HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Islamic History and Culture 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. শ্রীমাভো বন্দরনায়েক আধুনিক বিশ্বের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দেশ-বিদেশের কতিপয় অভিজাত শ্রেণির সমালোচনার মুখোমুখি হন। কিন্তু নিজ মেধা ও কর্মদক্ষতার গুণে তিনি সকল বিশৃঙ্খলা দূর করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
ক. সালতানাতের শেষ সুলতান কে ছিলেন?
খ. আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গলনীতি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মহিলা শাসকের সাথে দিল্লি সালতানাতের কোন মহিলা শাসকের সাদৃশ্য রয়েছ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত মহিলা শাসকের কৃতিত্ব তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিচার করো।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সালতানাতের শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদি।

খ. আলাউদ্দিন খলজির শাসনামলে দিল্লি সালতানাতে প্রায় সাত বার মোঙ্গল আক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তাই মোঙ্গলদের প্রতিহতকরণে তিনি কতিপয় কার্যকর মোঙ্গলনীতি গ্রহণ করেন।
আলাউদ্দিন খলজি মোঙ্গলদের মোকাবিলায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সাথে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মোঙ্গলদের আক্রমণ পথে তিনি পুরাতন কেল্লা সংস্কার ও নতুন কেল্লা স্থাপন করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি উন্নতমানের অস্ত্রের জন্য কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিশ্বস্তদের ওপর ন্যস্ত করেন। এছাড়া তিনি মোঙ্গলদেরকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সৈন্য সংগ্রহ করেন। এভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি মোঙ্গল আক্রমণ মোকাবিলায় সাফল্য লাভ করেন। তার রাজত্বকালে মোঙ্গলরা আর ভারত আক্রমণে সাহস করেনি।

গ. উদ্দীপকে শ্রীমাভো বন্দরনায়েকর সঙ্গে দিল্লির সালতানাতের মহিলা শাসক সুলতান রাজিয়ার সাদৃশ্য রয়েছ।
পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা চিরকালই অবহেলিত হয়ে আসে এই অবহেলার মাঝেও নারীরা স্বীয় যোগ্যতাবলে সমাজের উন্নয়েন অংশীদার হয়েছ। নানা বাধার সম্মুখীন হয়েও তারা সফল হয়েছ; সকল সমালোচনার উচিত জবাব দিয়েছ। উদ্দীপকের শ্রীমাভো বন্দরনায়েক এবং সুলতান রাজিয়া এমনই দুজন নারী ব্যক্তিত্ব।
শ্রীমাভো বন্দরনায়েক ছিলেন আধুনিক বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বিভিন্ন দেশের কিছু অভিজাত শ্রেণির সমালোচনার মুখোমুখি হন। তারা নারী বলে শ্রীমাভো বন্দরনায়েককে শাসনকার্যে অনুপযোগী ও অদক্ষ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু নিজ মেধা, তেজস্বিতা আর কর্মদক্ষতার গুণে শ্রীমাভো সকল বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি প্রতিহত করে দেশের উন্নতি সাধন করেন। সুলতান রাজিয়াও একইভাবে ১২৩৬ থেকে ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লির ল সিংহাসনে বসে সুলতানি শাসন পরিচালনা করেন। তার ৪ বছেরর রাজত্বকাল মধ্যযুগের ভারতীয় ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে সাম্রাজ্যের বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ প্রতিহত করেন। তিনি উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা শাসনকর্তা। তার সাহসিকতা, দক্ষতা ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তুর্কি জাতির সাহসিকতা এবং দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। তার উদার রাজনৈতিক চিন্তাধারা বস্তুত মুসলিম শাসনের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। সুতরাং দেখা যায় উদ্দীপকের শ্রীমাভো বন্দরনায়েক এবং সুলতান রাজিয়া শাসন পরিচালনার দিক দিয়ে একে অন্যের প্রতিরূপ।

ঘ. ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে সুলতান রাজিয়া ছিলেন দিল্লির সিংহাসনে আরোহণকারী প্রথম ও একমাত্র মহিলা।
সালতানাতের এক সংকটকালে সুলতান রাজিয়া সিংহাসনে আরোহণ করেন। ঐতিহাসিক মিনহাজ-উস-সিরাজের হিসেব মতে, তিনি ৩ বছর ৬ মাস ৬ দিন রাজত্ব করেন। তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং অসাধারণ প্রতিভাশালী একজন নারী। প্রচলিত মুদ্রায় তিনি নিজেকে উমদাদ-উল- নিসওয়ান (নারীদের মধ্যে বিশিষ্ট) বলে উল্লেখ করেন। মিনহাজ-উস- সিরাজ তাকে মহান নৃপতি, বিচক্ষণ, ন্যায়পরায়ণ ও মহানুভব বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি একজন সার্বভৌম নৃপতির প্রয়োজনীয় গুণাবলি ও যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। এ. বি. এম. হবিবুল্লাহর মতে, সাহসিকতা ও অদম্য দৃঢ়তাই (Courage and unflincing determination) ছিল রাজিয়ার আদর্শ।
চারিত্রিক দৃঢ়তায় সুলতান রাজিয়া নিজেকে পুরুষ অপেক্ষা যোগ্যতর প্রমাণ করেন। ব্যক্তিগত দৃঢ়তা ও যোগ্যতাই তার ক্ষমতা ও অস্তিত্বের চাবিকাঠি ছিল। সুলতান রাজিয়া প্রশাসনিক দৃঢ়তা ও ব্যক্তিগত শক্তি- সামর্থ্য প্রমাণের লক্ষ্যেই মহিলা পোশাক পরিত্যাগ করেন, অশ্বারোহণে জনসমক্ষে বের হন এবং প্রকাশ্যে দরবার পরিচালনা করেন। অধ্যাপক কে. এ. নিজামী যথার্থই বলেছেন, ‘‘অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, তিনি ছিলেন ইলতুৎমিশের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে যোগ্যতম।"
পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান রাজিয়া ছিলেন অপরিসীম কৃতিত্বের অধিকারী।

২. নিপু বাজারে গিয়ে দেখলেন যে, বাজারে প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য তালিকা দেয়া আছে কিন্তু ব্যবসায়ীগণ তা মানছেন না। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকার পরিবর্তে ৩৭/৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
ক. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. বলবনের 'রক্তপাত ও কঠোর নীতি' ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের কর্মকান্ডের মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত শাসকের গৃহীত ব্যবস্থার ফলাফল পাঠ্যবইয়ের আলোকে মূল্যায়ন করো।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক (শাসনকাল ১৩২০- ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ)।

খ. রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন এবং মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত নিষ্ঠুর ও কঠোর পদক্ষেপই 'রক্তপাত ও কঠোর নীতি' (Blood and Iron policy) নামে পরিচিত।
সিংহাসনে আরোহণ করেই বলবন নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আমির-ওমরাহ ও অভিজাত সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান ঔদ্ধত্য, দ্বন্দ্ব-কলহ ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ, দিল্লির সন্নিকটস্থ মেওয়াটি দস্যুদের উপদ্রব, উপর্যুপরি ল মোঙ্গল আক্রমণ প্রভৃতি। এসব সমস্যা সাম্রাজ্যের ভিতকে হুমকির সম্মুখীন করে তোলে। তাই নিজের ক্ষমতা সুসংহত করে সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি গুপ্তচর প্রথা চালু, বিচার ব্যবস্থার পুনর্গঠন, মোঙ্গল নীতি প্রভৃতি বিষয়ে কঠোর ও নিষ্ঠুর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এগুলোই বলবনের 'রক্তপাত ও কঠোর নীতি' হিসেবে স্বীকৃত।

গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের শাসক দিল্লি সালতানাতের সুলতান আলাউদ্দিন খলজির কর্মকান্ডের মিল রয়েছ।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতারোহণ করেই নানামুখী সংস্কার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সুলতানের এ সংস্কার কাজগুলোর মধ্যে মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অন্যতম। মূলত আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিধান, জনসাধারণের সুবিধা, মুদ্রাস্ফীতি রোধ, বিশাল সৈন্যবাহিনীর ভরণ-পোষণ এবং সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও সংহতি বিধানের জন্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
উদ্দীপকে একটি বাজারের দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীল অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় করছে না। অবস্থার প্রেক্ষিতেই সুলতান আলাউদ্দিন খলজি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
আলাউদ্দিন খলজি খাদ্যশস্য সুলভ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন- গম, বার্লি, চাল, চিনি, আটা, ডাল, তৈল, সোডা ইত্যাদির মূল্য নির্ধারণ করে দেন। এছাড়া তিনি বস্তু, পশু ও অন্যান্য দ্রব্যাদির মূল্যের তালিকা করে দেন। এছাড়া তিনি দ্রব্যাদির চাহিদা অনুসারে সরবরাহের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি বস্তু, পশু ও অন্যান্য দ্রব্যাদির মূল্যের তালিকা করে দেন। উদ্দীপকে এরকমই একটি মূল্যতালিকার কথা বলা হয়েছ, যা আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত বহন করছে।

ঘ. উক্ত শাসক অর্থাৎ আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে জনজীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছিল।
মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি ও পদ্ধতি আলাউদ্দিন খলজি প্রবর্তিত সংস্কারসমূহের মধ্যে ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত তিনিই একমাত্র শাসক, যিনি একটি বৈপ্লবিক অর্থনৈতিক সংস্কার সাধন করে ইতিহাসে অমর ও অক্ষয় হয়ে রয়েছন।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার তাৎপর্য ও ফলাফল সম্পর্কে ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারানী বলেন, বাজারে শস্যের অপরিবর্তিত মূল্য সে যুগের অন্যতম বিস্ময় ছিল'। স্টেনলি লেনপুলের মতে, 'এ ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে সফল হয়েছিল। সকল শ্রেণির জনগণ এ অভূতপূর্ব পদ্ধতির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিল। সুলতানের দৃঢ় সংকল্প, কঠোর নজরদারি, কর্মচারীদের কর্তব্যপরায়ণতা এবং জনগণের সহযোগিতায় এ পদ্ধতি কার্যকর ও সফল হয়। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি রোধ, খাদ্য সমস্যার সমাধান এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি সাধিত হয়। সুলতানের এ মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কেবল তার উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করেনি, এটা জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করে।
পরিশেষে বলা যায়, মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সুলতানের পক্ষে যেমন অল্প বেতনে বিশাল সেনাবাহিনী প্রতিপালন সম্ভব হয়, তেমনি এ ব্যবস্থার মাধ্যমে জনসাধারণের জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি আনয়েনও তিনি সফল হন।

৩. অনলাইন শপিং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। মানুষের ব্যস্ততা ও কর্মপরিধি বাড়তে থাকায় তারা আজ বাজারে যাবার পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না। তাছাড়া প্রতিটি পণ্যের দাম নির্ধারিত থাকায়, সঠিক ওজন ও পণ্যের গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধান করায় এ শপিং ব্যবস্থার উপর ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। পণ্যের সরবরাহ নির্বিঘ্ন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, দ্রব্য সামগ্রীর বিপুল সমাহার ও বৈচিত্র্য থাকায় অনলাইন শপিং মানুষের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় করছে।
ক. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. তৈমুর লঙ এর ভারত আক্রমণের ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অনলাইন শপিং ব্যবস্থাপনার সাথে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মিল কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, অনলাইন শপিং ফলপ্রসূ করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মতো সুলতান আলাউদ্দিন খলজিও উক্ত ব্যবস্থা যথাযথভাবে বাস্তবায়েনর জন্য বহুবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন? তোমার উত্তরে পক্ষে যুক্তি দাও।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক।

খ. তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের ফলে দিল্লি সালতানাত পতনের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে যায়।
দিল্লি সালতানাতের দুর্বলতার সুযোগে মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ সমরনেতা আমির তৈমুর লঙ ভারত আক্রমণ করেন (১৩৯৮-৯৯ খ্রি.)। তার এ আক্রমণের ফলে দিল্লি সালতানাতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে যায়। এ সুযোগে সালতানাতের বিভিন্ন অঞ্চল কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং সালতানাতের পতনের বিষয়টি শুধু সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অনলাইন শপিং ব্যবস্থাপনার সাথে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টির মিল রয়েছ।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতারোহণ করেই নানামুখী সংস্কার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সুলতানের এ সংস্কার কার্যগুলোর মধ্যে মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অন্যতম। তিনি মূলত সাম্রাজ্যের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিধান, জনসাধারণের সুবিধা, মুদ্রাস্ফীতি রোধ, বিশাল সৈন্যবাহিনী পোষণ এবং সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব ও সংহতির জন্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। উদ্দীপকেও তার এ ব্যবস্থার প্রতিফলন লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত অনলাইন শপিং ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছ। তাছাড়া পণ্যের সঠিক ওজন ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছ। অনুরূপভাবে সুলতান আলাউদ্দিন খলজিও তার শাসনামলে খাদ্যশস্য সুলভ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেন। যেমন- গম প্রতি মণ ৭ জিতল (১ জিতল = ০.৬ পয়সা), বার্লি প্রতিমণ ৪ জিতল, ধান প্রতিমণ ৫ জিতল, ডাল প্রতিমণ ৫ জিতল, তিল ও তৈল তিন সের ১ জিতল, মাখন ২ সের ১ জিতল, ঘি ২ সের ১ জিতল ইত্যাদি। সুলতান কেবল দ্রব্য মূল্য নির্ধারণ করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়েনর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। উদ্দীপকের অনলাইন শপিং ব্যবস্থাপনায়ও সুলতান আলাউদ্দিন খলজির এ কর্মকান্ডের প্রতিচ্ছবিই ফুটে উঠেছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, অনলাইন শপিং ফলপ্রসূ করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মতো সুলতান আলাউদ্দিন খলজিও তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যথাযথভাবে বাস্তবায়েনর জন্য বহুবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।
উদ্দীপকে উল্লিখিত অনলাইন শপিং ব্যবস্থা ফলপ্রসূ করার জন্য পণ্যের সঠিক ওজন ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছ। এছাড়া পণ্যের সরবরাহ নির্বিঘ্ন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, দ্রব্য সামগ্রীর বিপুল সমাহার রাখা হয়েছ। ফলে এটি জনগণের নিকট অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঠিক একইভাবে সুলতান আলাউদ্দিন খলজিও তার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য কিছু যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাউদ্দিন খলজি পণ্য বাজার স্থাপন করেন। তিনি দিল্লিতে মান্ডি নামে প্রধান ও কেন্দ্রীয় শস্য বাজার বসান। ঔষধপত্র, কাপড়, শুকনো ফল, চিনি, মাখন এবং জ্বালানি তেলের বাজার বসানো হয় দিল্লির বাদাউন তোরণে ‘সেহরা আদলে'। এ সময়ে পণ্য বাজার পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের জন্য শাহানা ই মান্ডি' এবং 'দিউয়ান ই রিয়াসত' নামক দুজন পদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্যশস্যসহ পণ্য আমদানি এবং নির্দিষ্ট মূল্যে তা বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়ীদের পণ্য মূল্য টানিয়ে রাখার নির্দেশ ছিল। নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত আদায় ও ওজন পরিমাপে কারচুপি করা হলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। প্রাকৃতিক কারণে যাতে খাদ্য ঘাটতি না পড়ে এবং চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সরবরাহ সুনিশ্চিত করা যায় সেজন্য দিল্লিতে একটি রাজকীয় শস্যাগার স্থাপন করা হয়েছিল। পণ্য বরাদ্দ নির্ধারণের মাধ্যমে সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী একটি পরিবারের সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও অধিক মুনাফার লোভে কেউ যাতে পণ্যের মজুতদারি না করতে পারে সুলতান সে ব্যবস্থা করেন। মজুতদারি নিরোধে জরিমানা ও পণ্য বাজেয়াপ্ত করা সহ নানা রকমের শাস্তি দেওয়া হতো। এ সকল ব্যবস্থাছাড়াও সুলতান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

৪. উচ্চাভিলাষী জমিদার প্রবাল রায়ের অত্যাচার ও কঠোর কর আদায় নীতির কারণে সাধারণ প্রজাগণ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, কৃষক কৃষিকাজ ফেলে পালিয়ে যায়। বিদ্রোহ দমন করতে যেয়ে তার মৃত্যু হয়। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে চাচাত ভাই শ্যামল রায় নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে জমিদারির দায়িত্ব নেন। তিনি জমিদারের প্রতি প্রজাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক জনকল্যাণকর কাজ করেন। তিনি সাধারণ প্রজার বকেয়া কর মাফ করে দেন। আবার ঋণ প্রদান করেন। তবে অধিক হারে ঋণ প্রদান ও বেহিসেবি দান খয়রাতের ফলে রাজকোষে প্রচন্ড অর্থ ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে জমিদারির দুরবস্থার জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
ক. মালিক কাফুর কে ছিলেন?
খ. দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জমিদার শ্যামল রায়ের সাথে কোন ভারতীয় সুলতানি শাসকের সাদৃশ্য রয়েছ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের জমিদার শ্যামল রায়ের মতো উক্ত সুলতানকেও তার বংশের পতনের জন্য দায়ী করা যায় কি? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মালিক কাফুর ছিলেন দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযানের সেনাপতি।

খ. দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল বিত্তশালী কৃষকদের বিদ্রোহ দমন করা।
সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল হিন্দু বিদ্রোহ দমন এবং জমিদারদের দর্পচূর্ণ করা। আবার অনেকেই মনে করেন রাজধানী স্থানান্তর, খোরাসান ও কারাচিল অভিযানের ব্যর্থতা এবং প্রতীকী মুদ্রার বিফলতার কারণেই সুলতান দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করেন। কর বৃদ্ধির মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বারানী বলেন সুলতান দোয়াবে দশ হতে বিশগুণ কর বৃদ্ধি করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জমিদার শ্যামল রায়ের সাথে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সাদৃশ্য রয়েছ।
দিল্লি সালতানাতের তুঘলক বংশের অন্যতম খ্যাতিমান শাসক ছিলেন ফিরোজ শাহ তুঘলক। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি সালতানাতের ক্ষমতা গ্রহণে বাধ্য হয়েছিলেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। উদ্দীপকের জমিদার শ্যামল রায়ের মধ্যে এ শাসকেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, বিদ্রোহ দমন করতে যেয়ে জমিদার প্রবাল রায়ের মৃত্যু হয়। এরপর তার চাচাতো ভাই শ্যামল রায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অনুরোধে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে জমিদারির দায়িত্ব নেন। তিনি জমিদার হওয়ার পর অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। অনুরূপভাবে তাকির বিদ্রোহ দমন করত গিয়ে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক মৃত্যুবরণ করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের মৃত্যুর পর তার চাচাতো ভাই ফিরোজ শাহ অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমির ও অভিজাতগণের অনুরোধ এবং সাম্রাজ্যের বাস্তব সংকটজনক অবস্থা বিবেচনা করে সালতানাতের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ক্ষমতা গ্রহণ করেই তিনি প্রজা কল্যাণে মনোনিবেশ করেন। প্রজাকল্যাণমূলক কার্যাবলির জন্য তিনি ইতিহাসে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার সময়ে দরিদ্র, অনাথ ও বিধবাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হতো, তিনি পূর্ববর্তী সুলতানের দেওয়া ঋণ মওকুফ করে দেন। কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নতির জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের জমিদার শ্যামল রায়ের সাথে দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের মিল রয়েছ।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের জমিদার শ্যামল রায়ের মতো উক্ত সুলতানকেও অর্থাৎ সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলককেও তার বংশের পতনের জন্য দায়ী করা যায়।
উদ্দীপকের শ্যামল রায় জমিদারের প্রতি প্রজাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক জনকল্যাণকর কাজ করেন। তিনি প্রজাদের বকেয়া কর মাফ করেন এবং নতুন করে ঋণ প্রদান করেন। তবে অধিক হারে ঋণ প্রদান ও বেহিসেবি দান খয়রাতের ফলে রাজকোষে ব্যাপক অর্থ ঘাটতি দেখা দেয়, যা জমিদারকে দুরবস্থায় ফেলে দেয়। শ্যামল রায়ের মতো দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকও তার বংশের পতনের জন্য দায়ী ছিলেন।
ফিরোজ শাহ তুঘলকের সংস্কার ও উদারনীতির মধ্যে তুঘলক বংশের পতনের বীজ নিহিত ছিল। তার কোনো কোনো নীতি ও কার্যাবলি শুধু তুঘলক বংশের নয়, দিল্লি সালতানাতের পতনের জন্যও দায়ী ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন। সমাজের বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলা দমনে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তার আরেকটি বড় ভুল ছিল জায়গিরদারি প্রথার পুনঃপ্রবর্তন। এর ফলে অভিজাতবর্গ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে এবং কেন্দ্রীয় শাসনের ক্ষমতা শিথিল হয়ে পড়ে। তিন সেনাবাহিনীতে বংশানুক্রমিক চাকরির অধিকার প্রদান করে সাম্রাজ্যের স্থায়য়েত্বর মূলে কুঠারাঘাত করেন। তার সৃষ্ট ক্রীতদাস বাহিনীর ভরণপোষণে রাজকোষের প্রচুর অর্থ অপচয় হয়। ফলে রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। আবার যুদ্ধনীতি পরিহার করায় করায় সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। শাসনকাজে উলামাদের প্রাধান্য দেওয়ায় সুলতান অসুন্নি মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের রোষানলে পতিত হন। তার সময়ে অপরাধীদের শাস্তি প্রদান রহিত করার ফলে দুর্নীতি বেড়ে যায় এবং দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীরা সরকারি অর্থ সম্পদ লুট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর সকল কর্মকান্ড তুঘলক বংশকে পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি ও কার্যাবলি তুঘলক বংশের পতন এমনকি সালতানাতের পতনের পথকে সুগম করেছিল।

৫. প্রশাসনের একজন অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে দেখলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে আমলা শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল তারাই এখন প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টানকরছে। তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরণ ও বিশৃঙ্খলা তৈরি এবং সিন্ডিকেটভিত্তিক অফিসিয়াল কার্যাদি পরিচালনা করছে। এমতাবস্থায় মেয়র প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সিন্ডিকেটদের কঠোরভাবে দমন-বদলি, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ কিছু অত্যাবশ্যকীয় বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। ফলে সিটি কর্পোরেশনে সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ‘‘গুণাম বৃদ্ধি পায়।
ক. সুলতান মাহমুদের পিতার নাম কী?
খ. কুতুবমিনার নামকরণের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমলা সিন্ডিকেটের সাথে বন্দেগান-ই- চেহেলেগানের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্দীপকে বর্ণিত মেয়র কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের সাথে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত পদক্ষেপের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সুলতান মাহমুদের পিতার নাম আমির সবুক্তগীন।

খ. মহান সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে কুতুবমিনারের নামকরণ করা হয়।
দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন শিল্প- সংস্কৃতির প্রতি বেশ অনুরাগী। স্থাপত্য শিল্পের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তাই তিনি ১১৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লিতে একটি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ সময় কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী নামে একজন মহান সাধক সুলতানের সংস্পর্শে আসেন। তাকে সুলতান খুবই পছন্দ এবং শ্রদ্ধা করতেন। তাই তার নামানুসারে এ বিজয় স্তম্ভের নামকরণ করা হয় কুতুবমিনার।

গ. কর্মকান্ডের দিক দিয়ে বন্দেগান-ই-চেহেলেগানের সাথে উদ্দীপকে উল্লিখিত আমলা সিন্ডিকেটের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
সুলতান ইলতুৎমিশের শাসনামলে তুর্কি অভিজাতরা প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে। এরাই 'বন্দেগান-ই-চেহেলেগান' নামে পরিচিত ছিল। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনও এ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইলতুৎমিশ-পরবর্তী দুর্বল উত্তরাধিকারীদের (রুকুনউদ্দিন ফিরোজ, মুইজ উদ-দীন বাহরাম, আলাউদ্দিন মাসুদ শাহ) যুগে এ গোষ্ঠী প্রশাসন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। মাঝে মধ্যে তারা শাসকদের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধেও এ চক্র শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করে। তারা নানা ধরনের অপকর্ম করে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। উদ্দীপকের আমলা সিন্ডিকেটের মধ্যেও এ ধরনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রশাসনের একজন অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিটি মেয়র নির্বাচিত হলে শাসনকার্য পরিচালনায় আমলা শ্রেণি তার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একইভাবে বন্দেগান-ই-চেহেলেগান নামক আমলা শ্রেণিও গিয়াসউদ্দিন বলবনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সুলতান বলবন এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের ওপর সুলতানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দীপকের সিন্ডিকেট দমনেও সিটি অপচেষ্টা প্রভৃতি মেয়রকে সুলতান বলবনের ন্যায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়। সুতরাং সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান, আভিজাত্য, কার্যাবলি বিবেচনায় বন্দেগান-ই-চেহেলেগান ও উদ্দীপকের সিন্ডিকেট একই ধরনের আমলা শ্রেণি।

ঘ. সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্দীপকে বর্ণিত মেয়র কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগ সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত পদক্ষেপের অনুরূপ।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় 'বন্দেগান-ই-চেহেলেগান' নামক তুর্কি অভিজাতদের অপকর্মের দৌরাত্ম্য অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। সুলতান তাদের অপরাধ চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেন। তাদের পদোন্নতি বন্ধ করে দেন এবং বদলির ব্যবস্থা করেন। তিনি তাদের জনসমক্ষে শাস্তি দেন। উদ্দীপকেও এ ধরনের উদ্যোগ লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সিটি মেয়র দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর গ্রহণ করেন। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিনি কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ দেন। একইভাবে গিয়াসউদ্দিন বলবনও দুর্নীতিবাজ বন্দেগান-ই- চেহেলেগানদের শান্তি দেন। তিনি ‘‘অপরাধীদের চিহ্নিত করে জনসমক্ষে বিচার করতেন তেমনি সিটি মেয়র একই ধরনের বাস্তবধর্মী ও পদক্ষেপ নিরপেক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ গ্রহণ করেন। ফলে সিটি কর্পোরেশনে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। গিয়াসউদ্দিন বলবনের বন্দেগান-ই-চেহেলেগানদের দমনের ফলেও সাম্রাজ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সুলতান বলবন এ চক্রের প্রভাব খর্ব করে সাম্রাজ্যে নিজের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের সিটি মেয়র এবং গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবধর্মী এবং কার্যকর হওয়ায় উভয়ই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছন।

৬. জমিদার আবুল হাসান মৃত্যুর পূর্বে তার বিদূষী ও বুদ্ধিমতী কন্যা হাসনা বানুকে তার বিশাল জমিদারির উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। আপনজনদের নানামুখী বিরোধিতার সম্মুখীন হয়ে তাকে জমিদারি হারাতে হয়েছিল। কিন্তু শত্রুদের হাতে তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর পুনরায় তিনি জমিদারি ফিরে পান। সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারী হওয়ার কারণে তিনি নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কাঙি্ক্ষত সফলতার পরিচয় দিতে পারেননি।
ক. 'আইবেক' শব্দের অর্থ কী?
খ. গিয়াসউদ্দিন বলবন কেন রক্তপাত ও কঠোরনীতি গ্রহণ করেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জমিদার কন্যার সাথে দিল্লি সালতানাতের কোন শাসকের মিল রয়েছ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. হাসনা বানু ও উক্ত নারী শাসকের ব্যর্থতার কারণ একই সূত্রে গাঁথা- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'আইবেক' শব্দের অর্থ চন্দ্র দেবতা।

খ. অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।
গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় তুর্কি অভিজাতদের ষড়যন্ত্র এবং বহিরাক্রমণ মারাত্মক রূপ ধারণ করে। সুলতান বলবন ষড়যন্ত্রপরায়ণ অভিজাতদের দমনের জন্য কঠোর শাসন নীতি গ্রহণ করেন। তাছাড়া মোঙ্গলদের আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্যও তিনি কঠিন দৃঢ়তার পরিচয় দেন সুতরাং অভ্যন্তরীণ কলহ ও শত্রু দমনের জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জমিদার কন্যার সাথে দিল্লি সালতানাতের সুলতান রাজিয়ার মিল রয়েছ।
সুলতান ইলতুৎমিশ পুত্রদের তুলনায় কন্যা রাজিয়াকেই সালতানাত পরিচালনায় অধিক যোগ্য বলে মনে করেছিলেন। তাই তিনি কন্যা রাজিয়াকে দিল্লি সালতানাতের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। রাজিয়া দিল্লি সালতানাতের দায়িত্ব নিলে তার কাছের মানুষেরা বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। তাদের বিরোধিতা চরম আকার ধারণ করলে রাজিয়াকে ক্ষমতা হারাতে হয়। উদ্দীপকেও এ ধরনের ঘটনার ইঙ্গিত রয়েছ। উদ্দীপকে দেখা যায়, আবুল হাসানের মৃত্যুর পর তার যোগ্য কন্যা জমিদারি লাভ করলে আপনজনরা বিরোধিতা করে। এ ধরনের আপন লোকেরাই সুলতান রাজিয়ার পতন ঘটিয়েছিল। সুলতান হিসেবে রাজিয়াকে নানা বাধা-বিপত্তি, ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হয়। রাজিয়াকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে অভিজাত আলেম-উলেমা এবং আত্মীয়রা নানা ধরনের বিরোধিতা করেন। ভিন্ন সাম্রাজ্যের সাথে বিরোধ থাকলে অথবা প্রতিযোগিতা থাকলে তাতে জয় লাভ করা যায়। কিন্তু নিজ সাম্রাজ্যের অভিজাতদের সাথে শত্রুতা থাকলে তা অনেক সময় পরাজয় ডেকে আনে। উদ্দীপকে হাসনা বানু ও দিল্লি সালতানাতের রাজিয়ার ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছ। সুতরাং নারী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ, যোগ্যতা, পরাজয় প্রভৃতি বিষয় অনুসারে সুলতান রাজিয়ার সাথে উদ্দীপকের হাসনা বানুর সাদৃশ্য রয়েছ।

ঘ. যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু নারী হওয়ার কারণেই হাসনা বানু ও সুলতান রাজিয়ার পতন ঘটেছিল।
ভারতের মুসলিম শাসনের ইতিহাসে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণকারী প্রথম ও একমাত্র নারী ছিলেন সুলতান রাজিয়া। শাসনকার্যে চারিত্রিক দৃঢ়তায় তিনি নিজেকে পুরুষ অপেক্ষা যোগ্যতর প্রমাণ করেন। তিনি তার প্রশাসনের দৃঢ়তা ও ব্যক্তিগত শক্তি-সামর্থ্য প্রমাণের লক্ষ্যেই মহিলা পোশাক পরিত্যাগ করেন। কিন্তু তুর্কি অভিজাত শ্রেণি নারী বলে রাজিয়ার এ সকল কর্মকান্ডের বিরোধিতা করেন। অভিজাত বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের ফলেই তার পতন হয়। হাসনা বানুর ব্যর্থতার পেছেনও এ ধরনের বিষয় প্রধান কারণ হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, হাসনা বানু জমিদারি গ্রহণ করে সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারীসুলভ দুর্বলতার কারণে নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কাঙি্ক্ষত ফলতার পরিচয় দিতে পারেননি। ঠিক একইভাবে সুলতান রাজিয়াও সিংহাসনে আরোহণ করার পর শাসন ক্ষেত্রে নানাবিধ গুণাবলি ও যোগ্যতার প্রমাণ দিলেও ব্যর্থ হন। মূলত নারীত্বই ছিল তার প্রধান অযোগ্যতা। ভি. ডি. মহাজন বলেন, 'যদি রাজিয়া একজন নারী না হতেন তাহলে তিনি ভারতের অন্যতম সফল শাসক হতেন।' শক্তিশালী পুরুষ আমির-উমরাহগণ একজন নারী কর্তৃক শাসিত হতে অপমান বোধ করে তার উৎখাত সাধনে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। তাছাড়া রাজিয়ার দৃঢ় ব্যাক্তিত্ব ও কঠিন হস্তে শাসন পরিচালনা সুলতানি সাম্রাজ্যের ওপর তুর্কি অভিজাতদের অপ্রতিহত ক্ষমতা স্থাপনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়েনর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে তুর্কি অভিজাতরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং সুলতান রাজিয়ার পতন ঘটায়। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, একজন নারী হিসেবে সুলতান রাজিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করে শাসনকার্য পরিচালনা করার বিষয়টিকে তুর্কি অভিজাতগণ নিজেদের অপমান হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে তারা নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুলতান রাজিয়ার পতন ঘটায়। আর এতে প্রমাণিত হয়, হাসনা বানু ও সুলতান রাজিয়ার ব্যর্থতার কারণ একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছ।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. ভুটানের 'কিংস কাপ ফুটবল ফাইনাল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের রক্ষণভাগের সাহসী খেলোয়াড় ইয়াছিন তার চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে ভারতের শক্তিশালী পুনে ক্লাবের বিরুদ্ধে জয় এনে দেন। ইয়াছিন ডিফেন্স থেকে প্রতিপক্ষের দুর্বলতাগুলো লক্ষ করেন এবং সুযোগ বুঝে মধ্যমাঠ দিয়ে না গিয়ে বরং সাইড লাইন ঘেঁষে ক্ষিপ্র গতিতে গিয়ে গোলপোস্ট ছেড়ে দূরে দাঁড়ানো বিপক্ষ গোল কিপারকে বোকা বানিয়ে বলটিকে অতর্কিতে প্রতিপক্ষের জালে পাঠিয়ে দেন। বাকি সময়ে প্রতিপক্ষ সে গোল আর শোধ করতে পারেনি। অথচ জয়ের নায়ক ইয়াছিন ইতোপূর্বে জাতীয় দলসহ বিভিন্ন ক্লাবে নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির প্রাণ প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ক. ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন কে?
খ. কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রতিষ্ঠিত বংশকে দাসবংশ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ইয়াছিনের খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবে নাম অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টার সাথে বখতিয়ার খলজির প্রথম জীবনের ইতিহাসের কী মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের কিংস কাপ জয়ের কৌশল ও বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের কৌশল প্রায় একই- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন কুতুবউদ্দিন আইবেক।

খ. কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন বলে এবিএম হবিবুল্লাহ কুতুবউদ্দিনের এ রাজবংশকে 'মামলুক' বা 'দাস বংশ' নামে অভিহিত করেছেন।
১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন আইবেক সুলতান উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। কুতুবউদ্দিন আইবেকের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন ও একটি নতুন রাজবংশের সূচনা হয়। কুতুবউদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত এ রাজবংশই ইতিহাসে 'দাস বংশ' নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে ইয়াছিনের খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবে নাম অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টার সাথে বখতিয়ার খলজির প্রথম জীবনের সেনাবাহিনীতে চাকরি প্রাপ্তির প্রচেষ্টার মিল রয়েছ।
ভাগ্য সব সময় মানুষের অনুকূলে থাকে না। তবে প্রচেষ্টা থাকলে শেষ পর্যন্ত সফলতা লাভ অনিবার্য। উদ্দীপকের ইয়াছিন প্রথম জীবনে ভাগ্যের আনুকূল্য পাননি। বারবার চেষ্টা করেও তিনি জাতীয় দলসহ কোনো ক্লাবে ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখাতে পারেননি। বখতিয়ার খলজির প্রথম জীবনের ঘটনাও অনুরূপ।
ইখতিয়ারয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি দারিদ্রের নিপীড়নে তিনি প্রথম জীবনে স্বদেশ ত্যাগ করে ভাগ্যান্বেষণে বের হন। প্রথমেই গজনির সুলতান মুহাম্মদ ঘুরীর সৈন্যবাহিনীতে চাকরি প্রার্থী হয়ে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি দিল্লিতে কুতুবউদ্দিন আইবেকের দরবারে হাজির হন। এখানেও তিনি চাকরি পেতে ব্যর্থ হন। অতঃপর তিনি বাদাউনে যান, সেখানকার শাসনকর্তা মালিক হিজবর উদ্দিন বখতিয়ার খলজিকে নগদ বেতনে সেনাবাহিনীতে চাকরি প্রদান করেন। কিন্তু তিনি সামান্য বেতনভোগী সিপাহি হয়ে পরিতৃপ্ত হতে পারেননি। অল্পকাল পরে তিনি অযোধ্যায় যান। অযোধ্যার শাসনকর্তা হুসামউদ্দিন তাকে দুইটি পরগনায় জায়গির প্রদান। পরবর্তীতে তিনি সৈন্য সংগ্রহ করে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে মনোনিবেশ করেন। এভাবে উদ্দীপকের খেলোয়াড়ের ন্যায় প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে বখতিয়ার খলজি নিজের অবস্থান দৃঢ় করেন।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের কিংস কাপ জয়ের কৌশল ও বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের কৌশল প্রায় একই উক্তিটি সঠিক।
যেকোনো কাজে সফলতা লাভের জন্য পরিকল্পনা ঠিক করতে হয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা যত সূক্ষ্ম ও যথাযথ হবে ততই সফলতা লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। উদ্দীপকের ইয়াছিন অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি প্রতিপক্ষ দলের দুর্বলতা চিহ্নিত করে কৌশলে গোল করতে সক্ষম সক্ষম হয়েছন। তার এরূপ কৌশল বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের কৌশলের সাথে সাথে প্রায় মিলে যায়।
বখতিয়ার খলজি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বাংলা আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। বাংলার সেন রাজা লক্ষ্মণ সেন এ সময় দ্বিতীয় রাজধানী নদীয়াতে অবস্থান করছিলেন। বখতিয়ার খলজি বুঝেছিলেন যে, স্বাভাবিক কারণেই লক্ষ্মণ সেন বাংলায় প্রবেশের একমাত্র পথ তেলিয়াগরহিতে দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। তাই তিনি বাংলা আক্রমণের জন্য বেছে নিলেন ঝাড়খন্ডের জঙ্গল। তিনি তার সেনাবাহিনীকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ করেন। সতেরো সৈন্যের প্রথম দলের অগ্রভাগে ছিলেন বখতিয়ার খলজি। অশ্ববিক্রেতার ছদ্মবেশে তারা বিনা বাধায় লক্ষ্মণ সেনের নদীয়ার রাজপুরীতে চলে আসেন। মধ্যাহ্ন দুপুরে লক্ষ্মণ সেনের অপ্রস্তুত প্রহরীদের সহজেই তিনি পরাজিত করলেন। এভাবে সহজেই কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি জয়লাভ করলেন।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের কৌশল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ যেন উদ্দীপকে বর্ণিত কিংস কাপ জয়েরই প্রতিরূপ।

৮. একটি পাঁচ টাকার কয়েন গলিয়ে ২টি চা-চামচ তৈরি করে তা দশ টাকায় বিক্রি করার ফলে হঠাৎ 'ক' দেশে ধাতব মুদ্রার অভাব দেখা দেয়। অভাব মোকাবিলায় সরকার উর্বর দক্ষিণ অঞ্চলের কর বৃদ্ধি করে। ওদিকে ব্যবসায়ীরা মুদ্রার অভাবে সিলযুক্ত কাগজের স্লিপ ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু অসাধু ব্যক্তিরা এসব স্লিপ জাল করে দেশের অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
ক. কারাচিল কোথায় অবস্থিত?
খ. দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত উর্বর দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে ভারতের কোন অঞ্চলের তুলনা করা যায়? তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মুদ্রা ব্যবস্থার মতই মুহাম্মদ বিন তুঘলকের 'প্রতীক মুদ্রা' পরিকল্পনাটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়- উক্তিটি মূল্যায়ন করো।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কারাচিল হিন্দুস্থান ও চীনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত।

খ. ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব, প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন, অনুকূল আবহাওয়া প্রভৃতি কারণে মুহাম্মদ বিন তুঘলক দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করেন।
দাক্ষিণাত্যের হিন্দুদের বিদ্রোহাত্মক মনোভাব লক্ষ করে তাদের ওপর আধিপত্য ও ও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সুলতান দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করেছিলেন মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কা দূর করে রাজধানী নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে দৌলতাবাদই ছিল উপযুক্ত স্থান। দাক্ষিণাত্যের প্রাচুর্য ও সম্পদের অধিকতর সদ্ব্যবহারের জন্য সুলতান দৌলতাবাদে রাজধানী স্থাপন অধিক সমীচীন বলে মনে করেছিলেন। মূলত শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি দৌলতাবাদে রাজধানী স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত উর্বর দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ভারতের দোয়াব অঞ্চলের তুলনা করা যায়।
উদ্দীপকে অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে 'ক' দেশের উর্বর দক্ষিণাঞ্চলে সরকার কর্তৃক কর বৃদ্ধির ঘটনা উল্লিখিত হয়েছ। একই রকম প্রেক্ষাপটে দিল্লি সালতানাতের সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক উর্বর দোয়াব অঞ্চলের কর বৃদ্ধি করেছিলেন। এ এ প্রেক্ষিতে আলোচ্য অঞ্চল দুটি সাদৃশ্যপূর্ণ। গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী উর্বর অঞ্চল দোয়ার নামে পরিচিত। দিল্লি সালতানাতের ‘শস্যভান্ডার' নামে খ্যাত এ অঞ্চলে কর বৃদ্ধি ছিল। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পরিকল্পনা। ঐতিহাসিক ডব্লিউ হেগের মতে, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও শাসনব্যবস্থাকে কার্যক্ষম করার উদ্দেশ্যে দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করা হয় তাছাড়া ওই অঞ্চলের বিদ্রোহী প্রজাদের শাস্তি প্রদান করা ছিল অন্য একটি কারণ। এছাড়া রাজধানী স্থানান্তর, খোরাসান ও ও কারাচিল অভিযান এবং মুদ্রা প্রবর্তনের ফলে রাজকোষ অর্থশূন্য হয়ে পড়লে তিনি এ অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করেন। আধুনিক গবেষকদের মতে, দোয়াব অঞ্চলে ধার্যকৃত করের পরিমাণ ৫০%-এর বেশি ছিল না। বিত্তবানদের বিদ্রোহ, অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এবং দুর্ভিক্ষের কারণে সুলতানের দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মুদ্রাব্যবস্থার মতোই মুহাম্মদ বিন তুঘলকের প্রতীকী মুদ্রা পরিকল্পনাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল- উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের 'ক' দেশে ধাতব মুদ্রার অভাব দেখা দিলে ব্যবসায়ীরা সিলযুক্ত কাগজের স্লিপের ব্যবহার শুরু করেন, যা প্রতীকী মুদ্রার ন্যায়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এই স্লিপ জাল করায় এ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের প্রতীকী মুদ্রার প্রচলনও নানা কারণে ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল।
মুহাম্মদ বিন তুঘলকের 'প্রতীকী মুদ্রা' পরিকল্পনাটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কেননা, নতুন মুদ্রা নির্মাণে একচেটিয়া সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় হিন্দুরা ব্যাপক জাল মুদ্রার প্রচলন করেন। প্রদেশেও ব্যাপকভাবে জালমুদ্রা চালু হয়। সাধারণ লোকের পক্ষে আসল ও জাল মুদ্রা চেনা সম্ভব না হওয়ায় তারা এ মুদ্রা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। সুলতান মুদ্রা জাল করা বন্ধ করতে অসমর্থ হলে এই মুদ্রা অচল হয়ে পড়ে। বিদেশি বণিকগণও এই মুদ্রা গ্রহনে অসম্মতি জানায়। কারন তার দেশে এই মুদ্রার কোন মূল্য ছিল না। ঐতিহাসিক আগা মেহেদী হাসারনের মতে, সুলতানি যুগে ঘন ঘন রাজবংশের পরিবর্তন হেতু পরবর্তী সুলতানগণ বৈধ মুদ্রা হিসেবে তামার মুদ্রা স্বীকার করবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। প্রতীকী মুদ্রা যাতে জাল হতে না পারে। জন্য সুলতান উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেননি এবং জাল মুদ্রা প্রস্তুতকারীদের শাস্তিদানেরও কোনো ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করেননি। ফলে মুদ্রা জালিয়াতি রোধ করা যায়নি।
পরিশেষে বলা যায়, মুহাম্মদ বিন তুঘলকের মুদ্রাব্যবস্থার পরিকল্পনা মহৎ হলেও উপর্যুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে তা ব্যর্থ হয়।

৯. উত্তরাধিকার সূত্রে তকী খান এক বিশাল জমিদারির মালিক হন। তিনি এতিম ও অসহায়েদর সাহায্যার্থে বিভিন্ন দফতর প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ কাজে রাজকোষের প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। এ ছাড়া জমিদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে খাজনা-ট্যাক্স আদায়ে যথেষ্ট নমনীয়তার পরিচয় দেন। এতে জমিদারের প্রতি জনগণের ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রকাশ পেলেও রাজ্যে সুদূরপ্রসারী আর্থিক সংকট দেখা দেয়, যার পরিণতিতে ধীরে ধীরে জমিদারি পতনের দিকে ধাবিত হয়।
ক. ফিরোজ শাহ তুঘলক কত খ্রিস্টাব্দে সালতানাতে অধিষ্ঠিত হন?
খ. ফিরোজ শাহ ছিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি অনুরক্ত- ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে তকী খানের প্রজাহিতৈষী কাজের সাথে তোমার পঠিত কোন শাসকের কাজের সাদৃশ্য রয়েছ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তকী খানের জমিদারির পরিণতির সাথে তুঘলক বংশের পরিণতি আলোচনা করো।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফিরোজ শাহ তুঘলক ১৩৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মার্চ সালতানাতে অধিষ্ঠিত হন।

খ. ফিরোজ শাহ ছিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি অনুরক্ত।
ফিরোজ শাহ একটি বিরাট ক্রীতদাস বিভাগ গড়ে তোলেন। তার আমলে ১,৮০,০০০ জন ক্রীতদাস ছিল। এর মধ্যে দরবারে প্রায় বারো হাজার ক্রীতদাস বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত থেকে পারদর্শী হয়ে ওঠে। ক্রীতদাসদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য 'দিওয়ান-ই-বন্দেগান' নামে একটি নতুন বিভাগ স্থাপন করা হয়। যুদ্ধবন্দিদের অযথা হত্যা না করে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সুলতান তাদের প্রতি উদার নীতি গ্রহণ করেন। এ ব্যবস্থা মানবোচিত হলেও এতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে পরবর্তীকালে রাজ্যে আর্থিক সংকট দেখা দেয় এবং এসব দাস দিল্লি সালতানাতের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে।

গ. উদ্দীপকে তকী খানের প্রজাহিতৈষী কাজের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের ফিরোজ শাহ তুঘলকের কাজের সাদৃশ্য রয়েছ।
জমিদার তকী খান প্রজাদরদি ছিলেন। তিনি এতিম ও অসহায়েদর সাহায্যার্থে বিভিন্ন দফতর প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ কাজে রাজকোষের প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। ফলে তিনি জনগণের নিকট প্রশংসিত হন। ফিরোজ শাহ তুঘলকও তার প্রজাতিতৈষী কাজের জন্য প্রশংসিত ছিলেন।
ফিরোজ শাহ তুঘলকের গৃহীত কয়েকটি প্রজাহিতৈষী পদক্ষেপ ইতিহাসে 'মাতামহীসুলভ ব্যবস্থা' নামে পরিচিত। এ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য দিকের মধ্যে ছিল বিবাহ দপ্তর এবং চাকরি দপ্তর প্রতিষ্ঠা। বিবাহ দপ্তরের মাধ্যমে গরিব ও অনাথ মেয়েদর সরকারি খরচে বিয়ে এবং বেওয়ারিশ লাশের অমেত্ম্যষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের ব্যবস্থা করা হতো। ‘দিওয়ান-ই-ইস্তহাক’ নামক দপ্তর থেকে দরিদ্র, অনাথ ও বিধবাদের মার্থিক সাহায্য দেওয়া হতো। প্রজাসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুলতান 'দারউস শেফা' নামক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন। অন্যান্য শহরে এরকম আরও ৪টি হাসপাতাল নির্মাণ করেন। সুলতান ৩৬টি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছিলেন। কৃষিকাজের উন্নতির জন্য খাল খনন করেন এবং প্রায় ১২০০ উদ্যান নির্মাণ করে আয়ের টাকা দিয়ে খাদ্যঘাটতি পূরণ করেন। এভাবে সুলতান জনস্বার্থমূলক কাজের দ্বারা তার শাসনব্যবস্থাকে স্মরণীয় করে রাখেন। সুতরাং জনকল্যাণকর উদ্যোগ গ্রহণের দিক দিয়ে তর্কী খান এবং ফিরোজ শাহ তুঘলক পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের তকী খানের জমিদারির পরিণতির সাথে তুঘলক বংশের পরিণতির সাদৃশ্য বিদ্যমান। সুতরাং জনকল্যাণকর উদ্যোগ গ্রহণের দিক দিয়ে তর্কী খান এবং ফিরোজ শাহ তুঘলক পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।
প্রজাহিতৈষী কার্যক্রমের মাধ্যমে জমিদার তকী খান জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা পেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হতে পারেননি। তার গৃহীত পদক্ষেপ আর্থিক সংকট সৃষ্টি করে এবং তার জমিদারির পতন ঘটে। দিল্লি সালতানাতের ইতিহাসে ফিরোজ শাহ তুঘলককেও অনুরূপ পরিণতির শিকার হতে দেখা যায়। ফিরোজ শাহ জনপ্রিয় সুলতান ছিলেন কিন্তু সিংহাসনের মূলভিত্তি তিনি রক্ষা করতে পারেননি। সাম্রাজ্যের বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা দমনে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তার আরেকটি বড় ভুল ছিল জায়গিরদারি প্রথার পুনঃপ্রবর্তন। এর ফলে অভিজাতবর্গ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে এবং কেন্দ্রীয় শাসনের ক্ষমতা শিথিল হয়ে পড়ে। তিনি সেনাবাহিনীতে বংশানুক্রমিক চাকরির অধিকার প্রদান করে সাম্রাজ্যের স্থায়য়েত্বর মূলে কুঠারাঘাত করেন। তার সৃষ্ট ক্রীতদাস বাহিনীর ভরণপোষণে রাজকোষের প্রচুর অর্থ অপচয় হয়। ফলে সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুলতান যুদ্ধনীতি পরিহার করায় সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। সুলতান ফিরোজ শাহ শাসনকার্যে উলামাদের প্রাধান্য দেওয়ায় মুসলমান সম্প্রদায়ের রোষানলে অসুন্নি ও হিন্দু পতিত হন। অপরাধীদের শাস্তি প্রদান রহিত করার ফলে দুর্নীতি বেড়ে যায় এবং দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারীরা সরকারি অর্থসম্পদ লুট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে রাজ্যের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
পরিশেষে বলা যায়, ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসননীতি ও কার্যাবলি তুঘলক বংশের পতনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী না হলেও এ বংশের পতনের পথকে ত্বরান্বিত করেছিল।

১০. ফরাসী গৃহযুদ্ধের ফলে প্রজাতন্ত্রী সরকারের অর্থ সংকট দেখা দেয়। অর্থ সংকট মোচনের জন্য সরকার কৃষকদের প্রদেয় করের ওপর প্রতি ফ্রা পিছু ৪৫ সেন্টিম পরিমাণ কর বৃদ্ধি করেন। কর বৃদ্ধির জন্য কৃষক সমাজ অসন্তুষ্ট হয়। তৃতীয় নেপোলিয়ন প্যারিস নগরীকে ভেঙ্গে পুনর্গঠন আরম্ভ করেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী ব্যারন হজম্যানের পরিকল্পনা অনুসারে নতুন রাস্তাঘাট ঘর বাড়ি তৈরি করা হয়। উদ্যান ও জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি করে শহরের জীবনযাত্রার উন্নতি করা হয়। প্যারিস একটি উন্নত নগরীতে পরিণত হয়।
ক. কোন সুলতান দ্বিতীয় আলেকজান্ডার উপাধি গ্রহণ করেছিলেন?
খ. গিয়াসউদ্দিন বলবন এর মোঙ্গল নীতি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ঘটনা মুহাম্মদ বিন তুঘলকের কোন পরিকল্পনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী স্থানান্তর এর ঘটনা তুলনামূলক আলোচনা কর।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সুলতান আলাউদ্দিন খলজি দ্বিতীয় আলেকজান্ডার উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

খ. মোঙ্গলদের প্রতিহত করার জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত নীতিই মোঙ্গল নীতি নামে পরিচিত।
মোঙ্গলদের আক্রমণ প্রতিহত করতে বলবন সেনাবাহিনী পুনর্গঠন এবং তাদেরকে সামরিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত করেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সুলতান নতুন দুর্গ নির্মাণ এবং পুরাতন দুর্গগুলো পুনর্নির্মাণ করেন। মোঙ্গলদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার উদ্দেশ্যে তিনি সর্বদা রাজধানীতে অবস্থান করতেন। মূলত বলবন নতুন রাজ্য বিজয়ে উৎসাহিত না হয়ে রাজ্যে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং সাম্রাজ্যকে শঙ্কামুক্ত রাখতে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতের জন্য বেশি সচেষ্ট ছিলেন।

গ. উদ্দীপকের ঘটনা মুহাম্মদ বিন তুঘলকের দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির পরিকল্পনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ফরাসী গৃহযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অর্থ সংকট মোচনে সরকার কৃষকদের প্রদেয় করের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন। অনুরূপভাবে, অনেকটা একই রকম প্রেক্ষাপটে দিল্লি সালতানাতের সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক উর্বর দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করেছিলেন। এ প্রেক্ষিতে উভয় ঘটনা সাদৃশ্যপূর্ণ। 
গঙ্গা ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী উর্বর অঞ্চল দোয়াব নামে পরিচিত। দিল্লি সালতানাতের শস্যভান্ডার নামে পরিচিত এই অঞ্চলে কর বৃদ্ধি ছিল মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পরিকল্পনা।
ঐতিহাসিক ডব্লিউ হেগের মতে, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও শাসনব্যবস্থা কাঠামো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করা হয়। উদ্দীপকে দেখা যায় তৃতীয় নেপোলিয়ন প্যারিস নগরীকে ভেঙে পুনর্গঠন আরম্ভ করেন। একইভাবে মুহাম্মদ বিন তুঘলক রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করলে নতুন শহর এর অবকাঠামো বিনির্মাণে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে সুলতান তার উচ্চাভিলাষী নীতির মাধ্যমে দোয়াব অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত কর আহরণের মাধ্যমে খরচ যোগানোর পরিকল্পনা করেন। দোয়াব অঞ্চলের কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সুলতান দেবগিরিকে উন্নত নগরে পরিণত করতে পারলেও পরবর্তীতে নানা কারণে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের এই সিদ্ধান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ঘ. সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী সুলতান।
তিনি রাজত্বের প্রথম ভাগে পাঁচটি উচ্চাকাঙ্ক্ষামূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার এ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অন্যতম শাসনতান্ত্রিক পদক্ষেপ ছিল দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর। উদ্দীপকেও এ বিষয়টির প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, তৃতীয় নেপোলিয়ন যেমন প্যারিস নগরীকে ভেঙ্গে পুনর্গঠন করেন, নতুন রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেন।
অনুরূপভাবে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকও কতগুলো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তরের অন্যতম কারণ ছিল এর ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব। দেবগিরি বিশাল দিল্লি সালতানাতের কেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত হওয়ায় কৌশলগত সুবিধা ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য কেন্দ্রভূমিতে রাজধানী স্থাপন অধিক যৌক্তিক বলে সুলতান মনে করেছিলেন। তাছাড়া মোঙ্গল আক্রমণের পটভূমিতে দিল্লি অপেক্ষা দেবগিরি ছিল অনেক বেশি নিরাপদ। অন্যদিকে দাক্ষিণাত্যের ওপর নজরদারি ও এর ধনৈশ্বর্য নিয়ন্ত্রণ ও সদ্ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন অধিক সমীচীন ছিল। এ সকল কারণেই মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজধানী দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করা হয়, যা উদ্দীপকের রাজধানী স্থানান্তরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post