একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
বাংলা সহপাঠ গাইড
নাটক
সিরাজউদ্দৌলা
সিকান্দার আবু জাফর
Character discussion of Sirajuddaula play: Umichand pdf download
চরিত্রঃ উমিচাঁদ
ভূমিকা: উমিচাঁদ লাহোরের শিখ ব্যবসায়ী। অর্থোপার্জনের উদ্দেশ্যে সে বাংলায় এসেছিল। নিজের স্বার্থসিন্ধির জন্য সে নবাবের শাসন-ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে। এ স্বার্থান্ধ বণিক নিজের মতলব হাসিলের জন্য নবাবের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়, কিন্তু কোনো পক্ষের প্রতিই সে পুরোপুরি বিশ্বস্ত ছিল না। স্বার্থের পাল্লা যেদিকে ভারি দেখেছে, সেদিকেই সে ঝুঁকে পড়েছে। দু’নৌকায় পা দিয়ে চলেছিল বলে শেষ পর্যন্ত তার ভরাডুবি হয়েছে।
ইংরেজ তোষণ: উমিচাঁদ এক সময় কলকাতায় ইংরেজদের হাতে বন্দি হয়। নবাব কলকাতা জয় করলে হলওয়েল তাকে মুক্তি দেন। ছাড়া পেয়ে সে ইংরেজের বিপদ মুক্তির জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। তার রসিকতাও বেশ উপভোগ্য। কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ থেকে ক্যাপ্টেন ক্লেটন পালিয়ে গেছেন শুনে সে রসিকতা করে হলওয়েলের মুখের ওপর বলেছিল, “ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন, এ বড় লজ্জার কথা।” সে আরও বলেছিল, “ক্যাপ্টেন কর্নেলরা সব পালিয়ে গেছেন, এখন ফাঁকা ময়দানে হাসপাতালের হাতুড়ে সার্জন জন জেকানিয়া হলওয়েল সর্বাধিনায়ক। “আপনিই এখন কমান্ডার-ইন-চীফ।” হলওয়েল ব্যাকুলভাবে উমিচাঁদের সাহায্য চাইলে ধূর্ত উমিচাঁদ রাজা মানিকচাঁদের কাছে চিঠি লিখবে বলে আশ্বাস দেয়। দুর্গের পতনের মুখে দুর্গ-প্রাকারে সাদা নিশান উড়িয়ে দিতে সে হলওয়েলকে পরামর্শ দেয়।
স্বার্থান্বেষী: স্বার্থান্বেষী উমিচাঁদ নিজের স্বার্থের সন্ধানে সেই দুর্যোগের দিনে প্রভাবশালী সবার সাথেই যোগাযোগ রেখে চলত। তাকে কেউই পুরোপুরি বিশ্বাস করতো না; সেও সবসময় মনে করতো তাকে সবাই ঠকাচ্ছে। ঘসেটির বাড়িতে তাই সে রায়দুর্লভকে বলেছে, “আপনারা সরশুদ্ধ দুধ খেয়েও গোঁফ শুকনো রাখেন, আর আমি দুধের হাড়ির কাছে যেতে না যেতেই হাড়ির কালি মেখে গুলবাঘা বনে যাই।”
ভিজেবেড়াল: উমিচাঁদ ভিজেবেড়াল। সিরাজের পতন হলে কে কী পদ পাবেন তা নিয়ে আলোচনার সময় উমিচাঁদ বলেছে তার কোনো বিষয়ে দাবি-দাওয়া নেই। সে খাদেম। খুশি হয়ে যে যা দেয় তাই সে নেয়। উমিচাঁদের বুদ্ধির অভাব ছিল না। সে তখনকার পরিস্থিতিটা ঠিক আঁচ করতে পেরেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল, সিরাজ তাকে বিশ্বাস করেন না। সিরাজের নবাবী কায়েম থাকলে অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের মতো তারও রক্ষা নেই। তাই সে মনে-প্রাণে সিরাজের পতন কামনা করেছে।
উমিচাঁদের জীবনে টাকার মতো পরম কাম্য অন্য কোনো জিনিস নেই। সে নিজেই বলেছে, “দওলত তার কাছে ভগবানের দাদা মশায়ের চেয়েও বড়ো। সে দওলতের পূজারী।”
কালকেউটে: মিরনের বাড়িতে সিরাজের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র-সভায় উমিচাঁদ ছিল না। জগৎশেঠ বলেছেন উমিচাঁদকে বাদ দিয়ে কোম্পানির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব নয়। কারণ কোম্পানি যেমন এদেশে বাণিজ্য করতে এসে লুটপাট করছে, উমিচাঁদও ব্যবসা করতে এসে অর্থ সংগ্রহ করে চলেছে। মিরজাফর নিজেও উমিচাঁদকে ভালো করে জানতেন। জগৎশেঠের মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে বলেছেন, উমিচাঁদ একটা আস্ত কালকেউটে। তার দাবিই সবার আগে মেটানো দরকার। তা না হলে, দণ্ড না পেরোতেই সমস্ত খবর পৌঁছে যাবে নবাবের দরবারে।
উপসংহার: ক্লাইভের মতে সে-যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক উমিচাঁদ। উমিচাঁদ ইংরেজদের গোপন অভিসন্ধি নবাবকে জানিয়ে দিয়েছে। তারপর আবার একটা নতুন প্রস্তাব নিয়ে এসেছে তাদের কাছে। উমিচাঁদ ত্রিশ লক্ষ টাকা দাবি করেছে। উমিচাঁদ ধড়িবাজ, কিন্তু ক্লাইভও কম ছিলেন না। তাই ক্লাইভ জাল দলিল করে উমিচাঁদকে ফাঁকি দিয়েছে। সিরাজের পতনের পরে উমিচাঁদ তার ত্রিশ লক্ষ টাকা না পেয়ে টাকার শোকে পাগল হয়ে যায়।
উন্মাদের মতো নতুন নবাবের দরবারে প্রবেশ করে চিৎকার করে ফরিয়াদ জানায়। ক্লাইভ মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে বলেন, তার বয়স হয়েছে, তাই মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে। তিনি তাকে তীর্থ করতে আর ঈশ্বরের ভজনা করতে উপদেশ দেন। কিলপ্যাট্রিক তাকে টেনে নিয়ে যায় দরবারের বাইরে। সে টাকা টাকা বলে অবিরাম চিৎকার করতে থাকে। তার উক্তি অর্থলোভী শাইলককে মনে করিয়ে দেয়।
0 Comments:
Post a Comment