ক্রিয়াপদ কাকে বলে? ক্রিয়াপদ কতো প্রকার উ কি কি?

বাংলা ব্যাকরণ
আলোচ্য বিষয়ঃ
ক্রিয়াপদ
যে পদের দ্বারা কোন কার্য সম্পাদন করা বুঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যের অন্তর্গত যে পদ দ্বারা কোন পুরুষ কর্তৃক নির্দিষ্ট কালে কোন কার্যের সংঘটন বুঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন- কবির বই পড়ছে।

* ক্রিয়াপদের গঠন: ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। যেমন: ‘পড়ছে’= পড়্ ‘ধাত’ু + ‘ছে’ বিভক্তি।

* অনুক্ত ক্রিয়াপদ: ক্রিয়া পদ বাক্য গঠনের অপরিহার্য অঙ্গ। ক্রিয়াপদ ভিন্ন কোন মনোভাবই সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না, তবে কখনো কখনো বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য বা অনুক্ত থাকতে পারে। যেমন- ইনি আমার ভাই = ইনি আমার ভাই (হন)। 
আজ তীব্র শীত = আজ তীব্র শীত (অনুভূত হচ্ছে)
তোমার আব্বা কেমন? = তোমার আব্বা কেমন (আছেন)?
বাক্যে সাধারণত ‘হ’ এবং ‘আছ’ ধাতু গঠিত ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে।

* ক্রিয়ার প্রকারভেদ :
ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়াপদকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। 
যথা: ক. সমাপিকা ও খ. অসমাপিকা

ক. সমাপিকা ক্রিযা : যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের (মনোভাবের) পরিসমাপ্তি জ্ঞাপিত হয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- আমি ভাত খাচ্ছি। রোমা দিল্লি যাবে।

খ. অসমাপিকা : যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন- ১. প্রভাতে সূর্য উঠলে ২. আমরা হাত মুখ ধুয়ে ৩. আমরা বিকেলে খেলতে

এখানে উঠলে, ধুয়ে, খেলতে ক্রিয়াপদগুলোর দ্বারা কথা শেষ হয়নি; কথা সম্পূর্ণ করতে আরও শব্দের প্রয়োজন। তাই এ শব্দ গুলো অসমাপিকা ক্রিয়া। উপর্যুক্ত বাক্য গুলো পূর্ণ মনোভাব জ্ঞাপন করলে দাঁড়াবে।
১. প্রভাতে সূর্য উঠলে, অন্ধকার দূর হয়।
২. আমরা হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম।
৩. আমরা বিকেলে খেলতে যাই।

পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করতে হলে সমাপিকা ক্রিয়া অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ইয়া, ইয়ে, ইতে, তে, লে বিভক্তি যুক্ত ক্রিয়াপদ অসমাপিকা ক্রিয়া।

* সকর্মক ক্রিয়া:  যে ক্রিয়ার কর্ম আছে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন- রোপা ছবি আঁকছে। আমি চাঁদ দেখছি।

* অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না তাকে বলা হয় অকর্মক ক্রিয়া। যথা- সে খেলে। আমি যাই।
আমরা রোজ বেড়াই।

* দ্বিকর্মক ক্রিয়া: সে ক্রিয়ার দুটো কর্মপদ থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন- সে মাকে চিঠি লিখছে আমি তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম।

* ক্রিয়াকে কি বা কাকে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই হলো কর্ম (objective)।
দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্মপদটিকে মুখ্য বা প্রধান কর্ম এবং ব্যক্তিবাচক কর্ম পদটিকে গৌণ কর্ম বলে। বস্তুবাচক কর্ম পদটিকে মুখ্য বলে কারণ সেটি মূল ক্রিয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে।

* সমধাতুজ কর্ম: বাক্যের ক্রিয়া এবং কর্মপদ একই ধাতু থেকে গঠিত হলে ঐ কর্মপদকে সমধাতুজ কর্ম বা ধাত্বর্থক কর্ম পদ বলে। যেমন- আর কত খেলা খেলবে।
সমধাতুজ কর্মপদ অকর্মক ক্রিয়াকে সকর্মক করে। 
যেমন- কী খেলায় খেললে?
বেশ এক ঘুম ঘুমিয়েছি।

* প্রয়োগ বৈশিষ্ট্যে সকর্মক ক্রিয়া ও অকর্মক হতে পারে। 
অকর্মক সকর্মক
আমি চোখে দেখি না। আকাশে চাঁদ দেখিনা। 
ছেলেটা কানে শোনে না। ছেলেটা কথা শোনেনা। 
আমি রাতে খাব না। আমি রাতে ভাত খাব না।

* প্রযোজক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনা বা চালনায় অন্য কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয়, সেই ক্রিয়াকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। (সংস্কৃত ব্যাকরণে একে ণিজন্ত ক্রিয়া বলা হয়।

প্রযোজক কর্তা: যেক্রিয়া প্রযোজনা করে, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।

প্রযোজ্য কর্তা : যাকে দিয়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন-
প্রযোজক কর্তা প্রযোজ্য কর্তা প্রযোজক ক্রিয়া
সাপুড়ে সাপ খেলায়।
প্রযোজক ক্রিয়ার গঠন: প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু মূল ক্রিয়ার ধাতু + আ । যেমন-মূল ধাতুহাস্ + আ = হাসা (প্রযোজক ক্রিয়ার ধাতু)হাসা + চ্ছেন বিভক্তি = হাসাচ্ছেন (প্রযোজক ক্রিয়া)

* নাম ধাতু ও নাম ধাতুর ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয়যোগে যে সব ধাতু গঠিত হয়, সে গুলোকে নাম ধাতু বলে। নাম ধাতুর সঙ্গে পুরুষ বা কালসূচক ক্রিয়া বিভক্তি যোগে নামধাতুর ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যথা- 
ক. বেত (বিশেষ্য) + আ (প্রত্যয়) = বেতা (নাম ধাতু)
খ. বাঁকা (বিশেষণ) + আ (প্রত্যয়) = বাঁকা (নাম ধাতু)।
গ. ধ্বন্যাত্মক অব্যয়: কন কন + আ = কনকনা (নাম ধাতু)

* আ প্রত্যয় যুক্ত না হয়েও কয়েকটি নাম ধাতু বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতুর মত ব্যবহৃত হয়। যেমন-
ফল - বাগানে বেশ কিছু লিচু ফলেছে।
টক - তরকারি বাসি হলে টকে।
ছাপা - আমার বন্ধু বইটা ছেপেছে।

ক্রিয়াপদ  বাংলা ব্যাকরণ লেকচার শীট

* যৌগিক ক্রিয়া:
একটি অসমাপিকা ও একটি সমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সমপ্রসারিত অর্থ, প্রকাশ করে, তবে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যথা-
ঘটনাটা শুনে রাখ। সাইরেন বেজে উঠল। এখন যেতে পার।

* মিশ্র ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে হ্, পা, দে যা, র্ক কাট্, গা, ছাড়্, র্ধ, মার প্রভৃতি ধাতু যোগে গঠিত ক্রিয়াপদ বিশেষ বিশেষ অর্থে মিশ্র ক্রিয়া গঠন করে। যেমন- আমরা তাজমইল দর্শন করলাম। তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম। মাথা ঝিম ঝিম্ করছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post