একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
বাংলা সহপাঠ গাইড
নাটক
সিরাজউদ্দৌলা
সিকান্দার আবু জাফর
Character discussion of Sirajuddaula play: Rajvallabh pdf download
চরিত্রঃ রাজবল্লভ
ভূমিকা: দেশীয় প্রভাবশালী জমিদার রাজবল্লভ ছিলেন ব্রাহ্মণ, কিন্তু তিনি তার ব্রাহ্মণত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের মনিব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে স্বার্থান্বেষীদের ষড়যন্ত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
দূরদর্শী: রাজবল্লভ ঘসেটি বেগমের অনুগ্রহভাজন। শওকতজঙ্গকে বাংলার নবাব করার ষড়যন্ত্র সফল হলে ঘসেটি বেগম হতেন সত্যিকার নবাব এবং ঘসেটির নামে শাসনকার্য চালাতেন রাজবল্লভ। কিন্তু তাঁর সে ষড়যন্ত্র সফল হয় নি। কিন্তু তাই বলে এ উদ্যোগী পুরুষ হতাশ হননি। তিনি মিরজাফরের সমর্থক হিসেবে কোম্পানির কর্মচারীদের সাথে ষড়যন্ত্রে অন্যতম প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন। রাজবল্লভ ক্লাইভের সাথে সম্পাদিত দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।
তবে তিনি সন্ধির পেছনে ক্লাইভের যে অভিসন্ধি ছিল তা ঠিকই ধরে ফেলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই সন্ধি অনুসারে সিপাহ্সালার শুধু মসনদে বসবেন। কিন্তু রাজ্য চালাবে কোম্পানি।” সন্ধিতে কোম্পানির কর্মচারীদের যে ক্ষতিপূরণ ও পুরস্কারের শর্ত ছিল তাও তিনি সমর্থন করতে পারেন নি। চুক্তি পড়ে তিনি বলেছিলেন, “নবাবের তহবিল দুবার লুট করলেও তিন কোটি টাকা পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।”
তবু এ লোকটিই শেষ পর্যন্ত মিরজারকে সেই মারাত্মক দলিলে সই করতে প্ররোচিত করেছিলেন। কখনো বিবেকের উদয় হলেও রাজবল্লভের সিরাজের প্রতি বিদ্বেষ ছিল প্রখর। কারণ সিরাজ তাকে অর্থ আত্মসাতের দায়ে বন্দি করেছিলেন। তাই তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে।
সাবধানী অথচ রসিক: রাজবল্লভ অত্যন্ত সাবধানী লোক। মন্ত্রীসভায় রাইসুল জুহালার প্রবেশকে তিনি সন্দেহের চোখে দেখেন। তবে তিনি রসিক লোক। রাইসুল জুহালার কৌতুক অভিনয় তিনি উপভোগ করেন। কিন্তু দায়িত্ব সম্পর্কেও তিনি পূর্ণ সচেতন। নর্তকীদের কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দিয়ে তিনি কাজের কথা সেরে নিতে চান। আলোচনার প্রারম্ভেই সবাই তর্ক জুড়ে দিলে তিনি তাদের বারণ করেন। তিনি ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটা সংক্ষেপে সারতে চেয়েছেন। ক্লাইভের চুক্তিনামাটাও তিনি আগে পড়ে দেখতে চান। কারণ তিনি সতর্ক স্বভাবের ব্যক্তি।
আত্মসম্মানবোধ: সিরাজ তাঁর সভাসদদের প্রকৃত পরিচয় জানতেন বলে তাঁদের সাথে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন না; তাতেও রাজবল্লভ ক্ষুব্ধ ছিলেন। একবার সিরাজ জরুরি বিষয়ের মীমাংসার জন্য তাদের দরবারে ডেকেছেন বলে রাজবল্লভ তাঁর মুখের ওপর বলেন: “বেয়াদবি মাপ করবেন জাঁহাপনা। দরবারে আজ পর্যন্ত কোনো জরুরি বিষয়ের মীমাংসা হয়নি।” রাজবল্লভের আত্মসম্ভ্রম-বোধ ছিল অত্যন্ত প্রখর। অত্যাচারিত লবণ প্রস্তুতকারীকে দরবারে হাজির করলে তিনি নবাবকে বলেছিলেন, “কিন্তু প্রকাশ্যে দরবারে এমন সুচিন্তিত পরিকল্পনায় আমাদের অপমান না করলেও চলতো।”
প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতক: রাজবল্লভ প্রতারক, রাজবল্লভ বিশ্বাসঘাতক। তামা-তুলসী-গঙ্গাজল হাতে নিয়ে প্রকাশ্য দরবারে শপথ করেও তিনি নবাবের অর্থাৎ সমগ্র দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, নবাব তাদের প্রকৃত পরিচয় জানেন এবং উপযুক্ত সময়ে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির বিলুপ্তি ঘটাবেন।
তাই তিনি সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করবার জন্য অবিলম্বে কর্মপন্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। তিনি মিরজাফরকে অপদার্থ জেনেও তার নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, ইংরেজরা বেনিয়ার জাত। টাকা ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে না। তারা জানে যে, সিরাজের কাছ থেকে তাদের সুবিধা আদায়ের কোনো আশা নেই। কাজেই তারা তাদের সেবাদাস মিরজাফরকে মসনদে বসাবার জন্য সর্বপ্রকার সাহায্য করবে। ষড়যন্ত্র সফল করবার জন্য রাজবল্লভ অতিমাত্রায় উৎসাহী।
স্পষ্টভাষী: রাজবল্লভ ছিলেন স্পষ্টভাষী। তিনি ক্লাইভকেও ছেড়ে কথা বলেন নি। ক্লাইভ গাল ফুলিয়ে বড়ো কথা বললে তিনি তার মুখের ওপর বলেছিলেন, “তোমাকে ধরে বস্তাবন্দি হুলো-বেড়ালের মতো পানা-পুকুরে দুচারদিট চুবুনি দিতে বাদশাহের ফরমান যোগাড় করতে হবে নাকি?”
রাজবল্লভ রসিক পুরুষ। মিরজাফর বাংলার মসনদে বসবার প্রথম দিন আসতে দেরি করায় তিনি রসিকতা করে বলেছেন, “দর্জি নতুন পোশাকটা নিয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছেছে কিনা কে জানে।”
উপসংহার: মিরজাফরের প্রথম দরবারে ক্লাইভ নবাবকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলে রাজবল্লভ বলেছেন, “রাজকার্য পরিচালনায় কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে তাও মোটামুটি জানা দরকার।” এতে বোঝা যায় সরকারি পদমর্যাদা লাভের জন্য রাজবল্লভের একটা মোহ ছিল।
0 Comments:
Post a Comment