HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Islamic History and Culture 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

অধ্যায়ভিত্তিক প্রাথমিক আলোচনাঃ

আব্বাসী খিলাফত
ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আব্বাসীয় বংশের শাসন। ইসলামের গৌরবদীপ্ত অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল এ সময়। উমাইয়া খিলাফতের পতনের পর ৭৫০ খ্রি. আব্বাসীয় রাজবংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। আব্বাসীয়দের সুদীর্ঘ পাঁচশ বছরের রাজত্বকাল মুসলিম শাসন ব্যবস্থার ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রাজ্য বিস্তারের পরিবর্তে মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপিত হয়। উমাইয়া যুগ ছিল আরবদের একক আধিপত্যের যুগ।

আব্বাসীয় যুগে উমাইয়াদের সংকীর্ণ রাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন করে উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেয়। আব্বাসীয়রা আরব-অনারব সকল শ্রেণীর মুসলমানদের সমান অধিকার দান করেন। তাই আব্বাসীয় খিলাফত ছিল সর্বজনীন। আব্বাসীয় রাজবংশে মোট ৩৭ জন খলিফা শাসন পরিচালনা করেছেন। তাঁরা ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেন। 

আব্বাসীয়দের পরিচয়
হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর চাচা ছিলেন আল-আব্বাস (রা)। তিনি ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র। আল-আব্বাসের নামানুসারে আব্বাসীয় রাজবংশের নামকরণ করা হয়েছে। আব্বাসীয়গণ কুরাইশ বংশের হাশিমী শাখা থেকে উদ্ভূত। উমাইয়ারাও কুরাইশ বংশের। তবে রাসূলুল্লাহর (স) নিকটতম ছিলেন আব্বাসীয়রা। এজন্য তাঁরা নিজেদেরকে খিলাফতের সত্যিকার দাবিদার বলে মনে করেন। তাঁরা আরও মনে করতেন উমাইয়াগণ তাঁদের থেকে জোর করে খিলাফত ছিনিয়ে নিয়েছে। তাঁদের এই ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা উমাইয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। হযরত আব্বাস ৩২ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন।

তাঁর চার পুত্র আব্দুল্লাহ, ফযল, উবায়দুন্না এবং কাইসান। বড় ছেলে আব্দুল্লাহ ইতিহাসে ইবনে আব্বাস নামে পরিচিত। হযরত আব্বাসের চার পুত্রই যোগ্যতাসম্পনণ ছিলেন। তাঁরা হযরত আলীর (রা) সমর্থনে সিফি্ফনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা হযরত আলী (রা) ও তাঁর পুত্রদের সমর্থক ও সহযোগী ছিলেন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনায় ইবনে আব্বাস খুবই শোকাহত হন। তিনি ৭০ বছর বয়সে ভাঙা মন নিয়ে তায়েফে মৃত্যু বরণ করেন।

তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র আলী পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে আলীর মৃত্যু হলে পুত্র মুহাম্মদ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। মুহাম্মদ খুবই উচ্চাভিলাষী ছিলেন। তিনি মনে মনে খিলাফত দখলের বাসনা পোষণ করতেন। তিনিই ছিলেন আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রধান এবং প্রথম উদ্যোক্তা। 

আব্বাসীয় প্রথম খলিফার পরিচয়
আব্বাসীয় খিলাফতের প্রথম খলিফার নাম আবুল আব্বাস। তাঁর পিতার নাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। রাসূল (স)-এর চাচা আব্বাস (রা)-এর উত্তরসূরী ছিলেন তিনি। হযরত আব্বাস (রা)-এর নামানুসারে এ রাজবংশের নাম হয় আব্বাসীয় রাজবংশ।

সিংহাসনে আরোহন: আব্বাসীয় আন্দোলনের পুরোধা আবু মুসলিম যখন উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিজয়াভিযানে লিপ্ত তখন তাঁর ভাই ইবরাহীম মারওয়ানের হাতে বন্দী হন। মারওয়ান তাঁকে হত্যা করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ভাই আবুল আব্বাসকে তাঁর উত্তরসূরী মনোনীত করে যান। ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে কুফার মসজিদে আবুল আব্বাস খলিফা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। জনসাধারণ তাঁর প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে জাবের যুদ্ধে দ্বিতীয় মারওয়ানের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে। তখন থেকেই আব্বাসীয় খিলাফত শুরু হয়। 

আব্বাসীয়দের শাসন ব্যবস্থা
উমাইয়া খিলাফতের পতনে আরব প্রাধান্যের পতন ঘটে আব্বাসীয় যুগে ইরানী প্রভাবের ফলে ইসলাম সার্বজনীন রূপ লাভ করে। উমাইয়াদের পতনে আরব শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এর স্থলে আব্বাসীয়দের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকৃত ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়। প্রকৃত অর্থে আব্বাসীয় খিলাফতে জ্ঞান-বিজ্ঞান বিস্তার এবং নতুন সভ্যতা সূচনা করা হয়। 

আব্বাসীয়দের শাসন নীতি
উমাইয়াদের যুগ ছিল রাজ্য জয়ের আর আব্বাসীয় যুগ ছিল রাজ্য শাসনের। উমাইয়াগণ অভিজাত আরবদেরকে অগ্রাধিকার দিতেন। কিন্তু আব্বাসীয়গণ এই সংকীর্ণ আরব জাতীয়তাবাদী নীতি পরিহার করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকল যোগ্য লোককে খিলাফতের যে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল করতেন। আব্বাসীয় শাসন জাতীয় সাম্যনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আব্বাসীয় শাসন ব্যবস্থা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত ছিল-
ক. কেন্দ্রীয় ও 
খ. প্রাদেশিক

ক. কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা
১. খলিফা : আব্বাসীয় খিলাফতের শাসন কাঠামোর শীর্ষদেশে অবস্থান করতেন খলিফাগণ। খলিফা ছিলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যাপারে সকল গুরুত্বপুর্ণ আদেশ নির্দেশ তিনিই জারি করতেন। তাঁর কার্যাবলী প্রধানত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক এ দু'ভাগে বিভক্ত ছিল। তার রাজনৈতিক ক্ষমতা সামরিক ও বেসামরিক এ দু'ভাগে বিভক্ত ছিল। উমাইয়াদের ন্যায় আব্বাসীয় খলিফাগণও খিলাফতে উত্তরাধিকারী মনোনীত করতেন। এ ব্যাপারে তাদের কোন নীতি নির্দিষ্ট ছিল না।

২. মন্ত্রণা পরিষদ : খলিফা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও তাঁকে পরামর্শ দানের জন্য ছিল একটি মন্ত্রণা পরিষদ। এই বংশের পাঁচ জন খলিফার আমলে ‘বিভাগীয় মন্ত্রী' পরিবারের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বাগদাদের অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকদের দ্বারা গঠিত একটি মন্ত্রণা পরিষদ খলিফাকে পরামর্শ দিতেন।

৩. হাজীব : খলিফার নিত্যসহচর ছিলেন হাজীব অথবা রাজপরিবারের গৃহাধ্যক্ষ। হাজীবের কর্তব্য ছিল বিদেশী দূতবর্গকে আমন্ত্রণ ও পরিচয় করিয়ে দেয়া। হাজীব ছিল সশস্ত্র কর্মচারী। তার অনুমতি ছাড়া কেউ খলিফার সাথে সাক্ষাত করতে পারত না।

৪. উজীর : খলিফার পরেই প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন উজীর। পারস্য রীতির অনুকরণে আব্বাসীয় খলিফাগণ সর্বপ্রথম উজীর বা প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। তিনি রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে খলিফাকে সাহায্য করতেন। উজীর ছিলেন দুই শ্রেণীর। যথা- অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন উজীর এবং সসীম ক্ষমতাসম্পন্ন উজীর। অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন উজীর কর্মচারী নিয়োগ অথবা বাতিল করতে পারতেন।

৫. জন্নাদ এবং জ্যোতিষী নিয়োগ : রাজদরবারে জন্নাদ ও জ্যোতিষী পদাধিকারী দুজন কর্মকর্তার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। আরবের ইতিহাসে সর্বপ্রথম রাজপ্রাসাদের গুপ্ত কক্ষে বিদ্রোহী ও সমাজদ্রোহীদের শাস্তি দেয়ার প্রথা প্রচলিত হয়। পারস্য রীতির অনুকরণে জন্নাদ ও জ্যোতিষী নিযুক্ত করা হয়।

খ. প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা
১. প্রদেশ : পারস্য বায়জানটাইন নীতির অনুসরণে উমাইয়া রাজত্বে সমগ্র দেশে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য যে প্রদেশের সৃষ্টি হয়েছিল আব্বাসীয় আমলে তার কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা হতে জানা যায় যে, আব্বাসীয় খিলাফতের প্রথম যুগে সমগ্র সাম্রাজ্যে ২৪টি মতান্তরে ৩৫টি প্রদেশ ছিল। প্রত্যেক প্রদেশের শাসনভার আমীর নামক কর্মকর্তার উপর ন্যস্ত ছিল।

২. আমীর : প্রদেশের প্রধান শাসনকর্তা ছিলেন আমীর। খলিফা তাঁকে নিযুক্ত করতেন। কৃতকর্মের জন্য আমীর খলিফার নিকট দায়ী থাকতেন। শাসন ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ রক্ষার জন্য এক প্রদেশ হতে অন্য প্রদেশে আমীরদের বদলী করা হত। ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা আমীরের দায়িত্ব ছিল।

৩. প্রাদেশিক বিভাগ : প্রত্যেক প্রদেশে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ৫টি বিভাগ ছিল-
ক. দিওয়ান আল খারাজ 
খ. ভাক বিভাগ 
গ. পুলিশ বিভাগ 
ঘ. সামরিক বিভাগ 
ঙ. বিচার ও বিবিধ শাসন বিভাগ। 
 
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের অধিকারী প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বিভিন্ন গুণাবলির অধিকারী হলেও তার মধ্যে প্রবল সন্দেহপ্রবণতা ছিল। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেক ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বীকে তিনি নির্মমভাবে সরিয়ে দেন। আসলে ইরাকের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতিগত বিদ্বেষ, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের আত্মকলহ তাকে কঠোর হতে বাধ্য করেছিল। সাদ্দাম হোসেন বিভিন্ন কৌশলে শতধাবিভক্ত ইরাকিদের একত্রিত করে দীর্ঘমেয়াদি শাসন কায়েম করতে সক্ষম হন। 
ক. 'আল-মনসুর' শব্দের অর্থ কী?
খ. আল-মনসুর বাগদাদে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি আচরণ খলিফা আল মনসুরের কোন কর্মকান্ডের অনুরূপ? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. দীর্ঘমেয়াদি শাসন কায়েমে সাদ্দাম হোসেনের চেয়ে আল মনসুর আরও দূরদর্শী ছিলেন- উক্তিটি মূল্যায়ন করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আল-মনসুর শব্দের অর্থ 'বিজয়ী'।

খ. প্রশাসনিক কাঠামোকে সুবিন্যস্ত ও সুদৃঢ় করার জন্য খলিফা মনসুর বাগদাদে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। 
বগদাদ দজলা (টাইগ্রিস) নদীর পশ্চিম তীরে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। এটা ছিল সুস্বাস্থ্যকর, সাম্রাজ্যের মধ্যস্থলে এবং অধিকতর নিরাপদ স্থান। নদীর তীরে অবস্থানের ফলে এ নগরীর সাথে মৌপথে সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, আর্মেনিয়া ও সাম্রাজ্যের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ সহজতর ছিল। এছাড়া এখান থেকে বহির্বিশ্বের এমনকি সুদূর চীনের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন সম্ভবপর হয়েছিল। তাছাড়া এতে আত্মঃবাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যে প্রভূত সাফল্যেরও সম্ভাবনা ছিল। এসব কারণে খলিফা মনসুর বাগদাদে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন।

গ. উদ্দীপকের প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি আচরণ আব্বাসি খলিফা আল-মনসুরের হযরত আলী (রা)-এর বংশধরদের প্রতি দুর্ব্যবহারের অনুরূপ। 
হযরত আলী ও ফাতিমার বংশধরগণ আব্বাসি বংশের উত্থানের সময় যথাসাধ্য সাহায্য করলেও খলিফা মনসুর তাদেরকে সুনজরে দেখেননি। আলীর বংশধরদের ওপর জনসাধারণের অসীম ভক্তি ও শ্রদ্ধার জন্য খলিফা মনসুর বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং তাদের ধ্বংস সাধনে তৎপর হন। খলিফা মনসুরের এই হিষ কর্মকান্ডের প্রতিফলন উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রেসিডেনট সাদ্দাম হোসেনের মধ্যেও লক্ষণীয়।
সাদ্দাম হোসেন বিভিন্ন গুণাবলির অধিকারী হলেও তার মধ্যে প্রবল সন্দেহ প্রবণতা ছিল। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেক ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বীকে তিনি নির্মমভাবে সরিয়ে দেন। খলিফা মনসুরের ক্ষেত্রেও এমনটি দৃষ্টিগোচর হয়। উমাইয়াদের পতনের পর ইমাম হাসানের প্রপৌত্র মুহাম্মদ সিংহাসনে আরোহণের ন্যায়সংগত অধিকারী ছিলেন। এ কারণে আলী ও ফাতেমীয় বংশের লোকদের ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে মনসুর তাদের ওপর অবস্থ্য নির্যাতন চালান। ফলে মুহাম্মদ ও তার ভাই ইব্রাহীম মদিনা ও বসরায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কিন্তু খলিফা মনসুরের ভ্রাতুষ্পুত্র তাদেরকে পরাজিত করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। খলিফা মনসুর মদিনায় বসবাসরত ইমাম হাসান (রা) ও হুসেন (রা)-এর পরিবারবর্গের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন। এমনকি সুফিসাধক ইমাম জাফর সাদিক, ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালিকের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। সুতরাং দেখা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি সাদ্দাম হোসেনের আচরণ খলিফা মনসুরের আলী বংশীয়দের প্রতি দুর্ব্যবহারকেই মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. খলিফা আল-মনসুর নানা দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাম্রাজ্যকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যা উদ্দীপকে বর্ণিত সাদ্দাম হোসেনের চেয়ে অধিক বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
খলিফা আল-মনসুর ৭৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করে আব্বাসি আন্দোলনের মূল নেতা আব্দুল্লাহ আবু মুসলিমকে হত্যা করেন। তিনি সমস্ত বিদ্রোহ ও বিরোধীদের কঠোরভাবে দমন করে রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। তিনি তাবারিস্তান, গিলান, এশিয়া মাইনর ও আফ্রিকায় আব্বাসি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ তিনি সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি সাম্রাজ্যের যথেষ্ট বিস্তৃতি সাধন করেন। কিন্তু সাদ্দাম হোসেনের মধ্যে সাম্রাজ্য বিস্তৃতির দিকটি অনুপস্থিত রয়েছে।
উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি যে, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মমভাবে সরিয়ে দেন। তিনি অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইরাকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। তার এ দিকগুলো খলিফা আল-মনসুরের গৃহীত পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। তবে খলিফা মনসুর এক্ষেত্রে আরও বাস্তবধর্মী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। আব্বাসি শাসক আল-মনসুর অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বিরোধিতার মূলোৎপাটন করে তার বংশকে শত্রুমুক্ত করেন। প্রশাসনিক কাঠামোকে সুবিন্যস্ত ও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে তিনি ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে সামেস্ত থেকে বাগদাদে রাজধানী স্থানান্তর করেন। তিনি দজলা নদীর পশ্চিম তীরে ৪৮ লক্ষ ৮৩ হাজার দিরহাম ব্যয় করে সুন্দর ও সুপরিকল্পিত বাগদাদ নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া সামরিক শক্তিই যে সাম্রাজ্যের মূলভিত্তি- এ সত্যকে অনুধাবন করে আল-মনসুর একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শক্তিশালী নিয়মিত সেনাবাহিনী গঠন করেন। এছাড়া জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে তিনি উদার ছিলেন। তার রাজত্বকালে গণিতশাস্ত্রের উৎকর্ষ সাধিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকাজের উন্নয়নে তিনি নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বহু নগর, সরাইখানা, রাজপথ ও চিকিৎসালয় নির্মাণ করেন। এভাবে আল মনসুর খিলাফতে একটি নতুন সভ্যতার সূচনা করেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, খলিফা আল মনসুর তার সকল প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা ও দমন করার মাধ্যমে নিজ বংশকে নিষ্কন্টক করে আব্বাসীয় শাসনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন। তার এ পদক্ষেপে উদ্দীপকে বর্ণিত উদ্যোগের থেকে অধিক দূরদর্শিতা ছিল।

২. হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার তার গ্রামে নিজ উদ্যোগে একটি বিশাল পাঠাগার গড়ে তোলেন। সেখানে প্রতিদিন প্রচুর পাঠক সমাবেশ হয়। তিনি বিভিন্ন ভাষার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলির বাংলা অনুবাদ ও গবেষণার ব্যবস্থা করেন। দেশি-বিদেশি বহু বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির সহযোগিতায় পাঠাগারটি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করছে।
ক. বুরান কে ছিলেন?
খ. ভ্রাতৃদ্বনে্দ্ব আমিনের পরাজয়ের একটি কারণ ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাঠাগারের সাথে আব্বাসি খিলাফতের কোন প্রতিষ্ঠানের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের পাঠাগারটি উক্ত প্রতিষ্ঠানের একটি আংশিক রূপমাত্র- উক্তিটির সত্যতা যাচাই করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বুরান ছিলেন আব্বাসি খলিফা মামুনের স্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হাসান বিন সাহলের কন্যা।

খ. ভ্রাতৃদ্বনে্দ্ব আমিনের পরাজয়ের একটি কারণ হলো তার চারিত্রিক দুর্বলতা ও কুশাসন।
আমিনের ব্যক্তিগত চরিত্রই মূলত তার পতনের জন্য দায়ী। তিনি রাজকার্য উপেক্ষা করে হেরেমের আমোদ-আহলাদে মত থাকতেন। ফলে তার নিষ্ঠুর ও উত্থত উজির ফাগ-বিন-রাবি রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। তার উচ্ছৃঙ্খল শাসনে আমিন প্রজাসাধারণের সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত হন। অপরপক্ষে আমিনের সুযোগ্য ভাই মামুনের শাসনে প্রজাগণ পরম সুখ ও শান্তিতে বসবাস করছিল। অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন মামুনের নিকট অযোগ্য ও বিলাসপ্রিয় আমিন ক্ষমতার দ্বনে্দ্ব হেরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাঠাগারের সাথে আব্বাসি খিলাফতের জ্ঞান বিজ্ঞানের পীঠস্থান বায়তুল হিকমার মিল রয়েছে। 
আব্বাসি খলিফা আল মামুনের নির্মিত বায়তুল হিকমা ছিল আব্বাসিদের গৌরবোজ্জ্বল যুগের অন্যতম প্রতীক। জ্ঞান-বিজ্ঞানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদানের জন্য তিনি ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাসে এই জগদ্বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করেন। জ্ঞান বিকাশের জন্য তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রন্থাগার, শিক্ষায়তন ও অনুবাদ ব্যুরো এই তিনটি পৃথক বিভাগ স্থাপন করেন। উদ্দীপকেও আমরা এ বিষয়ের প্রতিফলন লক্ষ করি। 
উদ্দীপকে দেখা যায়, হেমায়েত উদ্দিন তালুকদারের প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারটি গ্রামের জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ভাষার বইয়ের বাংলা অনুবাদ ও গবেষণা বিদ্যোৎসাহী মানুষদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এ প্রতিষ্ঠানের মতোই আব্বাসি খলিফা আল মামুনের প্রতিষ্ঠিত বায়তুল হিকমা নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীন গ্রন্থাবলি সংরক্ষণ ও গবেষণা কাজে বিশেষ অবদান রাখে। গ্রিক, সংস্কৃতি, পারসিক, সিরীয় প্রভৃতি ভাষায় লিখিত পুস্তকাদির অনুবাদ কার্যকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য তিনি এটি নির্মাণ করেন। এতে তিনটি বিভাগ ছিল, যথা গ্রন্থাগার মিলনায়তন ও অনুবাদ কার্যালয়। হুনায়ন ইবনে ইসহাক নামক একজন সুপন্ডিতকে এ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়। এ অনুবাদক সে আমলের সর্বাপেক্ষা বড় পন্ডিত ও সর্বাপেক্ষা মহান ছিলেন। তার চেষ্টায় এরিস্টটল, গ্যালিলিও, প্লেটো প্রমুখ প--তের গ্রন্থ অনূদিত হয়ে আরবি সাহিত্যের মারফত দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয়। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের পাঠাগারটিতে বায়তুল হিকমার কর্মকান্ডের প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. খলিফা আল মামুনের প্রতিষ্ঠিত বায়তুল হিকমা জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতিতে বহুমুখী অবদান রেখেছে, যার আংশিক কাজের প্রতিফলন উদ্দীপকের পাঠাগারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, হেমায়েত উদ্দিন তালুকদারের প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণাকর্মে অবদান রাখলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় নতুন নতুন গবেষণায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে এটি বিশেষ উন্নতি সাধন করতে পারছে না। এছাড়া এটি ছিল একটি গ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। অপরপক্ষে খলিফা মামুন প্রতিষ্ঠিত বায়তুল হিকমা ছিল একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। যার ফলে গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে এটি বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হয়। আর এ কারণেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নে উদ্দীপকের সংস্থার চেয়ে বায়তুল হিকমা অনেক বেশি অবদান রাখে।
মামুনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় এই সংস্থাটি এথেন্স, আলেকজান্দ্রিয়া, সিরিয়া, এশিয়া মাইনরসহ অনেক স্থান হতে বহু মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ করে তাদের আরবিতে অনুবাদের ব্যবস্থা করে। এতে প্রাচীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এরিস্টটল ও প্লেটোর পুস্তকগুলো এবং গ্যালেন, ইউকিলড, টলেমি প্রমুখ মনীষীদের বৈজ্ঞানিক গ্রন্থাবলি আরবিতে অনুদিত হয়। এতে অনুবাদকারীদেরকে গ্রন্থের ওজনে স্বর্ণমুদ্রা পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। এ সকল অনুবাদকের সাহায্যে বায়তুল হিকমা গ্রিক পন্ডিতগণের আজীবনের সাধনা ও গবেষণার ফলাফল ধরে রাখতে সক্ষম হয়। ইউরোপ যখন গ্রিক চিন্তা ও বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন আরবে এ মহান কার্য সম্পাদিত হয়। বস্তুত মুসলমানগণ অনুবাদের দ্বারা বিশ্ববিখ্যাত পন্ডিতদের গবেষণা রক্ষা না করলে পৃথিবী হতে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে যেত। এক্ষেত্রে বলা যায় যে, বায়তুল হিকমা শুধু প্রাচীন সভ্যতার ধারকই নয়, এটি ছিল ইউরোপে নবজাগরণ সৃষ্টিরও মূল কারণ।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আব্বাসি খিলাফতে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বায়তুল হিকমা অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করে, যার তুলনায় উদ্দীপকের পাঠাগারের অবদান অতি নগণ্য।

৩. সেতু আব্বাসি খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাহিনি পড়ছিল। নতুন খিলাফতের প্রথম আমির নির্বাচিত না হওয়া সত্ত্বেও তাকেই এই বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। বিলাত লাভের পরপরই তিনি তার চাচার। বিদ্রোহ দমন করেন। এর পর তিনি নিরস্ত্র 'ঢ' কে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এছাড়াও তিনি পারস্য ও খোরাসানের বিদ্রোহ দমন এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের বহু লোককে কারারুদ্ধ করেন। তাঁর গৌরবময় কীর্তি হলো একটি নতুন নগর প্রতিষ্ঠা, যা ছিল তাঁর সাম্রাজ্যের রাজধানী। তাঁর নাম অনুসারে এই নতুন নগরীর নামকরণ করা হয়।
ক. বাগদাদ নগরী কে প্রতিষ্ঠা করেন?
খ. বায়তুল হিকমা বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
গ. সেতুর পঠিত ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন আব্বাসি খলিফার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে সেতুর পঠিত আমিরের চেয়ে তোমার পঠিত আমির অধিক কৃতিত্বের দাবিদার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুর বাগদাদ নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।

খ. আব্বাসি খলিফা আল মামুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা জ্ঞানগৃহ হলো বায়তুল হিকমা বায়তুল হিকমা শব্দের অর্থ জ্ঞানগৃহ। খলিফা আল মামুন ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি গ্রন্থাগার, শিক্ষায়তন ও অনুবাদ বিভাগ এ তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। সুপন্ডিত হুনায়ন বিন-ইসহাক এর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হয়েছিলেন। এখানে গ্যালেন, ইউক্লিড, টলেমি, পল প্রমুখ মনীষীদের প্রাচীন গ্রন্থাবলি অনুবাদ করা হতো এবং অনুবাদকারীকে গ্রন্থের ওজনে স্বর্ণমুদ্রায় পারিশ্রমিক প্রদান করা হতো।

গ. উদ্দীপকের সেতুর পঠিত কাহিনির সাথে আমার পঠিত আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুরের সাদৃশ্য রয়েছে। 
আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ আব্বাসি বংশের প্রথম খলিফা ছিলেন, তবুও আবু জাফরকেই এ রাজবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। কেননা তিনি অদম্য সাহস, দূরদর্শিতা ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞার দ্বারা অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সব বিদ্রোহ দমন করে আব্বাসি খিলাফতকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর অধিষ্ঠিত করেন। তিনি তার চাচা আব্দুল্লাহ ইবনে আলীর বিদ্রোহ দমন ও আবু মুসলিমকে হত্যা করেন। এভাবে যাবতীয় বিদ্রোহ দমন করে তিনি আব্বাসি রাজবংশের স্থায়িত্ব বিধান করেন। উদ্দীপকেও এমনি একটি ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকের সেতুর পঠিত শাসক আব্বাসি খেলাফতের প্রথম আমির না হয়েও এ রাজবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলে বিবেচিত। তিনি তার চাচার বিদ্রোহ, পারস্য ও খোরাসানের বিদ্রোহ দমন করেন এবং একটি সম্প্রদায়ের ২০০ লোককে কারারুদ্ধ করেন। এছাড়া নিজের নামে একটি নগরীও প্রতিষ্ঠা করেন। অনুরূপভাবে খলিফা আবু লাফর আল মনসুর তার চাচা সিরিয়ার শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ ইবনে আলীর বিদ্রোহ দমন করেন। তিনি আবু মুসলিম খোরাসানিকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। আর এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে খোরাসান ও পারস্যবাসীরা বিদ্রোহ করলে তিনি তাদেরকেও কঠোর হস্তে ঘুমন করেন। রাওয়াদিয়া সম্প্রদায় খলিফাকে আল্লাহর অবতার বলে ঘোষণা করলে তিনি তাদের ২০০ জনকে কারারুদ্ধ করেন। এছাড়া তিনি বাগদাদে নিজের নামানুসারে 'মনসুরিয়া' নামে একটি নগরী নির্মাণ করে সেখানে রাজধানী স্থাপন করেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে আব্বাসি খলিফা আল মনসুরের জীবনের ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকের সেতুর পঠিত আমিরের চেয়ে আমার পঠিত আমির অর্থাৎ আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুর অধিক কৃতিত্বের দাবিদার।
আব্বাসি খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফফার মৃত্যুর পর আবু জাফর আল মনসুর ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তার ক্ষমতায় আরোহণের সাথে সাথে আব্বাসি খিলাফতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তিনি অদম্য সাহস ও দূরদর্শিতার দ্বারা বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন ও রাজধানী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আব্বাসি বিলাফতকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে রাজ্য বিস্তার, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ও স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত, যা তাকে উদ্দীপকের সেতুর পঠিত শাসকের তুলনায় অধিক কৃতিত্বের দাবিদার করে তুলেছে।
উদ্দীপকের সেতুর পঠিত শাসক তার চাচার বিদ্রোহ দমন করেন। এছাড়া পারস্য ও খোরাসানের বিদ্রোহ দমনের পাশাপাশি বাগদাদে নিজের নামে একটি নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুরও বিভিন্ন বিদ্রোহ দমনের পাশাপাশি বাগদাদে মনসুরিয়া' নামে একটি নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ সমস্ত কার্যাবলি ছাড়াও রাজ্যবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনকে পরাজিত করে বার্ষিক কর প্রদানে বাধ্য করেন। তিনি তাবারিস্তান ও গিলান স্বীয় সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় বহু মূল্যবান গ্রন্থ আরবি ভাষায় অনূদিত হয়। এছাড়া মনসুর স্থাপত্যকলারও উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, যার প্রমাণ বহন করে 'বাসর আল খুলদ' ও 'বুসাফা' নামক দুটি প্রাসাদ নির্মাণ। উপর্যুক্ত আলোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সেতুর পঠিত শাসকের তুলনায় আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুর অধিক কৃতিত্বের দাবিদার।

৪. মালাগার স্বৈরাচারী সরকারের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষ যখন অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল, তখন আফেন্দি বংশের সেলিম নামের বিপ্লবী এক নেতার উত্থান ঘটে। তিনি সরকারের এ সকল জনবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের কর্মসূচির ডাক দেন। কর্মসূচিকে বেগবান ও সফল করার জন্য তিনি নানামুখী প্রলোভন ও প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগী শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়ে উক্ত সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হন।
ক. ক্রুসেড শব্দের অর্থ কী?
খ. আবু মুসলিম খোরাসানির পরিচয় দাও।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিপ্লবী নেতা সেলিমের সাথে আব্বাসি কোন খলিফার মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতিই আব্বাসি আন্দোলনকে সফল করেছিল মূল্যায়ন করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ক্রুসেড শব্দের অর্থ ধর্মযুদ্ধ।

খ. আব্বাসি আন্দোলনকে বিপ্লবে পরিণত করার সেরা কারিগর ছিলেন আবু মুসলিম নামক আরব বংশোদ্ভূত এক পারসিক মাওয়াদি। আবু মুসলিমের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে খোরাসান উমাইয়াবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। ৭৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন আবু মুসলিম নিজেকে 'আল-হাশিম' (হাশিমীয়দের রক্ষক) ঘোষণা করেন এবং আব্বাসিদের কালো পতাকা উত্তোলন করে খোরাসানের রাজধানী মার্চ ও ফারগানাসহ সমগ্র খোরাসান দখল করে নেন। এরপর উমাইয়া শাসক ২য় ইয়াজিদকে পরাজিত করে ইরাকের রাজধানী কুফা দখল করেন। ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ নভেম্বর তিনি আবুল আব্বাসকে কুফা মসজিদে আহবান জানান এবং খলিফা ঘোষণা করেন। তার এই অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতার জন্যই আব্বাসিদের সিংহাসন লাভ সম্ভব হয়েছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিপ্লবী নেতা সেলিমের সাথে আব্বাসি খলিফা আবুল আব্বাস আস-সাফফাহর মিল রয়েছে। 
উদ্দীপকে দেখা যায়, মালাগার স্বৈরাচারী সরকারের অন্যায়, অরাজকতা থেকে জনগণকে রক্ষা করতে আফেন্দি বংশের সেলিম নামের এক বিখ্যাত নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি জনগণকে নানামুখী প্রলোভন দেখিয়ে ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনসমর্থন আদায় করেন এবং সরকার উৎখাতে আন্দোলনের ডাক দেন। তার আহবানে জনগণ সাড়া দেয় এবং তারা সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়। একই পরিস্থিতি লক্ষ করা যায় আবুল আব্বাসের আব্বাসি আন্দোলনের মাধ্যমে উমাইয়াদের পতনের ক্ষেত্রে উমাইয়া বংশীয় শেষ পর্যায়ের দুর্বল শাসকদের অন্যায়-অপকর্ম যখন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল, তখন আব্বাসিরা তাদের উৎখাতে তৎপর হয়ে ওঠে। উমাইয়াদের পড়নে তারা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করে। আব্বাসিগণ কুরাইশ বংশের হাশেমি শাখা থেকে উদ্ভূত। এই সূত্রে তারা মুহাম্মদ (স)-এর নিকটতম এবং খিলাফতের যোগ্য দাবিদার এমন প্রচারণায় সর্বপ্রথম মুহাম্মদ বিন আলী আব্বাসি আন্দোলন শুরু করেন এবং তা বিভিন্ন ব্যক্তির হাত ধরে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। সর্বশেষ আবুল আব্বাস ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত জাবের যুদ্ধে উমাইয়া বংশীয় শেষ খলিফা দ্বিতীয় মারোয়ানকে পরাজিত করে আব্বাসি বংশের শাসনপর্ব শুরু করেন। তিনি নানা প্রচারণা, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিয়া, খারেজি, মাওয়ালি, খোরাসানি প্রভৃতি সম্প্রদায়কে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন। তারা উমাইয়াদের পতনে আব্বাসিদের সর্বতোভাবে সহায়তা করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে বর্ণিত সেলিমের গৃহীত কর্মকান্ড- আব্বাসি বংশের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আব্বাস আস-সাফফার কাজের প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. প্রলোভন ও প্রতিশ্রুতিই ছিল আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ কর্তৃক উমাইয়া বংশের অবসান ঘটিয়ে আব্বাসি বংশ প্রতিষ্ঠায় সফলতা অর্জনের মূল কারণ।
উমাইয়া সাম্রাজ্যের বিশৃঙ্খলার সুযোগে ইবনে আব্বাসের নেতৃত্বে তার অপর তিন ভাতা ও অন্যরা আব্বাসি আন্দোলনের সূচনা করেন। তারা মর্মর সাগরের তীরে সেলিম নামক একটি নিরাপদ গ্রামকে উমাইয়াবিরোধী আব্বাসি প্রচারণার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করেন। তাঁরা পূর্ব পুরুষদের উমাইয়াবিরোধী মনোভাবকে কার্যসিম্বির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে লোকজনকে তাদের পক্ষে সমবেত করতে সক্ষম হন। আবুল আব্বাসকে ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ নভেম্বর কুফা মসজিদে খলিফা বলে ঘোষণা করা হলেও তার শাসনকাল শুরু হয় ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে জাবের যুদ্ধে দ্বিতীয় মারওয়ানের পরাজয় ও পলায়নের পর থেকে।
উদ্দীপকে সেলিম যেমন তার কর্মসূচিকে বেগবান ও সফল করার জন্য জনগণকে নানা ধরনের প্রলোভন ও প্রতিশ্রুতি প্রদানের পন্থা অবলম্বন করেছিল, তেমনি উমাইয়াবিরোধী আন্দোলনকে সফল করে তুলতে আবুল আব্বাসও জনগণকে প্রলোভন ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি প্রদানের কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি জনগণকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ও প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলেন। জনগণ তাঁর পক্ষ নিয়ে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে উমাইয়া বংশের পতনের মধ্য দিয়ে আব্বাসি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঐতিহাসিক ওয়েল বলেন, আবুল আব্বাস শুধু বর্বর ও পাষ-ই ছিলেন না, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দানকারী, কৃতঘ্ন ও বিশ্বাসঘাতকও ছিলেন। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রলোভন ও প্রতিশ্রুতিই আব্বাসি আন্দোলনকে সফল করে তুলেছিল।

৫. জনাব রাশেদ মিয়া আলমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। প্রজাসাধারণের অবস্থা স্বয়ং অবগত হওয়ার জন্য তিনি ছদ্মবেশে গ্রাম ভ্রমণ করতেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ছাড়াও প্রতি রাতে একশত রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। জনসাধারণের উন্নতি এবং স্বার্থ সংরক্ষণে তার লেপার কোনো চেয়ারম্যানই তার মতো যত্নবান ছিলেন না।
ক. আব্বাসীয় বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কাকে বলা হয়?
খ. আব্বাসি খলিফা আবুল আব্বাসকে কেন আস-সাফফাহ বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাশেদ মিয়ার সাথে কোন আব্বাসি খলিফার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চারিত্রিক গুণাবলির কারণেই কি উক্ত খলিফাকে ইতিহাসে বিখ্যাত বলা হয়। তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আব্বাসীয় বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেন খলিফা আবু জাফর আল মনসুর।

খ. আবুল আব্বাসের চরিত্রে নৃশংসতা ও রক্তলোলুপতার স্থাপ পরিলক্ষিত হওয়ায় তাকে আস-সাফফাহ উপাধি দেওয়া হয়। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি জাবের যুদ্ধে দ্বিতীয় মারওয়ানের পরাজয়ের মাধ্যমে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে। সর্বশেষ উমাইয়া শাসক ৫ আগস্ট মারওয়ানের ছিন্ন মস্তক দেখে আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ' বা 'রক্তপিপাসু' উপাধি গ্রহণ করেন। খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েই তিনি উমাইয়া নিধন নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত নৃশংসভাবে উমাইয়াদের হত্যা করেন। তিনি ফিলিস্তিনের আবু ফুটস নামক স্থানে ৮০ জন উমাইয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিষ্ঠুরভাবে তাদেরকে হত্যা করেন। এসব কারণেই তাঁকে আস সাফ্ফাহ বা রক্তপিপাসু বলে অভিহিত করা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাশেদ মিয়ার সাথে আব্বাসি খলিফা হারুন অর রশীদের সাদৃশ্য রয়েছে। খলিফা হারুন অর রশীদ ৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি অসামান্য প্রতিভা, চিত্তাকর্ষক ব্যক্তিত্ব এবং অতুলনীয় চারিত্রিক মাহাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তার এ বৈশিষ্ট্যের খানিকটাই জনাব রাশেদ মিয়ার চরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। 
চেয়ারম্যান রাশেদ মিয়া প্রজাসাধারণের অবস্থা স্বয়ং অবগত হওয়ার জন্য ছদ্মবেশে গ্রাম ভ্রমণ করতেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় ছাড়াও প্রতি রাতে একশত রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। জনসাধারণের উন্নতি এবং স্বার্থ সংরক্ষণে তিনি সদাতৎপর থাকতেন। আমীর আক্কুন অর রশীদের ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষণীয়। ঐতিহাসিক সৈয়দ আলী তার সম্পর্কে বলেন, ‘‘অবিচারের প্রতিকার এবং নিপীড়িত দুর্দশাগ্রস্তদের দুঃখমোচন করার জন্য রাত্রে বাগদাদের রাজপথে ঘুরে বেড়ানো তাঁর অভ্যাস ছিল।" ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও তিনি দৈনিক একশত রাকাত নফল নামাজ পড়তেন। অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি জনসাধারণের উন্নতি বিধানে ও স্বার্থ সংরক্ষণে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। তার ন্যায়। প্রজারঞ্জক ও প্রজাবৎসল নরপতি, আব্বাসি খিলাফতে আর কেউ ছিল না বললেই চলে। সুতরাং দেখা যায়, রাশেদ মিয়ার চরিত্র ও কর্ম আব্বাসি খলিফা হারুন অর রশীদের চরিত্রের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. শুধু উদ্দীপকে উল্লিখিত গুণাবলিই নয়, খলিফা হারুন-অর-রশীদের চরিত্রে আরও অনেক গুণাবলির সমন্বয় ঘটেছিল বলেই তাকে ইতিহাসে বিখ্যাত বলা হয়।
খলিফা হারুন-অর-রশীদ তেইশ বছর (৭৮৬-৮০৯ খ্রি.) বাগদাদের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার সুদীর্ঘ রাজত্বকাল আরব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গৌরবোজ্জ্বল যুগ। এর কারণ হলো, তার অসামান্য প্রতিভা, চিত্তাকর্ষক ব্যক্তিত্ব এবং অতুলনীয় চারিত্রিক মাহায্য। তার এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দুটি দিক উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়াও বহু গুণের কারণে ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।
খলিফা হারুন-অর-রশীদ সিংহাসনে আরোহণের পর কঠোরহস্তে বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করে সাম্রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। একজন সমরকুশলী হিসেবে সৈন্য পরিচালনায় তিনি বিশেষ দক্ষতা ও রণকুশলতার পরিচয় দেন। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করে তিনি দক্ষ নৃপতি হিসেবে ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করেন। খারেজি সম্প্রদায় দমন, অসভ্য * খাজার উপজাতি এবং সাইলাম প্রদেশের বিদ্রোহীদের দমন, সিরিয়া ও ও সিন্ধু প্রদেশে মুদারীয় এবং হিমারীয়দের গৃহযুদ্ধের অবসান করে তিনি সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। হারুন-অর-রশীদের খ্যাতি এত বৃদ্ধি পায় যে, প্রাচ্য ও প্রশ্চাত্যের বহু রাজা তার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নবম শতাব্দীতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন খলিফা হারুনের রাজত্বকালকে গৌরবান্বিত করে। তিনি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক সুপরিকল্পিত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে আব্বাসি খিলাফতে স্বর্ণযুগের সূচনা করেন। এছাড়া বাগদাদ নগরীকে তিনি সমসাময়িক বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দর নগরীতে পরিণত করেন। সুরম্য রাজপ্রাসাদ, আড়ম্বরপূর্ণ দরবার, নয়নাভিরাম মিলনায়তন দ্বারা তিনি এ শহরকে সুসজ্জিত করেন। লেবানিজ বংশোদ্ভূত আবর ইতিহাসবিদ ফিলিপ বুরি হিটি (Philip Khuri Hini) তার History of the Arabs গ্রন্থে বলেন, ‘বাগদাদ তখনকার সময়ে সারা বিশ্বের অদ্বিতীয় শহর ছিল।’ পরিশেষে বলা যায়, খলিফা হারুন-অর-রশীদের উল্লিখিত গুণ ও কর্মের কারণে তার রাজতবকালে মুসলিম সাম্রাজ্য উনণতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করে। এ কারণেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

৬. রোমান রাজা ফিউভাল খুবই ধার্মিক ছিলেন। তবে রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি খুব নৃশংস ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে ভেবে তিনি তার প্রধান সেনাপতিকে হত্যা করলে সেনাপতির সমর্থকদের দ্বারা যে বিদ্রোহ দেখা দেয় রাজা তাও অতি কঠোর হস্তে দমন করেন। তার ধার্মিকতার সুযোগ নিতে একদল প্রজা তাকে প্রভু বলে পূজা করতে এলে এক মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়। সৌভাগ্যক্রমে সব কিছু মোকাবিলা করতে সক্ষম হন।
ক. 'বাগদাদ’ নগর কে প্রতিষ্ঠা করে?
খ. খলিফা মনসুর কর্তৃক আলী বংশীয়দের প্রতি দুর্ব্যবহারের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে রাজা ফিউডাল তার প্রধান সেনাপতির প্রতি যে ব্যবহার করেছেন খলিফা আল-মনসুর তার কোন সেনাপতির প্রতি সে আচরণ করেছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ধর্মীয় ঘটনার মতোই রাওয়ান্দিয়া সম্প্রদায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল রাজা ফিউডালের মতোই খলিফা আল-মনসুর তা দমনে সক্ষম হয়েছিলেন উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাগদাদ নগরী প্রতিষ্ঠা করেন আবু জাফর আল মনসুর।

খ. খলিফা মনসুর আলী বংশীয়দের আব্বাসি খিলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতো; তাই তিনি তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার করেন। হযরত আলী (রা) ও ফাতিমা (রা)-এর বংশধরগণ আব্বাসি বংশের উত্থানের সময় যথাযথ সাহায্য করলেও খলিফা আল মনসুর তাদেরকে সুনজরে পেরেকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর হন। তাছাড়া আলীর আল মনসুর। খিলাফতের সম্ভাব্য সাবিনার ও প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে বংশধরদের প্রতি জনসাধারণের অসীম ভক্তি ও শ্রদ্ধার জন্য খলিফা মনসুর বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং তাঁদের ধ্বংস সাধনে তৎপর হয়ে ওঠেন। যার ফলে তিনি আলী বংশীয়দের প্রতি দুর্ব্যবহার করেন।

গ. উদ্দীপকে রাজা ফিউডাল তার প্রধান সেনাপতির প্রতি যে ব্যবহার করেছেন খলিফা আল মনসুর তার সেনাপতি আবু মুসলিম খোরাসানির প্রতি সে আচরণ করেছিলেন।
পৃথিবীতে এমন অনেক সেনাপতির সম্পর্কে জানা যায়, যাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার বলে অনেক রাজবংশের জন্ম হয়েছে। তারা নিজেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হয়ে অন্য কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসিয়ে অতুলনীয় দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছে। তবে এ সকল সেনাপতির অনেককেই আবার নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। উদ্দীপকের রাজা ফিউডালের সেনাপতি আবু মুসলিম খোরাসানির উভয়েরই এই একই পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, রাজা ফিউডাল খুবই ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তবে রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি খুব নৃশংস ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে ভেবে তিনি তার প্রধান সেনাপতিকে হত্যা করেন এবং সেনাপতির সমর্থকদের দ্বারা যে বিদ্রোহ দেখা দেয় তাও কঠোর হস্তে দমন করেন। ঠিক একইভাবে সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে আল মনসুরও ছিলেন স্নেহশীল মানুষ। একজন মুসলিম হিসেবে তিনি ছিলেন ঘাটি ধার্মিক ব্যক্তি। তবে শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন নিষ্ঠুর ও বিশ্বাসঘাতক। তিনি আব্বাসি আন্দোলনের প্রধান সেনাপতি আবু মুসলিমকে নিজের শাসনের জন্য হুমকি মনে করতেন। তিনি আবু মুসলিমকে কৌশলে রাজদরবারে ডেকে এনে। বিশ্বাসঘাতকতা করে হত্যা করেন। সৈয়দ আমীর আলীর ভাষায়, আবু প্রকৃতপক্ষে তিনি এখন নিজেকে এতদিন নিজেকে নিরাপদ। মুসলিম যতদিন জীবিত ছিলেন আল প্রকৃত রাষ্ট্রপ্রধান মনে করতে লাগলেন। এরপর ৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দে সানবাদের নেতৃত্বে পারসিকগণ মুসলিম খোরাসানির বর্বরোচিত হত্যার প্রতিবাদে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এমন অবস্থায় আল মনসুর এক বিশাল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে সে বিদ্রোহ দমন করেন। উদ্দীপকেও এ ঘটনা প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ধর্মীয় ঘটনার মতোই রাওয়ান্দিয়া সম্প্রদায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল রাজা ফিউডালের মতোই আল মনসুর তা দমনে সক্ষম হয়েছিলেন।
খলিফা আল মনসুর ধর্মের প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট ছিলেন বলে একটি সম্প্রদায় তাকে আল্লাহর অবতার বলে ঘোষণা করে। এদেরকে রাওয়ান্দিয়া বলা হয়। খলিফার অনুগ্রহ লাভের জন্য এরা ছিল তোষামদকারী। এরা যে বিব্রতকর ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল আল মনসুর তা সম্পূর্ণরূপে দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। উদ্দীপকেও এ দৃশ্যপটই অঙ্কিত হয়েছে উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, রাজা ফিউডালের ধার্মিকতার সুযোগ নিয়ে তাকে এক দল প্রণা প্রভু বলে পূজা করতে এলে এক মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু তিনি এসব কিছু মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। একই ঘটনা আব্বাসি খলিফা আল মনসুরের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। একসা রাওয়ান্দিয়া সম্প্রদায় খলিফার প্রাসাদের সম্মুখে একত্রিত হয়ে বলতে থাকে এই আমাদের মাবুদের গৃহ যিনি আমাদেরকে আহারের জন্য খাদ্য এবং পানের জন্যে পানীয় প্রদান করেছেন। তাদের ঐরূপ ইসলামবিরোধী প্রচারণার জন্য মনসুর বাধ্য হয়ে তাদের ২০০ জনকে কারারুদ্ধ করেন। এ ঘটনার কিছুদিন পর ৬০০ রাওয়ান্দিয়ার একটি দল প্রাসাদের সম্মুখে এসে খলিফার দর্শন প্রার্থী হন। খলিফা তাদেরকে দর্শন প্রদান করলে তারা হঠাৎ খলিফাকে আক্রমণ করে বসে। সৌভাগ্যক্রমে মারান বিন যায়েদা নামক একজন সেনাপতি খলিফাকে রক্ষা করেন। পরে খলিফা কঠোর হস্তে এই সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ দমন করেন।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে যেমন ফিউডালকে একদল প্রজা প্রভু বলে পূজা করতে এসে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তিনি তা মোকাবিলা করেন, অনুরূপভাবে আব্বাসি খলিফা আল মনুসরের সময় রাওয়ান্দিয়া সম্প্রদায়ের সৃষ্ট পরিস্থিতিকে তিনি কঠোর হস্তে দমন করেন।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. 'ঢ' নামক শাসক নানা গুণে গুণান্বিত। তিনি ছিলেন প্রজাবৎসল ও ন্যায়পরায়ণ। অনিন্দ্য সুন্দর রাজধানী, সুরম্য প্রাসাদ, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভরপুর ছিল তার রাজ্য। যা কবি সাহিত্যিকদের আলোচ্য বিষয় ছিল। কিন্তু সন্দেহপ্রবণতা তার শাসনকালকে কিছুটা ম্লান করেছে। বহুকাল ধরে রাজকার্যে অবদান রাখা একটি পরিবারকে একরাত্রের মধ্যে তিনি নিঃশেষ করে দেন।
ক. আরবীয় জোয়ান অব আর্ক কে ছিলেন?
খ. আবুল আব্বাসকে আস-সাফফাহ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের সাথে আব্বাসি যুগের কোন শাসকের সাদৃশ্য রয়েছে। ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উক্ত শাসক সন্দেহের বসে একটি বংশকে শেষ করে দিয়েছিলেন।' এই উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আব্বাসি শাসনামলে খারেজিদের নেতৃত্বদানকারী লায়লা মতান্তরে আল ফারিয়াকে আরবীয় জোয়ান অব আর্ক বলা হয়।

খ. আবুল আব্বাসের চরিত্রে নৃশংসতা ও রক্তলোলুপতার ছাপ পরিলক্ষিত হওয়ায় তাকে আস-সাফফাহ উপাধি দেওয়া হয়। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি জাবের যুদ্ধে দ্বিতীয় মারওয়ানের পরাজয়ের মাধ্যমে উমাইয়া বংশের পতন ঘটে। সর্বশেষ উমাইয়া শাসক ৫ আগস্ট মারওয়ানের ছিন্ন মস্তক দেখে আবুল আব্বাস 'আস-সাফফাহ' বা 'রক্তপিপাসু' উপাধি গ্রহণ করেন। খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েই তিনি উমাইয়া নিধন নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত নৃশংসভাবে উমাইয়াদের হত্যা করেন। তিনি ফিলিস্তিনের আবু ফ্রটাস নামক স্থানে ৮০ জন উমাইয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিষ্ঠুরভাবে তাদেরকে হত্যা করেন। এসব কারণেই তাঁকে আস সাফ্ফাহ বা রক্তপিপাসু বলে অভিহিত করা হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাসকের সাথে আব্বাসি যুগের শ্রেষ্ঠ শাসক হারুন আল-রশিদের সাদৃশ্য রয়েছে। খলিফা হারুন অর রশিদ ৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার সুদীর্ঘ ২৩ বছরের রাজত্বকাল আরব ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ। অসাধারণ প্রতিভা, চিত্তাকর্ষক ব্যক্তিত্ব এবং অতুলনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাকে আব্বাসি বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে মর্যাদা দেয়। জনকল্যাণকামিতা, প্রজাবাৎসল্য ও ন্যায়পরায়ণতা প্রভৃতি গুণাবলি তাকে বিশেষভাবে গুণান্বিত করলেও বার্মাতি পরিবারের প্রতি নিষ্ঠুরতা তার চরিত্রকে কিছুটা স্নান করেছে। উদ্দীপকের 'ঢ' শাসকের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতি লক্ষণীয়।
'ঢ' একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি ন্যায়পরায়ণতা, প্রজাবাৎসল্য প্রভৃতি গুণাবলির ধারক। তবে সন্দেহপ্রবণতা তার চরিত্রকে কিছুটা কলুষিত করেছে। একইভাবে খলিফা হারুন রশিদ ন্যায় ও কল্যাণের ধারক ছিলেন। তিনি জনসাধারণের উন্নতি ও স্বার্থ সংরক্ষণে সদাতৎপর ছিলেন। ঐতিহাসিক আমীর আলী তার সম্পর্কে বলেন, অবিচারের প্রতিকার এবং নিপীড়িত ও দুর্দশাগ্রস্তদের দুঃখমোচনের জন্য তিনি রাত্রে বাগদাদের রাজপথে ঘুরে বেড়াতেন। তাছাড়া তার সময়ে বাগদাদ সমসাময়িক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত হয়। তিনি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সুরম্য। অট্টালিকা নির্মাণ করে বাগদাদকে তাঁকজমকপূর্ণ ও ঐশ্বর্যশালী নগরীতে। পরিণত করেন। তবে আব্বাসিদের একান্ত সহযোগী বার্মাঝি পরিবারকে। ধ্বংস করে তিনি নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেন। সুতরাং দেখা যায়, ন্যায়পরায়ণতা, জনকল্যাণকামিতা, উন্নত বুচিবোধ প্রভৃতি গুণাবলি এবং নিষ্ঠুরতা খলিফা হারুন রশিদকে উদ্দীপকের "ঢ" এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।

ঘ. উক্ত শাসক তথা খলিফা হারুনর রশিদ চারিত্রিক দিক দিয়ে ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলেও সন্দেহপরায়ণতাই একটি বংশ ধ্বংস করতে তাকে প্ররোচিত করেছিল।
দীর্ঘ সতেরো বছর পরম নিষ্ঠা, অবিচল আনুগত্য, আত্মত্যাগ এবং অসামান্য কর্মনৈপুণ্যের সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করে যারা হারুন-অর-রশিদ এর রাজত্বে গৌরব, মর্যাদা ও সমৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করেন তারা হলেন বিখ্যাত বার্মাকি উজিরগণ। কিন্তু ফল বিন রাবির ব্যক্তিগত শত্রুতা ও উচ্চাভিলাষ, বার্মাকিদের অপরিসীম প্রভাব ও ঐশ্বর্য, উলির জাফরের ষড়যন্ত্র বার্নাতি জাফর খলিফার বোন আব্বাসাকে গোপনে বিয়ে করা এবং নানা সন্দেহ ও লোকজনের নানা রকম কথার প্রভাবে বার্মাকিদের প্রতি খলিফা ক্ষুব্ধ হন। তিনি হঠাৎ একরাতে জাফরের শিরশে্ছদ করেন এবং বৃদ্ধ। ইয়াহইয়া ফজল, মুসা ও মুহাম্মদকে রাজার কারারুদ্ধ করেন। ফজল তার ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়া সত্ত্বেও তাকে হত্যা করেন শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে, যা ছিল তার চরিত্রের এক দুর্বল বৈশিষ্ট্য।
পরিশেষে বলা যায় যে, হারুন-অর-রশিদের চরিত্র কঠোরতা ও কোমলতার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। তিনি গরিব-দুঃখীদের প্রতি যতটা সময় ছিলেন, ততটাই নির্ণয় ছিলেন অন্যায়কারীদের প্রতি বার্মাকি পরিবারের প্রতি তার নিষ্ঠুর আচরণই এর প্রমাণ দেয়। বার্মাকিদের প্রতি খলিফা অনেকটাই সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু শেষ দিকে তাদের কিছু আচরণ তাকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে। অন্যদিকে সন্দেহপ্রবণতা, অসহিষ্ণুতা প্রভৃতি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য থেকে তিনি মুক্ত হতে পারেননি। তাই আব্বাসি বংশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে বার্মাকিদের অনেক অবদান থাকা সত্ত্বেও সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তিনি তাদের ধ্বংস করেন।

৮. মধ্যযুগে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয় দীর্ঘকাল ধরে দুই ধর্মের অনুসারী ও দুই মহাদেশের মধ্যে একটা জায়গার দখল নিয়ে। একপক্ষ আক্রমণকারী, অপরপক্ষ প্রতিরোধকারী। দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা এ যুদ্ধে আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যে সফল না হলেও তাদের সামগ্রিক জীবনাচারে আসে ব্যাপক পরিবর্তন।
ক. ব্যালে নৃত্য কে আবিষ্কার করেন?
খ. দারুল হিকমা বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন যুদ্ধের ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. এ যুদ্ধ আক্রমণকারীদের জীবনাচারে ব্যাপক পরিবর্তন আনে এ উক্তির সাথে তোমার মতামতের যৌক্তিকতা দেখাও।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ব্যালে নৃত্য আবিষ্কার করেন আব্বাসি খলিফা আল আমিন।

খ. ফাতেমী খলিফা আল হাকিম ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে কায়রোতে একটি বিখ্যাত বিজ্ঞানভবন নির্মাণ করেন। এটি দারুল হিকমা নামে পরিচিত। বাগদাদের বায়তুল হিকমার অনুকরণে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মিশরের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলী-ইবন-ইউসুফ এ জ্ঞানগৃহ নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এখানে শিয়া ধর্ম বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণা হতো। এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বহু অমূল্য গ্রন্থরাজি সংগৃহীত ছিল। দেশ-বিদেশের বহু প্রখ্যাত পন্ডিত ব্যক্তি এখানে হাজির হতেন এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক ও পদার্থবিজ্ঞানী ইবনে হায়সাম।

গ. উদ্দীপকে দীর্ঘকাল ব্যাপী স্থায়ী মুসলিম-খ্রিস্টান দ্বন্দ্ব ক্রুসেডের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওমর (রা)-এর নেতৃত্বে ইসলামের সম্প্রসারণ শুরু হয়। আমর বিন আস সর্বপ্রথম খ্রিষ্টানদের নিকট থেকে প্যালেস্টাইন দখল করেন এবং খলিফা স্বয়ং জেরুজালেম গমন করে শহরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে যীশু খ্রিষ্টের জন্মভূমি প্যালেস্টাইন মুসলমানদের করতলগত হলে খ্রিস্টান জগতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাদের প্রতিক্রিয়ার ফল ছিল ক্রুসেড উদ্দীপকে বর্ণিত দুই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা যুদ্ধের মাধ্যমে ক্রুসেডের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই যুদ্ধের পিছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান ছিল। মহানবি (স)-এর মেরাজ গমনের স্থান এবং হযরত মুসা ও হযরত দাউদের স্মৃতি বিজড়িত জেরুজালেম মুসলমানদের এবং খ্রিস্টানদের নিকট সমানভাবে পবিত্র। প্রকৃতপক্ষে খ্রিস্টান, ইহুদি ও মুসলমান এ তিনটি সম্প্রদায়ের জন্য জেরুজালেম বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যার কারণে ফাতেমী নবম খলিফা আল হাকিম ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমের খ্রিস্টানদের পবিত্র সমাধি ও গির্জা ধ্বংস করলে তারা খুবই বিক্ষুদ্ধ হয়। এছাড়া সেলজুক শাসকরা খ্রিস্টানদের তীর্থযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ইউরোপের খ্রিষ্টান জগতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া পোপ দ্বিতীয় আরবানের ঘোষণা এবং সম্রাট কমনেসাসের আবেদন ব্রুসেডকে ত্বরান্বিত করেছিল, যা প্রায় দুশত বছরব্যাপী স্থায়ী ছিল। আটটি বড় রকমের ক্রুসেড সংঘটিত হয়েছিল। ঐতিহাসিকগণ সমগ্র ক্রুসেডকে তিনটি যুগে বিভক্ত করেছেন।
১. প্রথম যুগ : ১০৯৫-১১৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। এ সময় ক্রুসেডারগণ মুসলিম ভূখন্ড-র উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আড়vবেগ জঙ্গীর এডিসা পুনরুদ্ধার পর্যন্ত প্রথম ক্রুসেড স্থায়ী হয়।
২. দ্বিতীয় যুগ : ১১৪৪-১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, অর্থাৎ ইমামুদ্দীন জঙ্গীর শাসনকাল হতে সালাহউদ্দিনের শাসনকাল পর্যন্ত।
৩. তৃতীয় যুগ : ১১৯৩-১২৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এ যুগে খ্রিস্টানদের মধ্যে কয়েকটি গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন হতে ক্রুসেডারগণের আধিপত্য বিলুপ্ত হয়।

ঘ. উক্ত যুদ্ধ তথা ক্রুসেডের ফলে আক্রমণকারী দল তথ্য খ্রিস্টানদের জীবনাচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিলো। প্রকৃতপক্ষে ক্রুসেডের যুদ্ধগুলো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছিল। ব্যভিচার, অমানুষিক অত্যাচার, ধ্বংসযজ্ঞ, পৃষ্ঠন ছিল ধর্মযোদ্ধাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপের নির্দেশে সংঘটিত এই ধর্মযুদ্ধ পক্ষান্তরে যাজকশ্রেণির কলংকময় কর্মকান্ড ইতিহাসে পরিণত হয়। এছাড়া ক্রুসেডের ফলে পাশ্চাত্য দেশসমূহ প্রাচ্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানলাভ করে এবং প্রাচ্যে ধর্ম প্রচার ও বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত হয়।
সংঘর্ষের ঘটনাটি অর্থাৎ ক্রুসেড ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা সংস্কৃতির ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। ক্রুসেডের প্রভাবে স্বাদশ শতাব্দী হতে ইউরোপে হাসপাতালের উদ্ভব ও প্রসার এবং সর্বসাধারণের স্নানাগার প্রবর্তিত হয়। খ্রিষ্টানগণ মুসলমানদের কাছ থেকে মেরিনার্স কম্পাসের ব্যবহার শিক্ষা লাভ করে। মুসলমানদের নিকট থেকে তারা সুগন্ধি দ্রব্য মসলা, মিষ্টান্ন ও বিভিন্ন প্রকার বেশভূষার ব্যবহার ও গৃহসজ্জা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। ক্রুসেডে লিপ্ত খ্রিস্টানরা মুসলমানদের উন্নত সভ্যতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব, রুচিপূর্ণ জীবনযাত্রা স্বচক্ষে অবলোকন করে বিস্মিত হয়। ক্রুসেড প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপন করেছিল। ফলে সংস্কৃতির আদান-প্রদান ঘটে। প্রাচ্যের আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং গৃহবিন্যাস করার সাজ-সরঞ্জাম দ্বারা ইউরোপীয়রা এতই প্রভাবান্বিত হয় যে, তারা ‘হুবহু আল খায়র’ (সমুদ্রভাত) কথাটি পর্যন্ত নিজেদের দেশে চালু করে। ঐতিহাসিক ছুটন ও ওয়েবস্টার বলেন, 'তারা মার্জিত বুদ্ধিজ্ঞান, উন্নততর ভাবধারা ও উদার সহানুভূতি নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে। মুসলমানদের উন্নত ভাবধারার সংস্পর্শে আসার প্রভাবে প্রথমে নবজাগরণে তথা রেনেসাঁ পরে নব্য ইউরোপের জন্মদান করে। টয়নবি বলেন, 'ক্রুসেডের ফলেই আধুনিক ইউরোপের জন্ম হয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, ক্রুসেড ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা সংস্কৃতির ওপর অসামান্য প্রভাব বিস্তার করেছিল।

৯. রোমান সম্রাট অগাস্টাস তার প্রজাদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য রাজ্যের সর্বত্র স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি অসংখ্য পান্ডুলিপি ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন। ফলে রোমান সাম্রাজ্যে প্রগতির সূচনা হয়।
ক. কত সালে বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. রাওয়ান্দিয়া কারা?
গ. উক্ত রোমান সম্রাটের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন আব্বাসি শাসকের মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তিনি কীভাবে আরবদেশে প্রগতির সূচনা করেছিল? বিশ্লেষণ কর।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. রাওয়ান্দিয়া ছিল একটি পারসিক উগ্রপন্থি সম্প্রদায়। খলিফা আল মনসুর ধর্মের প্রতি খুব আকৃষ্ট ছিলেন বলে রাওয়াদিয়ারা খলিফাকে আল্লাহর অবতার বলে ঘোষণা করে। তাদের এরূপ ইসলামবিরোধী প্রচারণার জন্য খলিফা তাদের ২০০ জনকে কারারুদ্ধ করেন। এর কিছু দিন পর এই সম্প্রদায়ের ৬০০ জনের একটি দল খলিফার দর্শনপ্রার্থী হয়ে হঠাৎ করে খলিফাকে আক্রমণ করে বসে। মায়ান কিন যায়েদার হস্তক্ষেপে খলিফা তাদের হাত থেকে রক্ষা পান।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত দেওয়ান রোমান সম্রাট অগাস্টাসের কর্মকান্ডের সাথে আব্বাসি খলিফা আল মামুনের মিল আছে।
৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাতা আমিনের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করে খলিফা মামুন বাগদাদ নগরীকে সুদৃঢ়ীকরণের নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি সাম্রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগী হন। আর এ লক্ষ্যে ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে গড়ে তোলেন বিশ্বখ্যাত বায়তুল হিকমা (বিজ্ঞানাগার)। এখানে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চাসহ, অনুবাদ, গবেষণাধর্মী নানা কাজ করা হতো।
উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি যে, রোমান সম্রাট অগাস্টাস প্রজাদের শিক্ষার জন্য অনেক স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তিনি নিজেও খুব জ্ঞানী ছিলেন, যা খলিফা আল মামুনের সাথে সাদৃশ্যময়। আব্বাসি খিলাফতে শিক্ষা বিস্তারের জন্য খলিফা মামুন বাগদাদে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষাগ্রহণের জন্য এ প্রতিষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি প্রচুর অর্থ ও লা-খারাজ সম্পত্তি দান করেন। এছাড়া খলিফা মামুন বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারের ক্ষেত্রে এক নব অধ্যায়ের সূচনা করেন। এখানে বিভিন্ন প্রাচীন পান্ডুলিপি অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়। কুরআন, হাদিস, তাফসির, তর্কশাস্ত্র, গণিত, রসায়ন, ভূগোল, পদার্থ, চিকিৎসা প্রভৃতি শিক্ষার প্রসারে তিনি ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। এ সকল দিক দিয়ে উদ্দীপকের অগাস্টাসের সাথে আব্বাসি খলিফা আল মামুনের সাদৃশ্য রচিত হয়েছে।

ঘ. জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখার উন্নয়ন ঘটিয়ে আব্বাসি খলিফা আল মামুন আরবদেশে প্রগতির সূচনা করেছিলেন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রোমান সম্রাট অগাস্টাস জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের ক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ, প্রতিষ্ঠা করেছে, যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। অগাস্টাসের এ ভূমিকার ন্যায় খলিফা আল মামুনও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন। আর এ ভূমিকা তৎকালীন আরব বিশ্বে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল।
খলিফা আল মামুন বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠা করে সবার জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। এখানে দেশি-বিদেশি গ্রন্থের অনুবাদ, গবেষণা করা হতো যা জ্ঞান চর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে উৎসাহী ছিলেন। তাই জ্যোতিষশাস্ত্রের উৎকর্ষ সাধনের জন্য তিনি বাগদাদের সন্নিকটে শামাসিয়া নামক স্থানে জোতির্বিজ্ঞান গবেষণার জন্য একটি মানমন্দির নির্মাণ করেন। মামুনের অধীনে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তার আদেশে মুসলিম মনীষীগণ বিষুবরেখা, পৃথিবীর আকৃতি, সূর্যঘড়পিৃথিবীর ব্যাস, চন্দ্র-সূর্যের দ্বারা সম্পর্কিত মূল্যবান তথ্য আবিষ্কার করেন। তার সময়ে পদার্থবিদ আবুল হাসান দূরবীণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। খলিফা মামুনের শাসনামলে আব্বাসি গণিত শাস্ত্রের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। তিনি নিজে একজন গণিতজ্ঞ ছিলেন। তার সময়কার বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ছিলেন হিসাবুল-বাবর ওয়াল মুকাবালাহ' রচয়িতা আল খাওয়ারিজমি'। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত এ গ্রন্থটি ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। খলিফা মামুদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিখ্যাত রসায়নবিদ জাবির ইবনে হাইয়ান ভস্মীকরণ ও লঘুকরণ সূত্র দুটি আবিষ্কার করেন। এছাড়া খলিফা মামুন দর্শনশাস্ত্রের উন্নতিতে অবদান রেখেছেন। দার্শনিক আল কিন্দি খলিফা মামুনের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তিনি 'এরিস্টটল ধর্মতত্ত্ব' আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন এবং মুসলিম দর্শনের সাথে প্লেটো ও এরিস্টটলের মতবাদের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, আব্বাসি খলিফা আল মামুন গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র, রসায়ন, ইতিহাস ও দর্শন চর্চায় অসামান্য অবদান রাখেন। এ কারণে তার রাজত্বকালকে অগাস্টান যুগ বলে অভিহিত করা হয়।

১০. বাংলায় ইলিয়াসশাহী বংশের শাসক গিয়াসউদ্দিন আজমশাহ ছিলেন একজন প্রজারঞ্জক শাসক। রাজ্যের প্রজাসাধারনের জন্য তিনি রাস্তাঘাট, সরাইখানা, পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মক্কা ও মদিনাতে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণে অর্থ ব্যয় করেন। তিনি হজব্রত পালনকারীদেরও অর্থ সাহায্য দেন। তিনি কাব্যপ্রীতিতে মগ্ন থাকতেন। ফরাসি কবি হাফিজের সাথে তার পত্রালাপ হয়েছিল। চীনের সম্রাট ইয়াংপু তার দরবারে প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেন। তবে তিনি সমরনীতিতে তেমন কোন কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেননি। এমনকি তিনি আসামে বিফ অভিযান প্রেরণ করেন। বিভিন্ন অঞ্চলের রাজাদের ওপর তিনি প্রভুত্ব কায়েম করতে পারেননি।
ক. বাগদাদ নগরীর প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. খলিফা হারুন-অর-রশিদ বার্মাকিদের প্রতি কীরূপ নীতি গ্রহণ করেছিলেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে কোন আব্বাসি খলিফার আংশিক সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শাসক উক্ত খলিফার পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে কি?যৌক্তিক মতামত দাও।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাগদাদ নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হলেন আব্বাসি খলিফা আবু জাফর আল মনসুর।

খ. খলিফা হারুন অর রশিদ বার্মাকি উজির পরিবারের প্রতি দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
দীর্ঘ সতেরো বছর পরম নিষ্ঠা অবিচল আনুগত্য ও আত্মত্যাগ এবং অসামান্য কর্মনৈপুণ্যে বার্মাকি উজিরগণ আব্বাসিদের শক্ত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করলেও ফতাল বিন রাবির ব্যক্তিগত শত্রুতা ও উচ্চাভিলাষ, বার্মাকিদের অপরিসীম প্রভাব, বার্মাকি জাফর কর্তৃক বোন আব্বাসাকে গোপন বিবাহ এবং নানা সন্দেহের কারণে খলিফা হারুন বার্মাকিদের প্রতি খুবই ক্ষুদ্ধ হন। ফলে জাফরের শিরশে্ছদ করা হয়। বৃদ্ধ ইয়াহিয়া, ফজল, মুসা ও মুহাম্মদকে রাক্কায় কারারুদ্ধ করা হয় এবং তাদের সমুদয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এভাবে বার্মাকিদের প্রতি খলিফা হারুন-অর-রশিদ দমন নীতি গ্রহণ করেন।

গ. উদ্দীপকের শাসকের সাথে আব্বাসি খলিফা আল মাহদির কর্মকান্ডের আংশিক মিল পাওয়া যায়।
পিতা মনসুরের মৃত্যুর পর তারই মনোনয়নানুসারে আল মাহদি ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদের সিংহাসনে উপবেশন করেন। তিনি স্বভাবত দয়ালু ও মহানুভব ছিলেন এবং সিংহাসনে আরোহণ করা মাত্রই পিতার শাসনকালের নিষ্ঠুরতার প্রতিকার সাধন করেন। এছাড়া জনগণের কল্যাণার্থে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। খলিফা আল মাহদি জ্ঞানী-গুণীদেরও খুব সমাদর করতেন। উদ্দীপকেও এ বিষয়গুলোর প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকের শাসক গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ ছিলেন একজন প্রজারঞ্জক শাসক। তিনি প্রজাসাধারণের জন্য রাস্তাঘাট, সরাইখানা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মক্কা-মদিনায় মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণে অর্থ ব্যয় করেন এবং হতা পালনকারীদের অর্থ সাহায্য দেন। তাছাড়া তিনি কবিদের বিশেষ সমাদর করতেন। এই বিষয় আব্বাসি খলিফা আল মাহদির কর্মকান্ডের মিল রয়েছে। আল মাহদি তার জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য মহিমান্বিত হয়ে আছেন। তার আদেশে শহরের সমুদয়পথ পাকা ও প্রশস্ত করা হয়। পবিত্র মক্কা-মদিনা নগরীক্ষায় পর্যন্ত সমগ্র পথে কূপ ও জলাধর সমন্বিত বৃহৎ এবং আরামদায়ক গৃহ নির্মিত হয়। তীর্থযাত্রী ও পথচারীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রহরী নিযুক্ত করা হয়। প্রতি বছর কাবা শরিফের জন্য তিনি গিলাফ প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া তিনি বিশ্বের জ্ঞানী-গুণীদের বাগদাদে আমন্ত্রণ জানান। মুহাদ্দিস শায়িয়াহ বিন আবি ওহাব, সুফিয়ানছুরী, বৈয়াকরণ খলিল আহম্মদ প্রমুখ মাহদির সময় বাগদাদের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ছিলেন। এ সকল দিক দিয়ে মিল থাকলেও সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে আল মাহদি ও উদ্দীপকের শাসকের মধ্যে কোনো মিল নেই। তাই বলা যায় উদ্দীপকে আল মাহদির কর্মকান্ডের আংশিক সাদৃশ্য লক্ষণীয়।

ঘ. উদ্দীপকের শাসকের অনেক কর্মকান্ডই উদ্ভ খলিফার অর্থাৎ আল মাহদির কর্মকান্ডকে সমর্থন করে না- উদ্ভিটি যথার্থ।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, বাংলার ইলিয়াস শাহী বংশের শাসক গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ জনকল্যাণমূলক অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সমরনীতিতে তেমন কোনো কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেননি। এমনকি তিনি আসামে বিফল অভিযান প্রেরণ করেন। তাছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলের রাজাদের ওপরও তিনি প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের এ সকল কর্মকান্ড আব্বাসি খলিফা আল মাহদির কর্মকান্ডের বিপরীত।
উদ্দীপকের শাসক সমরাভিযানে হলেও আল মাহদি এক্ষেত্রে ব্যর্থ ছিলেন না। আল মাহদি বাইজান্টাইনে সফল অভিযান প্রেরণ করেন। বাইজান্টাইনগণ খলিফা মনসুরের সাথে সম্পাদিত চুক্তিভঙ্গ করে ৭৭৯ ৭৮০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম রাজ্যের সীমান্ত লুণ্ঠন শুরু করলে খলিফা তাদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন। আল মাহদি বাইজান্টাইনে অভিযান প্রেরণ করে সফলতা অর্জন করেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই মেগাথাকোমিস নামক এক সেনাপতির নেতৃত্বে বাইজান্টাইনগণ মুসলিম রাজ্য পুনরায় আক্রমণ করে এবং ক্ষতিসাধন করে। সেনাপতি হারুন তাদের প্রতিরোধ করার জন্য দ্রুতবেগে অগ্রসর হলে বাইজান্টাইনগণ হতাহত হয়ে পরাজয় বরণ করে। এছাড়া খলিফা আল মাহদি কঠোর হস্তে বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন।
উদ্দীপকের শাসক তার রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজাদের ওপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। কিন্তু আল মাহদি তার সাম্রাজ্যের বিদ্রোহীদের দমন করে দ্বীয় প্রভৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসি খলিফার বাইজান্টাইনে সফল সামরিক অভিযান ও বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্রোহ দমনের বিষয়গুলো উদ্দীপকের শাসকের আসামে বিফল অভিযান এবং বিভিন্ন অঞ্চলে নিজের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতার বিষয়গুলোকে সমর্থন করে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post