HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬

HSC Islamic History and Culture 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

অধ্যায়ভিত্তিক প্রাথমিক আলোচনাঃ

স্পেনে উমাইয়া শাসন
মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইসলাম প্রচারের আদর্শকে ধারণ করে পরবর্তী খলিফাগণ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেছেন। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা)-এর শাসনামলে ইসলামি সাম্রাজ্য বিস্তারের শুভ সূচনা ঘটে এবং উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের রাজত্বকালে (৭০৫-৭১৫) তা চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে।

আল ওয়ালিদের সেনাধ্যক্ষ কুতায়বা বিন মুসলিম এশিয়া মাইনর এবং সেনাপতি মুহাম্মদ কাসিম সিন্ধু বিজয় করেন। একই সময়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে ইসলামের ঝান্ডা উত্তোলন করেন মুসা বিন নুসায়ের। তিনি সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদের সাথে একত্র হয়ে ইউরোপের দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশ স্পেনকে মুসলমানদের পতাকাতলে সমাসীন করেন।

আইবেরীয় উপদ্বীপ নামে পরিচিত এ অঞ্চলটিতে মুসলমানগণ ৭৮০ বছর (৭১১-১৪৯২ খ্রি.) ধরে শাসন করেন। প্রথমে উমাইয়া ও পরে আব্বাসি প্রদেশ এবং আরো পরে উমাইয়া আমিরাত ও খিলাফত প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে স্পেনে মুসলমানদের এ শাসনব্যবস্থা চলে। আলোচ্য অধ্যায়ে স্পেনে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান, শাসনব্যবস্থা, পতন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

মুসলমানদের স্পেন বিজয়
স্পেনের পরিচিতি ও ভৌগোলিক অবস্থান : অক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ স্পেন। এটি আইবেরীয় উপদ্বীপে অবস্থিত। স্পেনের দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্ত ভূমধ্যসাগর। পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে পর্তুগাল এবং আটলান্টিক মহাসাগর। আর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে পিরেনিজ পর্বতমালা এবং বিশ্বে উপসাগর। মুসলিম শাসনামলে দেশটি আন্দালোসিয়া নামে পরিচিত ছিল। এর বর্তমান সাংবিধানিক নাম Kingdom of Spain. মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে স্পেনের রাজধানী ছিল টলেডো, মুসলিম শাসনামলে কর্ডোতা এবং বর্তমানে এর রাজধানী মাদ্রিদ।

মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে স্পেনের অবস্থা
উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের সময় আরব মুসলমানগণ স্পেন জয় করে। স্পেন বিজয়ী সেনাপতির নাম তারিক বিন জিয়াদ। তিনি ওয়ালিদের উত্তর আফ্রিকার শাসনকর্তা মুসাবিন নুসায়েরের নির্দেশে স্পেন আক্রমণ ও জয় করেন। ঐতিহাসিকগণ আরব মুসলমানদের স্পেন বিজয়কে একটি সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি একে 'মধ্যযুগীয় সমর ইতিহাসে এক অপূর্বস্থান দখলকারী ঘটনা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মুসলমানদের স্পেন বিজয়ের পিছনে নানা কারণ ছিল। তবে এ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে স্পেনের তৎকালীন রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

রাজনৈতিক অবস্থা: মুসলমানদের আগমনের পূর্বে স্পেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল এবং শাসনকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলহ বিদ্যমান ছিল। সে সময়ে স্পেনের রাজা ছিলেন গথিক বংশের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী রডারিক। উচ্চাভিলাষী ও অত্যাচারী রডারিক ন্যায়সংগত রাজা উইটিজাকে পদচ্যুত ও হত্যা করে বলপূর্বক সিংহাসন অধিকার করেন। সাম্রাজ্যের অধীন রাষ্ট্রগুলো নামেমাত্র তার বশ্যতা স্বীকার করে কর প্রদান করত। এসব অঞ্চলের শাসনকর্তারা পরস্পর দ্বন্দ্ব-কলহে লিখ ছিল।

সামাজিক অবস্থা: সে সময়ে স্পেনের সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত নৈরাশ্যজনক ছিল। সমাজে তিন শ্রেণির লোক বসবাস করত। যথা-
১. সুবিধাভোগী অভিজাত সম্প্রদায়। এ শ্রেণির মধ্যে ছিলেন- রাজা, অমাত্যবর্গ, যাজক ও সামন্ত রাজাগণ 
২. নিম্ন শ্রেণিভুক্ত কৃষক এবং 
৩. ক্রীতদাস।

অভিজাত সম্প্রদায় আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করত। মধ্য শ্রেণির লোকদের সকল প্রকার কর প্রদান করতে হতো। ফলে তারা ধ্বংস ও দৈন্যের কবলে পড়ত। কৃষকদের নিজস্ব কোনো জমি ছিল না। ভূমিদাস ও ব্যক্তিগত দাস হিসেবে পরিচিত ক্রীতদাসদের মানুষ বলে মনে করা হতো না। ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, 'ভূমিদাস হোক বা ক্রীতদাস হোক, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাদের স্বাধীনতা লাভ বা মুক্ত সূর্যালোক ভোগ করার কোনো অধিকার ছিল না।

অর্থনৈতিক অবস্থা: স্পেনের অর্থনৈতিক অবস্থাও হতাশাব্যঞ্জক ছিল। রাষ্ট্রীয় অর্থের যথেষ্ট অপব্যবহার বৈষম্যমূলক সম্পদ বণ্টননীতি এবং নিবর্তনমূলক রাজস্ব নির্ধারণ ইত্যাদি নানা কারণে অভিজাত সম্প্রদায় ছাড়া মধ্য ও নিম্ন শ্রেণির লোকেরা অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করত। তাদের ওপর অতিরিক্ত কর ধার্য করা হতো। শিল্পের ওপরও অতিরিক্ত শুল্ক ধার্যের কারণে ব্যবসা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কৃষি ব্যবস্থাও দুর্দশার মুখে পড়ে। এক কথায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।

ধর্মীয় অবস্থা: দেশে সে সময় ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল না। খ্রিষ্টান ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণযোগ্য মনে করা হতো না। ইহুদিদেরকে হয় খ্রিষ্টান না হয় সেবাদাস হয়ে জীবনযাপন করতে হতো। এসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএম ইমাম উদ্দিনের ভাষ্যমতে, ৬১২ থেকে ৬২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে স্পেনে ৯০ হাজার ইহুদিকে বলপূর্বক খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছিল।

স্পেন বিজয়ের কারণ
আরব মুসলমানদের স্পেন বিজয়ের পিছনে নানা কারণ ছিল যেমন:
১. রাজা রডারিকের কুশাসন ও জনদুর্গতি: এ সময় স্পেনের রাজা ছিলেন গথিক রাজ বংশীয় রডারিক। তিনি ছিলেন প্রজা নিপীড়ক ও দুরাচারী শাসক। তার নিবর্তনমূলক কুশাসনে অতিষ্ঠ ও চরম দৈন্যাবস্থায় নিপতিত শাসিত শ্রেণির সার্ফ, ক্রীতদাস এবং ইহুদি সম্প্রদায় মুক্তির স্বাদ আস্বাদনের জন্য অধীরভাবে প্রহর গুনছিল। এ সময় জিব্রালটারের দক্ষিণপাশের আরব মুসলিম শাসনাধীনে উত্তর আফ্রিকায় সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংবাদ তাদের কানে এসে পৌছেছিল। ঐতিহাসিকদের তথ্যানুযায়ী স্পেনের নিপীড়িত জনতা তখন তাদের মুক্তির জন্য মুসা বিন নুসায়েরের দ্বারস্থ হলে তিনি তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যান।

২. কাউন্ট জুলিয়ানের আমন্ত্রণ: আরব মুসলিম শাসিত আফ্রিকার অদূরবর্তী স্পেনিশ দ্বীপ সিউটা। এর শাসনকর্তা ছিলেন কাউন্ট জুলিয়ান। তিনি ছিলেন রাজা রডারিক কর্তৃক বলপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত স্পেনের রাজা উইটিজার জামাতা। শ্বশুর উইটিজাকে সিংহাসনচ্যুত করে ক্ষমতা দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজা রডারিকের সাথে কাউন্ট জুলিয়ানের বৈরী সম্পর্ক ছিল।

৩. অস্থিথিশীল পরিবেশ: তদুপরি দেশাচার অনুযায়ী রাজকীয় আচার-আচরণ শেখার জন্য স্পেনের রাজদরবারে প্রেরিত জুলিয়ানের কন্যা ফ্লোরিন্ডাকে রডারিক শস্নীলতাহানি ঘটালে উভয়ের মধ্যকার শত্রুতা চরম আকার ধারণ করে। এমতাবস্থায় শ্বশুর হত্যা ও কন্যার অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণার্থে কাউন্ট জুলিয়ান খলিফা আল ওয়ালিদের সেনাপতি ও পশ্চিমাঞ্চলীয় ইফরিকিয়ার শাসনকর্তা মুসা বিন নুসায়েরকে স্পেন আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

৪. উমাইয়াদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি: খলিফা আল ওয়ালিদের শাসনামল ছিল উমাইয়া খিলাফতের সম্প্রসারণের যুগ। এ সময় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ পূর্বাঞ্চলে এবং কুতায়বা বিন মুসলিম মধ্য এশিয়ায় উমাইয়া অধিকার সম্প্রসারণ করে খ্যাতি লাভ করেন। আফ্রিকার উমাইয়া গভর্নর মুসা বিন নুসায়েরও স্পেন জয় করে নিজের খ্যাতি বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন।

স্পেন আক্রমণের ঘটনা
কাউন্ট জুলিয়ানের আহবানে সাড়া দিয়ে উত্তর আফ্রিকার উমাইয়া গভর্নর মুসা খলিফা আল ওয়ালিদের অনুমতিক্রমে ৭১০ খ্রিস্টাব্দে তারিক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে ৪০০ সৈন্য ও ১০০ অশ্বসহ চারখানা রণতরী দিয়ে স্পেনে একটি পর্যবেক্ষক দল পাঠান।

পর্যবেক্ষক দলটির বিবরণ অনুকূলে হওয়ায় মুসা ৭,০০০ সৈন্যসহ সেনানায়ক তারিক বিন জিয়াদকে ৭১১ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনে প্রেরণ করেন। তারিক জিব্রালটার প্রণালী (ভূমধ্যসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী) পাড়ি দিয়ে স্পেনের পার্বত্য এলাকায় অবতরণ করেন।

তারিকের অবতরণ করা পর্বত এখনো জাবাল আত-তারিক নামে সুপরিচিত। রাজা রডারিকের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশপাল থিওডমিরকে পরাজিত করে তারিক আরও সম্মুখভাগে অগ্রসর হন এবং রাজধানী টলেডোর দিকে এগিয়ে চলেন। রাজা রডারিক মুসলিম বাহিনী কর্তৃক আক্রমণের সংবাদ পাওয়া মাত্র সর্বমোট ১ লাখ ২০ হাজার সৈন্যসহ গোয়াডিলেট (গোয়াদাল) কুইভার নদীর তীরে মেডিনা প্রিডোনিয়া রণক্ষেত্রে মুসলিম বাহিনীর সম্মুখীন হন।

বহুসংখ্যক সৈন্য নিয়ে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধের পর ৭১১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে রডারিক পরাজিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় গোয়াডিলেট নদীর পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। এরপর মুসলিম বাহিনী মালাগা, গ্রানাডা, কর্ডোভা এবং টলেডো দখল করেন। তারিকের এ গৌরবময় বিজয়ে মুসা ঈর্ষান্বিত হয়ে তিনি নতুন অভিযান পরিচালনা করে সেফিল, মেরিডা, কারমোনা প্রভৃতি শহর জয় করেন। এভাবে ৭১২ হতে ৭১৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খ্রিষ্টান অধ্যুষিত স্পেন মুসলিম সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। উত্তরে পিরেনিজ পর্বত থেকে দক্ষিণে জিব্রালটার প্রণালী পর্যন্ত সমগ্র স্পেন ইসলামি শাসনের পতাকাতলে আসে।

স্পেন বিজয়ের ফলাফল
খলিফা ওয়ালিদের স্পেন বিজয় ইসলামের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। স্পেনের রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের ওপর এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

১. রাজনৈতিক: স্পেন বিজয়ের ফলে ইউরোপে ইসলাম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেভিলকে রাজধানী করে মুসলমান শাসকগণ স্পেনে একটি সুনিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ইতোপূর্বে স্পেনের রাজনীতিতে রাজা, ধর্মযাজক এবং সামন্ত অভিজাত শ্রেণির যে প্রভাব বলয় তৈরি হয়েছিল নতুন প্রশাসনের আওতায় তার বিলুপ্তি ঘটে। শোষিত নিপীড়িত সাধারণ জনতা মুক্তির আস্বাদন লাভ করে।

২. সামাজিক: আরবদের স্পেন বিজয় সেখানকার সামাজিক জীবনে এক বিপ্লব ঘটায়। সমাজজীবনে অভিজাত ও যাজকশ্রেণির প্রাধান্যের অবসান ঘটে। সমাজজীবন থেকে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের অবসান হয়। ক্রীতদাসদের মুক্তি দিয়ে তাদের মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। ফলে অনেকেই স্বাধীন পেশা ও নাগরিক জীবনে ফিরে যায়। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ফলে সুবিধাভোগী অভিজাত শ্রেণির দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটে। সমাজজীবনে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের জয় নিশ্চিত হয়।

৩. অর্থনৈতিক: আরব বিজয়ের প্রভাবে স্পেনের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। মুসলিম শাসকগণ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের প্রসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কৃষির উন্নতি বিধান করা হয়। ভূমিতে ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত হওয়ায় কৃষক সমাজ কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগী হয়। নিম্নশ্রেণির লোকদের করভার লাঘব করা হয়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে স্পেন ক্রমশ অর্থনৈতিক পথে অগ্রসর হয়।

৪. ধর্মীয়: আরব বিজয়ের ফলে স্পেনের ধর্মীয় ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের সুবাতাস প্রবাহিত হয়। বলপূর্বক ধর্মান্তকরণের কু-রীতির অবসান ঘটে। ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমানরা স্বাধীনভাবে স্ব স্ব ধর্ম ও আচার অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ লাভ করে। জান-মালের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কেবল জিজিয়া নামক এক প্রকার কর আদায় করা হয়। মুসলিম শাসমিলে নতুন গির্জা নির্মাণে কোনো বাধা প্রদান করা হয়নি এবং উপাসনার জন্য গির্জায় ঘণ্টা বাজানোতেও কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। সর্বত্র ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বিরাজ করে। নবতর পরিস্থিতিতে অনেকেই ইসলামের সুমহান আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে।

৫. সাংস্কৃতিক: উমাইয়াদের স্পেন বিজয়ের সাংস্কৃতিক ফলাফল ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিম শাসকদের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় স্পেন সমকালীন ইউরোপের উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়। বলা হয় যে, মুসলিম স্পেন ইউরোপকে অজ্ঞতার অন্ধকার হতে আলোর সন্ধান দেয়।

ফলে ইউরোপে নবজাগরণের সূচনা হয়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে যে রেনেসাঁ বা জাগরণ ঘটে তার মূলে মুসলিম স্পেনের ভূমিকা রয়েছে। মুসলিম স্পেনের রাজধানী কর্ডোভা ইউরোপের বাতিঘর নামে খ্যাতি লাভ করেছিল। ঐতিহাসিক স্টেনলি বলেন, ‘‘মুরগণ (আরব মুসলমান) প্রতিষ্ঠিত কর্ডোভা রাজ্য মধ্যযুগের এক পরম বিস্ময়। সমগ্র ইউরোপ যখন বর্বর, অজ্ঞতা ও দ্বন্দ্ব-কলহে লিপ্ত, এ রাজ্য তখন পাশ্চত্যের সম্মুখে উজ্জ্বল আলো বিকিরণকারী জ্ঞান ও সভ্যতার মশাল তুলে ধরেছিল।"

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইসলামি বিশ্বের নেপোলিয়ন' নামে খ্যাত খলিফা আল ওয়ালিদের রাজত্বকালে আরবদের স্পেন বিজয় ইতিহাসের এক চমকপ্রদ ঘটনা। সৈয়দ আমীর আলীর ভাষায়, ‘‘স্পেনে মুসলিম শাসন থেকে আধুনিক যুগের সরকারদের শিক্ষা গ্রহণ করার অনেক বিষয় আছে।’’ (Many modern governments might well take a lesson from the Moslem administration in Spain.)

দীর্ঘ প্রায় আটশ বছর পর্যন্ত মুসলমানরা গৌরবের সাথে স্পেন শাসন করে।’’ ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনে মুসলিম শাসনের চূড়ান্ত অবসান ঘটে।

মুসলমানদের সহজ বিজয়ের কারণ: আরব মুসলমানদের সহজে স্পেন বিজয়ের পেছনে নানা কারণ ছিল। যেমন প্রথমত: স্পেনের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, সামাজিক দুরবস্থা এবং ধর্মীয় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আরবদের বিজয়কে সহজ করেছিল। দ্বিতীয়ত: রাজা রডারিকের প্রতি অসন্তুষ্ট টিউটর গভর্ণর কাউন্ট জুলিয়ানের সহযোগিতা 

আরবদের সহজ বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিল। তৃতীয়ত: স্পেনিশ বাহিনীর দুর্বলতা এবং রাজার প্রতি তাদের আনুগত্যের অভাব রডারিকের পরাজয় এবং আরবদের সহজ বিজয়ের অন্যতম কারণ। সর্বোপরি মুসা বিন নুসায়ের ও তারিক বিন জিয়াদের যোগ্য নেতৃত্ব, মুসলমানদের বিজয় অর্জনের জেহাদি মনোভাব এবং তাদের উন্নত সমরাস্ত্র এ বিজয়কে সহজ করেছিল।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
১। স্পেন কোন মহাদেশে অবস্থিত?
উত্তর : ইউরোপ।

২। স্পেন বিজেতা প্রথম মুসলিম সেনাপতির নাম কী?
উত্তর : তারিক বিন জিয়াদ।

৩। মুসলমানদের স্পেন বিজয়কালে এর শাসক কে ছিলেন?
উত্তর : রডারিক।

৪। কে স্পেনের উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর : আব্দুর রহমান আদ দাখিল।

৫। আব্দুর রহমানকে আদ দাখিল বলা হয় কেন?
উত্তর : তিনি স্পেনে মুসলিম শাসনের সূচনা করেন বলে তাঁকে এ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

৬। কাকে কুরাইশদের বাজপাখি বলা হয়?
উত্তর : আব্দুর রহমান আদ দাখিল।

৭। স্পেনের দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের আমলে উল্লেখযোগ্য ঘটনা কী?
উত্তর : ধর্মান্ধ আন্দোলন।

৯। স্পেনের উমাইয়া খিলাফতের শ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন?
উত্তর : তৃতীয় আব্দুর রহমান।

১০। ইউরোপের বাতিঘর বলা হয় কোন নগরীকে?
উত্তর: কর্ডোভা।

১১। আল জোহরা প্রাসাদ কী?
উত্তর: তৃতীয় আব্দুর রহমানের পত্নীর নামানুসারে চার শ কক্ষবিশিষ্ট কর্ডোভা নগরীতে নির্মিত একটি প্রাসাদ।

১২। আল হামরা কী?
উত্তর : গ্রানাডা নগরীতে নির্মিত একটি রাজপ্রাসাদ।

১৩। ওমর বিন হাফসুন কে?
উত্তর: স্পেনের জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়ক।

১৪। স্বাধীন উমাইয়া রাজবংশের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর: কর্ডোভা।

১৫। স্পেনের কোন মুসলিম শাসকের আমলকে স্বর্ণযুগ বলা হয়?
উত্তর: তৃতীয় আব্দুর রহমান।

১৬। স্পেনে মুসলিম শাসন কে উৎখাত করেন?
উত্তর: রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা।

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে যুবরাজ আলাল রাজ্যহারা হন। বাস্তুচ্যুত যুবরাজ প্রায় অর্ধযুগ ধরে আশ্রয়ের সন্ধানে পথে-প্রান্তরে ঘুরতে থাকেন। অবশেষে বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এ যুবরাজ দূরবর্তী অঞ্চলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় লাভ করেন। অতঃপর রাজনৈতিক গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তিনি পার্শ্ববর্তী রাজ্যে আক্রমণ চালিয়ে তা দখল করে নেন এবং স্বীয় বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
ক. স্পেন কোন মহাদেশে অবস্থিত?
খ. প্রথম আব্দুর রহমানকে 'কুরাইশদের বাজপাখি' বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিহিংসার স্বরূপ প্রথম আব্দুর রহমানের ক্ষেত্রে কীরূপ ছিল? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের যুবরাজ আলালের রাজ্য প্রতিষ্ঠার সাথে প্রথম আব্দুর রহমানের আমিরাত প্রতিষ্ঠার একটি তুলনামূলক বিবরণ দাও।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. স্পেন ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত।

খ. প্রথম আব্দুর রহমানের অনন্য কৃতিত্ব ও গুণাগুণের জন্য ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসি খলিফা আল মনসুর তাকে 'কুরাইশদের বাজপাখি'। বলে অভিহিত করেন।
প্রথম আব্দুর রহমান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। কিন্তু বিদ্রোহীদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার প্রদর্শনে তিনি কুণ্ঠাবোধ যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে একক শক্তি দিয়ে নির্মূল করতেন। আব্দুর রহমান আদ-দাখিলের বিরুদ্ধে খলিফা আল মনসুর একটি অভিযান প্রেরণ করেন। আদ-দাখিল আল মনসুরের সেনাপতিকে পরাজিত করে তার ছিন্ন মস্তক ও একটি চিঠিসহ আল মনসুরের দরবারে প্রেরণ করেন। তার এ অনন্য কৃতিত্ব ও গুণাগুণের জন্য ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসি খলিফা আল মনসুর তাকে 'কুরাইশদের বাজপাখি' বলে অভিহিত করেছেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিহিংসার স্বরূপ প্রথম আব্দুর রহমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ছিল। 
উমাইয়া ও আব্বাসি দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিনের। তাদের যে কোনো এক গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসলে অন্যদের চরমভাবে দমন-পীড়ন চালাত। উমাইয়াদের সরিয়ে আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় আসলে আব্দুর রহমান ভাগ্য বিপর্যয়ের শিকার হন। উমাইয়া খিলাফতের পতন ঘটিয়ে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের নৃশংসভাবে হত্যা শুরু করে। এই নৃশংসতার হাত থেকে কেবল উমাইয়া যুবরাজ আব্দুর রহমান রক্ষা পান। তিনি পালিয়ে গিয়ে উত্তর আফ্রিকার সিউটায় মামার আশ্রয় লাভ করেন এবং একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন করে স্পেনে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে যুবরাজ আলাল যেমন রাজ্য হারা হন, একইভাবে আব্বাসিদের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি ও নৃশংসতার শিকার হয়ে প্রথম আব্দুর রহমান নিজ বায়ুভূমি ত্যাগ করে পলায়ন করতে বাধ্য হন। দীর্ঘকাল পথে-প্রান্তরে ঘুরে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি নিজেকে সুসংগঠিত করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, যুবরাজ আলালের প্রতিহিংসার শিকার হওয়া এবং আব্বাসিদের ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতায় প্রথম আব্দুর রহমানের ভাগ্য বিপর্যয়ের ঘটনা একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত যুবরাজ আলালের মতো প্রথম আব্দুর রহমানও নিজ প্রচেষ্টা ও একাগ্রতায় আমিরাত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলেন। 
আব্দুর রহমান আদ-দাখিলের অন্যতম কৃতিত্ব হচ্ছে স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা। বর্বর ইয়েমেনি ও খ্রিস্টানদের দ্বারা বহুবার আক্রান্ত হলেও নিজ বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা এবং সামাজিক দক্ষতার বলে এ সকল বিপদ হতে তিনি মুসলিম রাজ্য স্পেনকে মুক্ত করতে সমর্থ হন। যদিও তিনি একসময় আব্বাসীয়দের অত্যাচারের শিকার হয়ে পালিয়ে স্পেনে এসেছিলেন। উদ্দীপকের আলালও এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে রাজ্যহারা হন এবং পুনরায় নিজেকে সুসংগঠিত করে রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন।
উদ্দীপকে আলাল রাজ্য দখলের ক্ষেত্রে যে ধরনের কৌশল অবলম্বন করেন ঠিক একই ধরনের কৌশলের মাধ্যমে আব্দুর রহমানও স্পেন দখল করেন। শুধু কৌশল বা শান্তি প্রস্তাব নয়, আব্দুর রহমান আদ দাখিলকে 'মাসারা' নামক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। এ যুদ্ধে স্পেনের শাসক ইউসুফ আল ফিহরি পরাজিত হলে আব্দুর রহমান স্পেন দখল করেন। স্পেনের তৎকালীন মুদারীয় শাসনকর্তা ইউসুফ আল ফিহরির কুশাসনে রাজনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। হিমারীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে আব্দুর রহমানকে স্পেন আক্রমণের আমন্ত্রণ জানায়। এ প্রেক্ষিতে তিনি ৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে যান। তিনি বার্বার, নির্যাতিত মুদারীয়দের ঐক্যবদ্ধ করেন। ফলে তার শক্তি বৃদ্ধি পায় ও যুদ্ধে জয়লাভ করে স্পেনে আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। আব্দুর রহমান যেমন রাজ্য দখল ও জনগণের মন জয় করেছিলেন, উদ্দীপকের আলালের ক্ষেত্রেও তা লক্ষণীয়।
উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের আলাল খলিফা আব্দুর রহমান আস-দাখিলের ন্যায় বিজিত অঞ্চলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে আমিরাত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলেন।

২. জনাব ফজলুল হক বাদশাহ আলীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ফলে এলাকার কৃষি কাজের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য তিনি সরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতই উন্নত হয় যে, ব্যবসায়ীরা গভীর রাতে টাকা-পয়সা নিয়ে এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে যাতায়াত করতে পারত। তিনি ভিক্ষাবৃত্তিও উচ্ছেদ করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য তিনি ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা করেন।
ক. আদ-দাখিল বলা হয় কাকে?
খ. তারিক বিন জিয়াদ ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উত্ত চেয়ারম্যানের কর্মকান্ড- তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন শাসকের কর্মকান্ড প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উত্ত শাসকের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা মূল্যায়ন করো। 

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. স্পেনে উমাইয়া আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম আব্দুর রহমানকে আদ-দাখিল বলা হয়।

খ. মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের রাজা রস্তারিককে পরাজিত করে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। স্পেনের সিউটা দ্বীপের শাসক কাউন্ট জুলিয়ানের আমন্ত্রণ পেয়ে খলিফা আল ওয়ালিদের অনুমতিক্রমে ৭১০ খ্রিষ্টাব্দে মুসা ইবনে নুসায়ের সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদকে স্পেনে পাঠান। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে তারিক রাজা রডারিকের সম্মুখীন হন। সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধের পর তারিক বিজয় লাভ করেন এবং রডারিক পরাজিত হয়ে নদীতে ডুবে প্রাণ হারান তারিকের সুদক্ষ রণকৌশল আর সাহসী মনোভাবে স্পেনে ইসলামের পতাকা উত্তোলিত হয়। এ কারণেই তিনি ইতিহাসে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।

গ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডের সাথে আমার পঠিত স্পেনের উমাইয়া শাসক আব্দুর রহমান আস-দাখিল-এর কাজের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। 
স্পেনে উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠায় আব্দুর রহমান আদ-দাখিল অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ক্ষমতায় আরোহণ করেই সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষায় তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি স্পেনে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। শিল্পকলা, স্থাপত্যশিল্প এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড-ও তিনি অপরিসীম অবদান রেখেছেন। এ বিষয়গুলো উদ্দীপকেও প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আলীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ফজলুল হক বাদশাহ জনগণের কল্যাণে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতিসহ সাম্রাজ্যের উন্নয়নে তিনি নানা ধরনের পদক্ষেপ নেন। ঠিক একইভাবে আব্দুর রহমান আদ-দাখিল ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে 'মাসারা' নামক যুদ্ধে স্পেনের শাসনকর্তা ইউসুফকে পরাজিত ও নিহত করে স্পেনের রাজধানী কর্ডোভা দখল করে নেন। ক্ষমতায় আরোহণ করে তিনি স্পেনের বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সমগ্র রাজ্যকে ছয়টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। তিনি জনসাধারণের সুবিধার্থে একটি বৃহৎ অনিন্দ্য সুন্দর জলাধার নির্মাণ করেন। তার নির্মিত কর্ডোভা মসজিদটি ছিল তৎকালীন স্পেনীয় মুসলমানদের জন্য গৌরবের। এছাড়াও অসংখ্য মসজিদ, হাম্মাম, দুর্গ, পুল নির্মাণ করে তিনি মুসলিম ইতিহাসে অনন্যকীর্তি স্থাপন করেছেন। তাই বলা যায়, আব্দুর রহমানের এ কাজগুলোর সাথে উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের কর্মকান্ডের মিল রয়েছে।

ঘ. উক্ত শাসক তথা প্রথম আব্দুর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্টা করা- উক্তিটি যথার্থ। 
স্পেনে উমাইয়া আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আব্দুর রহমান আদ দাখিল অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার। আব্দুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত ১০৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। তার অনন্য কৃতিত্ব ও গুণাগুণের জন্য ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসি খলিফা আল মনসুর তাকে 'আরবদের বাজপাখি' বলে অভিহিত করেছেন।
আব্বাসিদের গণহত্যা থেকে পালিয়ে আব্দুর রহমান বিন মুয়াবিয়া দীর্ঘ পাঁচ বছর মিসর, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করার পরে ৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে 'মাসারা' যুদ্ধের মাধ্যমে স্পেনের রাজধানী কর্ডোভা দখল করেন এবং সেখানে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে স্পেনের শাসনকর্তা ইউসুফের সঙ্গে 'মাসারা' নামক স্থানে আব্দুর রহমানের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আব্দুর রহমান বিজয় লাভ করেন এবং স্পেনের রাজধানী কর্ডোভা দখল করেন। স্পেনে উমাইয়া বংশ বিপদমুক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর সতর্কতা অবলম্বন করেন। এ সময় তিনি যে সকল বিদ্রোহ দমন করেন তা হলো- ইউসুফ ও স্যামুয়েলের বিদ্রোহ, ইয়েমেনি বিদ্রোহ, সেডিলের বিদ্রোহ, টলেডোর বিদ্রোহ প্রভৃতি। স্পেন থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে ইউসুফের পুত্র, জামাতা এবং বার্সেলোনার গভর্নর ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্রান্সের শার্লিমানকে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু ৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তাদের সম্মিলিত বাহিনী আব্দুর রহমানের নিকট পরাজিত হয়। শেষ পর্যন্ত শার্লিমান আব্দুর রহমানের সাথে সন্ধি করেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, আব্দুর রহমান স্পেনে উমাইয়া বংশকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার।

৩. পিতামহের মৃত্যুর পর আব্দুর রহিম মাত্র ১২ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্যের সেচ প্রকল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করেন। ফলে সাম্রাজ্যের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। তার সময়ে কমপক্ষে রাজ্যে ১,০০০ জাহাজ এবং শুধু রাজধানীতে ১৩,০০০ তাঁত শিল্প-কারখানা ছিল। তিনি বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের সমন্বয়ে একটি বিশাল ও শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন, যা স্নাড বাহিনী নামে পরিচিত ছিল।
ক. স্পেন বিজয়ী মুসলিম সেনাপতির নাম কী?
খ. কর্ডোভাকে ‘ইউরোপের বাতিঘর’ বলার কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে স্পেনে উমাইয়া যুগের কোন খলিফার ইঙ্গিত পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে কৃষি ও শিল্পের উন্নতিতে উক্ত খলিফার কৃতিত্ব মূল্যায়ন করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. স্পেন বিজয়ী মুসলিম সেনাপতির নাম তারিক বিন জিয়াদ।

খ. মধ্যযুগে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল বলে কর্ডোভাকে 'ইউরোপের বাতিঘর' বলা হয়।
উমাইয়া রাজত্বকালে স্পেনের সার্বিক উন্নয়নের মূলকেন্দ্র ছিল কর্ডোভা নগরী। একে কেন্দ্র করেই মধ্যযুগে স্পেনে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প সংস্কৃতি, স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। এটি ইউরোপের সবচেয়ে সৌন্দর্যের নগরী ছিল। কর্ডোভার কারুকার্যখচিত প্রাসাদ, সুনির্মিত অট্টালিকা পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয় ছিল। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্নানাগার, বিপণি, উদ্যান, দুর্গ, প্রাসাদ দ্বারা সুসজ্জিত ছিল বলেই কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের আব্দুর রহিমের সাথে স্পেনে উমাইয়া যুগের খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের মিল পাওয়া যায়। 
তৃতীয় আব্দুর রহমান ছিলেন মুসলিম স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। ৯১২ খ্রিস্টাব্দে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাজ্য পরিচালনা করেন। এ শাসকের শাসনকালের কিছু কৃতিত্বপূর্ণ কাজের প্রতিফলন লক্ষ করা যায় আব্দুর রহিমের কর্মকান্ড-।
আব্দুর রহিম মাত্র ১২ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্যের সেচ প্রকল্প ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করেন। যার ফলে সাম্রাজ্যের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়। তিনি বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের সমন্বয়ে একটি বিশাল ও শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন, যা ‘সস্নাভ’ নামে পরিচিত ছিল। খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের ক্ষেত্রেও এমনটি পরিলক্ষিত হয়। তিনিও ১২ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি সেচব্যবস্থার দ্বারা অনুর্বর ও পতিত জমি চাষের ব্যবস্থা করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনেন। ফলে কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তিনি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার প্রতি মনোযোগী হন। এ কারণে তিনি সস্নাভ, বার্বার, খ্রিস্টান ও মুসলিম সৈন্যদের সমন্বয়ে ১,৫০,০০০ সৈন্যের বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের আব্দুর রহিমের সাথে স্পেনের উমাইয়া খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের আব্দুর রহিমের মতো উক্ত খলিফা অর্থাৎ তৃতীয় আব্দুর রহমান কৃষি ও শিল্পের উন্নতিতে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
আব্দুর রহিম রাজ্যের সেচ প্রকল্পের উন্নয়ন সাধন করেন। যার ফলে সাম্রাজ্যের কৃষি ও শিল্প যথেষ্ট উন্নতি লাভ করে। অসাধারণ অবদানের কারণে তৃতীয় আব্দুর রহমানের রাজত্বকাপেও কৃষি ও শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়।
তৃতীয় আব্দুর রহমানের শাসনামলে নলযোগে পানি সরবরাহ করে। অনুর্বর ভূমিকে শস্যশালিনী করা হতো। এ বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা পর্যটকদের মধ্যে বিস্ময়ের উদ্রেক করত। এরূপ ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল। কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির সাথে সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্যে ব্যাপক উন্নতি এবং শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। সে সময় স্পেনের উন্নতমানের রেশমি ও পশমি কাপড় সমগ্র ইউরোপে সমাদৃত ছিল। বয়ন শিল্পের পাশাপাশি সেখানে লোহা, ইস্পাত, চামড়া, কয়লা ইত্যাদি কারখানা গড়ে উঠেছিল। সমরাস্ত্র, বিশেষত শিরস্ত্রাণ ও তলোয়ার তৈরিতে স্পেন জগৎজোড়v খ্যাতি লাভ করেছিল। লৌহকপাট ও বাতি নির্মাণেও স্পেনের সুনাম ছিল প্রচুর। কর্ডোভার চামড়া নির্মিত দ্রব্যাদি ও সিল্ক গালিচা ইউরোপের বাজারে একচেটিয়া সুনাম অর্জন করেছিল। তৃতীয় আব্দুর রহমানের সময় কৃষি ও শিল্পের এতই উন্নতি হয়েছিল যে, কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানির জন্য কমপক্ষে ১,০০০ জাহাজ ছিল। এ সময় শুধু রাজধানীতেই ১৩,০০০ তাঁত শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছিল। উদ্দীপকের আব্দুর রহিমের সময়েও কৃষি ও শিল্পের এমন উন্নয়ন দৃষ্টিগোচর হয়। তার সময়েও ১,০০০ জাহাজ এবং শুধু রাজধানীতেই ১৩,০০০ তাঁত শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছিল।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের আব্দুর রহিম এবং খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমান কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যার কারণে তাদের সময়ে কৃষি ও শিল্পের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন সাধিত হয়।

৪. 'আমর এ সঙ্গ' নামক কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বলেন, তিনি শ্রমিকদের ঔদ্ধত্য আচরণ, কথায় কথায় কর্ম বিরতি ও শ্রমিক ধর্মঘট বরদাস্ত করবেন না, নিয়মিত কাজ করতে হবে, নিয়মশৃঙ্খলা কাজে দক্ষতা বাড়াতে হবে। তবেই তাদের দাবী দাওয়া কোম্পানি মেনে নেবে। তাছাড়া তিনি নতুন ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি, সুন্দর অট্টালিকা নির্মাণ ও শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা দান করে কোম্পানিকে সুসমৃদ্ধ করে গড়ে তোলেন। তার দক্ষতা ও সুখ্যাতি চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ক. সুলতানা তারুবা কে ছিলেন?
খ. কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের বক্তব্যটি স্পেনের কোন উমাইয়া শাসকের বক্তব্যের অনুরূপ? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উত্ত শাসকের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর। 

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সুলতানা তারুবা ছিলেন স্পেনের উমাইয়া শাসক দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের (আসওয়াত) স্ত্রী।

খ. মধ্যযুগে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল বলে কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয়। উমাইয়া রাজত্বকালে স্পেনের সার্বিক উন্নয়নের মূলকেন্দ্র ছিল কর্ডোভা নগরী। একে কেন্দ্র করেই মধ্যযুগে স্পেনে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প সংস্কৃতি, স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। এটি ইউরোপের সবচেয়ে সৌন্দর্যপূর্ণ নগরী ছিল। কর্ডোভার কারুকার্যখচিত প্রাসাদ, সুনির্মিত অট্টালিকা পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয় ছিল। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্নানাগার, বিপণি, উদ্যান, দুর্গ, প্রাসাদ দ্বারা সুসজ্জিত ছিল বলেই কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের বক্তব্যটি স্পেনের উমাইয়া শাসক তৃতীয় আব্দুর রহমানের বক্তব্যের অনুরূপ। 
৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয় আব্দুর রহমান স্পেনের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। এ সময়ে স্পেনে নানারকম রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান ছিল। তিনি সমগ্র স্পেনে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, তার অধীনে কোনো বিদ্রোহী, সন্ত্রাসী, জুলুমবাজের স্থান হবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এভাবে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনসহ রাজ্যের উন্নতিতে তার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যা উদ্দীপকের ঘটনায় লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'আমর এ সঙ্গ' কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কোম্পানির উন্নতির জন্য শ্রমিকদের নিয়মিত কাজ করা এবং শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি ঘোষণা করেন। একইভাবে তৃতীয় আব্দুর রহমান রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন, বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে স্পেনকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেন। তিনি বিদ্রোহীদের দমনে স্নাড বাহিনী গঠন করেন। উমর বিন হাফসুনের বিদ্রোহ দমনসহ সেডিল ও কারমেনির বিদ্রোহ দমনে এ বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রাখে। 
মধ্যযুগীয় মুসলিম স্পেনের ইতিহাসে তৃতীয় আব্দুর রহমানের রাজত্বকাল সর্বাপেক্ষা গৌরবময় অধ্যায়। তিনি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ স্পেনে শান্তি-প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধিতে যে কৃতিত্বের পরিচয় দেন এজন্য তাকে স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়ে থাকে। তার সুশাসনের ফলে মুসলিম স্পেন একটি সুখী-সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত হয়। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে তৃতীয় আব্দুর রহমানের স্পেন রক্ষার ঘোষণা সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. 'আমর এ সঙ্গ' কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের কর্মকান্ডের নিরিখে উক্ত শাসক অর্থাৎ তৃতীয় আব্দুর রহমান ছিলেন মুসলিম স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।
তৃতীয় আব্দুর রহমানের সুশাসনের ফলে মুসলিম স্পেন একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। তিনি শত্রুদের কঠোর হস্তে দমন করেন। সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ে তোলার জন্য তিনি কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি সাধনকল্পে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
অবিরত যুদ্ধের ফলে স্পেনের মৃতপ্রায় অর্থনীতিতে তৃতীয় আব্দুর রহমান প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন এবং শূন্য রাজকোষকে পরিপূর্ণ করে তোলেন। তার রাজ্যের বার্ষিক আয় সকল খ্রিস্টান রাজাদের মিলিত রাজস্বের চেয়েও বেশি ছিল। তিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নতির জন্য কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। ন্যায়পরায়ণ, কর্তব্যনিষ্ঠ ও মহানুভব এই শাসক একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে স্পেনের সিংহাসনে আরোহণ করে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি অর্জনে বিশেষ অবদান রাখেন, যা তাকে মুসলিম স্পেনের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসকের মর্যাদা দান করেছে। পরিশেষে বলা যায়, তিনি বিশৃঙ্খলাপূর্ণ স্পেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি আনয়নে যে কৃতিত্বের পরিচয় দেন সেজন্য তাকে মুসলিম স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়।

৫. দিল্লীর সুলতান ইব্রাহিম লোদী তার আমলা আলম খান লোদীর পুত্র দেলোয়ার খান লোদীকে অপমান করলে আলম খান পুত্রের অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কাবুলের বাদশাহ বাবরকে দিল্লী আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান।
ক. আরবরা কত সালে সিন্ধু জয় করেন?
খ. কাকে এবং কেন আরব আলেকজান্ডার বলা হয়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে স্পেনের উমাইয়া যুগের কোন ঘটনার মিল পাওয়া যায়? লেখ।
ঘ. স্পেন বিজয়ের ফলাফল ফলাফল লেখ।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আরবরা ৭১২ সালে সিন্ধু জয় করেন।

খ. অসাধারণ বীরত্বের জন্য উকবা বিন নাফিসকে আরব আলেকজান্ডার বলা হয়।
বিখ্যাত বীর উকবা বিন নাফিসকে খলিফা মুয়াবিয়া ১০,০০০ সৈন্যসহ উত্তর আফ্রিকায় প্রেরণ করেন। উকবা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে উত্তর আফ্রিকার বার্বারদের দমন করেন এবং ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে লিবিয়া ও তিউনিশিয়া দখল করে কায়রোয়ান নগরীতে উত্তর আফ্রিকার রাজধানী স্থাপন করেন। এরপর উকবা আরও অগ্রসর হয়ে আলজেরিয়া ও মরক্কো দখল করে আটলান্টিকের তীর পর্যন্ত মুসলিম শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। আর রাজ্য বিস্তারে অসাধারণ বীরত্বের জন্যই উকবা বিন নাফিস ইসলামের ইতিহাসে আরব আলেকজান্ডার নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে স্পেনের উমাইয়া যুগের সিউটা দ্বীপের শাসনকর্তা কাউন্ট জুলিয়ান কর্তৃক ওয়ালিদের সেনাপতি মুসা ইবনে নুসাইরকে স্পেন আক্রমণের আহবান জানানোর ঘটনার সাথে মিল পাওয়া যায়।
স্পেন ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রটি খলিফা আল ওয়ালিদের শাসনামলে বিজিত হয়। আর তৎকালীন স্পেনের রাজা ছিলেন গথিক বংশীয় এক বিলাসপ্রবণ ব্যক্তি। যার কুশাসনে স্পেনের সামাজিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠে ছিল। এর ফলে সেখানকার প্রাদেশিক শাসকগণ ও বাইরের আক্রমণের মাধ্যমে রাজার পতন প্রত্যাশা করছিলেন। উদ্দীপকেও এরূপ একটি ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, দিল্লীর সুলতান ইব্রাহিম লোদী তার আমলা আলম খান লোদীর পুত্র দেলোয়ার খান লোদীকে অপমান করলে আলম খান পুত্রের অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কাবুলের বাদশা বাবরকে দিল্লী আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। অনুরূপভাবে স্পেনের সিউটা দ্বীপের শাসনকর্তা কাউনট জুলিয়ান ও স্পেন আক্রমণের জন্য মুসলিম শাসককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। জুলিয়ান প্রথানুযায়ী তার সুন্দরী কন্যা ফ্লোরিডাকে রাজকীয় আদব-কায়দা শেখানোর জন্য স্পেনের রাজা রডারিকের দরবারে প্রেরণ করলে রডারিক ফ্লোরিডার শ্রীলতাহানি করেন। ফলে কাউন্ট জুলিয়ান কন্যার অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের সেনাপতি মুসা ইবনে নুসাইরকে স্পেন আক্রমণের জন্য আহবান জানান। এ ঘটনা উদ্দীপকের ঘটনারই প্রতিচ্ছবি।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত স্পেন বিজয়ের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।
উদ্দীপকে কাবুলের বাদশা বাবর কর্তৃক দিল্লী আক্রমণের কথার মাধ্যমে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের শাসনামলে স্পেন বিজয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর মুসলমানদের স্পেন বিজয় মূলত মধ্যযুগের ইউরোপীয় ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করেছিল।
স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় যুগ-যুগান্তরের ধর্মযাজক ও অভিজাতশ্রেণির অন্যায় ও অত্যাচারের দীর্ঘ কাহিনীর পরিসমাপ্তি ঘটে। ন্যায় ও সাম্যের ছকে গড়ে ওঠে নতুন সমাজব্যবস্থা। স্পেন বিজয়ের ফলে সেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার ন্যায়সংগতভাবে স্বীকৃত হয়। পুরাতন মালিকদের হাতে সম্পত্তি প্রত্যাবর্তিত হয়। কৃষিক্ষেত্রের উন্নতি বিধানকল্পে নতুন নিয়ম প্রচলন করা হয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য নতুন দূরীভূত হয়। এছাড়া ভূমিকর ও নিরাপত্তা কর ধার্য করা হয় এবং শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি বিধান করা হয়। স্পেনে মুসলিম শাসনের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। বহুদিন পর রাস্তাঘাটগুলো ডাকাত-জলদস্যুদের দখল থেকে মুক্ত হয়। মুসলমানদের বিচারব্যবস্থার ফলে স্পেনীয় খ্রিস্টান ও মুসলমানরা সুবিচার পায়। মুসলিম শাসনামলে স্পেনের ভূমিদাস ও ক্রীতদাসরা স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের স্বাধীনতা পায়। দীর্ঘদিনের ধর্মীয় নির্যাতন ও নিগ্রহের হাত থেকে মুক্তিলাভ করে জনগণ সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা লাভ করে। পরিশেষে বলা যায়, মুসলমানদের স্পেন বিজয়ের ফলে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।

৬. রাসিন তার বাবার মুখে ইতিহাসের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা শুনছিল। বলা হচ্ছে একটি রাজবংশের পতনের পর গণহত্যা থেকে রক্ষা পেয়ে অনৈক যুবরাজ সুদীর্ঘ পাঁচ বছর যাযাবর জীবন যাপন করার পর ইউরোপ মহাদেশে একটি স্বাধীন আমিরাত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
ক. কুরাইশদের বাজপাখি কাকে বলা হয়?
খ. কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. ইউরোপে ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশ উক্ত আমিরাতের অবদান লিখ।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আব্দুর রহমান আদ-দাখিলকে কুরাইশদের বাজপাখি বলা হয়।

খ. মধ্যযুগে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল বলে কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয়। 
উমাইয়া রাজত্বকালে স্পেনের সার্বিক উন্নয়নের মূলকেন্দ্র ছিল কর্ডোভা নগরী। একে কেন্দ্র করেই মধ্যযুগে স্পেনে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প সংস্কৃতি, স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। এটি ইউরোপের সবচেয়ে সৌন্দর্যের নগরী ছিল। কর্ডোভার কারুকার্যখচিত প্রাসাদ, সুনির্মিত অট্টালিকা পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয় ছিল। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্নানাগার, বিপণি, উদ্যান, দুর্গ, প্রাসাদ দ্বারা সুসজ্জিত ছিল বলেই কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের রাসিনের বাবার বর্ণিত ঘটনার সাথে আমার পঠিত স্পেনে উমাইয়া শাসনামলের আমির আবদুর রহমান আদ-দাখিলের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব ব্যক্তি কপর্দকহীন অবস্থা থেকে সৌভাগ্যের উচ্চ শেখরে আরোহণ করেছেন তাদের মধ্যে আবদুর রহমান আদ দাখিল অন্যতম। তিনি আব্বাসি খলিফা আব্দুল আব্বাস আস-সাফফাহর উমাইয়া নিধনযজ্ঞ থেকে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান এবং নিজ যোগ্যতাবলে ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করে ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩২ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। উদ্দীপকেও এমনি একটি ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকের রাসিনের বাবার বর্ণিত ঘটনায় একজন আমীর একটি হত্যাকান্ড থেকে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান এবং একাধিক যুদ্ধ জয়ের পর স্বীয় বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। আর রাজধানী নগরীকে জমকালো শহরে রূপদান করেন। অনুরূপভাবে আবদুর রহমান আদ দাখিল আব্বাসি খলিফা আবুল আব্বাসের উমাইয়া নিধনযজ্ঞ থেকে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে দামেস্কে পলায়ন করেন। পরবর্তীতে মাসারার যুদ্ধে জয়লাড ও কয়েকটি বিদ্রোহ দমনের মাধ্যমে স্পেনে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাজধানী কর্ডোভাকে একটি জমকালো নগরীতে পরিণত করেন। অবশেষে এ অদম্য সাহসী শাসক ৩২ বছর। শাসনকার্য পরিচালনা করে ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনার সাথে আবদুর রহমান আদ-দাখিলের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. ইউরোপে ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশে উদ্ভ আমিরাত অর্থাৎ স্পেনের উমাইয়া আমিরাত অসামান্য অবদান রেখেছে। 
স্পেনে মুসলমানদের রাজত্ব মধ্যযুগের ইতিহাসে একটি সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করে। প্রায় ৮০০ বছর শাসন করে স্পেনকে গৌরবের শিখরে সমাসীন করার গৌরব অর্জন করে। স্পেনে মুসলমানরা অসংখ্য মাদ্রাসা, বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল স্পেনে শিক্ষার মূলকেন্দ্র। এই আমিরাতের সময় সমগ্র স্পেনে সত্তরটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেও এই সাম্রাজ্য অসামান্য অবদান রাখে।
উদ্দীপকে স্পেনের উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে আমিরাত ইউরোপের ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশে অসামান্য অবদান রেখেছিল। শিক্ষা, দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, স্থাপত্য, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণের মাধ্যমে এই আমিরাত তৎকালীন বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করে। ইসলামি সংস্কৃতি ইউরোপে ছড়িয়ে দিতে আরবি ব্যাকরণ এবং কুরআন পড়া ও লেখার উপর ভিত্তি করেই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। এই আমিরাতের পৃষ্ঠপোষকতায় কুরআনের ব্যাখ্যা এবং ধর্মতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে কর্ডোভা, সেভিল, মাগা ও গ্রানাডায় বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। এক্ষেত্রে আল কালী আরবি ভাষা তত্ত্ব ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ছিলেন। আল যুবাইদা ছিলেন একজন আরবি ব্যাকরণ বিশারদ। তাছাড়া বেশকিছু পন্ডিত খলিফাদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে আরবি ভাষা, সাহিত্যচর্চায় ব্যাপক অবদান রাখেন। ইসলামি সংস্কৃতিকে ত্বরান্বিত করতে স্পেনের উমাইয়া আমিরাতগণ গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, স্পেনের উমাইয়া আমিরাতের শাসনামলে ইসলামি সংস্কৃতি ব্যাপক উন্নতি সাধন করে।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

৭. বাতেন মৃধা গরিব ঘরের সন্তান। অনেক চেষ্টা এবং কষ্ট করে তিনি লেখাপড়া শেখে। অবশেষে আয় রোজগার করে ভাগ্য ফেরানোর জন্য শহরে আসে। শহরে বিভিন্নভাবে ভাগ্য বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়। কিন্তু সন্ত্রাসীদের আক্রমণ তার জীবন বিষাক্ত করে তোলে। অবশেষে সন্ত্রাসীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে সমর্থ হয়। আজ শহরে সে প্রতিষ্ঠিত একজন শিল্পপতি।
ক. 'আদ-দাখিল' বলা হয় কাকে?
খ. সিংহাসনে আরোহণের পর নানা প্রকার বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয় কোন শাসক? কীভাবে?
গ. উদ্দীপকে বাতেন মৃধার কর্মকান্ডের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন খলিফার কর্মকান্ডের মিল আছে? কীভাবে তিনি স্পেনে উমাইয়া প্রতিষ্ঠা করে কর। 
ঘ. উদ্দীপকের বাতেন মৃধা কি প্রথম আব্দুর রহমানের প্রতিচ্ছবি ছিল?তুলনামূলক আলোচনা কর। প্রথম আব্দুর রহমানের কৃতিত্বের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ কর। 

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. প্রথম আব্দুর রহমানকে 'আদ-দাখিল' বলা হয়।

খ. সিংহাসনে আরোহণের পর নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয় উমাইয়া খলিফা আব্দুর রহমান আদ দাখিল।
আব্দুর রহমান আস দাখিল ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে স্পেনে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। যেমন ইউসুফ ও স্যামুয়েলের বিদ্রোহ, ইয়েমেনি বিদ্রোহ, সেভিলে বিদ্রোহ, টলেডোর বিদ্রোহ। তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে এ সকল অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করেন। এছাড়া ফ্রান্সের শার্লিমানের সাথে সন্ধি করেন।

গ. উদ্দীপকের বাতেন মৃধার কর্মকান্ডের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের খলিফা প্রথম আব্দুর রহমানের কর্মকান্ডের মিল আছে। 
নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তিনি স্পেনে উমাইয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। আব্বাসিদের গণহত্যা থেকে বেঁচে আব্দুর রহমান দীর্ঘ ৫ বছর মিসর, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় পালিয়ে অবশেষে ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন যা উদ্দীপকে বাতেন মৃধার ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়।
৭৫০ খ্রিস্টাব্দে জাবের যুদ্ধের মাধ্যমে আব্বাসি খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফফাহ সিংহাসনে আরোহণ করে উমাইয়া বংশকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য এক বেপরোয়া পাইকারি হত্যাযজ্ঞ চালায়। সৌভাগ্যক্রমে আব্দুর রহমান এই নিধন থেকে রক্ষা পান এবং তিনি সিরিয়া, মিসর, প্যালেস্টাইন ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী জীবন কাটান। ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের শাসনকর্তা ইউসুফের সঙ্গে মাসারা নামক স্থানে আব্দুর রহমানের একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে ইউসুফ পরাজিত এবং পরে নিহত হলে আব্দুর রহমান স্পেনের রাজধানী কর্ডোভা দখল করে নেন। কর্ডোভায় তার রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন।

ঘ. হ্যাঁ, নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দিক দিয়ে বাতেন মৃধা প্রথম আব্দুর রহমানের প্রতিচ্ছবি ছিল। আব্বাসিদের গণহত্যা থেকে পালিয়ে নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে প্রথম আব্দুর রহমান স্পেনে ৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। যা উদ্দীপকের বাতেন মৃধার কর্মকান্ডের প্রতিচ্ছবি।
স্পেনের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দমন করে আব্দুর রহমান একটি সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। একটি দক্ষ সেনাবাহিনী গঠন করে তিনি সকল বিদ্রোহের মূল উৎপাটন করেন। তার সেনাবাহিনীতে ২,০০,০০০ সদস্য। তিনি প্রশাসনকে সুদৃঢ় করতে ওয়াজির, হাজীব, খতিব, কাজী, সাহিব-আল সুরতা, কায়েদ বা সেনাধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। তিনি বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে আবু আমর বিন মুয়াবিয়াকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন। 
উদ্দীপকে বাতেন মৃধা অনেক কষ্টে লেখাপড়া শিখে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় শহরে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের আক্রমণে তার জীবন বিষাদময় হয়ে ওঠে। এতদসত্ত্বেও তিনি সন্ত্রাসীদের সমস্ত হামলা প্রতিহত করে শহরে একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি হয়েছেন। আর স্পেনের প্রথম আব্দুর রহমানও সকল বাধা-বিপত্তি দূর করে সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে দৃষ্টি নিবন্ধ করেন। তার রাজত্বে অনেক স্বনামধন্য সাহিত্যিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, ভাষাবিদ, আইন বিশারদ হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। তাছাড়া তিনি শিল্পকলার প্রতি গভীর অনুরাগ প্রদর্শন করেন। তিনিই বিশ্ববিখ্যাত কর্ডোভা মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া তিনি অসংখ্য মসজিদ, হাম্মাম, দুর্গ, পুল নির্মাণ করে অক্ষয় কীর্তি রেখেছেন। আর দানশীলতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে একথা বলা যায় যে, উদ্দীপকের বাতেন মৃধা প্রথম আব্দুর রহমানের প্রতিচ্ছবি।

৮. মুগ্ধ তার বাবার মুখে ইতিহাসের এক আমিরের নতুন আমিরাত প্রতিষ্ঠার গল্প শুনছিল। নতুন আমির অল্প বয়সে পিতৃ সিংহাসন হতে বঞ্চিত হয়ে রাজ পরিবারের অন্যান্যদের মৃত্যু স্বচক্ষে অবলোকন করে ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নদী পার হয়ে যান এবং সুদীর্ঘ পাঁচ বছর যাযাবর জীবনযাপন করার পর ইউরোপ মহাদেশে একটি স্বাধীন আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। সুদীর্ঘ বত্রিশ বছর অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে উক্ত আমিরাতের শাসন কার্য পরিচালনা করে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 
ক. কুরাইশদের বাজপাখি কাকে বলা হয়?
খ. কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয় কেন?
গ. ইউরোপে কোন দেশের শাসকের ঘটনাবলি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উক্ত শাসকের ইউরোপে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিক উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কুরাইশদের বাজপাখি বলা হয় আব্দুর রহমান আদ-দাখিলকে।

খ. কর্ডোভা মধ্যযুগে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল বলে কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয়।
উমাইয়া রাজত্বকালে স্পেনের গৌরবের কেন্দ্র ছিল কর্ডোভা, যা মধ্যযুগে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এবং এটি ইউরোপের সবচেয়ে সৌন্দর্যের নগরী ছিল। কর্ডোভার কারুকার্যখচিত প্রাসাদ, সুনির্মিত অট্টালিকা পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয় ছিল। আর এ কারণেই কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলা হয়।

গ. স্পেনে উমাইয়া শাসক আব্দুর রহমান আদ-দাখিলের ঘটনাবলি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। 
স্পেনের ইতিহাসে আব্দুর রহমানের আবির্ভাব এক রোমাস্যকর ও নাটকীয় ব্যাপার। আবুল আব্বাস আস সাফফার বেপরোয়া নিধনযজ্ঞের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং সে অনুযায়ী শত্রুর কবল থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা চালান। উদ্দীপকে এমন একজন শাসক সম্পর্কে বলা হয়েছে, যিনি পিতৃ সিংহাসন হয়ে বঞ্চিত হয়ে সুদীর্ঘ পাঁচ বছর যাযাবর জীবনযাপনের পর একটি স্বাধীন আমিরাত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। অনুরূপভাবে আব্দুর রহমান আদ-দাখিল জীবন বাঁচানোর জন্য পলায়ন করে কপর্দকহীন অবস্থায় আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ান। পরবর্তীতে অনেক সাধনা করে তিনি সৌভাগ্যের স্বর্ণ শিখরে উপনীত হন। তার প্রচেষ্টায় স্পেনে উমাইয়া আমিরাতের প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি ৩২ বছর শাসনকালে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিদ্রোহ দমন করেন। বাবার ও ইয়েমেনি খ্রিষ্টানদের আক্রমণকে সামরিক দক্ষতা বলে অভিহিত করেন এবং স্পেনে উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় স্পেনের প্রথম আব্দুর রহমানের স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব ফুটে উঠেছে। স্পেনে উমাইয়া আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আব্দুর রহমান আদ দাখিল অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার। আব্দুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত ১০৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। তার অনন্য কৃতিত্ব ও গুণাগুণের জন্য ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসি খলিফা আল মনসুর তাকে 'আরবদের বাজপাখি' বলে অভিহিত করেছেন উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার অনুরূপ আব্দুর রহমান আদ-দাখিল স্বগোত্র হিমারীয় ও মুদারীয়দের নিয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন করে তাদের সহযোগিতায় স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর দীর্ঘ ৩২ বছর শাসন পরিচালনা করেন। শুধু অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ শান্তি-শৃঙ্খলাই তিনি স্থাপন করেননি বরং একটি দক্ষ ও কার্যকরী দমন, প্রশাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলেন। বার্বার, ইয়েমেনি ও খ্রিস্টানদের দ্বারা বহুবার আক্রান্ত হলেও নিজ বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা এবং সামরিক দক্ষতার বলে এ সকল বিপদ হতে তিনি মুসলিম রাজ্য স্পেনকে মুক্ত করতে সমর্থ হন। অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন ও রাজা শার্লিমানের পরান্তকরণে তার প্রশিক্ষিত ও অত্যন্ত দক্ষ সেনাদের ভূমিকা ছিল অনন্য। আব্দুর রহমান স্পেনে স্বেচ্ছাতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এ সকল আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আব্দুর রহমান আদ দাখিল স্পেনে উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার।

৯. রাজধানী "ঢ" শহর ছিল সমসাময়িক যুগের অনুপম ও ঐশ্বর্যশালী শহর। এ বংশের "গ" নামক শাসক সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্যের সেচ প্রকল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করেন। তার সময়ে কমপক্ষে ১০০০ জাহাজ এবং শুধুমাত্র রাজধানীতেই ১৩,০০০ তাঁতশিল্প ছিল। তিনি বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের সমন্বয়ে একটি বিশাল ও শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন। এ বাহিনী সস্নাভ বাহিনী নামে পরিচিত। 
ক. স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. দ্বিতীয় আব্দুর রহমান যে চারজন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন, তাদের পরিচয় দাও। 
গ. উদ্দীপকে স্পেনে উমাইয়া যুগের কোন খলিফার মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে কৃষি ও শিল্পের উন্নতিতে উক্ত খলিফার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রহমান আদ-দাখিল।

খ. দ্বিতীয় আব্দুর রহমান শাসনকালে চার ব্যক্তির দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করার পর দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের উপর চার ব্যক্তির ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায়। এরা হলেন- (১) ইয়াহিয়া-বিন-ইয়াহিয়া, (২) সঙ্গীতজ্ঞ জিরিয়াব, (৩) খোজা নাসের, (৪) সুলতানা তাবুব। যারা তার শাসনকার্য পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ইয়াহিয়া-বিন-ইয়াহিয়াকে তিনি রাজকীয় সম্মানে ভূষিত করেন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী চলতেন।

গ. উদ্দীপকের 'গ' নামক শাসকের সাথে স্পেনে উমাইয়া যুগের খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের মিল পাওয়া যায়।
তৃতীয় আব্দুর রহমান ছিলেন মুসলিম স্পেনের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। ৯১২ খ্রিষ্টাব্দে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাজ্য পরিচালনা করেন। এ শাসকের শাসনকালের কিছু কৃতিত্বপূর্ণ কাজের প্রতিফলন লক্ষ করা যায় 'গ' নামক শাসকের কর্মকান্ডে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত 'গ' শাসক মাত্র ১২ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করে রাজ্যের সেচ প্রকল্প ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করেন। যার ফলে সাম্রাজ্যের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়। তিনি বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের সমন্বয়ে একটি বিশাল ও শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন, যা সস্নাভ নামে পরিচিত ছিল। অনুরূপভাবে খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের ক্ষেত্রেও এমনটি পরিলক্ষিত হয়। তিনিও ১২ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি সেচব্যবস্থার দ্বারা অনুর্বর ও পতিত জমি চাষের ব্যবস্থা করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনেন। ফলে কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। এছাড়াও ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তিনি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার প্রতি মনোযোগী হন। এ কারণে তিনি সস্নাভ, বার্বার, খ্রিস্টান ও মুসলিম সৈন্যদের সমন্বয়ে ১,৫০,০০০ সৈন্যের বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের 'গ' নামক শাসকের সাথে স্পেনের উমাইয়া খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'গ' নামক শাসকের কৃতিতব তৃতীয় আব্দুর রহমানের কৃতিত্বের আংশিক প্রতিফলন মাত্র। 
খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমান দীর্ঘ ৪৯ বছর রাজত্ব করে উমাইয়া শাসনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি রাজ্যের উন্নয়ন সাধন করেন। যার ফলে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক উন্নতি এবং শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। উদ্দীপকেও কৃষি ও শিল্পের এরূপ উন্নয়নের দিক লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকের 'গ' নামক শাসকের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামরিক বাহিনী গঠন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদানের কথা উল্লেখ আছে। সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা লক্ষ করা যায় অনুরূপভাবে তৃতীয় আব্দুর রহমানের ক্ষেত্রেও শিল্প ও কৃষির অবদান রয়েছে। কেননা তার সময়ে সেচব্যবস্থার দ্বারা পতিত ও অনুর্বর জমিতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও উন্নয়ন করেন। কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যের আমদানি ও রপ্তানির জন্য জোর দেয়া হয়েছিল। তাঁতশিল্পেও তার অবদান ছিল। বিশেষত রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়। যা কৃষি ও শিল্পের উন্নতিকে আরো ত্বরান্বিত করে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমান কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যার কারণে তার সময়ে কৃষি ও শিল্পে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন সাধিত হয়।

১০. জনাব ইসমাইল বাগবাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার ফলে এলাকায় কৃষি কাজের উন্নয়ন হয়। ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য তিনি তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতই উন্নত ছিল যে, ব্যবসায়ীরা গভীর রাতে ঢাকা পয়সা নিয়ে এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে যাতায়াত করতে পারত। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ করেন। এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চলাফেরার জন্য তিনি ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা করেন।
ক. স্পেনে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠিত হয় কত খ্রিষ্টাব্দে?
খ. 'কুরাইশদের বাজপাখি' কাকে এবং কেন বলা হয়?
গ. উদ্দীপকের বাগবাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডের সাথে কোন উমাইয়া শাসকের কর্মকান্ডের মিল লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উক্ত উমাইয়া শাসকের অন্যান্য কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর। 

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. স্পেনে উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠিত হয় ৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে।

খ. প্রথম আব্দুর রহমানের অনন্য কৃতিত্ব ও গুণাগুণের জন্য ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসি খলিফা আল মনসুর ডাকে ‘কুরাইশদের বাজপাখি’ বলে অভিহিত করেন।
প্রথম আব্দুর রহমান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। কিন্তু বিদ্রোহীদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার প্রদর্শনে তিনি কুণ্ঠাবোধ করতেন না। তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি তার গতিপথের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে একক শক্তি দিয়ে নির্মূল করতেন। আব্দুর রহমান আদ-দাখিলের বিরুদ্ধে খলিফা আল মনসুর একটি অভিযান প্রেরণ করেন। আদ-দাখিল আল মনসুরের সেনাপতিকে পরাজিত করে তার ছিন্ন মস্তক ও একটি চিঠিসহ আল মনসুরের দরবারে প্রেরণ করেন। তার এ অনন্য কৃতিত্ব ও গুণাগুণের জন্য ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসি খলিফা আল মনসুর তাকে ‘কুরাইশদের বাজপাখি’ বলে অভিহিত করেছেন।

গ. বাগবাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে উমাইয়া খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের কর্মকান্ডের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
তৃতীয় আব্দুর রহমানের শাসনকালে স্পেনের সর্বত্র শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করত। নলযোগে পানি সরবরাহ করার ফলে তার শাসনকালে কৃষিকার্যের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল। তাছাড়া শিল্পকলা, ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছিল। তার সময়কার সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এতে করে বণিক ও পথিকগণ সর্বাপেক্ষা দুর্গম অঞ্চলেও অত্যাচার ও বিপদের সামান্যতম আশঙ্কা ব্যতীত ভ্রমণ করতে পারত। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় হতো।
উদ্দীপকে বাগবাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কথা বলা হয়েছে। তিনি কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছিলেন। তার সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ করেন এবং যাতায়াতের জন্য ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা করেন। অনুরূপভাবে তৃতীয় আব্দুর রহমানের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়। জনগণের চলাফেরার সাম্রাজ্যে সমৃদ্ধির ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছিল। জনগণ একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাফেরা করার সময় পদব্রজে যেত না। তারা সর্বদা এবং প্রায় সকলেই খচ্চর কিংবা ঘোড়ায় চরে যাতায়াত করত। খলিফা নিজেও জনগণের জন্য ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন করেন। সুতরাং বলা যায় যে, চেয়ারম্যানের কর্মকান্ডের সাথে উমাইয়া খলিফা তৃতীয় আব্দুর রহমানের কর্মকান্ডের সুস্পষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের সাথে স্পেনের উমাইয়া শাসক তৃতীয় আব্দুর রহমানের কর্মকান্ডের মিল রয়েছে। কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বাইরেও তার কৃতিত্ব পরিব্যপ্ত।
তৃতীয় আব্দুর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব সাম্রাজ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন। তিনি যে সময় ক্ষমতা লাভ করেছিলেন, সে সময় তার সাম্রাজ্য ছিল সবচেয়ে গোলযোগপূর্ণ। অসংখ্য বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি আন্দালুসিয়াকে রক্ষা করে পূর্বাপেক্ষা বৃহদায়তন ও শক্তিশালী করেছিলেন। তিনি অভ্যন্তরীণ বিপদ থেকে স্পেনকে রক্ষার পাশাপাশি বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও প্রতিহত করেন। ফাতেমীয় ও বার্বারদের পরাজিত করেন।
তৃতীয় আব্দুর রহমানের সময় শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। হিনি বলেন, আব্দুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম স্পেন বিশ্ব-সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। স্পেনে তখন বহু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির সমাবেশ ঘটে। সাম্রাজ্যের সর্বত্র স্কুল, পাঠাগার, এতিমখানা স্থাপিত হয়। এগুলোর ব্যয়ভার সরকার বহন করত। তার প্রতিষ্ঠিত কর্ডোড়v বিশ্ববিদ্যালয় পাশ্চাত্যের শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। তৃতীয় আব্দুর রহমানের সময় স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ হয়েছিল। এ সময় রাজধানী কর্ডোভাতে ৩০০ মসজিদ, ১০০ প্রাসাদ, ১,১৩,০০০ গৃহ এবং ৩৮০টি হাম্মামখানা ছিল। তার স্ত্রী জোহরার নামকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি ৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে কর্ডোভার ৩ মাইল উত্তরে আজ-জোহরা নামে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। এই প্রাসাদ নির্মাণে তিনি প্রায় ৫০ লক্ষ দিনার ব্যয় করেন। তিনি কর্ডোভার মসজিদের উত্তর দিকে একটি সুউচ্চ মিনার নির্মাণ করেছিলেন। মিনারটি ২৭ ফুট চওড়া এবং ১০৮ ফুট উঁচু ছিল।
উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তৃতীয় আব্দুর রহমান অসামান্য অবদান রেখেছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post