বাংলা ব্যাকরণ
আলোচ্য বিষয়ঃ
যতি বা ছেদ চিহ্ন
বাংলা যতি বা ছেদ চিহ্নকে বিরাম চিহ্ন ও বলা হয়। এগুলো বাংলা ব্যাকরণের লিখন কৌশল, যতি বা ছেদ চিহ্নের ব্যবহার বাক্যের অর্থের সুস্পষ্টতা নির্দেশ করে। বাক্যের অর্থ ঠিকমত বোঝার জন্য এবং যে সব চিহ্ন ব্যবহারে মনের আনন্দ, আবেগ, জিজ্ঞাসা ও ভাব প্রকাশের বিরতি বা সমাপ্তি ঘটে তাকে যতি বা ছেদ চিহ্ন বলা হয়।
✯ বাংলা ব্যাকরণে অনেকগুলি যতি বা ছেদ চিহ্ন বর্তমান কিন্ত আজো এর সবগুলির নাম বাংলায় আনা হয়নি।
✯ নিচে বিভিন্ন প্রকার যতি বা ছেদ চিহ্নের নাম, আকৃতি ও বিরতিকাল দেওয়া হল।
নাম চিহ্ন বিরতিকাল/সময়
দাঁড়ি/পূর্ণচ্ছেদ । এক সেকেন্ড
জিজ্ঞাসা চিহ্ন ? এক সেকেন্ড
বিস্ময় চিহ্ন ! ঐ
কোলন : ঐ
কোলন ড্যাস :- ঐ
ড্যাস - ঐ
কমা , এক বলতে যে সময় লাগে।
সেমিকোলন ; এক উচ্চারণের দ্বিগুণ সময়।
উদ্ধরণ চিহ্ন “ ” এক উচ্চারণের সময়।
হাইফেন - থামার প্রয়োজন নেই।
ইলেক বা লোপ চিহ্ন ’ ঐ
ডট বা পূর্ণ লোপ .... ঐ
প্রথম বন্ধনী ( ) ঐ
দ্বিতীয় বন্ধনী { } ঐ
তৃতীয় বন্ধনী [ ] ঐ
✯ এবার আমাদের আলোচনার বিষয় যতি বা ছেদ চিহ্ন বাক্যের কোথায় এবং কখন কি অবস্থায় ব্যবহৃত হয়
✯ বাক্যের পরিসমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি বা ছেদ চিহ্ন বসে।
যথাঃ শীতকালে এ দেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
✯ জিজ্ঞাসা চিহ্ন ?
বাক্যে কোন কিছু জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন করা হলে তার শেষে জিজ্ঞাসা চিহ্ন বসে। যথাঃ সে কি যাবে ?
✯ বিস্ময় চিহ্ন !
হৃদয়ের বিস্ময় ও আবেগ প্রকাশার্থে অবশ্য সম্বোধন আবেগ বোঝালেও বিস্ময় চিহ্ন বসে।
যথা : আহ ! কি চমৎকার দৃশ্য।
✯ কোলন : বাক্য অসম্পূর্ণ রেখে প্রাসঙ্গিক অন্য তথ্য জ্ঞাপনের সময় কোলন বসে।
যথাঃ সভায় সিদ্ধান্ত হল : এক মাস পর নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
✯ কোলন ড্যাস :-
কোন বাক্যের উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে কোলন ড্যাস বসে।
যথা :- পদ পাঁচ প্রকার :- বিশেষ্য--------
✯ ড্যাস - পৃথক, পৃথক একাধিক বাক্য গুলো একটি বাক্যে স্থাপনের সময় ড্যাস চিহ্ন বসে।
যথাঃ তোমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তোমাদের সম্মান যাবে না-বাড়বে।
✯ কমা ,
বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ বিভাগ দেখাবার জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির দরকার, সেখানে কমা
বসে। যথাঃ সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
✯ সেমিকোলন ;
কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে অথবা কমার বার বার ব্যবহারের পর দাঁড়ি ব্যবহারের আগে সেমিকোলন বসে। যেমন- কণার মত মনিও ভাল ছাত্রী। কিন্তু কণার ব্যবহার খারাপ; তাই বন্ধুদের নিকট তার আদর নেই।
✯ উদ্ধরণ চিহ্ন “ ”
কোন বক্তার সরাসরি উক্তিকে এই চিহ্নের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করতে হয়। যথাঃ সে বলল, “আমি আজ স্কুলে যাব না”।
✯ হাইফেন -
একাধিক পদ বা শব্দ সংযোগের জন্য হাইফেন বসে। যথাঃ এ আমাদের শ্রদ্ধা- অভিনন্দন, আমাদের প্রীতি -উপহার।
✯ ইলেক বা লোপ চিহ্ন ’
কোন বাক্যে এক বা একাধিক বর্ণের লোপ বুঝাতে লোপ চিহ্ন বসে। যথাঃ মাথার ’ পরে জ্বলছে রবি।
এখানে’ পরে অর্থ উপরে।
✯ ডট বা পূর্ণ লোপ (...)
বাক্যের মধ্যে কোন শব্দাবলি বা অংশ বিলোপ বা উল্লেখ না করার প্রয়োজনে ডট চিহ্ন বসে।
যথাঃ সকলের তরে(...) প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
✯ বন্ধনী চিহ্ন (), { }, [ ]
এই চিহ্ন তিনটি সাধারণত গণিত শাস্ত্রে ব্যবহার হয়, তবে সাহিত্যে বাক্য বিশেষ ব্যাখার প্রয়োজন হলে
বাক্যের মধ্যে বসে। যথাঃ চন্দ্রদ্বীপে (বর্তমান বরিশালে) তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
✯ যতি বা ছেদ চিহ্নের মধ্যে কমা , বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত হয়। এবার আমরা ভালভাবে বোঝার জন্য কমার আলাদাভাবে আলোচনা করব।
ক) বাক্যে স্বল্প বিরতির প্রয়োজনে কমা ব্যবহৃত হয়।
যথাঃ সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
খ) পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া একসঙ্গে বসলে শেষ পদ ছাড়া
প্রত্যেকটির আগে কমা বসবে।
যথাঃ সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুষ্প।
গ) সম্বোধনের পরে কমা বসাতে হয়। যথাঃ এই মাঝি, এ দিকে এসো।
ঘ) জটিল বাক্যে খন্ড বাক্যকে আলাদা করার জন্য কমা বসে। যথাঃ আমি তাকে চিনি, সে এখানে এসেছিল।
ঙ) উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে কমা বসে। যথাঃ শিক্ষক বললেন, “মিথ্যা বলা মহাপাপ”।
চ) মাসের তারিখ ও বার লিখতে কমা বসে। যথাঃ ১৪ ই এপ্রিল, সোমবার, ২০০৮ সাল।
ছ) বাড়ি ও বাসার নাম্বারের পরে কমা বসে। যথাঃ ৩৪০, আজিমপুর কলোনী, ঢাকা।
জ) নামের পরে একাধিক উপাধি থাকলে প্রতিটির পরে কমা বসে।
যথাঃ মিঃ আকতার বি এ অনার্স, এম, এ, বাংলা বিভাগ, ঢা.বি.।
✯ যতি বা ছেদ চিহ্নের উপরের আলোচনা ছাড়াও আরো কিছু আলোচনা আছে, সেটা আমরা এখন দেখব।
ধাতু বোঝাতে √ ব্যাকরণিক চিহ্ন √বচ + ক্তি = উক্তি
পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন < ঐ জাদরেল < জেনারেল।
পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন > ঐ গঙ্গা > গাঙ।
সমান বা সমস্ত বাচক = ঐ নর ও নারী = নরনারী।
0 Comments:
Post a Comment