HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Islamic History and Culture 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

অধ্যায়ভিত্তিক প্রাথমিক আলোচনাঃ

প্রাক-ইসলামকি আরব
এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপদ্বীপ আরব ভূখন্ড হচ্ছে ইসলামের লীলাভূমি। জাজিরাতুল আরব নামে সুপরিচিতি এই ভূখন্ডটি তিন দিকে পানি এবং একদিকে মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত। এটির উত্তরে সিরিয়া মরুভূমি, পূর্বে পারশ্য উপসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে আরব ভূমি ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। অষ্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা মাহদেশ আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে এটি পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল বলে পরিচিত হত। 

প্রাক আরবের সামাজিক অবস্থা
প্রাক-ইসলামী আরবকে সাধারণভাবে আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ বলা হয়। কারণ আরবে এই যুগে কোন প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ কিংবা ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা কিছুই ছিল না। প্রাক ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক জীবন পাপাচার, কুসংস্কার, অরাজকতা ও নিন্দনীয় কার্যকলাপে কুলষিত ও অভিশপ্ত হয়ে পড়েছিল।

গোত্রই ছিল আরবদের সমাজ জীবনের মূলভিত্তি। আর গোত্র পতিদের বলা হত শেখ। এই যুগ আরবে বংশগত ও গোত্রগত প্রথার প্রভাব চরমভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। যার ফলে এই বংশ মর্যাদা নিয়ে এক গোত্র অন্য গোত্রের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষের চোখে থাকাতো। অরাজকতাপূর্ণ আরব দেশে নারীর কোন সামাজিক মর্যাদা ছিল না। তারা অস্থাবর ও ভোগ বিলাসের সামগ্রীরুপে হণ্য হত। নারীদের গৃহপালিত পশুর মত ব্যবহার করা হত। অভিজাতবর্গ দ্রুতগামী ঘোড়ার লেজের সাথে জীবন্ত নারীকে বেধে খেলাচ্ছলে টেনে টেনে নিয়ে যেত এবং এর ফলে নারীর মৃত্যু ঘটত।

প্রাচীনকাল থেকে আরব সমাজে দাস প্রথার প্রচলন ছিল। তাদের সামাজিক অধিকার অথবা ব্যাক্তি স্বাধীনতা ছিল না। পণ্য দ্রব্যের মত দাস-দাসীদের বাজারে বিক্রি করা হত। প্রাক ইসলামী যুগের সমাজ জীবনে সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য ছিল সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কন্যা-সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। তারা কন্যা সন্তানের জন্মকে অভিশপ্ত ও লজ্জাস্কর মনে করতো। অথচ তখনকার বর্বর আরবরা ভুলে গিয়েছিল যে, তারাও কোন না কোন নারীর গর্ভের সন্তান।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তাই বলেন, দারিদ্রের ভয়ে নিজেদের সন্তান হত্যা কোরো না। আমি তাদেরও রিজিক দেব এবং তোমাদেরও। অবশ্যই তাদের হত্যা করা মহাপাপ। (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩১)

জুয়াখেলা, মদ্যপান, নারী অপহরণ, অনাচার, ব্যভিচার প্রভৃতি তৎকালীন আরব সমাজকে কলুষিত করে। জুয়া খেলার নেশায় আরবরা জ্ঞানশূণ্য হয়ে সময় সময় নিজেদের স্ত্রী ও কন্যাগণকেও বাজি ধরতো। মদ্যপানে মাতাল হয়ে তারা লুট-পাট, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রাহাজানি ইত্যাদি করতো। আর যারা এই সব খারাপ কাজে পারদর্শিতা দেখাতে পারতো, সমাজে তাদের উচ্চস্থান দেওয়া হত। এই যুগে খ্রিস্টানগণ একচেটিয়া মদের ব্যবসা এবং ইহুদীরা সুদ ও কৃতদাসের ব্যবসায় লিপ্ত ছিল।

প্রাক আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা
সামাজিক জীবনে আরবরা উন্নতামানের না হলেও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে তারা অগ্রগামী ছিল। প্রাক ইসলামী আরবে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা খুবি অল্প ছিল। যুলকাদ, যুলহজ্জ্ব, মুহররম ও রজব মাসে তারা যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ করে উকাজ নামক বিখ্যাত মেলায় শারীরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও কাব্য প্রতিযোগিতার সম্মেলন করত। সেখানে নাচ, গান, নানা প্রকার খেলাধুলা. ঘোড়েদৌড় ও উষ্ট্র দৌড়ের প্রতিযোগিতা হত।
অন্যদিকে আরবের গণ্যমান্য ব্যক্তিকে বিচারক হিসাবে নিযুক্ত করে বড় বড় কবিরা স্বরচিত কবিতার প্রতিযোগিতা করতেন।

বছরের সেরা কবিতাকে মিসরের লিনেন বস্ত্রে স্বর্ণাক্ষরে লিখে কাবা গৃহের দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হত। এই রকম সাতটি কবিতার সমষ্টিকে সাবয়া মুয়াল্লাকাত বা সাতটি ঝুলন্ত কবিতা বলা হত। বন্তুত কাব্যপ্রতিভা ছিল আরবদের জনমগত। তারা বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির অধিকারীও ছিল। কথিত আছে, কবি বা উত্তম ঘোড়সওয়ার না হলে যে কোন যুবককে আরবের মেয়েরা বিবাহ করতে অস্বীকার করত। 

প্রাক আরবের রাজনৈতিক অবস্থা
ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং হতাশাব্যঞ্জক ছিল। কোনো কেন্দ্রীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব না থাকায় আরবে গোত্র প্রাধান্য লাভ করে। তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না। গোত্রসমূহের মধ্যে সব সময় বিরোধ লেগেই থাকত। গোত্রীয় শাসন ও অকার যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল বিশৃঙ্খলা, স্থিতিহীন ও নৈরাজ্যের অন্ধকারে ঢাকা। উত্তর আরবে বাইজান্টাইনও দক্ষিণ আরবের পারস্য প্রভাবিত কতিপয় ক্ষুদ্র রাজ্য ব্যতীত সমগ্র আরব এলাকা স্বাধীন ছিল।

সামান্য সংখ্যক শহরবাসী ছাড়া যাযাবর শ্রেণির গোত্রগুলোর মধ্যে গোত্রপতির শাসন বলবৎ ছিল। গোত্রপতি বা শেষ নির্বাচনে শক্তি, সাহস, আর্থিক স্বচ্ছলতা, অভিজ্ঞতা, বয়োজ্যষ্ঠতা ও বিচার বুদ্ধি বিবেচনা করা হত। শেখের আনুগত্য ও গোত্রপ্রীতি প্রকট থাকলেও তারা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি সর্বদা সচেতন ছিলেন। ভিন্ন গোত্রের প্রতি তারা চরম শত্রুভাবাপন্ন ছিল। গোত্রগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি মোটেই ছিল না। কলহ বিবাদ নিরসনে বৈঠকের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। শেখের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক জীবন ধারার ছায়া থাকলেও শান্তি ও নিরাপত্তার লেশমাত্র ছিল না।

প্রাক আরবের ধর্মীয় অবস্থা
জাহেলিয়া যুগে আরবদের ধর্মীয় অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। আরবে তখন অধিকাংশ লোকই ছিল জড়বাদী পৌত্তলিক। তাদের ধর্ম ছিল পৌত্তলিকতা এবং বিশ্বাস ছিল আল্লাহর পরিবর্তে অদৃশ্য শক্তির কুহেলিকাপূর্ণ ভয়ভীতিতে। তারা বিভিন্ন জড়বস্তুর উপাসনা করত। চন্দ্র, সূর্য, তারকা এমনকি বৃক্ষ, প্রস্তরখন্ড, কূপ, গুহাকে পবিত্র মনে করে তার পূজা করত। প্রকৃতি পূজা ছাড়াও তারা বিভিন্ন মূর্তির পূজা করত। মূর্তিগুলোর গঠন ও আকৃতি পূজারীদের ইচ্ছানুযায়ী তৈরি করা হতা। পৌত্তলিক আরবদের প্রত্যেক শহর বা অঞ্চলের নিজ দেবীর মধ্যে অন্যতম ছিল আল-লাত, আল-মানাহ এবং আল-উজ্জা।

আল-লাত ছিল তায়েফের অধিবাসিদের দেবী, যা চারকোণা এক পাথর। কালো পাথরের তৈরি আল-মানাহ ভাগ্যের দেবী। এ দেবীর মন্দির ছিল মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী কুদায়েদ খান। মদিনার আউস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা এ দেবীর জন্য বলি দিত এবং দেবীকে সম্মান করত। নাখলা নামক স্থানে অবস্থিত মক্কাবাসীদের অতি প্রিয় দেবী আল-উজ্জাকে কুরাইশগণ খুব শ্রদ্ধা করত। আরবদেশে বিভিন্ন গোত্রের দেবদেবীর পূজার জন্য মন্দির ছিল। এমনকি পবিত্র কাবা গৃহেও ৩৬০ টি দেবদেবীর মূর্তি ছিল। কাবাঘরে রক্ষিত মূর্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মূর্তির বা দেবতার নাম ছিল হোবল। এটি মনুষ্যাকৃতি ছিল- এর পাশে ভাগ্য গণনার জন্য শর রাখা হতো।

প্রাক ইসলামী যুগের উৎকৃষ্ট গুণাবলি
মরুভূমিতে রাত্রি ভীতিসংকুল ভূত-প্রেত-দৈত্য-দানবের আনাগোনা’- এ সাধারণ বিশ্বাস মরুভূমির বিপদ হতে পথিককে রক্ষা করার জন্য আরবদের মধ্যে অতিথিপরায়ণতা বিকশিত করেছিল। মরুভূমি অনুর্বর ও পর্বতাঞ্চলের আরব সমাজ গোত্রভিত্তিক ছিল। গোত্র-নিরাপত্তা ও বহিরাক্রমণের ভয় তাদেরকে গোত্রপ্রিয় করে তুলেছিল। এ গোত্রপ্রীতি তাদের মধ্যে জন্ম। দেয় মনুষ্যত্ব, আত্মসংযম, স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের। শেখের নিকট সকল নাগরিকের অধিকার সমান। এরূপ পরিস্থিতিতে উন্নততর ধর্মে-কর্মে তাদের শিথিলতা পরিলক্ষিত হওয়াই স্বাভাবিক।

আরব ভূ-খন্ত্রে অনুদার পরিবেশ, খাদ্য ও পানীয় জলের। অভাব, নির্দিষ্ট চলাচলের পথ না থাকায় বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে আরববাসীরা সব সময় নিরাপদ থেকেছে। ভৌগোলিক প্রভাবের কারণে শহরবাসী আরব ও মরুবাসী বেদুইনদের মধ্যে আত্মসচেতনাবোধ ও কাব্যিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। আরববাসীরা ছিল কাব্যের প্রতি অধিক মাত্রায় অনুরক্ত। গীতিকাব্য রচনা ও সাহিত্যচর্চায় আরবদের অপূর্ব সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। আরব কবিগণ ভৌগোলিক পরিবেশে যে কাব্য রচনা করেন তা সংঘাত, অদম্য সাহসিকতা, বীরত্ব, গোত্রপ্রীতি ও প্রেম সম্পর্কিত।

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. হোয়াংহো নদীর তীরে প্রাচীন চীনা সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। হোয়াংহোকে চীনের দুঃখ বলা হলেও এই নদী অধিবাসীদের জীবনে বিশাল ভূমিকা রাখে। সদ্য আবিষ্কৃত এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে তাদের ধর্ম বিশ্বাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সেখানে একজন সম্রাটের কফিন পাথরের দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত করা আছে। কফিনের চারদিকে পাথরনির্মিত সশস্ত্র সৈন্যরা কঠোর পাহারায় নিয়োজিত।
ক. পেপিরাস কী?
খ. মিসরীয়দের চিত্র লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকের হোয়াংহো নদীর ভূমিকার মতোই কি নীল নদ মিসরীয় সভ্যতায় ভূমিকা রেখেছিল? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মিসরের ফারাও সম্রাটদের সমাধি সংরক্ষণের বিবরণ দাও।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পেপিরাস হলো নীল নদের তীরে জন্ম নেওয়া নলখাগড়া জাতীয় এক ধরনের ঘাস বা উদ্ভিদ, যা দিয়ে মিসরীয়রা কাগজ আবিষ্কার করে।

খ. মিসরীয়রা চিত্রপিপিভিত্তিক লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে সভ্যতার বিকাশে বিশেষ অবদান রেখেছে।
মিসরীয়দের লিখন পদ্ধতি ‘হায়ারোগ্লিফিক’ (Hieroglyphic) নামে পরিচিত। হায়ারোগ্লিফিক অর্থ পবিত্র লিপি। এটি ছিল একটি লিখিত ভাষা। এ ভাষায় নানাপ্রকার দ্রব্য, প্রাকৃতিক বিষয় প্রভৃতির ছবি আঁকা থাকত, যার মাধ্যমে জিনিসগুলোর পরিচয় ও নাম জানা সম্ভব হতো হায়ারোগ্লিফিক শিলালিপি প্রথমে তৈজসপত্র, ফলক এবং কবরের গায়ে খোদাই করা হতো। পরে মিসরে কাগজ আবিষ্কৃত হলে এতে এ লিপি উৎকীর্ণ করা হয়। এ লিখন পদ্ধতি তিনটি রূপে বিকাশ লাভ করেছে। যথা: চিত্রভিত্তিক, অক্ষরভিত্তিক এবং বর্ণভিত্তিক প্রায় ৭৫০টি চিত্রলিপির চিহ্ন দিয়ে প্রাচীন মিসরীয় লিপি পদ্ধতি তৈরি হয়েছিল।

গ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের হোয়াংহো নদীর মতোই নীল নদ মিসরীয় সভ্যতার কৃষির অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছিল। 
প্রাচীন সভ্যতাসমূহের মধ্যে মিসরীয় সভ্যতা অন্যতম। মিসরকে নীল নদের দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। কেননা মিসরীয় সভ্যতার বিকাশে নীল নদই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। মিসরের ক্ষেত্রে নীল নদের এ অবদানই চীনের হোয়াংহো নদীর ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। হোয়াংহোকে চীনের দুঃখ বলা হলেও চীনা সভ্যতার বিকাশে এ নদী বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। নদীর অববাহিকায় কৃষিকাজ ও প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা, ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও হোয়াংহো নদী অবদান রেখেছে। মিসরীয় সভ্যতার ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষ করা যায়। এ সভ্যতার বিকাশে নীল নদের ভূমিকা অতুলনীয়। মিসরীয় সভ্যতার সূচনাকারী জনগণ পানির প্রাপ্যতা, কৃষি উৎপাদন, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ, পশু পালনের জন্য তৃণভূমির সহজলভ্যতা ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে নীল নদের তীরবর্তী অঞ্চলসমূহে বসতি স্থাপন করেছিল। আর এ ক্ষেত্রে তারা বেশ উপকৃতও হয়েছিল। ঘর-গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নীল নদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মরুভূমিতে পরিণত হওয়া মিসর নীল নদের দানের ফলেই শস্য-শ্যামল ও সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিণত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকে উল্লিখিত চীনা সভ্যতায় হোয়াংহো নদীর ভূমিকা মিসরীয় সভ্যতার ক্ষেত্রে নীল নদের অবদানেরই ইঙ্গিত বহন করে।
উদ্দীপকে বর্ণিত সম্রাটের কফিন যেমন পাথরের দেয়াল দ্বারা সুরক্ষিত করা হয়েছে, তেমনি মিসরীয় সভ্যতায় ফারাও সম্রাটদের মৃতদেহ মমি করে সংরক্ষণ করা হতো।
মিসরীয়রা মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস করত। আর তাদের এ ধর্ম বিশ্বাসের ছাপ পড়েছিল স্থাপত্যিক নিদর্শনে। তারা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা ছিল। পিরামিড ছিল তাদের স্থাপত্য শিল্পের অসাধারণ সৃষ্টি। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই তারা নির্মাণ করেছিল প্রকা- সৌধের এ পিরামিডগুলো। আর এ ধরনের বিশ্বাস থেকে নির্মিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের কথাই উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে সম্রাটের কফিন সুরক্ষিত রাখতে পাথরের নির্মিত সশস্ত্র সৈন্যের পাহারা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে মিসরীয়রা তাদের ফারাও সম্রাটদের মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য পিরামিড নির্মাণ করেছিল। তারা বিশ্বাস করত ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের আত্মা স্বর্গে চলে যায় এবং সেখানে দেবতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু মৃত ফারাওদের শরীর পড়ে গেলে এক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এজন্য তারা মৃতদেহ প্রক্রিয়াজাত করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করত। এ মৃতদেহগুলোকে যেখানে কবর দেওয়া হতো, সেসব স্থান আগে থেকেই তৈরি করে রাখা হতো। এসব কবরে দেওয়া হতো সিন্দুকভর্তি অমূল্য গহনা, ধাতব তৈজসপত্র, মুদ্রা, দামি কাপড় প্রভৃতি। মৃত ফারাওদের দেহ ও মূল্যবান সামগ্রীর নিরাপত্তার জন্য মিসরীয়রা বড় বড় পাথরখ- কেটে পিরামিড নির্মাণ করত। এগুলো ছিল জ্যামিতিক ত্রিভুজের আকৃতিতে তৈরি অতি উঁচু এক একটি সমাধিসৌধ। পরিশেষে বলা যায়, ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই উদ্দীপকে বর্ণিত সম্রাটদের কফিন এবং মিসরীয় ফারাও সম্রাটদের মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো। তাদের উভয়ের ক্ষেত্রেই পাথরের দেয়াল দ্বারা মৃতদেহ সংরক্ষণের পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়। 

২. জাতিগত দাঙ্গায় সিয়েরা লিওনের জনজীবন প্রায় বিপর্যন্ত। সামান্য স্বার্থহানি ঘটলেই তারা বড় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী সেখানে যুদ্ধ, নির্যাতন, অসাম্য দূর করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করছে।
ক. ‘মালা’ কী?
খ. সাবায়ে মুয়াল্লাকাত বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জাতিগত দাঙ্গার সাথে প্রাক-ইসলামি আরবের কোন বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কর্মকান্ডের আলোকে আরব জীবনে ইসলামের ভূমিকা নিরূপণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মালা হলো প্রাক-ইসলামি আরবের একটি রাজনৈতিক সংগঠন বা মন্ত্রণাসভা।

খ. আরবের উত্তাল মেলায় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাতটি কবিতাকে সাবায়ে মুয়াল্লাকাত বা 'সপ্ত ঝুলন্ত' কবিতা বলা হতো।
মক্কার নিকটবর্তী উকাজের বার্ষিক মেলায় আরবের প্রখ্যাত কবিগণ কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। উকাজের বাৎসরিক সাহিত্য সম্মেলনে সাতটি কবিতাকে পুরস্কৃত করা হতো। সোনালি হরফে লিপিবদ্ধ করে এ কবিতাগুলো মক্কায় কাবার দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হতো। এ কবিতাগুলোর বিষয়বস্তু ছিল প্রেম, যুদ্ধবিগ্রহ, বীরত্বপূর্ণ কাহিনি, বংশ গৌরব, আরব . সমাজের আতিথেয়তা, স্বাধীনচেতা মনোভাব ইত্যাদি। এ কবিতাগুলোই সপ্ত ঝুলন্ত কবিতা বা সাবায়ে মুয়াল্লাকাত নামে পরিচিত ছিল।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জাতিগত দাঙ্গার সাথে প্রাক-ইসলামি যুগের রাজনৈতিক অবস্থার মিল পাওয়া যায়।
কোনো অঞ্চল বা রাষ্ট্রে একাধিক গোত্র বা দল থাকলে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য হওয়াটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে পরমতসহিঞ্চুতা না থাকলে সামান্য বিষয় নিয়েই গোত্রে গোত্রে সংঘাত হতে পারে। আর গোত্রীয় সংঘাত অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্ম দেয়। ফলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘি্নত হয়। যেমনটি প্রাক-ইসলামি আরব এবং উদ্দীপকের সিয়েরা লিওনে লক্ষ করা যায়।
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবে তুচ্ছ কারণেই গোত্রীয় কলহের সূত্রপাত হতো এবং এর তোর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বংশানুক্রমে চলত। যেমনু মদিনার আউস ও খালরাজ গোত্রের মধ্যে ‘বুয়াসের যুদ্ধ’ এবং মক্কার কুরাইশ ও হাওয়াযিন গোত্রস্বয়ের মধ্যে ‘হারবুল ফুজ্জার’ যুদ্ধ (৫৮৪-৫৮৮ খ্রি.) ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। অনবরত যুদ্ধ বিগ্রহের এ সময়কে 'আইয়াম আল-আরব' বলা হতো। পানির নহর, তৃণভূমি ও গবাদি পশুকে উপলক্ষ করে এক গোত্রের সঙ্গে অপর গোত্রের যুদ্ধের সূত্রপাত হতো। উদ্দীপকেও সিয়েরা লিওনে সংঘাতের নেতিবাচক ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এ সংঘাতের কারণেই সেখানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে পড়েছে। সুতরাং প্রাক-ইসলামি আরবের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার সাথে সিয়েরা লিওনের জাতিগত দাঙ্গার তুলনা করা চলে।

ঘ. বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী যেভাবে সিয়েরা লিওনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে, ঠিক একইভাবে অরাজকতাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল আরব সমাজে ইসলাম শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছে।
ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। এখানে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতার কোনো স্থান নেই। আর তাই আজ থেকে প্রায় ১৫০০ শত বছর পূর্বে বিশৃঙ্খল আরব সমাজে আবির্ভাব ঘটেছিল ইসলামের আর এর ধারক ছিলেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (স)। তিনি ইসলামের শাশ্বত ও সুমহান বাণী প্রচার করে নৈরাজ্যপূর্ণ আরব সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইসলামের এ অবদানেরই একটি খন্ডচিত্র বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকায় পরিলক্ষিত হয়।
সংঘাতপূর্ণ সিয়েরা লিওনে জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী যুদ্ধ, নির্যাতন ও অসাম্য দূর করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। ইসলামও এমন বিপর্যন্ত আরব সমাজে সঠিক পথ প্রদর্শন করে সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছিল। হত্যা, খুন, রাহাজানি, লুটতরাজ প্রভৃতি অসামাজিক কাজে সমাজ নিমজ্জিত ছিল। সমাজে নারীদের কোনো মর্যাদা ছিল না। তারা পণ্যসামগ্রী হিসেবে বাজারে বিক্রি হতো। কুসিদ প্রথার (চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের প্রচলন) বেড়াজালে সমাজে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল। গোত্রীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত এত প্রবল ছিল যে সামান্য কারণেই যুদ্ধ লেগে যেত। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গিবনের (Edward Gibbon) মতে, ‘অজ্ঞতার যুগে’ আরবে প্রায় ১৭০০ যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হয়েছিল। এরূপ অরাজকতাপূর্ণ সমাজে শান্তির মহান বার্তা নিয়ে আবির্ভূত হন হযরত মুহাম্মদ (স)। তিনি ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে সমাজে বৈপ্লবিক সংস্কার সাধন করেন তিনি সমাজে বিদ্যমান খুন-খারাপি, মদ্যপান জুয়াখেলা, সুদপ্রথা ইত্যাদি অনাচার দূর করেন। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে তাদেরকে মা, স্ত্রী, কন্যা হিসেবে সম্মানজনক অবস্থান দান করেন। গোত্রীয় দ্বন্দ্ব নিরসন করে তিনি সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করেন। উপর্যুক্ত আলোচনায় এটা প্রমাণিত যে, উদ্দীপকে বর্ণিত সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ইসলামের সুমহান আদর্শেরই আংশিক প্রতিফলন।

৩. জনাব আলী হায়দার সুনামগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি লক্ষ করলেন যে, জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে সুরমা নদীর উভয় তাঁর প্রাধিত হয়। পস্নাবনের ফলে উভয় তীরের ভূভাগ অত্যন্ত উর্বর হলেও বন্যায় উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ মহাসংকট কাটিয়ে উঠতে তিনি সুরমা নদীর তীরে বাঁধ দেয়ার উদ্যোগ নেন এবং খাল কেটে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফলে কৃষিক্ষেত্রে উন্মোচিত হয় এক নতুন দিগন্ত। তবে শিল্পবাণিজ্য ও সংস্কৃতিতে সুনামগঞ্জ থাকে অবহেলিত।
ক. কোন শব্দ থেকে ব্যাবিলন শব্দের উৎপত্তি?
খ. জাজিরাতুল আরব বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সুরমা নদীর সাথে কোন নদীর সামঞ্জস্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জনাব আলী হায়দারের জেলার তুলনায় তোমার পঠিত সভ্যতাটি কোন অর্থে অধিক সমৃদ্ধ? যুক্তি দাও।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘বাব ইল’ শব্দ থেকে ব্যাবিলন শব্দের উৎপত্তি।

খ. জাজিরাতুল আরব বলতে আরব ভূখন্ডকে বোঝায়।
জালিরা' আরবি শব্দ। এর অর্থ উপদ্বীপ। আর আরব একটি ভূখন্ড-র নাম। সুতরাং জাজিরাতুল আরব অর্থ আরব উপদ্বীপ। এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আরব দেশ বিশ্বের সর্ববৃহৎ উপদ্বীপ। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এটি একটি বৈচিত্রময় দেশ। এর তিন দিক বিশাল জলরাপি এবং একদিক বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তর দ্বারা বেষ্টিত। এরূপ ত্রিভুজাকৃতির ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই আরব দেশকে জাজিরাতুল আরব বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের সুরমা নদীর সাথে মিসরীয় সভ্যতার নীল নদের সামঞ্জস্য রয়েছে।
প্রকৃতির অপার দান নদী একদিকে যেমন মানুষের জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে, তেমনি পস্নাবন কিংবা বন্যায় নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে নদী শাসনের যথাযথ কৌশল গ্রহণ করে এ ধরনের সংকট নিরসন করা সম্ভব হয়, যেমনটি লক্ষ করা যায় মিসরীয়দের বর্ষা মৌসুমে নীল নদে বাঁধ নির্মাণ করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থার মধ্যে। এভাবে পানি ধরে রেখে তা কৃষি কাজে ব্যবহার করায় মিসরীয়রা কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছিল। নীল নদকে কেন্দ্র করেই তারা সভ্যতার সূচনা করেছিল। উদ্দীপকে সুরমা নদীর এমন অবদানের চিত্রই লক্ষণীয়।
বর্ষা মৌসুমে পস্নাবন বা বন্যা দেখা দিলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ সংকট উত্তরণে জেলা প্রশাসক জনাব আলী হায়দার সুরমা নদীতে বাঁধ দিয়ে এবং খাল কেটে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করেন, যা কৃষির ব্যাপক উন্নতিতে অবদান রাখে। একই পরিস্থিতি লক্ষ করা যায় প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়। ইতিহাসে 'নীল কন্যা' নামে খ্যাত প্রাচীন মিসরে প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর মাসে বন্যায় বা পস্নাবনে নীল নদের উভয় তীর পস্নাবিত হতো। ফলে ফসলের প্রচুর ক্ষতি হতো। ফসলের ক্ষতি এড়াতে তারা নীল নদে বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রাখার কৌশল উদ্ভাবন করে। ফলে দেখা যায়, বন্যা শেষে নীল নদের উভয় তাঁর পলি মাটিতে ভরে যেত, যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সুনামগঞ্জবাসীর জীবনে সুরমা নদীর অবদানের সাথে মিসরীয় সভ্যতায় নীল নদের অবদান সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. শিল্প, সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করায় মিসরীয় সভ্যতা জনাব আলী হায়দারের জেলার তুলনায় অধিক সমৃদ্ধ। উদ্দীপকের বর্ণনানুযায়ী জনাব আলী হায়দারের জেলাটি কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি অর্জন করলেও শিল্প, বাণিজ্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি দিক থেকে বেশ অবহেলিত। কিন্তু মিসরীয় সভ্যতায় এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। আধুনিক সভ্যতার মূলভিত্তি রচনাকারী মিসরীয়রা শিল্প, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তাদের অবদানের কাছে পরবর্তী প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সকল সভ্যতাই ঋণী। মিসরীয়রা স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জের ব্যবহারের সাহায্যে নানা প্রকার অলংকার ও আসবাবপত্র নির্মাণ করত। অস্ত্র-শস্ত্র তৈরিতে তারা অনেক পারদর্শী ছিল। সুতি, পশমি এমনকি নানা প্রকার কারুকার্যখচিত বয়ন তৈরিতেও তারা দক্ষ ছিল। শিক্ষা, সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাদের অবদান ছিল অসামান্য। তারাই প্রথম লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। 'হায়ারোগ্লিফিক' (Hieroglyphic) নামক চিত্রভিত্তিক লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন করে তারা মনের ভাব প্রকাশ করত। তাদের নির্মিত পিরামিডগুলো প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম ছিল। তাদের স্থাপত্য শিল্পের কলাকৌশল গ্রিক ও রোমান স্থাপত্য শিল্প ও মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় স্থাপত্য শিল্পকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। তাদের সাহিত্য ও দর্শন চর্চা ছিল ধর্মভিত্তিক। "পিরামিড টেকস্টস' 'মেম্ফিস ড্রামা', 'রয়াল সান হিম', 'মৃতদের পুস্তক' ইত্যাদি তাদের সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এভাবে মিসরীয়রা শিল্প, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবদান রেখে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত জেলা অর্থাৎ সুনামগঞ্জ সুরমা নদীর পানে ও নানা কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে মিসরীয়দের মতো কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। কিন্তু শিল্প, সংস্কৃতি, স্থাপত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা কোনো অবদান রাখতে পারেনি। তাই উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে এটি প্রমাণিত যে, সুনামগঞ্জের চেয়ে মিস্ত্রীয় সভ্যতা অধিক সমৃদ্ধ।

৪. এক সময় পৃথিবীতে দাস ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। শক্তিশালী দেশ তাদের কৃষিকাজের জন্য দরিদ্র দেশ থেকে অশিক্ষিত লোকদেরকে এনে কৃষিকাজে নিয়োজিত করত। এদের অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা ধনী দেশ কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। তবে তাদের কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা ছিল না। বরং তাদের উপর নির্যাতন করা হতো। তারা তাদের প্রভুর কথা মেনে চলতে বাধ্য হতো। মত প্রকাশের অধিকার না থাকায় এক সময় তারা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। গৃহ যুদ্ধের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য 'ঢ' দেশের সরকার সংবিধান প্রণয়ন করে দাসদের স্বাধীনতা প্রদান করে। এ পদক্ষেপের ফলে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
ক. হুদায়বিয়ার সন্ধি কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?
খ. আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ইসলাম পূর্ব আরবের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যবস্থা বিলুপ্তির ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষে ইসলামের ইতিহাসের অনুরূপ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হুদায়বিয়ার সন্ধি ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত।

খ. আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে ইসলামপূর্ব আরবের অরাজক ও বিশৃঙ্খল সময়কালকে বোঝায়।
আইয়ামে জাহেলিয়া শব্দটি আরবি। এর বাংলা অর্থ অজ্ঞতা বা অন্ধকারের যুগ। মহানবি (স)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবের প্রায় একশ বছর সময়কালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয়। এ সময় মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার নৈতিকতা, সততা, দায়িত্বজ্ঞান ও শালীনতা ছিল না। অন্যায়-অনাচারে সমাজ ভরপুর ছিল। এ জন্য এ সময়কালকে আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকারের যুগ বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে প্রাক-ইসলামি যুগের আরবের দাস প্রথার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
দাস প্রথা প্রাচীন বিশ্বের একটি কুপ্রথা। এ প্রথায় দেখা যায়, বিভিন্ন প্রয়োজনে দাসদেরকে ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। এরপর তাদের ওপর কারণে অকারণে অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো। উদ্দীপকে এই দাস প্রথারই একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে, যা ইসলামপূর্ব আরবের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
ইসলামপূর্ব আরবে পণ্যদ্রব্যের মতো হাটে-বাজারে দাস-দাসী বিক্রি করা হতো। তাদের কোনো স্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদা ছিল না। দাস দাসীদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করা হতো। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাস-দাসীদের বিয়ে হতো, তবে তাদের সন্তান-সন্ততিও মনিবের দাস হিসেবে পরিগণিত হতো। তাদেরকে উপপত্নী হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে তাদের জীবনযাপন করতে হতো।
উদ্দীপকেও দাসদের ওপর অনুরূপ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এক সময় পৃথিবীতে দাসরা ছিল ইসলামপূর্ব আরবের ন্যায় অবহেলিত। তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছু ছিল না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ইসলামপূর্ব আরবের দাস প্রথার চিত্রই উপস্থাপন করে।

ঘ. উক্ত ব্যবস্থা অর্থাৎ দাস প্রথা বিলুপ্তির ক্ষেত্রে উদ্দীপকে গৃহীত পদক্ষেপ ইসলামের ইতিহাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দাস-দাসীরা আমাদের মতোই মানুষ। তাই তাদের স্বাধীনতা হরণ করা বা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। এ প্রেক্ষিতেই বর্তমান বিশ্বে দাস প্রথার বিলোপ ঘটেছে। তবে ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করণে এ প্রথার বিরুদ্ধে মহানবি (স)-এর অবস্থানই সামনে চলে আসে।
উদ্দীপকে 'ঢ' দেশের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে দাসদের স্বাধীনতা প্রদানের বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে 'ঢ' দেশের দাসরা পূর্ণ মর্যাদা ও অধিকার ফিরে পায়। অথচ ইসলামের ইতিহাসে আজ থেকে ১৫০০ বছর আগেই মহানবি (স) দাস দাসীদেরকে প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েছিলেন। মহানবি (স) দাস প্রথাকে ঘৃণা করতেন এবং দাসমুক্তিকে উৎসাহিত করতেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, গোলামকে আলাদি দানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছুই নেই।' তিনি বিদায় হজের ভাষণে (৬৩২ খ্রি.) দাস-দাসীদের প্রতি সদয় আচরণের নির্দেশ দানের মাধ্যমে তাদের অধিকার সুনিশ্চিত করেছিলেন। তিনি এ ভাষণে বলেছিলেন, "দাস-দাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের ওপর কোনোরূপ অত্যাচার করো না। তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তাই খাওয়াবে। তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তাই পরাবে- ভুলে যেও না তারাও তোমাদের মতোই মানুষ। মূলত মহানবি (স)-এর এরূপ ভূমিকা সারা বিশ্বের জন্যই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
এর ফলেই আজ দাস প্রথার উচ্ছেদ সম্ভব হয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, দাস প্রথার বিলোপে ইসলামের ইতিহাসে গৃহীত পদক্ষেপ উদীপকে গৃহীত উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৫. সার্কভুক্ত দেশগুলোর মহিলা পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ক্রিস্টিন মেডোনা অধিকার রক্ষায় নারী আন্দোলনের কার্যকর ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে একটি সময় ছিল যখন কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। তাদের কোনো অধিকার ছিল না। একজন পুরুষ একই সাথে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারত। তারা জোর যার মুল্লুক তারা এ নীতিতে বিশ্বাসী ছিল।
ক. ‘ইয়েমেন' শব্দের অর্থ কী?
খ. উটকে কেন মরুভূমির জাহাজ বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে প্রাক-ইসলামি আরবের নারীদের যে চিত্র ফুটে উঠেছে।তা ব্যাখ্যা করা।
ঘ. 'জোর যার মুল্লুক তার'- উক্তিটি তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'ইয়েমেন' শব্দের অর্থ সুখী বা সৌভাগ্যবান।

খ. মরূজীবনের প্রধান সহায়ক বাহন হওয়ায় উটকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়।
আরবের অধিকাংশ অঞ্চলই মরুময়। আর উত্তপ্ত মরু অঞ্চলে উটই চলাচলের একমাত্র উপযোগী প্রাণী। তাই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় মরুময় আরবে এটি সর্বাধিক গৃহপালিত প্রাণী। মরুবাসীরা খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ, যোগাযোগ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান বাহন হিসেবে উঠকে ব্যবহার করে। তাই একে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে প্রাক-ইসলামি আরবের অধিকারবঞ্চিত নারীদের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও যুগে যুগে নারীরা শিকার হয়েছেন নানা অত্যাচার-নির্যাতন আর বখনার। তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের দাবিদার হলেও কোনো যুগেই সে দাবি পরিপূর্ণভাবে আদায় হয়নি। নারীদের এ অসহায় অবস্থান এবং অধিকার বর্ণনার দিকটিই উদ্দীপক এবং প্রাক-ইসলামি আরব সমাজে লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে জাতিসংঘের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ক্রিস্টিন মেডোনার কথায় ভারতীয় উপমহাদেশে কোনো এক সময়ে বিদ্যমান নারীদের অসহায় অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। এখানে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো বলে জানা যায়। এছাড়া এখানে একজন পুরুষ একই সাথে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারতো। নারীরা ছিল সর্বক্ষেত্রে অধিকারবঞ্চিত। এ বিষয়গুলো প্রাক-ইসলামি আরবের নারীদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় তখনকার সময়ে আরবীয় নারীদের সামাজিক মর্যাদা বা অধিকার বলে কিছুই ছিল না। কন্যাসন্তানের জন্মকে আরববাসীরা অভিশাপ ও লজ্জাকর বলে মনে করত। অনেক পিতা-মাতা দারিদ্রের কশাঘাতে এবং সমাজের নিন্দার কারণে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। আবার, আরব সমাজে পুরুষেরা অবৈধভাবে একাধিক নারী গ্রহণ করত। বিবাহ প্রথা বলতে কিছুই ছিল না বলে তারা নারীদেরকে দাসী, অস্থাবর সম্পত্তি এবং ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করত। এক কথায় সমাজে তাদের কোনো অধিকার বা মর্যাদা ছিল না। এ আলোচনা থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে প্রাক-ইসলামি আরবের অধিকারবঞ্চিত নারীদের দৃশ্যপটই অঙ্কিত হয়েছে।

ঘ. 'জোর যার মুল্লুক তার’ উদ্ভিটির মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত ইসলামপূর্ব আরবে আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতির প্রতি স্থগিত করা হয়েছে।
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয় ও নৈরাশ্যজনক। তৎকালীন আরবের অধিকাংশ অঞ্চলই ছিল স্বাধীন তবে এখানে কেন্দ্রীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতাই বেশি প্রাধান্য পেত। উদ্দীপকের 'জোর যার মুল্লুক তার'- উদ্ভিটি আরবের এ অবস্থাকেই ধারণ করে।
উদ্দীপকে জাতিসংঘের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ক্রিস্টিন মেডোনা ভারতীয় উপমহাদেশের এক সময়ের কিছু নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরেন। এখানে দেখা যায়, তৎকালীন ভারতবাসী 'জোর যার মুল্লুক তার' এ নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। এমন চিত্র আমরা প্রাক-ইসলামি আরবেও দেখতে পাই। সরকার কাঠামো বা শাসন পদ্ধতি সম্বন্ধে তখনকার আরবীয়রা অজ্ঞ ছিল। তাই সেসময়ে আরবের প্রায় সর্বত্রই 'জোর যার মুল্লুক তার' নীতি বিদ্যমান ছিল। রক্তের বদলে রঙ, চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত নীতিতে তারা বিশ্বাসী ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে Blood Money বা 'আল দিয়াৎ' (ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খুনের ক্ষতিপুরণ) প্রদান করে হত্যাকারীও মুক্তি লাভ করত। নিজ নিজ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তারা নানা ধরনের অন্যায়-অত্যাচার করে বেড়াত। কিন্তু তাদের কাজের কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। যাদেরই ক্ষমতা ছিল তারাই সমাজে টিকে থাকত। অর্থাৎ সেখানকার শাসন ব্যবস্থা ছিল ব্যক্তিগত দাপট বা শক্তিনির্ভর। উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত কোনো এক সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং প্রাক-ইসলামি আরবে আইনের শাসনের অভাবে জোর-জবরদস্তিমূলক শাসন কায়েম ছিল।

৬. সিন্ধু সভ্যতা প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অন্যতম। এটি একটি নগরভিত্তিক সভ্যতা। তাদের লিখন পদ্ধতি ছিল চিত্রভিত্তিক। সিন্ধু সভ্যতা নগরসভ্যতা হলেও তারা উন্নত কৃষিব্যবস্থার প্রচলন করেছিল। যন, গম, তুলাসহ নানা প্রকার ফসল তারা উৎপন্ন করত। ফলন বৃদ্ধির জন্য জমিতে বাঁধ দিত। বন্যার পানিকে সংরক্ষণ করে কাজে লাগাত আবার জলসেচের জন্য নালা কেটে পানি এনে ফসলে দিত। 
ক. মেমফিস কী?
খ. রাজা মেনেস ফেরাউনের মর্যাদা লাভ করেন কীভাবে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সিন্ধু সভ্যতার লিখন পদ্ধতির সাথে প্রাচীন কোন সভ্যতার লিখন পদ্ধতির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সিন্ধু সভ্যতার কৃষিব্যবস্থা মিসরীয় সভ্যতার কৃষিব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মেমফিস একটি ড্রামা, যা প্রাচীন মিসরীয় সাহিত্যকর্মের নিদর্শন বহন করে।

খ. উত্তর ও দক্ষিণ মিসরকে একত্রিত করার মাধ্যমে রাজা মেনেস ফেরাউনের মর্যাদা লাভ করেন। প্রাক-ডাইনেস্টি যুগাবসানের পর মিসর উত্তর মিসর এবং দক্ষিণ মিসর এ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে এ দু'অংশকে একত্র করে মেনেস তার শাসক নিযুক্ত হন। তাঁর রাজধানী স্থাপিত হয়। মেমফিস শহরে। এভাবে রাজা মেনেস ফেরাউনের মর্যাদা লাভ করেন।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সিন্ধু সভ্যতার লিখন পদ্ধতির সাথে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার লিখন পদ্ধতির সাদৃশ্য রয়েছে।
লিপি বা লিখনের মাধ্যমে ভাষাকে লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। মৌখিক ভাষার স্থানগত ও কালগত সীমাবন্ধতা জয় করেছে এ লিখিত ভাষা। এ কারণে লিপি বা লিখন পদ্ধতি সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার। প্রাচীন মিসরীয় এবং উদ্দীপকের সিন্ধু উভয় সভ্যতাই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে মিসরীয়রা চিত্রলিপিভিত্তিক লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে। তাদের লিপির নাম ছিল 'হায়ারোগ্লিফিক', যার অর্থ "পবিত্র লিপি'। এটি ছিল একটি লিখিত ভাষা। এ লিখিত ভাষায় নানা প্রকার দ্রব্য, প্রাকৃতিক বিষয় প্রকৃতির ছবি আঁকা থাকত। এ থেকে জিনিসগুলোর পরিচয় ও নাম জানা সম্ভব হতো। হায়ারোগ্লিফিক শিলালিপি প্রথমে তৈজসপত্র, ফলক এবং কবরের গায়ে খোদাই করা হতো। পরে মিসরে প্যাপিরাস উদ্ভিদ থেকে কাগজ আবিষ্কৃত হলে এতে এ লিপি উৎকীর্ণ করা হয়। প্রায় ৭৫০টি চিত্রলিপির চিহ্ন দিয়ে এ প্রাচীন মিসরীয় লিপি পদ্ধতি তৈরি করা হয়। উদ্দীপকে উল্লিখিত সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরাও চিত্রভিত্তিক লিপি উদ্ভাবন করেছে। অর্থাৎ চিত্রের মাধ্যমে এ লিপিতে মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। আর এ দিক থেকেই মিসর ও সিন্ধু সভ্যতার লিখন পদ্ধতি একই প্রকৃতির।

ঘ. পদ্ধতিগত দিক থেকে উদ্দীপকে বর্ণিত সিন্ধু সভ্যতার কৃষি ব্যবস্থা মিসরীয় কৃষি ব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি। 
কৃষিকাজের জন্য পানিসেচ ও উর্বর ভূমি প্রয়োজন হয়। নদী অববাহিকায় এ দুইয়ের প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হয়। ফলে কৃষি উৎপাদনের জন্য নদীর পার্শ্ববর্তী ভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। আলোচ্য মিসর ও সিন্ধু সভ্যতা তার প্রমাণ বহন করে। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালের শুরুতে মধ্য আফ্রিকায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে নীলনদে স্নাবন সৃষ্টি হতো। ফলে এর পানি দুকূল ছাপিয়ে যেত। এতে পাহাড়ি মাটি, বরফগলা পানি অজস্র জলজ উদ্ভিদ, আবাদি জমিতে এসে পড়ত। এতে জমিতে প্রচুর পলি জমা হতো, যা জমির উর্বরাশক্তি দ্বিগুণ বাড়িতে দিত। নীল নদের পানিবাহিত এ পলিমাটিতে মিসরীয়রা চাষাবাদ করে প্রচুর ফসল ফলাতে সমর্থ হয়েছিল। সে সময় কৃষি উৎপাদন হতো প্রচুর পরিমাণে। যার কারণে মিসরের ব্যবসা-বাণিজ্যেও সমৃদ্ধি এসেছিল। আর এ কৃষি উৎপাদন প্রাচীন মিসরীয়দের প্রধান জীবিকা হওয়ায় এ সময় কৃষিকে কেন্দ্র করেই বসতি স্থাপন, বাঁধ নির্মাণ কৌশল, সেচ ব্যবস্থা ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। প্রাচীন মিসরীয়রা কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছিল। উদ্দীপকে বর্ণিত সিন্ধু সভ্যতাও সিন্ধু নদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। সিন্ধুর অববাহিকায় তারা কৃষির ব্যাপক প্রচলন করেছিল। সিন্ধুর পানি তাদের কৃষি কাজের মূল উৎস ছিল। নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রেখে তারা কৃষিকাজে ব্যবহার করত, যা মিসরীয় সভ্যতারই অনুরূপ।
পরিশেষে বলা যায়, নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা হওয়ায় উদ্দীপকের সিন্ধু এবং প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতা উভয়ই কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছিল।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. চৌধুরী সাহেব একটি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনীত হয়ে একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করেন। সে গঠনতন্ত্রে সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি কর্তব্যে অবহেলা, অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া এবং অনৈতিক কাজে জড়িতদের বহিষ্কারের কথাও লিপিবন্ধ করা হয়। এছাড়া তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সম্মুখে একটি 'ন্যাচারাল ঘড়ি' স্থাপন এবং প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাকার্যক্রম যুগোপযোগী করার জন্য একটি 'বার্ষিক শিক্ষাকর্মসূচি প্রকাশ করেন, যা ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের কর্মকান্ড পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
ক. ‘ইয়ামেন’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কিউনিফর্ম বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সভাপতির গঠনতন্ত্রের সাথে প্রাচীন সুমেরীয় সম্রাট ডুঙ্গির কোন কার্যক্রমটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. শুধু নিয়ম-নীতি প্রণয়নই নয়, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সুমেরীয়রা অনেক অবদান রেখেছিলত উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘ইয়ামেন’ শব্দের অর্থ সুখী বা সৌভাগ্যবান।

খ. কিউনিফর্ম হলো সুমেরীয়দের আবিষ্কৃত লিখন পদ্ধতি। সভ্যতার প্রথম দিকে সুমেরীয় লিপি ছিল মিসরীয়দের মতো চিত্রলিপি ভিত্তিক। 
পরবর্তীকালে নিজেদের লেখাকে গতিশীল করতে তারা নতুন লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন করে, যা ‘কিউনিফর্ম’ (Cuneiform script) বা কীলকাকর নামে পরিচিত। সুমেরীয়রা কাদামাটির প্লেটে খাগের কলম (Reed Pen) দিয়ে কৌপিক কিছু রেখা ফুটিয়ে তুলত। খাজকাটা চিহ্নগুলো দেখতে অনেকটা ছিল তীরের মতো। কিউনিফর্মকে বলা হয় অক্ষরভিত্তিক চিত্রলিপি। এ লিপি বামদিক থেকে ডানদিকে লেখা হতো।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সভাপতির নিয়মনীতির সাথে প্রাচীন সুমেরীয় সম্রাট ভুগির প্রণীত আইনের সাদৃশ্য রয়েছে। 
সুশৃঙ্খল ও সুন্দর সমাজব্যবস্থার জন্য আইনের কোনো বিকল্প নেই। সুমেরীয় সভ্যতায় এজন্য আইনের প্রবর্তন করা হয়েছিল। একই উদ্দেশ্যে অর্থাৎ শৃঙ্খলা রক্ষার্থে উদ্দীপকেও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আইনের ন্যায় কিছু নিয়ম-নীতি প্রবর্তিত হয়েছে। 
উদ্দীপকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি যেমন সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করেন, তেমনি সুমেরীয় সম্রাট ভুলি সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য সুমেরীয় আইন প্রণয়ন করেন। ভুঙ্গি তার সাম্রাজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রচলিত আইনগুলো সংগ্রহ করে সংকলন করেন। প্রতিটি অপরাধের জন্য অপরাধীকে সমান কষ্টদায়ক সাজা প্রদান সুমেরীয় ফৌজদারি আইনের বিধান ছিল। এক্ষেত্রে চোখের বদলে চোখ, অঙ্গের বদলে অঙ্গ কর্তনের বিধান ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজেকে বা তার পরিবারকে উদ্যোগী হয়ে ন্যায়বিচারের প্রার্থনা করতে হতো। বিচারালয় তখন বাদি ও বিবাদির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বা সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে কাজ করতো। উদ্দীপকের সভাপতিও তার গভর্নিং বডি পরিচালনার জন্য উত্ত সম্রাটের ন্যায় কিছু নিয়ম তৈরি করেছেন। এ নিয়মে কর্তব্যে অবহেলা ও অন্যায়ের জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে। তাই এ নিয়মনীতিকে সম্রাট ভুক্তির প্রণীত আইনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে।

ঘ. শুধু নিয়ম-নীতি প্রণয়নই নয়, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সুমেরীয়রা ব্যাপক অবদান রেখেছিল। 
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুমেরীয়রা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তারা বছরকে ১২ মাস, দিন-রাত্রিকে ঘণ্টায় এবং ঘণ্টাকে মিনিটে বিভক্ত করে। দিন এবং রাতের সময় নিরূপণের জন্য সুমেরীয়রা পানিঘড়ি ও স্বর্ণঘড়ি আবিষ্কার করে। তারা ২৪ ঘন্টায় এক দিন ৭ দিনে এক সপ্তাহ এবং ৬০ মিনিটে এক ঘণ্টার নিয়ম প্রবর্তন করে। তারা গুণ, ভাগ, বর্গমূল ও ঘনমূলের ব্যবহার জানত। তারা ‘০’ (শূন্য)-এর আবিষ্কার করে। কাপড় ও জমি পরিমাপের জন্য সুমেরীয়রা কাঠের পরিমাপদ- ব্যবহার করত।
উদ্দীপকে গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়মনীতি প্রণয়নের পাশাপাশি তার সদস্যদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
একইভাবে সুমেরীয়রাও আইন প্রণয়নের সাথে সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছিল। সুমেরীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্য ও চন্দ্রের আপেক্ষিক অবস্থিতি নির্ণয় করেছিল এবং গ্রহের সময় নিরূপণ করতে সক্ষম হয়েছিল। পরিবর্তনশীল তারকারাজির প্রতি তাদের আগ্রহ থাকায় নভোম-ল সম্বন্ধে জ্ঞান প্রসার লাভ করে। তারা রাশিচক্রকে বারো ভাগে ভাগ করে নক্ষত্রপুঞ্জের নামকরণ করে। সুমেরীয়রা চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ সম্বন্ধেও ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম ছিল। সুমেরীয়দের চিকিৎসাশাস্ত্র জানুবিদ্যা দ্বারা প্রভাবিত ছিল। 
খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ অব্দে সুমেরীয় চিকিৎসকেরা বেশ কিছু রসায়নের গুণ ও প্রণালী নির্ণয় করে। ভেষজ চিকিৎসাশাস্ত্রেও তারা অধিক সাফল্য দেখিয়েছে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, আইনের পাশাপাশি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুমেরীয়রা যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেছিল।

৮. দীনবন্ধু মিত্র রচিত জমিদার দর্পণ নাটতে সাধারণ জনগণের ওপর তৎকালীন জমিদারদের অত্যাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতনের করুণ কাহিনিচিত্রের বিবরণ জানা যায়। সেখানে জমিদারদের পাশাপাশি সুদখোর মহাজনদের অত্যাচারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। পরিদ্র্য জনগণ বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিত। ফলে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বিশাল ব্যবধানের সৃষ্টি হওয়ায় সমাজে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছিল। এ সব কিছুই সংঘটিত হতো শাসক শ্রেণির ছত্রছায়ায়। 
ক. জিগুরাত কীসের নাম?
খ. হায়ারোগ্লিফিক কী? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চিত্র প্রাক-ইসলামি আরবের কোন অবস্থার প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকটি প্রাক-ইসলামি আরবের ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থারই বহিঃপ্রকাশ- বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জিগুরাও সুমেরীয়দের প্রধান ধর্মমন্দিরের নাম।

খ. হায়ারোগ্লিফিক হলো প্রাচীন মিসরীয়দের চিত্রলিপিভিত্তিক লিখন পদ্ধতি। 
হায়ারোগ্লিফিক অর্থ পবিত্র লিপি। এটি ছিল একটি লিখিত ভাষা। এ লিখিত ভাষায় নানাপ্রকার দ্রব্য, প্রকৃতি ও বিষয় প্রভৃতির ছবি আঁকা থাকত। হায়ারোগ্লিফিক শিলালিপি প্রথমে তৈজসপত্র, ফলক এবং কবরের গায়ে খোদাই করা হতো। পরে মিসরে প্যাপিরাস নামক কাগজ আবিষ্কৃত হলে এতে এ লিপি উৎকীর্ণ করা হয়। প্রায় ৭৫০টি চিত্র লিপির চিহ্ন দিয়ে এ প্রাচীন মিসরীয় লিপি পদ্ধতি তৈরি হয়েছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চিত্র প্রাক-ইসলামি আরবের অসংগতিপূর্ণ সামাজিক অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সমাজে শ্রেণিবিভাজন, সুপ্রথা প্রভৃতি চালু থাকলে সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। প্রাক-ইসলামি আরবই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘জমিদার দর্পণ' নাটকেও এ দুটি সামাজিক অসংগতি সমাজে কীরূপ প্রভাব ফেলে তা বর্ণিত হয়েছে।
প্রাক-ইসলামি আরবে যাযাবর বেদুইন এবং শহরের স্থায়ী বাসিন্দা এ দুটি শ্রেণি ছিল। শহরবাসীরা উন্নত জীবনযাপন করলেও বেদুইনরা সভ্যজীবনের দেখা পায়নি। এ শ্রেণিবিভাজনের সূত্র ধরেই সে সময় আরবে অন্যায়, অবিচার বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবার কুসীদ বা চক্রবৃদ্ধির হারে সুদ প্রথা আরবের সাধারণ অধিবাসীদের নিকট অভিশাপ হিসেবে গণ্য হতো। এ প্রথা এরূপ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ঋণ গ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি সময়মতো সুদ দিতে না পারলে মহাজন ঋণগ্রহণকারীর স্ত্রী অথবা পুত্র-কন্যাদের দাসে পরিণত করত। উদ্দীপকে বর্ণিত নাটকেও শ্রেণিবিভাজন বিদ্যামন। আবার এখানে মহাজনদের সুদ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জুলুমের বর্ণনাও পাওয়া যায়। সুতরাং নাটকটি প্রাক-ইসলামি আরবের নেতিবাচক সামাজিক অবস্থাকেই তুলে ধরে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকদের শ্রেণিশোষণের মধ্যে প্রাক-ইসলামি আরবের ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। 
শাসক শ্রেণি কর্তৃক সাধারণ জনগণকে শোষণ করার চিত্র ইতিহাসে বিরল নয়। ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়েই শাসক শ্রেণি এরূপ শোষণের পথ বেছে নেয়। উদ্দীপকের শোষক শ্রেণিও তার ব্যতিক্রম নয় এবং তাদের কর্মকান্ড প্রাক-ইসলামি আরবের রাজনৈতিক অবস্থার সাথেই তুলনীয়।
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত নৈরাজ্যজনক। এ নৈরাজ্যের মূলে ছিল গোত্রীয় সংঘাত। এ সংঘাত ছিল মূলত শাসক শ্রেণির ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। সে সময় আরবে পানির নহার, গবাদি পশু, তৃণভূমি দখল, ঘোড়দৌড়ের মতো সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতো। গোত্রের প্রধান শেখ নামে পরিচিত ছিলেন। তারা চাইলে এ সংঘর্ষ এড়াতে পারতেন। কিন্তু তাদের ক্ষমতার মোহ তৎকালীন আরবে অশান্তি আর নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করেছিল। উদ্দীপকেও দেখা যায়, শাসক শ্রেণির দৌরাত্ম্যে সাধারণ জনগণের জীবন ওষ্ঠাগত। তাছাড়া জমিদারদের অত্যাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতনে সাধারণ মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা নেই বিঘি্নত হচ্ছে। প্রাক-ইসলামি আরবের রাজনৈতিক অবস্থার সাথেই এর তুলনা চলে। পরিশেষে বলা যায়, শাসক শ্রোণির ক্ষমতালিপ্সার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে, প্রাক-ইসলামি আরবে যেমন এটি লক্ষণীয়, তেমনি উদ্দীপকের বর্ণনায়ও এ বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

৯. মিতু বাবার সাথে একুশে বইমেলায় গেল। সে বাবাকে প্রশ্ন করল, ‘বাবা, বইমেলা কী?’ বাবা বলল, ‘বইমেলা হলো এক ধরনের সাহিত্য মেলা। এখানে বিভিন্ন লেখকের বই বিক্রয় ও প্রকাশিত হয়। মাসব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার ও আলোচনা হয়। সারা দেশের কবি, সাহিত্যিক ও সাহিত্যামোদী মানুষ এখানে মিলিত হন। এখানে প্রতিবছর কয়েকজন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিককে একুশে পদক দেওয়া হয়।’ মিতু দেখল, একদিকে আলোচনা সভা, অন্যদিকে গান বাজনা। চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। সবাই হাসি মুখে বইমেলায় হাটছে আর বই কিনছে। এ যেন সকল শ্রেণি মানুষের মিলনমেলা।
ক. আইয়ামে জাহেলিয়া শব্দের অর্থ কী?
খ. হযরত মুহাম্মদ (স) কে আল আমিন বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত একুশে পদকের সাথে প্রাক-ইসলামি যুগের কোন পুরস্কারের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর উত্ত মেলায় প্রাক-ইসলামি যুগের সাংস্কৃতিক অবস্থার সামগ্রিক প্রতিফলন ঘটেছে? তোমার মতামত যুক্তিসহ লিখ।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আইয়ামে জাহেলিয়া শব্দের অর্থ অজ্ঞতার যুগ।

খ. বিশ্বাসযোগ্যতা ও সত্যবাদিতার কারণে মহানবি (স)-কে আল আমিন বলা হতো।
হযরত মুহাম্মদ (স) ছোটবেলা থেকেই সত্যবাদী ছিলেন। এ কারণে আরবের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিরা তাঁকে আমানতদার হিসেবে গ্রহণ করেন। নম্র ব্যবহার, সততা, সরলতা, বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা প্রভৃতি কারণে তিনি আরববাসীর শ্রদ্ধা অর্জন করেন। তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠা, চরিত্রিক মাধুর্য, সরলতা, পবিত্রতা, সত্যের প্রতি অনুরাগ ইত্যাদি কারণে মক্কাবাসীগণ তাঁকে 'আল-আমিন' বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত একুশে পদকের সাথে উকাল মেলায় নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের মিল রয়েছে। 
আরবের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিক ‘উকাজ মেলার' সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল কাব্য প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর এক বা একাধিক কবিতাকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা করে পুরস্কার দেওয়া হতো। একুশে বই মেলাতেও প্রতি বছর সাহিত্যকর্মের জন্য অনুরূপ পুরস্কার প্রদান করে। প্রাক-ইসলামি আরবে হজ মৌসুমে মাসব্যাপী উকাজের বাৎসরিক মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এ মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। এ প্রতিযোগিতায় আমর ইবনে কুলসুম, লাবিদ ইবনে রাবিয়া, আনতারা ইবনে শাদদাস, ইমরুল কায়েস প্রমুখ কবি অংশগ্রহণ করতেন। এখানে শ্রেষ্ঠ কবিতা নির্বাচন করে পুরস্কৃতও করা হতো। এই মেলায় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাতটি কবিতা সোনালি অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে কাবাঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হতো। এগুলো 'সাবায়ে মুয়াল্লাকাত' নামে পরিচিত ছিল। উদ্দীপকেও দেখা যায়, প্রতিবছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বইমেলায় বাংলাদেশের সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ মেলায় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকগণকে সম্মানিতও করা হয়। তাই বলা যায়, একুশে পদকের সাথে 'উকাজ মেলায়' নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্য প্রদত্ত পুরস্কারের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উক্ত মেলায় অর্থাৎ উকাজ মেলায় প্রাক ইসলামি যুগের সাংস্কৃতিক অবস্থার সামগ্রিক প্রতিফলন ঘটেছে। 
উকাজ মেলা ছিল আরব সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। সেখানে সাহিত্যের বাইরেও অনেক কিছুর উপস্থিতি ছিল, যা আরবের তৎকালীন সংস্কৃতির পরিচয় বহন করত। উকাজ মেলায় আরবদের সাংস্কৃতিক জীবনের সামগ্রিক প্রতিফলন দেখা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে মাসব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বই ক্রয় বিক্রয়ের পাশাপাশি উন্মুক্ত মঞ্চে আবৃত্তি, সংগীত, প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্যকর্মের জন্য পুরস্কারও দেওয়া হয়। অর্থাৎ এ মেলার সব কর্মকান্ডই সাহিত্যনির্ভর। উকাজ মেলায়ও আরবের শ্রেষ্ঠ কবিদের নিয়ে কবিতা প্রতিযোগিতার আসর বসত। প্রতিযোগিতায় এক বা একাধিক কবিতা শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হতো। তবে। উকাজ মেলা বাংলা একাডেমির মেলার মতো শুধু সাহিত্যনির্ভর ছিল না। এখানে সাহিত্য প্রতিযোগিতা ছাড়াও ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলা যেমন- জুয়া, লাঠি, মলস্নযুদ্ধ, বিভিন্ন ধরনের নৃত্য-গীত ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতো। মেলায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য প্রদর্শিত হতো। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীও ঐ মেলা থেকে আরবরা সংগ্রহ করত। এটি ছিল মোটামুটি আরব সংস্কৃতির সামগ্রিক চিত্র। সাহিত্যচর্চা ছিল শুধু এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
পরিশেষে বলা যায়, উকাজ মেলা' কেবল সাহিত্যের গন্ডিতেই আবদ্ধ ছিল না; বরং এটিতে আরবদের সাংস্কৃতিক জীবনের সামগ্রিক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল।

১০. পাগলাদহ গ্রামের আদিবাসীদের মধ্যে সবসময় গোলমাল লেগেই থাকে। গ্রামে অনেক জোতদার লোকের বাস। জোতদারণের নিজস্ব অনুগত বাহিনী আছে। বছরের বিভিন্ন সময় ধান কাঠা, মাছ ধরা বিভিন্ন কারণে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই থাকে। তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা বাজিতপুরের নারীদের। নারী যেহেতু পুরুষের মতো ক্ষেতে ফসল ফলানো, পুকুরে মাছ ধরা প্রভৃতি কাজে অক্ষম সে কারণে তাদেরকে বোঝা মনে করা হয়। সামর্থ্যবান পুরুষেরা তাদেরকে নানাভাবে নিগৃহীত করে থাকে। তবে যেসব নারী তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়, তাদেরকে জোতদারেরা সমীহ করে। 
ক. আসাদুল্লাহ কোন খলিফার উপাধি?
খ. প্রাচীনকাল থেকে মক্কার গুরুত্বের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের গ্রামের অবস্থার সাথে প্রাক-ইসলামি আরবের কোন অবস্থার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাজিতপুরের নারীর অবস্থার আলোকে প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের নারীর অবস্থা। করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আসাদুল্লাহ হযরত আলী (রা)-এর উপাধি।

খ. ধর্মীয় কারণে প্রাচীনকাল থেকেই মক্কার গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। হযরত ইবরাহিম (আ) মক্কায় কাবা ঘর নির্মাণ করার পর থেকে হল পালনের উদ্দেশ্যে লোকেরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মক্কায় গমন করত। আইয়ামে জাহেলিয়াতেও মক্কায় হল পালন হতো। মুহাম্মদ (স) এর আবির্ভাবের পরেও মুসলমাদের হল পালনের উদ্দেশ্যে মক্কার যেতে হয়। তাই ধর্মীয় কারণে মক্কার গুরুত্ব প্রাচীন কাল থেকেই।

গ. উদ্দীপকের পাগলাদহ গ্রামের অবস্থার সাথে প্রাক-ইসলামি আরবের সামাজিক অবস্থার সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রাক-ইসলামি যুগ বলতে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর আগমনের পূর্ববর্তী একশ বছরকে বোঝানো হয়। এ সময়কে 'আইয়ামে জাহেলিয়া' বা অন্ধকার যুগও বলা হয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে সব সময় গোলমাল গেলেই থাকে। এই গ্রামে অনেক জোতদার লোকের বাস। বছরের বিভিন্ন সময়ে ধান কাটা, মাছ ধরা বিভিন্ন কারণে দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই থাকতো। তেমনিভাবে প্রাক-ইসলামি আরবদের মধ্যেও বংশগৌরব, বীরত্ব, শৌর্যবীর্য নিয়ে সর্বদাই দ্বন্দ্ব ও কলহ লেগেই থাকত। এ সময় কৌলীন্য প্রথা থেকেই ষষ্ঠ শতাব্দীতে হিমারীয় ও মুদারীয়দের মধ্যে আন্তর্জাতিক যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।
প্রাক-ইসলামি আরব সমাজে নারীর অবস্থা ছিল সীমাহীন অবমাননাকর ও হৃদয়বিদারক। নারীকে আপদ ও অশুভ সত্তা বলে মনে করা হতো। সমাজে এরা ভোগের সামগ্রী ও অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হতো। তাদের আর্থ-সামাজিক কোনো মর্যাদা ছিল না। বাজারের পণ্যের মতো হস্তান্তরযোগ্য ছিল নারী। সামাজিক মর্যাদা তো দূরের কথা তাদের ন্যূনতম মানবিক অধিকার পর্যন্ত ছিল না। নারীরা যুদ্ধ-বিগ্রহে অক্ষম ছিল বিধায় তাদেরকে সর্বদা লাঞ্ছিত, অবহেলিত ও হেয় প্রতিপন্ন করা হতো। এক কথায় প্রাক-ইসলামি যুগে নারীর কোনো মূল্য ছিল না উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের পাগলাদহ গ্রামের অবস্থার সাথে প্রাক-ইসলামি আবরের সামাজিক অবস্থার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. অবহেলা, গঞ্ছনা ও নিগ্রহের দিক দিয়ে উদ্দীপকে উল্লিখিত বাজিতপুরের নারীদের অবস্থা এবং প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের নারীর অবস্থা ছিল একই রকম। উদ্দীপকে বাজিতপুরের নারীদের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। নারীরা যেহেতু পুরুষের মতো ক্ষেতে ফসল ফলানো, পুকুরে মাছ ধরা প্রভৃতি কাজে অক্ষম সে কারণে তাদের বোঝা মনে করা হয়। সামর্থ্যবান পুরুষেরা তাদেরকে নানাভাবে নিগৃহীত করে থাকে। তবে যে সকল নারী তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয় তাদেকে সামর্থ্যবান পুরুষেরা সমীহ করে।
প্রাক-ইসলামি যুগে নারীর অবস্থা ছিল সীমাহীন অবমাননাকর ও হৃদয়বিদারক মানবতাবিবর্জীত জাহেলিয়া যুগে নারীর কোনো মূল্যই ছিল না। তৎকালীন আরব সমাজ সম্পর্কে ঐতিহাসিক খোদাবক্স বলেন, আরববাসীরা মদ, নারী ও যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো। পুরুষেরা একাধিক বিয়ে ও বিচ্ছেদ ঘটাতে পারতো। এ ব্যাপারে নারীর মতামত বা অনুভূতির কোন তোয়াক্কাই করা হতো না। নারীর কোনো মানবীয় সত্তা, মানবিক আবেগ অনুভূতি, পছন্দ-অপছন্দের সামান্যতম স্বীকৃতি ছিল না।
প্রাক ইসলামি যুগে বলুষিত আরব সমাজে একজন পুরুষ যেমন একাধিক নারী গ্রহণ করতো তেমনি বংশের বীর্যবান সন্তান লাভের আশায় স্ত্রীকে সম্ভ্রান্ত বংশের বীরপুরুষদের শয্যা শায়িনী হতে বাধ্য করা হতো। পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোনো অধিকার ছিল না। কন্যার জন্ম সংবাদ দেওয়া হলে তাদের চেহারা অপমানে কালো হয়ে যেত। অসম্মান ও দারিদ্রের ভয়ে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও তাদের হৃদয় কাঁপত না। আরব পুরুষেরা এরূপ হত্যাকান্ড দর্শনে উল্লাস প্রকাশ করত। পরিশেষে বলা যায়, প্রাক-ইসলামি যুগে নারীরা সর্বক্ষেত্রে ছিল অধিকারবঞ্চিত। শুধু কল্পনাই নয়, তাদের কোনো মর্যাদা বা সম্মান ছিল না। পদে পদে তাদেরকে হেয় করা হতো।

Post a Comment

Previous Post Next Post