HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৬

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৬ষ্ঠ অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. উন্নত দেশে যখন হঠাৎ করোনার কারণে কিছু সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা গেল। তখন কিছু বিশ্বাসী মনে করল, মানুষের পাপের কারণেই এমনটি হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বলা হলো কোভিড-১৯ নামক এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
ক. ব্যাখ্যার উৎপত্তিগত অর্থ কী?
খ. সাদৃশ্যানুমানের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে করোনা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়টি নির্দেশ করেছে তার ব্যাখ্যা করো।
ঘ. করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়টির মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যার প্রকারভেদের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যাখ্যার উৎপত্তিগত অর্থ ব্যাখ্যা হলো কোনো পূর্বাবস্থাকে সহজ করা।

খ. সাদৃশ্যানুমানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় কার্যকারণ নীতি অনুসরণ করা হয় না। তাই সিদ্ধান্তটি সব সময়ই সম্ভাব্য হয়।
সাদৃশ্যানুমানে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে এ আরোহ নিশ্চিত সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে পারে না, সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে মাত্র। কারণ এ আরোহানুমানে দুটি বস্তুর মধ্যে কতিপয় বিষয়ে সাদৃশ্যের আলোকে একটি থেকে অন্যটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্তে একটি সম্পর্কে কোনো তথ্য সত্য হলে অন্যটি সম্পর্কেও তা সত্য হবে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের মাঝে একটি সম্ভাবনা থাকে মাত্র।

গ. উদ্দীপকে করোনা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়টি নির্দেশ করেছে তা হলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
কোনো জটিল, দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট ঘটনাকে স্পষ্ট, সহজ, সরল ও বোধগম্য করে প্রকাশ করাকে ব্যাখ্যা বলে। আর যখন কোনো ঘটনার কার্যকারণ বা প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তখন তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যায়। এরূপ ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় বলে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে এবং স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন হয় না। যার দৃষ্টান্ত উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত, উন্নত দেশে যখন হঠাৎ করোনার কারণে কিছু সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা গেল। তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বলা হলো, কোভিড-১৯ নামক এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বর্তমানে অধিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাদের এ গবেষণা প্রাসঙ্গিক। তাই বলা যায়, করোনা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা লৌকিক ব্যাখ্যা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয় বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। এরূপ ব্যাখ্যায় কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় এবং ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ করা হয় বলে এ ব্যাখ্যা সবসময় একই হয়। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা স্থান-কাল পাত্রভেদে সবসময় একই থাকে।
অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও মনগড়া কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া করা হয়। তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। এরূপ ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। এখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্তিকরণ করা হয় না। এরূপ ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক কারণ ও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়ে থাকে। যেহেতু বিভিন্ন ব্যক্তির বিশ্বাস বিভিন্ন রকম, তাই লৌকিক ব্যাখ্যা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
উল্লেখিত দুই প্রকার ব্যাখ্যার পার্থক্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ঘটনার প্রকৃত ও যথার্থ কারণ উল্লেখ থাকে। তাই উদ্দীপকে উল্লেখিত সাধারণ মানুষের ধারণার চেয়ে গবেষণার ফলাফলের মতোই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।

২. এ বছর অনেক মানুষের মৃত্যু দেখে রহিমের দাদি বললো, এ হলো সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ। রহিম বললো, এটা ঠিক না দাদি; করোনা ভাইরাসের কারণে এসব মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
ক. বিশ্লেষণ কী?
খ. মনের মৌলিক অনুভূতিকে ব্যাখ্যা করা যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকে রহিমের দাদির বক্তব্যে কী ধরনের ব্যাখ্যা সংঘটিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রহিমের ব্যাখ্যার সঙ্গে তার দাদির ব্যাখ্যার তুলনা করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাহায্যে কোনো মিশ্র কাজকে আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করাকে বলে বিশ্লেষণ (Analysis)।

খ. মনের মৌলিক অনুভূতিগুলো অনন্য বলে সেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
মনের কিছু মৌলিক অনুভূতি আছে। যেমন: সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা ইত্যাদি। এদের একটির সাথে অপরটির কোনো সাদৃশ্য নেই। পাশাপাশি একটিকে অপরটির সাথে সংযুক্ত করা যায় না। এ কারণেই মনের মৌলিক অনুভূতির ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।

গ. উদ্দীপকের রহিমের দাদির বক্তব্যে লৌকিক ব্যাখ্যার প্রতিফলন ঘটেছে।
ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোনো জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়কে স্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে প্রকাশ করা হয়। যখন অতিপ্রাকৃতিক ও মনগড়া কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার বিবৃতি দেওয়া হয় তখন তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। লৌকিক ব্যাখ্যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও ধ্যানধারণার ওপর নির্ভরশীল। তাই এ প্রকার ব্যাখ্যার কোনো যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক মূল্য নেই।
আলোচ্য উদ্দীপকের রহিমের দাদি যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে সেখানে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও ধ্যানধারণা প্রতিফলিত হয়েছে। এছাড়া তার বক্তব্যে অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ রয়েছে। তাই তার বক্তব্য হলো লৌকিক ব্যাখ্যা।

ঘ. উদ্দীপকে রহিমের ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং তার দাদির ব্যাখ্যা লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে পার্থক্য নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। আর প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যার একটি বড় গুণ। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়। অর্থাৎ এখানে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা অনুপস্থিত থাকে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ করা হয়। এখানে কোনো ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ নেই। তাই এখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যেহেতু প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাই এ ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক কারণ ও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই এ ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় প্রকার ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।

৩. দৃশ্যকল্প-১: বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অতএব, বজ্রপাত হবে।
দৃশ্যকল্প-২: আকাশে চাঁদ উঠল, নদীতে জোয়ার এল। চাঁদ নেই, নদীতে ভাটা দেখা দিল।
ক. ব্যাখ্যা কী?
খ. পরম নিয়মকে ব্যাখ্যা করা যায় না কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ব্যাখ্যাটির রূপ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি কীভাবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত? বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জটিল, অস্পষ্ট, দুর্বোধ্য ও অনির্দিষ্ট বিষয়কে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করাই হলো ব্যাখ্যা (Explanation)।

খ. সর্বোচ্চ নিয়ম হওয়ার কারণে মৌলিক বা পরম নিয়মের ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
মৌলিক বা পরম নিয়ম হলো সর্বোচ্চ নিয়ম। যেমন: প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম ইত্যাদি। এসব নিয়মের চেয়ে উচ্চতর অন্য কোনো নিয়ম নেই। পাশাপাশি এরূপ নিয়মকে অন্য কোনো নিয়মের অন্তর্ভুক্তও করা যায় না। তাই মৌলিক বা পরম নিয়মের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার শৃঙ্খলযোজন রূপের দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়।
শৃঙ্খলযোজন হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার একটি বিশেষ রূপ। সাধারণত শৃঙ্খলযোজন কথাটির অর্থ হলো কতকগুলো ঘটনার পর্যায়ক্রমিক পারস্পরিক সংযুক্তি। অনেক সময় একটি ঘটনা বা কার্য সরাসরি কোনো কোনো কারণের ফলে সংঘটিত না হয়ে দূরবর্তী কোনো কারণ থেকে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ, যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো কার্য ও তার দূরবর্তী কারণের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী পর্যায় আবিষ্কার করা হয় তাকে শৃঙ্খলযোজন বলে। শৃঙ্খলযোজনের মাধ্যমে দেখানো হয় যে, কোনো কার্য তার কারণ থেকে সরাসরি উদ্ভব হয় না, বরং ঘটনার কারণ ও চূড়ান্ত কার্যের মধ্যবর্তী পর্যায় থাকে। এই মধ্যবর্তী পর্যায় অতিক্রম করেই কার্যটি সংঘটিত হয়। যার দৃষ্টান্ত দৃশ্যকল্প-১ এ লক্ষ করা যায়।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। অতএব বজ্রপাত হবে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, বিদ্যুৎ তাপ উৎপাদন করে, তাপ বায়ুর আকস্মিক প্রসার ঘটায় এবং বায়ুর সম্প্রসারণের কারণেই প্রচন্ড শব্দের সৃষ্টি হয়। তাই কার্যের (বজ্র গর্জনের) ও তার দূরবর্তী কারণের (বিদ্যুতের) অন্তর্বর্তী যোগসূত্র হচ্ছে তাপ, তাপের ফলে বায়ুর সম্প্রসারণ; এ অন্তর্বর্তী যোগসূত্রই উভয়ের মধ্যে সম্বন্ধ শৃঙ্খলযোজনের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়। তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত শৃঙ্খলযোজন রূপের দৃষ্টান্ত।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত দৃষ্টান্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্তি রূপের দৃষ্টান্ত।
সাধারণভাবে অন্তর্ভুক্তির অর্থ হচ্ছে একটি ঘটনাকে অন্য একটি ঘটনার আওতায় নিয়ে আসা বা একটি ক্ষুদ্র ঘটনাকে অন্য একটি বৃহৎ ঘটনার অধীন করা। বস্তুত অনেক সময় আলোচ্য ঘটনাকে তার চেয়ে বড় কোনো ঘটনার অধীনে এনে ব্যাখ্যা করা হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার এ ধরনের প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ‘অন্তর্ভুক্তি'। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে একটি কম ব্যাপক নিয়মকে তার থেকে ব্যাপকতর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর এভাবে আলোচ্য ব্যাখ্যা পদ্ধতি বেশি ব্যাপক নিয়ম থেকে কম ব্যাপক নিয়মের দিকে অগ্রসর হওয়ায় তা অবরোহ পদ্ধতির অনুসারী হয়ে থাকে। অর্থাৎ, অন্তর্ভুক্তি নামক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অবরোহ প্রক্রিয়া কার্যকর হয়ে থাকে।
উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লেখিত জোয়ার-ভাটার বিষয়টি যে প্রাকৃতিক নিয়মে সংঘটিত হয়, তা মূলত মাধ্যাকর্ষণ নিয়মের' অন্তর্গত। কাজেই জোয়ার-ভাটা সম্পর্কিত কম ব্যাপক বা বিশেষ নিয়মকে অধিক ব্যাপক বা সার্বিক নিয়ম হিসেবে মাধ্যাকর্ষণ নিয়মের আওতায় ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়াই হলো ‘অন্তর্ভুক্তি’ রূপ।
তাই বলা যায়, দৃশ্যকল্প-২ এ ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত।

৪. সকালে যখন আকাশ কালো হয়ে হঠাৎ বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত শুরু হয়। ভয়ে, আতঙ্কে রাহাত বাবাকে প্রশ্ন করল, ‘‘বজ্রপাত কী?’’ রাহাতের বাবা উত্তরে বললো, ‘‘বজ্রপাত হলো আকাশে দানব কর্তৃক নিক্ষেপিত সাদা আগুনের ঝলক।’’ একথা শুনে রাহাতের মা বললো, ‘‘বজ্রপাত হলো আকাশে ভাসমান মেঘের ভারি কণার ঘর্ষণের ফলে তৈরি আলো।’’
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তি কী ?
খ. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেন অবরোহমূলক প্রক্রিয়া?
গ. রাহাতের বাবার বক্তব্যে কোন ধরনের ব্যাখ্যা প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাহাতের মা এবং বাবার বক্তব্যে বিদ্যমান বিষয়ের পার্থক্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তি হলো কার্যকারণ নিয়ম।

খ. সার্বিক নীতি থেকে বিশেষ নীতি প্রকাশ করা হয় বলে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এক ধরনের অবরোহ প্রক্রিয়া।
অবরোহমূলক প্রক্রিয়ায় সার্বিক দৃষ্টান্ত থেকে বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অনুরূপভাবে ‘অন্তর্ভুক্তি’ রূপের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় উচ্চতর কোনো সাধারণ নিয়ম থেকে বিশেষ নিয়ম অনুমান করা হয়। এ কারণে বলা হয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হলো অবরোহমূলক প্রক্রিয়া।

গ. রাহাতের বাবার বক্তব্যে লৌকিক ব্যাখ্যা প্রতিফলিত হয়েছে।
যখন অতিপ্রাকৃতিক ও মনগড়া কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার বিবৃতি দেওয়া হয় তখন তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। লৌকিক ব্যাখ্যা ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও ধ্যানধারণার ওপর নির্ভরশীল। তাই এ প্রকার ব্যাখ্যার কোনো যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক মূল্য নেই।
আলোচ্য উদ্দীপকে রাহাতের বাবা বজ্রপাত সম্পর্কে বলেন, ‘‘বজ্রপাত হলো আকাশে দানব কর্তৃক নিক্ষেপিত সাদা আগুনের ঝলক।’’ তার এই বক্তব্য বজ্রপাতের সংজ্ঞার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক এবং এটি রাহাতের বাবার নিজস্ব বক্তব্য। তাই বলা যায়, রাহাতের বাবার বক্তব্য লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. রাহাতের মা এবং বাবার বক্তব্য যথাক্রমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয় না।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ করা হয়। এখানে কোনো ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ নেই। তাই এখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যেহেতু প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাই এ ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক কারণ ও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই এ ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় প্রকার ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।

৫. বৈশিষ্ট্য-১: জটিল, দুর্বোধ্য, রহস্যাবৃত বিষয়কে সহজ-সরল, সাবলীল ও স্পষ্টীকরণ করা।
বৈশিষ্ট্য-২: অনুমান, প্রকল্প, সংযুক্তিকরণ এবং শ্রেণিকরণের সাথে সম্পর্কিত।
বৈশিষ্ট্য-৩: অজ্ঞানতা, অতিপ্রাকৃতিকতা, অলৌকিকতা, গোঁড়ামি ও অন্ধবিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার রূপ কয়টি?
খ. ‘চিন্তার মৌলিক নিয়ম’ এর কেন ব্যাখ্যা হয় না?
গ. বৈশিষ্ট্য-১ এ কীসের ইঙ্গিত করা হয়েছে? ইহার প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বৈশিষ্ট্য-২ এবং বৈশিষ্ট্য-৩ এ নির্দেশিত বিষয়ে বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার রূপ তিনটি। যথাত বিশ্লেষণ, শৃঙখলযোজন ও অন্তর্ভুক্তি।

খ. সর্বোচ্চ নিয়ম হওয়ার কারণে চিন্তার মৌলিক নিয়মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
চিন্তার মৌলিক নিয়ম হলো সর্বোচ্চ নিয়ম। যেমন: প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম ইত্যাদি। এসব নিয়মের চেয়ে উচ্চতর অন্য কোনো নিয়ম নেই। পাশাপাশি এরূপ নিয়মকে অন্য কোনো নিয়মের অন্তর্ভুক্তও করা যায় না। তাই এরূপ মৌলিক নিয়মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।

গ. বৈশিষ্ট্য-১ এ ব্যাখ্যার ইঙ্গিত করা হয়েছে। নিচে ব্যাখ্যার প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করা হলো-
প্রকৃতিতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ঘটনা ঘটে চলেছে এবং কিছু ঘটনা এত জটিল অবস্থায় থাকে যে, সেগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কোনোকিছু বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ব্যাখ্যার মাধ্যমে ঐ ঘটনাগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট হয় এবং আমরা এগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারি। এভাবে ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমরা কোনো বিষয়ের বা ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে পারি। কেননা একটি ঘটনার ঘটনা বিভিন্ন রকম হতে পারে।
অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করার জন্যও ব্যাখ্যার প্রয়োজন। কেননা সাধারণ মানুষ অনেক সময় অতি প্রাকৃতিক কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাখ্যায় এসব অলৌকিকতার কোনো স্থান নেই। তাই চূড়ান্তভাবে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করতে ব্যাখ্যার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। পাশাপাশি জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্যও ব্যাখ্যার গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণত মানুষ কোনো বিষয় সম্পর্কে খুব বেশি জানতে আগ্রহী হয় না। কিন্তু যখন কেউ কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে চান তখন তাকে অনেক কিছুই জানতে হয়। কেননা ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করতে হয়। এতে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়।
তাই বলা যায়, জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য ব্যাখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ. বৈশিষ্ট্য-২ ও বৈশিষ্ট্য-৩ এ যথাক্রমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও লৌকিক ব্যাখ্যার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। নিচে উভয়পক্ষের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা করা হয় তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। আর প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যার একটি বড় গুণ। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। অর্থাৎ, এখানে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা অনুপস্থিত থাকে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো ঘটনাকে সমজাতীয় অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। লৌকিক কিন্তু ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় প্রকার ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে।

৬. দৃষ্টান্ত-১: নলকূপের হাতলে চাপ দিলেই পানি উপরে উঠে।
দৃষ্টান্ত-২: বর্ষায় পলি জমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালো ফসল হওয়ার কারণ এবং ভালো ফসল হওয়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কারণ।
দৃষ্টান্ত-৩: বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ এর নিয়ম অনুসারে জড়বস্তু সর্বদা ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হবে।
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী?
খ. লৌকিক ব্যাখ্যাকে সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যা বলা হয় কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ এ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার কোন রূপের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-২ ও দৃষ্টান্ত-৩ এ উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করাই হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

খ. লৌকিক ব্যাখ্যায় সাধারণ মানুষের মনগড়া ধারণা প্রাধান্য পায় বলে এরূপ ব্যাখ্যাকে সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যা বলা হয়।
ব্যক্তির মনগড়া ধারণা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয়ে যে ব্যাখ্যা প্রকাশ পায় তা-ই লৌকিক ব্যাখ্যা। এ ধরনের ব্যাখ্যা সবাই দিতে পারে। কারণ এরূপ ব্যাখ্যায় ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা প্রকাশ পায়। এ কারণে লৌকিক ব্যাখ্যাকে সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যা বলে।

গ. দৃষ্টান্ত-১ এ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিশ্লেষণ রূপের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিশ্লেষণ হচেছ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার একটি অন্যতম রূপ। জগতে অনেক ঘটনা আছে যেখানে একাধিক ঘটনা বা কারণ মিলিত হয়ে সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা কার্যটি সংগঠিত করে। এ ক্ষেত্রে কার্যটিকে বলা হয় মিশ্র বা সংযুক্ত কার্য, যাকে সহজ বা প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করাই হচ্ছে বিশ্লেষণ রূপ।
দৃষ্টান্ত-১ এ বর্ণিত, নলকূপের হাতলে চাপ দিলেই পানি উপরে উঠে। এটা একটি মিশ্র কার্য। কারণ নলকূপের এই পানি উঠে আসাটাকে বিশ্লেষণ করলে এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড়ায়- বায়ুর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৫ পাউন্ড চাপ দেয়, পানি সব দিকে সমান চাপ দেয়, হাতলে চাপ দিলে নলের ভেতরের বাতাস অপসারিত হয় এবং দুটি বিপরীত চাপের একটি অপসারিত হওয়ায় নলের মধ্যদিয়ে পানির ঊর্ধ্বমুখী গতি সঞ্চারিত হয়ে উপরে উঠে।
এভাবে বিশ্লেষণ রূপের মাধ্যমে নলকূপের হাতলে চাপ দিলেই পানির উপরে ওঠার ঘটনা জানা যায়।

ঘ. দৃষ্টান্ত-২ এ শৃঙ্খলযোজন এবং দৃষ্টান্ত-৩ এ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় বিষয় বিশ্লেষণ করা হলো-
কার্য ও দূরবর্তী কারণের মধ্যবর্তী স্তর বা পর্যায়কে বলা হয় শৃঙ্খলযোজন। এ শৃঙ্খলযোজনকে আবার প্রক্ষেপণও বলা হয়। তাই শৃঙ্খলযোজন হলো এমন একটি যোগসূত্র যা কার্য ও কারণের উভয় সম্বন্ধকে আবদ্ধ করে বা সম্পর্কিত করে। দৃষ্টান্ত-২ এ বর্ণিত, বর্ষায় পলি জমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় যা ভালো ফসল হওয়ার কারণ এবং ভালো ফসল হওয়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কারণ। এভাবে কার্য ও দূরবর্তী কারণের মধ্যবর্তী যোগসূত্র হচ্ছে শৃঙ্খলযোজন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে একটি কম ব্যাপক নিয়মকে অধিক ব্যাপক নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করাকে অন্তর্ভুক্তি বলে। দৃষ্টান্ত-৩ এ উল্লেখিত, বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ এর নিয়মানুসারে জড় বস্তু সর্বদা ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হবে। অর্থাৎ তিনি মাধ্যাকর্ষণকে বৃহৎ নিয়ম মনে করে ভূপৃষ্ঠের অন্যান্য বিষয়কে এই নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করেছেন। এভাবে কোনো কম ব্যাপক নিয়মকে কোনো বেশি ব্যাপক নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করাকে অন্তর্ভুক্তি বলে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার দুটি রূপ হলো শৃঙ্খলযোজন ও অন্তর্ভুক্তি। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে উভয়ে একটি থেকে অন্যটি আলাদা।

৭. চীনের হুয়ান শহরে এক নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। চীনের হুয়ান শহর থেকে এই ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ মনে করেন মানুষের আচরণে দেবতারা অসন্তুষ্ট হয়ে এ শাস্তি প্রদান করেছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় করোনা নামক ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে।
ক. ব্যাখ্যা কাকে বলে?
খ. মিশ্রকার্য হলো পৃথক কারণের একত্রিত ফল- বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকে মহামারীর কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যে বক্তব্য ফুটে উঠেছে তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সাধারণ মানুষের ধারণার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণার যে পার্থক্য দেখা যায়ত তা বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জটিল, অস্পষ্ট, দুর্বোধ ও অনির্দিষ্ট বিষয়কে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করাকে ব্যাখ্যা (Explanation) বলে।

খ. মিশ্রকার্য হলো পৃথক কারণের একত্রিত ফল-উক্তিটি যথার্থ।
আমরা জানি, মিশ্র কার্য হচ্ছে কয়েকটি স্বতন্ত্র কারণের একত্রিত ফল। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হলো ‘বিশ্লেষণ’। এই বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় মিশ্র কার্যের স্বতন্ত্র কারণকে পৃথকভাবে বা আলাদা আলাদা করে দেখানো হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমানে সড়ক দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে আমরা চালকের অসচেতনতা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, ট্রাফিক আইনের প্রতি অবহেলা ইত্যাদি কারণসমূহকে পৃথক পৃথকভাবে দায়ী করতে পারি। এ কারণেই বলা যায়, মিশ্রকার্য হলো পৃথক কারণের একত্রিত ফল।

গ. উদ্দীপকে মহামারীর কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ধারণা ফুটে উঠেছে। নিচে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে জটিল, দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট ঘটনাকে স্পষ্ট, সহজ, সরল ও বোধগম্য করে প্রকাশ করা হয়। এরূপ ব্যাখ্যায় ঘটনার কার্যকারণ বা প্রকৃত কারণ উল্লেখ করা হয়। তাই এ ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমরা কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে পারি বা ঘটনার স্বরূপ আমাদের কাছে বোধগম্য হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় বলে এ ব্যাখ্যা সবসময় একই থাকে এবং স্থান- কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন হয় না। যার দৃষ্টান্ত উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত, চীনের হুয়ান শহরে এক নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় করোনা নামক ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকদের এই তথ্য সঠিক এবং সর্বজনীন সত্য। এরূপ মৌলিক তথ্যের কারণে বলা যায়, উদ্দীপকে মহামারীর কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ধারণা ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সাধারণ মানুষের ধারণা লৈকিক ব্যাখ্যা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিচে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ব্যাখ্যায় প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক নিয়ম উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। অন্যদিকে, যে ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃতিক ও কাল্পনিক কারণ উল্লেখ করে কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা অনুপস্থিত থাকে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংযুক্তিকরণ করা হয়। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে অন্যান্য ঘটনার সাথে সংযুক্ত করা হয় না। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ও লৌকিক ব্যাখ্যার মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে। তবে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই প্রকৃত তথ্য করে থাকে।

৮. এ জগৎ বিচিত্র, জটিল ও রহস্যময়। এই রহস্যের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জন্ম হয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখা-প্রশাখা। কিন্তু সকল ঘটনার প্রকৃত কার্যকারণ মানুষের পক্ষে আবিষ্কার করা হয়ে ওঠেনি। তাই বলা যায়, সকল কিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দান সম্ভব নয়।
ক. কোন ব্যাখা প্রকল্প প্রণয়নে সহায়তা করে?
খ. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ঘটনার কারণ জানার প্রচেষ্টা কোন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিষয়ের সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখা।

খ. অন্তর্ভুক্তি হলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অন্যতম রূপ।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করার জন্য আলোচ্য ঘটনাকে তার চেয়ে বড় কোনো ঘটনার অধীনে এনে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয়। আর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় এ ধরনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় অন্তর্ভুক্তি। যেমন: চুম্বকত্বের নিয়মকে বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যাপকতর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়াই হলো অন্তর্ভূক্তি। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো বৈজ্ঞানিক ঘটনার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা হয়। তাই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন হয়।

গ. উদ্দীপকে ঘটনার কারণ জানার প্রচেষ্টা ব্যাখ্যাকরণের সাথে সম্পর্কিত।
ব্যাখ্যা হলো কোনো কিছুকে সহজ ও স্পষ্টতর করে তোলা। অর্থাৎ, জাগতিক বিষয়সমূহের মধ্যে অপেক্ষাকৃত জটিল, দুর্বোধ্য, অস্পষ্ট ও রহস্যময় ঘটনাকে সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করাই ব্যাখ্যার উদ্দেশ্য। বস্তুত আমরা কোনো জটিল বা রহস্যময় ঘটনাকে সরল ও সহজবোধ্য করে জানার চেষ্টা চালাই। যেমন- দিন-রাত হওয়ার কারণ, ঋতু পরিবর্তনের কারণ, বিভিন্ন দুর্যোগ হওয়ার কারণ প্রভৃতি সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল বিদ্যমান। এ কারণেই বিভিন্ন বই-পুস্তক, জ্ঞানী ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা জগতের এসব রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করি। এভাবে কোনো ঘটনার কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য ঘটনাবলিকে সুস্পষ্ট ও সহজবোধ্য করে জানার প্রয়াসকেই আমরা ব্যখ্যা বলি।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, এ জগৎ বিচিত্র, জটিল ও রহস্যময়। এ রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে জন্ম হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার। বস্তুত এসব শাখার মাধ্যমেই আমরা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য ঘটনাবলিকে জানার প্রয়াস চালাই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ঘটনার কারণ জানার প্রচেষ্টা ব্যাখ্যাকরণের সাথে সম্পর্কিত।

ঘ. উদ্দীপকে ব্যাখ্যাকরণ বা বৈজ্ঞানিক ব্যাখার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। নিম্নে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা আলোচনা করা হলো:
জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয়কে সুস্পষ্ট করার লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা হয়। এক্ষেত্রে সার্বিক নিয়মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এ ধরনের নিয়ম অন্য কোনো নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। যেমন-প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নিয়ম, চিন্তার মৌলিক নিয়ম প্রভৃতি। আবার জড় পদার্থের মৌলিক গুণ ব্যাখ্যা করা যায় না।
যেমন- কাঠ, কলম, পেন্সিল, বইখাতা প্রভৃতি দৃশ্যমান বস্তু একটি থেকে অন্যটি পৃথক। এর ফলে এদের একটিকে অন্যটির সাথে যুক্ত করা যায় না। তাই এসব গুণকে ব্যাখ্যা করা যায় না।
কোনো বস্তুর নিজস্ব বা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ এক ব্যক্তি বা বস্তুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সাথে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে যুক্ত করা যায় না। তাই ব্যক্তি বা বস্তুর এসব গুণকেও ব্যাখ্যা করা যায় না। এছাড়া অনন্য ও অতিসাধারণ কিছু বিষয় যেমন মানুষের মন, আত্মা, ঈশ্বর প্রভৃতি অতিজাগতিক বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ, শৃঙখলযোজন কিংবা অন্তর্ভুক্তি কোনোটিই করা সম্ভব নয়। তাই এসব বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাদান অসম্ভব।
উপর্যুক্ত আলোচনা সাপেক্ষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, আমাদের মৌলিক অনুভূতি, পরম বিষয় প্রভৃতির সংযুক্তিকরণ ও অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।

৯. স্বপন ও সুজন সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটছিল ও গল্প করছিল। জঙ্গলের মধ্যে একটি গুহার সামনে আসতেই স্বপন বলল, এ গুহায় বিরাট এক দানব বাস করে। গত বছর কমল কাকার ছেলে কার্তিককে ধরে মেরে ফেলেছে। তখন সুজন বললো, এ ঘটনা আমি বিশ্বাস করি না। হয়তো সে কোনো বাঘের শিকার হয়েছিল, আর বাঘেই তাকে খেয়ে ফেলেছে।
ক. 'বাদুড় একটি পাখি' এটি কোন ব্যাখাকে নির্দেষ করে?
খ. ব্যাখ্যা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কার্তিকের মৃত্যু নিয়ে স্বপনের বক্তব্য, যুক্তিবিদ্যার কোন ধরনের ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? বর্ণনা করো।
ঘ. স্বপন ও সুজনের বক্তব্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণপূর্বক কোনটিকে তুমি যথার্থ বলে মনে করো?

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'বাদুড় একটি পাখি' এটি লৌকিক ব্যাখাকে নির্দেশ করে।

খ. ব্যাখ্যা হলো কোনো পূর্বাবস্থাকে সহজ করে প্রকাশ করা।
একটি অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য বিষয়কে সুস্পষ্ট ও সুবোধ্য করে তোলাই হলো ব্যাখ্যা। অস্পষ্ট, জটিল এবং রহস্যজনক বলে দৃষ্ট হয় তবে সেই বিষয়কে সুবোধ্য, স্পষ্ট, সহজ ও বোধগম্য করে তোলার যে প্রক্রিয়া তাকেই ব্যাখ্যা বলে।

গ. উদ্দীপকে কার্তিকের মৃত্যু নিয়ে স্বপনের বক্তব্য যুক্তিবিদ্যায় আলোচিত লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
লৌকিক ব্যাখ্যা হলো কোনো ঘটনাকে অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক শক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস। বস্তুত প্রকৃতির নিয়মাবলি সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকের ধারণা থাকে খুবই কম। এক শ্রেণির মানুষ নানা কারণে জ্ঞানচর্চার সুযোগও পায় না। এজন্য তারা বহুবিধ কুসংস্কারে আক্রান্ত। এ কারণে এরূপ মানুষ অনেক সময় কোনো জটিল বা আপাত রহস্যময় ঘটনাকে কাল্পনিক বা অদৃশ্য শক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষের এরূপ প্রয়াসই লৌকিক ব্যাখ্যা।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, স্বপন জঙ্গলের একটি গুহা দেখিয়ে বন্ধুকে বলে, সেখানে বিরাট এক দানব বাস করে। ঐ দানব গত বছর তার কমল কাকার ছেলে কার্তিককে ধরে মেরে ফেলেছে। বস্তুত স্বপনের এ বক্তব্য ঘটনার কার্যকারণ নীতি নির্ভর নয়, বরং নিজের মনগড়া। এ কারণে তার ব্যাখ্যাটি লৌকিক ব্যাখ্যার সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. স্বপন ও সুজনের বক্তব্যে যথাক্রমে লৌকিক ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার নমুনা দেখা যায়। সুজনের বক্তব্যটি যথার্থ বলে মনে করি। নিচে উভয়ের বক্তব্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো-
কোনো কার্যকারণ নিয়ম ব্যতিরেকে কেবল মনগড়া ধারণা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নিয়ে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তা লৌকিক ব্যাখ্যা। অন্যদিকে, কোনো ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম অনুসরণ করে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক দিক উল্লেখ করা হয়। এ কারণে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অলৌকিকতা বা আকস্মিকতার কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় সাধারণত অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভুত্ব স্বীকার করা হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনার নিয়মকে একই জাতীয় অন্যান্য ঘটনার নিয়মের সাথে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নেওয়া ও মনগড়া কথা বলা হয় বলে এখানে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে না।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় স্বপন সুন্দরবনের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় বন্ধু সুজনকে একটি গুহা দেখিয়ে বলে, সেখানকার একটি দানব তার কাকার ছেলে কার্তিককে ধরে মেরে ফেলেছে। এটি স্বপনের মনগড়া অর্থাৎ নিছক লৌকিক ব্যাখ্যা। কিন্তু সুজন পারিপার্শ্বিকতা বিচার করে বলে, কার্তিক আসলে কোনো বাঘের শিকার হয়েছিল, আর বাঘেই তাকে খেয়ে ফেলেছে। তার এ বক্তব্য মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই এটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হিসেবে পরিগণিত।
বস্তুত, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ঘটনার মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রাধান্য পায়। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা প্রকাশ পায়। এ কারণে আমি স্বপনের বক্তব্যের চেয়ে সুজনের বক্তব্যকে যথার্থ বলে মনে করি।

১০. শিক্ষক শাহেদ ক্লাসে গিয়ে জানতে পারলেন শিক্ষার্থী নয়নের কলেরা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলেন, 'বলো তো, কলেরার কারণ কী?’ কণা বললো, খারাপ বাতাস লাগলে কলেরা হয়। বীণাবললো, মূলত কমা (,) আকৃতির এক ধরনের জীবাণুর কারণে কলেরা হয়ে থাকে। এ রোগ হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়।
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তিমূলে কী কাজ করে?
খ. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার রূপ বলতে কী বোঝ?
গ. কণার বক্তব্যে কোন ধরনের ব্যাখ্যার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কণা ও বীণার বক্তব্যের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈজ্ঞানিক ব্যাখার ভিত্তিমূলে কাজ করে তথ্য ও উপাত্ত।

খ. বিভিন্ন যুক্তিবিদ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার যেসব সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, তা থেকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার তিনটি রূপ লক্ষ করা যায়। যেমন: ১. বিশ্লেষণ, ২. শৃঙখলযোজন ও ৩. অন্তর্ভুক্তি।
যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো মিশ্র কার্যকে স্বতন্ত্র কারণসমূহের নিয়মের সাথে যুক্ত করা হয় তাকে বিশ্লেষণ বলে। শৃঙখলযোজন হলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কোনো দূরবর্তী কারণ ও তার কার্যের মধ্যে একটি মধ্যবর্তী অবস্থা আবিষ্কার করার প্রক্রিয়া। অপরদিকে, অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় একটি কম ব্যাপক নিয়মকে বেশি ব্যাপক নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা করা হয়।

গ. কণার বক্তব্যে লৌকিক ব্যাখ্যার প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়া কেবল মনগড়া ধারণা বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তাকে লৌকিক ব্যাখ্যা বলে। লৌকিক ব্যাখ্যায় ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। যেমন: চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা। চন্দ্রগ্রহণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও অনেকেই একে ‘রাহুর গ্রাস’ বলে মনে করে থাকে। তাদের এরূপ বিবৃতিই হলো লৌকিক ব্যাখ্যা।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, কণা কলেরা রোগের কারণ হিসেবে 'খারাপ ভিবরিও কলেরা নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ কারণে উদ্দীপকে কণার বক্তব্যটি লৌকিক ব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। বাতাস' লাগাকে দায়ী করে। এ বক্তব্যে তার মনগড়া ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ, কলেরা হলো এক প্রকার গুরুতর সংক্রামক রোগ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কণা ও বীণার বক্তব্যে যথাক্রমে লৈকিক ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নির্দেশিত হয়েছে। নিচে উভয় বক্তব্যের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো-
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় কণা কলেরার কারণ হিসেবে বলে, খারাপ বাতাস লাগলে কলেরা হয়। কিন্তু এটি তার মনগড়া ব্যাখ্যা। এ ধরনের ব্যাখ্যাকে বলা হয় লৌকিক ব্যাখ্যা। কারণ এরূপ ব্যাখ্যায় কার্যকারণ নিয়ম ব্যতিরেকে সাধারণ মানুষের নিছক মনগড়া ধারণা প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, কোনো ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম অনুসরণ করে যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে। উদ্দীপকের বীণা বলে, কমা (,) আকৃতির এক ধরনের জীবাণুর কারণে কলেরা হয়ে থাকে। এ রোগ হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তার এই বক্তব্য কলেরা রোগ হওয়ার সঠিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হিসেবে স্বীকৃত। বস্তুত উভয় ব্যাখ্যাই আমাদের কৌতূহলের পরিতৃপ্তি সাধন করে। পাশাপাশি কোনো অস্পষ্ট, জটিল বা দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজ ও স্পষ্ট করে বুঝতে সাহায্য করে। সে অর্থে উভয় ব্যাখ্যার মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
অন্যদিকে, লৌকিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মধ্যে মৌলিক ও পদ্ধতিগত তফাৎ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মৌলিক ও প্রাসঙ্গিক দিক উল্লেখ করা হয়। এ কারণে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অলৌকিকতা বা আকস্মিকতার কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে, লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভুত্ব স্বীকার করা হয়। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট ঘটনার নিয়মকে একই জাতীয় অন্যান্য ঘটনার নিয়মের সাথে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু লৌকিক ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত শক্তির আশ্রয় নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া হয় বলে এখানে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে না।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক থাকে যা লৌকিক ব্যাখ্যায় থাকে না। তাছাড়া লৌকিক ব্যাখ্যা প্রকৃতিগতভাবে ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণার ওপর নির্ভরশীল। এই কারণে লৌকিক ব্যাখ্যা যৌক্তিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়।
Share:

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৭

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৭ম অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মুক্তা তার জন্মদিনের উপহারগুলো রঙের ভিত্তিতে সুন্দরভাবে আলাদা আলাদা করে তাকে সাজিয়ে রেখেছে। অপরদিকে, অর্পিতা একটি ফুলের বাগান করেছে। যেখানে সে গন্ধযুক্ত ফুল একদিকে আর গন্ধবিহীন ফুল অন্যদিকে লাগিয়েছে।
ক. শ্রেণিকরণ কী?
খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর শ্রেণিকরণ করা যায় না কেন?
গ. উদ্দীপকে মুক্তার শ্রেণিকরণ কোন ধরনের শ্রেণিকরণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে অর্পিতার শ্রেণিকরণ মুক্তার শ্রেণিকরণ থেকে কি ভিন্ন? পাঠ্যবিষয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশেষ উদ্দেশ্যে কোনো বস্তুসমূহ বা ঘটনাবলির মধ্যে সাদৃশ্যের আলোকে তাদের একত্রে সন্নিবেশ করার মানসিক প্রক্রিয়াই হলো শ্রেণিকরণ।

খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর গুণ অস্থায়ী বলে তার শ্রেণিকরণ করা যায় না।
সাধারণত কোনো বস্তু বা ঘটনাসমূহের শ্রেণিকরণ করার সময় স্থায়ী ও আবশ্যিক গুণ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যেসব বস্তুর গুণ নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং এক বস্তুর গুণ অন্য বস্তুর মধ্যে নিহিত থাকে তাদের শ্রেণিকরণ করা যায় না।

গ. উদ্দীপকে মুক্তার শ্রেণিকরণ হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ।
যে শ্রেণিকরণে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয়, তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। অর্থাৎ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি তার বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণ করে থাকে। যেমন- একজন গ্রন্থাগারিক তার পাঠাগারে বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। পাঠকরা যেন সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় বইটি খুঁজে পান, সেজন্যই তা করা হয়। গ্রন্থাগারিকের বই বিশেষভাবে সাজিয়ে রাখার এই প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকের মুক্তা তার জন্মদিনের উপহারগুলো রঙের ভিত্তিতে সুন্দরভাবে আলাদা আলাদা করে তাকে সাজিয়ে রাখে। সে তার বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এ কাজটি করেছে। সুতরাং মুক্তার কাজটি হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ।

ঘ. উদ্দীপকে অর্পিতার শ্রেণিকরণ মুক্তার শ্রেণিকরণ থেকে ভিন্ন। কারণ অর্পিতার শ্রেণিকরণ প্রাকৃতিক হলেও মুক্তারটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণ। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যকার পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
ফলে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের সময় বস্তুসমূহের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে যুক্তিবিদরা প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণকে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া বলে মনে করেন। অর্পিতার কাজে এরকম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্তই পরিলক্ষিত হয়। কারণ সে গন্ধযুক্ত ফুল একদিকে আর গন্ধবিহীন ফুল অন্যদিকে লাগিয়েছে। অর্থাৎ সে ফুলের মৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে এ কাজটি করেছে। তাই তার কাজটি প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর এবং বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতি প্রদত্ত নয়, বরং মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ মাত্র। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মাধ্যমে আমাদের ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধিত হয় বলে একে ব্যবহারিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। মুক্তার কাজ এরূপ শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত। এ কারণে মুক্তার শ্রেণিকরণ অর্পিতার শ্রেণিকরণ থেকে আলাদা।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মধ্যে লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কারণ উভয় শ্রেণিকরণের প্রকৃতি একই। বস্তুত, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য শুধু উদ্দেশ্যগত। উদ্দীপকের অর্পিতা ও মুক্তার কাজের দিকে ভালো করে নজর দিলেই তা বোঝা যায়।

২. দৃশ্যকল্প-১: রাশেদের মা বলল, 'তুমি পড়ার টেবিলের প্রথম তাকে পাঠ্যবই, দ্বিতীয় তাকে গল্পের বই, তৃতীয় তাকে খাতা-কলম সাজিয়ে রাখবে।'
দৃশ্যকল্প-২: শফিক বললো, ‘প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদজগৎ ও অন্যান্য বস্তুরাজিকে প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে বিন্যস্ত করে রেখেছে।'
ক. শ্রেণিকরণের প্রধান ভিত্তি কী ?
খ. ক্রমিক শ্রেণিকরণ বলতে কী বোঝ?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এবং দৃশ্যকল্প-২ এর দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের প্রধান ভিত্তি হলো উপাত্তের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য।

খ. গুণের মাত্রার ভিত্তিতে কোনো বস্তু বা ঘটনাবলির শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়াকে বলে ক্রমিক শ্রেণিকরণ।
ক্রমিক শ্রেণিকরণে বিভক্ত শ্রেণির মধ্যে একই গুণ ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। যেমন- মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ সবার মধ্যেই জীবন আছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে জীবনের প্রকাশ সবচেয়ে বেশি, অন্যান্য প্রাণীতে জীবনের প্রকাশ কিছুটা কম এবং ‘নিশ্চল’, উদ্ভিদে জীবনের প্রকাশ সবচেয়ে কম। সুতরাং ‘জীবনের মাত্রা অনুসারে উক্ত উপাদানগুলোকে ক্রমানুসারে সাজালে প্রথমে মানুষ, মাঝখানে প্রাণী এবং শেষে থাকে উদ্ভিদ। এভাবেই ক্রমিক শ্রেণিকরণে একই গুণবিশিষ্ট কোনো বিষয়কে কেবল ‘গুণের মাত্রা’ অনুসারে শ্রেণিকরণ করা হয়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর দ্বারা কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করা হয়।
কৃত্রিম শ্রেণিকরণে ব্যক্তির বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয়। যেমন- একজন বই বিক্রেতা বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। এতে ক্রেতারা সহজেই তাদের চাহিদামতো বই খুঁজে পেতে পারেন। এ কারণে পুস্তক বিক্রেতার বই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
দৃশ্যকল্প-১ এর ঘটনায় রাশেদের মা তাকে পড়ার টেবিলের প্রথম তাকে পাঠ্যবই, দ্বিতীয় তাকে গল্পের বই, তৃতীয় তাকে খাতা-কলম সাজিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। তার এই নির্দেশ বাহ্যিক সাদৃশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই এটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এবং দৃশ্যকল্প-২ দ্বারা যথাক্রমে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ ও প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণকে ইঙ্গিত করা হয়। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ এ শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতি প্রদত্ত নয়, বরং মানুষের খেয়াল-খুশিমতো সৃষ্টি করা হয়। কৃত্রিম শ্রেণিকরণে প্রথমেই একটি নমুনা নির্বাচন করে বস্তুসমূহকে তার সাথে মিলিয়ে বিন্যস্ত করা হয়। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের ওপর নির্ভরশীল। এর দৃষ্টান্ত দৃশ্যকল্প-২ এ পরিলক্ষিত হয়। এরূপ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে।
বিশেষ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয় বলে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। পাশাপাশি এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারিক প্রয়োজন মিটে বলে একে ব্যবহারিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহ বা ঘটনাবলি সম্পর্কে তত্ত্বগত জ্ঞান লাভ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মধ্যে ব্যবধানের লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কারণ উভয় শ্রেণিকরণের প্রকৃতি একই। উভয়ের মধ্যে তফাৎ মূলত উদ্দেশ্যগত। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা এবং কৃত্রিম শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশেষ কোনো ব্যবহারিক সুবিধা লাভ করা।

৩. রেশমা ম্যাডাম তার ছাত্রীদেরকে বললেন, ‘তোমরা সপুষ্পক ও অপুষ্পক উদ্ভিদগুলো আলাদা করে রাখ।' আর ছাত্রদের বললেন, ‘বর্ণের ক্রমানুযায়ী উদ্ভিদগুলো আলাদা কর।' এ প্রসঙ্গে রানা স্যার বললেন, 'আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যে কাজটি করাচ্ছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
ক. ভ্রান্ত ব্যাখ্যা কী?
খ. দূরবর্তী কোনো ঘটনাকে কারণ বলা যায় না কেন?
গ. রানা স্যার কোন বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রেশমা ম্যাডাম তার ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যে দুটি কাজ করাচ্ছেন তাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে ব্যাখ্যায় যথার্থ ধারণা পাওয়া যায় না, তাকে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা বলে।

খ. দূরবর্তী কোনো ঘটনার মধ্যে কারণের মূল বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে দূরবর্তী ঘটনাকে কার্যের কারণ বলা যায় না।
কারণ হচ্ছে কোনো কার্যের অব্যবহিত পূর্ববর্তী সংশ্লিষ্ট ঘটনা। কিন্তু অনেক সময় আমরা কোন দূরবর্তী শর্তকে কারণ বলে গ্রহণ করে থাকি। আর এর ফলে অনুপপত্তি ঘটে। বস্তুত কারণ কার্যকে সংঘটিত করে। তাই কারণ হলো পূর্ববর্তী ঘটনা, আর কার্য হলো পরবর্তী ঘটনা। কোন কার্য সংঘটিত হওয়ার পূর্বে অনেকগুলো শর্ত থাকতে পারে। কিন্তু কার্য সংঘটিত হওয়ার পূর্বের অব্যবহিত ঘটনাই হবে কারণ। দূরবর্তী ঘটনা কোনো কার্যের শর্ত হতে পারে না।

গ. রানা স্যার শ্রেণিকরণের মতো বিষয়কে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন।
শ্রেণিকরণ হলো সাদৃশ্যের ভিত্তিতে কোনো বিষয় বা বস্তুসমূহকে একত্রে সন্নিবেশ করার মানসিক প্রক্রিয়া। যেমন- যেসব প্রাণী ঘাস বা তৃণ খায়, তাদের আমরা তৃণভোজী প্রাণী হিসেবে শ্রেণিকরণ করি। বস্তুত জগতের প্রতিটি বিষয়কে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে শ্রেণিকরণের মাধ্যমে নির্ধারিত বিষয়কে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে জানা যায়।
শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সার্বিক ও সাধারণ জ্ঞান অর্জিত হয়। ব্যবহারিক জীবনে আমরা বিভিন্ন বিষয় শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারি। তাই জ্ঞানগত দিক থেকে শ্রেণিকরণের তাৎপর্য অনেক বেশি। সর্বপরি আরোহ অনুমানে শ্রেণিকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে কাজ করে। এ কারণে যুক্তিবিদ্যায় শ্রেণিকরণের ভূমিকা অপরিসীম। যার দৃষ্টান্ত উদ্দীপকের রানা স্যারের বক্তব্যে পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. রেশমা ম্যাডাম তার ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে যে দুটি কাজ করাচ্ছেন, তাতে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য করা হলো-
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে।
অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশিমতো তা সৃষ্টি করে থাকে। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহের মৌলিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই একে বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বিশেষ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত। পাশাপাশি এ ধরনের শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধিত হয়। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে লৌকিক শ্রেণিকরণও বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ উভয়ের মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য বিদ্যমান। এ কারণেই প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ দুটি আলাদা।

৪. দৃশপট-১: ডঃ ইমতিয়াজ গবেষণার উদ্দেশ্যে সুন্দরবনে গেলেন। তিনি সেখানে তার দেখা প্রাণীগুলিকে মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী শ্রেণিতে বিভক্ত করলেন।
দৃশ্যপট-২: মিসেস দিনাত জাহান তার ব্যক্তিগত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিজস্ব গ্রন্থাগারের বইগুলিকে সাহিত্য, প্রবন্ধ এবং ছোট গল্পে বিভক্ত করলেন।
ক. ক্রমিক শ্রেণিকরণ কী?
খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর শ্রেণিকরণ সম্ভব নয় কেন?
গ. দৃশ্যপট-১ এ ডঃ ইমতিয়াজের কাজ শ্রেণিকরণের কোন বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে দৃশ্যপট-১ ও দৃশ্যপট-২ এর যে শ্রেণিকরণগুলি দেখা যায় তার পার্থক্যসমূহ পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একই গুণবিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনার মধ্যে কেবল ‘গুণের মাত্রা’ অনুসারে শ্রেণিকরণ করার প্রক্রিয়াই হলো ক্রমিক শ্রেণিকরণ।

খ. পরিবর্তনশীল বস্তুর গুণ অস্থায়ী। তাই এরূপ বস্তুর শ্রেণিকরণ করা যায় না।
সাধারণত কোনো বস্তু বা ঘটনাসমূহের শ্রেণিকরণ করার সময় স্থায়ী ও আবশ্যিক গুণ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যেসব বস্তুর গুণ নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং এক বস্তুর গুণ অন্য বস্তুর মধ্যে নিহিত থাকে, তাদের শ্রেণিকরণ করা যায় না।

গ. দৃশ্যপট-১ এ ডঃ ইমতিয়াজের কাজ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের বৈশিষ্ট্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। ফলে বস্তুসমূহের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। যেমন- পুষ্পের উপস্থিতির ভিত্তিতে উদ্ভিদকে সপুষ্পক ও অপুষ্পক উদ্ভিদে বিন্যস্ত করা প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।
দৃশ্যপট-১ এ ডঃ ইমতিয়াজ প্রাণীকে মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী হিসেবে বিভক্ত করেছেন। তার এ বিভক্তকরণ প্রক্রিয়া প্রাণীর মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ কারণেই এটি প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের অন্তর্গত।

ঘ. দৃশ্যপট-১ এ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ এবং দৃশ্যপট-২ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত রয়েছে। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে করা হয়। পাশাপাশি সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। ফলে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের বেলায় বস্তুসমূহকে বিন্যস্ত করার আগে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণে ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পায়। এরূপ শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্য নির্ভর হয়ে থাকে। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতি প্রদত্ত নয়, বরং মানুষের নিজস্ব মনোভাবের প্রকাশমাত্র।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহ বা ঘটনাবলি সম্পর্কে তত্ত্বগত ও আবশ্যিক জ্ঞান লাভ করা যায়। এসব কারণে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় বলে এ শ্রেণিকরণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তাই কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হলো একটি লৌকিক প্রক্রিয়া।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় শ্রেণিকরণই মানসিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার কারণে এদের মধ্যে তেমন বড় কোনো পার্থক্য লক্ষ করা যায় না। উভয়ের মধ্যে কার্যত উদ্দেশ্যগত পার্থক্যই বিদ্যমান।

৫. সুহাইল শখ করে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা আলাদা আলাদা বক্সে জমিয়ে রাখে। একদিন তার বাবা দেখেন সুহাইল মুদ্রাগুলোর সাথে বিভিন্ন দেশের কাগজের নোটও রেখেছে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি মুদ্রার সাথে নোট রেখেছ কেন? সুহাইল বলে ‘নোটও মুদ্রা, সবই তো এক। বাবা তখন সুহাইলকে মুদ্রা ও নোটের বিভাজনটা বুঝিয়ে দিলেন।
ক. কোন ধরনের শ্রেণিকরণ অবৈজ্ঞানিক?
খ. ‘গুণগত বিভাগ যৌক্তিক বিভাগ নয়’ কেন?
গ. সুহাইলের মুদ্রা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় কোন শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সুহাইলের বক্তব্যে যে অসঙ্গতি রয়েছে পাঠ্যবিষয়ের আলোকে তা বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হলো অবৈজ্ঞানিক।

খ. গুণগত বিভাগে যৌক্তিক বিভাগের নিয়ম অনুসরণ করা হয় না বলে তা যৌক্তিক বিভাগ নয়।
যৌক্তিক বিভাগের প্রথম নিয়মানুযায়ী, শ্রেণিবাচক পদকে বিভক্ত করা গেলেও কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বিভক্ত করা যায় না। কিন্তু এ নিয়ম অমান্য করে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে তার বিভিন্ন গুণে বিভক্ত করা হলে গুণগত বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটে। যেমন- আমকে বর্ণ, আকৃতি, গন্ধ ও স্বাদে বিভক্ত করলে গুণগত বিভাগ নামক অনুপপত্তি ঘটে। এই কারণে বলা হয়, গুণগত বিভাগ যৌক্তিক বিভাগ নয়।

গ. সুহাইলের মুদ্রা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত লক্ষ করা যায়।
যে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। অর্থাৎ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি তার বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে। যেমন- সহজেই কোনো বই খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে একজন গ্রন্থগারিক আকৃতি বা মূল্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। তার এই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকের সুহাইল বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা বক্সে জমিয়ে রাখে। মুদ্রা সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়ায় সুহাইলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। এ কারণে বলা যায়, সুহাইলের কর্মকান্ড হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ।

ঘ. সুহাইলের বক্তব্যে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে।
অতিব্যাপক বিভাগ এক প্রকার ভ্রান্ত বিভাগ প্রক্রিয়া। যৌক্তিক বিভাগে বিভক্ত উপজাতির মিলিত ব্যক্ত্যর্থ যদি বিভাজ্য জাতির ব্যক্ত্যর্থের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে। যেমন: মুদ্রাকে স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, ব্রোঞ্জমুদ্রা ও অন্যান্য ধাতব মুদ্রা এবং ব্যাংক নোটে বিভক্ত করলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটবে। কেননা, স্বর্ণ মুদ্রা এবং অন্যান্য ধাতব মুদ্রা এ দুই ভাগের মধ্য দিয়েই মুদ্রার ব্যক্ত্যর্থ সমান হয়। কিন্তু উক্ত দৃষ্টান্তে মুদ্রার ব্যক্ত্যর্থের সাথে ব্যাংক নোট অতিরিক্ত যোগ করায় মোট ব্যক্ত্যর্থ বেশি হয়। ফলে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায়, সুহাইল বিদেশি মুদ্রার সাথে নোটের সমন্বয় করার ফলে মুদ্রার ব্যক্ত্যর্থ বেশি হয়েছে। এ কারণে সুহাইলের বক্তব্যে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে।
পরিশেষে বলা যায়, যৌক্তিক বিভাগের তৃতীয় নিয়মানুসারে, বিভাজ্য জাতির ব্যক্ত্যর্থ এবং বিভক্ত উপজাতির ব্যক্ত্যর্থ পরস্পর সমান হবে। উদ্দীপকের সুহাইল এই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে বলে তার বক্তব্যে অতিব্যাপক বিভাগ অনুপপত্তি ঘটেছে।

৬. সুহাইল আল মাখতুম একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী। তিনি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি লক্ষ করেন কোনো উদ্ভিদের বীজ এককোষী, আবার কোনো উদ্ভিদের বীজ বহুকোষী। এ ভিত্তিতে তিনি উদ্ভিদকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন। একদিন তিনি এককোষী বীজ সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানার জন্য লাইব্রেরিতে যান। সেখানে একটি সেলফের প্রথম তাকে বেশ কিছু বই দেখেন। প্রতিটি বই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, সেখানে ১০টি বই আছে।
ক. শ্রেণিকরণের সাধারণ উদ্দেশ্য কী?
খ. শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।
গ. উদ্দীপকের সুহাইল আল মাখতুমের বিভাজনে শ্রেণিকরণের কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে?
ঘ. সুহাইল আল মাখতুমের গণনা প্রক্রিয়ায় ইঙ্গিতকৃত আরোহের যথার্থতা মূল্যায়ন করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের সাধারণ উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান অর্জন করা।

খ. শ্রেণিকরণের দুটি উদ্দেশ্য আছে।
যুক্তিবিদরা শ্রেণিকরণের দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করেন। যথাত সাধারণ বা বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য এবং বিশেষ বা ব্যবহারিক উদ্দেশ্য। যে কোনো ব্যক্তি এই দুটি উদ্দেশ্যের মাধ্যমে শ্রেণিকরণ করে থাকে।

গ. উদ্দীপকে সুহাইল আল মাখতুমের বিভাজনে শ্রেণিকরণের বিন্যস্তকরণের দিকটি নির্দেশ করে।
প্রকৃতিতে বিভিন্ন বস্তু ও ঘটনা এলোমেলো ও বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যমান থাকে। এসব বস্তু ও ঘটনাকে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে একত্রিত করা হয় শ্রেণিকরণের মাধ্যমে। অর্থাৎ কিছু বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করে তাদের একই শ্রেণিভুক্ত করা এবং কিছু বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করে তাদের একত্র করা হয়। এভাবে শ্রেণিকরণে সকল বস্তু ও ঘটনাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়।
উদ্দীপকের সুহাইল আল মাখতুম উদ্ভিদের বীজকে এককোষী এবং বহুকোষীতে বিভক্ত করেছেন। তার এই কার্যক্রম শ্রেণিকরণের বিন্যস্তকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে সুহাইল আল মাখতুমের গণনা প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ আরোহের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়, যা প্রকৃত আরোহ নয়।
যে আরোহ অনুমানে প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণের ভিত্তিতে সার্বিক যুক্তিবাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে পূর্ণাঙ্গ আরোহ বলে। পূর্ণাঙ্গ আরোহের অন্তর্গত প্রতিটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করার পর সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বস্তুত আরোহ অনুমানের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরোহমূলক লম্ফের (জানা থেকে অজানায় যাওয়া) উপস্থিতি। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আরোহে আরোহমূলক লম্ফ অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ আরোহকে প্রকৃত আরোহ বলা যায় না।
পূর্ণাঙ্গ আরোহ সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক দৃষ্টান্ত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে বলে এর সিদ্ধান্তকে যথার্থ অর্থে সার্বিক বলা যায় না। কারণ এর সিদ্ধান্ত কতকগুলো বিশেষ দৃষ্টান্তের সমষ্টি।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত পূর্ণাঙ্গ আরোহ প্রকৃত আরোহ নয়। কারণ ব্রিটিশ যুক্তিবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল মনে করেন, পূর্ণাঙ্গ আরোহ নিছক জ্ঞাত ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত সমষ্টিকরণ। সুতরাং বলা যায়, পূর্ণাঙ্গ আরোহ হলো অপ্রকৃত আরোহ।

৭. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. শ্রেণিকরনের অপর নাম কি ?
খ. পরতম জাতির শ্রেণিকরণ করা যায় না কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কোন শ্রেণিকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়?
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এ যে দুটি শ্রেণিকরণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে সম্পর্ক দেখাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের অপর নাম বিন্যাসকরণ।

খ. পরতম জাতি থেকে ব্যাপকতর অন্য কোনো জাতি নেই বলে এরূপ জাতির শ্রেণিকরণ করা যায় না।
পরতম জাতি হচ্ছে সর্বোচ্চ জাতি, যাকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো ব্যাপক অন্য কোনো জাতি বা স্তর নেই। এ কারণে সর্বোচ্চ জাতি হিসেবে পরতম জাতির শ্রেণিকরণ করা সম্ভব হয় না। যেমন: দ্রব্য হচ্ছে একটি পরতম জাতি। দ্রব্যকে আর অন্য কোনো জাতির অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। সুতরাং এর শ্রেণিকরণ করাও অসম্ভব।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। ফলে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণে বস্তুসমূহের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- মেরুদন্ডের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রাণীকে মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী হিসেবে বিন্যস্ত করা প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের একটি দৃষ্টান্ত।
দৃশ্যকল্প-১ এ উদ্ভিদ জগতকে সপুষ্পক ও অপুষ্পক শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এ বিভক্তকরণ প্রক্রিয়া মৌলিক বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ কারণেই দৃশ্যকল্প-১ এর দৃষ্টান্ত প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের অন্তর্গত।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ ও দৃশ্যকল্প-২ কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করে। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো-
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে উভয়ের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। সাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উভয় শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্যই হলো জ্ঞানার্জন করা। পাশাপাশি উভয় শ্রেণিকরণ মানসিকভাবে সম্পন্ন হয় এবং আলোচ্য বিষয় সাদৃশ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
বৈসাদৃশ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ মৌলিক সাদৃশ্যভিত্তিক হলেও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ গুরুত্বহীন ও বাহ্যিক সাদৃশ্যভিত্তিক। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জ্ঞান লাভ। অর্থাৎ এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে আলোচ্য বিষয়ে সার্বিক ধারণা লাভ করা যায়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়। তাই এ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে পাওয়া যায় বিশেষ জ্ঞান। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের উপকরণগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণের উপকরণগুলো মানুষের তৈরি। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ সংজ্ঞাভিত্তিক আর কৃত্রিম শ্রেণিকরণ নমুনাভিত্তিক। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হলেও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হলো লৌকিক প্রক্রিয়া।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের পেছনে উদ্দেশ্যের পার্থক্য থাকায় দুটির মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য থাকা স্বাভাবিক।

৮. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. শ্রেণিকরণের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী ?
খ. শ্রেণিকরণ একটি মানসিক প্রক্রিয়াত ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ছক-২ কী নির্দেশ করেছে এবং কেন?
ঘ. উদ্দীপকের ছক-১ ও ছক-২ দ্বারা নির্দেশিত বিষয়ের তুলনামূলক পার্থক্য লেখো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শ্রেণিকরণের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Classification'।

খ. শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়াটি ব্যক্তি কাল্পনিকভাবে সম্পন্ন করে বলে একে মানসিক প্রক্রিয়া বলা হয়।
শ্রেণিকরণের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া যেমন- পদার্থ কঠিন, তরল ও বায়বীয় এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত। এ বিভক্তকরণ প্রক্রিয়া মানসিক চিন্তার ফল। যেমন- একজন ছাত্র তার সমস্ত বই গুরুত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন তাকে (Bookshelf) সাজিয়ে রাখে। তার এই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া মানসিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য বলা হয় শ্রেণিকরণ একটি মানসিক প্রক্রিয়া।

গ. উদ্দীপকের ছক-২ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করছে।
যে শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়ায় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয়, তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। এরূপ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি তার বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে। যার দৃষ্টান্ত ছক-২ এ লক্ষ করা যায়।
ছক-২ প্রাণীকে বন্যপ্রাণী ও গৃহপালিত প্রাণী পদে বিভক্ত করা হয়েছে। এরূপ বিভক্তকরণে ব্যক্তির বিশেষ উদ্দেশ্য প্রাধান্য পায়। তাই বলা যায়, ছক-২ কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের ছক-১ ও ছক-২ দ্বারা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য করা হলো-
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণের সাদৃশ্যের বিষয়গুলো প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ অবান্তর ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ শ্রেণিকরণে নির্দেশিত সাদৃশ্যের বিষয়গুলো ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশিমতো তা সৃষ্টি করে থাকে।
প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুসমূহের মৌলিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই একে বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণও বলা হয়। কিন্তু কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বিশেষ উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত। পাশাপাশি এ ধরনের শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যবহারিক প্রয়োজন সাধিত হয়। এ কারণে কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে লৌকিক শ্রেণিকরণও বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ উভয়ের মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য বিদ্যমান। এ কারণেই ছক-১ ও ছক-২ এর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

৯. উদ্দীপক-১ : বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৮৭ সালের বন্যা, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যা সম্পর্কে আমরা অবগত। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে এটা প্রতীয়মান হয়, অসচেতনতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। প্রকৃতির এরূপ আচরণ অতীত অপেক্ষা বর্তমানে ঘন ঘন সংঘটিত হচ্ছে।
উদ্দীপক-২ : ঢাকা শহরে কয়েক বছর আগে জ্বরে মানুষ মৃত্যুবরণ করে। প্রথমাবস্থায় জ্বরের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়। বিভিন্ন অনুসন্ধানে ডাক্তারেরা নিশ্চিত করলেন এডিস ইজিপটি মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়।
ক. পরীক্ষণ কী?
খ. আরোহের আকারগত ভিত্তি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপক-২ এ কোন বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেছে?
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে উদ্দীপক-১ ও উদ্দীপক-২ এর স্বরূপ আলোচনা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কৃত্রিম পরিবেশে উৎপাদিত কোনো কৃত্রিম ঘটনার প্রত্যক্ষণকে পরীক্ষণ বলে।

খ. যে সব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে আরোহের আকারগত দিক গড়ে ওঠে তাকে আরোহের আকারগত ভিত্তি বলে।
আরোহ অনুমানে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ, আরোহ অনুমান হলো বিশেষ থেকে সার্বিকে গমনের একটি প্রক্রিয়া। আর আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয় প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের ভিত্তিতে। তাই এই দুটি বিষয় আরোহের আকারগত ভিত্তি।

গ. উদ্দীপক-২ এ আরোহের আকারগত ভিত্তি কার্যকারণ নিয়মের প্রতিফলন ঘটেছে।
আরোহের আকারগত ভিত্তির একটি হলো কার্যকারণ নিয়ম। কার্যকারণ নিয়মে কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক সম্পর্ক স্বীকার করা হয়। এই মত অনুসারে কোনো কার্যের কারণ একটি। তাই বলা যায়, যে মতবাদ অনুযায়ী কারণ ও কার্যের মধ্যে আবশ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান এবং প্রতিক্ষেত্রে একই কারণ একই কার্য ঘটায় সেই মতবাদকে কার্যকারণ নিয়ম বলে। এই মতবাদ অনুযায়ী কারণই কার্যকে সংঘটিত করে।
উদ্দীপক-২ এ বলা হয়েছে যে, ডাক্তাররা অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছেন এডিস ইজিপটি মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এখানে এডিস ইজিপটি মশার কামড় কারণ এবং ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে কার্য। এভাবে কার্যকারণের ক্ষেত্রে কারণই কার্যকে সংঘটিত করে। আর কারণ থাকে আগে এবং কার্য থাকে কারণের পরে।

ঘ. উদ্দীপক-১ এর মাধ্যমে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং উদ্দীপক-২ এর মাধ্যমে কার্যকারণ নিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি আরোহের আকারগত ভিত্তির অন্যতম অংশ। আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমনের ক্ষেত্রে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি আরোহের একটি স্বতঃসিদ্ধ নীতি। তাই এক কথায় এর সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। যুক্তিবিদদের মতে, প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির প্রকৃতি হচ্ছে- প্রকৃতি, নিয়মের উপাসক, প্রকৃতির, রাজ্যে সর্বত্র একই রূপ বিরাজ করে, প্রকৃতি ইতিহাসের অনুসারী ইত্যাদি। অনেক সময় প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতিকে নঞর্থকভাবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এটিও প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতির শৃঙ্খলাকে প্রকাশ করে। যেমন- প্রকৃতিতে খামখেয়ালির কোনো স্থান নেই। প্রকৃতি অভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন রূপ আচরণ করে না ইত্যাদি। মোট কথা প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা অনুযায়ী প্রকৃতির সর্বত্র একই নিয়ম কার্যকর এবং প্রকৃতিতে খামখেয়ালির কোনো স্থান নেই। প্রকৃতির সর্বত্র একই রূপ বিরাজমান।
কার্যকারণ নিয়মও আরোহের আকারগত ভিত্তির অপরিহার্য অংশ। এই নীতিটিও আরোহের একটি মৌলিক নীতি। কার্যকারণ নিয়ম অনুযায়ী জগতের প্রতিটি ঘটনায় কার্যকারণ শৃঙ্খলে যুক্ত। জগতে কোনো ঘটনা বিনা কারণে ঘটেনা। আর প্রতিটি ঘটনার কারণ নির্দিষ্ট। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে একই কারণ একই কার্য ঘটায়। কার্যকারণ নিয়ম অনুযায়ী কোনো কারণ তার কার্যের সাথে এমনভাবে যুক্ত যে, কারণটি ঘটলে কার্য ঘটে আর কারণটি না ঘটলে কার্য ঘটেনা। অর্থাৎ, কারণ ছাড়া কার্য হয় না। তাই কারণ ও কার্যের মধ্যে অনিবার্য সম্পর্ক বিদ্যমান।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়ম উভয়ই আরোহের আকারগত ভিত্তির অংশ। উভয়ের সমন্বয়ে আরোহের আকারগত ভিত্তি গড়ে ওঠে।


১০. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ কী?
খ. বৃহত্তম বা পরতম জাতিকে কি শ্রেণিকরণ করা যায়?
গ. ছক-১ এ কোন শ্রেণিকরণ নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ছক-১ ও ছক-২ এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে শ্রেণিকরণে মৌলিক অপরিহার্য সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহ বিন্যস্ত করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ বলে।

খ. বৃহত্তম বা পরতম জাতি থেকে ব্যাপকতর অন্য কোনো জাতি নেই বলে এরূপ জাতির শ্রেণিকরণ করা যায় না
পরতম জাতি হচ্ছে সর্বোচ্চ জাতি। এই জাতিকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো অন্য কোনো জাতি বা স্তর নেই। এ কারণে সর্বোচ্চ জাতি হিসেবে পরতম জাতির শ্রেণিকরণ করা সম্ভব হয় না।

গ. ছক-১ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করে।
কৃত্রিম শ্রেণিকরণে ব্যক্তির বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয় যেমন- একজন বই বিক্রেতা বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখেন। এতে ক্রেতারা সহজেই তাদের চাহিদা মতো বই খুঁজে পায়। এ কারণে পুস্তক বিক্রেতার বই সাজিয়ে রাখার প্রক্রিয়া কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ছক-১ এ বর্ণিত বুক সেলফে কাব্য, উপন্যাস ও নাটকের বই সাজিয়ে রাখার দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছে। এরূপ দৃষ্টান্তে ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়। তাই এটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।

ঘ. ছক-১ এ কৃত্রিম শ্রেণিকরণ এবং ছক-২ এ ক্রমিক শ্রেণিকরণকে নির্দেশ করে। নিচে উভয় শ্রেণিকরণের তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
যে শ্রেণিকরণে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনাবশ্যক ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বস্তু বা ঘটনাসমূহের বিন্যাস করা হয় তাকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলে। অন্যদিকে, গুণের মাত্রার ভিত্তিতে কোনো বস্তু বা ঘটনাবলির শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়াকে বলে ক্রমিক শ্রেণিকরণ। কৃত্রিম শ্রেণিকরণে বস্তু বা বিষয়ের গুণ তেমন বিবেচনা করা হয় না। কিংবা হলেও তা প্রতিটি দৃষ্টান্তে সমান ভাবে বিদ্যমান থাকে। কিন্তু ক্রমিক শ্রেণিকরণে বিভক্ত শ্রেণির মধ্যে একই গুণ ভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান থাকে।
ছক-১ এ বর্ণিত বুক সেলফে কাব্য, উপন্যাস ও নাটকের বই সাজিয়ে রাখার দৃষ্টান্তে ব্যক্তির স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে, বস্তুর গুণের মাত্রা নয়। এ কারণে এটি কৃত্রিম শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, ছক-২ এ ‘জীবনের মাত্রা' নামক গুণের ভিত্তিতে উক্ত উপাদানগুলোকে প্রথমে মানুষ, এরপর ইতর প্রাণী এবং শেষে উদ্ভিদকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এ কারণে এটি ক্রমিক শ্রেণিকরণের দৃষ্টান্ত।
তাই বলা যায়, কৃত্রিম শ্রেণিকরণ এবং ক্রমিক শ্রেণিকরণ উভয়ই মানসিক প্রক্রিয়া হলেও তাদের মধ্যে পদ্ধতিগত ভিন্নতা বিদ্যমান।
Share:

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৮

HSC যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৮ম অধ্যায়

HSC Logic 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. দৃশ্যকল্প-১: হেলেনা বাসায় ফিরে তার আমেরিকা প্রবাসী বোনকে দেখে খুবই অবাক হলো।
দৃশ্যকল্প-২: একটি বাক্সে ১০০টির মধ্যে ৩০টি লাল ও ৭০টি নীল বল আছে। বাক্স হতে একটি বল উঠানো হলে বলটি নীল হওয়ার সম্ভাবনা ৩০/১০০।
ক. সম্ভাবনা কী?
খ. সম্ভাব্যতা আরোহের ওপর নির্ভরশীল কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ তোমার পাঠ্য কোন বিষয়কে নির্দেশ করে?
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ তোমার পাঠ্য যে দুটি বিষয়কে নির্দেশ করে তাদের পার্থক্য দেখাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাবনা হচ্ছে কোনো ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা।

খ. সম্ভাব্যতা আরোহের ওপর নির্ভরশীল।
আরোহ অনুমানের সব সিদ্ধান্তই সম্ভাব্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় না। তাই সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য থাকে। এ কারণে যুক্তিবিদ জেভন্স আরোহ অনুমানকে সম্ভাবনার উপর নির্ভরশীল বলেছেন।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ আকস্মিকতা বিষয়কে নির্দেশ করে।
‘আকস্মিক’ শব্দের ইংরেজি 'Chance' কথাটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ 'Cheance' (চিয়াশেঁ) থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ- ‘আকস্মিক বিষয়, সৌভাগ্য, ভাগ্য, পরিস্থিতি, ঘুটি বা পাশার দান' ইত্যাদি। বস্তুত যে ঘটনার কারণ অজ্ঞাত থাকে বা কারণ অজানা থাকে এবং যা আমাদের হঠাৎ বিস্মিত করে তোলে তাই হলো আকস্মিকতা। অর্থাৎ আমরা যখন কোনো ঘটনার কারণ জানতে পারি না বা কারণ উদ্ধার করতে পারি না, তখন উক্ত ঘটনাকে আকস্মিক বলে চালিয়ে দেই। যেমন-‘‘কোনো পূর্বাভাস ও সংকেত ছাড়াই ‘ক’ এলাকায় হঠাৎ করে একটি টর্নেডো বয়ে গেল’’ - এটি একটি আকস্মিক ঘটনা।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ঘটনায় হেলেনা তার আমেরিকা প্রবাসী বোনকে বাসায় দেখে খুবই অবাক হয়। কারণ এরূপ ঘটনার জন্য আগে থেকে হেলেনা প্রস্তুত ছিল না। এ কারণে এটি তার কাছে একটি আকস্মিক ঘটনা।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ আকস্মিকতা এবং দৃশ্যকল্প-২ সম্ভাবনার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ঘটনার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না আবার ঘটনাটি অনিশ্চিত সেটাও বলা যায় না তাকে সম্ভাব্য ঘটনা বলে। অর্থাৎ সম্ভাবনা হলো ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা। অন্যদিকে, কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন অপ্রত্যাশিত বা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে আকস্মিকতা বলে। সম্ভাবনা একটি মাত্রাগত ব্যাপার। অর্থাৎ সম্ভাবনা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি হয়, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম হয়। তবে কোনোভাবেই সেটি নিশ্চয়তায় পৌঁছায় না। যেমন- দৃশ্যকল্প-২ এ বল নীল হওয়ার সম্ভাবনা ৩০/১০০। এ বিষয়টি কম সম্ভাবনার মাত্রাকে নির্দেশ করে।
অন্যদিকে, আকস্মিকতা কোনো মাত্রাগত ব্যাপার নয়। অর্থাৎ কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে আকস্মিকতার মাত্রা নির্ণয় করা যায় না।
সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আংশিক জ্ঞান থাকে। অর্থাৎ কার্যকারণ নিয়মের অপূর্ণ জ্ঞানই সম্ভাবনার ভিত্তিমূল হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পূর্ণই আমাদের অজানা থাকে। এ কারণে আমরা ঘটনার যৌক্তিক কারণ নির্ণয় করতে পারি না। পাশাপাশি সম্ভাবনামূলক ঘটনা চারটি নিয়মের সাহায্যে পরিমাপ করা যায়। অর্থাৎ বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা পরিমাপযোগ্য। কিন্তু আকস্মিকতা পরিমাপের কোনো নিয়ম নেই। তাই আকস্মিক ঘটনা পরিমাপ করা যায় না।
পরিশেষে বলা যায়, সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। বস্তুত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার আংশিক জ্ঞান থাকলেও আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার সকল বিষয় আমাদের অজানা থাকে।

২. দৃশ্যকল্প-১: বাবুল তার পড়ার টেবিলে পরীক্ষার জন্য মনোযোগ সহকারে পড়ছে। রাত প্রায় দশটা। হঠাৎ তার টেবিল-চেয়ার কেঁপে উঠছে। বাবা দৌড়ে এসে বললেন, ‘‘কেউ ঘরের মধ্যে থেকো না। সবাই বাইরে চলে এসো, ভূমিকম্প হচ্ছে।’’ সবাই তাড়াহুড়া করে বাইরে এল।
দৃশ্যকল্প-২: বৈশাখের দুপুর। প্রচন্ড গরম। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। সমুদ্রে নিম্নচাপ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বিপদ সংকেত দিচ্ছে। বেতার ও টিভিতে বারবার এ সংকেত প্রচারিত হচ্ছে। শেষরাতে ঝড় হতে পারে।
ক. সম্ভাব্যতা পরিমাপের নিয়ম কয়টি?
খ. সম্ভাব্যতার ভিত্তি আত্মগত না বস্তুগত? ব্যাখ্যা করো।
গ. দৃশ্যকল্প-২ এ পাঠ্যবইয়ের যে বিষয়টির সাথে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়ত তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও ২ এর তুলনামূলক পার্থক্য দেখাও।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাব্যতা পরিমাপের নিয়ম চারটি।

খ. সম্ভাব্যতার ভিত্তি আত্মগত ও বস্তুগত ভিত্তি উভয়ই।
সম্ভাবনার আত্মগত ভিত্তি বলতে বিশ্বাস এবং বস্তুগত ভিত্তি বলতে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে বোঝানো হয়। যুক্তিবিদ জেভন্স এর মতে, আমাদের বিশ্বাসের মাত্রার ওপর নির্ভর করে কোনো ঘটনার সম্ভাব্যতা। আবার যুক্তিবিদ কার্ভেথ রিড বলেন, সম্ভাব্যতার ভিত্তি আত্মগত নয় বরং বস্তুগত। কারণ কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা নির্ভর করে সে ঘটনা সম্পর্কে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর। সার্বিক প্রেক্ষিতে বলা যায়, সম্ভাবনার ভিত্তি আত্মগত ও বস্তুগত উভয়ই।

গ. দৃশ্যকল্প-২ এ পাঠ্যবইয়ের সম্ভাবনার বিষয়টির সাথে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
সম্ভাবনা হলো একটি দ্ব্যর্থবোধক শব্দ। যা কোনো ঘটনার মধ্যবর্তী অবস্থাকে বোঝায়। অর্থাৎ কোনো ঘটনা ঘটতে পারে, আবার নাও ঘটতে পারেত এরূপ অবস্থা বোঝাতে আমরা সম্ভাবনা শব্দটি ব্যবহার করে থাকি যেমন- একটি মুদ্রা নিক্ষেপে হেড অথবা টেল ওঠার ঘটনা সম্ভাবনার সাথে সম্পর্কিত।
দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত ‘শেষ রাতে ঝড় হতে পারে’ - এ ধরনের বাক্য কোনো ঘটনার মধ্যবর্তী অবস্থা নির্দেশ করে। এ কারণে দৃশ্যকল্প-২ এর নির্দেশিত বিষয়টি হলো সম্ভাবনা।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ আকস্মিকতা এবং দৃশ্যকল্প-২ সম্ভাবনার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে আকস্মিকতা ও সম্ভাবনার মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন অপ্রত্যাশিত বা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে আকস্মিকতা বলে। যেমন- দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ভূমিকম্পের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। এ কারণে বাবুল ও তার পরিবারের কাছে এটি একটি আকস্মিক ঘটনা। অন্যদিকে, সম্ভাবনা হলো কোনো ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা। এ কারণে এটি একটি মাত্রাগত বিষয়। যেমন-দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত মেঘের ঘনঘটা, সমুদ্রের নিম্নচাপত এসব প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে শেষরাতে ঝড় হতে পারে। উদ্দীপকের এ বক্তব্যটি অধিক মাত্রাকে নির্দেশ করে। কিন্তু আকস্মিক ঘটনায় কোনো মাত্রা নির্ণয় করা যায় না। কারণ আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পূর্ণই আমাদের অজানা থাকে।
সম্ভাবনামূলক ঘটনা চারটি নিয়মের সাহায্যে পরিমাপ করা যায়। অর্থাৎ বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা পরিমাপযোগ্য। কিন্তু আকস্মিকতা পরিমাপের কোনো নিয়ম নেই। তাই আকস্মিক ঘটনা পরিমাপ করা যায় না।
পরিশেষে বলা যায়, সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। বস্তুত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার আংশিক জ্ঞান থাকলেও আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার সকল বিষয় আমাদের অজানা থাকে।

৩. আয়শা বরিশালে থাকে। একদিন সকালে দরজা খুলে লন্ডনে বসবাস করা তার ছোট বোনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে খুবই অবাক হয়। একটু পরই জোরে বাতাস বইতে শুরু করে। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। আয়শা ভাবলো প্রচন্ড ঝড় শুরু হতে পারে।
ক. সম্ভাব্যতা পরিমাপের প্রথম সূত্রটি লেখো।
খ. সম্ভাবনার ভিত্তি আত্মগত না বস্তুগত? ব্যাখ্যা করো।
গ. আয়শার বোনের আগমন পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়কে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আয়শার বোনকে দেখা এবং বাতাস বইতে শুরু করা ঘটনা দুটির আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাব্যতা পরিমাপের প্রথম সূত্রটি হলো- অনুকূল বিকল্পের সংখ্যাকে লব ও মোট বিকল্পের সংখ্যাকে হর হিসেবে গ্রহণ করে যে ভগ্নাংশটি পাওয়া যায় তা সকল ঘটনার সম্ভাব্যতার মাত্রা নির্দেশ করে।

খ. সম্ভাবনার ধারণা যে বিষয়ের ওপর নির্ভর করে প্রকাশ করা হয় তা-ই সম্ভাবনার ভিত্তি।
সম্ভাবনার আত্মগত ভিত্তি হলো বিশ্বাস এবং বস্তুগত ভিত্তি হলো বাস্তব অভিজ্ঞতা। যুক্তিবিদ জেভন্স এর মতে, আমাদের বিশ্বাসের মাত্রার ওপর নির্ভর করে কোনো ঘটনার সম্ভাব্যতা। আবার যুক্তিবিদ কার্ডেথ রিড বলেন, সম্ভাব্যতার ভিত্তি আত্মগত নয় বরং বস্তুগত। কারণ কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা নির্ভর করে সে ঘটনা সম্পর্কে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর। এসব যুক্তিতে সার্বিক বিচার করে বলা যায়, সম্ভাবনার ভিত্তি আত্মগত ও বস্তুগত উভয়ই।

গ. আয়শার বোনের আগমন আকস্মিকতার বিষয়কে নির্দেশ করে।
যে ঘটনার কারণ অজ্ঞাত থাকে বা কারণ অজানা থাকে এবং যা আমাদের হঠাৎ বিস্মিত করে তোলে তা-ই হলো আকস্মিকতা। অর্থাৎ আমরা যখন কোনো ঘটনার কারণ জানতে পারি না বা কারণ উদ্ধার করতে পারি না, তখন উক্ত ঘটনাকে আকস্মিক বলে চালিয়ে দেই। যেমন-‘‘কোনো পূর্বাভাস ও সংকেত ছাড়াই ‘ক’ এলাকায় হঠাৎ করে একটি টর্নেডো বয়ে গেল’’- এটি একটি আকস্মিক ঘটনা।
উদ্দীপকের বর্ণিত ঘটনায় মোংলার বাসিন্দা আয়শা একদিন সকালে দরজা খুলে লন্ডনে বসবাসরত তার ছোট বোনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুবই অবাক হয়। এখানে দুই বোনের দেখা হওয়ার মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নাই। বরং তাদের দেখা হওয়ার ঘটনাকে আকস্মিক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

ঘ. আয়শার বোনকে দেখা এবং বাতাস বইতে শুরু করা ঘটনা দুটি যথাক্রমে আকস্মিকতা ও সম্ভাব্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট। নিচে ঘটনা দুটির আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ঘটনার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না, আবার ঘটনাটি অনিশ্চিত তাও বলা যায় না তাকে সম্ভাব্য ঘটনা বলে। সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আংশিক জ্ঞান থাকে। এ কারণে সম্ভাবনাকে ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা বলা হয়। যেমন- ঝড় শুরু হতে পারে’- বিষয়টি নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা নির্দেশ করে। তাই এ ঘটনাটি সম্ভাব্যতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অন্যদিকে, কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন অপ্রত্যাশিত বা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে আকস্মিকতা বলে। আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পূর্ণই আমাদের অজানা থাকে। তাই এরূপ ঘটনার যৌক্তিক কারণ নির্ণয় করা যায় না। যেমন- আয়শার ছোট বোনকে দেখার ঘটনাটি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তাই এ ঘটনাটি আকস্মিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে বাহ্যিক অমিল থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। কারণ উভয় ক্ষেত্রেই ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক আমাদের অজানা থাকে। পাশাপাশি উভয় মতবাদ বহু কারণবাদজনিত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এ কারণে বাস্তব জীবনে সম্ভাবনা ও আকস্মিকতা উভয় বিষয়েরই প্রভাব লক্ষ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, সম্ভাবনা ও আকস্মিকতা দুটি ভিন্ন বিষয়। সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কোনো ঘটনা সম্পর্কে আংশিক জ্ঞান থাকলেও আকস্মিকতার ক্ষেত্রে তা একেবারেই থাকে না। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা পরিমাপযোগ্য হলেও আকস্মিকতা পরিমাপের কোনো নিয়ম নেই। এসব কারণে উদ্দীপকের ঘটনা দুটির মধ্যে সাদৃশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্যই বেশি লক্ষ করা যায়।

৪. দৃশ্যকল্প-১: একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে ৩০০ জনের মধ্যে ২৭০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
দৃশ্যকল্প-২: কৃষক জমি চাষ করতে গিয়ে মাটির নিচে হঠাৎ একটি স্বর্ণমূর্তি পেল।
ক. সম্ভাব্যতা কী?
খ. আকস্মিকতাকে কীভাবে অপনয়ন করা যায়?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ সম্ভাব্যতার যে নিয়মটির প্রতিফলন ঘটেছে, তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাবনা হচ্ছে কোনো ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা।

খ. ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে আকস্মিকতাকে অপনয়ন করা যায়।
আমরা জানি, অপনয়ন শব্দের অর্থ বাদ দেওয়া। তাই কোনো ঘটনার আকস্মিকতাকে বাদ দিতে হলে সেই ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করতে হবে। যেমন- টর্নেডো কিংবা সাইক্লোনের ঘটনা আমাদের কাছে আকস্মিক বিষয়। কিন্তু ফণী নামক সাইক্লোনের কার্যকারণ সম্পর্ক পূর্ব থেকেই জানার কারণে আমাদের কাছে তা আকস্মিক মনে হয়নি। এভাবেই কোনো আকস্মিক ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে অপনয়ন করা যায়।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ সম্ভাবনা পরিমাপের প্রথম নিয়মটির প্রতিফলন ঘটেছে।
সম্ভাবনার প্রথম নিয়মানুসারে, 'অনুকূল বিকল্পের সংখ্যাকে লব এবং মোট বিকল্পের সংখ্যাকে হর হিসেবে গ্রহণ করে যে ভগ্নাংশ পাওয়া যায় তা সকল ঘটনার সম্ভাব্যতার মাত্রা নির্দেশ করে। এখানে অনুকূল বিকল্প বলতে কোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়াকে বোঝায়। অন্যদিকে, প্রতিকূল বিকল্প বলতে কোনো ঘটনা সংঘটিত না হওয়াকে বোঝায়। আর মোট বিকল্প বলতে অনুকূল ও প্রতিকূল বিকল্পের যোগফলকে বোঝায়।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত, যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে ৩০০ জনের মধ্যে ২৭০ জন পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়। এখানে অনুকূল বিকল্পের সংখ্যা ২৭০ এবং মোট বিকল্পের সংখ্যা ৩০০।
সুতরাং সম্ভাবনার মাত্রা = ২৭০/৩০০ = ৯/১০০।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ সম্ভাবনা এবং দৃশ্যকল্প-২ এ আকস্মিকতার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় ধারণার মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ঘটনার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না আবার ঘটনাটি অনিশ্চিত সেটাও বলা যায় না তাকে সম্ভাব্য ঘটনা বলে। অর্থাৎ সম্ভাবনা হলো ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা। অন্যদিকে, কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন অপ্রত্যাশিত বা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে আকস্মিকতা বলে। সম্ভাবনা একটি মাত্রাগত ব্যাপার। অর্থাৎ সম্ভাবনা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি হয়, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম হয়। তবে কোনোভাবেই সেটি নিশ্চয়তায় পৌঁছায় না। যেমন- ঘূর্ণিঝড় হতে পারেত আবহাওয়াবিদগণের এই বক্তব্য সম্ভাবনার অধিক মাত্রাকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে, আকস্মিকতা কোনো মাত্রাগত ব্যাপার নয়। অর্থাৎ কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে আকস্মিকতার মাত্রা নির্ণয় করা যায় না। সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আংশিক জ্ঞান থাকে। অর্থাৎ কার্যকারণ নিয়মের অপূর্ণ জ্ঞানই সম্ভাবনার ভিত্তিমূল হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পূর্ণই আমাদের অজানা থাকে। এ কারণে আমরা ঘটনার যৌক্তিক কারণ নির্ণয় করতে পারি না। পাশাপাশি সম্ভাবনামূলক ঘটনা চারটি নিয়মের সাহায্যে পরিমাপ করা যায়। অর্থাৎ বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা পরিমাপযোগ্য। কিন্তু আকস্মিকতা পরিমাপের কোনো নিয়ম নেই। তাই আকস্মিক ঘটনা পরিমাপ করা যায় না।
তাই বলা যায়, সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। বস্তুত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার আংশিক জ্ঞান থাকলেও আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার সকল বিষয় আমাদের অজানা থাকে।

৫. দৃশ্যকল্প-১: সেলিম ও সৌমিত্র আজ বিকেলে বিপিএল-এর খেলা দেখতে যাবে। দুপুরে সেলিম ফোন করে সৌমিত্রকে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর ৬নং বিপদ সংকেত জারি করেছে। সম্ভবত ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। অপরপ্রান্ত থেকে সৌমিত্র বললোত 'হয়তো খেলা স্থগিত হতে পারে'।
দৃশ্যকল্প-২: একদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কক্সবাজারের জনগণ হতবাক! তারা প্রত্যক্ষ করল রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, মাঠ-উঠানসহ বরফে আচ্ছন্ন।
ক. সম্ভাবনার ভিত্তি কত প্রকার ও কী কী?
খ. আকস্মিকতা বলতে কী বোঝ?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়কে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ ও দৃশ্যকল্প-২ এর মধ্যে পার্থক্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাবনার ভিত্তি দুই প্রকার। যথা- আত্মগত ও বস্তুগত।

খ. আকস্মিকতা বলতে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া বা অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনাকে বোঝায়।
পূর্বসূত্র ব্যতিরেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়াকে আকস্মিকতা বলে। আকস্মিক ঘটনার প্রকৃত কারণ আমাদের অজ্ঞাত থাকে। যেমন- কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ করেই ‘ক’ এলাকায় টর্নেডো বয়ে গেলত এ বক্তব্যে টর্নেডো হওয়ার পরিস্থিতি পূর্ব থেকেই অজ্ঞাত। এ কারণে এটি আমাদের কাছে আকস্মিক ঘটনা। তাই বলা যায়, কারণ সম্পর্কে অজ্ঞতাই আকস্মিকতা।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ পাঠ্যবইয়ের সম্ভাবনার বিষয়কে নির্দেশ করে।
সম্ভাবনা হলো একটি দ্ব্যর্থবোধক শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ হলো- কোনো ঘটনা ঘটতে পারে; আবার নাও ঘটতে পারে। অর্থাৎ কোনো ঘটনার মধ্যবর্তী অবস্থা হলো সম্ভাবনা। যেমন- একটি মুদ্রা নিক্ষেপে হেড বা টেল ওঠার ঘটনা সম্ভাবনার সাথে সম্পর্কিত।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ‘সম্ভবত ঘূর্ণিঝড় হতে পারে' কিংবা 'হয়তো খেলা স্থগিত হতে পারে' - এ ধরনের বাক্য কোনো ঘটনার মধ্যবর্তী অবস্থা নির্দেশ করে। এ কারণে দৃশ্যকল্প-১ এর নির্দেশিত বিষয়টি হলো সম্ভাবনা।

ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এ সম্ভাবনা এবং দৃশ্যকল্প-২ এ আকস্মিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। নিম্নে পাঠ্যবইয়ের আলোকে দৃশ্যপট-১ ও দৃশ্যপট-২ এর মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো-
দৃশ্যকল্প-১ হলো একটি সম্ভাব্য ঘটনা, যা ঘটা বা না ঘটা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। অর্থাৎ সম্ভাবনা হলো কোনো ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা। কিন্তু দৃশ্যকল্প-২ হলো একটি আকস্মিক ঘটনা, যা সম্পর্কে আমরা পূর্ব থেকেই অবগত থাকি না। হঠাৎ করে বা অপ্রত্যাশিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে বলেই আমরা এটিকে আকস্মিকতা বলি। পাশাপাশি গাণিতিক তত্ত্ব ও পৌনঃপুনিকতা তত্ত্ব দিয়ে দৃশ্যকল্প-১ এর ধারণা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা গেলেও দৃশ্যকল্প-২ এর ক্ষেত্রে গণিতশাস্ত্রের কোনো বিষয় প্রয়োগ করা যায় না।
দৃশ্যকল্প-১ এ অর্থাৎ সম্ভাবনার ক্ষেত্রে জ্ঞানের অপূর্ণতা কাজ করে। যার ফলে সম্ভাবনাময় কোনো ঘটনার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। এ কারণে দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত ‘ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বা খেলা স্থগিত হতে পারে - এ বিষয়গুলো সম্ভাবনার দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, কার্যকারণ নিয়ম সম্পর্কে অজ্ঞতা হলো দৃশ্যকল্প-২ এ বর্ণিত আকস্মিকতার ভিত্তি। এ কারণে ‘কক্সবাজার বরফে আচ্ছন্ন' বিষয়টি একটি আকস্মিক ঘটনা। আমরা জানি, দৃশ্যকল্প-১ এর ঘটনা নির্ণয় করার জন্য চারটি নিয়ম রয়েছে। অর্থাৎ বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা পরিমাপযোগ্য। কিন্তু দৃশ্যকল্প-২ এর ঘটনা মূল্যায়ন করার কোনো মানদ- বা মূলসূত্র নেই। অর্থাৎ আকস্মিকতা হলো কোনো বিষয়ের অজ্ঞতার তত্ত্ব।
পরিশেষে বলা যায় যে, সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। বস্তুত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার আংশিক জ্ঞান থাকলেও আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার সকল বিষয় আমাদের অজানা থাকে।

৬. দৃশ্যকল্প-১: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে প্রতি চারবার মেঘ করলে একবার বৃষ্টি হয় এবং প্রতি দশবার মেঘ করলে একবার ঘূর্ণিঝড় হয়।
দৃশ্যকল্প-২: নিপা ও স্বর্না বিজ্ঞানের ছাত্রী। নিপা প্রতি সাত দিনে পাঁচ দিন অংক করে। অপরদিকে, স্বর্না প্রতি পাঁচ দিনে তিন দিন অংক করে।
ক. সম্ভাবনার ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. কার্যকারণ সম্পর্কে অজ্ঞানতাই আকস্মিকতার উৎপত্তি - বুঝিয়ে লেখো।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ কতবার মেঘ করলে বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড় একত্রে হওয়ার সম্ভাবনা আছে? সম্ভাব্যতা পরিমাপের নিয়মানুসারে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ নিপা ও স্বর্নার যৌথভাবে অংক করার সম্ভাবনার মাত্রা পাঠ্যবিষয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাবনার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Probability.

খ. আকস্মিকতা হলো কার্যকারণ সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল।
কার্যকারণ নিয়ম অনুসারে, জগতের প্রতিটি ঘটনার কারণ আছে। কিন্তু অনেক ঘটনার কারণ অজানা থাকলে তা আমাদের কাছে আকস্মিক বিষয়। যেমন- মেঘের সাথে বৃষ্টি কার্যকারণ সূত্রে সম্পর্কযুক্ত। তাই মেঘ হলে বৃষ্টি হবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে জ্ঞাত। কিন্তু হঠাৎ টর্নেডো কিংবা সাইক্লোনের মতো ঘটনার কারণ অজানা থাকার কারণে আমাদের কাছে তা আকস্মিক বিষয়। এ কারণে বলা হয়ত কার্যকারণ সম্পর্কে অজ্ঞতাই আকস্মিকতার উৎপত্তি।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর ঘটনা দুটি স্বতন্ত্র ঘটনা। সম্ভাবনা পরিমাপের নিয়ম অনুযায়ী দুটি স্বতন্ত্র ঘটনা এক সাথে ঘটার সম্ভাবনার মাত্রা ঘটনা দুটির পৃথকভাবে ঘটার সম্ভাবনা মাত্রার গুণফলের সমান হবে।
দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত দুটি পৃথক ঘটনা সম্ভাবনার মাত্রা হলো-
৪ বার মেঘ করলে ১ বার বৃষ্টি হয়।
∴ বৃষ্টির সম্ভাবনার মাত্রা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প = ১/৪
আবার, ১০ বার মেঘে ১ বার ঘূর্ণিঝড় হয়।
∴ ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনার মাত্রা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প = ১/১০
সম্ভাবনার সূত্র অনুযায়ী,
বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড় একত্রে হওয়ার সম্ভাবনা = বৃষ্টির পৃথক সম্ভাবনা × ঘূর্ণিঝড়ের পৃথক সম্ভাবনা = ১/৮×১/১০ = ১/৪০
অর্থাৎ দৃষ্টান্তের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ৪০ বার মেঘ করলে ১ বার বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড় একত্রে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এর ঘটনা দুটি স্বতন্ত্র। এরূপ ঘটনার সম্ভাবনার মাত্রা নির্ণয় করতে হলে প্রথমে ঘটনা দুটির পৃথক সম্ভাবনার মাত্রা নির্ণয় করতে হবে।
অর্থাৎ অনুকূল বিকল্পকে লব ও মোট বিকল্পকে হর হিসেবে গ্রহণ করে সম্ভাবনার মাত্রা নির্ণয় করতে হবে। তারপর তাদের পৃথক সম্ভাবনার মাত্রাকে গুণ করার মাধ্যমে যৌথ সম্ভাবনার মাত্রা নির্ণয় করা যাবে।
সম্ভাবনার মাত্রা নির্ণয়ের দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী, পৃথকভাবে নিপা ও স্বর্নার অংক করার সম্ভাবনা নির্ণয় করতে হবে। এরপর উভয় সম্ভাবনাকে গুণ করলে ঘটনা দুটির যৌথ সম্ভাবনা পাওয়া যাবে।
নিপার অংক করার সম্ভাবনা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প = ৫/৭

স্বর্ণার অংক করার সম্ভাবনা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প = ৩/৫
নিপা ও স্বর্নার অংক করার যৌথ সম্ভাবনা = নিপার অংক করার সম্ভাবনা × স্বর্ণার অংক করার সম্ভাবনা = ৫/৭× ৩/৫= ৩/৭
অর্থাৎ প্রতি ৭ দিনে নিপা ও স্বর্না ৩ দিন যৌথভাবে অংক করতে পারে।

৭. দৃশ্যপট-১: শেফা নাচের প্রতিযোগিতায় ছয়বার অংশগ্রহণ করলে চারবার জয়ী হয়। তনিমা নাচের প্রতিযোগিতায় পাঁচবার অংশগ্রহণ করলে তিনবার জয়ী হয়।
দৃশ্যপট-২: রিনা বলল, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যত বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তত বাড়ে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যত কমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তত কমে। সুতরাং পুষ্টিকর খাদ্য হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণ।
ক. সম্ভাবনা শব্দটি কীরূপ?
খ. প্রান্তস্থিত বস্তুকে শ্রেণিকরণ করা যায় না কেন?
গ. সম্ভাবনা পরিমাপের নিয়ম অনুসরণ করে দৃশ্যপট-১ এর সম্ভাবনা নির্ণয় করো।
ঘ. দৃশ্যপট-২ এ নির্দেশিত পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাবনা শব্দটি দ্ব্যর্থবোধক।

খ. মিশ্র বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে প্রান্তস্থিত বস্তুকে শ্রেণিকরণ করা যায় না।
প্রান্তস্থিত বস্তু বলতে বোঝায় যাদের মধ্যে মিশ্র বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অর্থাৎ যেসব বস্তুর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে তাদের প্রান্তস্থিত বস্তু বলে। যেমন- জেলি হলো এমন এক পদার্থ যার মধ্যে কিছু কঠিন পদার্থ এবং কিছু তরল পদার্থের গুণ বিদ্যমান থাকে। এ কারণে জেলিকে বিশেষ কোন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় না।

গ. সম্ভাবনা পরিমাপের দ্বিতীয় নিয়ম অনুসরণ করে দৃশ্যপট-১ এর সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায়।
দৃশ্যপট-১ এ বলা হয়েছেত শেফা নাচের প্রতিযোগিতায় ছয়বার অংশগ্রহণ করলে চারবার জয়ী হয়। তনিমা নাচের প্রতিযোগিতায় পাঁচবার অংশগ্রহণ করলে তিনবার জয়ী হয়। সম্ভাবনা পরিমাপের দ্বিতীয় নিয়ম অনুযায়ী দুটি পৃথক ঘটনা সম্ভাবনার মাত্রা হলো-
শেফা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা = ৪/৬
আবার, তনিমা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা = ৩/৫
সম্ভাবনার সূত্র অনুযায়ী,
শেফা ও তনিমা উভয়ের একত্রে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা = শেফা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা × তনিমা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা = ৪/৬× ৩/৫= ২/৫
অর্থাৎ, প্রতি ৫ বারে ২ বার শেফা ও তনিমা উভয়ের একত্রে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘ. দৃশ্যপট-২ এ নির্দেশিত পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি হলো সহপরিবর্তন পদ্ধতি।
‘সহপরিবর্তন' শব্দটির অর্থ পারস্পরিক সমান পরিবর্তন। অর্থাৎ সহপরির্তন পদ্ধতি অনুযায়ী একটি ঘটনার পরিবর্তনের সাথে সাথে যদি অন্য ঘটনাও সমানভাবে পরিবর্তিত হয় তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলে। যেমন- বায়ুর চাপ বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে ব্যারোমিটারের পারদ স্তম্ভের মাত্রাও বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, বায়ুর চাপই পারদের ওঠা-নামার কারণ।
এখানে ‘বায়ুর চাপ' হলো কারণ এবং ‘পারদের ওঠা-নামা’ হলো কার্য। বস্তুত সহপরিবর্তন পদ্ধতি কার্য ও কারণের পরিমাণগত বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভরশীল। কার্য ও কারণের পরিবর্তন কখনও সমমুখী হয়, কখনও বা বিপরীতমুখী হয়ে থাকে। যেমন- চাঁদের আকৃতির সাথে জোয়ার-ভাটার পরিবর্তন "সমমুখী। আবার দ্রব্যের চাহিদার সাথে যোগানের পরিবর্তন বিপরীতমুখী।
দৃশ্যপট-২ এ বলা হয়েছে, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যত বাড়ে রোগ প্রতিরোধ, ক্ষমতা তত বাড়ে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যত কমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তত কমে। সুতরাং পুষ্টিকর খাদ্য হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণ। অর্থাৎ এখানে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সমমুখী সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে। এ কারণে এটি সহপরিবর্তন পদ্ধতির দৃষ্টান্ত। সহপরিবর্তন পদ্ধতি একটি সহজ-সরল পদ্ধতি। এই পদ্ধতির সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্কের পরিমাণগত দিকটি নির্ণয় করা যায়। স্থায়ী কারণসমূহের ওপর এই পদ্ধতির প্রয়োগ খুব ফলপ্রসূ।
সুতরাং বলা যায়, সহপরিবর্তন পদ্ধতি কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে যথেষ্ঠ সহায়ক।

৮. ঘটনা-১: রাহাত ও বৃষ্টি লুডু খেলছিল। জয়ের জন্য পরবর্তী চালে রাহাতের প্রয়োজন ৪। সে ৪ পেল।
ঘটনা-২: মিমি একদিন বাসে করে বাসায় ফিরছিল। হঠাৎ সে লক্ষ করল তার পাশের সিটে স্কুল জীবনের এক বন্ধু বসে আছে।
ক. আকস্মিকতা কী?
খ. সম্ভাবনার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো।
গ. পরবর্তী চালে রাহাতের ৪ ওঠার সম্ভাবনা গাণিতিকভাবে নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা দুটির সম্পর্ক পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন অপ্রত্যাশিত বা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনাই হলো আকস্মিকতা।

খ. সম্ভাবনা হলো অনিশ্চয়তা ও নিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা।
যখন একটি ঘটনা ঘটতে পারে আবার না-ও ঘটতে পারে এরূপ অবস্থাকেই সম্ভাবনা বলে। সম্ভাবনা মূলত একটি মাত্রাগত ব্যাপার। এটি অসম্ভবের চেয়ে উন্নত এবং নিশ্চয়তার চেয়ে নিম্নতর অবস্থা নির্দেশ করে। যেমন: আগামীকাল বৃষ্টি হতে পারে। এ দৃষ্টান্তে বৃষ্টি হওয়া বা না হওয়ার মধ্যবর্তী অবস্থা নির্দেশ করে। এ কারণে এটি সম্ভাব্য ঘটনা। গাণিতিকভাবে সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয় ভগ্নাংশ বা শতক হারের মাধ্যমে।

গ. পরবর্তী চালে রাহাতের ৪ ওঠার সম্ভাবনা গাণিতিকভাবে
হলো-
লুডুর গুঁটিতে ৪ আছে = ১টি (অনুকূল বিকল্প)
লুডু খেলায় মোট বিকল্প = ৬টি
আমরা জানি, সম্ভাবনার সূত্রানুযায়ী কোনো ঘটনার অনুকূল ঘটনার সম্ভাবনা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প
∴ উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় রাহাতের ৪ ওঠার সম্ভাবনা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প = ১/৬
অর্থাৎ পরবর্তী চালে রাহাতের ৪ ওঠার সম্ভাবনা ১/৬।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা-১ এ রাহাত ও বৃষ্টির লুডু খেলার ছকে ৪ ওঠার বিষয়টি এবং ঘটনা-২ এ মিমির সাথে তার বন্ধুর হঠাৎ দেখা হওয়ার বিষয়টি যথাক্রমে সম্ভাব্যতা ও আকস্মিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট। নিচে ঘটনা দুটির সম্পর্ক পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ঘটনার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না, আবার ঘটনাটি অনিশ্চিত তাও বলা যায় না তাকে সম্ভাব্য ঘটনা বলে। সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আংশিক জ্ঞান থাকে। এ কারণে সম্ভাবনাকে ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা বলা হয়। যেমন- ঘটনা-১ এ বর্ণিত লুডু খেলায় ছকে ৪ ওঠার বিষয়টি নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা নির্দেশ করে। তাই এ ঘটনাটি সম্ভাব্যতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অন্যদিকে, কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন অপ্রত্যাশিত বা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে আকস্মিকতা বলে। আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পূর্ণই আমাদের অজানা থাকে। তাই এরূপ ঘটনার যৌক্তিক কারণ নির্ণয় করা যায় না। যেমন- উদ্দীপকের ঘটনা-২ এ মিমির সাথে হঠাৎ তার স্কুলজীবনের বন্ধুর বাসে দেখা হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তাই এ ঘটনাটি আকস্মিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে উল্লেখিত অমিল থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। কারণ উভয় ক্ষেত্রেই ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক আমাদের অজানা থাকে। পাশাপাশি উভয় মতবাদ বহুকারণবাদজনিত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এ কারণে বাস্তব জীবনে সম্ভাবনা ও আকস্মিকতা উভয় বিষয়েরই প্রভাব লক্ষ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, সম্ভাবনা ও আকস্মিকতা দুটি ভিন্ন বিষয়। সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কোনো ঘটনা সম্পর্কে আংশিক জ্ঞান থাকলেও আকস্মিকতার ক্ষেত্রে তা একেবারেই থাকে না। পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা পরিমাপযোগ্য হলেও আকস্মিকতা পরিমাপের কোনো নিয়ম নেই। এসব কারণে উদ্দীপকের ঘটনা দুটির মধ্যে সাদৃশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্যই বেশি। লক্ষ করা যায়।

৯. উদ্দীপক-১: বাংলাদেশে প্রতি ৩ জনের মধ্যে ২ জন মোবাইল ফোন ও ৫ জনের মধ্যে ১ জন ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
উদ্দীপক-২: রাস্তায় চলতে চলতে গাড়িটির চাকা হঠাৎ ফেটে গেল।
ক. সম্ভাব্যতা কাকে বলে?
খ. সম্ভাব্যতা আত্মগত নয়, বস্তুগতত ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপক-১ এ মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট একত্রে ব্যবহারকারীর সম্ভাব্যতা সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপক-২ এর ঘটনা কী আকস্মিকতা না সম্ভাব্যতাকে নির্দেশ করে? তোমার মতামত ব্যাখ্যা করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সম্ভাবনা হচ্ছে কোনো ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা।

খ. সম্ভাব্যতা আত্মগত নয়, বস্তুগতু উক্তিটি যথার্থ।
সম্ভাব্যতার আত্মগত ভিত্তি বলতে বিশ্বাস এবং বস্তুগত ভিত্তি বলতে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে বোঝায়। যুক্তিবিদ কার্ডের্থ রিড বলেন, সম্ভাব্যতার ভিত্তি আত্মগত নয় বরং বস্তুগত। কারণ আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে যেকোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা নির্ণয় করা যায়। পাশাপাশি এই অভিজ্ঞতা পরিমাপযোগ্য কিন্তু বিশ্বাস পরিমাপযোগ্য নয়। এ কারণে বলা যায়, সম্ভাব্যতা আত্মগত নয় বরং বস্তুগত।

গ. উদ্দীপক-১ এ সম্ভাব্যতার দ্বিতীয় নিয়ম অনুসারে মোবাইল ফোন ইন্টারনেট একত্রে ব্যবহারের মাত্রা নির্ণয় করা যায়।
আমরা জানি, দুটি স্বতন্ত্র্য ঘটনা একসাথে ঘটা সম্ভব না হলে তাদের মধ্যে যেকোনো একটি বা অন্যটি ঘটার সম্ভাবনা হবে ঘটনা দুটি ঘটার পৃথক গুণফলের সম্ভাবনার সমান। এই নীতি অনুসারে উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যার সমাধান করা যায়।
উদ্দীপক-১ এ বর্ণিত ৩ জনের মধ্যে ২ জন মোবাইলফোন এবং ৫ জনের মধ্যে ১ জন ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
সুতরাং মোবাইলফোন ব্যবহারের সম্ভাবনা হলো ২/৩ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সম্ভাবনা ১/৫।
অতএব, মোবাইল সেট ও টেলিভিশন একত্রে ব্যবহারের সম্ভাবনা = ২৩ × ১৫ = ২১৫ ।
সুতরাং বলা যায়, প্রতি ১৫ জনে ২ জন মোবাইল ফোন ইন্টারনেট একত্রে ব্যবহার করতে পারে।

ঘ. উদ্দীপক-২ এর ঘটনা আকস্মিকতাকে নির্দেশ করে।
'আকস্মিক' শব্দের ইংরেজি 'Chance' কথাটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ 'Cheance' (চিয়াশেঁ) থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ- 'আকস্মিক বিষয়, সৌভাগ্য, ভাগ্য, পরিস্থিতি, ঘুটি বা পাশার দান' ইত্যাদি। বস্তুত যে ঘটনার কারণ অজ্ঞাত থাকে বা কারণ অজানা থাকে এবং যা আমাদের হঠাৎ বিস্মিত করে তোলে তাই হলো আকস্মিকতা। অর্থাৎ আমরা যখন কোনো ঘটনার কারণ জানতে পারি না বা কারণ উদ্ধার করতে পারি না, তখন উক্ত ঘটনাকে আকস্মিক বলে চালিয়ে দেই। যেমন-‘‘কোনো পূর্বাভাস ও সংকেত ছাড়াই ‘ক’ এলাকায় হঠাৎ করে একটি টর্নেডো বয়ে গেল’’ - এটি একটি আকস্মিক ঘটনা।
উদ্দীপক-২ এ বলা হয়েছে, রাস্তায় চলতে চলতে গাড়ির চাকা হঠাৎ ফেটে যায়। অর্থাৎ গাড়ির চাকা ফেটে যাওয়ার কারণ পূর্ব থেকেই অজ্ঞাত। এ কারণে এরূপ হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা হলো একটি আকস্মিক বিষয়।
পরিশেষে বলা যায়, আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পূর্ণই আমাদের অজানা থাকে। এ কারণে আমরা এরূপ ঘটনার যৌক্তিক কারণ নির্ণয় করতে পারি না। যার দৃষ্টান্ত উদ্দীপক-২ এ লক্ষণীয়। এ কারণে ঘটনাটি আকস্মিকতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

১০. দৃশ্যপট-১ : পাপন ভাইবায় ৫টি প্রশ্নের মধ্যে ৪ টি সঠিক উত্তর দিতে পারে আর জনি ৪টার মধ্যে ৩ টার সঠিক উত্তর দিতে পারে।
দৃশ্যপট-২ : মাইশার বাবা শীতকালীন ছুটিতে দুবাই থেকে আসবেন কিন্তু কবে আসবেন মাইশা তা এখনও নিশ্চিত জানে না। সে একদিন পিকনিকে গেল। ফিরে এসে দেখে তার টেবিলে খুব সুন্দর ওয়াটার কালার বক্স ও কিটকাট চকোলেটের একটি প্যাকেট। সে দেখে তো হতবাক! আমার প্রিয় জিনিস! কে দিল? নিশ্চয়ই বাবা এসেছেন।
ক. 'স্যাৎ' শব্দটি আংশিক সত্য বোঝাতে কারা ব্যবহার করেন?
খ. আরোহ কী আমাদের নিশ্চিত জ্ঞান দিকে পারে? ব্যাখ্যা করো।
গ. দুই জনের যৌথভাবে সঠিক উত্তর দেয়ার সম্ভবনা কত? নির্ণয় করো।
ঘ. দৃশ্যপট-২ এ প্রথম ও দ্বিতীয় স্তবকের বিষয়ের পারস্পারিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'স্যাৎ' শব্দট আংশিক সত্য বোঝাতে জৈন দার্শনিকরা ব্যবহার করেন।

খ. আরোহের সাহায্যে নিশ্চিত জ্ঞান পাওয়া যায়।
আরোহানুমানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকরণ হলো বৈজ্ঞানিক আরোহ এবং পূর্ণাঙ্গ আরোহ। যে দুটি আরোহের দৃষ্টান্ত পরখ করে পরীক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। এ দুটি প্রকরণের আলোকে বলা যায়, আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হয়।

গ. দৃশ্যপট-১ এ সম্ভাবনা পরিমাপের দ্বিতীয় নিয়মের প্রতিফলন ঘটেছে।
সম্ভাবনার দ্বিতীয় নিয়ম অনুসারে দুটি স্বতন্ত্র ঘটনা একত্রে ঘটার সম্ভাবনার মাত্রা ঘটনা দুটির পৃথক সম্ভাবনার মাত্রার গুণফলের সমান হবে'। এ নিয়মটি দৃশ্যপট-১ এ প্রয়োগ করে যৌথভাবে সঠিক উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনা নির্ণয় করা হলো-
দৃশ্যপট-১ এ বর্ণিত পাপন ভাইবায় ৫টির মধ্যে ৪টি সঠিক উত্তর দিতে পারে। অর্থাৎ অনুকূল বিকল্প = ৪ এবং মোট বিকল্প = ৫।
তাহলে পাপনের সঠিক উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প = ৪/৫
একইভাবে জনির সঠিক উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনার মাত্রা = অনুকূল বিকল্প/মোট বিকল্প = ৩/৪
অতএব, দু'জনের যৌথভাবে সঠিক উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনা = ৪/৫ × ৩/৪= ৩/৫

ঘ. দৃশ্যকল্প ২ এ প্রথম ও দ্বিতীয় স্তবকে যথাক্রমে সম্ভাব্যতা ও আকস্মিকতার দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। নিচে উভয় বিষয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হলো-
যে ঘটনার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না, আবার ঘটনাটি অনিশ্চিত তাও বলা যায় না তাকে সম্ভাব্য ঘটনা বলে। সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ঘটনার কার্যকারণ নিয়ম সম্পর্কে আমাদের আংশিক জ্ঞান থাকে। এ কারণে সম্ভাবনাকে ঘটনার নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার মধ্যবর্তী অবস্থা বলা হয়। অন্যদিকে, কার্যকারণ সম্পর্কবিহীন অপ্রত্যাশিত বা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে আকস্মিকতা বলে। আকস্মিকতার ক্ষেত্রে ঘটনার প্রকৃত কারণ সম্পূর্ণই আমাদের অজানা থাকে। তাই এরূপ ঘটনার যৌক্তিক কারণ নির্ণয় করা যায় না।
সম্ভাবনা ও আকস্মিকতার মধ্যে উল্লেখিত অমিল থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। কারণ উভয় ক্ষেত্রেই ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক আমাদের অজানা থাকে। পাশাপাশি উভয় মতবাদ বহুকারণবাদজনিত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এ কারণে বাস্তব জীবনে সম্ভাবনা ও আকস্মিকতা উভয় বিষয়েরই প্রভাব লক্ষ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, সম্ভাবনা ও আকস্মিকতা দুটি ভিন্ন বিষয়। সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কোনো ঘটনা সম্পর্কে আংশিক জ্ঞান থাকলেও আকস্মিকতার ক্ষেত্রে তা একেবারেই থাকে না। পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাবনা পরিমাপযোগ্য হলেও আকস্মিকতা পরিমাপের কোনো নিয়ম নেই। এসব কারণে দৃশ্যকল্প ২ এ প্রথম ও দ্বিতীয় স্তবকে উল্লেখিত ঘটনা দুটির মধ্যে সাদৃশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্যই বেশি লক্ষ করা যায়।
Share: