HSC ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায়-০১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Business Organization and Management 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

অধ্যায়-০১
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা
১ম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

HSC Business Organization and Management 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, এ অধ্যায়ে বোর্ড পরীক্ষা, শীর্ষস্থানীয় কলেজসমূহের নির্বাচনি পরীক্ষা এবং বাছাইকৃত এক্সক্লুসিভ মডেল টেস্টের প্রশ্নগুলোর পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেওয়া হয়েছে। এগুলো অনুশীলন করলে তোমরা এ অধ্যায় থেকে যেকোনো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ সহজেই লিখতে পারবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
জনাব জাকির হোসেন বিবিএ অনার্স পাস করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। অবশেষে বাড়িতে ফিরে নিজেদের তিন বিঘা আয়তনের পুকুরটি সংস্কার করেন। এরপর তাতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে স্তরভিত্তিক মাছ চাষ শুরু করেন। পুকুরে পানির উপরের স্তর, মধ্যম স্তর এবং নিম্ন স্তরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন। বর্তমানে জনাব জাকির হোসেন একজন জনপ্রিয় এবং সফল মাছচাষি। তার এ কার্যক্রম এখন অনেকেই অনুসরণ করছেন। [ঢা. বো., চ. বো. ১৭]
ক. ব্যবসায় কী? ১
খ. বাণিজ্য বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব জাকিরের গৃহীত কার্যক্রম কোন ধরনের শিল্প? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. জনাব জাকিরের গৃহীত এমন উদ্যোগ কি দেশে বেকারত্ব হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে? মতামত দাও। ৪

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বৈধভাবে পরিচালিত যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজকে (যেমন : উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয় প্রভৃতি) ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উৎপাদিত পণ্য বা সেবার বণ্টন সংক্রান্ত যাবতীয় (ক্রয়, বিক্রয়, পরিবহন, গুদামজাতকরণ) কাজই হলো বাণিজ্য।

এটি ব্যবসায়ের পণ্য বণ্টনকারী শাখা হিসেবে বিবেচিত হয়। উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বা সেবা ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত স্থানগত, ব্যক্তিগত, সময়গত ও ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়াই মূলত বাণিজ্যের কাজ।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের জনাব জাকিরের গৃহীত কার্যক্রম প্রজনন শিল্পের অন্তর্গত।

প্রজনন শিল্পের উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এ শিল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং লালন-পালন করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যে পরিণত করা হয়। যেমন: নার্সারি, পোল্ট্রি ফার্ম, মৎস্য উৎপাদন প্রভৃতি এ শিল্পের উদাহরণ।

উদ্দীপকের জনাব জাকির হোসেন নিজেদের তিন বিঘা আয়তনের পুকুর সংস্কার করেন। তারপর এতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে স্তরভিত্তিক মাছ চাষ শুরু করেন। পুকুরে পানির উপরের স্তর, মধ্যম স্তর এবং নিম্ন স্তরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন। চাষকৃত মাছ পরিচর্যা করে তিনি মানুষের ভোগের উপযোগী করে তোলেন। এছাড়া পুকুরে মাছ চাষ করে তিনি সেগুলোর বংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেন। এসব কাজ প্রজনন শিল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, জনাব জাকিরের কার্যক্রম প্রজনন শিল্পের অন্তর্গত।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের জনাব জাকিরের গৃহীত উদ্যোগ দেশে বেকারত্ব হ্রাসে অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।

যেকোনো দেশেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায় বা শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। শিল্পের প্রসার ঘটলেই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়।

উদ্দীপকের জনাব জাকির বিবিএ অনার্স পাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে জনাব জাকির একজন জনপ্রিয় ও সফল মাছচাষি। তার এ কার্যক্রম এখন অনেকেই অনুসরণ করছেন।

নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা ব্যবসায় তথা শিল্প-বাণিজ্যের অগ্রগতির ফলে নিজ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয়। দেশের বেকার সমস্যা হ্রাসে এর কোনো বিকল্প নেই।
দেশের বেকার যুবসমাজ যদি চাকরির আশায় বসে না থেকে উদ্দীপকের জনাব জাকিরের মতো নিজ উদ্যোগে এরূপ প্রকল্প গড়ে তোলে তাহলে সেখানে অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে তারা নিজেদের ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবে। সুতরাং, বেকারত্ব হ্রাসে জনাব জাকিরের উদ্যোগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
জনাব সামা একজন ব্যবসায়ী। তিনি ভারত থেকে চাল আমদানি করে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিপণিতে বিক্রয় করেন। গত বছর তিনি যে চাল আমদানি করেছেন, তা দুই মাস পর ইংল্যান্ডে বিক্রয় করলে অনেক বেশি লাভ পেতেন। কিন্তু আমদানিকৃত চালের জন্য জায়গার ব্যবস্থা না থাকায় লাভের জন্য অপেক্ষা না করে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই তিনি বিক্রয় করতে বাধ্য হলেন। [রা. বো. ১৭]
ক. ব্যবসায় কী? ১
খ. শিল্প বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব সামা কোন ধরনের বাণিজ্য করেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. জনাব সামা কেন তার পণ্য নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে বিক্রয় করতে বাধ্য হলেন? মতামত দাও। ৪

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বৈধভাবে পরিচালিত যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজকে (যেমন : উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয়) ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যে রূপান্তর করা হয় তাকে শিল্প বলে।

এটি পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের সাথে জড়িত। সম্পদের রূপ বা আকার পরিবর্তনের মাধ্যমে শিল্প নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। যেমন: হ্যাচারি, হাঁস-মুরগির খামার, সেতু নির্মাণ প্রভৃতি শিল্পের উদাহরণ।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের জনাব সামা পুনঃরপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িত।

পুনঃরপ্তানি বাণিজ্যে বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানি করে তা পুনরায় অন্য কোনো দেশে রপ্তানি করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে পণ্য আমদানি করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গুণগত বা আকৃতির পরিবর্তন করা হয়। এরপর তৃতীয় কোনো দেশে তা রপ্তানি করা হয়। পুনঃরপ্তানি বাণিজ্যে তিনটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সংঘটিত হয়।

উদ্দীপকের জনাব সামা একজন চাল ব্যবসায়ী। তিনি ভারত থেকে চাল আমদানি করেন। আমদানিকৃত চাল তিনি প্রক্রিয়াজাতকরণ করেন। অতঃপর তিনি চাল ইংল্যান্ডের বিভিন্ন বিপণিতে বিক্রয় করেন। এভাবে আমদানিকৃত চাল তিনি আবার রপ্তানি করেন। এসব বৈশিষ্ট্য পুনঃরপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, জনাব সামা পুনঃরপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িত।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের জনাব সামা তার পণ্য গুদামজাতকরণের অভাবে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে বিক্রয় করতে বাধ্য হলেন।

উৎপাদন ও ভোগের মধ্যবর্তী সময়ে বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষার জন্য ব্যবসায়ীগণ পণ্য সংরক্ষণের জন্য গুদামজাতকরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সময়গত বাধা দূর করে।

উদ্দীপকের জনাব সামা গত বছর যে চাল আমদানি করেছেন, তা দুই মাস পর ইংল্যান্ডে বিক্রয় করলে তিনি অনেক বেশি লাভ পেতেন। কিন্তু, আমদানিকৃত চালের জন্য গুদামজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায়, লাভের জন্য তিনি সংরক্ষণ করতে পারেননি ফলে তিনি অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাল সংরক্ষণের জন্য গুদামজাতকরণের ব্যবস্থা করেন। এতে পণ্যের গুণগত মান ভালো রাখা যায়। আর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পণ্য গুদামে রেখে তারপর মৌসুম অনুযায়ী পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করলে ভালো মুনাফাও অর্জন করা যায়। উদ্দীপকের জনাব সামা চাল গুদামজাতকরণ করতে না পারায় পচে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন। তাই তিনি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই চাল বিক্রয় করতে বাধ্য হন।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
গণি মিয়া একজন কৃষক। তিনি জমি চাষ করার জন্য একজোড়া গরু ক্রয় করলেন। তার স্ত্রী বাজার থেকে কাপড় ক্রয় করে এনে নিজের সন্তানের জন্য জামা তৈরি করলেন এবং কিছু জামা বাজারেও বিক্রি করলেন। [দি. বো. ১৭]
ক. সামাজিক ব্যবসায় কী? ১
খ. ‘মুনাফা হলো ঝুঁকি গ্রহণের পুরস্কার’- ব্যাখ্যা করো। ২
গ. গণি মিয়ার গরু ক্রয়ের কাজটি ব্যবসায় কিনা? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. গণি মিয়ার স্ত্রীর কার্যক্রমটি ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করো। ৪

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
যে ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রাপ্তির কোনো প্রত্যাশা থাকে না বরং সমাজের কল্যাণ ও দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় তাকে সামাজিক ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
ব্যবসায়ের আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে, যা অবশিষ্ট থাকে তাকে মুনাফা বলে।

ব্যবসায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। মুনাফা হবে ধরে নিয়েই ব্যবসায়ী ব্যবসায় করলেও পণ্য বিনষ্ট হওয়া, চাহিদা হ্রাস পাওয়া, মূল্য কমে যাওয়া প্রভৃতি কারণে লোকসান হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ঝুঁকি না নিলে ব্যবসায় করা যায় না। সাধারণত ঝুঁকি বেশি হলে মুনাফার পরিমাণও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যেখানে ঝুঁকি নেই সেখানে মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনাও কম হয়। তাই মুনাফাকে ঝুঁকি গ্রহণের পুরস্কার বলা হয়।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের গণি মিয়ার গরু ক্রয়ের কাজটি ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।

ব্যবসায়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য উৎপাদন ও বণ্টনসহ যাবতীয় বৈধ অর্থনৈতিক কাজ করা হয়। যেমন : উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয় ইত্যাদি কাজ। কোনো কাজ শুধু অর্থ সংশ্লিষ্ট হলেই তাকে ব্যবসায় বলা যায় না। ঐ কাজ করার পিছনে অবশ্যই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকতে হয় এবং তা আইনগতভাবে বৈধ হতে হয়।

উদ্দীপকের গণি মিয়া একজন কৃষক। তিনি তার জমি চাষ করার জন্য একজোড়া গরু ক্রয় করলেন। এখানে গরু ক্রয় করার কাজটি অর্থ সংশ্লিষ্ট হলেও এর মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। কেউ নিজে ভোগের জন্য কিছু ক্রয় বা উৎপাদন করলে তা ব্যবসায় হিসেবে বিবেচিত হয় না। গণি মিয়া শুধু তার পরিবারের প্রয়োজনেই গরু কিনে তা দিয়ে জমি চাষ করেন। এতে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য নেই বলে তার এ কাজটিকে ব্যবসায় বলা যাবে না।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে গণি মিয়ার স্ত্রীর জামা তৈরি করে বিক্রির কাজটিকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে ব্যবসায় বলা যায়।

ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার পেছনে ব্যবসায়ীর মুনাফা অর্জনের প্রত্যাশা থাকে। কম দামে পণ্য কিনে বা কম খরচে উৎপাদন করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা ব্যবসায় হিসেবে গণ্য হবে।

উদ্দীপকের গণি মিয়ার স্ত্রী বাজার থেকে কাপড় ক্রয় করে নিজের সন্তানের জন্য জামা তৈরি করেন। আবার কিছু জামা বাজারেও বিক্রি করেন। এখানে তার স্ত্রী কাপড় ক্রয় করে যে অংশটুকু দিয়ে সন্তানের জামা বানান তা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি। নিজের পরিবারের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে এ কাজটিকে ব্যবসায় বলা যাবে না।

তবে যে জামাগুলো তিনি বাজরে বিক্রি করেন তা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হয়। এখানে কাপড় কম দামে ক্রয় করে জামা তৈরি করে তা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বাজারে বিক্রি করা হয়। সুতরাং, গণি মিয়ার স্ত্রীর এ জামা বিক্রি করার কাজটিকে ব্যবসায় বলা যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
ক, খ, গ তিন বন্ধু। ক তার হ্যাচারিতে আলো, তাপ ও বায়ু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা পেয়ে থাকেন। গ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তিনি তথ্য লিখন ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যবসায়ে নিয়োজিত। খ, ক-এর হ্যাচারি থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন। খ উক্ত পণ্যের চাহিদা, মূল্যস্তর, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য গ-এর নিকট থেকে সংগ্রহ করে উক্ত পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করে থাকেন। [সি. বো. ১৭]
ক. ব্যবসায় কী? ১
খ. পুনঃরপ্তানি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্দীপকে গ-এর কাজটি ব্যবসায়ের কোন শাখার অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উপযোগ সৃষ্টির ভিত্তিতে ক ও খ-এর কাজের ব্যাপারে তুলনামূলক মতামত দাও। ৪

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বৈধভাবে পরিচালিত যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজকে (যেমন : উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয়) ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানি করে তা পুনরায় অন্য দেশে রপ্তানি করা হলে তাকে পুনঃরপ্তানি বলে।

পণ্য আমদানি করার পর প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান বা আকার পরিবর্তন করে তা পুনরায় অন্য কোনো দেশে রপ্তানি করা যায়। উৎপাদনকারী দেশের সাথে আমদানিকারক দেশের সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্ক না থাকলে সেক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের গ-এর কাজটি ব্যবসায়ের প্রত্যক্ষ সেবা শাখার অন্তর্ভুক্ত।

গ্রাহকদের প্রত্যক্ষভাবে সেবাকর্ম প্রদানের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা প্রত্যক্ষ সেবার অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রকৌশলীর কাজ প্রত্যক্ষ সেবার উদাহরণ।

উদ্দীপকের ক, খ ও গ তিন বন্ধু। তিন বন্ধু জীবনধারণের তাগিদে ভিন্ন ভিন্ন কাজের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে ‘গ’ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তিনি তথ্য লিখন ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যবসায়ে নিয়োজিত। তিনি তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে সেবা দেন। এ সেবা পেয়ে গ্রাহক উপকৃত, তৃপ্ত বা সন্তুষ্ট হয়। এ কাজের মাধ্যমে ‘গ’ অর্থ উপার্জন করেন, যা ব্যবসায়ের প্রত্যক্ষ সেবা শাখার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই বলা যায়, ‘গ’-এর কাজটি ব্যবসায়ের প্রত্যক্ষ সেবার অন্তর্গত।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের ‘ক’ রূপগত উপযোগ এবং ‘খ’ স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করেন।

শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের আকার পরিবর্তন করে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয় । আর পরিবহনের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয়।

উদ্দীপকের ক, খ ও গ তিন বন্ধু বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে ক তার হ্যাচারিতে আলো, তাপ ও বায়ু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ, তিনি পণ্য উৎপাদন কাজের সাথে জড়িত। অপরদিকে, খ, ক -এর হ্যাচারি থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা সরবরাহ করেন। অর্থাৎ তিনি পরিবহন কাজের সাথে জড়িত।

পণ্য উৎপাদন ও তা ভোক্তার কাছে পৌঁছানো ব্যবসায়ের কাজ। এ উভয় প্রকার কাজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর একপক্ষ উৎপাদন করে এবং অপর পক্ষ তা ভোক্তার কাছে সরবরাহ করে। উদ্দীপকের ‘ক’ উৎপাদন কাজের সাথে জড়িত এবং ‘খ’ পরিবহন কাজের সাথে জড়িত। তাই বিভিন্ন ধরনের উপযোগ সৃষ্টিতে ‘ক’ ও ‘খ’ উভয়ের কাজই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
চট্টগ্রামের আলম ট্রেডার্স শীত মৌসুমের শুরুতে আমেরিকার ‘রিকার্ড’ ট্রেডার্সের নিকট ৫০ লক্ষ টাকার শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য ফরমায়েশ দেয়। যাত্রাপথে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও জাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ফরমায়েশকৃত পণ্য ২৩ দিন বিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। শীত মৌসুম প্রায় শেষ হওয়ায় ফরমায়েশকৃত পণ্য কম দামে অন্যদেশে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়। [য. বো. ১৭]
ক. আমদানি কী? ১
খ. প্রজনন শিল্প বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আলম ট্রেডার্সের ব্যবসায়টি কোন ধরনের বৈদেশিক বাণিজ্য? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায় সহায়ক কোন কাজটি অবদান রাখতে পারত বলে তুমি মনে করো? যুক্তি দাও। ৪

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে নিজ দেশে আনাকে আমদানি বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
যে শিল্পে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশবিস্তার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন কাজ করা হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলে।

এ শিল্পের মাধ্যমে গাছপালা ও প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি করা হয়। এতে প্রাকৃতিক সম্পদ লালন-পালন করে সেগুলোর বংশ বৃদ্ধি বা স্বাভাবিক ফলনের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টি করা হয়। যেমন- নার্সারি, পোলট্রি ফার্ম, ডেইরি ফার্ম, মৎস্য উৎপাদন, হ্যাচারি ইত্যাদি।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে বর্ণিত আলম ট্রেডার্সের ব্যবসায়টি বৈদেশিক বাণিজ্যের ‘পুনঃরপ্তানি’-এর অন্তর্ভুক্ত।

পুনঃরপ্তানি বাণিজ্যে বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানি করে তা পুনরায় অন্য দেশে রপ্তানি কর হয়। উৎপাদনকারী দেশের সাথে আমদানিকারক দেশের সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্ক না থাকলে সেক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

উদ্দীপকের চট্টগ্রামের আলম ট্রেডার্স শীত মৌসুমের শুরুতে আমেরিকার ‘রিকার্ড’ ট্রেডার্সের কাছে ৫০ লক্ষ টাকার শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য ফরমায়েশ দেয়। ফরমায়েশকৃত পণ্য ২৩ দিন বিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। শীত মৌসুম প্রায় শেষ হওয়ায় ফরমায়েশকৃত ঐ পণ্য কম দামে অন্য দেশে বিক্রি করা হয়। এখানে আলম ট্রেডার্স প্রথমে অন্য দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে। এরপর ঐ পণ্য অন্য দেশে বিক্রি করে দেয়। এভাবেই আলম ট্রেডার্সের ব্যবসায়টি পুনঃরপ্তানিতে পরিণত হয়।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায় সহায়ক গুদামজাতকরণের কাজটি অবদান রাখতে পারত বলে আমি মনে করি।

গুদামজাতকরণ উৎপাদন ও ভোগের মধ্যবর্তী সময়ে পণ্যকে বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। ব্যবসায়ীগণ এর মাধ্যমে পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। এটি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সময়গত বাধা দূর করে।

উদ্দীপকের আলম ট্রেডার্সের ফরমায়েশকৃত পণ্য দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও জাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে ২৩ দিন বিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। শীত মৌসুম প্রায় শেষ হওয়ায় পণ্যগুলো কম দামে অন্য দেশে বিক্রি করায় প্রতিষ্ঠানটির ৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়।

আলম ট্রেডার্স আমদানিকৃত পণ্য এ সময় কমদামে বিক্রি না করে গুদামজাতকরণ করে রাখতে পারতো। এতে পরবর্তী শীত মৌসুম পর্যন্ত পণ্যগুলোর মান বজায় থাকত। তাই ঐ সময়ে ন্যায্য দামে পণ্যগুলো বিক্রয় করলে লাভবান হতে পারত। সুতরাং, গুদামজাতকরণ ব্যবস্থাই উক্ত প্রতিষ্ঠানের লোকসান কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারত বলে আমি মনে করি।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
জনাব মুরাদ রংপুরে একটি রাইস মিল স্থাপন করেছেন। তিনি তার এলাকার বিভিন্ন স্থানে চাল বিক্রি করেন। তিনি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বেশ উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি এখন একটি স্বয়ংক্রিয় রাইস মিল স্থাপন করতে চান। কিন্তু এজন্য তার যথেষ্ট সক্ষমতা নেই।
[ব. বো. ১৭]
ক. ব্যবসায় কী? ১
খ. বিমা কীভাবে প্রতিবন্ধকতা দূর করে? ২
গ. জনাব মুরাদ কী ধরনের শিল্প স্থাপন করেছেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. জনাব মুরাদের সমস্যা উত্তরণে তোমার পরামর্শ দাও। ৪

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বৈধভাবে পরিচালিত যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজকে (যেমন : উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয়) ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
বিমা হলো বিমাগ্রহীতা ও বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি, যেখানে বিমাকারী বিমাগ্রহীতাকে নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি বা বিপদে ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দেয়।

ব্যবসায়িক কাজের সাথে জড়িত ঝুঁকি হলো- চাহিদা হ্রাস, পণ্য পচন, মূল্যহ্রাস, দুর্ঘটনা, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতি। এসব ঝুঁকির কারণে ব্যবসায়ে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। এ আর্থিক ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য উক্ত ঝুঁকির বিপরীতে বিমা করা হয়। বিমা চুক্তি অনুযায়ী বিমাগ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমাকারী ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। এভাবে বিমা ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের জনাব মুরাদ উৎপাদন শিল্প স্থাপন করেছেন।

উৎপাদন শিল্পে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কাঁচামালকে রূপান্তরের মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য পণ্যে পরিণত করা হয়। চিনি শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, বস্ত্র শিল্প প্রভৃতি এ শিল্পের অন্তর্গত।

উদ্দীপকের জনাব মুরাদ একটি রাইস মিল স্থাপন করেছেন। এ মিলে তিনি উৎপাদনকৃত ধান ভাঙান। যা থেকে প্রাপ্ত চাল তিনি তার এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। এখানে রাইস মিলে যন্ত্রপাতি বা মেশিনের মাধ্যমেই ধানকে চালে রূপান্তর করা হয়। ফলে এটি ব্যবহারযোগ্য পণ্যে পরিণত হয়ে বিক্রয়ের উপযুক্ত হয়। এসব বৈশিষ্ট্য উৎপাদন শিল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং, জনাব মুরাদের স্থাপিত রাইস মিলটি উৎপাদন শিল্পের অন্তর্গত।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের জনাব মুরাদের সমস্যা উত্তরণে অর্থসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

অর্থসংস্থান হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন বুঝে মূলধন সংগ্রহ ও কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা। ব্যবসায় পরিচালনা ও সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসায়ীকে প্রতিনিয়ত অর্থসংস্থানের কাজ চালিয়ে যেতে হয়।

উদ্দীপকের জনাব মুরাদ তার স্থাপিত রাইস মিলের মাধ্যমে বেশ উন্নতি সাধন করেছেন। তিনি এখন একটি স্বয়ংক্রিয় রাইস মিল স্থাপন করতে চান। কিন্তু এজন্য তার যথেষ্ট আর্থিক সক্ষমতা নেই।

যেকোনো ব্যবসায় পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। ব্যবসায়ী ব্যক্তিগত সঞ্চয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। জনাব মুরাদ নিজস্ব তহবিল বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। এতে তার আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পর্যাপ্ত অর্থ বা মূলধন দিয়ে তিনি স্বয়ংক্রিয় রাইস মিল স্থাপন করতে পারবেন। সুতরাং, জনাব মুরাদ অর্থসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে তার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন ।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
জনাব 'A' আমের মৌসুমে রাজশাহী থেকে আম কিনে ঢাকায় বিক্রি করেন। গতানুগতিক ব্যবসায়ীগণ ফরমালিনের কথা চিন্তা না করেই রাজশাহীর বাজার থেকে আম কিনে ঢাকায় বিক্রি করে। কিন্তু জনাব 'A' সরাসরি রাজশাহীর আমের বাগান থেকে ফরমালিনমুক্ত আম কিনেন। ফরমালিনমুক্ত আম পচে লাভের পরিবর্তে ক্ষতিও হতে পারে তা জেনেও জনাব 'A' এ কাজ করেন। [ঢা. বো. ১৬]
ক. ব্যবসায় কী? ১
খ. পুনঃরপ্তানি বলতে কী বোঝায়? ২
গ. জনাব 'A' -এর ব্যবসায়ে কোন ধরনের উপযোগ সৃষ্টি হয়? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. জনাব 'A' -এর কাজে উদ্যোক্তার কোন গুণটি ফুটে ওঠেছে? বিশ্লেষণ করো। ৪

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বৈধভাবে পরিচালিত যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজকে (যেমন : উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয় প্রভৃতি) ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী নিজ দেশে আমদানি করার পর প্রক্রিয়াজাত করে অথবা না করে তা আবার অন্য কোনো দেশে রপ্তানি করা হলে তাকে পুনঃরপ্তানি বলে।

বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে উক্ত পণ্য বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা হয়। আবার অনেক সময় দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক না থাকলে তৃতীয় কোনো দেশ উক্ত দুই দেশের এক দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে অপর দেশে তা রপ্তানি করে থাকে, যা পুনঃরপ্তানি সৃষ্টি করে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে জনাব 'A'-এর ব্যবসায়ে স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি হয়।

পরিবহন পণ্যের স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করে। উৎপাদনকারী ও ভোগকারীর মধ্যে স্থানগত দূরত্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে পরিবহনের মাধ্যমে সহজেই পণ্য চ‚ড়ান্ত ভোক্তার কাছে পৌঁছানো যায়।

উদ্দীপকের জনাব 'A' আমের মৌসুমে রাজশাহী থেকে আম কিনে ঢাকায় বিক্রি করেন। তিনি রাজশাহীর আমবাগান থেকে ফরমালিনমুক্ত আম কিনেন। পরবর্তীতে তা উৎপাদনস্থল থেকে ঢাকায় এনে বিক্রি করেন। এতে রাজশাহীতে উৎপাদিত আম পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকার ভোক্তারা ভোগ করতে পারে। এটি স্থানগত উপযোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এভাবে জনাব 'A' ব্যবসায়ে স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করেন।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে জনাব 'A' -এর কাজে উদ্যোক্তার সততা গুণটি ফুটে ওঠেছে।

উদ্যোক্তাকে তার কাজকর্মে সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও সততা বজায় রাখতে হয়। কারণ একজন সৎ ব্যবসায়ী তার কাজে অনেক বেশি মনোবল ও একাগ্র হয়ে থাকেন।

উদ্দীপকের জনাব 'A' আমের মৌসুমে রাজশাহী থেকে আম কিনে ঢাকায় বিক্রি করেন। অন্য ব্যবসায়ীরা ফরমালিনের কথা চিন্তা না করলেও তিনি ফরমালিনমুক্ত আম কিনেন। ফরমালিনমুক্ত আম পচে লাভের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে তা জেনেও জনাব 'A' এ কাজ করেন।

জনাব 'A'-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসায়ে লাভ বা লোকসান যা-ই হোক ভোক্তাদের কাছে তিনি ফরমালিনযুক্ত আম বিক্রি করবেন না। তাই লোকসানের ঝুঁকি সত্তে¡ও ফরমালিনমুক্ত আম বিক্রি করছেন, যা উদ্যোক্তার সততা গুণটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
রাসেল স্থানীয় যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ শেষে মাত্র ৩০,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজেদের পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। তার সংগৃহীত উন্নত জাতের তেলাপিয়া মাছের পোনা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা যাতে নিজেদের পছন্দমতো মাছ ক্রয় করতে পারে, এজন্য রাসেল দীর্ঘ সময় জীবন্ত রাখার জন্য কৃত্রিম উপায়ে মাছগুলো সংরক্ষণ করেন। এতে তার মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্থ স্বল্পতার কারণে এ বাড়তি চাহিদা মেটানো তার পক্ষে সবসময় সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। [রা. বো., চ. বো. ১৬]
ক. সামাজিক ব্যবসায় কী? ১
খ. প্রযুক্তিগত পরিবেশ বলতে কী বোঝায়? ২
গ. রাসেল কোন ধরনের শিল্পের সাথে জড়িত? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য রাসেলের করণীয় কী বলে তুমি মনে করো? যুক্তি দাও। ৪

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
যে ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রাপ্তির কোনো প্রত্যাশা থাকে না বরং সমাজের কল্যাণ ও দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় তাকে সামাজিক ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উপাদানের সমন্বিত রূপই হলো প্রযুক্তিগত পরিবেশ।

বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা, গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক কলাকৌশল ও পদ্ধতি ইত্যাদি মিলিয়ে প্রযুক্তিগত পরিবেশ গঠিত হয়। যেসব দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত পরিবেশে উন্নত তারা শিল্প-বাণিজ্যেও উন্নত। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজ করে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের রাসেল প্রজনন শিল্পের সাথে জড়িত।

প্রজনন শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এ শিল্পের মাধ্যমে গাছপালা ও প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি করা হয়। যেমন : নার্সারি, হ্যাচারি প্রভৃতি।

উদ্দীপকে রাসেল স্থানীয় যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ শেষে মাত্র ৩০,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজেদের পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। তার সংগৃহীত উন্নত জাতের তেলাপিয়া মাছের পোনা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বিক্রয়যোগ্য হয়ে ওঠে। অর্থাৎ রাসেল তার পুকুরে প্রথমে মাছের পোনা চাষ করেন। এরপর পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে মাছের এসব পোনা বড় হয়ে উঠলে তা মানুষের খাবার উপযোগী হয়। তাছাড়া এ মাছ থেকেই আবার নতুন বংশবিস্তার ঘটানো যায় এসব বৈশিষ্ট্য প্রজনন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই বলা যায়, রাসেলের কাজ প্রজনন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
আমি মনে করি ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য রাসেলের করণীয় হলো ব্যাংকের সহায়তা নেওয়া।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়া আর্থিক নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু লেনদেনের ওপর ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি নির্ভর করে। ব্যাংক ঋণদানের মাধ্যমে ব্যবসায়ের অর্থসংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে।

উদ্দীপকে রাসেল একজন মাছ ব্যবসায়ী। তিনি উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছ ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করেন। এতে মাছের চাহিদা দিন দিনই বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্থ স্বল্পতার কারণে এ বাড়তি চাহিদা মেটানো তার পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না।

এ অবস্থায় রাসেল প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে কৃত্রিম উপায়ে অধিক পরিমাণ মাছ সংরক্ষণ করতে পারবেন। এজন্য ব্যাংকের সহায়তা চাইলে ব্যাংক তাকে প্রয়োজনীয় ঋণ দিতে পারে বলে আমি মনে করি। কারণ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে অর্থসংক্রান্ত সমস্যা দূর করে। এতে রাসেলের মতো ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ ব্যবসায় করতে পারবে। তাই ক্রেতার বাড়তি চাহিদা পূরণে রাসেল ব্যাংক ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধান করতে পারেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
মি. করিম গাজীপুরের একজন চাল ব্যবসায়ী। তিনি মায়ানমার থেকে চাল আমদানি করে বাছাই করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বস্তা ভরে নিজস্ব গুদামে সংরক্ষণ করেন। তার গুদামে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। কিন্তু বাজারে চালের দাম কমে যাওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি গুদামের চাল প্যাকেটজাত করে মধ্যপ্রাচ্যে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেন। [দি. বো. ১৬]
ক. বাণিজ্য কী? ১
খ. প্রত্যক্ষ সেবা বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মি. করিম চাল বস্তায় ভরার পূর্বে ব্যবসায়ের কোন কাজ করেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মূল্যহ্রাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে চাল বাজারজাতকরণের মাধ্যমে যে বাণিজ্যের কাজটি সম্পাদন করেছেন তার যথার্থতা মূল্যায়ন করো। ৪

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ভোক্তা কিংবা ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সম্পাদিত যাবতীয় (যেমন : ক্রয়, বিক্রয়, পরিবহন) কাজকে বাণিজ্য বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ভোক্তা বা গ্রাহকদের সরাসরি কোনো সেবা দেয়াকে প্রত্যক্ষ সেবা বলে।

সেবাকে কেন্দ্র করেই এর আর্থিক কাজ পরিচালিত হয়। এটি দেখা বা স্পর্শ করা যায় না অথচ মানুষের প্রয়োজন পূরণে সমর্থ। যেমন: ডাক্তারি, আইন ব্যবসায়, নার্সিং প্রভৃতি এর অন্তর্গত।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের মি. করিম চাল বস্তায় ভরার পূর্বে পর্যায়িতকরণের কাজ করেন।

পর্যায়িতকরণে পণ্যের মান নির্ধারণ করার পর ওজন, আকার ও গুণাগুণ অনুযায়ী ভাগ করা হয়। গ্রাহককে আকৃষ্ট করার জন্য পণ্য পর্যায়িতকরণ করা হয়।

উদ্দীপকে মি. করিম মায়ানমার থেকে চাল আমদানি করে বাছাই করেন। পরবর্তীতে এ চালকে তিনি ওজন, আকার ও গুণাগুণ অনুযায়ী ভাগ করে গুদামে সংরক্ষণ করেন। চাল বস্তায় ভরে গুদামে সংরক্ষণ করার পূর্বে এ বিভাজনের কাজটি হলো পর্যায়িতকরণ। এভাবে চালকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা বা পর্যায়িতকরণের ফলে মি. করিম তার গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহে সক্ষম হবেন।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে উল্লিখিত মূল্যহ্রাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে চাল বাজারজাতকরণের মাধ্যমে মি. করিম বাণিজ্যের পুনঃরপ্তানির কাজটি সম্পাদন করেছেন।

পুনঃরপ্তানির ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তা পুনরায় অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়। উৎপাদনকারী দেশের সাথে আমদানিকারক দেশের সরাসরি সম্পর্ক না থাকলে এ ধরনের ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

মি. করিম মায়ানমার থেকে চাল আমদানি করে সংরক্ষণ করেন। পরবর্তী সময়ে বাজারে চালের দাম কমে যাওয়ায় তিনি চাল প্যাকেটজাত করে মধ্যপ্রাচ্যে পুনঃরপ্তানি করেন। এতে তিনি ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া থেকে রক্ষা পান।

মি. করিম মায়ানমার থেকে চাল আমদানি করে প্রমিতকরণ ও পর্যায়িতকরণ সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি অধিক লাভে বিক্রির আশায় তা গুদামে সংরক্ষণ করেন। কিন্তু বাজারে চালের দাম কমে যাওয়ায় তিনি তা প্যাকেটজাত করে মধ্যপ্রাচ্যে বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ তিনি আমদানিকৃত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করে মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করবেন, যা পুনঃরপ্তানি বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত।

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র অধ্যায়-১ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড

সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
চাকরি থেকে অবসরগ্রহণের পর জনাব তানভীর ব্যবসায় শুরু করেন। দিনাজপুর থেকে ধান সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে সংরক্ষণ করেন। পরে চাল তৈরি করে সারা বছর বাজারে বিক্রয় করেন। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তার কর্মচারীর সংখ্যা বেড়ে এখন ১০০ জন। সম্প্রতি তিনি চাল রপ্তানি শুরু করেছেন। [কু. বো. ১৬]
ক. ব্যবসায়ের সংজ্ঞা দাও। ১
খ. প্রজনন শিল্প বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্দীপকে জনাব তানভীর কর্তৃক সম্পাদিত কার্যক্রম হতে কোন কোন ধরনের উপযোগ সৃষ্টি হয়? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনাব তানভীরের অবদান উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা করো। ৪

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বৈধভাবে পরিচালিত যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলে। যেমন : উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয় ইত্যাদি।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
যে শিল্পের উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলে।

এ শিল্পের মাধ্যমে গাছপালা ও প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি করা হয়। এতে প্রাকৃতিক সম্পদ লালন-পালন করে সেগুলোর বংশ বৃদ্ধি বা স্বাভাবিক ফলনের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টি করা হয়। যেমন- নার্সারি, পোল্ট্রি ফার্ম, ডেইরি ফার্ম, মৎস্য উৎপাদন, হ্যাচারি ইত্যাদি।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের জনাব তানভীর কর্তৃক সম্পাদিত কার্যক্রম হতে যথাক্রমে স্বত্বগত, স্থানগত, রূপগত ও কালগত উপযোগ সৃষ্টি হয়।

উপযোগ বলতে কোনো পণ্য বা সেবার অভাব পূরণের ক্ষমতাকে বোঝায়। ব্যবসায়ের প্রধান শাখা শিল্পের মাধ্যমে কাঁচামাল প্রক্রিয়জাত করে পণ্যের রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয়। ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে পণ্য হস্তান্তরের ফলে স্বত্বগত উপযোগ সৃষ্টি হয়। পরিবহনের মাধ্যমে উৎপাদনস্থল থেকে ভোক্তার কাছে পণ্য প্রেরণে স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি হয়। এক মৌসুমে উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করে অন্য মৌসুমে বিক্রয়ের মাধ্যমে কালগত উপযোগ সৃষ্টি করা হয়।

উদ্দীপকে জনাব তানভীর দিনাজপুর হতে ধান কিনেন। এতে স্বত্বগত উপযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি ধান পরিবহনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার ফলে স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি হয়। এরপর তিনি ধান সংরক্ষণ করেন; যা কালগত উপযোগ সৃষ্টি করে। পরে ধান থেকে চাল তৈরি করার মাধ্যমে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি হয়।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনাব তানভীরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়ের গুরুত্ব এত বেশি যে তা বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যবসায়ে যেসব অর্থনৈতিক কাজ পরিচালিত হয় তার মাধ্যমে শুধু ব্যবসায়ী ও ক্রেতারাই নয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের সমগ্র অর্থনীতিই উপকৃত হয়।

জনাব তানভীর তার ব্যবসায়ে দিনাজপুর থেকে ধান সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসেন। এতে পরিবহন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। ধান থেকে চাল তৈরি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করতে হয়। প্রতিটি পর্যায়ের কাজের সাথেই লোকজন জড়িত।

বর্তমানে তার ব্যবসায় ১০০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সম্প্রতি তিনি বিদেশে চাল রপ্তানি শুরু করেছেন; যা দেশকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করবে। জনাব তানভীর তার ব্যবসায়ের মাধ্যমে দেশে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি করেছেন। তিনি বহু লোকের কর্মসংস্থান করেছেন এবং বিদেশে চাল রপ্তানি করে দেশের রপ্তানি খাতে আয় বৃদ্ধি করেছেন। সুতরাং, ব্যবসায়ের সাফল্য অর্জিত হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে, যা জনাব তানভীরের ব্যবসায়ে লক্ষণীয়।

Share:

বাংলা গল্প 'আমাদের সংস্কৃতি' -আনিসুজ্জামান

[লেখক-পরিচিতি: আনিসুজ্জামান ১৯৩৭ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ডা. এ.টি.এ.এম. মোয়াজ্জম, মাতা সৈয়দা খাতুন। ১৯৫১ সালে ঢাকার প্রিয়নাথ হাইস্কুল থেকে তিনি। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ. এবং ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান গবেষক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো : মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্র, স্বরূপের সন্ধানে, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, পুরোনো বাংলা গদ্য, বাঙালি নারী : সাহিত্যে ও সমাজে ইত্যাদি। সাহিত্য ও গবেষণায় কৃতিত্বের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদকসহ প্রচুর সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।]

গল্পঃ
আমাদের সংস্কৃতি
সংস্কৃতি বলতে আমরা সাধারণত সাহিত্য শিল্প নৃত্যগীতবাদ্য বুঝে থাকি। এগুলো সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গ, তবে এগুলোই সংস্কৃতির সবটা নয়। সংস্কৃতি বলতে মুখ্যত দু’টো ব্যাপার বোঝায় : বস্তুগত সংস্কৃতি আর মানস-সংস্কৃতি। ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি, আহারবিহার, জীবনযাপন প্রণালি- এসব বস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্গত। আর সাহিত্যে-দর্শনে শিল্পে-সঙ্গীতে মানসিক প্রবৃত্তির যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তাকে বলা যায় মানস-সংস্কৃতি। বস্তুগত আর মানস-সংস্কৃতি মিলিয়েই কোনো দেশের বা জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় ফুটে ওঠে। বাংলাদেশে আমরা যে সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করছি, তা অনেক পুরনো। এই সংস্কৃতির কিছু বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মেলে, কিছু বৈশিষ্ট্য আলাদা করে শনাক্ত করা যায়। 

নৃতাত্ত্বিক বিচারে, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে, ধর্মানুপ্রেরণায়, বর্ণপ্রথায়, উৎপাদন-পদ্ধতির অনেকখানিতে বাঙালি সংস্কৃতির মিল পাওয়া যাবে গোটা উপমহাদেশের সঙ্গে। বাংলাভাষা ইন্দোইউরোপীয় গোষ্ঠীর ভাষা- এই গোষ্ঠীর অন্যান্য ভাষা ছড়িয়ে আছে উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চলে। বাংলার অনেক রীতিনীতিরও মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেই এলাকায়। আবার ধান-তেল-হলদি-পানসুপারির ব্যবহারে মিল পাওয়া যায় দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে। সেলাইছাড়া কাপড় পরার বিষয়েও বেশি মিল ঐ এলাকার সঙ্গে। এর কারণ, বাংলার আদি জনপ্রবাহ ছিল প্রাক-আর্য নরগোষ্ঠীসম্ভুত। পরে এর ওপরে আর্য জনগোষ্ঠী ও তাদের প্রভাব এসে পড়ে। 

সে প্রভাব এত তীব্র ছিল যে, তাই দেশজ উপকরণে পরিণত হয়। পরে মুসলমানরা যখন এদেশ জয় করলেন, তখন তাঁরা যে সংস্কৃতি নিয়ে এলেন, তাতে তুর্কি-আরব-ইরান-মধ্য-এশিয়ার সাংস্কৃতিক উপাদানের মিশেল ছিল। সেখান থেকে অনেক কিছু এল বাঙালি সংস্কৃতিতে। তারপর এদেশে যখন ইউরোপীয়রা এলেন, তখন তাঁরা এদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ ঘটালেন আরো একটি সংস্কৃতির। এভাবে বাংলার সংস্কৃতিতে অনেক সংস্কৃতি- প্রবাহের দান এসে মিশেছে। আর নানা উৎসের দানে আমাদের সংস্কৃতি হয়েছে পুষ্ট। 
আমাদের সংস্কৃতি - আনিসুজ্জামান বাংলা ১ম নবম-দশম শ্রেণি
লেখকঃ আনিসুজ্জামান
বাংলার প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান আমাদের সংস্কৃতিতে দান করেছে স্বাতন্ত্র। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের দরুন বাংলায় বিভিন্ন রাজত্ব যেমন স্থায়িত্ব লাভ করতে সমর্থ হয়েছে, তেমনি বাংলার এই ৯ বিচ্ছিন্নতার ফলে ধর্মমতের ক্ষেত্রে বিদ্রোহ ও উদ্ভাবন দেখা দিয়েছে। বাংলার সাহিত্য-সঙ্গীতের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বৈচিত্রের প্রভাব লক্ষ করা যায়। সর্পদেবী মনসার মাহাত্ম গান ভিত্তি করে লেখা মনসামঙ্গল কাব্যের উদ্ভব পূর্ববঙ্গের জলাভূমিতে, পশ্চিমবঙ্গের রুক্ষ মাটিতে বিকাশ বৈষ্ণব পদাবলীর। নদীমাতৃক পূর্ববঙ্গে ভাটিয়ালি গানের বিস্তার, শুষ্ক উত্তরবঙ্গে ভাওয়াইয়ার, আর বাংলা পশ্চিমাঞ্চলে কীর্তন ও বাউলের। শিল্পসামগ্রীর লভ্যতাও প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই বাংলার স্থাপত্যে পাথরের চেয়ে ইট আর মাটির প্রাধান্য, মৃঙ্কলক এখানকার অনন্য সৃষ্টি।

বাংলার ভাস্কর্যেও মাটির প্রাধান্য, আর সেই সঙ্গে দেখা যায় এক ধরনের সামগ্রীর ওপরে অন্য ধরনের সামগ্রীর উপযোগী শিল্প সৃষ্টির প্রয়াস। অন্যদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে যে, বাংলার মানস-সংস্কৃতি প্রধানত আশ্রয় করেছে সাহিত্য ও সঙ্গীত, অধ্যাত্মচিন্তা ও দর্শনকে। স্বল্প হলেও স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার ক্ষেত্রে বাংলার দান আছে। কিন্তু বিজ্ঞান ও গণিতের সাধনার তেমন ঐতিহ্য বাংলায় গড়ে ওঠেনি। ফলিত বিজ্ঞানের একটি ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বাংলার একটা ভূমিকা ছিল, কিন্তু তাও ছিল সীমাবদ্ধ। 

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলার অগ্রগতি দেখা দিয়েছিল মূলত কারুশিল্পে। তবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই কারুশিল্প বিকশিত হলেও এর প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন হয়েছে ইংরেজ আমলে। তবে সে প্রযুক্তি বাংলার নিজস্ব সৃষ্টি নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে ধার করা। বাংলার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র পরিস্ফুট হতে থাকে খ্রিস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতাব্দী থেকে। এই স্বাতন্ত্র দেখা দেয় শাসন-ব্যবস্থায়, সামাজিক জীবনে ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও লিপির বিকাশ সে স্বাতন্ত্র্যকে অর্থপূর্ণ করে তোেল। বহিরাগত মুসলমানরা এদেশ জয় করেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে। 

মুসলমান শাসকেরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে তার বিকাশে সহায়তা করেন। ষোড়শ শতাব্দীর শেষে মুঘলরা বাংলাদেশ জয় করেন। মুঘল আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আগের মতো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেনি, তবে একটা বৃহত্তর পরিবেশের সঙ্গে তখন বাংলার সংস্কৃতির যোগ ঘটে। তারপর আঠারো শতকের মধ্যভাগে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হলে যোগাযোগের পরিধি আরো বিস্তৃত হয়; বিশ্বসংস্কৃতির সঙ্গে বাংলার যোগ সাধিত হয়। ঐ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে উচ্চবর্গের সংস্কৃতির সঙ্গে নিম্নবর্গের সংস্কৃতির কিছু কিছু ভেদ ছিল। 

কারুশিল্পের ক্ষেত্রে ভেদটা খুব চোখে পড়ে। এর একটা ধারা ছিল উচ্চ শ্রেণির ভোগ্য- রুপোর। কাজ, হাতির দাঁতের কাজ, রেশমী ও উঁচু মানের সুতি কাপড়ের শিল্প; অন্য ধারাটা ছিল সাধারণের ভোগ্য- শাঁখের ও পিতলের কাজ, নকশী কাঁথা, পাটি, আলপনা। সমাজে উঁচু পর্যায়ে সংস্কৃত বা ফারসির যে-চর্চা হতো তা নিচু স্তরকে স্পর্শ করে নি। ধ্রুপদী সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত চর্চার মধ্যেও এমনি পার্থক্য ছিল। লোকসাহিত্য ও শিষ্ট সাহিত্যের ভেদও ছিল। তবে বাংলার সাহিত্য ও সঙ্গীত সমাজের প্রায় সকল স্তরকে স্পর্শ করতে সমর্থ হয়েছিল। এইজন্যে বাংলার মানস-সংস্কৃতিতে সবচেয়ে প্রাধান্য সাহিত্য ও সঙ্গীতের।

ইংরেজ আমলে যে নতুন সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে, তার প্রেরণা এসেছিল প্রধানত পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে। পাশ্চাত্য শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে যাদের যোগ ঘটেনি, তারা এর বিকাশে এবং এর উপভোগ্যতায়ও অংশ নিতে পারে নি। একালের সাহিত্য-সঙ্গীত-নাটক-চিত্রকলা প্রধানত নগরের সৃষ্টি। এর অর্থ আমাদের মানস-সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ রূপ নির্মিত হয় উচ্চ ও মধ্য শ্রেণির মুষ্টিমেয় ইংরেজি শিক্ষিতের হাতে। ঔপনিবেশিক নয়, কিন্তু আগের মতোই শ্রেণিবিভক্ত। তাই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সকলের অধিকার সমান নয় এবং এক শ্রেণির সৃষ্ট সংস্কৃতিতে অন্য শ্রেণির প্রবেশাধিকার নেই; আবার এক শ্রেণির সৃষ্ট সংস্কৃতি অন্য শ্রেণির পক্ষে রুচিকর নয়। সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন না হলে এই অবস্থার কোনো বদল আশা করা যায় না। 

আঠারো শতক পর্যন্ত বাংলার সংস্কৃতিকে এক অর্থে ধর্মমুখী বলা যায়। বৈষ্ণব সাহিত্য বা মঙ্গলকাব্য, ইসলাম ধর্মবিষয়ক রচনা বা নবিজীবনী, কীর্তন বা শ্যামাসঙ্গীত তার উদাহরণ। এমনকি অধ্যাত্ম-তত্ত্বাশিত প্রণয়োপাখ্যানও এর মধ্যে ধরা যায়। তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমত, বাংলার সাহিত্য ও সঙ্গীতে নানা ধর্মসম্প্রদায়ের বক্তব্য একই সঙ্গে স্থান পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, ধর্মকলহের পাশাপাশি এক ধরনের সমন্বয়- চেতনা কাজ করেছে- যোগ ও সুফিবাদের সমন্বয় আর বাউল গান তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তৃতীয়ত, এর সবক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত ধর্মীয় বস্তুর চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে মানবিকতা। বৈষ্ণব কবিতা বা আধ্যাত্মিক প্রণয়কাহিনী তত্ত্বের চেয়ে প্রেমের কাহিনীরূপেই আদৃত হয়েছে, মঙ্গলকাব্যে দেবতার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে মানুষ। অবৈষ্ণব কবি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ লিখেছেন, অমুসলমান কবি লিখেছেন কারবালা-কাহিনী।

এই মানবিকতাকে যদি বাঙালি সংস্কৃতির একটা মুখ্য প্রকাশ বলে গণ্য করি, তাহলে উনিশ-বিশ শতকের বাংলা সংস্কৃতিতে সেই মানববাদের বিচিত্র রূপ প্রত্যক্ষ করি। পুরনো ধারার সংস্কৃতিতে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিবাদ আছে। একালের সংস্কৃতিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা সরবে শোনা যায়। এই দিক দিয়ে দেখলে আমাদের সংস্কৃতির প্রবহমান ধারায় মানবকল্যাণ ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতি সুস্পষ্ট পক্ষপাত ফুটে উঠেছে। আমাদের সংস্কৃতির বিচিত্র রূপ নিয়ে যেমন আমরা গর্ব করতে পারি, তেমনি তার এই ভাববস্তুও আমাদের গৌরবের বিষয়।

শব্দার্থ ও টীকা: প্রবৃত্তি- অভ্যাস, অভিরুচি। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী- পৃথিবীর ভাষাসমূহকে তাদের উৎপত্তি অনুসারে কয়েকটি পরিবারে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী অন্যতম। সংস্কৃত, বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি প্রধান ভাষাগুলো এ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। নৃ-তাত্ত্বিকজাতি গোষ্ঠী সম্পর্কিত। আর্য নরগোষ্ঠী- প্রাচীন ইরাক-ইরান অঞ্চল থেকে আগত জনগোষ্ঠী। মনসামঙ্গল- মধ্যযুগের কবি চণ্ডীদাস রচিত কাব্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থে সাপের দেবী মনসার বন্দনা করা হয়েছে। বৈষ্ণবপদাবলী- মধ্যযুগে রচিত ভক্তিমূলক কবিতা। কবি জয়দেব বৈষ্ণবপদাবলীর বিখ্যাত কবি। আয়ুর্বেদ- দেশজ চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত গ্রন্থ। কারুশিল্প- হস্তনির্মিত শিল্প যা একাধারে সুন্দর ও প্রাত্যহিক কাজে লাগে। সপ্তম- অষ্টম শতাব্দী-৬০০-৭০০ শতাব্দী। সুফিবাদ- মুসলিম ধর্মীয় মতবাদ বিশেষ।


পাঠ-পরিচিতি: বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের উৎসব’ (২০০৮) গ্রন্থ থেকে প্রবন্ধটি সংকলিত। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। আদিকাল হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত বাংলার সংস্কৃতিতে যোগ হয়েছে বিশ্বের নানা জাতির সংস্কৃতি। এতে আমাদের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়েছে, বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে। তা সত্ত্বেও বাংলার প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান আমাদের সংস্কৃতিকে দান করেছে স্বাতন্ত্র। আর তা হলো আমাদের লোকসংস্কৃতি। আমাদের সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, মাটির ভাস্কর্য, কারুশিল্প, বয়ন শিল্পের রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। এসব কিছুই আমাদের দেশের মানুষকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। জাগ্রত করেছে মানবিক দর্শন।

অনুশীলনী
কর্ম-অনুশীলনঃ

১। আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশ অঞ্চলে যে ঐতিহাসিক সংস্কৃতি ছিল তার একটি তালিকা তৈরি কর।

বহুনির্বাচনি প্রশ্নঃ
১। মানস-সংস্কৃতির সঙ্গে কোনটি সম্পর্কযুক্ত নয়?
ক. সাহিত্য।
খ. সংগীত
গ. শিল্প
ঘ. আহারবিহার

২। সংস্কৃতির দেশজ উপকরণ আহরণে কোন জনগোষ্ঠীর প্রভাব অধিকতর?
i প্রাক-আর্য জনগোষ্ঠী
ii আর্য জনগোষ্ঠী
iii ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
গ. ii
ঘ. i ও ii

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও :
নীলগঞ্জ স্কুলের শিক্ষার্থীবৃন্দ শিক্ষা সফরে কুষ্টিয়া গেল। কুষ্টিয়া শহরের কাছেই ছেউড়িয়ায় লালনের আখড়ায় গিয়ে তারা বাউল শিল্পীদের গান শুনল। লোকায়ত বাউল শিল্পীর মানবতাবাদী চেতনা তাদের মুগ্ধ করল। সেখান থেকে তারা শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে গেল। কুঠিবাড়ির ইটের কারুকার্য তাদের ভালো লাগল। কুঠিবাড়ির কাছেই শিলাইদহ ঘাট। তাদের মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথ বজরা করে এই ও ঘাট থেকেই পদ্মার বুকে ভেসে ভেসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সৃষ্টিশীলতায় মগ্ন থাকতেন।

৩। উদ্দীপকে ‘আমাদের সংস্কৃতি’ প্রবন্ধে বিধৃত দিকটি হলো-
ক. বস্তুগত সংস্কৃতি
খ. মানস সংস্কৃতি
গ. নগর সংস্কৃতি
ঘ. বাউল সংস্কৃতি

৪। উদ্দীপকের অনুভূতির সাথে আমাদের সংস্কৃতি' প্রবন্ধের কোন বিষয়টি সামঞ্জস্যপূর্ণ?
ক. লোকসাহিত্য ও শিষ্ট সাহিত্যের ভেদ আছে।
খ. বাংলার সংস্কৃতিতে অনেক সংস্কৃতি-প্রবাহের দান এসে মিশেছে
গ. বাংলার প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান আমাদের সংস্কৃতিকে স্বাতন্ত্র দিয়েছে।
ঘ. উচ্চবর্গের সংস্কৃতির সঙ্গে নিম্নবর্গের সংস্কৃতির প্রভেদ আছে।
 
এসএসসি (SSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড

সৃজনশীল প্রশ্নঃ
বাঙালি সংকর জাতি। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কারণে এদেশের মানুষ একদিকে সহনশীল অন্যদিকে বিদ্রোহী। এ দেশের মানুষ নানা সঙ্কট মোকাবেলা করে ধর্ম ও সংস্কৃতিকে অভিযোজিত করেছে। এই অভিযোজন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে নানা আয়োজন। শাসনশক্তির রূপান্তর, ধর্মান্তর প্রক্রিয়া এখন ইহজাগতিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিলীন করেনি।
ক. ‘মনসামঙ্গল কাব্যের উদ্ভব কোথায়?
খ. উচ্চবর্গের সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের ভাবটি আমাদের সংস্কৃতি প্রবন্ধের কোন দিককে প্রতিফলিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতির সবক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত ধর্মীয় বস্তুর চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে। মানবিকতা’ লেখকের এই অভিমত উদ্দীপকে কতটা প্রতিফলিত হয়েছে- মূল্যায়ন কর।
Share:

বাংলা গল্প 'অভাগীর স্বর্গ' -শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

[লেখক-পরিচিতিঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আর্থিক সংকটের কারণে এফ.এ. শ্রেণিতে পড়ার সময় তার ছাত্রজীবনের অবসান ঘটে। তিনি কিছুদিন ভবঘুরে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন। পরে ১৯০৩ সালে ভাগ্যের সন্ধানে বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার) যান এবং রেঙ্গুনে অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কেরানি পদে চাকরি করেন। প্রবাস জীবনেই তাঁর সাহিত্য-সাধনা শুরু এবং তিনি অল্পদিনেই খ্যাতি লাভ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং নিয়মিতভাবে সাহিত্য-সাধনা করতে থাকেন।

গল্প, উপন্যাস রচনার পাশাপাশি তিনি কিছু প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তা ত্যাগ করেন। তিনি ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক এবং ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি লাভ করেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা কথাসাহিত্যে দুর্লভ জনপ্রিয়তার অধিকারী। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ, বড়দিদি, বিরাজ বৌ, রামের সুমতি, দেবদাস, বিন্দুর ছেলে, পরিণীতা, পণ্ডিতমশাই, মেজদিদি, পল্লিসমাজ, বৈকুণ্ঠের উইল, শ্রীকান্ত, চরিত্রহীন, দত্তা, ছবি, গৃহদাহ, দেনা পাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন ইত্যাদি। শরৎচন্দ্র ১৬ই জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।]

গল্পঃ
অভাগীর স্বর্গ
ঠাকুরদাস মুখুয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রী সাতদিনের জ্বরে মারা গেলেন। বৃদ্ধ মুখখাপাধ্যায় মহাশয় ধানের কারবারে অতিশয় সঙ্গতিপন্ন। তার চার ছেলে, তিন মেয়ে, ছেলেমেয়েদের ছেলেপুলে হইয়াছে, জামাইরা-প্রতিবেশীর দল, চাকর-বাকর - সে যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল। সমস্ত গ্রামের লোক ধুমধামের শবযাত্রা ভিড় করিয়া দেখিতে আসিল।

মেয়েরা কাঁদিতে কাঁদিতে মায়ের দুই পায়ে গাঢ় করিয়া আলতা এবং মাথায় ঘন করিয়া সিন্দুর লেপিয়া দিল, বধূরা ললাট চন্দনে চর্চিত করিয়া বহুমূল্য বস্ত্রে শাশুড়ির দেহ আচ্ছাদিত করিয়া দিয়া আঁচল দিয়া তাঁহার শেষ পদধূলি মুছাইয়া লইল। পুষ্পে, পত্রে, গন্ধে, মাল্যে, কলরবে মনে হইল না এ কোনো শোকের ব্যাপার-এ যেন বড়বাড়ির গৃহিণী পঞ্চাশ বর্ষ পরে আর একবার নতুন করিয়া তাঁহার স্বামীগৃহে যাত্রা করিতেছেন।

অভাগীর স্বর্গ ভিডিও লিংক
বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায় শান্তমুখে তাঁহার চিরদিনের সঙ্গিনীকে শেষ বিদায় দিয়া অলক্ষে দুফোটা চোখের জল মুছিয়া শোকার্ত কন্যা ও বধূগণকে সান্ত্বনা দিতে লাগিলেন। প্রবল হরিধ্বনিতে প্রভাত- আকাশ আলোড়িত করিয়া সমস্ত গ্রাম সঙ্গে সঙ্গে চলিল।

আর একটি প্রাণী একটু দূরে থাকিয়া এই দলের সঙ্গী হইল। সে কাঙালীর মা। সে তাহার কুটির-প্রাঙ্গণে গোটা-কয়েক বেগুন তুলিয়া এই পথে হাটে চলিয়াছিল, এই দৃশ্য দেখিয়া আর নড়িতে পারিল না। রহিল তাহার হাটে যাওয়া, রহিল তাহার আঁচলে বেগুন বাঁধা,-সে চোখের জল মুছিতে মুছিতে সকলের পিছনে শ্মশানে আসিয়া উপস্থিত হইল। গ্রামের একান্তে গরুড়-নদীর তীরে শ্মশান।

সেখানে পূর্বাহ্নেই কাঠের ভার, চন্দনের টুকরা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা প্রভৃতি উপকরণ সঞ্চিত হইয়াছিল, কাঙালীর মা ছোটজাত, দুলের মেয়ে বলিয়া কাছে যাইতে সাহস পাইল না, তফাতে একটা উঁচু ঢিপির মধ্যে দাঁড়াইয়া সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত উৎসুক আগ্রহে চোখ মেলিয়া দেখিতে লাগিল।

প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে যখন শব স্থাপিত করা হইল তখন তাহার রাঙ্গা পা-দুখানি দেখিয়া তাহার দু’চক্ষু জুড়াইয়া গেল, ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া একবিন্দু আলতা মুছাইয়া লইয়া মাথায় দেয়। বহুকণ্ঠের হরিধ্বনির সহিত পুত্রহস্তের ও মন্ত্রপুত অগ্নি যখন সংযোজিত হইল তখন তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল।

অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা ১ম নবম-দশম শ্রেণি
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

মনে মনে বারংবার বলিতে লাগিল, ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো-আমাকেও আশীর্বাদ করে যাও, আমিও যেন এমনি কাঙালীর হাতের আগুনটুকু পাই। ছেলের হাতের আগুন! সে ত সোজা কথা নয়! স্বামী, পুত্র, কন্যা, নাতি, নাতনী, দাস, দাসী পরিজন-সমস্ত সংসার উজ্জ্বল রাখিয়া এই যে স্বর্গারোহণ দেখিয়া তাহার বুক ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতে লাগিল,- এ সৌভাগ্যের সে যেন আর ইয়ত্তা করিতে পারিল না। সদ্য-প্রজ্বলিত চিতার অজস্র ধুয়া নীল রঙের ছায়া ফেলিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া আকাশে উঠিতেছিল, কাঙালীর মা ইহারই মধ্যে ছোট একখানি রথের চেহারা যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইল।

গায়ে তাহার কত না ছবি আঁকা, চূড়ায় তাহার কত না লতাপাতা জড়ানো। ভিতরে কে যেন বসিয়া আছে-মুখ তাহার চেনা যায় না, কিন্তু সিথায় তাঁহার সিঁদুরের রেখা, পদতল- দুটি আলতায় রাঙানো। উধ্বদৃষ্টে চাহিয়া কাঙালীর মায়ের দুই চোখে অশ্রুর ধারা বহিতেছিল, এমন সময়ে একটি বছর চোদ্দ-পনরর ছেলে তাহার আঁচলে টান দিয়া কহিল, হেথায় তুই দাঁড়িয়ে আছিস মা, ভাত রাঁধবি নে?

গায়ে তাহার তাহার চেনা যায় না, মায়ের দুই চোখে কহিল, হেথায় মা চমকিয়া ফিরিয়া চাহিয়া কহিল, রাধবো’খন রে! হঠাৎ উপরে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া ব্যগ্রস্বরে কহিল, দ্যাখ দ্যাখ বাবা,-বামুন-মা ওই রথে চড়ে সগ্যে যাচ্ছে ! ছেলে বিস্ময়ে মুখ তুলিয়া কহিল কৈ? ক্ষণকাল নিরীক্ষণ করিয়া শেষে বলিল, তুই ক্ষেপেছিস! ও ত ধুয়া! রাগ করিয়া কহিল, বেলা দুপুর বাজে, আমার ক্ষিদে পায় না বুঝি? এবং সঙ্গে সঙ্গে মায়ের চোখে জল লক্ষ করিয়া বলিল, বামুনদের গিন্নি মরছে, তুই কেন কেঁদে মরিস মা?

কাঙালীর মার এতক্ষণে হুশ হইল। পরের জন্য শশানে দাঁড়াইয়া এইভাবে অশ্রুপাত করায় সে মনে মনে লজ্জা পাইল, এমন কি, ছেলের অকল্যাণের আশঙ্কায় মুহূর্তে চোখ মুছিয়া ফেলিয়া একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, কাঁদব কিসের জন্যে রে !- চোখে ধো লেগেছে বৈ ত নয় ! হাঃ-ধো লেগেছে বৈ ত না ! তুই কাঁদতেছিলি!

মা আর প্রতিবাদ করিল না। ছেলের হাত ধরিয়া ঘাটে নামিয়া নিজেও স্নান করিল, কাঙালীকেও স্নান করাইয়া ঘরে ফিরিল,-শ্মশান-সঙ্কারের শেষটুকু দেখা আর তার ভাগ্যে ঘটিল না।

সন্তানের নামকরণকালে পিতামাতার মূঢ়তায় বিধাতাপুরুষ অন্তরীক্ষে থাকিয়া অধিকাংশ সময়ে শুধু হাস্য করিয়াই ক্ষান্ত হন না, তীব্র প্রতিবাদ করেন। তাই তাহাদের সমস্ত জীবনটা তাহাদের নিজের নামগুলোকেই যেন আমরণ ভ্যাঙচাইয়া চলিতে থাকে। কাঙালীর মার জীবনের ইতিহাস ছোট, কিন্তু সেই ছোট্ট কাঙালজীবনটুকু বিধাতার এই পরিহাসের দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিয়াছিল। তাহাকে জন্ম দিয়া মা মরিয়াছিল, বাপ রাগ করিয়া নাম দিল অভাগী।

মা নাই, বাপ নদীতে মাছ ধরিয়া বেড়ায়, তাহার না আছে দিন, না আছে রাত। তবু যে কি করিয়া ক্ষুদ্র অভাগী একদিন কাঙালীর মা হইতে বাঁচিয়া রহিল সে এক বিস্ময়ের বস্তু। যাহার সহিত বিবাহ হইল তাহার ৯ নাম রসিক বাঘ, বাঘের অন্য বাঘিনী ছিল, ইহাকে লইয়া সে গ্রামান্তরে উঠিয়া গেল, অভাগী তাহার * অভাগ্য ও শিশুপুত্র কাঙালীকে লইয়া গ্রামেই পড়িয়া রহিল।

তাহার সেই কাঙালী বড় হইয়া আজ পনরয় পা দিয়াছে। সবেমাত্র বেতের কাজ শিখিতে আরম্ভ করিয়াছে, অভাগীর আশা হইয়াছে আরও বছরখানেক তাহার অভাগ্যের সহিত যুঝিতে পারিলে দুঃখ ঘুচিবে। এই দুঃখ যে কি, যিনি দিয়াছেন তিনি ছাড়া আর কেহই জানে না। কাঙালী পুকুর হইতে আঁচাইয়া আসিয়া দেখিল তাহার পাতের ভুক্তাবশেষ মা একটা মাটির পাত্রে ঢাকিয়া রাখিতেছে, আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তুই খেলি নে মা? বেলা গড়িয়ে গেছে বাবা, এখন আর ক্ষিদে নেই। ছেলে বিশ্বাস করিল না, বলিল, না, ক্ষিদে নেই বৈ কি! কৈ, দেখি তোর হাঁড়ি?

এই ছলনায় বহুদিন কাঙালীর মা কাঙালীকে ফাঁকি দিয়া আসিয়াছে। সে হাঁড়ি দেখিয়া তবে ছাড়িল। তাহাতে আর একজনের মত ভাত ছিল। তখন সে প্রসন্নমুখে মায়ের কোলে গিয়া বসিল। এই বয়েসের ছেলে সচরাচর এরূপ করে না, কিন্তু শিশুকাল হইতে বহুকাল যাবৎ সে রুগণ ছিল বলিয়া মায়ের ক্রোড় ছাড়িয়া বাহিরের সঙ্গীসাথীদের সহিত মিশিবার সুযোগ পায় নাই। এইখানে বসিয়াই তাহাকে খেলাধুলার সাধ মিটাইতে হইয়াছে।

একহাতে গলা জড়াইয়া, মুখের উপর মুখ রাখিয়াই কাঙালী চকিত হইয়া কহিল, মা, তোর গা যে গরম,কেন তুই অমন রোদে দাঁড়িয়ে মড়া-পোড়ানো দেখতে গেলি? কেন আবার নেয়ে এলি? মড়া-পোড়ানো কি তুইমা শশব্যস্তে ছেলের মুখে হাত চাপা দিয়া কহিল, ছি বাবা, মড়া-পোড়ানো বলতে নেই, পাপ হয়। সতী-লক্ষ্মী মা-ঠাকরুন রথে করে সগ্যে গেলেন। ছেলে সন্দেহ করিয়া কহিল, তোর এক কথা মা! রথে চড়ে কেউ নাকি আবার সগ্যে যায়। মা বলিল, আমি যে চোখে দেখনু কাঙালী, বামুন-মা রথের উপরে বসে।

তেনার রাঙা পা-দুখানি যে সবাই চোখ মেলে দেখলে রে! সবাই দেখলে? সব্বাই দেখলে। কাঙালী মায়ের বুকে ঠেস দিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল। মাকে বিশ্বাস করাই তাহার অভ্যাস, বিশ্বাস। করিতেই সে শিশুকাল হইতে শিক্ষা করিয়াছে, সেই মা যখন বলিতেছে সবাই চোখ মেলিয়া এতবড় ব্যাপার দেখিয়াছে,তখন অবিশ্বাস করিবার আর কিছু নাই। খানিক পরে আস্তে আস্তে কহিল, তাহলে তুইও ত মা সগ্যে যাবি? বিন্দির মা সেদিন রাখালের পিসিকে বলতেছিল, ক্যাঙুলার মার মত সতীলক্ষ্মী আর দুলে-পাড়ায় নেই।

কাঙালীর মা চুপ করিয়া রহিল, কাঙালী তেমনি ধীরে ধীরে কহিতে লাগিল, বাবা যখন তোরে ছেড়ে দিলে, তখন তোরে কত লোকে ত নিকে করতে সাধাসাধি করলে। কিন্তু তুই বললি, না। বললি, ক্যাঙালী বাঁচলে আমার দুঃখু ঘুচবে, আবার নিকে করতে যাবো কিসের জন্যে? হাঁ মা, তুই ঃ নিকে করলে আমি কোথায় থাকতুম? আমি হয়ত না খেতে পেয়ে এতদিনে কবে মরে যেতুম।

মা ছেলেকে দুই হাতে বুকে চাপিয়া ধরিল। বস্তুত সেদিন তাহাকে এ পরামর্শ কম লোকে দেয় নাই, এবং যখন সে কিছুতেই রাজি হইল না, তখন উৎপাত-উপদ্রবও তাহার প্রতি সামান্য হয় নাই, সেই কথা স্মরণ করিয়া অভাগীর চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। ছেলে হাত দিয়া মুছাইয়া দিয়া বলিল, ঝাতাটা পেতে দেব মা, শুবি? মা চুপ করিয়া রহিল। কাঙালী মাদুর পাতিল, কাঁথা পাতিল, মাচার উপর হইতে ছোট বালিশটি পাড়িয়া দিয়া হাত ধরিয়া তাহাকে বিছানায় টানিয়া লইয়া যাইতে, মা কহিল, কাঙালী, আজ তোর আর কাজে গিয়ে কাজ নেই। কাজ কামাই করিবার প্রস্তাব কাঙালীর খুব ভালো লাগিল, কিন্তু কহিল, জলপানির পয়সা দুটো ত তা হলে দেবে না মা !

দিক গে, “আয় তোকে রূপকথা বলি। আর প্রলুব্ধ করিতে হইল না, কাঙালী তৎক্ষণাৎ মায়ের বুক ঘেঁষিয়া শুইয়া পড়িয়া কহিল, বল্ তা হলে। রাজপুত্তুর, কোটালপুর আর সেই পক্ষীরাজ ঘোড়া - অভাগী রাজপুত্র, কোটালপুত্র আর পক্ষীরাজ ঘোড়ার কথা দিয়া গল্প আরম্ভ করিল। এ-সকল তাহার পরের কাছে কতদিনের শোনা এবং কতদিনের বলা উপকথা।

কিন্তু মুহূর্ত-কয়েক পরে কোথায় গেল তাহার রাজপুত্র, আর কোথায় গেল তাহার কোটালপুত্র-সে এমন উপকথা শুরু করিল যাহা পরের কাছে তাহার শেখা নয়- নিজের সৃষ্টি। জ্বর তাহার যত বাড়িতে লাগিল, উষ্ণ রক্তস্রোত যত দ্রুতবেগে মস্তিষ্কে বহিতে লাগিল, ততই সে যেন নব নব উপকথার ইন্দ্রজাল রচনা করিয়া চলিতে লাগিল। তাহার বিরাম নাই, বিচ্ছেদ নাই- কাঙালীর স্বল্প দেহ বার বার রোমাঞ্চিত হইতে লাগিল। ভয়ে, বিস্ময়ে, পুলকে সে সজোরে মায়ের গলা জড়াইয়া তাহার বুকের মধ্যে যেন মিশিয়া যাইতে চাহিল।

বাহিরে বেলা শেষ হইল, সূর্য অস্ত গেল, সন্ধ্যার ম্লান ছায়া গাঢ়তর হইয়া চরাচর ব্যাপ্ত করিল, কিন্তু ঘরের মধ্যে আজ আর দীপ জ্বলিল না, গৃহস্থের শেষ কর্তব্য সমাধা করিতে কেহ উঠিল না, নিবিড় অন্ধকারে কেবল রুগ্‌ণ মাতার অবাধ গুঞ্জন নিস্তব্ধ পুত্রের কর্ণে সুধাবর্ষণ করিয়া চলিতে লাগিল। সে সেই শ্মশান ও শ্মশানযাত্রার কাহিনী। সেই রথ, সেই রাঙ্গা পা-টি, সেই তাঁর স্বর্গে যাওয়া। কেমন করিয়া শোকার্ত স্বামী শেষ পদধুলি দিয়া কাঁদিয়া বিদায় দিলেন, কি করিয়া হরিধ্বনি দিয়া ছেলেরা মাতাকে বহন করিয়া লইয়া গেল, তার পরে সন্তানের হাতের আগুন। সে আগুন ত আগুন নয় কাঙালী, সে ত হরি! তার আকাশজোড়া ধুয়ো ত ধুয়ো নয় বাবা, সেই ত সগ্যের রথ! কাঙালীচরণ, বাবা আমার!

কি মা?

তোর হাতের আগুন যদি পাই বাবা, বামুন-মার মত আমিও সগ্যে যেতে পাবো। কাঙালী অস্ফুটে শুধু কহিল, যাঃ-বলতে নেই।

মা সে কথা বোধ করি শুনিতেই পাইল না, তপ্তনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিতে লাগিল , ছোটজাত বলে তখন কিন্তু কেউ ঘেন্না করতে পারবে না-দুঃখী বলে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ইস! ছেলের হাতের আগুন,-রথকে যে আসতেই হবে। ছেলে মুখের উপর মুখ রাখিয়া ভগ্নকণ্ঠে কহিল, বলিস নে মা, বলিস নে, আমার বড় ভয় করে। মা কহিল, আর দেখ কাঙালী, তোর বাবাকে একবার ধরে আনবি, অমনি যেন পায়ের ধুলো মাথায় দিয়ে আমাকে বিদায় দেয়।

অমনি পায়ে আলতা, মাথায় সিঁদুর দিয়ে, কিন্তু কে বা দেবে? তুই দিবি, না রে কাঙালী? তুই আমার ছেলে, তুই আমার মেয়ে, তুই আমার সব! বলিতে বলিতে সে ছেলেকে একেবারে বুকে চাপিয়া ধরিল। অভাগীর জীবন-নাট্যের শেষ অঙ্ক পরিসমাপ্ত হইতে চলিল। বিস্তৃতি বেশি নয়, সামান্যই। বোধ করি ত্রিশটা বৎসর আজও পার হইয়াছে কি হয় নাই, শেষও হইল তেমনি সামান্যভাবে। গ্রামে কবিরাজ ছিল না, ভিন্ন গ্রামে তাঁহার বাস। কাঙালী গিয়া কাদাকাটি করিল, হাতে-পায়ে পড়িল, শেষে ঘটি বাঁধা দিয়া তাঁহাকে এক টাকা প্রণামী দিল। তিনি আসিলেন না, গোটা-চারেক বড়ি দিলেন। তাহার কত কি আয়োজন।

খল, মধু আদার সত্ত্ব, তুলসীপাতার রস-কাঙালীর মা ছেলের প্রতি রাগ করিয়া বলিল, কেন তুই আমাকে না বলে ঘটি বাঁধা দিতে গেলি বাবা! হাত পাতিয়া বড়ি কয়টি গ্রহণ করিয়া মাথায় ঠেকাইয়া উনানে ফেলিয়া দিয়া কহিল,ভালো হই ত এতেই হবো, বাগদি-দুলের ঘরে কেউ কখনো ওষুধ খেয়ে বাঁচে না। দিন দুই-তিন এমনি গেল। প্রতিবেশীরা খবর পাইয়া দেখিতে আসিল, যে যাহা মুষ্টিযোগ জানিত, হরিণের শিঙ-ঘষা জল, গেঁটে-কড়ি পুড়াইয়া মধুতে মাড়িয়া চাটাইয়া দেওয়া ইত্যাদি অব্যর্থ ঔষধের সন্ধান দিয়া যে যাহার কাজে গেল।

ছেলেমানুষ কাঙালী ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিতে, মা তাহাকে কাছে। টানিয়া লইয়া কহিল, কোবরেজের বাড়িতে কিছু হলো না বাবা আর ওদের ওষুধে কাজ হবে? আমি এমনি ভালো হবে। কাঙালী কাঁদিয়া কহিল, তুই বড়ি ত খেলি নে মা, উনুনে ফেলে দিলি। এমনি কি কেউ সারে? আমি এমনি সেরে যাবো। তার চেয়ে তুই দুটো ভাতে-ভাত ফুটিয়ে নিয়ে খা দিকি, আমি চেয়ে দেখি। কাঙালী এই প্রথম অপটু হস্তে ভাত রাধিতে প্রবৃত্ত হইল। না পারিল ফ্যান ঝাড়িতে, না পারিল ভালো করিয়া ভাত বাড়িতে।

উনান তাহার জ্বলে নাভিতরে জল পড়িয়া ধুয়া হয়; ভাত ঢালিতে চারিদিকে ছড়াইয়া পড়ে; মায়ের চোখ ছলছল করিয়া আসিল। নিজে একবার উঠিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু মাথা সোজা করিতে পারিল না, শয্যায় লুটাইয়া পড়িল। খাওয়া হইয়া গেলে ছেলেকে কাছে লইয়া কি করিয়া কি করিতে হয় বিধিমতে উপদেশ দিতে গিয়া তাহার ক্ষীণকণ্ঠ থামিয়া গেল, চোখ দিয়া কেবল অবিরলধারায় জল পড়িতে লাগিল। গ্রামে ঈশ্বর নাপিত নাড়ী দেখিতে জানিত, পরদিন সকালে সে হাত দেখিয়া তাহারই সুমুখে মুখ গম্ভীর করিল, দীর্ঘশ্বাস ফেলিল এবং শেষে মাথা নাড়িয়া উঠিয়া গেল। কাঙালীর মা ইহার অর্থ বুঝিল, কিন্তু তাহার ভয়ই হইল না। সকলে চলিয়া গেলে সে ছেলেকে কহিল, এইবার একবার তাকে ডেকে আনতে পারিস বাবা?

কাকে মা? ওই যে রে-ও-গাঁয়ে যে উঠে গেছে। কাঙালী বুঝিয়া কহিল, বাবাকে? অভাগী চুপ করিয়া রহিল। কাঙালী বলিল, সে আসবে কেন মা? অভাগীর নিজেরই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল, তথাপি আস্তে আস্তে কহিল, গিয়ে বলবি, মা শুধু একটু তোমার পায়ের ধুলো চায়। সে তখনি যাইতে উদ্যত হইলে সে তাহার হাতটা ধরিয়া ফেলিয়া বলিল, একটু কাদাকাটা করিস বাবা, বলিস মা যাচ্চে । একটু থামিয়া কহিল, ফেরবার পথে অমনি নাপতে-বৌদির কাছ থেকে একটু আলতা চেয়ে আনিস ক্যাঙালী, আমার নাম করলেই সে দেবে। আমাকে বড় ভালোবাসে। ভালো তাহাকে অনেকেই বাসিত। জ্বর হওয়া অবধি মায়ের মুখে সে এই কয়টা জিনিসের কথা এতবার এতরকম করিয়া শুনিয়াছে যে, সে সেইখান হইতে কাঁদিতে কাঁদিতে যাত্রা করিল।

পরদিন রসিক দুলে সময়মত যখন আসিয়া উপস্থিত হইল তখন অভাগীর আর বড় জ্ঞান নাই । মুখের পরে মরণের ছায়া পড়িয়াছে, চোখের দৃষ্টি এ সংসারের কাজ-সারিয়া কোথায় কোন্ অজানা দেশে চলিয়া গেছে। কাঙালী কাঁদিয়া কহিল, মাগো! বাবা এসেছে-পায়ের ধুলো নেবে যে! মা হয়ত বুঝিল, হয়ত বুঝিল না, হয়ত বা তাহার গভীর সঞ্চিত বাসনা সংস্কারের মত তাহার আচ্ছন্ন চেতনায় ঘা দিল। এই মৃত্যুপথযাত্রী তাহার অবশ বাহুখানি শয্যার বাহিরে বাড়াইয়া হাত পাতিল। রসিক হতবুদ্ধির মত দাঁড়াইয়া রহিল। পৃথিবীতে তাহারও পায়ের ধুলোর প্রয়োজন আছে, ইহাও কেহ নাকি চাহিতে পারে তাহা তাহার কল্পনার অতীত। বিন্দির পিসি দাঁড়াইয়া ছিল, সে কহিল, দাও বাবা, দাও একটু পায়ের ধুলো।

রসিক অগ্রসর হইয়া আসিল। জীবনে যে স্ত্রীকে সে ভালোবাসা দেয় নাই, অশন-বসন দেয় নাই, কোন খোঁজখবর করে নাই, মরণকালে তাহাকে সে শুধু একটু পায়ের ধুলা দিতে গিয়া কাঁদিয়া ফেলিল। রাখালের মা বলিল, এমন সতীলক্ষ্মী বামুন-কায়েতের ঘরে না জন্মে, ও আমাদের দুলের ঘরে জন্মালে কেন? এইবার ওর একটু গতি করে দাও বাবা-ক্যাঙালার হাতের আগুনের লোভে ও যেন প্রাণটা দিলে।

অভাগীর অভাগ্যের দেবতা অগোচরে বসিয়া কি ভাবিলেন জানি না, কিন্তু ছেলেমানুষ কাঙালীর বুকে গিয়া এ কথা যেন তীরের মত বিঁধিল।

সেদিন দিনের বেলাটা কাটিল, প্রথম রাত্রিটা কাটিল, কিন্তু প্রভাতের জন্য কাঙালীর মা আর অপেক্ষা করিতে পারিল না। কি জানি, এত ছোটজাতের জন্যও স্বর্গে রথের ব্যবস্থা আছে কি না, কিংবা অন্ধকারে পায়ে হাঁটিয়াই তাহাদের রওনা হইতে হয়, কিন্তু এটা বুঝা গেল, রাত্রি শেষ না হইতেই এ দুনিয়া সে ত্যাগ করিয়া গেছে। কুটির-প্রাঙ্গণে একটা বেলগাছ, একটা কুড়াল চাহিয়া আনিয়া রসিক তাহাতে ঘা দিয়াছে কি দেয় নাই, জমিদারের দারোয়ান কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া তাহার গালে সশব্দে একটা চড় কষাইয়া দিল; কুড়াল কাড়িয়া লইয়া কহিল, শালা, একি তোর বাপের গাছ আছে যে কাটতে লেগেছিস? রসিক গালে হাত বুলাইতে লাগিল, কাঙালী কাঁদ-কাঁদ হইয়া বলিল, বাঃ, এ যে আমার মায়ের হাতে-পোতা গাছ, দারোয়ানজী।

বাবাকে খামোকা তুমি মারলে কেন? হিন্দুস্থানী দারোয়ান তাহাকেও একটা অশ্রাব্য গালি দিয়া মারিতে গেল, কিন্তু সে নাকি তাহার জননীর মৃতদেহ স্পর্শ করিয়া বসিয়াছিল, তাই অশৌচের ভয়ে তাহার গায়ে হাত দিল না। হাঁকাহাঁকিতে একটা ভিড় জমিয়া উঠিল, কেহই অস্বীকার করিল না যে বিনা অনুমতিতে রসিকের গাছ কাটিতে যাওয়াটা ভালো হয় নাই। তাহারাই আবার দারোয়ানজীর হাতে-পায়ে পড়িতে লাগিল, তিনি অনুগ্রহ করিয়া যেন একটা হুকুম দেন। কারণ, অসুখের সময় যে-কেহ দেখিতে আসিয়াছে কাঙালীর মার তাহারই হাতে ধরিয়া তাহার শেষ অভিলাষ ব্যক্ত করিয়া গেছে। দারোয়ান ভুলিবার পাত্র নহে, সে হাত-মুখ বাড়িয়া জানাইল, এ-সকল চালাকি তাহার কাছে খাটিবে না। জমিদার স্থানীয় লোক নহেন; গ্রামে তাঁহার একটা কাছারি আছে, গোমস্তা অধর রায় তাহার কর্তা।
 
যখন হিন্দুস্থানিটার কাছে ব্যর্থ অনুনয়-বিনয় করিতে লাগিল, কাঙালী ঊধ্বশ্বাসে দৌড়িয়া একেবারে কাছারি বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে লোকের মুখে মুখে শুনিয়াছিল, পিয়াদারা ঘুষ লয়, তাহার নিশ্চয় বিশ্বাস হইল অতবড় অসঙ্গত অত্যাচারের কথা যদি কর্তার গোচর করিতে পারে ত ইহার প্রতিবিধান না হইয়াই পারে না। হায় রে অনভিজ্ঞ! বাংলাদেশের জমিদার ও তাহার কর্মচারীকে সে চিনিত না।

সদ্যমাতৃহীন বালক শোকে ও উত্তেজনায় উদভ্রান্ত হইয়া একেবারে উপরে উঠিয়া আসিয়াছিল, অধর রায় সেইমাত্র সন্ধ্যাহ্নিক ও যৎসামান্য জলযোগান্তে বাহিরে আসিয়াছিলেন, বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, কে রে? আমি কাঙালী। দারোয়ানজী আমার বাবাকে মেরেছে। বেশ করেছে। হারামজাদা, খাজনা দেয়নি বুঝি? কাঙালী কহিল, না বাবুমশায়, বাবা গাছ কাটতেছিল, আমার মা মরেচে-বলিতে বলিতে সে কান্না আর চাপিতে পারিল না। এই কান্নাকাটিতে অধর অত্যন্ত বিরক্ত হইলেন। ছোঁড়াটা মড়া ছুঁইয়া আসিয়াছে, কি জানি এখানকার কিছু ছুঁইয়া ফেলিল নাকি ! ধমক দিয়া বলিলেন, মা মরেচে ত যা নীচে নেবে দাঁড়া। ওরে কে আছিস রে, এখানে একটু গোবরজল ছড়িয়ে দে! কি জাতের ছেলে তুই?

কাঙালী সভয়ে প্রাঙ্গণে নামিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, আমরা দুলে। অধর কহিলেন, দুলে ! দুলের মড়ার কাঠ কি হবে শুনি? কাঙালী বলিল, মা যে আমাকে আগুন দিতে বলে গেছে। তুমি জিজ্ঞেস কর না বাবুমশায়, মা যে সবাইকে বলে গেছে, সক্কলে শুনেছে যে ! মায়ের কথা বলিতে গিয়া তাহার অনুক্ষণের সমস্ত অনুরোধ উপরোধ মুহূর্তে স্মরণ হইয়া কণ্ঠ যেন তাহার কান্নায় ফাটিয়া পড়িতে চাহিল। অধর কহিলেন, মাকে পোড়াবি ত গাছের দাম পাঁচটা টাকা আন্ গে। পারবি? কাঙালী জানিত তাহা অসম্ভব। তাহার উত্তরীয় কিনিবার মূল্যস্বরূপ তাহার ভাত খাইবার পিতলের কাসিটি বিন্দির পিসি একটি টাকায় বাঁধা দিতে গিয়াছে সে চোখে দেখিয়া আসিয়াছে, সে ঘাড় নাড়িল, বলিল, না। 

অধর মুখখানা অত্যন্ত বিকৃত করিয়া কহিলেন, না ত, মাকে নিয়ে নদীর চড়ায় পুঁতে ফেল গে যা। কার বাবার গাছে তোর বাপ কুড়ল ঠেকাতে যায়-পাজি, হতভাগা, নচ্ছার ! কাঙালী বলিল, সে যে আমাদের উঠানের গাছ বাবুমশায়! সে যে আমার মায়ের হাতে পোঁতা গাছ। হাতে পোঁতা গাছ! পাঁড়ে, ব্যাটাকে গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দে তা পড়ে আসিয়া গলাধাক্কা দিল, এবং এমন কথা উচ্চারণ করিল যাহা কেবল জমিদারের কর্মচারীই পারে। কাঙালী ধুলা ঝাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইল, তার পরে ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল। কেন সে যে মার খাইল, কি তাহার অপরাধ, ছেলেটা ভাবিয়াই পাইল না। গোমস্তার নির্বিকার চিত্তে দাগ পর্যন্ত পড়ি ল না।

পড়িলে এ চাকরি তাহার জুটিত না। কহিলেন, পরেশ, দেখ ত হে, এ ব্যাটার খাজনা বাকি পড়েছে কি না। থাকে ত জাল-টাল কিছু একটা কেড়ে এনে যেন রেখে দেয়,-হারামজাদা পালাতে পারে। মুখুয্যে-বাড়িতে শ্রাদ্ধের দিন-মাঝে কেবল একটা দিন মাত্র বাকি। সমারোহের আয়োজন গৃহিণীর উপযুক্ত করিয়াই হইতেছে। বৃদ্ধ ঠাকুরদাস নিজে তত্ত্বাবধান করিয়া ফিরিতেছিলেন, কাঙালী আসিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইল, কহিল, ঠাকুরমশাই, আমার মা মরে গেছে। তুই কে? কি চাস তুই? আমি কাঙালী। মা বলে গেছে তেনাকে আগুন দিতে। তা দি গে না। কাছারির ব্যাপারটা ইতিমধ্যেই মুখে মুখে প্রচারিত হইয়া পড়িয়াছিল, একজন কহিল, ও বোধ হয়। একটা গাছ চায়।-এই বলিয়া সে ঘটনাটা প্রকাশ করিয়া কহিল । মুখুয্যে বিস্মিত ও বিরক্ত হইয়া কহিলেন, শোন আবদার। আমারই কত কাঠের দরকার,-কাল বাদে পরশু কাজ। যা যা, এখানে কিছু হবে না-এখানে কিছু হবে না। এই বলিয়া অন্যত্র প্রস্থান করিলেন।

ভট্টাচার্য মহাশয় অদূরে বসিয়া ফর্দ করিতেছিলেন, তিনি বলিলেন, তোদের জেতে কে কবে আবার পোড়ায় রে? যা, মুখে একটু নুড়ো জ্বেলে দিয়ে নদীর চড়ায় মাটি দে গে। মুখখাপাধ্যায় মহাশয়ের বড় ছেলে ব্যস্তসমস্তভাবে এই পথে কোথায় যাইতেছিলেন, তিনি কান খাড়া করিয়া একটু শুনিয়া কহিলেন, দেখচেন ভট্টচার্যমশায়, সব ব্যাটারাই এখন বামুন-কায়েত হতে চায়। বলিয়া কাজের ঝেকে আর কোথায় চলিয়া গেলেন। কাঙালী আর প্রার্থনা করিল না। 

এই ঘণ্টা-দুয়েকের অভিজ্ঞতায় সংসারে সে যেন একেবারে বুড়া হইয়া গিয়াছিল। নিঃশব্দে ধীরে ধীরে তাহার মরা মায়ের কাছে গিয়া উপস্থিত হইল। নদীর চরে গর্ত খুঁড়িয়া অভাগীকে শোয়ান হইল। রাখালের মা কাঙালীর হাতে একটা খড়ের আঁটি জ্বালিয়া দিয়া তাহারই হাত ধরিয়া মায়ের মুখে স্পর্শ করাইয়া ফেলিয়া দিল। তার পরে সকলে মিলিয়া মাটি চাপা দিয়া কাঙালীর মায়ের শেষ চিহ্ন বিলুপ্ত করিয়া দিল। সবাই সকল কাজে ব্যস্ত,-শুধু সেই পোড়া খড়ের আঁটি হইতে যে স্বল্প পুঁয়াটুকু ঘুরিয়া ঘুরিয়া আকাশে উঠিতেছিল, তাহারই প্রতি পলকহীন চক্ষু পাতিয়া কাঙালী উধ্বদৃষ্টে স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল।

শব্দার্থ ও টীকা :
মুখুয্যে - মুখোপাধ্যায় পদবি, লোকমুখে উচ্চারণের পার্থক্য ঘটেছে এখানে।
বর্ষীয়সী – অতি বৃদ্ধ, সকলের মধ্যে বয়সে বড়, স্ত্রীবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত।
সঙ্গতিপন্ন - অর্থ-সম্পদের অধিকারী।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া - মৃত ব্যক্তির সকার, মৃত্যের জন্য অন্তিম বা শেষ অনুষ্ঠান।
সগ্য - স্বর্গ, লোকমুখের উচ্চারণে পার্থক্য ঘটেছে।
অন্তরীক্ষ - আকাশ, গগন।
ভুক্তাবশেষ - ভোজন বা খাওয়ার পরে পাতে যা পড়ে থাকে।
প্রসন্ন - সন্তুষ্ট, খুশি।
প্রসন্নমুখ - খুশি ভরা মুখ।
ক্রোড় - কোল;
শশব্যস্ত - খরগোশ বা শশকের মতো ব্যস্ত।
তেনার -তার, তাঁর।
দুলে-পালকি বহনকারী হিন্দু সম্প্রদায়বিশেষ, নিচু জাতের মানুষ বলে অভিহিত।
ইন্দ্রজাল - জাদুবিদ্যা, এখানে গল্পের মাধ্যমে মুগ্ধ বা মোহিত করে রাখার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে।
রোমাঞ্চ - শিহরণ, অনুভূতির আধিক্যে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া।
ভগ্নকণ্ঠ - বিকৃত স্বর,এখানে অতি আবেগে কাঙালীর ভাঙা বা বিকৃত স্বরে কথা বলা বোঝানো হয়েছে।
প্রণামী-পুরোহিত বা দেব-দেবীকে দেওয়া সালামি, এখানে কবিরাজকে চিকিৎসা ফি হিসেবে দেওয়া টাকা বোঝানো হয়েছে।
মুষ্টিযোগ – টোটকা চিকিত্স।
গেঁটে কড়ি - কাঁটাযুক্ত শামুক জাতীয় প্রাণি।
নিস্তব্ধ - নিশ্চল, নিঃসাড়। নির্বাক।
হরিধ্বনি- হরি নামের ধ্বনি, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মৃতদেহ বহন করার সময় সমবেতকণ্ঠে দেবতা হরির নাম উচ্চস্বরে বলে থাকে তাকে হরিধ্বনি বলে।
সংস্কার – বিশ্বাস, ঝোঁক, আজন্ম লালিত ধারণা।
অশন – খাদ্যদ্রব্য, আহারের বস্তু।
সন্ধ্যাহিক - সন্ধ্যাবেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নিত্যকরণীয় পূজা।

পাঠ-পরিচিতি: সুকুমার সেন সম্পাদিত 'শরৎ সাহিত্যসমগ্র' গ্রন্থের প্রথম খণ্ড থেকে ‘অভাগীর স্বর্গ নামক গল্পটি সংকলন করা হয়েছে। গরিব-দুখী নীচু শ্রেণির ছেলে কাঙালী। তার মা অভাগী। প্রতিবেশী উঁচু জাতের বাড়ির গৃহকত্রীর মৃত্যুর পর সৎকারের দৃশ্য দেখে অভাগীর ভেতরকার ভাবানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয় এ গল্প। মৃতের শব্যাত্রার আড়ম্বরতা ও সত্ত্বারের ব্যাপকতা দেখে অভাগীও নিজের মৃত্যু মুহূর্তের স্বপ্ন দেখে। চন্দন, সিঁদুর, আলতা, মালা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা, অগ্নির ধোঁয়ায় মুখুয্যে বাড়ির গিন্নি স্বর্গে গমন করেছেন। দুখিনী অভাগীও ভাবে তার মৃত্যুর সময় স্বামীর পায়ের ধূলি নিয়ে মৃত্যু শেষে পুত্র মুখাগ্নি করলে সেও স্বর্গে যাবে। মৃত্যুর সময় কাঙালী তার বাবাকে হাজির করতে পারলেও পারেনি কাঠের অভাবে মায়ের সষ্কার করতে। এ গল্পে সামন্তবাদের নির্মম রূপ এবং নীচু শ্রেণির হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা শরশ্চন্দ্র অত্যন্ত দরদী ভাষায় উপস্থাপন করেছেন।

অনুশীলনী
কর্ম-অনুশীলন

১. তোমার দেখা ধনী পরিবারের কারো মৃত্যু ও গরিব পরিবারের কারো মৃত্যু ঘটনার তুলনামূলক বিবরণ দাও।
২. কাঙালী তার মায়ের প্রতি যে মাতৃভক্তি দেখিয়েছে,এরকম কোনো ঘটনা লিপিবদ্ধ কর।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। কোন নদীর তীরে শশ্মানঘাট অবস্থিত?
ক. শঙ্খ
খ. গরুড়
গ. গড়াই
ঘ. পদ্মা

২। রসিক বেল গাছটি কী কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল?
ক. অভাগীর শবদাহ
খ. ঘরবাড়ি তৈরি
গ. রান্নার কাঠ সগ্রহ
ঘ. কাঙালীর জন্য

উদ্দীপকটি পড়ে ৩ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
তর্করত্ন কহিলেন ধার নিবি শুধবি কীভাবে? গফুর বলিল, যেমন করে পারি শুধব বাবা ঠাকুর, তোমাকে ফাঁকি দেব না।

৩। তর্করত্ন অভাগীর স্বর্গ গল্পের কোন্ চরিত্রের প্রতিনিধিঃ
ক. ঠাকুর দাস মুখুজ্যে
খ. রসিক দুলে
গ. দারোয়ানজী
ঘ. অধর
 
এসএসসি (SSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড

সৃজনশীল প্রশ্নঃ
এই নিষ্ঠুর অভিযোগে গফুর যেন বারোধ হইয়া গেল। ক্ষণেক পরে ধীরে ধীরে কহিল, কাহন খানেক খড় এবার ভাগে পেয়েছিলাম। কিন্তু গেল সনের বকেয়া বলে কর্তামশায় সব ধরে রাখলেন? কেঁদে কেটে হাতে পায়ে পড়ে বললাম, বাবু মশাই, হাকিম তুমি, তোমার রাজত্ব ছেড়ে আর পালাব কোথায়? আমাকে পণদশেক বিচুলি না হয় দাও। চালে খড় নেই। বাপ বেটিতে থাকি, তাও না হয় তালপাখার গোঁজাগাঁজা দিয়ে এ বর্ষা কাটিয়ে দেব, কিন্তু না খেতে পেয়ে আমার মহেশ যে মরে যাবে।
ক. কাঙালীর বাবার নাম কী?
খ. ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’-উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না - মন্তব্যটি, যথার্থতা নিরূপণ কর।

Share:

HSC ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায়-০২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Business Organization and Management 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

অধ্যায়-০২
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা
১ম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

HSC Business Organization and Management 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, এ অধ্যায়ে বোর্ড পরীক্ষা, শীর্ষস্থানীয় কলেজসমূহের নির্বাচনি পরীক্ষা এবং বাছাইকৃত এক্সক্লুসিভ মডেল টেস্টের প্রশ্নগুলোর পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেওয়া হয়েছে। এগুলো অনুশীলন করলে তোমরা এ অধ্যায় থেকে যেকোনো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
গণি মিয়া কৃষক পরিবারের কর্মঠ ছেলে। নদী বিধৌত পদ্মার পাড়ে তারা বাস করতো। জমিতে পলি থাকায় সেখানে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হতো। ফলে তারা সচ্ছল জীবিকা নির্বাহ করতো। বন্যায় নদীভাঙনের ফলে গত বছর গণি মিয়াদের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার ব্যবসায় করার ইচ্ছা ছিল। ব্যাংক ঋণ না পেয়ে তিনি ইটের ভাটায় কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে নদীভাঙন এলাকায় সরকার ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে গণি মিয়াদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়। [ঢা. বো. ১৭]
ক. প্রযুক্তিগত পরিবেশ কী? ১
খ. সামাজিক পরিবেশ বলতে কী বোঝ? ২
গ. গণি মিয়াদের মানবেতর জীবনযাপনের ওপর কোন পরিবেশের প্রভাব ছিল? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. সরকারি নীতিমালা প্রণয়নের কারণে গণি মিয়ার মতো যুবকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন কি সম্ভব? মতামত দাও। ৪

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা, বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও গবেষণা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রযুক্তি আমদানির সুযোগ- এসব নিয়ে একটি দেশের অভ্যন্তরে সৃষ্ট পরিবেশকে প্রযুক্তিগত পরিবেশ বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
সমাজে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা, শিক্ষা ব্যবস্থা, বেকারত্ব, রীতি-নীতি, যা জীবনধারণে প্রভাব বিস্তার করে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।

সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো মূলত মানুষের কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ পরিবেশ ব্যবসায়ের আয় ও লাভ-লোকসানকে প্রভাবিত করে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের গণি মিয়াদের মানবেতর জীবনযাপনের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব ছিল।

কোনো দেশের প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত হয়। সাধারণত দেশভেদে প্রাকৃতিক পরিবেশ আলাদা হয়ে থাকে। দেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদ-নদী, সাগর এসবের সমন্বয়ে এ পরিবেশ গঠিত। এসব উপাদানের পার্থক্যহেতু দেশের ব্যবসায় কার্যকলাপ ও মানুষের জীবনধারণও ভিন্নতর হতে পারে।

উদ্দীপকের গণি মিয়ারা নদী বিধৌত পদ্মার পাড়ে বাস করতেন। জমিতে পলি থাকায় তারা সেখানে প্রচুর ফসল উৎপাদন করতে পারতেন। এর ফলে তারা সচ্ছল জীবিকা নির্বাহ করতেন। বন্যায় নদীভাঙনের ফলে গত বছর তাদের ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মানুষ এরূপ প্রতিকূল পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। প্রকৃতিগত কারণেই এরূপ নদীভাঙন হয়েছে। পরিবেশের এরূপ প্রতিকূল ভূ-প্রকৃতিগত অবস্থা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান। সুতরাং গণি মিয়াদের মানবেতর জীবনযাপনের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশেরই প্রভাব ছিল।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
রাজনৈতিক পরিবেশের আওতায় সরকারি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে গণি মিয়ার মতো যুবকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে আমি মনে করি।

দেশের রাজনৈতিক উপাদান নিয়ে এ পরিবেশ গঠিত হয়। সরকারের স্থিতিশীলতা, নীতিমালা, দেশের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এ পরিবেশের উপাদান। উন্নত ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের ব্যবসায়ের জন্য সহায়ক।

উদ্দীপকে গণি মিয়াদের অঞ্চলে নদীভাঙনে তাদের ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তারপর ব্যবসায় করার ইচ্ছা থাকলেও ব্যাংক ঋণ না পেয়ে তিনি ইটভাটায় কাজ নেন। পরবর্তী সময়ে সরকারি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে নদীভাঙন এলাকায় সরকার ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে। এ সরকারি নীতিমালা রাজনৈতিক পরিবেশের উপাদান।

গণি মিয়াদের মতো এদেশে অসংখ্য যুবক আছেন যারা সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের অভাবে ব্যবসায় করতে পারেন না। সরকার যদি ব্যবসায়-বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করে তাহলে এ যুবকরা সহজভাবে ব্যবসায় শুরু করতে পারবেন। এতে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এভাবে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারবেন। তাদের মাধ্যমে বেকার যুবকদেরও কর্মের ব্যবস্থা হবে। এর ফলে তারা পারিবারিক আয়ের উৎস বাড়াতে পারবেন। সুতরাং বলা যায়, সরকারি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে গণি মিয়ার মতো যুবকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
বাংলাদেশে রয়েছে প্রচুর জনশক্তি। এ জনশক্তি ও সস্তা শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠেছে পোশাক শিল্প। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিদেশে যথেষ্ট সুনাম আছে। তবে পোশাক শিল্পে অনেক সমস্যাও আছে। এসব সমস্যার কারণে এ শিল্পের উন্নয়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। [রা. বো. ১৭]
ক. অর্থনৈতিক পরিবেশ কী? ১
খ. সামাজিক পরিবেশ বলতে কী বোঝায়? ২
গ. বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে কোন পরিবেশ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে পোশাক শিল্পের উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত? মতামত দাও। ৪

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
কোনো দেশের অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, জনগণের আয় ও সঞ্চয়, বিনিয়োগ, মূলধন, জনসম্পদ এসব উপাদানের ওপর ভিত্তি করে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
সমাজে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা, শিক্ষা ব্যবস্থা, বেকারত্ব, রীতি-নীতি এসব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশের সৃষ্টি হয় তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।

সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো মূলত মানুষের সৃষ্টি এবং মানুষের কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটি ব্যবসায়ের আয়, লাভ-লোকসানকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে অর্থনৈতিক পরিবেশ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করছে।

অর্থনৈতিক উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয় তাই হলো অর্থনৈতিক পরিবেশ। জনগণের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, মূলধন, জনসম্পদ এ পরিবেশের উপাদান। যে দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ যত ভালো, সে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তত অগ্রগতি লাভ করতে পারে।

উদ্দীপকে উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রচুর জনশক্তি রয়েছে। এখানে জনশক্তি ও সস্তা শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে পোশাক শিল্প গড়ে ওঠেছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিদেশে যথেষ্ট সুনাম আছে। এ জনশক্তি ও সস্তা শ্রমিক হলো দেশের ‘মানবসম্পদ’। এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের পোশাক শিল্পের সব কাজ করানো হচ্ছে। এদেশে তৈরি পোশাক বর্তমানে বাইরের দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে। এ মানবসম্পদ অর্থনৈতিক পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে মূলত অথনৈতিক পরিবেশই অবদান রাখছে।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে এখানকার অর্থনৈতিক পরিবেশকে আরও উন্নত করা উচিত বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের কিছু উপাদান যেমন: মূলধন স্বল্পতা, সুদের উচ্চহার, শ্রমিকদের কম আয় পোশাক শিল্পের উন্নয়নের পথে বড় ধরনের বাধা হয়ে আছে। এসব সমস্যা দূর করা গেলে এ শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন আশা করা যায়।

উদ্দীপকে উল্লেখ্য, জনশক্তি ও সস্তা শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে এদেশে পোশাক শিল্প গড়ে ওঠেছে। এ শিল্প বিদেশে বেশ সুনামও অর্জন করেছে। তবে নানা সমস্যার কারণে এ শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পোশাক শিল্পের শ্রমিকদেরকে ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে।

এক্ষেত্রে জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে তাদের সঞ্চয় ও মূলধন গঠনের সামর্থ্য বাড়াতে হবে। এছাড়া শেয়ারবাজারকে গতিশীল করা গেলে তা মূলধন সংস্থানে ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যাংকগুলোতে সুদের উচ্চহার কমাতে হবে, যাতে ঋণ নিতে দক্ষ ব্যবসায়ী বা শিল্প উদ্যোক্তাগণ উৎসাহিত হন। এভাবে অর্থনৈতিক উপাদানসমূহের উন্নয়নের মাধ্যমে পোশাক শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
খুলনার বাসিন্দা রাজিব একজন কৃষক। তার জমিতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হতো। এসব ফসল বিক্রি করে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু লবণাক্ততার কারণে তার জমিতে কয়েক বছর যাবত উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে রাজিব কৃষিকাজ ছেড়ে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। [রা. বো., কু. বো. ১৭]
ক. BSTI-এর পূর্ণরূপ কী? ১
খ. শিল্প বলতে কী বোঝায়? ২
গ. রাজিবের পেশা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন পরিবেশের উপাদান প্রভাব ফেলেছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. বাংলাদেশে রাজিবের মতো অনেক ব্যক্তির পেশা পরিবর্তনের কারণ বিশ্লেষণ করো। ৪

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
BSTI-এর পূর্ণরূপ হলো Bangladesh Standards & Testing Institution।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
যে কার্যপ্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামালকে প্রক্রিয়াজাত করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে।

প্রকৃতি প্রদত্ত উপকরণ বা কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও চুড়ান্ত পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করা হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ের উৎপাদন সংক্রান্ত কাজ শিল্পের দ্বারা সংঘটিত হয়। এজন্য শিল্পকে উৎপাদনের বাহন বলা হয়।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকের রাজিবের পেশা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান প্রভাব ফেলেছে।

প্রকৃতির উপাদানসমূহ নিয়ে মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত। কোনো দেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদ-নদী, সাগর ও আয়তন এ পরিবেশের উপাদান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের হয়। এসব উপাদানের পার্থক্যহেতু দেশের ব্যবসায় কার্যকলাপও ভিন্নতর হয়ে থাকে।

উদ্দীপকের কৃষক রাজিবের জমিতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হতো। এসব ফসল বিক্রি করে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু কয়েক বছর যাবত তার জমিতে লবণাক্ততার কারণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। জমির এ লবণাক্ততা সাগরের অবস্থানের কারণে হয়েছে, যা পরিবেশে প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। তাই রাজিব বর্তমানে কৃষিকাজ ছেড়ে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিকূল অবস্থার কারণে তিনি এ কাজে যোগ দেন। সুতরাং বলা যায়, তার পেশা পরিবর্তনে এ প্রাকৃতিক পরিবেশই প্রভাব ফেলেছে।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবে বাংলাদেশে রাজিবের মতো অনেক ব্যক্তিকে পেশা পরিবর্তন করতে হয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ আলাদা হয়ে থাকে। পরিবেশের উপাদানের পার্থক্যের কারণে দেশের মানুষের ব্যবসায় কার্যকলাপেও ভিন্নতা দেখা যায়।

উদ্দীপকে রাজিব খুলনায় কৃষিকাজ করতেন। উর্বর জমিতে জলবায়ুর কারণে তিনি ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারতেন। কিন্তু সেখানে সাগরের প্রভাবে জমিতে লবণাক্ততার কারণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। তাই তিনি কৃষিকাজ ছেড়ে একটি দোকানে কাজ শুরু করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিকূল প্রভাবে তিনি তার পেশা পরিবর্তন করেছেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকেই উদ্দীপকের রাজিবের মতো জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবে তাদের জীবিকার ধরন বিভিন্ন রকমের হয়। আবার এ পরিবেশের প্রভাবেই তারা তাদের জীবিকা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। সাধারণত পরিবেশের যে উপাদান যে অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত তার ওপর ভিত্তি করে মানুষ জীবিকা নির্বাচন করে থাকেন। কিন্তু পরিবেশের উপাদান যেকোনো সময় পরিবর্তনযোগ্য। এ পরিবর্তনশীলতার সাথে তাল মিলিয়েই মানুষ নিজের পেশা পরিবর্তন করেন। সুতরাং বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাবেই এদেশে রাজিবের মতো অনেক মানুষকে পেশা পরিবর্তন করতে হয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হলেও শিল্পের ক্ষেত্রে এদেশ ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্বে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক পোশাক কর্মীর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সেদেশে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রদত্ত কোটা সুবিধা বাতিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এমন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য বাংলাদেশের সর্বাত্মাক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। [দি. বো. ১৭]
ক. পরিবেশ কাকে বলে? ১
খ. অর্থনৈতিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ কেন? ২
গ. উদ্দীপকে যুক্তরাষ্ট্রের কোটা বাতিলের বিষয়টি কোন পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে রানা প্লাজার ঘটনা উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে তোমার মতামত দাও। ৪

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মানুষ যে পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে বসবাস করে এবং যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার জীবনধারাকে প্রভাবিত করে তাকেই পরিবেশ বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
অর্থনৈতিক বিভিন্ন উপাদান যেমন সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, মূলধন ও অর্থবাজার নিয়ে যে পরিবেশ গঠিত হয় তাকে অর্থনৈতিক পরিবেশ বলে।

অর্থনৈতিক পরিবেশ এমন কতগুলো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত, যা ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা ও ব্যয়ের ধরনকে প্রভাবিত করে। যে দেশ বা অঞ্চলে অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদানগুলো ব্যবসায়ের অনুকূলে, সেখানে অতি দ্রুত ব্যবসায়ের প্রসার ঘটে। এজন্য অর্থনৈতিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে যুক্তরাষ্ট্রের কোটা বাতিলের বিষয়টি রাজনৈতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।

একটি দেশের রাজনীতির পারিপার্শ্বিকতা বা উপাদানসমূহ নিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ গঠিত হয়। দেশের সার্বভৌমত্ব, সরকারি নীতিমালা, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব, আইন-শৃঙ্খলা এ পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। অনুন্নত ও অসহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের ব্যবসায় পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করে।

উদ্দীপকে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। তবে সম্প্রতি রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক পোশাক কর্মীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সেদেশে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রদত্ত কোটা সুবিধা বাতিল করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাণিজ্য নীতি রাজনৈতিক পরিবেশেরই উপাদান, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোটা বাতিলের বিষয়টি রাজনৈতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে রানা প্লাজার ঘটনা উত্তরণে সুষম কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ব্যবসায়-বান্ধব শিল্প ও বাণিজ্য নীতির মাধ্যমে কর্মপরিবেশ উন্নত করা যায়। রাজনৈতিক পরিবেশের এসব উপাদানের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো যদি ব্যবসায়-বান্ধব হয় এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে, তবে এ অবস্থার থেকে উত্তরণ সম্ভব।

উদ্দীপকে উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সহস্রাধিক পোশাক কর্মীর মৃত্যু হয়। এটি পোশাক শিল্পের একটি নেতিবাচক ঘটনা। এ রকম দুর্ঘটনায় হাজার হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়ে তাদের পরিবারে অসহায়ত্ব নেমে আসে। এতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রতি বাইরের দেশের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরূপ ধারণা জন্মে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই জরুরি।

এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য মৃত শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের নতুন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশাপাশি শ্রমিকদেরকে একটি সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। কারখানা গঠনের সময় সরকারকে নজর দিতে হবে যেন এটি সঠিক নিয়ম ও অবকাঠমো অনুযায়ী স্থাপিত হয়। এসব বিষয় নিশ্চিত হলে একটি সুষম কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হবে। এর ফলে কর্মীরাও কাজে মনোযোগী ও আগ্রহী হতে পারবে। এভাবে বাইরের দেশের কাছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি সুদৃঢ় করা যাবে। এভাবে রানা প্লাজার ঘটনা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
শেরপুরের হাবিব স্থানীয় তাল, বাঁশ ও খেজুর গাছের ওপর ভিত্তি করে ‘রূপসী বাংলা’ নামে একটি কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার উৎপাদিত পাখা, টুপি, পাট ও খেলনা সামগ্রী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি কারখানাটি সম্প্রসারণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মূলধন সংকটের কারণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। [চ. বো. ১৭]
ক. একমালিকানা ব্যবসায় কী? ১
খ. নামমাত্র অংশীদার বলতে কী বোঝায়? ২
গ. হাবিব কোন পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে তার প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. হাবিবের ব্যবসায়ের সমস্যা উত্তরণের উপায় সম্পর্কে যুক্তি উপস্থাপন করো। ৪

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
কোনো ব্যক্তি এককভাবে ব্যবসায় গঠন ও নিয়ন্ত্রণ, মূলধন সরবরাহ, ঝুঁকি বহন, পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ এবং মুনাফা বা ক্ষতি একাই ভোগ করলে সেই ব্যবসায়কে একমালিকানা ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
যিনি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার না হয়েও ব্যবসায়ে নিজের নাম ব্যবহারের অনুমতি দেন (কিন্তু মূলধন বিনিয়োগ করেন না) তাকে নামমাত্র অংশীদার বলে।

নামমাত্র অংশীদার ব্যবসায়ের স্বার্থে নিজের সুনাম ব্যবহারের সুযোগ দেন। তিনি ব্যবসায়ের অংশীদার নন। তবে তিনি ব্যবসায় হতে আর্থিক সুবিধা বা কমিশন গ্রহণ করতে পারেন। এ ধরনের অংশীদার ব্যবসায়ে মূলধন, শ্রম, দক্ষতা কিছুই বিনিয়োগ করেন না।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে হাবিব প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে তার প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।

কোনো দেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, সাগর, নদ-নদী ও মৃত্তিকার সমন্বয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ আলাদা হয়ে থাকে। এসব উপাদানের পার্থক্যহেতু দেশের ব্যবসায় কার্যকলাপও ভিন্নতর হয়ে থাকে।

উদ্দীপকের হাবিব শেরপুরে তাল, বাঁশ ও খেজুর গাছের ওপর ভিত্তি করে “রূপসী বাংলা” নামে একটি কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার প্রতিষ্ঠানে পাখা, টুপি, পাটি ও খেলনা সামগ্রী উৎপাদিত হয়। এ অঞ্চলে মৃত্তিকার অনুকূল প্রভাবে তাল, বাঁশ ও খেজুর গাছ ভালো উৎপন্ন হয়। তাই হাবিব সেখানে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন। এতে তার পণ্যের উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল সমসময় পর্যাপ্ত থাকে। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্যও তিনি তৈরি করতে পারেন। সুতরাং প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকার কারণেই হাবিব সেখানে কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছেন।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
হাবিবের ব্যবসায়ের সমস্যা উত্তরণের জন্য তার আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে বলে আমি মনে করি।

ব্যবসায় গঠন, পরিচালনা ও সম্প্রসারণের জন্য সর্বক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত পুঁজি বা মূলধনের প্রয়োজন। মূলধনের সহজ সুযোগ, অর্থ-ঋণ ব্যবস্থা উন্নত হলে ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত অগ্রগতি লাভ করতে পারে।

উদ্দীপকের হাবিবের উৎপাদিত পণ্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। তার উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি কারখানাটি সম্প্রসারণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু মূলধন সংকটের কারণে তিনি সেটি সম্প্রসারণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

একটা দেশের ব্যবসায় উন্নয়ন প্রয়োজনীয় উপকরণাদির সহজ প্রাপ্তির ওপর নির্ভরশীল। উদ্দীপকে অনুকূল অবস্থার কারণে হাবিবের শিল্পের দ্রুত উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মূলধন সংকট হওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। এ সমস্যা সমাধানে তিনি ব্যাংক বা এরূপ আর্থিক উৎস হতে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারেন। নিজস্ব পুঁজির সাথে এরূপ ঋণের অর্থ মিলিয়ে তিনি ব্যবসায়টি সম্প্রসারণের জন্য পর্যাপ্ত পুঁজি একত্র করতে পারবেন। এতে তার আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে বর্তমানে এরূপ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে। সুতরাং এভাবেই হাবিব তার প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করে ব্যবসায়টি সম্প্রসারণ করতে পারবেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। আশির দশকের শুরুতে জনাব আওলাদ বাংলাদেশের জনসম্পদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন, যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানো। ঐ দশকের মাঝামাঝি জনাব আওলাদ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার তৈরি পোশাক বিক্রি করেন। ক্রমান্বয়ে তার তৈরি পোশাক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জনাব আওলাদ যুক্তরাষ্ট্রে বসে তার কারখানায় নিয়োজিত জনাব সেজাদকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পোশাক উৎপাদনের নির্দেশ দেন। জনাব সেজাদ কারখানার কর্মীদেরকে দিয়ে পোশাক উৎপাদন করে জনাব আওলাদের কাছে পাঠান। জনাব আওলাদ তৈরি পোশাকের একের পর এক নতুন বাজারের দ্বার উন্মুক্ত করেন।
[সি. বো. ১৭]
ক. খুচরা ব্যবসায় কী? ১
খ. প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে কী বোঝায়? ২
গ. উদ্দীপকে জনাব আওলাদ পরিবেশের কোন উপাদান বিবেচনায় ঢাকায় পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকে জনাব আওলাদ ও জনাব সেজাদ উভয়ের কাজকে কি উদ্যোগ’ বলা যায়? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও। ৪

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
পাইকার, বিক্রয় প্রতিনিধি বা আমদানিকারকদের থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে চুড়ান্ত ভোক্তাদের নিকট বিক্রয় করা হলে তাকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
কোনো দেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদ-নদী, আয়তন ও অবস্থানের সমন্বয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।

প্রকৃতির পরিবেশের উপাদানের ওপর ভিত্তি করে মানুষের জীবিকার পরিবর্তন হয়। যেসব দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ যত বেশি, সেসব দেশে কৃষিনির্ভর জীবন-জীবিকা তত বেশি হয়ে থাকে। এ পরিবেশের উপাদানগুলো ব্যবসায়েও নানাভাবে প্রভাব ফেলে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে জনাব আওলাদ অর্থনৈতিক পরিবেশের কারণে ঢাকায় পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন।

কোনো স্থানে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদান সেখানকার অবস্থিত ব্যবসায়ের সাফল্য বা ব্যর্থতার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জনগণের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, মূলধন ও জনসম্পদ ঐ স্থানের ব্যবসায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।

উদ্দীপকে জনাব আওলাদ আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশের জনসম্পদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন। যার লক্ষ্য ছিল দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানো। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো জনসম্পদ। এ সম্পদকে বাদ দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এ জনসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর প্রয়োজন আছে। তাই বলা যায়, জনাব আওলাদ দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদানকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানা গড়ে তোলেন।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
কোনো নতুন চিন্তা মাথায় রেখে যখন কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন তখন তার কার‌্যাবলিকে উদ্যোগ বলে।

উদ্যোগ ছাড়া কোনো ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপন করা যায় না। দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টির হার যত বেশি হবে শিল্পায়নের পরিমাণও তত বেশি হবে।

উদ্দীপকে জনাব আওলাদ দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানা স্থাপন করেন। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বাড়ি বাড়ি পোশাক বিক্রয় শুরু করেন। তাই তার এ কাজকে উদ্যোগ বলা যায়। অন্যদিকে জনাব সেজাদ জনাব আওলাদের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী পোশাক উৎপাদন করেন। অর্থাৎ তিনি জনাব আওলাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাই তার এ কাজকে উদ্যোগ বলা যায় না।

নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে উদ্যোক্তগণ দেশের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করেন। জনাব আওলাদও এমন একজন ব্যক্তি যিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক কারখানা স্থাপন করেন। যেখানে দেশের অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর জনাব সেজাদের মতো মানুষ জনাব আওলাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাই উভয়ের কাজের মধ্যে জনাব আওলাদের কাজকে উদ্যোগ বলা গেলেও জনাব সেজাদের কাজকে উদ্যোগ বলা যায় না।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
জনাব ইকবাল ঢাকায় থাকেন। তিনি সন্দ্বীপেও একটি বাড়ি কিনেছেন। সেখানে গিয়ে তিনি সমুদ্রে মাছ ধরেন। উক্ত মাছ বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। বাজারে তার পণ্যের ব্যাপক সুনাম আছে। তবে পণ্যগুলোর ওজন ও আকার সুনির্দিষ্ট না থাকায় ক্রেতারা মাঝে মধ্যে তার পণ্য ক্রয়ে সমস্যার মুখোমুখি হন। [য. বো. ১৭]
ক. সামাজিক ব্যবসায় কী? ১
খ. শিল্পকে কেন্দ্রীভূত কাজ বলা হয় কেন? ২
গ. উদ্দীপকে পরিবেশের কোন উপাদান বিবেচনায় জনাব ইকবাল সন্দ্বীপে ব্যবসায় শুরু করেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ক্রেতাদের সমস্যা সমাধানে জনাব ইকবালের করণীয় সম্পর্কে তোমার মতামত দাও। ৪

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
যে ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রাপ্তির কোনো প্রত্যাশা থাকে না বরং সমাজের কল্যাণ ও দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় তাকে সামাজিক ব্যবসায় বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামালকে ভোগ বা ব্যবহারযোগ্য পণ্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলে।

সাধারণত ব্যবসায়ের বিভিন্ন কাজ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সংঘটিত হয়। কিন্তু শিল্পের কাজটি ব্যতিক্রম, যা এক জায়গায় করতে হয়। অর্থাৎ কারখানাতে প্রক্রিয়াজাতকরণের সব কাজ সম্পাদিত হয়। তাই শিল্পকে কেন্দ্রীভূত কাজ বলা হয়।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
উদ্দীপকে জনাব ইকবাল প্রাকৃতিক পরিবেশের সাগর ও নদ-নদী উপাদান বিবেচনা করে সন্দ্বীপে ব্যবসায় শুরু করেন।

কোনো দেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদ-নদী, সাগর, আয়তন ও অবস্থানের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। এসব উপাদানের পার্থক্যজনিত কারণে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায় কার্যকলাপও ভিন্নতর হয়ে থাকে।

ঢাকায় বসবাসকারী জনাব ইকবাল সন্দ্বীপে বাড়ি কিনেন। সন্দ্বীপে গিয়ে তিনি সমুদ্রে মাছ ধরেন। উক্ত মাছ বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। সন্দ্বীপে সমুদ্র থাকায় সেখানে সহজেই প্রচুর সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এ বিষয়টি বিবেচনা করেই তিনি সন্দ্বীপে মাছের ব্যবসায় শুরু করেন। এর ফলে অল্প সময়েই তিনি বাজারে সুনাম অর্জন এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সুতরাং বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের সাগর ও নদ-নদী উপাদানটির অনুকূল অবস্থা বিবেচনায় জনাব ইকবাল সন্দ্বীপে ব্যবসায় শুরু করেন।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
ক্রেতাদের সমস্যা সমাধানে জনাব ইকবাল প্রমিতকরণের মাধ্যমে পণ্যের মান বজায় রাখার চেষ্টা করতে পারেন।

পণ্যের ওজন, আকার, রং ও গুণাগুণ বিবেচনায় নিয়ে পণ্য মানের সীমা নির্ধারণ করার কাজই হলো প্রমিতকরণ। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা যায়।

উদ্দীপকের জনাব ইকবাল সন্দ্বীপে মাছের ব্যবসায় করে সুনাম অর্জন করেছেন। কিন্তু তার পণ্যগুলোর ওজন ও আকার সুনির্দিষ্ট নয়। ফলে ক্রেতারা মাঝে-মধ্যে তার পণ্য ক্রয়ে সমস্যার মুখোমুখি হন।

প্রমিতকরণের অভাবে এ সমস্যা হচ্ছে। জনাব ইকবাল প্রমিতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন ওজনের ও বিভিন্ন আকারের মাছ আলাদা করে সাজাতে পারেন। এর মাধ্যমে ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী মাছ ক্রয় করতে পারবেন। এতে বিক্রেতা হিসেবেও ইকবালের মাছ সরবরাহ কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হবে। সুতরাং প্রমিতকরণ কাজটি উক্ত সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
জনাব রিফাত গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা স্থাপন করেন। এখানে জমির মূল্য অপেক্ষাকৃত কম এবং পর্যাপ্ত দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়। এতে বিনিয়োগ কম করেও মুনাফার পরিমাণ বেশি হয়। তিনি দেখলেন তার কারখানার পার্শ্ববর্তী ‘রংধনু’ নামক একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজের সময় ও কর্মপরিবেশ নিয়ে শ্রম অসন্তোষ চলছে। মালিকপক্ষ ‘রংধনু’ নামক পোশাক কারখানাটি তালাবদ্ধ ঘোষণা দেয়। [দি. বো. ১৬]
ক. পরিবেশ কী? ১
খ. সামাজিক পরিবেশ বলতে কী বোঝায়? ২
গ. পরিবেশের কোন উপাদান বিবেচনা করে জনাব রিফাত পোশাক কারখানা স্থাপন করেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘রংধনু’ পোশাক শিল্পে শ্রম অসন্তোষ ও তালাবদ্ধকরণ ব্যবসায় পরিবেশের যে উপাদানের অন্তর্গত উদ্দীপকের আলোকে তা বিশ্লেষণ করো। ৪

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
মানুষ যে পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে বসবাস ও জীবনধারণ করে এবং যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীবনধারাকে প্রভাবিত করে তাকেই পরিবেশ বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
সমাজে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা, শিক্ষা ব্যবস্থা, বেকারত্ব, রীতি-নীতি ইত্যাদি, যা জীবনধারণে প্রভাব বিস্তার করে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।

সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো মূলত মানুষের সৃষ্টি এবং মানুষের কার্যক্রম দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটি ব্যবসায়ের আয়, লাভ-লোকসানকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
জনাব রিফাত পরিবেশের অর্থনৈতিক উপাদান বিবেচনা করে পোশাক কারখানা স্থাপন করেন।

অর্থনৈতিক পরিবেশ কোনো দেশের জনগণের আয় ও সঞ্চয়, অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থা, দক্ষ উদ্যোক্তা ও মানবসম্পদ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এ পরিবেশ উন্নত হলে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করা সহজ হয়।

জনাব রিফাত গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা স্থাপন করলেন। কেননা গাজীপুরে জমির মূল্য অপেক্ষাকৃত কম এবং পর্যাপ্ত দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়। জমির মূল্য কম হওয়ায় তার স্থায়ী ব্যয়ও কম। আর সস্তায় দক্ষ শ্রমিক পাওয়া গেলে দক্ষতার সাথে স্বল্প ব্যয়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এর ফলে তিনি কম বিনিয়োগ করেও বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি অর্থনৈতিক পরিবেশকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
রংধনু পোশাক শিল্পে শ্রম অসন্তোষ ও তালাবদ্ধকরণ ব্যবসায় পরিবেশের রাজনৈতিক উপাদানের অন্তর্গত।

রাজনৈতিক পরিবেশ কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ও শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক প্রভৃতি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়। অনুন্নত ও অসহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের ব্যবসায় পরিবেশকে মারাত্মাক বাধাগ্রস্ত করে।

জনাব রিফাতের কারখানার পাশে ‘রংধুন’ নামক একটি পোশাক কারখানা আছে। এ কারখানায় শ্রমিকদের কাজের সময় ও কর্মপরিবেশ উন্নত নয়। তাই শ্রমিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। মালিকপক্ষ তাদের কারখানাটি তালাবদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। এতে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের অবনতি হয়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

উক্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা অসন্তুষ্ট হওয়ায় তাদের দাবি আদায়ের জন্য তারা মালিকদের বিরুদ্ধে ঘর্মঘটের ঘোষণা দেয়। মালিকপক্ষ তাদের দাবি পূরণ না করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এর ফলস্বরূপ ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
মাহমুদ কাপড়ের ব্যবসায় করেন। ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানে তার দোকান। ঈদ সামনে রেখে তিনি তার দোকানের জন্য নরসিংদী থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার কাপড় ক্রয় করে আনার সময় পথে কতিপয় দুর্বৃত্ত তার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা দিতে অপারগ হলে দুর্বৃত্তরা তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার ব্যাপক ক্ষতি হয়। [য. বো. ১৬]
ক. ব্যবসায় পরিবেশ কী? ১
খ. ব্যবসায়ের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব কীরূপ? ২
গ. মাহমুদ ব্যবসায়ে কোন পরিবেশের কথা চিন্তা করে অনেক টাকার কাপড় ক্রয় করেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. কোন পরিবেশের অভাবে তিনি ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হন? বিশ্লেষণ করো। ৪

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের গঠন, পরিচালন ও নিয়ন্ত্রণে যেসব পারিপার্শ্বিক উপাদান বা শক্তির দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলোর সমষ্টিকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
কোনো দেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, নদ-নদী, আয়তন, অবস্থান ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট উপাদানের সমন্বয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।

প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবসায়ে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে মানুষের জীবিকার পরিবর্তন হয়। যেসব দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ যত বেশি সেসব দেশে কৃষি নির্ভর জীবন-জীবিকা তত বেশি হয়ে থাকে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
মাহমুদ ব্যবসায়ে সামাজিক পরিবেশের কথা চিন্তা করে অনেক টাকার কাপড় ক্রয় করেন।

সমাজে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ বাস করে। এসব মানুষের রীতি-নীতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, শিক্ষা সবকিছুর সমষ্টিই হলো সামাজিক পরিবেশ।

মাহমুদ কাপড়ের ব্যবসায় করেন। ঢাকার গুলিস্তানে তার দোকান আছে। ঈদ উপলক্ষে তিনি ৫ লক্ষ টাকার কাপড় ক্রয় করেন। ঈদ মুসলিম ধর্মের অনুসারীদের জন্য একটি পবিত্র এবং আনন্দের অনুষ্ঠান। ঈদ উপলক্ষে মুসলমানরা নতুন কাপড়-চোপড় ক্রয় করে। এতে মাহমুদের দোকানের বিক্রিও ঈদ উপলক্ষে বাড়ে। এ ঈদ সামাজিক পরিবেশের একটি উপাদান। সুতরাং সামাজিক পরিবেশ বিবেচনা করেই মাহমুদ বেশি পরিমাণ কাপড় ক্রয় করেছেন।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের অভাবে মাহমুদ ব্যবসায়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন।

সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান, স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা ইত্যাদি উপাদানের সমন্বয়ই হলো রাজনৈতিক পরিবেশ। রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হলে দেশের ব্যবসায় সম্প্রসারণ ঘটে।

মাহমুদ একজন ব্যবসায়ী। তিনি ঈদ উপলক্ষে ৫ লক্ষ টাকার কাপড় ক্রয় করেন। কাপড় ক্রয় করে নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসার পথে কতিপয় দুর্বৃত্ত তার গতিরোধ করে। দুর্বৃত্তরা তার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হলে দুর্বৃত্তরা তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার ক্রয়কৃত সমস্ত কাপড় পুড়ে যায়।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকার কারণে মাহমুদের কাছে দুর্বৃত্তরা চাঁদা দাবি করতে পেরেছে। স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা রাজনৈতিক পরিবেশের উপাদান। আইন-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল না থাকায় মাহমুদ দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন। সুতরাং রাজনৈতিক পরিবেশের অভাবে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন।

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র অধ্যায়-২ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড

সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
মিসেস পাখি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন বাসিন্দা। সেখানকার আমের উৎপাদন সচরাচর বেশি হয়। তাই তিনি নতুন ধরনের ব্যবসায় শুরু করলেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের আচার ও আমের দ্বারা তৈরি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি রাখেন। অল্পদিনের মধ্যে তার ব্যবসায়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। তাই তিনি দেশব্যাপী তার পণ্যগুলোর প্রচার করতে চান। তিনি বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ী ও অন্য প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সহযোগিতা নেওয়ার কথা ভাবছেন। পাশাপাশি বর্তমানে প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারের কথাও ভাবছেন। তবে পদ্ধতিগুলোর দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে তিনি চিন্তিত। [ব. বো. ১৬]
ক. ব্যবসায় পরিবেশ কী? ১
খ. ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বিবেচনার কারণ ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মিসেস পাখি ব্যবসায় পরিবেশের কোন উপাদান বিবেচনায় এনে ব্যবসায় শুরু করেন? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. মিসেস পাখির ব্যবসায়টির দ্রুত প্রচারের জন্য বাহ্যিক পরিবেশের কোন উপাদানকে অধিক বিবেচনা করা উচিত? মতামত দাও। ৪

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
'ক' নং প্রশ্নের উত্তর:
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের গঠন, পরিচালন ও নিয়ন্ত্রণে যেসব পারিপার্শ্বিক উপাদান বা শক্তির দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলোর সমষ্টিকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে।

'খ' নং প্রশ্নের উত্তর:
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিরাজমান যেসব উপাদান বা শক্তি ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে তাকে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বলে।

এরূপ পরিবেশের উপাদানের মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপক, শ্রমিক-কর্মী ব্যবসায়ের আর্থিক ও কারিগরি সমর্থ, সুনাম, নিজস্ব সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এরূপ পরিবেশ বিবেচনায় না নিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই ব্যবসায়ে এরূপ পরিবেশ বিবেচনার প্রয়োজন পড়ে।

'গ' নং প্রশ্নের উত্তর:
মিসেস পাখি ব্যবসায় পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান বিবেচনায় এনে ব্যবসায় শুরু করেন।

প্রকৃতি প্রদত্ত উপাদান যেগুলো মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না সেগুলোর সমষ্টিই প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর মধ্যে মাটি, জলবায়ু, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি অন্যতম।

মিসেস পাখি চাঁপাইনবাবগঞ্জে আচার ও আমের দ্বারা তৈরি বিভিন্ন মিষ্টির ব্যবসায় শুরু করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচুর আম উৎপাদিত হয়। এখানকার আবহাওয়া এবং মাটি আম চাষের জন্য অনুকূল। প্রচুর আম উৎপাদিত হওয়ায় মিসেস পাখি এ অঞ্চলের আম থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের ব্যবসায় শুরু করেছেন। তার এ ব্যবসায়ের মৌলিক উপাদান হলো আম, যেটি প্রকৃতির দান। সুতরাং মিস পাখির ব্যবসায় শুরু করার প্রধান কারণ পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান।

'ঘ' নং প্রশ্নের উত্তর:
মিসেস পাখির ব্যবসায়টির দ্রুত প্রচারের জন্য বাহ্যিক পরিবেশের প্রযুক্তিগত উপাদানকে অধিক বিবেচনা করা উচিত।

প্রযুক্তিগত পরিবেশ বলতে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা, গবেষণা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রযুক্তি আমদানির সুযোগ ইত্যাদি মিলিয়ে সৃষ্ট পরিবেশকে বোঝায়। এ পরিবেশের প্রভাবে নতুন নতুন ব্যবসায় ও পণ্য উদ্ভাবন সম্ভব হয়।

মিসেস পাখি আচার ও আমের দ্বারা তৈরি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টির ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। অল্প দিনের মধ্যেই তার ব্যবসায়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। তাই মিসেস পাখি দেশব্যাপী তার পণ্যগুলোর প্রচার করতে চান। তিনি পণ্যের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কথা ভাবছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদিকে বোঝায়, যেগুলো প্রযুক্তিগত পরিবেশের উপাদান। এসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মিসেস পাখি অল্প সময়ে কম খরচে দেশব্যাপী পণ্যের প্রচার করতে পারবেন। দেশের বাইরেও সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়। অনলাইন এবং সামাজিক মাধ্যমগুলো প্রযুক্তিগত পরিবেশের উপাদান। মিসেস পাখির পণ্যের প্রচারে এ প্রযুক্তিগত পরিবেশ বিবেচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি।

Share: