HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪

HSC Islamic History and Culture 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

প্রাথমিক আলোচনাঃ

বাংলায় কোম্পানি ও ঔপনিবেশিক শাসন
পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের সহযোগিতার উপহার হিসেবে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলী খান বাংলার সিংহাসন লাভ করেছিল। তবে রাজকোষ শূন্য থাকায় প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদানের জন্য মীর জাফর তাঁর ব্যক্তিগত স্বর্ণালঙ্কার, ও মূল্যবান আসবাবপত্র বিক্রি করতে বাধ্য হন। অন্যদিকে দরবারে ইংরেজ রেসিডেন্ট রাখার অনুমতিও দিতে হয়েছিল তাকে। ঢাকা ও পূর্ণিয়ায় সেনাবিদ্রোহ দেখা দেয়। ক্লাইভের সাহায্যে ঢাকার বিদ্রোহ দমন করা গেলেও বকেয়া বেতনের দাবিতে সংঘটিত পূর্ণিয়ার বিদ্রোহ দমন সম্ভব হয়নি। মীরজাফর নবাবি পেলেও প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগের শক্তি তার ছিল না।

ফলে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরও একটা সময় বিরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি ইংরেজদের বাংলা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পূর্বতন বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধবোধ ও অযোগ্যতা এক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছিল। ফলে ওলন্দাজদের সঙ্গে পত্রালাপ এবং প্রতিশ্রুত অতিরিক্ত অর্থ না দেয়ার অজুহাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অস্থায়ী গভর্নর ভ্যানসি ট্রাট মীরজাফরকে সিংহাসনচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলতে গেলে তখন থেকে ঔপনিবেশিক শাসনের শুরু হয়। তারপর ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে বাংলার ইতিহাসে ঘটে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

বক্সারের যুদ্ধ
পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজিত হওয়ার পর মীর জাফর নামমাত্র নবাব হতে পেয়েছিলেন। তার অল্পদিন পরে ১৭৬০ সালে ইংরেজরা মীরজাফরের জামাতা মীর কাশিমকে বাংলার সিংহাসনে বসায়। তিনিও কোম্পানিকে নানা সুবিধাদানের শর্ত দিয়েই ক্ষমতা লাভ করেছিলেন। তবে মীর কাশিম মীরজাফরের মতো অযোগ্য ও নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ ছিলেন না। তিনি একজন সুদক্ষ শাসক ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার স্বাধীনচেতা স্বভাবের পাশাপাশি জনসাধারণের কল্যাণে সচেতনা ছিল উল্লেখ করার মত। এক্ষেত্রে তিনি ইংরেজদের সাথে সম্মানজনক উপায়ে বাংলার স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।

তিনি আর্থিক ও সামরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করেন। প্রথমে মীরজাফরের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে নানা কারণে নবাব মীর কাশিমও বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। এদিক থেকে দেখলে এই বক্সারের যুদ্ধের মধ্য দিয়েই ইংরেজ আধিপত্য উপমহাদেশে আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলার নামমাত্র টিকে থাকা স্বাধীনতা এর মধ্য দিয়েই পুরোপুরি বিনষ্ট হয়েছিল।

ফলাফল ও গুরুত্ব
বক্সারের যুদ্ধ বাংলার পাশাপাশি পুরো ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিল। তাই এর ফল যুগান্তকারী এবং সুদূরপ্রসারী। অনেক দিক থেকে এ যুদ্ধ পলাশীর যুদ্ধ অপেক্ষা অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। নিচে এর গুরুত্বগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর হলো-

১. এ যুদ্ধে পরাজিত দিল্লির মুঘল সম্রাট শাহ আলম ইংরেজদের পক্ষে যোগদান করে। মূলত সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে ইংরেজদের একটা চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির বলে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ানি লাভ করে।

২. অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা রোহিলাখন্ডে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

৩. যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মীর কাশিম গা ঢাকা দিয়েছিলেন। অবশেষে ১৭৭৭ সালের দিকে দিল্লির কাছে তার মৃত্যু হয়। অনেকের ধারণা বাংলার এই শেষ স্বাধীনতাকামী নবাবকে হত্যা করা হয়েছিল। সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে ইংরেজদের একটি চুক্তি হয়েছিল যে চুক্তির বলে কোম্পানি বাংলা বিহার, উড়িষ্যার দিউয়ানি লাভ করে।

৪. এ যুদ্ধের ফলে মীর কাশিমের ইংরেজ বিতাড়ণ ও স্বাধীনতা রক্ষার শেষ স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়। বলতে গেলে উপমহাদেশে ইংরেজ প্রভাব-প্রতিপত্তি বহুগুণে বেড়ে যায়।

৫. এ যুদ্ধের ফলে উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বিনা বাধায় ইংরেজ আধিপত্য বিস্তারের পথ উন্মুক্ত হয়েছিল। তারা এর পর থেকেই ভারতবর্ষের নানা স্থানে কুঠি নির্মাণ শুরু করে।

৬. কোম্পানির যোদ্ধারা অযোধ্যার নবাবের নিকট থেকে কারা ও এলাহাবাদ অঞ্চল দু’টি কেড়ে নিয়েছিল।

৭. বক্সারের যুদ্ধে কেবলমাত্র মীর কাশিম পরাজিত হননি। এযুদ্ধে স্বয়ং সম্রাট শাহ আলম ও সুজাউদ্দৌলাও পরাজিত হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে দিল্লি থেকে শুরু করে বাংলা পর্যন্ত সমগ্র উত্তর ভারত ইংরেজদের অধীনে চলে গিয়েছিল।

৮. বক্সার যুদ্ধের ফলে ক্লাইভ দিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্রাটের কাছ থেকে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার দিওয়ানি (রাজস্ব আদায়ের কর্তৃত্ব) লাভ করে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দিউয়ানি লাভ
১৭১৭ সালে সুবেদারের দায়িত্ব প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত মুর্শিদ কুলি খান বাংলার দিউয়ান ছিলেন। তবে মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে প্রায় স্বাধীনভাবে বাংলা শাসনকারী এই নবাব এবং তাঁর উত্তরসূরীরা একইসঙ্গে সুবাদার ও দিউয়ানের দায়িত্ব পালন করতেন। শুধু তাই নয়, মারাঠা উৎপাতের কারণে আলীবর্দী খান কেন্দ্রকে রাজস্ব পাঠানো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে সিরাজউদ্দৌলা ও মীরজাফরের আমলে কেন্দ্রকে রাজস্ব দেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানি হয়ে ওঠে পুরো দেশের হর্তাকর্তা।

তারপর কেন্দ্রিয় রাজনীতি তথা সমগ্র উপমহাদেশের রাজনীতি বদলে যায়। তখন সবকিছু এমনভাবে পরিবর্তিত হয় যা থেকে উত্তোরণের পথ ছিল না। ফলে সুবে বাংলা আবার আগের মতো দিল্লিতে রাজস্ব পাঠানো বন্ধ করে দেয়। বলতে গেলে সম্রাট শাহ আলম বাংলা থেকে রাজস্ব প্রাপ্তির আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। এমনি পরিস্থিতিতে সম্রাট কয়েকবার কোম্পানিকে বাৎসরিক কিছু উপঢৌকনের বদলে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দিউয়ানি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তখন তার সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল কোম্পানি। পরে বক্সার যুদ্ধের পর কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে। তাদের হঠকারিতায় বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ খারাপ হয়।

ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ কোম্পানির দুর্নীতি দমন ও স্বার্থ বৃদ্ধির জন্য ক্লাইভকে লর্ড উপাধি দিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বাংলায় প্রেরণ করে (১৭৬৫-১৭৬৭ খ্রি:)। বাংলায় এসে ক্লাইভ মীর কাশিমের মিত্রশক্তি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের প্রতি নজর দেন। বক্সার যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ তাদের নিকট থেকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং কারা ও এলাহাবাদ জেলা দু’টির দখল নেয়া হয়। এরপর তিনি অযোধ্যার নবাবের সাথে মিত্রতা স্থাপনের পাশাপাশি দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথেও সন্ধি স্থাপন করেছিলেন।

বছরে ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদানের বিনিময়ে সম্রাটের কাছ থেকে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দিউয়ানির দায়িতব গ্রহণ করে। এরপর ১৭৬৫ সালে ১২ আগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিউয়ানির সনদ অর্জন করেছিল।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দিউয়ানি লাভের ফলাফল ও গুরুত্ব
বাংলার প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দিউয়ানি লাভ ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর ফলে নতুন গতিপথ লাভ করে বাংলার ইতিহাস। এক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান হয়েছিল তা হচ্ছে-

১. রাজনৈতিক বিজয়: বাংলায় কোম্পানির দিউয়ানি লাভ ছিল কোম্পানির জন্য একটি বিরাট রাজনৈতিক বিজয়। এর ফলে সম্রাট ও নবাব একেবারে ক্ষমতাহীন হয়ে ইংরেজদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়। রাজস্ব আদায়ের অধিকার এবং সেনাদল রাখার মতো অর্থবল ছিল না নবাবের। নবাবকে নামমাত্র সিংহাসনে বসিয়ে রেখে কোম্পানিই সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করে। বাংলায় কার্যত: ব্রিটিশ শাসনের গোড়াপত্তন ঘটে।

২. অর্থনৈতিক সুবিধা: বাংলায় দিউয়ানি লাভ ছিল কোম্পানির জন্য একটি বিরাট অর্থনৈতিক বিজয়। এর ফলে কোম্পানি নিজের দেউলিয়া অবস্থা হতে রক্ষা পায়। দিউয়ানি লাভের সুযোগ সুবিধা কোর্ট অব ডিরেক্টর্সকে জানতে গিয়ে লর্ড ক্লাইভ উল্লেখ করেন যে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা থেকে যে রাজস্ব পাওয়া যাবে তা দিয়ে, সম্রাট ও নবাবের নির্ধারিত ভাতা ও অন্যান্য সামরিক ও বেসামরিক ব্যয় বাদ দিলেও কোম্পানির হাতে প্রকৃত আয় থাকবে ১২ কোটি টাকারও অধিক।

৪. কোম্পানির পুঁজি বৃদ্ধি: লর্ড ক্লাইভ এক পত্রে কোর্ট অব ডিরেক্টর্সকে জানিয়েছিলেন যে, ঐ উদ্বৃত্ত রাজস্ব কোম্পানির গোটা বাণিজ্য বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট। ফলে দিউয়ানি লাভের আগে এ দেশে বাণিজ্য করার জন্য ইউরোপ হতে কোম্পানি যে বিপুল পুঁজি নিয়ে আসতো দিউয়ানি লাভের পর তার আর প্রয়োজন থাকে না এবং ব্যবসার সমস্ত পুঁজি প্রদেশের রাজস্ব হতেই সংগ্রহ করা হয়।

৫. অবাধ বাণিজ্য: বাংলায় দিউয়ানি লাভের ফলে কোম্পানির কর্মচারীরা শুল্কহীন অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ পায়। এতে কোম্পানির কর্মচারীদের অর্থের লোভ দিন দিন বাড়তে থাকে। অসদুপায়ে রাজস্ব আদায় করলেও কোম্পানির কর্তারা কোন পদক্ষেপ নিতেন না। এভাবে অর্থনৈতিক শোষণের ফলে এদেশের মানুষের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়।

৬. সম্পদ পাচার: কোম্পানির দিউয়ানি লাভের পর বাংলা থেকে ব্যাপকভাবে অর্থ ও সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার হতে থাকে। তাই ১৭৬৫ সালে বাংলার দিউয়ানি লাভ প্রকৃত অর্থে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এর ফলে বাংলা ধীরে ধীরে অর্থশূন্য হয়ে পড়ে। একটা পর্যায়ে এসে এদেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসে।

ব্রিটিশ আমলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা
প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল আর এই সমৃদ্ধির মূলে ছিল বাংলার কৃষি ব্যবস্থা। নদীমাতৃক বাংলার ভূমি চিরদিনই প্রকৃতির অকৃপণ আশীর্বাদে পরিপুষ্ট। এখানকার কৃষিভূমি অস্বাভাবিক উর্বর। প্রাক-ব্রিটিশ আমলে বাংলায় উৎপন্ন ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ধান, গম তুলা ইক্ষু, পাট, আদা, জোয়ার, তেল, শিম সরিষা ও ডাল। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পান, সুপারি ও নারকেল উৎপন্ন হত। বাংলার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর অর্থ আয় করা হত।

প্রাক-ব্রিটিশ আমলের কৃষি সাফল্যের উপর নির্ভর করে বাংলায় বস্ত্রশিল্প, চিনি শিল্প এবং নৌকা নির্মাণ শিল্প বিকাশিত হতে থাকে। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে কোম্পানির সিদ্ধান্তে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কৃষিপণ্য (খাদ্য শস্য) বাদ দিয়ে শুরু হয় নীলচাষ। ফলে বাংলার কৃষি নির্ভর অর্থনীতি ধ্বংস হতে শুরু করে এবং বাংলায় এক পর্যায়ে চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয়।

ব্রিটিশ আমলে বাংলার সামাজিক অবস্থা
ব্রিটিশ আমলে বাংলার সামাজিক অবস্থা প্রাক-ব্রিটিশ আমলের ন্যয় গতিশীল ছিল না। এ সময় বাংলায় হিন্দু ও মুসলমান এ দুটো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। মূলত এই দুটি ধর্মকে কেন্দ্র করেই ব্রিটিশ আমলে বাংলার সামাজিক রীতিনীতি গড়ে উঠেছিল। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল ব্রিটিশ প্রভাব। প্রাক-ব্রিটিশ আমলে অর্থাৎ বাংলায় মুসলমান শাসনকালে রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তা এবং সমাজ জীবনে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন সুলতান। এছাড়া সৈয়দ, উলেমা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ সমাজে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে বাংলার সমাজ কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

বাংলার নবাব তৎকালীন সময়ে সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হলেও তিনি ছিলেন ক্ষমতাহীন। মূলত ব্রিটিশ প্রতিনিধি এবং কোম্পানির উর্ধতন কর্মকর্তারা ছিলেন সমাজের উচ্চ স্থানীয়, এছাড়া জমিদার এবং তাদের নায়েব- গোমস্তারা সমাজে বিশেষ মর্যাদা লাভ করতেন। সমাজের নিম্ন শ্রেণিতে অবস্থান করতেন কৃষক ও প্রজারা। ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলার সমাজ কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল এবং হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছিল।

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শিক্ষানীতির প্রবর্তক মেকলে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের এখন চেষ্টা করতে হবে এমন একটা শ্রেণী সৃষ্টি করতে, যারা হবে আমাদের এবং আমরা যে লক্ষ লক্ষ লোককে শাসন করছি সেই শাসিতদের ভাবের মধ্যে আদান প্রদানকারী। এই শ্রেণির লোকেরা হবে রক্তে ও রঙে ভরতীয় এবং রুচিতে, মতে, নীতিতে ও বুদ্ধিতে ইংরেজ।’’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতের সামাজিক শ্রেণি বিন্যাস কিছুটা হলেও অনুমান করা যায়।

ব্রিটিশ আমলে বাংলার সাংস্কৃতিক অবস্থা
ব্রিটিশ আমলে বাংলায় হিন্দু ও মুসলিম সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতির পাশাপাশি নানাধরণের পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রাক-ব্রিটিশ আমলে ভারত তথা বাংলায় মুসলিম শাসকদের প্রাধান্য ছিল। ফলে তাদের সংস্কৃতির মধ্যে ইসলামী ভাবধারার প্রাধান্য থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। ১৭৫৭ সালের পর থেকে বাংলায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ফলে মানুষের চিন্তা ধারায়ও পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ব্রিটিশ ভারতের সাহিত্য চর্চায় সেটা লক্ষ করা যায়।

উনিশ শতকের বহু কবি ও সাহিত্যিক তাদের লেখনির মাধ্যমে ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার সঞ্চার করেন। এদের মধ্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাম সর্বাগ্রে। তার নাটক ও কাব্য বাংলার সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। গদ্য সাহিত্যে রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয় কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ দেশবাসীর মনে স্বদেশীকতার আদর্শ প্রচার করেন। দীনবন্ধু মিত্র তাঁর সুবিখ্যাত ‘নীলদর্পন’ নাটকে উপনিবেশবাদী ইংরেজদের নির্যাতনের এক নির্মম করুণ চিত্র নিখুত ভাবে তুলে ধরেন।
 
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. চাকলা রোশনাবাদ পরগনার রাজা মানিক্য বাহাদুর শাসন পরিচালনায় নানাবিধ অসুবিধায় সম্মুখীন হন। সমতলে সাধারণ বাঙালি, কৃষক প্রজা পাহাড়ি ত্রিপুরাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র উপজাতি প্রজার বসবাস। একদিকে হিন্দু, মুসলিম ও পাহাড়িদের ধর্মীয় বিরোধ, অন্যদিকে স্বাধীনতাকামী প্রজার জমিদারি প্রথা বিরোধী হিংসাত্মক আন্দোলন তাকে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলে। জমিদারবিরোধী আন্দোলন প্রশমনের জন্য তিনি কৌশলে প্রজাদের ধর্মীয় বিরোধে প্রণোদনা দেন। এতে ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রকট হলে, তিনি পরগনাকে দুইভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। একদল মানুষ তার পরগনা বিভক্তিকে সমর্থন করলেও আরেক দল এর তীব্র প্রতিবাদ করে। পরিশেষে তিনি পরগনা ভাগের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
ক. মুসলিম লীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি কেন গঠন করা হয়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনার সাথে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত কোন প্রশাসনিক পদক্ষেপের মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের মতো ব্রিটিশ সরকারের উক্ত পদক্ষেপের প্রতিও জনগণের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে জনমত তৈরি এবং তাদেরকে পরিবর্তিত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে 'মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি' প্রতিষ্ঠা করা হয়। নবাব আবদুল লতিফ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি' বা মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলমানদের ন্যায়সংগত দাবি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা সরকারের কাছে তুলে ধরে তা পূরণের চেষ্টা করা হতো।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনার সাথে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বঙ্গভঙ্গের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের একটি চিরায়ত নীতি হলো ভাগ কর ও শাসন কর নীতি। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে তারা শাসনাধীন অঞ্চলকে ভাগ করার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনার মূলে কুঠারাঘাত করত। এভাবে তাদের অন্যায় শাসনকে আরও স্থায়ী করার চেষ্টা চালাত। উদ্দীপকেও ব্রিটিশদের এমনই একটি কর্মকান্ড তথা বঙ্গভঙ্গের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে।
উদ্দীপকের চাকলা রোশনাবাদ পরগনার রাজা মানিক্য বাহাদুর শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের জমিদার বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখীন হন। এ বিরোধ প্রশমনের জন্য তিনি কৌশলে জনগণের মধ্যে ধর্মীয় বিরোধ উস্কে দিয়ে পরগনাকে দুইভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনুরূপভাবে ব্রিটিশ সরকার ভারতের জনগণের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখীন হয়। বিশ শতকের শুরুতে ভারতে সে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল বাঙালি মধ্যবিত ভদ্রলোকেরা। তাই ব্রিটিশ সরকার বাংলাকে বিভক্ত করে বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি নষ্ট, কংগ্রেস ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির আধিপত্য ধ্বংস করে তাদের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। আর উদ্দীপকেও এ ঘটনার প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের মতো ব্রিটিশ সরকারের উক্ত পদক্ষেপ অর্থাৎ বক্তাভঙ্গের প্রতিও জনগণের প্রতিক্রিয়া ছিল মিত্র- উদ্ভিটি সম্পূর্ণরূপে সঠিক।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, চাকলা রোশনাবাদ পরগনার রাজা মানিক্য বাহাদুর তার অধিভুক্ত পরগনাকে দুইভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। একদল মানুষ এ বিভক্তিকে সমর্থন করলেও আরেকদল এর তীব্র প্রতিবাদ করে। ঠিক একইভাবে ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধেও বাংলার হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। বক্তাভঙ্গের ফলে বাংলার হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। বাংলার মুসলমানগণ বঙ্গভঙ্গের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তা সাদরে গ্রহণ করেছিল। কেননা, এর মধ্যে তারা নিজেদের স্বার্থ। সংরক্ষণ, উন্নতি এবং একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভের সম্ভাবনা দেখতে পায়। হিন্দুদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের মুখে সরকার যেন বঙ্গভঙ্গ বাতিল না করে সে জন্য মুসলিম লীগসহ নানা সংগঠনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করতে থাকে। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গের প্রতি হিন্দুসমাজ ও কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র ও নেতিবাচক। পুঁজিপতি, শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত, জমিদার স্বার্থরক্ষায় এবং জাতীয় ঐক্যের মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলন গড়ে তোলে। তাছাড়া হিন্দুরা মনে করেছিলেন, নতুন প্রদেশে মুসলমান জনগণের রাজত্ব হবে, আর বাঙালি হিন্দুরা হয়ে পড়বে সংখ্যালঘু। কলকাতার বুদ্ধিজীবী মহল থেকে প্রচার করা হয় যে, বঙ্গভঙ্গের অর্থ হচ্ছে "মাতৃভূমিকে বিভক্ত করা"। এ সকল কারণে বঙ্গভঙ্গের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে কংগ্রেস একে রদ করার জন্য প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া ছিল ইতিবাচক। অন্যদিকে হিন্দুরা এর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।

২. বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের চেয়ে পূর্বাঞ্চলের জনগণ অনুন্নত ও অবহেলিত ছিল। পশ্চিমাঞ্চলের শাসকগোষ্ঠীর বৈরী মনোভাব আর পূর্বাঞ্চলের জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে। এ বিভক্তির ফলে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জনগণের একটি অংশ এ বিভক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। অবশেষে প্রবল আন্দোলনের মুখে দুই জার্মানিকে পুনরায় একত্রীকরণ করা হয়।
ক. বেঙ্গল প্যাক্ট কী?
খ. খেলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দুই জার্মানির বিভক্তি ব্রিটিশ বাংলার কোন ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জার্মানির পুনরায় একত্রীকরণ ও উক্ত ঘটনার পরিণতি কি একই ছিল?

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাশ মুসলিম প্রতিনিধিদের সাথে যে চুক্তি সম্পাদন করেন তা-ই বেঙ্গল প্যাক্ট নামে পরিচিত।

খ. খেলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম জাহানের খলিফার মর্যাদা এবং তুরস্কের অখ-তা রক্ষা করা ভারতীয় মুসলমানগণ মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক তুরস্কের প্রতি আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪) তুরস্কের সুলতান ব্রিটিশবিরোধী শক্তি জার্মানির পক্ষে যোগদান করে। তাই ভারতীয় মুসলমানগণ ব্রিটিশদের এ শর্তে সমর্থন দেয় যে, ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধ শেষে তুরস্কের খলিফার কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু যুদ্ধে পরাজয়ের পর ব্রিটিশরা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে ভারতীয় মুসলমানরা বিক্ষুব্ধ হয়ে খলিফার মর্যাদা ও তুরস্কের অখ-তা রক্ষার লক্ষ্যে খেলাফত আন্দোলন গড়ে তোলে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দুই জার্মানির বিভক্তি ব্রিটিশ বাংলার বঙ্গভঙ্গের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
ব্রিটিশভারতের শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর তদানীন্তন বঙ্গ প্রেসিডেন্সিকে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ নামে দুটি নতুন প্রদেশে বিভক্ত করেন। উদ্দীপকে বর্ণিত জার্মানিকে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে বিভক্তির মধ্যে উল্লিখিত বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের চেয়ে পূর্বাঞ্চলের জনগণ অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত ছিল। পশ্চিমাঞ্চলের শাসকগোষ্ঠীর বৈরী মনোভাবের প্রেক্ষিতে পূর্বাঞ্চলের জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে। ঠিক একইভাবে বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বঙ্গ প্রদেশের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ পূর্ব বাংলা পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনুন্নত ও অবহেলিত ছিল। অবিভক্ত বাংলার রাজধানী কলকাতাকে কেন্দ্র করে বাংলার সকল প্রকার অর্থনৈতিক, শিক্ষা, যোগাযোগ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। আর পূর্ব বাংলা ছিল চরম অবহেলিত। অর্থনৈতিক দিক থেকে কলকাতা ক্রমশ উন্নত হতে থাকে এবং পূর্ব বাংলার অবনতি ঘটে। এরূপ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার পূর্ববঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ও মুসলমানদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বঙ্গভঙ্গ করে। সুতরাং দেখা যায়, জার্মানির বিভক্তির মধ্যে বঙ্গভঙ্গের চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. জার্মানির পুনরায় একত্রীকরণ ও বঙ্গভঙ্গের পরিণতি ছিল।
বঙ্গভঙ্গের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। পূর্ব বাংলার জনগণের নিকট বাডা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমানরা সামাজিক মর্যাদা ফিরে পায় এবং তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম তথা সার্বিক দিকে প্রগতি নিশ্চিত করার শুভ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে, যার ফলশ্রুতিতে বাভঙ্গ রদ করা হয়। জার্মানির বিভক্তিকরণের ক্ষেত্রেও একই ফলাফল পরিলক্ষিত হয়।
জার্মানিকে পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে বিভক্ত করলে উভয় অঞ্চলের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার শুরু হয়। জনগণের একটি অংশ এ বিভক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। অবশেষে প্রবল আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে দুই জার্মানিকে পুনরায় একত্র করা হয়। ঠিক একইভাবে ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গ প্রদেশকে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ এই দুই অঞ্চলে বিভক্ত করা হলে উভয় অঞ্চলের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মুসলমান সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে সমর্থন জানালেও কলকাতাকেন্দ্রিক উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দু সমাজ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে। কারণ বঙ্গভঙ্গের ফলে তাদের অর্থনৈতিক ও পেশাগত স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাছাড়া কলকাতার বুদ্ধিজীবী মহল থেকে প্রচার করা হয় যে, বঙ্গভঙ্গের অর্থ হচ্ছে 'মাতৃভূমিকে বিভক্ত করা'। তাই বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদস্বরূপ তারা ব্রিটিশ পণ্য বর্জনে স্বদেশি আন্দোলন ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাতে থাকে। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ও হিন্দুদের প্রচন্ড বিরোধিতায় ব্রিটিশ সরকার নতি স্বীকার করে। দিল্লির রাজদরবারে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর তারা বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে দুই বাংলাকে আবার একত্র করে। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণার মধ্য। দিয়ে জার্মানির পুনরায় একত্রীকরণ ও বঙ্গভঙ্গ ঘটনার পরিণতি একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে।

৩. রফিক ও সফিক দুই ভাই। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইস্টার্ন গার্মেন্টসের মালিকানা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দ্বনে্দ্বর এক পর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, বড় ভাই রফিক গার্মেন্টস পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন এবং ছোট ভাই সফিক সংসার দেখাশোনা করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বড় ভাই গার্মেন্টস পরিচালনা এবং ছোট ভাই সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন কিন্তু গার্মেন্টসের আয় থেকে ছোট ভাইকে সংসার পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান না করায় উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। দুই ভাইয়ের দ্বনে্দ্বর কারণে বাবার প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টসটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ক. মোহামেডান লিটারারি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ক্ষমতা ভাগাভাগি বাংলায় ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে গৃহীত কোন শাসনব্যবস্থাকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের ন্যায় উক্ত শাসনব্যবস্থাও বাংলার অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নবাব আবদুল লতিফ মোহামেডান লিটারারি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা।

খ. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল।
১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লব সুপরিকল্পিতভাবে এবং সুযোগ্য নেতৃতব দ্বারা পরিচালিত হয়নি। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, দুর্বল সংগঠন, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মধ্যে একতার অভাব, সংহতি ও সর্বভারতীয় আদর্শের অভাব প্রভৃতি কারণে এ বিপ্লব সাফল্য লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে বিদ্রোহীদের তুলনায় ইংরেজরা ছিল অধিক দক্ষ, রণকুশলী, নিষ্ঠাবান ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত, যা বিপ্লবীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ক্ষমতা ভাগাভাগি বাংলায় ইংরেজ শাসনামলের প্রথমদিকে গৃহীত দ্বৈত শাসনব্যবস্থাকে ইঙ্গিত করে।
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি সনদের মাধ্যমে লর্ড ক্লাইভ বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনের একচেটিয়া অধিকার প্রাপ্ত হন। আবার নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য ক্লাইভ এ দেশে একটি অভিনব শাসনব্যবস্থা চালু করেন, যা দ্বৈত শাসনব্যবস্থা নামে পরিচিত। এতে দেওয়ানি ও দেশ রক্ষা ব্যবস্থা থাকে কোম্পানির হাতে এবং বিচার ও শাসনভার থাকে নবাবের হাতে। উদ্দীপকেও ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগির এ দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, বাবার মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত ইন্টার্ন গার্মেন্টসের মালিকানা নিয়ে রক্ষিত ও সফিক দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দ্বনে্দ্বর এক পর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, বড় ভাই রফিক গার্মেন্টস পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন এবং ছোট ভাই সফিক সংসার দেখাশোনা করবেন। তাদের এ ক্ষমতা ভাগাভাগির সাথে লর্ড ক্লাইভের গৃহীত দ্বৈতশাসন নীতির মিল রয়েছে। দ্বৈতশাসনের অর্থ হলো দুইজনের শাসন। এ ব্যবস্থায় বাংলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তি রক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব ছিল নবাবের হাতে। অন্যদিকে বাংলার রাজস্ব আদায়, দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার, জমি জায়গার বিবাদ সম্পর্কিত বিচার কোম্পানির ওপর ন্যস্ত হয়। ব্যবস্থার মাধ্যমে পূর্ণ ক্ষমতা চলে যায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে। অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় নবাব পেল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পেল দায়িত্বহীন ক্ষমতা। উদ্দীপকের দায়িত্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে দ্বৈত শাসনের এ অভিনব নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি উদ্দীপকের ন্যায় উক্ত শাসনব্যবস্থা অর্থাৎ দ্বৈত শাসনব্যবস্থাও বাংলার অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। 
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, বড় ভাই রফিক গার্মেন্টস পরিচালনা এবং ছোট ভাই সফিক সংসার দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু গার্মেন্টসের আয় থেকে ছোট ভাইকে সংসার পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান না করায় উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। দুই ভাইয়ের দ্বনে্দ্বর কারণে বাবার প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টসটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনুরূপভাবে লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে বাংলার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উদ্দীপকের দুই ভাইয়ের দ্বনে্দ্বর কারণে যেমন তাদের বাবার প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টসটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঠিক একইভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বৈতশাসনের নির্মম বলি হচ্ছে বাংলার অর্থনৈতিক জীবন। রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে নায়েব, সুবাদের উৎপীড়ন, অত্যাচার ও জোরজবরদস্তিতে বাংলায় চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এ ব্যবস্থার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ইংরেজ বণিকদের একচেটিয়া প্রভাব এবং দন্তকের ব্যাপক অপব্যবহারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশীয় বণিকেরা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে থাকে। দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে বাংলার রেশম শিল্প ও তাঁতশিল্পের ধ্বংস সাধিত হয় তাছাড়া এ ব্যবস্থার ফলে বাংলায় আলিমদার প্রথার উদ্ভব ঘটে। এ আলিমরা বিভিন্ন খাতে বাড়তি কর আদায় করত, যা জনগণের অর্থনৈতিক জীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করে। উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের মতোই দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বাংলার অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে ভেঙে দিয়েছিল, যার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল বাংলার মহাদুর্ভিক্ষ বা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।

৪. বাসির উদ্দিন মোন্না অগাধ ধন-সম্পত্তির মালিক ছিলেন। কিন্তু তিনি অপুত্রক হওয়ায় তার সমস্ত সম্পত্তি মৃত্যুর পূর্বে মেয়ের জামাই হারুন মিয়াকে উইল করে দিয়ে যান। হারুন মিয়া চরাঞ্চলের একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ হলেও তার এলাকায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই হারুন মিয়া প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ে শ্বশুরের নামে একটি কলেজ, মায়ের নামে একটি মাদ্রাসা এবং নিজের নামে একটি স্কুল অত্র এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গরিব ও মেধাবী ছেলে-মেয়েদের পড়vশোনার জন্য বৃত্তিরও ব্যবস্থা করেন।
ক. হাজি মুহম্মদ মোহসিনের পূর্বপুরুষেরা কোথাকার অধিবাসী ছিলেন?
খ. ঔপনিবেশিক যুগে বাংলার মুসলিম সমালে শিক্ষা সংস্কার প্রয়োজন হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যাসহ লেখো।
গ. উদ্দীপকের বাসির উদ্দিন মোন্নার সাথে হাজি মুহম্মদ মোহসিনের কোন আত্মীয়ের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে হারুন মিয়ার কর্মকান্ডের আলোকে হাজি মুহম্মদ মোহসিনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হাজি মুহম্মদ মোহসিনের পূর্বপুরুষেরা পারস্যের অধিবাসী ছিলেন।

খ. ঔপনিবেশিক যুগে বাংলার মুসলিম সমাজে বিদ্যমান নানা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস তাদেরকে উন্নয়নের মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে, তাই তখন শিক্ষা সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়।
যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা হারিয়ে বাঙালি জাতি এক অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিপতিত হয়। মুসলমানরা ইংরেজি শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে দেখা দেয় পশ্চাৎপদতা, অনগ্রসরতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার প্রভৃতি। তাই এ সময়ে বাংলার জনগণকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সমাজে শিক্ষা সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

গ. উদ্দীপকের বাসির উদ্দিন মোন্নার সাথে হাজি মুহম্মদ মোহসিনের বৈপিত্রেয় বোন মন্নুজানের মিল রয়েছে।
উদ্দীপকে বাসির উদ্দিন মোন্না যেমন তার অগাধ সম্পত্তি মৃত্যুর পূর্বে মেয়ের জামাই হারুন মিয়াকে উইল করে যান তেমনি মন্নুজানও তার সকল সম্পত্তি হাজি মুহম্মদ মোহসিনকে দিয়ে যান।
হাজি মুহম্মদ মোহসিনের মাতা জয়নব খানমের তার পিতা হালি ফয়জুন্নাহর সাথে বিয়ে হওয়ার পূর্বে আগা মোতাহার বলে একজন ধনাঢ্য ইরানি ব্যবসায়ীর সাথে বিয়ে হয়েছিল। মন্নুজান ছিলেন আগা মোতাহারের ঔরসজাত সন্তান। হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া অঞ্চলে আগা মোতাহারের বিস্তীর্ণ জায়গির ভূমি ছিল। তিনি তার এ ভূ সম্পত্তি তার একমাত্র সন্তান মন্নুজানের নামে উইল করে দেন। তাছাড়া মন্নুজানের স্বামী হুগলির নায়েব-ফৌজদার সালাউদ্দিনের বিপুল সম্পত্তি ছিল। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে মন্নুজান তার সম্পত্তিরও উত্তরাধিকারী হন। বিধবা নিঃসন্তান মন্নুজান তার এ বিশাল ধন সম্পত্তি তদারকি ও পরিচালনার জন্য তার ভাই হাজি মুহম্মদ মোহসিনকে অনুরোধ করেন। বোনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৮০৩ সালে মন্নুজানের মৃত্যুর পর হাজি মুহম্মদ মোহসিন তার সৈয়দপুর জমিদারিসহ সমস্ত সম্পত্তির মালিক হন। আর এসব সম্পত্তি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করেন।

ঘ. উদ্দীপকের হারুন মিয়ার মতো হাজি মুহম্মদ মোহসিনও শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
মোহসিন সকল ধর্মের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য করতেন। তার টাকায় হুগলি, ইমামবাড়া, কলেজ, মাদ্রাসা ও ছাত্রাবাস তৈরি হয়। তিনি নিজের প্রয়োজনের জন্য সামান্য অর্থ রেখে বাকি অর্থ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন। ১৭৬৮-১৭৭০ সালের সরকারি রেকর্ডপত্রে হাজি মুহম্মদ মোহসিনকে একজন মানব হিতৈষী ব্যক্তিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। হাজি মুহম্মদ মোহসিন যেমন শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং গরিব ও মেধাবী ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেন, ঠিক একইভাবে হারুন মিয়াও পশ্চাৎপদতা, অনগ্রসরতা দূর করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। হারুন মিয়া যে জনহিতৈষী কাজ করেছেন হাজি মুহম্মদ মোহসিনকে তার আদর্শ মানব বলা যায়। তার কর্মকান্ড মোহসিনের কৃতিত্বকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে হারুন মিয়া ভিন্ন আঙ্গিকে হাজি মুহম্মদ মোহসিনের কৃতিত্ব তুলে ধরেছে। তার কর্মকান্ড মোহসিনের কৃতিত্বের যথার্থ উদাহরণ।

৫. ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষে সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে এটাকে সিপাহি বিদ্রোহ বললেও আমরা বলি প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম।
ক. হাজি শরিয়ত উন্নাহর পরিচালিত সংস্কার আন্দোলন কী নামে পরিচিত?
খ. প্রাচীন কালে অনেকেই বাংলা অঞ্চলে ব্যবসা করতে এসেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে বিদ্রোহ ছিল প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম- ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী উক্ত সংগ্রামকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করেছিল- ব্যাখ্যা করো। 

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হাজি শরিয়ত উন্নাহর পরিচালিত সংস্কার আন্দোলনকে ফরায়েজি আন্দোলন বলা হয়।

খ. প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলা অঞ্চল ছিল ধন সম্পদে পরিপূর্ণ। এ অঞ্চল ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম। অর্থাৎ, মানুষের জীবনযাপনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবই তখন গ্রামে পাওয়া যেত। তাছাড়া এ উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলও নানা ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য, মসলার জন্য বিখ্যাত ছিল। এসব পণ্যের আকর্ষণেই অনেকে এদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে এসেছে।

গ. উদ্দীপকের বিদ্রোহ অর্থাৎ, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহই ছিল ভারত উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম।
মূলত ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব সিপাহিদের বিদ্রোহের মাধ্যমে সুচিত হলেও ক্রমে তা সারা ভারতে বিস্তার লাভ করতে থাকে। ফিরোজপুর, মুজাফ্ফরপুর ও আলীগড়ের সিপাহিরা বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল। এই বিপ্লবে সাধারণ জনগণও অংশগ্রহণ করে। সিপাহিরা দিল্লিতে উপস্থিত হয়ে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেয় এবং ভারতের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। অযোধ্যা ও উত্তর প্রদেশেও এই বিপ্লব তীব্র আকার ধারণ করে। আর বারানসী, আজমীর, গুজরাট, লক্ষ্ণৌ, মিরাট, জৈনপুর, বিহার ও ঢাকা অঞ্চলেও এ আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সমাজের সকল স্তরের জনগণ এ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ফলে খোদ ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে, এত বড় ভারতবর্ষকে শুধু একটি কোম্পানির হাতে রাখা ঠিক হবে না। তাই, ভারতের শাসনভার মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে ন্যস্ত করা হয়। ভারতে একজন গভর্নর জেনারেল ও একজন ভাইসরয় নিযুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, বিপ্লবের পরে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে এবং ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়। ফলে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তনে ব্যাপৃত হয়। এভাবে ১৮৫৭ সালের বিপ্লব ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আনেদালনে রূপলাভ করেছিল। আর এই বিপ্লবের মাধ্যমেই ভারতের স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হয়।

ঘ. ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী উক্ত সংগ্রামকে অর্থাৎ ১৮৫৭ সালের সংগ্রামকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করেন। 
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুনের পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজ্যবিস্তার, একের পর এক দেশীয় রাজ্যগুলো নানা অজুহাতে দখল, দেশীয় রাজন্যবর্গের মধ্যে ভীতি, অসন্তোষ ও তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে সাতারা, ঝাঁসি, নাগপুর, সম্বলপুর প্রভৃতি ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এই নীতি প্রয়োগ করে কর্ণাটের নবাব ও তাঞ্জোরের রাজার দত্তকপুত্র এবং পেশওয়ার দ্বিতীয় রাজা বাজিরাওয়ের দত্তকপুত্র নানা সাহেবের ভাতা বন্ধ করা হয়। এসব ঘটনায় দেশীয় রাজন্যবর্গ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়। তাছাড়া ডালহৌসি কর্তৃক দিল্লি সম্রাটের পদ বিলুপ্ত করায় সম্রাট পদ থেকে বঞ্চিত দ্বিতীয় বাহাদুর শাহও ক্ষুব্ধ হয়।
মূলত উল্লিখিত রাজনৈতিক কারণগুলোকে কেন্দ্র করেই ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করেছিল।

৬. ব্রিটিশ ভারতের একজন বিখ্যাত লর্ড ১৯০৫ সালে বাংলাকে দুভাগে ভাগ করে দুটি রাজধানী নির্ধারণ করে দেন। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। তবে এ বিভক্তিকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষের হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মুসলিম লীগ এ বিভক্তির পক্ষে এবং কংগ্রেস এ বিভক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেয়। 
ক. কত সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগ হয়?
খ. সৈয়দ আমীর আলীর পরিচয় দাও।
গ. উদ্দীপকে পাঠ্যপুস্তকের যে ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে তার পটভূমি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ব্রিটিশ ভারতের এ বিভক্তির প্রশাসনিক ও সামাজিক কারণ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগ হয়।

খ. উনি শতকের শেষার্ধে বাংলার মুসলিম সমাজের নবজাগরণে যেসব মনীষীর অবদান সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের মধ্যে সৈয়দ আমীর আলী অন্যতম। তিনি ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল হুগলির এক সম্ভ্রান্ত শিয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও ইতিহাসে এম. এ পাস করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেত গমন করেন। তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে মুসলমানদের দাবি-দাওয়া আদায়ে ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় Central National Mohammedan Association নামে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি মুসলিম সমাজের উন্নয়নে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। অবশেষে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে আমার পাঠ্যপুস্তকে উল্লিখিত ব্রিটিশ শাসনামলের ঐতিহাসিক ঘটনা বঙ্গভঙ্গের মিল রয়েছে। 
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশ শাসকদের 'ভাগ কর শাসন কর' নীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বঙ্গভঙ্গ। ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন প্রশাসনিক সুবিধার কথা চিন্তা করে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর তদানীন্তন বা প্রেসিডেন্সিকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। তার এ কর্মকান্ডেরই সুস্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় লর্ড কার্জন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় হয়ে এসে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। কারণ বাংলা প্রদেশ ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশসমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ। এর আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ কোটি। ফলে প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিত। এছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় আর্থ-সামাজিক সুবিধাটি নিশ্চিত করা এবং ব্রিটিশদের Divide and Rule Policy-এর বাস্তবায়ন করার জন্য এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে নস্যাৎ করার জন্য লর্ড কার্জন বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করে দুটি প্রদেশে রূপান্তরিত করেন, যা বঙ্গভঙ্গ হিসেবেই সমধিক পরিচিত। এ পরিকল্পনা অনুসারে বাংলাকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ (দার্জিলিং বাদে জলপাইগুড়ি, পার্বত্য ত্রিপুরা ও মালদাহ জেলাসহ) এবং আসাম নিয়ে 'পূর্ব-বাংলা ও আসাম' নামে একটি নতুন প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঢাকাকে নতুন প্রদেশের রাজধানী করা হয় এবং এর শাসনভার অর্পণ করা হয় স্যার ব্যামফিল্ড ফুলারের ওপর। কলকাতাকে রাজধানী করে অবিভক্ত বাংলার অন্যান্য অংশ নিয়ে ‘বঙ্গ প্রদেশ' প্রতিষ্ঠা করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনাই ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গভঙ্গেরই ইঙ্গিত দেয়।

ঘ. ব্রিটিশ ভারতের এ বিভক্তি অর্থাৎ, বঙ্গভঙ্গের পেছনে প্রশাসনিক ও সামাজিক কারণ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
লর্ড কার্জনসহ মেকেলে, রিজলে প্রমুখ ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে মূলত প্রশাসনিক কারনেই বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছিল। তাদের যুক্তি বাংলা ছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশসমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ। ফলে যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার বেহালদশা প্রভৃতি কারণে একজন গভর্নরের পক্ষে এই বিশাল প্রদেশের সুষ্ঠু শাসন কাজ পরিচালনা করা ছিল প্রায় অসম্ভব। এরূপ একটি বাস্তবতার মধ্যে লর্ড কার্জন দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রশাসনিক সুবিধার জন্যই বঙ্গ প্রদেশের বিভক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পিছনে আর্থ-সামাজিক কারণও ক্রিয়াশীল ছিল বলে অনেক পন্ডিত মনে করেন। বস্তুত কলকাতা ছিল বাংলার প্রাণকেন্দ্র। এককথায় কলকাতাকে ঘিরেই বাংলার সকল প্রকার অর্থনৈতিক, শিক্ষা, যোগাযোগ ইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। ফলে পূর্ববাংলা থাকে চরম অবহেলিত। অর্থনৈতিক দিক থেকে কলকাতা ক্রমশ উন্নত হতে থাকে এবং পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে। এই অবস্থায় ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মুসলমানদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে, বঙ্গভঙ্গের ফলে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে, তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হিসেবে স্বার্থ সংরক্ষিত হবে। এ কারণে মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন জানায়। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, রাভঙ্গের পিছনে প্রশাসনিক ও আর্থ-সামাজিক কারণ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। মূলত বঙ্গভঙ্গের জন্য আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক এ দুটো কারণই যৌক্তিক ছিল।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

৭. মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও শোষিত না হলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে না। ইংরেজরা ভারতীয়দের ওপর যে রাজস্ব নীতি গ্রহণ করেছিল তাতে কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে পড়ে। ফলে কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এছাড়া খাজনা বৃদ্ধি, পথকর, জলকর আরোপের কারণে ভারতীয়রা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। 
ক. মুহাম্মদ বিন কাসিম কত খ্রিস্টাব্দে মুলতান জয় করেন?
খ. সিন্ধু অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণ বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকে ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের যে কারণটির প্রতিচছবি ফুটে উঠেছে তার ব্যাখ্যা দাও। 
ঘ. নানা কারণে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থতার পর্যবসতি হয় বিশ্লেষণ করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১৩ খ্রিষ্টাব্দে মুলতান জয় করেন।

খ. হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিকট সিংহলরাজের প্রেরিত আটটি জাহাজ সিন্ধুর দেবল বন্দরে জলদস্যুদের দ্বারা লুষ্ঠিত হওয়াই ছিল আরবদের সিন্ধু আক্রমণের প্রত্যক্ষ কারণ।
অষ্টম শতাব্দীর শুরুর দিকে সিংহলরাজ আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ আটটি জাহাজে করে খলিফা আল ওয়ালিদ ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিকট উপঢৌকন প্রেরণ করেন। কিন্তু সেগুলো সিন্ধুর দেবল বন্দরে লুণ্ঠিত হলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাজা দাহিরের নিকট এর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। রাজা দাহির তা আদায়ে অস্বীকৃতি জানান। ফলে তিনি তাকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য খলিফার অনুমতি নিয়ে সিন্ধুতে অভিযান পরিচালনা করেন।

গ. উদ্দীপকে ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণের প্রতিচছবি ফুটে উঠেছে। 
ইংরেজ শাসনের একশ বছরে মহাজন, নীলকর, জমিদার ও কোম্পানির কর্মচারিদের অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন এ বিপ্লবের অর্থনৈতিক পটভূমি প্রস্তুত করে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিনীতির ফলে বহু ভূ সম্পত্তির মালিক তাদের সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ত্ব প্রমাণ করতে না পারায় সম্পত্তি হারিয়ে ইংরেজ কোম্পানির শাসনের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়ে। ইংরেজদের ভূমি রাজস্ব নীতির নামে ধ্বংস করা হয় দরিদ্র কৃষকের অর্থনৈতিক মেরুদদ্রোহী হয়ে ওঠে। অত্যাচারে জর্জরিত কৃষক অতিরিক্ত কর ধার্যকরণ ও নানা ব্রিটিশরা বাজার দখলের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ব্রিটেন থেকে আমদানি করতে থাকে। ফলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হতে থাকে এবং দেশীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। এছাড়া, ইংরেজ শাসনামলে খাজনা বৃদ্ধি, চৌকিদারি কর, পথকর, জলকর, যানবাহনের ওপর কর ইত্যাদি নানা রকম কর আরোপের ফলে ভারতীয়রা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। 
সুতরাং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিপর্যন্ত জনগণ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে যোগ দেয়। উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, ইংরেজ শাসনামলে গৃহীত রাজস্ব নীতি ও অর্থনৈতিক শোষণের প্রতিবাদে ভারতীয়রা একটি মহাবিদ্রোহের সূচনা করে। যা ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণটির প্রতিচছবি ফুটে উঠেছে।

ঘ. ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব ব্যাপকতা লাভ করলেও নানা কারণে এ মহাবিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সংগঠনের অভাব, উপযুক্ত নেতা ও সর্বভারতীয়দের সমর্থনের অভাব, সামরিক প্রশিক্ষণ ও রসদের অভাব, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নৌ-বাহিনী ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব এবং দেশীয় স্বার্থান্বেষী জমিদারদের অসহযোগিতার ফলে সুসংঘটিত ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে এ বিদ্রোহ সফলতা লাভ করতে পারেনি।
ইংরেজ সরকার অত্যন্ত কঠোরভাবে এ বিদ্রোহ দমন করে। ইংরেজ সেনাপতি নিকলসন ১৮৫৩ সালে দিল্লি অধিকার করেন এবং সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেয়া হয়। বিপ্লবীদের মধ্যে আদর্শ ও একতার অভাবই এ বিপ্লবের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। বিপ্লবীরা ভারতের সকল শ্রেণি ও সকল অঞ্চলের সমর্থন ও সহানুভূতি লাভ করতে পারেনি। উপরন্তু ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব তাদের বিজয়ে সাহায্য করেছিল। এর পাশাপাশি বিপ্লবীদের মধ্যে সুযোগ্য নেতার অভাব বিপ্লবের ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। ঝাঁসির রাণী, তাঁতিয়া তোপী, আহমদউন্নাহ প্রমুখ নেতাও অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের ব্যর্থতার পিছনে এ সকল কারণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।

৮. মৌলি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী। সে একদিন স্কুল শিক্ষকের কাছে জানতে পারল এই উপমহাদেশে এমনও সাহসী লোকের জন্ম হয়েছিল যিনি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বাঁশের কেল্লা স্থাপন করে যুদ্ধ করেছিলেন। সাধারণ মানুষ তখন কৃষক শ্রেণির ওপর যে কোন ধরনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার।
ক. কত খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল?
খ. বারো ভূঁইয়া বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে যে মনীষীর বিপ্লবী চেতনা প্রকাশিত হয়েছে তার ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. এই ধরনের একজন মনীষীর আন্দোলন সংগ্রাম বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল।

খ. 'বারো ভূঁইয়া' বলতে বাংলার ইতিহাসে কতিপয় স্বাধীনচেতা জমিদারদেরকে বোঝায়। 
বাংলার ইতিহাসে বার ভূঁইয়াদের আবির্ভাব ষোল শতকের মধ্যবর্তীকাল হতে সতের শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। এ জমিদারগণ তাদের নিজ নি জমিদারিতে স্বাধীন ছিলেন। তাদের শক্তিশালী সৈন্য ও নৌবহর ছিল। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এরা মুঘল সেনাপতির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ইতিহাসে এ জমিদারগণ বারো ভূঁইয়া' নামে পরিচিত। "বারো" বলতে সংখ্যায় বোঝানো হয় না বরং এ জমিদারদের সংখ্যা ছিল বারো জনের অধিক।

গ. উদ্দীপকে মৌলির শিক্ষকের দেওয়া তথ্যে তিতুমীরের চেতনা প্রকাশিত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম অস্ত্র ধারণ করে শহিদ হয়েছিলেন। 
স্থানীয় জমিদার ও নীলকররা তিতুমীরের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে তারা তিতুমীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে প্ররোচিত করে। এ প্রক্রিয়ায় তারা প্রথমে ভিতুমীরকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে। ফলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাকে শায়েস্তা করার জন্য হুমকি প্রদান করে। এ পরিস্থিতিতে তিতুমীর ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৮২৫ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যা 'বারাসাত বিদ্রোহ' নামে পরিচিত। এ বিপ্লবের সংবাদে বারাসাতের ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডার বিরাট এক পুলিশ বাহিনী নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অগ্রসর। কিন্তু তিতুমীরের সুযোগ্য নেতৃত্বে ও গোলাম মাসুম খানের হন। সেনাপতিত্বে গণবাহিনী ইংরেজ বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে। পরাজিত করে। এরপর তিনি ১৮৩১ সালে কলকাতার নিকটবর্তী নারকেলবাড়িয়া নামক স্থানে এক বিপ্লবী কেন্দ্র স্থাপন করেন এবং চতুর্দিকে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। তবে ব্রিটিশ বাহিনীর তীব্র আক্রমণে বাঁশের কেল্লা ধবংস হয় এবং তিতুমীর ব্রিটিশদের হাতে ধৃত ও নিহত হন। 
পরিশেষে বলা যায় যে, তিতুমীর ছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদী নেতৃত্ব।

ঘ. উদ্দীপকের ইঙ্গিতকৃত নেতা অর্থাৎ তিতুমীরের আন্দোলন-সংগ্রাম বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। 
তিতুমীর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন পরিচালনা করেও ১৮৩১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার এ সংগ্রাম বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের পথকে ত্বরান্বিত করেছিল। কেননা তার এ আন্দোলনে সাড়া দিয়েই বাংলার নিরীহ জনগণ পরবর্তীতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। ফলে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটেছিল এবং রানির সরাসরি শাসন কায়েম হয়। আর পরবর্তীতে মুসলমানদের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের কর্ম প্রক্রিয়ায় মুসলমানরা অধিকার আদায়ের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। আর এর ব্যাপকতা আরও লক্ষ করা যায় ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন ও বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ভারতের ব্রিটিশ শাসনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল। তাছাড়া পরবর্তীতে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে নিপতিত করে। এছাড়া তিতুমীর বাংলার নিরীহ দরিদ্র কৃষক সম্প্রদায়ের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের সংগঠিত করেছিল যা বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের পথকে বুদ্ধ করেছিল। তাছাড়া জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে তিতুমীরের সংগ্রামে উজ্জ্বীবিত হয়ে বাংলার মানুষ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নেমে পড়েছিল। যা বাংলার স্বাধীনতার সূর্য উদয়নে সাহায্য করেছিল।

৮. ভিয়েতনামে ফরাসি উপনিবেশিক শাসন ছিল। তারা ভিয়েতনামকে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে বিভক্ত করে। এতে উত্তর দক্ষিণ ভিয়েতনামের জনগণ আন্দোলন শুরু করে এবং দুই অংশ আবার ১৯৭৬ সাথে একত্রিত হয়। 
ক. বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন কে?
খ. ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে মহাবিদ্রোহ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে কোন অঞ্চলের বিভক্তির মিল রয়েছে?ইহা রদের কারণ কী ছিল?
ঘ. উক্ত রদের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর।

খ. ভারতের সর্বস্তরের মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ সিপাহিদের মধ্য দিয়েই সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তাই কোন কোন ঐতিহাসিক ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে মহাবিদ্রোহ বলেন।
ঐতিহাসিক নর্টন, ফরেস্টার, ডাফ প্রমূখ মনে করেন যে, ১৮৫৭ সালের বিপ্লব সিপাহিদের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও কালক্রমে তা জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। মূলত ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিপ্লব ছিল একটি সর্বাত্মক ও সশস্ত্র সংগ্রাম। তাই একে মহাবিদ্রোহ বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের সাথে ব্রিটিশ শাসিত বাংলায় 'বঙ্গভঙ্গ' তথা বাংলা বিভক্তির মিল রয়েছে। বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ছিল হিন্দুসমাজ ও কংগ্রেসের স্বদেশি আন্দোলন। 
১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গের মানুষের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে ও প্রশাসনিক সুবিধার্থে বঙ্গভঙ্গ করা হয়। কিন্তু ভঙ্গভঙ্গ বিরোধী হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিরা এতে আপত্তি জানায়। কংগ্রেস বিলেতি পণ্য বর্জন তথা স্বদেশি আন্দোলন শুরু করে এবং আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার উত্তেজনাকর খবর সম্পাদকীয় লেখা হতে থাকে। ক্রমে এই আন্দোলন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে রূপ লাভ করে। অবস্থাদৃষ্টে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং বিক্ষোভ ও হত্যাযজ্ঞের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। অবশেষে ১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাসে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ ছিল কিছু সংখ্যক হিন্দু নেতাদের ধর্মীয় গোঁড়ামী ও কংগ্রেসের স্বদেশি আন্দোলন।

ঘ. বঙ্গভঙ্গ রদের প্রতিক্রিয়া ছিল সুদূরপ্রসারী।
১৯১১ সালে কংগ্রেস ও হিন্দু নেতাদের চাপের মুখে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়। বঙ্গবঙ্গ রদের ফলে পূর্ব বাংলার মুসলমানগন হতাশ হয়ে পড়েন। তারা ব্রিটিশ সরকারের নীতির ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়েন। এ ঘটনা থেকে মুসলমানগণ শিক্ষালাভ করে যে, স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল হতে হলে আরও অধিক সংগঠিত হতে হবে। এছাড়া বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণার পর পর ৩০ ডিসেম্বর নবাব সলিমুন্নাহর আহবানে উভয় বাংলার নেতৃস্থানীয়দের সভায় ভাইসরয়ের কাছে মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি স্মারকলিপি উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানরা নিজেদের স্বার্থ ও স্বাতন্ত্রবোধে আরও পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপনের জন্য মুসলিম লীগ মুসলমানদের মুখপাত্রে পরিণত হয়। শুধু পূর্ব বাংলায় নয় ১৯১২ সাল বঙ্গীয় মুসলিম লীগ কলকাতায় গঠিত হয়। পরবর্তীকালে এ দলই পূর্ব বাংলার মুসলমানদের নেতৃত্বে দেয়। এভাবে মুসলিম লীগের হাত ধরেই। এসেছিল ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ। ফলে ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ স্থায়ী হতে পারেনি এবং নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম লাভের মধ্য দিয়ে বঙ্গের ভাগও নিশ্চিত হয়েছিল।

৯. 'ক' অঞ্চলের এক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী যুদ্ধে বিদেশি শক্তি উক্ত অঞ্চলের স্থানীয় অমর্তদের সহযোগিতায় ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অনুপ্রেণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শাসককে পরাজিত করে প্রত্যক্ষভাবে শাসন কার্যে অংশগ্রহণ না করে পরোক্ষভাবে শাসন করতে থাকে এবং ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। ফলে উক্ত অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ হয় এবং এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়।
ক. বাঁশের কেল্লা কে নির্মাণ করেন?
খ. ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ কেন সংঘটিত হয়েছিল?
গ. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় ক্ষমতা গ্রহণ উদ্দীপকের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত ক্ষমতা গ্রহণ পরবর্তীতে ভারতীয় রাজনীতিতে কী কী প্রভাব ফেলেছিল- ব্যাখ্যা করো। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন মীর নিসার আলী তিতুমীর।

খ. ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ সংগঠিত হবার পেছনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সামরিক বৈষম্য দায়ী ছিল। পলাশির যুগের পর থেকে ইংরেজরা শাসনাকর্মে হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে এদেশের জনগণকে সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সামরিক নানা দিক দিয়ে শোষণ করতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে দেশের জনগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ও ১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয় বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল সামরিক বাহিনীতে 'এনফিল্ড রাইফেলের' ব্যবহার।

গ. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলায় ক্ষমতা গ্রহণ উদ্দীপকের সাথে পরিপূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১৭৬৫ সালে দেওয়ানি সনদের মাধ্যমে লর্ড ক্লাইভ বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনের একচেটিয়া অধিকার প্রাপ্ত হন। আবার নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য ক্লাইভ এ দেশে একটি অভিনব শাসনব্যবস্থা চালু করেন, যা দ্বৈত শাসনব্যবস্থা নামে পরিচিত। এতে দেওয়ানি ও দেশ রক্ষা ব্যবস্থা থাকে কোম্পানির হাতে এবং বিচার ও শাসনভার থাকে নবাবের হাতে। উদ্দীপকেও ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগির এ দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকেও লক্ষ্যুীয় যে, ক অঞ্চলের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী যুদ্ধে বিদেশি শক্তি উক্ত অঞ্চলের স্থানীয় অমর্ত্যদের সহায়তায় ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শাসকে পরাজিত করে এবং প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ না করে পরোক্ষভাবে শাসন করতে থাকে যা ইতিহাসের দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলার শাসনের অধিকার দুটি পৃথক সংস্থার হাত চলে যায়। কোম্পানি দেওয়ানি পেলেও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেয় নায়েবে নাজিম রেজা খানের হাতে এবং নবাবের নিয়মিত ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগে নবাবের কোন ক্ষমতা ছিল না। মূল ক্ষমতা ছিল কোম্পানির হাতেই। যার ফলশ্রুতিতে বাংলায় পরবর্তীতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। উদ্দীপকেও আমরা এ ঘটনার প্রতিফলন দেখতে পাই।

ঘ. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা গ্রহণ অর্থাৎ দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা ভারতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। 
১৭৬৫ সালে দেওয়ানি সনদের মাধ্যমে লর্ড ক্লাইভ বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনের একচেটিয়া অধিকার প্রাপ্ত হন। আবার, নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য ক্লাইভ এ দেশে একটি অভিনব শাসনব্যবস্থা চালু করেন, যা দ্বৈত শাসনব্যবস্থা নামে পরিচিত। এতে দেওয়ানি ও দেশ রক্ষা ব্যবস্থা থাকে কোম্পানির হাতে এবং বিচার ও শাসনভার থাকে নবাবের হাতে। উদ্দীপকেও ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগির এ দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়।
কোম্পানির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীগনের দায়িত্বহীনতার কারণে প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল; দ্বৈতশাসন অনুসারে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার অর্থনৈতিক দায় দায়িত্ব কোম্পানির হাতে ন্যস্ত হওয়ায় কোম্পানির কর্মচারি ও বণিকরা রাতারাতি প্রশাসক বনে যায়। এসব তথাকথিত প্রশাসকদের ভারতীয় রাজস্ব রীতিনীতি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় ইংল্যান্ডের রীতিনীতি ভারতে প্রয়োগ করতে থাকেন। এতে প্রশাসনিক জটিলতা মারাত্মক আকার ধারণ করে। পি ই রবার্টস বলেন, বাংলার নবাব এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মদ্যকার প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিল খুবই জটিল এবং দুর্বোধ্য; দ্বৈতশাসনের ফলে রাজনৈতিক ও পরোক্ষভাবে প্রশাসনিক ক্ষমতালাভের সাথে সাথে কোম্পানির কর্মচারীদের অবৈধ ব্যবসায়-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে। দ্বৈতশাসন বাংলায় কোম্পানির চরম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। বৈদেশিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলার জন্য নবাবকে কোম্পানির সাহায্যের উপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়। দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উডw়ষ্যার রাজস্ব সরাসরি আদায় করার ক্ষমতা অর্জন করে। তাছাড়া নায়েব সুবাদার নিয়োগ করার ক্ষমতা কোম্পানি সংরক্ষণ করার সুবাদে নিয়ামতের সাধারণ প্রশাসনের উপর কোম্পানির চরম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়; এবং দ্বৈতশাসনে নবাবের পক্ষে রেজা খান রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে তৎপরতা দেখালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চরম অবহেলা প্রদর্শন করেন। দেশে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবনে চরম অরাজকতা ও নিরাপত্তাহীনতা নেমে আসে। সুতরাং বলা যায় যে, দ্বৈত শাসনের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

১০. মনিকা একদিন তার ইতিহাসের শিক্ষকের কাছে জানতে পারল, এই উপমহাদেশে এমনও সাহসী লোকের জন্ম হয়েছিল যিনি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বাঁশের কেল্লা স্থাপন করে যুদ্ধ করেছিলেন। সাধারণ মানুষ তথা কৃষক শ্রেণির ওপর যে কোনো ধরনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। জোরপূর্বক অলাভজনক এক ধরনের ফসল ফলাতে কৃষকদের বাধ্য করার কারণে তিনি জমিদার ও শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত তৈরি করতে সক্ষম হন।
ক. কত সালে সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল?
খ. বঙ্গভঙ্গের রাজনৈতিক কারণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে যে মহান ব্যক্তির বিপ্লবী চেতনা প্রকাশিত হয়েছে তার ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ব্যাখ্যা করো।
ঘ. এই ধরনের একজন মহান ব্যক্তির আন্দোলন সংগ্রাম বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল মূল্যায়ন করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লব সংঘটিত হয়। 

খ. বঙ্গভঙ্গের পিছনে রাজনৈতিক কারণই মুখ্য ছিল বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বিশেষ করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। বঙ্গভঙ্গ ছিল ব্রিটিশ সরকারের চিরাচরিত ভাগ কর ও শাসন কর (Divide and rule Policy) নীতির বহিঃপ্রকাশ। ফলে কলকাতাকেন্দ্রিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে নস্যাৎ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্যেই লর্ড কার্জন বাংলাকে বিভক্ত করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাহসী নেতা হলেন মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর। তিনিই প্রথম ব্রিটিশদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেন।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, মনিকা এমন একজন নেতার গল্প শুনল যিনি অত্যাচারী এক শাসকের বিরুদ্ধে বাঁশের কেল্লা স্থাপন করে যুদ্ধ করেছিলেন। এখানে মূলত তিতুমীরের কথা বলা হয়েছে। কেননা তিনি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত মহকুমার অন্তর্গত চাঁদপুর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সকল মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করেছেন। নীলকরদের অত্যাচার-নিপীড়নের দৃশ্যে মর্মাহত হয়ে তিতুমীর আইনি লড়vইয়ে অবতীর্ণ হয়ে কোনো সুবিচার না পেয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন। তিনি নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশের কেরা স্থাপন করেন। প্রাথমিকভাবে ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে প্রেরিত ইংরেজ সশস্ত্র বাহিনীকে তিনি পরাজিত করেন। পরবর্তীতে ইংরেজরা কর্নেল স্টুয়ার্টের অধীনে একটি শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করলে তিতুমীর ও তার অনুসারীরা তাদের বিপক্ষে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। কামান ও গোলাবর্ষণে বাঁশের কেল্লা ধবংস হয় এবং তিতুমীর পরাজিত হন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে তিতুমীরের এ সংগ্রামের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ঘ. এ ধরনের একজন নেতা অর্থাৎ তিতুমীরের আন্দোলন বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল- উক্তিটি যথার্থ। 
পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন অনেক নেতার সন্ধান পাওয়া যায়, যারা তাদের জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত জনগণের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। তারা অনিয়ম অবিচারের বিরুদ্ধে নিজেদেরকে যুদ্ধে নিয়োজিত করেছেন। হয়তো তারা সাময়িকভাবে পরাজিত হয়েছেন, তথাপি তাদের এ সকল আন্দোলন সংগ্রামের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এমনই একজন নেতা ছিলেন তিতুমীর। তিনি ইংরেজদের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হন। তবে তার আন্দোলনের প্রভাব ছিল ব্যাপক। তিতুমীরের বিদ্রোহ সফল হয়নি সত্য, তবে একে কোনোভাবেই নিরর্থক বলা যাবে না। অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে তদানীন্তন বাংলার নিপীড়িত কৃষক ও তাঁতীকূলের সমন্বয়ে পরিচালিত তিতুমীরের আন্দোলনকে একটি গণবিপ্লব বলা যেতে পারে। তার ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। ইংরেজদের গোলাবারুদ নীলকর, জমিদারদের আক্রমণের মুখে তার বাঁশের কেল্লা ছিল দুঃসাহস আর দেশপ্রেমের প্রতীক, যা যুগে যুগে বাঙালিকে বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহস যুগিয়েছে। এ ইংরেজবিরোধী সংগ্রাম পরবর্তীকালের সকল আন্দোলনের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। তিতুমীরের বিদ্রোহ সফল না হলেও এটি পরবর্তীকালে ভারতীয়দের মুক্তির সংগ্রামের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে যে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ১৮৫৭ সালের মহা বিদ্রোহের মূলে তিতুমীরের এ বিপ্লব প্রেরণা উদ্রেককারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল। এভাবেই এ সংগ্রাম বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরো তবরান্বিত করেছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post