HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Islamic History and Culture 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

প্রাথমিক আলোচনাঃ

ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা
অজ্ঞতা, অনাচার আর হানাহানিতে ডুবে যাওয়া আরব ভূমিতে আবির্ভাব ঘটে ইসলামের ৷ ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মুহম্মদ (স)। নবীর মৃত্যুর পর খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে পৃথিরীর বিভিন্ন অংশে। খলিফাগণ নতুন প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাজ্য পরিচালনার জন্য একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। মুসলিম আধিপত্য সম্প্রসারণে যে অভিযান শুরু হয় তার ধারাবাহিকতায় ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ বিন কাসিম সিন্ধুদেশ জয় করেন।

এভাবে ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমনের পথ তৈরি হয়। এর প্রায় তিনশ বছর পর গজনীর সুলতান মাহমুদ ভারত আক্রমণ করেন। দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে মুহম্মদ ঘুরী ভারতের গুরুতৃপূর্ণ অঞ্চলসমূহ অধিকার করেন এবং উপমহাদেশে আফগান শাসনের ভিত্তি দৃঢ় করেন। 

ভারতের সাথে আরবের সম্পর্ক
খুলাফায়ে রাশিদীনের সময় থেকে যেভাবে ইসলামের বিস্তার ঘটেছিল তাতে মুসলমান শক্তি নতুন নতুন রাজ্য জয়ে উৎসাহ পায়। বরাবরই ভারতের ধন-ঐশ্বর্ষের প্রতি আকর্ষণ ছিল আরবদের। তাই ইসলামের অভ্যুদয়ের অনেক পূর্ব থেকেই বাণিজ্যের উদ্দেশ্য আরব বণিকরা ভারতে আসত। সুতরাং ভারতে আসার রাস্তা আরবদের জানাই ছিল। খুলাফায়ে রাশিদীনের পর আরবে মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেন উমাইয়া খলিফাগণ। এ যুগেই প্রথম ভারতের দিকে খলিফাদের দৃষ্টি পড়ে।

আরবদের সিন্ধু বিজয় (৭১২ খ্রি.)
এ যুগের খলিফা মুয়াবিয়ার সময় উত্তর আফ্রিকায় মুসলিম শাসন বিসত্মৃত হয়। পরবর্তী খলিফা প্রথম ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫ খ্রি.) দখল করেন বলখ, তুখারিস্তান, ফারগানা, সমরকন্দ প্রভৃতি অঞ্চল। মুসলিম সেনাপতি মুসা ও তারিক স্পেন জয় করেন। এ যুগেই ইরাকে আরব শাসনকর্তা ছিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। তারই নির্দেশে মুহম্মদ-বিন-কাসিম ভারতের দিকে অগ্রসর হন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুদেশ মুহম্মদ-বিন-কাসিমের অধিকারে আসে। এরপর মুলতানসহ পাঞ্জাবের দক্ষিণ অংশ মুসলমানেরা জয় করে নেয়।

সিন্ধু অঞ্চলে জাঠ, মেঠ প্রভৃতি নিম্ন বর্ণের লোকেরা উচু বর্ণের হিন্দুদের দ্বারা নির্যাতিত হতো। যুদ্ধের সময় এরা মুহম্মদ-বিন কাসিমের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। মুহম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু জয় করে সেখানে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন। নাগরিকদের যার যার ধর্ম পালনের অধিকার দেন। বহু হিন্দুকে উচ্চ রাজপদে নিয়োগ করেন। এই বিজয়ের সূত্র ধরে অনেক আরব সিন্ধু ও এর আশেপাশে বসবাস করতে থাকে। এভাবে আরবের সাথে ভারতের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।
 
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. অজয়নগর ও বিজয়নগর পাশাপাশি অবস্থিত দুটি গ্রাম। শাহাদত সাহেব অজয়নগর গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি, অন্যদিকে আমিন সাহেব বিজয়নগরের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। দুইজনেরই শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী আছে, যারা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে শাহাদত সাহেবের এলাকা থেকে আমিন সাহেবের লোকজন শস্য ও গবাদি পশু জোর করে নিয়ে যায়। শাহাদত সাহেব আমিন সাহেবের কাছে এর বিচার চান। আমিন সাহেব তাতে কর্ণপাত করেননি। এতে শাহাদত সাহেব রাগান্বিত হয়ে আমিন সাহেবের এলাকায় হামলা চালান। আমিন সাহেব তা প্রতিহত করতে গিয়ে পরাজিত হন এবং তিনি নিজেও প্রাণ হারান। 
ক. দেবল বন্দর কোথায় অবস্থিত?
খ. আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থার বিবরণ দাও।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত শস্য ও গবাদি পশু জোর করে নিয়ে যাওয়ার সাথে সিন্ধু বিজয়ের কোন কারণটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের ন্যায় উক্ত ঘটনাটি সিন্ধু বিজয়ের একমাত্র কারণ নয়। বিশ্লেষণ কর। 

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. দেবল বন্দর সিন্ধুতে (বর্তমান পাকিস্তানে) অবস্থিত।

খ. নানা রকম ঘৃণ্যপ্রথা ও কুসংস্কার বিদ্যমান থাকায় আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। 
আরবদের সিন্ধু বিজয়ের পূর্বে ভারতে হিন্দুধর্মের প্রবল প্রাধান্য ছিল। হিন্দুদের মধ্যে সংকীর্ণ জাতিভেদ প্রথা প্রচলিত ছিল। এ সময় হিন্দু সমাজ চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্র। ব্রাহ্মণরা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আর শূদ্ররা ছিল সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এ জাতিভেদ প্রথা সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি করে। এ কারণে সমাজে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা নানাভাবে অবহেলিত হতো। তাছাড়া সে সময় বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা, নরবলি, গঙ্গায় শিশু-সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি কু-প্রথা প্রচলিত ছিল। এমনকি দাস-দাসী ক্রয়-বিক্রয়ও চলত। সব মিলিয়ে তৎকালীন সামাজিক অবস্থা বিশৃঙ্খল ও শোচনীয় ছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত শস্য ও গবাদি পশু জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়ার সাথে সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটির সাদৃশ্য রয়েছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সিংহলরাজ কর্তৃক খলিফা ওয়ালিদ ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিকট প্রেরিত উপঢৌকনপূর্ণ আটটি আরব জাহাজ দেবলস্থ জলদস্যু কর্তৃক লুণ্ঠনই ছিল আরবদের সিন্ধু অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণ। উদ্দীপকেও এ কারণটি প্রতিফলিত হয়েছে। 
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, শাহাদত সাহেবের এলাকা থেকে আমিন সাহেবের লোকজন শস্য ও গবাদি পশু জোর করে নিয়ে যায়। শাহাদত সাহেব আমিন সাহেবের কাছে এর বিচার চেয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে রাগান্বিত হয়ে আমিন সাহেবের এলাকায় আক্রমণ চালান। সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটিও এরূপ সিংহলে অবস্থানকারী বেশকিছু আরব বণিক মৃত্যুমুখে পতিত হলে সিংহলরাজ আটটি জাহাজে করে তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও মূল্যবান উপঢৌকন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এবং খলিফার দরবারে প্রেরণ করেন। জাহাজগুলো যখন সিন্ধুর সেবল উপকূলে এসে পৌঁছায় তখন জলদস্যুরা এগুলো লুণ্ঠন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধুর রাজা দাহিরের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তার জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমকে সিন্ধু আক্রমণের নির্দেশ দেন। তিনি ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুতে অভিযান চালান এবং রাজা দাহিকে পরাজিত করে সিন্ধু বিজয় করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকটি আরবদের সিন্ধু আক্রমণের প্রত্যক্ষ কারণকেই ইঙ্গিত করে।
 
ঘ. উদ্দীপকের ন্যায় সিন্ধু বিজয়ের ক্ষেত্রে জাহাজ লুণ্ঠনের ঘটনাটি একমাত্র কারণ ছিল না। এর পেছনে আরো অনেক কারণ ছিল। উদ্দীপকে মুসলমাননের সিন্ধু বিজয়ের শুধু প্রত্যক্ষ কারণটিই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সিন্ধু বিজয়ের পেছনে এটি ছাড়াও আরো অনেক কারণ বিদ্যমান ছিল।
অষ্টম শতকের সূচনাতে মেকরান এবং বেলুচিস্তান আরবদের হস্তগত হওয়ায় তারা সিন্ধুর সন্নিকটে এসে পড়ে। ভারতীয় হিন্দু রাজাদের বৈরী মনোভাব ও সামরিক উদ্ধানির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রসারণ ব্যতীত খিলাফতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মুসলমানগণ বাধ্য হয়ে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ সর্বোপরি আর্থিক অবস্থার উন্নয়নকল্পে আরবগণ ভারতবর্ষ আক্রমণে প্রলুব্ধ হয়। তাছাড়া জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে সামুদ্রিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা বিধানের জন্যও ভারতবর্ষ আক্রমণ মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে অন্যদিকে আরব খলিফার নিকট প্রেরিত উপঢৌকন ও আরব বণিকদের বাণিজ্যিক আটটি জাহাজ দেবল বন্দরে জলদস্যু কর্তৃক লুষ্ঠিত হলে হাজ্জাজ দাহিরের কাছে লুষ্ঠিত দ্রব্যের ক্ষতিপূরণ ও জলদস্যুদের শাস্তি দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির উত্ত দাবি। প্রত্যাখ্যান করেন। দাহিরের এই ঔদ্ধত্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধু ও মুলতান অভিযানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জলদস্যু কর্তৃক জাহাজ লুণ্ঠন ছিল আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ। তবে সিন্ধু বিজয়ের পেছনে এর বাইরেও বহুবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল।

২. অটোমান সুলতান অরখান জেনিসারি বাহিনী গঠন করে বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান পরিচালনা করেন। এসব রাজ্য থেকে অর্থ সম্পদ লুণ্ঠন করে তিনি নিজ এলাকার উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। তিনি একটি দ্বীপের সুসজ্জিত ও সুরক্ষিত উপাসনালয়ের মূল্যবান অর্থ সম্পদের সন্ধান পেয়ে সেটি আক্রমণ ও লুণ্ঠন করেন। স্থানীয় অধিবাসীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও উপাসনালয়টিকে লুণ্ঠনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
ক. সুলতান মাহমুদ কোন রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন?
খ. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত উপাসনালয়টি আক্রমণের সাথে সুলতান মাহমুদের কোন অভিযানের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের অরখানের জেনিসারি বাহিনীর মতো সুলতান মাহমুদও একই উদ্দেশ্যে সম্পদ সংগ্রহ করেন- উক্তিটি মূল্যায়ন করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সুলতান মাহমুদ গজনির (বর্তমান আফগানিস্তান) শাসনকর্তা ছিলেন।

খ. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১১৯২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ছিল একটি চূড়ান্ত মীমাংসাত্মক যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফলে স্থায়ীভাবে ভারতবর্ষে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ যুদ্ধে মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরী (ভারতে স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠাকারী) ও তার বাহিনী দীপ্ত শপথে যুদ্ধ করে এবং পৃথ্বিরাজ (দিল্লি ও আজমিরর রাজপুত এবং চৌহান বংশের রাজা) ও সম্মিলিত রাজপুত্র বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। ফলে ভারতীয় রাজ্যগুলোর ওপর মুহাম্মদ ঘুরীর চূড়ান্ত সফলতা সুনিশ্চিত হয় এবং ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত উপাসনালয় আক্রমণের সাথে সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির (গুজরাটের চালুক্য রাজ্যের কাথিওয়াড়ের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত) অভিযানের সাদৃশ্য রয়েছে। 
সুলতান মাহমুদ (আফগানিস্তানে অবস্থিত গজনি রাজ্যের শাসনকর্তা) ছিলেন সাহসী ও সমরপ্রিয় বীর। ১০০০ থেকে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি মোট ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক তার এ অভিযানের কারণ হিসেবে সম্পদের প্রতি মোহকে দায়ী করেন। সুলতান মাহমুদের ষোলোত্তম অভিযান তথা সোমনাথ মন্দির আক্রমণ এবং সেখান থেকে প্রচুর ধন-সম্পদ লুণ্ঠন এ বিষয়টিকেই প্রমাণ করে।
আর উদ্দীপকেও এরূপ ঘটনা লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়, জেনিসারি বাহিনী একটি মন্দির আক্রমণ ও লুণ্ঠন করে। মন্দিরটি মূল্যবান সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল। সোমনাথ মন্দিরও ছিল উদ্দীপকের মন্দিরের ন্যায়। এ মন্দিরটি ছিল প্রচুর ধনরত্ন আর মূর্তি বিগ্রহাদিতে পরিপূর্ণ। ঐতিহাসিক বিবরণ মতে, এ মন্দির বিজয় সুলতান মাহমুদের সাধ্যের বাইরে ছিল বলে পুরোহিতরা মনে করতেন। কিন্তু ১০২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সোমনাথ মন্দিরে অভিযান পরিচালনা করেন। মন্দিরের পুরোহিত ও স্থানীয় অধিবাসীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও তার আক্রমণ থেকে সোমনাথ মন্দিরকে রক্ষা করতে পারেননি। এ মন্দির থেকে মাহমুদ দু'কোটিরও বেশি স্বর্ণমুদ্রা ও বিগ্রহদি এবং ২শ মণ অলংকার ও মণিমুক্তা নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। একইভাবে অটোমান সুলতান অবস্থান ও তার বাহিনী একটি দ্বীপের সুসজ্জিত ও সুরক্ষিত উপাসনালয়টি আক্রমণ করে। স্থানীয় অধিবাসীদের বাধা উপেক্ষা করে তারা উপাসনালয়টি লুন্ঠন করে মূল্যবান অর্থ-সম্পদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। সুতরাং দেখা দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লেখিত উপাসনালয় আক্রমণ ও পৃষ্ঠনের ঘটনায় সুলতান মাহমুদের সোমনাথ মন্দির আক্রমণেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. অরখানের জেনিসারি বাহিনীর মতো সুলতান মাহমুদও একই উদ্দেশ্যে সম্পদ সংগ্রহ করেন- উক্তিটি যথার্থ। 
সুলতান মাহমুদ একজন উচ্চাভিলাষী এবং অর্থলোভী সমরনায়ক ছিলেন। রাজ্যাভিযানে তিনি আনন্দ পেলেও তার অভিযানের মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক। নিজ সাম্রাজ্য গজনিকে সমৃদ্ধিশালী ও অনিন্দ্যসুন্দর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার প্রচুর সম্পদের দরকার ছিল। আর ধন ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ ভারতকে তিনি তার প্রয়োজনীয় অর্থের কল্পতরু মনে করে এখানে বার বার অভিযান পরিচালনা করেন এবং প্রচুর অর্থ সম্পদ হস্তগত করে গজনির শ্রীহরি শ্রীবৃদ্ধিতে ব্যয় করেন। অটোমান সুলতান অরখানের অভিযানের পেছনেও এ ধরনের উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয়।
অটোমান সুলতান অরখানের গঠিত জেনিসারি বাহিনী বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে প্রচুর সম্পদ লুণ্ঠন করে। সুলতান এ সম্পদ ব্যয় করে অটোমান সাম্রাজ্যের উন্নয়নে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অর্থাৎ নিজ এলাকার উন্নয়ন এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহই ছিল জেনিসারি বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য। গজনি রাজ্যকে সমৃদ্ধ ও সুসজ্জিতকরণ, নিজ সাম্রাজ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন সাধন, বিরাট সৈন্যবাহিনীর ব্যয় নির্বাহ প্রভৃতি কারণে সুলতান মাহমুদ ভারতে বার বার অভিযান প্রেরণ করেন। 
অভিযানে সংগৃহীত অর্থ-সম্পদ তিনি সাম্রাজ্যের সার্বিক উন্নতিকল্পে ব্যয় করেন। উপর্যুক্ত আলোচনায় এটা প্রমাণিত হয় যে, অবখানের জেনিসারি বাহিনীর সম্পদ দুন্ঠন এবং সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ তারা উভয়ই অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে অভিযান পরিচালনা করেছেন।

৩. যমুনার একপাশে টাঙ্গাইল ও অন্যপাশে সিরাজগঞ্জ জেলা অবস্থিত। একদিন সিরাজগঞ্জের এক জেলে নদীতে নৌকা দিয়ে মাছ ধরছিল। এমন সময় এলেঙ্গাচরের কিছু লোক এসে নৌকাসহ মাছ লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি এলেঙ্গাচরের উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট ক্ষতিপূরণ এবং ডাকাত দলকে হস্তান্তরের দাবি জানান। তিনি ক্ষতিপূরণ ও ডাকাত দলকে হস্তান্তরের দাবি অস্বীকার করেন। ফলে সিরাজগঞ্জ এলাকার লোকজন এলেঙ্গাচরবাসীর ওপর হামলা চালায়। 
ক. হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে?
খ. বর্ণপ্রথা কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ভারতের কোন পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত অভিযানের ফলাফল আলোচনা কর।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. অভিযানের সাদৃশ্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিলেন উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের পূর্বাপলীয় শাসনকর্তা।

খ. হিন্দুদের বর্ণভেদ প্রথা বলতে তাদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন শ্রেণিকে বোঝায়। 
অষ্টম শতাব্দীর প্রারম্ভে হিন্দু সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এই চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের ধর্মকর্ম, যাগযজ্ঞ এবং অন্যান্য সকল কাজে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তারাই আইন-কানুন প্রণয়ন করত এবং শাসনদন্ডও ছিল তাদের হাতে। সমাজে বৈশ্য ও শূদ্ররা ছিল অধঃপতিত ও অসহায়। বেদবাক্য শুনলে কিংবা বেদ গীতা পাঠ করলে তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হতো। আর এই চার শ্রেণির বাইরের লোকদের অপবিত্র মনে করা হতো। হিন্দু সমাজের এ বিচন্তিই বর্ণভেদ প্রথা নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লুণ্ঠনের ঘটনার সাথে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণের মিল রয়েছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সিংহরাজ কর্তৃক খলিফা ওয়ালিস ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিকট প্রেরিত উপঢৌকনপূর্ণ আটটি আরব জাহাজ দেবলস্থ অপদস্য কর্তৃক লুঠনই ছিল আরবদের সিন্ধু অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণ। উদ্দীপকে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জে এক জেলে নদীতে নৌকা দিয়ে মাহ ধরছিল। এমন সময় এলেঙ্গাচরের কিছু লোক এসে নৌকাসহ মাছ লুট করে নিয়ে যায়। বিষয়টি জেনে সিরাজগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান এলেঙ্গাচরের উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট ক্ষতিপূরণ এবং ডাকাত দলকে হস্তান্তরের দাবি জানান; কিন্তু তিনি ক্ষতিপূরণ ও ডাকাত দলকে হস্তান্তরের দাবি অস্বীকার করেন। ফলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। একই ঘটনা আরবদের সিন্ধু অভিযানের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। সিন্ধু রাজা দাহির তার এলাকায় জলদুস্য কর্তৃক মুসলমানদের জাহাজ লুণ্ঠন ও এর ক্ষতিপূরণের দাবিকে অগ্রাহ্য করলে সাম্রাজ্যবাদী শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭১০ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনাটির সাথে আরবদের সিন্ধু অভিযানের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উক্ত অভিযান বলতে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু অভিযানকে বোঝানো হয়েছে। আর এ অভিযানের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। 
আরবদের সিন্ধু বিজয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আরবীয়রা ১৫০ বছর সিন্ধুতে শাসন করে। এ দীর্ঘ সময় অবস্থানের পরেও সিন্ধু বিজয়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব সামান্য হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
ভারতবর্ষ ও ইসলামের ইতিহাসে আরবদের সিন্ধু বিজয় একটি উপাখ্যান মাত্র। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটি একটি নিষ্ফল বিজয় হলেও এ বিজয়ের সূত্র ধরে ভবিষ্যতে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ দিয়ে মুসলিমরা ভারতে প্রবেশ করেছিল। মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। সিন্ধু বিজয়ের ফলে সিন্ধুর অমুসলিমরা ইসলামের আদর্শের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। এ বিজয়ের ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে আরবদের অনেক পরিবর্তন আসে। আরবগণ হিন্দু সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে আসে এবং উভয়ের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এতে আর্য ও সেমেটিক জাতির সংমিশ্রণে সিন্ধুর লোকাচার ও। সামাজিক রীতিনীতি তাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনুপ্রবেশ করে। এ বিজয়ের ফলে আরবদের অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। সিন্ধু বিজয়ের ফলে মুসলমানদের সাথে ভারতীয়দের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। 
পরিশেষে বলা যায় যে সিন্ধু বিজয় আরবদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

৪. ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব শুরু হবার প্রাক্কালে সমগ্র ইউরোপে সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক পূর্বিষহ সঙ্কট বিরাজ করছিল। অষ্টাদশ শতকে প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও অনাচারে লিপ্ত ছিল। জনসাধারণের মঙ্গলার্থে উদারনীতির পরিবর্তে সামাজিক অসাম্য বৈষম্যই প্রাধান্য পায়। ক্ষমতা ছিল মুষ্টিমেয় কতিপয় রাজন্যবর্গের ওপর। ফলে একটি গোষ্ঠী সর্বদাই আমলাদের দ্বারা নিষ্পেষিত হতো। 
ক. ‘ভরত’ কে?
খ. সিন্ধুতে আরবদের সাফল্য সম্পর্কে কী জান?
গ. উদ্দীপকে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তার সাথে তোমার পাঠ্যবই এর মিল লক্ষ করা যায় সে সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের এ রকম পরিস্থিতি সত্ত্বেও একটি দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন থেমে থাকে না?এর সাথে কি তোমার পঠিত অংশের কোন। পাওয়া যায়? তোমার বক্তব্য লেখ। 

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ভরত একজন হিন্দু রাজা।

খ. আরবদের সিন্ধু অভিযান মুসলিম ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ও চমকপ্রদ ঘটনা।
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম রাজা দাহিরকে পরাজিত করে সিন্ধুতে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। আরবদের এ সাফল্য রাজনৈতিকভাবে ফলাফল শূন্য হলেও সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে ফলপ্রসু ছিল।

গ. উদ্দীপকে আরবদের ভারতবর্ষে আগমনের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক অবস্থার একটি সার্বিক চিত্র পরিলক্ষিত হয়। 
প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন ঐক্য ছিল না তেমনি প্রশাসনিক ব্যবস্থায়ও রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। সামাজিক ব্যবস্থায়ও নানা কুসংস্কারের নিমজ্জিত ছিল সমাজ, যা উদ্দীপকেও লক্ষ করা যায়। 
উদ্দীপকে দ্রষ্টব্য ফরাসি বিপ্লব শুরু হবার প্রাক্কালে ইউরোপে সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক দুর্বিষহ সঙ্কট বিরাজমান ছিল। প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মধ্যযুগীয় কুসংস্কারে লিপ্ত ছিল এবং ক্ষমতা ছিল মুষ্টিমেয় রাজন্যবর্গের হাতে। যা প্রাক-ইসলামি যুগে ভারতের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। আরবদের বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। সমাজে হিন্দু সংকীর্ণ জাতিভেদ প্রথা প্রচলিত ছিল। জনগণ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র এ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল। পাশাপাশি সমাজে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, বিধবাবিবাহ নিষিদ্ধকরণের মত সামাজিক সংস্কার প্রচলিত ছিল প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে এ সময় রাজতন্ত্র জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রাজা ছিলেন সর্বময় হয়, ক্ষমতার অধিকারী। গ্রামের শাসক পরিচালিত হত পঞ্চায়েত দ্বারা। প্রাচীনকালে বাংলার অর্থনীতি ছিল সমৃদ্ধ তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও অভিজাত শ্রেণির মধ্যে অনেক তফাৎ ছিল। উদ্দীপকে বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সের অবস্থার সাথে মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের অবস্থার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকের এ রকম পরিস্থিতি সত্ত্বেও একটি দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন থেমে থাকে না। সংস্কৃতি তার নিজস্ব গতিতে অগ্রসর হয়।
বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সর্বক্ষেত্রে অসাম্যতা পরিলক্ষিত হয়। এ সময়ের সমাজ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন। যেমনটি উদ্দীপকেও লক্ষ করা যায়। লক্ষণীয় যে, ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে জনসাধারণের মঙ্গলার্ধে উদারনীতির পরিবর্তে সামাজিক অসাম্যই প্রাধান্য পেয়েছিল। ক্ষমতা ছিল মুষ্টিমেয় রাজন্যবর্গের ওপর। যেমনটি আমরা আরবদের বিজয়ের প্রাতলে ভারতের অবস্থায়ও দেখতে পাই। এ সময় ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কতিপয় বৈষম্য ও কুসংস্কার পরিলক্ষিত হলেও সংস্কৃতির চর্চা থেমে থাকেনি। প্রাক-মুসলিম এ সময়ে ভারতবর্ষে শিক্ষা সভ্যতার ব্যাপক এ সময়েও সাধিত হয়েছিল বৌদ্ধ ও হিন্দুদের পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষার বিস্তার ঘটে। টোল, পাঠশালা ভারতে বহুতী ও বিহারে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিম ভারতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, ভদনীপুর, বিক্রমশীলা, এছাড়া প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতবর্ষে। হিন্দু এগুলোর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।, নাটক, উপন্যাস, পদ্য, সাহিত্য ও বিকাশ লাভ করে। ভগবতি, বাহমান, জয়বেদ, রাজশেখর শ্রীহর্ষ, কালিদাস ছিল বিখ্যাত কবি। গণিত বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্রের পাশাপাশি তারা স্থাপত্য ও ভাস্কর্যেও নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। কৈলাশ মন্দির, কোনারকের মন্দির, ইলোরা, অজন্তা প্রভৃতির চিত্র স্থাপত্যর্তি ভারতীয়দের উচ্চমানের শিল্প নৈপুণ্যের পরিচয় বহন করে।
সুতরাং আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংস্কৃতি অত্যন্ত ব্যাপক একটি বিষয়। সে তার নিজস্ব গতিতে অগ্রসর হয়, প্রাক-ইসলামি যুগেও ভারতের সংস্কৃতির এ ধারা থামেনি।

৫. জানবিল একটি সাম্রাজ্যের একটি অঞ্চলের শাসনকর্তা। তিনি যেমন কঠোর তেমনি নিষ্ঠুর। কিন্তু তিনি আবার একই সাথে সাম্রাজ্যবাদী ও উচ্চাভিলাষী। নতুন দেশ, রাজ্য। জনপদ তায়ে তিনি আনন্দ লাভ করতেন। টগবগে তরুণ ভ্রাতুষ্পুত্র নাভিসকে দিয়ে নিজের স্বপ্ন পুরণের আকাঙ্ক্ষা! সীমান্তে বিরোধের ঘটনা যেন তার স্বপ্ন পুরণকে একধাপ এগিয়ে দিল। সীমান্তে দুটি অভিযান পাঠিয়ে ব্যর্থ হলেন। অবশেষে তাঁর সাম্রাজ্যবানী আকাঙ্ক্ষার চূড়ান্ত রূপ দিতে তরুণ নাভিদ এগিয়ে এলো এবং জয়মাল্য এনে দিলো। 
ক. রাজা দাহিরের পত্নীর নাম কী?
খ. সুলতান মাহমুদের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে কী জান?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি ভারতবর্ষে কোন বিজয়াভিযানের সাথে সম্পর্কিত?পঠিত জ্ঞান থেকে ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উক্ত অভিযানকে কি সর্বক্ষেত্রেই "নিষ্ফল বিজয় উপাখ্যান" বলে অভিহিত করা যায়? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. রাজা দাহিরের পত্নীর নাম রানিবাঈ।

খ. সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিপল ধন-ঐশ্বর্য সংগ্রহ করা। গজনির শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং এটিকে সমৃদ্ধিশালী ও আকর্ষণীয় নগরীতে পরিণত করা সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়া একটি বিশাল সেনাবাহিনী পোষণের মানসে তার অনেক অর্থের দরকার পড়েছিল। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশকে তিনি তার প্রয়োজনীয় অর্থভান্ডার মনে করে সেখানে ১৭ বার অভিযান পরিচালনা করেন। আর ভারত হতে সংগৃহীত অর্থ তিনি স্বীয় রাজধানী গজনির উন্নতিকল্পে ব্যয় করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি ভারতবর্ষে আরবদের সিন্ধু বিজয়াভিযানের সাথে সংগতিপূর্ণ। 
উদ্দীপকে দেখা যায়, সাম্রাজ্যের একটি অন্যদের সাম্রাজ্যবাদী ও উচ্চাভিলাষী শাসনকর্তা সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী দেশ জয়ের চেষ্টা করেন। তার প্রথম দুটি অভিযান ব্যর্থ হলে তৃতীয় অভিযানে নিকটাত্মীয় জায়েদকে প্রেরণ করেন এবং জায়েদের সামরিক প্রতিভা দ্বারা জয়লাভ করেন। অনুরূপভাবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ খলিফা ওয়ালিদের অনুমোদনক্রমে ৭১০ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে ওবায়েদুল্লাহ ও পরে বুদাইলের নেতৃতেব রাজা দাহিরের বিরুদ্ধে দুইটি অভিযান প্রেরণ করেন; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুইটি অভিযানই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলার জন্য হাজ্জাজ ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্র জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধুতে তৃতীয় অভিযান পাঠান। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম 'দেবল' বন্দরে এসে উপস্থিত হন, যা ব্রাহ্মণ ও রাজপুত্রদের দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। তিনি দুর্গটি অবরোধ করলেন এবং 'মানজানিকের সাহায্যে বৃহদাকার প্রস্তর নিক্ষেপ করে শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করে দেবল অধিকার করেন। দেবল দখলের পর মুহাম্মদ বিন কাসিম নিঝুন, সিওয়ান, সিসাম জয় করে রাজা দাহিরের মুখোমুখি হন। রাওয়ারে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেও রাজা দাহি পরাজিত ও নিহত হন। অতঃপর মুহাম্মদ বিন কাসিম ব্রাহ্মণাবাদ এবং সিন্ধুর রাজধানী আলোর অধিকার করে ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধশালী শহর মুলতান অবরোধ ও দখল করেন। মুলতান বিজয়ের মধ্য দিয়ে রাজা দাহিরের সমগ্র রাজ্যের ওপর আরবদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঘ. সিন্ধু বিজয়ের রাজনৈতিক ফলাফলকে শুধু উপাখ্যান বলা যথাযথ হবে না। কারণ মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পর সিন্ধু ও মুলতানে আরব শাসন দেড়শ বছর স্থায়ী হয়েছিল। তাছাড়া তার পদায়ক অনুসরণ করেই সুলতান মাহমুদ ও মুহাম্মদ ঘুরী ভারতে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। 
আরব সৈন্যদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে ভারতে বসতি স্থাপন করে। বিজিত অঞ্চলে বহু রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছিলেন তাদের কীর্তি আজও বিদ্যমান। ইতিহাসবিদ টড রাজস্থানের ইতিহাস' গ্রন্থে আরবদের সিন্ধু বিজয়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। সিন্ধু বিজয়ের রাজনৈতিক ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এর ধর্মীয় ফলাফল ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিজয়ের ফলে অসংখ্য পির-দরবেশ ভারত উপমহাদেশে ধর্ম প্রচারের জন্যে আগমন করেন; যাদের প্রভাবে সাম্য, মৈত্রী, উদারতা ও সহিষ্ণুতার প্রতীক ইসলাম ধর্মে দলে দলে নির্যাতিত সম্প্রদায় যোগদান করতে থাকে।
সিন্ধু মুলতানে আরব প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবার পর আরবদের সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয় এবং উভয় দেশের বাণিজ্য সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে আরবগণ সর্বপ্রথম হিন্দু সম্প্রদায়ের নিবিড় সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। ফলে উভয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সমঝোতা ও আর্য ও সেমেটিক জাতির এ মহামিলন ভারতবর্ষে নতুন সমাজব্যবস্থার সৃষ্টি করে। আরবদের কল্যাণমুখী শাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো সংরক্ষণ উভয়ের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে হিন্দু-মুসলিমের এ সহাবস্থানই পরবর্তীতে ভারতে নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছিল। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আরবদের সিন্ধু অভিযান কোনো নিষ্ফল বিজয় নয়।

৬. বালুখালি এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী আসলে ঐ এলাকার চেয়ারম্যান সেগুলো গ্রহণ করার পূর্বে একদল লুটেরা কর্তৃক লুণ্ঠিত হয়ে যায়। চেয়ারম্যান এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে নিজেই জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন। ফলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়। প্রতিপক্ষের প্রধান নিহত হয়। প্রতিপক্ষের বাকি লোকজনও প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়।
ক. হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কে ছিলেন?
খ. মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা কর। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লুন্ঠনের ঘটনার সাথে আরবের সিন্ধু বিজয়ের কোন কারণটির মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের লুন্ঠনকারীদের পরিণতি ও সিন্ধু বিজয়ের ফলাফল এক নয়-বিশ্লেষণ কর।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফ ছিলেন উমাইয়া খলিফা আল-ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা।

খ. মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ছিল খলিফা সুলায়মানের ব্যক্তিগত আক্রোশ। মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পিছনে রাজা দাহিরের কন্যা সূর্যদেবী ও পরিমল দেবীর মিথ্যা অভিযোগকে দায়ী করা হয়। তবে এ ঘটনার ঐতিহাসিক কোনো ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রতি খলিফা সুলায়মানের ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেই তার ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা মুহাম্মদ বিন কাসিমকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। খলিফার নির্দেশেই তাকে রাজধানী দামেস্কে এনে কারারুদ্ধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পৃষ্ঠনের ঘটনার সাথে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণের মিল রয়েছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সিংহলরাজ কর্তৃক খলিফা ওয়ালিদ ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিকট প্রেরিত উপঢৌকনপূর্ণ আটটি আরব জাহাজ সিন্ধুর দেবলস্থ জলদস্য কর্তৃক লুণ্ঠনই ছিল আরবদের সিন্ধু অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণ, উদ্দীপকেও যার প্রতিফলন লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বালুখালির চেয়ারম্যানের কাছে আসা ত্রাণসামগ্রী লুটেরা কর্তৃক লুট হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চেয়ে চেয়ারম্যান আবেদন করলেও কোনো লাভ হয়নি। ফলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। একই ঘটনা আরবদের সিন্ধু অভিযানের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। সিন্ধু রাজা দাহিরের সীমানায় জলদুস্য কর্তৃক মুসলমানদের জাহাজ লুণ্ঠন হলে খলিফা ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাজা দাহিরের কাছে এর ক্ষতিপূরণ দাবি করে। কিন্তু রাজা দাহির এ ক্ষতিপূরণের দাবিকে অগ্রাহ্য করলে সাম্রাজ্যবাদী শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭১০ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুতে অভিযান প্রেরণ করেন। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের লুটের ঘটনার সাথে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত লুণ্ঠনকারীদের পরিণতি আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলাফলের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য উভয়ই পরিলক্ষিত হয়। 
ভারতবর্ষ ও ইসলামের ইতিহাসে আরবদের সিন্ধু বিজয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। রাজনৈতিক দিক দিয়ে এটি একটি নিষ্ফল বিজয় হলেও সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। আরবদের সিন্ধু অভিযানে রাজা দাহিরের পরিণতির সাথে উদ্দীপকের প্রতিপক্ষের পরিণতিগত সাদৃশ্য থাকলেও অন্যান্য দিক দিয়ে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বালুখালি এলাকার চেয়ারম্যান লুটকারীদেরকে শাস্তি দেন। এতে প্রতিপক্ষের প্রধান নিহত হয় এবং অন্যান্য লুটকারী প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। সিন্ধু অভিযানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, রাজা দাহির মুহাম্মদ বিন কাসিমের কাছে পরাজিত ও নিহত হয়। তবে সিন্ধু অভিযানের সূত্র ধরেই ভবিষ্যতে মুসলিমরা ভারতে প্রবেশ করে। ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রে এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়ে। আরবরা সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তারা এ বিজয়ের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ বছর ভারত শাসন করে। মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। সিন্ধু বিজয়ের ফলে সিন্ধুর বিধর্মীদের ইসলামের আদর্শের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে। এ বিজয়ের ফলে আরবদের সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসে। আরবগণ হিন্দু সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে আসে এবং উভয়ের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এতে আর্য ও সেমেটিক জাতির সংমিশ্রণে সিন্ধুর লোকাচার ও সামাজিক রীতিনীতি তাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনুপ্রবেশ করে। এ বিজয়ের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরবদের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। সিন্ধু বিজয়ের ফলে আরবদের সাথে ভারতবর্ষের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে সিন্ধু বিজয়ের ফলে আরবদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের লুণ্ঠনকারীদের পরিণতি ও সিন্ধু বিজয়ে ফলাফল ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. বিশাল সাম্রাজ্য ও প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী রাজা দ্বিতীয় জফস এর মৃত্যুর সাথে সাথেই সাম্রাজ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যোগ্য উত্তরাধিকারী না থাকায় বিশাল সাম্রাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভ হয়ে পড়ে। এসব রাজ্যগুলোর মধ্যে পরস্পরিক শত্রুতা বিদ্যমান থাকায় কোন বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। রাজনৈতিক অরাজকতার পাশপাশি জীবনেও নেমে আসে দুর্ভোগ। বর্ণ বৈষম্যের কষাঘাতে নিম্নশ্রেণির মানুষ ছিল জর্জরিত। পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেয়া হতো না।
ক. সম্রাট হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক বাংলার শাসনকর্তা কে ছিলেন?
খ. ভারতবর্ষকে মৃতত্ত্বের জাদুঘর' বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমাজজীবনের সাথে মুসলিম বিজয়পূর্ব ভারতের সামাজিক অবস্থার কী মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মুসলিম বিজয়পূর্ব উত্তর ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সম্রাট হর্ষবর্ধনের সমসাময়িক বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন চালুক্য রাজা দ্বিতীয় পুলকেশী।

খ. ভারতীয় উপমহাদেশে অসংখ্য জাতি, গোষ্ঠী ও নানা ধর্মের মানুষের বসবাস লক্ষ করে ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ (Vincent Smith) এই উপমহাদেশকে 'নৃতত্ত্বের জাদুঘর' বলে অভিহিত করেছেন।
আর্যদের আগমন থেকে শুরু করে আধুনিককালে ইউরোপীয়দের আগমন পর্যন্ত বহু জাতি ভারতে প্রবেশ করেছে। প্রাচীন যুগে আর্য, দ্রাবিড়, পারসিক, গ্রিক, শান্ত, কুষাণ, হুন; মধ্যযুগে আরব, তুর্কি, আফগান, মুঘল এবং আধুনিক যুগে পর্তুগিজ, ইংরেজ, ফরাসি প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের ফলে ভারতবর্ষ বহু জাতিগোষ্ঠীর মহাজনসমাবেশে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণে ভিনসেন্ট স্মিথ একে নৃতত্ত্বের জাদুঘর বলে অভিহিত করেছেন।

গ. নারীর অধিকার ব্যনা ও শ্রেণিবৈষম্যের দিক দিয়ে উদ্দীপকের সমাজ ব্যবস্থার সাথে মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের সামাজিক অবস্থার মিল রয়েছে।
জাতিভেদ প্রথাকে হিন্দু সমাজব্যবস্থার একটি কুসংস্কার বলা যায়। ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে কৃত্রিম ভেদাভেদ সৃষ্টিই হলো এই জাতিভেদ প্রথা। এ প্রথা প্রচলিত থাকার ফলে একদল মানুষ সমাজে শোষিত হয় এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আবার পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হতে হয়। তারা নিগৃহীত ও অধিকার বঞ্চিত হয়ে অনেক সময় মানত্তের জীবনযাপন করে। মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতে বিদ্যমান এ জাতিভেদ প্রথা ও নারীর অবস্থানগত দিক উদ্দীপকে পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি, সমাজে নানা বৈষম্য বিদ্যমান। সমাজের অধিকাংশ লোক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত হলেও সমাজে তারা নানাভাবে অধঃপতিত, নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত। সমাজে নারীর কোনো মর্যাদা নেই। ঠিক একই রকম বৈষম্য লক্ষ করা যায় মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থায়। তখন ভারতীয় হিন্দুসমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল। ধর্ম-কর্ম, যাগযজ্ঞের অধিকার ছিল ব্রাহ্মণদের একত্র। অন্যদিকে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ছিল অধঃপতিত ও অসহায়। সামাজিকভাবে তারা ছিল অবহেলিত। তারা প্রতিনিয়ত শোষণ, নির্যাতন, যন্ত্রণার শিকার হতো। অনেক সময় সমাজে তাদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। নারীর কোনো মর্যাদা ছিল না। তাদেরকে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো। সুতরাং বলা যায়, রাজা অফসের সমাজ ব্যবস্থার বৈষম্যের দিকটি মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষের সমাজ ব্যবস্থায় বিদ্যমান জাতিভেদ প্রথা এবং নারীর অধিকার বর্ণনার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজা ২য় অফসের রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থা প্রাক-মুসলিম ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সামজস্যপূর্ণ। 
রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব যেকোনো অঞ্চলের স্বাধীনতাকে হুমকির সম্মুখীন করে। উদ্দীপকে উল্লিখিত রফিকের দেশেও রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রাক-মুসলিম ভারতেও একই অবস্থা বিরাজ করছিল। মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে এ দেশে কোনো রাজনৈতিক ঐক্য লক্ষ করা যায়নি। বিভিন্ন রাজ্য পূর্ণ স্বাধীনতা ও সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করত। এ বিচ্ছিন্নতার ফলেই মুসলিম অভিযানকারীদের বিরুদ্ধে ভারতীয়গণ একটি সুসংহত ও সংঘবদ্ধ শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি। উপরন্তু। অশোক, সমুদ্রগুপ্ত ও হর্ষবর্ধনের মতো কোনো পরাক্রমশালী রাজাও তখন উত্তর ভারতে ছিল না। ভারতের অবশিষ্ট অংশও বহু স্বাধীন নৃপতির মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে শতধাবিভক্ত ভারতে রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ছিল না। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এরূপ বিভক্তি জাতীয় চেতনার উন্মেষের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়ায়, যা দেশের কল্যাণের জন্য অন্তরায় হয়ে দেখা দেয়। সুতরাং দেখা যায়, রাজা অফসের দেশের অবস্থা প্রাক-মুসলিম ভারতের রাজনৈতিক অবস্থারই প্রতিরূপ।

৮. তৈমুর লং সমরকন্দের সিংহাসন বসেই দিগি্বজয়ের নেশায় মেতে ওঠেন। তিনি সিস্তান, হামদান, রাই, ইস্পাহান ফারস, সিরাজ এবং চীনের বিভিন্ন এলাকা দখল করে এবং বিরাট সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বহু রাজবংশের পতন ঘটিয়ে সেখান থেকে বিলাসবহুল সামগ্রী এনে রাজধানী সমরকন্দকে অনিন্দ্যসুন্দর নগরীতে পরিণত করেন। মধ্য এশিয়ায় একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাই ছিল তার লক্ষ্য এবং জন্য তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ঐ সকল এলাকা দখল করেন। 
ক. সুলতান মাহমুদ কতবার ভারত আক্রমণ করেন?
খ. কুতুবউদ্দিন আইবককে দ্বিতীয় হাতেম তাই বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত তৈমুর লংয়ের অভিযানের সাথে সুলতান মাহমুদের অভিযানের কী মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে তৈমুর লং এবং সুলতান মাহমুদের অভিযানের প্রকৃত উদ্দেশ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সুলতান মাহমুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন।

খ. অসীম উদারতা ও দানশীলতার জন্য কুতুবউদ্দিন আইবেককে দ্বিতীয় হাতেম তাই বলা হত।
কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন একজন মহানুভব সুলতান। তার বদান্যতা কিংবদন্তির পর্যায়ভুক্ত ছিল। প্রতিদিন তিনি লাখ লাখ টাকা দান করতেন বলে তাকে 'পাখবকস' বা লক্ষ টাকা দানকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বদান্যতায় তিনি ছিলেন দ্বিতীয় হাতেম তাই।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তৈমুর লংয়ের অভিযানের সাথে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যের সাদৃশ্য রয়েছে। সুলতান মাহমুদ (আফগানিস্তানে অবস্থিত গজনি রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন সাহসী ও সমরপ্রিয় বীর। ১০০০ থেকে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি মোট ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক তার এ অভিযানের কারণ হিসেবে সম্পদের প্রতি মোহকে দায়ী করেন। ভারতে পরিচালিত অভিযান থেকে সুলতান মাহমুদ প্রচুর অর্থ-সম্পদ সংগ্রহ করে নিজ রাজ্য গজনির উন্নতিতে ব্যয় করেন। আর উদ্দীপকেও এরূপ ঘটনা লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়, তৈমুর লং চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর অর্থ-সম্পদ হস্তগত করেন। এসব সম্পদ তিনি নিজ রাজ্য সমরকল্পের উন্নতিতে ব্যয় করেন। একইভাবে সুলতান মাহমুদ ভারতে অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর ধনরত্ন হস্তগত করেন। সুলতান মাহমুদের ষোলোতম অভিযান তথা সোমনাথ মন্দির আক্রমণ এবং সেখান থেকে প্রচুর ও স্থানীয় ধন-সম্পদ লুন্ঠন এ বিষয়টিকেই প্রমাণ করে। ১০২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সোমনাথ মন্দিরে অভিযান পরিচালনা করেন। মন্দিরের পুরোহিত ও অধিবাসীরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও তার আক্রমণ থেকে সোমনাথ মন্দিরকে রক্ষা করতে পারেননি। এ মন্দির থেকে মাহমুদ দু’ কোটিরও বেশি স্বর্ণমুদ্রা ও বিগ্রহাদি এবং ২শ মণ অলংকার ও মণিমুক্তা নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। তৈমুর লংয়ের সমরকল্পের মতোই গানি নগরকে সুলতান মাহমুদ অনিন্দ্য সুন্দর নগরীতে পরিণত করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লিখিত আক্রমণ ও পৃষ্ঠনের ঘটনায় সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগত দিক দিয়ে তৈমুর লংয়ের অভিযানের সাথে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সাদৃশ্য থাকলেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে।
সুলতান মাহমুদ একজন উচ্চাভিলাষী এবং অর্থলোভী সমরনায়ক ছিলেন। রাজ্যাভিযানে তিনি আনন্দ পেলেও তার অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক। নিজ সাম্রাজ্য গলনিকে সমৃদ্ধিশালী ও অনিন্দ্যসুন্দর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার প্রচুর সম্পদের দরকার ছিল। আর ধন ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ ভারতকে তিনি তার প্রয়োজনীয় অর্থের কল্পতরু মনে করে এখানে বার বার অভিযান পরিচালনা করেন এবং প্রচুর অর্থ সম্পদ হস্তগত করে গল্পনির শ্রীবৃদ্ধিতে ব্যয় করেন। তৈমুর লং এর অভিযানের পেছনেও এ ধরনের উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হলেও তিনি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠর লক্ষ্যে চীনের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করেন।
তুর্কি বীর তৈমুর লংয়ের উদ্দেশ্য ছিল বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। তাই তিনি বহু রাজবংশের পতন ঘটিয়ে বিজিত এলাকায় নিজ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি তার বাহিনী বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে প্রচুর সম্পদ লুণ্ঠন করে। তৈমুর এ সম্পদ ব্যয় করে সমরকন্দ সাম্রাজ্যের উন্নয়নে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একইভাবে সুলতান মাহমুদ গজনি রাজ্যকে বিশ্বের তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করার জন্য এর সুসজ্জিতকরণ, নিজ সাম্রাজ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা, বিরাট সৈন্যবাহিনীর ব্যয় নির্বাহ প্রভৃতি কারণে ভারতে বার বার অভিযান প্রেরণ করেন। অভিযানে সংগৃহীত অর্থ-সম্পদ তিনি সাম্রাজ্যের সার্বিক উন্নতিকল্পে ব্যয় করেন। কিন্তু তিনি একমাত্র পাঞ্জাব ছাড়া বিজিত কোনো অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা করেননি। অর্থাৎ তার ভারত অভিযানের পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না, অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যেই তিনি ভারত আক্রমণ করেন।
উপর্যুক্ত আলোচনায় এটা প্রমাণিত যে, তৈমুর লংয়ের উদ্দেশ্য ছিলো মধ্য এশিয়ায় একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। অন্যদিকে সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের পেছনে এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তাই বলা যায়, তাদের অভিযানের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সাদৃশ্য থাকলেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্যতা রয়েছে।

৯. জান্দাল বিন ইয়াহিয়া ছিলেন একজন দেশের গভর্নর। তার কঠোর শাসনে দেশটিতে অনেক বিদ্রোহীর জন্ম হয়। এসব বিদ্রোহীরা সীমান্ত পার হয়ে পাশের দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। জান্দাল বিন ইয়াইয়া এসব বিদ্রোহীকে ফেরৎ চাইলে উক্ত দেশটির রাজা ফেরৎ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ থেকেই উভয় দেশের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়।
ক. সিন্ধু বিজয়ী মুসলিম সেনাপতির নাম কী?
খ. ভারতবর্ষকে ‘Wealth of India’ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে সংগতিপূর্ণ আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কারণটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আরবদের সিন্ধু ও মুলতান বিজয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি নিষ্ফল বিজয়- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সিন্ধু বিজয়ী মুসলিম সেনাপাতির নাম মুহম্মীদ বিন কাসিম।

খ. প্রাকৃতিক ধনসম্পদে পরিপূর্ণ থাকায় ভারতবর্ষকে ‘Wealth of India’ বলা হয়। 
প্রাচীনকাল থেকেই বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও ঐশ্বর্যের জন্য ভারতবর্ষ বিখ্যাত ছিল। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পেরও ব্যাপক খ্যাতি ছিল। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে ভারত ভ্রমণকারী চীনা পর্যটক ফা-হিয়েন ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিবরণ দিয়েছেন। অর্থাৎ বিপুল ঐশ্বর্যের জন্য ভারত বর্ষকে Wealth of India বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের সাথে সংগতিপূর্ণ আরবদের সিন্ধু বিজয়ের কারণটি হলো হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বিদ্রোহীদেরকে রাজা দাহিরের আশ্রয় দান। 
আরবদের সিন্ধু অভিযান আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। নানা ঘটনা ও পরিস্থিতি আরবীয়দের সিন্ধু অভিযানে প্ররোচিত করেছিল। এ অভিযানের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল সিন্ধুর দেবলস্থ বন্দরে উপঢৌকনসহ ৮টি মুসলিম জাহাজ লুন্ঠন। 
তবে পরোক্ষ নানা ঘটনা উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ ও তার পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে সিন্ধু বাধ্য করেছিল, যার একটি ঘটনা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, গভর্নর জান্দাল বিন ইয়াহিয়ার দেশের বিদ্রোহীরা প্বার্শবর্তী দেশে আশ্রয় নিলে গভর্নর তাদেরকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশের রাজা তা অগ্রাহ্য করলে উভয়ের মধ্যে দনে্দ্বর সূত্রপাত হয়। একইভাবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কঠোর প্রতিবাদে কতিপয় বিদ্রোহীরা বিদ্রোহ করে আরব সীমান্ত অতিক্রম করে সিন্ধুরাজ দাহিরের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে। হাজ্জাজ তাদেরকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানালে দাহির তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে হাজ্জাজ ক্ষুব্ধ হন এবং তাকে সমুচিত শাস্তি দিতে সিন্ধু মুলতানে অভিযান পরিচালনা করেন। সুতরাং দেখা যায় উদ্দীপকের ঘটনায় আরবদের সিন্ধু বিজয়ের উল্লিখিত কারণেই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. সিন্ধু বিজ্ঞায়ের রাজনৈতিক ফলাফলকে নিষ্ফল বিজয় বলা যথাযথ হবে না। কারণ মুহাম্মদ বিন কাসিমের মৃত্যুর পর সিন্ধু ও মুলতানে আরব শাসন দেড়শ বছর স্থায়ী হয়েছিল। 
মুহাম্মদ বিন কাসিমের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সুলতান মাহমুদ ও মুহাম্মদ ঘুরি ভারতে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সিন্ধু বিজয়ের পর আরব সৈন্যদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে ভারতে বসতি স্থাপন করে। বিজিত অঞ্চলে বহু রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছিলেন তাদের কীর্তি আজও বিদ্যমান। ইতিহাসবিদ উভ টড ‘রাজস্থানের ইতিহাস’ গ্রন্থে বিজয়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। সিন্ধু বিজয়ের রাজনৈতিক ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এর ধর্মীয় ফলাফল ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ বিজয়ের ফলে অসংখ্য পির-দরবেশ ভারত উপমহাদেশে ধর্ম প্রচারের জন্যে আগমন করেন; যাদের প্রভাবে, মৈত্রী, উদারতা ও সহিষ্ণুতার প্রতীক ইসলাম ধর্মে সাম্য, মেরী, দলে দলে নির্যাতিত সম্প্রদায় যোগদান করতে থাকে।
সিন্ধু ও মুলতানে আরব প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবার পর আরবদের সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়। সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে আরবগণ সর্বপ্রথম হিন্দু সম্প্রদায়ের নিবিড় সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। ফলে উভয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সমঝোতা ও আর্য ও সেমেটিক জাতির এ মহামিলন ভারতবর্ষে নতুন সমাজব্যবস্থার সৃষ্টি করে। আরবদের কল্যাণমুখী শাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো সংরক্ষণ উভয়ের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে হিন্দু-মুসলিমের এ সহাবস্থানই পরবর্তীতে ভারতে নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছিল। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আরবদের সিন্ধু অভিযান কোনো নিষ্ফল বিজয় নয়।

১০. সিংহজানির রাজা জামালপুরের শাসনকর্তার নিকট ৮ ট্রাক উপহার সামগ্রী পাঠান। কিন্তু নন্দীপুরের নিকট দিয়ে আসার সময় ডাকাতেরা ট্রাকের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। জামালপুরের শাসনকর্তা মির্জা মনি ডাকাতদের প্রত্যার্পণ অথবা লুটকৃত মালামাল ফেরত দিতে নন্দীপুরের রাজা নন্দলালের নিকট দূত পাঠান। নন্দীপুরের রাজা এতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে জামালপুরের শাসনকর্তা নদীপুর দখল করার জন্য সেনাপতি প্রেরণ করেন এবং ইহা দখল করেন।
ক. সুলতান মাহমুদ কোথাকার সুলতান ছিলেন?
খ. সুলতান মাহমুদ মন্দির আক্রমণ করেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পাঠ্য বই এর কোন বিষয়ের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আছে?সংক্ষেপে বিজয়ের কারণগুলো লিখ। 
ঘ. উত্ত বিজয় কী নিষ্ফল বিজয় ছিল? বিশ্লেষণ কর।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সুলতান মাহমুদ আফগানিস্তানের গজনীর সুলতান ছিলেন।

খ. সুলতান মাহমুদ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করেছেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।
ভারতের গুজরাটের কাথিওয়াড়ে অবস্থিত সোমনাথ মন্দির ছিল ধনৈশ্বর্যে পরিপূর্ণ। মুসলিম ঐতিহাসিকদের বিবরণ মতে, মন্দিরের পুরোহিতদের ধারণা ছিল এ মন্দির বিজয় মাহমুদের সাধ্যের বাইরে। সুলতান মাহমুদ তাই ১২২৬ সালে এই মন্দিরে অভিযান চালিয়ে সফল হন। অন্যান্য মন্দির আক্রমণের পিছনেও অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ ছিল প্রধান।

গ. উদ্দীপকের সাথে আমার পাঠ্য বইয়ের সিন্ধু বিজয়ের ঘটনার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আছে। 
ইতিহাস পাঠে জানা যায়, সিংহলের রাজা ৮টি উপঢৌকনপূর্ণ জাহাজ খলিফা ওয়ালিদ ও হাজ্জাজের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। সিন্ধুর দেবল বন্দরে জলদস্য কর্তৃক জাহাজগুলোর মালামাল লুন্ঠন হয় সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট এর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করলে দাহির সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। ফলে হাজ্জাজ তার সেনাপতি প্রেরণ করে সিন্ধু অধিকার করেন।
উদ্দীপকের দুষ্টন এর ঘটনা এবং তার জবাবে সামরিক অভিযানের বিষয়টি সিন্ধু জয়ের ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু উদ্দীপকে যে টাক ও ডাকতের কথা বলা হয়েছে তা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। ইতিহাসে ট্রাক ও ডাকাতের স্থলে যথাক্রমে জাহাজ ও জলদস্যুর উল্লেখ পাই। এছাড়া ইতিহাসে সিন্ধু জয়ের ঘটনার পাঠে দেখা যায় হাজ্জাল এর পাঠানো সেনাপতিরা প্রথম দুটি অভিযানে ব্যর্থ হয়। তৃতীয় অভিযানে মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু দখলে সক্ষম হন। কাজেই সিন্ধু বিজয়ের উপর্যুক্ত ঘটনার সাথেই উদ্দীপকের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আছে।

ঘ. উক্ত বিজয় তথা আরবদের সিন্ধু বিজয় সম্পর্কে নেলি সেনপুল বলেন, "আরবগণ সিন্ধু জয় করেছিল। কিন্তু ভারতবর্ষ ও ইসলামের ইতিহাসে এ বিজয় ছিল একটি উপাখ্যান মাত্র একটি নিষ্ফল বিজয়"। 
সিন্ধু ও সুলতান বিয়ের রাজনৈতিক ফলাফল পর্যালোচনা করলে সেনপুলের উপরিউক্ত মন্তব্য সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ এই সত্য স্বীকার করেছেন। কেননা অরব প্রভাব শুধু সিন্ধু সুলমানেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভারতের আর কোন স্থানে আরব প্রভাব বিন কাসিমের অকাল মৃত্যু, খলিফাদের বৈদেশিক নীতির মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্ট ও উত্তর ভারতে শক্তিশালী রাজপুত, গুজা-প্রতিহারদের উত্থান ইত্যাদি মুসলিম অগ্রযাত্রার পথরোধ করে। ফলে সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে ভারতে কোন স্থায়ী মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে, এ এল ঐ বাস্তব, টমাস আরনওসহ কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন আরবদের সিন্ধু বিজয়ের ফলে ভারতে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটেছিল। ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সিন্ধু বিজয় পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছিল একথা অনস্বীকার্য। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই বিজয়ের সফলতা পরিদৃষ্ট হয় না।
পরিশেষে বলা যায় যে, উক্ত বিজয় তথা আরবদের সিন্ধু বিজয় ছিল অনেকাংশেই নিষ্ফল বিজয়। তবে এই বিজয়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।

Post a Comment

Previous Post Next Post