এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download
পৌরনীতি ও সুশাসন
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৯
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer
১. একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ‘Z’ নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুসরণ করে—
i. আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা নীতি।
ii. স্বাধীন ও জোট নিরপেক্ষ নীতি।
iii. পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব।
ক. সার্কের সর্বশেষ সদস্য রাষ্ট্রের নাম কী?
খ. বৈদেশিক নীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে- তুমি কি একমত? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সার্কের সর্বশেষ সদস্য রাষ্ট্রের নাম আফগানিস্তান।
খ. যে নীতির সাহায্যে এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাই বৈদেশিক নীতি।
বর্তমানে কোনো রাষ্ট্রই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই সব রাষ্ট্রই কোনো না কোনো বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সাধারণত জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা হয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'Z' রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির সাথে আমার বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির সাদৃশ্য রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হলো সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়'। এ নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও সম্প্রীতির মনোভাব পোষণ করে। দেশটি পৃথিবীর কোনো দেশ বা জাতির বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আক্রমণ পরিচালনা করার দূরভিসন্ধি পোষণ করে না। বাংলাদেশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা ও সম্প্রীতির মনোভাব এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
উদ্দীপকে ‘Z’ রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির মূলকথা হলো আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা নীতি, স্বাধীন ও জোট নিরপেক্ষ নীতি, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত'। বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির মূল কথাও তাই। এ নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোসহ বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। সুতরাং বলা যায়, 'Z’ রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি তথা বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী রাষ্ট্র। বিশ্বের সব দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং কারও সাথে শত্রুতা নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করে। সেই আলোকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে চেষ্টা করছে। দেশটি স্বাধীন ও জোট নিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ নিজের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতায় বদ্ধপরিকর। বিশ্বশান্তির মহানব্রত নিয়ে জাতিসংঘ সনদ, কমনওয়েলথ, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, সার্ক ‘প্রভৃতি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের নীতি ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সরকার সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পাঠাচ্ছে। এ মিশনে বাংলাদেশর ভূমিকা আজ বিশ্বে সমাদৃত। তাছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বা যুদ্ধ সংঘটিত হলে বাংলাদেশ উদ্ভূত সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি অর্থাৎ বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২. 'ক' রাষ্ট্রের জন্মের পর রাষ্ট্রটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা করে।
ক. ওআইসি কী?
খ. কমনওয়েলথ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সংস্থা বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য কাজ করছে- তুমি কি একমত? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ওআইসি (OIC Organisation of Islamic Co-operation) হলো বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।
খ. কমনওয়েলথ হলো সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত বর্তমানে স্বাধীন এমন রাষ্ট্রসমূহ নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।
একসময় প্রায় সারা বিশ্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিসত্মৃত ছিল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলগুলো একের পর এক স্বাধীন হতে থাকে। ব্রিটেন ও এর শাসন থেকে মুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন ধরে রাখার লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালে কমনওয়েলথ গঠন করা হয়। ব্রিটেনের রাজা বা রানি হলেন এ সংগঠনটির প্রধান।
গ. 'ক' সংস্থার সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের মিল রয়েছে।
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের মহান ব্রত নিয়ে ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে উপস্থিত ৫০টি দেশের জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতিসংঘের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৩টি। বিশ্বশান্তি রক্ষা, অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোর আর্থ-সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বে ভ্রাতৃত্বমূলক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ‘ক’ রাষ্ট্রের জন্মের পর রাষ্ট্রটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এরপর থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখছে। তাই বলা যায় উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠনটির সাথে আমার পঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সংস্থা অর্থাৎ জাতিসংঘ বিশ্বের সবরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির জন্য কাজ করছে, বিষয়টির সাথে আমি একমত।
বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতার মহান লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ যাত্রা শুরু করে। শান্তি ও নিরাপত্তা যাতে বিঘি্নত না হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে জাতিসংঘ। কোনো রাষ্ট্রের সাথে অন্য এক বা একাধিক রাষ্ট্রের বিরোধ দেখা দিলে এ সংস্থাটি আলোচনা ও মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে। জাতিসংঘ আগ্রাসী ও শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে পারে। তাছাড়া সংগঠনটির নিরাপত্তা পরিষদ গোলযোগ ও যুদ্ধ বন্ধের জন্য শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে পারে।
জাতিসংঘ বিভিন্ন জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়। এছাড়া এটি আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করে। সংগঠনটি এ সব কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বের সব রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সংস্থা অর্থাৎ জাতিসংঘ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য কাজ করছে।
৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র ইউরোপ অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে অভিন্ন বাজার ব্যবস্থা ও মুদ্রা প্রতিষ্ঠাসহ আরো কিছু উদ্দেশ্যে ইউরোপের অধিকাংশ দেশের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট। এ জোট বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজার। এ ছাড়াও এ জোটের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে বহুবিধ সম্পর্ক।
ক. সার্কের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
খ. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোটের কথা বলা হয়েছে তার উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জোটের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আলোচনা কর।
৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সার্কের সদর দপ্তর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত।
খ. জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে বোঝায় বিশ্বের সামরিক জোট বা বৃহৎ কোনো রাষ্ট্রের জোটের মতাদর্শের বাইরে থেকে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।
উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির কথাই ধরা যাক। এদেশের বৈদেশিক নীতি স্বাধীন ও জোট নিরপেক্ষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনাসহ দেশের বড় বড় নেতা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে স্বাধীন ও জোট নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির কথা বলেছেন। বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ধারায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন পদ্ধতি গড়ে তোলার অধিকারে বিশ্বাসী, আর এ বিষয়টিই হলো জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মূলকথা।
গ. উদ্দীপকে যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোটের কথা বলা হয়েছে সেটি হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি আঞ্চলিক সংস্থা। ১৯৫৭ সালে পশ্চিম ইউরোপের ছয়টি দেশের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ সংস্থাটির জন্ম হয়। বর্তমানের এর সদস্য সংখ্যা ২৭। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এ সংগঠনটির সদর দপ্তর অবস্থিত। উদ্দীপকে এ সংস্থাটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উদ্দীপকের সংস্থাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে। এটি অভিন্ন বাজারব্যবস্থা ও মুদ্রা প্রতিষ্ঠাসহ আরও কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়। এ জোটটি বাংলাদেশি পণ্যের বড় বাজারও বটে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপীয় অর্থনীতি মহাসংকটে নিপতিত হয়। এ সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপকে সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয়। সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অভিন্ন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে বাণিজ্য ও অর্থনীতির উন্নয়নই ইইউ-এর প্রধান উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বর্তমানে ইইউ-এর দেশগুলোর মধ্যে একক মুদ্রা চালু হয়েছে। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে।
যেমন: ১. সদস্য রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যৌথ সম্পদ শক্তি অর্জন করা; ২. সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সম্পদের সর্বোচ্চ সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা; ৩. সদস্য দেশগুলোর উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করা। ৪ সদস্য দেশগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য স্বল্প উন্নত ও অনুন্নত রাষ্ট্রকে সহায়তা করা। এ আলোচনা থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সংস্থাটি অর্থাৎ ইইউ এর মূল লক্ষ্য হলো সদস্য দেশগুলোর সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জোট অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ২০০০ সালের ২২ মে ইইউ-এর সদর দপ্তর ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইইউ-এর মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ও ইইউ-এর মধ্যে বাণিজ্য, উন্নয়ন সহায়তা এবং আর্থিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ইইউ এদেশকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী সমাজের উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতি ইইউ সবসময়ই যত্নশীল। বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি বিষয়ে ইইউ বাংলাদেশে ব্যাপক সহায়তা করে থাকে। ইইউ বাংলাদেশের বাজার প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, ট্যারিফ ও ননট্যারিফ বাধা অপসারণ, তথ্য যোগাযোগ ও সংস্কৃতি খাতেও ব্যাপক অবদান রাখছে। এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়গুলোতেও ইইউ অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তৈরি পোষাক শিল্পে বাংলাদেশ ইইউ- এর কাছ থেকে পাচ্ছে সর্বাধিক জিএসপি সুবিধা। উল্লেখ থাকে যে অস্ত্র ছাড়া বাংলাদেশের সব পণ্যই ইইউ-এর কাছ থেকে জিএসপি সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া ইইউ-এর অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহে বহু বাংলাদেশিরা শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। এতে মানবসম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ইইউ-এর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই আন্তরিক।
৪. ফজলুল হক সম্প্রতি আফ্রিকা সফরে যান। তিনি দেখতে পান সেখানকার কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা তৈরি করে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে।
ক. কমনওয়েলথ কী?
খ. বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংস্থার সাথে তোমার পঠিত কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করাই উক্ত সংস্থার লক্ষ্য বিশ্লেষণ করো।
৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কমনওয়েলথ হলো কতগুলো স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাধীন সংস্থা।
খ. বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি হলো সরকার কর্তৃক প্রণীত অপরাপর রাষ্ট্রসমূহের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ও আচরণের নীতিমালা।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়' এ নীতি অনুসরণ করে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সব সময়ই বিংশ শতাব্দীর স্নায়ুযুদ্ধে প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমূহের পক্ষাবলম্বন থেকে বিরত থাকছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়ায় অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে সুদৃঢ় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংস্থার সাথে আমার পঠিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর সাদৃশ্য আছে।
সার্ক ১৯৮৫ সালে গঠিত একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট। শুরুতে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে এ আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে আফগানিস্তান এর সদস্যভুক্ত হয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত। উদ্দীপকে আফ্রিকায় কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা তৈরি এবং পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে যাওয়া সার্কের গঠন ও উদ্দেশ্যের সাথে মিল রয়েছে।
১৯৮০ সালে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতার কিছু প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধানের প্রস্তাব দেন। এর প্রতি এশিয়ার সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের পক্ষ থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়। এটা স্বীকৃত যে আঞ্চলিক সহযোগিতা সকল দেশের পক্ষেই কাম্য এবং সুবিধাজনক। এরই ফলশ্রুতিতে ঢাকায় সার্কের প্রথম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৫ সালে সার্কের যাত্রা শুরু হয়।
উদ্দীপকের ফজলুল হক আফ্রিকা সফরে গিয়ে দেখতে পান সেখানকার কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা তৈরি করে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। এ সংস্থাটির গঠন এবং কার্যক্রমের সাথে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার মিল আছে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক গঠন করে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের সংস্থার সাথে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক-এর সাদৃশ্য আছে।
ঘ. নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করাই উক্ত সংস্থা অর্থাৎ সার্ক-এর লক্ষ্য। বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করা হলো-
অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হলো আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট গঠন করা। তাই পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে গড়ে ওঠে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক। সার্ক সনদের ৮টি উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছেত i. দক্ষিণ এশীয় জনগণের কল্যাণ এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, ii. এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, সামাজিক অগ্রগতি সাধন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং প্রতিটি দেশের স্ব স্ব মর্যাদা সমুন্নত রেখে সহাবস্থানের সকল প্রকার সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা, iii. দেশগুলোর মধ্যে সমষ্টিগতভাবে আত্মনির্ভরশীলতা জোরদার করা iv. পারস্পরিক বিশ্বাস স্থাপন, সমঝোতা এবং অন্যের সমস্যা উপলব্ধি করা. প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতার প্রসার ঘটানো, v. অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সাথে সহযোগিতার প্রসার ঘটানো, vi. সর্বজনীন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করা, vii. আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। সার্ক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এর লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যদিও নানাবিদ কারণে সার্ক তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে পারেনি। সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর বাধার কারণে সার্কের মাধ্যমে বহুপক্ষীয় যে সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা ছিল তা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
পরিশেষে বলা যায় যে, সার্কের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিদ্যমান নানা সমস্যা থাকলেও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী মনোভাবের সমাপ্তির মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস সুদৃঢ় করার ওপর নির্ভর করছে সার্কের অগ্রগতি তথা লক্ষ্যের সঠিক বাস্তবায়ন।
৫. দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে বঙ্গোপসাগরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ মিটাতে পারেনি। অবশেষে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যায়। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ১৪ মার্চ ২০১২ তারিখে এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে। তাতে বাংলাদেশের অধিকার অর্জিত হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আশা করেন যে, বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
ক. কমনওয়েলথ গঠিত হয় কত সালে?
খ. সার্কের উদ্দেশ্য কী?
গ. উদ্দীপকের আলোকে মিয়ানমারের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অনুসৃত বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ পূরণ করা কীভাবে সম্ভব? মতামত দাও।
৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৩১ সালে কমনওয়েলথ গঠিত হয়।
খ. সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতিকে সামনে রেখে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করাই সার্কের উদ্দেশ্য।
সার্ক সনদে ৮টি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ সাধন ও জীবনমান উন্নয়ন; দেশগুলোর মধ্যে যৌথভাবে আত্মনির্ভরশীলতা জোরদার করা; সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ, সমস্যার নিষ্পত্তি ও পারস্পরিক বিশ্বাস স্থাপন করা; সদস্য দেশগুলোর বিভিনণ অগ্রগতির জন্য যৌথভাবে কার্যক্রম স্থির ও রূপায়ন করা; সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন ও সহযোগিতা জোরদার করা; সার্কভুক্ত ৮টি দেশ পারস্পরিক সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তার নীতি মেনে চলবে এবং একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে অটল থাকবে।
গ. মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির সব বৈশিষ্ট্যই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাকে উৎসাহিত করে। এ নীতির একটি অন্যতম দিক হলো আন্তর্জাতিক বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান। উদ্দীপকে বর্ণিত মিয়ানমারের সাথে বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে আমরা এ নীতির প্রতিফলন দেখতে পাই।
বঙ্গোপসাগরে নিজেদের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে আসছিল। এ দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের অধিকার স্বতঃসিদ্ধ জানার পরেও দেশটি মিয়ানমারের প্রতি কোনো ধরনের আক্রমণাত্বক নীতি গ্রহণ করেনি। বরং ন্যায্য অধিকার পেতে ২০০৯ সালে জার্মানির হামবুর্গ ভিত্তিক সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (International tribunal for the Law of the Sea- ITLOS) মামলা করে। সংগঠনটি ২০১২ সালে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ নিজ দেশের সমৃদ্ধি অর্জন ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ওপর সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল। তাই আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও দেশটি শক্তিপ্রয়োগ পরিহার করে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রয়াসী হয়। উদ্দীপকের ঘটনাটি যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ঘ. যেকোনো দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে পারস্পরিক আলোচনা শান্তিপূর্ণ সমাধান দিতে পারে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন যার বাস্তব উদাহরণ। আর এ প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ পূরণে শান্তিপূর্ণ আলাপ- আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।
শুধু নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা ধরনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এসব দেশ যদি শক্তি প্রয়োগ নীতি পরিহার করে বাংলাদেশের মতো শান্তিপূর্ণ সমাধানের নীতি গ্রহণ কোনো সংঘাত ছাড়াই কার্যকর সমাধান পেতে পারে।
সমস্যা সমাধানে আলাপ-আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আলোচনা যেকোনো বিষয়কেই সহজ এবং যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়। এক্ষেত্রে শত্রুতা নয় বরং মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পারস্পরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হলে কার্যকর ফল আশা করা যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের অধিকার অর্জন করেছেন এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, যেকোনো দেশই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধান করতে পারে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির মূলকথা হলো পৃথিবীর সব দেশর সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পক গড়ে তোলা। অন্যদিকে নিজেদের অধিকার, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ পুরোপুরি সচেতন। এক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ নীতি পরিহার করে আলোচনার নীতি অনুসরণের ওপরই প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। আর তার এ আশাবাদ পূরণে পারস্পরিক বিরোধে জড়িত দেশগুলো বাংলাদেশের এ নীতি অনুসরণ করতে পারে।
৬. সত্তরের দশকে একটি দেশ একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একত্রিত হয়ে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত পোষণ করেন এবং সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ক. বৈদেশিক নীতির সংজ্ঞা দাও।
খ. কেন 'সার্ক' গঠিত হয়েছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠনটির সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের যে সংগঠন এর সাদৃশ্য আছে সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠনটিতে বাংলাদেশের ভূমিকা মূল্যায়ন করো।
৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে নীতির সাহায্যে এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাই বৈদেশিক নীতি।
খ. দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি এবং সহযোগিতা তৈরির লক্ষ্যে সার্ক গঠিত হয়েছিল।
বর্তমান বিশ্বে আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র জোটবদ্ধ হয়ে উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সার্ক এমনি একটি সংস্থা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধন করে সার্কভুক্ত দেশগুলোর জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করাই সার্কের প্রধান লক্ষ্য।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠনটির সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের OIC সংগঠনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ইসলামি ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য আর সৌহার্দ্যের যে মহান শিক্ষা রাসুল (স) আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাকে ভিত্তি করে ইসলামের আধ্যাত্মিক, নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ সংরক্ষণের অঙ্গীকার নিয়ে ওআইসি (OIC) গঠিত হয়। ওআইসি (OIC)- এর পূর্ণরূপ হলো Organisation of Islamic Co-operation. উদ্দীপকেও এ সংগঠনটির প্রতিফলন লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, সত্তরের দশকে একটি দেশ একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একত্রিত হয়ে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে। এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় গোটা মুসলিম বিশ্বে। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ আগস্ট ১৪টি আরব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা কায়রোতে আলোচনায় বসেন। এর পর অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ২৪টি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানগণ মরক্কোর রাজধানী রাবাতে একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের ২২ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত মুসলিম মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে জেদ্দায় OIC-এর সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এভাবেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ সংস্থা OIC (ওআইসি) সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। উদ্দীপকেও এ সংগঠনের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
ঘ. বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে OIC-এর সদস্যপদ লাভ করার পর থেকে এর বিভিন্ন সাংগঠনিক ও কমিটিতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ওআইসিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশকে এর প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, অঙ্গসংগঠন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটির সদস্য করা হয়েছে। ১৯৮৩ সালের ৬-১০ ডিসেম্বর ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওআইসি-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে যথাসম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অব্যাহত সমর্থন জানিয়ে আসছে, ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, আফগানিস্তানে রাশিয়ার আগ্রাসনকে নিন্দা জানিয়েছে, বসনিয়া যুদ্ধ বন্ধের জন্য সৈন্য পাঠিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী আরব দেশগুলোর উপকূলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মার্কিন হামলার নিন্দা করে। বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ওআইসি-এর সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করে। বাংলাদেশ ওআইসিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এ সংগঠন থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধাও অর্জন করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, ওআইসিতে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
৭. বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক সংস্থার সদস্য সংস্থাটি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা তৈরিতে কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নই এর মূল লক্ষ্য। এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এর সদস্য সংখ্যা আট।
ক. প্রতিবন্ধি কারা?
খ. ওআইসি (OIC) কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
গ. উদ্দীপকে যে আঞ্চলিক সংস্থার কথা বলা হয়েছে সেটির মূলনীতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক মূল্যায়ন করো।
৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতিবন্ধি হলো তারা যারা দৈহিক, মানসিক ও বোধ শক্তিজনিত অসুবিধার কারণে যথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালনে অক্ষম এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত।
খ. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে ওআইসি (OIC) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
মুসলিম দেশগুলোর সর্ববৃহৎ সংগঠনের নাম হল ওআইসি(OIC), যার পূর্ণরূপ — Organisation of Islamic Cooperation। এটি বিশ্বের সব মুসলিম রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মুসলমানদের স্বার্থে ভূমিকা রাখা ওআইসি (OIC) গঠনের অন্যতম কারণ।
গ. উদ্দীপকে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের কথা বলা হয়েছে।
সার্ক একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করে আঞ্চলিক অখ-তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা সার্ক (SAARC) গঠনের মূল উদ্দেশ্য। উদ্দীপকের আঞ্চলিক সংস্থারও অনুরূপ উদ্দেশ্য লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি আঞ্চলিক সংস্থার সদস্য। সংস্থাটি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা তৈরিতে কাজ করছে। এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এর সদস্য সংখ্যা আট। এ তথ্যগুলো দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক (SAARC- South Asian Association for Regional Cooperation)-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী আটটি রাষ্ট্র নিয়ে সংস্থাটি গঠিত। সার্ক গঠনে বাংলাদেশই উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে। ১৯৮৫ সালের ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সংস্থাটি গঠিত হয়। সার্কের মূলনীতিগুলো হলো- এ সংস্থার যেকোনো সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হবে; দ্বিপক্ষীয় বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো এ সংস্থায় আলোচনার জন্য তোলা হবে না;
সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অপরের ওপর কোনো প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করে আঞ্চলিক অখ-তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নীতি মেনে চলা; এবং পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার নীতিকে সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা। সর্বোপরি এর অন্যতম মূলনীতি হলো সবসময় এ অঞ্চলের দেশগুলোর আশা আকাঙ্খার প্রতি লক্ষ রেখে সংগঠনটির ভূমিকা পালন।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থা অর্থাৎ সার্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ট।
সার্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর স্বপ্ন দ্রষ্টা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সার্ক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে ১৯৮৫ সালে ঢাকায় সংস্থাটি গঠিত হয়। তবে বাংলাদেশের ভূমিকা শুধু সার্ক গঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর যেকোনো সমস্যা সমাধানে সক্রিয় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
সার্ক গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোগী ভূমিকা সর্বজনবিহিত। সংগঠনটির জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশ এর বিভিন্ন কর্মকান্ড বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। অন্যতম সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সার্কভুক্ত দেশগুলোর কৃষি, আবহাওয়া, পল্লি উনণয়ন, বিজ্ঞান, যোগাযোগ, শিক্ষা, পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও অবাধ করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে ইসলামাবাদে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (SAFTA- South Asian Free Trade Area) এর আগে ১৯৯৩ সালের ১১ এপ্রিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল SAPTA SAARC Preferential Trading Arrangement। এর ফলে বাংলাদেশের সাথে সার্কের সদস্য দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়। এছাড়া মানব পাচার রোধ, সন্ত্রাস দমন ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোকে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক নানা ধরনের যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৮৮ সালে সার্ক কৃষি তথ্যকেন্দ্র (SAC- SAARC Agriculture Centre) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নে এ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, সার্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত সক্রিয়। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা এবং এর পরবর্তী সব কার্যক্রমে এদেশের অংশগ্রহণ একথাই প্রমাণ করে।
৮. বাংলাদেশ ২০১২ সালে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার শান্তি রক্ষা মিশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ দেশ পুনর্গঠন ও উন্নয়নে সংস্থাটি পরামর্শক হিসেবে কাজ করে।
ক. বাংলাদেশ কত সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে?
খ. বৈদেশিক নীতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংস্থাটির গঠন লেখ।
ঘ. ‘‘বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ উক্ত সংস্থার সবচেয়ে সক্রিয় অংশীদার।"— বিশ্লেষণ করো।
৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।
খ. যে নীতির সাহায্যে এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাই বৈদেশিক নীতি।
বর্তমান বিশ্বে কোনো রাষ্ট্রই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সব রাষ্ট্রই কোনো না কোনো বিষয়ে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সাধারণত জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা হয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংস্থাটি হলো জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, যার লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইন, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্রের জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৯৩টি এর প্রধান অঙ্গসংস্থাগুলো হলো- সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, অছি পরিষদ, আন্তর্জাতিক আদালত এবং জাতিসংঘ সচিবালয়।
সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের আইনসভার মতো। বিশ্বশান্তি ও সহযোগিতায় এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া এটাই একমাত্র পরিষদ যেখানে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও প্রতিনিধিত্বের অধিকারী হিসেবে অবস্থান করে।
জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী শাখা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মূল দায়িত্ব এ পরিষদের। এটি মোট ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে পাঁচটি স্থায়ী এবং বাকি ১০টি অস্থায়ী (যাদের মেয়াদকাল ২ বছর) সদস্য রাষ্ট্র। নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধ বন্ধের জন্য পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে পারে। বিশ্বকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ গঠিত হয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নে এ সংস্থার ভূমিকা অনন্য।
বিশ্বের যেসব জনপদের পৃথক সত্তা/পরিচয় আছে কিন্তু স্বাধীনতা নেই এবং অন্য রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় তাকে অছি এলাকা বলে। এসব এলাকার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব জাতিসংঘের অছি পরিষদের। বর্তমানে এ পরিষদের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিবাদ মীমাংসার লক্ষ্যে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালত গঠন করা হয়েছে। এর সদর দপ্তর নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত। জাতিসংঘ সচিবালয় হলো এর প্রশাসনিক বিভাগ। বিশ্বশান্তি, সহযোগিতা যোগাযোগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এ শাখার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।
ঘ. বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ উক্ত সংস্থা অর্থাৎ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের শান্তিরক্ষা মিশনের সবচেয়ে সক্রিয় অংশীদার। উদ্দীপকে উল্লিখিত মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী United Nations Iran Iraq Military Observer Group (UNIIMOG)-র অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন শুরু করে। এরপর থেকে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা মিশনের প্রধান অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৩৮টি রাষ্ট্রে ৫৪টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনাসদস্য প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে প্রায় ১১,০০০ সেনাসদস্য পাঠিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১২টি দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে এদেশের সেনাসদস্যরা কর্মরত আছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান খুবই গৌরবের। এ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কমান্ডার হিসেবে ও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিবিসি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের 'The cream of UN peacekeepers' বলে আখ্যায়িত করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও সহায়তা করছে। ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের এ অবদান আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
এভাবে জাতিসংঘ বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আমাদের দেশকে সাহায্য করে যাচ্ছে। বাংলাদেশও জাতিসংঘ সনদের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল থেকে এর বিভিন্ন অধিবেশনে যোগদান করে এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ সেনাবাহিনীতে সেনাসদস্য পাঠিয়ে বিশ্বশান্তি রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
৯. দেশের উত্তরাঞ্চলের জনগণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনগ্রসর ছিল। উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহ অনগ্রসরতা কাটিয়ে উন্নতির লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মিত হওয়ার পর যোগাযোগ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হলে দু'অঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পায়। অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় অঞ্চলের জনগণ উপকৃত হতে থাকে।
ক. SAARC এর পূর্ণরূপ লিখ।
খ. কী উদ্দেশ্যে সার্ক গঠিত হয় লিখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সহযোগিতার সফলতাকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অনুরূপভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হলে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রসমূহ লাভবান হবে বলে তুমি মনে কর কি? মতামত দাও।
৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. SAARC এর পূর্ণরূপ হলো- South Asian Association for Regional Cooperation.
খ. দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ঐক্য স্থাপন ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে সার্ক গঠিত হয়।
সার্ক একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ) নিয়ে এটি গঠিত হয়; ২০০৭ সালে আফগানিস্তান এর সদস্যপদ লাভ করায় সংস্থাটির বর্তমান সদস্য রাষ্ট্র ৮টি। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ সাধন ও জীবনযাত্রার মান উনণয়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা, বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে যৌথ প্রচেষ্টা গ্রহণ, পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ মীমাংসা প্রভৃতি উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য সার্ক গঠিত হয়।
গ. উদ্দীপকে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। একটি অগ্রসর অঞ্চল পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকে বিভিন্ন সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের জনগণের সমৃদ্ধি অর্জনে সফলতা আসে।
উদ্দীপকের সহযোগিতার সফলতাকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নানাভাবে কাজে লাগানো যায়। এক্ষেত্রে প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। আবার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো যেসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে উন্নত দেশগুলো সহযোগিতার মাধ্যমে তা দূর করতে পারে। উদ্দীপকের ঘটনায় যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মিত হওয়ায় যেমন যোগাযোগব্যবস্থা ত্বরান্বিত হয়েছে, তেমনি সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনিভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা অর্জনের ক্ষেত্রে সমন্বিতভাবে কাজ করা যায়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সকল রাষ্ট্রের প্রতি শুভেচ্ছা, সহযোগিতা ও সম্প্রীতি প্রদর্শন করতে হবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিশ্বের সব দেশের সাথে বন্ধুতাপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো লাভবান হবে। এক্ষেত্রে উন্নত দেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
ঘ. আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হলে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অথবা অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা লাভ করে লাভবান হতে পারে। জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ সংস্থার অনেকগুলো সহযোগী সংগঠন রয়েছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কৃষি, নারী অধিকার, মানবাধিকারসহ নানা ক্ষেত্রে গঠনমূলক অগ্রগতির আনয়নে এ সংস্থাটি কাজ করে চলেছে। তাছাড়া ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে।
বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো যদি বিভিন্ন উন্নয়ন ও দাতা সংস্থার বত্যিকার সহযোগিতা পায় তাহলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশপাশি সব ক্ষেত্রেই তারা উন্নতি করবে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো এক্ষেত্রে প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হওয়া দরকার।
১০. সাম্প্রতিককালে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষণীয়। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। আন্ত-রাষ্ট্রিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ বহুবিধ সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্য এই সংস্থাটি নির্ধারণ করে। অবশ্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে সংস্থাটি কাঙি্ক্ষত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।
ক. বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা কত ?
খ. জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কীভাবে গঠিত হয়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থাটির নাম কী? এই সংস্থাটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করো।
ঘ. উক্ত সংস্থা গঠনে বাংলাদেশের ভূমিকা আলোচনা করো।
১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩।
খ. জাতিসংঘের সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো নিরাপত্তা পরিষদ।
নিরাপত্তা পরিষদ ৫টি স্থায়ী (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন) ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্যদের ভোটে প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচিত হয়। এরা দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থাটি হলো সার্ক।
উদ্দীপকের সংস্থাটি সম্পর্কে বলা হয়েছে ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। এ তথ্যগুলো সার্ক (SAARC- South Asian Associaton for Regional Cooperation)- এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, সার্ক হলো দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা এবং এটি ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সার্ক সনদ (১৯৮৫ সালে ঢাকা শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষিত) অনুযায়ী সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো:
১. দক্ষিণ এশিয়ার জনসাধারণের কল্যাণ সাধন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
২. এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা; সদস্য দেশগুলোর মর্যাদা সমুন্নত রেখে সহাবস্থানের সব ধরনের সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করা।
৩. সার্কভুক্ত দেশগুলোর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সহায়তা দান।
৪. আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান করা।
৫. অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৬. বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৭. সর্বজনিন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করা।
৮. আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।
ঘ. উক্ত সংস্থা অর্থাৎ সার্ক গঠনে বাংলাদেশের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।
সার্ক প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অভিন্ন। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশ। এজন্য একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। এ প্রচেষ্টার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে এদেশের মাটিতেই সার্কের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
১৯৮০ সালের মে মাসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গঠনের আশা ব্যক্ত করেন। উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম ও তৎপরতার পর ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮৫ সালের ৭-৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়।
এ সম্মেলনে ৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধান যোগ দেন। অবশেষে ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় সার্ক সনদ স্বাক্ষর এবং ঐতিহাসিক ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা জন্মলাভ করে। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ সার্কের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, এজন্য কার্যকর উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার সফল পরিসমাপ্তিতে সার্কের প্রতিষ্ঠা এ সব কিছুর সাথেই বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তাই বলা যায়, সার্ক গঠনে বাংলাদেশের ভূমিকাই প্রধান।
0 Comments:
Post a Comment