জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা | রচনা

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা

ভূমিকা:
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে কোনো জাতির পক্ষে উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহন করা সম্ভব নয়। কারণ নারীসমাজ দেশের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অর্ধেক জনশক্তির প্রতিনিধি হিসেবে নারী তার পূর্ণ অধিকারের দাবিদার। কিন্তু নারী-পুরুষের অব্যাহত বৈষম্য এটাই প্রমাণ করে যে, নারীর পূর্ণ অধিকারের ব্যাপারটি কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে এই দিনটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়।

জাতি গঠনে নারীর ভূমিকা: জাতি গঠনে নারী সমাজের দায়িত্ব পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জাতীয় জীবনে সচলতা, জ্ঞান, কর্ম ও প্রাণ-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি না হলে জাতি অচল হয়ে যায়। নারীরা যেহেতু পুরুষের মতোই সমাজের একটা অংশ, তাই পুরুষের মতো নারী সমাজকেও জাতি তথা সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হয়।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

উন্নত দেশসমূহে নারী জাগরণের ফলে দেশের সমৃদ্ধি এসেছে, সমাজজীবন সচল ও গতিশীল হয়েছে। আমাদের দেশের নারীরা সমাজগঠনে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এলে সমাজ যে উন্নতির পথে অগ্রসর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু সেবা ও গৃহকর্মের মধ্যে নারীকে সীমাবদ্ধ না রেখে নারীকে জাতীয় ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি সব স্তরে কর্মময় জীবনের অধিকারিণী করে তুলতে পারলে দেশের সমৃদ্ধি ও জাতির মঙ্গল ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশে নারীর বর্তমান অবস্থান: মানবজাতির অর্ধেক অংশ হয়েও নারীরা আজ বৈষম্যের শিকার। আমাদের দেশে প্রচলিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুশাসনের জালে আবদ্ধ নারীসমাজ। শিক্ষা, কর্মসংস্থান সর্বোপরি সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানারকম সুযোগ-সুবিধা থেকে নারীরা বঞ্চিত। বর্তমানে দেশে নারীর অবস্থানে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি।

প্রতিনিয়ত এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ আর যৌতুকের শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী। গৃহ পরিচারিকার ওপর অমানুষিক নির্যতানের খবরও পত্রিকার পাতায় হরহামেশাই আসছে। তবে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীসমাজের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আমাদের অন্যতম প্রধান রপ্তানি-খাত গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করছে অগণিত নারী শ্রমিক। পরীক্ষার মেধা তালিকায় চোখ বুলালেও দেখা যায় মেয়েদের প্রাধান্য। তারপরও সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় না।

চলার প্রতিটি পদক্ষেপেই নারী অসাম্যের মুখোমুখি হয়। বাবার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের অসম অধিকার, পারিবারিক আইনে নারীর অসম অধিকার, জাতীয় সম্পদে নারীর অসম অধিকার, যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীকে উপেক্ষা- রাষ্ট্রের আয়নায় এখনও নারীর অমর্যাদার প্রতিচ্ছবিই তুলে ধরে।

নারী উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা: নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে মানবজাতির কল্যাণের প্রশ্ন জড়িত। দেশে নারীর মর্যাদা আর অবস্থান থেকেই অনুধাবন করা যায় একটি দেশ কতখানি উন্নত বা সভ্য। তাই নারীকে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দেওয়ার জন্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, পেশা-শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের গণতান্ত্রিক সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নারীকে দিতে হবে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক, যথাযথ মর্যাদা। মনে রাখতে হবে বিশ্বের মেধা, দক্ষতা, প্রতিভার অর্ধেক ভাণ্ডার সঞ্চিত রয়েছে নারীর কাছে। এই অব্যবহৃত বা স্বল্প ব্যবহৃত মানব-সম্পদের সদ্ব্যবহার পুরো মানবজাতির স্বার্থেই জরুরি।

নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার করণীয়: সারা পৃথিবীতে এখনও নারীকে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নানা ক্ষেত্রে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। নারীর কাছ থেকে মঙ্গলজনক কোনো কিছু আশা করতে হলে সর্বপ্রথম তাকে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-গরিমায় অধিকার অর্পণ করতে হবে। সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যত তাড়াতাড়ি বদলানো যাবে ও নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দেওয়া যাবে পরিবার তথা সমাজ ও দেশের জন্য ততই কল্যাণকর।

যে কোনো সমাজ তথা দেশ নারীর কাছ থেকে উন্নয়নমূলক ও সৃষ্টিশীল কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে পারে। তবে তা চাইলে সর্বাগ্রে ফিরিয়ে দিতে হবে নারীর অধিকার। প্রতিযোগী নয় বরং নারীকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে সকল ক্ষেত্রে। নারী নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি নারীর জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার: দেশে নারী যতদিন তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে ততদিন আমরা সমৃদ্ধ জাতি গঠন করতে পারব না। দেশের অর্ধেক জনশক্তিকে অবমূল্যায়ন করে কখনো কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না।

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা | রচনা

সামাজের প্রচলিত কুসংস্কার, অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং নারীর প্রতি হীনদৃষ্টি দূর করতে পারলেই আমরা জাতীয় জীবনে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারব।
Share:

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার | রচনা

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার

সূচনা: কাজেই মুক্তি। কাজই সমৃদ্ধি। কর্মহীন জীবন কফিনে ঢাকা লাশ। মানুষের দুটি হাতকে দক্ষ কর্মীর হাতে পরিণত করলে সমৃদ্ধি আসবেই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য, এই আধুনিক যুগে মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ জনশক্তিতে পরিণত হয় না। কর্মহীন বেকার জীবনের অভিশাপ বয়ে বেড়ায়।

বিপুল জনসংখ্যার আর সীমিত সম্পদের কারণে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ বিশ্বমানচিত্রে পরিচিত। এই জনসংখ্যাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে পারলে তাদের দুই হাতের ছোঁয়ায় দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে, আসবে সমৃদ্ধি। এজন্য প্রয়োজন বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত দেশ।

বেকারের সংজ্ঞা: সাধারণ অর্থে, যার কোনো কাজ নেই তাকে বেকার বলা হয়। কিন্তু অর্থনীতির পরিভাষায় কর্মহীন মানেই বেকার নয়। যদি কোনো ব্যক্তির কাজ করার যোগ্যতা ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগ না পান তবে অর্থনীতির পরিভাষায় তিনিই বেকার। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, বেকারত্ব এমন এক সামাজিক অবস্থার নাম যখন সমাজের যথেষ্ট কর্মক্ষম ব্যক্তির বিপরীতে কর্মের সুযোগ থাকে খুবই কম।

বাংলাদেশের বেকারত্বের চিত্র: বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে পর্যাপ্ত শিল্প-কারখানা নেই। বেসরকারি কর্মসংস্থান ও সরকারি চাকরির সীমিত সুযোগের কারণে এ দেশে কর্মক্ষম অধিকাংশ মানুষ কাজ খুঁজে পাচ্ছে না। পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে কর্মক্ষম লোকের ২৭.৯৫ শতাংশ বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মৌসুমি বা প্রচ্ছন্ন বেকার। যাদের সারা বছর কাজ থাকে না, বছরের বিশেষ সময়ে কাজ করেন তাদেরকে মৌসুমি বা প্রচ্ছন্ন বেকার বলা হয়।

বেকার সমস্যার কারণ: বাংলাদেশের বেকার সমস্যার জন্য কোনো একক কারণ দায়ী নয়। কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

ক. ঔপনিবেশিক শোষণ: বাংলাদেশে বিদ্যমান বেকার সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। বাংলাদেশের বেকারত্বের অভিশাপ সৃষ্টির অন্যতম কারণ দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা। ইংরেজি ঔপনিবেশিক শক্তি এ দেশের প্রচলিত শিল্পকে ধ্বংস করে নিজেদের পণ্যের বাজারে পরিণত করেছিল। পাকিস্তানি শাসনের প্রভাবেও এ দেশের অর্থনীতির ভিত্তি ধ্বংস হয়েছে।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শোষকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে নব্য স্বাধীন দেশকে দাবিয়ে রাখতে। তাদের শোষণ ও বঞ্চনা বাংলাদেশে বেকারত্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।

খ. ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা: আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল সেই ইংরেজ আমলে। ইংরেজরা প্রশাসনিক ও তাদের ব্যবসার হিসাব সংরক্ষণের কাজের জন্য এ দেশীয় কেরানি শ্রেণি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে একটি শিক্ষাব্যবস্থা এই জাতির ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।

ইংরেজরা চলে যাওয়ার এত বছর পরও শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক যুগের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে।

গ. জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে কর্মসংস্থান হচ্ছে না: প্রতিবছর যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে অনুপাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। কর্মসুযোগ হ্রাস ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ অসম অনুপাত বেকারত্বকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে।

ঘ. কুটিরশিল্পে ধস: ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের কুটিরশিল্পে ছিল ঐতিহ্যবাহী। এ দেশের কামার, কুমার, কাঁসারি, শাখারি, তাঁতি, বাঁশ, ও বেতজীবী মানুষেরা নীরবে নিভৃতে নিজ নিজ চিরাচরিত পেশায় নিয়োজিত ছিল। কিন্তু যন্ত্রসভ্যতা, শিল্পবিপ্লব এবং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ দেশের কুটিরশিল্প বিলুপ্তির পথে।

ঐতিহ্যবাহী দেশীয় পণ্যের বদলে দিন দিন কল-কারখানায় তৈরি পণ্য চাহিদা বাড়ছে। ফলে কুটিরশিল্পের সাথে জড়িত পেশাজীবীরা কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে।

ঙ. অপর্যাপ্ত শিল্পায়ন: প্রতিদিন কৃষিব্যবস্থা সংকুচিত হয়ে আসছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সাথে কৃষিকাজে শ্রমিকের চাহিদা কমছে। কাজেই শুধু কৃষির ওপর নির্ভর না করে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন হলে কেবল বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব। শিল্পোন্নত জাপানে বেকারত্বের হার ৫% এর নিচে, যুক্তরাষ্ট্রে ৭% ও যুক্তরাজ্যে ৯% মাত্র। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। এ দেশে মূলত শ্রমঘন ও কৃষিনির্ভর শিল্প গড়ে না ওঠায় বেকারত্ব প্রতিদিন তীব্র আকার ধারণ করছে।

চ. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বাংলাদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা, খরা, নদীভাঙন প্রভৃতি দুর্যোগ কৃষিকাজ ব্যাহত করে এবং গ্রামীণ জীবনে বেকারত্ব ডেকে আনে। বিশেষ করে নদীভাঙনের ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ জমিজমা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। জীবিকার অভাবে অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি, দিনমজুরি প্রভৃতিতে লিপ্ত হতে হয়।

ছ. কায়িক শ্রমের অবমূল্যায়ন: আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমকে অশিক্ষিত ও মূর্খদের কাজ বলে মনে করা হয়। ফলে লেখাপড়া করে অফিস-আদালতের বাইরে শারীরিক শ্রমমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করার কথা কেউ ভাবতেই পারে না। অনেকে শারীরিক কাজ করাকে অসম্মানজনক মনে করে, তারা কায়িক শ্রমের কাজের চেয়ে বেকার থাকতে পছন্দ করে। এমন ভুল মানসিকতাও বেকারত্ব বাড়ার অন্যতম কারণ।

জ. নষ্ট রাজনীতি: বেকারত্বের অন্যতম কারণ নষ্ট রাজনীতি। স্বৈরশাসন, গণতন্ত্রহীনতা, দুর্বল নেতৃত্বের প্রভাবে দেশে নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। দলের কর্মী সমর্থক বাড়ানোর নাম করে যুবকদের কর্মবিমুখ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে তুলে তাদের কর্মোজ্জ্বল ভবিষ্যতের কবর রচনা করা হয়।

বেকার সমস্যা সমাধান: বেকারত্ব আমাদের সমাজের জন্য একটি অভিশাপ। এর ফলে অসংখ্য আর্থসামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এই সমস্যা সমাধানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার তথা প্রত্যেক নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা একটি আদর্শ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অবশ্যই রাষ্ট্রকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। যে জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া জরুরি তা নিচে উল্লেখ করা হলো:

ক. কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা: উপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে দেশে যুগোপযোগী কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষা প্রসার ঘটালে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি হবে। এরা দেশে বিদেশে উৎপাদনশীল খাতে খুঁজে পাবে কাজের অফুরন্ত সুযোগ। স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলতে পারলে স্ব-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বিস্তৃত হবে।

খ. কৃষির সাথে বিকল্প কর্ম সৃষ্টি: কৃষিকাজে নিয়োজিত মৌসুমি ও প্রচ্ছন্ন বেকারদের জন্য কুটিরশিল্পভিত্তিক বিকল্প কাজ সৃষ্টি করতে হবে। দেশের ভেতরে ও বিদেশে কুটিরশিল্প পণ্যের বিশাল বাজার ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কুটিরশিল্পে পুনর্জাগরণ ঘটানো গেলে বেকারত্ব লাঘবের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

গ. ব্যাপক শিল্পায়ন: বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে। এদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে নজর দিতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারলে এবং শিল্পায়ন বৃদ্ধি পেলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশ রক্ষা পেতে পারে।

ঘ. দক্ষ জনশক্তি রফতানি: বিপুল জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। দেশের বাইরে দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা আছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ২০১৩ সালের হিসাবে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৮৩ লাখ। এই হিসেবের বাইরেও অনেক বাংলাদেশি দেশের বাইরে কাজ করছে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা তারা দেশে পাঠাচ্ছে। পরিকল্পিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলে এবং সরকারি উদ্যোগে জনশক্তি রফতানির বাজার সম্প্রসারণ করলে আমাদের দেশে বেকারত্ব কমবে।

ঙ. দক্ষ নেতৃত্ব: রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল, ধর্মঘট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ অন্যান্য বাধার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি উদ্যোক্তারা পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

চ. শূন্য পদ পূর্ণ করা: বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। মোট পদসংখ্যা প্রায় এর দ্বিগুণ। এ শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দান করা হলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। আমাদের শিক্ষিত যুব শ্রেণি কিছুতেই চাকরি ছাড়া অন্য কোনো পেশা বা বৃত্তিকে গ্রহণের মানসিকতা পোষণ করে না। তাদের কাজ সৃষ্টিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

ছ. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কৃষি ও শিল্প খাতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পরিমাণ বাড়লে যেটি আপনাআপনিই ঘটবে। কায়িক শ্রমের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।

উপসংহার: বেকারত্ব বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। বেকারত্বের যন্ত্রণা বেকার ছাড়া অন্য কেউ কোনো দিন অনুভব করতে পারবে না। আমাদের দেশের অনেক যুবক বেকারত্ব ঘোচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বেকার জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সাগর, মরুভূমির পথে পা বাড়িয়ে দেশের হাজার হাজার যুবক প্রাণ হারাচ্ছে।

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার | রচনা

এরা দেশের সম্পদ তাদেরকে বাঁচাতে হবে। সকল বাধা দূর করে দেশকে বেকার সমস্যা মুক্ত করতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও বিত্তশালীদের ব্যাপকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
Share:

ইভ টিজিং | রচনা

ইভ টিজিং

ভূমিকা: সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইভ টিজিং। এটি একটি মারাত্মক অপরাধ, যা আমাদের সমাজকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এর বিষাক্ত ছোবলের শিকার হয়ে অনেক মেয়ের জীবন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

একে আমাদের সমাজে যৌন হয়রানিও বলা হয়ে থাকে। নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিকতাকে বিসর্জন দিয়ে অনেক বখাটে নির্লজ্জের মতো আচরণ করছে ইভ টিজিংয়ে লিপ্ত হয়ে।

ইভ টিজিংয়ের স্বরূপ: খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল অনুযায়ী ‘ইভ’ (Eve) হচ্ছেন পৃথিবীর আদিমাতা। বর্তমানে এই ‘ইভ’ শব্দটি নারীকে রূপক অর্থে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। আর ‘টিজিং’ (Teasing) অর্থ হলো উত্ত্যক্ত করা বা বিরক্ত করা। তাই ইভ টিজিং শব্দটি দ্বারা বোঝায় নারীকে উত্ত্যক্ত করা। আমাদের দেশে একে যৌন হয়রানি হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে যাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে একে বলা হয় 'Sextual Harassment'। ১৯৭৫ সালে আমেরিকান কর্নেল অ্যাস্টিভিস্টরা সর্বপ্রথম এ শব্দটি ব্যবহার করেন।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

বিশিষ্টজনদের মতে অশালীন চাহনির মাধ্যমে মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করা, তাদেরকে দেখে শিস বাজানো, বাজে মন্তব্য করা, অপ্রত্যাশিতভাবে বা আচমকা কোনো মেয়ের সামনে লাফিয়ে পড়া, হঠাৎ হাততালি দেওয়া, বিনা অনুমতিতে ক্যামেরা অথবা মোবাইল দিয়ে মেয়েদের ছবি তোলা, মেয়েদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে মিসড কল বা কল দেওয়া কিংবা মেসেজ পাঠানোর মতো আপত্তিকর কাজগুলো ইভ টিজিংয়ের পর্যায়ে পড়ে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করা হয়। এগুলো মানসিক বিকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইভ টিজিং: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ইভ টিজিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমাদের সংবিধানের ২৭ ও ২৮ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যায় না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে অসহায়ত্বের শিকার হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পবিত্র শিক্ষাঙ্গনেও ইভ টিজিংয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে মেয়েদের। এখানেই শেষ নয়। স্কুলছাত্রী থেকে শুরু করে আদিবাসী তরুণী কেউই রেহাই পায়নি বখাটেদের হাত থেকে। জ্ঞান প্রদানকারী শিক্ষকও এখন ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়।

ইভ টিজিংয়ের কারণ: ইভ টিজিং মূলত এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ মুখ্যত দায়ী। এই কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

(১) নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়: সময়ের সাথে সাথে যুগের পরিবর্তনে মানুষের চিন্তা-চেতনা আধুনিক হলেও তার নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে এবং নৈতিক শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটার কারণে তারা ইভ টিজিংয়ে প্রবৃত্ত হচ্ছে।

(২) দুর্বল আর্থ সামাজিক অবস্থা ও বেকারত্ব: দরিদ্র পরিবারের উঠতি বয়সের ছেলেরা কিংবা বেকার ছেলেরা দিশাহারা হয়ে পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর জন্য তারা পার্কে কিংবা রাস্তার মোড়ে জটলা পাকায়। এ সময় তারা বিনোদনের জন্য যেকোনো মেয়েকে দেখলেই ইভ টিজিং করতে থাকে।

(৩) দুর্বল পারিবারিক শিক্ষা: যেসব পরিবারে বাবা-মা তার পুত্রসন্তানকে প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে তারা ইভ টিজিংয়ের মতো নোংরা কাজে জড়িত হয় না। কিন্তু যেসব পরিবারের কাঠামো দুর্বল এবং সন্তানরা পিতা-মাতার কাছ থেকে যথার্থ শিক্ষা পায় না তারা সহজেই যেকোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে।

(৪) অপসংস্কৃতির প্রভাব: ইভ টিজিংকে উৎসাহিত করতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি কিংবা অপসংস্কৃতি বিরাট নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। টেলিভিশনে নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখে আজকের যুবসমাজ একে ফ্যাশন বলে মনে করে। ফলে সমাজে ইভ টিজিং বাড়ছে।

(৫) মেয়েদের অশালীন পোশাক পরিধান: বর্তমানকালে আধুনিক ফ্যাশনের নামে মেয়েদের অশালীন নানা পোশাক পরিধান করতে দেখা যায়। এসব পোশাক প্রকারান্তরে ছেলেদেরকে ইভ টিজিংয়ে প্ররোচিত করে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। 
উপর্যুক্ত নানা কারণে ইভ টিজিং সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।

ইভ টিজিং প্রতিরোধে করণীয়: ইভ টিজিং প্রতিরোধে সকলের সচেতন অবস্থান তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি আরও নানা করণীয় রয়েছে আমাদের। এগুলো হলো-

(১) মেয়েদেরকে মজবুত মানসিকতার অধিকারী করে গড়ে তুলতে হবে।

(২) তরুণ ছেলেদের মনে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে।

(৩) পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ইভ টিজিংয়ের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে হবে।

(৪) ইভ টিজিংয়ের শিকার হওয়া যেকোনো মেয়েকে পরিবার থেকে সহানুভূতি ও ভালোবাসা দিতে হবে।

(৬) পাশ্চাত্য সংস্কৃতি কিংবা অপসংস্কৃতির প্রভাব থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

(৭) নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে অন্যায়বোধ জাগ্রত করতে হবে।

(৮) নারী-পুরুষ সকলকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার শিক্ষা দিতে হবে। এর মাধ্যমে তারা সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ হবে, যা ইভ টিজিংয়ের মতো অনৈতিক কাজকে নিরুৎসাহিত করবে।

(৯) ইভ টিজিংবিরোধী সভা-সমাবেশ ও সেমিনারের আয়োজন করা।

(১০) প্রচারমাধ্যমগুলোতে ইভ টিজিং প্রতিরোধে অনুষ্ঠান আয়োজন।

(১১) আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের সহয়তা নেওয়া।

ইভ টিজিং প্রতিরোধে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ: ইভ টিজিং প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-

(১) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক ক্ষমতার তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এতে ৫০৯ ধারা সংযোজন করে তাৎক্ষণিকভাবে বখাটেদের শাস্তি দেওয়ার বিধান রাখা হয়।

(২) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন-২০১০’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

উপসংহার: ইভ টিজিং একটি ভয়ংকর সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানকল্পে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণ এবং সরকার উভয়ের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে ইভ টিজিংকে কঠোর হাতে দমন করতে।
ইভ টিজিং | রচনা

আমাদের সমাজকে ইভ টিজিং থেকে রক্ষা করতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। তাই সকলকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিবাদ করতে হবে ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে।
Share:

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ | রচনা

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

ভূমিকা: বাংলাদেশের এই সবুজ ভূখণ্ডে মাঝে মাঝেই আঘাত হানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নিয়মিত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতায় আমরা প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহের মধ্যে ভূমিকম্প আতঙ্কই আমাদের মাঝে সর্বাধিক দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে। কারণ ভূমিকম্প কোনো রকম পূর্ব সংকেত ছাড়াই ভূপৃষ্ঠকে কাঁপিয়ে দেয়।

বেশ কয়েক বছর ধরে অনেকগুলো মৃদু থেকে মাঝারি ভূমিকম্প আমাদের দেশে আঘাত হেনেছে। হাইতির পর সাম্প্রতিককালে নেপালের ভূমিকম্প আমাদের উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

ভূমিকম্প কী এবং কেন?: ভূত্বক পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়াসমূহ প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল। কোনো কারণে ভূঅভ্যন্তরের বিপুল শক্তি দ্রুত মুক্ত হওয়ার সময় ভৃপৃষ্ঠে যে প্রবল ঝাঁকুনি বা কম্পনের সৃষ্টি হয় তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুযায়ী পৃথিবীর এক প্রান্তে অবস্থিত ভূকম্পনকেন্দ্র থেকে সৃষ্ট তরঙ্গমালা পৃথিবীর অপরপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

অবশ্য কেন্দ্র হতে তরঙ্গগুলো যতই দূরে অগ্রসর হয়; ততই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মৃদু কিংবা প্রবল ভূমিকম্প মাপার এককের নাম রিখটার স্কেল। ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধানকালে ভূতত্ত্ববিদগণ লক্ষ করেন, পৃথিবীর কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলে অধিক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে: বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মোট ৮টি ভূচ্যুতি এলাকা ক্রিয়াশীল। এগুলো হচ্ছে বগুড়ার তানোর, ত্রিপুরা, সীতাকুন্ড-টেকনাফ এলাকা, হালুয়াঘাট, ধুবরি, চিটাগাং, শাহীবাজার এবং রাঙামাটি। এসব ভূচ্যুতির জন্য বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

এ ছাড়া ইন্ডিয়া-ইউরেশিয়া-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের সীমান্তবর্তী এলাকার নিকটে বাংলাদেশের অবস্থান। হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এই টেকটোনিক প্লেট বন্ধ হয়ে আছে। ফলে এটি শক্তি সঞ্চয় করছে। যখন সেই শক্তির কাছে এ টেকটোনিক প্লেট বন্ধনমুক্ত হবে, তখন শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। যা বাংলাদেশ, উত্তর ভারত ও মায়ানমারে মারাত্মক আঘাত হানতে পারে।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

জানুয়ারি ২০০৬-ডিসেম্বর ২০০৯ এ তিন বছরে ৪ রিখটার স্কেলের ওপরের মাত্রার ১১৫টি ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে। এছাড়াও ৫ রিখটার স্কেলের আরও দশটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে এ সময়ে। বঙ্গোপসাগরে চারটি ভূমিকম্পের উৎস ক্রিয়াশীল থাকায় এ অঞ্চলগুলো সুনামিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: বাংলাদেশে ১৫৪৮ সাল থেকে সংঘটিত ভূমিকম্পসমূহের তথ্য সংরক্ষিত আছে। ভূমিকম্পের এ তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯০০ সাল থেকে প্রায় ১০০টি মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে ৬৫টি আঘাত হেনেছে ১৯৬০ সালের পর থেকে। এ তথ্য থেকে আরও জানা যায় গত ত্রিশ বছরে দেশে ভূমিকম্পের হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আমাদের দেশের জন্য অশনী সংকেত।

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কারণ ও পরিমাণ: ভূমিকম্পের সময় মাটির তারল্যিকরণ ঘটে এবং মাটির ধারণক্ষমতা কমে যায়। ফলে বড় বড় ভবনগুলোকে মাটি ধরে রাখতে পারে না। যে কারণে সেগুলো ধ্বংসের মুখে পতিত হয়।

ইউএআইডি ঢাকা শহরে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির কারণ বিশ্লেষণ করেছে, যা প্রায় ক্ষেত্রে সারা বাংলাদেশের শহরগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এগুলো নিম্নরূপ-

i. ভূমিকম্পের পরপরই কী করণীয়- এ সম্বন্ধীয় জ্ঞানের অভাব রয়েছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পেতে পারে।

ii. শহরের বেশিরভাগ বিল্ডিং ভাসমান অথবা কম গভীর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, ফলে এগুলো দেবে যেতে পারে।

iii. বর্ষার সময় যদি ভূমিকম্প হয় তবে মাটিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ লাভ করতে পারে।

iv. গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যা ভূমিকম্প-পরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচিতে ব্যাঘাত ঘটাবে।

v. রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হতে পারে।

vi. পুরাতন ও নিম্নমানের স্কুল-ভবন ভেঙে অনেক ছাত্রছাত্রীর মৃত্যু ঘটতে পারে। যার ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ লাভ করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ৭.৫ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্প ঢাকা শহরে লক্ষাধিক মানুষ এবং প্রায় ৭২,০০০ ভবন ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অবস্থা আরও বেশি খারাপ।

ভূমিকম্প মোকাবেলায় আমাদের করণীয়: ভূমিকম্প এক ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়নি। এ কারণে ভূমিকম্পে যাতে অধিক জানমালের ক্ষতি না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

সরকার অনুমোদিত বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে হবে। ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে যেন খাদ্য, পানীয় ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায় সেদিকে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে সরকারের একার পক্ষে এ ধরনের মহাবিপর্যয় মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দাতাসংস্থা ও এনজিও এক্ষেত্রে নানা ভূমিকা পালন করতে পারে।

দাতাসংস্থাগুলো ভূমিকম্প মোকাবেলায় সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সহযোগিতা করতে পারে। ভূমিকম্পের ওপর যে উন্নত প্রযুক্তি বিদেশে উদ্ভাবিত হয়েছে, আমাদের দেশের প্রকৌশলীদের সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত করতে হবে।

ভূমিকম্প মোকাবেলায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা: ২০১০ সালে ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার। ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় মাত্রার ভূমিকম্পের জন্য এ প্রস্তুতি বড়ই অপ্রতুল। বড় কোনো বিপর্যয় মোকাবেলা করার মতো সামর্থ্য এখনও তৈরি হয়নি আমাদের।

উপসংহার: ভূমিকম্প পৃথিবীর সবচেয়ে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি একটি দেশের আবাসিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে ভূমিকম্প তাই অভিশাপের দ্বিতীয় নাম।

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ | রচনা

তবে দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে। এ কারণে অপ্রত্যাশিত হলেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ।
Share:

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান | রচনা

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান

[চ. বো. ১৪, দি. বো. ১১]

ভূমিকা: জনসংখ্যা বিস্ফোরণে ভারাক্রান্ত তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ বাংলাদেশ। উন্নয়ন অগ্রগতি ও অর্থনীতির গতিশীল চাকাকে জনসংখ্যা সমস্যা মন্থর করে দিয়েছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আজ তাই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা যখন কোনো দেশের সমস্যার বদলে শক্তিতে পরিণত হয়, তখন আমূল পরিবর্তন ঘটে সেই দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য: আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতর দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশের জনবসতি অত্যন্ত ঘন। সরকারের এক হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশের মোট লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। বাংলাদেশে ১৫ বছরের কম এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সের লোকের সংখ্যা অধিক হওয়ায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করতে পারছে না।

পুরুষের সংখ্যা আর নারীর সংখ্যা প্রায় সমান হলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুরুষের মতো নারী সমান অবদান রাখতে পারছে না। দেশের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ লোক শিক্ষিত। ব্যাপক নিরক্ষরতা জনসংখ্যা সমস্যাকে করে তুলেছে প্রকট।

জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি: দ্রুত বেড়ে চলেছে পৃথিবীর জনসংখ্যা। পৃথিবীর মানুষকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্যে প্রতিবছর ১১ জুলাই তারিখে পালিত হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ কোটি। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী এর মধ্যে শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় ৪৫০ কোটি।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, আগামী এক দশকের মধ্যেই বিশ্বের জনসংখ্যা আরো প্রায় একশ কোটি বেড়ে যাবে এবং এই বৃদ্ধির শতকরা ৯০ ভাগ ঘটবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। তাই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে না পারলে পিছিয়ে-পড়া দেশগুলোর দুর্বল অর্থনীতি ক্রমেই নাজুক ও বিপন্ন হয়ে পড়বে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ: পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে অথচ সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে গাণিতিক হারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় সম্পদ কমহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিচ্ছে খাদ্য ঘাটতি। বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও সমাধান | রচনা

সেগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য এবং নিম্নমানের জীবনযাত্রা, অশিক্ষা, ভৌগোলিক প্রভাব, ধর্মীয় এবং সামাজিক কুসংস্কার, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা ইত্যাদি প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচ্য। এছাড়াও বিনোদনের অব্যবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, মৃত্যুহার হ্রাস ইত্যাদিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল: বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সুচিকিৎসা, শিক্ষা, বিশুদ্ধ পানি ইত্যাদির অভাব বেড়েই চলেছে। ফলে জীবনযাত্রার মানেরও ঘটছে অবনতি সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। প্রধান কিছু সমস্যা হচ্ছে-

ক. বাংলাদেশের তীব্র খাদ্যসংকটের মূল কারণ অত্যধিক জনসংখ্যা। খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশকে প্রতিবছর ১০-১২ লক্ষ টন খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দারুণভাবে বাধাগস্ত হচ্ছে।

খ. বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের গতি অত্যন্ত মন্থর। কৃষির ওপরেও রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ। অন্যদিকে দেশে সঠিক কর্মব্যবস্থাপনা না থাকায় জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ বেকার থাকছে। এ সমস্যা ক্রমেই জটিলতর রূপ ধারণ করছে। বর্তমানে দেশের কর্মক্ষম লোকদের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগই বেকার জীবনযাপন করছে।

গ. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসস্থান নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শহরাঞ্চলে বাসস্থান সমস্যা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বাড়তি জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান তৈরি করতে গিয়ে কমে আসছে চাষের জমির পরিমাণ।

ঘ. জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাবে ততই স্কুল-কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান লোকের শিক্ষার জন্যে দরিদ্র এ দেশ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্র্য এবং অপুষ্টির। কারণে জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে শিক্ষিতের হার।

ঙ. দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। জনসংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধির ফলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের অপ্রতুলতা, ময়লা ও পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থা, ব্যাপকহারে বৃক্ষ নিধন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে কলকারখানা স্থাপন ইত্যাদি ঘটছে। এর ফলে দেশের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে।

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায়: কোনো সমস্যাই চিরকাল স্থায়ী হয় না। সব সমস্যারই কোনো-না-কোনো সমাধান এবং প্রতিকার রয়েছে। উন্নয়নকামী দেশ জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান খোঁজে অগ্রগতির পথ পাওয়ার জন্য। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়। যেমন-

ক. দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতির হারকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় বেশি করতে পারলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

খ. শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজ থেকে কুসংস্কার ও গোঁড়ামি দূর করে জনসাধারণকে পরিবার পরিকল্পনায় উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে।

গ. পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণের চেয়ে গুণগত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই জনসংখ্যা সমস্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব। এ লক্ষ্যে দেশে শিক্ষার বিস্তার, কারিগরি দক্ষতার বিস্তার এবং কর্মশক্তি বৃদ্ধির ব্যবস্থার দ্বারা জনসংখ্যার গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমে একে সমস্যার বদলে সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব।

ঘ. বাংলাদেশে আয়ের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিদ্যমান। আয়ের সুষম বণ্টন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ঙ. সর্বোপরি আইন প্রণয়নের মাধমে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ ও গর্ভপাত অনুমোদন করা সম্ভব হলে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে। এছাড়া বিয়ের ন্যূনতম বয়স বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যাপক প্রচার এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধমে এই আইনসমূহের সফল প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

উপসংহার: পরিকল্পিত পরিবার গঠন ও জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি সর্বজনীন জাতীয় নীতিমালা প্রণীত হওয়া আবশ্যক। সাথে সাথে শিক্ষা বিস্তার করতে হবে এবং জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন করে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে। আর তাহলেই জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
Share:

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার | রচনা

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার

[কু. বো. ১৫, ব. বো. ১৪, ঢা. বো. ১২ য. বো. ১১]

ভূমিকা: মাদকাসক্তি আমাদের সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনের জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ। এটি মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। বর্তমানে মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে এক সর্বনাশা ব্যাধিরূপে বিস্তার লাভ করেছে। দুরারোগ্য ব্যাধির মতোই তা তরুণ সমাজকে গ্রাস করছে।

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার | রচনা

এটি মায়ের বুক থেকে তার তরুণ ছেলেকে কেড়ে নেয়। ধ্বংস করে দেয় একটি রত্নকে। এই ব্যাধি আজ প্রতিটি পরিবারে ছড়িয়ে দিয়েছে ভয়াবহ আতঙ্ক। এটি শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না, ধ্বংস করে পুরো সমাজকে।

মাদকাসক্তি কী?: মাদকাসক্তি হলো ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর এমন একটি মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া, যা জীবিত প্রাণী ও মাদকের পারস্পরিক ক্রিয়ার মধ্য দিয় সৃষ্টি হয়। যে দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং ঐ দ্রব্যের প্রতি নির্ভরশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকে, এমন দ্রব্যকে মাদকদ্রব্য বলে। ব্যক্তির এই অবস্থাকে বলে মাদকাসক্তি। তাই মাদকাসক্তি বলতে মাদকদ্রব্যের প্রতি নেশাকে বোঝায়।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

মাদকদ্রব্য কী?: যেসব দ্রব্য গ্রহণ করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং সেগুলোর প্রতি সেবনকারীর প্রবল আসক্তি জন্মে যেসব দ্রব্যকে মাদকদ্রব্য বলে। মাদকদ্রব্য হচ্ছে সেসব দ্রব্য, যা প্রয়োগে মানবদেহে মস্তিষ্কজাত সংজ্ঞাবহ সংবেদন হ্রাস পায়। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য চালু আছে। মদ, গাঁজা, ভাঙ, আফিম ইত্যাদির নেশা বহু প্রাচীন। এছাড়াও আছে হেরোইন, মারিজুয়ানা, কোকেন, মরফিন, এলএসডি, প্যাথেড্রিন, চরস, পপি, হাশিশ, ক্যানবিস, স্মাক, ফেনসিডিল, ইয়াবা ইত্যাদি।

মাদকাসক্তির কারণ: একজন ব্যক্তির মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো পারিবারিক অনুশাসনের অভাব, হতাশা, বেকারত্ব, অসৎ সঙ্গীদের প্ররোচনা, কর্ম বা শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যর্থতা, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ইত্যাদি।

১. পারিবারিক কলহ: পারিবারিক কলহ এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দের অভাব একটি কিশোরের ভুল পথে যাওয়ার মূল কারণ। সুস্থ সামাজিক পরিবেশের অভাবেও অনেক কিশোর-কিশোরী মাদকের সংস্পর্শে আসে।

২. হতাশা: হতাশা আমাদের যুবসমাজের মাদকাসক্ত হওয়ার একটি প্রধান কারণ। মানুষ সাধারণত নিজেকে নিয়ে অনেক উচ্চ আশা পোষণ করে আর এই আশা পূরণ করতে যখন সে ব্যর্থ হয় তখনই এই হতাশা কাটানোর একটি পথ হিসেবে সে মাদককে বেছে নেয়।

৩ কৌতূহল: কিশোর-কিশোরীদের মাদকাসক্ত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে কৌতূহল। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহ মানুষের সর্বকালের। এই কৌতূহলের বশেই পরিচয় ঘটে মাদকের সাথে।

৪. কুসংসর্গ: পরিবেশ একজন মানুষের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। অনেক সময় মাদকের সাথে প্রায় অপরিচিত একজন ব্যক্তি মাদকাসক্ত বন্ধু বা সঙ্গীদের প্রভাবে নিজের অজান্তে, মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

এছাড়াও পারিবারিক ও সামাজিক নানা অস্থিতিশীল পরিবেশ একজন মানুষের মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে দায়ী থাকে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার: উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের তরুণ সমাজের একটি বিরাট অংশ ভয়াবহ মাদকাসক্তির শিকার। বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য ব্যবহারের পরিমাণ ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণামতে এ দেশের ১৭ ভাগ লোক মাদকাসক্ত। এ দেশে অবৈধভাবে প্রচুর পরিমাণে মাদক বিক্রি হয় এবং মাদকদ্রব্যের এই সহজলভ্যতাই আমাদের দেশে দিন দিন মাদকগ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করছে।

মাদকাসক্তির পরিণাম/কুফল: মাদকাসক্ত ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনে। কখনো খারাপ লোকের প্ররোচনা, হতাশা, নৈরাশ্য অথবা নিছক কৌতূহলবশত একবার মাদক গ্রহণ শুরু করলে সে আর এই নেশা থেকে ফিরে আসতে পারে না। দিনের পর দিন তার এ নেশা আরো বাড়তে থাকে।

অনেকেই ভাবে মাদক গ্রহণের মাধমে তারা তাদের দুঃখকে ভুলে থাকার শক্তি পায়। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মাদক মানুষের মানসিক সুস্থতাকে নষ্ট করে তাকে মানসিকভাবে আরো দুর্বল করে তোলে। মাদক গ্রহণের ফলে মানুষের আচরণেও অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি অত্যন্ত সহজেই অনৈতিক ও বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ে।

মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্য পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি করে, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অসৎ পথ অবলম্বন করে। তারা পরিবার এবং সমাজে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে। মাদকদ্রব্য দেহ ও মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন জটিল ও দুরারোগ্য রোগব্যাধি দেহকে আচ্ছন্ন করতে থাকে। ব্যক্তিত্বের অবসান ঘটে ও কর্মক্ষমতা লোপ পায়।

প্রতিরোধের উপায়: মাদকাসক্তি এক ভয়াবহ রোগ। পশ্চিমা বিশ্বে যে সমস্যা এখন তুঙ্গে। আমাদের দেশে সে তুলনায় এখনও তা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায়ই এর প্রতিকার করা উচিত। নিম্নলিখিতভাবে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি।

১. প্রথমেই প্রয়োজন প্রতিটি ব্যক্তির মাদকের কুফল সম্পর্কে জানা। এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি।
২. ছোটবেলা থেকে শিশুদের মাদক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে যেন সহজেই তারা প্ররোচিত না হয়।
৩. মানবিক মূল্যবোধ গঠন ও পরিবেশন।
৪. বেকারত্ব দূরীকরণের ব্যবস্থা।
৫. ব্যক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি।
৬. মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা।
৭. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অফিস, সংস্থা, দপ্তরকে ধূমপান ও মাদকমুক্ত এলাকা ঘোষণাপূর্বক তা কার্যকর করা।
৮. মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা দূরীকরণ।

উপসংহার: মাদকাসক্তির সর্বনাশা ছোবল দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজের জন্য মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতা ও দৃঢ় প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবেই আমরা পেতে পারি একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ।
Share:

ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ | রচনা

ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ

[ব. বো. ১৪, রা. বো. ১৩, দি. বো. ১০]

ভূমিকা: ‘খেলার রাজা’ কিংবা ‘রাজার খেলা’ বলা হয় ক্রিকেটকে। এ খেলার গৌরবময় অনিশ্চয়তা একে তুলে ধরেছে উত্তেজনা, উদ্দীপনা ও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ আজ অন্যতম শক্তিধর দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অভাবিত সাফল্য ক্রিকেটকে এ দেশের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করেছে। ক্রিকেট এখন জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে ক্রিকেটের ইতিহাস: শতাধিক বছরের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে ক্রিকেট খেলার প্রচলন। ইংরেজ শাসনামলে এ দেশে তথা ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেট খেলার সূচনা ঘটে। দেশ বিভাগের কিছুকালের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পায়। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়ে এবং শহরগুলোতে ক্রিকেট বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পাকিস্তান আমলে তৎকালীন শাসক ও সংগঠকদের আন্তরিকতার অভাব এবং বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখানে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট বিকশিত হয়নি।

আইসিসিতে বাংলাদেশ: স্বাধীনতার এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশ আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায়। যোগ্যতা অর্জন করে বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ধারণী আইসিসি ট্রফি খেলার। প্রথম কয়েকটি আসরে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখযোগ্য ছিল না। অবশেষে দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় ‘৯৭-এর আইসিসি ট্রফিতে। সেমিফাইনালে বাংলাদেশ সহজেই স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে।

ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ | রচনা

সেরা দুটি দেশের একটি হতে পারায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হয়। সেই সাথে বাংলাদেশ অর্জন করে ওয়ানডে খেলার মর্যাদা। তাই সেদিন আনন্দের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল সমগ্র বাংলাদেশ। কেনিয়াকে হারিয়ে সেবারের আসরের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা লাভ: বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের পরপরই আইসিসির অধিবেশনে বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা লাভের আবেদন করে। পাকিস্তান ছিল সমর্থক। ওয়েস্ট-ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে এতে সমর্থন জানালেও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড দল বিরোধিতা করায় বাংলাদেশ সম্ভাব্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অবশেষে ২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসির পরবর্তী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে টেস্ট ক্রিকেটে মর্যাদা দেওয়া হয়। সংবাদটি বাংলাদেশে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। জাতীয় পর্যায়েও আনন্দ উৎসব পালিত হয়।

বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ: ১৯৯৯-এর বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছিল। ২৪ মে অনুষ্ঠিত খেলায় বাংলাদেশ বিশ্বকাপে প্রথম জয় ছিনিয়ে আনে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে। প্রথম রাউন্ডের শেষ খেলায় ৩০ মে ‘৯৯ বাংলাদেশ সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী পাকিস্তানকে ৬২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়।

নিজেদের সপ্তম অবস্থানসহ সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন ছিল সেবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য দিক। সেই সঙ্গে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। ২০১১ বিশ্বকাপে আয়োজক দেশ ছিল বাংলাদেশ। সেরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তালিকায় ছিল ঢাকা। গ্রুপ পর্বে ছিটকে পড়লেও শক্তিশালী ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নেয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অধ্যায় নিঃসন্দেহে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সবার নজর কাড়ে। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্ভাবনা: বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে একটি প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে বাংলাদেশের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলার দামাল ছেলেদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স সেই কথাই বলছে। ঘরের মাটিতে সর্বশেষ খেলা ১৪টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের জয় ১২টিতেই। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেটীয় পরাশক্তিরা বাংলার ছেলেদের সামনে হয়েছে পর্যুদস্ত। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ততটা ভালো ফলাফল করতে না পারলেও উন্নতির চিত্র ধরা পড়ে সহজেই।

বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলগুলো দেশে ও দেশের বাইরে ভালো করছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েজন খেলোয়াড় বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাকিব আল হাসান দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলও নানা পর্যায়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। ক্রিকেট এখন শুধু নিছক খেলাই নয়। একে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। ক্রিকেট খেলাকে নেশা করে নেওয়া তরুণরা এখন পেশা হিসেবে একে গ্রহণ করতে অনেক বেশি আগ্রহী।

উন্নতির ধারা ধরে রাখতে করণীয়: ক্রিকেটকে ঘিরে বাংলাদেশের সর্বস্তরের ক্রীড়ামোদী জনতার আশা-ভরসার শেষ নেই। সেই ভরসার প্রতিদান দিতে আগ্রহের কমতি নেই খেলাটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেরই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের দেশের ক্রিকেট মাঠের সংখ্যা এখনো অপ্রতুল। পিচগুলোর অধিকাংশই বিশ্বমানের নয়।

তাই আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ক্রিকেট মাঠ তৈরি করা খুব জরুরি। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো খুবই নাজুক। এটিকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত প্রয়োজন। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের কাঠামোকে দৃঢ় করার প্রতিও অনেক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

বর্তমান ক্রিকেট খেলার উন্নতির জন্য নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে আমাদের ক্রিকেট নিঃসন্দেহে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

উপসংহার: নানা সমস্যায় জর্জরিত বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু এখন ক্রিকেট। অন্য সব বিষয়ে নানা রকম বিভক্তি থাকলেও ক্রিকেট সাবাইকে এক করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে-এটিই সবার কামনা। হয়তো সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনবে বিশ্বকাপের গৌরব।
Share:

ফুটবল খেলা অথবা, আমার প্রিয় খেলা | রচনা

ফুটবল খেলা

অথবা,

আমার প্রিয় খেলা

ভূমিকা: ফুটবল অত্যন্ত চমৎকার একটি উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। এ খেলার সূচনা হয় চীনে। বর্তমানে সারা বিশ্বে এ খেলাটি তুমুল জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা এই ফুটবল। গ্রামগঞ্জ, শহর, নগর সবখানেই ফুটবল খেলা হয়। আমার প্রিয় খেলাও ফুটবল।

ফুটবল মাঠের বর্ণনা: একটি সমতল মাঠে ফুটবল খেলা হয়। মাঠের চারদিক সীমারেখা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। লম্বালম্বি দু বিপরীত প্রান্তে দুটি গোলপোস্ট থাকে। আদর্শ মাঠের দৈর্ঘ্য ১২০ হাত এবং প্রস্থ ৮০ হাত হয়। গোলপোস্ট দুটির সাথে নেট দেওয়া থাকে ও মাঠের চার কোণায় চারটি পতাকা পোঁতা থাকে।

খেলার বর্ণনা: একটি বল মাঠের মাঝামাঝি স্থাপন করা হয়। দুটি দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে। গোলপোস্ট পাহারায় থাকে একজন করে গোলরক্ষক। খেলা চলাকালীন দুই গোলরক্ষক নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে হাত দিয়ে বল ধরতে পারে। মাঝের দশ মিনিট বিরতি ছাড়া ৪৫ মিনিট করে মোট ৯০ মিনিট খেলা হয়। সময় শেষে যে দল গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকে তারাই জয়ী হয়।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

পরিচালক: যিনি ফুটবল খেলা পরিচালনা করেন তাঁকে বলা হয় রেফারি। খেলার সকল ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাঁর নির্দেশে খেলা আরম্ভ এবং শেষ হয়। কোনো খেলোয়াড় নিয়ম ভঙ্গ করলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে তাঁর নির্দেশ প্রদান করেন। মাঠের দুপাশে দুজন লাইন্সম্যান তাঁর কাজে সাহায্য করেন।

খেলার নিয়মকানুন: ফুটবল খেলার কতকগুলো নিয়ম আছে। কেউ হাত দিয়ে বল ধরলে ‘হ্যান্ড বল’ ধরা হয়। তবে গোলরক্ষকদ্বয় নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে হাত দিয়ে বল ধরতে পারে। বল সীমানার বাইরে চলে গেলে ‘আউট’ ধরা হয়। অন্যপক্ষের খেলোয়াড়কে অহেতুক ধাক্কা দিলে বা পা লাগিয়ে ফেলে দিলে ‘ফাউল’ ধরা হয়। কোনো পক্ষ নিজ গোলপোস্টের সীমানায় হ্যান্ডবল করলে বা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ফাউল করলে ‘পেনাল্টি’ দেওয়া হয়।

ফুটবল খেলা অথবা, আমার প্রিয় খেলা | রচনা

আর প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে বল যদি নিজ গোলপোস্টের পার্শ্ব সীমানার বাইরে চলে যায় তবে অপরপক্ষ ‘কর্নার’ লাভ করে। বল গোলপোস্টে প্রবেশ করলে সেটিকে গোল হিসেবে ধরা হয়।

উপকারিতা: ফুটবল খেলা বেশ আনন্দদায়ক। এ খেলা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। এতে দেহের সকল অংশ উত্তমরূপে পরিচালত হয় বলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ সবল ও দৃঢ় হয়। খেলোয়াড়দের কতগুলো নিয়মের অধীনে খেলতে হয় বলে তারা নিয়মানুবর্তিতা, কর্মতৎপরতা এবং একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার শিক্ষা লাভ করে।

উপসংহার: ফুটবল খুবই আনন্দময় ও উপকারী খেলা। এ খেলা খেলোয়াড় ও দর্শক উভয়কেই আনন্দ দেয়। যেকোনো বয়সী মানুষের জন্য এটি একটি ভালো ব্যায়াম। এ খেলা সহযোগিতা ও শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয়। তাই ফুটবল আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা।
Share:

বর্ষণমুখর একটি সন্ধ্যা অথবা, আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা | রচনা

বর্ষণমুখর একটি সন্ধ্যা

অথবা,

আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা

[রা. বো. ১৪, ব. বো. ১০]

জীবন খাতার পাতায় জমে অভিজ্ঞতার নানা বিচিত্র ঘটনা। আজ আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এমন একটি স্মরণীয় ঘটনার তুলে ধরছি। শ্রাবণ মাস। সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা। মাঝে কয়েকবার হালকা বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে কালো মেঘের ফাঁকে পশ্চিম আকাশে পড়ন্ত সূর্যের আবির রং দেখে মনটা নেচে ওঠে।

আমরা কয়েক বন্ধু মনের আনন্দে রবিঠাকুরের কবিতায় গানের সুর তুলে গাইতে গাইতে বাড়ি হতে বের হই-
মেঘের কোলে রোদ হেসেছে,
বাদল গেছে টুটি।
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই
আজ আমাদের ছুটি।

আমাদের বাড়ি থেকে হারাবিলের দূরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি নয়। বন্যার পানিতে সেই দূরত্বরেখা মিশে গেছে। এক কিলোমিটারের ফসলের মাঠ পানিতে একাকার। বিল আর ফসলের মাঠের পার্থক্য বোঝা যায় না। বাড়ির ঘাটে বাঁধা ছিল আমাদের নৌকা।

বর্ষণমুখর একটি সন্ধ্যা অথবা, আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা  | রচনা

আমাদের বৈঠার হেইয়া টানে নৌকা এগিয়ে চলছে। সূর্য ডুবে গেছে কখন আমাদের কোনো খেয়াল নেই। সন্ধ্যার আলো-আঁধারির খেলা চলছে। মেঘের ভেলা জমে জমে কখন যে আকাশ ভরে গেছে, বন্ধুদের হৈহুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাসে আমরা খেয়ালই করেনি যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে।

হঠাৎ আকাশ ভেঙে সত্যি সত্যি বৃষ্টি নামল। আমরা বিলের পাড়ের গাঁয়ের ছেলে। ঝড়, বৃষ্টি, বাদল, বন্যা দেখে খুব সহজে সাহস হারা হই না। হারাবিল নিয়ে অনেক গল্প-কাহিনি, কিংবদন্তি এই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত আছে। যার বেশির ভাগই ভয় আর শরীরের রক্ত হিম করার মতো।

ভূত পেত্নী নয় তো ডাকাতের কায়-কারবার নিয়ে কল্পনার রংমাখা ভয়ংকর সব কাহিনি। আরো আছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কাহিনি। পাকবাহিনী এই বিলের বটগাছের নিচে ক্যাম্প করে কত মানুষকে মেরে বটগাছের নিচে গর্ত করে পুঁতে রেখেছে তার হিসেব নেই।

সেই সব অতৃপ্ত আত্মারা নাকি সন্ধ্যা হলেই বের হয়ে ঘুরে বেড়ায় বিলের পানির ওপর দিয়ে। এমন সব কাহিনি দিনের আলোতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সন্ধ্যার অন্ধকারে কেন যেন সত্যি বলে মনে হচ্ছে।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

আস্তে আস্তে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। নৌকায় পানি জমছে। আমরা কাকের মতো ভিজছি। চারদিক অন্ধকার। দূরে গ্রামের ঘরে ঘরে জ্বলা সন্ধ্যা বাতির আলোও চোখে পড়ছে না বৃষ্টির আঁধারের ঘনঘটায়।

বৃষ্টিতে ভিজে শীত শীত লাগা শুরু হলো। বাড়ির কথা মনে পড়তেই অস্বস্তি ঘিরে ধরল। বৃষ্টিমুখর এই সন্ধ্যায় আমাদের না পেয়ে নিশ্চয়ই মা-বাবা চিন্তায় অস্থির। নিজেদের অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছে। সবাই মিলে বৈঠা ঠেলতে লাগলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

আমরা বিলের মাঝখানে চলে এসেছি। হঠাৎ বৃষ্টির ছন্দময় শব্দকে মনে হচ্ছে ভূতের কান্না। বাতাসের শিরশির শব্দ কানে এসে বাজছে পেত্নীর হিহিহি হাসির মতো। বিকট শব্দে দূরে একটা বাজ পড়ল, কিন্তু মনে হলো আমাদের ওপরই যেন পড়ল। ব্রজপাতের আলোয় যতটুকু দেখা গেল, তাতে মনে হলো আমরা ভুল পথে চলছি। আশপাশে আর কোনো নৌকা বা লোকজনের দেখা নেই।

বিলের মাঝখানের ঢিবির ওপরের বটগাছ অর্ধেকটা ডুবে আছে। এই বটগাছতলায় নাকি প্রতি অমাবস্যার রাতে ভূতদের আসর বসে। এ কথা মনে হতেই শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে গেল।

এমন সময়, ‘ঐ তো দূরে আলো দেখা যাচ্ছে’- আমাদের মাঝ থেকে একজন চিৎকার করে উঠল। আমি চমকে উঠলাম। তাকে চুপ করতে বলে বললাম। ‘ঐ দিকে তো বটগাছ। নিশ্চয়ই ভূতের আগুন। নয় তো ডাকাতরা ওত পেতে বসে আছে। মহাজনদের নৌকা লুট করার জন্য।

চিৎকার করো না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকো।’ আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সবাই কালিমা শাহাদাত আর দোয়া ইউনুছ পড়া শুরু করল। মনে মনে পড়তে বললেও তা আর মনে মনে থাকল না। ভয়ে কাঁপা গলায় তা এক অন্য রকম ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করল। দূরের আলো আস্তে আস্তে কাছে আসছে। আমরা অজানা ভয় আর সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচলে দুলতে লাগলাম। আলো থেকে পালাব নাকি কাছে যাব কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে।

দাদির কাছে শুনেছি ভূতরা নাম ধরে ডাকে। ডেকে নিয়ে তারপর ঘাড় মটকে রক্ত খায়। আমার এক বন্ধু বলল, ‘এটা তো চাচা মিয়ার গলা।’ আমাদের বাড়ির কাজের লোককে আমরা চাচা মিয়া বলে ডাকি। চাচা মিয়া ডাকছে শুনে মনে সাহস ফিরে পেলাম। ভয় আর আনন্দের মিশ্রণে চিৎকার বেরিয়ে এলো আমাদের গলা দিয়ে।

আমাদের চিৎকার লক্ষ্য করে আলোটি এগোতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যে নৌকাটি আমাদের কাছাকছি চলে এলো। নৌকা থেকে টর্চ লাইটের আলো এসে পড়ল আমাদের মুখের ওপর। বাবার গলার আওয়াজ পেলাম। আবার ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেল। মনে হলো এবার আর রক্ষা নেই। নিশ্চয়ই যে কাণ্ড ঘটিয়েছি, ভীষণ রেগে আছেন। কিন্তু না, ঘটনা ঘটল উল্টো।

আমাদেরকে দেখে বাবার চোখে পানি এসে গেল। তিনি নিজে চাচা মিয়ার নৌকা ছেড়ে আমাদের নৌকায় এসে বৈঠা হাতে নিয়ে নৌকা চালাতে শুরু করলেন। তখনও ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নৌকা এসেছে ঘাটে ভিড়ল, মা দৌড়ে এসেছে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে নিয়ে গরম কাপড় পরতে দিলেন। বাড়ির ঘাটে আমার অন্য বন্ধুদের বাবা-মা, ভাই-বোনরাও অপেক্ষা করছিলেন। তারাও যার যার বাড়ি চলে গেল।

আমার জীবনে অনেক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যা এসেছে, আরো আসবে। কিন্তু এই সন্ধ্যার স্মৃতি কোনোদিন ভুলতে পারব না। এটি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা।
Share:

আমার শৈশব স্মৃতি অথবা, ফেলে আসা দিনগুলো | রচনা

ফেলে আসা দিনগুলো

অথবা,

আমার শৈশব স্মৃতি

ভূমিকা: জীবন গতিশীল। আর এই গতিই বেঁচে থাকা। গতি হারানোর অর্থই মৃত্যু। জীবনের এই ছুটে চলার মাঝে অনেক পদচিহ্ন পেছনে পড়ে থাকে। জীবনছবির ফ্রেমে সেই দিনগুলো বাঁধিয়ে রাখলে হয় তো একটি মহাকাব্য হবে।

সেই কাব্যে যেমন থাকবে সুখের মোহনীয় মুহূর্তগুলোর রোমাঞ্চকর স্মৃতি, আবার এর বিপরীত অনেক কিছু থাকবে, যা শুধু যন্ত্রণাই বাড়াবে। ইচ্ছে করবে কলমের একটানে মুছে ফেলতে। নয় তো ইচ্ছে করবে এমন করে ভাবতে- ‘এটা আমার জীবনের পর্ব নয়।’ কিন্তু যা একবার ফেলে এসেছি তা ফিরে না এলেও মনের পাতা থেকে, জীবন খাতা থেকে মুছে ফেলা যাবে না।

আমার শৈশব স্মৃতি অথবা, ফেলে আসা দিনগুলো | রচনা

এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতার খাতার হিসাব মিলিয়েই নির্ধারিত হয় মানুষের পরবর্তী জীবনের এমনকি পরপারের জীবনের পথচলা। তাই, ফেলে আসা দিনগুলি যতই তুচ্ছ ভাবি তুচ্ছ নয় ঐদিনের সিঁড়ি বেয়েই আসে জয়-পরাজয়।

জীবনটা খুব ছোট: বাংলাসাহিত্যের অমর কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন,‘ আমাদের জীবনটা খুব ছোট। একটা কচ্ছপ বাঁচে তিনশ বছর। মানুষ একশ বছরও বাঁচে না।’ তাঁর মতো বড়মাপের মানুষরা যখন এমন কথা বলেছেন, তখন আমি কী আর বলব, আমার ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে? আমার জীবনের ফেলে আসা স্মৃতি ভরা দিনগুলো এখনো পরিপুষ্টই হয়নি।

এখনও স্কুলের বারান্দা দিয়ে কেবল হাঁটছি। কৈশোর পেরিয়ে এখনো যৌবনের দ্বারে পা পড়েনি।
‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না-
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না-
সেই- যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।।
এই গান গাওয়ার সময় এখনো আমার আসেনি। তারপরও জীবন খাতার পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে কিছু স্মৃতিময় স্মরণীয় ক্ষণ।

কিছু উজ্জ্বল স্মৃতি: আমার ফেলে আসা দিনের ফ্রেমে আছে একটা সোনালি শৈশব। গ্রামের সবুজ-শ্যামল আঁচলের ছায়া। মায়ের স্নেহভরা মিষ্টি মুখ। বাবার কর্মক্লান্ত অথচ হাসোজ্জ্বল প্রিয়মুখ। বাঁশবাগানের মাথায় ওঠা চাঁদ। বাড়ির পিছন দিয়ে বয়ে চলা ছোট নদী। গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেলিম স্যারের আদরভরা শাসন।

বন্ধুদের সাথে দুপুরের রৌদ্রে ঘুড়ি ওড়ানোর ধূসর ম্মৃতি। নদী, বিল-ঝিলের পানিতে মাতামাতি, জেলেদের মাছ ধরার ছবি। আজও মনের কোণে উঁকি দেয় ঝুপ করে মাছরাঙার পাখির মাছধরা কিংবা কাঠঠোকরার খট-খট শব্দে কাঁঠাল গাছে গর্ত করার ছবিগুলো।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

শীতকালের কিছু মধুর স্মৃতি কোনো দিন ভোলা যাবে না। ভাইবোন সবাই মিলে চুলার কাছে বসে মায়ের পিঠা বানানো দেখতে দেখতে পিঠা। তারপর শিশির ভেজা ভোরে চাচা, চাচি, মামা, মামি, ফুফু ও চাচাতো, মামাতো ভাই-বোনেরা আসতেন। পাড়াপ্রতিবেশীরা আসতেন। সবাই মিলে একসাথে বসে শীতের পিঠা খাওয়ার পর ঝালমুখ করা হতো হাঁসের গোশত দিয়ে গরম গরম ভাত।

খাওয়ার পর্ব শেষে ভাই-বোনরা সবাই রঙিন ঘুড়ি হাতে বেরিয়ে যেতাম পাশের মাঠে। সর্ষে ক্ষেতের সবুজ পাতার পাতায় হলদে ফুল আহ! কী মনকাড়া ছবি। তারপর সারাদিন হইচই। স্কুল হোস্টেলের এই বন্দিদশায় খুব বেশি বেশি মনে পড়ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষের সেই সোনালি দিনগুলো।

বৈশাখ মাসে আকাশে মেঘ করলে মা ব্যস্ত হয়ে যেতেন আমাদেরকে ঘরে নিতে, আর আমরা মায়ের চোখে ফাঁকি দিয়ে আম কুড়াতে চলে যেতাম আমাদের বাগানে। বাড়ি ফিরে আমগুলো দিতাম মায়ের হাতে। তারপর মা হাসিমুখে হাজির হতেন কাঁচা আমের সাথে কাসুন্দী মিশিয়ে নিয়ে। সেই স্বাদ ভোলার নয়। এখনো ভাবলে জিভে পানি আসে।

আরো মনে পড়ে আষাঢ়, শ্রাবণ মাসে টিনের চালে ঝুম-ঝুম বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে অলস দুপুরে ভাইবোনে মিলে তিনগুটি, লুডু কিংবা দাবা খেলার মধুর স্মৃতি। এখন পড়ালেখার এত চাপ খেলার কথা ভাবতেই পারি না।

বড় বুবুর বিয়ে। সবাই ব্যস্ত বিয়ের আয়োজনে। আমাদের পক্ষ থেকে কলাগাছে রঙিন কাগজ লাগিয়ে গেট করা হয়েছে। তার সাথে রঙিন কাপড়ে সুন্দর কারুকাজ। পালকি চড়ে বর এলো। দুই পক্ষের মধ্যে চলল ধাঁধার পাল্লা। না জিতলে বরকে বাড়িতে আসতে দেওয়া হবে না। অনেক সময় ধরে চলল। কিন্তু না, কোনো পক্ষই কম নয়। হারার নাম নেই কারো।

দাদু ভাই এগিয়ে গিয়ে বরকে মানে পাগড়ি পরা দুলাভাইকে নিয়ে এলেন। হাতে রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন দুলাভাই। এখন ভাবতে গেলে খুব হাসি পায়। আর সেদিন বুবু যখন পালকিতে উঠে তার শ্বশুরবাড়ি চলে যায় খুব কেঁদেছিলাম।

প্রতিদিন তিনবার রান্নার পর প্লেটে খাবার নিয়ে মায়ের স্নেহভরা ডাক, এই স্কুল হোস্টেলে নেই। ঘড়ি দেখে নিজেকেই যেতে হয় ডাইনিং টেবিলে। এখন আমি মায়ের স্নেহের ছায়া ছেড়ে অনেক দূরে শহরের স্কুলের হোস্টেলে থাকি। হাই স্কুলে পড়ি। অনেক বড় হয়ে গেছি কারণ আমাকে অনেক বড় হতে হবে। মা-বাবার স্বপ্ন আমি পড়ালেখা শিখে প্রকৃত মানুষ হব। তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করব। তাই স্নেহ, মায়া আর স্মৃতির ফাঁদে বাঁধা পড়লে চলবে না।

সামনে চলার শক্তি: ফেলে আসা দিনগুলো ফিরে আসবে না। তারপরও মানুষ ফেলে আসা দিনে ফিরে যেতে চায়। আমার ফেলে আসা দিনগুলোও আমাকে দারুণভাবে ভাবায়, আনন্দ আর বেদনার মাঝে জড়িয়ে রাখে। এখনকার দিনগুলো একসময় অতীত হবে। তাই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে চলার শক্তি খুঁজে ফিরি সবসময়।

উপসংহার: আমার অতীত দিনগুলোকে ফেলে আসা দিন বললেও ফেলে আর আসতে পারলাম কই! আমার মনের ফ্রেমে বন্দি হয়ে আছে সেই দিনগুলো। আমার জীবনের সাথে মিশে আছে। আমি যখন যেখানে যাচ্ছি তারাও আমার সাথে সাথে চলছে। কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছি না। হয়তো কোনো দিন পারবও না। কারণ সেই দিনগুলো আমার জীবনেই অংশ। তার সাথে মিলিয়েই গড়ে উঠছে আমার ভবিষ্যৎ। অতীতকে ভুলে ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তা করা অসম্ভব।

তাই আমি আমার ফেলা আসা দিনগুলোর স্মৃতিগুলো খুব যতেœর সাথে মনের মাঝে সংরক্ষণ করছি। সেই স্মৃতির শক্তিতে আগামী দিনের মজবুত ভিত গড়ার প্রত্যাশাকে লালন করে পথ চলছি।
Share:

একটি ঐতিহাসিক স্থান অথবা, একটি দর্শনীয় স্থান | রচনা

একটি ঐতিহাসিক স্থান

অথবা,

একটি দর্শনীয় স্থান

সূচনা: গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগত কারণে ইতিহাসে মর্যাদা পাওয়া যে কয়টি স্থান বাংলাদেশে রয়েছে তার মধ্যে পাহাড়পুর অন্যতম। এটি বাংলাদেশের এমনকি দুনিয়ার একটি বিখ্যাত স্থান, যা মূলত একটি সুপ্রাচীন বৌদ্ধবিহার। পাল আমলের গঠিত এই বৌদ্ধবিহার ইতিহাসকে বুকে ধরে এটি আজও দাঁড়িয়ে আছে।

অবস্থান: পাহাড়পুর বিহারটি বর্তমান রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার ‘পাহাড়পুর’ গ্রামে অবস্থিত। এর আরেক নাম ‘সোমপুর বিহার’ বা ‘সোমপুর মহাবিহার’।

আবিষ্কারের ইতিহাস: আজ থেকে প্রায় ১৪শ বছর আগে বিহারটি নির্মাণ করা হয়। রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল এটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সময় এটি খালি পড়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়নি।

একটি ঐতিহাসিক স্থান অথবা, একটি দর্শনীয় স্থান | রচনা

অনেকে মনে করেন, যুগ যুগ ধরে উড়ে আসা ধুলোবালি ও মাটি এর চারদিকে জমতে থাকার কারণে একসময় মাটির স্তূপে ঢাকা পড়ে এটি পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় ‘পাহাড়পুর’। দীর্ঘকাল পরে ১৮৭৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এটি আবিষ্কার করেন।

নির্মাণশৈলী ও বিবরণ: সুপ্রাচীন এ বিহার এলাকাটি প্রায় ৪০ একর জায়গাজুড়ে লালচে মাটির ভূমিতে বিস্তৃত। ২৭ একর জমির ওপর এর বিশাল দালান। মাটির নিচের অংশে এটি চারকোণা আকারের। বাইরের দেয়ালের গায়ে পোড়ামাটি দিয়ে নানা রকম ফুল-ফল, পাখি, পুতুল, মূর্তি ইত্যাদি বানানো আছে। উত্তর দিকের ঠিক মাঝখানে মূল দরজা।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

তারপরেই রয়েছে অনেকগুলো ছোট-বড় হলঘর। দেয়ালের ভেতরে সুন্দর সার বাঁধা ১৭৭টি ছোট ছোট ঘর। সামনের দিকে আছে লম্বা বারান্দা। বিহারটিতে আরও আছে পুকুর, স্নানঘাট, কূপ, স্নানঘর, রান্নাঘর, খাবার ঘর ও টয়লেট। সব মিলিয়ে বিহারটিতে ৮০০ মানুষের থাকার ব্যবস্থা ছিল।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থাপনা: বিহারের ভেতর বিশাল উঠানের মাঝখানে বড় এক সুন্দর মন্দির। ধাপে ধাপে উঁচু করে বড় মন্দিরটা বসানো হয়েছে। পোড়ামাটির দুই হাজার ফলকের চিত্র দিয়ে মন্দিরের বাইরে আর ভেতরে সাজানো। একই রকম ছোট ছোট মন্দির পুরো বিহারের নানা জায়গায় আছে। বিহারটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে দেয়ালের বাইরে একটা বাঁধানো ঘাট আছে।

ওটাকে বলা হয় ‘সন্ধ্যাবতীর ঘাট’। পাহাড়পুর বিহারের পাশে আছে দেখার মতো একটা জাদুঘর। সেখানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা আছে খনন করে পাওয়া অনেক পুরাতন আর দুর্লভ জিনিসপত্র। এই এলাকার একটু দূরেই আছে ‘সত্যপীরের ভিটা’। সেখানে অনেকেই ভক্তিভরে প্রার্থনা করে, মানত করে।

গুরুত্ব: বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসে পাহাড়পুর এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। ভারতবর্ষের বৃহত্তম বিহার হিসেবে এখানের বিহারটির রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। এখানে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

উপসংহার: পাহাড়পুর বিহারের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে এটি দাঁড়িয়ে আছে। এখানে এলে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। আমাদের সকলেরই উচিত একবারের জন্য হলেও পাহাড়পুর ঘুরে আসা।
Share:

আমার দেখা একটি মেলা অথবা, একটি লোকজ মেলা | রচনা

আমার দেখা একটি মেলা

অথবা,

একটি লোকজ মেলা

সূচনা: মেলা আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক। আক্ষরিকভাবে ‘মেলা’ শব্দের অর্থ হলো ‘মিলন’। মেলায় পরিচিতিজনদের সঙ্গে দেখা হয় এবং ভাববিনিময় হয়। একের সঙ্গে অন্যের সংযোগ ঘটে মেলায়। গ্রামীণ মেলাগুলোতে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির পসরা বসে। সেই সাথে পাওয়া যায় নির্মল বিনোদনের নানা উপায়।

আমার দেখা একটি মেলা অথবা, একটি লোকজ মেলা | রচনা

মেলার প্রচলন: অতি প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে মেলার প্রচলন ছিল। তবে পূর্বে মেলার আয়োজন করা হতো সুনির্দিষ্ট কিছু স্থানে এবং বৃহৎ পরিসরে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব স্থানেই মেলা বসে। কোনো কোনোটির আয়োজন অনেক বড়, আবার কোনোটির ক্ষুদ্র। তবে মেলার আনন্দ এখনো আগের মতোই রয়েছে।

মেলার উপলক্ষ্য: আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেলা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দুদের দুর্গাপূজা, রথযাত্রা, দোল উৎসব, জন্মাষ্টমী প্রভৃতি উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের ১০ই মহরমকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষেও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমার দেখা মেলার উপলক্ষ্য ছিল পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ।

মেলার স্থান: সাধারণত খোলা কোনো বৃহৎ স্থানে, যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে, তেমন স্থানেই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমি যে মেলাটি দেখেছি, সেটি বসেছিল নদীর ধারের বিশাল একটি বটগাছের নিচে। সেটি আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে প্রায়ই বিভিন্ন উপলক্ষে মেলা বসে।

মেলার প্রস্তুতি: পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের দিন। এদিনকে উপলক্ষ্য করে মেলার প্রস্তুতি ছিল বিশাল। অস্থায়ীভাবে বটগাছের চারদিকে দোকানপাট তৈরি করা হয়। একদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালার জন্য একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়। কিছু মানুষ মূল স্থানে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসার প্রস্তুতি নেয়। মঞ্চের চারদিকে মাইক লাগানো হয়।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

মেলার চিত্র: পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের দিন থেকে মেলা শুরু হয়। মেলা শুরু হতেই এতে প্রচুর লোকসমাগম দেখা যায়। দোকানগুলো ছিল নানা দ্রব্যসামগ্রীতে কানায় কানায় ভরা। মানুষ রঙিন পোশাক পরে মেলায় আসছিল। ছোট ছেলেমেয়েদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। তারা ভিড় করে মাটির খেলনা, বেলুন, বাঁশি আরও নানা জিনিসের দোকনে। আর নারীরা ভিড় করেন প্রসাধনসামগ্রী ও চুড়ির দোকানে। এ ছাড়া কাপড়ের দোকানেও তাঁদের ভিড় লক্ষ করা যায়।

মেলায় ছিল নানা বৈচিত্র্যময় খাবারের আয়োজন। ছোলাভাজা, বাদামভাজা, পাঁপরভাজা, ভুট্টার খই, কনক ধানের খই, মুড়কি, বাতাসা, হাওয়াই মিঠাই ও নানা রকমের মিষ্টি পাওয়া যাচ্ছিল। মেলার একদিকে একটি লোক সাপের খেলা দেখাচ্ছিল। তা দেখতে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ। এ ছাড়া ছোটখাটো একটা সার্কাসের আয়োজনও ছিল।

মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সন্ধ্যার সময় মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় শিল্পীদের গান পরিবেশনের পর শুরু হয় যাত্রাপালা। মঞ্চে ভেলুয়া সুন্দরীর পালা পরিবেশন করা হয়। ভেলুয়া সুন্দরীর দুঃখগাথা দেখে অনেকেই আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমেই দিনব্যাপী এই মেলাটর সমাপ্তি টানা হয়।

মেলার তাৎপর্য: এ ধরনের গ্রামীণ মেলায় মানুষের সম্প্রীতির এক বন্ধন তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে তৈরি জিনিসের একটি প্রদর্শনী হয় মেলায়। শহুরে মানুষ তার নিজের শেকড় সম্পর্কে জানতে পারে মেলায় এসে। শুধু তাই নয়, এখানে অর্থনৈতিক বিষয়ও যুক্ত থাকে। ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য মেলার ওপর নির্ভর করে। অনেকে মেলাকে ঘিরে গোটা বছরের বিকিকিনির বড় পরিকল্পনাও করে থাকে।

উপসংহার: বাঙালি সংস্কৃতির বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে লোকজ মেলা। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার প্রথা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। গ্রামীণ এই মেলাটি আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। আমাদের লোকজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি মেলায় গিয়ে।
Share:

বর্ষাকাল | রচনা

বর্ষাকাল


সূচনা:
সকাল দুপুর
টাপুর টুপুর
রিম-ঝিমা-ঝিম বৃষ্টি।
আকাশ উপুড়
ঝাপুর ঝুপুর
বন্ধ চোখের দৃষ্টি।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সাজে। গ্রীষ্মের পরই বর্ষার আগমন ঘটে। আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল। ঋতুবৈচিত্র্যের এই দেশে এ সময় বাংলা লাভ করে এক ভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

বর্ষার আবহাওয়া: বর্ষাকালে আকাশ ঢাকা থাকে কালো মেঘে। মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে ওঠে। ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। একটানা কয়েক দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বয়। বিদ্যুৎ চমকায়, কখনো প্রবল ঝড় হয়। টানা বর্ষণের ফলে অনেক সময় বন্যা হয়।

বর্ষার প্রকৃতি: বর্ষার আগমনে প্রকৃতি থেকে মুছে যায় গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি। গাছপালা যেন প্রাণ ফিরে পায়। মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর, নদী-নালা পানিতে ডুবে যায়। নদীতে ভেসে চলে পালতোলা নৌকা, ডিঙি আর কলাগাছের ভেলা। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক স্থানে লোকজনের চলাচলে খুবই সমস্যা হয়।

বর্ষার ফুল: বর্ষাকালে আমাদের ঝিলে-বিলে ফোটে পদ্ম, শাপলা, কলমিসহ কত ধরনের ফুল। ডাঙায় ফোটে কদম, হিজল, কেয়া, গন্ধরাজ, বেলি ইত্যাদি। বৃষ্টির জলে ভিজে এসব ফুল সজীব হয়ে যায়। মনে হয় চারদিক জুড়ে যেন তখন ফুলের মেলা বসে।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

বর্ষার ফল: বর্ষাকালে এ দেশে হরেক জাতের ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাম, পেয়ারা, আমড়া, লটকন, আতা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি। এসব ফল বর্ষার বৈশিষ্ট্যকে স্বতন্ত্রভাবে তুলে ধরে।

বর্ষার অবদান: গ্রীষ্মের রুক্ষতার পর বর্ষা যেন নিয়ে আসে প্রাণের স্পন্দন। এ সময় প্রকৃতি যেন ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়। এ সময় নদীর পানির সাথে আসা পলিমাটি জমির উর্বরতা বাড়ায়। ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

সাহিত্য সংস্কৃতিতে বর্ষার অবদান: বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বর্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বর্ষা যেমন প্রকৃতিকে করেছে সজীব তেমনি মানুষের মনকেও করেছে সরস। বর্ষার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক কবি-সাহিত্যিকই রচনা করেছেন গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রভৃতি। প্রাচীন কবি জয়দেব থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত অনেক কবি সাহিত্যিকই মুগ্ধ হয়েছেন বর্ষার সৌন্দর্যে।

বর্ষাকাল | রচনা

বর্ষা যেমন প্রকৃতিকে সিক্ত করেছে রসের ধারায় তেমনি কবিদের সিক্ত করেছে ভাবরসের ধারায়। তাই তো কবিগুরু বলেছেন-
“এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বারিষায়।”

উপসংহার: কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বর্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঋতু। এটি রূপবৈচিত্র্যে তুলনাহীন। ভালোবাসার উচ্চ স্পর্শে প্রকৃতির মাঝে জাগে প্রাণের স্পন্দন। অতি বৃষ্টির কারণে বন্যা হওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে বর্ষাকাল অবশ্যই আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
Share:

বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা | রচনা

বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা

[কু. বো. ১১, ব. বো. ১০]

ভূমিকা: বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে অভাবনীয় উন্নতি, প্রগতি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। বিজ্ঞানের যেসব আবিষ্কার মানুষকে সভ্যতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে সহায়তা করেছে তার অন্যতম হলো ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত গতিময়তার এক মাইলফলক এই ইন্টারনেট।

বর্তমান বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির কর্মকাণ্ডকে এটি এমন এক সুতোয় গেঁথেছে যে, সে সুতো ছিঁড়ে গেলে হয়তো সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়বে।

বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা | রচনা

ইন্টারনেট কী: ইন্টারনেট হলো ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস। অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী সুবিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেট হলো কম্পিউটারের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, যাকে ইংরেজিতে বলা যায়- World Wide Electronic Network. ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের কম্পিউটার অতি দ্রুততার সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।

ইন্টারনেট উদ্ভাবনের ইতিহাস: ইন্টারনেট উদ্ভাবনের প্রাথমিক কারণ ছিল সামরিক। বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই পরাশক্তির সমরবিশারদরাই পারমাণবিক বোমার ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাদের সন্দেহ ছিল ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

এজন্য যোগাযোগ মাধ্যমকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার চিন্তায় টেলিফোনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইন্টারনেট উদ্ভাবন করা হয়। মার্কিন সামরিক সংস্থা ১৯৬৯ সালে প্রথম ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। তখন এটি পরিচিত ছিল ‘MILNET নামে।

এ প্রযুক্তিকে আরও জনকল্যাণমুখী করে তোলার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া হলে তারা শিক্ষা, গবেষণা এবং তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

তখন শিক্ষাজগতে এর নামকরণ হয় ‘অ্যাপারনেট'। পরবর্তীকালে এটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, যা বর্তমানে ইন্টারনেট নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ: ব্যবহারকারীরা দুভাবে ইন্টারনেটের গ্রাহক হতে পারে। প্রথমটি হলো অনলাইন ইন্টারনেট। টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারে ইন্টারনেটের অন্য যেকোনো সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যুক্ত করার পদ্ধতিকে অনলাইন ইন্টারনেট বলা হয়। তাতে ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় অন্য যেকোনো প্রোভাইডারের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে।

এছাড়াও IPACCES পদ্ধতিতে সরাসরি অনলাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। দ্বিতীয় হলো অফলাইন ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকরা নিকটবর্তী কোনো সার্ভারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বলেই এটাকে অফলাইন ইন্টারনেট বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে গ্রাহকরা কম খরচে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতি: ইন্টারনেটের ব্যবহার পদ্ধতি বিভিন্ন রকম। যেমন-
ক. ওয়েব: ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে যে তথ্য রাখা হয়েছে সেগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি।

খ. চ্যাট: চ্যাটের সাহায্যে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলা যায়।

গ. ই-মেইল: এ পদ্ধতি হচ্ছে সংবাদ আদান-প্রদানের এক সহজ ব্যবস্থা। এ পদ্ধতিতে অতিদ্রুত তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব।

ঘ. নেট নিউজ: এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটে সংরক্ষিত সংবাদ যেকোনো সময় উন্মুক্ত করা যায়।

ঙ. ই-ক্যাশ: ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ই-ক্যাশ পদ্ধতি বলে।

চ. আর্কি: আর্কি হচ্ছে নেটওয়ার্ক তথ্যসেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত একটি পদ্ধতি, যা তথ্যগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচি আকারে সমন্বয় করতে সক্ষম।

ইন্টরনেট ব্যবহারের সুফল: ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নানা রকম কাজ অতি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে পারি। তবে ইন্টারনেটে একেক রকম কাজ করার জন্য একেক রকম সফ্টওয়্যারের (Software) প্রয়োজন হয়। যেমন Net News protocol-এর মাধ্যমে আমরা অতি সহজে ও দ্রুততার সাথে বিশ্বের যেকোনো দেশের খবরাখবর জানতে পারি।

Telenet ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা অতি দ্রুত দেশ-বিদেশের যেকোনো স্থানে অবস্থানরত আপনজনের সাথে কথা বলতে পারি বা যেকোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। File transfer protocol ব্যবহার করে আমরা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারের ফাইল আদান-প্রদান করতে পারি। Internet relay chat protocol ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন স্থানে বসে বিভিন্নজনের সাথে গল্পগুজব করতে পারি, আড্ডা দিতে পারি।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

E-mail ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ধরনের কাজকর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত, গবেষণা-প্রযুক্তি, শিক্ষা-দীক্ষাসহ সব কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেটের আশীর্বাদে আমরা ঘরে বসেই এখন বিশ্বের যেকোনো বড় বড় লাইব্রেরির বইপত্র পড়তে পারি, দুষ্প্রাপ্য তথ্যাদি জানতে পারি। এর সাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদন করা যায়।

ঘরে বসেই আমরা যেকোনো দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারি। অর্থাৎ, বর্তমান বিশ্বে আধুনিক জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট।

ইন্টারনেটের অপকারিতা: ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের যেমন অসংখ্য সুবিধা বা ভালো দিক রয়েছে, তেমনই কিছু কিছু অসুবিধা বা খারাপ দিকও রয়েছে। যেমন এর মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, জুয়া খেলা, ব্লাকমেলিং করা, ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে মানুষের বিবিধ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেটের এই নেতিবাচক ব্যবহারের বিষয়টি নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। তাই এর খারাপ দিকের চেয়ে ভালো দিকগুলোই অধিক গ্রহণযোগ্য ও বিশেষভাবে বিবেচ্য।

উপসংহার: উন্নত জীবন ও বিশ্বব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বের প্রায় কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো অধিকাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে এবং মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আরও উন্নত ও সুখী সমৃদ্ধ।
Share: