বাংলাদেশের নদী, বিল, হাওর, হৃদ ও সমুদ্র সম্পর্কিত তথ্যাবলী

বাংলাদেশের নদী

নদী: উৎপত্তিস্থল
পদ্মা: হিলাময় পর্বতের গাঙ্গোত্রী হিমবাহ।
ব্রহ্মপুত্র যমুনা: তিব্বতের কৈলাস শৃঙ্গের মানস সরোবর হ্রদ।
মেঘানা: আসামের নাগা মনিপুর পাহাড়ের দক্ষিণে লুসাই পাহাড়।
কর্ণফুলী: মিজোরামের লুসাই পাহাড়।
সাঙ্গু: মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমানার আরাকান পর্বত।
মাতামুহুরী: লামার মইভার পর্বত।
হালদা: খাগড়ছড়ির বাদনাতলী পর্বতশৃঙ্গ।
ফেনী: পার্বত্য ত্রিপুরা পাহাড়।
তিস্তা: সিকিমের পার্বত্য অঞ্চল।
মহানন্দা: হিমালয় পর্বতমালার মহালদিরাম পাহাড়।

করতোয়া: সিকিমের পার্বত্য অঞ্চল।

বাংলাদেশের নদী, বিল, হাওর, হৃদ ও সমুদ্র সম্পর্কিত তথ্যাবলী

প্রধান নদীগুলোর শাখা-উপনদীঃ

শাখা নদী
১. পদ্মাঃ ভৈরব, কুমার, মধুমতি, আড়িয়ালখাঁ, মাথাভাঙ্গা, গড়াই।
২. যমুনাঃ ধলেশ্বরী
৩. ব্রহ্মপুত্রঃ যমুনা
৪. ভৈরবঃ কপোতাক্ষ, পশুর।
৫. মেঘনাঃ তিতাস, ডাকাতিয়া

উপনদীঃ
১. পদ্মাঃ মহানন্দা, কপোতাক্ষ।
২. যমুনাঃ তিস্তা, করতোয়া, ধরলা, আত্রাই
৩. মেঘনাঃ গোমতি, মনু, বাউলাই, কংস, সোমেশ্বরী
৪. কর্ণফুলীঃ হালদা, কাসালং বোয়ালখালী
৫. মহানন্দাঃ পূনর্ভবা, টাঙ্গন, নাগর।

প্রধান নদীগুলোর গতি প্রবাহঃ

পদ্মাঃ হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাশ হয়ে রাজশাহী জেলার মধ্যেদিয়ে বাংলাদেশে পদ্মা নামে প্রবেশ করেছে। এর পর রাজবাড়ী জেলার গোয়লন্দের কাছে যমুনার সাথে মিলিত হয়ে পদ্মা নামে যাত্রা শুরু করে চাঁদপুরে পৌছেছে। দাঁদপুরে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে এটি এবং নতুন নাম করন হয়েছে মেঘনা।

যমুনাঃ ব্রহ্মপুত্র হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের মানস সরোবরে উৎপন্ন হয়ে কুড়িগ্রামের মাজাহরালীর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জামালপুরের দেওয়ান গঞ্জে এই নদীটি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নামে বিভক্ত হয়েছে। উৎপন্ন যমুনা নদী গোয়ালন্দে গিয়ে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। অন্যদিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী কিশোরগঞ্জে ভৈরববাজারে কালনী নদীর  সাথে মিলিত হয়েছে।

মেঘনাঃ আসামের বরাক নদী সিলেট সীমান্তে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখার বিভব্ত হয়ে যথাক্রমে সিলেটের উত্তর ও দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই শাখা দুটি পুনরায় হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে মিলিত হয়ে নামধারন করেছে কালনী। কালনী নদী আরো কিছুদুর অগ্রসর হয়ে নাম ধারন করেছে মেঘনা। মেঘনা নদী প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরে পদ্মার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

কর্ণফুলীঃ কর্ণফুলী চট্টগ্রাম অঞ্চলের মূল নদী। এর উৎপত্তিস্থল মিজোরামের লুসাই পাহাড়ে। রাঙামাটি এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পতেঙ্গার সন্নিকটে এটি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

নদী-তীরবর্তী শহর
ঢাকা: বুড়িগঙ্গা
নারায়নগঞ্জ: শীতলক্ষা
টঙ্গী: তুরাগ
চট্টগ্রাম: কর্ণকুলী
খুলনা: রূপসা, ভৈরব
ময়মনসিংহ: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র
রাজশাহী: পদ্মা
সিলেট: সুরমা
বরিশাল: কীর্তনখোলা
বগুড়া: করতোয়া
ফরিদপুর: আড়িয়াল খাঁ
পাবনা: ইছামতি
সিরাজগঞ্জ: যমুনা
কুমিল্লা: গোমতি
চাঁদপুর: মেঘনা
মংলা: পশুর
ঝালকাঠি: বিষখালী
টেকনাফ: নাফ
কাপ্তাই: কর্ণফুলী
দিনাজপুর: পুনর্ভবা
ঝিনাইদহ: নবগঙ্গা
আশুগঞ্জ: মেঘনা
যশোর : কপোতাক্ষ
ভৈরব: মেঘনা
ফেনী: ফেনী
রংপুর : তিস্তা

নদী তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাঃ
১. পদ্মা সেতু (প্রস্তাবিত): পদ্মা নদীর ওপর (মুন্সিগঞ্জ ও শরিয়তপু)
২. যমুনা বহুমুখী সেতুঃ যমুনা নদীর ওপর (সিরাজগঞ্জ ওটাঙ্গাইল)
৩. হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (রেল): পাকশীর কাছে পদ্মা নদীর ওপর (পাবনা)
৪. বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১: বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর (ঢাকা)
৫. বাংলাদেশ-জাপান মৈতী সেতু-১: মেঘনার ওপর (দাউদকান্দি কুমিল্লা)
৬. বাংলাদেশ-জাপান মৈত্র সেতু-২: গোমতী নদীর ওপর (মুন্সিগঞ্জ-কুমিল্লা)
৭. বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-২: মহানন্দা নদীর ওপর (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)
৮. বাংলাদেশ-চীন মৈত্র সেতু-৩ করতোয়া নদীর ওপর (পঞ্চগড়)
৯. বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-৪: ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর (শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ)
১০. বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-৫: গাবখান নদীর ওপর (ঝালকাঠি) 
১১. লালন শাহ সেতুঃ পদ্মা নদীর ওপর (পাবনা ও কুষ্টিয়া)
১২. খানজাহান আলী সেতুঃ রূপসা নদীর ওপর (খুলনা)
১৩. ফারাক্কা বাঁধঃ গঙ্গা নদীর ওপর (মুর্শিদাবাদ)
১৪. বাকল্যান্ড বাঁধঃ বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে
১৫. চট্টগ্রাম বন্দরঃ কর্ণফুলী নদীর তীরে (চট্টগ্রাম)
১৬. মংলা বন্দরঃ পশুর নদীর তীরে (রংপুর)
১৭. তিতাস গ্যাসক্ষেত্রঃ তিতাস নদীর তীরে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
১৮. পাকশী কাগজ কলঃ পদ্মা তীরে (পাকশী, পাবনা)
১৯. আহসান মঞ্জিলঃ বুড়িগঙ্গার তীরে (ঢাকা)

বাংলাদেশের নদী, বিল, হাওর, হৃদ ও সমুদ্র সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্যাবলীঃ
১. বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে- মহানন্দা, আত্রাই, টাংগন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে-কুলিখ।
২. বাংলাদেশে মোট ২৩০টি নদী আছে। যার মধ্যে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। এর মধ্যে ৫৪টি ভারত ও ৩টি মায়ানমার থেকে এসেছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত নির্দেশকারী নদী নাফ।
৩. সবচেয়ে বড় বিল চলন (নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ), ডাকাতিয়া খুলনায় অবস্থিত।
৪. সবচেয়ে বড় হাওড় হাকালুকি (সিলেট, মৌলভিবাজার), টাংগুয়ার হাওড় সুনামগঞ্জে অবস্থিত।
৫. বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার- এর দৈঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার।
৬. ইনানি সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে অবস্থিত।
৭. আড়িয়াল বিল ঢাকা জেলায় অবস্থিত।
৮. তাগরাইবিল কুড়িগ্রামে অবস্থিত।
৯. ফয়স লেক চট্টগ্রামে, কাপ্তাই লেক (৮০ বর্গ কি. মি) রাঙামাটিতে, প্রান্তি ক ও বগা লেক বান্দরবানে অবস্থিত।
১০. বঙ্গোপসাগরে গভীরতম খাদের নাম সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড (৫৩০০ মিটার)
Share:

বাংলাদেশের অবস্থান, আয়তন ও ভূ-প্রকৃতি

বাংলাদেশের অবস্থান ও সীমা

১. অবস্থানঃ ২০°৩৪' -২৬°৩৮' উ. অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১' -৯২°৪১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।
২. সীমাঃ বাংলাদেশের পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা রাজ্য, মিজোরাম এবং মায়ানমার, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
৩. আয়তনঃ ১৪৭৫৭০ বর্গ কি. মি/ ৫৬৯৭৭ বর্গ মাইল।
৪. মোট সীমানাঃ ৫১৩৮ কি. মি., ভারত-৪১৪৪ কি. মি., সমুদ্র- ৭১১ কি. মি., মায়ানমার-২৮৩ কি. মি.।
৫. অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা- ২০০ নটিক্যাল মাইল ও রাজনৈতিক- ১২ নটিক্যাল মাইল।
৬. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য-১৫৫ কি. মি.।
৭. সর্ব উত্তরের জায়গা- জায়গীর জোত, ইউনিয়ন- বাংলাবান্ধা, উপজেলা-তেতুলিয়া, জেলা- পঞ্চগড়।
৮. সর্ব দক্ষিণের জায়গা- ছেড়া দ্বীপ, ইউনিয়ন-সেন্টমার্টিন, উপজেলা, টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার।
৯. সর্ব পূর্বের জায়গা- আখানইঠং, উপজেলা- থানচি, জেলা-বান্দরবান।
১০. সর্ব পশ্চিমের জায়গা- মনাকশা, উপজেলা- শিবগঞ্জ, জেলা- চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
১১. সর্ব পূর্বের থানা- জকিগঞ্জ (সিলেট), দক্ষিণ-পশ্চিমের থান- শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)।
১২. দক্ষিণ-পূর্বের থানা- টেকনাফ (কক্সবাজার), উত্তর-পশ্চিমের থানা-তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়)।
১৩. বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা-৩১টি।
১৪. দেশে মোট উপজেলা-৪৮৩। মোট থানা- ৬০৯। মোট পৌরসভা-৩০৯টি।
বাংলাদেশের অবস্থান, আয়তন ও ভূ-প্রকৃতি

বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিঃ 

১। টারশিয়ারী যুগের পাহাড়সমূহ
২। প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ
৩। সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি।

১। টারশিয়ারী যুগের পাহাড় সমূহঃ দক্ষিণপূর্ব ও উত্তর পূর্ব অঞ্চলের পাহাড়সমূহ এ বিভাগের অন্তর্গত। পাহাড়গুলোকে আসামের লুসাই এবং আরাকানের পাহাড়ের সমগোত্রীয় বলে ধারণা করা হয়। এ পাহাড়গুলো বেলেপাথর, শেল পাথর ও কর্দম দ্বারা গঠিত। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহের গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বিজয় (তাজিংডং), উচ্চতা ৩১৮৫ ফুট। উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৪৪ মিটার। কোথাও কোথাও এদের উচ্চতা ৩০ থেকে ৯০ মিটার।

২। প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহঃ আনুমানিক ২৫,০০০ বছর পূর্বের সময়কে প্লাইস্টোসিনকাল বলা হয়। উত্তর পশ্চিমাংশের বরেন্দ্রভূমি, মধ্যভাগের ভাওয়ালের গড় এবং কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড় ও উচ্চভূমি এ বিভাগের অন্তর্গত। এ অঞ্চলের মাটির রং লাল ও ধুসর।

৩। সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমিঃ টারশিয়ারী গুগের পাহাড়সমূহ এবং প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ চাড়া সমগ্র বাংলাদেশ এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। এটি নদীবিধৌত পলি দ্বারা সুষ্ট এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। প্লাবন সমভূমি বাংলাদেশের উত্তরাংশ থেকে উপক‚লের দিকে ক্রমনিম্নভাবে নেমেছে।
Share:

বিভিন্ন সালে আগত মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী

আলোচ্য বিষয়ঃ পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য, ভাষা আন্দোলনের প্রথম-দ্বিতীয়-শেষ পর্যায়, ভাষা আন্দোলনের শহীদবৃন্দ, এক নজরে একুশে ফেব্রুয়ারী, পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ও রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়, যুক্তফ্রন্ট গঠন, প্রাদেশিক নির্বাচন-৫৪, পূর্ববাংলায় কেন্দ্রের শাসন, আইযূব খানের ক্ষমতা দখল, ছয়দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, এগারদফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ৭ মার্চের ভাষন, মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক, সর্বত্র জাতীয় পতাকা উত্তোলন, অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতারঘোষনা, মুক্তিফৌজ ও মুক্তিবাহিনী গঠন, অন্যান্য বাহিনী, প্রবাসী সরকার গঠন, অপারেশন জ্যাকপট, মিত্রবাহিনী গঠন, বৃদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড, চূড়ান্ত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন, মুক্তিযুদ্ধে খেতাব প্রদান, প্রাপ্ত স্বীকৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র/প্রামাণ্যচিত্র/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের অবদান। 
বিভিন্ন সালে আগত মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী

বিভিন্ন সালে আগত প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলীঃ

১. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ১৯৯৯ সালে স্বীকৃতি পায়।

২. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৬৮ জনকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

৩. স্বাধীনতার প্রথম ডাকটিকিটে শহীদ মিনার ছিল।

৪. বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কবর চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায়।

৫. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয় ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর।

৬. বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবী প্রথম করেন ধীরেন্দনাথ দত্ত।

৭. মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।

৮. ছয়-দফা দাবী প্রথম লাহোরে উত্থাপন করা হয়।

৯. মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।

১০. মুজিবনগর মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত।

১১. মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত।

১২. মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহর দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল।

১৩. মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য ৭জনকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেওয়া হয়।

১৪. ১৯৫২ সালে তৎকালীন ভাষা আন্দোলন এক নতুন জাতীয় চেতনার জন্ম দিয়েছি।

১৫. মুজিবনগরে ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়েছিল।

১৬. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দীন।

১৭. আওয়ামী লীগের ছয়-দফা ১৯৬৬ সালে পেশ করা হয়।

১৮. বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুররহমানের পদবী ছিল সিপাহী।

১৯. তৎকালীন পাকিস্তানে বাংলাভাষা রাষ্টভাষা হিসেবে ১৯৫৬ সালে স্বীকৃতি লাভ করে।

২০. বাংলাদেশের মহিলা বীরপ্রতীক ক্যাপ্টন সেতারা বেগম ও তারামন বিবি।

২১. মুক্তিযুদ্ধে ১নং সেক্টর ছিল চট্টগ্রাম।

২২. অপারেশন সার্চ রঅইট শুরু হয় ২৫ মার্চ, ১৯৭১।

২৩. তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানকালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

২৪. তমদ্দুন মজলিস ১৯৪৭ সালে গঠিত হয়।

২৫. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্স ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমান।

২৬. রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন অঙ্কুরিত হয় ১৯৪৭ সালে, মহীরুহে পরিণত হয় ১৯৫২ সালে।

২৭. ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরষদ গঠন করা হয়।

২৮. সাইমন ড্রিং নামক বিদেশী সাংবাদিক ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বর্বরতার খবর সর্বপ্রথম বহির্বিশ্বে প্রকাশ করেন।

২৯. ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এ. কে খন্দকার।

৩০. বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি এম. এ. জি ওসমানী।

৩১. বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঘোষণা করেন “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

৩২. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ফাল্গুন মাসের ৮ তারিখ ছিল (১৩৫৮)।

৩৩. মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত হয়।

৩৪. সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ১৮৫৭ সালের ২৬ জানুয়ারী।

৩৫. ১৯৪৮-৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময়কালে প্রতিবছর ‘ভাষা দিবস’ বলে একটি দিন পালন করা হয়। দিবসটি ছিল ১১ মার্চ।

৩৬. আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ‘স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

৩৭. লাহোর প্রস্তাব ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার জন্য স্থানীয় রাষ্ট্রসমূহ গঠনের প্রস্তাব।

৩৮. মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক ছিলেন এ কে খন্দকার।

৩৯. ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জেনারেল নিয়াজী ঢাকা রেসকোর্সে মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্যঃ

১. বীরশ্রেষ্ট ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮ জন, বীর বিক্রম ১৭৫ জন ও বীর প্রতীক ৪২৬ জন।

২. মহিলা বীরপ্রতীক তারামন বিবি ও সেতারা বেগম। তারামন বিবি গণবাহিনী ও সেতারা বেগম সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন।

৩. ২ মার্চ ১৯৭১ সালে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

৪. জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে।

৫. প্রথম সর্বাধিনায়ক- সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

৬. মুজিব নগরের পূর্বনাম- ভবেরপাড়া, বৈদ্যনাথ তলা।

৭. মুজিবনগর সরকারের ঘোষণা পত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী

৮. আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মিত্র বাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন জেনারেল অরোরা ও পাকিস্তানের পক্ষে এ. কে. নিয়াজী।

৯. কে. এম সাহাবুদ্দীন ও আমজাদুল হক কুটনীতিকদ্বয় প্রথম বাংলাদেশের আনুগত্য স্বীকার করেন।

১০. প্রথম স্বাধীন মন্ত্রীসভা গঠিত হয় ১০ এপ্রিল ১৯৭১।

১১. “এ দেশের মাটি চাই, মানুষ নয়” ইয়াহিয়া খানের উক্তি।

১২. যশোর জেলা প্রথম শত্রুমুক্ত হয় (৬ ডিসেম্বর ১৯৭১)।

১৩. মুক্তিযুদ্ধের উপর রচিত September on jessore road কবিতাটির রচয়িতা মার্কিন কবি অ্যালেন গিনেসর্বাগ।

১৪. বাংলাদেশ- ভারত যৌথবাহিনী গঠিত হয় ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে।

১৫. শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগারে রাখা হয়।

১৬. সর্ব কনিষ্ট খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম (টাঙ্গাইল)।

১৭. বিদেশী বীর প্রতীক ডব্লিও এইচ ওয়াডারল্যান্ড (নেদারল্যান্ডস)।

১৮. বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম শহীদ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও শেষ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।

১৯. মেজর জিয়া ১ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন।

২০. যুদ্ধের সময় সাবাদেশে ১১টি সেক্টর ছিল।

২১. ঢাকা ২নং সেক্টরের অধীনে ছিল

২২. ১০ নং সেক্টরে কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না।

২৩. প্রবাসী সরকার স্থাপিত ১০ এপ্রিল ও শপথ গ্রহণ ১৭ এপ্রিল ১৯৭১।

২৪. অস্থায়ী সচিবালয় মুজিবনগর ও ক্যাম্প অফিস ৮ থিয়েটার রোড, কলকাতা।

২৫. প্রামান্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইট’ ও “এ স্টেট ইজ বর্ণ” এর নির্মাতা জহির রায়াহান।

২৬. বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল- শহীদ ৮ এপ্রিল ৭১, বাড়ী- ভোলা।

২৭. বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আঃ রব- শহীদ ২০ এপ্রিল ৭১, বাড়ী- ফরিদপুর।

২৮. বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফনেন্যান্ট মতিউর রহমান- শহীদ ২০ আগস্ট ৭১, বাড়ী নরসিংদী।

২৯. বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ- শহীদ ৫ সেপ্টেম্বর ৭১, বাড়ী- নড়াইল।

৩০. বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান- শহীদ ২৮ অক্টোবর ৭১, বাড়ী-ঝিনাইদহ।

৩১. বীরশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার রুহুল আমী-শহীদ ১০ ডিসেম্বর ৭১, বাড়ী- নোয়াখালী।

৩২. বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর- শহীদ ১৪ ডিসেম্বর ৭১, বাড়ী- বরিশাল।

৩৩. ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস।

৩৪. আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন এ, কে. খন্দকার।

৩৫. তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

৩৬. বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত মনোরঞ্জন ধর (জাপানে নিযুক্ত)।

৩৭. ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণা করা হয়।

৩৮. ১৯৪৭ সালে গঠিত তমদ্দুন মজলিশ প্রথম রাষ্ট্রভাষার দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলে।

৩৯. বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় ১৯৫৬ সালে।

৪০. ২০০১ সালে ১৮৮ টি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।

৪১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এক নতুন জাতীয় চেতনার জন্ম দেয়।

৪২. ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

৪৩. ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।

৪৪. মো. আলী জিন্নাহ প্রথম রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন “উদুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”।

৪৫. ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।

৪৬. পাকিস্তানের প্রথম সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে।

৪৭. পাকিস্তানে প্রথম সামরিক শাসন জারি করা হয় ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে।

৪৮. ১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভষা সংগ্রাম কমিটি, ৩০ জানুয়ারি, ১৯৫২ এর এক জনসভায়।

৪৯. প্রথম শহীদ মিনার উন্মোচন করেন শহীদ শফিউরের পিতা।


নিজে নিজে চেষ্টা করিঃ

১. শেখ মুজিবুর রহমান করাচীর কোন কারাগারে বন্দী ছিলেন?

২. মুজিবনগরের পূর্বনাম কি ছিলো?

৩. মুক্তিযুদ্ধে কয়টি সাবসেক্টর ছিল?

৪. কোন সেক্টর কমান্ডার কোন খেতাব পাননি?

৫. বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের ছিনতাইকৃত বিমানের নাম কি?

৬. মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চীফ অব স্টাফ কে ছিলেন?

৭. ‘এখনও অনেক রাত’ চলচ্চিত্রের পরিচালক কে?

৮. ‘A Golden Age’  গ্রন্থের লেখক কে?

৯. মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের বর্হিবিশ্বের বিশেষ দূত কে ছিলেন?

১০. ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর দিক হতে কোনটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় ভাষা ছিল?

১১. পাকিস্তানের প্রথম রাজধানী কোথায় ছিল?

১২. ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ শুধু ‘আওয়ামী লীগে’ পরিণত হয় কবে?

১৩. ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে কার নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গকরা হয়?

১৪. আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা ও সংগীত গৃহীত হয় কবে?

১৫. প্রথম শহীদমিনার উদ্বোধন করেন কে?

১৬. একুশে ফেব্রুয়ারীর বাংলা তারিখ কত?

১৭. একুশের প্রথম কবিতার কবি কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন?

১৮. পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর কে ছিলেন?

১৯. বীর শ্রেষ্ঠ মতিউরের দেহাবশেষ কবে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়?

২০. বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুরের দেহাবশেষ কবে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়?

২১. শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু উপাধি কবে দেয়া হয়?

২২. পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর কে ছিলেন?

২৩. ২১ দফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবী কোনটি?

২৪. বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম সরকার প্রধান কে?

২৫. মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকার ডিজাইনার কে?

২৬. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কালুরঘাট হতে কোথায় স্থানান্তর করা হয়?

২৭. ‘The liberation of Bangladesh’  গ্রন্থের লেখক কে?

২৮. মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ৮টি ডাকটিকিটের নকশা করেন কে?

২৯. এ পর্যন্ত মোট কতবার মুক্তিযোদ্ধ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে?

৩০. উর্দু কোন ভাষার শব্দ এবং অর্থ কি?
Share:

১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী

১৯৪৭ সাল, ১৪ আগস্টঃ পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন তারিখে লর্ড মাইন্ট ব্যাটেন ভারত বিভাগের নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতি অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারত স্বাধীনতা আইন’ পাস হয়। এই আইনের ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। পূর্ববঙ্গ তখন পূর্ব পাকিস্তানরূপে পাকিস্তানের একপি প্রদেশে পরিণত হয়।

১৯৪৭ সাল, ২ সেপ্টেম্বরঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাশেম কর্তৃক ‘তমদ্দুন মজলিশ’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা।

১৯৪৮ সাল, ২৩ ফেব্রুয়ারীঃ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত। কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ কর্তৃক প্রথম --- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব।

১৯৪৮ সাল, ২ মার্চঃ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরষদ গঠিত হয়।

১৯৪৯ সাল, ২৩ জুনঃ পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক সম্মেলনে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা।

১৯৫০ সালঃ লিয়াকত আলী খানের ঘোষণা ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা’। পূর্ব বাংলার জমিদারী প্রথা রহিতকরণ।

১৯৫২ সাল, ২৬ জানুয়ারীঃ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

১৯৫২ সাল, ২১ ফেব্রুয়ারীঃ ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে গিয়ে ৮ জন শহীদ হন।

১৯৫৩ সাল, ৪ ডিসেম্বরঃ যুক্তফ্রন্ট গঠিত। যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে। বিরোধী দলগুলো হচ্ছে- আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নিজাম-ই-ইসলাম ও বাম গণতন্ত্রী দল।

১৯৫৪ সাল, ২ এপ্রিলঃ যুক্তফ্রন্টের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত। মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ১৪ জন। পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্র হলেন এ কে ফজলুল হক।

১৯৫৬ সাল, ২৩ মার্চঃ ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন ও পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।

১৯৫৬ সাল, ২৪ মার্চঃ শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন।

১৯৬০ সালঃ আইয়ুব খান কর্তৃক মৌলিক গণতন্ত্র চালু হয়।
 
১৯৬৫ সালঃ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু।

১৯৬৮ সালঃ শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।

১৯৬৯ সাল, ২৫ মার্চঃ আইয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগ ও ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা লাভ। এরপর সামরিক শাসন জারি করা হয়।

১৯৭০ সাল, ২৮ মার্চঃ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

১৯৭০ সাল, ১২ নভেম্বরঃ পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। কয়েক লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে।

১৯৭০ সাল, ৭ ডিসেম্বরঃ জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ফলাফলঃ আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসন (১৬৯টির মধ্যে) পায়। পিপিপি পায় ১৩৮ টির মধ্যে ৮৮টি।

১৯৭১ সালঃ
১১ মার্চঃ পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা সর্বত্র উত্তোলন করা হয়।
২৫ মার্চঃ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন।
২৬ মার্চঃ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
১০ এপ্রিলঃ মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা এবং প্রবাসী/অস্থায়ী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।
১৭ এপ্রিলঃ অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
৩ ডিসেম্বরঃ পাকিস্তান কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।
৬ ডিসেম্বরঃ ভারত সরকার কর্তৃক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান। 
১৬ ডিসেম্বরঃ ৯৩ হাজার সৈন্য ও অস্ত্রসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণ।

পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যঃ

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেঃ কেন্দ্রীয় সচিব, গভর্নর জেনারেল, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী সহ বড় পদগুলোতে আসীন প্রায় সবাই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানী।

প্রশাসনিক ক্ষেত্রেঃ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্তদের বেশীর ভাগই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানী।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেঃ পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের অর্ধেক ছিল।

সামরিক ক্ষেত্রেঃ সামরিক বাহিনীতে চাকুরী প্রদান, প্রতিরক্ষা ব্যয়, প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর স্থাপন, প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানকে অনেকবেশী প্রাধান্য দেয়া হত।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেঃ পাকিস্তানের ৫৬.৪ শতাংশ মানুষ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রভাষা ছিলো ঊর্দু।

ভাষা আন্দোলনের প্রথম-দ্বিতীয়-শেষ পর্যায়ঃ
১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ‘তমদ্দুন মজলিশ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। ‘তমদ্দুন মজলিশের’ উদ্যোগে ১৯৪৭ সালে অক্টোবর মাসে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে অন্যান্য ভাষার সাথে অন্যতম রাষ্টবাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি উত্থাপন করেন। লিয়াকত আলী খান, নাজিম উদ্দীন প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতা তাঁর প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন। ফলে ১৯৪৮ সালেল ২৬ ফেব্রুয়ারী ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে বাংলা ভাষার সমর্থনে শ্লোগান দিতে থাকে। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি লিয়াকত আলী খান ঘোষনা করেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে’। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী খাজা নাজিম উদ্দীনও এক জনসভায় একই ঘোষণা দেন। এতে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবি মহলে দারুণ হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৪ ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় ‘রাষটভাসা সংগ্রাম পরিষদ’ একটি সভায় ২১ ফেব্রুয়ারী প্রদেশব্যাপী এক সাধরণ ধর্মঘটের এবং ঐ দিন ভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবস্থা অনুধাবন করে ঢাকায় জেলা ম্যাজিস্টেট ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে ৩০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রীরা সমবেত হয়। ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে বেলা ৩ টার দিকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পুলিশ প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং সে গুলিতে বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ, মোট ৮ জন শহীদ হন এবং অনেকে হন আহত। এতে সারা পূর্ব বাংলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

ভাষা আন্দোলনের শহীদবৃন্দঃ

১. আবদুল জব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
২. আবুল বরকত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
৩. শফিউর রহমান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের ছাত্র এবং হাইকোর্টের কর্মচারী ছিলেন
৪. রফিক উদ্দিন, মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র
৫. আবদুস সালাম, পিয়ন।
৬. অহিউল্লাহ, শিশু শ্রমিক
৭. আবদুল আউয়াল, বালক (অনেকের মতে রিক্সা চালক)
৮. অজ্ঞাত বালক, অধিকাংশের মতে আখতারুজ্জামান বা আবদুর রহিম।

এক নজরে একুশে ফেব্রুয়ারীঃ
১. ভাষা সংগ্রামের উপর প্রথম কবিতা লেখেন কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী। প্রথম চরন-কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।
২. একুশের প্রথম নির্মিত শহীদ মিনারের নাম স্মৃতিস্তম্ভ।
৩. ভাষা আন্দোলনের সংকলন সম্পাদনা করেন হাসান হাফিজুর রহমান।
৪. আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি-এর রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, সুরকার- আলতাফ মাহমুদ।
৫. একুশের প্রথম নাটক কবর ১৯৫৩ সালের ৭ জুলাই মুনির চৌধুরী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাকালে রচনা করেন।
৬. একুশে কাহিনী অবলম্বনে প্রথম উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ রচনা করেন জহির রায়হান। Let there be lisht-প্রামান্য চিত্রের নির্মাতা তিনি।
৭. বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয় ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ২১ (৪) নং অনুচ্ছেদে।
৮. UNESCO ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
৯. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সেগুনবাগিচা, ঢাকায় অবস্থিত (২০০১ সালে তৈরী)।
১০. জীবন থেকে নেয়া-চলচ্চিত্রটি ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
১১. জাতিসংঘ ২০০৮ সালের ০৫ জিসেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করে।
১২. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বর্ষ-২০০৮।
১৩. মোদের গরব-অখিল পাল (ভাষা শহীদদের ভাস্কর্য). অবস্থান-বাংলা একাডেমী।

পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ও রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ঃ

২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ পাকিস্তানের নতুন শাসনতন্ত্র গৃহীত হয়। ২৩ মার্চ ৫৬ শাসনতন্ত্র কার্যকর হয়। শাসনতন্ত্র অনুযায়ী পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। শাসনতন্ত্রে গভর্নর জেনারেলের পরিবর্তে প্রেসিডেন্টের শাসনবলবৎ করা হয়। এই সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। শেখ মুজিব ব্যতীত জাতীয় পরিষদের সকল সদস্য এ সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।

যুক্তফ্রন্ট গঠনঃ ১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক আইন পরিষদের মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২৩টি আসন লাভ করে।

পূর্ববাংলায় কেন্দ্রের শাসনঃ ১৯৫৪ সালের মে মাসে ৯২-ক ধারা অনুযায়ী পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয় এবং মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠানো হয়। হক সাহেব নিজ বাড়িতে অন্তরীণ হন। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন তারিখে ৯২-ক ধারা প্রত্যাহার করা হলে ফজলুল হকের মনোনীত প্রার্থী আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে নতুন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট মিলিতভাবে চৌধুরী মুহম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১৯৫৫ সালের ১১ আগস্ট নতুন কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে।

আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলঃ ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মৌলিক গণতন্ত্র নামে এক অভিনব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থামূলক ভোটে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণয়ন করে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।

ছয় দফাঃ ১৯৬৬ সালে ৫-৬ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয়দফা উত্থাপন করেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারী মাসে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে একটি মামলা দায়ের করে।

এগার দফাঃ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ১৯৬৯ সালের ৬ জানুয়ারী ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এগার দফা কর্মসূচী ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের ছয়দফা কর্মসূচী এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল।
 
ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানঃ ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকের ধারাবাহিক ঘটনাবলি ১৯৬৯ সালের আন্দোলনকে একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয়। এ আন্দোলনে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামরিক অফিসার কর্তৃক নিহত হন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী ছাত্ররা শেখ মুজিবসহ আগরতলা মামলার সব আসামিকে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়াদী উদ্যান) এক গণসংবর্ধনা দান করে। ঐদিন তদানীন্তন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ জনতার পক্ষ থেকে শেখমুজিবকে ভূষিত করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন। ঐদিনই পাকিস্তানে জারি করা হয় সামরিক শাসন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনঃ ১৯৭০ সালের নিবৃঅচন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ও ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি (সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ) আসন লাভ করে।

৭ মার্চের ভাষনঃ শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন। তাঁর ভাষণ ছিল ১৮ মিনিটের। তিনি ভাষনে উল্লেখ করেন- “এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।

মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকঃ দেশের অচলাবস্থা নিরসনকল্পে ১৬ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠক কোন সমঝোতায় পৌছানো সম্ভব হয়নি।

অপারেশন সার্চ লাইটঃ ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। ঐদিনই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয় এবং মধ্যরাতে ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা শুরু হয়। পাকিস্তানিদের এ গণহত্যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। ঐ দিন রাত ১১ টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রথম সেনা অভিযান শুরু হয়। আর প্রথম আক্রমণ করা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

স্বাধীনতার ঘোষণাঃ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তনি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার একটি লিখিত বাণী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ২৭ মার্চ শেখ মুজিবের পক্ষে মেজর জিয়া উক্ত স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

স্বাধীন বাংলা বেতারঃ পাকবাহিনী ২৫ মার্চের ধম্যরাতে ঢাকা দখল করে নিলে ‘রেডিও পাকিস্তান’ এর ঢাকা কেন্দ্রও তাদের সম্পূর্ণ করতলগত হয়। এ পটভূমিতে চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাক সেনাবাহিনী ও ইপিআরের সশস্ত্র বাঙালি সদস্যর বিদ্রোহ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম শহর এবং কালুরঘাটে অবস্থিত এর আঞ্চলিক বেতারকেন্দ্রটি দখল করে নেন। এবং এর নাম দেয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতারকেন্দ্র’ এই বেতার কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন শামসুল হুদা চৌধুরী।

মুক্তিফৌজ ও মুক্তিবাহিনী গঠনঃ কর্ণেল এম. আতাউলগনি ওসমানীর নেতৃত্বে ৪ এপ্রিল সিলেটের তেলিয়াপাড়ার চাবাগানে মুক্তিফৌজ গঠন করা হয়। এটি ১৩ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত হয়, এর মধ্যে সামরিক সৈন্য ৫,০০০ জন। ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ মুক্তিফৌজকে মুক্তিবাহিনী নামকরণ করা হয়। মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি. ওসমানী (১২ এপ্রিল ঘোষণা দেয়া হয়।
১৯৪৭ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী

অন্যান্য বাহিনীঃ

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীঃ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি মশস্ত্র বাহিনী গঠন করর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর-এর বাঙালি সৈনিকসহ শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনী গঠন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১১টি সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর পাশে থেকে বিভিন্ন জেলায় আক্রমণ পরিচালনা করে। (সেক্টর ও ফোর্স সম্পর্কে বিশদ জানতে হবে।)

বিএলএফ (মুজিব বাহিনী): ছাত্রনেতা শেখ জপলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে বিএলএফ (বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট) নাম একটি রাজনৈতিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠে। বিএলএফ পরে মুজিব বাহিনী হিসেবে পরিচিত লাভ করে।

কাদেরিয়া বাহিনীঃ বরিশালে গঠিত হয়েছিল হেয়ায়েত বাহিনী। 

প্রবাসী সরকার গঠনঃ পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত অধিকাংশ সদস্য ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আগরতলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এ সরকারের সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল কুষ্ঠিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলারআম বাগানে এ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে এবং এম ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

পদবী ও নামঃ
রাষ্ট্রপতি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি: সৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী: তাজউদ্দিন আহ্মদ
অর্থমন্ত্রী: এম মনসুর আলী
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পূর্ণবাসনমন্ত্রী: এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান
পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী: মোশতাক আহম্মদ
মুক্তি বাহিনীর প্রধান: কর্ণেল আতাউল গানি ওসমানী
মুখ্যসচিব: রুহল কুদ্দুল

অপারেশন জ্যাকপটঃ বাংলাদেশের নৌপথে সৈন্য ও অন্যান্য সমর সরঞ্জাম পরিবহনের ব্যবস্থা বানচাল করার লক্ষ্যে জাহাজ ও নৌযান ধবংশ করাই ছিল অপারেশন জ্যাপটটের উদ্দেশ্য। ১৫ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের ২০ জনের নিয়ে জাহাজের তলদেশে লাগিয়ে দেয়। রাত ১-৪৫ মিনিটে বিকট শব্দে মাইনগুলো বিস্ফোরিত হলে সবগুলো জাহাজ ধবংশ হয়ে যায়।

মিত্রবাহিনী গঠনঃ ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী গঠিত হয় যার প্রধান ছিলেন লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।

বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডঃ পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরগণ দেশকে মেধামূন্য করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সৃতি সন্তানদের হত্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে নিরস্ত্র অবস্থায় বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে প্রথিতযশা ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবিসহ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। এদের অধিকাংশকেই রায়েববাজার  বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়।
 
চুড়ান্ত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জনঃ ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকবাহিনী বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে। এসময় যৌথবাহিনীও ঢাকার খুব কাছে চলে আসে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য ও অস্ত্রসহ যৌথবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোবার নিকট আত্মসমর্পণ কলে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ডেপুটি চীফ অব স্টাফ এয়ার কমোডর এ. কে. খন্দকার আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
Share:

বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আগত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলীঃ পর্ব-০২

সাধারণ জ্ঞান
বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আগত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলীঃ পর্ব-০২

১. মুঘল বংশের প্রতিষ্ঠাতা- জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর

২. গ্রন্থাগারের সিড়ি থেকে পড়ে মারা যান হুমায়ুন।

৩. ঈশা খাঁর রাজধানী সোনারগাঁও।

৪. ধোলাই খাল খনন করেন- ইসলাম খান

৫. পরিবিবি (ইরান দুখত) ছিলেন শায়েস্তা খানের কন্যা।

৬. বিরান বিবি ছিলেন শায়েস্তা খানের বোন।

৭. ‘প্রিন্স অব বিল্ডার্স’ বলা হয় শাহজাহানকে।

৮. সর্বশেষ মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ।

৯. আকবরের সমাধি সেকেন্দ্রায়।

১০. দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মের বিলুপ্তি করেন আওরঙ্গজেব।

১১. ঢাকা প্রথম রাজধানী হয় ১৬১০ সালে, দ্বিতীয় ১৯০৫ সালে, তৃতীয় ১৯৪৭ সালে এবং চতুর্থ ১৯৭১ সালে।

১২. দীন-ই-এলাহী ধর্মের প্রবর্তক সম্রাট আকবর।

১৩. বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী এ. কে ফজলুল হক।

১৪. মুসলিমদের জন্য পৃথক আবাসভূমির কথা প্রথম উল্লেখ করেন আল্লামা ইকবাল।

১৫. সতীদাহ প্রথা রহিতকরণে ভূমিকা রাখেন রাজা রামমোহন রায়।

১৬. বিধবা বিবাহের প্রচলন করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

১৭. দিল্লীর সিংহাসনে আরোহনকারী প্রথম ও শেষ মুসলমান নারী সুলতানা রাজিয়া।

১৮. দাউদ কররানীর আমলে সম্রাট আকবর বাংলা জয় করেন।

১৯. মোঙ্গল শব্দের অর্থ দুর্ধর্ষ।

২০. সুলতানা রাজিয়া বাহরাম শাহের হাতে পরাজিত ও নিহত হন।

২১. পলাশীর যুদ্ধ হয় ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন।

২২. দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় শাসনভার নবাবের হাতে ও রাজস্ব আদায় ক্লাইভের হাতে ছিল।

২৩. উইলিয়াম হাণ্টারের লেখায় মুসলমান জমিদারের করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়। 

২৪. বণিকদের ভিতরে প্রথম আসে পর্তুগীজ, দ্বিতীয় ওলন্দাজ।

২৫. মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় রাজধানী স্থানান্তর করেন ওয়ারেন হেস্টিংস।

২৬. বর্গী নামে পরিচিত মারাঠীরা।

২৭. ১৮৫৩ সালে রেলযোগাযোগ স্থাপন করেন-লর্ড ডালহৌসী (উপমহাদেশে) (বাংলাদেশে ১৮৬২)।

২৮. বাংলার শেষ নবাব-মীর জাফরের পুত্র নিজাম উদ্দৌলা।

২৯. ইংরেজদের সবচেয়ে সুরক্ষিত ছিল ফোর্ট উইলিয়াম কুঠি।

৩০. ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ এর প্রতিষ্ঠাতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্রবসু।

৩১. বাংলায় মহাদূর্ভিক্ষ দেখা দেয় ১৯৪৩ সালে।

৩২. দণ্ড বিধি আইন হয় ১৮৬১ সালে।

৩৩. ফকির আন্দোলনের নেতা মজনু শাহ।

৩৪. ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয় ১৯০৮ সালে।

৩৫. বর্গী বা মারাঠা লুণ্ঠনকারী দলের নেতা ভাস্কর পন্ডিত।

৩৬. মুর্শীদকুলী খানের উপাধি করতলব খান।

৩৭. সিরাজউদ্দৌলা ২৩ বছর বয়সে নবাব হন।

৩৮. সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে প্রাণপন যুদ্ধ করেন ফরাসি সেনাপতি সিনফ্রে।

৩৯. বীর মোহনলালের পিতুভূমি কাশ্মীর।

৪০. উত্তমাশা অন্তরীপ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ উপক‚লে অবস্থিত।

৪১. ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন বিলুপ্ত হয়।

৪২. ভাইসরয় অর্থ রাজপ্রতিনিধি।

৪৩. ১৮৬১ সালে লর্ড ক্যানিং এর আমলে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস আইন পাশ হয়।

৪৪. জমিদার কৃষ্ণদের রায় মুসলমানদের দাড়ির উপর আড়াই টাকা হারে কর আরোপ করেছিলেন।

৪৫. ভারত বন্ধু নামে পরিচিত ছিলেন ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড রিপন।

৪৬. হাজী শরীয়তউল­হর নামে শরীয়তপুর জেলার নামকরণ করা হয়েছে।

৪৭. ফরায়েজী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিলো ফরিদপুর জেলা।

৪৮. দুদু মিয়াকে সমাহিত করা হয়েছে ঢাকার বংশালে।

৪৯. ‘দার-উল-হরব’ কথাটির অর্থ বিধর্মীর রাজ্য।

৫০. কলকাতায় মুসলিমসাহিত্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৩ সালে।

৫১. কোলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মুসলিম বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ, ২য় আমীর আলী।

৫২. আলীগড় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ আহমদ খান।

৫৩. স্বরাজ দলের (১৯২২) নেতা ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস।

৫৪. ব্রাহ্ম সমাজের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ধর্মসভা।

৫৫. প্রথম গোলটেবিল বৈঠক হয় ১৯৩০ সালে।

৫৬. ‘Essays on the life of Mohammad’- এর লেখক সৈদয় আহমদ খান

৫৭. ‘A short history of the saracens’- এর লেখক আমীর আলী।

৫৮. ‘The spirit of Islam’- এর লেখক আমীর আলী।

৫৯. ‘The Indian Musalmans’- এর লেখক L. Hunter।

 

নিজে চেষ্টা করিঃ

১. ঈশাঁ খার পরে বার ভূঁইয়াদের নেতৃত্ব দেন কে?

২. পর্তুগীজ জলদস্যুদের কি নামে ডাকা হতো?

৩. মমতাজমহলের আসল নাম কি?

৪. ‘জিজিয়া’ কর রহিত করে হিন্দুদের প্রিয়ভাজন হতে চেয়েছিলেন কে?

৫. সেকেন্দ্রা ও দেবকেটি কোথায় অবস্থিত?

৬. ‘ভুলুয়া’ বলতে কোন জেলাকে বুঝানো হত?

৭. দিল্লীর লালকেল্লা কে তৈরী করেন?

৮. ‘ভূঁইয়া’ শব্দের অর্থ কি?

৯. পলাশীর প্রান্তর কোন নদীর তীরে?

১০. মুর্শিদাবাদের পূর্ব নাম কি ছিলো?

১১. কাদেরকে বর্গী বলা হত?

১২. ভারতে ইউরোপীয়দের নির্মিত প্রথম দুর্গের নাম কি?

১৩. দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় কবে?

১৪. পুলিশ বিভাগের প্রতিষ্ঠা করেন কে?

১৫. মহীশূরের রাজধানীর নাম কি ছিল?

১৬. ‘১৮৫৭’ গ্রন্থের লেখক কে?

১৭. বিচার বিভাগকে প্রশাসন হতে সর্বপ্রথম পৃথক করেন কে?

১৮. টিপু সুলতান কোন রাজ্যের শাসন কর্তা ছিলেন?

১৯. ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের সেনাপতির নাম কি?

২০. কত সালে উপমহাদেশে প্রথম আদমশুমারী হয়?

২১. শায়েস্তা খান ব্যতীত কোন সম্রাটের আমলে এক টাকায় ৮মন চাল পাওয়া যেত?

২২. উপমহাদেশে নীলচাষ শুরু হয় কবে?

২৩. তত্ত্ববোধিনী সভার প্রতিষ্ঠা সাল কত?

২৪. স্বামী বিবেকানন্দের প্রকৃত নাম কি?

২৫. হাজী শরীয়তউল্লাহকে কোন জেলায় সমাহিত করা হয়?

২৬. ভারতীয়দের মধ্যে কে সর্বপ্রথম প্রিভিকাউন্সিলের সদস্য হন?

২৭. জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড কবে সংঘটিত হয়?

২৮. কার উদ্যোগে এবং কবে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ স্বাক্ষরিত হয়?

২৯. ইংরেজ ম্যাজিস্টেট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বোমা নিক্ষেপ করে কে?

৩০. কে প্রথম ‘পাকিস্তান’ নামটি উল্লেখ করেন?
Share:

ব্রিটিশ সরকারের ভারত শাসন ও ব্রিটিশ শাসন বিরোধী বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ

ব্রিটিশ সরকারের ভারত শাসনঃ

১৮৬২ সালে ভারতের সর্বপ্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং অবসরগ্রহণ করলে লর্ড এলগিন স্বল্পকাল (১৮৬২-৬৩) ভাইসরয় হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বড় লাটের পদে আসীন হন লর্ড লরেন্স। অনেকের মতে লরেন্সের শাসনকাল (১৮৬৪-৬৯) ছিল লর্ড ক্যানিং এর শাসননীতির পরিপূরক। পরবর্তীতে আরো যারা ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি হয়ে আসেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম হলো লর্ড লিটন (১৮৭৬-৮০), লর্ড রিপন (১৮৮০-৮৪), লর্ড হার্ডিঞ্জ (১৯১০-১৬), লর্ড লিনলিথগো (১৯৩৬-৪৩) এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন (১৯৪৫-৪৭)।
 
একনজরে ব্রিটিশ শাসকদের সংস্কার কার্যক্রমঃ
দ্বৈতশাসন ব্যবস্তার বিলুপ্তি: ওয়ারেন হেস্টিংস
পাঁচশালা ভূমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থা: ওয়ারেন হেস্টিংস
দশশালা ভূমি বনোদাবস্ত ব্যবস্থা: লর্ড কর্ণওয়ালিশ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা: লর্ড কর্ণওয়ালিশ
অধীনতা মূলক মিত্রতা নীতি: লর্ড ওয়েলেসলি
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ: লর্ড বেন্টিঙ্ক
বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়ন: লর্ড ডালহৌসী
ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন: লর্ড কার্জন
সতীদাহ প্রতা রদ: লর্ড বেন্টিঙ্ক
রেল যোগাযোগের উন্নয়ন: লর্ড হার্ডিঞ্জ
টাকার প্রচলন: লর্ড ক্যানিং
স্বত্ত্ববিলোপ নীতির প্রবর্তন: লর্ড ডালহৌসী
প্রথম আদমশুমারী: লর্ড রিপন
বঙ্গভঙ্গ: লর্ড কার্জন
বঙ্গভঙ্গ রদ: লর্ড হার্ডিঞ্জ
এশিয়াটিক সোসাইটি: ওয়ারেন হেস্টিংস
দিল্লীতে রাজধানী স্থানান্তর: লর্ড হার্ডিঞ্জ

পদের নাম: প্রথম: শেষ
গভর্নর: রর্বাট ক্লাইভ: ওয়ারেন হেস্টিংস
গভর্নর জেনারেল: ওয়ারেন হেস্টিংস: লর্ড ক্যানিং
ভাইসরয়: লর্ড ক্যানিং: লর্ড মাইন্ট ক্যাটেন

ব্রিটিশ শাসন বিরোধী বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহঃ

ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহঃ ফকির-সন্ন্যাসীরা হিন্দু-মুসলমান ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একটি দল। কোম্পানির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নবাব মীর কাশিসের আহবানে ফকির-সন্ন্যাসীরা তাঁর পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। ১৭৬০ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত প্রলম্বিত ফকির-সন্ন্যাসীদের সশস্ত্র আন্দোলন ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপু, বগুড়া, ময়মনসিংহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ ও পুর্ণিয়া জেলায় স¤প্রসারিত হয়েছিল। ওয়ারেন হিস্টিংস ফকির-সন্ন্যাসীদের দমন করার জন্য কয়েক দফা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ১৮০০ সাল নাগাদ ফকির-সন্ন্যাসীরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়।

নীল বিদ্রোহঃ বাংলার কৃসকগণ ১৮৫৯-৬২ সালে ইউরোপীয় নীলকরদের বিরুদ্ধে এক ব্যাপক বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সকলে একতাবদ্ধ হয়ে নীলচাষ বর্জন করার আন্দোলন গড়ে তোলে, যা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় এ দেশে বাণিজ্যিকভাবে নীল চাষ শুরু হয় অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে। নীল চাষ না করলে বা সময়মতো কুঠিতে পরিমাণ মতো নীল গাছ সরবরাহ না করলে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো। ১৮৬০ সালের মার্চ মাসে নীল বিদ্রোহ তুঙ্গে ওঠে। সরকার গোটা নীলব্যবস্থা সম্পর্কে তদন্তের জন্য একটি কমিশন (নীল কমিশন) গঠন করে (১৮৬০ সালের মার্চে)। ১৮৯৭ সালে রাসায়নিক পদ্ধতিতে কৃত্রিম নীল প্রস্তুত-প্রণালী আবিস্কৃত হলে নীল চাষ সম্পনূর্ণভাবে লোপ পেতে থাকে। বাংলার নীল বিদ্রোহ ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সংঘবদ্ধ বিদ্রোহাত্মক আন্দোলন।

তিতুমীরের বিদ্রোহঃ উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিতুমীরের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে একটি প্রজা আন্দোলনের সূচনা হয়। তিতুমীরের আসল নাম মীর নিসার আলী। তিনি ১৮২২ সালে হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করেন। সেখানে ওহাবী আনোদলনের নেতা সৈয়দ আহমদ শহীদের সাথে সাক্ষাৎ ও ওহাবী মতবাদ গ্রহণ করেন। তিতুমীরের আন্দোলন প্রথমে ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তিতুমীর ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে ভরতপুরের জাঠদের অনুকরণে বাঁশের তৈরী একটি সুরক্ষিত কেল্লা নির্মাণ করেন এবং প্রচুর রসদ ও অস্ত্র সংগ্রহ করেন। গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের নির্দেশে সুসংগঠিত ও অস্ত্রশস্ত্রে (কামানসহ) সজ্জিত ইংরেজবাহিনী কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লার ওপর আক্রমণ চালায়। ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ অসমসাহসী বীর-বাঙ্গালী যোদ্ধা তিতুমীর যুদ্ধ ক্ষেত্রেই শহীদ হন (১৯ নভেম্বর ১৮৩১)।

সাঁওতাল বিদ্রোহঃ কোম্পানির ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থা ও জমিদারী প্রথা আদিবাসী অঞ্চলে চালু হলে সহজ-সরল প্রাণ আদিবাসী জনগোষ্ঠী জমিদার ও মহাজন শ্রেণীর প্রবঞ্চনার শিকার হয়। ১৮৪৫-৫৫ সালে এই শোষণ-অত্যাচার অীবচার প্রসূত বিক্ষোভ থেকে প্রবল বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়, যা ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসী অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করে কঠোর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করে।

কৃষক আন্দোলনঃ ১৯৪০ এর দশকে সংঘটিত তেভাগা বা আধিয়ার আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলন ও নানকার আন্দোলন ছিল সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ এবং এ বিদ্রোহ পরিচালিত হয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গ সংগঠন কৃষক সমিতির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তথা ১৯৪৬ সালে বাংলায় ‘তেভাগা আন্দোলন’ চরম আকার ধারণ করে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর রাজশাহীর নাচোল ও নবাবগঞ্জের ইলা মিত্র ও রমেন মিত্রের নেতৃত্বে সাাঁওতাল ও ভাগচাষীদের আন্দোলন পুনরায় শুরু হলেও সরকারের অত্যাচার ও দমননীতি শেষ পর্যন্ত এ আন্দোলনের যবনিকা ঘটায়।

খিলাফত আন্দোলনঃ ১ম বিশ্ব যুদ্ধে তুরস্কের পতন ঘটলে তুর্কী সাম্রাজ্যের অখণ্ডত ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য ১৯১৯ সালে মাওলানা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন পরিচালিত হয়। ৩১ আগস্ট খিলাফত দিবস পালন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালে কামাল আতার্তুক তুরস্কে খিলাফত উঠিয়ে সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করলে খিলাফত আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।

অসহযোগ আন্দোলনঃ মহাত্মা গান্ধী অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের জনক। অসহযোগের মাধ্যমে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে ব্রিটিশ সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করার জন্য সর্বপ্রকার অসহযোগিতা করাই এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। ১৯২০ সালে কংগ্রেসের এক বিশেষ অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল ‘সত্যাগ্রহ’ বা নিরস্ত্র নীতি’। হিন্দু মুসলিম একতাবদ্ধ হয়ে এ আন্দোলনে যোগ দেয় এবং ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করে। পরবর্তীতে আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠলে এবং উত্তেজিত জনতা কর্তৃক আগুন লাগিয়ে ২১ জন পুলিশকে পুড়িয়ে ফেললে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

স্বাধীনতার পথপরিক্রমায় গৃহিত পদক্ষেপসমূহঃ

ইন্ডিয়া লীগঃ ভারতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে শিশির কুমার ঘোষ, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলার কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা ইন্ডিয়া লীঘ গড়ে তোলেন।

ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনঃ ১৮৭৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় কর্তৃক ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন বা ভারত সভা স্থাপিত হয়। মধ্যবিত্ত ভিত্তিক এ সংস্থাদের আদর্শ ও লক্ষ্য ছিল দেশে এক শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলা, সর্বভারতীয় রাজনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা। 
 
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসঃ ব্রিটিশদের সাধ্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং শাসনকার্যে ব্রিটিশদের সহায়তার লক্ষ্যে ১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ গঠিত হয়। ২৮ ডিসেম্বর, ১৮৮৫ সালে বোম্বেতে বাঙালি ব্যরিস্টার উমেশচন্দ্র ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। মূলত ব্রিটিশদের আগ্রহে শিক্ষিত ভারতীয়দের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কংগ্রেস গড়ে ওঠে। কংগ্রেসের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর সভাপতি হবেন ভারতীয় কিন্তু সেক্রেটারি জেনারেল হবেন ব্রিটিশ নাগরিক। প্রতিষ্ঠাকালীন এর সেক্রেটারীর পদ গ্রহণ করেন অবসরপ্রাপ্ত সিভিলিয়ান অ্যালান অষ্টাভিয়ান হিউম। তাঁকে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতার সম্মান দেয়া হয়।

বঙ্গ বিভাগ, বঙ্গ বিভাগ রদ ও প্রতিক্রিয়াঃ 

বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে বাংলা গঠিত ছিল। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ভারতের বড়লাটি লর্ড কার্জন এক ঘোষণায় বাংলা প্রদেশকে দু’ভাগে বিভক্ত করেন। এ ঘটনা বঙ্গ বিভাগ বা বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গ অনুযায়ী বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ এবং আসাম নিয়ে গঠিত হয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ। এ নবগঠিত প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিম বাংলা প্রদেশ যার রাজধানী হয় কোলকাতা। মি বামফিল্ড ফুলারকে নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত করা হয়।

হিন্দুরা বঙ্গবিভাগের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে এবং বিলেতি দ্রব্য বর্জনের ডাক দেয়। এতে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে ১২ জিসেম্বর ১৯১১ রাজা পঞ্চম জর্জ দিল্লী দরবারে বঙ্গবিভাগ রদের ঘোষণা দেন। ২০ জানুয়ারী, ১৯১২ তা কার্যকর হয়। বঙ্গবিভাগ রদের পর বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হন লর্ড কারমাইকেল।

বঙ্গবিভাগ প্রতিক্রিয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন ‘আমার সোনার বাংলা’ স্বদেশী গান। বঙ্গবিভাগ রদের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় ডিসেম্বর-১৯০৬ ঢাকার নবাব সলিমূল্লাহ মুসলিম লীগ গঠন করেন। বঙ্গবিভাগ রদের কারণে পূর্ব বাংলায় একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে।

মুসলিম লীগঃ ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও গোঁড়া হিন্দুরা যখন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করে তখন বাংলার মুসলমানরা তাদের স্বার্থে কথা বলার মতো কোন রাজনৈতিক দল না থাকায় অসহায় বোধ করে। এ অবস্থায় মুসলমান নেতৃবৃন্দ একটি আলাদা রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় ‘নিখিল ভারত মুসলিম এডুকেশনাল কনফারেন্স’ এ নবাব সলিমূল্লাহ ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সমর্থন করেন হাকিম আজমল খান, জাফর আলী খান ও মুহাম্মদ আলী প্রমুখ মুসলিম নেতৃবৃন্দ। এর ফলে ১৯০৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে‘মুসলিম লীগ’ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর করাচীতে মুসলিম লীগের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

ভারত শাসন আইন-১৯১৯: ১৯১৯ সালে মন্টেগু-চেমসফোর্ড ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করেন যার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, হইকমিশনার পদ সৃষ্টি ইত্যাদি।

ভারত শাসন আইন-১৯৩৫: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয়।
 
প্রাদেশিক নির্বাচন-১৯৩৭: ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনের পর মুসলিম লীগ ও কৃষক-প্রজা পার্টি কোয়ালিশন সরকার গঠন করে এবং এ. কে. ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রি নিযুক্ত হন। ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা বেশকিছু জনকল্যাণমূলক কাজ সম্পন্ন করেন। ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় কৃষি-খাতক আইন প্রণয়ন করেন এবং ঋণসালিশী বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। হক মন্ত্রিসভা মাদ্রাসা বোর্ড পূর্ণগঠন করেন এবং অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন করেন। তাঁর সময়ে নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য ঢাকায় ইডেন গার্লস কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। হক সাহেব চাকুরিতে ৫০ শতাংশ মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ করেন এবং হিন্দুদের প্রাধান্য হ্রাসের জন্য কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটি আইন সংশোধন করেন।

দ্বিজাতি তত্ত্বঃ দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রবক্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। দ্বিজাতিতত্ত্ব ঘোষিত হয় ১৯৩৯ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির সময় সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলমানদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধর্মভিত্তিক ভারতবর্ষ বিভক্তির প্রস্তাবই হল দ্বিজাতিতত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূলকথা হিন্দু-মুসলিম আলাদা জাতি।

লাহোর প্রস্তাবঃ ২৩ মার্চ, ১৯৪০ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের জনসভায় শেরে বাঙলা এ. কে. ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহ নিয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্র’ গঠনের প্রস্তাবই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য। লাহোর প্রস্তাবে উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিমে ও পূর্বে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হলেও ১৯৪৬ সালে মি. জিন্নাহ লাহোর প্রস্তাব পরিবর্তন করে পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেন।

ক্রীপস মিশনঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভে ভারতবাসীর সহায়তা লাভের জন্য স্যার স্ট্যামফোর্ড ক্রিপসকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ভারতবর্ষে প্রেরণ করেন। তিনি ভারতের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে যে কয়টি প্রস্তাব করেন, তা ক্রীপস প্রস্তাব নামে পরিচিত।

‘ভারত ছাড়’ প্রস্তাব গ্রহণঃ ১৯৪২ সালের ৮ আগষ্ট জাতীয় কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে ঐতিহাসিক ‘ভারত ছাড়’ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ প্রস্তাবে বলা হয় যে, ভারতের মঙ্গলের জন্য এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান অপরিহার্য।
ব্রিটিশ সরকারের ভারত শাসন ও ব্রিটিশ শাসন বিরোধী বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ

ভারত বিভাগ ও আকাঙ্খিত স্বাধীনতা প্রাপ্তিঃ

১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারত স্বাধীনতা আইন’ পাশ হয়। ১৪ আগস্ট করাচীতে পাকিস্তানের হাতে এবং ১৫ আগস্ট দিল্লীতে ভারতীয়দের হাতে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

বাংলার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আন্দোলন ও পথপ্রদর্শকঃ
ওয়াহাবী আন্দোলনঃ তার সংস্কার আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল কুসংস্কার ও অনৈসলামিক রীতিনীতি দূর করে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত সরল আদর্শে মুসলিম সমাজকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। ওয়াহাবী আন্দোলন ছিল এক পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন। ভারতবর্ষে ওয়াহাবী মত ও আদর্শ প্রচারের পথিকৃৎ ছিলেন সৈয়দ আহমদ বেরেলভী।

ফরায়েজী আন্দোলনঃ পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদেরকে কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করার জন্য আলোকবর্তিকা হাতে যে সংস্কারক এগিয়ে আসেন তার নাম হাজী শরীয়তউল্লাহ। তিনি চেয়েছিলেন মুসলমানদের মধ্যে দিনে দিনে যেসব অনৈসলামিক রীতিনীতি অনুপ্রবেশ করছে তা দূর করে তাদেরকে ইসলাম ধর্মের মূল অনুশাসনে ফিরিয়ে নেয়া। ফরায়েজী আন্দোলনকে সারা দেশে একটি সুসংবদ্ধ রূপ দেন হাজী শরীয়তউল্লাহর একমাত্র পুত্র দুধু মিয়া। তার আসল নাম মুহসীন উদ্দীন আহমদ।
 
ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশনঃ সৈয়দ আমীর আলী মুসলমানদের রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের চিন্তাধারার বশবর্তী হয়ে ১৮৭৭ সালে কোলকাতায় ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। ১৮৮৩ সালে এ সমিতি সর্ব ভারতীয় রূপ পরিগ্রহ করলে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় Central National Mohammadan Association.

ব্রাহ্ম সমাজঃ রাজা রামমোহন রায় হিন্দুধর্মের সংস্কারের জন্য যে আন্দোলন শুরু করেন তা থেকে পরে ব্রাহ্ম-সমাজের উৎপত্তি হয়। ১৮২৮ সালে রামমোহন ‘ব্রাহ্ম-সমাজ’ নামে এক নতুন সভা স্থাপন করেন। প্রকৃতপক্ষেে কানো একটি বিশিষ্ট ধর্ম-স¤প্রদায় গঠন করার পরিকল্পনা রামমোহনের ছিল না। ব্রাহ্মসভায় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল লোকেরই প্রবেশাধিকার ছিল। ব্রাহ্ম সমাজের মূল আদর্শ একেশ্বরবাদ ও অপৌত্তলিকতাবাদ।

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন ও ডিরোজিওঃ প্রাচীন ও ক্ষয়িষ্ণু প্রথা তথা ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক শৃঙ্খল হতে মুক্তির উল্লেখযোগ্য প্রয়াস হিসেবে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকে উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নিন্দা ও প্রশংসা দু-ই ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা পেয়েছিলেন।

রামকৃষ্ণ মিশনঃ ঊনবিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন হলো রামকৃষ্ণ মিশন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছিলেন এ ধর্ম মতের প্রবক্তা। সকল ধর্মের প্রতি তার শ্রদ্ধা ছিল অপরিসীম এবং তার মতবাদের মূল কথা ছিল ‘যত মত, তত পথ’। রামকৃষ্ণের জীবদ্দশায় তার মতবাদ তেমন প্রসারিত না হলেও তার শিষ্য স্বাশী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের তিরোধানের পর সমগ্র ভারত এবং ভারতের বাইরেও প্রচার করেন।
Share:

পদ কাকে বলে? উহা কতো প্রকা ও কি কি?

বাংলা ব্যাকরণ
আলোচ্য বিষয়ঃ
পদ

বিশেষ্য পদঃ যে পদ বিশেষ্য সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ গুণ অবস্থা সংখ্যা পরিমান ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যথা- চলন্ত গাড়ি, বিশেষ্যের বিশেষণ। করুনাময় তুমি সর্বনামের বিশেষণ। দ্রুত চল- ক্রিয়ার বিশেষণ।
বিশেষণ দু ভাগে বিভক্তি । যথা-১. নাম বিশেষণ ২. ভাব বিশেষণ।

১. নাম বিশেষ:
যে বিশেষণ পদ কোন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে তাকে নাম বিশেষণ বলে। যথা: বিশেষ্যের বিশেষণ।
সুস্থ- সবল দেহ কে না ভালবাসে?

নাম বিশেষনের প্রকারভেদ
ক. রুপবাচক : নীল আকাশ, সবুজ  মাঠ, কালো মেঘ।
খ. গুণবাচক : চৌকস লোক, দক্ষ কারিগর, ঠান্ডা হওয়া।
গ. অবস্থাবাচক : তাজা মাছ, রোগা ছেলে, খোড়া পা।
ঘ. সংখ্যাবাচক : হাজার লোক, দশ দশা, শটাকা।
ঙ. ক্রমবাচক : নবম শ্রেণী চল্লিশ পৃষ্ঠা, প্রথমা কন্যা।
চ. পরিমাণবাচক : বিঘাটেক জমি, হাজার টনী জাহাজ।
ছ. অংশবাচক : অর্ধেক সম্পত্তি. ষোল আনা দখল , সিকি পথ।
জ. উপাদানবাচক : বেলে মাটি, মেটে কলসী, পাথুরে মুর্তি।
ঝ. প্রশ্নবাচক : কতদূর পথ? কেমন অবস্থা?
নিদির্ষ্টতাজ্ঞাপক : এই লোক, সেই মেয়ে, চৌদ্দই ডিসেম্বর।

পদ | বাংলা ব্যাকরণ লেকচার শীট

আরো পড়ুনঃ
বাংলা ২য় পত্রের বাছাইকৃত বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর

বিশেষ্য পদের শ্রেণি বিভাগ
১। সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য: যে পদ দ্বারা কোন ব্যক্তি ভৌগোলিক স্থান বা সংজ্ঞা এবং গ্রন্থ বিশেষের নাম বিজ্ঞাপিত হয তাকে সংজ্ঞা ( বা নাম) বাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- মক্কা, মেঘনা, বিশ^নবী

২. জাতিবাচক বিশেষ্য: যে পদ দ্বারা কোন এক জাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- মানুষ গরু. পাখি , গাছ, পর্বত, নদী, ইংরেজ।

৩. বস্তবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য: যে পদে কোন উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। এই জাতীয় বস্তুর পরিমান নির্ণয় করা যায় কিন্তু গণনা করা যায় না। যথা- মাটি, চাউল, চিনি, লবণ, পানি।

৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য: যে পদে বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায়। তাই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যথা- সভা, জনতা, সমিতি, পঞ্চায়েত, মাহফিলম ঝাক. বহর, দল।

৫. ভাববাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদে কোন ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয় তাকে  ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যথা- গমন, (যাওয়ার ভাব বা কাজ) দর্শন  দেখার কাজ) শয়ন( শোয়ার কাজ)

৬. গুণবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য দ্বারা কান বস্তুর দোষ বা গুনের নাম বোঝায়। তাই গুণবাচক বিশেষ্য। যথা- মধুর বস্তুর গুণ- মধুরতা, তরল দ্রব্যের গুণ তারল্য তিক্ত দ্রব্যের দোষ বা গুণ তিক্ততা, তরুণের গুণ- তারুণ্য

আরো পড়ুনঃ
বাংলা ২য় পত্রের বাছাইকৃত বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর

সর্বনাম পদ
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম বলে। সর্বনাম সাধারনত ইত: পূর্বে ব্যবহৃত বিশেষ্যের প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দ। যেমন হস্তী প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তার শরীরটা যেন বিরাট এক মাংসের স্তুপ।

দ্বিতীয় বাক্যে তার শব্দটি প্রথম বাক্যের হস্তী বিশেষ্য পদটির প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দরুপে ব্যবহৃত হয়েছে। তই তার শব্দটি সর্বনাম পদ। বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও সুবোধ্য বিশেষ্য পদের পরির্বতে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন-
ক. যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে তারাই তো সত্যিকারের পুরুষ।
খ. ধান ভানতে যারা শিবরে গীত গায় তারা স্থির লক্ষ্যে পৌছাতে পারেনা।

সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ
বাংলাভাষায় ব্যবহৃত সর্বনাম পদকে নি¤œলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। 
ক. পুরুষবাচক : আমি. তুমি, তোমার, সে, তারা।
খ. আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজে, খোদ, আপনি
গ. সামীপ্যবাচক : এ, এই , এরা, ইহারা।
ঘ. দুরত্ববাচক : ঐ, ঐসব।
ঙ. সাকল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ।
চ. প্রশ্নবাচক : কে, কি, কোন, কাহার, কার, কিসে।
ছ. অনিদির্ষ্টতাজ্ঞাপক: কোন, কেহ, কেউ , কিন্তু।
জ. ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, পরস্পর, আপষে।
ঞ. সংযোগজ্ঞাপক : যে যিনি, যারা, যাহারা।
ট. অন্যাদিবাচক : অন্য, অপর, পর।

অব্যয় পদ
যে পদ সর্বদা অপরিবতনীয় থেকে কখনও বাক্যের শোভা বর্ধন করে কখনও একাধিক পদের বাক্যাাংশের বা বাক্যের সংযোগ  বা বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটায় তাকে অব্যয় বলে। বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ রয়েছে।
১. খাটি বাংলা অব্যয় শব্দ: আর, আবার, ও , হা, না ইত্যাদি।
২. তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি. তথা, সদা, সহসা, হঠাৎ. অর্থাৎ ইত্যাদি।
৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : 

Share:

ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপীয় বনিকদের আগমন

ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপীয় বনিকদের আগমনঃ

জলপথ আবিস্কারঃ ১৪৮৭ সালে পর্তূগীজ নবিক বার্থোলোমিউ দিয়াজ উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে পূর্বদিকে আসার পথ আবিস্কার করেন। ফলে ১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা গামা ভারতের কালিকট বন্দরে দিয়াজের সহায়তায় আসেন এবং ভারবর্ষ আবিস্কার করেন।

পর্তুগীজদের আগমঃ ১৫১০ সালে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসে। ১৫১৭ সালে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে চট্টগ্রাম ও সপ্তগ্রামে। ১০০ বছর তাদের বাণিজ্য একচেটিয়া ছিল।

ওলন্দাজদের আগমনঃ নেদারল্যাণ্ডের বাসিন্দারা ওলন্দাজ বা ডাচ নামে পরিচিত। ১৬০২ সালে তারা ‘ডাচ-ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী’ গঠন করে।

দিনেমারদের আগমনঃ ১৬১৬ সালে৬ডেনমার্কের লোকেরা ‘দিনেমার ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী’ গঠন করে। ১৮৪৫ সালে ইংরেজদের নিকট কুঠি বিক্রয় করে চলে যায়।

ইংরেজদের আগমনঃ ১৬০০ সালে তারা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী গঠন করে। ১৬১২ সালে তারা সুরাটে কুঠি নির্মঅণ করে। ১৬৩৩ সালে শাহজাহান বঙ্গদেশে কুঠি নির্মাণের অনুমতি দেয়। ইংরেজরা পিপিলাই নামক গ্রামে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। ১৬৯০ সালে জব চার্নক কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম ক্রয় করে এবং তাদের রাজার নামানুসারে ‘ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ নির্মাণ করে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজরা জয়লাভ করে। ১৭৬৪ সালে চট্টগ্রাম, মেদিনীপুর ও বর্ধমান জেলা কোম্পানীকে হস্তান্তরের শর্তে মীর কাসিম নবাব হন। ঐ বছরই বক্সারের যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে কাসিম পরাজিত হন। ১৭৬৪ সালে লর্ড ক্লাইভ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভ করে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। প্রকৃতপক্ষে দিল্লীর সম্রাট শাহ আলম এই খাজনার বিনিময়ে বাংলার মুঘল অধিকার ইংরেজদের নিকট বিক্রি করে দেয়।

ফরাসীদের আগমনঃ ১৬৬৪ সালে ফরাসী বনিকগণ ‘ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী’ গঠন করে উপমহাদেশে আসে। বাংলার চন্দননগরে এবং চেন্নাইয়ের পন্ডিচেরীতে তারা কুটি তৈরী করে। ইংরেজদের সাথে প্রবল প্রতিদ্বন্দিতায় টিকতে না পেরে ১৭৬০ সালের পরে তারা ভারত ত্যাগ করে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপীয় বনিকদের আগমন

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ভারত শাসনঃ

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর মীরজাফর বাংলার নবাব হন। তিনি ছিলেন নামমাত্র নবাব। প্রকৃত ক্ষমতা ছিল ইংরেজদের হাতে। ইংরেজরা ১৭৬০ সালে মীরজাফরকে সরিয়ে তার জামাতা মীর কাসিমকে বাংলার নবাবী দান করে। কিন্তু শীঘ্রই স্বাধীনচেতা মীর কাসিমের সাথে ইংরেজদের দ্বন্দ বাধে। অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং দিল্লীর সম্রাট শাহ আলমের সহায়তা পাওয়া সত্ত্বেও মীর কাশিম ‘বক্সারের যুদ্ধে’ ইংরেজদের নিকট পরাজিত হন। লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে দ্বিতীয়বারের মত বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হলে বাংলায় সরাসরি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন চালুর ব্যবস্থা করেন।

লর্ড ক্লাইভ ও দ্বৈত শাসন (১৭৬৫-১৭৬৭): ভারতবর্ষে ইংরেজ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। ক্ষমতালোভী নবাব বংশধর ও অনুচরদের তুষ্ট রেখে কোম্পানীর আয় বৃদ্ধির জন্য তিনি বাংলায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রচলন করেন। এ নীতি অনুযায়ী রাজস্ব আদায় ও দেশরক্ষার ভার কোম্পানীর হাতে রাখা হয় এবং শাসন বিভাগের ক্ষমতা নবাবের হাতে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থা হতে নবাবের কর্তৃত্ব খর্ব করা হয় এবং জনগণের উপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপের ফলে জনগণের দূর্ভোগ বৃদ্ধি পায়। এর প্রভাব হিসেবে পরবর্তীতে বাংলায় ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ সংঘটিত হয়। লর্ড ক্লাইভ বাংলার প্রথম ব্রিটিশ গভর্নর। গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার পর ১৭৬৭ সালে তিনি বীরবেশে দেশে ফিরে যান।

গভর্নর কার্টিয়ার (১৭৬৯-১৭৭২): এ সময়ে সমগ্র বাংলায় দ্বৈত শাসনের প্রভাব পড়তে থাকে। দ্বৈত শাসনের প্রভাবে জনগণ ব্যাপক অর্থকষ্টের সম্মুখীন হয়। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বাংলা ১১৭৬ সালে (ইংরেজী ১৭৬৯-১৭৭০) বাংলায় ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়। ইতিহাসে এই দূর্ভিক্ষ ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে খ্যাত।

ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৭২-১৭৭৪, ১৭৭৪-১৭৮৪): কোম্পানীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি প্রথমেই দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করেন। তিনি মুঘল সম্রাটের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে মুঘল সম্রাটকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা কর প্রদান বন্ধ করে দেন। ভূমি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে জমিদার শ্রেণী সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনি পাঁচশালা ভূমি বন্দোবস্ত প্রতা চালু করেন।

লর্ড কর্ণওয়ালিশ (১৭৮৬-১৭৯৩, ১৮০৫): তিনি মারাঠা, নিযাম ও টিপু সুলতানের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে সফল হন। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং স্থায়ী অনুরক্ত শ্রেণী সৃষ্টির মানসে তিনি দশশালা বূমি বন্দোবস্তা প্রথা চালু করেন। ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ তিনি ‘চিরস্থায়ী বন্দাবস্তা’ প্রথা চালুর মাধ্যমে ‘সূর্যাস্ত আইন’ বলবৎ করেন। একই সালে হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য সহমরণ বিষয়ক ‘সতীদাহ প্রথা’ প্রবর্তন করেন।

লর্ড ওয়েলেসলি ( ১৭৯৮-১৮০৫): ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে উগ্র প্রচেষ্টার জন্য সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন প্রথম সাম্রাজ্যবাদী বড়লাট। তিনি ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ নীতি প্রবর্তন করেন।

লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (১৮২৮-১৮৩৫): তার শাসনামল উপমহাদেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা সংস্কারের জন্য বিখ্যাত। সংস্কারের অংশ হিসেবে তিনি ভারতীয়দের জন্য ‘সাব জজ’ ও ‘মুন্সেফ’ পদ সৃষ্টি করেন।
 
রাজা রামহোহনের সহায়তায় ১৮২৯ সালে তিনি ‘সতীদাহ প্রথা’ বাতিল করেন। ১৮৩৫ সালে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। একই সালে তিনি ‘ম্যাকলে শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করেন।

লর্ড হেনরি হার্ডিঞ্জ (১৮৪৪-১৮৪৮): ভারতবর্ষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশেষত বেল যোগাযোগে তিনি ব্যাপক অবদান রাখেন। তিনি শিখদের যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং এককোটি টাকা জরিমানা আদায়ের জন্য গোলাপ সিং নামে এক ব্যক্তির নিকট ৭৫ লক্ষ টাকায় জম্মু ও কাশ্মীর বিক্রয় করেন।

লর্ড ডালহৌসী (১৮৪৮-১৮৫৬): সাম্রাজ্যবাদী গভর্নর হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রবর্তন করেন। তার উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে দেশীয় বিভিন্ন গোত্র ও আঞ্চলিক শক্তি ইংরেজদের উচ্ছেদ করার সংকল্প করতে থাকেন যা পরবর্তীতে সিপাহী বিপ্লবের দিকে ভারতবর্ষকে ঠেলে দেয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্রঅসাগরের সহায়তায় ১৮৫৬ সালে তিনি বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন করেন।

লর্ড ক্যানিং (১৮৫৬-১৮৫৭): তিনি শেষ গভর্নর জেনারেল। এসময় ইংরেজদের দাসত্ব হতে মুক্তিলাভের জন্য বিখ্যাত ‘সিপাহী বিপ্লব’ (১৮৫৭ সাল) সংঘটিত হয়। তিনি কাগজের মুদ্রা প্রচলন করেন।

সিপাহী বিপ্লবঃ

২৬ জানুয়ারী-১৮৫৭ প্রথম দমদমে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ২৯ মার্চ-১৮৫৭ ব্যারাকপুরের সেনা ছাউনিতে ‘মঙ্গল পান্ডে’ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং শহীদ হন। সিপাহী বিদ্রোহে তিনি প্রথম শহীদ হন। সিপাহীরা দিল্লী দখল করে শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে স্বাধীন ভারতের ‘বাদশাহ’ বলে ঘোষণা করেন। ঢাকায় সিপাহী বিপ্লব সংঘটিত হয় সিপাহী রজব আলীর নেতৃত্বে। বিদ্রোহীদের প্রধান সেনাপতি ছিলেন পেশোয়া বাজীরাওয়ের পোষ্যপুত্র ধন্ধপন্থ (নানা সাহেব)। ব্রিটিশ সেনানায়ক মেজর হাডসন দিল্লী দখল করে সম্রাট বাহাদুর শাহকে গ্রেফতার করে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেন। ১৮৫৮ সালের ৭ জুলাই ইংরেজরা শান্তি ঘোষনা করে।

ইস্ট ইন্ডিয়া যুগের অবসানঃ

১৮৫৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার ঘোষণার ফলে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের অবসান ঘটে। এই আইনে বলা হয়, এখন থেকে ব্রিটিশ রাজা ও রানীর পক্ষে মন্ত্রিসভার কোনো এক সদস্য ব্রিটিশ ভারতের শাসনভার গ্রহণ করবেন। তার উপাধি হয় ভারত সচিব। তখন থেকে গর্ভনর জেনারেল পদবি ভাইসরয়ে রূপান্তিরিত হয়। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের আইন দ্বারা কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ ছিল একটি নামফলক বদল মাত্র।
Share: