একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র উপন্যাস গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Lalsalu Uponnas Srijonshil Question and Answer. Lalsalu Uponnash Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. Lalsalu Novel Extra Comprehension Questions Answers pdf download.
বাংলা উপন্যাস
লালসালু
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
বাছাইকৃত অতিরিক্ত
খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. ‘মনে হয় এটা খোদাতালার বিশেষ দেশ।’-উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নোয়াখালি অঞ্চলের জনজীবনে অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও ধর্মীয় কাজে কার্পণ্য না থাকায় লেখক ব্যঙ্গ করে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
নোয়াখালি অঞ্চলের মানুষের জীবনে অভাব থাকলেও দেখা যায় ভোরবেলায় মক্তবে কচিকণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে উঠে আমসিপারা পড়ার কোলাহল। পরনে কাপড় নেই, পেটে ভাত নেই, ল্যাংটা ক্ষুধাতুর ছেলেরা সেই কোলাহলের অংশীদার। তারা জীবনকে যতটা ভালোবাসে মৃত্যুকে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ভয় পায়। তাই লেখক কিছুটা ব্যাঙ্গাত্বক ভাষায় বলেছেন, এটি হয়তো খোদাতালার বিশেষ একটি অঞ্চল যেখানে মানুষ এতটা ধর্ম সংলগ্ন।
২. মজিদ যে খেলা খেলতে যাচ্ছে তা সাংঘাতিক কেন?
উত্তর: পাছে তার ভণ্ডামি ধরা পড়ে যায়-এই ভয় ও সন্দেহের জন্যে মজিদ তার খেলাকে সাংঘাতিক বলেছে।
মজিদ ঠিকই জানে প্রাণধর্মের যাঁতাকলে পিষ্ট হবে একদিন তার প্রথা-ধর্ম। সকল বাধা ছিঁড়ে একদিন সত্য বেড়িয়ে আসবে। সে বোঝে যেদিন মানুষ সজাগ হবে সেদিন তার মিথ্যা ফাঁদ ভণ্ডামির দিন শেষ হবে; জয় হবে মানবতার সুনিশ্চিত।
তাই তিনি যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত, মূর্খ গ্রামবাসীদের নিয়ে সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে খেলায় নেমেছেন, তা বড়ই সাংঘাতিক।
৩. ‘কিন্তু তারও যে বাঁচবার অধিকার আছে সেই কথাটাই সে সাময়িক চিন্তার মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা মজিদের নিজস্ব ভাবনার একটি দিক উদঘাটিত হয়েছে।
মজিদ সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য মধুপুর ছেড়ে নতুন আশায় মহব্বতনগর গ্রামে এসেছে। তার মূল সিদ্ধান্ত হলো টিকে থাকা ও সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা করা প্রয়োজন, তাই তাকে করতে হবে। ন্যায়-অন্যায়, সুনীতি, দুর্নীতি হলো মানুষেরই সৃষ্টি, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিতে তারও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই সে মিথ্যা প্রতারণার কথা জেনেও এই কঠিন দুঃসাহসী কাজে নেমে পড়ে।
৪. ‘মাটি-এ গোস্বা করে’-এ কথার ভাবার্থ কী?
উত্তর: মাটিতে রহীমা শব্দ করে হাঁটার ফলশ্রুতিতে মজিদ এ উক্তিটি করে।
মাটিতে তৈরি দেহ একদিন মাটিতে মিশে যাবে। মাটিকে আঘাত করে হাঁটলে মৃত্যুর পর মাটি বদলা নিবে-এমন কুসংস্কার একনও গ্রাম বাংলায় প্রচলিত। মজিদের প্রথমা স্ত্রী রহীমা মাটিতে আওয়াজ করে হাঁটলে তা মজিদের পছন্দ হয় না। তাই মজিদ স্ত্রীকে ধর্মের মোড়কে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য শাসন করেছে, মজিদ চায় রহীমার মনে যেমন স্বামীর ভয় থাকবে, অনুরূপ চলনেও।
৫. মজিদ রহীমার প্রতি গুরুগম্ভীর হয়ে পড়ে কেন?
উত্তর: রহীমাকে মজিদ তার ও মাজারের প্রতি ভয় সঞ্চার ও ধর্মের মোড়কে জড়ানো নিজের কথার মর্ম বোঝানোর জন্য গম্ভীর হয়ে পড়ে।
মজিদ মহব্বতনগরে স্থায়ী আসন পাতার পাশাপাশি রহীমা নামের এক যৌবন প্রাপ্ত তরুণীকে বিয়ে করে। কিন্তু সাদা-সিধে রহীমার চালচলন একটু বেসামাল। হাঁটার সময় মাটিতে শব্দ করে হাঁটে যা মজিদের পছন্দ নয়। তাই মজিদ তার প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রহীমার প্রতি গুরুগম্ভীর হয়ে পড়ে।
৬. ‘কুৎসা রটনা বড় গর্হিত কাজ’-কেন?
উত্তর: কুৎসায় মানুষের মান-মর্যাদার হানি ঘটে বলে তা বড় গর্হিত কাজ।
অনেক সময় মানুষ শয়তানের ফাঁদে পড়ে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে আপন মানুষেরও কুৎসা রটনা করে। কিন্তু সে বোঝে না ভালো মানুষ কখনো কুৎসা রটনা করে না; কুৎসা বড় খারাপ কাজ। হাসুনির মায়ের মা স্বামীর বিরুদ্ধে যে কুৎসিত বক্তব্য দিয়েছে তা চরম কুৎসা। কুৎসা রটনাকারী সর্বত্র ঘৃণিত এবং মানুষের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায়।
৭. ‘সে ঝংকার মানুষের প্রাণে লাগে, কানে লাগে।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ‘লালসালু’ উপন্যাসের এই তাৎপর্য পূর্ণ উক্তিটি মজিদের কোরআনের আয়াত পড়ার ঝঙ্কারের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
তাহের-কাদেরের বাপের শালিসের দিন সুচতুর মজিদ কোরআনের আয়াত পড়ে তা ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে উপস্থিত উৎসুক জনতার মনে ধর্মের ভয় জোগানোর চেষ্টা করে এবং সফলতা লাভ করে। মজিদের সুরেলা গলার ঝঙ্কার দ্বারা ঘরময় যেন ঝঙ্কৃত হচ্ছিল এবং সে ঝঙ্কার উপস্থিত জনতার কানে বাজছিল এবং প্রাণকে স্পর্শ করছিল। অর্থাৎ মজিদের কোরআন পড়ার সুমধুর সুরে তারা মোহিত হয়ে পড়েছিল।
৮. যে জিনিস বোঝার নয়, তার জন্য কৌতূহল প্রকাশ করা অর্থহীন কেন?
উত্তর: আল্লাহর মহিমা ও মর্ম বোঝা সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলে তার জন্য অহেতুক কৌতূহল প্রকাশ করা অর্থহীন।
মজিদ মহব্বতনগরের লোকজনকে শিক্ষা দিয়েছে যে, জন্ম মৃত্যু, রোগ-শোক সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। সৃষ্টির মর্ম সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা বেশ কঠিন। তবে এটি বুঝতে হবে যে, আল্লাহ যা কিছু করেন তা মানুষের ভালোর জন্যই করেন। সেজন্য আল্লাহর কাজকর্মের ব্যাপারে বান্দার এত কৌতূহল না হওয়াই ভালো। বস্তুত এটি মানুষকে দমিয়ে রাখার অপকৌশল।
৯. আল্লাহর ওপর এত ভরসা সত্ত্বেও মজিদের চোখে জ্বালাময়ী ছবি ভেসে ওঠে কেন?
উত্তর: মজিদের ভেতরে পশুবৃত্তির কারণেই তার চোখে জ্বালাময়ী ছবি ভেসে ওঠে।
সে যতই মুখে আল্লাহ, রসূল, দ্বীনের কথা বলুক, তার ভেতরে রয়েছে পশুবৃত্তি। তাই তো তার ঘরে যৌবন ব্যাপ্ত সুঠাম স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে কাজের মেয়ে হাসুনির মার জন্য আকুলি বিকুলি করে, কামনার আগুনে পোড়ে। গ্রামবাসীর সাথে আল্লাহ রসুলের কথা বলতে গিয়েও চোখে তার ভেসে ওঠে ভোর রাতে দেখা হাসুনির মার জ্বালাময়ী দেহ, উন্মুক্ত গলা কাঁধ ও বাহুর উজ্জ্বলতা।
১০. মজিদের মন থম থম করে কেন?
উত্তর: মজিদের মন থম থম করে এজন্য যে, আউয়ালপুরের পীর সাহেবের আগমনে সে সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে।
মজিদ ওপরে যাই বলুক, ভেতরে ভেতরে সে তার নিজের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। পীর সাহেবের মতো তার রুহানী শক্তি নেই, আউয়ালপুরে পীরের আগমনে লোকজনতার মাজারে কম আসে। সবাই নতুন পীরকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, তার পায়ে একটু চুমু দিতে চায়। এইসব দৃশ্য দেখে মজিদ গম্ভীর হয়ে যায় এবং মাজারের রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রমে তার মনটা থম থম করে।
১১. মজিদের ক্রোধ হয় কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরে নতুন পীরের আগমনে তার মাজার ব্যবসার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গ্রামবাসীর ওপর ক্রোধ হয়।
রাতে শোয়ার সময় মজিদের স্ত্রী রহীমা পীর সাহেবের অলৌকিক শক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। এতে মজিদ বোঝে ব্যাপারটা অনেক দূর এগিয়েছে। তাছাড়া পরদিন মজিদ দেখে তার এলাকার লোকজনও পীরের কাছে ছুটে চলেছে। এতে মজিদের মনে গাঁয়ের লোকজনের প্রতি ভীষণ ক্রোধ হয়। মূলত আউয়ালপুরের নতুন পীরের আগমনে মজিদের ভীত নড়ে ওঠে।
১২. ‘এ বিচিত্র বিশাল দুনিয়ায় কী যাবার জায়গার কোনো অভাব আছে?’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: গাঁয়ের লোকজনের প্রতি ক্রুদ্ধ মজিদের মনোভাবের পরিচয় আলোচ্য বাক্যটিতে প্রকাশ পেয়েছে।
আউয়ালপুরে নতুন পীরের আগমনে দলে দলে লোক ঐ পীরের কাছে যাওয়ায় মজিদের মাজারে লোকজন আসা কমে যায়। এতে মজিদ চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং গ্রামবাসীর এই ধরনের কাজ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতরাই শামিল মনে করে। তাই ক্রুদ্ধ হয়ে মজিদ বলেছে, এখানে যদি তার ভালোভাবে থাকবার উপায় না থাকে, তাহলে অন্যত্র সে তার ভবিষ্যৎ দেখবে। বাক্যটিতে মুখোশের আড়ালে মজিদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।
১৩. মজিদ আউয়ালপুরে গেল কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরের পীর সাহেবের প্রসার ঘটলে তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবে-একথা ভেবে মজিদ আউয়ালপুরে গেল।
মজিদ অত্যন্ত চতুর এবং কূটকৌশলী একজন মানুষ। সে বুঝতে পেরেছিল মহব্বতনগরের লোকদের ফিরিয়ে আনতে না পারলে তার ধর্মব্যবসায় মন্দা পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, একবার তার প্রতি কারো অবিশ্বাস বা সন্দেহ দেখা দিলে তা ক্রমান¦য়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, নিজের অবস্থান অটুট রাখার জন্য, নতুন পীরের কারসাজি সরিয়ে দেওয়ার জন্য সে আউয়ালপুরে যায়।
১৪. ‘যেন বিশাল সূর্যোদয় হয়েছে, আর সে আলোয় প্রদীপের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আলোচ্য অংশটুকু দ্বারা আউয়ালপুরের পীর সাহেবের সঙ্গে মজিদের তুলনা করা হয়েছে।
মজিদ ধর্মকে ব্যবহার করে মহব্বতনগরের লোকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু সেই লোকজনই আউয়ালপুরের পীরের কাছে গিয়েছে। মজিদ আউয়ালপুরে গিয়ে দেখে মহব্বতনগরের বহুলোক ভিড়ের মধ্যে আছে কিন্তু কেউ আজ মজিদকে লক্ষ করছে না। পীর যেন তাদের কাছে সূর্য আর মজিদ হলো ক্ষুদ্র প্রদীপ। সূর্যের প্রখর আলোয় প্রদীপের আলো যেমন ম্লাণ হয়ে যায়, তেমনি পীরের কাছে মজিদ আজ ক্ষীন।
১৫. পীর সাহেব হামলা করতে চায়নি কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরের পীর আউয়ালপুরে স্থায়ী নয়। তাছাড়া তার বয়স হয়েছে তাই সে মহব্বতনগরে হামলা করতে চায়নি।
আউয়ালপুর থেকে মহব্বতনগর অনেকটা দূর, প্রায় তিন গ্রাম ব্যবধান। এত দূরে এসে হামলা করা তেমন সুবিধার হবে বলে পীর সাহেব মনে করেন নি। তাছাড়া বয়সের কারণে এখন সে জরাক্রান্ত ও দুর্বল, যৌবনের তেজ নেই। এই বয়সে দাঙ্গা-হাঙ্গামা তার পছন্দের নয় বলে মহব্বতনগরে সে হামলা করতে উৎসাহ দেখায়নি।
১৬. মজিদের মনে অস্বস্তি কেন?
উত্তর: আউয়ালপুরে মজিদের মতো অনুরূপ এক ধর্মব্যবসায়ীর আগমনে তার মনে অস্বস্তি বিরাজ করে।
মজিদ আউয়ালপুরের পীরের সম্পর্কে মহব্বতনগরের লোকজনকে বুঝিয়েছে, ঐ পীর আসলে ভণ্ড এবং বিপদগামী। মজিদের বক্তৃতায় আবিষ্ট হয়ে মহব্বতনগরের কিছু যুবক পীরের আস্তানায় হামলা করেছে। মজিদ আশঙ্কা করছে যে পীর সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গরা এ হামলার বদলা নেবে। কিন্তু কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় মজিদের মনে রাত-দিন অস্বস্তি লেগে রয়েছে।
১৭. আমেনা আউয়ালপুরের পীরের সাহায্য চায় কেন?
উত্তর: আমেনা সন্তান কামনার জন্য আউয়ালপুরের পীরের সাহায্য চায়। খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবি পীরের অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাসী। ব্যাপারীর সাথে বহুদিন ঘর করেছে সে, কিন্তু তার কোনো সন্তান হয় না। তার বিশ্বাস, পীর সাহেবের পানিপড়া খেলে সে সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হবে। সে জন্য আমেনা বিবি মাতৃত্ব পূর্ণ করার জন্য আউয়ালপুরের পীরের সাহায্য চায়।
১৮. ধলা মিঞা আউয়ালপুরে যেতে চায় না কেন?
উত্তর: আউয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝপথে দেবংশি তেঁতুল গাছটির ভয় এবং পীরের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ধলা মিঞা আউয়ালপুরে যেতে চায় না।
খালেক ব্যাপারী তার সম্বন্ধী ধলা মিঞাকে আমেনা বিবির জন্য আউয়ালপুর থেকে গোপনে পীর সাহেবের পানিপড়া আনতে বলে। ধলা মিঞা ভাবে পানিপড়া আনতে হলে শেষ রাতে যাত্রা শুরু করে ভোর হওয়ার পূর্বেই ফিরে আসতে হবে। পথের মাঝে তেঁতুল গাছের ভূতপ্রেতের আস্তানা এবং পীর সাহেবের সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে ধলা মিঞা আওয়ালপুরে যেতে চায় না।
১৯. ‘সে অন্দরের লোক, আর তার তাগিদটা বাঁচা মরার মতো জোরালো।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ লাইনটিতে আমেনা বিবির জন্য পানিপড়া আনার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।
আমেনা বিবির বিবাহের দীর্ঘ ত্রিশ বছর পরও তার সন্তান হয় না। এজন্য সে মাতৃত্ব হৃদয় পূর্ণ করবার জন্য পীরের সাহায্য চায়। পীরের পানিপড়া খেলে তার ইহজীবনের দুঃখ ঘুচে যাবে, সে সন্তানবতী হবে; পাবে মাতৃত্বের স্বাদ। তাই মজিদ নতুন পীরের কাছে মহব্বতনগরের লোকজনকে যেতে নিষেধ ও তার সাথে দাঙ্গা করা আমেনা বিবি মোটেও পছন্দ করেনি।
২০. ‘সজ্ঞানে না জানলেও তারা একটা, পথ তাদের এক’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এ লাইনটিতে মহব্বতনগরের দুই শক্তিশালী মানুষ মজিদ ও খালেক ব্যাপারীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
মহব্বতনগরের দুই শক্তিশালী মানুষ মজিদ আর খালেক ব্যাপারী। খালেক ব্যাপারী বিস্তর জমি জমার মানুষ এবং সে গ্রামের মাতব্বরও। অন্যদিকে মজিদ হলো মাজারের খাদেম। খালেক ব্যাপারীর দৃষ্টিতে সে হলো সমাজের মূল। তাঁর কথায় সমাজ ওঠে বসে।
মজিদের যেমন খালেক ব্যাপারীর প্রয়োজন, তদ্রুপ অলৌকিক শক্তিধর যাকে গ্রামবাসী শ্রদ্ধা, ভয় ও ভক্তি করে, সে মজিদকে খালেক ব্যাপারী হটায় না। তাই বলা যায়, মজিদ আর খালেক ব্যাপারী একই পথের পথিক।
২১. হাসুনির মার মন বেদনায় নীল হয়ে ওঠে কেন?
উত্তর: মায়ের মৃত্যুর পর মজিদের কাছে কবরের আযাবের কথা শুনে হাসুনির মার মন বেদনায় নীল হয়ে ওঠে।
অশিক্ষিত ধর্মভীরু হাসুনির মার মায়ের বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যু হলে তেমন একটা শোক লাগে না তার। কিন্তু যখন সে মজিদের কথায় বোঝে যে, তার মায়ের কবরে আযাব হবে তখনই তার মনে হাহাকার জাগে। কবরে মায়ের একাকী যন্ত্রণাভোগে তার মনের মধ্যে বেদনা জেগে ওঠে।
২২. ‘বার্ধক্যের শেষ স্তরে কারো মৃত্যু ঘটলে দুঃখটা তেমন জোরালোভাবে বুকে লাগে না।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটুকু দ্বারা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ভিত্তিতে শিশু, কিশোর বা যৌবন বয়সের মৃত্যু আর বার্ধক্যের মৃত্যুর মধ্যে শোকের তারতম্য তুলে ধরা হয়েছে।
অল্প বয়সে কারো মৃত্যু ঘটলে নিকটজনেরা খুব বেশি শোক করে। কেননা তার মরার বয়স হয়নি বা সে আরো বহুদিন বেঁচে থাকতে পারত। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে কারো মৃত্যু হলে নিকটজনেরা অধিক শোকাহত হয় না, কারণ তারা ধরে নেয় প্রকৃতির নিয়মে স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। তাই হাসুনির মাও তার বৃদ্ধ মায়ের মৃত্যুকে সেভাবে নিয়েছে।
২৩. আমেনা বিবির মনে আশার সঞ্চার হলো কেন?
উত্তর: মজিদ যখন মাজার প্রদক্ষিণের কথা বলে তখন আমেনা বিবির ভয় হলেও সন্তান প্রাপ্তির আশায় তার মনে আশার সঞ্চার হয়।
সরল প্রকৃতির মানুষ আমেনা বিবি সন্তান কামনায় অধীর। প্রথমে এসে আউয়ালপুরের পীর সাহেবের পানিপড়া না পেয়ে নিরাশ হয়েছিল। সে ধরেই নিয়েছিল তার আর সন্তান হবে না। কিন্তু মজিদ অমন পেটের বেড়ির কথা বলল এবং সাতের বেশি বেড়ি না থাকলে তা খোলার ব্যবস্থার কথা জানাল, তখন তার মনে আশার আলো দেখা দিল।
২৪. “দুই তানিতে যে প্রচুর তফাৎ আছে সে কথা কী করে বোঝায়?”-কথাটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদ ও খালেক ব্যাপারী দুইজনই ক্ষমতাধর মানুষ হলেও দুজনের ক্ষমতা দু ধরনের, সে বিষয়টি এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দুই তানির মধ্যে একজন মজিদ অন্যজন খালেক ব্যাপারী। রহীমার পেটে চৌদ্দ বেড়ি আছে মজিদ তা কী করে জানে-এ হলো খালেক ব্যাপারীর স্ত্রী তানু বিবির জিজ্ঞাসা। রহীমার কাছে যখন জানল যে তার স্বামী তাই বুঝতে পেরেছে তখন তানু বিবির প্রশ্ন হলো খালেক ব্যাপারী আমেনা বিবির স্বামী হওয়া সত্ত্বেও কেন তার বেড়ির কথা জানে না। তানু বিবিকে বুঝতে হবে, মজিদ খোদার পথের মানুষ। সে খালেক ব্যাপারীর মতো সাধারণ মানুষ নয়। তাই মজিদের ক্ষমতা মাজার থেকে আসে বলে দুই জনের মধ্যে পার্থক্যও যথেষ্ট।
২৫. এক ঢিলের পথ হলেও ব্যাপারীর বউ হেঁটে যেতে পারে না কেন?
উত্তর: সারাদিন রোজা রেখে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির জন্য এক ঢিলের পথ তবুও ব্যাপারীর বউ হেঁটে যেতে পারে না।
মজিদের নির্দেশ অনুযায়ী সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যাবেলায় নুন আর আদা খেয়ে মাগরিবের নামাজের পর আমেনা বিবি মাজারে আসে। পালকি থেকে নামার পর মাজারের দূরত্ব একঢিলের পথ হলেও সারাদিন অভুক্ত থাকায় শরীর-মন ক্লান্ত ও অবসন্নের কারণে মাজারে যাওয়ার বাকি পথ আমেনা বিবি হেঁটে যেতে পারে না।
২৬. মজিদের কাম বাসনাকে সাপের দংশের সঙ্গে কেন তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: কাম বাসনা মানুষের মনের বিবেচনা শক্তি নষ্ট করে এবং জ্বালা-যন্ত্রণা সৃষ্টি করে বলে মজিদের কামভাবকে সাপের দংশনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
পালকি থেকে নেমে যাওয়ার সময় আমেনা বিবির সুন্দর ফর্সা পা দেখে ভণ্ড পীর, পরনারীতে আসক্ত মজিদের ভিতর কামভাব জেগে ওঠে। সাপে কামড়ালে সাপের বিষে যেমন মানুষের শরীরে জ্বালা-যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়, তেমনি কামভাব জাগলে মানুষের দেহে ও মনে যন্ত্রণা হয়। সেজন্য ধর্মের লেবাস পরা ভণ্ড মজিদের কামভাবকে সাপের বিষের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
২৭. ‘সে মুখ ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য এবং সে মুখে দুনিয়ার ছায়া নেই।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ লাইনটিতে পালকি থেকে মাজারে যাওয়ার পর আমেনা বিবির ভয়ার্ত চেহারার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
বিনা আহারে রোজা রেখে, সারাদিন কুরআন পাঠ করে এবং আদা-নুন দিয়ে ইফতার করা আমেনা বিবির শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে অজানা আশঙ্কা যে, মাজার প্রদক্ষিণের পরও যদি সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়। একদিকে অভুক্ত দুর্বল শরীর আরেক দিকে ভয়-শঙ্কা সব-মিলিয়ে আমেনার চেহারা রক্তশূন্য ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। সে মুখ কোনো জীবন্ত মানুষের নয়, সে মুখে পৃথিবীর কোনো লক্ষণ নেই।
২৮. একটা প্রখর আলো তার ভেতরটা কানা করে দিয়েছে কেন?
উত্তর: মজিদ কর্তৃক আবিষ্কৃত মোদাচ্ছের পীরের মাজারের চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে এক মহাশক্তির প্রখর অত্যুজ্জ্বল আলো আমেনা বিবির ভেতরটা কানা করে দিয়েছে।
মাজারে পাক দিতে গিয়ে এক ভিন্ন রকম শক্তিতে আমেনা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তার মনে হয় সে অনুভূতিশূন্য, কোনো কামনা বাসনা নেই আর কোনো অভাব অভিযোগও নেই তার। যে সন্তানশূন্যতা তাকে এতদিন কুরে কুরে খাচ্ছে, তা যেন এক নিমিষেই অন্তর্হিত হয়ে গেছে। সন্তানের জন্য হাহাকার করা তীব্র বেদনা আজ অতীতের স্মৃতির মতো অস্পষ্ট ধ্বংসস্তূপ।
২৯. মজিদ এত নিষ্ঠুর কেন?
উত্তর: যে ধর্মের লেবাসে মজিদ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মানসে মহব্বতনগরে এসেছে, সেই লক্ষ্য অর্জনে ধীরে ধীরে ভণ্ড মজিদ নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে।
চালাক মজিদ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মহব্বতনগর গ্রামে আসে, তার প্রতিষ্ঠার মূলে যে তাকে অবজ্ঞা করেছে বা উপেক্ষা করেছে, তাকে সে সরাবেই। যে তার বিরুদ্ধে গেছে, তাকে সে শাস্তি দেবেই। কারণ সে জানে কোমলতা দেখালে সে মহব্বতনগরে টিকে থাকতে পারবে না। তাই না খেতে পাওয়া তৃণমূল থেকে সমাজ চালকের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে মজিদ ক্রমান¦য়ে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে।
৩০. ‘খোদার কালামের সাহায্যে যে কথা জানা যায় তা মূর্খের রোজগারের মত সাফ।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে ভণ্ড, প্রতারক মজিদ প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে খোদার কালাম নিয়ে মিথ্যাচার করেছে, তা বাক্যটিতে ফুটে উঠেছে।
সুচতুর মজিদ তার প্রতিষ্ঠার পথে বিন্দুমাত্র যাকে বাধা মনে করেছে তাকে সমূলে উৎপাটিত করেছে। আমেনা বিবি আউয়ালপুরের পীর সাহেবের পানিপড়া খেতে চেয়ে তাকে যে অপমান ও অবহেলা করেছে, তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য ব্যাপারীর মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছে। মজিদ ব্যাপারীকে বলে খোদার কালামের মাধ্যমে প্রাপ্ত কথাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা চলে না। এ কথা সূর্যের আলোর চেয়েও পরিষ্কার। সহজ কথায় সে ব্যাপারীকে বুঝিয়ে দেয়, আমেনার মনে পাপ আছে, তাকে নিয়ে ঘর সংসার করা যথার্থ হবে না।
৩১. খালেক ব্যাপারী মজিদের কথা ঠিক মনে করল কেন?
উত্তর: খালেক ব্যাপারী ধর্মভীরু বলেই মজিদের কথা ঠিক মনে করল। খালেক ব্যাপারী বিশ্বাস করে মজিদ কোরআন-কেতাব পড়া আলেম মানুষ বলে আমেনা বিবি সম্পর্কে যা জেনেছে, তা খোদার কালাম পড়েই জেনেছে। সে জন্য আমেনা বিবিকে তার অপবিত্রতার কারণে তালাক দিতে বলেছে। তার ধারণা আমেনা বাইরের দিক থেকে নির্দোষ ও তার আচার-ব্যবহারে আপত্তিকর কিছু না থাকলেও ভিতরে নিশ্চয় গলদ আছে, তা না হলে মজিদ তালাকের কথা বলত না।
৩২. ‘ওটা ছিল নিশানা, আনন্দ আর সুখের’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ লাইনটি দ্বারা স্বামীর বাড়ি যে আমেনা বিবির জন্য সুখের স্থান ছিল, তা ব্যক্ত হয়েছে।
মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা শুনলেই আনন্দে বুকটা ভরে ওঠে। কিন্তু স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্তা হয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় তার চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে, নেই কোনো ‘আনন্দ’। কিন্তু শ্বশুর বাড়ির একটা নিশানা ছিল তার আনন্দ আর সুখের, তা হলো থোতামুখো তালগাছ যার জন্য তার বুক কান্নায় ভাসতো। বিয়ের পর বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি আসার পথে পালকির মধ্যে থেকে তালগাছটি দেখলেই বুঝত সে স্বামীর বাড়িতে এসে গেছে।
৩৩. মজিদের মন অন্ধকার হয়ে আসে কেন?
উত্তর: মাজারের রক্ষক ও পীর মজিদ এক রাতে মোমবাতির উজ্জ্বল আলোয় মাজারের গিলাফের ঝালরের একটি অংশ বিবর্ণ দেখে তার মন অন্ধকার হয়ে আসে।
মজিদ বোঝে মাজারের রহস্য যতদিন থাকবে, তার ক্ষমতাও থাকবে তত দিন। তাই মাজারের প্রতি তার টান প্রচণ্ড বলে মাজারের সামান্য ক্ষতি হলে তার মন খারাপ হয়। সে চায় মাজারটি সব সময় ঝকঝকে থাকুক। এ কারণেই মোমবাতির আলোয় মাজারের গিলাফের ঝালরের একটি অংশ বিবর্ণ এবং এক জায়গাতে সুতো খসে গেলে তার মন অন্ধকার হয়ে আসে।
৩৪. রহীমা মজিদের সামনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেন?
উত্তর: দয়ালু খোদা এত কঠিন কেন এই ভেবে আমেনার জন্য রহীমা মজিদের সামনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
মজিদ খোদার কালামের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য জেনে আমেনাকে শাস্তি দিয়েছে। এ বিষয়টি রহীমার কাছে অস্পষ্ট। তাই আমেনার তালাকের দিন রহীমার মনটা সারাদিন খারাপ থাকে। তার প্রশ্ন একটাই-তা হলো আমেনা তো অন্যায় কিছু করেছে বলে মনে হয় না। আবার মজিদ যখন বলেছে তা অবিশ্বাসও করা যায় না। ভীষণ দ্বন্দ্বে পড়ে যায় রহীমা এবং আমেনার জন্য তার খারাপ লাগে।
৩৫. আক্কাস মিঞা গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায় কেন?
উত্তর: সমাজের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। গ্রামে মক্তব থাকা সত্ত্বেও স্কুলে না পড়লে মুসলমান ছেলের উন্নতি হবে না এবং আধুনিক চিন্তা থেকে বঞ্চিত হবে এই ধারণা থেকেই আক্কাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সে মনে করে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা হলে সমাজের মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে। সমাজ থেকে সকল প্রকার কুসংস্কারে রবাহু দূর হলে মানুষ তার নিজের ভালোমন্দ বুঝতে শিখবে। এইসব কারণে আক্কাস মিঞা মনে করে গ্রামে একটি স্কুল থাকা উচিত।
৩৬. আক্কাস বৈঠক থেকে উঠে চলে যায় কেন?
উত্তর: বৈঠকের পরিবেশ পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত তার অনুক‚লে ছিল না বলেই অবাঞ্ছিতের মতো আক্কাস বৈঠক থেকে উঠে যায়।
আক্কাস মিঞা গ্রামবাসীর মঙ্গলের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা বৈঠকে উপস্থাপন করলে সুচতুর মজিদ তার দাড়ি নেই কেন এমন একটি অবান্তর প্রশ্ন করে তাকে চুপসে দেয়। তার পর মজিদ গ্রামে একটি পাকা মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব দিলে উপস্থিত সবাই এক বাক্যে সায় দিল। আক্কাস পুনরায় স্কুলের কথা তুলতে চেয়ে পিতার ধমকে চুপ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সবাইকে মসজিদ করা নিয়ে আলোচনা করতে দেখে সে আসর থেকে উঠে চলে গেল।
৩৭. ‘তাঁর জীবনে শৌখিনতা কিছু যদি থাকে তা এই কয়েক গজ রূপালি চাকচিক্য।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের উদ্ধৃত লাইনে মাজারের প্রতি মজিদের মমতা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
মজিদ বাইরে থেকে এসে মহব্বতনগর গ্রামে অখ্যাত কবরকে সালু দ্বারা ঘিরে সুন্দর গিলাফ দিয়ে ধর্মের লেবাসে পীর সেজে গ্রামবাসীর ভক্তি ও সম্মান পাচ্ছে। সুতরাং মাজারটি তার শক্তির মূল ভিত্তি এবং মাজারের কোনো রকম অবহেলা-অনাদার তার কাম্য হতে পারে না। এজন্য এক রাতে মোমবাতির উজ্জ্বল আলোয় গিলাফের একাংশ বিবর্ণ হয়ে গেলে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং মনে দুঃখ অনুভব করে। তাই মাজারের সৌন্দর্য ঠিক রাখতে সে তৎপর। কেননা মাজারটিই তার সৌখিনা।
৩৮. ‘যাদের ঘরে রাজা মেয়ে তাদের আর শান্তি নেই।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ বাক্যটি দ্বারা বন্ধ্যা মেয়েদের প্রতি সামাজিক ধ্যান-ধারণার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সন্তান না হলে স্বামীর ঘরে মেয়েদের আদর কমে যায় এবং এ মেয়েকে সমাজ ভাবে অপয়া। আমেনা বিবি বন্ধ্যা হওয়ায় ব্যাপারী একদিকে যেমন তার প্রতি খুশি ছিল না, অপরদিকে দ্বিতীয় বিবাহ করতেও বিলম্ব হয়নি। পরবর্তীতে মজিদের চক্রান্তে ব্যাপারী তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় তার মনের শান্তি নষ্ট হয়। বন্ধ্যা মেয়েরা যে সামাজিক নির্যাতনের শিকার; আমেনা বিবির ঘটনাই তার প্রমাণ।
৩৯. ফাল্গুনের দমকা হাওয়া মজিদের মনে ভাব জাগায় কেন?
উত্তর: ফাল্গুনের দমকা হাওয়া ধুলো উড়াতে দেখে মজিদের ফেলে আসা দেশের কথা, স্বজনদের কথা ও পরিবারের কথা মনে পড়ে।
ধর্মব্যবসায়ী, প্রতারক, ভণ্ড, নিম্নরুচিসম্পন্ন মজিদ এদেশে তথা মহব্বতনগর গ্রামে বহুদিন ধরে বসবাস করছে। এক সময় সে টাকা পয়সাহীন গরিব মানুষ হিসেবে এ গ্রামে এসেছিল। কিন্তু আজ তার অনেক জায়গা জমি এবং মান-মর্যাদা ও ক্ষমতা। এখন সে বাতাসে উড়ে যাওয়া পাতা নয়, মাটিতে শিকড় গাড়া গাছ। তাই অতীতের সেই সব কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে তার মনকে বেদনাময় করে তোলে।
৪০. কবরটি মজিদকে ভীত করে তোলে কেন?
উত্তর: ধর্মব্যবসায়ী মজিদ দশ-বারো বছর ধরে যে কবরটি নিয়ে ব্যবসা করছে সেই মানুষকে সে চেনে না। তাই মাজারের সালু কাপড়ের একটি অংশ উল্টে গেলে সে ভীত হয়ে পড়ে।
জীবনের প্রয়োজনে ধর্মকে পুঁজি করে মজিদ একটি অজানা কবরকে কামেল পীরের কবর বলে চালিয়ে তার ধর্ম ব্যবসা শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই সে মান সম্মান ও অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যায়। কিন্তু কবরটি কার মজিদ তা জানে না বলে বাতাসে উন্মুক্ত সালু কাপড়ের একটি অংশ উড়ে গেলে সেই অনাবৃত অংশ মরা মানুষের চোখের মতো দেখালে তার ভিতরে ভীতি সঞ্চার হয়। আসলে মানুষ যতই ধূর্ত বা পশুবৃত্তির হোক, দুর্বল মুহূর্তে তার ভেতরের সুপ্ত বিবেকের জাগরণ ঘটে, তখন সে ভীত হয়ে পড়ে।
৪১. ‘মজিদের নীরবতা পাথরের মত ভারী’।-কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামে মজিদ প্রভুর আসনে অধিষ্ঠিত হলেও সন্তানহীনতা তাকে পীড়া দেয়।
রহীমা বন্ধ্যা মেয়ে হওয়ায় তার সন্তান হবে না। এক রাতে এ কথা নিয়ে রহীমা ও মজিদ কথাবার্তা বলার পর দুজনার চুপ হওয়ার পর রহীমা ভাবতে বসে। মজিদের সন্তান চায় বলে সে কথা বলে না, নীরব হয়ে থাকে। মজিদ এই নীরবতা রহীমার কাছে পাথরের মতো ভারী মনে হয়। এ নীরবতার মধ্যে যেন ভাবনা আছে, সন্তান না পাওয়ার হাহাকারও আছে।
৪২. মজিদ দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চায় কেন?
উত্তর: মহব্বতনগরের বিধবা রহীমাকে বিয়ের পর সন্তান না হওয়ায়, সন্তান লাভের আশায় মজিদ দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চায়।
মজিদ ভাগ্যের সন্ধানে মহব্বতনগরে এসে প্রতারণার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য ফেরায়। রহীমার সন্তান না হওয়ায় মজিদ রহীমাকে বলে তার জন্য একজন সাথী আনবে। অর্থাৎ সে দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়। অন্যদিকে মজিদের সন্তান প্রয়োজন-এ কথা সত্য হলেও অল্পবয়সী একটি মেয়েকে ভোগ করার বাসনাও লম্পট মজিদকে লালায়িত করে।
৪৩. ‘এখন সে ঝড়ের মুখে উড়ে চলা পাতা নয়, সচ্ছলতার শিকড় গাড়া বৃক্ষ।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ উক্তিটিতে এক সময়ে জীবিকার সন্ধানে পথে নামা মজিদের মহব্বতনগরে পাকাপোক্ত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
বহুদিন পূর্বে ভাগ্য অনে¦ষণে মজিদ মহব্বতনগরে এসেছিল। তখন সে ছিল নিঃস্ব। কিন্তু এখন একটি মাজারকে কেন্দ্র করে এ গ্রামে পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর তার এই বর্তমান অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে এভাবে-ঝরা পাতা উড়ে যায়; কিন্তু শক্ত শিকড়ওয়ালা গাছকে ঝড় উপড়ে ফেলতে পারে না। মজিদও গাছের মতো এই গ্রামের মাটিতে শক্তভাবে শিকড় গেড়েছে।
৪৪. মজিদ চমকিত হয় কেন?
উত্তর: মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার হাসিতে মজিদ চমকিত হয়।
সংকীর্ণ ও জটিল প্রকৃতির মজিদ ধর্মব্যবসায়ী, ভণ্ড, প্রতারক এবং প্রথা-ধর্মে বিশ্বাসী। একদিন সে বাইরের ঘর থেকে প্রাণ ধর্মমুখর, উচ্ছ¦ল, চঞ্চল জমিলার হাসির ঝংকার শুনে চমকিত হয়। কারণ দীর্ঘদিন এখানে বসবাসকালে কেউ কোনোদিন এমন হাসি হাসে নাই বরং মাজারে যারা আসে তারা দুঃখের ফরিয়াদ নিয়ে আসে এবং প্রবলভাবে কাঁদে।
৪৫. “তানি বুঝি দুলার বাপ”-কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: প্রশ্নোল্লিখিত এ উক্তিটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের প্রাণধর্মমুখর চঞ্চল জমিলা মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী রহীমাকে জানিয়েছিল।
বিয়ের আগে জমিলার মেজো আপা বেড়ার ফাঁক দিয়ে মজিদকে দেখেয়েছিল। দাঁড়িওয়ালা বেশি বয়সী মজিদকে জমিলা ভেবেছিল এ লোক নিশ্চয়ই বরের বাপ হবে। কিন্তু এর সঙ্গেই তার বিয়ের পর এ রকম পিতৃতুল্য অসমবয়সী মানুষকে জমিলা স্বামী হিসেবে ভাবতে পারেনি। তার দুঃখের কথা, অপছন্দের কথা হাসতে হাসতে সে রহীমাকে জানিয়েছে।
৪৬. “জমিলা যেন ঠাটা মানুষের মত হয়ে গেছে।”-এ বাক্যটি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: চঞ্চল প্রাণধর্মমুখর জমিলার পিতৃবয়সী মজিদের সাথে বিয়ের পর মজিদের প্রতিনিয়ত শাসন আর উপদেশে সে বজ্রাহতের মতো হয়ে গেছে।
অল্পবয়সী কিশোরী বধূ জমিলারও জীবনে কামনা বাসনা আছে। কিন্তু সে জীবনকে যেভাবে ভেবেছিল, তার জীবনটা সেভাবে হলো না। তার বিয়ে হয় পিতৃবয়সের এক বুড়ো লোকের সঙ্গে যার পূর্বের এক বৌ আছে। সব মিলিয়ে তার জীবনকে কৌতুকের মত মনে হয়।
৪৭. ‘চোখে বিন্দুমাত্র খোদার ভয় নেই, মানুষের ভয় তো দূরের কথা।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসে এ লাইনটি দ্বারা জমিলার সাহসিকতা এবং গোয়ার্তুমির কথা ফুটে উঠেছে।
বিয়ের পর মজিদের কথামতো চলার জন্য মজিদ জমিলার ওপর পীড়ন করেছে, কিন্তু জমিলা বশে আসেনি। এখন সে মজিদের কোনো কথা শোনে না, তার দিকে তাকায় না, ভাবলেশহীন ভাবে এক জায়গায় বসে থাকে। মজিদ বৌয়ের দিকে আড়চোখে তাকায়, আর দেখে জমিলার চোখে মানুষের ভয়তো নেই, খোদার ভয়ও নেই। আসলে অস্তিত্ববাদী মানুষের অস্তিত্ব যখন বিপন্ন হয় তখন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিন্দুমাত্র সময় লাগে না।’
৪৮. ‘শত্রুর আভাস পাওয়া হরিণের চোখের মতই সতর্ক হয়ে ওঠে তার চোখ।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ লাইনটিতে মজিদ যখন জমিলার রূপের প্রতি ইঙ্গিত করে এবং জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যুর ভয় দেখায়, তখনকার জমিলার অবস্থা বর্ণিত হয়েছে।
রাতে মজিদ ঘুমন্ত জমিলাকে আচমকা একটানে উঠানোর ফলে জমিলা ব্যথা পায় এবং ভীত-বিহŸল হয়ে পড়ে। পরদিন সকালে জমিলা সব কিছু উপেক্ষা করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করতে দেখে মজিদ আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং জমিলার রূপের কথা তুলে নিজের দর্শন শোনায়-মৃত্যুর সাথে সাথে রূপের সমাপ্তি, জীবন অল্প দিনের। একথা শুনে জমিলা মজিদের দিকে ক্ষিপ্রগতিতে এমনভাবে তাকায় যেন শত্রুর আভাস পাওয়া হরিণের চোখে যেমন সতর্কতা, তার চোখেও তেমনি সতর্কতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৪৯. ‘লতার মতো মেয়েটি যেন এ সংসারে ফাটল ধরিয়ে দিতে এসেছে।’-বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: প্রশ্নোল্লিখিত এ বাক্যে প্রাণ ধর্মমুখর কিশোরী জমিলার আগমন ধর্ম ব্যবসায়ী মজিদের সংসারে শুধু উৎপাতই নয়, এক জীবন্ত প্রতিবাদ-তাই ব্যক্ত হয়েছে।
নেশার বশে মজিদ জমিলাকে বিয়ের পর প্রথম দিকে জমিলাকে বিড়াল ছানার মতো মনে হলেও অল্প দিনের মধ্যেই তার আসল রূপ বেরিয়ে আসে। সে মজিদের কোনো বাধা মানে না, মজিদের সামনে চুপ থাকলেও মজিদকে পছন্দ করে না। সহজ কথায় অনেক দিনের গড়া সংসারের নিয়মনীতিকে ভাঙন ধরায় সে। এক পর্যায়ে মজিদ জমিলাকে ভয় পেতে থাকে। আর এজন্য সে নিজের ভাগ্যকে দায়ী করলেও তার ভেতরের ক্ষোভ পুড়িয়ে দিতে চায় মজিদের সাজানো সংসারকে।
৫০. ‘বালুতীরে যুগ যুগ আঘাত পাওয়া শক্ত কঠিন পাথর তো সে নয়।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ বাক্যটিতে জিকিরের সময় জমিলার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে।
মাজারে সন্ধ্যায় জিকিরের সময় রহীমা খিচুড়ি রান্না করে আর জমিলা রহীমার রান্নাবান্নার কাজ দেখে। বাইরে থেকে যখন বহুমানুষের সম্মিলিত জিকিরের আওয়াজ জমিলার কানে আসে তখন সে ভয়ে সচকিত হয়ে উঠে, কারণ জমিলা কখনো জিকির শোনেনি। ঝড়ের সময় সমুদ্রের এক একটা ঢেউ যেমন তীরে আঘাত হানে, ঠিক তেমনি জিকিরের ঘন ঘন ধ্বনি জমিলার হৃদয়ে আঘাত হানে। জমিলার হৃদয় সমুদ্রের তীরের মতো শক্ত নয়।
৫১. ‘তার আনুগত্য ধ্রুব তারার মতো অনড়, তার বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রশ্নোল্লিখিত এ বাক্যটি দ্বারা মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমার স্বামীভক্তির এক চমৎকার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমা মজিদের ঘরে আসার পর থেকেই মজিদের খুব অনুগত। শান্তশিষ্ট কর্ম-নিপুণা এই মেয়েটি যেন সমস্ত শ্রম, ভালোবাসা আর সেবা দিয়ে খুঁটির মতো মজিদের সংসারকে আগলে রেখেছে। কিন্তু মজিদ পরে জমিলাকে বিয়ে করার পর জমিলার অবাধ্যতার কারণে মজিদ ভীত-শঙ্কিত। তাই জমিলা ও রহীমার মাঝে তুলনা করে বলেছে, রহীমাকে আমার খুব আপন মনে হয় কারণ তার ওপর সবকিছু নির্ভর করা যায়।
৫২. মজিদ জমিলাকে হ্যাঁচকা টান মেরে বসিয়ে দেয় কেন?
উত্তর: মজিদ জমিলাকে খোদাভীতির আড়ালে নিজের প্রতি অনুগত করতে সংসার সম্বন্ধে অজ্ঞ জমিলাকে হ্যাঁচকা টান মেরে বসিয়ে দেয়।
রাত গভীর হলে মজিদ দেখে জমিলা জায়নামাযে সেজদা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এতে মজিদের ধারণা হয় জমিলার মনে খোদার ভয় নেই, থাকলে এভাবে সে ঘুমাত না। ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে মজিদ জমিলাকে এক হ্যাঁচকা টানে জায়নামায থেকে উঠিয়ে বসায়।
৫৩. জমিলা বেঁকে বসে কেন?
উত্তর: জমিলা কিশোরী হলেও যখন বুঝতে পারে মজিদ তাকে মাজারে নিয়ে যাচ্ছে, তখন সে বেঁকে বসে।
জমিলা প্রথমে বোঝে নি যে তাকে মাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে যখন বুঝল তখন সে বেঁকে বসে, এর কারণ মাজার সম্পর্কে তার ভীতি। প্রথমত, সে মাজারের ত্রিসীমানায় কখনও ঘেঁষেনি, দ্বিতীয়ত, মজিদ আজ যে গল্প বলেছে তাতে ভয় আরো বেড়ে গেছে। সেজন্য সে মজিদের শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়।
৫৪. ‘নাফরমানি করিও না। খোদার উপর তোয়াক্কল রাখো।’ -বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: ভণ্ড, প্রতারক ও ধর্মব্যবসায়ী মজিদ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে আলোচ্য অংশটুকু বলেছে।
মহব্বতনগরে প্রচণ্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে মজিদকে দেখে গ্রামবাসী হাহাকার করে ওঠে। মজিদ এ অবস্থায় তাদেরকে আশ্বাস দেয়; আল্লাহই মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, খাদ্যের যোগান দেন। সেজন্য মানুষের উচিত আল্লাহকে স্মরণ করা। আসলে মজিদ বিশ্বাসের কথা বলে মানুষকে উদ্দীপ্ত ও ধর্মভাবাপন্ন করে রাখতে চায়।
৫৫. না ঘুমিয়ে মজিদ দাওয়ার ওপর বসে থাকে কেন?
উত্তর: জমিলাকে মাজারে একাকী বেঁধে রাখার পর মজিদের ধারণা জমিলা ভয়ে চিৎকার করবে, তাই মজিদ না ঘুমিয়ে দাওয়ার ওপর বসে থাকে।
মজিদ জমিলার ওপর নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে এবং শেষ পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ অন্ধকার রাতে মাজারে জমিলাকে বেঁধে রেখে আসে। মজিদের ধারণা জমিলা ভয় পেয়ে চিৎকার করবে। তাই ঘরের মধ্যে না গিয়ে দাওয়ায় বসে থাকে। কিন্তু মজিদের এ কৌশলও ব্যর্থ হয়।
৫৬. রহীমা মজিদের কথায় কোনো সাড়া দেয় না কেন?
উত্তর: রহীমা জমিলার বিপদে মজিদের কথায় কোনো সাড়া দেয় না। মজিদের প্রথম স্ত্রী রহীমা মজিদকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করে। কিন্তু মজিদ যখন জমিলাকে ঝড়-বৃষ্টির রাতে একাকী মাজারে বেঁধে রেখে আসে তখন তার একমাত্র চিন্তা জমিলা মাজারে কেমন আছে। শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত স্বামীভক্ত রহীমা স্বামীকে বলেই বসে, ‘ধান দিয়া কী হইব, মানুষের জান যদি না থাকে’। তাই জমিলার এই বিপদে রহীমার ভেতরটা ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
৫৭. ‘প্রকৃতির লীলা চেয়ে চেয়ে দেখাও এক রকম এবাদত’। -বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ বাক্যটিতে মজিদের প্রকৃতির বৈচিত্র্য দেখে সৃষ্টিকর্তার মহিমার উপলব্ধির কথা বলা হয়েছে।
যে রাতে মজিদ জমিলাকে মাজারে বেঁধে রেখে আসে, সেই রাতে মাজার ঘরে ছিল ভৌতিক পরিবেশ, আর বাইরের প্রকৃতিতে আসন্ন বিপদের অবস্থা। মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি, ঝড়, বৃষ্টি সব মিলিয়ে এক ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মজিদের ধারণা ছিল সে জমিলার আর্তনাদ শুনবে। মজিদ চেয়ে চেয়ে বাইরের প্রকৃতির ভয়াবহ রূপ দেখে এবং আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করে। প্রকৃতিকে যারা এভাবে দেখে, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর এবাদত করে।
৫৮. ‘আর একটা সত্যের সীমানায় পৌঁছে, জন্ম বেদনার তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা অনুভব করে মনে মনে।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘লালসালু’ উপন্যাসের এ উক্তিটিতে ঝড়-বৃষ্টি শেষে সংজ্ঞাহীন জমিলাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাই বিবৃত হয়েছে।
ঝড়-বৃষ্টির শেষে জমিলার সংজ্ঞাহীন দেহ ঘরে নিয়ে আসার পর রহীমার মনে জমিলার জন্য মায়া ছলছল করে ওঠে। মজিদের সব কথাই তখন গুরুত্বহীন মনে হয়। মজিদ দূর থেকে এসব দেখে তার চোখের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। একটা সত্য প্রকাশিত হয়। সে বুঝে যায় জোর করে বা প্রভাব খাটিয়ে কারও মনে বিশ্বাসের জন্ম দেওয়া যায় না।
৫৯. ‘শুধু জীবন্ত হয়ে সেই ডালপালা শাখা-প্রশাখায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ -বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: এ উক্তিটি দ্বারা আমেনা বিবির তালাক দেওয়ার ঘটনাটি যে মানুষের মুখে মুখে জীবন্ত হয়েছে তা প্রকাশিত হয়েছে।
খালেক ব্যাপারী সহজ-সরল। স্বামীভক্ত, ধর্মভীরু ও নিঃসন্তান স্ত্রী আমেনা বিবিকে মজিদের চক্রান্তে তালাক দেয়। তালাক দেওয়ার ঘটনাটি গ্রামের মানুষের কানাঘুষায় নানা শাখা-প্রশাখার জন্ম দিয়েছে। আর এ ব্যাপারে যার যেমন খুশি রং ছড়াবেই এবং যাদের ঘরে নিঃসন্তান বৌ আছে তাদের মনেও সন্দেহ ঢুকেছে। খালেক ব্যাপারীর মতো তাদের মনেও শান্তি নেই, আর এর প্রভাব পড়েছে সমাজজীবনেও।
৬০. ‘রুপালি ঝালরের বিবর্ণ অংশটা কালো করে রেখেছে সে মন।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এ উক্তিটিতে মাজারের ঝালরের রূপালি ঔজ্জ্বল্য বিবর্ণ হওয়ায় মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তা বর্ণিত হয়েছে।
মজিদ বাইরে থেকে এসে কথিত মোদাচ্ছের পীরের মাজারকে কেন্দ্র করে মহব্বতনগর গ্রামে আস্তানা গেড়েছে। এক রাতে মোমবাতির শুভ্র আলোয় গিলাফের রুপালি ঝালরের এক প্রান্তের সুতা খসে যাওয়ায় মজিদ বিচলিত হয় এবং মনে দুঃখ অনুভব করে, কারণ মাজারটিই তার একমাত্র শক্তি। তাই মহব্বতনগরে প্রভুর আসনে টিকে থাকতে হলে তাকে মাজারের চাকটিক্য বজায় রাখতে হবে।
0 Comments:
Post a Comment