এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download
পৌরনীতি ও সুশাসন
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer
১. রক্তাক্ত সংগ্রামের পর 'ক' রাষ্ট্র স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের এক বছরের মধ্যেই তারা পৃথিবীর একটি অন্যতম সেরা সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। যা গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়।
ক. বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কয়টি?
খ. মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধানের সাথে তোমার পঠিত কোনো দেশের সংবিধানের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধান অনুযায়ী ‘‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।’ - বিশ্লেষণ করো।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হলো চারটি।
খ. মৌলিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রপ্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায় যা ব্যতীত নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব নয়।
মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য যে সকল অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বলবৎ হয় সেইগুলোই মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। মৌলিক অধিকার ব্যতীত সভ্য জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ তাদের শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজের মূলভিত্তি হলো মৌলিক অধিকার।
গ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের সংবিধানের সাথে আমার পঠিত বাংলাদেশের সংবিধানের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্রেরই একটি সংবিধান থাকে। কারণ সংবিধানের ভিত্তিতেই একটি রাষ্ট্রের সকল কর্মকা- পরিচালিত হয়। এ কারণেই স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশের একটি সংবিধান প্রণীত হয়। এই সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলনই 'ক' রাষ্ট্রের সংবিধানের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে 'ক' রাষ্ট্রটি স্বাধীনতা লাভের পর দ্রুততম ময়ের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করে। এর মূলনীতি হিসেবে যে বিষয়গুলোকে গণ্য করা হয় সেগুলো হলো জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বাংলাদেশের সংবিধানের ক্ষেত্রেও এ বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। আর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এরপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর পরই তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অনতিবিলম্বে সংবিধান প্রণয়নে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর এটি গণপরিষদ কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। এই সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ৪টি বিষয়কে নির্দিষ্ট করা হয়। এগুলো হলো বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতির ভিত্তিতে গড়ে় ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদ। শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র। মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান এবং জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে গণতন্ত্র। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা বিলোপ ও সকল ধর্মের মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা। এ আলোচনা থেকে বাংলাদেশের সংবিধান এবং 'ক' রাষ্ট্রের সংবিধানের সাদৃশ্য প্রমাণিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী 'জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস'ত বক্তব্যটি যথার্থ।
বাংলাদেশ সংবিধানের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ সংবিধানে জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে- 'জনগণই সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস'। জনগণ প্রত্যক্ষভাবে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনা করবে। অর্থাৎ এ সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন রয়েছে। গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ঘোষণা করে সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণের ক্ষমতায়ন স্বীকার করে নেয়ার পাশাপাশি মৌলিক অধিকারকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আইন ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। সর্বক্ষেত্রে জনগণের ক্ষমতায়ন হলেও দেশ আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। আইনের দ্বারা প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিধিব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে। জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে দেশের সর্বত্র অবাধে চলাফেরা, এর যে কোনো স্থানে বসবাস, শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার সকলের থাকবে।
পরিশেষে বলা যায়, গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এর প্রতি অদম্য স্পৃহাই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই সংবিধানে গণতন্ত্র তথা জনগণের ক্ষমতায়নকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূল স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
২. জনাব রশিদ একটি সংগঠনের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব নেবার পর তিনি সংগঠনটি পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করেন। সংগঠনটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও অন্যান্য সংগঠনের নীতিমালা পর্যালোচনা করে নীতিমালাটি তৈরি করা হয়। নীতিমালায় সদস্যদের অধিকার ও কর্তব্য, সংগঠন পরিচালনার মূলনীতি লিপিবদ্ধ করা হয়। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি লক্ষ রেখে নীতিমালাটি বেশ কয়েকবার সংশোধন করা হয়েছে।
ক. স্থানীয় শাসন কাকে বলে?
খ. মৌলিক অধিকার কেন প্রয়োজন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নীতিমালার সাথে বাংলাদেশ সংবিধান প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিগত মিল কোথায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘‘উক্ত নীতিমালাটির সংশোধন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক"- বিশ্লেষণ করো।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, রাজস্ব আদায় এবং সরকারি নীতি, আদর্শ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকে স্থানীয় শাসন বলে।
খ. মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা এবং সুস্থ, সুন্দর জীবন পরিচালনার জন্য মৌলিক অধিকার প্রয়োজন।
যেসব অধিকার পূরণ ব্যতীত মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাই মৌলিক অধিকার। যেমনত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের অধিকার। এসব অধিকার পূরণ ছাড়া নাগরিকরা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। তাই বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
গ. আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের দিক বিবেচনায় উদ্দীপকের নীতিমালার সাথে বাংলাদেশ সংবিধানের পদ্ধতিগত মিল রয়েছে।
১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি পরিচালনার মূল দলিল হিসেবে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরে গণপরিষদ আদেশ জারি ও সংবিধান কমিটি গঠন করা হয় এবং যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এ সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছিল। উদ্দীপকের নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও এ ধরনের কর্মতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সংগঠনের প্রধান নির্বাহী হিসেবে জনাব রশিদ সংগঠনটি পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন। এক্ষেত্রে সদস্যদের সাথে আলোচনা, অন্যান্য সংগঠনের নীতিমালা পর্যালোচনা প্রভৃতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়। সংবিধান রচনার জন্য ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি 'গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। এ আদেশবলে গণপরিষদ প্রথম অধিবেশনে আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কয়েকজন সদস্য যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ সফর করে তাদের সংবিধান পর্যালোচনা করেন। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদে তারা একটি খসড়া সংবিধান বিল উত্থাপন করেন। এটি প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পাঠ শেষে সর্বসম্মতিক্রমে ৪ নভেম্বর গৃহীত হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সংগতি রেখে এটি এ পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের নীতিমালা প্রণয়নের সাথে বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়নের সুস্পষ্ট প্রতিফলন রয়েছে।
ঘ. উক্ত নীতিমালাটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক উক্তিটি যথার্থ।
সরকারের বিভিন্ন কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মনোভাব, আইনের শাসন, শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণ এসব সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায়, আইনের শাসন নিশ্চিত হয় এবং মানুষের মৌলিক অধিকার একটি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আসে। এজন্য সংবিধানকে গতিশীল ও যুগোপযোগী করা আবশ্যক।
সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক শক্তি হচ্ছে একটি উত্তম সংবিধান। সমাজ ও রাজনীতি যেমন পরিবর্তনশীল তেমনি সংবিধানও নিয়ত পরিবর্তনশীল। গতিশীল রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থার সাথে রাষ্ট্রীয় নীতিমালাকে খাপখাওয়াতে কখনো কখনো দেশের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সমাজ ও রাজনীতির অগ্রগতি ও প্রগতির সাথে সাথে যদি সংবিধানের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সূচিত না হয় তাহলে সমাজ স্থবির হয়ে পড়ে এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়; রাষ্ট্রীয় কল্যাণ ব্যাহত হয়। সর্বোপরি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়। কাজেই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের সংবিধানে সংশোধনী এসেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সমানভাবে প্রযোজ্য। পরিশেষে বলা যায়, সংবিধান সংশোধন যদি জনগণের কল্যাণে হয় তবে সংবিধান সংশোধন সুশাসন বয়ে আনে।
৩. সুমাইয়ার দেশের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি এ ‘সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য। এ সংবিধান সংশোধনের জন্য আইনসভার তিন-চতুর্থাংশের সদস্যদের সমর্থন প্রয়োজন। সংবিধানটিতে জনগণের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ থাকলেও রাষ্ট্র চালনার মূলনীতির' কোনো উল্লেখ নেই।
ক. সংবিধানের কোন সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়?
খ. বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু কী ছিল? ব্যাখ্যা করো।
গ. সুমাইয়ার দেশের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশ সংবিধানের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. বাংলাদেশের সংবিধান সুমাইয়ার দেশের সংবিধান অপেক্ষা উত্তম-তুমি কি একমত? যুক্তি দিয়ে লেখো।
৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়।
খ. বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু হলো রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন।
নতুন এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকার লাভ করেন। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি মন্ত্রিসভা থাকবে বলে বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ তার কার্য ও নীতির জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকবে। মোটকথা, দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সংকুচিত করে প্রধানমন্ত্রীকে অসীম ক্ষমতাশালী করা হয়।
গ. উদ্দীপকে সুমাইয়ার দেশের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের বেশ কিছু সাদৃশ্য রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সংবিধানের ২২নং অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ২৬-৪৭নং অনুচ্ছেদে।
উদ্দীপকের সুমাইয়ার দেশের সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে লিখিত সংবিধান, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. বাংলাদেশের সংবিধান সুমাইয়ার দেশের সংবিধান অপেক্ষা উত্তম- বক্তব্যটির সাথে আমি একমত।
উদ্দীপকে সুমাইয়ার দেশের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের যেসব বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে তা হলো- লিখিত সংবিধান, সংসদীয় সরকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার। তথাপি উদ্দীপকের সুমাইয়ার দেশের সংবিধান অপেক্ষা বাংলাদেশের সংবিধান উত্তম। কেননা, বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত আছে; যা সুমাইয়ার দেশের সংবিধানে নেই। এই দিক থেকে বাংলাদেশের সংবিধান উত্তম। বাংলাদেশের সংবিধানের ২য় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ লিপিবদ্ধ করা আছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি হলো- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
বাংলাদেশের আইনসভা এককক্ষ বিশিষ্ট। এবং বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিও সামঞ্জস্যপূর্ণ। সহজও নয়, আবার কঠিনও নয়। যা সুমাইয়ার দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি অপেক্ষা শ্রেয়। এই দিক থেকেও বাংলাদেশের সংবিধান উত্তম। তাই উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতির উল্লেখ থাকায় বাংলাদেশের সংবিধান উদ্দীপকের সুমাইয়ার দেশের সংবিধান অপেক্ষা উত্তম।
৪. রাইমার দেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং শক্তিশালী মন্ত্রিপরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। আইনসভার সদস্যদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ক. কত তারিখে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়?
খ. পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতিতে কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংবিধানে বাংলাদেশ সংবিধানের কোন বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিফলিত হয়নি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাইমার দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির তুলনায় তোমার দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য। উক্তিটির সপক্ষে তোমার মতামত পেশ করো।
৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়।
খ. পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের ৪টি মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র ছাড়া বাকি তিনটিতেই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
পঞ্চম সংশোধনীতে জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা আনা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশবাস আনা হয়। পঞ্চম সংশোধনীতে সমাজতন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার হিসেবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি করা হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাইমার দেশের সংবিধানে বাংলাদেশ সংবিধানের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়নি। নিচে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. সর্বোচ্চ আইন : বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে দেশের প্রচলিত কোনো আইনের সংঘাত সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে সংবিধান প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ যদি কোনো আইন সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যহীন হয়, তাহলে ঐ আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হয়ে যাবে। রাইমার দেশের সংবিধানে এ ধরণের কিছু বলা হয়নি।
২. প্রজাতন্ত্র : বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম ভাগ ছিল নতুন প্রজাতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট এবং আনুষ্ঠানিক বহিঃপ্রকাশ। এটি বাংলাদেশকে একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে। এতে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানা, রাষ্ট্রভাষা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, জাতীয় প্রতীক, জাতীয় ফুল এবং জাতীয় স্বাতমত্ম্র্যকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। রাইমার দেশের সংবিধানে প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : রাইমার দেশের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা কিছু না বলা হলেও বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে ২২নং অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে একটি সর্বোচ্চ আদালত স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। বলা হয় এর নাম হবে সুপ্রিম কোর্ট।
পরিশেষে বলা যায় যে, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও বাংলাদেশের সংবিধানের আরো অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রাইমার দেশের সংবিধানে বলা হয়নি।
ঘ. রাইমার দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির তুলনায় আমার দেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য। আমি উক্তিটির সাথে একমত।
উদ্দীপকের বর্ণনায় দেখা যায় যে, রাইমার দেশের আইনসভার সদস্যদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ বিধি অনুযায়ী সংবিধান পরিবর্তন করতে সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পাওয়া একটি দুঃসাধ্য বিষয়। মোটকথা, এটি আধুনিককালে গ্রহণযোগ্য কোনো পদ্ধতি হতে পারে না। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করতে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। যেমন- বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে,
(১) এই সংবিধানে যা বলা হয়েছে, তা সত্ত্বেও
(ক) সংসদের আইনের দ্বারা এই সংবিধানের কোনো বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে,
(খ) উপরিউক্ত উপায়ে কোনো বিল গৃহীত হবার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট তা উপস্থাপিত হলে উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে তিনি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে।
(অ) অনুরূপ সংশোধনীর জন্য আনীত কোনো বিলের সম্পূর্ণ শিরোনামায় এই সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন করা হবে বলে স্পষ্টরূপে উল্লেখ না থাকলে বিলটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা যাবে না;
(আ) সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই তৃতীয়াংশ গৃহীত না হলে অনুরূপ কোনো বিলে সম্মতিদানের জন্য তা রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হবে না;
উপরিউক্ত বর্ণনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, রাইমার দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
৫. অধ্যাপক নাজমা আক্তার শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করতে গিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয়। ইচ্ছে করলেই সংবিধান সংশোধন করা যায় না। এটি সংশোধন করার পদ্ধতি স্পষ্ট করে সংবিধানের দশম ভাগ এ উল্লেখ রয়েছে। সেখানে সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন, সংশোধন ও পরিমার্জন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ক্ষমতাই চরম ও চূড়ান্ত।
ক. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন কোনটি?
খ. প্রজাতন্ত্র বলতে কি বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশ সংবিধান পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশ সংবিধান পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বিশ্লেষণ করো।
৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হলো সংবিধান।
খ. যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন তাকে প্রজাতন্ত্র বলে।
প্রজাতান্ত্রিক সরকার গণতান্ত্রিক সরকারের একটি রূপ। তবে সব প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের পদ্ধতি একইরূপ নয়। কোনো কোনো প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশ সংবিধান সংশোধনের বিশেষ পদ্ধতিটি হলো সংশোধন প্রক্রিয়া।
প্রত্যেক দেশের সংবিধানে এর সংশোধনের বিধান থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪২নং অনুচ্ছেদে সংশোধনের নিয়মাবলি বিস্তারিতভাবে লিখিত আছে। বাংলাদেশ সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় এবং একে সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতিতে সংশোধন করা যায় না, বরং বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমেই সংশোধন করা যায়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৪২নং অনুচ্ছেদের প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে যে, জাতীয় সংসদ সংবিধানের যেকোনো বিধানকে সংশোধন করতে পারে।
সংবিধান সংশোধনের কোনো বিলই সংসদের বিবেচনার জন্য গ্রহণ করা হবে না, যদি না উক্ত বিলের শিরোনামে সংবিধানের কোনো বিধান সংশোধন করা হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকে। সংবিধান সংশোধনের বিল সংসদের মোট সদস্যের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হতে হবে। এভাবে কোনো বিল গৃহীত হলে সেই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য তাঁর নিকট পেশ করা হবে। এরূপে সংসদে গৃহীত কোনো সংবিধান সংশোধনী বিল যখন রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠানো হয় তখন তিনি সাত দিনের মধ্যে বিলটিতে সম্মতিদান করবেন। কিন্তু তিনি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য করা হবে।
ঘ. বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন ও পরিমার্জনের ক্ষমতা শুধু জাতীয় সংসদের।
বাংলাদেশ সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। সংবিধানে লিখিত আছে যে, জাতীয় সংসদ সংবিধানের যেকোনো বিধানকে সংশোধন করতে পারে। সংবিধান সংশোধনের বিল সংসদের মোট সদস্যের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হতে হবে। এভাবে কোনো বিল গৃহীত হলে সেই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য তাঁর নিকট পেশ করা হবে। সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘এরূপ কোনো বিলই সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে না, যদি না এটি সংসদের মোট সদস্যের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে গৃহীত হয়।" এভাবে সংসদে গৃহীত কোনো সংশোধনী বিল যখন রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠানো হয়, তখন তিনি সাত দিনের মধ্যে বিলটিতে সম্মতি দান করবেন। তিনি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বিলটিতে সম্মতি দান করেছেন বলে গণ্য করা হবে। বিলটি বিধিবদ্ধ ও কার্যকর হবে।
রাষ্ট্রপতির ১৫তম সংশোধন আদেশে (১৯৭৮) বলা হয়, ‘‘সংবিধান প্রস্তাবনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ও ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো সংশোধন প্রস্তাব সংসদ কর্তৃক গৃহীত হয়ে রাষ্ট্রপতির নিকট সম্মতির জন্য উপস্থাপিত হলে রাষ্ট্রপতি এক গণভোটের আয়োজন করবেন। গণভোটে ওই প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা সমর্থিত হলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন বলে ধরতে হবে। অন্যথায়, তা রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করবে না।’’ দ্বাদশ সংশোধন আইনের ক্ষেত্রে এভাবে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ১৫ অক্টোবর। তবে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে 'গণভোট' ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উপর্যুক্ত নিয়মাবলি থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, একমাত্র জাতীয় সংসদই মূলত সংবিধান সংশোধন বা রহিত করতে পারে।
৬. ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি' গঠিত হয়। এ কমিটি ১০ জুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে। ৪ নভেম্বর খসড়া সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং তা ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। এ পর্যন্ত এ সংবিধানের ষোলটি সংশোধনী করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সংবিধানের একটি সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে। উক্ত সংশোধনী রাষ্ট্রীয় মূলনীতির আমূল পরিবর্তন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করেছিলো।
ক. কে, কখন 'অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন?
খ. গণপরিষদ গঠন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর পূর্বের ও পরের অবস্থানের তুলনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশ সংবিধানের কোন সংশোধনীকে সর্বোচচ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং তা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করেছিল? তোমার মতামতের সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করো।
৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে অস্থায়ী সংবিধান অধ্যাদেশ জারি করেন।
খ. সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গণপরিষদ গঠন করা হয়।
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ 'বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, এ আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের ১৬৯ জন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ জন সদস্য, সর্বমোট ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্য থেকে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। এর মধ্যে ৪০০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন ন্যাপ (মোজাফফর) এবং অন্য ২ জন ছিলেন স্বতন্ত্র।
গ. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর পূর্বের ও পরের অবস্থানের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল।
জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতির প্রধান ও প্রথম নীতি। সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা বাংলাদেশ সংবিধানের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সংযোজিত 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ' সংশোধন করে 'বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ' করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পুনরায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ'কে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা সংবিধানের প্রারম্ভে প্রস্তাবনার আগে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম' (পরম দয়ালু ও করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি) কথাগুলো সংযোজন করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি 'ধর্মনিরপেক্ষতা' সংশোধন করে 'সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' এবং 'সমাজতন্ত্রের' স্থলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার- সংযোজন করা হয়। এছাড়া সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'মুক্তি সংগ্রাম' এর পরিবর্তে 'স্বাধীনতাযুদ্ধ' শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশিত হয়। কিন্তু ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতিগুলো ফিরিয়ে আনা হয়।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে সর্বোচচ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং উক্ত সংশোধনী মূলনীতিগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করেছিল।
জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতির প্রধান ও প্রথম নীতি। সংবিধানে বর্ণিত আছে যে, ভাষা ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে, বাঙালি জাতির সেই ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। এখানে জনগণের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করা হবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের আসল পরিচয় ছিল তারা বাঙালি। ধর্ম নিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনাকে বিনষ্ট করা হয়েছিল। ওই সময়ের শাসকরা সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
ওপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করা হয়েছিল।
৭. শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে একটি রাষ্ট্রের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলছিলেন। উক্ত রাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয়। রাষ্ট্রটিতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।
ক. বাংলাদেশ সংবিধানে কতটি অনুচ্ছেদ রয়েছে?
খ. সচিবালয় বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্রের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে বাংলাদেশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করো।
৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ সংবিধানে ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।
খ. সচিবালয় বলতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও তার বিভাগসমূহ নিয়ে গঠিত প্রশাসনিক সংস্থাকে বোঝায়।
সচিবালয় হলো একটি দেশের তথা প্রশাসন ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। সরকারি যাবতীয় কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত সর্বপ্রথম সচিবালয়ে গৃহীত হয়। সচিবালয় বিভিন্ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করে। সর্বোপরি দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় কার্য সম্পাদনকারী দপ্তরই হলো সচিবালয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্রের সাথে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা নিচে আলোচনা করা হলো-
সরকার ব্যবস্থা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা পদ্ধতি বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান।
শাসন পদ্ধতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই রাষ্ট্র পরিচালনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। অন্যদিকে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার পদ্ধতি বিদ্যমান। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের সর্বময় নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী।
আইনসভা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বিদ্যমান। একটি হলো উচ্চকক্ষ বা সিনেট এবং আরেকটি হলো নিম্নকক্ষ। আর বাংলাদেশ সংবিধানে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বিদ্যমান। বাংলাদেশ আইন সভার নাম জাতীয় সংসদ।
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণিত রাষ্ট্র অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা হলো রাষ্ট্রপতি শাসিত এবং বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত।
নিচে এই দুটি শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করা হলো- রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে যিনি রাষ্ট্রপ্রধান, তিনিই সরকার প্রধান। রাষ্ট্রপ্রধান প্রকৃত শাসক। কিন্তু সংসদীয় মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধানের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী সরকার পরিচালনা করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত ল হন এবং পরবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে আইনসভা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। আইনসভা ইচ্ছা করলে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে সরকারকে অপসারণ করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতিতে আইনসভা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী নয়। আইনসভা সংবিধানের নির্দিষ্ট পথে বিশেষ অভিযোগ উত্থাপন ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন ও অপসারণ করতে পারে না।
মন্ত্রিপরিষদ সরকারে মন্ত্রিসভা তাদের সকল নীতি, সিদ্ধান্ত ও কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে শাসন বিভাগ সাধারণত আইনসভার নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে ক্ষমতা একত্রীকরণ ঘটে। এখানে আইনসভা ও শাসন বিভাগ পৃথক সত্তা হিসেবে অবস্থান করে না। অন্যদিকে, আইনসভা ও শাসন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের শাসন বিভাগ তথা মন্ত্রিসভার স্থায়িত্ব আইনসভার আস্থার ওপর নির্ভরশীল। আইনসভার আস্থা হারালে প্রধানমন্ত্রীসমেত মন্ত্রিপরিষদকে পদত্যাগ করতে হয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতিতে আইনসভা সংবিধান লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ ব্যতীত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে না।
আলোচনা শেষে বলা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
৮. 'ক' দেশের নাগরিকগণ তাদের ইচ্ছামতো ধর্ম চর্চা করতে পারে। এছাড়াও সে দেশের সংবিধানে জনগণের চলাফেরার, বাক, স্বাধীনতার অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে। তবে সেদেশের নাগরিকগণ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে পারে না।
ক. বাংলাদেশের বিভাগ কয়টি ও কী কী?
খ. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ২টি কাজ লিখ।
গ. 'ক' দেশের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের কতটুকু মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের সংবিধান কোন অর্থে 'ক' দেশের সংবিধান থেকে অধিক গণতান্ত্রিক? বিশ্লেষণ কর।
৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের বিভাগ ৮টি। এগুলো হলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ।
খ. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দুটি কাজ উল্লেখ করা হলো-
১. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ দানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে এ সংস্থা যাচাই ও পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
২. সুষ্ঠুভাবে সরকারি কর্ম পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ ও ন্যায়সংগতভাবে কর্মচারি মনোনয়ন ও নিয়োগ করার দায়িত্ব সরকারি কর্মকমিশনের ওপর ন্যস্ত।
গ. ‘ক’ দেশের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের পুরোপুরি সাদৃশ্য রয়েছে।
'ক' দেশের নাগরিকগণ ইচ্ছেমতো ধর্মচর্চা করে। তার দেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার অর্থাৎ জনগণের চলাফেরার অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকার ইত্যাদির কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। পাঠ্যবইয়ের বর্ণনায় দেখা যায়, বাংলাদেশের সংবিধানেও মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী, পুরুষ ভেদে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
সকল নাগরিক সর্বত্র অবাধে চলাফেরা, এর যেকোনো স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করতে পারে। তবে জনগণের স্বার্থে আইনের দ্বারা এই স্বাধীনতার ওপর যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ আরোপ করা যাবে। অতএব বলা যায় যে, 'ক' দেশের সংবিধানের সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের পুরোপুরি সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. 'ক' দেশের সংবিধানে জনগণের চলাফেরার অধিকার ও বাক স্বাধীনতার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সে দেশের নাগরিকগণ ইচ্ছামতো ধর্ম চর্চা করতে পারেন কিন্তু তা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয় নি। তাছাড়া সে দেশের নাগরিকগণ সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে পারেন না। অর্থাৎ সে দেশের নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।
বিপরীত দিকে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লিখিত প্রধান মৌলিক অধিকারগুলো হলো- আইনের দৃষ্টিতে সাম্য, ধর্ম-বর্ণ- গোষ্ঠী প্রভৃতি কারণে বৈষম্যহীনতা, সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ, জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধকরণ, চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা, পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, গৃহে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার।
অর্থাৎ 'ক' দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সংবিধানে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মৌলিক অধিকারগুলো মূলত ভোগ করে থাকে দেশের নাগরিকগণ। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারও উদ্দেশ্য হলো নাগরিক সুযোগ সুবিধাকে নিশ্চিত করা। এ আলোচনার দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয়, মৌলিক অধিকারের অর্থে 'ক' দেশের সংবিধান থেকে বাংলাদেশের সংবিধান অধিক গণতান্ত্রিক।
৯. সংবিধান রাষ্ট্রের দর্পণ। সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে এতে সংশোধনী আনয়ন করা হয় এবং উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়। এই সংশোধনী অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত নির্বাহী হয়ে উঠেন। আইন বিভাগের নিকট শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ক. মৌলিক অধিকার কী?
খ. ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংশোধনী সংবিধানের কততম সংশোধনী এবং তা কোন ধরনের শাসন ব্যবস্থা চালু করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংশোধনীটি সংবিধানের কততম সংশোধনী এবং তা কোন ধরনের শাসন ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন সাধন করে? বিষয়টি বিশ্লেষণ কর।
৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রাষ্ট্র প্রদত্ত যেসব সুযোগ-সুবিধা নাগরিকের ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য সেগুলোই মৌলিক অধিকার।
খ. ধর্মনিরপেক্ষতা হলো রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের যেকোনো প্রকার বৈষম্যের স্বীকার হতে রক্ষা পাওয়ার অধিকার।
ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। এখানে জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করা হবে। রাষ্ট্রে বসবাসরত প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্মপালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বীকে যেমন অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না, তেমনি তার প্রতি কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণও করা যাবে না। মোট কথা, সমাজ জীবন থেকে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হবে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংশোধনী সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী এবং এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করে।
১৯৯১ সালের ২ জুলাই তৎকালীন আইনমন্ত্রী মীর্জা গোলাম হাফিজ সংবিধান সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট দ্বাদশ সংশোধনী বিল গৃহীত হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বেশ কিছু বিষয় গৃহীত হয়। এর ফলে জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর অংশগ্রহণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংক্ষিপ্তকরণ, রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে স্পিকারের দায়িত্ব পালন, উপরাষ্ট্রপতি উপপ্রধানমন্ত্রী পদ বিলোপ ইত্যাদি সংশোধনী কার্যকর হয়। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী প্রভূত ক্ষমতা প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন। আইন বিভাগের নিকট শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সংশোধনী দ্বাদশ সংশোধনী ফলে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংশোধনীটি সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী এবং এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে।
বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর পর দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সকল নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। তিনিই হন সরকার প্রধান। রাষ্ট্রপতির পদকে নিয়মতান্ত্রিক করা হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দায়িত্ব জাতীয় সংসদের উপর ন্যাস্ত করা হয় এবং উপরাষ্ট্রপতি পদ বিলুপ্ত করা হয়। রাষ্ট্রপতির অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণের ব্যবস্থা রাখা হয়। আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংসদ পরিচালনার বিধান হয়। উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ বিলোপ করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতার অধিকারী করা হয়।
আলোচনা শেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত বিধানাবলী এবং সংশোধনীর সাথে ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনী সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে এ সংশোধনী দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদ এবং স্থানীয় শাসনের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলির ক্ষেত্রে ব্যাপক সংশোধন ও পরিবর্তন আনয়ন করে সমগ্র সরকার ও শাসনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে।
১০. সংবিধান রাষ্ট্রের দর্পণ। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে এতে সংশোধনী আনয়ন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদকে নিয়মতান্ত্রিক করা হয় এবং উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়। এ সংশোধনী অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত নির্বাহী হয়ে উঠেন এবং আইন বিভাগের নিকট শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ক. বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন কে?
খ. মৌলিক অধিকার কী?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংশোধনীটি সংবিধানের কততম সংশোধনী এবং তা কোন ধরনের শাসনব্যবস্থা চালু করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘উক্ত সংশোধনীটি বাংলাদেশের সরকার ও শাসন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে’’— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন ড. কামাল হোসেন।
খ. মৌলিক অধিকার বলতে রাষ্ট্রপ্রদত্ত সেসব সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায়, যা নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য একান্ত অপরিহার্য।
মানুষের সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং ব্যক্তিত্ব ও মেধা বিকাশের জন্য যে সকল অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক বলবৎ করা হয়, সেগুলোই মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃত। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হবে না কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংশোধনীটি বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী এবং তা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থা চালু করে। উদ্দীপকে উল্লিখিত সংবিধান সংশোধনীর ফলে রাষ্ট্রপতির পদকে নিয়মতান্ত্রিক, উপ-রাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত এবং প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত নির্বাহী হয়ে উঠেন। পাঠ্য বইয়ের বর্ণনায় দেখা যায়, দ্বাদশ সংশোধনীর ফলে রাষ্ট্রপতি পদকে নিয়মতান্ত্রিক, উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত এবং প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত নির্বাহী হয়ে ওঠে এবং পুনরায় সংসদীয় ব্যবস্থা চালু হয়। অতএব উদ্দীপকের সাথে পাঠ্য বইয়ের দ্বাদশ সংশোধনীর হুবহু মিল রয়েছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি তা বাতিল করা হয়। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর পর ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন হয়। এ সংশোধনীর ফলে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্ট নামমাত্র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রপতির নামে যাবতীয় নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।
ঘ. প্রশ্নে উল্লিখিত উক্ত সংশোধনী বলতে বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীকে বোঝানো হয়েছে। এ সংশোধনী দ্বারা বাংলাদেশের সরকার ও শাসনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে যে সকল পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তা হলো-
১. জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ: বাংলাদেশ সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে শব্দগুলো সন্নিবেশিত হয়।
২. রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত: দ্বাদশ সংশোধনী আইনে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের ১ম ও ২য় পরিচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন যিনি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তিনি সকল কাজ করবেন। তার কার্যকাল হবে পাঁচ বছর। তাছাড়া সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের জন্যে তিনি জাতীয় সংসদের দুই- তৃতীয়াংশ সদস্যদের ভোটে অভিশংসিত হয়ে অপসারিত হবেন।
৩. উপরাষ্ট্রপতি পদ বিলোপ: দ্বাদশ সংশোধনী (১৫২ অনুচ্ছেদের সংশোধন) আইন দ্বারা উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়। এক্ষেত্রে বিধান করা হয় কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
৪. প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা সম্পর্কিত: দ্বাদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসক ও সরকার প্রধানে পরিণত হন। জাতীয় সংসদের অধিকাংশ সদস্যদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে একটি মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে দেশের সকল নির্বাহী ক্ষমতা পরিচালিত হবে।
৫. উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ বিলোপ: দ্বাদশ সংশোধনী দ্বারা উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ বিলোপ ঘোষণা করা হয়।
৬. জাতীয় সংসদ সম্পর্কিত: সংবিধানের ৭২ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয় জাতীয় সংসদের অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ষাট দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকবে না। এছাড়া ৭০ নং এবং ১৪৫ এর (ক) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়।
দ্বাদশ সংশোধনীর বৈশিষ্ট্যের আলোকে বলা যায়, এ সংশোধনী বাংলাদেশের সরকার ও শাসনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধন করেছিল।
0 Comments:
Post a Comment