরের নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত নাগরিকদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও দেশের অন্যত্রও একইভাবে পাক বাহিনী গণহত্যায় মেতে ওঠে।
গ. অনুচ্ছেদটি বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকার গঠনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
১৯৭১ সালে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা এবং যুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে গঠন করা হয় মুজিবনগর সরকার। এ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে।
পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর পশ্চিমা পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন চরমে পৌঁছলে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যার নাম দেওয়া হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার। এ সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৭ এপ্রিল। এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকারের ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল। এসব বিভাগের মাধ্যমেই যুদ্ধকালে সামরিক ও বেসামরিক যাবতীয় প্রশাসন পরিচালিত হয়। এ সরকার মুক্তিযোদ্যাদের প্রশিক্ষণ, অর্থ সরবরাহ, বিশ্ব জনমত আদায়ের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে।
কুমারি নদীর উত্তর পাড়ের লোকেরা যেভাবে কমিটি গঠন করে তাদের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র গ্রাম প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়, তেমনি ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে বাঙালিরা যুদ্ধ করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।
ঘ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে মুজিবনগর সরকার গঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন- তাজউদ্দিন আহমদ, এম. মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখত যারা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাজউদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এই দূরদর্শী নেতা। চরম প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সামরিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বিষয়াদিসহ সকল দিক সুষ্ঠুভাবে সংগঠিত করে তোলেন এবং তার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাত্র নয় মাসেই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন শক্তিশালী সংগঠক ও পরিচালক।
ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় খাদ্য, বস্ত্র, অস্ত্র, প্রশিক্ষণের অর্থের সংস্থান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত ছিল এবং তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান ছিলেন মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে আশ্রয় নেওয়া লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর জন্য ত্রাণ সংগ্রহ, ত্রাণশিবিরে ত্রাণ বিতরণ এবং পরবর্তী সময়ে শরণার্থীদের পুনর্বাসন ইত্যাদি দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদান অসামান্য। উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্ব-স্ব দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করে মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা বাংলাদেশ নামক একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
৬. প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যকে তালিকায় যুক্ত করে ইউনেস্কো। এবার যোগ হয়েছে ৭৮টি নথি। এগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ একটি। এর অনন্য দিক হলো, ইউনেস্কোর এটাই।প্রথম স্বীকৃত ভাষণ, যা আগে থেকে লিপিবদ্ধ ছিল না।
ক. 'দ্বি-জাতিতত্ত্ব' ঘোষণা করেন কে?
খ. ভাষা আন্দোলন স্মরণীয় কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভাষণের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে উল্লিখিত ভাষণের তাৎপর্য কতটুকু তা মূল্যায়ন কর।
❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. দ্বি-জাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
খ. বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভাষা আন্দোলন স্মরণীয় হয়ে আছে।
ভাষা আন্দোলন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই দিনে বাংলাকে মাতৃভাষা করার দাবিতে বাঙালি জাতি সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিলরত জনগণের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। ফলে রফিক, শফিক, জববারসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। পৃথিবীতে বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই ভাষা আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভাষণের সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ সাদৃশ্যপূর্ণ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের এক মূল্যবান দলিল। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি বিশ্বের অন্যতম সেরা ভাষণগুলোর একটি বলে বিবেচনা করা হয়। সম্প্রতি এ ভাষণটিকে ইউনেস্কো কর্তৃক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। আর এ ভাষণটিই হচ্ছে ইউনেস্কোর প্রথম স্বীকৃত ভাষণ। যেমনটি উদ্দীপকেও লক্ষণীয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটির সুদীর্ঘ পটভূমি বিদ্যমান। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৪ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হতে হয়েছে পূর্ব বাংলার জনগণকে। বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন ধরে এ নিপীড়নমূলক আচরণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করে আসছিল এবং ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে মুক্তির জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে- যা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কেননা ১৯৭০ সালের এ নির্বাচন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জনগণের বিজয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা করে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও ১মার্চ ইয়াহিয়া খান এ অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন অর্ধদিবস হরতাল পালনের ডাক দেওয়া হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার এবং জনগণের দাবি মানা না হলে খাজনা ও ট্যাক্স প্রদানে বিরত থাকার জন্য আহবান জানানো হয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। তবে কর্মসূচি পালনকালে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ রকম পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ প্রদান করেন।
ঘ. স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য অপরিসীম।
৭ মার্চ বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। ৭ মার্চের ভাষণ লক্ষ লক্ষ উপস্থিত অনুপস্থিত শ্রোতার মনে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল। ৭ মার্চের ভাষণ কালোত্তীর্ণ ও যুগোত্তীর্ণ ভাষণ। ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে এর ভূমিকা অপরিসীম। ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ স্মরণীয় দলিল হিসেবে চিরভাম্বর হয়ে থাকবে। এ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে শাশ্বত প্রেরণার এ ভাষণে তিনি শুধু স্বাধীনতার আহবান জানিয়েই ক্ষান্ত উৎস ও প্রতীক। ভাষণ মূলত হননি, তিনি অহিংস পূর্ববাংলার সর্বত্র অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি দেন, যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব পালিত হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে সমগ্র দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। তার নির্দেশনানুযায়ী দেশের স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, কল-কারখানা সব বন্ধ হয়ে যায়। সংগ্রামী জনতা বিভিন্নভাবে সদস্যদেরকে প্রতিহত করতে থাকে। খাজনা-ট্যাক্স পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদেরকে বন্ধ হয়ে যায়। ১০ মার্চ সরকার এক সামরিক আদেশ জারি করে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সর্বস্তরের জনগণ এতে কর্ণপাত না করে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখে। বঙ্গবন্ধুর আদেশ অর্থাৎ ৭ মার্চের ভাষণে শুধু সেনাবাহিনী ছাড়া সর্বত্রই আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২৬ মার্চ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা নির্বিশেষে সকলেই পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
৭. সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও কিছু উগ্রবাদী শত শত বছর ধরে রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম জাতিগত নিপীড়ন শুরু করে। কোন ধরনের স্বাধীনতার ডাক বা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশগ্রহণ না করলেও গণহত্যা, লুটতরাজ ও উচ্ছেদের শিকার এই অসহায় মানুষগুলো সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ আবাস ভূমিতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সাথে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
ক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কোনটি?
খ. 'অপারেশন সার্চলাইট'-এর মাধ্যমে পাকিস্তান আর্মি যুদ্ধের সূচনা করেছিল- ব্যাখ্যা কর।
গ. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শরণার্থী হওয়া ও দুর্দশাপূর্ণ জীবনের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কোন ঘটনার কী সামঞ্জস্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত ঘটনার ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলেও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রত্যাশা ও অর্জন ছিল ভিন্ন ব্যাখ্যা কর।
❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ।
খ. অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানি আর্মি যুদ্ধের সূচনা করেছিল।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর রাজনৈতিক সংকট আরো তীব্র হয়। অন্যদিকে সংকট নিরসনের চেষ্টা না করে ইয়াহিয়া খান আলোচনার নামে কালক্ষেপন করে পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে তিনি টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মোতাবেক টিক্কা খান অপারেশন সার্চলাইট নামে খ্যাত অভিযানের মাধ্যমে ২৫শে মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধের ঘোষণা করে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শরণার্থী হওয়া ও দুর্দশাপূর্ণ জীবনের সাথে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনার সামঞ্জস্য পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে বাঙালি জনগণের ওপর ব্যাপক সামরিক, গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। তাদের এ নৃশংসতা হতে মুক্তি পাবার জন্য লাখ লাখ বাঙালি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। উদ্দীপকেও অনুরূপ ঘটনা লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও কিছু উগ্রবাদী শত শত বছর ধরে রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম জাতিগত নিপীড়ন চালায়। গণহত্যা, লুটতরাজ ও উচ্ছেদের শিকার এই অসহায় মানুষগুলো সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে। অনুরুপভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙালিদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা এদেশের জনগণের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া হাজার হাজার মা বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করে এবং বাড়িঘর লুটপাট করে ধন-সম্পদ হস্তগত করে। তাদের এসকল নারকীয় হত্যাকান্ড ও অত্যাচার হতে মুক্তির জন্য বাংলাদেশের জনগণ পালিয়ে সীমান্তবর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ভারত সরকার বাংলাদেশি শরণার্থীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত সরকার আশ্রয় দেয়। শুধু শরণার্থীদের আশ্রয় ও প্রতিপালন নয়, ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করে এবং বিশ্বে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা প্রচার করে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানায়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাকেই ইঙ্গিত করে।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার ফলশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলেও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রত্যাশা ও অর্জন ভিন্ন ছিল উদ্ভিটি যথার্থ।
দীর্ঘ ২২ বছর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার বাঙালির একমাত্র প্রত্যাশা ছিল স্বাধীনতা। তাই তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণ করে। তারা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল হয় স্বাধীনতা না হয় মৃত্যু। কিন্তু উদ্দীপকে বর্ণিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাশা পূর্ব পাকিস্তানি জনগণের প্রত্যাশা হতে সম্পূর্ণ আলাদা। উদ্দীপকের রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মায়ানমারে ফিরে যাওয়াই একমাত্র প্রত্যাশা। স্বাধীনতা অর্জন তাদের আকাঙ্ক্ষা নয়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠী পশ্চিমা হানাদারদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের সকল জনগণ স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। ভারতে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীরাও সেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারা নিজ দেশে ফিরে আসার পাশাপাশি দেশকে স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। এ লক্ষ্যেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তারা মরণপণ যুদ্ধ করে। এরই ফলশ্রুতিতে ত্রিশ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায়। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা সুস্পষ্ট যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রত্যাশা ও অর্জন উদ্দীপকে উল্লিখিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাশা হতে ভিনণতর।
৮. জনাব 'ক' বলল, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা আমাদের বাঙালি জাতিকে উদ্দীপ্ত করেছে। তবে নির্বাচনী ফলাফল না মেনে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে নানারকম টালবাহানা করার ফলে জনগণ আরও ক্ষুদ্ধ হয়। তবে এদেশের মানুষের একটি অংশ (কতিপয় রাজনৈতিক দল) জন দাবির বিরোধিতা করে। কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করে অবশেষে মুক্তিকামী জনগণের আপোষহীন আখত্যাগের ফলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।
ক. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কোন দল জয়ী হয়েছিল?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলে বাঙালি জাতি কীভাবে নির্বাচন কেন্দ্রিক হয়? ব্যাখ্যা কর।
গ. জনাব 'ক' নানারকম টালবাহানা বলতে কোন ঘটনাবলি নির্দেশ করেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জনাব 'ক' এর সর্বশেষ বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দাও।
❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল।
খ. গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য এবং পাকিস্তানি সরকারের শোষণ হতে মুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বাঙালি জাতি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচনকেন্দ্রিক হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি ব্যালটের মাধ্যমে আস্থা জানিয়ে বাঙালি জাতি পাকিস্তান সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন ও বৈষম্যের জবাব দেয়।
গ. উদ্দীপকে জনাব 'ক' নানারকম টালবাহানা বলতে ১৯৭১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরে জেনারেল ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রমূলক আচরণকে নির্দেশ করা হয়েছে।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি সব দিক থেকে পূর্ব বাংলার জনগণকে বঞ্চিত করে আসছিল। বাঙালিদের ওপর তাদের বৈষম্য নীতি এত প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে, ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করলেও পশ্চিমা শাসক শ্রেণি আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা প্রদান করার ক্ষেত্রে নানা টালবাহানা শুরু করে। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। নিয়মানুযায়ী আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করবে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু শুরু হয় বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার অপতৎপরতা। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী নানা ধরনের টালবাহনা শুরু করে। আর ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিক্ষুদ্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। চারদিকে স্লোগান ধবনিত হতে থাকে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ এভাবে বাঙালি পাক শাসকদের ক্ষমতা হস্তান্তর না করার টালবাহানার। বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ঘ. উদ্দীপকে জনাব 'ক'-এর সর্বশেষ উক্তি অর্থাৎ সকল বাধা অতিক্রম করে মুক্তিকামী জনগণের আপসহীন আত্মত্যাগের ফলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি- বক্তব্যটি সম্পূর্ণ সঠিক।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পাক সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে নানাভাবে বঞ্চিত করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও পাক সরকার আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করে। বাঙালিদের দমিয়ে রাখার জন্য তারা বিভিন্ন হীন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের শত বাধা অতিক্রম করে পূর্ব বাংলার জনগণ তাদের অপরিসীম আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। জনাব 'ক' এর সর্বশেষ উদ্ভিতে, এ কথারই প্রকাশ ঘটেছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও পাক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করার অপতৎপরতায় মেতে ওঠে।
১৯৭১ সালে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করে বাঙালি জাতিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান। আর ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ঢাকায় আসার ঘোষণা দেন। ১৬-২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবের ব্যর্থ আলোচনার পর কোনোরকম সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা ছাড়াই গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। আর ২৫ মার্চের কালরাতে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। আর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে আলবদর, আল শামস, রাজাকার ও শান্তিবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের ঘোরতর বিরোধিতা করলেও বীর বাঙালি তেজোদীপ্ততার সাথে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে অর্জন করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
পরিশেষে বলা যায়, পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তান সরকারের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে আপসহীন আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন।
৯. ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতাকামী নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সাথে ব্রিটিশদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মীরজাফর, ঘসেটি বেগমের মতো বিশ্বাসঘাতকদের নেতৃত্বে বাংলারই কতকগুলো দেশদ্রোহী ব্রিটিশদের সহায়তা করে নবাবসহ বাংলার অসংখ্য মানুষকে হত্যা কর। কিন্তু তারা আজও বাংলার মানুষদের কাছে ঘূণিত ও অভিশপ্ত।
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?
খ. কাদের নিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মীরজাফরদের দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন নামে সক্রিয় ছিল- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'মীরজাফরদের দল ব্রিটিশদের সমর্থন নিয়ে প্রমাণ করে যে, বাংলার মানুষ হলেও তারা বাংলার স্বাধীনতা চায়নি'- উক্তিটির আলোকে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কর্নেল (অব.) এম.এ.জি ওসমানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রধান সেনাপতি ছিলেন।
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। এ সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্র ও কৃষিমন্ত্রী কামরুজ্জামান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
গ. উদ্দীপকে মীর জাফরের দলের মতো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি বিভিন্ন নামে সক্রিয় ছিল- উক্তিটি সঠিক।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের কলকজনক অধ্যায় হলো শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর অপতৎপরতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা। এ সকল বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও দেশবাসীর স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হয়ে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতনসহ সারা দেশে হ্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী বাঙালি ও প্রগতিশীল বাঙালিদের খুঁজে বের করে। তাদের তালিকা করে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতাকামী নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ব্রিটিশদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মীর জাফর, ঘসেটি বেগমের মতো বিশ্বাসঘাতকদের নেতৃত্বে বাংলারই কতিপয় দেশদ্রোহী ব্রিটিশদেরকে সহায়তা করে নবাবসহ বাংলার অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ঠিক একইভাবে রাজাকার, আল বদর, আল শামস প্রভৃতি নামে দালালরা পাকিস্তানিদের সহায়তা করে বাংলার অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে।
ঘ. মীরজাফরের দল ব্রিটিশদের সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করে যে, বাংলার মানুষ হলেও তারা বাংলার স্বাধীনতা চায়নি- উক্তিটি যথার্থ।
মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী সংগঠনের মধ্যে অন্যতম হলো রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শান্তিকমিটি। তারা নির্যাতন, হত্যা অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ইত্যাদি অপরাধকর্মে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল। মীর জাফরের দল ব্রিটিশদের সমর্থন দিয়ে যেমন প্রমাণ করে যে, বাংলার মানুষ হলেও তারা বাংলার স্বাধীনতা চায়নি। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী এ সকল দল পাকিস্তানিদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করে প্রমাণ করে যে তারা বাঙালি হয়েও এদেশের স্বাধীনতা চায়নি।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সহযোগী এদেশীয় ব্যক্তিবর্গ এক কথায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষার নামে ও ধর্মের দোহাই দিয়ে এই স্বাধীনতাবিরোধীরা পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে মিলে হত্যা, লুট, অগ্নিকা-, নারী নির্যাতনসহ সারা দেশে হ্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এ সকল কর্মকান্ডের জন্য তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও পাক বাহিনীর দোসর হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে আল বদর, আল শামস ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোবাদের ধরিয়ে দিত; পাকিস্তানিদেরকে পথঘাট চিনিয়ে দিত। পাকিস্তানি সেনাদের জন্য বিভিন্ন রসদ সংগ্রহ করত এবং বিভিন্ন হাট বাজার ঘরবাড়িতে আগুন লাগাতে সহযোগিতা করত। এরা যদি পাকিস্তানিদের সাহায্য-সহযোগিতা না করত তাহলে বাঙালিদের নয় মাস যুদ্ধ করতে হতো না। আরও অল্প সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারত।
পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৫৭ সালে বাংলার বিশ্বাসঘাতকদের কারণে যেভাবে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল একইভাবে ১৯৭১ সালে বাংলার কতিপয় বিশ্বাসঘাতক স্বার্থান্বেষী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে বিলম্বিত করেছিল।
১০. ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও এককভাবেই তারা সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় আসনে জয় লাভ করে। আওয়ামী লীগের এ জনসমর্থন দেখে রায়হানের বাবা বললেন, পাকিস্তান আমলেও আমাদের এ দলটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিশ্বাসঘাতকতায় আমরা তখন সরকার গঠন করতে পারিনি। তবে এ নির্বাচন আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনার অনুপ্রেরণা দেয়।
ক. ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ নামে পরিচিত ছিলেন কে?
খ. গেরিলা যুদ্ধ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. রায়হানের বাবা অতীতের কোন নির্বাচনের কথা মনে করলেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের নির্বাচনের চেয়ে উক্ত নির্বাচন ছিল অধিক তাৎপর্যপূর্ণ? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বেলুচিস্তানের কসাই নামে পরিচিত ছিলেন টিক্কা খান।
খ. শত্রু বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর যে যুদ্ধকৌশল সেটিই গেরিলাযুদ্ধ নামে পরিচিত।
গেরিলা যুদ্ধে সৈনিকরা অভ্যন্তরীণ রণাঙ্গনে বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে সংগঠিত হয়ে থাকে। এ ধরনের যুদ্ধে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য যোদ্ধারা নানা কৌশলে শত্রুবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলা করার পূর্বপর্যন্ত তারা শত্রু বাহিনীকে নিজেদের অবস্থান টের পেতে দেয় না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে পাকিস্তানিদের বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।
গ. রায়হানের বাবা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা মনে করলেন।
পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ছিল পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত প্রথম স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়নি। উদ্দীপকেও এ নির্বাচনের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে রায়হানের বাবা পাকিস্তান আমলের একটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের কথা বললেন। এর মাধ্যমে তিনি মূলত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা মনে করেছেন। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলে ইয়াহিয়া খান উক্ত পদে আসীন হন। তিনি ২৮ মার্চ এক ঘোষণায় পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও এ নির্বাচন নিয়ে নানা আশঙ্কা ছিল। অবশেষে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৫ কোটি ৬৪ লক্ষ ভোটারের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ৩ কোটি ২২ লক্ষ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। এককভাবে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের গণরায় লাভ করলেও কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সরকার গঠন করতে দেয়নি। তাই বলা যায়, রায়হানের বাবা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথাই স্মরণ করেছেন।
ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকের নির্বাচনের চেয়ে উক্ত নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল অধিক তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের অপরিসীম ভূমিকা ও প্রভাব ছিল। এ নির্বাচনকে পাকিস্তানের পতনঘণ্টা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বার্তাবাহক হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে, উদ্দীপকের ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তৎকালীন প্রেক্ষাপটের আঙ্গিকে সুদূরপ্রসারী কোনো প্রভাব রাখতে পারেনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তান শাসনের বৈধতা হারায়। অপরপক্ষে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি লাভ করে। এ অবস্থায় পশ্চিমা শাসকেরা নির্বাচনি বিজয়কে নস্যাতের চক্রান্ত শুরু করলে বাঙালি জাতি দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় নিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসে নিজেদের স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এর মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পেছনে এই নির্বাচনের অপরিসীম গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মূলত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্যেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বীজ নিহিত ছিল।
উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের চেয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অর্জন ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
0 Comments:
Post a Comment