লালসালু উপন্যাসের চরিত্র-সৃষ্টি ও নামকরণের সার্থকতা pdf download

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বাংলা সহপাঠ গাইড 
উপন্যাস 
লালসালু 
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

The importance of character creation and naming in Lalsalu novel pdf download.
লালসালু উপন্যাসের কাহিনি-সংক্ষেপ, প্রধান চরিত্র ও নামকরণের সার্থকতা গাইড

ঔপন্যাসিক-পরিচিতি:

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার। জীবন-সন্ধানী ও সমাজসচেতন এ সাহিত্য-শিল্পী চট্টগ্রাম জেলার ষোলশহরে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃনিবাস ছিল নোয়াখালীতে।

তাঁর পিতা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পিতার কর্মস্থলে ওয়ালীউল্লাহর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হয়। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনকে নানাভাবে দেখার সুযোগ ঘটে তাঁর, যা তাঁর উপন্যাস ও নাটকের চরিত্র-চিত্রণে প্রভূত সাহায্য করে। অল্প বয়সে মাতৃহীন হওয়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তারপর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ পড়ার জন্য ভর্তি হন।

কিন্তু ডিগ্রি নেওয়ার আগেই ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পিতার মৃত্যু হলে তিনি বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ‘দি স্টেট্স্ম্যান’-এর সাব-এডিটর নিযুক্ত হন এবং সাংবাদিকতার সূত্রে কলকাতার সাহিত্যিক মহলে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর রচনা প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান হওয়ার পর তিনি ঢাকায় এসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে সহকারী বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে করাচি বেতার কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন।

এরপর তিনি কূটনৈতিক দায়িত্বে নয়াদিল্লি, ঢাকা, সিডনি, করাচি, জাকার্তা, বন, লন্ডন এবং প্যারিসে নানা পদে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল প্যারিস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করার জন্য পাকিস্তান সরকারের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই অক্টোবর তিনি প্যারিসে পরলোক গমন করেন।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকর্ম সমগ্র বাংলা সাহিত্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। ব্যক্তি ও সমাজের ভেতর ও বাইরের সূক্ষ্ম ও গভীর রহস্য উদ্ঘাটনের বিরল কৃতিত্ব তাঁর। তাঁর গল্প ও উপন্যাসে একদিকে যেমন স্থান পেয়েছে কুসংস্কার ও অন্ধ-ধর্মবিশ্বাসে আচ্ছন্ন, বিপর্যস্ত, আশাহীন ও মৃতপ্রায় সমাজজীবন, অন্যদিকে তেমনি স্থান পেয়েছে মানুষের মনের ভেতরকার লোভ, প্রতারণা, ভীতি, ঈর্ষা প্রভৃতি প্রবৃত্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। কেবল রসপূর্ণ কাহিনী পরিবেশন নয়, তাঁর অভীষ্ট ছিল মানবজীবনের মৌলিক সমসার রহস্য উন্মোচন।

‘নয়নচারা’ (১৯৪৬) এবং ‘দুই তীর ও অন্যান্য গল্প’ (১৯৬৫) তাঁর গল্পগ্রন্থ এবং ‘লালসালু’ (১৯৪৮) ‘চাঁদের অমাবস্যা’ (১৯৬৪) ও ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ (১৯৬৮) তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ নিরীক্ষামূলক চারটি নাটকও লিখেছেন। সেগুলো হলো ‘বহিপীর’ ‘তরঙ্গভঙ্গ’, ‘উজানে মৃত্যু’ ও ‘সুড়ঙ্গ’।

‘লালসালু’র প্রকাশতথ্যঃ

‘লালসালু’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে। ঢাকা-র কমরেড পাবলিশার্স এটি প্রকাশ করে। প্রকাশক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার কথাবিতান প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই উপন্যাসটির ষষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই উপন্যাসটির দশম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। নওরোজ কিতাবিস্তান ‘লালসালু’ উপন্যাসের দশম মুদ্রণ প্রকাশ করে।

১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ‘লালসালু’ উপন্যাসের উর্দু অনুবাদ করাচি থেকে প্রকাশিত হয় 'Lal Shalu' নামে। অনুবাদক ছিলেন কলিমুল্লাহ।

১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘লালসালু’র ফরাসি অনুবাদ। L'arbre sans racins নামে প্রকাশিত হয় গ্রন্থটি অনুবাদ করেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্-র সহধর্মিণী অ্যান-ম্যারি-থিবো। প্যারিস থেকে এ অনুবাদটি প্রকাশ করে Edition's du Seuil প্রকাশনী। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে এ অনুবাদটির পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘লালসালু’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। 'Tree without Roots' নামে লন্ডনের Chatto and windus Ltd. এটি প্রকাশ করেন। ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ নিজেই এই ইংরেজি অনুবাদ করেন।

পরবর্তীকালে ‘লালসালু’ উপন্যাসটি জার্মান ও চেক ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

চরিত্র-সৃষ্টিঃ

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ যে অসাধারণ কুশলী শিল্পী তা তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসের চরিত্রগুলি বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। ‘লালসালু’ উপন্যাসের শৈল্পিক সার্থকতার প্রশ্নে সুসংহত কাহিনিবিন্যাসের চাইতে চরিত্র নির্মাণের কুশলতার দিকটি ভূমিকা রেখেছে অনেক বেশি। ‘লালসালু’ একদিক দিয়ে চরিত্র-নির্ভর উপন্যাস।

এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ। শীর্ণদেহের এই মানুষটি মানুষের ধর্মবিশ্বাস, ঐশী শক্তির প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য, ভয় শ্রদ্ধা, ইচ্ছা ও বাসনা-সবই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আর সমগ্র উপন্যাস জুড়ে এই চরিত্রকেই লেখক প্রাধান্য দিয়েছেন, বারবার অনুসরণ করেছেন এবং তার ওপরই আলো ফেলে পাঠকের মনোযোগ নিবন্ধ রেখেছেন। উপন্যাসের সকল ঘটনার নিয়ন্ত্রক মজিদ। তারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন চরিত্রের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। আর তাই মজিদের প্রবল উপস্থিতি অনিবার্য হয়ে পড়ে মহব্বতনগর গ্রামের সামাজিক পারিবারিক সকল কর্মকাণ্ডে।

মজিদ একটি প্রতীকী চরিত্র- কুসংস্কার, শঠতা, প্রতারণা এবং অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক সে। প্রচলিত বিশ্বাসের কাঠামো ও প্রথাবদ্ধ জীবনধারাকে সে টিকিয়ে রাখতে চায়, ওই জীবনধারার সে প্রভু হতে চায়, চায় অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হতে। এজন্য সে যেকোনো কাজ করতেই প্রস্তুত, তা যতই নীতিহীন বা অমানবিক হোক। একান্ত পারিবারিক ঘটনার রেশ ধরে সে প্রথমেই বৃদ্ধ তাহেরের বাবাকে এমন এক বিপাকে ফেলে যে সে নিরুদ্দেশ হতে বাধ্য হয়।

নিজের মাজারকেন্দ্রিক শক্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ অনুভব করে সে আওয়ালপুরের পির সাহেবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। ব্যাপারটি রক্তপাত পর্যন্ত গড়ায় এবং নাস্তানাবুদ পির সাহেবকে শেষ পর্যন্ত পশ্চাদপসরন করতে সে বাধ্য করে। সে খালেক ব্যাপারীকে বাধ্য করে তার সন্তান-আকাক্সক্ষী প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে। আর আক্কাস নামের এক নবীন যুবকের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়। এভাবেই মজিদ তার প্রভাব এবং প্রতিষ্ঠাকে নিরঙ্কুশ করে তোলে।

মহব্বতনগরে মজিদ তার প্রতাপ ও প্রতিষ্ঠা সুদৃঢ় করলেও এর ওপর যে আঘাত আসতে পারে সে বিষয়ে মজিদ অত্যন্ত সজাগ। সে জানে, স্বাভাবিক প্রাণধর্মই তার ধর্মীয় অনুশাসন এবং শোষণের অদৃশ্য বেড়াজাল ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। ফলে ফসল ওঠার সময় যখন গ্রামবাসীরা আনন্দে গান গেয়ে ওঠে তখন সেই গান তাকে বিচলিত করে। ওই গান সে বন্ধ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। রহিমার স্বচ্ছন্দ চলাফেরায় সে বাধা দেয়।

আক্কাস আলিকে সর্বসমক্ষে লাঞ্ছিত অপমানিত করে। মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও নিজের জাগতিক প্রতিষ্ঠার ভিতটিকে মজবুত করার জন্যে  এসবই আসলে তার হিসেবি বুদ্ধির কাজ। সে ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তার বিশ্বাস সুদৃঢ় কিন্তু প্রতারণা বা ভণ্ডামির মাধ্যমেই যেভাবেই হোক সে তার মাজারকে টিকিয়ে রাখতে চায়। এরপরও মাঝে মাঝে তার মধ্যে হতাশা ভর করে।

মজিদ কখনো কখনো তার প্রতি মানুষের অনাস্থা অবলোকন করে নিজের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একেকবার আত্মঘাতী হওয়ার কথা ভাবে। মাজার প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে কূট-কৌশল অবলম্বন করেছে তার সব কিচু ফাঁস করে দিয়ে সে গ্রাম ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবে।

প্রতিষ্ঠাকামী মজিদ স্বার্থপরতা, প্রতিপত্তি আর শোষণের প্রতিভূ। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠা লাভের পর নিঃসন্তান জীবনে সে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একপ্রকার শূন্যতা উপলব্ধি করে। এই শূন্যতা পূরণের অভিপ্রায়ে অল্পবয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করে সে। প্রথম স্ত্রী রহিমার মতো দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা ধর্মের ভয়ে ভীত নয়। এমনকি, মাজারভীতি কিংবা মাজারের অধিকর্তা মজিদ সম্পর্কেও সে কোনো ভীতি বোধ করে না।

তারুণ্যের স্বভাবধর্ম অনুযায়ী তার মধ্যে জীবনের চঞ্চলতা ও উচ্ছলতা অব্যাহত থাকে। মজিদ তাকে ধর্মভীতি দিয়ে আয়ত্ত করতে ব্যর্থ হয়। জমিলা তার মুখে থুথু দিলে ভয়ানক ক্রুদ্ধ মজিদ তাকে কঠিন শাস্তি দেয়। তার মানবিক অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র না হয়ে তার ক্ষমতাবান সত্তাটি নিষ্ঠুর শাসনের মধ্যেই পরিতৃপ্তি খোঁজে।

রহিমা যখন পরম মমতায় মাজার ঘর থেকে জমিলাকে এনে শুশ্রুষা আরম্ভ করে তখন মজিদের হৃদয়ে সৃষ্টি হয় তুমুল আলোড়ন। মজিদের মনে হয়, ‘মুহূর্তের মধ্যে কেয়ামত হবে। মুহূর্তের মধ্যে মজিদের ভেতরেও কী যেনো ওলটপালট হয়ে যাবার উপক্রম হয়।’ কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিতে সক্ষম হয়। নবজন্ম হয় না তার। মজিদ শেষ পর্যন্ত থেকে যায় জীবনবিরোধী শোষক এবং প্রতারকের ভূমিকায়।

মজিদ একটি নিঃসঙ্গ চরিত্র। উপন্যাসেও একাধিকবার তার ভয়ানক নৈঃসঙ্গ্যবোধের কথা বলা হয়েছে। তার কোনো আপনজন নেই যার সঙ্গে সে তার মনের একান্তভাব বিনিময় করতে পারে। কারণ, তাঁর সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক কেবলই  বাইরের-কখনো প্রভাব বিস্তার বা নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আরোপের-কখনোই অন্তরের বা আবেগের নয়। সে কখনোই আবেগী হতে পারে না। কারণ তার জানা আছে আন্তরিকতা ও আবেগময়তা তার পতনের সূচনা করবে। আর তাতেই ধসে পড়তে হতে পারে তিলতিল করে গড়ে তোলা তার মিথ্যার সাম্রাজ্য।

এসব সত্ত্বেও মজিদ যে আসলেই দুর্বল এবং নিঃসঙ্গ-এই সত্যটি ধরা পড়ে রহিমার কাছে। ঝড়ের রাতে জমিলাকে শাসনে ব্যর্থ হয়ে মজিদ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কীভাবে তরুণী বধূ জমিলাকে সে নিয়ন্ত্রণে রাখবে সেই চিন্তায় একেবারে দিশেহারা বোধ করে। এরূপ অনিশ্চয়তার মধ্যেই জীবনে প্রথম হয়ত তার মধ্যে আত্মপরাভবের সৃষ্টি হয়।

নিজের শাসক-সত্তার কথা ভুলে গিয়ে রহিমার সামনে মেলে ধরে ব্যর্থতার আত্মবিশ্লেষণমূলক স্বরূপ: “কও বিবি কী করলাম? আমার বুদ্ধিতে জানি কুলায় না। তোমারে জিগাই, তুমি কও?” ওই ঘটনাতেই রহিমা বুঝতে পারে তার স্বামীর দুর্বলতা কোথায় এবং তখন ভয়, শ্রদ্ধা এবং ভক্তির মানুষটি তার কাছ পরিণত হয় করুণার পাত্রে।

খালেক ব্যাপারী ‘লালসালু’ উপন্যাসের অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র। ভূ-স্বামী ও প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী হওয়ায় তাঁর কাঁধেই রয়েছে মহব্বতনগরের সামাজিক নেতৃত্ব। উৎসব-ব্রত, ধর্মকর্ম, বিচার-সালিশসহ এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যেখানে তার নেৃতত্বে ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত নয়। নিরাক-পড়া এক মধ্যাহ্নে গ্রামে আগত ভণ্ড মজিদ তার বাড়িতেই আশ্রয় গ্রহণ করে। একসময় যখন সমাজে মজিদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় তখন খালেক ব্যাপারী ও মজিদ পরস্পর বজায় রেখেছে তাদের অলিখিত যোগসাজশ।

অবশ্য নিয়মও তাই। ভূ-স্বামী ও তথাকথিত ধর্মীয় মোল্লারপুরোহিতদের মধ্যে স্ব-স্ব প্রয়োজনে অনিবার্যভাবে গড়ে ওঠে নিবিড় সখ্য। কারণ দু’দলের ভূমিকাই যে শোষকের। আসলে মজিদ ও খালেক ব্যাপারী দুজনেই জানে: ‘অজান্তে অনিচ্ছায়ও দুজনের পক্ষে উলটা পতে যাওয়া সম্ভব নয়। একজনের আছে মাজার, আরেকজনের জমি-জোতের প্রতিপত্তি।

সজ্ঞানে না জানলেও তারা একাট্টা, পথ তাদের এক। হাজার বছর ধরেই শোষক শ্রেণির অপকর্মের চিরসাথী ধর্মব্যবসায়ীরা। তারা সম্মিলিত উদ্যোগে সমাজে টিকিয়ে রাখে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার। শিক্ষার আলো,  মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও অধিকারবোধ সৃষ্টির পথে তৈরি করে পাহাড়সম বাধা-যাতে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত থাকে বিকশিত মানব চেতনা থেকে।

এরই ফলে সফল হয় শোষক। শুধু ভূস্বামী শোষক কেন, যে কোনো ধরনের শোষকের ক্ষেত্রে একথা সত্য। তারা শোষণের স্বার্থে ধর্মব্যবসায়ীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। একারণেই মজিদের সকল কর্মকাণ্ডে নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছে খালেক ব্যাপারী। এমনকি মজিদের প্রভাব প্রতিপত্তি মেনে নিয়েছে অবনত মস্তকে; যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিজের একান্ত প্রিয় প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবিকে তালাক দেয়া।
 
‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খালেক ব্যাপারী উপস্থিতি থাকলেও সে কখনোই আত্মমর্যাদাশীল ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারেনি। আমরা জানি যে, ধর্মব্যবসায়ীরা আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হিসেবে জাহির করে সাধারণ মানুষের ওপর প্রভুত্ব করে। ফলে শোষকরাও তাদের অধীন হয়ে যায়।

কিন্তু শোষকদের হাতে যেহেতু থাকে অর্থ সেহেতু তারাও ধর্মব্যবসায়ীদের অর্থের শক্তিতে অধীন করে ফেলে। কিন্তু এখানে খালেক ব্যাপারীর চরিত্রে আমরা সে দৃঢ়তা কখনোই লক্ষ করি না। বরং প্রায় সব ক্ষেত্রেই মজিদের কথার সুরে তাকে সুর মেলাতে দেখা যায়। ফলে মজিদ চরিত্রের সঙ্গে সে কখনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়নি। তার অর্থের শক্তি সবসময় মাজার-শক্তির অধীনতা স্বীকার করেছে। তাঁর এই চারিত্রিক দৌর্বল্য ইতিহাসের ধারা থেকেও ব্যতিক্রমী।

মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা ‘লালসালু’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র। লম্বা চওড়া শারীরিক শক্তিসম্পন্না এই নারী পুরো উপন্যাস জুড়ে স্বামীর ব্যক্তিত্বের কাছে অসহায় হয়ে থাকলেও তার চরিত্রের একটি স্বতন্ত্র মাধুর্য আছে। লেখক নিজেই তার শক্তিমত্তাকে বাইরের খোলস বলেছেন, তাকে ঠাণ্ডা ভীতু মানুষ বলে পরিচিতি দিয়েছেন। তার এই ভীতি-বিহবল, নরম কোমল শান্ত রূপের পেছনে সক্রিয় রয়েছে ঈশ্বর-বিশ্বাস, মাজার-বিশ্বাস এবং মাজারের প্রতিনিধি হিসেবে স্বামীর প্রতি অন্ধ আনুগত্য ও ভক্তি। ধর্মভীরু মানুষেরা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের কারণে যে কোমল স্বভাবসম্পন্ন হয় রহিমা তারই একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

সমগ্র মহব্বতগরের বিশ্বাসী মানুষদেরই সে এক যোগ্য প্রতিনিদি। স্বামী সম্পর্কে মাজার সম্পর্কে তার মনে কোনো প্রশ্নের কাজকর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং তার নিজের সকল গার্হস্থ্য কর্ম প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই সে একান্তভাবে সৎ এবং নিয়মনিষ্ঠ। মাজার নিয়ে যেমন রয়েছে তার ভীতি ও শক্তি, তেমনি এই মাজারের প্রতিনিধির স্ত্রী হিসেবেও রয়েছে তার মর্যাদাবোধ। এই মর্যাদাবোধ থেকেই সে গ্রামের মাজার ও মাজারের প্রতিনিধি সম্পর্কে গুণকীর্তন করে, তার শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস তুলে ধরে এবং এভাবে সে নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

হাসুনি মায়ের সমস্যা যখন সে তার স্বামীর কাছে জানায় কিংবা আমেনা বিবির সংকট মুহূর্তে তার পাশে গিয়ে অবস্থান নেয় তখন তার মধ্যে মাজার-প্রতিনিধির স্ত্রী হিসেবে গর্ববোধ কাজ করে। এ গর্ববোধ ছাড়াও এখানে সক্রিয় থাকে নারীর প্রতি তার একটি সহানুভূতিশীল মন। রহিমার মনটি স্বামী মজিদের তুলনায় একেবারেই বিপরীতমুখী।

মজিদের কর্তৃত্বপরায়ণতা, মানুষের ধর্মভীরুতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রযোগের দুরভিসন্ধি প্রভৃতির বিপরীতে রহিমার মধ্যে সক্রিয় থাকে কোমল হৃদয়ের এক মাতৃময়ী নারী। সেটি জমিলা প্রসঙ্গে লক্ষ করা যায়। তাদের সন্তানহীন দাম্পত্য-জীবনে মজিদ যখন দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব করে তখন রহিমার মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ারই সৃষ্টি হয় না। এর মূলে সক্রিয় তার স্বামীর প্রতি অটল ভক্তি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাস্তবতার প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ এবং সরল ধর্মনিষ্ঠা।

কিন্তু জমিলা যখন তার সতিন হিসেবে সংসারে আসে তখনও সামাজিক গার্হস্থ্য বাস্তবতার কারণে যেটুকু ঈর্ষা সঞ্চারিত হওয়া প্রয়োজন ছিল তাও অনুপস্থিত থাকে তার ওই হৃদয়সংবেদী মাতৃমনের কারণে। জমিলা তার কাছে সপত্নী হিসেবে বিবেচিত হয় না বরং তার মাতৃহৃদয়ের কাছে সন্তানতুল্য বলে বিবেচিত হয়। এ পর্যায়ে জমিলাকে কেন্দ্র করে তার মাতৃত্বের বিকাশটি পূর্ণতা অর্জন করে যখন মজিদ জমিলার প্রতি শাসনের খড়ুগ তুলে ধরে।

স্বামীর সকল আদেশ নির্দেশ উপদেশ সে যেভাবে পালন করেছে সেইভাবে জমিলাও পালন করুক সেটি সেও চায় কিন্তু সে পালনের ব্যাপারে স্বামীর জোর-জবরদস্তিকে সে পছন্দ করে না। স্বামীর প্রতি তার দীর্ঘদিনের যে অটল ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য এক্ষেত্রে তাতে ফাটল ধরে।

এক্ষেত্রে তার ধর্মভীরুতাকে অতিক্রম করে মুখ্য হয়ে ওঠে নিপীড়িত নারীর প্রতি তার মাতৃহৃদয়ের সহানুভূতি। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে যাকে মনে হয়েছিল ব্যক্তিত্বহীন, একমাত্র আনুগত্যের মধ্যেই ছিল যার জীবনের সার্থকতা, সেই নারীই উপন্যাসের শেষে এসে তার মাতৃত্বের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিত্বময় হয়ে ওঠে। রহিমা চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে এখানেই লেখকের সার্থকতা।

নিঃসন্তান মজিদের সন্তান-কামনাসূত্রে তার দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে আগমন ঘটে জমিলার। শুধু সন্তান-কামনাই তার মধ্যে একমাত্র ছিল কীনা, নাকি তরুণী স্ত্রী-প্রত্যাশাও তার মাঝে সক্রিয় ছিল তা লেখক স্পষ্ট করেননি। কিন্তু বাস্তবে আমরা লক্ষ করি তার গৃহে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে যার আগমন ঘটে সে তার কন্যার বয়সী এক কিশোরী। জমিলার চরিত্রে কৈশোরক চপলতাই প্রধান।

এই চপলতার কারণেই দাম্পত্য সম্পর্কের গাম্ভীর্য তাকে স্পর্শ করে না। এমনকি তার সপত্নী রহিমাও তার কাছে কখনো ঈর্ষার বিষয় হয়ে ওঠে না। রহিমা তার কাছে মাতৃসম বড়বোন হিসেবেই বিবেচিত হয় এবং তার কাছ থেকে সে তদ্রূপ স্নেহ আদর পেয়ে অভিমান-কাতর থাকে। রহিমার সামান্য শাসনেও তার চোখে জল আসে। তার ধর্মকর্ম পালন কিংবা মাজার-প্রতিনিধির স্ত্রী হিসেবে তার যেরূপ গাম্ভীর্য রক্ষা করা প্রয়োজন সে-ব্যাপারে তার মধ্যে কোনো সচেতনতাই লক্ষ করা যায় না ওই কৈশোরক চপলতার কারণে।

প্রথম দর্শনে স্বামীকে তার যে ভাবী শ্বশুর বলে প্রতীয়মান হয়েছিল, বিয়ের পরেও সেটি তার কাছে হাস্যকর বিষয় হয়ে থাকে ওই কৈশোরক অনুভূতির কারণেই। ধর্মপালন কিংবা স্বামীর নির্দেশ পাঅন উভয় ক্ষেত্রেই তার মধ্যে যে দায়িত্ববোধ ও সচেতনতার অভাব তার মূলে রয়েছে এই বয়সোচিত অপরিপক্বতা।

মাজার সম্পর্কে রহিমার মতো সে ভীতিবিহবল নয় কিংবা মাজারের পবিত্রতা সম্পর্কেও নয় সচেতন এবং এই একই কারণে মাজারে সংঘটিত জিকির অনুষ্ঠান দেখার জন্য তার ভিতরে কৌতূহল মেটাতে কোথায় তার অন্যায় ঘটে তা উপলব্ধির ক্ষমতাও তার হয় না। সুতরাং স্বামী মজিদ যখন এসবের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে তার অনুচিত কর্ম সম্পর্কে তাকে সচেতন করে, তখন সেসবের কিছু তার কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় না।

সুতরাং তাকে শাসনের ব্যাপারে মজিদের মুখে যে সে থুথু নিক্ষেপ করে সেটাও তার মানসিক অপরিপক্বতারই ফল। এমনকি মাজারে যখন তাকে বন্দি করে রেখে আসে মজিদ তখন সেই অন্ধকারের নির্জনে ঝড়ের মধ্যে ছোট মেয়েটি ভয়ে মারা যেতে পারে বলে রহিমা যখন আতঙ্কে স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তখনও জমিলাকে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখা যায়। এরূপ আচরণের মূলেও সক্রিয় থাকে তার স্বল্প বয়সোচিত ছেলেমানুষি, অপরিপক্বতা।

অর্থাৎ এই চরিত্রের মধ্য দিয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ‘লালসালু’ উপন্যাসে একটি প্রাণময় সত্তার উপস্থিতি ঘটিয়েছেন। শাস্ত্রীর ধর্মীয় আদেশ নির্দেশের প্রাবল্যে পুরো মহব্বতনগর গ্রামে যে প্রাণময়তা ছিল রুব্ধ, জমিলা যেন সেখানে এক মুক্তির সুবাতাস। রদ্ধতার নায়ক যে মজিদ, ঔপন্যাসিক সেই মজিদের গৃহেই এই প্রাণময় সত্তার বিকাশ ঘটিয়েছেন।

একদিকে সে নারী অন্য দিকে সে বয়সে তরুণী- এই দুটিই তার প্রাণধর্মের এক প্রতীকী উদ্ভাসন। এ উপন্যাসে মজিদের মধ্য দিয়ে যে ধর্মতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছে তার পেছনে পুরুষতন্ত্রও সক্রিয়। সুতরাং নির্জীব ধর্মতন্ত্রের বিরুদ্ধে সজীব প্রাণধর্মের জাগরণের ক্ষেত্রে এ নারীকে যথাযথভাবেই আশ্রয় করা হয়েছে। জমিলা হয়ে উঠেছে নারীধর্ম, হৃদয়ধর্ম বা সজীবতারই এক যোগ্য প্রতিনিধি।

‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর পরিবার ছাড়া আরেকটি পরিবারের কাহিনি গুরুত্ব লাভ করেছে। সেটি তাহের-কাদের ও হাসুনির মায়ের পরিবার। এদের পিতামাতার কলহ এবং তাই নিয়ে মজিদের বিচারকার্যের মধ্য দিয়ে তাহের-কাদেরের পিতা চরিত্রটি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। উপন্যাসের এটিই একমাত্র চরিত্র যে মজিদের আধ্যাত্মিক শক্তির ব্যাপারে অবিশ্বাস পোষণ করেছে, বিচার সভায় প্রদর্শন করেছে অনমনীয় দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্ব।

তার নির্ভীক যুক্তিপূর্ণ ও উন্নত-শির অবস্থান নিশ্চিতভাবে ব্যতিক্রমধর্মী। সে মজিদের বিচারের রায় অনুযায়ী নিজ মেয়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে ঠিকই কিন্তু তা মজিদের প্রতি শ্রদ্ধা বা আনুগত্যবশত নয়। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই সে এ কাজ করেছে। তবে এর পরপরই তার নিরুদ্দেশ গমনের ঘটনায় এই চরিত্রের প্রবল ব্যক্তিত্বপরায়ণতা ও আত্মমর্যাদাবোধের পরিচয় ফুটে ওঠে। এই আচরণের মধ্য দিয়ে মজিদের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদও ব্যক্ত হয়েছে।

‘লালসালু’ উপন্যাসের কাহিনি অত্যন্ত সুসংহত ও সুবিন্যস্ত। কাহিনি-গ্রন্থনায় লেখক অসামান্য পরিমিবোধের পরিচয় দিয়েছেন। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনির বিভিন্ন পর্যায়ে নাট্যিক সংবেদনা সৃষ্টিকে লেখক প্রদর্শন করেছেন অপূর্ব শিল্পনৈপুণ্য। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা, ধর্মতন্ত্র ও ধর্মবোধের দ্বন্দ্ব, ধর্মতন্ত্র-আশ্রয়ী ব্যবসাবৃত্তি ও ব্যক্তির মূলীভূত হওয়ার প্রতারণাপূর্ণ প্রয়াস, অর্থনৈতিক ক্ষমতা-কাঠামোর সঙ্গে ধর্মতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য নাড়ির যোগ প্রভৃতি বিষয়কে লেখক এক স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত ভাষায় রূপায়ণ করেছেন।

এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র শেকড়হীন বৃক্ষপ্রতিম মজিদ, ধর্মকে আশ্রয় করে মহব্বনগরে প্রতিষ্ঠা-অর্জনে প্রয়াসী হলেও তার মধ্যে সর্বদাই কার্যকর থাকে অস্তিত্বের এক সূক্ষ্মতর সংকট। এরূপ সংকটের একটি মানবীয় দ্বন্দ্বময় রূপ সৃষ্টিকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সার্থকতা বিস্ময়কর।

লালসালু উপন্যাসের নামকরণের সার্থকতাঃ

নামকরণের সাথে যেকোনো শিল্পের রসপরিণতির একটা সরাসরি সম্পর্ক থাকে- কেননা, তাতে শিল্পীর পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। সুতরাং, উইলিয়াম শেকসপিয়র কথিত ‘নামে কিবা আসে যায়’- কথাটি অন্তত সাহিত্যের ক্ষেত্রে খাটে না; খাটে না বলেই তিনি তাঁর চরিত্রপ্রধান নাটকের নাম রেখেছেন চরিত্রের নাম অনুসারে, যেমন: ‘হ্যামলেট’, ‘ওথেলো’ ও ‘রোমিও জুলিয়েট’, ‘ম্যাকবেথ’ ইত্যাদি। অথচ, বিষয় অনুসারে তিনি যে নামকরণ করেননি এমন নয় যেমন: ‘মিড সামার নাইটস ড্রিম’, ‘দা টেম্পেস্ট ইত্যাদি।

বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে মূল চরিত্রের নাম অনুযায়ী উপন্যাসের নামকরণ করবার প্রচলনটা পুরনো। যেমন: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’। দ্বিতীয় ধারা হিসেবে আসে বিষয়বস্তু অনুযায়ী নামকরণ করার আগ্রহ। এই আগ্রহটাও অনেকটাই সেকেলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৌকাডুবি’ কিংবা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাসুনী বাঁকের উপকথা’র নামকরণ এই পদ্ধতিতে করা হয়েছে।

নামকরণের তৃতীয় সে পদ্ধতি সেটিই এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক। এটি বিষয়বস্তু নয় তবে তার ব্যঞ্জনা থেকে নামকরণ করা হয়ে থাকে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসের নামকরণ ব্যঞ্জনার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করেছিলেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ। ঔপন্যাসিক যদি কেন্দ্রীয় চরিত্রের নামে উপন্যাসটির নামকরণ করতে চাইতেন, তবে এ উপন্যাসের নাম দিতে পারতেন ‘মজিদ’। কিন্তু তিনি পুরনো পথে হাঁটেননি। বিষয়বস্তু অনুযায়ী নামকরণের পক্ষপাতীও যে তিনি ছিলেন না, তার প্রমাণ আমরা পাই। এ উপন্যাসের বিষয় পীরমাহাত্ম্য, মাজার পূজা, ধর্মের নামে প্রচলিত অন্ধ কুসংস্কার।

লক্ষণীয়, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিষয়নির্ভর নামকরণ করলে তাঁর উপন্যাসের নামের স্টাইল ‘বিষাদ সিন্ধু’, ‘অনল প্রবাহ’, ‘মহাশ্মশান’, ‘জমীদার দর্পণ’ ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’কে স্মরণ করিয়ে দিত। ওয়ালীউল্লাহ সেই সেকেলে পথেও হাঁটেননি। তিনি বেছে নিলেন ব্যঞ্জনা আধুনিক পদ্ধতি।

তিনি তাঁর উপন্যাসের নাম দিয়েছেন ‘লালসালু’। ‘সালু’ শব্দের অর্থ ‘লাল কাপড়’। সুপ্রাচীন কাল থেকে যুক্তিরহিত কারণ ছাড়াই এই সালু কাপড় পীরদের মাজারে টানানো থাকে। এ দেশের প্রচলিত হাজার হাজার কুসংস্কারের ভেতর এটিও একটি কুসংস্কার। এই সালু কাপড়ের নিচে ঢাকা পড়ে আছে হাজার বছরের বাঙালির মুক্তবুদ্ধি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সেটি টান মেরে ফেলে দিতে চেয়েছেন। লালসালু কাপড়ে ঢাকা মানুষগুলোর আসল চেহারাগুলোও তিনি তাঁর উপন্যাসে দেখিয়ে দিয়েছেন।

এ উপন্যাসের শেষে আমরা দেখি: জমিলার মেহেদি মাখা একটি পা মাজারের গায়ে লেগে আছে। এটি প্রতীকায়িত। লেখক জমিলাকে দিয়ে ভুয়া মাজার ও ভুয়া ধর্মব্যবসাকে তথা যুগ যুগ ধরে সমাজে প্রবহমান কুসংস্কারকে লাথি মেরেছেন। এ উপন্যাসের শেষে মজিদের পরাক্রম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। লেখক লালসালুর দৌরাত্ম্য যেকোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না- উপন্যাসের কাহিনিবিন্যাস তা-ই প্রমাণ করে।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে লালসালু কাপড়ে ঢাকা তথাকথিত মাজারকেন্দ্রিক সমাজ ও মানুষগুলোর আসল চেহারা আমাদের দেখাতে চেয়েছেন; অতঃপর টান মেরে ওই অশুভ লাল-সালু ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে শুভ-সুন্দর-মুক্ত আলোয় কুসংস্কারহীন আলোকিত সমাজ গড়ার প্রত্যয় গ্রহণ করেছিলেন বলে তিনি তাঁর উপন্যাসের নাম দিয়েছেন ‘লালসালু’। এই নামকরণ শিল্পসফল, সার্থক।
Share:

SSC পল্লিজননী কবিতার (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | নবম-দশম শ্রেণির গাইড

নবম-দশম শ্রেণি
বাংলা ১ম পত্র গাইড
কবিতা/পদ্য

পল্লিজননী
জসীমউদ্দীন

SSC Bangla 1st Paper Kobita
Polli Jononi
Palli Janani
Srijonshil
Question and Answer pdf download
পল্লিজননী কবিতার/পদ্যের সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর: বাংলা গাইড

১নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বাদশা বাবর কাঁদিয়া ফিরিছে, নিদ নাহি চোখে তাঁর
পুত্র তাঁহার হুমায়ুন বুঝি বাঁচে না এবার আর।
চারিধারে তাঁর ঘনায়ে আসিছে মরণ অন্ধকার।
ক. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় ছেলে মাকে কী যত্ন করে রাখার কথা বলেছে? ১ 
খ. ‘আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি’ - পথ্য না জোটার কারণ কী? ২
গ. উদ্দীপক কবিতাংশে ‘পল্লিজননী’ কবিতার যে দিকটি প্রতিফলিত তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. প্রতিফলিত দিকটিই ‘পল্লিজননী’ কবিতার সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে কি ? যুক্তিসহ প্রমাণ করো। ৪

১ এর ক নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
‘পল্লিজননী’ কবিতায় ছেলে মাকে তার লাটাই যত্ন করে রাখার কথা বলেছে।

১ এর খ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
দারিদ্র্যের কারণে মা তার রুগ্ণ ছেলের পথ্য জোটাতে পারেনি।
‘পল্লিজননী’ কবিতায় গ্রামের দুরন্ত ছেলেটি অসুস্থ হয়ে বিছানায় ছটফট করছে। তার মা দারিদ্র্যপীড়িত এক গ্রামীণ নারী। সামর্থ্য না থাকায় অসহায় মা আনন্দ আয়োজন দূরে থাক ওষুধ-পথ্য পর্যন্ত জোটাতে পারেনি।

১ এর গ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
‘পল্লিজননী’ কবিতায় বর্ণিত মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানের জন্য করুণ অভিব্যক্তির দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

কবি জসীমউদ্দীনের ‘পল্লিজননী’ কবিতায় এক রুগ্ণ সন্তানের শিয়রে বসা মমতাময়ী মায়ের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ ও পথ্য জোগাড় করতে না পারার গভীর মনঃকষ্ট কবিতায় উল্লেখ করা হয়েছে। মা পুত্রকে আদর করে আর সান্ত্বনা দিতে থাকে। রোগমুক্তির জন্য মানত করে। মায়ের মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে।

উদ্দীপকে উল্লিখিত বাদশা বাবর তাঁর অসুস্থ পুত্রের জন্য ব্যগ্র ব্যাকুল। সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তায় তাঁর চোখে ঘুম নেই। পুত্র হুমায়ুন বুঝি আর বাঁচবে না। মরণ অন্ধকার তাকে ঘিরে ধরেছে। বাদশা বাবর কেঁদে ফিরছেন কীভাবে পুত্রকে ভালো করা যায়। সন্তানের কষ্টে কোনো পিতা-মাতাই স্থির থাকতে পারে না। উদ্দীপকের কবিতাংশে সেই মনঃকষ্টই ব্যক্ত হয়েছে ‘পল্লিজননী’ কবিতায়।

১ এর ঘ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য বিবেচনায় উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে না।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ শিশুর শিয়রে বসে থাকা এক মায়ের মনঃকষ্ট ও গভীর মর্মবেদনা প্রকাশ পেয়েছে। দারিদ্র্যের কারণে মমতাময়ী মা তার সন্তানের জন্য ওষুধ-পথ্য জোগাড় করতে পারেনি। সারা রাত জেগে বুকের মানিককে আদর আর প্রবোধ দেন। পুত্র হারানোর শঙ্কায় আতঙ্কিত মা দরগায় মানত করে। আল্লাহ রসুল ও পীরের কাছে সন্তানকে ভালো করে দেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করে। মাটির প্রদীপের মতো তার জীবন প্রদীপও যেন নিভে যাচ্ছে। অসহায় মায়ের হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে রুগ্ণ ছেলের জন্য।

উদ্দীপকে একজন পরাক্রমশালী বাদশাহ বাবর তাঁর ভীষণ অসুস্থ সন্তান হুমায়ুনের জন্য কাতর হয়ে পড়েছেন। মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানের করুণ অবস্থা দেখে পিতার অন্তর গুমরে কেঁদে উঠেছে। সন্তানের জীবনে যেন মরণ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। পুত্র হুমায়ুনকে বুঝি আর বাঁচানো যাচ্ছে না। সন্তানের জীবন বাঁচাতে বাদশা বাবরের মনঃকষ্ট ও তীব্র ব্যাকুলতাই প্রকাশ পেয়েছে। ‘পল্লিজননী’ কবিতায়ও এ বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উদ্দীপক ও কবিতার মাঝে পারিপার্শ্বিতার ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ শিশুর জীবন বাঁচতে দরিদ্র অসহায় দুঃখিনী মায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকেও মৃত্যুপথযাত্রী পুত্রের জীবন বাঁচাতে এক পিতা ব্যগ্র ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কবিতার পল্লিজননী আর উদ্দীপকের বাদশাহ বাবরের আর্থিক অবস্থার চিত্র সম্পূর্ণই বিপরীত। পল্লিজননীর পুত্র সুচিকিৎসা পায়নি হতদরিদ্র হওয়ায়। কিন্তু উদ্দীপকের বাদশাহপুত্র হুমায়ুনের ক্ষেত্রে এটি ঘটার সুযোগ নেই। আবার ‘পল্লিজননী’ কবিতার প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছে গ্রামীণ পরিবেশে। প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের বর্ণনায় কবিতাটি নিবিড়তা লাভ করেছে। উদ্দীপক কবিতাংশটিতে এ বিষয়গুলো পাওয়া যায় না। তাই উদ্দীপকটি কবিতার মূলভাব ধারণে সক্ষম হলেও সমগ্র অংশের ধারক নয়।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
পল্লিজননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Polli Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
২নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শহরের এক উন্নতমানের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে রকিবের। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ডাক্তার, নার্সের নিশ্চিত উপস্থিতি, পর্যাপ্ত ওষুধ-পথ্য কোনো কিছুই মায়ের মনকে শান্ত করতে পারছে না। রকিবের মাথার পাশে এক মনে তসবি জপছেন মা। তাঁর মনে হাজারো আশা ও আশঙ্কা উঁকি মারছে।
ক. ‘আড়ং’ শব্দের অর্থ কী? ১ 
খ. মা নামাজের ঘরে মোমবাতি আর দরগায় দান মানেন কেন? ২
গ. উদ্দীপকের রকিবের সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার অসুস্থ শিশুটির অবস্থার বৈসাদৃশ্য দেখাও। ৩
ঘ. গ্রামীণ ও শহুরে দুই মায়ের আশা ও আশঙ্কা একই অনুভূতিতে গাঁথা- মূল্যায়ন করো। ৪

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ‘আড়ং’ শব্দের অর্থ মেলা।

খ. সন্তানের আরোগ্য কামনায় মা নামাজের ঘরে মোমবাতি আর দরগায় দান মানেন।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় বর্ণিত জননীর সন্তান অত্যন্ত অসুস্থ। পল্লিজননীর সার্মথ্য নেই ছেলের জন্য ওষুধ-পথ্য জোগাড় করার। অলৌকিকভাবে তার সন্তান রোগমুক্ত হবে এই ভরসায় থাকেন দরিদ্র মাতা। তাই তিনি নামাজের ঘরে মোমবাতি আর দরগায় দান দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন।

গ. উদ্দীপকের রাকিব অসুস্থাবস্থায় উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেলেও ‘পল্লিজননী’ কবিতার অসুস্থ শিশুটির ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি।

কবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘পল্লিজননী’ কবিতায় এক দুঃখিনী পল্লিজননী ও তাঁর অসুস্থ সন্তানের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। ছেলেটি অনেক দিন থেকেই অসুস্থ। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তার মা তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পথ্যের ব্যবস্থা করতে পারেনি।

উদ্দীপকে দেখা যায়, অসুস্থ রাকিব চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে তার জন্য সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ-পথ্যেরও ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সাথে রাকিবের পাশে তার মমতাময়ী মায়ের উপস্থিতি রয়েছে। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় অসুস্থ শিশুটি একইভাবে মায়ের ভালোবাসা পেলেও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ-পথ্য ও চিকিৎসার সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত।

ঘ. ‘পল্লিজননী’ কবিতার গ্রামীণ মা এবং উদ্দীপকের শহরের মা দুজনের মনের আশা একই বিন্দুতে গাঁথা। আর তা হলো প্রাণপ্রিয় পুত্রের আরোগ্য লাভ।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি জসীমউদ্দীন সন্তানের প্রতি মায়ের অনুরাগের নিবিড় এক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। রুগ্ণ পুত্রের শিয়রে বসে গভীর মনঃকষ্টে মা রাত জাগেন। হতদরিদ্র মা পুত্রকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ-পথ্য জোগাড় করে দিতে পারেননি। তাঁর মনে ক্ষণে ক্ষণে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে। নিজের মমতার আবরণে তিনি পুত্রের সকল অমঙ্গল আশঙ্কা দূর করতে চান।

উদ্দীপকের রাকিব অত্যন্ত অসুস্থ। তার জন্য হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ডাক্তার, নার্স তার শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। ওষুধ-পথ্যের দিক থেকেও কোনো রকম ত্রুটি করা হয়নি। তবুও তার মায়ের মনে শান্তি নেই। পুত্রের সুস্থতার জন্য মায়ের মনের আকুলতার স্বরূপ ধরা পড়েছে উদ্দীপক ও ‘পল্লিজননী’ কবিতার মায়ের মাঝে।

উদ্দীপক এবং ‘পল্লিজননী’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই মায়ের গভীর মমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকের শহুরে মা কিংবা কবিতার পল্লিজননী, দুজনেরই মনের আকাক্সক্ষা ও আশঙ্কা একই বিষয়কে কেন্দ্র করে। তা হলো পুত্রের রোগমুক্তি। তাই তো উদ্দীপকের মা ছেলের শিয়রে বসে তসবি জপেন। কবিতার দরিদ্র জননী পুত্রের রোগমুক্তির জন্য মসজিদে ও দরগায় দান করার মানত করেন। উভয় মা-ই সন্তান হারানোর আশঙ্কায় চরম মানসিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পুত্রস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণই উভয় মাকে এক ডোরে বেঁধেছে।
 
এসএসসি বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন-উত্তরসহ:


৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
পল্লিজননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Polli Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
৩নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জ্যোতির বয়স এবার বারো পেরোল। বড় দুরন্ত ছেলে। রোজ বিকেলে দূরের মাঠে খেলতে যায় সে। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। একাকী বাসায় এ সময়টা বড় দুশ্চিন্তায় কাটে তাসমিনা আফরোজের। ছেলেকে নিয়ে নানা আশা ও আশঙ্কায় জায়নামাজে বসে একনাগাড়ে দোয়া পড়তে থাকেন তিনি।
ক. ঘরের চালে কী ডাকে? ১ 
খ. ‘তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।’- ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকটির মূলভাব ‘পল্লিজননী’ কবিতার পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না। উক্তিটি মূল্যায়ন করো। ৪

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ঘরের চালে হুতুম ডাকছে।

খ. সন্তানের অসুস্থতায় বিচলিত হয়ে পল্লিজননীর মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে- এই চিত্র প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।

পল্লিজননী সন্তানের প্রতি অত্যন্ত মমতাময়ী। তার মাঝে সন্তানবাৎসল্যের চিরন্তন রূপ লক্ষ করা যায়। তিনি সন্তানের শিয়রে বসে নিদারুণ মনঃকষ্টে ভোগেন। সে সময় তাঁর মাথায় নানা রকম দুশ্চিন্তা খেলা করে। তার মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে।

গ. উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার সন্তানের প্রতি অজানা আশঙ্কার দিকটি ফুটে উঠেছে।

প্রত্যেক মায়েরই সন্তানের প্রতি অনিবার্য ভালোবাসা থাকে। সন্তানের সুখে মা খুশি হন, আবার সন্তানের অসুখে মা ব্যথিত হন। অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণে প্রত্যেক জননীই চান তার সন্তান ভালো থাকুক। সন্তানের কোনো বিপদে মায়ের মন সর্বদাই আতঙ্কিত থাকে। এক মুহূর্ত মায়ের সামনে সন্তানের অনুপস্থিতি মাকে অজানা আশঙ্কায় ভাবিয়ে তোলে।

উদ্দীপকে সন্তানের অনুপস্থিতিতে মায়ের মনের অজানা আশঙ্কা ফুটে উঠেছে। ছেলে দূরের মাঠে খেলতে গিয়ে ফিরতে দেরি হওয়ায় মায়ের মনে নানা দুশ্চিন্তা ভর করে। উদ্দীপকের জননীর এই দিকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতায়ও প্রকাশ পেয়েছে। ছেলের প্রতি নিবিড় ভালোবাসাই উদ্দীপকের তাসমিনা আফরোজ এবং কবিতায় বর্ণিত পল্লিজননীর অজানা আশঙ্কার কারণ।

ঘ. মায়ের সন্তানবাৎসল্য প্রকাশ পেলেও অনুভূতির গভীরতা এবং অবস্থানগত পার্থক্যের বিবেচনায় উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতাকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিনিধিত্ব করে না।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ পুত্রের শিয়রে বসা এক দরিদ্র পল্লিজননীর অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণের কথা বর্ণিত হয়েছে। পল্লিজননী পুত্রের চাঞ্চলতা স্মরণ আর দারিদ্র্যের কারণে পুত্রের নানা আবদার মেটাতে না পারার ব্যর্থতায় কাতর। তিনি অসুস্থ পুত্রের সুস্থতার জন্য মানত করেন। এর মাধ্যমে পল্লিজননীর সন্তানের প্রতি তাঁর ভালোবাসা গভীরভাবে প্রকাশ পায়।

উদ্দীপকেও তাসমিনা আফরোজের সন্তানবাৎসল্য প্রকাশ পেয়েছে। সন্তানের জন্য তাঁর দুশ্চিন্তার শেষ নেই। পুত্রের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় রত হন তিনি। কিন্তু ‘পল্লিজননী’ কবিতায় এক দরিদ্র মায়ের সন্তানপ্রীতির চিত্র আঁকতে গিয়ে কবি পল্লি অঞ্চলের এক সার্থক সমাজচিত্রও অঙ্কন করেছেন।  উদ্দীপকে কবিতার এ সকল দিক অনুপস্থিত।

‘পল্লিজননী’ কবিতা এবং উদ্দীপক উভয়ের মূলকথা সন্তানবাৎসল্য হলেও এদের উপস্থাপনগত ভিন্নতা রয়েছে। কবিতার পল্লিজননীর পুত্র মৃত্যুমুখে পতিত। দরিদ্র মা তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য জোগাড় করে দিতে পারেননি। তাই সন্তানকে চিরতরে হারানোর শঙ্কা তাঁকে ব্যাকুল করে তোলে। কিন্তু উদ্দীপকের মায়ের ছেলেটি এমন ঘোর বিপদের মুখোমুখি নয়। তাছাড়া কবিতায় পল্লিজননীর সন্তানবাৎসল্যের আড়ালে পল্লিগ্রামের এক নিবিড় সমাজচিত্র অঙ্কিত হলেও উদ্দীপকে শুধু সন্তানের প্রতি ভালোবাসাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। তাই উদ্দীপকটির মূলভাব ‘পল্লিজননী’ কবিতার পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
পল্লিজননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Polli Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
৪নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
স্বামীহারা রাহেলা বানু নির্মাণশ্রমিক হিসেবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে একমাত্র সন্তান শিপুকে লেখাপড়া শেখান। স্নেহবাৎসল্য থাকলেও তা অন্তরে ধারণ করে তিনি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। 
ক. রুগ্ণ ছেলের শিয়রে কে জাগছে?   ১
খ. শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপের সাথে বিরহী মায়ের পরাণ দোলে কেন? ২
গ. উদ্দীপকের রাহেলা বানুর মধ্যে পল্লিজননীর যে গুণের আভাস দেওয়া হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার মমতাময়ী মায়ের চেতনার সামগ্রিক দিক ফুটে ওঠেনি- মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো। ৪

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. রুগ্ণ ছেলের শিয়রে পল্লিজননী জাগছে।

খ. সন্তানের অমঙ্গল আশঙ্কায় তার শিয়রের কাছে বসে পল্লিজননীর পরাণ দোলে।

রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসে আছেন অসহায় মা। সন্তান রোগযন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। জননী তাকে দরকারমতো ওষুধ জোগাড় করে দিতে পারেননি। সন্তানের মৃত্যুশঙ্কা মায়ের মনকে আকুল করে। একলা বসে তাই পল্লিজননী বারবার শিউরে ওঠেন।

গ. উদ্দীপকের রাহেলা বানুর মধ্যে পল্লিজননীর সন্তানবাৎসল্য গুণটির আভাস দেওয়া হয়েছে।

মায়ের মতো মমতাময়ী আর কেউ নেই। প্রতিটি মা-ই চান তার সন্তান ভালো থাকুক। সন্তানের কোনো বিপদে মা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পান। সন্তানের ভালো করার জন্য প্রত্যেক মা সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি জসীমউদ্দীন এমন মমতাময়ী এক পল্লিমায়ের সুনিপুণ চিত্র অঙ্কন করেছেন।

উদ্দীপকের রাহেলা বানু পল্লিজননীর মতোই একজন স্নেহবৎসল মা। তিনি সন্তানের মঙ্গল কামনায় কঠোর পরিশ্রম করেন। সন্তানের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে তিনি সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী। এজন্য তিনি নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেও দ্বিধা করেন না। রাহেলা বানুর স্নেহময়তার এই দিকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার পল্লিমায়ের সন্তানবাৎসল্যকে প্রতিফলিত করেছে।

ঘ. স্নেহময়তাকে ধারণ করলেও ‘পল্লিজননী’র অসহায়ত্বের তীব্রতাকে ধারণ না করায় উদ্দীপকটি ‘পল্লিজননী’ কবিতার সামগ্রিক ভাব তুলে ধরতে পারেনি।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার গভীর মমতাময়ী দিক সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন কবি জসীমউদ্দীন। কবিতায় পল্লিজননী সন্তানের অসুস্থতায় যেমন উদ্বিগ্ন তেমনি দারিদ্র্যের কারণে ওষুধ না কিনতে পেরে অসহায়। ফলে সন্তানবাৎসল্যের পাশাপাশি কবিতায় পল্লিজননীর অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকের  রাহেলা বানু কঠোর পরিশ্রম করে ছেলেকে লেখাপড়া করানোর সংগ্রাম  করে চলেছেন। এক্ষেত্রে রাহেলা বানুর সন্তানের আকাক্সক্ষা পূরণের অসহায়ত্ব নেই। কিন্তু ‘পল্লিজননী’ কবিতায় পল্লিজননীর মাঝে সন্তানের জন্য ভালোবাসা আছে, সন্তান হারানোর শঙ্কা আছে, অসহায়ত্ব আছে।

প্রতিটি মায়ের মনেই অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণ রয়েছে। সন্তানের সুখে মা হাসেন, আবার সন্তানের দুঃখে মা কাঁদেন। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় অপত্যস্নেহের আকর্ষণে মা অসুস্থ সন্তানের শিয়রে বসে আতঙ্কিত হয়েছেন। উদ্দীপকে এ ধরনের কোনো বিষয় লক্ষ করা যায় না। পল্লিমায়ের মাঝে আবদারমুখো পুত্রের চাহিদা পূরণের ব্যর্থতার কষ্ট রয়েছে। অসুস্থ সন্তানের পথ্য কেনার সামর্থ্য না থাকায় স্নেহবৎসল পুত্রের শিয়রে বসা পল্লিমায়ের অসহায়ত্বের বেদনাও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু স্নেহবাৎসল্যের দিকটিই প্রস্ফুটিত। সন্তান হারানোর আশঙ্কা কিংবা তার আবদার পূরণের অসামর্থ্যরে যন্ত্রণার বিষয়গুলো এখানে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘পল্লিজননী’ কবিতার মমতাময়ী মায়ের চেতনার সামগ্রিক দিক ফুটে ওঠেনি।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
পল্লিজননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Polli Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
৫নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ছেলেটার বয়স হবে বছর দশেক, পরের ঘরে মানুষ 
যেমন ভাঙা বেড়ার ধারে আগাছা, মালীর যত্ন নেই
ছেলেটা ফুল পাড়তে গিয়ে গাছের থেকে পড়ে 
হাড় ভাঙে, বুনো বিষফল খেয়ে ও ভিরমি লাগে
কিছুতেই কিছু হয় না, আধমরা হয়েও বাঁচে
গেরেস্ত ঘরে ঢুকলেই সবাই তাকে দূর দূর করে
কেবল তাকে ডেকে এনে দুধ খাওয়ায় সিধু গোয়ালিনী 
তার উপদ্রবে গোয়ালিনীর স্নেহ ওঠে ঢেউ খেলিয়ে
তার হয়ে কেউ শাসন করতে এলে, পক্ষ নেয় ওই ছেলেটারই।
ক. বাঁশবনে ডাকে কে? ১
খ. মায়ের প্রাণ শঙ্কায় ভরে উঠেছে কেন? ২
গ. উদ্দীপকের ছেলেটার সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলেটার পার্থক্য কোথায়?- ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. তুমি কি মনে করো সিধু গোয়ালিনী পল্লিজননীরই প্রতিরূপ? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। ৪

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. বাঁশবনে কানা কুয়ো ডাকে।

খ. সন্তানের অসুস্থতায় মা অত্যন্ত বিচলিত। তাই পুত্র হারানোর শঙ্কায় তার মন ভরে উঠেছে।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় পল্লিজননী একজন মমতাময়ী মা। রুগ্ণ সন্তানের শিয়রে বসে তিনি দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন। সামর্থ্যের অভাবে ছেলের জন্য ওষুধ পথ্য জোগাড় করতে পারেননি তিনি। অসহায় মায়ের প্রাণ তাই সন্তানের মৃত্যু শঙ্কায় ভরে উঠেছে।

গ. ‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলেটি মাতৃস্নেহে লালিত। আর উদ্দীপকের ছেলেটি মাতৃস্নেহ বঞ্চিত, বেড়ে উঠেছে অনাদর অবহেলায়।

মাতৃস্নেহের এক অনুপম নিদর্শন ‘পল্লিজননী’ কবিতা। পল্লিজননীর বুকের মানিক ছেলেটি তার মায়ের কোলেই বড় হয়েছে। তার দিন কাটে খেলাধুলা আর ঘুড়ি লাটাই নিয়ে। মায়ের কাছে তার আবদারের শেষ নেই। ঢাঁপের মোয়া, গুড়ের পাটালি আরো কত কী? মায়ের আদরে বড় হওয়া ছেলেটি যখন রোগশয্যায় তখন স্নেহময়ী মা ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তার অসুখ সারিয়ে তোলার জন্য তার শিয়রে বসে থাকেন।

উদ্দীপকের ছেলেটি পরের ঘরে মানুষ হয়েছে। যত্নহীনভাব আগাছার মতো সে বড় হচ্ছে। সবাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তার অসহায়ত্বের কথা কেউ ভাবে না। কিন্তু ‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলেটি অভাবী হলেও মায়ের স্নেহধন্য।

ঘ. সন্তানবাৎসলের দিক দিয়ে সিধু গোয়ালিনী পল্লিজননীর প্রতিরূপ।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় আমরা দেখি একজন স্নেহময়ী মা কীভাবে তাঁর রুগ্ণ শিশুর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। দারিদ্র্যের কারণে এই মা সন্তানকে ওষুধ পথ্য দিতে পারেননি বলে তাঁর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ আরো বেড়ে গিয়েছে। তাই মসজিদ ও মাজারে মোমবাতি মানত করেন, আল্লাহ, রাসুল ও পীরকে মনে মনে স্মরণ করে সারা রাত সন্তানের শিয়রে পাশে বসে থাকেন। সন্তানের রোগ সারিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান এই মা।

উদ্দীপকে বর্ণিত দুরন্ত ছেলেটিকে সবাই দেখে অবজ্ঞার চোখে। পিতৃ-মাতৃহীন ছেলেটির দিকে কেউই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয় না। সবাই তাকে আপদ ও উপদ্রপ মনে করে। যে বাড়িতেই যায় সেখানেই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সিধু গোয়ালিনী তাকে ডেকে আদর করে দুধ খাওয়ায়। তার উপদ্রবে গোয়ালিনীর স্নেহ-মমতা আরো বেশি জেগে ওঠে। ছেলেটির দুরন্তপনায় কেউ তাকে শাসন করতে এলে গোয়ালিনী তার হয়ে প্রতিবাদ করে। তার পক্ষ নেয়। কারণ ছেলেটিকে দেখলে গোয়ালিনীর মাতৃত্ব ও সন্তান বাৎসল্য জেগে ওঠে।

সন্তানবাৎসল্যই একজন মায়ের চিরকালীন বৈশিষ্ট্য। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় আমরা সে সন্তানবাৎসল্যের চরম পরাকাষ্ঠা লক্ষ করি। একজন দরিদ্র অসহায় মায়ের পক্ষে যা করণীয় তাই আমরা প্রত্যক্ষ করি। আবার উদ্দীপকের ছেলেটি গোয়ালিনীর নিজের সন্তান না হলেও তার প্রতি সে যে মমত্ববোধ দেখিয়েছে তা আমাদের মুগ্ধ করে। পিতৃমাতৃহীন এই ছেলেটির দিকে কেউই সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয় না। সবাই তাকে আপদ ও  উপদ্রপ মনে করে। যে বাড়িতেই যায় সেখানেই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। সিধু গোয়ালিনীই তার আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে আর্বিভূত হয়। পল্লিজননীর মতোই ছেলেটির প্রতি সে গভীর মমতা অনুভব করে। সন্তানের মতোই তাকে আপন করে নেয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, সিধু গোয়ালিনী পল্লিজননীর সার্থক প্রতিরূপ।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
পল্লিজননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Polli Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘পল্লিজননী’ কবিতার রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতার রচয়িতা কবি জসীমউদ্দীন।
 
২. জসীমউদ্দীন কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: জসীমউদ্দীন ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
 
৩. জসীমউদ্দীন কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: জসীমউদ্দীন ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
 
৪. জসীমউদ্দীনের কবিতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে কী?
উত্তর: জসীমউদ্দীনের কবিতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে পল্লির মাটি ও মানুষের জীবনচিত্র।
 
৫. জসীমউদ্দীনের উপাধি কী?
উত্তর: জসীমউদ্দীনের উপাধি পল্লিকবি।
 
৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন জসীমউদ্দীনের কোন কবিতা প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়?
উত্তর: বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন জসীমউদ্দীনের ‘কবর’ কবিতা প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়।
 
৭. জসীমউদ্দীনের কোন কাব্য বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে?
উত্তর: জসীমউদ্দীনের ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ কাব্য বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
 
৮. জসীমউদ্দীনের ভ্রমণকাহিনির নাম কী?
উত্তর: জসীমউদ্দীনের ভ্রমণকাহিনির নাম ‘চলে মুসাফির’।
 
৯. কোন বিশ্ববিদ্যালয় জসীমউদ্দীনকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে?
উত্তর: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় জসীমউদ্দীনকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে।
 
১০. কবি জসীমউদ্দীন কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: কবি জসীমউদ্দীন ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
 
১১. পল্লিজননী কোথায় বসে আছে?
উত্তর: পল্লিজননী রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসে আছে।
 
১২. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় নিবু নিবু দীপ কোথায় জ্বলছে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতায় নিবু নিবু দীপ রুগ্ণ ছেলেটির শিয়রের কাছে জ্বলছে।
 
১৩. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় পচান পাতার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কোথা থেকে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতায় পচান পাতার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এদো ডোবা থেকে।
 
১৪. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বেড়ার ফাঁক দিয়ে কী আসছে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বেড়ার ফাঁক দিয়ে শীতের বায়ু আসছে।
 
১৫. পল্লিজননী কোথায় মোমবাতি মানত করেন?
উত্তর: পল্লিজননী মসজিদে মোমবাতি মানত করেন।
 
১৬. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বাঁশবনে বসে কী ডাকে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বাঁশবনে বসে কানা কুয়ো ডাকে।
 
১৭. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বাদুড় পাখার বাতাসে কী হেলে পড়ে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বাদুড় পাখার বাতাসে সুপারির বন হেলে পড়ে।
 
১৮. রুগ্ণ ছেলেটি ভালো হয়ে গেলে কার সাথে খেলতে যেতে চায়?
উত্তর: রুগ্ণ ছেলেটি ভালো হয়ে গেলে করিমের সাথে খেলতে যেতে চায়।
 
১৯. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ ছেলেটি কাকে লাটাই যত্ন করে রাখতে বলেছে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতায় রুগ্ণ ছেলেটি মাকে লাটাই যত্ন করে রাখতে বলেছে।
 
২০. পল্লিজননীকে রুগ্ণ ছেলেটি খেজুরের গুড়ের নয়া পাটালিতে কী ভরে রাখতে বলে?
উত্তর: পল্লিজননীকে রুগ্ণ ছেলেটি খেজুরের গুড়ের নয়া পাটালিতে হুড়ুমের কোলা ভরে রাখতে বলেছে।
 
২১. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় ছেলেটি দূর বন থেকে এক কোঁচ ভরা কী এনেছিল?
উত্তর: পল্লিজননী কবিতায় ছেলেটি দূর বন থেকে এক কোঁচ ভরা বেথুল এনেছিল।
 
২২. পল্লিজননীর আড়ঙের দিনে ছেলের জন্য কী কেনার পয়সা জোটেনি?
উত্তর: পল্লিজননীর আড়ঙের দিনে ছেলের জন্য পুতুল কেনার পয়সা জোটেনি।
 
২৩. ‘পল্লিজননী’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের ‘রাখালী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
 
২৪. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় পল্লি মায়ের মনে কী শঙ্কা জেগে ওঠে?
উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতায় পল্লিমায়ের মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
পল্লিজননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Polli Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. কবি জসীমউদ্দীনকে ‘পল্লিকবি’ বলা হয় কেন?
উত্তর: কবি জসীমউদ্দীন তার কবিতায় পল্লির মানুষের আশা-স্বপ্ন-আনন্দ-বেদনা ও বিরহ-মিলনের এক মধুর চিত্র সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে তাঁকে পল্লিকবি বলা হয়।

পল্লির মাটি ও মানুষের জীবনচিত্র কবি জসীমউদ্দীনের কবিতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। তিনি গ্রামবাংলার পল্লি প্রকৃতি এবং মানুষের জীবনচিত্র দক্ষভাবে কবিতার ফ্রেমে আবদ্ধ করেছেন। পল্লির মানুষের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার এমন আবেগ-মধুর চিত্র অন্য কোনো কবির কবিতায় পাওয়া যায় না। তাই তাঁকে পল্লিকবি বলা হয়।

২. পল্লিজননী শিয়রে বসে ছেলের আয়ু গুনছেন কেন?
উত্তর: অসুস্থ সন্তানের পাশে বসে অজানা আশঙ্কায় পল্লিজননী ছেলের আয়ু গুনছেন।

প্রতিটি মা তার সন্তানকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। সন্তানের কোনো বিপদ আপদে মা সবচেয়ে বেশি ব্যথিত হন। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বর্ণিত পল্লি মাও সন্তানের অসুস্থতায় বিচলিত হন। অজানা শঙ্কায় তার মান আনচান করে। তাই রুগ্ণ ছেলের শিয়রে বসে মা ছেলের আয়ু গুনছেন।

৩. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না কেন?
উত্তর: চঞ্চল স্বভাবের হওয়ার কারণে ‘পল্লিজননী’ কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না।

রুগ্ণ ছেলেটি অসুস্থ হওয়ায় তাকে বাধ্য হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। কিন্তু তার শিশুসুলভ মানসিকতার কারণে সে শুয়ে থাকতে চায় না। ছেলেটি তার স্বাভাবিক চঞ্চলতায় ঘুরে বেড়াতে চায়। এই চঞ্চলতায় বাদ সেধেছে অসুস্থতা। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই ছেলেটির শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না।

৪. পল্লিজননী নামাজের ঘরে মোমবাতি মানেন কেন?
উত্তর: পল্লিজননী অসুস্থ সন্তানের সুস্থতা কামনা করে নামাজের ঘরে মোমবাতি মানেন।

মায়ের মতো মমতাময়ী আর কেউ নেই। মা সকল সময় তার সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। কবিতায় বর্ণিত পল্লিজননী তার সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় ব্যাকুল। সন্তানের অসুস্থতা তাকে পীড়া দেয়। তিনি যত দ্রæত সম্ভব সন্তানের সুস্থতা কামনা করেন। এজন্য তিনি সন্তানের সুস্থতার আশায় নামাজের ঘরে মোমবাতি মানত করেন।

৫. পল্লিজননীর ছেলে দূর বনে গেলে সন্ধ্যাবেলা তাঁর প্রাণ আই ঢাই করে কেন?
উত্তর: পল্লিজননীর ছেলে দূর বনে গেলে সন্ধ্যাবেলা তাঁর প্রাণ অজানা শঙ্কায় আই ঢাই করে।

পল্লিজননী তাঁর ছেলেকে খুব ভালোবাসেন। তিনি সন্তানের প্রতি চিরন্তন মমতায় ব্যাকুল। ছেলে দূর বনে গেলে মায়ের মন অজানা শঙ্কায় ভরে ওঠে। ছেলের না জানি কী হয় এই ভেবে তিনি আকুল হন। এজন্য সন্ধ্যা হয়ে গেলেও যখন দেখেন ছেলে আসছে না তখন শঙ্কায় তাঁর মাতৃহৃদয় আই ঢাই করে।

৬. পল্লিজননী ছেলের ছোটখাটো আবদার মেটাতে পারেননি কেন?
উত্তর: দরিদ্রতার কারণে পল্লিজননী ছেলের ছোটখাটো আবদার মেটাতে পারেননি।

পল্লিজননী তাঁর ছেলেকে অনেক স্নেহ করেন। ছেলের জন্য তার মনে সর্বদা মঙ্গলচিন্তা কাজ করে। তাই ছেলের কোনো চাওয়া তিনি অপূর্ণ রাখতে চান না। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে তিনি তা করতে পারেন না। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে সন্তান কোনো কিছু আবদার করলে তিনি তা এড়িয়ে যান।

৭. পল্লিজননী ছেলেকে মুসলমানের আড়ং দেখতে নেই বলেছেন কেন?
উত্তর: পল্লিজননী ছেলেকে পুতুল কেনার পয়সা দিতে পারবেন না বলে মুসলমানের আড়ং দেখতে নেই বলেছেন।

পল্লিজননী দরিদ্র নারী। তাঁর কুঁড়েঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে শীতের বাতাস ঢোকে। অভাবের কারণে তিনি ছেলের আবদার মেটাতে পারেন না। ফলে ছেলেকে আড়ঙের মেলা দেখতে দিতে চান না। কেননা ছেলে আড়ঙের মেলা দেখতে গেলে পুতুল কিনতে পয়সা চাইবে। আর পুতুল কেনার পয়সা দিতে পারবেন না বলেই পল্লিজননী বলেছেন মুসলমানের আড়ং দেখতে নেই।

৮. পল্লিজননী ছেলের জন্য ওষুধ আনেননি কেন?
উত্তর: পল্লিজননী অর্থাভাবে ছেলের জন্য ওষুধ আনেননি।

কবিতায় বর্ণিত পল্লিজননী একজন দারিদ্র্যক্লিষ্ট নারী। সংসারের অভাবের কারণে তিনি ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও সন্তানের অনেক আবদার পূরণ করতে পারেন না। ছেলের প্রতি মমতার কোনো কমতি না থাকলেও দরিদ্র মাতার অর্থকষ্ট তাঁর মনঃকষ্টকে গভীর করেছে। অভাবের কারণেই পল্লিজননী তাঁর ছেলের অসুস্থতায় একটু ওষুধ পর্যন্ত জোগাড় করতে পারেননি।

৯. পল্লিজননী দূর দূর করে ঘরের চালে ডাকতে থাকা হুতোম তাড়ান কেন?
উত্তর: পল্লিজননীর মতে ঘরের চালে হুতোমের ডাক অকল্যাণ বয়ে আনে বিধায় তিনি দূর দূর করে হুতোম তাড়ান।

পল্লিবাংলায় নানা কুসংষ্কার প্রচলিত রয়েছে। কবিতায় বর্ণিত পল্লিজননী এরকম একটি সংস্কারে বিশ্বাসী। সন্তানের অসুস্থতায় তিনি ঘরের চালে হুতোমের ডাককে অকল্যাণের সুর মনে করেন। তাই দূর দূর করে এই হুতোম তাড়িয়েছেন।
Share:

SSC সাহসী জননী বাংলা কবিতার (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

সাহসী জননী বাংলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | নবম-দশম শ্রেণির গাইড

নবম-দশম শ্রেণি
বাংলা ১ম পত্র গাইড
কবিতা/পদ্য

সাহসী জননী বাংলা
কামাল চৌধুরী

SSC Bangla 1st Paper Kobita
Sahoshi Jononi
Shahoshi Janani
Srijonshil
Question and Answer pdf download
সাহসী জননী বাংলা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: নবম-দশম শ্রেণি


১নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার/পদ্যের সৃজনশীল প্রশ্নঃ ০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যখন হানাদারবধ সংগীতে
ঘৃণার প্রবল মন্ত্রে জাগ্রত
স্বদেশের তরুণ হাতে
নিত্য বেজেছে অবিরাম
মেশিনগান, মর্টার গ্রেনেড।
ক. মধ্যরাতে কারা এসেছিল? ১
খ. বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরেছিল কেন? ২
গ. উদ্দীপকের অনুভব ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার অনুভবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ-ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় নয়- মূল্যায়ন করো। ৪

১ এর ক নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
মধ্যরাতে হানাদাররা এসেছিল।

১ এর খ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরেছিল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।

পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। ’৫২ সালে এদেশের দামাল ছেলেরা এই অপতৎপরতা রুখে দিয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের এই সংগ্রামী চেতনা মুক্তিযুদ্ধেও গৌরবের বিজয় এনে দিয়েছিল।

১ এর গ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
উদ্দীপকে উল্লিখিত হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনার অনুভবের সাথে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতা সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় কবি কামাল চৌধুরী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন। কবি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে হানাদারদের রক্তাক্ত হাত আমরা মুচড়ে দিয়েছি। ডাকাতরূপী হানাদারদের মোকাবেলা করেছি, তাদের মেরে নাস্তানাবুদ করেছি, কান কেটে দিয়েছি। কবির এই বক্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। হানাদারদের এভাবেই সমুচিত জবাব দিয়ে স্বাধীনতার পতাকাকে বাঙালি উড়িয়ে দিয়েছে পত পত করে।

উদ্দীপকে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে দেশের তরুণরা কীভাবে ভূমিকা রেখেছিল তা-ই বলা হয়েছে। হানাদারদের নির্মম নির্যাতনে মানুষের মনে যে ঘৃণার জন্ম হয়েছিল সেই ঘৃণার প্রবল মন্ত্র তাদের সাহসী করে তুলেছিল। হাতে তুলে নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার- মেশিনগান, মর্টার, গ্রেনেড। তাই দেখা যাচ্ছে কবিতায় অনুভবের সাথে উদ্দীপকের অনুভব খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ।

১ এর ঘ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
উদ্দীপকে হানাদারদের মোকাবেলায় কেবল যুদ্ধ করার কথাই বলা হয়েছে। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মতো মুক্তিযুদ্ধের বিস্তারিত পটভূমি তুলে ধরে নি।

সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় কবি কামাল চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে প্রতিরোধ ও সংগ্রামের ঐতিহ্য। যারা বাঙালিকে ভেতো ও ভীতু বলে অভিহিত করেছিল তাদের মিথ্যাচারের সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। সংগ্রাম আর রক্তদানের ইতিহাস জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। বাঙালি অসীম সাহসিকতায় হানাদারদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়ে এই মাটিতে স্বাধীনতার পতাকাকে উড়িয়ে দিয়েছে।

উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল। তাদের প্রতি প্রবল ঘৃণায় এদেশের তরুণরা প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য তরুণরা জীবন বাজি রেখে এগিয়ে এসেছিল। তারা হাতে নিয়েছিল মেশিনগান, মর্টার, গ্রেনেড।

সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহসিকতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ যুদ্ধ অত্যন্ত বলিষ্ঠতার সাথে উচ্চারিত হয়েছে। আর উদ্দীপকে কেবল হানাদারদের বধ করার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কবিতায় সকল বাধাবিঘœ অতিক্রম করে বাঙালির বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরবকে তুলে ধরা হয়েছে। বাঙালির সংগ্রামের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অতীতের সেসব সংগ্রামের ইতিহাস প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে। কবিতায় বর্ণিত যুদ্ধকালীন এই সামগ্রিকতা উদ্দীপকে তুলে ধরা হয়নি। কাজেই উদ্দীপকের ভাবনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় নয়, খণ্ডচিত্র মাত্র।
 

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
সাহসী জননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Sahoshi Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
২নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
লক্ষ লক্ষ হা-ঘরে দুর্গত
ঘৃণ্য যম-দূত-সেনা এড়িয়ে সীমান্তপারে ছোটে,
পথে পথে অনশনে অন্তিম যন্ত্রণা রোগে ত্রাসে
সহস্রের অবসান, হন্তারক বারুদে বন্দুকে
মূর্ছিত-মৃতের দেহ বিদ্ধ করে, হত্যা-ব্যবসায়ী
বাংলাদেশ-ধ্বংস-কাব্যে জানে না পৌঁছল জাহান্নামে
এ জন্মেই;
বাংলাদেশ অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে \
ক. মুক্তিযুদ্ধকালে কোটি বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য হয়? ১
খ. ‘তোদের রক্তাক্ত হাত মুচড়ে দিয়েছি নয় মাসে’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো। ২
গ. উদ্দীপকে প্রথম পাঁচ চরণে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ৩ 
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলভাবকেই তুলে ধরেছে- কথাটি বিশ্লেষণ করো। ৪

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. মুক্তিযুদ্ধকালে কোটি বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপনে বাধ্য হয়।

খ. বাঙালির রক্তে পাকবাহিনীর যে হাত রঞ্জিত হয়েছে অসীম সাহসী বাঙালি তা মুচড়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস দেশজুড়ে নারকীয় গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। লাখো শহিদের রক্তে তাদের হাত কলঙ্কিত হয়। বাঙালির সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তাদের সেই কলঙ্কিত হাত মুচড়ে যায়। তারা পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য নয়।

গ. উদ্দীপকের প্রথম পাঁচ চরণে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বর্ণিত শত্রুসেনাদের নির্মমতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে এদেশের অসংখ্য মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হয়। তারা হানাদার বাহিনীর ভয়ে দেশে আশ্রয় নেয়। শত্রুর এই অসুরিক আচরণ বাঙালি জাতিকে প্রতিরোধ সংগ্রামে বাধ্য করেছিল। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির এই সংগ্রামী দিকটি বর্ণিত হয়েছে।

উদ্দীপকের প্রথম পাঁচ চরণে বাঙালির ওপর শত্রুসেনার অসুরিক আচরণের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে নিরীহ বাঙালির ওপর নির্মম নৃশংসতা চালায়। তাদের আক্রমণে অনেকে শহিদ হয়। এতে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় নেয় ভারতে। অসহায় বাঙালি জাতির এই বর্ণনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় কবি সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর কবিতার এই দিকটি উদ্দীপকের প্রথম পাঁচ চরণে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলকথা হলো সমস্ত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, যা উদ্দীপকের শেষ চরণে ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর বাঙালিরা শত্রুসেনার নৃশংসতাকে প্রতিরোধ করেছিল। তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। সকলে সমন্বিত সংহতিতে পরাভূত করেছিল অশুভ শক্তিকে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এই গর্বিত দিকটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় কবি তুলে ধরতে চেয়েছেন।

উদ্দীপকের শেষ চরণে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রমের ইতিহাস লুক্কায়িত রয়েছে। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ইতিহাসে নানা সংগ্রাম প্রতিরোধের ঘটনা রয়েছে। যুগে যুগে এ সকল প্রতিরোধে বাঙালিরা তাদের দৃঢ় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। শত্রুর বিপক্ষে লড়াই করে তারা ছিনিয়ে এনেছে তাদের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির এই দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। আর উদ্দীপকের শেষ চরণের মর্মার্থও এ রকমই।

‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বীর বাঙালি শত্রু সেনাকেও পরাজিত করে ফিরে এসেছে দেশমাতৃকার ক্রোড়ে। ফলে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙালির সংগ্রামী এই ইতিহাসই হলো কবিতার মূল কথা। আর উদ্দীপকের শেষ চরণে এই স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয়ের দিকটিই প্রকাশিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শেষ চরণটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলভাবকেই তুলে ধরেছে।
 
এসএসসি বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন-উত্তরসহ:

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
সাহসী জননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Sahoshi Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
৩নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
“একবার মরে ভুলে গেছে আজ মৃত্যুর ভয় তারা।
শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।”
ক. কার্তুজ শব্দের অর্থ কী? ১ 
খ. ‘এসেছি আবার ফিরে...... রাতজাগা নির্বাসন শেষে’- চরণটি বুঝিয়ে লেখো। ২
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের ভাবনা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় নয়।- মূল্যায়ন করো। ৪

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. কার্তুজ শব্দের অর্থ বন্দুকের টোঁটা।

খ. হানাদারদের আক্রমণের শিকার ঘরছাড়া মানুষদের নিজ আবাসস্থলে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে আলোচ্য চরণে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি নরপশুরা এদেশেবাসীর ওপর ঘৃণ্যতম বর্বরতা চালায়। প্রাণভয়ে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে দেশের ভেতরেই বা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে নির্বাসিত হয় অসংখ্য মানুষ। সে অবস্থাতেই তারা গড়ে তোলে সমবায়ী প্রতিরোধ। নির্ঘুম রাতগুলো উৎসর্গ করে দেশমাতার মুক্তির লক্ষ্যে। এক সময় শত্রুকে পরাভূত করে তারা নিজ দেশে ফিরে আসে বীরের বেশে। আলোচ্য পঙ্ক্তিতে এ বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

গ. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় হানাদারদের অত্যাচারকে রুখে দিতে বাঙালির যে অদম্য চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তারই সন্ধান পাওয়া যায় উদ্দীপক কবিতাংশে।

কামাল চৌধুরী রচিত ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির সুদৃঢ় মানসিক শক্তির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। শত্রুরা বাঙালিকে ভেতো ও ভীতু বলে অবজ্ঞা করেছিল। বাঙালির ওপর তারা ব্যাপক নিষ্ঠুরতা চালিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি জাতি তাদের শৌর্যের মহিমায় সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে।

উদ্দীপক কবিতাংশে বর্ণিত হয়েছে বাঙালির বীরত্বগাথা। অপশক্তির অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালি প্রবল প্রতিবাদ করেছে। বাঙালির অসাধারণ জাগরণ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। শত্রুর অত্যাচারের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে উদ্দীপক কবিতাংশে, যা ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায়ও একইভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণে সক্ষম হয়েছে।

বাঙালির শৌর্য-বীর্যের স্তুতিতে পরিপূর্ণ কামাল চৌধুরী রচিত ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতাটি। অসীম সাহসিকতা বুকে নিয়ে তারা শত্রুর মোকাবেলা করে। বাঙালির ঐক্যের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয় পাক হানাদাররা। অবশেষে সব বাধাবিঘ্ন দূর করে স্বাধীনতার পতাকা মুক্ত বাতাসে উড়িয়ে দেয় বাঙালি।

উদ্দীপকে আমরা বাঙালির অপ্রতিরোধ্য চেতনার পরিচয় পাই। বারবার অত্যাচারিত হতে হতে বাঙালি সব ভয় ভুলে গেছে। শত্রু নিধনে তারা আজ প্রবল পরাক্রমশালী। শত অন্যায়-অবিচারেও তারা শত্রুর কাছে হার মানবে না। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় এ দিকগুলো ছাড়াও রয়েছে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের পথে নানা রকম ঘটনার অনুভূতি।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। পাকবাহিনীর হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞের বিপরীতে বাংলার মানুষ জেগে উঠেছিল অমিত শক্তি সঞ্চয় করে। পাকবাহিনীর অত্যাচারের নানা দিক ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার বিভিন্ন চরণে যেভাবে বারবার এসেছে উদ্দীপক কবিতাংশে তেমনটা লক্ষ করা যায় না। এছাড়াও কবিতার ভাষা আন্দোলনের কথা, যুদ্ধের সময় হতভাগ্য মানুষের দেশ ছাড়ার বাস্তবতা এবং শত্রুমুক্ত মাতৃভূমিতে সদর্প প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়েছে, যা আলোচ্য উদ্দীপক কবিতাংশে পাওয়া যায় না। তাই উদ্দীপকটিকে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সামগ্রিক পরিচয় বলা যায় না।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
সাহসী জননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Sahoshi Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
৪নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দুঃসাহসী এক বিপ্লবী বাঙালি ছিলেন সূর্যসেন। ব্রিটিশদের শাসন শোষণ থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার বাসনায় তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন। চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করার জন্য গড়ে তোলেন ‘চট্টগ্রাম বিপ্লবী বাহিনী’। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামকে ইংরেজমুক্ত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। কিন্তু বেশিদিন তা রক্ষা করতে পারেন নি। ১৯৩৩ সালে তিনি গ্রেফতার হন। চরম নির্যাতনের পর তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয়। 
ক. ‘কার্তুজ’ শব্দের অর্থ কী? ১
খ. সাহসী জননী বাংলার বুকে চাপা মৃতের আগুন কেন? ২
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো। ৩
ঘ. ‘উদ্দীপকের প্রকাশিত চেতনাই ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার মূলভাব’ - উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো। ৪

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. ‘কার্তুজ’ শব্দের অর্থ বন্দুকের টোটা।

খ. হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিশোধ নেওয়ার সুপ্ত বাসনায় সাহসী জননী বাংলার বুকে চাপা মৃতের আগুন জ্বলে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পরিণত হয় লাশের দেশে। সমস্ত দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে পাকিস্তানি যুদ্ধবাজ সেনাবাহিনী। স্বজনহারা, গৃহহারা বাঙালি বুকে পাথর বেঁধে অপেক্ষা করে এর সমুচিত জবাব ফিরিয়ে দিতে তাদের মনের ভেতরের প্রতিশোধের ছাইচাপা আগুন জ্বলে। এই প্রসঙ্গটিই উঠে এসেছে আলোচ্য চরণে।

গ. দেশের স্বাধীনতা অর্জনে সাফল্যের দিক বিবেচনায় উদ্দীপকটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় উল্লেখিত হয়েছে বাঙালির বীরত্বের কথা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ ও নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল। তাদের বর্বরোচিত আচরণের প্রতিবাদে মুক্তিকামী মানুষ গর্জে উঠেছিল। তাদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিল প্রবল প্রতিরোধ। এই সংগ্রামী চেতনা ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশের মানুষের মনে। তাই তারা যুদ্ধ করেছিল জীবন বাজি রেখে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিল।

উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি, এই মাটির এক সাহসী সন্তান সূর্যসেন তাঁর বাহিনী নিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইংরেজদের শাসন-শোষণ থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য প্রাণপণ লড়াই করেন। চট্টগ্রামকে তিনি সাময়িকভাবে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করেন। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় লাভের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সূর্যসেন তাঁর আন্দোলনকে সম্পূর্ণরূপে সফল করতে পারেননি।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রে স্বাধীনতার চেতনাই প্রকাশিত হয়েছে।

‘সাহসী জননীর কবিতায় মুক্তযুদ্ধে বাঙালি সাহসী ভূমিকার উল্লেখ করা হয়েছে। দানবতুল্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির রক্তে তাদের হাত রঞ্জিত করেছিল। বাঙালিকে তার অধিকার না দিয়ে তাদের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ চালিয়েছিল। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালিও একদিন গর্জে ওঠে, অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হানাদারদের পরাজিত করে ও দেশ থেকে বিতাড়িত করে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত জনতার প্রবল প্রতিরোধের কথাই কবিতার বর্ণিত হয়েছে।

উদ্দীপকে বর্ণিত সূর্যসেন ছিলেন এক বীর বাঙালি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এক বিপ্লবী বাহিনী গঠন করে চট্টগ্রামকে ইংরেজ মুক্ত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ইংরেজরা তাঁকে গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের যে মহান প্রেরণা তিনি দিয়ে গেছেন ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায়ও তার পরিচয় পাই আমরা।

আলোচ্য কবিতাটি মূল্যায়ন করলে আমরা পাই, কবিতার মূলবক্তব্যে স্থান পেয়েছে দেশপ্রেমের চেতনায় সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও প্রতিরোধ যুদ্ধ। আর উদ্দীপকেও উল্লেখিত হয়েছে একই দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সূর্যসেনের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আত্মদানের ঐতিহাসিক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ছিল বাঙালির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার আন্দোলন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সূর্যসেনের মতো আরো বহু মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। একসময় ব্রিটিশরা এদেশ ছেড়ে চলে যেতেও বাধ্য হয়েছে। আবার সেই চেতনাকে ধারণ করেই বাঙালি এদেশকে পাক-হানাদারমুক্ত করেছিল। তাই এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতাতে একই চেতনা প্রকাশিত হয়েছে।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
সাহসী জননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Sahoshi Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer
৫নং সৃজনশীল প্রশ্নঃ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জয় বাংলা বাংলার জয়
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ একসাথে জেগেছে অন্ধ রাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।
ক. বাঙালিরা হানাদারদের কী কেটে দিয়েছে? ১
খ. জাগে, নীলকমলেরা জাগে- কেন? ২
গ. উদ্দীপকের শেষ চরণের ভাবটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাথে কীভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. ‘হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়’- এমন প্রত্যয়ের কারণ ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরঃ
ক. বাঙালিরা হানাদারদের কান কেটে দিয়েছে।

খ. দেশমাতৃকাকে শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের আত্মত্যাগের স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।

‘নীলকমল’ শব্দটির শাব্দিক অর্থ ‘নীল রঙের পদ্ম’। কিন্তু ‘‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় নীলকমল বলতে রূপকথার রাজকুমারদের বোঝানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নামক বাংলার রূপকথার রাজকুমার হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন রাত জেগে কাটিয়েছেন। বিপুল বিক্রমে রুখে দিয়েছেন শত্রুবাহিনীর আগ্রাসন।

গ.  ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় যুদ্ধ শেষে পূর্ণভাবে স্বাধীনতা প্রাপ্তির কথা বলা হলেও উদ্দীপকে কেবল স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এক গৌরবের ইতিহাস। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালি কীভাবে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল সেই প্রেক্ষাপটই তুলে ধরা হয়েছে। বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-মরণ যুদ্ধ করে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে চির প্রত্যাশিত স্বাধীনতা অর্জন করে।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে বাঙালির দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তির প্রত্যাশা। এদেশের কোটি মানুষ জেগে উঠেছে মুক্তিসংগ্রামের চেতনায়। উদ্দীপকে সেই স্বাধীনতাকামী মানুষের হৃদয়ে জেগে থাকা মুক্তির বাসনায় স্বরূপ ফুটে উঠেছে। স্বাধীনতা যেন প্রভাতের লাল সূর্যের মতো এখনই উদিত হবে। অন্যদিকে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীকে বিপুল বিক্রমে সম্পূর্ণরূপে পরাভূত করার কথা বলা হয়েছে। তাই উদ্দীপকের শেষ চরণের ভাবটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে ‘হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়’ বলতে স্বাধীনতা বিজয়ের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় এই প্রত্যয়ের পূর্ণতা লাভ লক্ষ করা যায়।

‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতাটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত হানাদাররা বাঙালিকে ভীতু ও ভেতো বলে অবজ্ঞা, অবহেলা করেছিল। সেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, তারা বীরের জাতি। শত্রুর অমানবিক আরচণ, পৈশাচিক উল্লাস আর নৃশংসতায় বাঙালি দমে যায়নি বরং তাদের সমূলে উৎপাটন করেছে। বীর জাতি বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে ফিরে এসেছে দেশের মাটিতে।

উদ্দীপকের কবিতাংশে ব্যক্ত হয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের একান্ত প্রত্যাশার কথা। আশা করা হয়েছে বাংলার নিশ্চিত জয় হবে। এবং তা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে উচ্চারিত হয়েছে। দেশের কোটি মানুষ যখন দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য এক হয়েছে তখন স্বাধীনতার সূর্য উদিত হতে বাধ্য। ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায়ও আমরা এই সত্য লক্ষ করি।

আলোচ্য কবিতাংশ ও ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতা পর্যালোচনা করলে আমরা পাই, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষাকে কখনই চেপে রাখা যায় না। তা ছাই চাপা আগুনের মতো জ্বলে ওঠে। মুক্তযুদ্ধে এদেশের মানুষ পাক-হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, নির্বিচার হত্যার সমুচিত জবাব দিয়েছে। চরম প্রতিশোধ নিয়েছে। লক্ষ মানুষের আত্মদান ও ত্যাগের বিনিময়ে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করেছে। দেশপ্রেমের চেতনায় গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তাদের মধ্যে সীমাহীন সাহস ও আত্মপ্রত্যয় সৃষ্টি হয়েছে। আলোচ্য উদ্দীপকেও সেই প্রত্যয়ের কথাই ব্যক্ত হয়েছে। গোটা বাঙালির অন্তরেই ধ্বনি হয়েছিল স্বাধীনতার জয়গান। যুদ্ধের শুরু থেকেই তারা যেন বিজয়ের সুগন্ধ পেয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই তাদের হৃদয়ের আত্মবিশ্বাস হয়ে উঠেছিল পাহাড়সম।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
সাহসী জননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Sahoshi Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের রক্তাক্ত হাত কয় মাসে মুচড়ে দিয়েছি?
উত্তর: আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের রক্তাক্ত হাত নয় মাসে মুচড়ে দিয়েছি।

২. বাঙালিরা কিসে মাত হবে বলে পাকিস্তানিরা ভেবেছিল?
উত্তর: বাঙালিরা অস্ত্রে মাত হবে বলে পাকিস্তানিরা ভেবেছিল।

৩. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাংলাদেশকে কিসের দেশ বলা হয়েছে?
উত্তর: সাহসী জননী বাংলা কবিতায় বাংলাদেশকে চির কবিতার দেশ বলা হয়েছে।

৪. অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে শেষে কী হয়ে গেল?
উত্তর: অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে শেষে ঘৃণার কার্তুজ হয়ে গেল।

৫. সাহসী জননী বাংলার বুকে কিসের আগুন?
উত্তর: সাহসী জননী বাংলার বুকে চাপা মৃতের আগুন।

৬. বুড়িগঙ্গা, পদ্মার নদীতীরের গ্রামে কী পড়েছে?
উত্তর: বুড়িগঙ্গা, পদ্মার নদীতীরের গ্রামে ডাকাত পড়েছে।

৭. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় মধ্যরাতে কাদের আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় মধ্যরাতে হানাদারদের আসার কথা বলা হয়েছে।

৮. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় কাদের জেগে থাকার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘সাহসী জননী বাংলা’  কবিতায় নীলকমলদের জেগে থাকার কথা বলা হয়েছে।

৯. কবিতার হাতে কী?
উত্তর: কবিতার হাতে রাইফেল।

১০. ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতা কিসে ভোজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় প্রতিশোধে ভোজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

১১. হিন্দু পুরাণ মতে দেবতাদের শত্রু কারা?
উত্তর: হিন্দু পুরাণ মতে দেবতাদের শত্রু অসুররা।

৯ম-১০ম শ্রেণির
বাংলা ১ম পত্র গাইড
সাহসী জননী
কবিতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

SSC Bangla 1st Paper
Sahoshi Jononi
Kobita
Srijonshil
Question-Answer

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘তোদের অসুর নৃত্য.... ঠা ঠা হাসি .... ফিরিয়ে দিয়েছি’- চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুরতার জবাব বাঙালি কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছে-এ অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির ওপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন চালায়। অসুর নৃত্য, ঠা ঠা হাসি ইত্যাদির প্রতীকে কবিতায় তাদের সেই ধ্বংসলীলাকেই নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু বাঙালি চুপচাপ নির্যাতন সহ্য করেনি। বরং প্রতিশোধের প্রবল মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে পাকবাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। ফলে শত্রুদের ছোড়া তীরে অবশেষে তারা নিজেরাই বিদ্ধ হয়েছে।

২. কবি বাংলাদেশকে ‘চির কবিতার দেশ’ বলেছেন কেন?
উত্তর: বাংলাদেশে কবিতার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নির্দেশ করতে কবি কামাল চৌধুরী ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাংলাদেশকে ‘চির কবিতার দেশ’ বলেছেন।

বাংলাদেশ শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম তীর্থভূমি। কবিতার ঐশ্বর্যে এদেশের সংস্কৃতি পরিপূর্ণ। এদেশে রয়েছে কবিতার সমৃদ্ধ এক ঐতিহ্য। কবিতার জন্য বাংলা ও বাঙালি জাতি পৃথিবীখ্যাত। তাই ‘কবিতার দেশ’ বললে যেন বাংলাদেশকেই বোঝানো হয়। আলোচ্য কবিতায় এই উপমা প্রদানের মাধ্যমে কবি সেই চেষ্টাই করেছেন।

৩. ‘কিন্তু কী ঘটল শেষে, কে দেখাল মহা প্রতিরোধ’- কবি এ কথা বলেছেন কেন?
উত্তর: পাকবাহিনীর অবমূল্যায়নের সমুচিত জবাব বাঙালি দিয়েছিল সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ার মাধ্যমে- এ প্রসঙ্গটিই উঠে এসেছে আলোচ্য চরণে।

পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠীর ধারণা ছিল বাঙালি একটি মেরুদণ্ডহীন ভীতু জাতি। অন্যায়, অবিচার তারা সবসময় মুখ বুঝে সইবে। ভেবেছিল অস্ত্রের জোরে ধ্বংস-মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে বাঙালিকে শৃঙ্খলিত করে রাখা যাবে। কিন্তু তাদের সে ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়। বাঙালির বিপুল বিক্রমের সামনে তাদের সমস্ত শক্তি তুচ্ছ প্রমাণিত হয়। তাই কবি উষ্মাভরে তাদের কাছে আলোচ্য প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছেন।

৪. ‘শেষে হয়ে গেল ঘৃণার কার্তুজ’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ভাষা আন্দোলন থেকে প্রেরণা নিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার সংগ্রামে দ্বিগুণ দৃঢ়তার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে- আলোচ্য চরণটির মমার্থ এটিই।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি প্রথম পাকিস্তানিদের অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সেই ধারাবাহিকতার চূড়ান্ত লগ্ন উপস্থিত হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৫২ থেকে জমতে থাকা সমস্ত অন্যায়ের জবাবে মহা বিস্ফোরণ ঘটে যায় বাঙালির মাঝে। ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতি তাদের প্রতিশোধস্পৃহাকে আরো শানিত করে।

৫. ‘অ আ ক খ বর্ণমালা পথে পথে তেপান্তরে ঘুরে’- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি পরবর্তী সময়ে বাঙালির সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে কাজ করেছে- আলোচ্য চরণটিতে এটিই বলা হয়েছে।

বাঙালির বীরত্ব আর শৌর্যের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিবাদের প্রথম স্তম্ভ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এর মাধ্যমেই বাঙালির মাঝে স্বাধিকার চেতনার বীজ বপন হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তারা নিরন্তর নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে চলেছে। আর সেই পথে প্রেরণা জুগিয়েছে ভাষার জন্য বাঙালির সুমহান আত্মত্যাগ।

৬. কবিতার হাতে রাইফেল- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে কবিতার প্রেরণাদাত্রীর ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার কথা বলা হয়েছে আলোচ্য চরণে।

কবিতা বাঙালির জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ১৯৭১ সালে বাঙালি কবিরা তাঁদের কবিতাকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কবিতাতে উঠে এসেছিল বাঙালির প্রতিরোধ ও মুক্তির কথা। এ কারণেই রূপকার্থে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে।
Share: