এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download
পৌরনীতি ও সুশাসন
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer
১. লোকমানপুর গ্রামের ফারুক সাহেব একজন সৎ ও নির্ভিক ব্যক্তি। তিনি তার এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর্থিকভাবে তিনি স্বচ্ছল না হয়েও প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে তাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তিনি নির্বাচনে জয়লাভও করেন।
ক. জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল না কোন নির্বাচনে?
খ. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কী ধরনের কাজ সম্পাদন করে?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার আলোকে নির্বাচনে জনগণের সক্রিয় ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ৪র্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল না।
খ. বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন বাস্তবায়ন ও ও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করে।
নির্বাচন ব্যবস্থায় আইন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, মনোনয়নপত্র বাছাই চূড়ান্ত মনোনয়নপত্র প্রকাশ, নির্বাচনি আচরণবিধি ঘোষণা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন গ্রহণ ও বাতিল, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ এবং নির্বাচিত দলকে সরকার গঠনের জন্য গেজেট প্রকাশসহ বিভিন্ন আইনি কার্যক্রম করে।
গ. উদ্দীপকের ঘটনার আলোকে বোঝা যায়, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সক্রিয়।
জাতীয় রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করে নেয়। এ কারণেই নির্বাচনে জনগণের সক্রিয় ভূমিকার কথা বলা বাহুল্য। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন হলো শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ভিত্তি। আর নির্বাচনের প্রাণ হলো জনগণ। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রতিনিধিকে বাছাই করে নেয়। এর মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা দক্ষ ও উন্নত করতে জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। প্রার্থী বাছাই এবং প্রার্থীকে পরাজিত করতে জনগণের ভোটই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়। উদ্দীপকের ঘটনাও এর প্রমাণ বহন করে। এখানে দেখা যায়, লোকমানপুর গ্রামের ফারুক সাহেব প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আর্থিকভাবে সবল না হওয়ায় এলাকাবাসীই নিজ উদ্যোগে চাঁদা তুলে তাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। আবার জনগণের বিপুল ভোটে তিনি নির্বাচিতও হন। সুতরাং দেখা যায়, নির্বাচন নির্ভর করে জনগণের ওপর এবং প্রার্থীর বাছাই নির্ভর করে তাদের ভোটের ওপর।
উপরিউক্ত আলোচনায় নির্বাচনের জনগণের সক্রিয় ভূমিকা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়।
ঘ. প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হলো নির্বাচন। আর এ নির্বাচনের প্রাণ হলো জনগণ। জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ তাদের পক্ষে দেশের শাসনকার্য পরিচালনায় অংশ নেয়। তাই জনগণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয় এবং সুযোগ্য প্রতিনিধি বাছাই করে নেয় জনগণের সমর্থন যে বেশি লাভ করতে সক্ষম হয় সেই দেশের শাসনব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। উদ্দীপকের ফারুক সাহেবও এভাবে জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ব্যাপক জনসমর্থন আদায়ে সক্ষম হন। এ কারণেই আর্থিকভাবে সবল না হওয়া সত্ত্বেও জনগণ তাকে চাঁদা তুলে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায়। বিপুল জনসমর্থন থাকার কারণেই তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে সক্ষম হন। মূলত জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতীত উদ্দীপকের ফারুক সাহেব শাসনকার্যে অংশ নিতে পারতেন না। তাই বলা যায়, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
২. বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলির মধ্যে একটি নির্বাচন হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে। সে নির্বাচনে একটি বড় রাজনৈতিক দলের সেস্নাগান ছিল 'দিন বদলের ডাক'। অন্য একটি বড় রাজনৈতিক দলের সেস্নাগান ছিল 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও'। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রদান প্রভৃতি নতুন উদ্যোগে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয় এদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে, এবং দীর্ঘ দুই বছরের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হয়ে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসে।
ক. ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ গর্ভনর জেনারেল কে ছিলেন?
খ. নির্বাচনে কেন নাগরিকদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন?
গ. উদ্দীপকে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচন কীভাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে? বিশ্লেষণ করো।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভারতবর্ষের সর্বশেষ গর্ভনর ছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
খ. আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন পরিচালিত।
নাগরিকগণ তাদের ভোট প্রদানের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিবার্চন করে আইন প্রণয়ন এবং সরকার পরিচালনায় অংগ্রহণ করে থাকে। আর প্রতিনিধি বাছাইয়ের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ জনগণ তথা নাগরিকদের পক্ষেই শাসন পরিচালনা করে থাকে। আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সফলতার পূর্বশর্তই হচ্ছে নির্বাচন। এজন্যই বর্তমান প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনে নাগরিকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের অর্থাৎ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত নির্বাচনে একটি বড় রাজনৈতিক দলের সেস্নাগান ছিল, ‘দিন বদলের ডাক'। অন্য একটি বড় দলের সেস্নাগান ছিল 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও'। এ নির্বাচনেই প্রথম ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এখানে মূলত বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।
কেননা আমরা জানি, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর শুরু হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব জোট ও দলের নির্বাচনি প্রচারণা। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনি ইশতেহারে চাল-ডাল-তেল-সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। নির্বাচনি ইশতেহারে শেখ হাসিনা 'দিন বদলের ডাক দেন। বিএনপি ও চার দলীয় জোটের নির্বাচনি সেস্নাগান ছিল 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও'। এ বারই প্রথম দেশের কোনো নির্বাচনে মিছিল শেস্নাগান, শোডাউন ছাড়া নির্বাচনি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। এছাড়া এ নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রদান করা হয়। এ নির্বাচন নিয়ে যাবতীয় আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা দূর করে ২৯ ডিসেম্বর পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর উদ্দীপকেও এ নির্বাচনের চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচন অর্থাৎ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বৈধ সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসে।
২০০৬ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করে, তখন থেকেই দেশে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়। তৎকালীন সংবিধান অনুযায়ী বিধান ছিল যে, কোনো দল ক্ষমতা হস্তান্তরের ৯০ দিন পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং মধ্যবর্তী ৯০ দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনি প্রক্রিয়া তদারকি করবে। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের পদত্যাগের পর ফখরুদ্দীন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ৯০ দিন পর, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় প্রায় দুই বছর পর। আর এভাবে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এ অসহনীয় অবস্থার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। এ নির্বাচন সংক্রান্ত সব আশঙ্কা ও গুজবকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বস্তুত এ নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশের জনগণ দীর্ঘ দুই বছর পর আবার গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরে যাবার সুযোগ লাভ করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘ দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবসান ঘটিয়ে একটি সুষ্ঠু-সুশৃঙ্খল নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আবার গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসে।
৩. মিতু তার বাবার কাছে তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের একটি তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচনের গল্প শোনে। উক্ত নির্বাচনের পূর্বে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৎকালীন সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকান্ডর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের মুখে ঐ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করেন।
ক. দুর্নীতি দমন কমিশন কখন প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত নির্বাচনের সাথে বাংলাদেশের কোন নির্বাচনের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত নির্বাচন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় মাইল ফলক'- তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে মূল্যায়ন করো।
৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে।
খ. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান।
সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং রাষ্ট্রপতি যেরূপ নির্দেশ করবেন, সেরূপ সংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। উক্ত বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপ্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত নির্বাচনের সাথে বাংলাদেশের ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাদৃশ্য আছে।
১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। দুই দলের আন্দোলনের একপর্যায়ে এরশাদ সরকার পদত্যাগ করে এবং নির্দলীয় ব্যক্তি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করেন এবং এ কমিশনের অধীনে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করেন।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, মিতু তার বাবার কাছ একটি তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গল্প শোনে। উক্ত নির্বাচনের পূর্বে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৎকালীন সরকারের স্বৈরাচারি কর্মকান্ডর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং নির্দলীয় ব্যক্তিকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে উপ- রাষ্ট্রপতির সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচন বাংলাদেশের ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উক্ত নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এক মাইলফলক বক্তব্যটি সঠিক।
৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। দেশে অবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, পত্র-পত্রিকার ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হয়। কার্যত এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। ফলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে কেননা এটিই ছিল সামরিক শাসন পরবর্তী সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রথম নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের পুনরাগমন ঘটে। এ নির্বাচনে সর্বাধিক সংখ্যক দল ও প্রার্থী অংশগ্রহণ করে এবং ভোটাররাও বিপুল উৎসাহে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। এই নির্বাচন যে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ছিল তা সর্বজনস্বীকৃত। আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত এ নির্বাচন বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করে।
উক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এক মাইলফলক হয়ে আছে।
৪. 'ক' রাষ্ট্রে কেবল সর্বনিম্ন ২১ বছর বয়স্ক পুরুষ নাগরিকদের ভোটাধিকার রয়েছে। নাগরিকগণ প্রকাশ্য ভোটদানের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু এ রাষ্ট্রে নাগরিকগণ নির্বাচন সম্পর্কে উদাসীন। বেশিরভাগ নাগরিক নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে না এবং প্রার্থী সম্পর্কেও তারা ভালোভাবে অবগত হতে আগ্রহী হোন।
ক. বাংলাদেশে প্রথম কত সালে সংসদ নির্বাচন হয়?
খ. ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়গুলোর অসামঞ্জস্যতা বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভূমিকার যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন হয়।
খ. ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনায় ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত-ই-ইসলামী ও জাসদ নির্বাচন বর্জন করে। উপরন্তু রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়ন জমা দেয়া ও মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং নির্বাচনের দিন সর্বাত্মক হরতাল পালন করে। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং হরতাল, সহিংস আন্দোলন ইত্যাদির কারণে উক্ত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়গুলোর অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১২২ (২) নং অনুচ্ছেদে প্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রে ২১ বছর বয়স্ক কেবল পুরুষ নাগরিকরা ভোট দিতে পারেন। অর্থাৎ 'ক' রাষ্ট্রের নাগরিকগণ প্রকাশ্যে ভোটদানের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকগণ গোপন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সুতরাং, উদ্দীপকে 'ক' রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমনত ভোট দেওয়ার বয়স, ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য এবং ভোটদান পদ্ধতিতে পার্থক্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা যথার্থ নয়।
উদ্দীপকের রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নির্বাচন সম্পর্কে উদাসীন। তারা বেশিরভাগ নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করে না। প্রার্থী সম্পর্কে তারা ভালোভাবে অবগত হতে আগ্রহী নয়, যা আদর্শ নাগরিকের বৈশিষ্ট্য নয়। তাদের এই ভূমিকায় নাগরিক অধিকার হরণ হয় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা ব্যাহত হয়। বস্তুত, নাগরিকগণ যখন তাদের রাজনৈতিক কর্মকা- সম্পর্কে সচেতন না হয় তখন অগণতান্ত্রিক তথা স্বৈরাচারী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভূমিকায় প্রতিফলিত হয়।
জনগণ যদি প্রার্থী সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত না হয় তাহলে অদক্ষ, অশিক্ষিত, অরাজনৈতিক প্রতিনিধির প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ না নিলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণ অবগত হতে পারে না। ভবিষ্যৎ শাসকগোষ্ঠীর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় না এবং নির্বাচনি প্রচারণায় কোনো অগণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রচারণা থাকলে জনগণ তার প্রতিবাদ করতে পারে না। যার ফলে জনগণের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়ে মূর্খের সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভূমিকা যথার্থ নয়। তাদেরকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, ভালো যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে, নির্বাচন সম্পর্কিত বিধি জেনে প্রতিনিধি নির্বাচন করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ একটি উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিকের কোনো বিকল্প নাই।
৫. সালমান সম্প্রতি ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে। আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে ভোট দিতে পারবে বলে খুবই উৎফুলস্ন। সে ঠিক করেছে ভোটের আগে সমস্ত দিক লক্ষ্য রেখে তবেই যোগ্য প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবে। কেননা যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাবার সাথে এসব বিষয় নিয়ে সে প্রায়শই আলোচনা করে।
ক. সর্বজনীন ভোটাধিকার কাকে বলে?
খ. গণভোট বলতে কী বুঝ?
গ. উদ্দীপকে যে বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে বাংলাদেশে উক্ত বিষয়টির কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে বর্ণনা কর।
ঘ. ‘‘উক্ত বিষয়টির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে" — মূল্যায়ন কর।
৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যখন ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, গুণ বা উপযুক্ততা নির্বিশেষে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ভোটাধিকার দেওয়া হয়, তখন তাকে সর্বজনীন ভোটাধিকার বলা হয়।
খ. গণভোট বলতে কোনো বিষয়ে জনমত যাচাইকে বোঝানো হয়। যদি কোনো বিধান সংশোধনের জন্য জাতীয় সংসদের আইনই যথেষ্ট বলে মনে না হয়, সেক্ষেত্রে এরূপ কোনো বিলে সম্মতিদানের পূর্বে রাষ্ট্রপতি জনমত যাচাইয়ের ব্যবস্থা করেন। এটাই গণভোট নামে পরিচিত।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমন্ডলী বা ভোটার হবার যোগ্যতা এবং সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। বাংলাদেশে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স্ক নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। ব্যালট পেপারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভোটদান সম্পাদিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানে নিয়মিতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। অর্থাৎ মেয়াদামেত্ম নির্ধারিত সময়ে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগে কোনো কারণে যদি আসন শূন্য হয়, নির্ধারিত সময়ে উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে তা পূরণ করা হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সালমান নির্বাচনে ভোটপ্রদান করবে। সে উক্ত নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করবে। কেননা সঠিক প্রার্থী নির্ধাচিত করতে না পারলে উন্নয়ন সম্ভব হবে না। ভোটারদের সচেতনতার মাধ্যমে সৎ, দক্ষ ও উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হয়। মোটকথা, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে সর্বজনীন ভোটাধিকার ও সচেতন ভোটাররাই পারে উপযুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে।
ঘ. নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নাগরিকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। কারণ নাগরিকগণ সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করে।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকে। এরূপ একটি নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব প্রধানত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু নির্বাচকমন্ডলী অর্থাৎ ভোটারদের দায়িত্ব ও কর্তব্যও এক্ষেত্রে কোনো অংশে কম নয়। ভোটারদের সতর্ক দৃষ্টি একটি সুন্দর নির্বাচনের পূর্বশর্ত।
সৎ, দক্ষ ও উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভোটারদের পছন্দই প্রধান। কিন্তু যদি এ ভোটাররা অসচেতন থাকেন কিংবা কোনোরূপ প্রভাবিত হয়ে ভোট দিয়ে থাকেন, তবে নির্বাচন কমিশনের শত চেষ্টা সত্ত্বেও উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা সম্ভব নয়। ভোটারদেরকে যদি অর্থ দিয়ে প্রভাবিত করা যায় তবে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট হতে বাধ্য। তাই ভোটারেরা না চাইলে অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারে না। গণতন্ত্রকে সংহত করতে চাইলে তাই সবার আগে ভোটারদের সচেতনতা প্রয়োজন। ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, নির্বাচনে নাগরিকদের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
৬. যুগের অগ্রগতিতে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগেনি রশিদ মিয়ার মনে। তাই সে নারীর অধিকারে, ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে না। সে কখনোই চায় না তার স্ত্রী ভোট প্রদান করুক। এমনকি সে তার মেয়েদেরও ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয় না। সে ভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বিচক্ষণতা নারীরা এখনো অর্জন করতে পারেনি।
ক. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় কবে?
খ. কীভাবে সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের রশিদ মিয়া বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় কোন বৈশিষ্ট্যকে অবমাননা করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রশিদ মিয়ার ভূমিকাকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করবে? মতামত দাও।
৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ।
খ. নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়।
এ ব্যবস্থায় জনগণের অভাব, অভিযোগ জানার এবং সেগুলো দূরীকরণে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ যথাযথ ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়। বস্তুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়। তাই বলা যায়, নির্বাচন সরকার ও জনগণের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।
গ. উদ্দীপকের রশিদ মিয়া বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থ সর্বজনীন ভোটাধিকার বৈশিষ্ট্যকে অবমাননা করেছেন।
নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ এবং শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকের ভোটাধিকার প্রাপ্তিকেই সর্বজনীন ভোটাধিকার বলে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১২২ নং অনুচ্ছেদে প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকের ভোটাধিকারে কথা বলা হয়েছে। ভোটদানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সমান এবং এটা সকল নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। একজন পুরুষের ভোট যেমন মূল্যবান, তেমনি একজন নারীর ভোটও মূল্যবান। এক্ষেত্রে নারীকে ভোট প্রদানে বাধা দেওয়া কিংবা প্রভাবিত করা যাবে না। আর এটাই হলো সর্বজনীন ভোটাধিকারের মূল বৈশিষ্ট্য।
উদ্দীপকে দেখা যায় রশিদ মিয়া নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করেন না। সে চায় না তার স্ত্রী ভোট প্রদান করুক। এমনকি সে তার স্ত্রী ও মেয়েদেরও ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয় না। সে ভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বিচক্ষণতা নারীরা এখনো অর্জন করতে পারেনি। এর মাধ্যমে রশিদ মিয়া বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সর্বজনীন ভোটাধিকারকে অস্বীকার করেছেন। ভোটদানের মাধ্যমে নাগরিক তার প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নেয়। এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। ভোটাধিকার বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীকে দূরে রাখা যাবে না।
ঘ. উদ্দীপকের রশিদ মিয়ার ভূমিকায় শাসনব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আমি মনে করি।
গণতন্ত্রের আদর্শকে সমুন্নত রেখে প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অভিপ্রায়ে সর্বজনীন ভোটাধিকারকে নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর ফলে নারী ও পুরুষ সবাই ভোটার এবং প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে একজন পুরুষ যতটুকু অবদান রাখতে পারে, সুযোগ পেলে একজন নারীও সেরূপ অবদান রাখতে পারে। আর আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক হলো নারী। তাই তাদেরকে বাদ দিয়ে দেশে দক্ষ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীকে প্রথম মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে তাদের মতামতকে মূল্যায়ন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। আর নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হলে তারা দেশের প্রশাসন, রাজনীতি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু উদ্দীপকের রশিদ মিয়ার মনোভাব নারীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছয়ে রাখবে। তারা দেশের জনশক্তির অর্ধেক অংশ হওয়া সত্ত্বেও কোনো অবদান রাখতে পারবে না।
আলোচনা শেষে বলা যায়, নির্বাচনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সর্বজনীন ভোটাধিকার অবমাননায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
৭. নির্বাচন প্রতিনিধি বাছাই এর উত্তম পন্থা। বাংলাদেশে নিয়মিত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি ভিন্ন। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনসমূহে বাংলাদেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়।
ক. দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কত সালে অনুষ্ঠিত হয়?
খ. নির্বাচকমন্ডলী বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করো।
ঘ. বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগরিকদের ভূমিকা আলোচনা করো।
৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
খ. প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য যারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে তাদেরকে নির্বাচকমন্ডলী বলে।
নির্বাচকমন্ডলী বা ভোটাররাই হচ্ছে প্রতিনিধি বাছাইয়ের জন্য যোগ্য বিচারক। বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়স্ক যারা ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদেরকে ভোটার বা নির্বাচকমন্ডলী বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এদেশের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার বেশকিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
বাংলাদেশে সর্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এক্ষেত্রে ভোটার তালিকায় নাম থাকা আবশ্যক। এদেশে সকল নাগরিকের জন্য 'এক ব্যক্তি এক ভোট' নীতি প্রচলিত। প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার জন্য একটিমাত্র ভোটার তালিকা থাকে।
বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সকল নির্বাচন গোপন ভোটদান পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ পদ্ধতিতে ভোটারগণ প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের পাশে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্ধারিত সীলমোহর ব্যবহার করেন। এতে ভোট গণনার কাজে সুবিধা হয়। এদেশের নির্বাচনে সমগ্রদেশকে জনসংখ্যার সমতার ভিত্তিতে ৩০০টি একক প্রতিনিধি নির্বাচনি এলাকায় বিভক্ত করা হয়। এছাড়া সকল জন প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থায় একক নির্বাচনি এলাকা থেকে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন রয়েছে। এই কমিশনই নির্বাচনি সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এদেশের সংবিধানে নিয়মিতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় ঊঠগ ব্যবহার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর সাহায্যে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ ও গণনার কাজ করা হয়।
ঘ. বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগরিকদের ভূমিকা অপরিসীম।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সরকার নয়, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এ দেশের জনগণ নির্বাচনে সঠিক মাত্রায় অংশগ্রহণ করে বলেই রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড তাদের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত আছে। জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখছে।
বাংলাদেশের নাগরিকগণ জেনে, বুঝে সকল প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। আর এভাবে ভোট প্রয়োগের ফলে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া সম্ভব। আর এমন জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারলে দেশে আইনের শাসন কায়েম হবে, দুর্নীতি দূর হবে। কেবল নিজের ভোটদানের মাধ্যমেই একজন নাগরিকের দায়িত্ব শেষ হয় না। অন্যকে ভোটাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে ভোটদানে উৎসাহিত করাও নাগরিকের কর্তব্য। নির্বাচনি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা কেবল সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সকল প্রকার সন্ত্রাসী অপতৎপরতা বন্ধে নাগরিক সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা। এক্ষেত্রে নাগরিকগণ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে সরকারি সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সকল পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তা সত্ত্বেও নির্বাচনকে অর্থবহ, ফলপ্রসূ ও প্রাণবন্ত করার ক্ষেত্রে নাগরিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮. যুগের অগ্রগতিতে অনেক পরিবর্তন হলেও শহরে বসবাসরত মাহমুদ সাহেবের মনে তার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। তাই তিনি নারীদের ঘরের বাইরের কাজ, কোনো ধরনের ক্ষমতা প্রদানে বিশ্বাস করেন না। তিনি কখনই চান না তার ভোট প্রদান করুক। এমনকি তিনি তার মেয়েদেরকেও ভোটকেন্দ্রে যেতে দেন না। তিনি মনে করেন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মত বিচক্ষণতা সব নারী এখনও অর্জন করতে পারেনি।
ক. বাংলাদেশের কোন সংস্থা নির্বাচন পরিচালনা করে?
খ. প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে কী বলে? ব্যাখা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মাহমুদ সাহেব নির্বাচন ব্যবস্থার কোন বৈশিষ্ট্যকে অবহেলা করেছেন? ব্যাখা করো।
ঘ. উক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ অবমাননায় শাসন ব্যবস্থায় কীরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও।
৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে।
খ. প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে বলা হয় নির্বাচন।
নির্বাচন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে দেশের ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিকগণ তাদের প্রতিনিধি বাছাই করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি নিয়মিত ও দীর্ঘ মেয়াদি রাজনৈতিক ব্যবস্থাই হলো নির্বাচন। এটি মূলত প্রতিনিধি বাছাইয়ের একটি প্রক্রিয়া। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি মৌলিক এবং অপরিহার্য বিষয়। নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই যোগ্য প্রতিনিধি বাছাই করে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
গ. উদ্দীপকের মাহমুদ সাহেব বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সর্বজনীন ভোটাধিকার বৈশিষ্ট্যকে অবমাননা করেছেন।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে শাসনব্যবস্থার সর্বস্তরে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ প্রতিনিধি বাছাইয়ের কাজটি করে থাকে। সেখানে নির্বাচন ব্যবস্থায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ভোটদানের অধিকারী।
অথচ উদ্দীপকের মাহমুদ সাহেব স্ত্রী ও মেয়েদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেন না। আবার তিনি নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাসও করেন না। বরং এটা ভাবেন যে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বিচক্ষণতা নারীরা এখনো অর্জন করতে পারেনি। এজন্যই বলা যায়, উদ্দীপকের মাহমুদ সাহেব বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সর্বজনীন ভোটাধিকারকে অস্বীকার করেছেন।
ঘ. উক্ত বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ সর্বজনীন ভোটাধিকার বৈশিষ্ট্য অবমাননায় শাসনব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আমি মনে করি।
গণতন্ত্রের আদর্শকে সমুন্নত রেখে প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অভিপ্রায়ে সর্বজনীন ভোটাধিকারকে নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আবার সকল নাগরিকেরই ভোটদানের সমান অধিকার রয়েছে। সকলের ভোটদানের মাধ্যমে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। তা না হলে এর গুরুত্ব থাকে না। প্রত্যেক ব্যক্তির একটি করে ভোট রয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার জন্য পৃথক ভোটার তালিকা থাকবে। নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রভেদে কোনো ভোটার তালিকা থাকবে না। সকলেই সমান।
১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসন ব্যতীত বাকি সময় সরকার পরিবর্তনের একমাত্র ধারক হিসেবে কাজ করছে নির্বাচন। মূলত জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমেই তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রকাশ করছে। অতএব আলোচনা শেষে বলা যায়, সর্বজনীন ভোটাধিকার ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়।
৯. রনির বয়স ১৮ বছর হওয়ায় ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে খুশি কেননা আগামীতে সে ভোট দিবে এবং পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবে। সে এখন বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচনি আচরণবিধি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে।
ক. বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হয়?
খ. বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
গ. উদ্দীপকে রনির ভোটাধিকার প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার কোন বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে?
ঘ. বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ করার জন্য তুমি কোন কোন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবে?
৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
খ. বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার সর্বস্তরে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা সচল রাখা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক নাগরিক ভোটদানের অধিকারী।
২. বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটারগণ তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রয়োগ করে থাকে। ভোট প্রদানের গোপনীয়তা রক্ষার মাধ্যমে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রনির বয়স ১৮ হওয়ায় সে ভোটার হয়েছে। অর্থাৎ ভোটার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে আগামীতে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। এগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থার যে বৈশিষ্ট্য বহন করে তা নিচে দেওয়া হলো-
সর্বজনীন ভোটাধিকার: ১৮ বছর বয়সের সকল নাগরিক ভোটদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের অধিকারী।
অভিন্ন ভোটার তালিকা: সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাচনে এলাকার জন্য একটি অভিন্ন ভোটার তালিকা থাকবে এবং ধর্ম, জাত, বর্ণ ও নারী-পুরুষভেদের ভিত্তিতে ভোটারদের বিন্যস্ত করে কোনো বিশেষ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা যাবে না।
স্বাধীন নির্বাচন কমিশন: নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে এবং সংবিধান ও আইনের অধীন হবে।
গোপন ভোট পদ্ধতি: গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনি কাজ সমাপ্ত হয়।
ঘ. বাংলাদেশের নির্বাচনে নাগরিকের অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ নির্বাচনের কতকগুলো পূর্বশর্ত রয়েছে। একটি যুগোপযোগী আইনি কাঠামো, নির্ভরযোগ্য ভোটার তালিকা ও যথাযথভাবে নির্ধারিত নির্বাচনি এলাকা এসব পূর্বশর্তের অন্তর্ভুক্ত। এতে আরো অন্তর্ভুক্ত একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও যুগোপযোগী নির্বাচন কমিশন এবং নিরপেক্ষ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সর্বোপরি নাগরিকের অংশগ্রহণ। কেননা নাগরিকের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো নির্বাচনই অর্থবহ হতে পারে না।
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নাগরিকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকগণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জনমত তৈরী করে এবং সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দানের জন্য প্রচারণা চালায়। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনকে সার্বিকভাবে সহায়তা প্রদান করে। ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নাগরিকগণ সার্বভৌম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নাগরিকগণই সকল ক্ষমতার উৎস। ভোটাধিকার প্রাপ্ত নাগরিকগণ যোগ্য ও উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করার
মাধ্যমে সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। নাগরিকগণ তথা নির্বাচকমন্ডলী জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকার ও বিরোধী দল জনমতের ভিত্তিতে নিজেদের কার্যক্রম নির্ধারণ করে। যার প্রভাব পড়ে নির্বাচনি ফলাফলের উপর। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়। এছাড়া নাগরিকগণ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগরিকের অংশগ্রহণ সর্বজনীন নির্বাচনকে অর্থবহ ফলপ্রসূ ও প্রাণবন্ত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০. 'ক' রাষ্ট্রটিতে রাজতন্ত্র এবং 'খ' রাষ্ট্রটিতে গণতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে। 'ক' রাষ্ট্রটিতে নির্বাচনব্যবস্থা নেই। কিন্তু 'খ' রাষ্ট্রটিতে গণতান্ত্রিক ভাবধারা ও কাঠামো সচল করার লক্ষ্যে নির্বাচনব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন কাজ সম্পন্ন হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণই সরকার পরিচালনা করেন।
ক. বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
খ. বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত 'খ' রাষ্ট্রটির নির্বাচনব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি ও নির্বাচন ব্যবস্থার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. 'প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে নির্বাচনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ'- উত্তিটির যথার্থতা নির্ণয় করো।
১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
খ. বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার সর্বস্তরে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা সচল রাখা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব প্রাপ্তবয়স্ক, অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক নাগরিক ভোটদানের অধিকারী।
২. বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটারগণ তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রয়োগ করে থাকে।
গ. 'খ' রাষ্ট্রটির নির্বাচনব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি ও নির্বাচনব্যবস্থায় সাদৃশ্য রয়েছে। নিচে তা দেখানো হলো-
উদ্দীপকের ‘খ’ রাষ্ট্রে লক্ষ্য করা যায়, এ রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে এবং গণতান্ত্রিক ভাবধারা ও কাঠামো সচল করার লক্ষ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রচলিত। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটার কর্তৃক জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন এবং সরকার পরিচালনা করেন। অনুরূপভাবে বাংলাদেশেও গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু রয়েছে। সংসদীয় সরকার প্রতিনিধিত্বমূলক। সরকার গঠিত হয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নারী- পুরুষ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ১৮ বছর বয়স থেকে বাংলাদেশের সব নাগরিক ভোটদানের অধিকারী হয়। সমগ্র বাংলাদেশকে জনসংখ্যার সমতার ভিত্তিতে এবং ভৌগোলিক অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় রেখে প্রতিনিধি নির্বাচনি এলাকায় বিভক্ত করা হয়। এক একটি নির্বাচনি এলাকা হতে একজন মাত্র প্রতিনিধি প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধিরাই সরকার গঠন ও পরিচালনা করে থাকে।
সুতরাং ‘খ’ রাষ্ট্রের নির্বাচনব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের সরকার পদ্ধতি ও নির্বাচনব্যবস্থার সাদৃশ্য রয়েছে, যা উপরোক্ত আলোচনাই প্রমাণ করে।
ঘ. প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে নির্বাচনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ' উক্তিটির যথার্থতা নিচে নির্ণয় করা হলো-
আধুনিক গণতন্ত্র হচ্ছে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। এ শাসনব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং এ নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই শাসনব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। অর্থাৎ জনগণ তাদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জাতীয় সংসদে প্রেরণ করে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে থাকে। নির্বাচন নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ও নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিকগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে চায়। তাই নির্বাচন প্রাক্কালে নাগরিকবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীর পক্ষে সংঘবদ্ধ হয় এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে নির্বাচন হলো জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রকাশের বাহন। জনগণের সার্বভৌমত্ব ও সার্বভৌম ক্ষমতা নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিকদের দ্বারা প্রকাশিত হয়। জনগণ ও নাগরিকের যে অংশ ভোটার, তারা নাগরিক এবং জনগণের পক্ষে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ
করে। জনগণই যে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নির্বাচকমন্ডলীর ভোটদানের মাধ্যমে নাগরিকবৃন্দ সর্বদা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষের শক্তি। সুশাসন, দায়িত্বশীলতা, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মৌলিক অধিকারের প্রতি নাগিরকগণ সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। নাগরিকগণ নির্বাচনের মাধ্যমে এসব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা ও বাস্তবায়ন দেখতে চায়। সেই লক্ষ্যে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া নাগরিকরা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখেন এবং সরকারের একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতা দূর করেন। সুতরাং 'প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে নির্বাচনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ' এ কথাটি যথার্থ ও যৌক্তিক।
0 Comments:
Post a Comment