এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download
পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬
HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer
১. শিক্ষক ছাত্রদের পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে একটি কৃত্রিম নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। ছাত্ররা এই নির্বাচনে জালালকে শ্রেণির নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে। শিক্ষক মহোদয় ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলেন, কেন তারা জালালকে নির্বাচিত করেছে। ছাত্ররা জানালো, জালালের আকর্ষণীয় গুণাবলি ও দক্ষতা তাদেরকে আকৃষ্ট করেছে।
ক. রাজনৈতিক দল কী?
খ. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে জালাল-এর নির্বাচিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উদ্দীপকে উল্লিখিত জালালের ভূমিকা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।' তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. রাজনৈতিক দল হলো বিশেষ নীতি বা আদর্শের সমর্থনে সংগঠিত সংঘবিশেষ, যা সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন ও পরিচালনার চেষ্টা করে।
খ. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হচ্ছে কোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে না। এরা সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থকে যথাযথভাবে আদায় করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। শিক্ষক সমিতি, বণিকসংঘ, শ্রমিক ইউনিয়ন, ব্যাংক কর্মচারী ফেডারেশন, সুশীল সমাজ প্রভৃতি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদাহরণ।
গ. উদ্দীপকের জালালের নির্বাচিত হওয়ার কারণ হলে তার মধ্যে একজন নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলি বিদ্যমান রয়েছে।
যে ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো জনসমষ্টির আচার-ব্যবহার ও কার্যাবলিকে প্রভাবিত করতে পারে তাকে নেতা বলা হয়। নেতার গুণাবলি বা যোগ্যতাকে বলা হয় নেতৃত্ব। নেতৃত্ব হলো কোনো দল বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে জনগণের আচরণ ও কাজকে প্রভাবিত করার কৌশল। একজন ভালো নেতার ভালো আচার-আচরণ, সুন্দর ব্যবহার, কর্মদক্ষতা, জ্ঞান, দূরদৃষ্টি সহনশীলতা, গণমুখিতা প্রভৃতি গুণ জনগণকে আকৃষ্ট করে। যে নেতার মধ্যে এসব গুণ থাকে জনগণ তাকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে। এ বিষয়টিই আমরা উদ্দীপকের জালালের ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, শ্রেণিশিক্ষক ছাত্রদের নির্বাচন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য শ্রেণিকক্ষে একটি প্রতীকী নির্বাচনের আয়োজন করেন। ঐ নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা জালাল নামে তাদের এক সহপাঠীকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে। তখন শ্রেণিশিক্ষক তাদের কাছে জালালকে নির্বাচিত করার কারণ জানতে চান। উত্তরে শিক্ষার্থীরা বলে, জালালের আকর্ষণীয় গুণাবলি এবং দক্ষতার কারণে তারা তাকে নির্বাচিত করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও এ বিষয়টি লক্ষ করা যায়। জনগণ দক্ষ, যোগ্য এবং সৎ মানুষকে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করতে চায়। সুতরাং বলা যায়, জালালের নির্বাচিত হওয়ার কারণ হলো তার মধ্যে একজন যোগ্য নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলি রয়েছে। এ বিষয়টিই সহপাঠীদের তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জালালের ভূমিকা অর্থাৎ যোগ্য নেতৃতব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নেতৃত্ব হলো সেসব গুণাবলি যা অপরকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অভীষ্ট স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করে। যোগ্য নেতা একটি জাতির অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক। যেকোনো সমাজ ও রাজনৈতিকব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম। নেতার উত্তম গুণাবলিই একটি জাতিকে কাঙি্ক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আর সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দক্ষ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। কারণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করা, সামাজিক ঐক্য রক্ষা, সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি, নাগরিক সুখ ও সমৃদ্ধি বাড়vনো। কেবল যোগ্য নেতৃত্বেই এসব দিকে খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। উত্তম নেতৃত্ব সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য শাসনব্যবস্থার সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব সুশাসন নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। নাগরিকের অধিকার, স্বাধীনতা, নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উত্তম নেতৃত্ব সজাগ দৃষ্টি রাখে। ফলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। নেতার উত্তম গুণাবলিই একটি জাতিকে কাঙি্ক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। উদ্দীপকের জালাল তার আকর্ষণীয় গুণাবলি এবং কাজের দক্ষতার মাধ্যমে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস অর্জন করেছে। অর্থাৎ, জালাল একজন আদর্শ নেতা। আশা করা যায়, সে তার সহপাঠীদের দেশপ্রেম, দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হবে। তার মতো নেতৃত্বের গুণের অধিকারীরাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারবে।
পরিশেষে বলা যায়, উত্তম ও দক্ষ নেতারা দেশ ও জাতির কান্ডারি। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, সমাজ এগিয়ে যায়। তাই বলা যায়, জালালের মতো নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
২. সাইফুল ইসলাম তাঁর অসাধারণ গুণাবলির জন্য জনসাধারণের কাছে বিশেষ সম্মানের আসনে সমাসীন। তিনি সহজেই জনগণকে প্রভাবিত করতে পারেন। বিশেষত চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও বাগ্মিতার জন্য জনগণ তাঁর প্রতি মুগ্ধ।
ক. উপদল কী?
খ. জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে পার্থক্য লিখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সাইফুল ইসলামের আচরণে কী ধরনের নেতৃত্বের প্রকাশ লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত নেতৃত্ব জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে- তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।
◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. দলের কিছু সদস্য দলীয় নীতি ও কর্মসূচির কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে কিংবা ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হলে তাকে উপদল (Faction) বা কুচক্রী দল (Clique) বলে।
খ. জাতি এমন একটি জনসমষ্টিকে নির্দেশ করে যা একই বংশ ও ভাষাগত ঐক্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত। জাতীয়তা সেই জনসমষ্টিকে নির্দেশ করে যারা একই বংশ, ভৌগোলিক অবস্থান, ভাষা, সাহিত্য, আদর্শ, ঐতিহ্য, আচার ও রীতি-নীতির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ।
জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। জাতি একটি সক্রিয় ও বাস্তব রাজনৈতিক চেতনা। অপরদিকে, জাতীয়তা হচ্ছে এক ধরনের মানসিক ধারণা। জাতি গঠনে রাজনৈতিক সংগঠন জরুরি; কিন্তু জাতীয়তার জন্য রাজনৈতিক সংগঠন জরুরি নয়। জাতি হলো জাতীয়তার চূড়ান্ত পর্যায়। অন্যদিকে, জাতীয়তা হচ্ছে জাতি গঠনের প্রাথমিক অবস্থা জাতি খুব সুসংহত হয়; কিন্তু জাতীয়তা সুসংহত নাও হতে পারে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সাইফুল ইসলামের আচরণে সম্মোহনী নেতৃত্বের প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
কোনো নেতা যখন তার নেতৃত্ব ও কাজের মাধ্যমে জনগণকে ব্যাপকভাবে মুগ্ধ, অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হন তখন সেই নেতৃত্বকে 'সম্মোহনী বা জাদুকরি নেতৃত্ব' (Charismatic leadership) বলা হয়। সম্মোহনী শব্দটির অর্থ হচ্ছে অন্যকে আকৃষ্ট করার বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলি। আর এ বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলিসম্পন্ন নেতা জনগণকে মুগ্ধ করতে পারেন। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েবার গধী ডবনবৎ. সর্বপ্রথম এ নেতৃত্বের ধারণা দেন। এ ধরনের নেতৃত্বের অধিকারী ব্যক্তি অনেকটা অভিমানবিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন। ঐ নেতা জনগণকে এমনভাবে আকৃষ্ট করেন যে, তারা তার কথার মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং তার কথার বাইরে যেতে পারেন না। মহাত্মা গান্ধী, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ নেতার মধ্যে সম্মোহনী নেতৃত্বের গুণ ছিল।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সাইফুল ইসলাম তার অসাধারণ গুণাবলির জন্য জনসাধারণের কাছে বিশেষ সম্মান পান। তিনি সহজেই জনগণকে প্রভাবিত করতে পারেন। চারিত্রিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা ও বাগ্মিতার জন্য জনগণ তার প্রতি মুগ্ধ। তাই বলা যায়, সাইফুল ইসলামের আচরণে সম্মোহনী নেতৃত্বের প্রকাশ লক্ষ করা যায়।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সম্মোহনী নেতৃত্ব জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে আমি এই কথার সাথে একমত।
বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালনা ও এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন সুযোগ্য নেতৃত্ব। উপযুক্ত নেতৃত্ব ছাড়া কোনো জাতি বা রাষ্ট্র অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমেই একটি জাতি অভিন্ন নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয় রাষ্ট্রের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো নেতৃত্বের গুণেই সুনিয়ন্ত্রিত ও সুচারুরূপে পরিচালিত হয়। এ ধরনের নেতৃত্বই জাতীয় সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সম্মোহনী নেতৃত্ব একটি জনসমাজকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় সহায়তা করতে পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধরনের নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি তার সম্মোহনী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়েই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সাইফুল ইসলামের মতো সম্মোহনী নেতৃত্ব জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
৩. আহনাফ এবং তাওসিফ একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। তারা দু'জন দুটি আলাদা সংগঠনের সাথে যুক্ত। আহনাফের সংগঠনটি সবসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে। অপরদিকে, তাওসিক্ষের সংগঠনটি নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে এবং এই সংগঠনটি সরকারি সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকূলে রাখার চেষ্টা করে।
ক. নেতৃত্ব কী?
খ. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আহনাফের সংগঠনটি কোন ধরনের সংগঠন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠন দুটির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা
◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. নেতৃত্ব হলো একজন নেতার এমন কিছু গুণাবলির সমষ্টি যার মাধ্যমে সে জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।
খ. যখন কোনো দেশে প্রধানত দুটি রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় এবং অন্য দলগুলোর কার্যকলাপ চোখে পড়ে না তখন তাকে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলে।
দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় সাধারণত রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রতিদ্বনি্দ্বতা দুটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এরূপ ব্যবস্থায় প্রধান দুটি দলের মধ্যে ক্ষমতার হাত বদল হতে দেখা যায়। ফলে জনগণ খুব সহজেই দুটি দলের মতাদর্শ থেকে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে পারে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আহ্হলাফের সংগঠনটি হলো রাজনৈতিক দল।
রাজনৈতিক দল হলো নির্দিষ্ট মতাদর্শে সংগঠিত জনগোষ্ঠী, যা সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনা এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে। রাজনৈতিক দলের সদস্যরা একই মতাদর্শে ও সমনীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হন। দলের সদস্যদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকলেও সমাজ বা জাতির সামগ্রিক কল্যাগে তারা ঐকমত্য পোষণ করেন। সরকার গঠন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কার্যক্রম সম্পন্ন করে। জনসমর্থনের মাধ্যমে। বিজয় অর্জন ও সরকার গঠন এবং পরবর্তীতে শাসনকার্য পরিচালনার মাধ্যমে দলীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে কার্যকর করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, আহনাফ একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। সে একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত। তার সংগঠনটি সবসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে। অর্থাৎ আহনাফ রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। রাজনৈতিক দলের প্রধান উদ্দেশ্যে থাকে বিভিন্ন কর্মকান্ডর। মাধ্যমে জনসমর্থন লাভ করে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া। এ জন্য তারা সরকারি কাজের সমালোচনা করে এবং দেশের সমস্যাগুলো জনগণের সামনে তোলে ধরে। তাই বলা যায়, আহনাফের সংগঠনটি হলো রাজনৈতিক দল। কেননা, রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আহনাফের সংগঠনটি হলো রাজনৈতিক দল এবং তাওসিফের সংগঠনটি হলো চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী।
উদ্দীপকের আহনাফের সংগঠনের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া। অর্থাৎ, সে রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। অন্যদিকে, তাওসিফের সংগঠনটি নিজের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে এবং সরকারি সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকূলে রাখার চেষ্টা করে। অর্থাৎ, তাওসিফ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্য।
