এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
প্রাথমিক আলোচনাঃ
ভারত উপমহাদেশে মুঘল শাসন (১৫২৬-১৫৫৮ খ্রি.)
ভারতবর্ষে মুঘল রাজবংশের সূচনা ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ও মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। ১৫২৬ খ্রি. জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই বংশ কয়েক শতাব্দি ধরে শাসন পরিচালনা করে। জানা যায় যে, মুঘল শব্দটি এসেছে ‘মোঙ্গ’ বা ‘মোঙ্গল’ শব্দ হতে। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ছিলেন পিতার দিক থেকে চেঙ্গিস খান এবং মাতার দিক হতে তৈমুর লঙ এর বংশধর। মুঘল বংশ প্রাথমিকভাবে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রন ও শক্তি নিয়ে ১৫২৬-১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষে শাসন পরিচালনা করে।
পরবর্তীতে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে বাংলার স্বাধীনতা হারালে পরবর্তী ১০০ বছর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল শাসকগণ নামমাত্র শাসক হিসেবে পরিণত হয়। তবে গৌরব ও আধিপত্যের যুগে মুঘলরা ছিল পারস্যের সাফাভী ও তুরস্কের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দী। এই বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন আকবর, সম্রাট জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও আওরঙ্গজেব প্রমুখ। আকবর ছিলেন রাজ্যবিজেতা, সমরকূশলী এবং প্রজ্ঞাবান ও কূটনৈতিক শাসক।
শিল্পকলা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও স্থাপত্য বিদ্যায় নৈপুন্য দেখিয়েছেন সম্রাট জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান। গোঁড়া সুন্নী মতবাদ ও ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য আওরঙ্গজেব ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে অবসানের আগ পর্যন্ত মুঘল বংশই ছিল ভারতের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এবং শক্তি ও সংহতির উৎস, এই বংশের অবসানের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যায়।
পানিপথের প্রথম যুদ্ধ (২১ এপ্রিল, ১৫২৬ খ্রি.)
পানিপথ বর্তমান ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত। ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে বাবর কাবুল থেকে আগমন করে পাঞ্জাবের শাসক দৌলত খান লোদীকে পরাজিত করে লাহোর তথা সমগ্র পাঞ্জাব অধিকার করেন। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল লোদী বংশের সর্বশেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদী ও জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবরের মধ্যে ঐতিহাসিক পানিপথের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ‘তুযুক-ই-বাবুরী’ বা ‘বাবরনামা’র বিবরণ অনুযায়ী পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সেনাবাহিনীতে ছিল ১২,০০০ পদাতিক, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অশবারোহী ও গোলনদাজ।
এই যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীর সৈন্যবাহিনীতে ছিল ১,০০,০০০ সৈন্য ও ১০০ হস্তী। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর সর্বপ্রথম এই যুদ্ধে কামানের ব্যবহার করেন। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাবর ইব্রাহিম লোদীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও নিহত করেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয় লাভ করার মাধ্যমে লোদী বংশের পতন ঘটে। ফলে উপমহাদেশে সুলতানি শাসনের অবসান ঘটে এবং মুঘল বংশের রাজত্ব শুরু হয়।
যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের কারণ
পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের পশ্চাতে অন্যতম কারণ ছিল। যথা-
১. বাবরের তুলনায় ইব্রাহিম লোদীর সৈন্যসংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশী হওয়া সত্ত্বেও বাবরের সৈন্য বাহিনী ছিল সুশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল।
২. বাবর এই যুদ্ধে কামানসহ অন্যান্য উন্নত মানের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেন, যা ইব্রাহিম লোদীর কাছে অজানা ছিল।
৩. বাবর ছিলেন একজন দৃঢ় চরিত্রবান ও কুশলী সৈন্যাধ্যক্ষ। অন্যদিকে ইব্রাহিম লোদী ছিলেন সৈন্য পরিচালনা ও যুদ্ধবিদ্যায় একজন সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ব্যক্তি।
৪. সেনাপতি ওস্তাদ আলী ও মোস্তফার নেতৃত্বে গোলন্দাজ বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা ও সুনিপুণ যুদ্ধ কৌশল বাবরের সফলতার অন্যতম কারণ।
৫. নানা জাতির অভিজ্ঞ সৈন্যদের নিয়ে গঠিত আফগান বাহিনীর মধ্যে কোন একতা ছিল না। অন্যদিকে বিভিন্ন জাতির সৈন্যদের সমন্বয়ে বাবরের সেনাবাহিনী গঠিত হলেও তারা ছিল বাবরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
৬. ইব্রাহিম লোদীর নিষ্ঠুর আচরণের ফলে আমির ওমরাহ ও আত্মীয় স্বজন ছিল তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট, যা বাবরের অনুকূলে ছিল।
শীর্ষস্থানীয় মুঘল সম্রাটগণ ও শাসনকাল
১. জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর (১৫২৬-১৫৩০)
২. সম্রাট হুমায়ুন (১৫৩০-১৫৪০)
৩. সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৫৬০)
৪. সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭)
৫. সম্রাট শাহজাহান (১৬২৮-১৬৫৮)
৬. সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-মার্চ ১৭০৭)
মুঘল সাম্রাজ্যের পতন
আওরঙ্গজেব পরবর্তী মুঘল সম্রাটগণ
১৭০৭ খ্রি. সম্রাট আওরঙ্গজেব মৃত্যুবরণ করেন। আওরঙ্গজের পরবর্তী মুঘল শাসকগণ হলেন যথাক্রমে;
১। বাহাদুর শাহ (১৭০৭-১২)
২। জাহাঙ্গীর শাহ (১৭১২-১৩)
৩। ফররুখ শিয়ার (১৭১৩-১৯)
৪। মুহাম্মদ শাহ (১৭১৯-৪৮)
৫। আহমদ শাহ (১৭৪৮-৫৪)
৬। দ্বিতীয় আলমগীর (১৭৫৪-৫৯)
৭। দ্বিতীয় শাহ আলম (১৭৫৯-১৮০৬)
৮। দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬-৩৭)
মুঘল বংশের সর্বশেষ শাসক ছিলেন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। তিনি কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তবে ইংরেজদের বেতনভোগী পুতুল সম্রাট ছাড়া তিনি আর কিছুই ছিলেন না। ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসন বিরোধী সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার জন্য তাকে দায়ী করে ইংরেজরা এবং রেঙ্গুনে (ইয়াংগুন) নির্বাসন দেয়। সেখানেই তার জীবনাবসান ঘটে এবং এরই মধ্য দিয়ে ১৫২৬ সালে জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মহাপরাক্রমশালী মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
১. খলিফা আল হাকিম তাঁর রাজ্যের সকল ধর্মাবলম্বীকে একই পতাকাতলে আনার জন্য একটি ধর্মমত প্রচলন করেন। কিন্তু এ ধর্মমতটি জনগণের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে না পারায় তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে এর ইতি ঘটে।
ক. ‘পানিপথের প্রথম যুদ্ধ’ কত সালে সংঘটিত হয়?
খ. ‘মনসবদারি প্রথা’ কী? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের সাথে কোন মুঘল শাসকের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত মুঘল শাসকের রাজপুত নীতি পাঠ্যবইয়ের আলোকে মূল্যায়ন করো।
❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ১৫২৬ সালে সংঘটিত হয়।
খ. সম্রাট আকবর সেনাবাহিনীতে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের অব্যবস্থা দূর করার লক্ষ্যে ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে শাহবাজ খানকে মীর বকশী (সামরিক বাহিনীর প্রধান) নিয়োগ করে যে পরিকল্পনাটি গ্রহণ করেন তাই মনসবদারি প্রথা নামে পরিচিত। ‘মনসব’ শব্দের অর্থ পদ বা মর্যাদা। এ পদের অধিকারীকে ‘মনসবদার’ এবং সমগ্র ব্যবস্থাটিকে ‘মনসবদারি প্রথা’ বলা হয়। এ ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনসবদারের মোট দশ হাজার এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১০ জন সৈন্য সংরক্ষণের নিয়ম ছিল।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত খলিফা আল হাকিমের সাথে মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন আকবরের মিল রয়েছে।
মুঘল সম্রাট আকবর ছিলেন সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ এবং দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। তাই নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাকে তিনি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই সব ধর্মের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তিনি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার মাধ্যমে নিজেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে একটি নতুন ধর্মমতের প্রবর্তন করেন। এটি 'দীন-ই-এলাহী' নামে পরিচিত। তবে উদ্দেশ্যগত দিক দিয়ে তার এ প্রচেষ্টা সফল হয়নি, যেমনটি খলিফা আল হাকিমের প্রবর্তিত ধর্মমতের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়।
খলিফা আল হাকিম রাজ্যের সকল ধর্মাবলম্বীকে একই পতাকাতলে সমাসীন করতে একটি নতুন ধর্মমত চালু করেন। কিন্তু এটি তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। একই পরিস্থিতি সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত 'দীন-ই-এলাহী ধর্মমতের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। মুঘল সম্রাট আকবরও সুদহী-ই-কুল (ধর্মীয় সহিঞ্চুতা) নীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভারতের বুকে ‘দীন-ই-এলাহী' নামক একটি জাতীয় ধর্ম প্রবর্তন করেন। ঐতিহাসিক বাদাউনী এটিকে তৌহিদ-ই-এলাহী বা ঐশী একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে অভিহিত করেন। ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, সব ধর্মের উৎকৃষ্ট নীতিমালার সমন্বয়ে গঠিত এটি একটি সর্বেশ্বরবাদী ধর্ম। বস্তুত এটিকে একটি স্বতন্ত্র ধর্ম না বলে ধর্মীয় মতবাদ হিসেবে অভিহিত করাই সমীচীন। এই মতবাদের অনুসারীবৃন্দকে সম্রাটের নামে তাদের সম্পত্তি, জীবন, সম্মান ও ধর্ম এই চারটি জিনিস উৎসর্গ করতে হতো। এ ধর্মের বিধান অনুযায়ী সম্রাটকে সিজদাহ করতে হতো। তবে মাত্র ১৮ জন এ ধর্মমত গ্রহণ করেছিলেন। আর সম্রাট আকবরের মৃত্যুর সাথে সাথে এ ধর্মমতের বিলোপ ঘটে। সুতরাং বলা যায়, আল হাকিমের সাথে সম্রাট আকবরের মিল রয়েছে।
ঘ. উক্ত সম্রাটের অর্থাৎ সম্রাট আকবরের 'রাজপুত নীতি' ছিল তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার এক অনন্য পরিচায়ক।
সম্রাট আকবর উপলব্ধি করেছিলেন যে, সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধিশালী করতে হলে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী রাজপুতদের সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থন অপরিহার্য। এ জন্য তিনি রাজপুত বংশের সাথে বৈবাহিক মিত্রতা স্থাপন করেন। এভাবে তিনি রাজপুতদের বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতি লাভে সক্ষম হন। আবুল ফজলের 'আইন-ই-আকবরী' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, আকবর রাজপুতদের প্রশাসনিক ও সামরিক বিভাগের উচ্চপদগুলোতে নিযুক্ত করে তাদের সহানুভূতি ও সহযোগিতা লাভ করেন। আবার, বিজিত রাজ্যগুলোর শাসনভার রাজপুতদের হাতে ছেড়ে দিয়ে সাম্রাজ্যের ভিতকে শক্তিশালী করেন।
রাজপুতদের প্রতি সম্রাটের বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব ও সদয় আচরণ ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস এক নবযুগের সূচনা করে। এর ফলে রাজ্যবিস্তার ও রাজ্যশাসনের ব্যাপারে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক উন্নতি ও প্রগতির ক্ষেত্রে হিন্দু তথা রাজপুতরা অনস্বীকার্য অবদান রাখে। রাজপুতদের প্রতি আকবরের উদার আচরণের ফলে ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুজাতি আকবরকে বিদেশি শাসক বলে মনে করেননি। তাদের সাহায্যেই আকবর বিস্তীর্ণ মেবার অধিকার করতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং রাজপুত সেনানিদের সাহায্যেই আকবরের বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল। সম্রাট আকবর কখনই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিংবা ধর্মীয় উদ্দেশ্য নিয়ে রাজপুতনায় হস্তক্ষেপ করেন নি। প্রকৃতপক্ষে সম্রাট আকবর সমস্ত রাজপুতদের নিজ রাজ্যের অংশীদার করে নেওয়ায় সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায় মুঘল সাম্রাজ্যের অনুগত হয়ে পড়েছিল। রাজপুত নীতিই আকবরকে মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে উদারতার এক মূর্ত বিগ্রহে পরিণত করেছে। এ নীতির সূত্র ধরেই তিনি 'মহামতি' আখ্যায় ভূষিত হয়েছেন। উপর্যুক্ত আলোচনা হতে একথা সুস্পষ্ট যে, সম্রাট আকবরের রাজপুত্র নীতির কারণে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ় ও শতাধিক বছর স্থায়ী হয়েছিল।
২. মাহমুদা আক্তারের স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানির মালিক। কোম্পানির বিভিন্ন কাজে মাহমুদা তার স্বামীর উপর প্রভাব বিস্তার করেন। তিনি তার দুই ভাইকে কোম্পানির উচ্চপদে বসান। এক পর্যায়ে মাহমুদার প্রভাবের কারণে তার স্বামী কোম্পানির নামমাত্র মালিকে পরিণত হন।
ক. কোন সম্রাট তাজমহল নির্মাণ করেন?
খ. সম্রাট আওরঙ্গজেবকে 'জিন্দাপীর’ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে মাহমুদা আক্তারের মধ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নূরজাহানের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. চারিত্রিক মিল থাকলেও উদ্দীপকের মাহমুদা আক্তার এবং পাঠ্যবইয়ের নূরজাহানের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন-ব্যাখ্যা করো।
❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেন।
খ. ইসলামি অনুশাসনের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান হওয়ার কারণে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে জিন্দাপীর বলা হতো। সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন খাঁটি সুন্নি মুসলমান। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের বিধি-বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চললেও তিনি পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণু ছিলেন। আকবরের শাসনামলে যে ধর্মের বন্ধন অত্যন্ত শিথিল হয়ে পড়েছিল আওরঙ্গজেব তা পুনরুজ্জীবিত করেন। এটা করতে গিয়ে হিন্দুদের কাছে তিনি অপ্রিয় হলেও মুসলমানদের নিকট হতে 'জিদাপীর' উপাধি লাভ করেন।
গ. উদ্দীপকের মাহমুদা আক্তারের মধ্যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূরজাহানের স্বামীর ওপর প্রভাব বিস্তারের দিকটি ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত মাহমুদা আক্তার স্বামী ও স্বামীর কোম্পানির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেন। তিনি তার ভাইকে কোম্পানির উচ্চপদে বসিয়েছেন। কোম্পানির নানা কাজে মাহমুদার পরামর্শ ও প্রভাবের কারণে তার স্বামী কোম্পানির নামমাত্র মালিকে পরিণত হন। তার মতো মুখ সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূরজাহানেরও স্বামীর ওপর অপরিসীম প্রভাব ছিল। নূরজাহান অসামান্য রূপলাবণ্যের অধিকারী ছিলেন। প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তার গুণে গুণান্বিত ছিলেন বলে রাজ পরিবারের সর্বত্রই তার অপরিসীম প্রভাব ছিল। জাহাঙ্গীরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তিনি তার আত্মীয়স্বজন ও দলীয় লোকদের রাজ্যের উচ্চপদে নিযুক্ত করেন। তার পিতা এবং ভ্রাতাকে জাহাঙ্গীরের উজির নিযুক্ত করেন। নূরজাহান সাম্রাজ্যে অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। মুদ্রায়ও সম্রাটের নামের সাথে তার নাম অঙ্কিত হতো। তার ক্ষমতা এতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল যে জাহাঙ্গীর একজন নামমাত্র সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন। উদ্দীপকে মাহমুদা আব্বার মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর এ একক কর্তৃত্ববাদীর গুণটিই ধারণ করেছে।
ঘ. চারিত্রিক মিল থাকলেও উদ্দীপকের মাহমুদা আক্তার এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূরজাহানের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন- উক্তিটি যথার্থ।
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে নূরজাহানের প্রেম-প্রণয় ও প্রভাব বিস্তার মুঘল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নূরজাহানের প্রকৃত নাম মেহের উন নিসা। তার পিতা পারস্যের অধিবাসী মির্জা গিয়াস বেগ ভাগ্যান্বেষণে ভারতে আগমন করেন। নানা ঘটনাপ্রবাহে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সাথে নূরজাহান পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তিনি জাহাঙ্গীরের ওপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন যার দরুন অনেকে বলতে বাধ্য হন যে জাহাঙ্গীর নয়, নূরজাহানই সম্রাজ্ঞী ছিলেন।
নূরজাহানের চরিত্রের সাথে উদ্দীপকে বর্ণিত মাহমুদা আব্বারের মিল থাকলেও তাদের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মাহমুদা আক্তারকে শুধু কোম্পানির ক্ষমতা দখল করতে দেখা যায়। কিন্তু নূরজাহান তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও আকর্ষণীয় গুণাবলি দ্বারা সম্রাটের মনের ওপরও প্রভাব ফেলেছিলেন। তিনি বিয়ের পর থেকে ১৫ বছর সাম্রাজ্যে প্রবল প্রতিপতি ও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। অসামান্য রূপ ও অসাধারণ গুণের অধিকারী ছিলেন এই নারী। সর্বগুণে গুণান্বিত নূরজাহানের ছিল তীষ্ম বুদ্ধি, প্রগাঢ় সাধারণ জ্ঞান এবং শিল্প-সাহিত্যের প্রতি একনিষ্ঠ আকর্ষণ। তার এ সকল গুণাবলি একদিকে যেমন মুঘল দরবারকে গৌরবান্বিত করে, অন্যদিকে তিনি রাজপরিবার ও রাজ্যের মানুষের কাছে ছলনাময়ীরূপে পরিচিতি লাভ করেন, যা মাহমুদা আক্তারের মধ্যে দেখা যায় না।
উপর্যুক্ত আলোচনায় স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, চারিত্রিক মিল থাকলেও উদ্দীপকের মাহমুদা আক্তার এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূরজাহানের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন।
৩. আকরাম সাহেব একটি বিখ্যাত কোম্পানির মালিক। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে কোম্পানির মালিকানা নিয়ে তার চারপুত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক ভাই অন্য ভাইয়ের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে পিতার মন ভারাক্রান্ত করে তোলে। পরবর্তীকালে ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ক. মুহাম্মদ বিন তুঘলক কয়টি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন?
খ. আইন-ই-আকবরী কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব কোন মুঘল সম্রাটের সময়ের উত্তরাধিকার দ্বনে্দ্বর সাথে মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত দ্বনে্দ্ব সম্রাটের কোন পুত্র সফলতা লাভ করেছিল এবং কেন? বিশ্লেষণ কর।
❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মুহাম্মদ বিন তুঘলক পাঁচটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
খ. আইন-ই-আকবরী হচ্ছে আবুল ফজলের রচিত একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ। আবুল ফজল উল্লিখিত গ্রন্থটি সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় রচনা করেন। আইন-ই-আকবরী গ্রন্থটিতে মুঘল সম্রাট আকবর এবং তার সাম্রাজ্য সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। আবুল ফজলের রচিত আইন-ই-আকবরীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
গ. আমার পাঠ্যবইয়ের সম্রাট শাহজাহানের আমলের উত্তরাধিকার দ্বনে্দ্বর সাথে উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বনে্দ্বর মিল রয়েছে।
১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকগণ তার জীবনের আশা ছেড়ে দিলে তার চারপুত্র দারাশিকো, সুজা, আওরঙ্গজেব ও মুরাদ সিংহাসন লাভের জন্য আত্মঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া সম্রাট শাহজাহান নিজেও জানতেন, পুত্রদের মধ্যে আওরঙ্গজেব সিংহাসনের উপযুক্ত উত্তরাধিকারী। কিন্তু তিনি মারার প্রতি অন্ধস্নেহে আওরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন এবং বিলাপুর ও গোলকুন্ডা অভিযানে নিষিদ্ধ করেন। এরূপ দুর্ব্যবহার ভ্রাতৃ সংঘাতকে প্রকট করে তোলে। অধিকন্তু জ্যেষ্ঠপুত্র দারার রূপরামর্শে সম্রাট-পুত্রদের পরস্পরের প্রতি উসকানিমূলক পত্র প্রেরণ পরিস্থিতি দুর্বল করে তোলে। উপর্যুক্ত কারণে আওরঙ্গজেব, সুজা ও মুরাদের মধ্যে, ব্রি-শক্তিজোট গঠিত হয়। ফলে শাহ সুজা নিজেকে সম্রাট ঘোষণার কারণে দারার নিকট বাহাদুর গড়ের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নিজ রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করল। আর আওরঙ্গজেব ও মুরাদ সম্মিলিত বাহিনী ধর্মাট ও সামুগড়ের যুদ্ধে দারাকে পরাজিত করে এবং কৌশলে মুরাদকে পরাজিত করে আওরঙ্গজেব সিংহাসন অধিকার করেন। সম্রাট শাহজাহানের চার পুত্রের মধ্যকার এই দ্বন্দ্বই উদ্দীপকে আকরাম সাহেবের চার পুত্রের মধ্যকার দ্বনে্দ্ব প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয় অর্থাৎ সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যকার উত্তরাধিকার দ্বনে্দ্ব আওরঙ্গজেব সফলতা লাভ করেছিলেন।
সম্রাট শাহাহানের চার পুত্রের মধ্যে আওরঙ্গজেব সব দিক থেকে উপযুক্ত ছিলেন। ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন, 'প্রতিদ্বনি্দ্বদের এমন কেউই ছিলেন না যিনি কূটনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সেনাপতিত্বে আওরঙ্গজেবের সমকক্ষ ছিলেন'। এছাড়া পারার সেনাবাহিনী অপেক্ষা আওরঙ্গজেবের সেনাবাহিনী ছিল রণনিপুণ এবং সুশৃঙ্খল তার সেনাপতিরাও দারার সেনাধ্যক্ষের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ছিল। মীর জুমলা, শায়েস্তা খান নিঃসন্দেহে দারার সেনাপতি খলিলুল্লাহ খান, যশোবন্ত সিংহ ও রুস্তম খানের তুলনায় আওরঙ্গজেবের অস্ত্রশস্ত্র তার ভ্রাতাদের চেয়ে উন্নত ছিল। এমনকি সম্রাট আওরঙ্গজেবের গোলাবারুদ, কামান, গোলন্দাজ বাহিনী তার ভ্রাতাদের তুলনায় উন্নত ছিল। তাছাড়া দারা শিয়া মতালম্বী ও হিন্দুদের প্রতি অনুরাগী হওয়ায় আওরঙ্গজেব সুন্নি জনগণের সমর্থন লাভ করেন। তারা আওরঙ্গজেবকে ইসলামের রক্ষক হিসেবে মনে করে তাকে সমর্থন জানান। অধিকন্তু শাহজাহানের পক্ষপাতিত্ব নীতি ও দারার প্রতি মাত্রাধিক দুর্বলতা উত্তরাধিকারী দ্বনে্দ্বর সময় অসুস্থতার জন্য নির্লিপ্ত থাকা প্রভৃতি আওরঙ্গজেবের বিজয়কে সহায়তা করেছিল। পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত কারণে আওরকাজের তার ভ্রাতাদের সঙ্গে উত্তরাধিকার সংগ্রামে সফলতা লাভ করেছিলেন।
৪. হায়দার গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আলী হায়দার উত্তরাধিকারসূত্রে বিশাল ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী হন। তিনি পিতার মতো সৌখিন, বুচিশীল ও স্থাপত্যের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তিনি বসবাসের জন্য একটি বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেন। অফিসে বসার জন্য একটি মণিমুক্তা খচিত চেয়ার তৈরি করেন। তিনি তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। শোকাহত আলী হায়দার তার প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য অনেক টাকা খরচ করে একটি সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন। বিশাল ধন-সম্পদে মালিক হয়েও সন্তানদের সংঘাতের কারণে তার শেষ জীবন সুখের হয়নি।
ক. কোন সালে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. রাজপুত নীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আলী হায়দার কর্তৃক স্ত্রীর স্মরণে নির্মিত সমাধিসৌধের সাথে মুঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত কোন স্থাপত্য কীর্তির সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আলী হায়দারের সন্তানদের মতো উক্ত সম্রাটের সন্তানগণও উত্তরাধিকার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। বক্তব্যটি কি সমর্থন কর? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৫২৬ সালে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
খ. মুঘল সম্রাট আকবর রণদক্ষ ও নির্ভীক উত্তর ভারতের রাজপুত জাতির সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সুচিন্তিত ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তাই রাজপুত নীতি নামে পরিচিত।
সম্রাট আকবরের অর্ধ শতাব্দী রাজত্বকালে তার গৃহীত উল্লেখযোগ্য নীতিসমূহের মধ্যে রাজপুত নীতি অন্যতম। তিনি রাজপুত বংশের সাথে সম্পর্ক উনণয়নের লক্ষ্যে তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। রাজপুতদের দেশের সামরিক ও উচ্চপদে নিয়োগের মাধ্যমে তাদের আনুগত্য লাভ করেন। তিনি হিন্দু ও রাজপুতদের আনুগত্য ও সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে তাদেরকে জিজিয়া ও তীর্থকর প্রদান থেকে অব্যাহতি দেন। সম্রাট আকবরের রাজপুতদের প্রতি গৃহীত এ সকল উদার নীতিই হলো রাজপুত নীতি।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আলী হায়দার কর্তৃক স্ত্রীর স্মরণে নির্মিত সমাধি সৌধের সাথে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের নির্মিত তাজমহলের সাদৃশ্য রয়েছে। সম্রাট শাহজাহান ছিলেন সৌন্দর্যপিপাসু এবং শিল্পীমনের মানুষ। স্থাপত্য শিল্পে তার অবদান অপরিসীম। তার স্থাপত্য শিল্পের মধ্যে তাজমহল সবচেয়ে ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। তিনি তার স্ত্রী মমতাজমহলের স্মৃতি রক্ষার্থে এ স্থাপত্যটি নির্মাণ করেন। উদ্দীপকের স্থাপত্য কীর্তির সাথে সম্রাট শাহজাহানের নির্মিত এ তাজমহলের মিল রয়েছে।
উদ্দীপকের আলী হায়দারের স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। শোকাহত আলী হায়দার তার প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য অনেক টাকা খরচ করে একটি সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন। অনুরূপভাবে সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজমহল সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। প্রিয়তম স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি শোকে হতবিহবল হয়ে পড়েন। তিনি তার স্ত্রীর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তার সমাধির ওপর তাজমহল নামক স্থাপত্যকর্মটি নির্মাণ করেন। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সুন্দর এক শিল্পকর্ম। ১৬৩৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০ হাজার কারিগর দীর্ঘ ২২ বছর পরিশ্রম করে তৎকালীন তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এর স্থাপত্যিক উপকরণের সুবিন্যাস, অলংকরণের সূক্ষ্মতা ও নৈপুণ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। উদ্দীপকের সমাধির মধ্যে সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত এ তাজমহলেরই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
ঘ. আলী হায়দারের সন্তানদের মতো উক্ত সম্রাটের অর্থাৎ সম্রাট শাহজাহানের সন্তানগণও উত্তরাধিকার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে- এ বক্তব্যটি আমি সমর্থন করি।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, বিশাল ধন-সম্পদের মালিক হয়েও সন্তানদের সংঘাতের কারণে আলী হায়দারের শেষ জীবন সুখের হয়নি। অর্থাৎ আলী হায়দারের সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ঠিক একইভাবে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্ররাও একে অপরের সাথে ক্ষমতার দ্বনে্দ্ব জড়িয়ে পড়েছিল।
১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন এ সুযোগে তার চারপুত্র দারাশিকো, সুজা, আওরফালের ও মুরাদ সিংহাসন লাভের জন্য আত্মঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুত্রদের মধ্যে আওরফালের সিংহাসনের উপযুক্ত উত্তরাধিকারী ছিলেন। এটি জানা সত্ত্বেও সম্রাট দারার প্রতি অন্বয়েহে আওরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের সুবাদার পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন এবং তার বিজাপুর ও গোলকুন্ডা অভিযান নিষিদ্ধ করেন। এরূপ দুর্ব্যবহার ভ্রাতৃসংঘাতকে প্রকট করে তোলে। অধিকন্তু জ্যেষ্ঠপুত্র দারার কুপরামর্শে সম্রাট-পুত্রদের পরস্পরের প্রতি উসকানিমূলক পত্র প্রেরণ পরিস্থিতি দুর্বল করে তোলে। উপযুক্ত কারণে আওরঙ্গজেব, সুজা ও মুরাদের মধ্যে ত্রি-শন্তিজোট গঠিত হয়। ফলে শাহ সুজা নিজেকে সম্রাট ঘোষণার কারণে পারার নিকট বাহাদুরগড়ের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নিজ রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করেন। আর আওরঙ্গজেব ও মুরাদের সম্মিলিত বাহিনী ধর্মটি ও সামুগড়ের যুদ্ধে দারাকে পরাজিত করে এবং সুকৌশলে আওরঙ্গজের মুরাদকে পরাজিত করে সিংহাসন অধিকার করেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের আলী হায়দারের পুত্রদের মতো, সম্রাট শাহজাহানের পুত্ররাও এর রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃদ্বনে্দ্ব লিপ্ত হয়েছিল। সম্রাটের পুত্রদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক এ দ্বন্দ্ব সম্রাটের শেষ জীবনকে অসহিষ্ণু করে তুলেছিল।
৫. সুলতান সুলেমান সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্য শাসনে পুরাতন ধ্যান-ধারণার সংস্কার করেন। তিনি প্রশাসন, বিচার ও সৈন্য বাহিনীর জন্য আলাদা বিভাগ ও পদ সৃষ্টি করেন। তিনি প্রত্যেকের পদ মর্যাদা অনুযায়ী ক্ষমতা ও অবস্থান নির্ধারণ করে দেন। এতে উচ্চ রাজ কর্মকর্তাগণের মধ্যকার মর্যাদার বিরোধ নিরসন হয়। ফলে সাম্রাজ্য শাসনে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। তবে তার এ ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত ছিল না।
ক. সম্রাজ্ঞী মমতাজমহলের প্রকৃত নাম কী?
খ. 'দীন-ই-এলাহী' এর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সামরিক ব্যবস্থাটি মুঘল সম্রাট আকবরের প্রতিষ্ঠিত কোন পদক্ষেপকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও উদ্দীপকে উল্লিখিত সামরিক ব্যবস্থার মতো সম্রাট আকবরের উক্ত পদক্ষেপও সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিল না। বক্তব্যটি সমর্থন কর কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সম্রাজ্ঞী মমতাজমহলের প্রকৃত নাম আরজুমান্দ বানু বেগম।
খ. ভারতের মুঘল শক্তির স্থায়িত্ব বিধানের জন্য হিন্দু-মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য ও প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল ‘দীন-ই এলাহী’ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য।
মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য আলোচিত সমালোচিত বিষয় হলো সম্রাট আকবরের 'দীন-ই-এলাহী' ধর্মমত প্রচার। সম্রাটের এ ধর্মমত প্রচারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত ছিল। কেননা তিনি মনে করেন যে, হিন্দুদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য উদার ধর্মীয় নীতি গ্রহণ করা উচিত। তাই তিনি তার সাম্রাজ্যের সকলকে একটি কাঠামোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব বিধানের জন্য নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। এটি ছিল ‘দীন-ই-এলাহী’ প্রবর্তনের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সামরিক ব্যবস্থাটি মুঘল সম্রাট আকবরের প্রতিষ্ঠিত মনসবদার প্রথাকে নির্দেশ করে।
'মনসব' শব্দের অর্থ হলো পদ বা মর্যাদা। আর এ পদের অধিকারীকে মনসবদার বলা হতো। মুঘল সম্রাট আকবর তার সেনাবাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও দক্ষতার অভাব লক্ষ করে তার আশু সংস্কারের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, ইতিহাসে তাই মনসবদারি প্রথা নামে পরিচিত। উদ্দীপকের সামরিক ব্যবস্থাও সম্রাটের এ প্রথাকে নির্দেশ করে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, সুলতান সুলেমান সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্য শাসনে পুরাতন ধ্যান-ধারণার সংস্কার করেন। তিনি বিভিন্ন পদ সৃষ্টি করে প্রত্যেকের পদমর্যাদা অনুযায়ী ক্ষমতা ও অবস্থান নির্ধারণ করে দেন। অনুরূপভাবে সম্রাট আকবর সেনাবাহিনীর তথা সামরিক ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে মনসবদারি প্রথা চালু করেন। আবুল ফজলের মতে, সাম্রাজ্যে সর্বমোট ৩৩ এবং কোনো কোনো তথ্য মতে, ৬৬টি মনসব ছিল। এ ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনসবদারের অধীনে মোট দশ হাজার এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১০ জন সৈন্য থাকার নিয়ম ছিল। একজন ব্যক্তির সামরিক যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সম্রাট তাকে মনসবদার হিসেবে নিয়োগ দিতেন। মনসবদারদের 'জাত' ও 'সওয়ার' নামক দুটি মর্যাদা ছিল। তাই বলা যায়, সুলতান সুলেমানের সামরিক সংস্কারের মধ্যে সম্রাট আকবরের এ মনসবদার প্রথারই প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ. হ্যাঁ, আমি প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সমর্থন করি।
সম্রাট সুলেমানের সামরিক সংস্কারের ফলে সাম্রাজ্যের উচ্চ রাজ কর্মকর্তাগণের মধ্যকার মর্যাদার বিরোধ নিরসন হয় ও সাম্রাজ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। তবে তার এ ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত ছিল না। একইভাবে মুঘল সম্রাট আকবর তার গৃহীত মনসবদারি প্রথার মাধ্যমে সামরিক সংস্কার সাধন করে। এ ব্যবস্থার অনেক সুবিধা থাকলেও অনেক কুফলও ছিল। প্রতিটি নীতি ও ব্যবস্থাপনারই কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। মনসবদারি ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। মনসবদারি ব্যবস্থায় কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন ছাড়াই সরকার একটি বৃহৎ সেনাদলের অধিকারী হয়েছিল। কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই প্রাদেশিক সরকার সংশ্লিষ্ট এলাকার মনসবদারদের সাহায্যে বিদ্রোহ দমন ও অন্যান্য সংকট মোকাবিলা করতে পারত। এ ব্যবস্থায় গুণ ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হতো বলে মুঘল সাম্রাজ্যের সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ সকল সুবিধা থাকলেও মনসবদারি প্রথার অনেকগুলো অসুবিধাও ছিল। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ের সেনাবাহিনী গঠিত হওয়ায় এতে ঐক্য ও সংহতির অভাব দেখা দিয়েছিল। সেনাবাহিনী মনসবদারদের অধীনে প্রতিপালিত হওয়ায় তাদের আনুগত্য ছিল মনসবদারদের প্রতি সম্রাটের প্রতি নয়। আবার কেন্দ্র হতে দূরবর্তী স্থানে মনসবদারদের অবস্থান থাকায় তাদের উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছিল শিথিল। এছাড়াও মনসবদারগণ প্রায়ই প্রতারণা করতেন। তাদের যে সংখ্যক সৈন্য প্রতিপালনের কথা থাকত তারা তা করতেন না। তবে এসব সীমাবদ্ধতা থাকলেও সম্রাটের গৃহীত এ ব্যবস্থা ভারতের সামরিক ইতিহাসে অভিনব সংযোজন ছিল।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও উদ্দীপকের সুলতান সুলেমানের সামরিক ব্যবস্থার মতো সম্রাট আকবরের মনসবদারি প্রথাও সমালোচনার উর্ধ্বে ছিল না।
৬. সরাইল উপজেলার চেয়ারম্যান পদে বহু বছর ধরে সামাদ পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে নির্বাচিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি কদম আলী পরিবার ভাগ্যান্বেষণে সরাইলে এসে বসতি স্থাপন করে। কদম আলীর সহজ-সরল জীবনযাপন, সাহসিকতা, নীতি-নৈতিকতা, সত্যবাদিতা, বিচক্ষণতা ও চারিত্রিক মাধুর্য উপজেলাবাসীর নজর কাড়ে। ফলে নির্বাচনে সরাইল উপজেলার চেয়ারম্যান পদে কদম আলী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি উপজেলার অভাবনীয় উন্নয়ন করেন। উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা, সুশাসন, জননিরাপত্তা, বিচার ও সালিশ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, রাজস্ব আদায়সহ সকল ক্ষেত্রে অসামান্য উন্নয়ন করেন, যা ইতোপূর্বে অন্য কোনো চেয়ারম্যানই করতে পারেন নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আবার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি সামাদ পরিবারের হাতে চলে যায়।
ক. মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. বাবরনামা কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কদম আলীর সাথে ভারতীয় উপমহাদেশে কোন আফগান শাসকের শাসন ক্ষমতা দখলের মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কদম আলীর চেয়ে উক্ত আফগান শাসক প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আরও বেশি বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ছিলেন- বিশ্লেষণ করো।
❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হলেন জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর (১৪৮৩-১৫৩০)।
খ. বাবরনামা হলো তুর্কি ভাষায় রচিত মুঘল সম্রাট জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।
তুযুক-ই-বাবরী বা বাবরনামা গ্রন্থটি ইতিহাস অধ্যয়নে একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। চমৎকার রচনাশৈলী, ভাষার মাধুর্য ও কারুকাজ, উন্নত বর্ণনা রীতি এবং তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার জন্য এ গ্রন্থটি পাঠক সমাজের প্রশংসা লাভ করেছে। এ গ্রন্থে এশিয়া ও আফগানিস্তান বিশেষ করে সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। তাছাড়া এ গ্রন্থে বাবর তার ব্যক্তিজীবনের নানা দিক, যেমন: দোষ-গুণ, দূরদর্শিতা, সীমাবদ্ধতা, সুখ-দুঃখ এবং সাফল্য-ব্যর্থতার কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কদম আলীর সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের আফগান শাসক শেরশাহের শাসন ক্ষমতা দখলের মিল পাওয়া যায়।
মুঘল শাসনের ধারাবাহিকতায় একটি ছেদ টেনে শেরশাহ ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে আফগান তথা শুর বংশের শাসনের সূত্রপাত করেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে তিনি নিজ প্রতিভা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম দ্বারা সামান্য অবস্থা থেকে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ক্ষমতা গ্রহণ করেই তিনি সাম্রাজ্যের উনণতিকল্পে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। উদ্দীপকের কদম আলীর ক্ষেত্রেও এ বিষয়গুলো পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, সরাইল উপজেলার চেয়ারম্যান পদে সামাদ পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে বহু বছর ধরে নির্বাচিত হয়ে আসছে। হঠাৎ করে কদম আলী পরিবার ভাগ্যান্বেষণে সরাইলে এসে বসতি স্থাপন করে। কদম আলীর সহজ-সরল জীবনযাপন, সাহসিকতা, নীতি-নৈতিকতা, সত্যবাদিতা, বিচক্ষণতা ও চারিত্রিক মাধুর্য উপজেলাবাসীকে আকৃষ্ট করে। স্থানীয় জনগণ পরবর্তী নির্বাচনে তাকে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে। সামাদ পরিবারের ন্যায় ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল পরিবার বংশানুক্রমিক ক্ষমতা ভোগ করে আসছিল। আর কদম আলী পরিবারের মতোই শেরশাহও ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভাগ্যান্বেষণে ভারতীয় উপমহাদেশের আগ্রায় আসেন এবং মুঘল সম্রাট বাবরের অধীনে চাকরি নেন। পূর্বাঞ্চল অভিযানে বাবরকে সহায়তা করে তিনি মুঘল সম্রাটের বিশেষ প্রীতিভাজন হন। পরবর্তীতে তিনি ভারতবর্ষ থেকে মুঘলদের বিতাড়িত করতে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেন শেষ পর্যন্ত মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে প্রথমে চৌসার যুদ্ধে (১৫৩৯ খ্রি.) এবং পরে কনৌজের যুদ্ধে (১৫৪০ খ্রি.) পরাজিত করে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে তিনি ভারতবর্ষে নিজ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের কদম আলীর মতো শেরশাহও তার তীক্ষ্ণ মেধা, অপরিমিত সাহস, আত্মবিশ্বাস ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
ঘ. উদ্দীপকের কদম আলীর চেয়ে উক্ত আফগান শাসক অর্থাৎ শেরশাহ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আরও বেশি বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ছিলেন- উদিভটি যথার্থ।
উদ্দীপকের কদম আলী উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা, সুশাসন, জননিরাপত্তা, বিচার ও সালিশ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, রাজস্ব আদায়সহ সকল ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কদম আলীর এ সকল কর্মকান্ডের চেয়ে আগান শাসক শেরশাহ আরও বেশি বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ছিলেন। কেননা তিনি তার প্রশাসন ব্যবস্থায় উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের পাশাপাশি শাসনব্যবস্থাকে সুসংহত করতে আরও বেশি কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
উদ্দীপকের কদম আলীর চেয়ে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শেরশাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি ভারতের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাসনপ্রণালির শ্রেষ্ঠ নীতিগুলো গ্রহণ করে একটি যুগোপযোগী ও ন্যায়সংগত শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি সুষ্ঠুভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারকে দিউয়ান-ই-উয়ারত, (সরকারি আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ), দিউয়ান-ই-আরজ, (সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধান) দিউয়ান-ই-রিসালাত (পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কাজ তদারকি) এবং দিউয়ান-ই-ইনশা (সরকারি আদেশ-নির্দেশ জারি ও যোগাযোগ সংক্রান্ত কাজ)-এ চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করেন। এছাড়া শাসনকাজের সুবিধার জন্য প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণ নীতি গ্রহণ করে সাম্রাজ্যে প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি তার সাম্রাজ্যকে 'সরকার' নামক ৪৭টি প্রশাসনিক ইউনিটে ভাগ করেন। প্রতিটি সরকারকে তিনি কয়েকটি পরগনায় বিভক্ত করেন। এভাবে শেরশাহ সাম্রাজ্যের সংহতি বিধানে একটি সুনিয়ন্ত্রিত ও শক্তিশালী প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন। আর এ বিষয়গুলো উদ্দীপকের কদম আলীর ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, শেরশাহ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে উদ্দীপকের কদম আলীর চেয়ে অনেক বেশি বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
৭. ‘সর্বধর্ম’ মতবাদের প্রবস্তা শ্রী আনন্দ স্বামী। তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীতে ত্রিপুরা জেলার সরাইল পরগনার কালিকচ্ছ গ্রামে এক কৌলিন জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদারের দায়িত্ব পালনকালে প্রজাদের ধর্মভিত্তিক বিভাজন ও আত্মঃধর্মবিবাদ তাঁকে চিন্তামগ্ন করে তোলে। ধর্ম নিয়ে হত্যা, হানাহানি, রক্তপাত নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ইসলাম, সনাতন ও খ্রিষ্টধর্মের সমন্বয়ে 'সর্বধর্ম' মতবাদ প্রবর্তন করতে সক্রিয় হন। তার এ সর্বধর্মী মতবাদে প্রকৃত মানবতার আহবান থাকলেও তিনি ধর্মভীরু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন নি। তবে এর মাধ্যমে তিনি সকল শ্রেণির মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।
ক. 'মনসব' শব্দের অর্থ কী?
খ. কবুলিয়ত ও পাট্টা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আননদ স্বামীর সাথে মুঘল সম্রাট আকবরের কোন নীতির সাদৃশ্য পাওয়া যায়? উক্ত নীতির মতবাদসমূহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যক্তির সর্বধর্ম মতবাদ প্রবর্তন ও সম্রাট আকবরের ধর্মনীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।
❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'মনসব' শব্দের অর্থ পদ বা পদমর্যাদা।
খ. কবুলিয়ত ও পায়া বলতে ভূমির ওপর প্রজাদের স্বত্ত্ব (অধিকার) রক্ষার জন্য ভারতবর্ষের সম্রাট শেরশাহের (১৪৭২-১৫৪৫) প্রবর্তিত এক অভিনব ব্যবস্থাকে বোঝায়। পাট্টা ছিল জমির অধিকার সংক্রান্ত দলিল। জমির ওপর কৃষকের অধিকার স্বীকার করে সরকারের পণ্য হতে পাঠা দেওয়া হতো। অন্যদিকে প্রদেয় করসহ ভূমিতে নিজের দায় ও কর্তব্য বর্ণনা করে কৃষক রাষ্ট্রকে কবুলিয়ত নামক দলিল সম্পাদন করে দিতেন।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আননদ স্বামীর সাথে মুঘল সম্রাট আকবরের 'দীন-ই-এলাহী' নামক ধর্মীয় নীতির সাদৃশ্য রয়েছে।
এ ধর্মমতে সব ধর্মের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল। সম্রাট আকবর ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে 'দীন-ই-এলাহী' নামে একটি নতুন ধর্মমত প্রবর্তন করেন। এটি ছিল সর্বেশ্বরবাদী ধর্ম। সকল ধর্মের উৎকৃষ্ট নীতিমালা নিয়ে এ ধর্মমত গঠিত হয়েছিল। এ ধর্মমতে কোনো নবি বা দেব-দেবীর অস্তিত্ব ছিল না। তবে একেশ্বরবাদের ধারণা ছিল প্রবল। এ ধর্মে দীক্ষা গ্রহণকারীকে সম্রাটের নামে ৪টি স্তরে তার জীবন, ধর্ম, সম্মান ও সম্পত্তি উৎসর্গ করতে হতো।
উদ্দীপকের আনন্দ স্বামী ধর্ম নিয়ে হত্যা, হানাহানি, রক্তপাত নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম, সনাতন ও খ্রিস্টধর্মের সমন্বয়ে সর্বধর্ম মতবাদ প্রবর্তন করেন। তার এ সর্বধর্ম মতবাদের মুলকথা ছিল মানবতাবাদ। একইভাবে মুঘল সম্রাট আকবরও সকল ধর্মের সারাংশ নিয়ে 'দীন-ই-এলাহী নামের সর্বেশ্বরবাদী ধর্মীয় নীতি প্রবর্তন করেছিলেন। দীন-ই-এলাহী ধর্মমতের অনুসারীদেরকে 'লা-ইলাহা ইন্নান্নাহু ওয়া আকবর খলিফাতুল্লাহ' এ কথাটি পাঠ করতে হতো। এ ধর্মের অনুসারীদের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে একজনকে আল্লাহু আকবর' বলে সম্ভাষণ করতে হতো এবং অন্যজনকে 'আয়েগালাপুর বলে উত্তর দিতে হতো। এ ধর্মে আগুনকে পবিত্র বলে সম্মান করা হতো। এর অনুসারীদের অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আমিষ জাতীয় খাবার (মাংস, মাছ, ডিম, ডাল প্রভৃতি) গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হতো। তাছাড়া তাদেরকে জন্মদিন উদযাপন করে ঐদিন দানখয়রাতসহ স্বধর্মীদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে হতো। তাদেরকে মৃত্যুর পূর্বেই ভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হতো। এছাড়া এ ধর্মের অনুসারীদের ভিক্ষা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হতো। কসাই, ধীবর, ব্যাধ প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির লোকেরা জীব হত্যা করত বলে তাদের সাথে ওঠা-বসা নিষিদ্ধ ছিল। উল্লিখিত বিধি-নিষেধ আরোপ করে সম্রাট আকবর ‘দীন ই-এলাহী ধর্মমতের প্রবর্তন করেছিলেন।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যক্তির সর্বধর্ম মতবাদ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল। শান্তি প্রতিষ্ঠা। অন্যদিকে সম্রাট আকবরের 'দীন-ই-এলাহী' ধর্মমত প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা।
ষোড়শ শতাব্দী ছিল বিশ্বব্যাপী এক ধর্মীয় আন্দোলনের যুগ। তখন সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব কিংবা ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় দেশে-দেশে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ পর্যন্ত লেগে যেত। উদাহরণস্বরূপ ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ এবং স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের মধ্যে সংঘটিত আর্মাডার যুদ্ধের (১৫৮৮) কথা উল্লেখ করা যায়। এমন ধর্মীয় কোন্দলের যুগে সম্রাট আকবর ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা স্থাপন করে উদারতা ও রাজনৈতিক। দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে বৃহৎ মুঘল। সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও তার স্থায়িত্ব বিধানই ছিল তার উষার ধর্মমত প্রবর্তনের একমাত্র কারণ। কেননা হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে তাদের প্রতি উদার ও সহনশীল হওয়া ছাড়া সাম্রাজ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করা কোনোভাবেই সম্ভবপর ছিল না। অন্যদিকে উদ্দীপকের শ্রী আনন্দ স্বামী সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রবর্তন করেন।
উদ্দীপকে বর্ণিত শ্রী আনন্দ স্বামী সর্বধর্ম মতবাদের প্রবক্তা। তিনি জমিদারের দায়িত্ব পালনকালে ধর্ম নিয়ে হত্যা, হানাহানি, রক্তপাত নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম, সনাতন ও খ্রিস্টধর্মের সমন্বয়ে সর্বধর্ম মতবাদ প্রবর্তন করেন। অন্যদিকে সম্রাট আকবরের দীন-ই এলাহী ধর্মমত প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিজের স্বীকৃতি লাভ। ভারতে মুঘল শক্তির স্বায়িত্ব বিধানের স্বার্থে হিন্দু-মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য ও প্রীতির। বন্ধন গড়ে তোলা আবশ্যক ছিল। এ উদ্দেশ্যেই সম্রাট ধর্মীয় ক্ষেত্রে উদার নীতি গ্রহণ করে 'দীন-ই-এলাহী' ধর্মমত প্রবর্তন করেছিলেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের আনন্দ স্বামীর নতুন ধর্ম প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল শাস্তি প্রতিষ্ঠা। কিন্তু সম্রাট আকবরের নতুন ধর্মমত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যের সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে স্বীয় ক্ষমতাকে সুসংহত করা।
৮. উসমানের পূর্বপুরুষরা গোবি মরুভূমির একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের শাসক ছিলেন। সেখানে শত্রুপক্ষের শক্তির কারণে সুবিধা করতে না পেরে তারা এশিয়া মাইনরে চলে আসেন। এশিয়া মাইনরে বহুদিন ধরে সেলজুকরা শাসন করলেও উত্তরাঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেশ কিছু স্বাধীন ও শক্তিশালী গ্রিক রাজ্য বিদ্যমান ছিল। উসমান শেষ সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিনের পতন ঘটিয়ে সেখানে উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শক্তিশালী গ্রিক রাজাদেরও পরাজিত করে যে বিশাল উসমানীয় সাম্রাজ্য গঠন করেন তা কয়েক শতাব্দী স্থায়ী হয়েছিল।
ক. 'বাবর' শব্দের অর্থ কী?
খ. পানিপথের ১ম যুদ্ধে বাবরের জয় লাভের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উসমানীয়দের এশিয়া মাইনরে গমনের সাথে বাবরের ভারতে আগমনের সামজস্য কোথায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় উসমানের কৃতিত্বের আলোকে সম্রাট বাবরের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করো।
❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'বাবর' শব্দের অর্থ সিংহ।
খ. ভারত উপমহাদেশে সাম্রাজ্য বিস্তারের অদম্য স্পৃহা ও অসামান্য নির্ভীকতা বাবরের জয় লাভের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। তৎকালীন ভারত উপমহাদেশে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা তাকে সহজেই সাফল্য এনে দেয়। চীন দেশে আবিষ্কৃত বারুদের সাহায্যে বাবরের বাহিনী কামান ও গাদা বন্দুকের ব্যবহার করে সাফল্য নিশ্চিত করে। সর্বোপরি বাবর ছিলেন একজন বিজ্ঞ ও সুনিপুণ রণসেনানী। তার সৈন্যবাহিনী ছিল সুশৃঙ্খল, যা ইব্রাহিম লোদির বিশৃঙ্খল বাহিনীর বিরুদ্ধে সহজেই জয়লাভ করে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত উসমানীয়দের এশিয়া মাইনরে গমনের সাথে বাবরের ভারতে আগমনের সামঞ্জস্যের দিক হলো উভয়েই শত্রুপক্ষের কবলে পড়ে এলাকা ত্যাগ করেছিলেন। উদ্দীপকে বর্ণিত উসমান পূর্ব পুরুষের রাজ্য গোবি মরুভূমিতে শত্রুপক্ষের শক্তির কারণে সুবিধা করতে না পেরে এশিয়া মাইনরে চলে আসেন। একইভাবে ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পর মাত্র ১১ বছর বয়সে ফারগানার সিংহাসনে উপবিষ্ট হন বাবর। সিংহাসন লাভের পরপরই তিনি আত্মীয়-স্বজন ও উজবেক নেতা সাইবানি খানের বিরোধিতার মুখে পড়েন। ১৪৯৭ সালে তিনি সমরখন্দ দখল করেন। কিন্তু ভাগ্যবিপর্যয়ে পতিত হয়ে সমরখন্দ হারান। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফারগানা হস্তচ্যুত হয়। তিনি আবার ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে ফারগানা এবং ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে সমরখন্দ অধিকার করেন। পরবর্তীকালে ১৫০৩ সালে সাইবানি খানের কাছে পরাজিত হয়ে ফারগানা ও সমরখন্দ থেকে বিতাড়িত হন। এর ফলে তিনি ভারতবর্ষের দিকে নজর দেন। ১৫২৬ সালে বাবর ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি খানুয়ার যুদ্ধে ও গোগরার যুদ্ধে জয়লাভ করে তার ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।
তাই বলা যায়, উসমানের এ ঘটনার সাথে বাবরের ভারতে আসার ঘটনার মিল বিদ্যমান।
ঘ. সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উসমানের কৃতিত্বের মতোই সম্রাট বাবরও অগাধ কৃতিত্বের অধিকারী।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সম্রাট বাবর তার কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। পিতৃরাজ্য ফারগানা ও বিজিত সমরখন্দ হতে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় ও সহায় সম্বলহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়ালেও তিনি কখানো হতাশ হননি। অজেয় মনোবল, দুর্দমনীয় ইচ্ছা ও নির্ভীক সাহসিকতার সাথে তিনি নিজ যোগ্যতাবলে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। উদ্দীপকের উসমানের ক্ষেত্রেও এ ঘটনার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
উসমান নিজ ভূ-খন্ড থেকে বিতাড়িত হয়ে এশিয়া মাইনরে এসে সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিনের পতন ঘটিয়ে সেখানে উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এ অঞ্চলের উত্তরের শক্তিশালী গ্রিক রাজাদের পরাজিত করে যে বিশাল উসমানীয় সাম্রাজ্য গঠন করেন তা কয়েক শতাব্দী স্থায়ী ছিল। একইভাবে সম্রাট বাবরও প্রাথমিক জীবনে শত্রুদের বিরোধের কারণে নিজ ভূখন্ড ত্যাগ করে ভারতবর্ষে আগমন করেন। তিনি ভারতে লোদি সুলতানদের পতন ঘটিয়ে মুঘল শাসনের গোড়াপত্তন করেছিলেন। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভের পর রাজ্যের দুর্গ, ভেরা, কুশাব চেনাব নদীর অববাহিকা অঞ্চল, কান্দাহার লাহ্যের, দিপালপুর প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে মুঘল সাম্রাজ্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। তার প্রতিষ্ঠিত এ সাম্রাজ্য কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা বাবরকে ইতিহাসে স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, যা একই শাসক গোষ্ঠীর পথ উন্মুক্ত করেছিল।
৯. ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট মার্কোস আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তার চরিত্রে দোষ ও গুণের সমাবেশ ছিল। তিনি একই সাথে কোমল ও কঠোর ছিলেন। তিনি অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ সম্পন্ন করেন এবং ন্যায়বিচারও প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তার শাসনামলে তার স্ত্রী ইমেলদা এতই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন যে, সমস্ত প্রশাসনযন্ত্র তাকে প্রেসিডেন্টের চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করে।
ক. নূরজাহানের প্রকৃত নাম কী ছিল?
খ. সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম সেলিম রাখার কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের প্রেসিডেন্ট মার্কোসের সাথে কোন মুঘল সম্রাটের তুলনা করা যায়?
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ইমেলদার কার্যাবলির সাথে সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের কার্যাবলির তুলনামূলক আলোচনা করো।
❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নূরজাহানের প্রকৃত নাম ছিল মেহের-উন-নিসা।
খ. বিখ্যাত সাধক শেখ সেলিম চিশতির নামানুসারে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম সেলিম রাখা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন সম্রাট আকবরের পুত্র। একাধিক শিশু সন্তানের মৃত্যু হওয়ায় উত্তরাধিকার হিসেবে পুত্রসন্তান লাভের আশায় সম্রাট আকবর প্রতি বছর আজমিরে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির দরগাহ জিয়ারত করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন। একই উদ্দেশ্যে সম্রাট প্রতি সপ্তাহে ফতেহপুর সিক্রির বিখ্যাত সাধক শেখ সেলিম চিশতির খানকাহতে যেতেন। পরবর্তী ১৫৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগস্ট রানি যোধবাঈ-এর গর্ভে এক সন্তানের জন্ম হয়। বহু সাধনার পর পুত্রের জন্ম হওয়ায় তাকে ‘A Child of Many Prayers’ বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের প্রেসিডেন্ট মার্কোসের সাথে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের তুলনা করা যায়।
উদ্দীপকের প্রেসিডেন্ট মার্কোসের চরিত্রে দোষ ও গুণের সংমিশ্রণ ছিল। তিনি একই সাথে কোমল ও কঠোর ছিলেন। তিনি অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। ঠিক একইভাবে জাহাঙ্গীরের চরিত্রেও বৈপরীত্যের সংমিশ্রণ দেখা যায়।
ঐতিহাসিকগণও কেউ প্রশংসা, আবার কেউ তীব্র সমালোচনা করেছেন। ঈশ্বরী প্রসাদ জাহাঙ্গীরের প্রশংসা করে বলেন, মুঘল ইতিহাসে একটি অন্যতম আকর্ষণীয় চরিত্র হচ্ছে জাহাঙ্গীর। আত্মীয়-স্বজনের প্রতি অনুরাগপ্রবণ, মহানুভব, নির্যাতনের প্রতি প্রচন্ড বিতৃষ্ণা এবং সুবিচারের প্রতি প্রগাঢ় মোহ তার চারিত্রিক গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আবার তার চরিত্রের তীব্র সমালোচক ভিনসেন্ট স্মিথ বলেন, জাহাঙ্গীরের চরিত্রে নমনীয়তা ও নৃশংসতা, সুবিচার ও খামখেয়ালিপনা, রুচিবোধ, বর্বরতা সুবুদ্ধি ও জ্ঞানসুলভ গুণাবলির সমাবেশ দেখা যায়। তাকে একদিকে যেমন অত্যাচারী, নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন বলে অভিহিত করা হয়েছে, অন্যদিকে প্রজাদের মঙ্গলার্থে ১২টি প্রজামঙ্গলকর আইন প্রণয়ন করে তিনি জনকল্যাণকর শাসক হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। অত্যধিক আফিম ও মাদকাসক্তি ছিল তার চরিত্রের বড় ত্রুটি। অন্যের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হওয়া তার চরিত্রের অন্যতম দোষ ছিল। তাই বলা যায়, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট মার্কোসের চরিত্রে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ইমেলদার কার্যাবলির সাথে সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের কার্যাবলির অনেক মিল রয়েছে।
উদ্দীপকে প্রেসিডেন্ট মার্কোসের স্ত্রী ইমেলদা তার শাসনামলে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন এবং সমস্ত প্রশাসন যন্ত্রের চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য হতে থাকেন। একইভাবে সম্রাজ্ঞী নূরজাহান ও জাহাঙ্গীর এর শাসনামলে সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় প্রবল প্রতিপত্তি ও প্রভাব বিস্তার করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর নিজ নামের সাথে নূরজাহানের নাম মুদ্রায় অভিঙ্কত করেছিলেন। নূরজাহান জাহাঙ্গীরের ওপর ক্রমান্বয়ে প্রভাব বিস্তার করে সার্থকতার সাথে সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। ফলে সম্রাট তার হাতের ক্রীড়নকে পরিণত হন।
নূরজাহান তার পিতাকে 'ইতিমাসউদ্দৌলা' উপাধিসহ সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন এবং ভ্রাতা আসখানকে 'খান-ই-সামান' পদে উন্নীত করেন। তাদের সাহায্যে দরবারে একটি শক্তিশালী দল গঠন করেন। জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহরিয়ারের সাথে পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা লাভলী বেগমকে বিয়ে দিয়ে অধিকতর ক্ষমতার অধিকারিণী হন। কথিত আছে যে, রাজকীয় ফরমানসমূহ নূরজাহানের সন্তখত ব্যতীত মুলাহীন বলে পরিগণিত হতো। এ প্রসঙ্গে মুতামাদ খান বলেন, অবশেষে তার ক্ষমতা এরূপ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল যে, রাজা শুধু নামেমাত্র থাকলেন। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের ইমেলদার মতো সম্রাজ্ঞী নূরজাহানও শাসনব্যবস্থায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন।
১০. কীর্তিপাশার জমিদার দেবী রায় চৌধুরী খুবই বুচিবান ও শৌখিন মানুষ ছিলেন। তিনি জমিদারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি জাঁকজমকপূর্ণ দরবার হল নির্মাণ করেছিলেন। পাশাপাশি তার নির্মিত কাচারি বাড়ি নায়েব মহল আজও স্ব-মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। একই সময়ে নির্মিত নাট মন্দিরটি এখনও ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। তার স্ত্রী কৃষ্ণ কুমারী দেবী অনিন্দ্য সুন্দরী ও বিদুষী রমণী ছিলেন। জমিদার দেবী রায় চৌধুরীর স্ত্রীর প্রতি ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় পড়ে কৃষ্ণ কুমারী অকালে মৃত্যুবরণ করলে জমিদার খুবই মুষড়ে পড়েছিলেন। তিনি স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে বহু অর্থ ব্যয়ে সৌধটি নির্মাণ করেন, আজও তা বিদ্যমান রয়েছে।
ক. সম্রাট শাহজাহানের পিতার নাম কী?
খ. সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সংঘটিত উত্তরাধিকার যুদ্ধের প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কৃষ্ণ কুমারী দেবীর সাথে সম্রাট শাহজাহানের কোন মহীয়সীর সামঞ্জস্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত জমিদার দেবী রায় চৌধুরীর কর্মকান্ডের আলোকে সম্রাট শাহজাহানের স্থাপত্য কীর্তির মূল্যায়ন করো।
❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সম্রাট শাহজাহানের পিতার নাম ছিল নূরউদ্দিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
খ. শাহজাহানের জীবদ্দশায় তার চার পুত্রের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয় তার প্রথম কারণ ছিল মুঘল সাম্রাজ্যে সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট উত্তরাধিকার নীতির অভাব।
বলাবাহুল্য যে, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে যুদ্ধ করে সিংহাসন লাভ ও সংরক্ষণ করতে হয়েছিল। শাহজাদা সেলিম ও শাহজাদা খুররম মুঘল সিংহাসনে সমাসীন হওয়ার পূর্বে তাদের পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সুতরাং সিংহাসনকে কেন্দ্র করে ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব অথবা পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মূল কারণ সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কৃষ্ণ কুমারী দেবীর সাথে সম্রাট হিজাহানের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের সামঞ্জস্য রয়েছে।
উদ্দীপকের জমিদার দেবী রায় চৌধুরীর স্ত্রী কৃষ্ণ কুমারী দেবীও ছিলেন অনিন্দ্য সুন্দরী ও বিদুষী রমণী। জমিদার দেবী রায়ের স্ত্রীর প্রতি ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। এক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী কৃষ্ণ কুমারী অকালে মৃত্যুবরণ করলে জমিদার খুবই মুষড়ে পড়েন এবং স্ত্রীর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি সৌধ নির্মাণ করেন, যা আজও বিদ্যমান। ঠিক একইভাবে মুঘল সম্রাট শাহাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলও ছিলেন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। তিনি আকর্ষণীয় সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা স্বামী শাহজাহানের অন্তর জয় করেছিলেন। সম্রাট তাকে মালিকা-ই-জাহান উপাধি দেন। ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুন সন্তান প্রসবকালে মহীয়সী মমতাজ মহল বুরহানপুরে ইন্তেকাল করেন। প্রিয়তমা পত্নীর অকাল ও আকস্মিক মৃত্যুতে সম্রাট শাহজাহান বেদনাকাতর হয়ে পড়েন। শোকাতুর সম্রাট এতটাই মুষড়ে পড়েছিলেন যে, তিনি সাত দিন ঝারোকায় দর্শন দেননি। এমনকি রাজকালেও অংশ নেননি। প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ও অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সম্রাট মমতাজের সমাধির ওপর তাজমহল নির্মাণ করেন, যা বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। এটি পত্নীপ্রেমেরও এক উজ্জ্বল নিদর্শন। উদ্দীপকেও পত্নীপ্রেমের এমন নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকের জমিদার দেবী রায় চৌধুরীর কর্মকান্ডের মতোই সম্রাট শাহজাহান ও স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রে অপরিসীম কৃতিত্বের অধিকারী। ভারতবর্ষের ইতিহাসে শাহজাহান একজন শ্রেষ্ঠ নির্মাতা ছিলেন। ঐতিহাসিগণ তাকে 'স্থাপত্যের রাজপুত্র' বলে অভিহিত করেছেন।
উদ্দীপকের জমিদার দেবী রায় চৌধুরী স্থাপত্য ক্ষেত্রে যে অবদান রাখেন তা হলো কাচারি বাড়ি, নায়েব মহল, জাকজমকপূর্ণ দরবার হল, নাট নামক একটি মন্দির এবং স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে বহু অর্থব্যয়ে একটি সৌধ নির্মাণ করেন যা আজও বিদ্যমান। তার এ কর্মকান্ড- সম্রাট শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পে অবদানেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
সম্রাট শাহজাহান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য শিল্প 'তাজমহল' নির্মাণ করেন। এর স্থাপত্যিক উপকরণের সুবিন্যাস, অলংকরণের সূক্ষ্মতা ও নৈপুণ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। সম্রাট শাহজাহানের শিল্পানুরাগের আরেকটি অপূর্ব নিদর্শন হলো 'ময়ূর সিংহাসন'। সম্রাট শাহজাহান আগ্রা দুর্গে দেওয়ান-ই-আমের উত্তরে শ্বেতপাথর দ্বারা মতি মসজিদ নির্মাণ করেন। তাছাড়া তিনি আরও নির্মাণ করেন, দিল্লিতে সুরক্ষিত লাল কেল্লা। দিল্লির মে মসজিদ তার অন্যতম এক কীর্তি। সম্রাট শাহজাহানের সময় নির্মিত শিশমহল ও জুঁইমহল ছিল বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সুশোভিত রাজকীয় আবাসগৃহ। আগ্রা দুর্গের অভ্যন্তরে তিনি সুসাম্মাম বুরুজ নামে অপূর্ব সুন্দর একটি প্রকোষ্ঠ তৈরি করেন। তাছাড়া সম্রাট শাহজাহান আরও অন্যান্য স্থাপত্য দিল্লি, আগ্রা, লাহোর, কাবুল, কাশিমর, আজমির ও আহমদাবাদের সুনদর সুনদর অট্টালিকা তৈরি করেন। এছাড়া নিজামউদ্দিন আউলিয়া মাজার, লওখাল, খাওয়ারগাহ, শালিমার উদ্যান প্রভৃতি তার স্থাপত্যশিল্পের অপূর্ব নিদর্শন তার এ স্থাপত্যশিল্পের উৎকর্ষতার কারণে তার রাজত্বকালকে ঐতিহাসিকগণ মুঘল শাসনের 'স্বর্ণযুগ' বলে আখ্যায়িত করেন। পরিশেষে বলা যায় যে, জমিদার দেবী রায় চৌধুরীর নির্মিত সৌধটির মতো সম্রাট শাহজাহানও স্থাপত্য শিল্পেও অনন্য অবদান রেখেছেন।
0 Comments:
Post a Comment