HSC রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download

রেইনকোট
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
💕 পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

💕 শিখন ফল
 ✓ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।
 ✓ মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে।
 ✓ মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা সম্পর্কে অবগত হবে।
 ✓ বাঙালি হৃদয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা জানতে পারবে।
 ✓ পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা সম্পর্কে অবগত হবে ।
 ✓ বাঙালির সংগ্রামী চেতনার পরিচয় পাবে।
 ✓ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাবে।
 ✓ যুদ্ধের সময় বাঙালির ভীতসন্ত্রস্ত জীবনধারণ সম্পর্কে জ্ঞাত হবে।
 
💕 পাঠ-পরিচিতি
 ‘রেইনকোট’ গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। পরে এটি লেখকের সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’ (১৯৯৭) গ্রন্থে সংকলিত হয়। এ গল্পের পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র- ১ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে গল্পটি রচিত। মুক্তিযুদ্ধের তখন শেষ পর্যায়। ঢাকায় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ শুরু হয়েছে।

তারই একটি ঘটনা এ গল্পের বিষয়; যেখানে ঢাকা কলেজের সামনে গেরিলা আক্রমণের ফলে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের তলব করে এবং তাদের মধ্য থেকে নুরুল হুদা ও আবদুস সাত্তার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। নুরুল হুদা এই গল্পের কথক। তার জবানিতে গল্পের ঘটনাবলি বিবৃত হয়েছে। বিবৃত হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ঢাকা শহরের আতঙ্কগ্রস্ত জীবনের চিত্র।
রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড
গেরিলা আক্রমণের ঘটনা ঘটে যে রাতে, তার পরদিন সকালে ছিল বৃষ্টি। তলব পেয়ে সেই বৃষ্টির মধ্যে নুরুল হুদাকে কলেজে যেতে যে রেইনকোটটি পরতে হয় সেটি ছিল তার শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর। গল্পে এই রেইনকোটের প্রতীকী তাৎপর্য অসাধারণ। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় যে উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম তারই ব্যঞ্জনাময় প্রকাশ ঘটেছে এ গল্পে।

'রেইনকোট' গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
💕 লেখক পরিচিতি
নাম : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
জন্ম তারিখ : ১২ জানুয়ারি, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে।
জন্মস্থান :  গোটিয়া, সাঘাটা, গাইবান্ধা।
পিতার নাম : বি. এম ইলিয়াস।
মাতার নাম : মরিয়ম ইলিয়াস।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে),  বগুড়া জিলা স্কুল।
উচ্চমাধ্যমিক : ইন্টারমিডিয়েট (১৯৬১), ঢাকা কলেজ।
উচ্চতর : বিএ সম্মান, বাংলা (১৯৬৩); এমএ (১৯৬৪), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কর্মজীবন ও পেশা:- প্রভাষক : করটিয়া সাদত কলেজ, টাংগাইল; জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা।
সহযোগী অধ্যাপক : বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ কলেজ।
উপপরিচালক : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অধ্যাপক : বাংলা বিভাগ, ঢাকা কলেজ।
গল্পগ্রন্থ  : অন্য ঘরে অন্যস্বর, খোঁয়ারি, দুধভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল।
উপন্যাস : চিলে কোঠার সেপাই, খোয়াবনামা।
প্রবন্ধ গ্রন্থ : সংস্কৃতির ভাঙা সেতু।
পুরস্কার ও সম্মাননা : হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), বাংলা একাডেমি  সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), প্রফুল্ল কুমার সরকার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার (১৯৯৬), কাজী মাহবুব উল্লাহ স্বর্ণপদক ইত্যাদি।
মৃত্যু তারিখ : ৪ জানুয়ারি, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে।

💕 উৎস পরিচিতি
 ‘রেইনকোট’ গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। পরে এটি লেখকের সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল’ (১৯৯৭) গ্রন্থে সংকলিত হয়। এ গল্পের পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র-১ থেকে।
 
💕 বস্তুসংক্ষেপ
 ‘রেইনকোট’ গল্পটি বাংলা কথাসাহিত্যের অনন্যসাধারণ প্রতিভার অধিকারী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে রচনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকার তথা বাংলাদেশের যুদ্ধাবস্থা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ঢাকা শহরের মানুষের আতঙ্কগ্রস্ত জীবনচিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং এ দেশীয় রাজাকারদের সাথে নিয়ে পাকহানাদারদের নৃশংসতার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।

গল্পের কথক প্রফেসর নুরুল হুদার বর্ণনার মাধ্যমে তখনকার যুদ্ধকালীন অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে। ‘রেইনকোট’-এর প্রতীকী তাৎপর্য অসাধারণ। যেটা তার শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর। বর্ষার দিনে সেটা গায়ে দিয়ে সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম। গল্পটিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাকে ধারণ করা  হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে কিছু কিছু সাধারণ ও ভীতু প্রকৃতির মানুষও সাহসী হয়ে ওঠে।

যা হওয়ার হবে- এই মনোবৃত্তি তাদের ভয় দূর করে দেয়। আবার কোনো কোনো পোশাকে এমন বাহাদুরি থাকে যে, তা পরলেই মেজাজ-মর্জি অন্যরকম হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোটটা পরে নুরুল হুদাও  নির্ভয়, সাহসী ও দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠে। রাস্তায়, বাসস্ট্যান্ডে, বাসে এমনকি গ্রেপ্তার হওয়ার পরও ভয়ডর বলে কিছু থাকে না তাঁর। নিজেকে সে ভাবে, সেও একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। রেইনকোটটাই প্রতীকী তাৎপর্যে অসাধারণ হয়ে ওঠে।
 
💕 নামকরণ
বিষয়বস্তু অনুসরণে প্রতীকী তাৎপর্যের ওপর ভিত্তি করে আলোচ্য গল্পের নামকরণ করা হয়েছে, ‘রেইনকোট’। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার  যে সাহস, উষ্ণতা ও দেশপ্রেম সঞ্চারিত হয়, তারই ব্যঞ্জনাময় প্রকাশ ঘটেছে ‘রেইনকোট’ গল্পে।

 মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। তারা ঢাকা কলেজের সামনে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে  দিয়েছে এবং ফিরে যাওয়ার সময় প্রিন্সিপাল সাহেবের বাড়িতে গ্রেনেড ছুঁড়েছে। গেট ভেঙে গেছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের প্রিন্সিপালের মাধ্যমে তলব করে। পিয়ন ইসহাক নুরুল হুদাকে সেই খবরটাই দিতে এসেছে। বাসা বারবার বদল করেও চিন্তা শেষ হয় নি, কেননা তার শ্যালক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। তাই যেকোনো সময় মিলিটারি আসতে পারে এটাই সব সময়কার ভয়। তার বৌ এসময় বাইরে বেরুতে বাধা দিচ্ছে, কেননা মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।

এ বৃষ্টিতে ছাতায় কুলোবে না, তাই মিন্টুর রেইনকোটটা বের করে দিল বৌ। মিন্টুর জন্য শহর থেকে একটু দূরে বাসা নিয়েছে। এদিকেও স্টেনগানওয়ালা ছোকরারা নৌকা বোঝাই অস্ত্র নিয়ে আসে। রাস্তায় রিকশা নেই, হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ডে এল। বাসে যাত্রী কম। তারা কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না রেইনকোটটার জন্য। বাসে উঠতে যাওয়া লোকজনদের মনে হচ্ছে মিলিটারির দালাল।  মিলিটারিরা গাড়িটা থামিয়ে ভেতরে কড়া নজর দিয়ে ছেড়ে দিল। কলেজে আসার পর শিক্ষকদের ভেতর থেকে নুরুল হুদা ও আব্দুস সাত্তার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। চোখ বাঁধা অবস্থায় তাদের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের  সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে।

কলেজের আলমারি বয়ে নিয়ে এসেছিল যারা সেই কুলিরাই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। নুরুল হুদা তাদের ঠিকানা দিলেই তারা তাকে ছেড়ে দেবে। ছাদের আংটার সাথে ঝুলানো অবস্থায় চাবুকের মার  খেয়ে সে মুক্তিযোদ্ধা ও কুলিদের ঠিকানা জানার কথা স্বীকার করে, তারপর তার আর হুঁশ থাকে না। মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোটটাই তাকে নির্ভীক, সাহসী ও দেশপ্রেমিক করে তোলে। এ দিক বিবেচনায় গল্পের নাম ‘রেইনকোট’ যথার্থ সুন্দর ও সার্থক হয়েছে।
 
💕 শব্দার্থ ও টীকা
জেনারেল স্টেটমেন্ট ✑ সাধারণ বিবৃতি।
স্পেসিফিক ক্লাসিফিকেশন ✑ সুনির্দিষ্ট শ্রেণিকরণ। 
‘তলব কিয়া। আভি যানা হোগা’ ✑ ‘তলব করেছেন। এখনই যেতে হবে।’

‘মিসকিরিয়ান লোগ ইলেকটিরি 
টেরানসফার্মার তোড় দিয়া। 
অওর ওয়াপস যানে কা টাইম 
পিরিনসিপাল সাহাবকা কোঠিমে
গেরেনড ফেকা। গেট তোড়
গিয়া।’ ✑ ‘মিসক্রিয়েন্টরা ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দিয়েছে। আবার ফিরে যাওয়ার সময় প্রিন্সিপাল সাহেবের বাড়িতে গ্রেনেড ছুঁড়েছে। গেট ভেঙে গেছে।’

‘ক্যায়সে?’ ✑ ‘কীভাবে?’ 
‘উও আপ হি কহ সকতা’ ✑ ‘সেটি আপনিই বলতে পারেন।’
মিসক্রিয়ান্ট ✑ দুষ্কৃতকারী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার ও তার সেনাবাহিনী এই শব্দটি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ব্যবহার করেছে।

‘আব্দুস সাত্তার মিরধাকা ঘর 
যানে হোগা। আপ আভি আইয়ে।
এক কর্নেল সাহাব পঁওছ গিয়া। 
সব পরফসরকো এত্তেলা দিয়া। 
ফওরন আইয়ে।’ ✑ ‘আবদুস সাত্তার মৃধার বাসায় যেতে হবে। আপনি এখনই আসুন। এক কর্নেল সাহেব এর মধ্যেই চলে এসেছেন। সব প্রফেসরকে ডেকেছেন। তাড়াতাড়ি আসুন।’

ওয়েলডিং ওয়ার্কশপ ✑ ঝালাই কারখানা। 
সাবভার্সিভ অ্যাকটিভিটিজ ✑ রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম। মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতাকে পাকিস্তান সরকার ও তাদের সমর্থকরা ১৯৭১ সালে এভাবে অভিহিত করত।

ট্রান্সপারেন্ট ✑ স্বচ্ছ।
ক্রাক-ডাউনের রাত ✑ ১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা পরিচালনা করে সেই রাতের কথা বলা হয়েছে।
রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইন্টার

আমাদের জেনারেল মনসুন ✑ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রচণ্ড শীতের কবলে পড়ে হিটলারের বাহিনী রুশ বাহিনীর হাতে পর্যুদস্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রবল বর্ষায় তেমনি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। এখানে সেই বিষয়টিরই তুলনা করা হয়েছে।

💕 বানান সতর্কতা
স্টেটমেন্ট, স্পেসিফিক, ক্ল্যাসিফিকেশন, বৃহস্পতি, আল্লাহুম্মা, কুন্ত, মুখস্থ, প্রিন্সিপ্যাল, আলহামদুলিল্লাহ, শাঁসটুকু, শুষে, স্কোয়াড, ট্রান্সফর্ম, মিসক্রিয়ান্ট, লেফটেন্যান্ট,  ক্যাপ্টেন, ক্যাম্প, নেতৃত্ব, গণতন্ত্র, হ্যান্ডওভার,এক্সট্রা, তটস্থ, দৈর্ঘ্য, ফ্ল্যাট, ইনটার্নাল, কন্ডাক্টর, স্ট্যান্ড, বারান্দা, হিন্দুস্তান, অবশ্যম্ভাবী, উচ্ছিষ্ট, হুঙ্কার, স্টপেজ, প্যাসেঞ্জার, সৎসঙ্গ, ওয়াক্ত, হিস্ট্রি, কেমিস্ট্রি, জিওগ্রাফি, ডিপার্টমেন্ট, ছদ্মবেশী, আস্তানা, ঝুলন্ত, ঘেঁষে, ছুঁচালো, ভারিক্কি, উদ্বিগ্ন।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
ক. “রেইনকোট” গল্পে মিলিটারি ক্যাম্প কোথায় স্থাপন করা হয়?
খ. দেশে একটা কলেজেও শহিদ মিনার অক্ষত নেই। 
গ. চিত্রে “রেইনকোট” গল্পের  যেদিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রিত দিকটি “রেইনকোট” গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র-বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কলেজের জিমন্যাশিয়ামে।

খ. অনুধাবন
✍ শহিদ মিনার বাঙালি জাতির স্বাধিকার  চেতনার উৎস এবং পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে।

✍ ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে শহিদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়েছিল শহিদ মিনার, যা চিরকালই বাঙালির স্বাধিকার চেতনার উৎস।  এছাড়া পাক-সরকার শহিদ মিনারকে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী মনে করত। তাই পাকিস্তানকে বাঁচাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সব কলেজ থেকে শহিদ মিনার ভেঙ্গে দিয়েছিল ।

গ. প্রয়োগ
✍ চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বরতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

✍ শোষকশ্রেণির মানুষেরা চিরকালই অসহায়-দুর্বলের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে নির্মম নির্যাতন চালায়। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সামান্যতম মানবতার ছোঁয়ামাত্র দেখা যায় না। বরং মধ্যযুগীয় কায়দায় তারা দুর্বলের ওপর চালায় নির্মম নির্যাতন, যা সহ্য করা ছাড়া দুর্বলের আর কিছুই করার থাকে না।

✍ চিত্রে পাকিস্তান সেনাদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি প্রত্যক্ষ করা যায়। তারা পাঁচজন মিলে একজন নিরীহ মানুষের ওপর চালিয়েছে নির্মম নির্যাতন। শুধু তাই নয়, তারা তাকে শেয়াল-কুকুরের মতো টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ‘রেইনকোট’ গল্পেও নুরুল হুদার জবানিতে পাকিস্তানিদের বর্বরতার কথা বর্ণিত হয়েছে। মিলিটারিদের নির্যাতনের ভয়ে সে নিজেই নানা সময় পালিয়ে বেড়িয়েছে নানা স্থানে। এছাড়া তার মতো হাজারো অসহায় বাঙালির ওপর পাকিস্তানিবাহিনী চালিয়েছিল অত্যাচারের স্টিম রোলার। সুতরাং বলা যায়, চিত্রে ‘রেইনকোট’ গল্পের পাকিস্তানিদের বর্বর অত্যাচারের দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী উপস্থাপন বর্তমান। উদ্দীপকে বর্ণিত মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র রয়েছে তা গল্পটির খণ্ডাংশ।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে লেখক নুরুল হুদার চিন্তারাজি এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও লেখকের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে ভীরু, দুর্বলচিত্ত, পলায়নপর রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদাকে একজন মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে-সেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। অন্যদিকে উদ্দীপকের বর্ণনায় আমাদের যুদ্ধের একটি খণ্ড চিত্র রয়েছে।

✍ উদ্দীপকে পশ্চিম, থেকে আসা পাকিস্তানি নরঘাতকদের অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার  বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানি- বাহিনী এদেশের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। মার কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে চালিয়েছিল গণহত্যা, এমনকি পিতার সামনে মেয়েকে কেটে রক্তস্নান করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যার বিষয়টিতে নিবিষ্ট, যা ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে বহু বিচিত্র চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তা মেলে না। উদ্দীপকে আছে কেবল গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নরহত্যার বিষয়টি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির খন্ডাংশ সম্পূর্ণ নয়।”

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
ছোট্ট শুভ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ক্রিকেট খেলায় হাত ধরে মাঠে ঢোকার সুযোগ পায়। জাতীয় সঙ্গীত পর্ব সমাপ্ত হলে শচীন অটোগ্রাফসহ নিজের  ক্যাপটি  শুভকে উপহার দেন। উপহারটি পেয়ে শুভ বিস্মিত হয়ে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হবে।
ক. নুরুল হুদাকে রেইনকোটটি কে পরতে বলে?
খ. রেইনকোট খুলে ফেললেও নুরুল হুদার শরীরে তার ওম লেগে থাকার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের শুভ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার ভাবনার মাঝে বৈসাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের শুভর কাছে ক্যাপ এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার কাছে রেইনকোট জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে।”- উক্তিটির স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন  কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ আসমা পরতে বলে।

খ. অনুধাবন
✍ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয় বলে রেইনকোট খুলে ফেললেও নুরুল হুদার শরীরে তার ওম লেগে থাকে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে বৃষ্টির দিনে নুরুল হুদা কলেজের উদ্দেশে যাওয়ার সময় স্ত্রী আসমা তাকে মিন্টুর রেইনকোটটি পরে যেতে বলেন। মিন্টু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার রেইনকোট নুরুল হুদাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে। তাইতো পাকসেনাদের অত্যাচারের একপর্যায়ে যখন তার শরীর থেকে রেইনকোটটি খুলে ফেলে তখনও তার মনে হয়, রেইনকোটের ওম তার শরীরে লেগে আছে।

গ. প্রয়োগ
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদা মিন্টুর রেইনকোটের সংস্পর্শে এসে চিন্তা-চেতনায় একজন মানসিক মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হয়েছেন। উদ্দীপকের শুভও শচীনের ক্যাপ পেয়ে নির্ধারণ করেছে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টুর রেইনকোট পরার পর নানারকমের ভাবনা আসে নুরুল হুদার মনে। হানাদারবাহিনীর নির্যাতন এবং রাজাকারদের বর্বরতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ পায় তার সেই ভাবনার আড়ালে। এভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা এবং মিন্টুর মতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতি তাকে ক্রমান্বয়ে মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে। তাই পাকিস্তানিদের নির্যাতন সহ্য করেও তিনি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। উদ্দীপকে শুভও শচীনের ক্যাপটি উপহার পেয়ে ক্রিকেটার হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

✍ উদ্দীপকের শুভ এবং গল্পের নুরুল হুদা উভয়ই একটি বিশেষ বস্তুকে কেন্দ্র করে নতুন চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছে। কিন্তু নুরুল হুদা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতো একটা সংগ্রামী চেতনায় জেগে উঠেছে, যেখানে শুভর জাগরণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক, সে বড় হয়ে একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার পরিহিত রেইনকোট যেমন জীবনের  পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক। তেমনি উদ্দীপকে শচীনের ক্যাপটিও শুভর চেতনার পালাবদল ঘটিয়েছে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টুর রেইনকোট নুরুল হুদাকে একজন ভীরু দুর্বলচিত্ত মানুষ থেকে সাহসী মানুষে পরিণত করেছে। তিনি পরিণত হয়েছেন মানসিক যোদ্ধায়। স্বীকার করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার  সম্পর্কের বিষয়টি। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট তার ভাবনায় এনেছে নতুন চেতনা। শচীনের ক্যাপও এমন পালাবদল এনেছে শুভর ভাবনায়।

✍ উদ্দীপকের ছোট্ট শুভ সুযোগ পায়  টেন্ডুলকারের হাত ধরে মাঠে প্রবেশের। জাতীয় সঙ্গীত পর্বের পর শচীন তাকে ক্যাপ উপহার দিলে শুভর চেতনায় পালাবদল ঘটে। সে সিদ্ধান্ত নেয় বড় হয়ে ক্রিকেটার হবে। অর্থাৎ, এতদিন শুভ যা  ভেবেছিল নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে, ক্যাপটি সেই ভাবনাকে আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে। উদ্দীপকের শুভর কাছে শচীনের ক্যাপ যেমন, গল্পের নুরুল হুদার কাছে মিন্টুর রেইনকোট টিও তেমন।

✍ দুটি জিনিস নুরুল হুদা ও শুভর জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পরিবর্তন এনেছে তাদের জীবনে। একজন হয়েছে মানসিক যোদ্ধা, আর একজন হবে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার। অর্থাৎ, এই দুটি জিনিস তাদের জীবনের পালাবদলকারী চেতনার প্রতীক হিসেবে দেখা দিয়েছে।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
কীসে কী হইল, পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি
সারা গাঁও ভরি আগুন জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি।
মার কোল হতে শিশুরে কাড়িয়া কাটিল সে খান  খান
পিতার সামনে মেয়েরে কাটিয়া করিল রক্তস্নান।
ক. কারা ঢাকা শহরে বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মারে?
খ.  ‘এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার।’- কথাটি কী নির্দেশ করে?
গ. উদ্দীপকে এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর নির্যাতনের একটি তুলনামূলক বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে, সমপূর্ণ নয়।”- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ মিলিটারি প্রত্যেকদিন ঢাকা শহরে বাজার পোড়ায়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে মানুষ মারে।

খ. অনুধাবন
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘রেইনকোট’ গল্পের ‘এসব হলো ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার’ কথাটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে হেনরি কিসিঞ্জার তথা মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে।

✍ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে মার্কিনিদের পক্ষপাতিত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি। যখন পাকিস্তানি বাহিনী বর্বরতম অত্যাচার শুরু করে, মানুষ মেরে সাফ করে দেয়, বাড়িঘর, গ্রাম, বাজারহাট জ্বালিয়ে দেয়- তখন মার্কিনিদের তেমন  কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি। বরং কিসিঞ্জার সাহেব পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘এসব হলো পাকিস্তানের ইনটার্নাল অ্যাফেয়ার।’

গ. প্রয়োগ
✍ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত্রি থেকে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত পাকিস্তানিবাহিনী এদেশীয় মানুষদের ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্য ও বর্বরতম অত্যাচার চালায়। ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপকে এই নির্যাতনের পরিচয় মেলে। 

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার চিন্তার মধ্য দিয়ে পাকবাহিনীর বহুমুখী নির্যাতনের পরিচয়  মেলে। পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের শহিদ মিনার ভেঙেছে, চালিয়েছে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, গুলি করে মানুষ হত্যা, বাড়িঘর, গ্রাম, বাজারহাট জ্বালিয়ে দেওয়া, লুট করা এবং নারীদের ধর্ষণ করা ছিল তাদের বর্বরতম অত্যাচারের বিভিন্ন দিক। কিন্তু উদ্দীপকে মূলত পাকবাহিনীর অগ্নিসংযোগ এবং মানুষ হত্যার বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।

✍ উদ্দীপকে পাকবাহিনীকে নরঘাতকরূপে চি‎িহ্নত করা হয়েছে। এই নরঘাতকরা সারা গ্রাম ভরে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। অন্যদিকে তারা মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে খান খান করেছে, আর পিতার সামনে মেয়েকে কেটে করেছে রক্তস্নান। অর্থাৎ, গল্পে পাকবাহিনীর নির্যাতনের যে বহুমুখী চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তার দুটি দিক অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী উপস্থাপন বর্তমান। উদ্দীপকে বর্ণিত কবিতাংশে মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্র রয়েছে তা গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে লেখক নুরুল হুদার চিন্তারাজি এবং অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র উন্মোচনের প্রয়াস চালিয়েছেন। যদিও লেখকের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অর্থাৎ, একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে ভীরু, দুর্বলচিত্ত, পলায়নপর রসায়নের শিক্ষক নুরুল হুদাকে একজন মানসিক যোদ্ধায় পরিণত করে-সেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক। অন্যদিকে উদ্দীপকের বর্ণনায় আমাদের যুদ্ধের একটি খণ্ড চিত্র রয়েছে।

✍ উদ্দীপকে পশ্চিম, থেকে আসা পাকিস্তানি নরঘাতকদের অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার  বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। পাকিস্তানি- বাহিনী এদেশের গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিল। মার কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে চালিয়েছিল গণহত্যা, এমনকি পিতার সামনে মেয়েকে কেটে রক্তস্নান করেছে। অর্থাৎ, উদ্দীপকের মূল লক্ষ্য অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যার বিষয়টিতে নিবিষ্ট, যা ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে।
✍ ‘রেইনকোট’ গল্পটিতে মুক্তিযুদ্ধের যে বহু বিচিত্র চিত্র রয়েছে উদ্দীপকে তা মেলে না। উদ্দীপকে আছে কেবল গল্পে বর্ণিত পাকবাহিনীর অগ্নিসংযোগ এবং নরহত্যার বিষয়টি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে সম্পূর্ণ নয়।”


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
মালেক মেম্বার একজন রাজাকার। যুদ্ধের সময় সে নিজের গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করিয়েছে। এছাড়া মিলিটারিকে সন্তুষ্ট রাখতে আশপাশের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে ক্যাম্পে।
ক. প্রিন্সিপালের পিওনের নাম কী?
খ. মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর পিওনকে দেখে সবাই তটস্থ থাকত কেন?
গ. যুদ্ধের সময় মালেক মেম্বারের কর্মকাণ্ড এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের কর্মকাণ্ডের তুলনা কর।
ঘ. মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, মিলিটারিকে সহযোগিতা করে রাজাকাররা দেশদ্রোহী ও নরঘাতকের পরিচয় দিয়েছে।” ‘রেইনকোট’ গল্প এবং উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ইসহাক মিয়া।

খ. অনুধাবন
✍ যুদ্ধ শুরুর পর প্রিন্সিপালের পিওন ইসহাক-এর ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে তাকে দেখে সবাই তটস্থ থাকত।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে পিওন ইসহাক মিয়া উর্দু বলা শুরু করে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। লেখকের ব্যঙ্গাত্মক বর্ণনায় ‘ইসহাক নিজেই এখন মিলিটারির কর্নেল বললেও চলে।’ খোদ কর্নেল উপস্থিত থাকলে  তার ক্ষমতা কমে আসে সত্য কিন্তু ক্যাপ্টেনের নিচে নামানো যাবে না এবং ইসহাক মিয়ার এই ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে মিলিটারি প্রাদুর্ভাবের পর তাকে দেখলে সবাই তটস্থ থাকত।

গ. প্রয়োগ
✍ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা দেশদ্রোহী এবং পাক-মিলিটারির সহযোগীরূপে দেখা দিয়েছিল। ‘রেইনকোট’ গল্পে বর্ণিত রাজাকাররা এবং উদ্দীপকের মালেক মেম্বার সেই রাজাকারদেরই প্রতিনিধি।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারার পশ্চিম পাকিস্তানিদের দালালরূপে দেখা দিয়েছে। তারা মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে সুন্দরী  মেয়েদের ধরে সেনা ক্যাম্পে  পৌঁছে দিয়েছে। প্রিন্সিপাল ও ইসহাকও রাজাকারে পরিণত হয়ে উর্দু ভাষায় কথা বলেছে। পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করেছে।

✍ নুরুল হুদার চেতনাস্রোত থেকে জানতে পারি, এক সর্দার গোছের রাজাকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। সে কি না ট্রাক ট্রাক মাল লুট করে নিজের  মেয়ের বাড়িতে পাঠায়। উদ্দীপকে মালেক মেম্বারও যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়াও গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের মতো সে আশেপাশের গ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, ‘রেইনকোট’ গল্পের সমষ্টিগতভাবে রাজাকাররা যেসব কর্মকাণ্ড করেছে এক মালেক  মেম্বার রাজাকারের কর্মে তার বিশাল অংশ প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের দেশদ্রোহী, লুটতরাজ এবং দালাল চরিত্রের পরিচয় মেলে। উদ্দীপকেও আছে তাদের নরঘাতী ও দেশদ্রোহী রূপের পরিচয়।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের বহুমুখী কর্মকাণ্ডের পরিচয় মেলে। তারা উর্দু ভাষায় কথা বলে ক্ষমতা অর্জন করে। যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে গ্রামবাসীর ওপর নির্যাতন চালায়। মিলিটারির কাছ থেকে বন্দুক নিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে দেশদ্রোহীর পরিচয় দেয়। এমনকি মহল্লায় ঘুরে পাকবাহিনীর জন্য সুন্দরী মেয়েদের ধরে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়।

✍ উদ্দীপকের মালেক  মেম্বার যেন গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের প্রতিনিধি। সে যুদ্ধের সময় গ্রামে মিলিটারি ডেকে এনে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়া পাকিস্তানি-মিলিটারিকে সন্তুষ্ট করতে আশেপাশের গ্রামের মেয়েদের ধরে পৌঁছে দিয়েছে ক্যাম্পে। মালেক মেম্বার একাধারে দেশদ্রোহী ও নরঘাতক। ‘রেইনকোট’ গল্পে রাজাকারদের যে পরিচয় আমরা পেয়েছি তাতে তারা যে মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন এবং পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। উদ্দীপকের রাজাকার মালেক মেম্বার  এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।

✍ সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে, মানুষ হত্যা, নারী নির্যাতন, মিলিটারিকে সহযোগিতা করে রাজাকাররা দেশদ্রোহী ও নরঘাতকের পরিচয় দিয়েছে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির যৌক্তিকতা রয়েছে।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
সেলিনা হোসেন-এর ‘যুদ্ধ’ উপন্যাসে নিখিল ও সরলা অত্যাচারিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। যুদ্ধের সময় হিন্দুদের বেছে বেছে নির্যাতন করা হয়। জীবন বাঁচানোর জন্য নিখিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হয়। টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়ে সে। মনে অসহনীয় বেদনা থাকলেও  কালেমা সবসময় মুখস্থ রাখে।
ক. রাস্তায় বেরুলে নুরুল হুদা সবসময় ঠোঁটের ওপর কী রেডি রাখে?
খ. নুরুল হুদা অনেক সুরা মুখস্থ করেছে কেন?
গ. উদ্দীপকের নিখিল ও ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদার জীবন বাস্তবতার তুলনা কর।
ঘ. “জীবন বাস্তবতার সাদৃশ্য থাকলেও উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রবণতা নিখিলের জীবনকে বেশি বিপন্ন করেছে।”- উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অনুযায়ী উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ পাঁচ কালেমা রেডি রাখে।

খ. অনুধাবন
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নুরুল হুদা যুদ্ধের সময় নিজেকে  মুসলিম হিসেবে  প্রমাণ করতে অনেক সুরা মুখস্থ করে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে পরিচালনা করার নীলনকশা ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসররা সেদিন বেছে বেছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যা করেছিল। এমনকি মিলিটারি চেকপোস্টে যাত্রীদের গোপন জায়গা তল্লাসি করে হিন্দুদের হত্যা করা হতো। মুসলিমদেরও কালেমা, সুরা পাঠ করিয়ে  রেহাই দিত। নুরুল হুদা পাকবাহিনীর এই সাম্প্রদায়িক ইস্যু থেকে বাঁচতে অনেক সুরা মুখস্থ করে।

গ. প্রয়োগ
✍ ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার, কিন্তু এই নির্যাতন সাম্প্রদায়িকতার জন্য নয়। অন্যদিকে উদ্দীপকে নিখিলের ওপর যে নির্যাতন চলেছে তা সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা; তিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগে অভিযুক্ত। ফলে তাকে সেনা ক্যাম্পে তলব করে  অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। কিন্তু নুরুল হুদা মানসিক শক্তি হারায়নি, কারণ তিনি সাম্প্রদায়িকতার শিকার নন। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিল সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়।

✍ নিখিল অত্যাচারিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।  ফলে তার ওপর ছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খড়্গ। যুদ্ধের সময় হিন্দুদের বেছে বেছে নির্যাতন করা শুরু হলে নিখিল ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত হয়। বুকে ধর্মত্যাগের অসহ্য বেদনা নিয়ে টুপি মাথায় কলেমা মুখস্থ রাখার মতো প্রহসনের শিকার হয়। গল্পের নুরুল হুদাকে নির্যাতনের শিকার হতে হলেও এমন সাম্প্রদায়িকতার শিকার হতে হয়নি। এ কারণে শারীরিক নির্যাতনের সময়ও তিনি নিজেকে মানসিক যোদ্ধা  ভেবে তৃপ্ত থাকেন। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিলের বাস্তবতা ভিন্ন।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হলেও উদ্দীপকের নিখিলের জীবনের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বিষয় যুক্ত হওয়ায় সে হয়ে পড়েছে আরও বিপন্ন।

✍ শ্যালক  স্বয়ং বীর-মুক্তিযোদ্ধা এবং কলেজে কুলির ছদ্মবেশে যে মুক্তিবাহিনী প্রবেশ করেছিল তাদের সঙ্গেও নুরুল হুদার সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগ রয়েছে। তাই নুরুল হুদার ওপর মানসিক নির্যাতন নেমে আসে। কিন্তু উদ্দীপকের নিখিল এমন শারীরিক নির্যাতন সহ্য না করলেও সাম্প্রদায়িক নির্যাতন তাকে আরও বেশি অসহায় করে  তুলেছে।

✍ নুরুল হুদা মানসিকভাবে বিপন্ন না হয়ে এবং নিজেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ভেবে গর্ববোধ করেছেন।  কিন্তু নিখিল, যে-কিনা অত্যাচারিত হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি- জীবন বাঁচানোর  তাগিদে ধর্ম ত্যাগ করেছে। আপন ধর্মত্যাগ সকল মানুষের জন্যই বেদনার। নিখিল এই বেদনায় হয়েছে পর্যুদস্ত। বুকে অসহ্য বেদনা নিয়ে সে নামাজ পড়ে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সবসময় কলেমা মুখস্থ রাখে। বস্তুত যুদ্ধকালীন সাম্প্রদায়িক হামলা তাকে বিপন্ন করেছে।

✍ নুরুল হুদা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলেও মানসিকভাবে বিপন্ন হয়নি। নিখিলও যুদ্ধকালীন নির্যাতনের শিকার তবে সাম্প্রদায়িক  প্রবণতা তাকে মানসিকভাবে বিপন্ন করেছে, ধর্মান্তরিত করেছে। সে নুরুল হুদার থেকেও বেশি বিপন্ন বেশি অসহায়।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
তারামন বিবি ১১ নম্বর সেক্টরের একজন নারী-মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুহিব হাবিলদারের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। আজিজ মাস্টারের ক্যাম্পে তিনি মুক্তিবাহিনীর জন্য রান্নার দায়িত্ব পালন করেন। এর সঙ্গে পুরুষ যোদ্ধাদের পাশাপাশি সরাসরি যুদ্ধেও অংশ নেন।
ক. স্টেনগানওয়ালা ছোকরার দল নৌকা ভরে কী নিয়ে আসে?
খ. ‘এদিককার মানুষ চোখে খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।’- উক্তিটিতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের তারামন বিবির সঙ্গে ‘রেইনকোট’ গল্পের মিন্টুর চরিত্র তুলনা কর।
ঘ. ‘নারী ও পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে।’- উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে উক্তিটি যাচাই কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ অস্ত্র নিয়ে আসে।

খ. অনুধাবন
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে ‘এদিককার মানুষ চোখে খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।’- উক্তিটিতে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতাকে বোঝানো হয়েছে।

✍ মিলিটারি লাগার পর নুরুল হুদা চারবার বাসা পরিবর্তন করে। সবশেষ বাসাটি শহর থেকেও দূরে বলা যায়। বাসার পূর্বদিকে চোখে পড়ে বিল আর ধানক্ষেত। এই বিল দিয়ে নৌকায় করে মুক্তিবাহিনী অস্ত্র নিয়ে আসে, যে অস্ত্র শহরের যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। মুক্তিবাহিনী বার বার এমনভাবে অস্ত্র নিয়ে এলে তা সাধারণ মানুষের চোখও এড়ায় না। এদিককার মানুষ তাই খালি নৌকা দেখে, নৌকা ভরা অস্ত্র।

গ. প্রয়োগ
✍ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে মিন্টু একজন সম্মুখ-যুদ্ধের যোদ্ধা। মিন্টুর মতো উদ্দীপকের তারামন বিবিও নারী হয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে।

✍ নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু জুন মাসের ২৩ তারিখে যুদ্ধের উদ্দেশে রওনা দেয়। নুরুল হুদার চিন্তাস্রোতে ধরা পড়ে মিন্টুর সাহসিকতা। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে তিনি হয়তো কোথাও কোনো নদীর  তীরে ওঁৎ পেতে বসে থাকেন। উদ্দীপকের তারামন বিবিও এমন সাহসিক এক নারীযোদ্ধা।

✍ পাকিস্তানি বাহিনী হয়তো গ্রাম জ্বালিয়ে কয়েকশ মানুষ মেরে লাশগুলো গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। মিন্টু স্টেনগান তাক করে থাকে ঐ মিলিটারিগুলোর দিকে। এ থেকে বোঝা যায়, মিন্টু একজন সাহসী ও সম্মুখযুদ্ধের যোদ্ধা। উদ্দীপকের তারামন বিবিও ১১ নম্বর সেক্টরের একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা। নারী হয়েও তিনি ক্যাম্পে রান্না করার পাশাপাশি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মিন্টু ও তারামন দুজনই যোদ্ধা এবং অকুতোভয়। কিন্তু তারামন বিবিকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগে নিজের পরিস্থিতির সঙ্গে কম যুদ্ধ করতে হয়নি।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কেবল পুরুষের বিজয় গাথা নয়, এদেশের নারীর ত্যাগ ও বীরত্বও স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। এমন বক্তব্যের সমর্থন মেলে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপকে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে স্বাধীনতার জন্য পুরুষের বীরত্ব এবং নারীর ত্যাগকে দেখানো হয়েছে। মিন্টু ও তার সহযোদ্ধাদের বীরত্বও গল্পের একটি প্রান্ত। এছাড়াও পাকবাহিনীর এবং রাজাকারদের দ্বারা এদেশের নারীদের নির্যাতন করার ইঙ্গিতও রয়েছে এ গল্পে, যা চিহ্নিনত করে স্বাধীনতার জন্যে নারীর ত্যাগ। অন্যদিকে উদ্দীপকে নারীর ত্যাগ নয়, বীরত্ব প্রদর্শিত হয়েছে।

✍ উদ্দীপকে তারামন বিবি যুদ্ধের সময়ের ‘বীরাঙ্গনা’ নন, বরং তিনি বীর নারী-মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একদিকে যেমন সেনা ক্যাম্পে রান্না করে মুক্তিবাহিনীকে সেবা করেছেন, অন্যদিকে পুরুষদের সঙ্গে একযোগে যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের পরিচয দিয়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে কেবল পুরুষরাই যুদ্ধ করেননি, নারীদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তারামন বিবিই তার প্রমাণ।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে নারীর ত্যাগ, পুরুষের বীরত্ব  এবং উদ্দীপকে তারামন বিবির বীরত্ব প্রমাণ করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে নারী-পুরুষ সকলের অংশগ্রহণ ছিল। তাই বলা যায়, ‘নারী ও পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার সম্মিলিত চেষ্টায় আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে।’- উক্তিটি যথার্থ।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
ব্রিটিশরা ভারতের শাসনভার গ্রহণ করলে অনেক বাঙালি বাংলা ছেড়ে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ভাষা শিক্ষার জন্য তারা এমনটি করেছিল তা নয়। মূলত বেশিরভাগ লোকই ইংরেজি শিখেছিল রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য।
ক. আকবর সাজিদ কোন বিষয়ের অধ্যাপক?
খ.  প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ আজকাল আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন কেন?
গ. বিদেশি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “স্বার্থের কারণে মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পাারে।”- উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ আকবর সাজিদ উর্দুর অধ্যাপক।

খ. অনুধাবন
✍ আখতারুজ্জামন ইলিয়াস রচিত ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ উর্দু শিখে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে তোয়াজ করতে শুরু করেন।

✍ উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদ জাতিতে পশ্চিম পাকিস্তানি এবং উর্দুভাষী বলে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ যুদ্ধের শুরুতে আকবর সাজিদকে তোষামোদি শুরু করেন। সাজিদের কাছ থেকে বিভিন্ন শব্দের উর্দু অর্থ জানতে তার প্রবল আগ্রহ। অর্থাৎ, আকবর সাজিদকে করা প্রিন্সিপালের এই তোয়াজে স্পষ্টতই স্বার্থচিন্তা জড়িত। বস্তুত উর্দু ভাষা জানার মাধ্যমে নিজের স্বার্থরক্ষার লক্ষে প্রিন্সিপাল উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন। 

গ. প্রয়োগ
✍ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী বিদেশি ভাষা উর্দু শিখতে চেয়েছিলেন কেবলমাত্র স্বার্থরক্ষার তাগিদে। ‘রেইনকোট’ গল্পের আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের মধ্যেও এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল উর্দু শিখতে চেয়েছিল অন্য একটি ভাষা শিক্ষার আগ্রহ থেকে নয়, বরং তার উর্দু শিক্ষার উদ্দেশ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য। এ কারণে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি উর্দুচর্চায় মনোযোগ দেন এবং উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদকে বিশেষভাবে তোয়াজ করা শুরু করেন। উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের দৃষ্টিভঙ্গি এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।

✍ উদ্দীপকে ব্রিটিশদের ভারত শাসনভার গ্রহণ করার সময় থেকে এদেশের অনেক বাঙালির বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে কথোপকথনের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। এটি সত্যি যে, তখন অনেকেই একটি বিদেশি ভাষা জানার আগ্রহে ইংরেজি চর্চা শুরু করেছিল, কিন্তু এমন অনেকে ছিল যারা ভাষা শিক্ষার জন্য নয়, বরং ইংরেজি শিখে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, আফাজ আহমদ এবং উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালিদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার ক্ষেত্রে একই রকম স্বার্থকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “মানুষ স্বভাবতই মাতৃভাষাকে ভালোবাসলেও এমন অনেক মানুষ আছে, যারা স্বার্থের কারণে মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার মতো কাজ অনায়াসে করতে পারে।” এমন কথার প্রমাণ মেলে আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘রেইনকোট’ গল্পে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপাল আফাজ আহমদ এবং তার পিওন ইসহাক মিয়ার মাতৃভাষা বাংলা। তারা সাধারণ অবস্থায় বাংলায় কথা বলে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ইসহাক মিয়া মাতৃভাষা বাংলা ছেড়ে দিয়ে উর্দু বলা শুরু করেন। তিনি কলেজে স্থাপিত ক্যাম্পের মিলিটারিদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলেন, নিজের স্বার্থ সন্ধান করেন। অন্যদিকে প্রিন্সিপালও উর্দুতে সঠিকভাবে কথা বলার নানা চেষ্টায় লিপ্ত হন। উর্দুর শিক্ষক আকবর সাজিদের কাছ থেকে জেনে নিতে চান বিভিন্ন বাংলা শব্দের উর্দু অর্থ। 

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পের মতো উদ্দীপকেও দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলে অনেক বাঙালি বাংলা ছেড়ে শুধু  রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগের আকাক্সক্ষায় ইংরেজি বলা শুরু করে। তাদের এই ইংরেজি চর্চার পিছনে ভাষা শিক্ষার কোনো আগ্রহ ছিল না।  বস্তুত স্বার্থের কারণে সেদিন তারা মাতৃভাষাকে ত্যাগ করেছিল। ‘রেইনকোট’ গল্প এবং আলোচ্য উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই দেখা যায়,মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করে অন্য ভাষা চর্চা শুরু করেছে  কোনো শুভ-চিন্তা থেকে নয়। বরং এর  পিছনে ক্রিয়াশীল ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থ।

✍ পরিশেষে উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে ‘স্বার্থের কারণে মানুষ মাতৃভাষাকে ত্যাগ করার  মতো কাজ অনায়াসে করতে পারে।’- উক্তিটি যথার্থ।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
একেবারে দিনে-দুপুরে এমন একটি কাণ্ড নিজের চোখের সামনে সংঘটিত হওয়ার পরেও তা বিশ্বাস হতে চায় না। রাজধানীরও রাজধানী যে পল্টন-রমনা, সেই পল্টনে চারদিকে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের কড়া নজরদারি এড়িয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বিচ্ছুগুলো কয়েকটি হ্যান্ডগ্রেনেড ছুঁড়ে গেল। আর্মি অফিসার ও তাদের পরিবার-পরিজন এখানকার মার্কেটে নিয়মিত কেনাকাটা করে। এ ধরনের নিরাপত্তা জোনে গেরিলা বিচ্ছুগুলো অবিশ্বাস্যভাবে বোমা হামলা চালিয়ে গেল। গত রাতের শেষের দিকে তারা সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, গাবতলীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও পাওয়ার স্টেশনগুলোয় তুমুল হামলা চালায়। এরা কীভাবে এসব অবিশ্বাস্য দুঃসাহসী অপারেশন চালায়?
ক. নুরুল হুদার মেয়ের বয়স কত?
খ. কথক কেন বললেন, “এই বৃষ্টির মেয়াদ আল্লা দিলে পুরো তিন দিন।”
গ. উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে?
ঘ. ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নুরুল হুদার মেয়ের বয়স আড়াই বছর।

খ. অনুধাবন
✍ মঙ্গলবার ভোরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় প্রচলিত প্রবাদে আস্থা জ্ঞাপন করে লেখক উপর্যুক্ত কথা বললেন।

✍ বৃষ্টির স্থায়িত্ব সম্পর্কে প্রচলিত একটি প্রবাদে বলা হয়েছে, “শনিতে সাত মঙ্গলে তিন, আর সব দিন দিন। এটা হলো জেনারেল স্টেটমেন্ট। স্পেসিফিক ক্ল্যাসিফিকশনে বলা হয়েছে, “মঙ্গলে ভোর রাতে হইল শুরু, তিন দিন মেঘের গুরুগুরু।” সুতরাং মঙ্গলের ভোর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কথক বললেন, “এই বৃষ্টির মেয়াদ আল্লা দিলে পুরো তিন দিন।”

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের মুক্তিযোদ্ধা গেরিলাদের কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পসংলগ্ন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও প্রিন্সিপালের কোয়ার্টারে হামলার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

✍ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী বাংলাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার লক্ষ্যে লুণ্ঠনে মেতে ওঠে এবং হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে এদেশে রক্তের নদী বইয়ে দেয়। কিন্তু এদেশের নানা শ্রেণি-পেশার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পাকিস্তানি হায়েনাদের এ আক্রমণের সমুচিত জবাব দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গেরিলা দল হানাদার বাহিনীকে আক্রমণে আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজধানীরও রাজধানী যে পল্টন-রমনা সেই পল্টনের চারদিকে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের কড়া নজরদারি এড়িয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলারা সশস্ত্র হামলা চালায়। এ রকম একটি নিরাপত্তা জোনে হামলা করে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যাওয়া একটি অবিশ্বাস্য ঘটনার মতো মনে হয়। এমনই একটি অবিশ্বাস্য অপারেশন পরিচালনা ‘রেইনকোট’ গল্পেও দেখা যায়। শহরের মাঝখানে অবস্থিত কলেজের সামনের দেয়াল ঘেঁষে ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে অনেকখানি পথ ও নানা স্থাপনা এড়িয়ে আর্মি ক্যাম্পের কোল ঘেঁষে প্রিন্সিপাল সাহেবের কোয়ার্টারে সফলভাবে গ্রেনেড হামলাকে কথক বলেছেন ভয়াবহ কাণ্ড ও অবিশ্বাস্য।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।”- প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অমানুষিক নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসলীলায় পরিণত হয় বাংলার মাটি। ওরা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসাথে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, গড়ে তোলে মুক্তিযোদ্ধা দল ও গেরিলা  বাহিনী।

✍ উদ্দীপকে আমরা দেখি, রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্র পল্টনস্থ বায়তুল মোকাররম মার্কেটে চার-পাঁচটি আর্মি চেকপোস্টের নজরদারি এড়িয়ে গেরিলারা সফল বোমা হামলা চালিয়ে নিরাপদে চলে যায়। দিনেদুপুরে এমনই নিরাপত্তা জোনে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বিচ্ছুদের চলে যাওয়াটা নিজ চোখে দেখার পরেও লেখকের অবিশ্বাস্য মনে হয়। উদ্দীপকের অনুরূপ ‘রেইনকোট’ গল্পেও দেখা যায়, শহরের মাঝখানে অবস্থিত কলেজ সংলগ্ন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার এবং নানা স্থাপত্য পাড়ি দিয়ে আর্মি ক্যাম্পসংলগ্ন প্রিন্সিপালের গেটে গ্রেনেড ছুঁড়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। গেরিলাদের এ অপারেশন সংবাদটি কথকের কাছে অবাক কাণ্ড ও অবিশ্বাস্য ঠেকে। উদ্দীপকের সাথে ‘রেইনকোট’ গল্পের এ সাদৃশ্য ছাড়াও গল্পে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বিচ্ছুগুলোর কর্তব্যকর্মকে নানাভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পটি একটি মুক্তিযুদ্ধনির্ভর গল্প। এ গল্পে কথক নিজে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হতে না পারলেও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা মুক্তিযোদ্ধাদের নানা অপারেশন সংবাদে মনে মনে উৎফুল­ হয়েছেন, গর্বিত হয়েছেন। ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবে উদ্দীপকের গেরিলা বিচ্ছুদের কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
আজগরের মা দু’মাস আগেও মহল্লার এর-ওর বাসায় ঝিয়ের কাজ করে চলেছে আর আজগর সরকার মঞ্জিলের বিড়ির কারখানায় বিড়ি বাঁধার কাজ করেছে। পঁচিশে মার্চের কালরাতের পর শহরে আর্মি নামায় সবকিছু পাল্টে গেছে। বিহারি আজগর এখন মোগলটুলির ইজারাদার না হলেও ফৌজদার বনে গেছে। এদেশের মাটিতে জন্ম হলেও তার মুখে এখন বাংলা কথা শোনাই যায় না। তার উর্দুর তোড়ে কুমিল্লা হাইস্কুলের উর্দু শিক্ষক সরফরাজ আলী পর্যন্ত হিমশিম খান। এ মাটির কুলাঙ্গার আজগর মুক্তিদের খুঁজে বের করে সার্কিট হাউসের আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছে দিতে বড় তৎপর ছিল।
ক. কার জন্য নুরুল হুদাকে এক্সট্রা তটস্থ থাকতে হয়?
খ.  পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল কেন?
গ.  উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.  “উদ্দীপকের আজগররাই ’৭১-এ এদেশের লাখো জনতা হত্যায় ইন্ধন যুগিয়েছিল।”- বক্তব্য বিষয়ের যথার্থতা নিরূপণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ মিন্টুর জন্য নুরুল হুদাকে এক্সটা তটস্থ থাকতে হয়।

খ. অনুধাবন
✍ পিয়নের মুখ দর্শনে পাকিস্তানি মিলিটারির ভয় কেটে যাওয়ায় তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল।

✍ দরজায় প্রবল কড়া নাড়ার শব্দে কথক হানাদার ঘাতক পাকিস্তানি মিলিটারির হানা দেয়ার আতঙ্কে শিউরে উঠলেন। মুসলমান রীতি অনুসারে চরম বিপদের সমযে পড়া “আল্লাহুম্মা ইন্না আন্তা সুবহানাকা ইন্তি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন”ও পড়ে ফেলেনে। দুরু দুরু  বুকে দরজা খুলে কথক দেখতে পান হানাদার ঘাতক নয়, প্রিন্সিপালের পিয়ন। এমন পরিস্থিতিতে কথকের পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছা করেছিল।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়ার চরিত্রের প্রতীক।

✍ ’৭১-এর পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আবহমান গ্রামবাংলার শান্তসংহত জীবনকে তছনছ করে দেয়। তাদের এ ঘৃণ্য কাজে এদেশে জন্মগ্রহণকারী, এদেশের আলো-হাওয়া-জল-অন্নে প্রতিপালিত কিছু দুরাচার, গাদ্দার পশু সৈন্যদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

✍ উদ্দীপকের আজগর এমনই এক দুরাচারী গাদ্দারের জীবন্ত প্রতিমূর্তি। এদেশে বাস করে এদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মহল্লার কাজের ঝি’র ছেলে মহল্লার ফৌজদার বনে যায়। বাংলায় জন্ম নেয়া তার মুখে পঁচিশে মার্চের পর থেকে উর্দুর তোড়ে স্কুল-কলেজের উর্দুর শিক্ষকরাও হিমশিম খান। এ  কুলাঙ্গার এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। উদ্দীপকের আজগরের অনুরূপ ‘রেইনকোট’ গল্পে প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়াও পঁচিশে মার্চের পর থেকে বাংলা জবান একেবারে ভুলে গেছে। তার উর্দুর তোড়ে স্বয়ং প্রিন্সিপালও গলদঘর্ম হয়ে পড়েন। সুতরাং উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়া চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “উদ্দীপকের আজগররাই ’৭১-এ দেশের লাখো জনতা হত্যার ইন্ধন জুগিয়েছিল।” প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যটি ঐতিহাসিকভাবে যথার্থ।

✍ ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলায় প্রবেশ করে শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র মানুষের ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন স্থাবর  ও অস্থাবর সম্পত্তিতে লুণ্ঠন ও  অগ্নিসংযোগ করে।  তাদের এ ঘৃণ্য কাজের দোসর ছিল এদেশেরই কতিপয় কুলাঙ্গার।

✍ উদ্দীপকে আজগর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের পর এলাকায় কাজের ঝির ছেলে থেকে ফৌজদার বনে যায়। বাংলায় জন্ম নিয়েও সে বাংলা জবান ভুলে অবিরাম উর্দু বোলচাল ছাড়তে থাকে। এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সে সদাসচেষ্ট। এমনই আরেকটি চরিত্র হলো ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন  ইসহাক মিয়া। মিলিটারি আসার পর থেকে সে নিজেই একজন কর্নেল বনে গেছে। উর্দু বোলচাল ছাড়া বাংলা জবানে সে এখন আর কথা বলে না। মিলিটারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে তাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ। উদ্দীপকের আজগর এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের ইসহাক মিয়ারা এ জাতির কুলাঙ্গার ।

✍ এ  দেশ, এ জনপদ সম্পূর্ণ অচেনা পাকিস্তানি পশুদের কাছে, তাদের পথ-ঘাট চিনিয়ে দিয়ে বাংলার কিছু কুলাঙ্গার দুরাচারাই বাংলার, বাঙালির সমূহ সর্বনাশ করেছিল। উদ্দীপকের আজগর ‘রেইনকোট’ গল্পের ইসহাক মিয়াদের মতো গাদ্দারদের কারণেই প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধার মতো শত সহস্র দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথার্থ।


রেইনকোট
সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ’৭১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঁচিশে মার্চের কালরাতে যে ক্র্যাকডাউন হয়েছিল, তার  জন্য পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের তিনি কখনো ক্ষমা করেননি। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের মৃত্যুর জন্য এর সামরিক বাহিনীই যে দায়ী তা খোলাখুলি বলতেন। দু-একজন হিতাকাক্সক্ষী প্রাণটা বাঁচাতে মুখ বুজে থাকতে বললেও পাকিস্তানি জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করতেন। ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাাকিস্তানি হানাদারদের এদেশীয় দোসররা তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁর ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল।
ক.  ইসহাক কোন বিষয়ের প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো?
খ.  মিলিটারি আক্রমণের পর থেকে ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক চারবার বাড়ি পাল্টালেন কেন?
গ.  উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যকার বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ.  উদ্দীপক ও ‘রেইনকোট’ গল্পের শহিদ বুদ্ধিজীবীর মতো শত-সহস্র শহিদ বুদ্ধিজীবীর ত্যাগে আমরা কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ বিষয়ে তোমার মতামত দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ইসহাক জিওগ্রাফির প্রফেসরের বাড়ির দিকে রওনা হলো।

খ. অনুধাবন
✍ প্রতিবেশী ও মিলিটারির কাছে শ্যালক মিন্টুর মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের কথা আড়াল করতেই মিলিটারি আক্রমণের পর থেকে ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক চারবার বাড়ি পাল্টালেন।

✍ মিন্টু কথকের বাড়িতে থেকেই মানুষ। যুদ্ধের শুরুতেই সে সীমান্ত পার হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। বিষয়টি অবরুদ্ধ ঢাকায় আটকাপড়া কথকের জন্য হয়েছে ভয়াবহ বিপদের।  হানাদার বাহিনী ব্যাপারটি জানলেই কথককে তথ্য বের করার নামে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করবে। এ কারণে হানদার মিলিটারি ও প্রতিবেশীর কাছে শ্যালকের যুদ্ধে গমনের তথ্য আড়াল করতে কথক চারবার বাসা পাল্টালেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যে বিস্তর বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

✍ বাংলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের গৌরব বলে বিবেচিত বুদ্ধিজীবীরাও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি। কিন্তু বাঙালি জাতি একসময় রুখে দাঁড়ায়, যদিও কিছু দুর্বলচিত্তের লোক হানাদারদের তোয়াজ করে  বেঁচে থাকার পথ বেছে নেয়।

✍ উদ্দীপকে শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক পঁচিশে মার্চের কালরাতে ক্র্যাকডাউনের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে কখনো ক্ষমা করেননি। পাকিস্তানি জুলুম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল তিনি তাদের ভূয়সী প্রশংসা করতেন। উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের হলো ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেব। এ প্রিন্সিপাল সাহেব পাকিস্তানের জন্য দিনরাত দোয়া-দরুদ পড়ে, সময় নেই অসময় নেই আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে এবং সময় করে কলিগদের গালাগালিও করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি এ প্রিন্সিপাল মিলিটারির বড়কর্তাদের কাছে সবিনয়ে নিবেদন করেছিল পাকিস্তানকে যদি বাঁচাতে হয় তো সব স্কুল-কলেজ থেকে শহিদ মিনার হটাও। এসব ব্যাপারে উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রিন্সিপাল সাহেবের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ বাংলাদেশের স্বাধীনতা লক্ষ প্রাণের দান। এই লক্ষ প্রাণের মধ্যে শহিদ-বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগ ছিল অতি মূল্যবান এক মহৎকর্ম।

✍ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী আতর্কিতে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শান্ত-স্নিগ্ধ বাংলায় অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলা ও বাঙালির জনজীবন তছনছ করে দেয়। দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীরাও তাদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি।

✍ উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই একজন শহিদ বুদ্ধিজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ছিলেন সোচ্চার। দু-একজন হিতাকাক্সক্ষী প্রাণটা বাঁচাতে মুখ বুজে থাকতে বললেও অন্যায়ের প্রতিবাদে তিনি যেমন সোচ্চার ছিলেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে তাদের ভূয়সী প্রশংসাও করতেন। ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাইয়ের,  মতো এমনই সৎ-সাহসী-নির্র্ভীক-দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী আমরা ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধার মাঝে দেখতে পাই।

✍ ‘রেইনকোট’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রফেসর নুরুল হুদার মধ্যে সত্যিকার দেশপ্রেম, নির্ভীকতা ও দুঃসাহস ফুটে ওঠে পাকিস্তানি হানাদারদের শত নির্যাতনের মুখেও মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানার তথ্য না দেওয়ায়। তেমনি উদ্দীপকের শিবলির বড় ভাই এবং ‘রেইনকোট’ গল্পের প্রফেসর নুরুল হুদা, প্রফেসর আবদুস সাত্তার মৃধাদের মতো শত-সহস্র বুদ্ধিজীবীর আত্মত্যাগে আমরা কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
Share:

HSC নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৈয়দ শামসুল হক

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
💕 পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

💕 শিখন ফল
☑️ নূরলদীনের সংগ্রামী চেতনার সাথে পরিচয় ঘটবে।  
☑️ বাঙালির অতীত ঐতিহ্য ও সংগ্রামী চেতনা সস্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে। 
☑️ নূরলদীনের আন্দোলন-সংগ্রামী চেতনা সম্পর্কে জানতে পারবে। 
☑️ বাংলার বুকে নেমে আসা শত্রুর মোকাবিলায় নূরলদীনের চেতনা কীভাবে কাজ করেছে তা অনুধাবন করতে পারবে। 
☑️ বাংলার রক্তাক্ত ইতিহাস এবং বাঙালির আত্মত্যাগ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে। 
☑️ সারা বাংলায় নূরলদীনের সংগ্রামী চেতনা বিস্তারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারবে। 
☑️ বাংলার লোকালয়, জনপদ, নদী, জোৎস্নালোক প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে। 
☑️ নূরলদীনের মতো চেতনাদীপ্ত তারুণ্যশক্তির বন্দনার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে। 
☑️ নূরলদীন কীভাবে বাঙালির চিরন্তন সংগ্রামী চেতনার প্রতীক তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।

💕 পাঠ-পরিচিতি
 ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতাটি সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ শীর্ষক কাব্যনাটক থেকে সংকলিত হয়েছে। এটি এ নাটকের প্রস্তাবনা অংশ।

নাটকটির প্রস্তাবনা অংশে সূত্রধার আবেগঘন কাব্যিক বর্ণনার মাধ্যমে দর্শকদের সঙ্গে নাট্যকাহিনির সংযোগ স্থাপন করেছেন। নূরলদীন এক ঐতিহাসিক চরিত্র। ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে সামন্তবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাহসী কৃষকনেতা নূরলদীনের সংগ্রামের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নূরলদীনের সাহস আর ক্ষোভকে অসামান্য নৈপুণ্যে মিশিয়ে দিয়েছেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে দীর্ঘ নয় মাস যখন এ বাংলা মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়, যখন শকুনরূপী দালালের আলখাল্লায় ছেয়ে যায় দেশ; যখন বাঙালি হারায় তার স্বপ্ন ও বাকস্বাধীনতা, যখন স্বজনের রক্তে ভেসে যায় ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা- তখন মনে পড়ে ইতিহাসের প্রতিবাদী নায়ক নূরলদীনকে- এ চেতনাই কবিতাটিতে সৈয়দ শামসুল হক তুলে ধরতে চেয়েছেন।

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড

১১৮৯ বঙ্গাব্দে [১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দ] নূরলদীনের ডাকে মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছিল, এখনও ঠিক সেভাবে জেগে উঠবে বাংলার জন-মানুষ- এটাই কবির বিশ্বাস। এভাবে কবির শিল্পভাবনায় নূরলদীন ক্রমান্বয়ে এক চিরায়ত প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়। ইতিহাসের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে নূরলদীন মিশে যায় বাংলার শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ভিড়ে- অংশগ্রহণ করে সমকালীন সকল আন্দোলন-সংগ্রামে। তাই কবির মনে হয়- অভাগা মানুষ জেগে ওঠে পাহাড়ি ঢলের মতো ভাসিয়ে দেবে সকল অন্যায় যখন নূরলদীন দেবে ডাক- “জাগো, বাহে, কোনঠে সবাই।”
 
'নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়' কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
💕 কবি পরিচিতি
নাম : সৈয়দ শামসুল হক
জন্ম সাল : ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ। 
জন্মস্থান  : কুড়িগ্রাম।
পিতার নাম : সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন। 
শিক্ষাজীবন : ম্যাট্রিক (১৯৫০), ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল। 
উচ্চমাধ্যমিক : ইন্টারমিডিয়েট (১৯৫২), জগন্নাথ কলেজ।
উচ্চতর শিক্ষা : স্নাতক (সম্মান) ইংরেজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  
পেশা ও কর্মজীবন সাংবাদিকতা  ও লেখালেখি। প্রযোজক- বাংলা বিভাগ, বিবিসি। 
সাহিত্য কর্ম উপন্যাস : এক মহিলার ছবি, অনুপম দিন, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, স্মৃতিসৌধ, মৃগয়ায় কালক্ষেপণ, নির্বাসিতা, নিষিদ্ধ লোবান, খেলারাম খেলে যায় প্রভৃতি। 
ছোটগল্প : শীত বিকেল, রক্ত গোলাপ, আনন্দের মৃত্যু, প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান প্রভৃতি। 
কাব্যগ্রন্থ : বিরতিহীন উৎস, অপর পুরুষ, পরাণের গহীন ভিতর, একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, অগ্নি ও জলের কবিতা, রাজনৈতিক কবিতা প্রভৃতি। 
নাটক : পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নূরলদীনের সারাজীবন, ঈর্ষা ইত্যাদি।
শিশুকিশোরদের জন্য : সীমান্তের সিংহাসন, অনু বড় হয়, ২৫ সনের বন্দুকে প্রভৃতি। 
পুরস্কার ও সম্মাননা বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, টেনাশিনাস পদক প্রভৃতি।

💕 উৎস পরিচিতি
 ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতাটি সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ শীর্ষক কাব্যনাটক থেকে সংকলিত হয়েছে। এটি এ নাটকের প্রস্তাবনা অংশ।
 
💕 বস্তুসংক্ষেপ
 বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচীলেখক সৈয়দ শামসুল হক সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণ করেছেন রাজসিকভাবে। দুই বাংলার সাহিত্যের আকাশে তিনি অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, সংগীত, চিত্রকলা প্রতিটি জায়গায় চষে বেড়িয়েছেন বীরদর্পে। তাঁর বহুমুখী সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক প্রতিভার অন্যতম প্রধান ফসল ‘নূরলদীন এর সারা জীবন’ কাব্যনাটকটি।  এ কাব্যনাটকটির প্রারম্ভিক কবিতা হলো ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।’ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে উপমহাদেশে বহু আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। সব হয়তো ইতিহাসে স্থান পায় নি।

নীলকরদের দুর্ধমনীয় বর্বর লোভের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী বাংলার সাধারণ কৃষক, মাটির নায়ক, রংপুরের নূরলদীন। ব্রিটিশবিরোধী এ গণনায়ককে কবি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেন। কবিতাটিতে কবি ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনাশক্তি মিশিয়েছেন অসামান্য দক্ষতায়। ব্রিটিশ দ্বারা শোষিত বাংলার বিধ্বস্ত চিত্র এঁকে দেশের কৃষিভিত্তিক সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন। সে চিত্রে দেখা যায়, বাংলার গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, ঊনসত্তর প্রকৃতি। হাজার লোকালয় আজ বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। এখানে নষ্ট হয়েছে খেত, মাঠ, নদী, ব্রীজ, সংসার। ছিন্নভিন্ন এ রূপে যেন ব্যথিত বাংলার প্রকৃতি।

ঔপনিবেশিক প্রভুদের অর্থ জোগান দিতে গিয়ে বাংলার মেহনতি মানুষ কেমনভাবে নিঃস্ব হয়ে মৃত্যুর পথে চলেছিল সে কথাটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার বাসনা রয়েছে কবির অন্তরে। তাই তিনি সকলকে গোল হয়ে, স্থির হয়ে, ঘন হয়ে বসে সে কথা শুনতে বলেছেন। গণনায়ক নূরলদীন অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, তাই তাকে মনে পড়ে যখন বাংলার আকাশে যখন শকুনের আনাগোনা শুরু হয়, যখন সারাদেশে দালালের আলখাল্লায় ছেয়ে যায় বা স্বপ্ন লুট হয়। ভূমিপুত্র নূরলদীন, যার বাড়ি রংপুরে ছিল তাঁকে এবং তার সংগ্রামী চেতনাকে বাংলার এ পরিস্থিতিতে অতি বড় দরকার।

কারণ তাঁর ডাকে সারাদেশে পাহাড়ি ঢলের মতো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। কবি তাই বাংলার মাটিতে তার পুনরাবির্ভাব কামনা করেছেন এ সোনার বাংলাকে, বাংলার মানুষকে বাঁচানোর জন্য।
 
💕 নামকরণ
 বিষয়বস্তুর আলোকে আলোচ্য কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।’ যুগে যুগে যারা মানুষের দুর্দিনে, দুঃসময়ে, অসহায় মুহূর্তে সহায় হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদেরকে মানুষ মনে রাখে। তাঁরা সাহসী, প্রতিবাদী, প্রতিরোধী শক্তির অধিকারী, সংগ্রামী ও আত্মত্যাগী চেতনায় ঋদ্ধ। পরাধীনতার সমস্ত নষ্টামির শৃঙ্খল ছিঁড়ে তাঁরা স্বাধীনতার পক্ষে জাগরণ সৃষ্টি করেন- নেতৃত্ব দেন। ১১৮৯ সনে রংপুরে নূরলদীন যেমন ডাক দিয়েছিলেন শাসক-শোষক বিরোধী সংগ্রামের- ‘জাগো বাহে, কেনঠে সবায়’....।

আবার যখন সোনার বাংলায় শকুন নেমে আসে, দেশ ছেঁয়ে যায় দালালের আলখেল্লায়, যখন আমারই দেশে আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়, তখন মনে পড়ে যায় নূরলদীনের কথা। যখন বাংলাদেশের ঊনসত্তর হাজার লোকালয়ে সশস্ত্র হানা দেয় বিদেশি বাহিনী, তখন নূরলদীনের দৃপ্ত সাহস ও দীপ্ত তেজ নিয়ে এদশের মানুষ সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে, আক্রমণ করে পরাজিত করে তাদের। ঊনসত্তর হাজার লোকালয়ে আবার ফিরে আসে আলোকিত জীবন, আবার “ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না ঢালে চাঁদ-পূর্ণিমার।” তাই এ কবিতার নামকরণ ‘নূরলদীন-এর কথা মনে পড়ে যায়’ যথার্থ হয়েছে।
 
💕 শব্দার্থ ও টীকা
নিলক্ষা ✑ দৃষ্টিসীমা অতিক্রমী। 
ধবল দুধের মতো জ্যোৎস্না ✑ সাদা দুধের মতো জ্যোৎস্না। জ্যোৎস্নার রঙকে দুধের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
স্তব্ধতার দেহ ✑ এখানে নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশ বোঝানো হয়েছে।
প্রপাত ✑ নির্ঝরের পতনের স্থান, জলপ্রপাত।
হানা দেয় ✑ আক্রমণ করে। আবির্ভূত হয় অর্থে ব্যবহৃত।
কালঘুম ✑ মৃত্যু, চিরনিদ্রা।
মরা আঙিনায় ✑ মৃত্যু নিথর অঙ্গনে।
বাহে ✑ বাপুহে। দিনাজপুর, রংপুর এলাকার সম্বোধন বিশেষ।
কোনঠে ✑ কোথায়।

💕 বানান সতর্কতা
জ্যোৎস্না, বাজেয়াপ্ত, স্বপ্ন, পূর্ণিমা, নিলক্ষা, শিস, আকস্মৎ, গঞ্জ, স্তব্ধতা, স্বচ্ছ, দীর্ঘ, আঙিনা, তীব্র, প্রপাত, আলখাল্লা, ব্র‏‏হ্মপুত্র, নিঃসঙ্গ, অশ্রুপাত, স্মৃতি, পৃষ্ঠা, কণ্ঠ।
 
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে : ‘কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা।
ক. নূরলদীনের বাড়ি কোথায় ছিল?
খ. ‘যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়’- বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. কবিতাংশের কবির চেতনার সঙ্গে নূরলদীনের চেতনাগত সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রেক্ষাপটগত সাদৃশ্য থাকলেও কবিতাংশটিতে “নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়” কবিতায় কবির অভিব্যক্তির সার্থক রূপায়ণ ঘটেনি- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
 
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে।

খ. অনুধাবন
✍ উক্ত চরণে কবি সোনার বাংলায় পাকিস্তানিদের আক্রমণের বিষয়টিকে বুঝাতে চেয়েছেন।

✍ ৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। গোটা দেশটাই যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। লক্ষ লক্ষ মৃতদেহকে ভক্ষণ করতে নেমে আসে শকুনেরা। এটিই আলোচ্য অংশে প্রকাশিত হয়েছে।

গ. প্রয়োগ
✍ অন্যায় অবিচারের হাত থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে মুক্ত করার প্রতিবাদী চেতনায় উদ্দীপকের কবির সাথে নূরলদীনের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ এমন অনেক মানুষ আছে যারা সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল চান। তারা দেশের মানুষকে সকল অন্যায় অবিচারের কালো থাবা থেকে মুক্ত করতে চান। এ আকাক্সক্ষা থেকেই তারা গোটা জাতিকে সচেতন করে তোলেন। একটি স্বাধীন দেশ রচনার জন্য তারা জাতিকে নেতৃত্ব দেন।

✍ আলোচ্য কবিতায় নূরলদীনকে কবি চিরায়ত প্রতিবাদের প্রতীকরূপে উপস্থাপন করেছেন। নূরলদীন এক ঐতিহাসিক চরিত্র। ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে সামন্তবাদ-সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নেতৃত্ব দেন নূরলদীন। তাঁর সাহস, ক্ষোভ প্রতিবাদকেই এ কবিতায় কবি রূপায়িত করেছেন। উদ্দীপকের কবিও এ প্রতিবাদী চেতনার প্রতীক। তিনিই জনগণকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন।  

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ প্রেক্ষাপটগত সাদৃশ্য থাকলেও কবিতাংশটিতে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কবির অভিব্যক্তির সার্থক রূপায়ণ ঘটেনি’-মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে অগণিত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিসংগ্রামে।

✍ আলোচ্য কবিতায় কবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রূপদান করেছেন। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস এ বাংলা মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয়। বাঙালি তার স্বপ্নকে রূপ দিতে, বাক্-স্বাধীনতাকে ফিরে পেতে স্মরণ করে ইতিহাসের প্রতিবাদী নায়ক নূরলদীনকে, তাঁর প্রতিবাদী সত্তাকে। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি বলতে দেশ রচনার কবিকে বোঝানো হয়েছে, যা আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে জোয়ার জাগল। মানুষ যেন প্রাণ ফিরে পেল।

✍ সুতরাং, বলা যায়, ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় এবং উদ্দীপক উভয়ের প্রেক্ষাপট হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। তবে যে প্রতিবাদী অভিব্যক্তি আলোচ্য কবিতায় রূপায়িত হয়েছে উদ্দীপকে তা ততটা স্পষ্ট নয়। আর এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়। 

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে গণতন্ত্রের পথ সুগম করেছেন নূর হোসেন। তারপর থেকে যে কোনো আন্দোলনে সংগ্রামে নূর হোসেনের কথা মনে পড়ে যায় অবলীলায়। 
ক. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় জ্যোৎস্নার সাথে কী ঝরে পড়ে? 
খ. “অতীত হঠাৎ হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরজায়”- কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “ক্রান্তিকালে বাঙালি জাতি অতীত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে”- উদ্দীপক ও ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
 
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ জ্যোৎস্নার সাথে স্মৃতির দুধ ঝরে পড়ে। 

খ. অনুধাবন
✍ “অতীত হঠাৎ হানা দেয় বন্ধ দরজায়” -কারণ দরজায় বিপদ এসে কড়া নাড়ছে, যার সাথে অতীতের ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ একই রকম কোনো ঘটনা যদি দুই বা ততোধিকবার মানুষের জীবনে ঘটে, তখন অতীতের একই ঘটনা স্মৃতি হিসেবে হাজির হয়। এ স্মৃতিতে মিল থাকে শিক্ষা, যার আলোকে মানুষ বর্তমানের মোকাবিলা করে। আলোচ্য লাইন দ্বারা অতীতের নূরলদীনের কথা স্মৃতি হিসেবে মনের বন্ধ দরজায় হানা দেয়াকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, সে সময়ের মতো আজও দুঃসময় এসে হাজির হয়েছে। 

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের ডাক দেয়ার দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।

✍ নেতা হলো সে, যার ডাক দেয়ার ক্ষমতা আছে, যে ডাক দিলে মানুষ সাড়া দেয় এবং সোচ্চার হয়। পৃথিবীর সব বিপ্লবই কোনো না কোনো নেতার ডাক দেয়ার ফসল।

✍ উদ্দীপকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কথা পাওয়া যায়। নূর হোসেন এ আন্দোলনে শহিদ হন এবং এ মৃত্যুর অনুপ্রেরণায় সব জনতা জেগে ওঠে। শহিদ নূর হোসেনের রক্ত সাধারণ বাংলার মানুষের ধমনিতে চেতনার ডাক পৌঁছে দেয়। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও দেখা যায়, নূরলদীনও এক চাঁদনী রাতে মানুষকে ডাক দিয়েছিল। যে ডাকে মানুষ সচেতন হয়েছিল, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার এ দিকটারই প্রতিনিধিত্ব করে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “ক্রান্তিকালে বাঙালি জাতি অতীত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে”- এ উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে গুরুত্ব বহন করে।

✍ মানুষ যখন কোনো বিপদে পড়ে, তখন সিদ্ধান্ত নেয় অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। কারণ, অভিজ্ঞতা হলো সবচেয়ে কার্যকরী জ্ঞান, যে জ্ঞানের ফলাফল নির্ভুলভাবে প্রয়োগ করা যায়।

✍ উদ্দীপকে ’৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কথা বলা হয়েছে। এ আন্দোলনে শহিদ নূর হোসেন বাংলার গণ-মানুষের প্রেরণায় পরিণত হয়। মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস খুঁজে পায়। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনকেও একই রকম অনুপ্রেরণাকারী হিসেবে পাওয়া যায়।

✍ মানুষের চরিত্র কিংবা আদর্শ কখনো কখনো ইতিহাসে রূপান্তরিত হয় এবং এ আদর্শ পরবর্তীতে মানুষের অনুপ্রেরণা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। মানুষ সাহস পায় সংগ্রামে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার। উদ্দীপকের নূর হোসেন এবং কবিতার নূরলদীন দুজনেই এখন আমাদের ইতিহাসের সন্তান। তাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় বিপদের সময়। বাঙালি জাতি এ অনুপ্রেরণা পেয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে পিছপা হয় না। আর মানসিক শক্তির কারণে শত্রুকে পরাস্ত করে। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয় যে, “ক্রান্তিকালে বাঙালি জাতি অতীত থেকে শক্তি সঞ্চয় করে।” তাই বলা যায় উক্তিটি যথার্থ। 


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বাঙালি জাতির রয়েছে সংগ্রামের এক দীর্ঘ ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করে বাঙালি তাদের বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু, তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, শেরে বাংলা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক অবিসংবাদিত নেতা বাঙালির প্রাণে অমর হয়ে আছেন। তাঁরা বাঙালির প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ। 
ক. দীর্ঘ দেহ নিয়ে নূরলদীন দেখা দেয় কোন আঙিনায়? 
খ. “অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার।”- কেন?
গ. উদ্দীপকটি নূরলদীনের কীভাবে প্রতিনিধিত্ব করে তা ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “তাঁরা বাঙালি প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ”- ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে পঙ্ক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
 
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নূরলদীন  দেখা দেয় মরা আঙিনায়। 

খ. অনুধাবন
✍ অভাগা মানুষগুলো শত্রুর কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার জন্য জেগে ওঠে।

✍ শত্রুর শক্তি যখন বেড়ে যায়, তখন শত্রু আগ্রাসী হয়ে পড়ে; সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে। এ রকম সময় যখন আসে, তখন নির্যাতিতরাও জেগে ওঠে, বাঁচার আশায় মুক্তির জন্য অস্ত্র ধরে। আলোচ্য উক্তি দ্বারা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখন শত্রুর বিভীষিকা বেশি। তাই মানুষ আবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছে।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে যেসব মহান নেতার কথা প্রকাশ পেয়েছে তাদের আদর্শ নূরলদীনের আদর্শকেই প্রতীকায়িত করে।

✍ যাঁরা সৎ, সাহসী ও সমবেদনাবাদী, তাঁরা সত্যের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন। শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে আমরণ সংগ্রাম করেন।

✍ উদ্দীপকে বাংলার যেসব মহান নেতার কথা পাওয়া যায়, তাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সাধারণ মানুষের বিপদে তাঁরা নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। মানুষ তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করেছেন। ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনও সাধারণ মানুষকে জেগে ওঠার আহবান জানিয়ে একই আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন, যা উদ্দীপকের মহান নেতার আদর্শের সাথে সামঞ্জস্য সৃষ্টি করে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “তাঁরা বাঙালি প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ”-উক্তিটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলভাবকে ফুটিয়ে তোলে।

✍ মানুষ তাঁদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন, যাঁরা মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। এঁরা হলেন মহান মানুষ ও মহান নেতা। এঁরাই কালে কালে জনসাধারণের মনে প্রতিবাদী চেতনার উৎস হিসেবে জাগররূক থাকেন।

✍ উদ্দীপকে এ বাংলার কিছু মহান নেতার কথা বলা হয়েছে। যাঁরা বাংলার মানুষের নেতা ছিলেন, বাংলার মানুষের নূরলদীনের সাহসী চরিত্রই এ কবিতার মর্মকথা, যা পরবর্তীতে অসংখ্য মানুষের স্মৃতির দরজায় সাহসের বাণী নিয়ে কড়া নাড়ে। এ বাংলায় নূরলদীনের মতো আরো অনেক নেতার জন্ম হয়েছে। যাঁদের পরিচয় উদ্দীপকে পাওয়া যায়।

✍ মানবতাবোধের বিচারে উদ্দীপকের নেতারা কিংবা কবিতার নূরলদীন প্রত্যেকেই বাঙালির প্রতিবাদী চেতনার মহান আদর্শ হিসেবে সবসময় বিবেচিত হবেন।


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
“মানুষের প্রাণ থেকে পৃথিবীর মানুষের প্রতি
সেই আস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ফিরে আসে, মহাত্মা গান্ধীকে
আস্থা করা যায় বলে।”
ক. নূরলদীন আবার একদিন কোথায় আসবে?
খ. কবি কেন নূরলদীনের আগমন প্রত্যাশা করেন?
গ. উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের মধ্যে সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতেই নূরলদীনরা বার বার ফিরে আসেন”- উদ্দীপক ও ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নূরলদীন আবার একদিন বাংলায় আসবে। 

খ. অনুধাবন
✍ যথার্থ নেতৃত্বদানের মাধ্যমে জাতীয় সমস্যার সমাধানের জন্য কবি নূরলদীনের আগমন প্রত্যাশা করেন।

✍ অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষগুলোকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য নূরলদীন তাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য নূরলদীনের মতো সংগঠকের প্রয়োজন। তাই কবি তাঁর আগমন প্রত্যাশী। 

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের সাদৃশ্য হচ্ছে তাঁরা উভয়েই মানুষের আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব।

✍ ১৮৯ সনে নূরলদীনের ডাকে শোষিত মানুষগুলো একযোগে সাড়া দিয়েছিল। কেননা, তারা নূরলদীনের নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখতে পারত।

✍ উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মানুষের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু সেই আস্থা আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের আস্থাভাজন হতে পেরেছিলেন। অগণিত মানুষ তার উপর আস্থা রাখতে পারত। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনও ছিল একজন যোগ্য নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব, যার নেতৃত্বে সবাই আস্থা রেখে ১১৮৯ সনে উদাত্ত সাড়া দিয়েছিল। নূরলদীনও জানত তাঁর আহবান শোনা মাত্রই শোষিত মানুষগুলো শত্রুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে। আর এ আশাই বাস্তবায়িত হয়েছিল সেদিন। মূলত একজন সৎ, বিশ্বাসী মানুষের উপরই আস্থা রাখা যায়। সুতরাং, বলা যায়, মহাত্মা গান্ধী ও আলোচ্য কবিতার নূরলদীন মানুষের আস্থাভাজন ছিলেন। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতেই বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ব্যক্তি নেতৃত্বদান করেছেন।

✍ ১৮৯ সনে নূরলদীন একজন যথার্থ নেতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি রংপুরের শোষিত মানুষগুলোকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে তুলেছেন।

✍ উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধী মানুষের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফিরিয়ে এনেছিলেন নিজ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। অর্থাৎ, যখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারত না বা কারো উপর আস্থা রাখতে পারত না সেই সময়ে মহাত্মা গান্ধী হাল ধরেছিলেন। আর সে সময়ের মানুষগুলোকে আস্থা রাখার মতো পরিবেশও তৈরি করেছিলেন। আবার, ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনও অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলেছিলেন নিজ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীন একটি বিশেষ সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে সময়ে তাঁর নেতৃত্বের জন্য হাজারো মানুষ অপেক্ষমাণ ছিল। আবার উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীও একটি বিশেষ সময়ে মানুষের বুকে আশার সঞ্চার করেছিলেন। অর্থাৎ নূরলদীন যেমন অভাগা মানুষগুলোকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন, তেমনি মহাত্মা গান্ধীও আস্থাহীন মানুষের মধ্যে আস্থাশীল হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বুকে এলেও একই ধরনের কাজ করেছেন। অর্থাৎ মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন। মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য  নূরলদীনরা পৃথিবীতে বার বার বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন আঙ্গিকে এসেছেন। তাঁরা মানুষের মনে জাগিয়ে তুলেছেন আশার আলো, মানুষকে করেছেন প্রতিবাদী। সুতরাং বলা যায়, অভাগা মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতেই নূরলদীনরা পৃথিবীতে বারবার ফিরে আসেন। 


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
কাজী নজরুল ইসলাম অসংখ্য রচনাবলিতে শোষণের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। তাঁর বিদ্রোহাত্মক কবিতা আমাদের যুগে যুগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা জোগায়। 
ক.  ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কত হাজার লোকালয়ের কথা বলা হয়েছে? 
খ. ‘কালঘুম যখন বাংলায়’- কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের সংগ্রামী মনোভাবকে কীভাবে প্রতিফলিত করে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরুলদীনের মনোভাব অভিন্ন” মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
 
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় ঊনসত্তর হাজার লোকালয়ের কথা বলা হয়েছে।   

খ. অনুধাবন
✍ ‘কালঘুম যখন বাংলায়’ -বলতে দেশের দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে মানুষের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।

✍ দেশের দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে বা দেশের ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষ তেমন কিছুই করতে পারে না। তাদেরকে সংগঠিত করার জন্য প্রয়োজন হয় যোগ্য নেতৃত্বের। মানুষের নিস্ক্রিয় মনোভাবকে ‘কালঘুম যখন বাংলায়’ কথাটির মাধ্যমে রূপায়িত করা হয়েছে। 

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে সংগ্রামী হওয়ার আহবান জানানোর মাধ্যমে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের সংগ্রামী মনোভাবকে প্রতিফলিত করেন।

✍ নূরলদীন শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আর এজন্যই তিনি শোষিত মানুষগুলোকে শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ডাক দিয়েছিলেন। কেননা, কোনো সংগ্রামী নেতা কখনোই শোষকের শোষণ, নিপীড়ন সহ্য করতে পারেন না।

✍ উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর অসংখ্য রচনাবলিতে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। এ থেকে তাঁর সংগ্রামী মনোভাবের পরিচয় ফুটে ওঠে। তিনি বিদ্রোহাত্মক অনেক কবিতাও রচনা করেছেন, যা যুগে যুগে মানুষকে সংগ্রামী চেতনায় অনুপ্রাণিত করে। আবার, ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনও ছিলেন সংগ্রামী মানুষ। তাই তিনি ১১৮৯ সনে রংপুরে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। যে ডাকে সাড়া দিয়েছিল হাজারো মানুষ। তিনি শোষকের বিরুদ্ধে, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার করেছিলেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে সংগ্রামী হওয়ার আহবান জানানো মধ্যাদিয়ে আলোচ্য কবিতার নূরলদীনের সংগ্রামী মনোভাবকে প্রতিফলিত করেছে।   

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীনের মনোভাব অভিন্ন”- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন লেখনীর মাধ্যমে। তাঁর সংগ্রামী মনোভাব ফুটে উঠেছে রচনাবলিতে। অন্যদিকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীন মানুষকে সংগ্রামী হওয়ার আহবান লেখার মাধ্যমে জানাননি, জানিয়েছেন সরাসরি। অর্থাৎ, তাঁরা দুজনই সংগ্রামী চেতনার অধিকারী। কিন্তু তাদের প্রকাশভঙ্গি আলাদা।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার নূরলদীন অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সংগ্রামী মনোভাব নিয়ে। তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। যে ডাকে সাড়া দিয়েছিল রংপুরবাসী। আবার, উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলামও বিদ্রোহাত্মক কবিতার মাধ্যমে শোষিত মানুষগুলোকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী হওয়ার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁরা ভিন্ন পদ্ধতিতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আর তাঁদের এরূপ কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে নিজেদের সংগ্রামী চেতনা।

✍ সুতরাং বলা যায়, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের কাজী নজরুল ইসলাম এবং আলোচ্য কবিতার নূরলদীনের মনোভাব অভিন্ন।


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রত্যয়ে আমরা স্বাধীনতার লাল সূর্যটাকে ছিনিয়ে এনেছিলাম তা আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে। কেননা, সঠিক নেতৃত্বের অভাবে আমরা আমাদের স্বপ্নপূরণ করতে পারছি না। 
ক. কার কথা সারা দেশে  পাহাড়ি ঢলে‏র মতো নেমে আসে?
খ. স্বপ্ন লুট হয়ে গেলে কবি নূরলদীনকে স্মরণ করেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি কীভাবে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে? বিশ্লেষণ কর।
ঘ. “আমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য নূরলদীনের আগমন প্রয়োজন”- এ বিষয় ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে তোমার মতামত দাও।
 
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নূরলদীনের কথা সারাদেশে পাহাড়ি ঢলের মতো নেমে আসে।

খ. অনুধাবন
✍ লুট হওয়া স্বপ্ন নূরলদীন ফিরিয়ে আনতে পারবেন এ জন্য কবি নূরলদীনকে স্মরণ করেন।

✍ নূরলদীন মানুষের স্বপ্নকে রূপায়িত করেছিলেন তাঁর সংগ্রামী চেতনার মাধ্যমে। শোষিত মানুষগুলোর স্বপ্নকে তিনি বাস্তবায়িত করেছিলেন। তাই কবির স্বপ্নগুলো যখন লুট হয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি নূরলদীনকে স্মরণ করেছেন, তাঁর শরণাপন্ন হতে চাইছেন। কেননা, একমাত্র নূরলদীনই কবির স্বপ্নকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। 

গ. প্রয়োগ
✍ স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার বাস্তবতার মধ্য দিয়ে উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরে।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নানামুখী বাস্তবতার কথা বলা হয়েছে। দেশের অরাজক অবস্থার কথা, স্বপ্ন লুট হওয়ার কথা, অত্যাচারীদের শোষণের কথা কবিতায় আলোচিত হয়েছে।

✍ উদ্দীপকে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমরা স্বাধীন দেশ গঠনে তৎপর হয়েছিলাম, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে সোনার বাংলা আজ শকুন, দালালে ভরে গেছে। মানুষের স্বপ্ন লুট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নির্ভয়ে কথা বলতে পারছে না। স্বাধীন দেশে মানুষ স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারছে না। অর্থাৎ মানুষ তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায়, স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার বাস্তবতার মধ্য, দিয়ে উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ আমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য নূরলদীনের মতো একজন সাহসী মানুষের আগমন প্রয়োজন।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি বার বার নূরলদীনের আগমন কামনা করেছেন। কেননা আমাদের বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর আগমন আবশ্যক। নূরলদীনের মতো সাহসী মানুষই আমাদের স্বপ্নগুলোকে রূপায়িত করতে পারবে।

✍ উদ্দীপকে বলা হয়েছে, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমাদের যোগ্য নেতার আবির্ভাব প্রয়োজন। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও  বলা হয়েছে, অভাগা মানুষগুলো আশায় বুক বেঁধে আছে, নূরলদীন আবার ফিরে আসবেন। কেননা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য নূরলদীনের বিকল্প নেই।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীনের আগমন বলতে বোঝানো হয়েছে নূরলদীনের মতো সাহসী কোনো ব্যক্তির আগমন। কেননা, নূরলদীন আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তাঁর মতো সাহসী মানুষ এদেশবাসীর অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই কবি তাঁর মতো ব্যক্তির আবির্ভাব বার বার কামনা করেছেন। কেননা, অভাগা মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনে, স্বপ্ন পূরণে তাঁর আগমন অত্যন্ত জরুরি। উদ্দীপকেও নেতৃত্ব শূন্যতার কথা বলা হয়েছে। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দেশবাসী তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে না। তাই আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, আমাদের স্বপ্ন পূরণে  নূরলদীনের আগমন প্রয়োজন।


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
রাশেদের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাশেদ প্রায়ই বাবার কাছে যুদ্ধের গল্প শোনে। একদিন রাশেদ বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বাবা, তোমাদের ভয় হয়নি? একবারেও মনে হয়নি পাকিস্তানি সেনাদের সাথে যদি তোমরা না পার, তবে কী হবে?” তখন বাবা, বললেন, ‘না, ভয় করেনি’।  আমরা তো হার না-মানা জাতি। বায়ান্নতে এদেশের সন্তানেরা মাতৃভাষার জন্য যদি আত্মত্যাগ করে মাতৃভাষাকে তার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না? যুদ্ধের সময় আমাদের ভাষাশহিদদের স্মরণ করে আমরা মনে জোর পেতাম, সাহস পেতাম।”
ক. নূরলদীনের বাড়ি কোথায় ছিল?
খ. “আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায় ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।” -বুঝিয়ে দাও। 
গ. উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূল সুর ধারণ করেছে।”-মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর।
 
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নূরলদীনের বাড়ি ছিল রংপুর। 

খ. অনুধাবন
✍ অতীতে অধিকার আদায়ে বাঙালির রক্ত ঝরা সংগ্রামের বিষয়টি আলোচ্য লাইনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

✍ বিভিন্ন সময় বিদেশি শাসকেরা বাংলা আক্রমণ করেছে এবং এদেশ শাসন করেছে। তারা এদেশের মানুষকে নানাভাবে অত্যাচার করেছে। আর যখন বাঙালি তার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে, তখন সেই বিদেশি শাসকদের আঘাতে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরেছে। এ বিষয়টিই আলোচ্য অংশে ফুটে উঠেছে। 

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণার বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করে।

✍ দেশের জন্য অধিকার আদায়ের জন্য মানুষের যে আত্মত্যাগ তা সত্যিই মহৎ। এই আত্মত্যাগের মধ্যে আছে এক অমিত প্রাণশক্তি। তাই আত্মত্যাগ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। এ অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে মানুষ নিজ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাহস ও শক্তি পায়।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কৃষক-বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের কথা বিধৃত হয়েছে। কৃষক বিদ্রোহে তাঁর আত্মত্যাগ বাঙালির প্রেরণার উৎস। তাই যখন এদেশে শত্রুরা আক্রমণ করে, তখন তাঁর আত্মত্যাগের শক্তি বাঙালির মধ্যে সঞ্চারিত হয়। এ শক্তি নিয়েই তারা শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। উদ্দীপকেও এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। রাশেদের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে তিনি মুক্তি যুদ্ধ করেছেন।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলসুর ধারণ করেছে।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ কোনো মহৎ কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো মানুষ নিজ জীবন উৎসর্গ করে। এই আত্মোৎসর্গ পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। এই অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে মানুষ মহৎ কাজে অংশগ্রহণের সাহস পায়।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় রংপুরের কৃষক বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের আত্মত্যাগ বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। এ আত্মত্যাগ তাদের শক্তি জোগায়। তাই শত্রুর আক্রমণে যখন এদেশের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত  হয়ে পড়ে, তখন নূরলদীনের আত্মত্যাগ তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দেয়। উদ্দীপকেও আমরা এ বিষয়টি দেখতে পাই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগ পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আত্মত্যাগের সুমহান প্রেরণাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের অন্যতম শক্তি।

✍ আত্মত্যাগের শক্তি আর অনুপ্রেরণাই ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলসুর। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এভাবে উদ্দীপকটি ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার মূলসুর ধারণ করেছে।


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
মহব্বতপুর গ্রামের চেয়ারম্যান শাজাহান সাহেব। তিনি যে কোনো সমস্যার সমাধানে গ্রামের সবাইকে একসাথে হওয়ার আহবান জানান। তিনি মনে করেন, “একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়”। 
ক. অতীত হঠাৎ কোথায় হানা দেয়?
খ. কবি কেন সবাইকে গোল হয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাবে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন বিষয়টি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়”-কথাটি কতটুকু যৌক্তিক? ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর।
 
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ অতীত হঠাৎ হানা দেয় মানুষের বন্ধ দরজায়। 

খ. অনুধাবন
✍ জাতীয় সংকট নিরসনের জন্য কবি সবাইকে গোল হয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

✍ যেকোনো সংকট নিরসনে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ সত্যটি কবি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাই তিনি সবার একত্রিত হওয়ার অর্থাৎ, গোল হয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। 

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাব ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সমস্যা সমাধানে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

✍ জাতীয় সমস্যা সমাধানকল্পে কবি সবাইকে অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন। কেননা, সবার সম্মিলিত চেষ্টায়ই যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব।

✍ উদ্দীপকের শাজাহান সাহেব গ্রামের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সবাইকে একত্রিত হতে বলেন। কেননা, তিনি বিশ্বাস করেন ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোনো সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই তিনি সবাইকে একসাথে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানান। আবার ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও কবি সবাইকে একসাথে এসে স্থির হয়ে বসতে মিনতি জানিয়েছেন। অর্থাৎ, সমস্যা নিরসনের জন্য সবাইকে একসাথে বসে পরামর্শ করার, এক্ষেত্রে কাজ করার আন্তরিক অনুরোধ জানিয়েছেন। কেননা, কবি জানেন সমস্যা সমাধানে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাবেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনিও চান সমস্যা সমাধানের জন্য সবাই একযোগে কাজ করুক। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের মনোভাব ‘নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সমস্যা সমাধানকল্পে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়” কথাটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি সমস্যা সমাধানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন। এছাড়াও নূরলদীন ১১৮৯ সনে রংপুরে যে ডাক দিয়েছিলেন, সেখানেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরিচয় মেলে।

✍ উদ্দীপকের মহব্বতপুর গ্রামের চেয়ারম্যান একতায় বিশ্বাস করেন এবং একতাকে সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায় বলে মনে করেন। আর ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায়ও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। কেননা, সংগ্রামী চেতনাকে বাস্তবায়িত করতে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তাই কবি সবাইকে স্থির হয়ে বসার জন্য বলেছেন। তিনি বার বার সবাইকে একসাথে বসতে অর্থাৎ, একসাথে পরামর্শ করার কথা বলেছেন।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কবি সবাইকে গোল হয়ে, ঘন হয়ে আসতে বলেছেন। অর্থাৎ, গোল হয়ে পাশাপাশি বসার জন্য বলেছেন। এছাড়াও তিনি স্থির হতে বলেছেন। অর্থাৎ, সবাইকে ধীর-স্থিরভাবে পরিকল্পনা করে সামনে অগ্রসর হতে বলেছেন। কবিতার কেন্দ্রিয় চরিত্র নূরলদীনের কর্মকাণ্ডেও ঐক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই নূরলদীন রংপুরবাসীকে শোষণের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার আহবান জানিয়ে ছিলেন। কারণ, একা কখনো কোনো কিছুর সমাধান করা যায় না।

✍ সুতরাং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকের শাজাহান সাহেবের “একতা সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়”- কথাটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক।


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
আজিমার বয়স তখন পাঁচ কি ছয়। সব কথা তাই ভালো করে মনেও করতে পারে না সে। শুধু এটুকু মনে পড়ে যে, তার বাবা একদিন হন্তদন্ত হয়ে হাট থেকে ছুটে এসেছিল বাড়িতে, আর বলেছিল দ্রুত গ্রাম ছেড়ে পালাতে। গ্রামে নাকি মিলিটারিরা এসেছে আর সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। তারপর রাতের অন্ধকারে মা-বাবার হাত ধরে পালিয়ে এসেছিল কোথায় তা সে জানে না। কতদিন বাবা-মার মুখে সে আর হাসি দেখেনি। হাসি দেখবেই বা কীভাবে! খেয়ে না-খেয়ে পালিয়ে বেঁচে থাকার মধ্যে তো সুখ নেই; আছে অস্বস্তি, যন্ত্রণা আর দুঃখ। 
ক. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি কীভাবে সবাইকে আসতে বলেছেন?
খ. কবি কেন সবাইকে গোল হয়ে, ঘন হয়ে সমবেত হওয়ার আহবান করলেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার কোন বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. “পরাধীন দেশে মানুষের জীবন-যন্ত্রণার চিত্র উদ্দীপকে এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।”-মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
 
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি গোল এবং ঘন হয়ে সকলকে আসতে বলেছেন।

খ. অনুধাবন
✍ স্বদেশ বহিঃশত্রুর পদভারে সন্ত্রস্ত। চারদিকে উৎকণ্ঠা, বিপদের গন্ধ। তাই কবি সবাইকে সমবেত করে এ পরিস্থিতি থেকে উপায় খোঁজার আহবান করেছেন।

✍ ভিনদেশিদের অত্যাচারে বাংলার শ্যামল প্রকৃতি এবং সহজ-সরল মানুষের জীবনযাত্রা আজ হুমকির সম্মুখীন। দেশের এ রকম নাজুক পরিস্থিতিতে কবি সবাইকে সমবেত হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। কারণ, তিনি সবাইকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য এমন একজন গণনায়কের কথা শোনাবেন, যে দেশের এ রকম সংকটময় মুহূর্তে গণজাগরণের সৃষ্টি করে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধ সংগ্রাম করেছিল। এ কারণেই কবি সবাইকে গোল হয়ে ঘন হয়ে বসতে বলেছেন। 

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার পরাধীন দেশে মানুষের জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে।

✍ স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও জীবনযাপনে যে আনন্দ, তা প্রত্যেককেই উপভোগ করতে চায়। কিন্তু নিজ দেশ শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষের মাঝে পরাধীনতার যন্ত্রণা এবং পরাধীনতার নাগপাশের মধ্যে ভয় আর শঙ্কা বিরাজ করে।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি পরাধীন দেশের মানুষের জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন যে, যখন দেশ পরাধীন, তখন দেশের মানুষের কাছে সবকিছুই নষ্ট মনে হয়। তখন কেবল মানুষই তার জীবনের সকল ছন্দ হারিয়ে ফেলে না, প্রকৃতিও হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিকতা। তখন মানুষের কাছে মনে হয় সবকিছুই নষ্ট। উদ্দীপকেও আমরা পরাধীন দেশের মানুষের জীবনচিত্র দেখতে পাই। নিজ গ্রামে শত্রুরা আক্রমণ করলে আজিমার পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। দেশের পরাধীনতার সাথে সাথে তারা হারায় সমস্ত সুখ, স্বস্তি। সীমাহীন দুঃখ আর যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তারা দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “পরাধীন দেশে মানুষের জীবন-যন্ত্রণার চিত্র উদ্দীপকে এবং ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ স্বদেশে অন্যের অধীন থাকার মতো কষ্টদায়ক সম্ভবত আর কিছু নেই। যখন বিদেশিদের হাতে থাকে স্বদেশের শাসনের ভার, তখন সে দেশ তো পরাধীনই। আর সে দেশে মানুষের স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকে না। এক অনিশ্চয়তা, অস্থিরতার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত অতিক্রান্ত হয়। তাই চারপাশের কোনো কিছুই তখন তাদের কাছে মঙ্গলজনক বলে মনে হয় না।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, পরাধীন দেশে মানুষের জীবনের সব স্বপ্ন লুট হয়ে যায়। চারদিকে কেবল অনিষ্টতা। এই অনিষ্টতার মধ্যে মানুষের জীবনে নেমে আসে দুঃখ-যন্ত্রণা। উদ্দীপকেও আমরা পরাধীন দেশে মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার চিত্র দেখতে পাই। শত্রুর আক্রমণে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে আজিমার পরিবার অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ জীবনে নেই কোনো সুখ-শান্তি; আছে কেবল দুঃখ-যন্ত্রণা, ভয় আর অনিশ্চয়তা।

✍ উদ্দীপক আলোচ্য কবিতায় পরাধীন দেশের মানুষের জীবনযাত্রার চিত্র ফুটে উঠেছে। মানুষ তার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করছে পরাধীনতার নাগপাশে বন্দি হয়ে। আর এ আলোচনার পরিপ্রক্ষিতে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।


নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
দরিদ্র কৃষক রাহাত ও তার সাথে আরও দশজন রহিম শেখের খেতে মাস চুক্তিতে কাজ করছে। রাহাতের ইচ্ছে মাস শেষে মজুরিটা পেয়ে সে ঘরের চালটা ঠিক করবে, না হলে এবারের বর্ষায় ঘরে থাকা মুশকিল হবে। কিন্তু দেখা গেল রহিম শেখ তাদের পুরো টাকা দিল না। বলল যে, “যা দিয়েছে তাই বেশি। আর এক টাকাও কেউ পাবে না।” রাহাত গর্জে উঠল, সাথে অন্যরাও। তারা বলল যে, “এ অন্যায় তারা কখনই মেনে নিবে না। রহিম শেখকে তারা ভয় পায় না।”
ক. নূরলদীন আবার একদিন কী বলে সবাইকে ডাক দিবেন?
খ. “রংপুরে নূরলদীন একদিন ডাক  দিয়েছিল ১১৮৯ সনে” কেন?
গ. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য তুলে ধর। 
ঘ. “উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার বাঙালির চরিত্রের একটি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, সমগ্র দিকের প্রতি নয়।”-মূল্যায়ন কর।
 
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ‘জাগো বাহে, কোনঠে সবায়.......’ বলে নূরলদীন আবার একদিন সবাইকে ডাক দিবেন। 

খ. অনুধাবন
✍ রংপুরের কৃষক বিদ্রোহে নূরলদীনের নেতৃত্বদানের বিষয়টি আলোচ্য অংশে ফুটে উঠেছে।

✍ রংপুরে ১১৮৯ সনে কৃষক বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন নূরলদীন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই কৃষকেরা তাদের অধিকার আদায়ে একত্র হয়ে সংগ্রাম করে। নূরলদীনই তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বেই কৃষকেরা তাদের অধিকার আদায়ের পথে অগ্রসর হয়। 

গ. প্রয়োগ
✍ বাংলার কৃষকের অধিকার সচেতনতার বিষয়ে উদ্দীপকের সাথে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ বাংলার কৃষকেরা অসহায় হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ তারা করতে জানে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে তারা  সচেতন। তাই যখন কেউ তাদের অধিকার হরণ করতে চায়, তখন তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় নূরলদীন কৃষকদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। তাঁর ডাকেই কৃষকেরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে। কৃষকদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে অবশেষে নূরলদীন আত্মত্যাগ করেন। উদ্দীপকেও কৃষকদের অধিকার সচেতনতার সেই বিষয়টি লক্ষ করা যায়। অন্যের জমিতে কাজ করার পর মালিক তাদের ঠকালে তারা নীরবে সব মেনে নেয় না; এর বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “উদ্দীপকে ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার বাঙালি চরিত্রের একটি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে , সমগ্র দিকের প্রতি নয়।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ অন্যায়কে মেনে নেয়ার প্রবণতা বাঙালি চরিত্রে অনুপস্থিত। তার সাথে কোনো অন্যায় হলে সে তা মেনে নিয়ে চুপ করে থাকতে পারে না। নিজের পরিণতি কী হবে এটা না ভেবেই সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় কবি পরাধীন দেশের পটভূমিতে অধিকারহীনতা এবং অন্যায়-অবিচারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। নূরলদীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। নূরলদীনের সে শক্তি, সাহস আর আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা নিয়েই বাঙালি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এবং অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কৃষকদের প্রতিবাদি মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হলে তারা সেটি মুখ বুজে সহ্য করে না। তারা রহিম শেখের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।

✍ ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতা, বাঙালির নেতৃত্বদান, আত্মত্যাগ, প্রতিবাদী সত্তা এবং অধিকার সচেতনতার কথা আছে। আর উদ্দীপকের শুধু বাঙালির প্রতিবাদী সত্তার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।
Share: