HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Islamic History and Culture 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

প্রাথমিক আলোচনাঃ

বাংলার ইতিহাস (পাকিস্তানি আমল)
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের প্রথম পদক্ষেপ। দীর্ঘ দু'শো বছর ইংরেজ শাসন ও শোষণের পর ভারত ও পাকিস্তান নামের দু’টি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলা অঞ্চল দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। কলকাতাসহ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ভারতের অধীনে এবং ঢাকাসহ পূর্ব বাংলার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়।

কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রটি বেশি দিন পর্যন্ত অখন্ড থাকতে পারেনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির অধিকার হরণের চেষ্টায় লিপ্ত হয়। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটারের অধিক ভৌগোলিক ব্যবধান নিয়ে সৃষ্ট নতুন রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ভাষী নেতা। সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাদের কোন সহানুভূতি ছিল না। তারা শুধু এ দেশকে শোষণ করতে চেয়েছিল। পাকিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬.৪০% মুখের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘিষ্ট মাত্র ৩.২৭% জনগোষ্ঠীর ভাষা উর্দুকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। জনসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য এ অঞ্চলের জনমনে প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি করে।

ফলে শুলুথেকেই স্বাধিকারের প্রশ্নে এই অঞ্চলের জনগণকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। সূচিত হয় ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৮ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে উর্দু ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রথমেই প্রতিবাদ মুখর হলো বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজ। তারা এই অন্যায় বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়। এভাবেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত। সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে উঠে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে ভাষার জন্য প্রথম শহীদ হলেন সালাম, বরকত, রফিক, জববারসহ অনেকে। রক্তের বিনিময়ে পূর্ববাংলা অর্জন করে ভাষার অধিকার। তথাপি পূর্বাঞ্চলের প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি।

ফলে পূর্ববাংলায় আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করে। এরই পথ ধরে দানা বাঁধে ছয় দফা ও এগার দফার আন্দোলন। পরিণতিতে সংঘটিত হয় ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যূত্থান। পাকিস্তানি শাসনযন্ত্রের হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র পূর্বপাকিস্তানিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

অর্থনৈতিক বৈষম্য: পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যনীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়তে থাকে। অন্যদিকে, পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হতে থাকে। উদাহারস্বরুপ: ১৯৫৫-৫৬ অর্থবছর থেকে ১৯৫৯-৬০ অর্থবছরে পূর্ব পাকিস্তান লাভ করেছিল ১১৩ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অন্যদিকে, এর বিপরীতে পশ্চিম পাকিস্তান পেয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা।

একইভাবে ১৯৬০-৬১ সাল থেকে ১৯৬৪-৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান লাভ করে ৬,৪৮০ মিলিয়ন টাকা। অন্যদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা ছিল ২২,২৩০ মিলিয়ন টাকা। ফলে শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষিসহ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে কয়েকগুণ পিছিয়ে পড়ে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য: পাকিস্তান সৃষ্টির আগে পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় এগিয়ে ছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে শিক্ষা খাতে পূর্ব পাকিস্তানের থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে দ্বিগুনেরও বেশি বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হতো। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও পূর্ব পাকিস্তান ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়তে শুরু করে।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য: পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীতে বাঙালিদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য বিরজ করেছিল। মোট অফিসারের মধ্যে নৌবাহিনীর উচ্চপদে ১৯%, নিম্নপদে ৯%, বিমান বাহিনীর পাইলটদের ১১%, টেকনিশিয়ানদের ১.৭% এবং সাধারণ সৈনিকদের মাত্র ৪ শতাংশ ছিলেন বাঙালি। যা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অসীম বৈষম্য সৃষ্টি করে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য: ভারতীয় উপমহাদেশেরে বিভক্তির পরে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর চরম আঘাত ঘানতে শুরু করে। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখসহ বাঙালির অন্যান্য সংস্কৃতিতে পাকিস্তানিরা আঘাত হানে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের বৈষম্যনীতির কারণে পূর্ব বাংলায় মধ্যবিত্তের বিকাশ মন্থর হয়ে পড়ে। ফলে বাঙালিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে থাকে। উভয় অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। মানুষ প্রতিবাদি হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে উঠে।
 
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. আলী গার্মেন্টসের কর্ণধার কাদের চৌধুরী তার অধীন কর্মচারীদের নিয়োগবিধি মোতাবেক প্রাপ্য মজুরি বোনাস, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ইত্যাদি সুবিধা প্রদানে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত করে আসছিল। এতে বিক্ষুদ্ধ কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে দাবি আদায়ে শ্রমিক সংঘ গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। আন্দোলনের চাপে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশলে মালিক তাদের ঐক্য ভেঙে দেয় এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করে।
ক. 'লাহোর প্রস্তাব'-এর উত্থাপক কে?
খ. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কেন ঘটেছিল?
গ. উদ্দীপকের শ্রমিক সংঘ গড়ে তোলার সাথে যুক্তফ্রন্ট গঠনের কী সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর শ্রমিক সংঘের আন্দোলনের পরিণতির মতোই যুক্তফ্রন্টের পরিণতিও একই হয়েছিল? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপক ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।

খ. ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভের প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনের ফলে এবং প্রাকৃতিক কারণে বাংলায় মহাদুর্ভিক্ষ বা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ঘটেছিল।
১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এ অভিনব শাসন ব্যবস্থায় কোম্পানি রাজস্ব সংগ্রহে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলে বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। তাছাড়া ১৭৬৮ সাল থেকে ১৭৭০ সাল পর্যন্ত তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু তার পরও কোম্পানি করের হার না কমিয়ে বরং বৃদ্ধি করতে থাকে। যার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে ১৭৭০ সালে দেখা দেয় মহাদুর্ভিক্ষ। বাংলা ১১৭৬ সনে এ দুর্ভিক্ষ হয় বলে একে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বলা হয়।

গ. পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গৃহীত বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। আর এ অধিকার বৎনার দিক দিয়েই উদ্দীপকের শ্রমিক সংঘ ও যুক্তফ্রন্ট গঠনের সাদৃশ্য রচিত হয়েছে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের অধীনে পূর্ব পাকিস্তান নানা ধরনের শোষণ বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। ফলে পূর্ব বাংলার ছাত্রসমাজ ও প্রগতিশীল রাজনীতিবিদগণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে মোকাবিলা করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখের প্রচেষ্টায় মুসলিম লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, আলভী গার্মেন্টসের কর্ণধার কাদের চৌধুরী তার অধীন কর্মচারীদের নিয়োগবিধি মোতাবেক প্রাপ্য মজুরি বোনাস, কর্মচারীরা একত্র হয়ে দাবি আদায়ে শ্রমিক সংঘ গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঠিক একইভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব বাংলাকে বঞ্চিত করতে থাকে। সরকারের বৈষম্য নীতির ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই শোচনীয় অবস্থার সম্মুখীন হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের এ বৈষম্য নীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে পূর্ব বাংলার চারটি রাজনৈতিক দল (১. আওয়ামী মুসলিম লীগ, ২. কৃষক-শ্রমিক পার্টি, ৩. নেজামে ইসলাম ও ৪. গণতন্ত্রী দল) একত্র হয়ে ১৯৫৩ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ২১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ছয় বছরের পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ছিল বাংলার মানুষের এক ব্যালট বিপ্লব। সুতরাং উদ্দীপকে বর্ণিত শ্রমিক সংঘ গঠনের ক্ষেত্রে এ বিষয়েরই প্রতিষ্ঠান লক্ষণীয়।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, শ্রমিক সংঘের পরিণতির মতো যুক্তফ্রন্টের পরিণতিও একই হয়েছিল।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, আলভী গার্মেন্টসের বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শ্রমিক সংঘ গড়ে তোলে। আন্দোলনের চাপে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশলে মালিকপক্ষ তাদের ঐক্য ভেঙে দেয় এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করে। ঠিক একইভাবে যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করলেও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অপতৎপরতা ও যুক্তফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিলে সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে আবার নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
উদ্দীপকের শ্রমিক সংঘ সাময়িকভাবে সফলতা অর্জন করে অচিরেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অনুরূপভাবে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয় অর্জন করে মন্ত্রিসভা গঠন করলেও অল্পদিনের মধ্যেই তা ব্যর্থতার রূপ পরিগ্রহ করে। মূলত যুক্তফ্রন্ট কোনো আদর্শিক ভিত্তিতে নয়, বরং নির্বাচনে মুসলিম লীগকে মোকাবিলার জন্য গড়ে উঠেছিল। তাই ক্ষমতায় যাওয়ার পর নেতৃবৃন্দের মধ্যকার ব্যক্তিগত রেষারেছি এবং মন্ত্রিত্ব নিয়ে বিরোধ এবং শরিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মতানৈক্যের ফলে যুক্তফ্রন্টে বিভেদ দেখা দেয়। যুক্তফ্রন্টের ভাঙন এবং মন্ত্রিসভা বাতিলের জন্য এ সময় কেন্দ্রীয় সরকারও নানা অপতৎপরতা শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আদমজীনগর ও চন্দ্রঘোনাসহ দেশের নানা স্থানে বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা বাধায়। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার ওপর এর দায় চাপিয়ে দিয়ে ১৯৫৪ সালের ৩০ মে মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার শাসনব্যবস্থায় আবার পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে। যায়, যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার পতনের মধ্য। দিয়ে যুক্তফ্রন্ট ও উদ্দীপকে বর্ণিত শ্রমিক সংঘের পরিণতি একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে।

২. খনিজ সম্পদে ভরপুর আফ্রিকার একটি দেশ সুদান। এ দেশের উত্তরাঞ্চলের আয়তন দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে অনেক বড় হলেও জনসংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে নদীনালা কম থাকার কারণে এখানকার ভূমি ছিল অনুর্বর এবং কোথাও কোথাও মরুময়। অন্যদিকে নদীবিধৌত দক্ষিণ সুদান ছিল উর্বর এবং খনিজ সম্পদগুলোও ছিল এ অঞ্চলে অবস্থিত। রাষ্ট্রক্ষমতায় উত্তর সুদানের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় দক্ষিণ সুদানকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করে উত্তর সুদান সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। এ অবস্থায় দক্ষিণ সুদান সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার ডাক দিলে জাতিসংঘের। মধ্যস্থতায় গণভোটের মাধ্যমে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা অর্জন করে।
ক. পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষা কী ছিল?
খ. একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণীয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুদানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের সাথে তদানীন্তন পাকিস্তানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈষম্যের আলোকে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধরো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষা ছিল বাংলা।

খ. বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণীয় হয়ে আছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই দিনে বাংলাকে মাতৃভাষা করার দাবিতে বাঙালি জাতি সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিলরত জনগণের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। ফলে রফিক, শফিক, জববারসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। পৃথিবীতে বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুদানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের সাথে তদানীন্তন পাকিস্তানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান- এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এ সময় পশ্চিম পাকিস্তান আয়তনে বড় হলেও অধিকাংশ অঞ্চল ছিল অনুর্বর ও মরুময়। সেজন্য এখানে কোনো কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল না। কৃষির উৎপাদন না হওয়ায় শিল্পের কাঁচামালের অভাবে এ অঞ্চলে শিল্পকারখানাও তেমন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে আর্থিক দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের থেকে দুর্বল ছিল। অন্যদিকে, পূর্ব বাংলা ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এ জন্য এ অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে ছিল উর্বর ভূমি, যার ফলে এখানে কৃষির উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল। নদীবিধৌত পূর্ব পাকিস্তানে ফসলের উৎপাদন ছিল অত্যধিক। এত কিছুর পরও পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন-শোষণের শিকার হয়ে নিজ এলাকায় উনণতি করতে পারেনি।
উদ্দীপকে উল্লিখিত সুদানের দক্ষিণাঞ্চল ছিল উর্বর এবং খনিজ সম্পদে ভরপুর এবং উত্তর অঞ্চল ছিল অনুর্বর। আবার উত্তরাঞ্চলের আয়তন বেশি হলেও দক্ষিণাঞ্চলের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি ছিল। সুতরাং বলা যায় যে, সুদানের এই বৈশিষ্ট্যের সাথে পাকিস্তানের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের মিল ছিল।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈষম্যের ন্যায় তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল পাহাড় সমান।
পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান মারাত্মক অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়। ১৯৫৯-৬০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মাথাপিছু আয় ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় ৩২% বেশি। পাকিস্তানের মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৬০ ভাগ অর্জিত হতো পূর্ব বাংলা থেকে। অথচ এর মাত্র ২৫ ভাগ ব্যয় হতো এ অঞ্চলে। মোট রপ্তানি আয়ের ৬০ ভাগ বাংলার পণ্য থেকে অর্জিত হলেও বাংলা আমদানি পণ্যের মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ পেত। পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগ পূর্ব পাকিস্তানের হলেও জাতীয় আয়ের মাত্র ২৭ ভাগ ব্যয় হতো এদের জন্য।
মুদ্রা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে ছিল না। তাছাড়া স্টেট ব্যাংকসহ প্রায় সকল ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিদেশি মিশনসমূহের সদর দফতর পশ্চিম পাকিস্তানে স্থাপন করা হয়। শিল্পের কাঁচামাল পূর্ব পাকিস্তানে উৎপন্ন হলেও শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পশ্চিম পাকিস্তানে গৃহীত মোট তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানে বরাদ্দ ছিল অনেক কম। উদ্দীপকে দেখা যায়, উত্তর সুদান দক্ষিণ সুদানকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করে উত্তর সুদানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। একইভাবে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ পাচার করে পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত উত্তর সুদানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে দক্ষিণ সুদানকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করা হয়। একইভাবে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীও পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত করে ব্যাপক বৈষম্যের সৃষ্টি করে।

৩. হোসনি মুবারক দীর্ঘ ৩০ বছর মিসরের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার শাসনামলে তিনি বিরোধী মতকে কঠোর হস্তে সমন করেন। তার সময় মিসরে মৌলিক মানবাধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়। তার পদত্যাগের দাবিতে মিসরের জনগণ তাহরির স্কোয়ারে সমবেত হয় এবং জনগণের প্রবল আন্দোলনের মুখে হোসনি মুবারক সরকারের পতন হয়। পরবর্তীকালে মিসরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়।
ক. পাকিস্তানের জনসংখ্যার কত অংশের মাতৃভাষা বাংলা ছিল?
খ. অপারেশন সার্চলাইট কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের শাসকের কর্মকান্ডের সাথে পাকিস্তানি আমলের কোন শাসকের কর্মকান্ডের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মিসরীয় কর্তৃপক্ষের মতো পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পদক্ষেপ গ্রহণ না করার ফলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়েছিল- তুমি কি এর সাথে একমত? বিশ্লেষণ কর।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬.৪০ অংশের মাতৃভাষা ছিল বাংলা।

খ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালায় তা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত।
এ হত্যাযজ্ঞের নীল নকশা তৈরি করেন মেজর জেনারেল টিক্কা খান, খাদিম হোসেন ও রাও ফরমান আলী প্রমুখ। এ ঘৃণ্য অপারেশনে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকা নগরীকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে। রাতের অন্ধকারে শহরের নিরীহ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত নাগরিকদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও দেশের অন্যত্রও একইভাবে পাক বাহিনী গণহত্যায় মেতে ওঠে।

গ. মিসরের উক্ত আন্দোলনের সাথে আমার পঠিত পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মিল বিদ্যমান।
১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর সামরিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল আইয়ুব খান। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তিনি পূর্ব বাংলায় তার দমন-নিপীড়ন নীতি অব্যাহত রাখেন। পরে তার এই শাসন পরিক্রমায় বাংলার ছাত্রসমাজের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। আর ১৯৬৮ সালের নভেম্বরে ছাত্র অসন্তোষ মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এ আন্দোলন এক পর্যায়ে গণআন্দোলনে রূপ নিলে আইয়ুব খান ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকেও এই দৃশ্যপট অঙ্কিত হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, হোসনি মোবারক সামরিক বাহিনীর সহায়তায় মিসরে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে তার শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে মিসরের জনগণ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। একইভাবে ১৯৬৯ সালেও পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন শহর ও গ্রামে, যা ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এক দুর্বার আন্দোলনে রূপ নেয়। প্রবল গণবিদ্রোহের মুখে আইয়ুব খান নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। আন্দোলন প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে জরুরি অবস্থা উঠিয়ে নেওয়া হয়। একই সাথে তিনি আর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না হওয়ারও ঘোষণা দেন। এভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চে আইয়ুব খানের শাসনের অবসানের মাধ্যমে এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। উদ্দীপকেও এ ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উক্ত আন্দোলন অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে সবচেয়ে বড় আন্দোলন।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব বাংলার ওপর নানা ধরনের নির্যাতন, শোষণ ও অত্যাচার করতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-র হয় দফা এবং পরবর্তীকালে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। আর ১৯৬৯ সালের আন্দোলন ছিল এগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, হোসনি মোবারকের স্বৈরাচারী শাসন তার অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে দেশের আপামর জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে। জনগণের প্রবল আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঠিক একইভাবে ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত জনগণ স্বৈরাচারী শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। ফলশ্রুতিতে আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। এই আন্দোলন ইতিহাসে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান হিসেবে পরিচিত, যা ছিল পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বড় ও সংগঠিত আন্দোলন। এ আন্দোলন ১৯৬৮ সালের ছাত্র অসন্তোষের মাধ্যমে শুরু হলেও তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়। বাংলার শহর ও গ্রামের শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এ আন্দোলন যেন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ক্ষিপ্ত জনতা সরকারি পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান আগুনে ও আগরতলা মামলার প্রধান বিচারপতির বাসভবন পুড়িয়ে দেয়। এ আন্দোলনের ফলেই আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আর এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিপূর্ণতা লাভ করে, যা পরবর্তীকালে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপলাভ করে। উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে সর্ববৃহৎ আন্দোলন।

৪. বসনিয়া ছিল এক সময় সার্বিয়ার একটি প্রদেশ। বসনিয়ানরা রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও রাষ্ট্রক্ষমতা সার্বিয়ানদের হাতে ছিল। তারা বসনিয়ানদের ওপর বৈষম্য ও শোষণনীতি গ্রহণ করলে বসনিয়াবাসী স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দফা ঘোষণা করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সার্বিয়া আন্দোলনকারীদের দমন করতে গেলে সেখানে গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠীর হাতে বহু ছাত্রজনতা হতাহত হয়। যার ফলশ্রুতিতে বসনিয়া স্বাধীনতা অর্জন করেন।
ক. হয় দফা কে ঘোষণা করেন?
খ. আইয়ুব খানের পতনের কারণ কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. বসনিয়দের স্বায়ত্তশাসন দাবির আন্দোলনের সাথে বাঙালির কোন আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বসনিয়দের আন্দোলনের মতো বাঙালির উক্ত আন্দোলনও স্বাধীনতার পথ সুগম করেছিল বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করেন।

খ. স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনই ছিল আইয়ুব খানের পতনের মূল কারণ। আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোরব দায়িত্ব গ্রহণ করে সমগ্র পাকিস্তানে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার কেড়ে নেন। এক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে জনগণ তীব্র আন্দোলন শুরু করলে তার পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের মুখে তিনি ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন।

গ. বসনিয়াবাসীদের স্বায়ত্তশাসন দাবির সাথে বাঙালির ছয় দফাভিত্তিক আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলা ছিল সামরিকভাবে সম্পূর্ণরূপে অরক্ষিত। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য বাংলার জনগণের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলার জনগণকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে লাহোরে সাধারণ মানুষের মুক্তির সনদ 'হয় দফা পেশ করেন। কিন্তু শাসকচক্র এই ছয় দফা মানতে অস্বীকৃতি জানালে পূর্ব বাংলার জনগণ ছয় দফার সমর্থনে আন্দোলন শুরু করে। এরপর ক্রমান্বয়ে স্বাধিকারের প্রশ্নে সংঘটিত হয় ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। আর গণঅভ্যুত্থানের হাত ধরেই বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে অগ্রসর হয় এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বসনিয়া সার্বিয়ার একটি প্রদেশ ছিল এবং বসনিয়রা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও রাষ্ট্রক্ষমতা সার্বিয়ানদের হাতে ছিল। সার্বিয়ানরা বসনিয়দের ওপর বৈষম্য ও শোষণ নীতি গ্রহণ করলে বসনিয়াবাসী স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে অধিকার সংবলিত কিছু দফা ঘোষণা করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সার্বিয়া আন্দোলনকারীদের দমন করতে গেলে সেখানে গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠীর হাতে বহু জনতা হতাহত হয়। যার ফলশ্রুতিতে বসনিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে। সুতরাং বসনিয়দের স্বায়ত্তশাসন দাবির আন্দোলন বাঙালির হয় দফাভিত্তিক আন্দোলনের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. বসনিয়াবাসীর আন্দোলনের মতোই বাঙালির ছয় দফা আন্দোলন স্বাধীনতার পথ সুগম করেছিল- উদ্ভিটি যথার্থ।
পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের পটভূমিতে হয় দফার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। হয় দফা কর্মসূচি নিরাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালি জাতিকে সংগ্রামের শক্তি জুগিয়েছিল। প্রেরণা জুগিয়েছিল স্বৈরাচারী ও গণবিরোধী শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। সরকার এ আন্দোলন দমনে যতই নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে ততই আন্দোলন দ্রুত দানা বাঁধতে থাকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ততোই সুসংহত রূপ লাভ করে। পুলিশ নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করলে ছয় দফা কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন এদেশে সর্বপ্রথম গণমুখী আন্দোলন গড়ে তোলে। হয় দফা ভিত্তিক স্বাধিকার আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়। আর এ গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে অগ্রসর হয়। এর ফলে পাকিস্তানি শাসনযন্ত্রের ভিত কেঁপে ওঠে। যে ঘটনাগুলো উদ্দীপকে বর্ণিত বসনিয়াবাসীর শোষণ ও নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকে বসনিয়ার মতো পশ্চিম পাকিস্তানেও ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি ঘটে। কিন্তু তারা বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ক্ষমতাসীন পাকিস্তানি শাসকচক্রের আচরণ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বাধ্য করেছিল। এ প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে একটি মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আর এই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের ২৪ বছরের স্বৈরশাসন ও শোষণের বেড়াজাল ভেঙে নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা সুস্পষ্ট যে, উদ্দীপকের বসনিয়দের আন্দোলনের মতোই বাংলার ছয় দফা আন্দোলনও স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল।

৫. রিপার কলেজের সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষক খালি পায়ে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিতে বের হলো। প্রভাতফেরি শেষে তারা তাদের কলেজের শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাল। সর্বশেষ তাদের অডিটোরিয়ামে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। আলোচনায় রিপাদের কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, এ আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা করে।
ক. যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার প্রথম দফা কী?
খ. ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে তমদ্দুন মজলিশের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে রিপাদের কলেজের অধ্যক্ষের বক্তব্যের সাথে তুমি কি একমত? তোমার উত্তরের পক্ষে লেখ।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার প্রথম দফা ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা।

খ. ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে তমদ্দুন মজলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। তমদ্দুন মজলিশই ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগঠন। তমদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপদানের জন্য ১৯৪৭ সালে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। অর্থাৎ তমদ্দুন মজলিশ ভাষা আন্দোলনে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।

গ. উদ্দীপকে ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বলা হয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ দিবসের গুরুত্ব অপরীসীম। 
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল বাঙালির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যময় একটি দিন। এদিন বাংলা ভাষার দাবিতে সারা পূর্ব বাংলায় ধর্মঘট ও শোভাযাত্রার আহবান করা হয়। পাক সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে একটি কালজয়ী ইতিহাসের জন্ম দেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় মিলিত হয়। সেখানে তারা গাজিউ হকের সভাপতিত্বে সমাবেশ শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগান দিতে দিতে মিছিল সহকারে অধিবেশনরত প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক পরিষদের দিকে অগ্রসর হয়। তাদের এ মিছিলে পুলিশ গুলি বর্ষণ করলে রফিক, বরকত, জববার শহিদ হন। এ দিনের ঘটনা সারাদেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলন বহুগুণে জোরালো হয়। ফলে পাক সরকার বাঙালির ভাষার দাবি মানতে বাধ্য হয়। এই দিনটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। যা বিশ্বজুড়ে বাঙালি জাতির গৌরবকে ছড়িয়ে দেয়। এ সকল আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের ইতিহাসে ২১ ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ. হ্যাঁ, রিপাদের কলেজের অধ্যক্ষের বক্তব্যের সাথে আমি একমত। 
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, রিপাদের কলেজে ২১ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় তাদের কলেজের অধ্যক্ষ ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, এ আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা করে। অধ্যক্ষের এ উক্তিটি সম্পূর্ণরুপে সঠিক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। এ অন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই পরবর্তী সকল আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এ আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ ছিল ১৯৫৪ এর নির্বাচন। যেখানে বাঙালি জাতি যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করে। এরপর ১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবির প্রেক্ষিতে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর বাঙালি ঝাপিয়ে পড়ে। আর ১৯৬৯ সালে সংঘটিত হয় গণঅভ্যুত্থান যা আইয়ুব খানের পড়নকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। আর এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির প্রথম আন্দোলন সংঘটিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে পাক-সরকারের বিরুদ্ধে আরো অনেক আন্দোলন হয়। যার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে। এ যুদ্ধে বাঙালি জাতি নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয়।

৬. পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব-পাকিস্তানিদের ওপর চরম নির্যাতন চালাও। তারা সকল প্রকার ব্যাংক বিমা ও বাণিজ্যিকর কেন্দ্রগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তুলেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের সম্ভা কাঁচামাল দিয়ে তাদের অধিকাংশ বাণিজ্যকেন্দ্র ও কারখানা চলত। ফলে সহজেই সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হয়ে যেত এবং এজন্যই পূর্ব পাকিস্তান কখনোই উন্নত হতে পারেনি।
ক. পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচার দাবি বলা হয় কোনটিকে?
খ. পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রতি সামাজিক বৈষম্যর বর্ণনা দাও?
গ. উদ্দীপকে পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর কোন ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উক্ত বৈষম্যের ফলেই পূর্ব-পাকিস্তান সর্বদাই পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল ছিল- মন্তব্যটি মূলপাঠের আলোকে বিশ্লেষণ করে দেখাও।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ছয় দফাকে পূর্ব পাকিস্তানের ‘বাঁচার দাবি' বলা হয়।

খ. পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের সামাজিক বৈষম্য ছিল শোচনীয়।
স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাঙালিদের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা বেশি সুবিধা ভোগ করে। সমাজকল্যাণ ও সেবামূলক সুবিধা বেশিরভাগ পশ্চিম পাকিস্তানিরা পেত। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত ছিল।

গ. উদ্দীপকে পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক সর্বোচ্চ বৈষম্যের শিকার হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। তাদের শোষণের মাত্রা ছিল ভয়াবহ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আয়তনে বড় হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চল ছিল অনুর্বর ও মরুময়। সেজন্য এখানে কোনো কৃষি উন্নয়নের সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু পূর্ব বাংলা ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এজন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পূর্ব বাংলার জনগণ এ সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল পূর্ব পাকিস্তানে উৎপন্ন হলেও বড় বড় সকল শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। উদ্দীপকে এ সকল বৈষম্যমূলক ঘটনারই অবতারণা করা হয়েছে। এ সকল বৈষম্যমূলক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তান কখনো অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। প্রাদেশিক সরকারের হাতে মুদ্রাব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক, বিমা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে সহজেই সকল অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হয়ে যেত। পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল। উদ্দীপকেও এ বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে।

ঘ. উক্ত বৈষম্য অর্থাৎ অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফলেই পূর্ব পাকিস্তান সর্বদাই পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল ছিল- মন্তব্যটি সঠিক।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে সামরিক শাসনের সময় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক শোষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানে তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়। প্রথমটিতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত বায় ছিল যথাক্রমে ১১৩ কোটি ও ৫০০ কোটি রুপি। দ্বিতীয়টিতে বরাদ্দ ছিল ৯৫০ কোটি পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ১,৩৫০ কোটি রুপি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। তৃতীয়টিতে পূর্ব ও পশ্চিমের জন্য বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৩৬% ও ৬৩%। এছাড়া মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৬০ ভাগ অর্জিত হতো পূর্ব বাংলা থেকে। অথচ এর মাত্র ২৫ ভাগ ব্যয় হতো এ অঞ্চলে। মোট রপ্তানি আয়ের ৬০ ভাগ বাংলার পণ্য থেকে অর্জিত হলেও বাংলা আমদানি পণ্যের মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ পেত। আবার শিল্পের কাঁচামাল পূর্ব পাকিস্তানে উৎপন্ন হলেও বড় বড় সকল শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানে যে কয়টি শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তারও মালিকানা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। এ সকল কারণে পূর্ব পাকিস্তান কখনো অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। কেন্দ্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পূর্ব পাকিস্তানের সকল আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. সাংবাদিক আবু নাছের সাহেব ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে কোনোমতেই একাত্ম নন। তিনি মনে করেন যে, ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের মুখের ভাষার কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, সে ছাত্ররাই বড় রাজনীতিবিদ হয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তের ইতিহাস জাতি আজও ভুলে যায়নি। ছাত্রদের অন্যতম কাজ অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করা।
ক. লাহোর প্রস্তাব কত সালে উত্থাপিত হয়?
খ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. আবু নাছের সাহেবের বক্তব্যে যে আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. বাংলাদেশে এ ধরনের একটি আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সকল শ্রেণি পেশার মানুষ জড়িত ছিল- বিশ্লেষণ কর।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হয়।

খ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলক।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি নিজেদের স্বাধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যায়। তারা রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠে এবং জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পরপরই কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালির বহু কাঙি্ক্ষত ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আবু নাছের সাহেবের বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
মায়ের ভাষা প্রত্যেক মানুষেরই প্রাণের ভাষা। তাই মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে যদি কাউকে বঞ্চিত করা হয় তবে তার মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন মাতৃভাষার দাবিতে বাঙালিদের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনা জাগরণেরই সাক্ষ্য বহন করে। এ আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ, যেটি উদ্দীপকের আবু নাছের সাহেবের বক্তব্যেও পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত সাংবাদিক আবু নাছের সাহেব মনে করেন, ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, সে ছাত্ররাই বড় রাজনীতিবিদ হয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। অনুরূপভাবে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজের আত্মত্যাগ ছিল চিরস্মরণীয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করলে ছাত্র সমাজ এর প্রতি রুখে দাড়ায়। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে ছাত্ররা এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৪৭ সাল থেকে চলমান এই আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। এদিন ছাত্ররা 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' স্লোগান দিতে দিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পৌঁছলে পুলিশ তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে রফিক উদ্দিন, আবুল বরকত, আব্দুস সালাম, আব্দুল জববারসহ অনেকে শহিদ হন। তাদের এ আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আবু নাছের সাহেবের বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকার কথাই ফুটে উঠেছে।

ঘ. বাংলাদেশে এ ধরনের অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সকল শ্রেণি পেশার মানুষ জড়িত ছিল- উক্তিটি যথার্থ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাজনৈতিক ঘটনা। এ আন্দোলন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাজনীতির বিকাশ ঘটায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশার মানুষ মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। সকল জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে ভাষা আন্দোলন সফল হয়।
ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা আদায়ে সংঘটিত গণআন্দোলন। এ আন্দোলন পূর্ববাংলার জনগণের মধ্যে জাতীয় চেতনার সূত্রপাত ঘটায়। ২১ ফেব্রুয়ারির বিয়োগান্তক ঘটনায় বাংলার বুদ্ধিজীবী সমাজ সংগ্রামী চেতনায় জেগে ওঠে। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, ব্যবসায়ী নির্বিশেষে সর্বস্তরের গণমানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ছাত্র-শিক্ষক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পূর্ণ দিবস হরতাল পালন করে এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। এই দিন আবার পুলিশের গুলিতে শহিদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিকশাচালক আউয়াল। পুলিশের এ নৃশংসতার প্রতিবাদে জনতা দলে দলে রাস্তায় নেমে আসে। প্রবল আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সকল শ্রেণি পেশার মানুষ জড়িত ছিল।

৮. ভারতের আসাম প্রাদেশিক সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাঙালিরা আন্দোলন গড়ে তোলে। এর বিরুদ্ধে আসামি পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায়। এর ফলে অনেক ভাষাসৈনিক নিহত আহত হন।
ক. তমদ্দুন মজলিশ কত সালে গঠিত হয়?
খ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের দুটি কারণ আলোচনা কর।
গ. উদ্দীপকে পাঠ্যবইয়ের আলোকে কোন আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আন্দোলনের চেয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অধিক তাৎপর্য বহন করে বিশ্লেষণ কর। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে।

খ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়ের পেছনে নানা কারণ বিদ্যমান ছিল।
মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে গঠিত মধ্য, বাম ও ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্যজোট যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের সহায়ক হয়। পাশাপাশি যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ছিল পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকারের দলিল। পূর্ব বাংলার জনগণ ২১ দফার প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন জানায় ফলে যুক্তফ্রন্ট অভূতপূর্ণ সাফল্য অর্জন করে।

গ. উদ্দীপকের আন্দোলনটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
মায়ের ভাষা প্রত্যেক মানুষেরই প্রাণের ভাষা। তাই মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে যদি কাউকে বঞ্চিত করা হয় তবে তার মধ্যে প্রতিবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। উদ্দীপকে উল্লিখিত আসামের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫২ সালের বাঙালির ভাষা আন্দোলন মাতৃভাষার দাবিতে প্রতিবাদী চেতনা জাগরণেরই সাক্ষ্য বহন করে। উদ্দীপকে দেখা যায়, ভারতের আসাম প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা হলেও প্রাদেশিক সরকার অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। বাংলাভাষী জনগণ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৬১ সালের ১৯ মে ভাষার দাবিতে চলমান ধর্মঘটে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় সরকার ঘটনাস্থলেই ১১ জন ভাষা সৈনিক শহিদ হন। ১৯৫২ সালে সংঘটিত বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চিত্রও অনেকটা এ রকম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। প্রথম থেকেই বাঙালিরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৪৭ সাল থেকে চলমান এই আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। এদিন পুলিশের গুলিতে শহিদ হন রফিক, বরকত, সালাম, জববারসহ আরও অনেকে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ভাষার দাবিতে প্রাণদান করার দিক থেকে আলোচ্য আন্দোলন দুটি একই সূত্রে গাঁথা।

ঘ. বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল বলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন উদ্দীপকে উল্লিখিত আন্দোলন অপেক্ষা অধিক তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাজনৈতিক ঘটনা। এই আন্দোলন শোষিত বাঙালির প্রতিবাদী চেতনাকে উদ্দীপ্ত করেছিল। ফলে বাঙালি অনুধাবন করতে পেরেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা। সালের ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত স্বাধীনতার চেতনার এ দিকটি উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
আসামের বাঙালিরা আমাদের মতোই বাংলা ভাষার দাবিতে প্রাণ নিয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে তারাও তাদের দাবি আদায়ে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলন তাদের মধ্যে কোনো স্বাধিকারের চেতনা জাগ্রত করতে পারেনি। এ কারণেই তারা ভারতের প্রাদেশিক শাসনের গন্ডিতেই আবদ্ধ রয়েছে। পক্ষান্তরে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে একটি পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে ভূমিকা রেখেছে। বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে এই আন্দোলন পরবর্তী সকল আন্দোলনে প্রভাবকের কাজ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আলোচ্য দুইটি ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যগত পার্থক্য সুস্পষ্ট। তাই বলা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালির স্বাধীন সত্তার জাগরণের মধ্য দিয়ে উদ্দীপকের ভাষা আন্দোলন অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

৯. আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধে রিবা জানতে পারে, আলজেরিয়ার স্বাধীনতা ৮ বছর আগে শুরু হয়েছিল। এ যুদ্ধে আলেজেরিয়ান ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেতৃত্ব দেয়। এ ফ্রন্ট যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিসরের কায়রোতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে। ওই সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আলজেরিয়ার স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বমত জনসমর্থন সৃষ্টি। 
ক. অপারেশন সার্চলাইট কখন শুরু হয়?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচন কেন পেছানো হয়?
গ. আলজেরিয়ার অন্তবর্তী সরকারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের গঠন বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে আলজেরিয়ার সরকারের ভূমিকা ও বাংলাদেশের সরকারের ভূমিকা কি একইরূপ? যুক্তিসহ মূল্যায়ন কর।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. অপারেশন সার্চলাইট শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে।

খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচন বন্যাজনিত কারণে পেছানো হয়। ১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও ভয়াবহ বন্যাজনিত কারণে তা পরিবর্তন করে ৭ ডিসেম্বর জাতীয় এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ পুননির্ধারণ করা হয়। তাছাড়া নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত উপকূলবর্তী অঞ্চলের জাতীয় পরিষদের ৯টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ২১টি আসনে নির্বাচনের তারিখ ১ মাস পিছিয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।

গ. আলজেরিয়ার অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে পূর্বপ্রস্তুতি ও সাংগঠনিক তৎপরতা ছাড়াই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধকে গতিময় ও সুসংহত করা, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী দক্ষ লক্ষ বাঙালির দেখাশোনা এবং বহির্বিশ্বে বাঙালি জাতির ভাবমূর্তিকে তুলে ধরার জন্য প্রবাসী সরকার গঠন করা হয়।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, আলেজেরিয়ার নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিসরের কায়রোতে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের 'প্রবাসী সরকার গঠন করা হয়, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। এ সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে মোট ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল। এসব বিভাগের মাধ্যমেই যুদ্ধকালে সামরিক ও বেসমারিক যাবতীয় প্রশাসন পরিচালিত হয়। এ সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অনুপস্থিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করে সরকার গঠন করা হয়। এ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পিত হয় তাজউদ্দিন আহমেদের ওপর। মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী করা হয় খন্দকার মোশতাক আহমদকে, অর্থমন্ত্রী করা হয় এম মনসুর আলীকে এবং স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী করা হয় এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ সরকারের অবদান ছিল অতুলনীয়। আর উদ্দীপকেও এ সরকারের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকের আলজেরিয়া সরকারের ভূমিকা ও বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা একই প্রকৃতির ছিল না।
উদ্দীপকের আলজেরিয়ায় গঠিত সরকারের মূল দায়িত্ব ছিল কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আলজেরিয়ার স্বাধীনতার প্রতি বিশ্ব জনমত বা জনসমর্থন সৃষ্টি করা। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গঠিত মুজিবনগর সরকারে কাজের পরিধি ছিল আরও ব্যাপক। কেননা মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্ব জনমত সৃষ্টির পাশাপাশি যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রেও অসামান্য অবদান রেখেছিল।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে। কিন্তু মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে সামরিক-বেসমারিক জনগণকে নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এছাড়া বেশ কিছু সাব-সেক্টর এবং তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়। এসব সেক্টর ও ফোর্সে যুদ্ধ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গেরিলা ট্রেনিং দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রচন্ড প্রতিকূলতার মাঝে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান, এক কোটির ওপর শরণার্থীর জন্য ব্রাণের ব্যবস্থা করা, স্বাধীন বাংলা বেতারের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ রাখা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করে এ সরকার। স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। সংগ্রামী জনগণের মনোবল ঠিক রাখার জন্য মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে ও পত্র-পত্রিকার সাহায্যে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল তা মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার অন্যতম উৎস ছিল। এছাড়াও এ সরকার কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক ও স্টকহোমসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়, মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশ্ব জনমত সৃষ্টি ও জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা ছাড়াও সার্বিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায়, আলজেরিয়ার গঠিত সরকারের। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা আর মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা একই প্রকৃতির ছিল না।

১০. আদি সিদ্ধান্ত নিল তার একমাত্র মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করাবেন। আদির বড় ভাই মাহিন তার পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভাতিজিকে বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর উপদেশ দিলেন।
ক. ১৯৫৪ এর নির্বাচনে কোন দলের ভরাডুবি ঘটে?
খ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের কারণ কী ছিল?
গ. মাহিন কোন চেতনায় ভাতিজিকে বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর উপদেশ দিলেন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাহিনের এই ধরনের চেতনা বাঙালির জাতীয় জীবনে কী ভূমিকা রাখবে? তোমার মতামত দাও।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটে।

খ. ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের মূল কারণ হলো তাদের গণমুখী নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পিছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল জোট বন্ধ হয়ে নির্বাচন করা। এছাড়া যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচিতে পূর্ব বাংলার সকল স্তরের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছিল এবং নির্বাচনি প্রচারণায় যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, অর্থনৈতিক শোষণ ও আঞ্চলিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে তাদেরকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ফলে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।

গ. ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে আদি মেয়েকে বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করিয়েছেন।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, আদি মেয়েকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করতে চাইলে তার চাচা বাধ সাধেন। তিনি মনে করেন, বাংলা ভাষা চর্চা করা ছাড়া প্রকৃত বাঙালি হওয়া যায় না। তার এ ধরনের মানসিকতায় ভাষা আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিসত্তার অন্তর্নিহিত পরিচয়কে বাঁচানোর সর্বাত্মক আন্দোলন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এদেশের আপামর জনতার ওপর জোর করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। বাংলা এদেশের মাতৃভাষ্য, আমাদের মায়ের ভাষা। তাই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতা আন্দোলন শুরু করে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তারা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল বের করে। পুলিশের গুলিতে শহিদ হন অনেকে। তবুও এ দেশের জনগণ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই আন্দোলনের প্রভাবেই আদি তার মেয়েকে বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করিয়েছেন। বাংলা ভাষা চর্চা ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

ঘ. মাহিনের এ ধরনের জাতীয়তাবাদী চেতনা বাঙালির জাতীয় জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে এক অসাধারণ ঘটনা। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে এক নতুন জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে। এ চেতনা পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগণের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত করে।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির মনে যে বৈপ্লবিক চেতনা ও ঐক্যের সৃষ্টি হয়, তা পরবর্তীকালে সকল আন্দোলনের প্রাণশক্তি জোগায়। এ অন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাঙালি ১৯৬৬ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জোগায়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের বিরাট বিজয় মূলত একুশের ঐক্যের বিজয় আর ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ মূলত বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের ফল। ২১শে ফেব্রুয়ারির ত্যাগ ও সংহতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের গোড়া পত্তন করে। যার চরম পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান লাভ করে। তাই বাঙালির জীবনে ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা অপরিসীম। এজন্য উদ্দীপকের মাহিনের মতো হাজারো বাঙালি জনতা এ দিনটি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post