* ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়া পদকে দুভাগে ভাগ করা যায়- (ক) সমাপিকা ক্রিয়া (খ) অসমাপিকা ক্রিয়া
ক) সমাপিকা ক্রিয়াঃ যে ক্রিয়ার দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- রুমেল খেলা করছে।
খ) অসমাপিকা ক্রিয়াঃ যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- খেলা শিখে মাঠে এসো, জেনে শুনে বিয়ে করো।
সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার গঠন:
সমাপিকা ক্রিয়ার গঠনঃ ধাতুর সঙ্গে বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যৎ কালের বিভক্তি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। সমাপিকা ক্রিয়া সকর্মক, অকর্মক ও দ্বিবার্মক হতে পারে।
যেমন- মাসুদ ফুটবল খেলে। (ক্রিয়া, সকর্মক, কাল-বর্তমান)
সাজু গতদিন পড়ছিল (ক্রিয়া-অকর্মক, কাল-অতীত)
জাহিদ সজলকে একটি ফুল দেবে (ক্রিয়া-দ্বিকর্মক, কাল অতীত)।
* অসমাপিকা ক্রিয়ার গঠন:
ধাতুর সঙ্গে কাল নিরপেক্ষ- ইয়া (য়ে), ইতে (তে) অথবা ইলে (লে) বিভক্তি যুক্ত হয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন-
ভক্তিতে মুক্তি মেলে, যত্ন করলে রত্ন মেলে
তাখে খুঁজে নিয়ে আসতে চেষ্টা করবে।
অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা:
* অসমাপিকা ক্রিয়াঘটিত বাক্যে তিন প্রকার কর্তা (কতৃকারক) দেখা যায়।
১) এককর্তা: বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক বা অভিন্ন হতে পারে। যথা- তুমি হারানো ধন পেলে আর কি গ্রামে আসবে? ‘পেলে’ (অসমাপিকা ক্রিয়া) এবং আসবে (সমাপিকা ক্রিয়া) উভয় ক্রিয়ার কর্তা এখানে তুমি।
২) অসমান কর্তা: বাক্যস্থিত সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা এক না হলে সেখানে কর্তাগুলোকে অসমান কর্তা বলা হয়।
যেমন- আমি তাকে খেলতে বললে সে খেলবো।
(ক) শর্তাধীন কর্তা: এ জাতীয় কর্তাদের ব্যবহার শর্তাধীন হতে পারে। যেমন- তোমরা বাড়ি এলে আমি রওনা হব। এখানে ‘এলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তার তোমরা এবং ‘রওনা হব’ সমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা ‘আমি’। তোমাদের বাড়ি আসার উপর আমার রওনা হওয়া নির্ভরশীল বলে এ জাতীয় বাক্যে কতৃপক্ষের ব্যবহার শর্তাধীন।
(খ) নিরপেক্ষ কর্তা: শর্তাধীন না হয়েও সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন কর্তপদ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রথম কর্তৃপদটিকে বলা হয় নিরপেক্ষ কর্তা। যেমন- সূর্য অস্তমিত হলে যাত্রীদল পথ চলা শুরু করল। এখানে ‘যাত্রীদলের’ পথ চলার সঙ্গে সূর্য, অস্তমিত হওয়ার কোন শর্ত বা সম্পর্ক নেই বলে সূর্য নিরপেক্ষ কর্তা।
১। ‘ইলে’> ‘লে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার
(ক) কার্যপরম্পরা বোঝাতে : চারটা বাজলে স্কুল ছুটি হবে।
(খ) প্রশ্ন বা বিস্ময় জ্ঞাপনে : একবার মরলে কি কেউ ফেরে?
(গ) সম্ভাব্যতা অর্থে : এখন বৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতি হবে।
(ঘ) সাপেক্ষতা বোঝাতে : তিনি গেলে কাজ হবে।
(ঙ) দার্শনিক সত্য প্রকাশে : ‘ জন্মিলে মরিতে হবে, অপর কে কোথা হবে?
(চ) বিধি নির্দেশে : এখানে প্রচার পত্র লাগালে ফোজদারিতে সোপর্দ হবে।
(ছ) সম্ভাবনার বিকল্পে : আজ গেলেও যা, কাল গেলেও তা।
(জ) পরিণতি বোঝাতে : বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি হবে।
(২) ‘ইয়া’ > ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার
(ক) অনন্তরতা বা পর্যায় বোঝাতেঃ হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বস।
(খ) হেতু অর্থে : ছেলেটি কুসঙ্গে মিশে নষ্ট হয়ে গেল।
(গ) ক্রিয়া বিশেষণ অথে : কথা বলো না।
(ঘ) ক্রিয়ার অবিচ্ছিন্নতা : বোঝাতে হৃদয়ের কথা কহিয়া কহিয়া গাহিয়া গাহিয়া গান।
(ঙ) ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে : সেখানে আর গিয়ে কাজ নেই।
(চ) অব্যয় পদের অনুরূপ : ঢাকা গিয়ে বাড়ি যাব।
(৩) ‘ইতে’ > ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহার।
(ক) ইচ্ছা প্রকাশে : এখন আমি যেতে চাই।
(খ) উদ্দেশ্য বা নিমিত্ত অর্থে: মেলা দেখতে ঢাকা যাব।
(গ) সামর্থ্য বোঝাতে : খোকা এখন হাঁটতে পারে।
(ঘ) বিধি বোঝাতে : বাল্যকালে বিদ্যাভাস করতে হয়।
(ঙ) দেখা বা জানা অর্থে : রমলা গাইতে জানে।
(চ) আবশ্যাকতা বোঝাতে: এখন ট্রেন ধরতে হবে।
(ছ) সূচনা বোঝাতে : রানী এখন ইংরেজি পড়তে শিখেছে।
(জ) বিশেষণ বাচকতায় : লোকটাকে দৌড়াতে দেখলাম
(ঝ) ক্রিয়া বাচক বিশেষ্য গঠনেঃ তোমাকে ত এ গ্রামে থাকতে দেখি নি।
(ঞ) অনুসর্গরূপে : কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল।
(ট) বিশেষ্যের সঙ্গে অন্বয় সাধনে : দেখিতে বাসনা মাগো তোমার চরণ।
(ঠ) বিশেষণের সঙ্গে অন্বয় সাধনে : পাদ্মফুল দেখতে সুন্দর।
(৪) ‘ইতে’ > ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত ক্রিয়ার দ্বিত্ব প্রয়োগ।
(ক) নিরন্তরতা প্রকাশে : কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
(খ) সমকাল বোঝাতে : সেঁউতিতে পদ দেবী রাখিতে রাখিতে সেঁউতি হইল সোনা দেখিতে দেখিতে।
টীকা: রীতি সিদ্ধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমাপিকা ক্রিয়া অনুপস্থিত থেকে অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহারে বাক্য গঠিত হতে পারে। যেমন- গরু মেরে জুতা দান।
আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ।
যৌগিক ক্রিয়া
যৌগিক ক্রিয়ার গঠন: অসমাপিকা ক্রিয়ার পরে যা, পড়, দেখ, লাগ্, ফেল্, আস্, উঠ, দে, লহ্, থাক্, প্রভৃতি ধাতু থেকে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়ে উভয়ে মিলিতভাবে যৌগিক ক্রিয়া তৈরি করে, এসব যৌগিক ক্রিয়া বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। যেমন-
(১) যা- ধাতু:
(ক) সমাপ্তি অর্থে : বৃষ্টি থেমে গেল।
(খ) অবিরাম অর্থে : গায়ক গেয়ে যাচ্ছেন।
(গ) ক্রমশ অর্থে : চ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
(ঘ) সম্ভাবণা অর্থে : এখন যাওয়া যেতে পারে।
(২) ফেল-ধাতু:
(ক) সম্পূর্ণতা অর্থে : সন্দেশ গুলো খেয়ে ফেল।
(খ) আকস্মিকতা অর্থে : ছেলেরা হেসে ফেলল।
(৩) উঠ- ধাতু:
(ক) ক্রমান্বয়তা বোঝাতে: ঋণের বোঝা ভারি হয়ে উঠেছে।
(খ) অভ্যাস অর্থে : শুধু শুধু তিনি রেগে ওঠেন।
(গ) আকস্মিকতা অথে : হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল।
(ঘ) সম্ভাবনা অর্থে : আমার আর থাকা হয়ে উঠল না।
(ঙ) সামর্থ অর্থে : এসব কথা আমার সহ্য হয়ে ওঠেনা।
(৪) লাগ্-ধাতু:
(ক) অবিরাম অর্থে : খোকা কাঁদতে লাগল।
(খ) সূচনা নির্দেশে : এখন কাজে লাগত দেখি।
(৫) থাক্-ধাতু:
(ক) নিরন্তরতা অর্থে: এবার ভাবতে থাক।
(খ) সম্ভাবনায় : তিনি হয়ত বলে থাকবেন।
(গ) সন্দেহ প্রকাশে : সে-ই কাজটা করে থাকবে।
(ঘ) নির্দেশ : আর দারকার নেই, এবার বসে থাক।
0 Comments:
Post a Comment