HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC Islamic History and Culture 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

অধ্যায়ভিত্তিক প্রাথমিক আলোচনাঃ

উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমী খিলাফত
ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে আগলাবীয় ধ্বংসস্তূপের ওপর আব্বাসি খিলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে উত্তর আফ্রিকায় একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন, যা ফাতেমী খিলাফত নামে পরিচিত। আফ্রিকায় ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠা শিয়া সম্প্রদায়ের প্রথম ও প্রধান রাজনৈতিক সাফল্যের পরিচয় বহন করে। ফাতেমী খিলাফতের শ্রেষ্ঠ খলিফা আল-মুইজের রাজত্বকাল হতে এ খিলাফতের স্বর্ণযুগের শুভ সূচনা হয় এবং আল আজিজের সময় চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ফাতেমী খিলাফতে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়, যা তৎকালীন বিশ্বে বিরল।

আল আজহার মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং দারুল হিকমা বা বিজ্ঞানভবন এ সময় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ৯০৯ খ্রিস্টাব্দ হতে ১১৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ জন শাসক এ খিলাফত পরিচালনা করেন। তবে দুর্বল ও অযোগ্য খলিফা এবং স্বার্থান্ধ ও কুচক্রী মন্ত্রীদের কুশাসনের ফলে ১১৭১ খ্রিস্টাব্দে গাজী সালাহউদ্দিন কর্তৃক আল আজিদকে সিংহাসনচ্যুত করার মাধ্যমে ফাতেমী বংশের অবসান ঘটে।

ফাতেমীদের পরিচয়
ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীর নেতৃতেব ৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত শিয়া শিলাফতের খলিফাগণ ‘ফাতেমী’ নামে পরিচিত। তাদের এরূপ নামকরণের কারণ এ বংশের খলিফাগণ নিজেদের ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জামাতা হযরত আলী রা. ও তাঁর স্ত্রী বিবি ফাতেমা রা.-এর বংশধর হিসেবে দাবি করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি বা খলিফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজ শিয়া ও সুন্নি এ দু'টি মতাদর্শগত সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মুসলমানদের মধ্যে একটি দল খিলাফতে মহানবির পিতৃব্য ও জামাতা হযরত আলী রা.-এ বৈধ অধিকারের দাবি করেন।

তাৎক্ষণিকভাবে তারা হযরত আলী রা.-এর কাছ থেকে এ ব্যাপারে সমর্থন না পেলেও তারা খিলাফতে হযরত আলী রা.-এর বৈধ দাবির অবস্থান থেকে সরে যাননি। বরং তারা ক্রমশ নিজেদের সংগঠিত করতে থাকেন। হযরত আলী রা. খোলাফায়ে রাশেদুনের চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর সমর্থকদের স্বপ্ন পূরণ হয়। কিন্তু তারা এর পূর্বে আরো যে তিনজন মহান খলিফা দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে বৈধ খলিফা হিসেবে স্বীকার করতে অস্বীকার করেন। এভাবে খিলাফতে হযরত আলী রা.-এর দাবির সমর্থনে মুসলমানদের মধ্যে যে দলের উদ্ভব ঘটে ইতিহাসে তারা 'আলাবী' বা 'শিয়াতু আলী' আলীর দল, সংক্ষেপে ‘শিয়া’ নামে পরিচিত।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি

১. ফাতেমীয় খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উত্তর : ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী।

২. ফাতেমীয় খিলাফত কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : উত্তর আফ্রিকার মিসরে।

৩. ফাতেমী খিলাফত কী ছিল?
উত্তর : আফ্রিকায় শিয়া মতাদর্শভিত্তিক একটি রাজবংশ।

৪. ফাতেমীয় খেলাফতের শ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন?
উত্তর : খলিফা আল মুইজ।

৫. খলিফা আল মুইজের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় কোনটি?
উত্তর : মিসর বিজয়।

৬. জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতায় ও দানশীলতায় কোন খলিফা বিখ্যাত ছিলেন?
উত্তর : খলিফা আল আজিজ।

৭. ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কোন খলিফা পরিচিত ছিলেন?
উত্তর : খলিফা আল হাকিম।

৮. কে কত সালে দারুল হিকমা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর : ১০০৫ সালে আল হাকিম শিয়া মতবাদ প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন।

৯. মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উত্তর : আল আজিজ।

১০. বায়তুল হিকমার মতো দারুল হিকমা ছিল-
উত্তর : গবেষণা কেন্দ্র, লাইব্রেরি, অনুবাদ কেন্দ্র।

১১. ফাতেমীয় খিলাফতের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর : মিসরের কায়রোতে।

১২. জওহর কে ছিলেন?
উত্তর : ফাতেমী খলিফা আল মুইজের সেনাপতি।

১৩. দাঈ অর্থ কী?
উত্তর : প্রচারক।
 
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. পিতার মৃত্যুর পর গৃহশিক্ষক আসিফের তত্ত্বাবধানে নাবালক মূর্তজা সিংহাসনে বসেন। কিন্তু অল্প দিনেই আসিফ লোভী ও ক্ষমতালিপ্সু হয়ে উঠলে তাকে গুপ্তচর মারফৎ হত্যা করে মূর্তজা নিজ হাতে পরিপূর্ণ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। মূর্তজা তার রাজ্যে প্রশাসনিক কাজকর্ম রাতে করার সিদ্ধান্ত নেন। দোকানপাট, স্কুল মাদ্রাসাসহ সকল প্রতিষ্ঠান রাতে খোলা রাখার নির্দেশ দেন। আর দিনে সকলকে আরাম করতে বলেন। নির্জন গৃহে তিনি একাকী থাকতে পছন্দ করতেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ও জনকল্যাণে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।
ক. জওহর কে ছিলেন?
খ. 'আল-কাহিরা' বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মূর্তজার ক্ষমতা গ্রহণের সাথে কোন ফাতেমী খলিফার ক্ষমতা গ্রহণের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের মূর্তজার মতোই উক্ত খলিফাও বিচিত্র সব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জওহর ছিলেন ফাতেমী খলিফা আল-মুইজের সেনাপতি এবং আল কাহিরা কায়রো নগরীর গোড়াপত্তনকারী।

খ. ফাতেমী খলিফা আল-মুইজের শাসনামলে মিসরে প্রতিষ্ঠিত রাজধানী 'আল-কাহিরা' নামে পরিচিত।
আল-কাহিরা অর্থ 'বিজয়ী শহর'। চতুর্থ ফাতেমী খলিফা আল-মুইজের সেনাপতি জওহর ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মিসর জয় করেন এবং খলিফার নির্দেশে কায়রোকে রাজধানীর উপযোগী করে নির্মাণ করেন। সরকারিভাবে কায়রোর নামকরণ করা হয় 'আল-কাহিরা' বা বিজয়ী শহর। ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে 'আল-কাহিরা' বা কায়রো রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মূর্তজার ক্ষমতা গ্রহণের সাথে ফাতেমী খলিফা আল-হাকিমের ক্ষমতায় আরোহণের সাদৃশ্য রয়েছে।
ফাতেমী খলিফা আল-আজিজের মৃত্যুর পর পুত্র আল-হাকিম মাত্র ১১ বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ ৯৯৬ খ্রি.. করেন। তিনি নাবালক হওয়ায় পিতার আমলের প্রাদেশিক শাসনকর্তা বারজোয়ান তার প্রতিনিধি হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। কিন্তু বারজোয়ান ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলে এক পর্যায়ে আল-হাকিম গুপ্তচরের সাহায্যে তাকে হত্যা করে নিজে সকল ক্ষমতা গ্রহণ করেন। একই পরিস্থিতি উদ্দীপকে বর্ণিত মূর্তজার ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়।
পিতার মৃত্যুর পর মূর্তজা গৃহশিক্ষক আসিফের তত্ত্বাবধানে সিংহাসনে বসেন। কিন্তু আসিফ লোভী ও ক্ষমতালিপ্সু হয়ে উঠলে মূর্তজা তাকে গুপ্তচরের সহায়তায় হত্যা করে নিজে ক্ষমতা দখল করেন। খলিফা আল-হাকিমও তত্ত্বাবধায়ক বারজোয়ানের অতিরিক্ত লোড এবং অপতৎপরতাকে বরদাশত করেননি। বারজোয়ান সেনাধ্যক্ষ ইবনে আমরকে পরাজিত ও হত্যা করে নিজেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করলে আল-হাকিম তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। গুপ্তঘাতক নিযুক্ত করে তিনি তাকে হত্যা করেন এবং নিজে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সুতরাং উদ্দীপকের মূর্তজা এবং খলিফা আল-হাকিমের ক্ষমতা দখলের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা।

ঘ. উদ্দীপকের মূর্তজার মতোই খলিফা আল-হাকিমও রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে উদ্ভট, বিচিত্র ও খামখেয়ালিপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ইতিহাসে এমন অনেক শাসক রয়েছেন, যারা রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে কোনো যুক্তির বাধ-বিচার করেননি। নিজেদের ভালো লাগা এবং খামখেয়ালিপনায় তারা রাজ্য শাসন করেছেন। এমনই দুজন শাসক উদ্দীপকের মূর্তজা এবং ফাতেমী খলিফা আল-হাকিম। আল-হাকিম জটিল চরিত্রের অধিকারী এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে অনেক ঐতিহাসিক অভিযোগ করেন। তিনি জিম্মিদের প্রতি কঠোর নীতি অবলম্বন করেন এবং বহু খ্যাতনামা লোককে হত্যা করেন। তিনি খ্রিষ্টানদের গির্জা ধ্বংস করে তাদেরকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার নির্দেশ দেন। ১০০১ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আদেশ জারি করেন যে, দিনে কোনো কাজকর্ম করা যাবে না; দোকান বন্ধ থাকবে এবং মানুষ আরাম করবে। অন্যদিকে রাতে অফিস-আদালতের কাজকর্ম চলবে এবং বেচাকেনা অব্যাহত থাকবে। তিনি একাকী থাকতে পছন্দ করতেন। রাত্রিবেলা ঘুরে ঘুরে প্রজাদের সুখ-দুঃখ অবলোকন করতেন। তিনি প্রায়ই মুকাতাম কায়রোর নিকটে. পাহাড়ের ওপর একটি নির্জন গৃহে যেতেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি অনবদ্য অবদান রাখেন। তিনি আব্বাসীয়দের অনুকরণে বায়তুল হিকমার আদলে মিসরে দারুল হিকমা নামক বিজ্ঞানাগার নির্মাণ করেন ১০০৫ খ্রি..। উদ্দীপকের মূর্তজাও এ ধরনের উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য শাসন করেছেন। তিনিও আল হাকিমের মতো রাতে ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক কাজ-কর্ম করার এবং দিনে বিশ্রাম নেওয়ার নির্দেশ জারি করেন। তিনি নির্জনতা পছন্দ করতেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যায়, মূর্তজার মতোই খলিফা আল-হাকিম উদ্ভট ও বিচিত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য শাসন করেছেন।

২. বঙ্গোপসাগরের নিঝুম দ্বীপে একজন আগন্তুকের আবির্ভাব ঘটে। উক্ত দ্বীপের অধিবাসীগণ অত্যন্ত সাহসী ও দুর্ধর্ষ হলেও তারা ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস করত। আগন্তুক সে ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্থানীয় অধিবাসীদেরকে তার পক্ষে আনতে সক্ষম হন। তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে দ্বীপটির নেতৃত্ব গ্রহণ করে সুপরিকল্পিতভাবে আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিকে দ্বীপে প্রতিষ্ঠিত করেন। উক্ত আধ্যাত্মিক ব্যক্তি সেখানে একটি যুগোপযোগী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
ক. 'দাঈ' শব্দের অর্থ কী?
খ. দারুল হিকমা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আগন্তুকের সাথে ফাতেমী খিলাফতের কোন ব্যক্তির মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ব্যক্তির চেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিই কালক্রমে অধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হনত মূল্যায়ন করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'দাঈ' শব্দের অর্থ প্রচারক।

খ. ফাতেমী বলিফা আল-হাকিম ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে কায়রোতে একটি বিখ্যাত বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ করেন। এটি দারুল হিকমা নামে পরিচিত। বাগদাদের বায়তুল হিকমার অনুকরণে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মিশরের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলী-ইবন-ইউসুফ এ জ্ঞানগৃহ নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এখানে শিয়া ধর্ম বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণা হতো। এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বহু অমূল্য গ্রন্থরাজি সংগৃহীত ছিল। দেশ-বিদেশের বহু প্রখ্যাত পন্ডিত ব্যক্তি এখানে হাজির। হতেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক ও পদার্থবিজ্ঞানী ইবনে হায়সাম।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আগন্তুকের সাথে উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমী বংশ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালনকারী আব্দুল্লাহ আশ-শিল্পীর কাজের মিল রয়েছে।
পৃথিবীতে এমন কতক সেনাপতি রয়েছেন, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর একাগ্রতায় নতুন নতুন রাজবংশের উত্থান ঘটেছে। আব্দুল্লাহ আশ-শিল্পী এ রকমই একজন সেনাপতি। তিনি তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে উত্তর আফ্রিকার সিংহাসনে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীকে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। উদ্দীপকেও অনুরূপ বিষয় লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের নিঝুম দ্বীপে একজন আগন্তুকের আবির্ভাব হয়। সেখানকার লোকজনের প্রাকৃতিক কিছু বিষয়ে বিশ্বাস পোষণ করার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি তেমন কিছু কর্মকান্ড করে তাদেরকে নিজের পক্ষে নেন এবং পরবর্তীতে সেখানকার নেতৃত্ব গ্রহণ করে পরিকল্পনা মাফিক তার আধ্যাত্মিক নেতাকে এনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। একইভাবে আব্দুল্লাহ আশ-শিল্পী নবম শতকের শেষের দিকে আফ্রিকায় গমন করেন। কুসংস্কারে বিশ্বাসী এখানকার অধিবাসীদের তিনি ইসমাঈলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী করে তোলেন। দলে দলে জনগণ তার সমর্থকে পরিণত হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকার শাসনকর্তা জিয়াদাতুল্লাহকে পরাজিত করে ইসমাঈলীয় সম্প্রদায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সকল বাধা অতিক্রম করে তিনি তার আধ্যাত্মিক নেতা ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীকে সিংহাসনে বসান। সুতরাং দেখা যাচেছ, উদ্দীপকে বর্ণিত আগন্তুকের সাথে আব্দুল্লাহ আশ-শিল্পীর কর্মকান্ডই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. উক্ত ব্যক্তির তথা আবদুল্লাহ আশ-শিল্পীর চেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ আধ্যাত্মিক নেতা অর্থাৎ ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী ফাতেমী বংশের সিংহাসনে বসে অধিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।
ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী ফাতেমী খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম খলিফা। তিনি ছিলেন পরম সৌভাগ্যবান মানুষ। সৌভাগ্যবশত তিনি আব্দুল্লাহ আশ-শিয়ীর মতো একজন অনুসারী পেয়েছিলেন, যার সহায়তায় ১০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। আল-মাহদী সিংহাসনে আরোহণ করে সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। তিনি অত্যন্ত ব্যক্তিত্বপূর্ণ, দূরদর্শী, বুদ্ধিমান, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী শাসক ছিলেন। সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি সকল বাধা-বিপত্তি, বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দূর করে তার শাসন ক্ষমতাকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। মাহদী প্রথমে রাক্কাদায় রাজধানী স্থাপন করে কাতামা গোত্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নপ্রতিষ্ঠিত খিলাফতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সাম্রাজ্যের সংহতি বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। এরপর সাম্রাজ্যকে নিষ্কণ্টক ও শঙ্কামুক্ত করতে তিনি আবু আবদুল্লাহ এবং ভাই আবুল আব্বাসকে হত্যা করেন। যদিও তারা ফাতেমী বংশের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে ৯১৬-৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাহদী কায়রোয়ানের ১৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে মাহদীয়া নগর প্রতিষ্ঠা করে নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে মাহদী সিসিলি, মাল্টা, কর্সিকা ইত্যাদি দ্বীপে প্রভুত্ব কায়েম করেন এবং সার্ডিনিয়ায় নৌ অভিযান চালান। তিনি ইদ্রিসি রাজ্য জয় করেন এবং লিবিয়া ও মৌরিতানিয়ার অনেক স্থান দখল করেন। উমর বিন হাফনের সাথে যোগাযোগ করে মাহদী স্পেন জয়েরও চেষ্টা করেন। তার এসব কর্মকান্ডই প্রমাণ করে যে, তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বেশ ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। পরিশেষে বলা যায়, উত্তর আফ্রিকায় মাহদীর শাসন শৃঙ্খলা স্থাপন, সুরক্ষিত রাজধানী স্থাপন এবং বলিষ্ঠ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ ফাতেমী বংশকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে।

৩. জাপানের রাজা হিরোহিতো যখন জনসমক্ষে আসেন তখন সবাই অবাক। তিনি তো তাদের মতোই একজন মানুষ। অথচ একদল পুরোহিত এতদিন বলে আসছিল তিনি মানুষ নন বরং দেবতা। পুরোহিতদের বলা এসব কাহিনি যখন রাজার গোচরে যায় তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, জনগণের মাঝে মিলেমিশেই দেশ শাসন করবেন। যে সমস্ত পুরোহিত এসব কাহিনি প্রচার করেছিল তাদের তিনি কঠোর শাস্তি প্রদান করেন। রাজা হিরোহিতের শাসন বিষয়ক সিদ্ধান্ত তাকে জাপানের প্রথম রাজা হিসেবে অমর করে রাখে।
ক. উত্তর আফ্রিকায় কোন বংশের শাসনকে উৎখাত করে ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
খ. উত্তর আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত খিলাফতকে ফাতেমী খিলাফত বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজা হিরোহিতের সাথে উত্তর আফ্রিকার কোন ফাতেমী খলিফার সামঞ্জস্য দেখা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে পুরোহিতদের প্রচারণার নিরিখে উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আবু আবদুল্লাহ আশ-শিয়ীর কর্মকান্ড মূল্যায়ন করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উত্তর আফ্রিকায় আগলাবি বংশের শাসনকে উৎখাত করে ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

খ. ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা. ও নবিকন্যা হযরত ফাতেমা রা.-এর বংশধরগণ ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।' মূলত শিয়াদের ইসমাঈলীয়গণই উত্তর আফ্রিকায় ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর নেতৃতেব ৯০৯ সালে ফাতেমী বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। আর হযরত ফাতেমা রা.-এর নামানুসারে বংশের নামকরণ করা হয়েছে বলে একে ফাতেমী খিলাফত বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজা হিরোহিতের সাথে ফাতেমী খলিফা ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীর সামঞ্জস্য দেখা যায়।
উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আবু আবদুল্লাহ আশ-শিল্পী কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। তিনি উত্তর আফ্রিকায় ইসমাঈলীয় মতবাদ প্রচার এবং তাদের পক্ষে জোর প্রচারণা চালান। অবশেষে ইসমাঈলীয় ইমাম সাঈদ বিন হুসাইনকে উত্তর আফ্রিকায় আমন্ত্রণ জানান।
৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সাঈদ বিন হুসাইন জনসমক্ষে এসে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী উপাধি নিয়ে ফাতেমী বংশের গোড়াপত্তন করেন। উত্তর আফ্রিকার সকল দলপতি আল-মাহদীর নিকট আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করলে তিনি প্রথমে রাক্কাদায় রাজধানী স্থাপন করে কাতামা গোত্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নন প্রতিষ্ঠিত খিলাফতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সাম্রাজ্যের সংহতি বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। পরবর্তীকালে ৯১৬-৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাহদী কায়রোয়ানের ১৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে মাহাদিয়া নগর প্রতিষ্ঠা করে নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। এছাড়া তিনি মাল্টা, সিসিলি, কর্সিকা প্রভৃতি দ্বীপে প্রভুত্ব কায়েম করেন। এভাবে উত্তর আফ্রিকায় তার শাসন, শৃঙ্খলা স্থাপন, সুরক্ষিত রাজধানী স্থাপন এবং বলিষ্ঠ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ ফাতেমী বংশকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন।

ঘ. উদ্দীপকের পুরোহিতের প্রচারণার নিরিখে উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় আবু আবদুল্লাহ আশ-শিল্পীর অবদান ছিল অপরিসীম। ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে আবু আবদুল্লাহ আশ-শিল্পী ইসমাঈলি মতবাদ প্রচারকার্যের দায়িত্ব নেন। ফাতেমী ইতিহাসে আশ-শিল্পী হিসেবে পরিচিত আবু আবদুন্নাহ্ ৯০১ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকায় গমন করে নিজেকে ইমাম মাহদীর অগ্রদূত বলে ঘোষণা দেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও অনলবর্ষী বস্তা আবু আবদুল্লাহর যোগ্য পরিচালনা, সুচতুর প্রচারণা ও চরিত্রবলে বাবাররা কাতামা গোত্রে ইসমাঈলীয় মতবাদ প্রচার করে। এভাবে ইসমাঈলীয়রা আফ্রিকায় শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে।
উদ্দীপকের পুরোহিতরা যেভাবে রাজা হিরোহিতেকে দেবতা বলে লনগণের মাঝে পরিচিত করেছিলেন, ঠিক একইভাবে আবু আবদুল্লাহ ইসমাঈলীয় মতবাদে বিশ্বাসী সাঈদ ইবনে হুসাইনকে ইমাম মাহদী বলে জনসমক্ষে পরিচিত করেন এবং ফাতেমী খিলাফতে অধিষ্ঠিত করেন। উত্তর আফ্রিকার আগলানি শাসক লিয়াদাতুল্লাহ ৯০৩-৯০৯. ইসমাঈলীয় মতবাদ প্রচারে বাধা দিলে আবু আবদুল্লাহর সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ মার্চ যুদ্ধে জিয়াদতুন্নাহ্ পরাজিত হয়ে রাজাপায় পলায়ন করেন। আগলাবি রাজধানী দখল করে আবদুল্লাহ শিয়া ইমাম সাঈদ বিন হুসাইনকে রাক্কাদায় আমন্ত্রণ জানান। তবে পরে আবু আবদুল্লাহ সাঈদকে নিয়ে কায়রোয়ানে প্রবেশ করেন এবং তাঁকে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী উপাধি দিয়ে ৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে খলিফা ঘোষণা করেন। আবু আবদুল্লাহ আশ-শিল্পী ফাতেমী বংশের উত্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও পরবর্তীতে খলিফা মাহদী সনেদহববশে তাঁকে প্রাণদ- দেন। একইভাবে রাজা হিরোহিতেও তাঁর সপক্ষের পুরোহিতদের শাস্তি প্রদান করেন।
সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের পুরোহিতরা এবং আবু আবদুল্লাহ শাসন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখা সত্ত্বেও শাসকের রোষানলে পড়ে করুণ পরিণতির সম্মুখীন হন।

৪. মি. "ঢ" একজন মতাদর্শ প্রচারক। বিচক্ষণ ও দুর্দশাগ্রস্ত এই ব্যক্তি তার কাজের অনুকূলে প্রচার কার্য সফলভাবে পরিচালনা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠিত শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে তার নেতাকে ক্ষমতা গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। অনেক ত্যাগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি তার নেতাকে খিলাফতে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ঐ নেতাই তাকে হত্যা করে।
ক. পাশ্চাত্যের মামুন কাকে বলা হতো?
খ. আল-মুইজের মিসর বিজয়ের বর্ণনা দাও।
গ. উদ্দীপকে "ঢ" প্রচারকের সাথে ফাতেমীয় যুগের কোন ব্যক্তির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত প্রচারকের করুণ পরিণতির যৌক্তিকতা দেখাও।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পাশ্চাত্যের মামুন বলা হতো আল-মুইজকে।

খ. সেনাপতি জওহর আল-সিকিল্পির সহায়তায় খলিফা আল-মুইজ ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মিসর জয় করেন। মিসর বিজয় ছিল খলিফা আল-মুইজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এটি তার জীবনের স্বপণ ছিল। তৎকালীন মিসরীয় শাসক কাফুরের অযোগ্য ও কুশাসনে অতিষ্ঠ জনগণ আল-মুইজকে মিসর বিজয়ে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেখানে অভিযান প্রেরণ করেন। প্রায় বিনা বাধায় তার সুযোগ্য সেনাপতি লওহর আল-সিকিল্লি প্রথমে আলেকজানিদ্রয়া ও পরে রাজধানী মুস্তাত দখল করেন। এভাবে আল-মুইজের মিসর জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়।

গ. উদ্দীপকের "ঢ" প্রচারকের সাথে ফাতেমী যুগের আবু আব্দুল্লাহ আশ-শিয়ীর সাদৃশ্য রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কতক সেনাপতি রয়েছেন, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর একাগ্রতায় নতুন নতুন রাজবংশের উত্থান ঘটেছে। আবু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পী এ রকমই একজন সেনাপতি। তিনি তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে উত্তর আফ্রিকায় ফাতেমী বংশের প্রথম খলিফা হিসেবে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। উদ্দীপকেও অনুরূপ বিষয় লক্ষণীয়।
মি "ঢ" একজন মতাদর্শ প্রচারক। তিনি তার বিচক্ষণতা দ্বারা সফলভাবে প্রচারণা কাজ চালান। একটি প্রতিষ্ঠিত শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে তিনি তার নেতাকে শাসনক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে উত্ত শাসক তাকে হত্যা করে। একইভাবে আবু আব্দুল্লাহ আশ-শিল্পী নবম শতকের শেষের দিকে আফ্রিকায় গমন করেন। কুসংস্কারে বিশ্বাসী এখানকার অধিবাসীদের তিনি ইসমাঈলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী করে তোলেন। দলে দলে জনগণ তার সমর্থকে পরিণত হয়। তিনি উত্তর আফ্রিকার শাসনকর্তা জিয়াসাতুল্লাহকে পরাজিত করে ইসমাঈলীয় সম্প্রদায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে সকল বাধা অতিক্রম করে তিনি তার আধ্যাত্মিক নেতা ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীকে সিংহাসনে বসান। সুতরাং দেখা যাচেছ, উদ্দীপকে বর্ণিত মতাদর্শ প্রচারকের সাথে আবু আব্দুল্লাহ আশ-শিয়ীর কর্মকান্ডই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. ফাতেমী বংশের উত্থানে ভূমিকা পালনকারী আবু আব্দুল্লাহ আশ শিল্পীর করুণ পরিণতি সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন হলেও নৈতিক দিক থেকে যৌক্তিক নয়।
উত্তর আফ্রিকার ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিয়া মতবাদ প্রচারক আবু আব্দুল্লাহ আশ-শিল্পী কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। তার কৃতিতব ও নৈপুণ্যে তিনি আগলাবি বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর ওবায়দুল্লাহ আল মাহদীর নেতৃতেব ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তিনিই পরবর্তীতে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী কর্তৃক নির্মমভাবে নিহত হন। যে হত্যাকান্ড নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে অযৌক্তিক হলেও ফাতেমী বংশের স্থায়িত্বের জন্য প্রয়োজন ছিল।
উদ্দীপকে দেখা যায় "ঢ" নামক একজন মতাদর্শ প্রচারক সফলভাবে প্রচারকার্য পরিচালনা করে তার নেতাকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। যিনি পরবর্তীতে তার নেতার মাধ্যমে নির্মমভাবে নিহত হন। অনুরূপ ঘটনা ফাতেমী বংশের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। শিয়া মতবাদ প্রচারক আবু আব্দুল্লাহ আগলাবিদের রাজধানী দখল করে তথায় আগলাবি বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা রাখেন কিন্তু এই সফলতা সত্ত্বেও আবু আব্দুল্লাহর পরিণতি ভালো হয়নি। তিনি স্বীয় ত্যাগ ও তৎপরতায় যাকে খলিফা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সেই ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদীর হাতেই তাকে জীবন দিতে হয়। ওবায়দুল্লাহ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। তার এ হত্যাকান্ড ছিল অত্যন্ত জঘন্য কাজ। কিন্তু নব প্রতিষ্ঠিত ফাতেমী বংশের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতার জন্য এ হত্যাকান্ড প্রয়োজন ছিল। কেননা আবু আব্দুল্লাহর প্রভাব এতো বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, যেকোনো মুহূর্তে তার ইশারায় ফাতেমী বংশের পতন ঘটতে পারত।
উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আবু আব্দুল্লাহর হত্যাকান্ড ছিল ইতিহাসের অন্যতম নির্মম ঘটনা। কিন্তু তৎকালীন বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে ফাতেমী বংশের স্বার্থে এ হত্যাকান্ডের যথার্থতা ছিল।

৫. ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দশম শতাব্দীতে একদল আলীপন্থী ইসমাঈলী শিয়া মতাবলম্বী মহানবির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক কন্যার নাম ভাঙিয়ে উত্তর আফ্রিকায় একটি নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
ক. দারুল হিকমা কে প্রতিষ্ঠা করেন?
খ. কাকে এবং কেন পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার মিল পাওয়া যায়? লেখো।
ঘ. উক্ত বংশের সাংস্কৃতিক অবদান লেখো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আল-হাকিম দারুল হিকমা প্রতিষ্ঠা করেন।

খ. শিল্প-সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানের জন্য আল মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়।
মূলত আল-মুইজের সময়কাল ছিল মিসরে ফাতেমী শাসনকালের স্বর্ণযুগ। আল-মুইজ মিসরে ফাতেমী শাসন সুদৃঢ় করে রাজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধনে মনোনিবেশ করেন এবং সমৃদ্ধিশালী একটি সাম্রাজ্য। প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সৈয়দ আমীর আলী তাকে পাশ্চাত্যের মামুন বলে অভিহিত করেছেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি আমার পাঠ্যবইয়ের ফাতেমী বংশের উত্থানের সাথে মিল পাওয়া যায়।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা. ও হযরত ফাতেমা রা.-এর বংশধরগণ ইসলামের ইতিহাসে ফাতেমী নামে পরিচিত। এরা ছিল ইসমাঈলীয় শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তীতে ইসমাঈলীয় মতবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে থাকে। নাম শতাব্দীর মধ্যভাগে পারস্যবাসী আব্দুল্লাহ বিন মায়মুন পারস্যের আওয়াজ ও সিরিয়ার সালমিয়াতে প্রচারকার্যের কেন্দ্র স্থাপন করে আব্বাসি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দাঈ প্রেরণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে ইসমাঈলীয় মতবাদ ইয়েমেন, ইয়ামামা, বাহরাইন, সিন্ধু, মিসর ও উত্তর আফ্রিকায় বিস্তার লাভ করে।
উদ্দীপকের ফাতেমীয় বংশ প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। যে বংশ মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কন্যার নাম ভাঙিয়ে উত্তর আফ্রিকায় বিস্তার লাভ করে এবং একটি নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল্লাহর মৃত্যু হলে তার শিষ্য আবু আব্দুল্লাহ আল-হুসাইন ইসামাঈলীয় প্রচারকার্যের দায়িত্ব নেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি উত্তর আফ্রিকায় গমন করে নিজেকে ইমাম মাহদীর অগ্রদূত বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে কাতামা গোত্রের সহায়তায় ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে আপনাবি শাসক জিয়াদতুল্লাহকে পরাজিত করে সাইদ বিন হুসাইনকে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী উপাধি দিয়ে খলিফা ঘোষণা করেন। এভাবে ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী আগলাবি বংশের ফধ্বংসস্তূপের ওপর আব্বাসি খিলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একটি বিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তর আফ্রিকা ও মিসরে প্রতিষ্ঠিত এ বংশটিই ফাতেমী বংশ হিসেবে পরিচিত।
সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের বংশটির উত্থানের মধ্যে ফাতেমী বংশের উত্থানের মিল পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উত্তর আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত ফাতেমী রাজবংশ সংস্কৃতির সকল অঙ্গনে অভূতপূর্ব উন্নয়ন তথ্য অবদান রেখে গেছেন।
ফাতেমী খিলাফত সংস্কৃতির চর্চা হিসেবে যেসব উন্নতি সাধন করেন তা তৎকালীন বিশ্বে বিরল ছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় তারা ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছিল। দারুল হিকমা, আল-আহজার মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় তার উত্তম উদাহরণ। চিকিৎসাবিদ্যা ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান চর্চায়ও তারা প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। এছাড়াও অসংখ্য সৌধ, প্রাসাদ, মসজিদ, মিনার এবং চারু ও কারুশিল্পে তাদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
উদ্দীপকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কন্যার নামে প্রতিষ্ঠিত ফাতেমী বংশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই বংশের বিভিন্ন অবদানের মধ্যে সাংস্কৃতিক অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তৎকালীন বিশেবর অন্যতম নিদর্শন মনে করা হতো আল-আজহার মসজিদকে। পরবর্তীতে এ মসজিদটি বিশেবর অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী আল-আহঙ্গার বিশববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। যেখানে বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা পড়াশোনা ও গবেষণা করত।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নার-আল-হিকমা বা বিজ্ঞানের ভবন নির্মাণ ফাতেমীয় শাসকদের অন্যান্য দৃষ্টান্ত। এখানে পাঠাগার ও গ্রন্থাগার সংযুক্ত, প্রাচীন পান্ডুলিপি সংগ্রহ এবং নতুন গ্রন্থ প্রণয়নের অসামান্য অবদানের জন্য সাবুল হিকমা প্রাচ্যে মামুনের বায়তুল হিকমার মতো প্রসিদ্ধি লাভ করে। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ফাতেমীয়রা বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তারা ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। ৯৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম থেকে মিসরে আগত চিকিৎসক মুহাম্মাদ আল-তামিমী এ সময়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে মুসা বিন আল-সাজ্জান এবং তার তদীয় পুত্র ইসহাক ও ইসমাঈলও বিশেষ অবদান রাখেন। সে সময়ে নির্মিত আল-আকসার, আল-সালেহ এবং ইবনে রাজ্জাকের মসজিদগুলোও অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ছিল। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে ফাতেমীয় বংশের শাসকরা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন যা তৎকালীন বিশ্বে বিরল ছিল।

৬. বিশ্বের ইতিহাসে এক মহীয়সী নারীর নামে একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। উক্ত রাজবংশের শাসকদের মধ্যে একজন পাগল বা খামখেয়ালী শাসক ছিল। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি আব্বাসীয় খলিফা মামুনকে অনুসরণ করতেন।
ক. জওহর কে ছিলেন?
খ. স্পেনের ধর্মান্ধ আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অনুচ্ছেদের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের কথা বলা হয়েছে? তার খামখেয়ালিপনার বিবরণ দাও।
ঘ. জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি মামুনকে কীভাবে অনুসরণ করেছেন? ব্যাখ্যা দাও।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জওহর ছিলেন ফাতেমী খলিফা আল-মুইলের সেনাপতি।

খ. ইসলামি আচার-আচরণ, রীতিনীতি অনুসরণকারী খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে গোঁড়া ও ধর্মান্ধ খ্রিস্টানরা এক জঘন্য আন্দোলন ৮৫০-৮৫২ খ্রি. শুরু করে, ইতিহাসে যা 'ধর্মান্ধ আন্দোলন' বা Zealot Movement নামে পরিচিত। আমির দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের শাসনকালের শেষ দিকে কর্ডোভার এক দল গোঁড়া ও ধর্মান্ধ খ্রিষ্টান ইসলাম ও আরবদের শিক্ষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট খ্রিষ্টানদের দ্রুত আরবীয়করণের বিরুদ্ধে এ উদ্ভট ও অভিনব আন্দোলন শুরু করে। তাদের এ আন্দোলন ছিল স্পেনে উদীয়মান ইসলামি শক্তি, কৃষ্টি-কালচারকে স্পেন হতে চিরতরে বিতাড়নের প্রাথমিক মহড়া।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের খলিফা আল-হাকিমের কথা বলা হয়েছে। ফাতেমী খলিফা আল-হাকিম ক্ষমতায় আসার পর নতুন নতুন আইন চালু করেন। তার আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো দিনে কোনো কাজ করা যাবে না। রাতে অফিস-আদালত খোলা থাকবে। খলিফাকে মালিকের পরিবর্তে আমিরুল মুমেনিন' সম্বোধন করতে হবে। তিনি মন্ত্রিপরিষদের মিটিং রাতে শুরু করতেন।
আল-হাকিম ১০০১ খ্রিস্টাব্দে কতগুলো নতুন আইন চালু করেন। যেমন দিনে কোনো কাজ করা যাবে না, দোকানপাট বন্ধ থাকবে এবং মানুষ আরাম করবে। রাতে অফিস ও দোকান খোলা থাকবে। তিনি অনেক গির্জা ধ্বংস করেন। খ্রিস্টানদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিশেষ ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ ঘণ্ট ও ক্রুশ পরিধান করার নির্দেশ দেন। খলিফা আল-হাকিমের খামখেয়ালির কথাই উদ্দীপকে বলা হয়েছে।

ঘ. জ্ঞান-বিজ্ঞানের উদার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দারুল হিকমা প্রতিষ্ঠাই খলিফা আল-হাকিমের সাথে খলিফা আল-মামুনের সাদৃশ্য সৃষ্টি করেছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি বিশেষ আগ্রহ শাসকদের একটি মহৎ বৈশিষ্ট্য। আর এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী শাসকেরা কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের মাধ্যমে তাদের এ আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আব্বাসি খলিফা আল-মামুন নির্মিত বায়তুল হিকমা এবং ফাতেমী খলিফা আল-হাকিমের পারুল হিকমা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি অসাধারণ ঝোঁক থেকে সৃষ্ট দুটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
খলিফা আল-মামুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বার উন্মোচনের জন্য ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে বায়তুল হিকমা' নামক বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, গবেষণায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আব্বাসি সংস্কৃতিকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করে। খলিফা আল হাকিম বায়তুল হিকমার অনুকরণে ১০০৫ খ্রিষ্টাব্দে কায়রোতে 'দারুল হিকমা' নামক জ্ঞানকেন্দ্রটি নির্মাণ করেন। এ প্রতিষ্ঠানটি শিয়া মতবাদ প্রচার ও প্রসারের জন্য গড়ে উঠলেও এখানে জ্যোতির্বিদ্যা, ভাষা ব্যাকরণ, আইন, সাহিত্য, চিকিৎসাবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হতো। এখানকার পাঠাগার ও গ্রন্থাগারে সংগৃহীত বিশ্বের নানা ধরনের বইয়ের সমাহার মিসরে জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। সুতরাং দেখা যায়, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণই আলোচ্য দুই শাসকের মধ্যে সাদৃশ্য গড়ে নিয়েছে।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

৭. মোক্তার জনৈক শাসকের গৌরবময় চরিত্র ও কৃতিত্ব পড়ে জানতে পারে বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী এই শাসক তার সাম্রাজ্যকে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত পরিষদে বিভক্ত করেন। ভূমি জরিপ ব্যবস্থা ও ভূমি মালিকদের চার স্তরবিশিষ্ট বিন্যাস ছিল অসামান্য কীর্তি। তবে তার ভাষাজ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তার মনোযোগ ছিল না। সামরিক বাহিনীকে সংস্কারের প্রয়োজন দেখা নিলেও তিনি তা করতে ব্যর্থ হন।
ক. কত খ্রিষ্টাব্দে ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী সম্পর্কে কী জান?
গ. উদ্দীপকে মোক্তারের পঠিত শাসকের কৃতিত্ব তোমার পঠিত কোন শাসকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মোক্তারের পঠিত শাসকের তুলনায় তোমার পঠিত শাসক কোন অর্থে অধিক কৃতিত্বের অধিকারী?

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে আগলাবি বংশের অবসানের মাধ্যমে উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়ায় সর্বপ্রথম ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. খলিফা ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে আগলারীয় বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর ফাতেমী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক। আবু মুসলিমকে হত্যা করে আব্বাসি খলিফা আল-মনসুর যেমন আব্বাসি বংশের নিরাপত্তা বিধান করেন, ঠিক তেমনি মাহদী ও আবু আবদুল্লাহকে হত্যা করে নিজবংশকে কণ্টকমুক্ত করেন। এছাড়াও তিনি প্রথমে আগলাবীয় রাজধানী রাজাদায় অবস্থান করে নব প্রতিষ্ঠিত ফাতেমী খিলাফতের শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সংহতি বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। তবে ৯১৬-৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কায়রোয়ানের ১৬ মাইল দক্ষিণ পূর্বে মাহদিয়া নগর প্রতিষ্ঠা করে সেখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন।

গ. উদ্দীপকে মোত্তারের পঠিত শাসকের কৃতিত্ব আমার পঠিত ফাতেমী খলিফা আল-মুইজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ফাতেমী খলিফা আল-মুইজের রাজত্বকালকে মিসরীয় ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলা হয়। তিনি ছিলেন প্রজারঞ্জক শাসক, বিদ্যোৎসাহী এবং বিচক্ষণ খলিফা। তিনি প্রায় ২৩ বছর সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে রাজত্ব পরিচালনা করেন। পিতা আল-মনসুরের মৃত্যুর পর তিনি তামিম মা’দ থেকে আল মুইজ উপাধি গ্রহণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী ছিলেন। শাসনব্যবস্থা সুবিন্যস্ত করার জন্য তিনি সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে ও প্রদেশগুলোকে কতকগুলো জেলায় বিভক্ত করেন। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা প্রদর্শনে তিনি কুণ্ঠিত হতেন না। তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত ইহুদি গোত্রের ইবন-কিলিস ও আশুককে ভূমি সংস্কারের কাজে নিয়োজিত করেন। তিনি ভূমি মালিকদের চার স্তরবিশিষ্ট বিন্যাসে সহায়তা করেন। তিনি সৈন্যবাহিনীর সংস্কার করেন, তবে পুরোপুরি সংস্কার করতে ব্যর্থ হন। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করেন। তবে তার জ্ঞান ও সাহিত্যচর্চা সীমিত থাকলেও তার উৎসাহে বহু জ্ঞানী-গুণী দরবারের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে। তাছাড়া তার রাজ্য বিস্তার ফাতেমী বংশকে আরও সমৃদ্ধ করে। তাই তার ভূমিকা অসীম।
তাই বলা যায়, মোস্তারের গঠিত শাসকের কৃতিত্ব ফাতেমী খলিফা আল মুইজের কৃতিত্বেরই অনুরূপ।

ঘ. মোক্তারের পঠিত শাসকের সাথে আমার পঠিত শাসক আল-মুইজের সাদৃশ্য রয়েছে।
কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোত্তারের পঠিত শাসকের তুলনায় আমার পঠিত শাসক আল-মুইল অধিক কৃতিত্বের অধিকারী। ৯৫২ খ্রিস্টাব্দে আল-মনসুরের মৃত্যুর পর তার পুত্র আবু তামিম মা'আস আল-মুইজ উপাধি ধারণ করে ফাতেমীয় বংশের চতুর্থ খলিফা হিসেবে শাসনভার গ্রহণ করেন। সাম্রাজ্যের বর্বর গোত্রের বিভিন্ন উপজাতিগণ অচিরেই তার শাসন কর্তৃত্ব মেনে নেয়। সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলে তার সময়ে ফাতেমীয় বংশের গৌরব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। মোস্তারের পঠিত শাসক সুশাসক ছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন। ভূমি জরিপ ব্যবস্থা ও ভূমি মালিকদের স্তরবিন্যাস করেন। তবে তার ভাষাজ্ঞান সীমিত ছিল। এছাড়া সামরিক বাহিনীতে সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি তা করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু খলিফা আল-মুইল সিংহাসনে আরোহণ করে বিভিন্ন বিদ্রোহ সমন ও রাজ্য বিস্তার করে তার সাম্রাজাকে সুসংহত করেন। খলিফার অব্যবহিত পর তিনি সাম্রাজ্যের সর্বত্র ভ্রমণ করে বিরাজমান অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে সাম্রাজ্যের বিদ্রোহী নেতাগণ, গোত্র প্রধানগণ এবং প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ তার আনুগত্য স্বীকার করেন।
সিসিলি, মিসর বিজয়ের মাধ্যমে তার সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান। ঐতিহাসিক Stanely Lane Poole সত্যিই বলেছেন, ‘‘চতুর্থ খলিফা আল-মুইজের সিংহাসনারোহণের সাথে সাথে ফাতেমীগণ একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।’’
পরিশেষে বলা যায়, পরাক্রমশালী ও মার্জিত রুচির আল-মুইজ ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের রাজ্যসীমা বর্ধিত এবং সুশাসন কায়েম করে রাজ্যে শান্তি এবং সমৃদ্ধি আনেন, যা মোত্তারের পঠিত খলিফার থেকে অনেক বেশি কৃতিত্বের দাবিদার।

৮. জনাব আসলাম রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রজা সাধারণের জন্য কিছু অধ্যাদেশ জারী করেন। তিনি মহিলাদের ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ করেন। পুরুষদের রাতের বেলায় কাজকর্ম করার নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। অন্যদিকে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য বিশ্বমানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সকলকে অবাক করে দেন।
ক. ফাতেমী খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. খলিফা মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের অধ্যাদেশে ফাতেমীয় খলিফা আল-হাকিমের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার বিবরণ দাও।
ঘ. শুধু অধ্যাদেশ নয় জ্ঞান-বিকাশের জন্য তার অবদানই উত্ত শাসকের ইতিহাস প্রসিদ্ধ করেছে- মূল্যায়ন করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ফাতেমী খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতা হলো ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী।

খ. শিল্প সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানের জন্য -মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়। মূলত আল-মুইজের সময়কাল ছিল মিসরে ফাতেমী শাসনকালের স্বর্ণযুগ। আল-মুইজ মিসরে ফাতেমী শাসন সুদৃঢ় করে রাজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধনে মনোনিবেশ করেন এবং সমৃদ্ধিশালী একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সৈয়দ আমীর আলী তাকে পাশ্চাত্যের মামুন বলে অভিহিত করেছেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের অধ্যাদেশে ফাতেমীয় খলিফা আল হাকিমের ব্যতিক্রমধর্মী আইন প্রণয়নের দিকটি ফুটে উঠেছে।
ফাতেমী খলিফা আল-হাকিম ক্ষমতায় আসার পর নতুন নতুন আইন চালু করেন। তার আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো দিনে কোনো কাজ করা যাবে না। রাতে অফিস-আদালত খোলা থাকবে। খলিফাকে মালিকের পরিবর্তে 'আমিরুল মুমিনিন' সম্বোধন করতে হবে। তিনি মন্ত্রিপরিষদের মিটিং রাতে শুরু করতেন। তাঁর এ আইনগুলো ছিল উদ্দীপকে উল্লিখিত অধ্যাদেশের অনুরূপ।
উদ্দীপকের উল্লিখিত শাসক আসলাম অধ্যাদেশ জারি করে মহিলাদের বাহিরে যাওয়া নিষিদ্ধ করেন। তিনি পুরুষদের দিনের বেলায় বাসা বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার ও রাতের বেলায় কাজকর্ম করার নির্দেশ দেন। ঠিক একইভাবে আল হাকিম ১০০১ খ্রিস্টাব্দে কতগুলো নতুন আইন চালু করেন। যেমন- দিনে কোনো কাজ করা যাবে না, দোকানপাট বন্ধ থাকবে এবং মানুষ আরাম করবে। রাতে অফিস ও দোকান খোলা থাকবে। তিনি অনেক গির্জা ধ্বংস করেন। খ্রিষ্টানদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিশেষ ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ ঘন্টা ও ক্রুশ পরিধান করার নির্দেশ দেন। খলিফা আল হাকিমের এসব কর্মকান্ডেরই প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের অধ্যাদেশে।

ঘ. 'শুধু অধ্যাদেশ নয় জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানই উক্ত শাসক তথা খলিফা আল-হাকিমকে ইতিহাস প্রসিদ্ধ করেছে'- মন্তব্যটি যৌক্তিক।
আল-হাকিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, রাস্তাঘাট ও মানমন্দির নির্মাণ করেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য কায়রোতে 'দারুল হিকমা' নামে একটি শিক্ষা নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন।
উদ্দীপকে যেমন জনাব আসলাম অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি একটি জ্ঞানগৃহ প্রতিষ্ঠা করেন, তেমনি খলিফা আল-হাকিমও নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য 'দারুল হিকমা' নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। আল হাকিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি মিসর ও সিরিয়ায় বহু মসজিদ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তার প্রধান কীর্তি হলো ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত দারুল হিকমা বা বিজ্ঞান ভবন প্রতিষ্ঠা, যা বাগদাদের বায়তুল হিকমার অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল। এখানে শিয়া ধর্ম বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণা ছাড়াও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার অনেক পুস্তক সংগৃহীত ছিল। দেশ-বিদেশের বহু জ্ঞানী ও পন্ডিত এখানে আলোচনায় বসতেন এবং গবেষণাকর্ম সম্পাদন করতেন। বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ আলী ইবনে ইউনুস এবং পন্ডিত ইবনে আল-হাইসাম তার দরবার অলংকৃত করেছিলেন। তিনি মুকাতাম পাহাড‡়র ওপর একটি মানমন্দির নির্মাণ করেন। ইবনে খালদুনের মতে তিনি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের জন্য অথবা উপাসনার জন্য সেখানে যেতেন। পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা আল-হাকিম তার প্রণীত আইনগুলোর জন্য নয় বরং জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন।

৯. রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর শার্লক গোমা বেশ কিছু অধ্যাদেশ জারি করেন। তিনি মহিলাদের বাহিরের কাজকর্ম ও পুরুষদের ঘরের দায়-দায়িত্ব পালনের আদেশ দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন। অন্যদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
ক. মিসর বিজয়ী সেনাপতির নাম কী?
খ. দারাজি বলতে কাদেরকে বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের অধ্যাদেশের খামখেয়ালিপনার সাথে ফাতেমী খলিফা আল হাকিমের নীতির তুলনা করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. খামখেয়ালিপনা তাকে সমালোচিত করলেও আন-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা তাকে স্মরণীয় করেছে উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মিসর বিজয়ী সেনাপতি ছিল খলিফা আল-মুইজ।

খ. আল-হাকিমের প্রবর্তিত নতুন ধর্মের অনুসারীদেরকে দারাজি বা দ্রুজ বলা হতো।
উদ্ভট ও খামখেয়ালি চিন্তার ধারক আল-হাকিম ইসমাঈলীয় মতবাদের সূত্র ধরে নিজেকে আল্লাহর অবতার মনে করেন। তার ধারণা ছিল তার মধ্যে আল্লাহর নিজের রূপ পরিগ্রহ করেছেন। আর এ ধরনের মতাদর্শে যারা বিশবাসী ছিল, তারাই দারাজি বা চুজ নামে পরিচিত ছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শাসকের অধ্যাদেশের খামখেয়ালিপনার সাথে ফাতেমী খলিফা আল-হাকিমের নীতির মিল রয়েছে।
ফাতেমী খলিফা আল-হাকিম ক্ষমতায় আসার পর নতুন নতুন আইন চালু করেন। তার আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো দিনে কোনো কাজ করা যাবে না। রাতে অফিস-আদালত খোলা থাকবে। খলিফাকে মালিকের পরিবর্তে আমিরুল মুমিনিন' সম্বোধন করতে হবে। তিনি মন্ত্রিপরিষদের মিটিং রাতে শুরু করতেন। তার এ আইনগুলো ছিল উদ্দীপকে উল্লিখিত অধ্যাদেশের অনুরূপ।
উদ্দীপকের উল্লিখিত শাসক শার্লক গোমা অধ্যাদেশ জারি করে মহিলাদের বাহিরে যাওয়া নিষিদ্ধ করেন। তিনি পুরুষদের দিনের বেলায় বাসা বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার ও রাতের বেলায় কাজকর্ম করার নির্দেশ দেন। ঠিক একইভাবে আল হাকিম ১০০১ খ্রিস্টাব্দে কতগুলো নতুন আইন চালু করেন। যেমন- দিনে কোনো কাজ করা যাবে না, দোকানপাট বন্ধ থাকবে এবং মানুষ আরাম করবে। রাতে অফিস ও দোকান খোলা থাকবে। তিনি অনেক গির্জা ধ্বংস করেন। খ্রিষ্টানদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন এবং ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের বিশেষ ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ ঘণ্টা ও ক্রুশ. পরিধান করার নির্দেশ দেন। খলিফা আল-হাকিমের এসব কর্মকান্ডেরই প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের অধ্যাদেশে।

ঘ. খামখেয়ালিপনা আল-হাকিমকে সমালোচিত করলেও জ্ঞান বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা তাকে স্মরণীয় করেছে- উদ্ভিটি যথার্থ।
আল-হাকিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, রাস্তাঘাট ও মানমন্দির নির্মাণ করেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য কায়রোতে 'দারুল হিকমা' নামে একটি শিক্ষা নিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন।
উদ্দীপকে যেমন শার্লক গোমা অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি একটি জ্ঞানগৃহ প্রতিষ্ঠা করেন। তেমনি খলিফা আল-হাকিমও নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য 'দারুল হিকমা' নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। আল-হাকিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি মিসর ও সিরিয়ায় বহু মসজিদ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তার প্রধান কীর্তি হলো ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত দারুল হিকমা বা বিজ্ঞান ভবন প্রতিষ্ঠা, যা বাগদাদের বায়তুল হিকমার অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল। এখানে শিয়া ধর্ম বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণা ছাড়াও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার অনেক পুস্তক সংগৃহীত ছিল। দেশ-বিদেশের বহু জ্ঞানী ও পন্ডিত এখানে আলোচনায় বসতেন এবং গবেষণাকর্ম সম্পাদন করতেন। বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ আলী-ইবনে-ইউনুস এবং পন্ডিত ইবনে আল-হাইসাম তার দরবার অলংকৃত করেছিলেন। তিনি মুকাতাম পাহাড‡়র ওপর একটি মানমন্দির নির্মাণ করেন। ইবনে খালদুনের মতে, তিনি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের জন্য অথবা উপাসনার জন্য সেখানে যেতেন। পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা আল-হাকিম তার প্রণীত আইনগুলোর জন্য সমালোচিত হলেও জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন।

১০. পৃথিবীর কোনো সাম্রাজ্যই চিরকাল টিকে থাকে না। প্রতিটি সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের মাঝেই উত্থান, সম্প্রসারণ ও সাফল্য এবং পতন অনিবার্য। এরুপ একটি সাম্রাজ্য গঠিত হয়েছিল যা ইসলামের এক মহিয়সী নারীর বংশোদ্ভূত। এ সাম্রাজ্য ব্যাপক প্রসার লাভ করলেও পরবর্তীতে দুর্বল ও অযোগ্য শাসনব্যবস্থার ফলে খুব দ্রুত পতনের দিকে ধাwৰত হয়।
ক. 'সপ্ত ঝুলন্ত কবিতা' বা সাবআ মুয়াল্লাকাত কী?
খ. আল-হাকিমের সিংহাসনারোহণের ঘটনা বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পরবর্তী শাসকদের অযোগ্যতা ও দুর্বসতার কারণে এ সাম্রাজ্যে দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হয়-উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উকাজ মেলায় সেরা হিসেবে বিবেচিত যে সাতটি কবিতা সোনালী হরফে লিখে পবিত্র কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হতো সেগুলোকে বলা হয় 'সপ্ত ঝুলন্ত কবিতা' বা সাবআ মুয়াল্লাকাত।

খ. ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে পিতা আল-আজিজের মৃত্যুর পর মাত্র ১১ বছর বয়সে আল-হাকিম ফাতেমী সিংহাসনে আরোহণ করেন। অতি অল্প বয়স হওয়ায় পিতার সময়কার প্রাদেশিক শাসনকর্তা বারজোয়ান তার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করেন। তবে বারজোয়ান ইবনে আমরকে হত্যা করে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হলে খলিফা হাকিম তার ঔদ্ধত্য সহ্য করতে না পেরে গুপ্তখাতকদের সহায়তায় বারজোয়ানকে হত্যা করে খিলাফতের সমস্ত ক্ষমতা নিজ হাতে গ্রহণ করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সাম্রাজ্য অর্থাৎ ফাতেমী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ছিল বিভিনণ ঐতিহাসিক ঘটনার প্রভাবের ফসল।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা. ও হযরত ফাতেমা রা.-এর বংশধরগণ ইসলামের ইতিহাসে ফাতেমী নামে পরিচিত। এরা ছিল ইসমাঈলীয় শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। কারবালার বিষাদময় ঘটনার পরবর্তীতে ইসমাঈলীয় মতবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে থাকে। নবম শতাব্দীর মধ্যভাগে পারস্যবাসী আব্দুল্লাহ বিন মায়মুন পারস্যের আওয়াজ ও সিরিয়ার সালামিয়াতে প্রচারকার্যের কেন্দ্র স্থাপন করে আব্বাসি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দাঈ প্রেরণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে ইসমাঈলীয় মতবাদ ইয়েমেন, ইয়ামামা, বাহরাইন, সিন্ধু, মিসর ও উত্তর আফ্রিকায় বিস্তার লাভ করে।
৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে আব্দুল্লাহর মৃত্যু হলে তার শিষ্য আবু আব্দুল্লাহ আল হুসায়ন ইসমাঈলীয় প্রচারকার্যের দায়িত্ব নেন। ৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি উত্তর আফ্রিকায় গমন করে নিজেকে ইমাম মাহদীর অগ্রদূত বলে ঘোষণা করেন। পরে কাতামা গোত্রের সহায়তায় ৪০৯ খ্রিস্টাব্দে আগলাবি শাসক জিয়াদাতুল্লাহকে পরাজিত করে সাঈদ বিন হুসায়নকে ওবায়দুল্লাহ আল মাহদী উপাধি দিয়ে খলিফা ঘোষণা করেন। এভাবে ফাতেমী খিলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যা উদ্দীপকের সভ্যতার উত্থানের ঘটনার সাথে সাদৃশ্যময়।

ঘ. পরবর্তী শাসকদের অযোগ্যতা ও দুর্বলতার কারণে ফাতেমী সাম্রাজ্য দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হয়।
ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন বলেন, একটি রাজবংশের স্বাভাবিক কর্মশক্তি ও গৌরব বড়জোর একশ বছর বজায় থাকে। এরপর শুরু হয় এর ক্রমাবনতি এবং পরিশেষে পতন। তেমনি ফাতেমী বংশ ৯০৯-১০২১ পর্যন্ত গৌরবের সাথে শাসন করে। এ সময় মাহদী, মুইজ, আজিজ, আল-হাকিম, কৃতিত্বের সাথে শাসন করে। মালিকের মৃত্যুর পর ৮ জন শাসক ক্ষমতায় বসেন। তারা ছিল দুর্বল ও অযোগ্য প্রকৃতির শাসক। তাদের অযোগ্যতা, উজিরদের স্বার্থপরতা সর্বোপরি সালাউদ্দিন আইয়ুবির আক্রমণের ফলে ফাতেমী বংশের পতন হয়।
শাসনব্যবস্থার প্রতি উদাসীনতা ফাতেমী খিলাফতের সর্বত্র বিশৃঙ্খলার বীজ বপন করে যা এ বংশের পতন ত্বরান্বিত করেছিল। এছাড়া পরবর্তী এ দুর্বল শাসকদের নৈতিক স্খলন, উজিরদের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীলতা এ বংশের পতন ডেকে আনে। তাছাড়া মন্ত্রীদের ষড়যন্ত্র এবং নস্যাৎমূলক কার্যকলাপ, সামরিক ক্ষমতা হ্রাস, তুর্কি, বাবার ও নিগ্রোদের প্রকাশ্যে শত্রুতা ও চক্রান্ত, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে ফাতেমী খিলাফতের পতন হয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে গাজী সালাহউদ্দীন ফাতেমী খলিফা আল-আজিসকে সিংহাসনচ্যুত করে মিসর দখল করেন। এর ফলে ২৫০ বছরের ফাতেমী খিলাফতের অবসান হয়। উদ্দীপকেও আমরা দেখি যে, এক বিখ্যাত মহীয়সী নারীর নামে প্রতিষ্ঠিত বংশ পরবর্তী শাসকদের দুর্বলতার কারণে দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হয়, যা ফাতেমী বংশের পতনের কারণের সম্পূর্ণ অনুরূপ।
উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, শাসকদের অযোগ্যতা ও দুর্বলতার কারণে ফাতেমী সাম্রাজ্য দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post