একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
বাংলা সহপাঠ গাইড
নাটক
সিরাজউদ্দৌলা
সিকান্দার আবু জাফর
Sirajuddaula Drama Character Discussion: Clive pdf download
চরিত্রঃ ক্লাইভ
ভূমিকা: বাংলার ইতিহাসের বড় কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা করেন বিদেশি বণিকের অন্যতম কর্মকর্তা রবার্ট ক্লাইভ। বাংলার পতনের দিনে এ ভাগ্যান্বেষী ইংরেজ কর্মচারী বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন, বাংলার জনজীবনে সূচনা করেছেন অপরিসীম দুর্গতি। তিনি ছিলেন বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান চক্রান্তকারী। তারই কূট-কৌশলে বণিকের মানদণ্ড দেখা দিয়েছিল রাজদণ্ডরূপে।
জোচ্চোর ও ষড়যন্ত্রকারী: যে কোনো রকম ছলনা, জোচ্চুরি এবং ঘৃণ্য কাজের পাণ্ডা ছিলেন কর্নেল ক্লাইভ। মিরনের বাড়িতে ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন সভায় ক্লাইভ আসেন ওয়াটসনকে সাথে নিয়ে রমণীর ছদ্মবেশে। ক্লাইভ ছিলেন বেপরোয়া দুঃসাহসী। জুয়া খেলায় অভ্যস্ত ক্লাইভ নিজের জীবন বিপন্ন করেও সে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সুচতুর ক্লাইভ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন বাংলার নবাবের সত্যিকারের কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি ঠিকই জানতেন যে, নবাবের সেনাপতি বিশ্বাসঘাতক।
যার খাজাঞ্চি, দেওয়ান, আমির-ওমরাহ্ প্রত্যেকেই প্রতারক, তার কোনো ক্ষমতা থাকতে পারে না। চতুর ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী আমির-ওমরাহদের বিশ্বাস করতেন না। তাদের সাথে চলতে তিনি প্রতি পদক্ষেপে সতর্কতা অবলম্বন করতেন। তিনি গোপন বৈঠকে রাজবল্লভকে খোলাখুলি বলেছেন, তারা ইচ্ছে করলে ইংরেজের ক্ষতি করতে পারেন। বিশ্বাসহন্তারা সবই পারে। তারা নবাবকে ডোবাচ্ছেন, কাল যে ইংরেজকে ডোবাবেন না তা বিশ্বাস করা কঠিন। তিনি বরং নবাবকে বিশ্বাস করতে পারেন। স্বচ্ছ দৃষ্টির অধিকারীর পক্ষেই এ মূল্যায়ন করা সম্ভব।
নীতিহীন: ক্লাইভ উমিচাঁদের চেয়েও নীতিহীন বুদ্ধিমান ছিলেন। জাল-জুয়োচুরিতে পাকা ছিল তার হাত। তিনি মানুষ চিনতেন। তিনি নবাবের বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক কর্মচারীদের যেমন চিনতেন, তেমনি চিনতেন প্রতারক উমিচাঁদকে। তার মতে, উমিচাঁদ ছিল সে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক। ক্লাইভ এ ধূর্ত-বিশ্বাসঘাতককেও বিশ্বাসঘাতকতায় হার মানিয়ে পাগল বানিয়েছিলেন।
দেশ ও জাতির প্রতি বিশ্বস্ত: নবাবের কর্মচারীরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন, নিজেদের স্বার্থের জন্য। কিন্তু ক্লাইভের জালিয়াতি ও কূট-কৌশলের পিছনে লুকানো ছিল তার দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ স্বার্থ। সেদিক থেকে তার স্থান এদের অনেক ওপরে। পলাশির যুদ্ধের আগে মিরজাফরদের সাথে ক্লাইভের যে চুক্তি হয় তার মুসাবিদা করেন ক্লাইভ। সে চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল সিরাজের পতনের পরে মিরজাফর নামেমাত্র নবাব হবেন। কিন্তু রাজ্যশাসনের দায়িত্ব থাকবে কোম্পানির হাতে। ধরা পড়ে ধূর্ত ক্লাইভ সাফাই গেয়েছেন, তারা শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের privilege-টুকু secured করে নিচ্ছেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হতেই ক্লাইভ দলিল দুটো ফেরত নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেন। তখন বাংলার প্রতারকরা নরম হয়ে পড়েন।
দূরদৃষ্টি: মিরজাফর দলিলে সই করতে ইতস্তত করছেন দেখে ক্লাইভ তাকে Women- দের চেয়েও Coward বলে কাজ হাসিল করেন। Coward- দের ওপর কোনো কাজের জন্যই ভরসা করা যায় না। তাই দলিল সই করাতে তিনি নিজেই এসেছেন। মিরজাফর দলিলে স্বাক্ষর দেবার পর এ ধূর্ত ইংরেজ প্রসন্ন মুখে বলেছিলেন, “আমরা এমন কিছু করলাম যা ইতিহাস হবে।” তার সে ভবিষ্যদ্বাণী নিদারুণ ঐতিহাসিক সত্যে পরিণত হয়েছে।
সতর্ক: অতিমাত্রায় সতর্ক ছিলেন এ ইংরেজ। পলাশির যুদ্ধের শেষে তিনি সিরাজের শিবিরে প্রবেশ করে তাঁর প্রধান গুপ্তচর নারান সিংকে হত্যা করেন। নবাব পলায়ন করেছেন শোনামাত্র তিনি মিরজাফরকে রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করতে নির্দেশ দেন। তিনি জানতেন সময় পেলে নবাব প্রস্তুতি গ্রহণ করে রুখে দাঁড়াবেন। তিনি মিরজাফরকে অপদার্থ বলেই জানতেন। মিরজাফর যখন কৃতজ্ঞতায় বিগলিত হয়ে বলেন, ক্লাইভের হাত ধরে বসতে না পারলে তিনি বাংলার মসনদে বসবেন না, ক্লাইভ তখন মিরজাফরকে সেরা Clown বলেই অভিহিত করেন।
তবে এ ধূর্ত ইংরেজ অনুগত প্রজার মতো নতুন নবাবকে নজরানা দেন। দরবারের লোকজনকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমাদের দেশে আবার শান্তি ফিরে এসেছে। নিজের ব্যক্তিগত লাভের প্রতিও তার ছিল প্রখর দৃষ্টি। ষড়যন্ত্রের নায়ক হিসেবে তিনি পেলেন নগদ একুশ লাখ টাকা আর বার্ষিক চার লাখ টাকা আদায়ের জমিদারি চব্বিশ পরগণার স্থায়ী মালিকানা। এরপর শঠের চূড়ামণি রূপে তিনি উমিচাঁদকে তীর্থে গিয়ে ঈশ্বরের নাম জপ করার পরামর্শ দেন।
বুদ্ধিমান: বুদ্ধিমান ক্লাইভ তার হাতের পুতুল নবাব মিরজাফরকে মসনদে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন, এ লোভী ও অপদার্থ লোকটাকে কলের পুতুল হিসেবে সামনে রেখে বাণিজ্যের নামে এ দেশের রাজদণ্ড হস্তগত করা ইংরেজের পক্ষে খুবই সহজসাধ্য হবে। তাই তিনি মিরজাফরকে শক্ত হতে বলেছেন।
উপসংহার: সিরাজকে হত্যা করতে বাংলার কোনো কর্মকর্তাই চান নি। কিন্তু ক্লাইভ তার জনপ্রিয়তার কথা জানতেন, ভবিষ্যতে বাংলার মানুষ যে-কোনো সময় সিরাজের বন্ধন মুক্তি ঘটিয়ে ক্লাইভের কবল থেকে বাংলার শাসনব্যবস্থা আবার ছিনিয়ে নিতে পারে, তার এমন আশঙ্কা ছিল।
তাই তিনি মিরজাফরের অপদার্থ পুত্র মিরনকে প্ররোচিত করেন সিরাজকে হত্যা করতে; সে মোহাম্মদি বেগকে দিয়ে সিরাজকে হত্যা করায়। এভাবে ক্লাইভের কৌশলে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের জীবনাবসান হয়।
0 Comments:
Post a Comment