এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download
পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭
HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer
১. বিলাশ একটি বই পড়ে জানতে পারল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের সরকারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। ক্ষমতা বণ্টনের নীতি অনুসারে এই দুই দেশের সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান ভিন্ন ব্যক্তি এবং আইন বিভাগ শক্তিশালী। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাশালী।
ক. একনায়কতন্ত্র কী?
খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারগুলো একই পদ্ধতির সরকারের ভিনণরূপ- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত দুটি সরকারের পার্থক্য বিশ্লেষণ কর।
◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. একনায়কতন্ত্র হচ্ছে এমন এক ধরনের সরকারব্যবস্থা যেখানে কোনো ব্যক্তি, সংস্থা, গোষ্ঠী বা দল সব রাজনৈতিক কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষমতা লাভ করে এবং সব নাগরিকের কাছ থেকে আনুগত্য আদায় করে।
খ. কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সংবিধানের মাধ্যমে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে যে সরকার গঠিত হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাঠামোতে একাধিক রাষ্ট্র বা প্রদেশ মিলে সরকার গঠন করা হয়। এ ধরনের সরকারব্যবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বিভাজন করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ বিষয়সমূহ এবং অঙ্গরাজ্যগুলো আঞ্চলিক বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারই মৌলিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে দেশ পরিচালনা করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতির উদাহরণ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারগুলো অর্থাৎ, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা হলো গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দুটি ভিন্নরূপ।
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সাধারণত জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি একই সাথে সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান এবং এখানে একজন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। আর সংসদ সদস্যদের ভোটে একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং তিনি সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী রাজনৈতিক দলের একজন সাংসদকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় শাসক তার কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়ী থাকেন। আর মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকারব্যবস্থায় শাসনকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের কাজের জন্য জাতীয় সংসদের কাজে দায়ী থাকেন। তাই বলা যায়, রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দুটি ভিন্নরূপ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিলাশ একটি বই পড়ে জানতে পারল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের সরকারব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ক্ষমতার বল্টনের নীতি অনুসারে এই দুই দেশের সরকার পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন। অর্থাৎ বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ শাসিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের পরিচালক এবং সব ক্ষমতার অধিকারী। আর সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থাকে। বাংলাদেশের শাসন বিভাগ রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং আইন বিভাগ শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের উল্লিখিত সরকারব্যবস্থা হলো গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দুটি ভিনণরূপ।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা রাষ্ট্রপতিশাসিত এবং বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। তাই এ দুই সরকারব্যবস্থার মধ্যে বহুবিধ বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
যে শাসনব্যবস্থায় শাসন-সংক্রান্ত সব ক্ষমতা মন্ত্রিপরিষদের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং মন্ত্রিপরিষদ নিজেদের যাবতীয় কাজ ও নীতিনির্ধারণের জন্য আইন পরিষদের কাছে দায়ী থাকে তাকে মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকার বলে অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার বলতে এমন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার সব ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং রাষ্ট্রপতি সাধারণত কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে না বরং তার দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ হলো সব ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থায় অর্থাৎ সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা অর্থাৎ রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আবার বাংলাদেশের সরকার তার যাবতীয় কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। সংসদীয় সরকার বা মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকারব্যবস্থা স্থায়ীভাবে গঠিত নয় বরং যেকোনো সময় পরিবর্তিত হয়। এ সরকারব্যবস্থায় আইনসভাকে না জানিয়ে দেশের চরম সংকটকালে কিংবা জরুরি অবস্থা চলা কালেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এ ধরনের সরকারের বিভাগগুলো একত্রিত থাকে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত স্থায়ী সরকারব্যবস্থা। এ সরকারব্যবস্থায় দেশের চরম সংকটকালে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এছাড়া এ সরকারের বিভাগগুলো পৃথক থাকে। উপরের আলোচনায় সংসদীয় সরকারব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার মধ্যকার বৈসাদৃশ্যগুলো ফুটে উঠেছে।
২. 'ক' রাষ্ট্রে সরকার প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। অন্যদিকে, 'খ' রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। ফলে শাসন বিভাগকে তার কাজের জন্য আইন বিভাগের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না।
ক. এককেন্দ্রিক সরকার কী?