রাজনৈতিক দল বলতে এমন এক সংগঠিত জনসমষ্টিকে বোঝায় যারা কতিপয় নীতিমালার ভিত্তিতে একত্রিত হয় এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারি ক্ষমতা দলের চেষ্টা করে। অপরদিকে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এমন একটি জনসমষ্টি যার সদস্যরা সমজাতীয় মনোভাব এবং স্বার্থের বন্ধনে আবহ, ক্ষমতা দখলের কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। বরং তাদের উদ্দেশ্য গোষ্ঠী স্বার্থোদ্ধার। রাজনৈতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে মিল থাকলেও উভয়ের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। উভয়ের মধ্যে উৎপত্তি, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য এবং কর্মসূচির মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক দলের সামনে বৃহৎ জাতীয় কল্যাণের লক্ষ্য থাকে, যা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে থাকে না। সাংগঠনিক দিক থেকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক দল অপেক্ষা দুর্বল। রাজনৈতিক দলের কাজকর্ম প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ। কিন্তু, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজকর্ম সাধারণত গোপন বা অপ্রকাশ্য। আবার রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী তা করে না। তবে এই দু'টি সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য হলো তারা উভয়ই নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সংগঠিত হয়।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, রাজনৈতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে সাদৃশ্য যেমন রয়েছে, তেমনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
৪. স্বেচ্ছাচারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আনিস গ্রামের যুবকদের একত্রিত করে একটি সংগঠন তৈরি করে। ক্রমেই সংগঠনটির কর্মকা- ইউনিয়ন জুড়ে বিসত্মৃত হয় এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। সবাই আনিসের কথা ও কর্মে বিশ্বাস স্থাপন করে। তার নৈতিকতা ও দেশপ্রেম সবাইকে মুগ্ধ করে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে তার সংগঠনটি অংশগ্রহণ করার প্রসত্তুতি গ্রহণ করে।
ক. পৌরনীতি ও সুশাসনের সংজ্ঞা দাও।
খ. আইন প্রণয়নে আমলারা কীভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আনিসের সংগঠনটির সাথে তোমার পঠিত বইয়ের কোন সংগঠনটির সাদৃশ্য আছে? ব্যখ্যা করো।
ঘ. আনিসের নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? যুক্তি দেখাও।
◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. পৌরনীতি হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে। আর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অন্তর্ভুক সব প্রতিষ্ঠানে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই হলো সুশাসন।
খ. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাদের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ 'উবষবমধঃবফ খবমরংষধঃরড়হ' তথ্য অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন প্রণয়ন করেন।
আইনসভা আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু বর্তমান যুগের বৃহৎ রাষ্ট্রের জন্য অসংখ্য আইন প্রয়োজন হয় যা বিসত্মারিতভাবে রচনা করা আইনসভার পক্ষে সম্ভব হয় না। বিশেষ করে অর্থ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, আমত্মঃসীমান্ত অপরাধ, মাদকদ্রব্য ইত্যাদির মতো জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কলাকৌশলগত জ্ঞান ও বিচক্ষণতা রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেরই থাকে না। ফলে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে আইনসভা অনেক সময় আমলাদের ওপর নির্ভরশীল থাকে। এক্ষেত্রে আমলাদেরকেই আইনের খসড়া প্রণয়নের মতো বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আনিসের সংগঠনটির সাথে আমার পঠিত রাজনৈতিক দলের সাদৃশ্য রয়েছে।
আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক দল হলো নির্দিষ্ট মতাদর্শের ভিত্তিতে সংগঠিত জনগোষ্ঠী, যা সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনা এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে। রাজনৈতিক দলের সদস্যরা একই মতাদর্শ ও নীতির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হন। দলের সদস্যদের মধ্যে কখনো কখনো দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা বা মতপার্থক্য ঘটলেও বৃহত্তর দলীয় বা জাতীয় স্বার্থে তারা ঐকবদ্ধ থাকেন। আনিসের সংগঠনটির মধ্যে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আনিস স্বেচ্ছাচারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য কিছু যুবককে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। একটি কর্মসূচি প্রণয়ন করে তিনি এর কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেন এবং জনমত গঠনের মাধ্যমে তার সংগঠনের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধি করেন। পরবর্তী সময় তিনি নিজে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রসত্তুতি নেন। রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও এভাবে একে একে সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়ন, এর প্রতি জনসমর্থন অর্জন এবং ঐ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার গঠন করতে নির্বাচনে অংশ নেয়। রাজনৈতিক দল জাতীয় স্বার্থে কাজ করে এবং দেশ ও দেশবাসীর সমসাময়িক সমস্যা সম্পর্কে নিয়মিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দলের মতাদর্শের অনুকূলে জনমত সংগ্রহের চেষ্টা করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, গঠনগত বৈশিষ্ট্য ও কার্যপদ্ধতির দিক দিয়ে আনিসের সংগঠনটি রাজনৈতিক দলেরই প্রতিনিধিত্ব করছে।
ঘ. উদ্দীপকের আনিস উত্তম নেতৃত্ব গুণের অধিকারী। তাই তার নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
একটি দল, সমাজ বা দেশের মানুষকে সার্বিক নির্দেশনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালনা করাই হচ্ছে নেতৃত্ব। সাধারণভাবে নেতার গুণাবলিকে নেতৃত্ব বলে। নেতার উত্তম গুণাবলি একটি জাতিকে কাঙি্ক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আর সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও দক্ষ নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। আনিস উত্তম ও দক্ষ নেতৃত্বের অধিকারী। তাই তিনিও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।
আনিস একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। তিনি তার কথা ও কাজের মাধ্যমে এলাকার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছেন। তিনি দেশপ্রেম নৈতিকতার আদর্শে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। সুতরাং তাকে একজন আদর্শ নেতা বলা যেতে পারে। আনিসের মতো নেতৃত্বের গুণের অধিকারীরাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী করা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, সামাজিক ঐক্য গড়ে় তোলা ইত্যাদি। আর যোগ্য নেতৃত্বই এসব দিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। যোগ্য নেতা সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য শাসনব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করেন। নারী ও সংখ্যালঘুসহ সব শ্রেণির নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে উত্তম নেতৃত্ব সজাগ দৃষ্টি রাখে। পরিশেষে বলা যায়, উত্তম। যোগ্য নেতারা দেশ ও জাতির কান্ডারি। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, সমাজ অগ্রগতির। দিকে এগিয়ে যায় এবং দেশবাসীর সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। তাই বলা যায়, আনিসের নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।
৫. জনাব আজিজ একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার ইউনিয়নের সব নাগরিক যেকোনো সমস্যায় তার কাছে যায়। বিবাদ মীমাংসার জন্য সবাই ইউনিয়ন আদালতে অভিযোগ দায়ের করে। জনাব আজিজ নিরপেক্ষভাবে সব বিবাদের মীমাংসা করে দেন। তিনি এলাকার উন্নয়নে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সবাই তার ওপর আস্থাশীল।
ক. মানবাধিকার কাকে বলে?
