এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪
HSC Islamic History and Culture 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download
অধ্যায়ভিত্তিক প্রাথমিক আলোচনাঃ
উমাইয়া খিলাফত
খুলাফায়ে রাশেদীনের অবসানের পর ৬১১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া বংশের শাসন শুরু হয়। উমাইয়া বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন মুয়াবিয়া (রা)। সিরিয়ার দামেশক ছিল তাঁর রাজধানী। উমাইয়া খলিফাদের শাসন ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। উমাইয়া বংশের মোট ১৪ জন খলিফা রাজত্ব করেন। উমাইয়া বংশ কুরাইশ গোত্রের একটি শাখা। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পঞ্চম ঊর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন।
আবদে মানাফা আবদে মানাফের ৬ পুত্রের মধ্যে হাশেম, মুত্তালিব ও আবদুশ শামস ছিলেন সহোদর ভাই। হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন হাশেমের বংশধর। আবদুশ শামসের এক পুত্রের নাম উমাইয়া। তাঁর সন্তানরাই উমাইয়া বা বনী উমাইয়া বলে পরিচিতি লাভ করে।
উমাইয়াদের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শাসননীতি ও রাষ্ট্রের আদর্শের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হয়। তা হল :
◉ ইসলামি গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রবর্তন হয়।
◉ বায়তুল মাল জনগণের পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়।
◉ মজলিসে শূরার বিলোপ ঘটে। খলিফাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়। জনগণ সরকারের সমালোচনা করার অধিকার হারায়। একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠা হয়। নির্বাচনের পরিবর্তে মনোয়ন দ্বারা খলিফা নির্ধারণ করা হয়।
◉ গোত্রীয় দলাদলি, কলহ ও বংশগত হিংসা-বিদ্বেষের পুনরুত্থান ঘটে।
◉ খিলাফত ছিল ধর্মীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কিন্তু এখন থেকে তা কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়। খলিফার ধর্মীয় মর্যাদা লোপ পায়।
◉ খলিফাদের আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন শুরু হয়।
◉ প্রশাসনিক কেন্দ্ররূপে মদীনার গুরুত্ব লোপ পায়। দামেস্কের গুরুত্ব বেড়ে যায়।
◉ আরব-অনারবি জাতিগত ও বর্ণগত বৈষম্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠার সুযোগ পায়।
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
১. রাজা আলমগীর তার সাম্রাজ্যে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। কেন্দ্রীয় টাকশাল স্থাপন করে নির্দিষ্ট মানের মুদ্রা চালু করেন। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে উপকৃত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে। তিনি প্রচলিত ডাক ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করেন। সাম্রাজ্যের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য সুরম্য প্রাসাদ, নান্দনিক স্মৃতিফলক প্রভৃতি নির্মাণ করেন, যা সকলের দৃষ্টি কাড়ে। এভাবে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রাখেন।
ক. 'কুববাতুস সাখরা' কী?
খ. খলিফা আবদুল মালিক কর্তৃক আরবি ভাষা জাতীয়করন বিষয়ে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের রাজা আলমগীরের মুদ্রা সংস্কার খলিফা আবদুল মালিকের মুদ্রা সংস্কারের অনুরূপ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. স্থাপত্য শিল্পের উন্নয়নে উদ্দীপকের রাজার তুলনায় আবদুল মালিকের কৃতিত্ব ছিল অনেক বেশি উদ্ভিটির যথার্থতা যাচাই করো।
❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘কুববাতুস সাখরা’ হলো উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে নির্মিত অষ্টাকোণাকৃতির একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যেটি ‘Dome of the Rock’ নামে পরিচিত।
খ. খলিফা আবদুল মালিক রাষ্ট্রকে জাতীয়করণ এবং রাষ্ট্রে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আরবিকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দান করেন অর্থাৎ আরবি ভাষা জাতীয়করণ করেন। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের রাজত্বকাল উমাইয়া বংশের সবচেয়ে গৌরবময় যুগ। তার শাসননীতি মূলত আরব জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের জন্য বিখ্যাত ছিল। তিনি শাসনক্ষমতায় বসে দেখলেন যে আরব মুসলিমরা রাজ্যশাসন করলেও মূলত অনারব জনগোষ্ঠীই উমাইয়া খিলাফতের প্রশাসন ব্যবস্থাকে পরিচালিত করছে। ফলে আরব মুসলিম শাসননীতি কার্যকর হচ্ছে না। এ কারণেই খলিফা মালিক আরবি ভাষাকে জাতীয়করণ করেন।
গ. উদ্দীপকের রাজা আলমগীরের মুদ্রা স খলিফা আবদুল মালিকের মুদ্রা সংস্কারের অনুরূপ। মুদ্রা হলো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু আবদুল মালিকের পূর্বে আরবদের কোনো নিজস্ব মুদ্রা ছিল না। ফলে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে খলিফা আবদুল মালিক সর্বপ্রথম মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন। এই সংস্কারেরই প্রতিফলন ঘটেছে রাজা আলমগীরের মুদ্রা সংস্কারের ক্ষেত্রে।
রাজা আলমগীর তার সাম্রাজ্যে কেন্দ্রীয় টাকশাল স্থাপন করে নির্দিষ্ট মানের মুদ্রা চালু করেন। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে উপকৃত হয়। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের সংস্কারের ক্ষেত্রেও এমনটি দৃষ্টিগোচর হয়। তার সময়ে সাম্রাজ্যে তিন ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিল। যেমন বাইজান্টাইনে Dinarious, পারস্যে Darkmah এবং দক্ষিণ ইয়েমেনে Athene নামক মুদ্রা চালু ছিল। এতে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল ছিল না। মুদ্রা বিনিময়ের সমস্যার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অসুবিধা দেখা দিত। এছাড়া মুদ্রার ছাপ ও মূল্য নির্ণয় একেবারে অনির্ধারিত থাকায় বাজারে অনায়াসে জাল মুদ্রা প্রচলিত হতো। এসব কারণে খলিফা আবদুল মালিক সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি মুদ্রা প্রচলনের জন্য ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে জাতীয় টাকশাল গঠন করেন। তিনি দিনার, দিরহাম ও ফালুস নামের স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রার প্রচলন করেন। মুদ্রাগুলোকে জাতীয়করণ ও আরবীয়করণের জন্য মুদ্রায় ক্রুসের পরিবর্তে আরবি বর্ণমালা দেখা হয়। সুতরাং বোঝা যায়, রাজা আলমগীরের মুদ্রা সংস্কার খলিফা আবদুল মালিকের মুদ্রা সংস্কারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ঘ. স্থাপত্য শিল্পের উন্নয়নে উদ্দীপকের রাজার তুলনায় আবদুল মালিকের কৃতিত্ব ছিল অনেক বেশিত উক্তিটি যথার্থ। ইসলামের ইতিহাসে রাজেন্দ্র নামে পরিচিত আবদুল মালিক উমাইয়া বংশের শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতা বলে উমাইয়া সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন। এ বলিষ্ঠ চরিত্রের মন ছিল শিল্পানুরাগী। তার মার্জিত রুচিবোধের সামান্য প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের রাজার মধ্যে।
উদ্দীপকের রাজা আলমগীর সাম্রাজ্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সুরম্য প্রাসাদ, নান্দনিক স্মৃতিফলক প্রভৃতি নির্মাণ করেন। স্থাপত্য শিল্পে তার এ অবদান সকলের দৃষ্টি কাড়লেও এগুলো আবদুল মালিকের অবদানের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আবদুল মালিক শিল্প, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির একজন উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নির্মাতা হিসেবে তার কৃতিত্ব অপরিসীম। দজলা নদীর পশ্চিম তীরে সামরিক শহর 'ওয়াসিত' ও আল আকসা মসজিদ তার স্থাপত্য কীর্তির উজ্জ্বল নিদর্শন। তবে স্থাপত্য শিল্পে তার সবচেয়ে বড় কীর্তি হচ্ছে 'কুববাতুস সাখরা" বা Dome of the Rock নামক একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রতিদ্বন্দ্বী খলিফা ইবনে জুবায়েরের শাসনাধীন মক্কার কাবাগৃহের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবদুল মালিক ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে একটি স্থাপত্য কীর্তি নির্মাণ করেন। এটি ছিল মহানবি (স)-এর মিরাজের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র পাথরের ওপর নির্মিত অক্টাকোণাকৃতির স্থাপত্য শিল্প। এছাড়া তিনি দামেস্কে মহাফেজখানা বা সরকারি দলিল-দস্তাবেজখানা স্থাপন করেন।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, উদ্দীপকের রাজা স্থাপত্য শিল্পে যে উন্নয়ন করেছেন তার চেয়ে খলিফা আবদুল মালিকের অবদান অনেক বেশি।
২. রাজা ধর্মপাল রাজস্ব ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও সমৃদ্ধ করেছিলেন। তবে তার পুত্র দেবপাল ক্ষমতায় আরোহণ করে রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি পূর্ব ও দক্ষিণে অনেকগুলো সফল অভিযানের মাধ্যমে বিশাল পাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। দেবপালের প্রতিটি অভিযানে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিলেন তার দুইজন বিশ্বস্ত মন্ত্রী ও কিছুসংখ্যক দক্ষ সেনাপতি।
ক. কাকে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয়?
খ. খলিফা আবদুল মালিককে ‘রাজেন্দ্র' বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রাজা ধর্মপালের সাথে খলিফা আবদুল মালিকের কোন কর্মকান্ডের সামগ্রস্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের রাজা দেবপালের মতোই খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক শ্রেষ্ঠ বিজেতা ছিলেন- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আমির মুয়াবিয়াকে আরব বিশ্বের প্রথম রাজা বলা হয়।
খ. উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের চারজন পুত্র পরবর্তীতে খলিফা হওয়ায় তাকে রাজেন্দ্র বা ঋধঃযবৎ ড়ভ শরহমং বলা হয়। আবদুল মালিকের চার পুত্র আল ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫ খ্রি.), সুলাইমান (৭১৫-৭১৭ খ্রি.), দ্বিতীয় ইয়াজিদ (৭২০-৭২৪ খ্রি.) এবং হিশাম (৭২৪-৭৪৩ খ্রি.) পরবর্তীকালে খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তারা সুযোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা উমাইয়া বংশকে সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, ‘আবদুল মালিক এবং তার উত্তরাধিকারী চার পুত্রের শাসনকালে দামেস্কের এ রাজবংশ শৌর্যবীর্য ও গৌরবের চরম শিখরে আরোহণ করে। এ কারণে আবদুল মালিককে 'রাজেন্দ্র' বলা হয়।’
গ. উদ্দীপকের রাজা ধর্মপালের কর্মকান্ডের সাথে খলিফা আবদুল মালিকের রাজস্ব সংস্কারের সামঞ্জস্য রয়েছে।
খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে আবদুল মালিক এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হন। তার শাসনামলে নওমুসলিমরা শুধু যাকাত ব্যতীত অন্য কোনো কর দিত না। তাছাড়া অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য অনারব মুসলমানগণ গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নেয়। তারা সেনাবাহিনীতে যোগদান করে নিয়মিত ভাতাও পেতে থাকে। এতে চরম অর্থসংকট দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে আবদুল মালিক রাজস্ব সংস্কার করেন, যার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে উদ্দীপকে।
উদ্দীপকের রাজা ধর্মপাল রাজস্ব ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ও সমৃদ্ধ করেছিলেন। খলিফা আবদুল মালিকও নিজ সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দূর করার জন্য ব্যাপকভাবে কর ব্যবস্থা সুসংহত করেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রাদেশিক শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন-ইউসুফের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কিছু নীতি গ্রহণ করেন। এগুলো হলো- প্রথমত, ইসলাম গ্রহণ করলেও নবদীক্ষিত অনারব মুসলমানদের ভূমি রাজস্ব বা খারাজ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, যেসব নবদীক্ষিত মুসলমান গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে তাদের শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে বাধ্য করা হয়। তৃতীয়ত, ভূমিকর যাতে হ্রাস না পায় সে জন্য আরবীয় মুসলমানগণ কর্তৃক মাওয়ালিদের ভূমি ক্রয় নিষিদ্ধ করেন। চতুর্থত, অনুর্বর ও পতিত জমি তিন বছরের জন্য বিনা রাজস্বে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করার ব্যবস্থা করা হয়। তিন বছর পর ঐ জমির ফসলের ১/২ অংশ রাজস্ব ধার্য হয়। এ আলোচনা থেকে বোঝা যায়, রাজা ধর্মপালের কাজের সাথে খলিফা আবদুল মালিকের কর ব্যবস্থা সংস্কারেরই মিল বিদ্যমান।
ঘ. উদ্দীপকের রাজা দেবপালের মতোই খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক শ্রেষ্ঠ বিজেতা ছিলেন'- উক্তিটি যথার্থ।
খলিফা আবদুল মালিকের পুত্র আল ওয়ালিদ পিতার মতো একজন সুযোগ্য শাসক ছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে বিজেতা হিসেবে তার নাম স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে পিতার বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেন। ফলে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের বহু স্থানে খলিফা ওয়ালিদের ক্ষমতা সম্প্রসারিত হয়। তার এই সম্প্রসারণ নীতির প্রভাব লক্ষ করা যায় রাজা দেবপালের মধ্যে। রাজা দেবপাল ক্ষমতায় আরোহণ করে রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি পূর্ব ও দক্ষিণে অনেকগুলো সফল অভিযানের মাধ্যমে বিশাল পাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এক্ষেত্রে তিনি দুইজন বিশ্বস্ত মন্ত্রী ও কিছু সংখ্যক দক্ষ সেনাপতির সহায়তা পেয়েছিলেন। খলিফা ওয়ালিদের ক্ষেত্রেও এমনটি দেখা যায়। তিনি হাজ্জাজ, কোতায়ৰv, ইবনে কাসিম, তারিক। ও মুসার মতো রণনিপুণ সেনাপতির সাহায্য লাভ করেছিলেন তাদের অসাধারণ শৌর্য-বীর্য এবং অক্লান্ত চেষ্টার ফলে বহুস্থানে আরব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওয়ালিদের ভাই মাসলামা ও পুত্র আব্বাসের সহায়তায় কোতায়বা মধ্য এশিয়ার বোখারা, সমরখন্দ দখল করেন। ৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাশগড় জয় করে সমগ্র মধ্য এশিয়া দখল করতে সক্ষম হন। এদিকে সিন্ধুর রাজা দাহিরের মনোভাবের কারণে ওয়ালিদের পূর্বাশ্মলীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন অবজ্ঞাসূচক ইউসুফের আদেশে সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু দখল করেন। অন্যদিকে, সেনাপতি মুসার সাহায্যে নৌপথে আক্রমণ চালিয়ে মেজকা, মিনকা, ইডিকা প্রভৃতি দ্বীপ রোমানদের নিকট হতে জয় করে মুসলিম শাসনভুক্ত করেন। তাছাড়া খলিফা ওয়ালিদ স্পেন জয় করার জন্য মুসাকে প্রেরণ করেন। তার সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ ৭১২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের রাজা রডারিককে পরাজিত করে স্পেন জয় করেন। এভাবে ওয়ালিদের সাম্রাজ্য একদিকে আটলান্টিক হতে পিরেনিজ এবং ভারতের সিন্ধু থেকে আরম্ভ করে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। পরিশেষে বলা যায়, খলিফা ওয়ালিদের সময়ই ইসলামি সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়। এ কারণেই তিনি শ্রেষ্ঠ বিজেতা হিসেবে অধিক পরিচিত।
৩. ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো’ কথাটি শাহরিয়ার তুষার ছোট বেলা থেকেই গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছাত্রজীবনে ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা। দেশের প্রধানমন্ত্রী মেধাবী তুষারের গুণে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে নিজ মেয়ের বিয়ে দেন। অনেক দামি দামি স্বর্ণালংকার দেন মেয়েকে। জনগণের ব্যাপক সমর্থনে তুষার এবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি তার স্ত্রীকে আদেশ দিলেন, তার পিতার দেয়া দামি দামি স্বর্ণালংকার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে কেননা ওগুলো জনগণের টাকায় কেনা ছিল। তবে তার গৃহীত নীতি, তার বংশের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
ক. উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. কারবালার কাহিনিকে মর্মান্তিক বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে শাহরিয়ার তুষারের সাথে উমাইয়া যুগের কোন খলিফার চরিত্রের মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তিনি কি উমাইয়া বিলাত পতনের জন্য দায়ী ছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা খলিফা আমির মুয়াবিয়া।
খ. কারবালার যুদ্ধে অত্যন্ত করুণভাবে মুসলমানদের হত্যা করা হয় এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নবি করিম (স)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের। শিরশ্ছেদ করা হয়। তাই এ হত্যাকান্ডকে মর্মান্তিক বলা হয়।
৬০ হিজরির ১০ই মহররম কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেনের বাহিনী ও ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু হয়। ইয়াজিদ বাহিনী ফোরাত নদীর পাড় দখল করে ইমাম হোসেনের বাহিনীকে পানি থেকে বঞ্চিত করে। ফলে পানির অভাবে ইমাম হোসেনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাসেম মৃত্যুবরণ করেন। পরে ইমাম হোসেন নিজপুত্র শিশু আসগরকে নিয়ে ফোরাত নদীতে পানির জন্য গেলে আসগর শরবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। পরে ইয়াজিদের নির্দেশে পাপিষ্ট সীমার তরবারি দ্বারা ইমাম হোসেনের শিরশে্ছদ করে। নবি করিম (স)-এর দৌহিত্রের এ বেদনাদায়ক হত্যাকান্ডকে তাই মর্মান্তিক ঘটনা বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের শাহরিয়ার তুষারের সাথে উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের চরিত্রের মিল পাওয়া যায়।
খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ উমাইয়া বংশের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এক শ্রেষ্ঠ ও মহান শাসক ছিলেন। তিনি তার শাসনামলে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন। তিনি অনাড়ম্বর ও সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন। উদ্দীপকে তার এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো- এ কথাটি শাহরিয়ার তুষার গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। তাই তিনি তার স্ত্রীকে পিতার দেওয়া সকল স্বর্ণালংকার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন। অনুরূপভাবে উমর বিন আবদুল আজিজ উমাইয়াদের বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতার যুগে জন্মগ্রহণ করলেও এসব কিছু তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তিনি তার শাসনামলে উমাইয়াদের সকল অনিয়ম পরিহার করে খুলাফায়ে রাশেদিনের শাসন ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেন। তাছাড়া তিনি অত্যন্ত অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করতেন। তিনি প্রথম ওমরের (রা) মতো তালিযুক্ত কাপড় পরিধান করতেন। তিনি তার স্ত্রী ফাতিমার যৌতুক হিসেবে প্রাপ্ত সব অলংকার বিক্রি করে সে অর্থ রাজ কোষাগারে জমা দেন। আর এ বিষয়গুলোই শাহরিয়ার তুষারের সাথে ওমর বিন আবদুল আজিজের সাদৃশ্য রচনা করেছে।
ঘ. উক্ত খলিফার অর্থাৎ খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের শাসন সংস্কার উমাইয়া বংশের পতনের জন্য দায়ী বলে আমি মনে করি না।
খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের শাসন সংস্কার উমাইয়া খিলাফতের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিলেও এ বংশের পতনে তার গৃহীত নীতি সম্পূৰ&ণরূপে দায়ী ছিল না। কেননা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তার শাসনকালের প্রতিটি দিক বিবেচনা করলে উমাইয়া বংশের পতনের জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। তাছাড়া তার উদার ও সাম্যনীতির ফলে উমাইয়া বংশের প্রতি কেউ শত্রুভাবাপন্ন ছিল না। দ্বিতীয় ওমর (ওমর বিন আবদুল আজিজ) তার শাসনামলে উমাইয়া, হাশেমি, আরব-অনারব, হিমারীয়-মুদারীয় দ্বন্দ্ব নিরসন করার চেষ্টা করেন এবং অনেকাংশে সফল হন। রক্তপাত, ষড়যন্ত্র এবং বিশ্বাসঘাতকতার বিভীষিকার মধ্যে তার শাসনকাল উপশমের ভূমিকা পালন করেছে উমাইয়া খিলাফত পতনের দায় তার ওপর আরোপিত হওয়া ঠিক নয় কেননা তার তিরোধানের পর যদি তার নীতি অনুসৃত হতো তাহলে আলী ও আব্বাসি বংশীয়রা সহজে ক্ষুব্ধ হতো না। তাদের আন্দোলনের জন্য দায়ী পরবর্তী দুর্বল শাসকেরা, খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ নন। তার মৃত্যুর পর পূর্বের অসাম্য ও ভেদাভেদ নীতি আরব সমাজে নতুন করে আবির্ভূত হওয়ায় উমাইয়াবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে এবং উমাইয়াদের পতন হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, উমাইয়া বংশের পতনের পেছনে ওমর বিন আবদুল আজিজের শাসন সংস্কার দায়ী ছিল না। তবে তার শাসন সংস্কার উমাইয়াদের ভিত্তিকে কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত পতন ত্বরান্বিত করেছিল তার পরবর্তী অযোগ্য শাসকগণ। অনাড়ম্বর
৪. জনাব আলী আজম দয়ালু, সদাশয় ও প্রজাবৎসল খলিফা। তিনি চারিত্রিক দিক দিয়ে ছিলেন সরল, অনাড়ম্বর, ধর্মানুরাগী ও কর্তব্যপরায়ণ। তিনি খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন। কর ব্যবস্থার সংস্কার করে তিনি শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি সাধন করেন। তিনি ভিন্ন মতাবলম্বীদের শাসনকার্যে নিয়োগ করে এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তার বৈদেশিক নীতি ছিল শান্তি-শৃঙ্খলা ও সংহতি বিধান।
ক. উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. খলিফা সুলাইমানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে কোন উমাইয়া খলিফার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে উক্ত খলিফার বৈদেশিক নীতি পর্যালোচনা করো।
❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন আমির মুয়াবিয়া।
খ. ইরাকের বন্দিদের মুক্তিদানের জন্য খলিফা সুলায়মানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়।
উমাইয়া শাসনামলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুফা ও বসরায় ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)-এর অনুসারীদের বিদ্রোহ দমন করে ইরাকের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। সময় তিনি ইরাকের হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। খলিফা সুলায়মান ক্ষমতায় আরোহণের পর হাজ্জাজের বন্দিকৃত কয়েদিদের মুক্ত করে দেন। এ কারণে তাকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উমাইয়া খলিফাদের রাজত্বকালে দেশজুড়ে ক্ষমতা নিয়ে সংঘর্ষ, বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতায় নিমজ্জিত ছিল। তবে এসব অপকর্ম সৃষ্টিকারী খলিফাদের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী একজন শ্রেষ্ঠ ও মহান শাসক ছিলেন। তিনি হলেন খলিফা আবদুল আজিজ বা দ্বিতীয় ওমর। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও কর্মের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে জনাব আলী আজমের চরিত্রের মধ্যে।
জনাব আলী আজম একজন দয়াল, সদাশয় ও প্রজাবৎসল খলিফা। চারিত্রিক দিক দিয়ে তিনি ছিলেন সরল, অনাড়ম্বর, ধর্মানুরাগী ও কর্তব্যপরায়ণ। তিনি খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন। কর ব্যবস্থার সংস্কার করে তিনি শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি সাধন করেন। এছাড়া তিনি ভিন্ন মতাবলম্বীদের শাসনকার্যে নিয়োগ করে এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায় তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর ধর্মানুরাগী, কর্তব্যপরায়ণ ও প্রজাবৎসল খলিফা। তিনি খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন। রাজদ্বব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি মাওয়ালিদের (অমুসলিম ক্রীতদাস, যারা পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেছে) জিজিয়া কর (অমুসলিমদের ওপর ধার্যকৃত কর) থেকে রেহাই দেন। প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দেন। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকে উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজেরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ঘ. বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে উক্ত খলিফা অর্থাৎ ওমর বিন আবদুল আজিজ উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
উদ্দীপকে জনাব আলীর বৈদেশিক নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি সবকিছুর ওপরে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সংহতি বিধানের ওপর প্রাধান্য দেন। খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের ক্ষেত্রেও এমনটি উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি যুদ্ধাভিযান বা রাজ্য বিজয়ে আকৃষ্ট হননি। তিনি পূর্ববর্তী খলিফাদের প্রেরিত সকল যুদ্ধাভিযান বন্ধ করে দেন। মুসলিম সেনাপতি মাসলামার নেতৃত্বে যে আরব বাহিনী কনস্টান্টিনোপলের প্রাচীরের পাদদেশে খাদ্য ও রসদের অভাবে আটকা পড়েছিল, তিনি তাদেরকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উমাইয়া শাসনকর্তা আল হুরের শাসনাধীনে স্পেনে গোলযোগ দেখা দিলে তার পরিবর্তে তিনি আল সামাহকে সেখানকার শাসনকর্তা নিয়োগ করে শান্তি-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। সামরিক বাহিনীর দুর্বলতার জন্য তিনি বিদেশে অভিযান বন্ধ করেননি, বরং রাজ্যে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং ইসলাম প্রচারের প্রতি অধিক মনোযোগী ছিলেন বলেই রাজ্য জয়ের প্রতি তার অনীহা ছিল।
ওমর বিন আবদুল আজিজের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে সমালোচকরা বলে থাকেন যে, রাজ্য জয়ের সংকল্প ত্যাগ করে তিনি সামরিক শক্তি হ্রাস করেন। তাই সেনাবাহিনী পরবর্তীকালে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়। তবে ওমর বিন আবদুল আজিজের বৈদেশিক নীতি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী হয়নি। কারণ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) এবং উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ ইসলামি রাষ্ট্রের যথেষ্ট বিস্তৃতি সাধন করেন। এরপর রাজ্য বিস্তার নয় বরং রাষ্ট্রের সংহতি রক্ষা ও শাসন ব্যবস্থার সুসংহত্তকরণ অধিক প্রয়োজন ছিল। তাই বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ওমর বিন আবদুল আজিজ যথার্থ কাজ করেছেন বলেই প্রমাণিত হয়।
৫. উসমানের প্রতিষ্ঠিত এশিয়া মাইনরের ছোট উসমানীয় রাজ্যকে সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। তার সৌভাগ্য যে, বেশ কিছু রণনিপুণ সেনাপতির কর্মক্ষমতা তিনি কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তার সাম্রাজ্যকে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় বিসত্মৃত করে সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে তার এই রাজ্য বিজয়ে দেশের যে স্থিতিশীলতা এবং অর্থের প্রয়োজন ছিল, তার ব্যবস্থা পূর্ববর্তী সম্রাট তার পিতা করে রেখে গিয়েছিলেন।
ক. সিন্ধু বিজয়ী নেতার নাম কী?
খ. সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের পিতার সাথে কোন উমাইয়া খলিফার কাজের সামজস্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের দ্বিতীয় মুরাদের সাম্রাজ্য বিস্তারে সেনাপতিদের অবদানের মতোই খলিফা আল-ওয়ালিদ ও সুযোগ্য সেনাপতিদের সহায়তা পেয়েছিলেন? তোমার উত্তরের সপক্ষে বাখ্যা দাও।
❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সিন্ধু বিজয়ী নেতার নাম মুহম্মদ বিন কাসিম।
খ. আরবদের কিছু বাণিজ্য তরী সিন্ধুর জলদস্যু কর্তৃক লুষ্ঠিত হলে হাজ্জাজের দাবি অনুসারে রাজা দাহির কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দানে অস্বীকৃতিই ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ।
অষ্টম শতকের শুরুতে আরবদের ৮টি বাণিজ্য ওরী সিন্ধুর দেবল বন্দরে জলদস্যু কর্তৃক লুষ্ঠিত হলে খলিফা আল-ওয়ালিদের পূর্বাঞ্ছনীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির এ ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন। ফলে সিন্টু আক্রমণ। অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, যা ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ।
গ. উদ্দীপকের সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের পিতার সাথে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের কাজের সামঞ্জস্য রয়েছে।
খলিফা আবদুল মালিক রাজস্ব সংস্কারে মাধ্যমে রাজ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে সক্ষম হন। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তিনি কিছু নীতি গ্রহণ করেন। যেমন- ইসলাম গ্রহণ করলেও মাওয়ালিদের জিজিয়া ও খারাজ দিতে হবে, সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেও তাদের গ্রামে স্ব পেশায় নিযুক্ত হতে হবে, মুসলমানরা যে জমি ক্রয় করেছে তাদেরকে আগের মতো কর দিতে হবে। এছাড়া কৃষকদের কৃষিঋণ প্রদান করা হয়, তিন বছর পর্যন্ত যার কোনো ট্যাক্স দিতে হয়নি। এভাবে তিনি একটি সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন যার সুফল তার পরবর্তী শাসকগণও ভোগ করে। আর উদ্দীপকেও এ বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, দ্বিতীয় মুরাদ এশিয়া মাইনরে ওসমানের প্রতিষ্ঠিত ছোট উসমানীয় রাজ্যকে এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। তবে তার এই রাজ্য বিজয়ের দেশের যে স্থিতিশীলতা এবং অর্থের প্রয়োজন ছিল, তার ব্যবস্থা পূর্ববর্তী সম্রাট তার পিতা করে রেখে যান। অনুরূপভাবে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদও তার পিতা আবদুল মালিকের রেখে যাওয়া স্থিতিশীদ অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিশাল এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খলিফা প্রথম ওয়ালিদ দশ বছরের রাজত্বকালে মুসলিম সাম্রাজ্য পশ্চিমে স্পেন হতে পূর্বে ভারতবর্ষ এবং উত্তরে মধ্য এশিয়ার ফারগানা হতে দক্ষিণে ইয়েমেন পর্যন্ত বিসত্মৃত করেন। এই বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল তা তার পিতা আবদুল মালিক উমাইয়া সাম্রাজ্যে রেখে গিয়েছিলেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের পিতার ন্যায় উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকও রাজ্য বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা ও অর্থের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন।
ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের দ্বিতীয় মুরাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের সেনাপতিতের অবদানের মতোই খলিফা ওয়ালিদও সুযোগ্য সেনাপতিদের সহায়তা পেয়েছিলেন।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মুরাদ বেশ কিছু রণনিপুণ সেনাপতির কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঠিক একইভাবে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদও বিশাল উমাইয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মুরাদের মতোই সুযোগ্য সেনাপতিদের সহায়তা পেয়েছিলেন। তিনি হাজ্জাজ, কোতায়বা, ইবনে কাসিম, তারিক ও মুসার মতো বিখ্যাত রণনিপুণ সেনাপতিদের সাহায্য লাভ করেছিলেন এবং তাদের অসাধারণ শৌর্য-বীর্য এবং অক্লান্ত চেষ্টার ফলে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের বহু স্থানে আরব অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে কুতায়াবা বিন মুসলিমকে খোরাসানের শাসনকর্তা নিযুক্ত করলে মধ্য এশিয়ায় মুসলিম রাজ্য বিস্তারের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়। তিনি একে একে তুর্কিস্থান ও ফারগানা এবং বুখারা দখল করেন। ৭১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাশগড় জয় করে সমগ্র মধ্য এশিয়ায় উমাইয়াদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া আল ওয়ালিদের পূর্বাঞ্চলীয় শাসক হাজ্জাজ এর নির্দেশে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম ভারতে অভিযান পরিচালনা করেন এবং তা বিজয় করেন। তাছাড়া তার সুযোগ্য শাসক মুসা বিন নুসায়ের উত্তর আফ্রিকা থেকে রোমানদের তাড়িয়ে সেখানে মুসলিম শাসন দৃঢ় করেন। আল ওয়ালিদের রাজত্বকালে তারিক বিন জিয়াদ নামে একজন সেনানায়ক মাত্র ১২০০০ সৈন্য নিয়ে ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনের রাজা রডারিককে পরাজিত করে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়, আল ওয়ালিদের রাজ্য সম্প্রসারণে তার সেনাপতিদের অবদান ছিল অপরিসীম।
৬. বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানি মুদ্রা প্রচলিত ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টাকশাল স্থাপন করে বাংলাদেশি জাতীয় মুদ্রা প্রচলন করেন। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং এগিয়ে যায়।
ক. আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের কোন যুদ্ধে নিহত হয়?
খ. ময়ূর বাহিনী বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন উমাইয়া শাসকের মিল রয়েছে? লিখ।
ঘ. উক্ত শাসক আর কোন কোন ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলেন? ব্যাখ্যা করো।
❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের উস্ট্রের যুদ্ধে নিহত হন।
খ. ময়ূর বাহিনী হলো হাজ্জাজ বিন ইউসুফ পরিচালিত একটি সুসজ্জিত সৈন্যদল।
সিজিস্থানের রাজা জানবিল কাবুল থেকে কান্নাহার পর্যন্ত স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। জানবিলকে পরাস্ত করার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ময়ূর বাহিনী নামক সুসজ্জিত সৈন্যদল প্রেরণ করেন, এই বাহিনী কর্তৃক জানবিল পরাস্ত হন এবং ময়ূর বাহিনী জয়ী হয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মুদ্রা সংস্কার আমার খলিফা আব্দুল মালিকের মুদ্রা পাঠ্যবইয়ের সংস্কারের অনুরূপ।
মুদ্রা হলো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আব্দুল মালিকের পূর্বে আরবদের কোনো নিজস্ব মুদ্রা ছিল না। ফলে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে খলিফা আব্দুল মালিক সর্বপ্রথম মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন। উদ্দীপকে বর্ণিত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ববর্তী মুদ্রা ব্যবস্থা বাতিল করেন। স্বাধীন দেশ হিসেবে টাকশাল স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশি জাতীয় মুদ্রা প্রচলন করেন। যার ফলশ্রুতিতে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের ফলে দেশ এগিয়ে যায়। খলিফা আবদুল মালিকের সংস্কারের ক্ষেত্রেও এমনটি দৃষ্টিগোচর হয়। তার সময়ে সাম্রাজ্যে তিন ধরনের মুদ্রা প্রচলিত ছিল। যেমন- বাইজান্টাইনে Dinarious, পারস্যে Darkmah এবং দক্ষিণ ইয়েমেনে Athene নামক মুদ্রা চালু ছিল। এতে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল ছিল না। সমস্যার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অসুবিধা দেখা দিত। এছাড়া মুদ্রার ছাপ ও না। মুদ্রা বিনিময়ের মূল্য নির্ণয় একেবারে অনির্ধারিত থাকায় বাজারে অনায়াসে জল মুদ্রা প্রচলিত হতো। এসব কারণে খলিফা আবদুল মালিক সর্বপ্রথম খাঁটি আরবি মুদ্রা প্রচলনের জন্য ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে জাতীয় টাকশাল গঠন করেন। তিনি দিনার, দিরহাম ও ফালুস নামের স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রার প্রচলন করেন। মুদ্রাগুলোকে জাতীয়করণ ও আরবীয়করণের জন্য মুদ্রায় ক্রুসের পরিবর্তে আরবি বর্ণমালা লেখা হয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের মুদ্রা সংস্কার খলিফা আবদুল মালিকের মুদ্রা সংস্কারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ছাড়াও খলিফা আব্দুল মালিক আরবি ভাষাকে জাতীয়করণ, রাজস্ব, ডাক ও বিচার বিভাগের সংস্কার সাধনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলেন।
খলিফা আব্দুল মালিকের মুদ্রা সংস্কার ছাড়াও জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি পদক্ষেপ ছিল সরকারি অফিসে আরবি ভাষার প্রচলন। আরবি লিপিরও উন্নতি সাধন করেন। এছাড়াও রাজস্ব বিভাগের সংস্কার, ডাক বিভাগের উন্নতি এবং বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। উদ্দীপকের বর্ণিত বিষয়টি ছাড়াও তিনি এই সমস্ত ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলেন।
উদ্দীপকে উল্লিখিত মুদ্রা ব্যবস্থায় প্রচলিত মুদ্রার জায়গায় নতুন মুদ্রার প্রচলন করেন। অনুরূপভাবে খলিফা আব্দুল মালিক সমগ্র সাম্রাজ্যে নতুন মুদ্রা প্রচলন এবং আরবি ভাষাকে রাষ্ট্রীয়করণ করেন। তিনি রাষ্ট্রকে জাতীয়করণ এবং সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য পূর্ব থেকে চালুকৃত ফারসি, সিরীয়, গ্রিকসহ বিভিন্ন ভাষার উচ্ছেদ সাধন করেন। আরবিকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদাদানের মাধ্যমে ভাষার ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলেন। এক্ষেত্রে সমস্ত প্রদেশে সরকারি কাজে আরবি ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি রাজস্ব সংস্কারের মাধ্যমে রাজ্যে বিরাজমান। অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটানোর জন্য কিছু নীতি গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে মাওয়ালিদের জিজিয়া দেয়া, জমি ক্রয়ে কর দেয়ার নীতি প্রবর্তন করেন। ডাক বিভাগের ক্ষেত্রেও তিনি পারসিক নীতি গ্রহণ করেন। তিনি সাম্রাজ্যের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখেন। যা তার জাতীয়তাবাদী নীতিরই প্রতিফলন।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, খলিফা আব্দুল মালিকের মুদ্রা সংস্কার ছাড়াও আরবি ভাষা প্রচলন, রাজম্ব, ডাক ও বিচার। বিভাগের সংস্কারের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
৭. ১৩৩৮ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ সোনারগাঁও এর স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলার একটি অংশ তখনও তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। পরবর্তীতে হাজী ইলিয়াস বাংলা ভাষাভাষী সকল অঞ্চলকে একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ বাংলা গঠন করেন। বাংলাকে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, নিজ নামে খুতবা পাঠ ও নিজস্ব মুদ্রা চালু করে তিনি বাংলাকে সুসংহত করেন। ফলে ২০০ বছর বাংলা দিল্লির অধীনতামুক্ত ছিল।
ক. উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিজেতা কে ছিলেন?
খ. মুয়াবিয়াকে প্রথম রাজা বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোন উমাইয়া খলিফার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত খলিফা কেবল একজন দক্ষ শাসকই ছিলেন না স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসাবেও তার খ্যাতি ছিল পাঠ্যবইয়ের আলোকে মূল্যায়ন কর।
❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিলেতা ছিলেন আল ওয়ালিদ।
খ. মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রচলন করেন, তাই তাকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।
উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা উচ্চাভিলাষী মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের সাথে সাথেই সাধারণতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। মুয়াবিয়া হযরত ইমাম হাসান (রা)-এর সাথে স্বাক্ষরিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে ৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা মুগিরার প্ররোচনায় তার জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের পথ সুগম করেন। এজন্য মুয়াবিয়াকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হাজী ইলিয়াসের কার্যাবলির সাথে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের কার্যাবলির সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
ইসলামের ইতিহাসে রাজেন্দ্র নামে পরিচিত খলিফা আব্দুল মালিক সিংহাসনে আরোহন করেই সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। সরকারি অফিসে আরবি ভাষার প্রচলন, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন, বহিঃশত্রুর মোকাবিলার পাশাপাশি নিজ সাম্রাজ্যে স্বাতন্ত্র সৃষ্টিতে নানা সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেমনটি উদ্দীপকের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়
উদ্দীপকের হাজী ইলিয়াস শাহ বাংলা ভাষাভাষী সকল অঞ্চলকে এক এক করে ঐক্যবদ্ধ বাংলা গঠন করেন। সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, নিজ নামে খুতবা পাঠ ও নিজস্ব মুদ্রা চালু করে তিনি বাংলাকে সুসংহত করেন। অনুরূপভাবে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক আরব জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে আঞ্চলিক ভাষাসমূহের পরিবর্তে সমগ্র দেশে অফিস আদালতে দলিলপত্রাদি আরবি ভাষায় রক্ষিত করার ঘোষণার মাধ্যমে আরবি ভাষার প্রবর্তন করেন। তাছাড়াও আরবি বর্ণমালার উন্নতি সাধন, আরবি মুদ্রার প্রচলন, টাকশাল নির্মাণ করে শাসন ব্যবস্থাকে সুসংহত করেন। তার শাসননীতি ও সংস্কারমূলক কার্যাবলি সাম্রাজ্যকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে আব্দুল মালিকের কর্মকান্ডেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ. উক্ত খলিফা অর্থাৎ আব্দুল মালিক কেবল একজন দক্ষ শাসকই ছিলেন না স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তার বেশ খ্যাতি ছিল উক্তিটি যথার্থ।
মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করলেও তার দুর্বল উত্তরাধিকারীদের শাসনামলের শিশু উমাইয়া খিলাফত নানা দিক থেকে সংকটের আবর্তে নিপতিত হয়েছিল। আব্দুল মালিক তার অসামান্য নৈপুণ্য দ্বারা এ সাম্রাজ্যের সংহতি বিধান করেন, সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এর সীমানা সম্প্রসারণ করেন। শুধু শাসন ক্ষেত্রে নয় স্থাপত্য শিল্পেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
উমাইয়া খলিফাদের মধ্যে আব্দুল মালিক ছিলেন বিদ্যান ও মার্জিত রুচিসম্মত। তিনি স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। দজলা নদীর পশ্চিম তীরে সামরিক শত্রু 'ওয়াসিত' ও আল আকসা মসজিদ তার স্থাপত্য প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন। তবে স্থাপত্য শিল্পে তার সবচেয়ে বড় কীর্তি হচ্ছে 'কুববাত আল সাখরা' বা উড়সব ড়ভঃযব জড়পশ নামক একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ। প্রতিদ্বন্দ্বী খলিফা আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের শাসনাধীন মক্কার কাবা গৃহের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আব্দুল মালিক ৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে মহানবি (স)-এর মিরাজের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র পাথরের ওপর অক্টাকোণাকৃতির এ স্থাপত্য কীর্তিটি নির্মাণ করে তাঁর অনুসারীদের মক্কার পরিবর্তে এখানে হজ করার নির্দেশ দেন।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, স্থাপত্য ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতার মাধমে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক শুধু একজন সুশাসক হিসেবে নয়, একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব হিসেবেও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
৮. সমির সাথে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হলেও দেশ শাসন করতে গিয়ে তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ত্যাগ করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উদ্ভব করেন। তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে তার উত্তরাধিকারী মনোনিত করে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করেন। এতে তিনি ধর্মের সাধারণতান্ত্রিক আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করেন।
ক. আল ওয়ালিদ কাকে দামেস্কের পূর্বাস্বলের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন?
খ. অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেনের পরিণতি ব্যাখ্যা কর।
গ. সমির সাহেবের সাথে মিল রয়েছে এমন একজন শাসকের খিলাফত লাভের উপায় পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমির সাহেবের মতো এক ব্যক্তিই পাঠ্যবইতে মুসলিম জাহানের অধিপতি হতে চেয়েছিলেন বিশ্লেষণ কর।
❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আল ওয়ালিদ দামেস্কের পূর্বাঞ্চলের শাসনকর্তা হিসেবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে নিযুক্ত করেন।
খ. অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেন অত্যন্ত করুণ পরিণতি বরণ করেন।
৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মহররম ইমাম হোসেনের সাথে ইয়াজিদ বাহিনীর যুদ্ধ বাঁধে। এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। কেননা হোসেনের বাহিনীতে যুদ্ধক্ষম ব্যক্তি ছিল মাত্র ৭২ জন। অপরপক্ষে ইয়াজিদের বাহিনীতে ছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি। যুদ্ধে হোসেনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাশিম ও শিশুপুত্র আসগর শহিদ হলে ইমাম হোসেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার প্রচন্ড আক্রমণে ইয়াজিদ বাহিনী ভীত হয়ে পালাতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ একটি তীর তার বক্ষে বিদীর্ণ হলে তিনি ধরাশায়ী হন। অবশেষে নিষ্ঠুর সীমার অর্ধমৃত হোসেনের মস্তক ছিন্ন করেন।
গ. উদ্দীপকের সমির সাহেবের সাথে মিল রয়েছে পাঠ্যপুস্তকের এমন একজন শাসক হলেন মুয়াবিয়া।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সমির সাহেব গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিহার করে রাজতান্ত্রিকভাবে দেশের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। তার এ কাজে মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন রয়েছে। কারণ তিনিও খুলাফায়ে রাশেদিনের গণতান্ত্রিক আদর্শ বর্জন করে জ্যেষ্ঠ পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উদ্ভব করেছিলেন। সম্পূর্ণ শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে তিনি খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
হযরত ওমরের (রা) খিলাফতে মুয়াবিয়া সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং কর্মদক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সাংগঠনিক ক্ষমতার বলে তিনি সমগ্র সিরিয়ায় সুশাসন কায়েম করেন। নির্ভীকতা ও সামরিক দক্ষতার সাথে মুয়াবিয়া সিরিয়াকে বাইলান্টাইন আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন। খলিফা ওসমানের (রা) সময় তিনিই সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র আরব নৌবহর গঠন করে সাইপ্রাস ও রোডস্ দখল করেন। ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওসমান (রা) এর হত্যাকে কেন্দ্র করে খলিফা হযরত আলি (রা) এবং মুয়াবিয়ার মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। ফলে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক সিফফিন প্রান্তরে উভয়ের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অবশেষে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আলি (রা)-এর নৃশংস হত্যা ও তার জ্যেষ্ঠপুত্র ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যার পর মুয়াবিয়া খিলাফত লাভ করেন।
ঘ. সমির সাহেবের মতো উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া মুসলিম জাহানের একচ্ছত্র অধিপতি হতে চেয়েছিলেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে ইমাম হাসানকে খিলাফতের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে শঠতার মাধ্যমে মুয়াবিয়া সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং দামেস্কে উমাইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি তা কঠোর হস্তে দমন করেন। এরপর তিনি রাজ্যবিস্তারে মন দেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রাজ্য বিস্তারের পূর্বশর্ত হলো অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান। এ কারণে তিনি সীমান্তে উপজাতিদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করেন। তার গঠিত সমর বাহিনী দ্বারা তিনি পূর্বদিকে সমরখন্দ ও বুখারা এবং দক্ষিণে সিন্ধুনদ পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিসত্মৃত করেন। তিনিই সর্বপ্রথম বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের শক্তিশালী নৌবহরের মোকাবিলা করার জন্য নিজে একটি নৌবহর গঠন করেন। তার নৌ ও স্থ বাহিনীর যুগপৎ আক্রমণে বহুদিন পর্যন্ত কনস্টান্টিনোপল অবরুদ্ধ ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত এ অভিযান ব্যর্থ হয় তথাপি তাদের এ অভিযানের ফলে ভূমধ্যসাগরে মুসলিম নৌবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে পারস্য ও বাইজান্টাইন রীতি ভিত্তিক সমাজ কাঠামো রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন।
উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া মুসলিম জাহানের একচ্ছত্র অধিপতি হতে চেয়েছিলেন।
৯. সুলতান ইলতুৎমিশ ছিলেন ভারতবর্ষে তুর্কি সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ভারতে একটি সুসংগঠিত কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ জন্য তিনি দক্ষতার সাথে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। তিনি প্রচলিত মুদ্রামানেরও সংস্কার করেন।
ক. উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয়?
খ. খলিফা আব্দুল মালিক কীভাবে শাসনব্যবস্থা আরবীয়করণ করেন?
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত সুলতানের সাথে কোন উমাইয়া খলিফার সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসন সংস্কার এর আলোকে খলিফা আব্দুল মালিকের শাসন সংস্কার ব্যাখ্যা কর।
❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. খলিফা আব্দুল মালিককে উমাইয়া খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
খ. শাসনব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে আরবি ভাষা ব্যবহার করে খলিফা আব্দুল মালিক শাসনব্যবস্থা আরবীয়করণ করেন। আব্দুল মালিক বিজাতীয় প্রভাব থেকে সাম্রাজ্যকে মুক্ত করা এবং সাম্রাজ্যে একই ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই আরব জাতীয়তাবাদ ও আরবি ভাষার মর্যাদা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার মানসে এবং বিজাতীয় আঞ্চলিক ভাষার বৈচিত্র্য ও জটিলতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অভিপ্রায়ে সাম্রাজ্যে আরবিকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদান করেন। প্রশাসনিক সকল কাজে তিনি আরবি ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এছাড়া আরবি বর্ণমালা লিখন, পঠন ও উচ্চারণ পদ্ধতির উন্নতি বিধান করেন এবং রাজ্যে প্রচলিত মুদ্রার পরিবর্তে আরবি মুদ্রা প্রচলন করেন। এভাবে আব্দুল মালিক তার শাসনব্যবস্থাকে আরবীয়করণ করেন।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুলতানের সাথে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। আব্দুল মালিক ছিলেন প্রথম মারওয়ানের পুত্র। মুয়াবিয়া ও মারওয়ানের সংক্ষিপ্ত শাসনকালের পর ৬৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তার সিংহাসন আরোহণের পর উমাইয়া বংশের শাসন সুদৃঢ় হয়। তিনি তার সামরিক দক্ষতাবলে রাজ্যে সংঘটিত বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন এবং রাজ্যের অনেক বিস্তার ঘটান। তাছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। তার এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকে চিত্রিত হয়েছে।
উদ্দীপকের সুলতান ইলতুৎমিশের মতো আব্দুল মালিক একজন দক্ষ শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি ভারতবর্ষে তুর্কি সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। দিল্লি সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি অনেক বিরোধী শক্তিকে দমন করেন। এছাড়া আব্দুল মালিকের মতো দক্ষ সামরিক শক্তিবলে তিনি রাজ্যের অনেক বিস্তার ঘটান। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। আর এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকে চিত্রিত হয়েছে। তিনি নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতার মাধ্যমে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করে ভারতবর্ষের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি আরবিকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান করেন এবং আরবি বর্ণমালা লিখন, পঠন ও উচ্চারণ পদ্ধতির অনেক সংস্কার সাধন করেন। তিনি প্রশাসনের সকল কাজে আরবি ভাষা ব্যবহার করেন। এতে আরবে আরবীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় এবং ইসলামি সাম্রাজ্যের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়। সুতরাং বলা যায়, সুলতান ইলতুৎমিশ উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক শাসন সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন।
আব্দুল মালিকের শাসন সংস্কারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রাষ্ট্রকে আরবীয়করণ। বিজাতীয় প্রভাব থেকে সাম্রাজ্যকে মুক্ত করা এবং সাম্রাজ্যে একই ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করার জন্য তিনি আরবিকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান করেন। তৎকালীন প্রচলিত মুদ্রার পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে আদ দিনার, আন-নিসঙ্কু, আস-সুদস, দিরহাম এবং ফানুস বা তাম্র মুদ্রার প্রবর্তন করেন। এসব মুদ্রায় কালিমা, তাসমিয়া, কুরআনের আয়াত ও মুদ্রাঙ্কনের তারিখ উৎকীর্ণ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া জাতীয় ঢাকশালে বিশেষ পদ্ধতিসহ ত্রুটিমুক্ত মুদ্রাঙ্কন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় মুদ্রা জাল করার প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পায়।
উদ্দীপকের সুলতান ইলতুৎমিশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শাসনসংস্কারের দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়। তিনি ভারতে একটি সুগঠিত কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ লক্ষ্যে তিনি দক্ষতার সাথে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন।। তিনি প্রচলিত মুদ্রামানেরও সংস্কার করেন। ভারতে তিনিই সর্বপ্রথম খাটি আরবি রৌপ্যমুদ্রার প্রচলন করেন। তার এসব সংস্কার সাধনের ফলে ভারতবর্ষে তুর্কি সাম্রাজ্যের উন্নয়ন সাধিত হয়। ঠিক একইভাবে খলিফা আব্দুল মালিকও বহু প্রভূত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন। তার মুদ্রা সংস্কারের ফলে ইসলামি সাম্রাজ্যে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়। এছাড়া তিনি আরবি বর্ণমালার লিখন, পঠন ও উচ্চারণ পদ্ধতির উন্নতি বিধান করেন। ফলে শতাব্দীকাল পর হলেও আরবি ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। ডাক ও গোয়েন্দা বিভাগের উন্নতিকল্পে তিনি যোগাযোগকারী সড়কের স্থানে স্থানে বদলি ঘোড়ার ব্যবস্থা করেন। কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য তিনি ধর্মান্তরিত মুসলিমদের শহর থেকে গ্রামে ফিরতে বাধ্য করেন এবং রাজ্যের আয় বাড়াতে তাদের ওপর খাজনা ও জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন করেন। এভাবে আব্দুল মালিক তার শাসনব্যবস্থায় সংস্কার সাধন করেন।
উপযুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, আব্দুল মালিক ও সুলতান ইলতুৎমিশ নিজ নিজ সাম্রাজ্যে প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের উন্নয়ন বিধান করে যথেষ্ট মৌলিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।
১০. 'ঙ' শাসকের রাজত্বকালের অন্যতম সংস্কার ছিল ডাক বিভাগের সংস্কার। তিনি ঘোড়ার গাড়ীতে করে সাম্রাজ্যের এক স্থান হতে অন্য স্থানে ডাক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ডাক বিভাগ গোয়েন্দা বিভাগের কাজ সম্পন্ন করত। সমগ্র সাম্রাজ্য হতে সংবাদ প্রধান ডাক কর্মকর্তার নিকট জমা হতো এবং তিনি তা 'ঙ' শাসকের কাছে পেশ করতেন। ফলে কোনো স্থানে গোলযোগ দেখা দিলে বা গোলযোগের সম্ভাবনা থাকলে সত্ত্বর তার বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হতো।
ক. কোন উমাইয়া শাসককে রাজেন্দ্র বলা হয়?
খ. ইসলামের পঞ্চম খলিফা বলা হয় কাকে এবং কেন?
গ. কোন উমাইয়া শাসকের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে উদ্দীপকের 'ঙ' শাসক ডাক বিভাগের সংস্কার করেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত শাসকের রাজত্বকাল উমাইয়া বংশের সবচেয়ে গৌরবময় যুগ- বিশ্লেষণ কর।
❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিককে রাজেন্দ্র বলা হয়।
খ. খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ উমাইয়া শাসনামলে খুলাফায়ে রাশেদিনের শাসনব্যবস্থা চালু করায় তাকে ইসলামের পঞ্চম ধার্মিক খলিফা বলা হয়। উমাইয়া খলিফাগণের শাসনব্যবস্থা ছিল ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ অপরাপর উমাইয়া খলিফাদের ষড়যন্ত্র বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতা পরিহার করে প্রজাদের কল্যাণে শাসন পরিচালনা করেন। এমনকি নিজের স্ত্রীর গহনাদিও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেন। ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক শাসক হিসেবে তিনি ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। এসব কারণে তাকে পঞ্চম ধার্মিক খলিফা বলা হয়।
গ. উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে উদ্দীপকের 'ঙ' শাসক ডাক বিভাগের সংস্কার করেন। উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ক্ষমতায় আরোহণের পর শাসন সংস্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি ডাক বিভাগের সংস্কার করে এ বিভাগের উনণয়ন সাধন করেন। যেটি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্দীপকের 'ঙ' শাসক ডাক বিভাগের সংস্কার করেন।
উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের শাসনামলে ডাক বিভাগের ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়। তিনি পারসিকদের পদ্ধতি অনুসরণ করে ডাক চালান প্রথার প্রচলন করেন। সাম্রাজ্যের বড় বড় রাস্তার পাশে তিনি ডাকচৌকি নির্মাণ করেন। ডাক বিভাগের কাজ ছিল- ১. সরকারি চিঠিপত্র ও আদেশ নিষেধ আদান-প্রদান; ২. সরকারি কর্মচারীদের ডাকগাড়ির মাধ্যমে স্থানান্তর; ৩. প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত সৈন্য ও রসদ দ্রব্যাদি সরবরাহ এবং ৪. গোয়েন্দা বিভাগের কাজ সম্পাদন। উল্লিখিত কাজের জন্য ডাক বিভাগকে খলিফার কান এবং চোখ বলা হতো। উদ্দীপকের 'ঙ' শাসকও ডাক বিভাগের সংস্কার করেন। এই বিভাগের মাধ্যমে তিনি সাম্রাজ্যে গোলাযোগের সম্ভাবনা থাকলে সত্ত্বর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। আর এভাবেই তিনি আব্দুল মালিকের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ডাক বিভাগের সংস্কার করেন।
ঘ. উক্ত শাসক তথা আব্দুল মালিকের রাজত্বকাল উমাইয়া বংশের সবচেয়ে গৌরবময় যুগ- উক্তিটি যথার্থ।
উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ক্ষমতা লাভ করেই বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন। এরপর তিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোযোগ দেন। তিনি মধ্য এশিয়ায় এবং বাইজান্টাইনে উমাইয়া সাম্রাজ্যের সীমা বৃদ্ধি করেন। সর্বোপরি শাসন সংস্কার করে উমাইয়া বংশের গৌরবময় যুগের সূচনা করেন।
উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক সিংহাসনে আরোহণের পর খিলাফত সুদৃঢ় ও সংহত করার জন্য প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। খুলাফায়ে রাশেদিনের সময় রাষ্ট্রের কাজকর্মে এবং দলিলপত্র সংরক্ষণে স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করা হতো। সাম্রাজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এতে নানা কাজে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। তাই আব্দুল মালিক আরবিকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা প্রদান করেন। আরবি ভাষা লিখন ও পঠনের সুবিধার্থে আব্দুল মালিক হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সহযোগিতায় আরবি বর্ণে সর্বপ্রথম নোকতা ও হরকতের প্রচলন করেন। ইতোপূর্বে মুসলিম সাম্রাজ্যে রোমান, পারসিক, হিমারীয় প্রভৃতি মুদ্রা প্রচলিত ছিল। একক মুদ্রা সাম্রাজ্যে না থাকার জন্য আর্থিক লেনদেন এবং ব্যবসা বাণিজ্যের অসুবিধা হতো। এ অসুবিধাসহ দূর করার জন্য আব্দুল মালিক দামেস্কে একটি জাতীয় টাকশাল নির্মাণ করেন। খলিফা আব্দুল মালিক পারসিকদের পদ্ধতি অনুযায়ী প্রশাসনে ডাক বিভাগের প্রচলন করেন। রাস্তায় রাস্তায় খবর আদান-প্রদান, সৈন্য ও রসদ সরবরাহের জন্য চৌকি স্থাপন করেন। খলিফার আদেশ, নিষেধ, দলিল-দস্তাবেজ, চুক্তিপত্র, নথিপত্র সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনে রেজিস্ট্রি বিভাগের সংস্কার করেন। খলিফা আব্দুল মালিক বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার সাধন করে সাম্রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, আব্দুল মালিকের রাজত্বকাল উমাইয়া বংশর সবচেয়ে গৌরবময় যুগ।
0 Comments:
Post a Comment