একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
বাংলা সহপাঠ গাইড
নাটক
সিরাজউদ্দৌলা
সিকান্দার আবু জাফর
Character discussion of Sirajuddaula play: Raydurlav pdf download
চরিত্রঃ রায়দুর্লভ
ভূমিকা: কায়স্থ রায়দুর্লভ ছিলেন সিরাজউদ্দৌলার অন্যতম সেনাপতি। নবাব ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করে অধিকার করেছিলেন। সে- অভিযানে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন রায়দুর্লভ। তিনি প্রথম জীবনে নবাবের বিশ্বস্ত সেনাপতিই ছিলেন।
শেষ দিকে ষড়যন্ত্রকারীদের খপ্পরে পড়ে সিপাহসালার হবার প্রলোভনে তাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। শওকতজঙ্গের বিরুদ্ধে সিরাজের সার্থক অভিযানের প্রাক্কালে রায়দুর্লভ গোপনে শওকতকে সমর্থন করেন কিন্তু বিনা স্বার্থে তিনি তা করেন নি। শওকত নবাব হলে তাঁকে পদাধিকারের একটা একরারন্যামা সই করে দেবার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
লোভী: রায়দুর্লভের হৃদয় থেকে দেশপ্রেম একেবারে শুকিয়ে যায় নি। নবাব তাঁর প্রকাশ্য দরবারে কুঠিয়াল সাহেবদের দ্বারা নির্মমভাবে উৎপীড়িত একজন হতশ্রী লবণ-প্রস্তুতকারককে হাজির করালে রায়দুর্লভ তার দুর্দশায় সাতিশয় ব্যথিত হয়ে ক্ষোভে-রোষে তরবারি নিষ্কাশন করে বলেছেন, “একি! এর এই অবস্থা কে করলো?” তিনিও তামা, তুলসী ও গঙ্গাজল স্পর্শ করে শপথ করেছিলেন, সর্বশক্তি নিয়ে তিনি নবাবের অনুগামী থাকবেন, কিন্তু তিনিও লোভ দমন করতে পারেন নি। সিরাজের পতন হলে তিনি সিপাহসালার হবেন, এ প্রলোভন তাঁকে বিশ্বাসঘাতকে পরিণত করে। তিনি সম্ভবত এ লোভেই মিরজাফর তোষামোদ করে চলতেন। প্রকাশ্য দরবারে সিরাজ সভাসদদের অপমান করলে এ সুযোগসন্ধানী সেনাপতি বলেছিলেন, “সিপাহ্সালারের অপমানটাই আমার বেশি বেজেছে।”
রসিক: স্বার্থপর রায়দুর্লভের মধ্যেও রসিকতার অভাব ছিল না। মিরনের বাড়িতে নৃত্য-গীতের আসরে মন্ত্রণাসভা বসবার পূর্ব মুহূর্তে তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। তার সে আকস্মিক আবির্ভাবে মিরন বিস্ময় প্রকাশ করলে রায়দুর্লভ বলেন, “আমাকে আপনি নৃত্য-গীতের সুধারসে একেবারে নিরাসক্ত ধরে নিয়েছেন।” তিনি বলেছেন, অহরহ অশান্তি আর অব্যবস্থার মধ্যে থেকে তার জীবন বিস্বাদ হয়ে উঠেছে।
ধূর্ত: রায়দুর্লভ ছিলেন অত্যন্ত ধূর্ত ও ধুরন্ধর। তিনি ইচ্ছে করেই গোপন সভায় উপস্থিত থাকেন নি। তার পক্ষে অধিকক্ষণ বাইরে থাকা তিনি নিরাপদ মনে করেন নি। তিনি ভয় করেছেন, কখন কী কাজে নবাব তাকে তলব করে বসেন তার ঠিক নেই। তলবের সাথে সাথে হাজির না পেলে নবাবের মনে সন্দেহ জাগতে পারে। তবুও বিপদ ঘাড়ে করে তিনি মিরনের সাথে বৈঠকের আগে দেখা করতে এসেছেন শুধু তার সম্বন্ধে কী ব্যবস্থা করা হলো তা জানার জন্য। মিরন তাকে প্রধান সেনাপতিত্ব প্রাপ্তির আশ্বাস দেয় এবং তিনি কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে প্রস্থান করেন।
দ্বন্দ্ব-সন্দেহ: দুকূল বজায় রেখে চলেছেন কায়স্থ সেনাপতি রায়দুর্লভ। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের সাফল্যটা নিশ্চিত বলে ধরে নিতে পারেন নি। তিনি মিরনকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, চারদিকের অবস্থা দেখে যদি তিনি বুঝতে পারেন যে, ষড়যন্ত্রকারীদের সাফল্য লাভের কোনো আশা নেই, তাহলে তারা যেন তার সহায়তার আশা না করেন। অবিশ্বাস আর ষড়যন্ত্রের ধুম্রজালে আচ্ছন্ন হয়ে তিনি তার সঠিক কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারেন নি।
বিশ্বাসঘাতক: রায়দুর্লভ মাসে মাসে রাজবল্লভের কাছ থেকে যে-মোটা বেতন পেতেন এ তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তিনি প্রকৃত অর্থে নবাবের অনুগত ছিলেন না। তবে আনুগত্যের মুখোশটা রক্ষা করতে তিনি বেশি তৎপর ছিলেন। মিরজাফরের কথায়, রায়দুর্লভ ছিলেন ক্ষুদ্র শক্তিধর। তবু ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে প্রয়োজনের সময় নবাবের বিরুদ্ধে তার বিশ্বাসঘাতকতার গুরুত্বও ছিল যথেষ্ট।
উপসংহার: পলাশির যুদ্ধক্ষেত্রে মিরজাফরের মতো তিনিও যুদ্ধ করেন নি। তিনি ইংরেজের সাথে হাত মিলিয়েছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তার মনে অনুশোচনা জেগেছিল কি না তা বলা দুষ্কর। তিনি সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন নি। মিরজাফরের নবাবী আমলের প্রথম দরবারেও তাকে দেখা যায় না।
0 Comments:
Post a Comment