খ. "আইনের চোখে সবাই সমান"- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব আজিজের মধ্যে কোন ধরনের নেতৃতেবর গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ইউনিয়নের মতো রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারের কী কী করণীয়? মতামত দাও।
◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির যেসব অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা প্রাপ্য তা-ই মানবাধিকার।
খ. আইনের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান এবং সবার ক্ষেত্রে অভিন্ন আইন প্রযোজ্য।
ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। কেউ বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নয়। সবাই আইন মেনে চলতে বাধ্য। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে- এটাই আইনের শাসনের বিধান।
গ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যান জনাব আজিজের মধ্যে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে।
সাধারণ অর্থে নেতৃত্ব বলতে একজন নেতার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিকে বোঝায়। তবে পৌরনীতিতে একজন ব্যক্তি বা কোনো একটি দলের নেতা কী গুণের অধিকারী এবং তা অন্যকে কতটা প্রভাবিত করছে। তাকেই নেতৃত্ব বলে। নেতার ব্যক্তিত্ব, বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলির ওপর ভিত্তি করে নেতৃত্ব নানা ধরনের হতে পারে। গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এগুলোর অন্যতম। গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব জনগণের অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ ও কাজ করার ওপর গুরুত্ব প্রদান করে। জনাব আজিজও একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, জনাব আজিজ জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান। তাই জনগণের মঙ্গল সাধনই তার প্রধান কর্তব্য। এ কারণে তিনি জনগণের সমস্যা মন দিয়ে শোনেন এবং নিরপেক্ষভাবে তার সমাধানের চেষ্টা করেন। আজিজ সাহেব একজন যোগ্য জনপ্রতিনিধি। তিনি গণতান্ত্রিক আদর্শ অনুসরণ করেন এবং গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে এলাকার প্রশাসন পরিচালনা ও উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। এরকম গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের অধিকারীরা জনগণকে সব কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতেই সব কাজ করেন। তারা মানুষের অধিকার, কল্যাণ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তারা জনগণকে সংগঠন বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে মূল্যায়ন করেন। তাই তাদের সব কর্মকা- জনগণকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। চেয়ারম্যান আজিজ সাহেব এসব বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করেন বলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তিনি গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের অধিকারী।
ঘ. জনাব আজিজের ইউনিয়নের মতো রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চার মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণধর্মী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সরকার একটি রাষ্ট্রের পরিচালক। তাই রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার যদি জনাব আজিজের মতো জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং তাদের সমস্যা সমাধানে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে, তবে তা জনগণের আস্থা অর্জন করবে। এভাবে সুশাসন যা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আজিজ তার এলাকায় গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও কল্যাণধর্মী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সরকার যদি রাষ্ট্রে এ ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তবে তাকে প্রথমেই অংশীদারিত্বমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ পরিকল্পনায় জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে সরকারকে নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এরপর জনগণের সম্পদ ও সামর্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের প্রতি সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের সমস্যাকে মাথায় রেখে বাস্তবধর্মী ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের অবাধ চলাফেরা ও নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে জনগণকে ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। সর্বোপরি প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সরকার যদি জনগণকে সাথে নিয়ে সব নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে, তবে উদ্দীপকের ইউনিয়নের মতো রাষ্ট্রেও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
৬. 'X' নামক একটি রাষ্ট্রে শামীম ও জামিল দুই ভাই একটি কারখানায় কাজ করে। শামীম 'ক' নামক একটি সংগঠনের নেতা। তার সংগঠনটি জাতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য সরকার গঠন করতে চায়। অন্যদিকে, জামিল 'খ' নামের একটি সংগঠনের সাথে জড়িত। এ সংগঠনটি শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে এবং দাবি-দাওয়া পূরণে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
ক. শিক্ষকতা কোন ধরনের নেতৃত্ব?
খ. সম্মোহনী নেতৃত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে 'ক' ও 'খ' নামের সংগঠনের ধরন কীরূপ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের 'ক' সংগঠনের মাধ্যমে কীসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? জাতীয় উন্নয়নে এ সংগঠনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. শিক্ষকতা বিশেষজ্ঞসুলভ নেতৃত্ব।
খ. কোনো নেতা তার নেতৃত্ব ও কাজের মাধ্যমে জনগণকে ব্যাপকভাবে মুগ্ধ, অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হলে তার নেতৃত্বকে সম্মোহনী বা জাদুকরি নেতৃত্ব' (Charismatic Leadership) বলা হয়।
সম্মোহন শব্দটির অর্থ হচ্ছে আকৃষ্ট বা নিয়ন্ত্রণ করার বিশেষ গুণ। আর এ ধরনের বিশেষ গুণসম্পন্ন নেতা জনগণকে মুগ্ধ করতে পারেন। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েবার গধী ডবনবৎ. সর্বপ্রথম এ নেতৃত্বের ধারণা প্রদান করেন। অবিভক্ত ভারতবর্ষের মহাত্মা গান্ধী, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ নেতার মধ্যে সম্মোহনী নেতৃত্বের গুণ ছিল।
গ. উদ্দীপকের 'ক' নামক সংগঠনটি হলো রাজনৈতিক দল এবং 'খ' নামক সংগঠনটি হলো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী।
উদ্দীপকের শামীমের সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য সরকার গঠন করা। অর্থাৎ, সে রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত। অন্যদিকে, জামিলের সংগঠনটি শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে এবং দাবি-দাওয়া পুরণে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, জামিল চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্য। রাজনৈতিক দল বলতে এমন এক সংগঠিত জনসমষ্টিকে বোঝায় যারা কতিপয় নীতিমালার ভিত্তিতে একত্রিত হয় এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সরকারি ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হচ্ছে কোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। ক্ষমতা দখলের কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। বরং তাদের উদ্দেশ্য কোন নিজের গোষ্ঠির অধিকার বা স্বার্থ আদায় করা। রাজনৈতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে মিল থাকলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্যগুলো দেখা যায় উৎপত্তি, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য এবং কর্মসূচির মধ্যে। রাজনৈতিক দলের সামনে বৃহৎ জাতীয় কল্যাণের লক্ষ্য থাকে, যা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে থাকে না। সাংগঠনিক দিক থেকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক দল অপেক্ষা দুর্বল। রাজনৈতিক দলের কাজকর্ম প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ। কিন্তু, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কাজকর্ম সাধারণত একটু ভিন্ন এগুলো সাধারণত পাশ থেকে কাজ করে। আবার, রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী তা করে না। অন্যদিকে এই দু'টি সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য হলো, তারা উভয়েই নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সংগঠিত হয়। উভয়েই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, রাজনৈতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্যই বেশি।
ঘ. উদ্দীপকের 'ক' সংগঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব অপরিসীম।
উদ্দীপকের 'ক' নামক সংগঠনটি জাতীয় সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য সরকার গঠন করতে চায়। একইভাবে রাজনৈতিক দলও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করতে চায়। তাই বলা যায়, 'ক' নামক সংগঠনটি একটি রাজনৈতিক দল। রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নে এ ধরনের দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রাজনৈতিক দলের সুষ্ঠু কর্মকান্ডর ওপর একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে। কেননা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূল শক্তিই হলো রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাবলির সমাধানের মাধ্যমে জাতীয় উন্নতি বিধানের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে ও সরকার গঠনের পর তা বাস্তবায়নের প্রয়াস চালায়। দলগুলো রাষ্ট্রের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এবং তার সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরা জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেও তোলে। ফলে রাজনীতি ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের উদাসীনতা ও অজ্ঞতা দূর হয় এবং তাদের মধ্যে অধিকার আদায়ের প্রবণতা সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় স্বার্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে। আবার, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দল বিকল্প সরকারের ভূমিকা পালন করে। বিরোধী দল সরকারের ভুলত্রুটি বা গণবিরোধী পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে। ফলে বিরোধী দলের সমালোচনার চাপে সরকারি দল জনকল্যাণকর কাজে উদ্যোগী হয়। সর্বোপরি প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিকল্প সরকার হিসেবে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্নভাবে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরের কার্যক্রমগুলো পরিচালনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দল জাতীয় উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. অধ্যাপক আবু নোমান একজন রাজনীতিক। তিনি সহজে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারেন। জনগণও তাকে অন্যভাবে বিশ্বাস করে। বিশেষ করে তার বক্তব্য ও ব্যক্তিত্ব জনগণকে উজ্জীবিত করে।
ক. বাংলাদেশের আইনসভার নাম কী?
খ. রাজনৈতিক দল বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আলোকে জনমত গঠনে কোন কোন মাধ্যম তুমি সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করো?
ঘ. একজন নেতার কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করো? উদ্দীপকের আলোকে তোমার মতামত লেখো।
◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. বাংলাদেশের আইনসভার নাম 'জাতীয় সংসদ'।
খ. রাজনৈতিক দল (Political party) হলো কোনো নীতি বা আদর্শের সমর্থনে সংগঠিত সংঘবিশেষ, যা সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনার চেষ্টা করে।
সাধারণত রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য থাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ, সরকার গঠন ও পরিচালনা, নিজেদের নির্বাচনি অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও সব নাগরিকের কল্যাণের জন্য কাজ করা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে জনগণ রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে পরোক্ষভাবে শাসন কাজে অংশগ্রহণ করে। তাই রাজনৈতিক দলই হলো প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের প্রাণ।
গ. উদ্দীপকের আলোকে জনমত গঠনে যোগ্য নেতৃত্ব, রাজনৈতিক দল এবং সভা-সমিতিকে আমি সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
উদ্দীপকের অধ্যাপক আবু নোমান একজন রাজনীতিক এবং তিনি তার বক্তব্য ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে জনগণকে উজ্জীবিত কন্ঠের মাধ্যমে নেতা হিসাবে তিনি জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি দিয়ে থাকেন। নিজের দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে জনমতকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসেন। তাছাড়া গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলকেই জনমত গঠনের শ্রেষ্ঠ বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজনৈতিক দল ব্যতীত জনমত থাকে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত। রাজনৈতিক দল তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে এ বিক্ষিপ্ত জনমতকে একটি সুসংগঠিত ৰ~প দিতে সক্ষম হয়। আবার, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে জনমত গঠনে সভা-সমিতির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন এবং বুদ্ধিজীবীরা সভা-সমিতির মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করে। এর ফলে অনগণ বিভিন্ন দল ও মতের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে সঠিক মতামত গ্রহণ করতে সমর্থ হয়। সুতরাং বলা যায়, উপরে উল্লেখিত কর্মকা- বা বাহনগুলোর মাধ্যমে সফলভাবে জনমত গঠিত হতে পারে।
ঘ. একজন নেতাকে আত্মসংযম, সাধারণ জ্ঞান, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎ সাহস, বিশ্বাস, আনুগত্যসহ বিভিন্ন গ্রুপের অধিকারী হতে হয়।
নেতৃত্ব দিতে হলে ব্যক্তিকে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য দূরদৃষ্টিসম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন একথা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নেতার দূরদৃষ্টি না থাকলে তিনি এমন নীতি অনুসরণ করবেন, যা টেনে আনবে হতাশা বা অন্ধকার। ন্যায়-নীতি নেতৃত্বের এক বিশেষ গুণ। ন্যায়-নীতি ছাড়া নেতার পক্ষে অনুসরণকারীদের উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয় না। নিজে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান না হলে অপরের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায় না। আত্মসংযমও নেতার বিশেষ গুণ। আত্মসংযম ছাড়া শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। আত্মবিশ্লেষণের ক্ষমতা ও সদাচরণ নেতৃতেবর উল্লেখযোগ্য গুণ। আকর্ষণীয় তথ্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বও নেতার একটি অপরিহার্য। গুণ। ব্যক্তিত্বের সম্মোহনী শক্তিই নেতাকে সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র করে তোলে এবং তিনি সবার আনুগত্য লাভ করেন। নেতার কর্ম, চিন্তাধারা, আচার-আচরণ তার ব্যক্তিত্বকে মোহনীয় করে তোলে। নেতার অভিজ্ঞতা এবং তার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তার কর্মপ্রবাহকে গতিশীল করে। অন্যদিকে অভিজ্ঞতার অভাব নেতৃত্বকে দুর্বল করে দিতে পারে। নেতার মধ্যে কেঠারতা ও কোমলতা এ উভয় গুণ থাকতে হবে। এছাড়া নেতা ও তার অনুসারীরা অন্যদের প্রতি হবেন নিরপেক্ষ। তার ন্যায়-নীতি হতে হবে প্রশ্নাতীত। কোন বাধা নেতার পথরোধে সক্ষম হবে না। এসব গুণ একজন ব্যক্তিকে আদর্শ নেতায় পরিণত করে।
জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং দেশকে এগিয়ে নিতে যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সঠিক নেতৃত্ব জাতিকে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।
৮. জনাব 'ক' একটি সংগঠনের সদস্য সংগঠনটির কর্মকা- সারা দেশে বিসত্মৃত। উক্ত সংগঠন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য জাতীয় সমস্যা বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি এগুলো সমাধানের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করে। অন্যদিকে 'ক' এর বন্ধু অন্য একটি সংগঠনের সদস্য। সংগঠনটি সুবিধা লাভের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহারে সচেষ্ট থাকে।
ক. জনমত কী?
খ. জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা লিখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' এর সংগঠনটি প্রধানত কোন কোন মাধ্যমকে ব্যবহার করে কর্মসূচি প্রণয়ন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠন দুটির মধ্যে কার কার্যক্রম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে? বিশ্লেষণ করো।
◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের সুচিন্তিত, যুক্তিসিদ্ধ ও কল্যাণকামী মতামতই জনমত, যা সরকার ও জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।
খ. সংবাদপত্র জনমত গঠনের অন্যতম মাধ্যম। সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে জনগণ দেশ-বিদেশের যাবতীয় খবরাখবর জানতে পারে। আবার সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণ বিভিন্ন অভাব অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সংবাদপত্র যেমন সরকারের প্রশংসা করে, তেমনি গঠনমূলক সমালোচনাও করে। আর এ সমালোচনার ভয়ে সরকার তার কার্যক্রম পরিচালনায় সংযত থাকে। এজন্যই বলা হয়। প্রেস যেভাবে বলে, জনমত সেভাবে গড়ে় ওঠে। তবে মিথ্যা ও বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করা উচিত নয়। কেননা, তা সুষ্ঠু জনমত গঠনে সহায়ক নয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' সংগঠনটির কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে নির্দেশ করে। রাজনৈতিক দল হলো নির্দিষ্ট মতাদর্শে সংগঠিত জনগোষ্ঠী, যা সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনা এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে। রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের দলীয় কর্মসূচি প্রণয়ন করে থাকে। যে সকল মাধ্যম ব্যবহার করে জনাব 'ক' এর সংগঠনটি বা রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচি পরিচালনা করে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
টেলিভিশন ও রেডিও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি প্রণয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রাজনৈতিক দল টেলিভিশন ও রেডিও প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে জাতীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জনগণকে সচেতন করে এবং বস্তুনিষ্ঠ বিষয়গুলো জাতির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে। সংবাদপত্র জনমত গঠনের অন্যতম মাধ্যম। রাজনৈতিক দল তাদের নানা কর্মসূচি সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণকে জানাচ্ছে। এটি দেশ-বিদেশের সব খবর জাতির সামনে তুলে ধরে। এটি সরকারের যেমন প্রশংসা করে, তেমনি গঠনমূলক সমালোচনাও করে। সভা-সমিতি জনমত গঠনের অন্যতম মাধ্যম। রাজনৈতিক দল সরকারের নীতি বহির্ভূত কর্মকা-গুলো সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরে এবং নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনে সচেষ্ট থাকে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠনে রেসকোর্স ময়দানে বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এছাড়াও পোস্টারিং, বিলবোর্ড ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল জনমত গঠনের চেষ্টা করে।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব 'ক' এর সংগঠনটি রাজনৈতিক দল, আর 'ক' এর বন্ধুর সংগঠনটি দিয়ে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। উল্লিখিত সংগঠন দুটির মধ্যে জনাব '' এর সংগঠন তথা রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে। গণতন্ত্রকে সফল করতে হলে প্রয়োজন সক্রিয়, সচেতন ও সদাজাগ্রত জনমত। রাজনৈতিক দল বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রচারের মাধ্যমে সেরূপ জনমত সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক দল সংবাদপত্র, প্রচারপত্র, সভা-সমিতি প্রভৃতির মাধ্যমে নিজ নিজ সঙ্গীয় নীতি ও কর্মসূচি প্রচার করে জনসমর্থন লাভের চেষ্টা করে। আবার, সরকারি দল নিজের সফলতাকে প্রকাশ ও। প্রচার করে জনমত গঠনের চেষ্টা করে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সরকারের বিভিন্ন জুটি-বিচ্যুতি জনগণের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালায়। রাজনৈতিক দল জনগণকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনুপ্রেরণা যোগায়। রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ও কর্মকা- জনগণকে রাজনৈতিক দিক থেকে সচেতন করে তোলে। আর রাজনৈতিক দলের নানামুখী প্রচারণায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে। ফলে সুস্থ ও সংহত জনমত গড়ে ওঠে। আবার, রাজনৈতিক দল দেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি ভেদাভেদ উপেক্ষা করে জাতীয় ঐকমত্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা গণতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠন দুটির মধ্যে 'ক' সংগঠনটির কার্যক্রম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে।
৯. 'ক' ও 'খ' দুটি সংগঠনের সদস্য। 'ক'-এর সংগঠনটি দেশের সমস্যাসমূহ চিহ্নিতপূর্বক তা সমাধানের লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি বিভিন্ন উপায়ে জনসমক্ষে তুলে ধরে। জনসমর্থনের মাধ্যমে তার সংগঠন ক্ষমতায় গিয়ে জনসেবা করতে চায়। অপরদিকে 'খ' এর সংগঠন গোষ্ঠীদ্বার্থকে প্রাধান্য দেয় এবং তা আদায়ের লক্ষ্যে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
ক. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কী?
খ. একদলীয়ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. 'ক'-এর সংগঠনটি কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে 'খ'-এর সংগঠন অপেক্ষা 'ক'-এর সংগঠনের গুরুত্ব বেশি- বিশ্লেষণ করো।
◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী (Pressure Group) হচ্ছে কোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
খ. রাষ্ট্রের মধ্যে যখন সাংবিধানিকভাবে একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব স্বীকৃত থাকে এবং সকল রাজনৈতিক কর্মকা- ঐ দলের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়, তখন তাকে একদলীয় ব্যবস্থা (One party system) বলে।
একদলীয় ব্যবস্থায় একটি দলই সব ক্ষমতার অধিকারী। এ ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন দল ব্যতীত অন্য সব দল নিষিদ্ধ। এতে দলীয় শৃঙ্খলা কেঠারভাবে মেনে চলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মানির এডলফ হিটলারের নাৎসি দল' এবং ইতালির বেনিতো মুসোলিনির 'ফ্যাসিস্ট দল' একদলীয় ব্যবস্থার উদাহরণ। এছাড়া বর্তমানে চীন, উত্তর কোরিয়া, কিউবা ইত্যাদি রাষ্ট্রে একদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত।
গ. উদ্দীপকের 'ক' এর সংগঠনটির কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল হলো নির্দিষ্ট মতাদর্শের ভিত্তিতে সংগঠিত জনগোষ্ঠী, যা সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন ও দেশ পরিচালনার লক্ষ্যে কাজ করে। কোন একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অভিন্ন মতাদর্শ ও নীতির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হন। দলের সদস্যদের মধ্যে কোন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকলেও দল বা জাতির সামগ্রিক কল্যাণের প্রয়োজনে সাধারণত তারা ঐকবদ্ধ থাকেন। সরকার গঠন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালায়। জনসমর্থন অর্জনের মাধ্যমে নির্বাচনে বিজয় লাভ এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে দলীয় আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে 'ক' এর সংগঠনটি দেশের সমস্যা সমাধানে জনগণের সামনে তাদের কর্মসূচি তুলে ধরে। সংগঠনটি জনসমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চায়। অতএব বলা যায় 'ক' এর সংগঠনটির কার্যক্রমের সাথে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে 'ক' এর সংগঠন দিয়ে রাজনৈতিক দল আর 'খ' এর সংগঠনের মাধ্যমে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। রাজনৈতিক দল বলতে এমন একটি সংঘকে বোঝায় যা কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন করতে চায়। আর চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হচ্ছে এমন একটি সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যা সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে এর নীতি ও কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের তুলনায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা অনেক সীমিত।
রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া অর্থাৎ সরকার গঠন করা। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্য হলো বিভিন্ন কৌশলে সরকারের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করা। এ থেকে স্পষ্ট, রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি গভীর ও ব্যাপক। আবার রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য যেহেতু বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ ও জনগণের কল্যাণ সাধন করা সেহেতু এটি অধিকতর জনমুখী। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত ও পরিচালিত। এর নেতৃত্ব ও কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্তরা একেকটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতিনিধি। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের সংগঠক, কর্মী ও সমর্থকরা সাধারণত আপামর জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সফল করতে হলে প্রয়োজন সক্রিয়, সচেতন ও সদাজাগ্রত জনমত। রাজনৈতিক দল বক্তৃতা-বিবৃতি ও প্রচারের মাধ্যমে সেরূপ জনমত সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক দলই জনগণ ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলকেই সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় না।
পরিশেষে বলা যায়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে বলিষ্ঠ রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন। সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রাণ। সে তুলনায় চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা ও পরিধি অনেক সীমিত। এসকল কারণেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী অপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
১০. সুষমা তার বন্ধু দী পেং এর দেশে বেড়াতে যায়। সে দেশের মহাপ্রাচীর দেখে সুষমা ভীষণ মুগ্ধ হয়। আরও বিস্মিত হয় এটা জেনে যে, তাদের আইনসভায় সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো বিরোধিতা নেই। অপরদিকে সুষমার দেশের সরকার যখন ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করে, তখন সরকার আইনসভার ভেতরে এবং বাইরে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়।
ক. উপদল কী?
খ. গণতন্ত্রে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা আলোচনা করো।
গ. সুষমা যে দেশে বেড়াতে গিয়েছে, সেখানে কোন ধরনের দলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সুষমার দেশের দলীয় ব্যবস্থার দোষ-গুণ বিশ্লেষণ করো।
◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. দলের কিছু সদস্য দলীয় নীতি ও কর্মসূচির কোনো ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে কিংবা ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীদ্বার্থ উদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ হলে তাকে উপদল বা কুচক্রী দল বলে।
খ. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হচ্ছে কোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো সরকারের কর্মকান্ডর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে। সরকারের নীতি অগণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী হলে তারা গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে সতর্ক করে দেয়। এতে কাজ না হলে তারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি পালনে বাধ্য করে।
গ. সুষমা যে দেশে বেড়াতে গিয়েছে, সেখানে একদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। মহাপ্রাচীরের উল্লেখ থাকায় দেশটি সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন বলে ধরে নেওয়া যায়। রাষ্ট্রের মধ্যে যখন সাংবিধানিকভাবেই একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকে এবং যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মকা- ঐ একটিমাত্র দলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তখন তাকে একদলীয় ব্যবস্থা বলে। এ ব্যবস্থায় একটি দলের কাছেই সব ক্ষমতা থাকে। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া আর কোনো দলের অনুমোদন থাকে না। একদলীয় ব্যবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা কেঠারভাবে মেনে চলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মানিতে হিটলারের প্রতিষ্ঠিত 'নাৎসি দল' এবং ইতালিতে মুসোলিনীর প্রতিষ্ঠিত 'ফ্যাসিস্ট দল’ একদলীয় ব্যবস্থার উদাহরণ। বর্তমান বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন, উত্তর কোরিয়া ও কিউবায় একদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, সুষমা যে দেশে বেড়াতে গিয়েছে, সে দেশের আইনসভায় সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো বিরোধিতা নেই। এতে প্রমাণিত হয় যে, সেখানে কোনো কার্যকর বিরোধী দল নেই। সুতরাং এটি একদলীয় শাসনব্যবস্থাকেই নির্দেশ করে যা চীনসহ কয়েকটি দেশে প্রচলিত।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সুষমার দেশে কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সংসদের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা হয়ে থাকে, যা বহুদলীয় ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। উদ্দীপক থেকে স্পষ্ট, এখানে জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতের কথাই বোঝানো হয়েছে।
কোনো দেশে রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের লড়াইয়ে দুইয়ের অধিক রাজনৈতিক দল সক্রিয় থাকলে তাকে বহুদলীয় ব্যবস্থা বলে। এধরনের ব্যবস্থায় কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকার গঠন করতে পারে; আবার অনেক সময় সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জোট সরকার গঠন করে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। এ ব্যবস্থার দোষ-গুণ উভয়ই রয়েছে। বহুদলীয় ব্যবস্থার গুণগুলো হলো
বহুদলীয় ব্যবস্থা সমাজের ভিন্নমুখী জনমত প্রকাশে সহায়তা করে। দেশে বিভিন্ন মত ও আদর্শের রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি থাকায় জনগণ পছন্দের দলের নীতি-আদর্শের সাথে একমত পোষণ করতে পারে। বহুদলীয় ব্যবস্থায় সাধারণত কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না।
বহুদলীয় ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল সভা, বিবৃতি ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তাদের নীতি ও কর্মসূচি তুলে ধরে। আবার, বিরোধী দল সরকারের কর্মকান্ডর সমালোচনা করে। এর ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটে।
বহুদলীয় ব্যবস্থায় অনেক সময় কোনো দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠন করা সম্ভব হয় না। এতে বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে জোট সরকার গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজের সংখ্যালঘু শ্রেণি বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারীরাও সরকার গঠনে অংশ নিতে দ্বীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারে।
আবার বহুদলীয় ব্যবস্থার কিছু দোষও বিদ্যমান। যেমন- এ ব্যবস্থায় সরকার সাধারণত স্বরস্থায়ী হয়। কারণ বিভিন্ন কারণে জনগণ বা সহযোগী দলের সমর্থন হারিয়ে ফেললে সরকারের পতন হতে পারে। বহুদলীয় ব্যবস্থার একটি বড় অসুবিধা হলো দলগুলোর মধ্যে অবিরাম অন্তর্ঘাত। এরূপ অন্তদ্বন্ধের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গন প্রায়ই বিশৃঙ্খল ও উত্তপ্ত থাকে। এ ব্যবস্থায় অনেক সময় অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। সরকার পরিচালনার জন্য তাদের আমলাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ সুযোগে সরকারে আমলাতন্ত্র প্রাধান্য বিস্তার করে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বহুদলীয় ব্যবস্থাই কাম্য। তবে দলগুলোকে নিয়মতান্ত্রিক, গণমুখী, সুশৃংখল তথা গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
0 Comments:
Post a Comment