ক্রিয়ার কাল কতো প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা

বাংলা ব্যাকরণ
আলোচ্য বিষয়ঃ
ক্রিয়ার কাল
(Tense)
* ক্রিয়া সংগঠনের সময়কে কাল বলে।
ক্রিয়ার কালের প্রকারভেদঃ
ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকারঃ (১) বর্তমান কাল (২) অতীত কাল  (৩) ভবিষ্যৎ কাল

* ক্রিয়াপদঃ ক্রিয়ামূল অর্থাৎ ধাতুর সঙ্গে কাল (সময়) ও পুরুষ জ্ঞাপক (ক্রিয়া) বিভক্তিযোগে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়।

* ক্রিয়া সংগঠনের প্রধান কাল বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎকে নিম্ন লিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়- 
১) বর্তমান কালঃ
ক) সাধারণ বর্তমান বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান
খ) ঘটমান বর্তমান
গ) পুরাঘটিত বর্তমান
ঘ) বর্তমান অনুজ্ঞা

২) অতীত কাল
ক) সাধারণ অতীত
খ) নিত্যবৃত্ত অতীত
গ) ঘটমান অতীত
ঘ) পুরাঘটিত অতীত

৩। ভবিষ্যৎ কাল
ক) সাধারণ ভবিষ্যৎ
খ) ঘটমান ভবিষ্যৎ
গ) পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ
ঘ) ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা

১) বর্তমান কালঃ
ক) সাধারণ বর্তমান কালঃ যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণ ভাবে ঘটে, তার কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে। যেমন- রেজাউল বই পড়ে। কামাল স্কুলে যায়।

* নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালঃ স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে সাধারণ বর্তমান কালের ক্রিয়াকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কলা বলে। যথা- সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায় (স্বাভাবিকতা) 
আমি রোজ সকালে চা পান করি (অভ্যস্ততা)

* নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ- 
১) স্থায়ী সত্য প্রকাশেঃ দুয়ে দুয়ে চার হয়

২) ঐতিহাসিক বর্তমানঃ অতীতের কোন ঐতিহাসিক ঘটনায় যদি নিত্য বর্তমান কালের প্রয়োগ হয়, তাহলে তাকে ঐতিহাসিক বর্তমান কাল বলে। যেমন- 
পলাশীর যুদ্ধে নবাব পরাজিত হন 
বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন।
৩) কাব্যের ভনিতায়ঃ মহাভারতের কথা অমৃত সমান। 
কাশীরাম দাস ভনে শুনে পুণ্যবান।

৪। অনিশ্চিয়তা প্রকাশেঃ কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কিনা।

৫। ‘যদি’, ‘যখন’, ‘যেন’ প্রভৃতি শব্দের প্রয়োগ অতীত ও ভবিষ্যৎ কাল জ্ঞাপনের জন্য সাধারণ বর্তমান কালের ব্যবহার হয়। যেমন- 
সে যদি আসে, আমি ক্লাসে যাব। 
সকলেই যেন সভায় হাজির থাকে। 
বিপদ যখন আসে, তখন এমনি করেই আসে। 

* সাধারণ বর্তমান কালের বিশেষ প্রয়োগ-
(১) অনুমতি প্রার্থনায় (ভবিষ্যৎ কালের অর্থে): এখন তবে আসি

(২) প্রাচীন লেখকের  উদ্ধৃতি দিতে (অতীত কালের অর্থে): চন্দীদাস বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। 

(৩) বর্ণনীয় বিষয় প্রত্যক্ষীভূত করতে (অতীতের স্থলে)ঃ আমি দেখেছি বাচ্চাটি রোজ রাতে কাঁদে। 
(৪) ‘নেই’, ‘নাই,’ বা ‘নি’ শব্দযোগে অতীত কালের ক্রিয়ায়ঃ তিনি গতকাল হাটে যানটি। 

ঘটমান বর্তমান কালের বিশেষ প্রয়োগ:
খ) যে কাজ শেষ হয়নি, এখনও চলছে, সে কাজ বোঝাবার জন্য ঘটমান বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যথা পিন্টু বই পড়ছে। সোহাগ গোসল করছে। 

* বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিতে ঘটমান কাল ব্যবহৃত হয়। যথা- বক্তা বললেন শত্রুর অত্যাচারে দেশ আজ বিপন্ন, ধন সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।

২) ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অর্থেঃ চিন্তা করো না, কালই আসছি।

গ) পুরাঘটিত বর্তমান কালঃ ক্রিয়া পূর্বে শেষ হলেও তার ফল এখনও বর্তমান থাকলে, পুরাঘটিত বর্তমান কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন-
এবার আমি পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হয়েছি। 
এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি।

২) অতীত কালঃ
ক) সাধারণ অতীতঃ বর্তমান কালের পূর্বে যে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে, তার সংগঠন কালই সাধারণ অতীত কাল। যেমন- 
প্রদীপ নিভে গেল। 
শিকারি পাখিটিকে গুলি করল। 

সাধারণ অতীতের বিশিষ্ট ব্যবহারঃ 
১) পুরাঘটিত বর্তমান স্থালেঃ এক্ষণে জানিলাম কুসুমে কীট আছে।

২) বিশেষ ইচ্ছা অর্থে বর্তমান কালের পরিবর্তে: তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম।
ক) নিত্যবৃত্ত অতীতের বিশিষ্ট ব্যবহার:
খ) কামনা প্রকাশেঃ আজ যদি সুমন আসত কেমন মজা হত।
গ) অসম্ভব কল্পনায়ঃ ‘সাতাশ হত যদি একশ সাতাশ, আমি যদি তুমি হতাম
ঘ) সম্ভাবনা প্রকাশেঃ তুমি যদি যেতে, তবে ভালই হত।

৩) ঘটমান অতীত কালঃ অতীত কালে যে কাজ চলছিল এবং যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তখনও কাজটি সমাপ্ত হয়নি- ক্রিয়া সংঘঠনের এরূপ ভাব বোঝালে ক্রিয়া ঘটমান অতীত কাল হয়। যেমন- কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা তখন বই পড়ছিলাম। বাবা আমাদের পড়াশুনা দেখছিলেন।

৪) পুরাঘটিত অতীত কালঃ যে ক্রিয়া অতীতে বহু পূর্বেই সংঘঠিত হয়ে গেছে এবং যার পরে আরও কিছু ঘটনা ঘটে গেছে, তার কালকে পুরঘটিত অতীত কাল বলা হয়। যেমন- সেবার তাকে সুস্থ্যই দেখেছিলাম, 
কাজটি কি তুমি করেছিলে?

ক) অতীতে সংঘঠিত ঘটনার নিশ্চিত বর্ণনায়ঃ পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ মারাঠা সৈন্য মারা গিয়েছিল।

খ) অতীতে সংঘটিত ক্রিয়ার পরম্পরা বোঝাতে শেষ ক্রিয়াপদে পুরাঘটিতে অতীত কালের প্রয়োগ হয়। যেমন- বৃষ্টি শেষ হবার পূর্বেই আমরা বাড়ি পৌঁছেছিলাম। 

ক্রিয়ার কাল  বাংলা ব্যাকরণ লেকচার শীট

৩) ভবিষ্যৎ কালঃ
ক) সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল: যে ক্রিয়া পরে বা অনাগত কালে সংঘটিত হবে, তার কালকে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল বলে। যথা- আমরা মাঠে খেলতে যাব। শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে।

সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ:
১) আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের স্থলে ভবিষ্যৎ কাল ব্যবহৃত হয়। যেমন- কে জানত, আমার ভাগ্য এমন হবে?

২) অতীত কালের ঘটনা সম্পর্কিত যে ক্রিয়াপদে সন্দেহের ভাব বর্তমান হয়। যেমন- ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি গিয়ে থাকবেন। তোমরা হয়ত ‘বিশ্বনবী’ পড়ে থাকবে।

খ) ঘটমান ভবিষ্যৎ কাল: যে কাজ ভবিষ্যৎ কালে চলতে থাকবে তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ বলে। 

গ) পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ: ভবিষ্যৎ কালে কোন ক্রিয়া ঘটিয়া শেষ হইয়া থাকিবে বুঝাইলে তাহার কালকে পুরঘটিত ভবিষ্যৎ কাল বলে। যথা- আমি লেখাপড়া শেষ করিয়া থাকিব।

ঘ) ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা: ক্রিয়ার কার্য ভবিষ্যৎ কালে সম্পন্ন করিবার জন্য আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, বুঝাইলে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা হয়। যেমন- তুমি লেখাপড়া করিও।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post