খ. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
গ. 'ক' রাষ্ট্রে কী ধরনের সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'ক' রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা 'খ' রাষ্ট্রের চেয়ে উত্তম- বিশ্লেষণ কর।
◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. রাষ্ট্রীয় সব ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সংবিধানের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত হলে তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে।
খ. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে সরকারের অন্য বিভাগের আইন ও শাসন বিভাগ. হস্তক্ষেপ মুক্ত থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করার ক্ষমতাকে বোঝায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ হলো মূলত কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বিচারকদের স্বাধীনতা। বিচারকরা যখন রায় প্রদানের ক্ষেত্রে সব প্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকবেন, তখনই বিচার বিভাগের সত্যিকার স্বাধীনতা রক্ষিত হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ।
গ. উদ্দীপকের ‘ক’ রাষ্ট্রে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান।
যে শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তাদের কাজের জন্য সংসদ বা আইনসভার কাছে দায়ী থাকে তাকে মন্ত্রিপরিষদশাসিত বা সংসদীয় সরকার বলে। এ সরকারব্যবস্থায় একজন নিয়মতান্ত্রিক অর্থাৎ আলঙ্কারিক রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা থাকে সরকার প্রধান অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্যান্য সব কাজ রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ীই করেন। জাতীয় নির্বাচনে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দল মন্ত্রিসভা গঠন করে। সে দলের আস্থাভাজন ব্যক্তি হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রীদের নিয়োগ ও তাদের দপ্তর বণ্টন করেন। এ মন্ত্রিসভা যতক্ষণ পর্যন্ত আইনসভার আস্থাভাজন থাকবে, ততক্ষণ শাসনক্ষমতা পরিচালনা করতে পারবে। আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিসভা তথা সরকার পদত্যাগ করবে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে জবাবদিহি করেন। শাসন বিভাগ এভাবে আইনসভার কাছে দায়ী থাকে বলে এই সরকারকে দায়িত্বশীল সরকারও বলা হয়।
উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রে দেখা যায়, সরকারপ্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। বৈশিষ্ট্যটি মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ। আইন পরিষদের প্রাধান্য মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। মন্ত্রিপরিষদ আইন পরিষদের আস্থাভাজন থেকেই শাসনকার্য পরিচালনা করে। অতএব বলা যায়, 'ক' রাষ্ট্রে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান।
ঘ. 'ক' রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা 'খ' রাষ্ট্রের চেয়ে উত্তম- কথাটি যথার্থ।
উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রে সংসদীয় এবং 'খ' রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। আর মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলেন নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। এখানে সরকারপ্রধান থাকেন প্রধানমন্ত্রী। যে শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তাদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে তাকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা বলে। আর যে শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন তাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বলে।
সংসদীয় সরকারব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের তুলনায় বেশি দায়িত্বশীল। সংসদীয় সরকারে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যরা মন্ত্রিসভা গঠন করেন বলে আইনসভা ও শাসন বিভাগের মধ্যে বিরোধের আশঙ্কা খুবই কম। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় মন্ত্রীরা আইনসভার সদস্য না হওয়ায় আইনসভা ও শাসন বিভাগের মধ্যে বিরোধের যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থায় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালিত হয় বলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের তুলনায় উৎকৃষ্ট আইন ও উন্নত ধরনের শাসন সম্ভব হয়। আবার সংসদীয় সরকারের মন্ত্রিসভা আইনসভার কাছে দায়ী থাকে বলে মন্ত্রীরা স্বেচ্ছাচারী হতে পারেন না। কিন্তু, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে বলে মন্ত্রিদের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও, সংসদীয় সরকার সাধারণত রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের তুলনায় অধিক গণমুখী হতে পারে। কেননা, সংসদীয় সরকারকে বলা হয় জনগণের শাসনব্যবস্থা।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সংসদীয় সরকার তুলনামূলক রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের চেয়ে অধিক জনঘনিষ্ঠ। তাই বলা যায়, রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা 'খ' রাষ্ট্রের চেয়ে উত্তম।
৩. 'ক' এবং 'খ' নামক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি ও রাজা। কিন্তু উভয় রাষ্ট্রের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।
ক. প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র কী?
খ. সর্বজনীন ভোটাধিকার বলতে কী বোঝ?
গ. ‘খ’ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্য থাকার সম্ভাব্যতা যাচাই করো।
ঘ. দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে কোনটি প্রজাতন্ত্র? বিশ্লেষণ করো।
◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত গণতন্ত্রকে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র বলে।
খ. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের অবাধে ভোট প্রদানের অধিকারকে সর্বজনীন ভোটাধিকার বলে। ভোট প্রদান রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক অধিকার। রাষ্ট্র নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট বয়সের সব নাগরিকের ভোট প্রদানের অধিকার রয়েছে। যেমন- বর্তমানে বাংলাদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর।
গ. উদ্দীপকের 'খ' নামের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন রাজা এবং সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং 'খ' রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার বিদ্যমান থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। এখানে চালু রয়েছে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র।
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলতে এমন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার সব ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকে। এ ধরনের সরকারে রাষ্ট্রপতি সাধারণত তার কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকেন না। এ ধরনের সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান। তার কাজে সাহায্য করার জন্য একটি মন্ত্রিসভা থাকে। রাষ্ট্রপতি নিজের ইচ্ছামতো মন্ত্রী নিয়োগ ও বরখাস্ত করতে পারেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রাজিলসহ অনেক দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।
উদ্দীপকের 'খ' রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন রাজা এবং সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী। এটি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সুতরাং, 'খ' রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেখানে মূলত নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান। কেননা, নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো রাজা বা রানি উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতা লাভ করেন এবং তিনি নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। মূলত জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীই সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী শাসক। যেমন- যুক্তরাজ্যে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের 'খ' রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ঘ. উদ্দীপকের দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে 'ক' রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্র বিদ্যমান। যে সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন, তাকে প্রজাতন্ত্র বলে। এটি মূলত গণতান্ত্রিক সরকারের একটি রূপ। যেমন- বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। উদ্দীপকে উল্লেখিত 'ক' এবং 'খ' দুটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 'ক' এর রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতি এবং সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, 'খ' এর রাষ্ট্রপ্রধান রাজা এবং সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী। অর্থাৎ, 'ক' ও 'খ' দুটো রাষ্ট্রের সরকারপ্রধানের ক্ষেত্রে মিল থাকলেও রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। প্রজাতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিই হলেন রাষ্ট্রপ্রধান। এখানে রাজার কোনো স্থান নেই। উদ্দীপকের ‘ক’ রাষ্ট্রে এরকম ব্যবস্থাই দেখা যায়। অর্থাৎ, 'ক' রাষ্ট্রেই প্রজাতন্ত্র বিদ্যমান। অন্যদিকে, 'খ' রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রজাতন্ত্রের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। 'খ' রাষ্ট্রে সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় এটা স্পষ্ট যে সেখানে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান। শুধু নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রেই নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাজার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সে ব্যবস্থায় প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী সরকার প্রধান থাকেন নির্বাচিত নেতা। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, জাপান প্রভৃতি দেশে এ ধরনের সরকার বিদ্যমান।
সুতরাং, বিভিন্ন ধরনের সরকারের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যের আলোকে আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের 'ক' ও 'খ' দুটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে 'ক' রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্র ও 'খ' রাষ্ট্রে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান।
৪. করিম সাহেব সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সদস্য। তার প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষা করা। তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
ক. গণভোট কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত অঙ্গটির স্বাধীনতা রক্ষার উপায় বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত অগটি কীভাবে সংবিধানের প্রাধান্য জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে? ব্যাখ্যা করো।
◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্যের সৃষ্টি হলে বা জনগণের মতামত যাচাইয়ের প্রয়োজন হলে যে ভোট গ্রহণ করা হয় তাকে গণভোট বলা হয়।
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কোনো দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে বোঝায়।
আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড তার 'The Civic Culture' গ্রন্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তার মতে, 'রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতি সম্পর্কে মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপ ও প্রতিকৃতি।' অর্থাৎ, কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সে দেশের জনগণ কীভাবে গ্রহণ করছে তার ধরনই হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমেই একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সরকারের অঙ্গটি হলো বিচার বিভাগ। সরকারের যে বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে ও নিরপরাধকে মুক্তি দেয় এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করে, তাই বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার স্বরূপ ও প্রকৃতি বহুলাংশে নির্ধারণ করে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে বিচারকদের বিচারকার্য পরিচালনা ক্ষমতাকে বোঝায়।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার উপায়গুলো হলো বিচারক নিয়োগ করার সময় তাদের সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহস প্রভৃতি গুণগত যোগ্যতা পরীক্ষা করতে হবে। বিচারকদের কার্যকালের ওপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিশেষভাবে নির্ভরশীল। বিচারকদের কার্যকাল স্থায়ী হলে বিচারকরা নিষ্ঠার সাথে বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারবেন। বিচারকদের চাকুরির নিরাপত্তা স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। বিচারককে উপযুক্ত কারণ ছাড়া চাকরিচ্যুত করা যাবে না। বিচারকদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তাদের উপযুক্ত বেতন-ভাতাদি প্রদান করতে হবে। স্বল্প বেতন ও অপর্যাপ্ত সুবিধা বিচারকদের দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে। বিচারকদের যথাসময়ে পদোন্নতির সুবিধা থাকলে বিচারকগণ তাদের কর্মে বিশেষ মনোযোগী থাকবেন। পদোন্নতি বিচারকদের কর্মদক্ষতা ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে হবে। বিচারকগণ রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থাকবেন। কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি তাদের দুর্বলতা থাকলে বিচার কাজে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে না। ফলে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ণ হবে। বিচারকদের উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা দিলে তাদের মধ্যে কর্তব্যপরায়ণতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত অঙ্গটি হলো সরকারের বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার বিভাগ সংবিধানের প্রাধান্য ও জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। বিচার বিভাগের প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণের মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষা করা। বিচার বিভাগকে সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষক বলা হয়। সংবিধানের প্রাধান্য নিশ্চিত করা এ বিভাগের দায়িত্ব। আইন বিভাগ প্রণীত আইনের এবং শাসন বিভাগের কাজের বৈধতা যাচাই করে বিচার বিভাগ। সংবিধান পরিপন্থী কিংবা, সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন ও কার্যাবলি সরকারের এ বিভাগটি অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করতে পারে। একে বলা হয় বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা। এর মাধ্যমে এ বিভাগটি সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষা করে।
জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক হিসেবে বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নাগরিক জীবনের বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে সুরক্ষিত শর্তগুলোই মৌলিক অধিকার। যেমন: জীবন ধারণের অধিকার সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রভৃতি। এগুলো সরকারও লঙ্ঘন করতে পারে না। সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে জনগণ বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিকার দাবি করতে পারে। বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।
উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার বিভাগ সংবিধানের প্রাধান্য ও জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।
৫. সুমনের দেশে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক বা স্থানীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতার কোনো বণ্টন নেই। সেখানে সকল ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত।
ক. এরিস্টটলের মতে সরকারের বিকৃত রূপ কোনটি?
খ. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সরকারের সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করো।
ঘ. স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই ধরনের সরকার কতটা সহায়ক? ব্যাখ্যা করো।
◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. এরিস্টটলের মতে সরকারের বিকৃত রূপগুলো হলো- গণতন্ত্র, ধনিকতত্ত্ব ও স্বৈরতন্ত্র।
খ. দুটি কক্ষ বা পরিষদ নিয়ে গঠিত আইনসভাকে ছি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলে। এ ধরনের আইনসভায় "নিম্নকক্ষ' এবং ' নামে পৃথক দুটি পরিষদ থাকে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নিম্নকক্ষ গঠিত হয় এবং তা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষমতা ও গুরুত্বের অধিকারী হয়ে থাকে। বিশ্বের বেশিরভাগ আইনসভার উচ্চকক্ষই পরোক্ষভাবে নির্বাচিত মনোনীত আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়। উচ্চকক্ষ আইনসভার নিম্নকক্ষের ক্ষমতা ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডা, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমনের দেশে এককেনিদ্রক সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। নিচে এককেনিদ্রক সরকারব্যবস্থার সুবিধা-অসুবিধা আলোচনা করা হলো-
এককেন্দ্রিক সরকার বলতে এমন এক ধরনের সরকারব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সব ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ন্যস্ত থাকে। প্রাদেশিক বা স্থানীয় সরকার সাংবিধানিকভাবে কোনো স্বাধীনতা ভোগ করে না। স্থানীয় প্রশাসনিক বিভাগের কাছে কেন্দ্রীয় সরকার যতটুকু ক্ষমতা হসত্মান্তর করে তারা শুধু সেটুকুই চর্চা করতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত নির্দেশনা। অনুযায়ীই গোটা দেশ পরিচালিত হয়।
এককেন্দ্রিক সরকারের সুবিধা ও অসুবিধা দুটিই রয়েছে। এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় সব ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকে বলে যেকোনো বিষয়ে দ্রুত ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। এ সরকারব্যবস্থা সরকারি অর্থের অপচয় রোধ করে। এ ধরনের সরকারব্যবস্থা সাংবিধানিক সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতামুক্ত। ফলে সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করা যায়। এছাড়া এককেন্দ্রিক সরকারের কাঠামো সহজ-সরল। কেন্দ্রীয়ভাবে একটিমাত্র সরকার ও একক আনুগত্য বজায় থাকায় ক্ষমতা বটন সম্পর্কিত কোনো জটিলতা থাকে না। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য এককেন্দ্রিক শাসন বিশেষভাবে উপযোগী।
তবে এককেন্দ্রিক সরকারের সব ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে নাস্ত থাকে বলে এখানে শাসনকার্য পরিচালনায় স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সেই সাথে এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের চাপ অত্যধিক থাকে। ফলে সরকার আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আমলাদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে স্থানীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়ে রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ অনেকটা কম।
ঘ. স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এককেন্দ্রিক সরকার সহায়ক হয় না।
এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপরিচালনার সব ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ন্যস্ত থাকে। স্থানীয় বা প্রাদেশিক সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। অর্থাৎ, স্থানীয় সরকারের কাজের ক্ষেত্রে কোনো স্বাধীনতা থাকে না। এ ধরনের সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার বা প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার কোনো বণ্টন না থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত থাকে। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে না। তাই স্থানীয় নেতৃত্বও গড়ে ওঠে না।
আবার, এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার আমলাদের ওপর নির্ভরশীল থাকে। সরকার আমলাদের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে শাসনকার্য পরিচালনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ তেমন প্রয়োজন হয় না।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে় তোলার ক্ষেত্রে এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থা মোটেই সহায়ক নয়।
৬. 'ক' একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের একটি বিভাগ দুর্নীতি দমন বিষয়ক একটি আইন পাস করে। প্রতি অর্থবছরের শুরুতে সরকারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণ করে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে দেশটি ১৬ বার সংবিধান সংশোধন করেছে। তবে শাসন ও বিচার কার্যে এ বিভাগ তেমনটা হস্তক্ষেপ করে না।
ক. আইনসভার প্রধান কাজ কী?
খ. বর্তমানে শাসন বিভাগের সদস্যরাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয় ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে দুর্নীতি দমন আইন প্রণয়নে কোন বিভাগ ভূমিকা পালন করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রের বিভাগটির কার্যাবলি থেকে পাঠ্যবইয়ের আলোচিত কার্যাবলি অনেক ব্যাপক বিশ্লেষণ করো।
◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইনসভার প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা।
খ. শাসন বিভাগের সদস্যরা নিজ বিভাগ পরিচালনার পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেন।
সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে আইনসভার ভেতরে ও বাইরে দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। আবার তিনি দলীয় প্রধান হিসেবে দলের কর্মসূচি প্রণয়ন করেন এবং দলের অনুকূলে জনমত রাখার জন্যও ভূমিকা রাখেন। এমনকি নির্বাচনে নিজ দলের পক্ষে প্রচারণা, পৃষ্ঠপোষকতা ও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিও উল্লিখিত দায়িত্ব পালন করেন। ফলে দেশের কোন অবস্থায় কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে তার সব কিছুই শাসন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা নির্ধারণ করেন। সুতরাং বলা যায়, শাসন বিভাগের সদস্যরাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন।
গ. উদ্দীপকে দুর্নীতি দমন আইন প্রণয়নে আইনসভা বা আইন বিভাগ ভূমিকা পালন করেছে।
সরকারের যে বিভাগ আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সংশোধন করে তাকে আইন বিভাগ বলে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইন বিভাগ বা আইনসভার গুরুত্ব অপরিসীম। আইন বিভাগ যে আইন প্রণয়ন করে, শাসন বিভাগ সে আইন প্রয়োগ করে এবং বিচার বিভাগ সেই আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পন্ন করে। অর্থাৎ, আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনই হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলভিত্তি আইন বিভাগের সদস্যগণ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। তারা তাদের কর্মকান্ডর জন্য জনগণের কাছে দায়ী থাকেন। এজন্য জনস্বার্থ ও জনকল্যাণ বহির্ভূত কোনো আইন যাতে প্রণীত না হতে পারে সেদিকে তারা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। এর ফলে প্রশাসনিক স্তর থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই দুর্নীতি কমে যায়, স্বেচ্ছাচারিতা দূর হয়, সর্বপোরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, 'ক' রাষ্ট্রটিতে সরকারের একটি বিভাগ দুর্নীতি দমন বিষয়ক আইন পাস করে, এ পর্যন্ত বিভাগটি দেশের বিভিন্ন প্রয়োজনে ১৬ বার সংবিধান সংশোধন করেছে। উল্লিখিত কার্যক্রম দ্বারা আইন বিভাগকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে 'ক' রাষ্ট্রে সরকারের যে বিভাগটির কার্যক্রমকে নির্দেশ করা হয়েছে তা হচ্ছে আইন বিভাগ বা আইনসভা।
আইন প্রণয়ন ছাড়াও আইনসভাকে আরো অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। নিচে আইনসভার কার্যাবলি তুলে ধরা হলো-
প্রথমত, আইন বিভাগের প্রধান কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলোকে সমুন্নত রেখে আইনসভা প্রচলিত আইনের কিংবা প্রথাগত বিধানের সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে।
দ্বিতীয়ত, আইনসভা সংবিধান রচনা ও প্রয়োজনবোধে তা সংশোধন করে থাকে। স্বাধীনতা অর্জনের পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের গণপরিষদ ১৯৭২ সালে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করে।
তৃতীয়ত, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভা জাতীয় অর্থ তহবিলের অভিভাবক ও রক্ষক। আইনসভার সম্মতি ব্যতীত কোনো কর ধার্য বা ব্যয় বরাদ্দ করা হয় না।
চতুর্থত, সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় আইনসভা বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে শাসনসংক্রান্ত কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটের সম্মতিক্রমেই রাষ্ট্রপতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ করেন।
পঞ্চমত, অসদাচরণের অভিযোগে আইনসভা যেকোনো সাংসদের সদস্যপদ বাতিল করতে পারে।
ষষ্ঠত, সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে শাসন বিভাগ বা মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য যৌথভাবে আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্রে আইন বিভাগের ভূমিকা গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
৭. মি. রিচার্ড 'ক' রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে ৩০টি আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসিত সরকার রয়েছে। অপরদিকে, মিস ক্যাথি ‘খ’ রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, এদেশেও কিছু প্রদেশ রয়েছে। কিন্তু এই প্রদেশগুলোর সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।
ক. রাজতন্ত্র কী?
খ. গণভোট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রে কোন ধরনের সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান? উক্ত সরকারব্যবস্থার সুবিধাসমূহ বিশ্লেষণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' ও 'খ' রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।
◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. রাজতন্ত্র হচ্ছে সেই শাসনব্যবস্থা যেখানে রাজা বা রানির হাতে রাষ্ট্রের চরম ও সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকে এবং রাজা বা রানি উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা লাভ করেন।
খ. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমত গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো গণভোট।
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রে যখন দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয় তখন গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সর্বসাধারণের অংশগ্রহণে গণভোটের মাধ্যমে প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত হয়। যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের বিষয়ে। ব্রিটেনে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হলে ২০১৬ সালের ২৩ জুন গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আবার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ‘ক’ রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান।
কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সংবিধানের মাধ্যমে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে যে সরকার গঠিত হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। এখানে জাতীয় বা কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকার সংবিধান অনুযায়ী শাসন কাজ পরিচালনা করে। সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন।
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সমন্বয়ে বৃহৎ রাষ্ট্র গঠনে প্রেরণা যোগায়। প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যগুলো আঞ্চলিক স্বাতমত্ম্র্য বিসর্জন না দিয়েও বৃহৎ রাষ্ট্রের মর্যাদা ভোগ এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে় তুলতে পারে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে সংবিধানের মাধ্যমে প্রদেশ ও কেন্দ্রের মধ্যে বণ্টন করা হয়। ফলে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না। আবার স্থানীয় বা আঞ্চলিক বিষয়-সংক্রান্ত কাজ অঙ্গরাজ্যের ওপর ন্যস্ত হলে কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার বাড়তি কাজের চাপমুক্ত থাকতে পারে।
এ ছাড়াও কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা কম থাকে। ফলে প্রদেশগুলোতে নিজস্ব রাজনীতি বিকশিত হয় এবং স্থানীয় নেতৃত্বের পথ সুগম হয়।
ঘ. উদ্দীপকে 'ক' রাষ্ট্র দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার এবং 'খ' রাষ্ট্র দ্বারা এককেন্দ্রিক সরকারকে বোঝানো হয়েছে।
কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সংবিধানের মাধ্যমে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে যে সরকার গঠিত হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। অন্যদিকে, এককেন্দ্রিক সরকার বলতে বোঝায়, যেখানে সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট ন্যস্ত থাকে।
এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কেন্দ্রীয় আইনসভা দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্যা। অপরপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী হয় না। অন্যদিকে, এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থায় দেশের সংবিধান আঞ্চলিক সরকারসমূহের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে না। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং আঞ্চলিক সরকার সমমর্যাদার ভিত্তিতে নিজ নিজ ক্ষমতা চর্চা করে থাকে। এছাড়া এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় দেশের সংবিধান লিখিত অথবা অলিখিত, সুপরিবর্তনীয় অথবা দুষ্পরিবর্তনীয় যেকোনো ধরনের হতে পারে। অপরপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় দেশের সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় হয়। এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্বই বহাল থাকে। অপরপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে সে বিরোধের মীমাংসা করে থাকে। এককেন্দ্রিক সরকারে আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসন সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, সরকারব্যবস্থার এ দুটি ধরনের মাঝে তুলনামূলক পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
৮. গৌরনদী হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশুটির বাবা ঐ ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। গৌরনদী থানার ওসি কামরুল সাহেব অভিযুক্তকে বিধি মোতাবেক গ্রেফতার করে। জেলা জজ শফিকুল ইসলাম সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ডাক্তারকে শাস্তি প্রদান করেন।
ক. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা কে?
খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলতে কী বোঝায়?
গ. জনাব কামরুল সরকারের কোন বিভাগের সদস্য? উক্ত বিভাগের কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, জনাব শফিকের বিভাগের স্বাধীনতা আইনের শাসন নিশ্চিত করে? বিশ্লেষণ কর।
◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. ফরাসি দার্শনিক মণ্টে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবক্তা।
খ. কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সংবিধানের ভিত্তিতে ক্ষমতা বণ্টনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয় তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। এখানে কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রের জাতীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করে এবং প্রাদেশিক সরকার স্বাধীনভাবে স্থানীয় বা প্রাদেশিক বিষয়সমূহ পরিচালনা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।
গ. জনাব কামরুল সরকারের শাসন বিভাগের সদস্য রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনার দায়িত্ব যে বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকে তাকে শাসন বিভাগ বলে।
আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনকে বাস্তবে প্রয়োগ করাই শাসন বিভাগের কাজ। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে শাসন বিভাগের কার্যাবলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে শাসন বিভাগের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করা হলো-
শাসন বিভাগ দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, অবসর প্রদান, বেতন ও ভাতাদি নির্ধারণ ও প্রদান; প্রশাসনিক নিয়মাবলি প্রণয়ন, জরুরি আইন, অধ্যাদেশ প্রভৃতি প্রণয়ন করে থাকে। বর্তমান সময়ে প্রত্যেক রাষ্ট্রই অন্য রাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে এবং অন্য দেশ কর্তৃক নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে নিজ দেশে গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও সন্ধি ও চুক্তি সম্পাদন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন বা সদস্যপদ গ্রহণ ও সেখানে নিজ দেশের প্রতিনিধি প্রেরণ করে। এসব কাজকে কূটনৈতিক বা পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কাজ বলে। এসব কাজের দায়িত্ব পালন করে শাসন বিভাগের অন্তর্গত ‘পররাষ্ট্র দপ্তর'। যুদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি অনেক সময় আইন বিভাগের সম্মতির ওপর নির্ভর করলেও যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব এককভাবে শাসন বিভাগের অনেক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতিদেরকে নিয়োগ করে থাকেন। বিচারালয় কর্তৃক দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তিনি ক্ষমা প্রদর্শন, কিংবা তার দন্ড হ্রাস করতে পারেন।
ঘ. হ্যাঁ, জনাব শফিকের বিভাগ তথ্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আইনের শাসন নিশ্চিত করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে বোঝায় আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান এবং বিচার কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচারকদের স্বাধীন ও মত প্রকাশের ক্ষমতা বা স্বাধীনতা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো.
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় স্বাধীন বিচার বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি দেশের শাসনব্যবস্থার উৎকর্ষ নির্ণয়ের জন্য বিচার বিভাগের দক্ষতা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়। বিচার বিভাগের অস্তিত্ব ছাড়া সুসভ্য সামাজিক জীবন কল্পনা করা যায় না। সমাজজীবনে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার নির্যাতন, নিপীড়ন প্রভৃতি প্রতিরোধের প্রধান শক্তি হলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগ আছে বলেই একটি দেশের সরকার সংবিধানের নির্দেশিত পথে চলতে বাধ্য হয়।
স্বাধীনতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হলো আইনের শাসন। আইনের শাসনের অর্থ হলো-
ক. আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান,
খ. সকলের জন্য একই ধরনের আইন থাকবে,
গ. বিনা অপরাধে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না,
ঘ. বিনা বিচারে কাউকে আটক করা যাবে না,
ঙ. অভিযুক্তকারীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে এবং
চ. সকল নাগরিকের জন্য অভিন্ন বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
আইনের শাসন কথাটি শুধু মুখে মুখে স্বীকার বা সংবিধানে সন্নিবেশিত করলেই হবে না, এর বাস্তব প্রয়োগও ঘটাতে হবে। তাহলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তোলার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
৯. পিটার তার বন্ধু দীনেশকে জানায়, তাদের সরকার দীনেশনের সরকারের মত আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়।
ক. কক্ষের ভিত্তিতে আইনসভা কত প্রকার?
খ. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা কাকে বলে?
গ. পিটারের রাষ্ট্রে কোন ধরনের সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান? এ সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দীনেশের সরকার কোন ধরনের? গণতান্ত্রিক উন্নয়নে এ সরকার জরুরি বিশ্লেষণ করো।
◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. কক্ষের ভিত্তিতে আইনসভা দুই প্রকার। যথা; এককক্ষবিশিষ্ট ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট।
খ. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা এমন এক বিশেষ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বিচার বিভাগ দেশের আইন ও শাসন বিভাগের কার্যক্রমের সাংবিধানিক বৈধতা নির্ধারণ করে।
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগ সংবিধানবিরোধী যেকোনো আইন ও সরকারি সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিকতার অভিযোগে বাতিল করে দিতে পারে। এ ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগ সংবিধানের রক্ষক ও ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে কাজ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষেত্রে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী।
গ. পিটারের রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান।
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলতে এমন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার সব ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকে। এ ধরনের সরকারে রাষ্ট্রপতি সাধারণত তার কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকেন না। তার দায়বদ্ধতা থাকে জনগণের কাছে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। উদ্দীপকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, পিটার তার বন্ধু দীনেশকে বলছে, তার দেশের সরকার আইনসভার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। অর্থাৎ তার দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রচলিত। এরূপ সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানই দেশের প্রকৃত শাসক। তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় সাধারণত বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হন। এ সরকারব্যবস্থায় মন্ত্রিসভার সদস্যরা আইনসভার সদস্য নন। মন্ত্রিরা তাদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকেন। এ সরকার ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আইনসভা ইচ্ছা করলেই রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে না। কেবল বিশেষ ব্যবস্থায় অভিশংসনের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সাধারণত আইনসভার কাছে দায়ী নন আবার তিনি আইনসভাকে ভেঙে দিতেও পারেন না। এই সরকার ব্যবস্থায় সরকার স্থিতিশীল হয়। অভিশংসন প্রস্তাব ছাড়া আইনসভা রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে না। তাছাড়া এ সরকারব্যবস্থায় ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকর থাকায় বিচার বিভাগের প্রাধান্য বহাল থাকে। পিটারের দেশের সরকারব্যবস্থায় অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি শাসিডসরকার ব্যবস্থায় এসব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দীনেশের সরকার সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার।
যে শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তাদের কাজের জন্য সংসদ অর্থাৎ, আইনসভার কাছে দায়ী থাকে তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার বলে। এ ব্যবস্থায় সাধারণ নির্বাচনে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দল মন্ত্রিসভা গঠন করে। বিজয়ী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্যে সবার আস্থাভাজন ব্যক্তি হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। এ মন্ত্রিসভা যতক্ষণ পর্যন্ত আইনসভার আস্থাভাজন থাকবে, ততক্ষণ শাসনক্ষমতায় থাকবে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা তথা শাসন বিভাগ তাদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে জবাবদিহি করে। এ কারণে সংসদীয় সরকারকে দায়িত্বশীল সরকারও বলা হয়।
সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় বিরোধী দল বিকল্প সরকার হিসেবে গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে। ফলে সরকার সাধারণত কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনা। শাসন বিভাগকে তাদের গৃহীত নীতি, সিদ্ধান্ত ও কাজের জন্য আইন সভার কাছে দায়ী থাকতে হয়। ফলে শাসন বিভাগ স্বৈরাচারী হতে পারে না। সংসদীয় সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় বলে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক হয়। ফলে নীতিগ্রহণ ও বাস্তবায়নে জনগণের ইচ্ছার অধিকতর প্রতিফলন ঘটে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মন্ত্রিপরিষদ বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা অন্যান্য রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে অপেক্ষাকৃত উত্তম এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের সরকার বেশি কার্যকর।
১০. সকল দেশেই সরকারের এমন একটি বিভাগ রয়েছে, যা বিদ্যমান আইনসমূহ প্রয়োগ করে অপরাধীর দ- বিধান করে। কিন্তু সুজনের দেশে এ বিভাগটি স্বাধীন নয়।
ক. আইন বিভাগের মূল কাজ কী?
খ. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
গ. বর্ণিত বিভাগটির কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুজনের দেশে সরকারের বিভাগসমূহ কীভাবে কাজ করে? বিশ্লেষণ করো।
◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইন বিভাগের মূল কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা।
খ. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে সরকারের অনান্য বিভাগের আইন ও শাসন বিভাগ. হস্তক্ষেপ মুক্ত থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করার ক্ষমতাকে বোঝায়।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ হলো মূলত কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বিচারকদের স্বাধীনতা। বিচারকরা যখন রায় প্রদানের ক্ষেত্রে সব ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকবেন, তখনই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নাগরিক স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্র রক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিভাগটি হলো বিচার বিভাগ। সরকারের যে বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে ও নিরপরাধকে মুক্তি দেয় এবং জনগণের অধিকার রক্ষা করে, তাকে বিচার বিভাগ বলে। একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের ভূমিকা অপরিসীম।
উদ্দীপকে সরকারের এমন একটি বিভাগের কথা বলা হয়েছে, যা দেশের বিদ্যমান আইনসমূহ প্রয়োগ করে অপরাধীর দ- বিধান করে। এ থেকেই বোঝা যায়, এখানে বিচার বিভাগের কথাই বলা হয়েছে। আইন প্রয়োগ করাই বিচার বিভাগের প্রধান কাজ। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী বিচারকাজ পরিচালনা করে। বিচার বিভাগ যদি আইনসভা প্রণীত কিংবা প্রথাগত আইনের ভাষাকে অস্পষ্ট বা পরস্পরবিরোধী বলে মনে করে, তাহলে তার ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। আবার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আদালত প্রয়োজনে সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান করে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করে থাকে। প্রয়োজনে বিচারকরা ন্যায়বোধ ও সুবিবেচনা প্রয়োগ করে আইনের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। বিচারকদের বিশেষ বিশেষ রায় বা পর্যালোচনা অনেক সময় পরবর্তী সময়ে নজির হিসেবে অনুসৃত হয়। এটি নতুন আইনের উৎস হিসেবেও কাজ করতে পারে। বিচার বিভাগ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে। এছাড়াও এ বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, পরামর্শ পান, তদন্তসংক্রান্ত কাজ প্রভৃতি করে থাকে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সুজনের দেশের সরকারের বিভাগসমূহের মধ্যে আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করে, শাসন বিভাগ শাসনকাজ পরিচালনা করে এবং বিচার বিভাগ বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিচারকাজ সম্পাদন করে। বস্তুত এভাবেই একটি দেশের সরকারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে সুজনের দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে আইনসভা আইন প্রণয়নের কাজ করে থাকে। সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রচলিত থাকলে আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল শাসন বিভাগ বা মন্ত্রিসভা গঠন করে। আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিসভা অর্থাৎ, সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ দেশের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃংখ্যা তথ্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সরকারি কর্মচারী নিয়োগ, বেতন-ভাতা। নির্ধারণ ও প্রদান, প্রশাসনিক নিয়মাবলি প্রণয়ন, জরুরি আইন, অধ্যাদেশ জারি প্রভৃতি কাজ করে থাকে। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ, সন্ধি ও চুক্তি সম্পাদন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও এগুলোর সদস্যপদ গ্রহণ এবং সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়াও শাসন বিভাগের কাজ। শাসন বিভাগ কিছু কিছু আইন প্রণয়নসংকান্ত কাজও করে থাকে। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ অর্থাৎ মন্ত্রিসভা সরাসরি আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করে। কেননা, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা আইনসভারই সদস্য।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের সাথে সরকারের অন্য দুটি বিভাগের সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ। আইনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিচারকরা অনেক সময় নতুন আইন সৃষ্টির পথ সুগম করেন। সংবিধানসম্মত না হলে বিচার বিভাগ যেকোনো আইন বাতিল করতে পারে। এভাবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও দেশভেদে সরকারের বিভাগগুলোর মধ্যে ক্ষমতার তারতম্য হয়ে থাকে।
0 Comments:
Post a Comment