জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা | রচনা

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা

ভূমিকা:
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বাদ রেখে কোনো জাতির পক্ষে উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহন করা সম্ভব নয়। কারণ নারীসমাজ দেশের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অর্ধেক জনশক্তির প্রতিনিধি হিসেবে নারী তার পূর্ণ অধিকারের দাবিদার। কিন্তু নারী-পুরুষের অব্যাহত বৈষম্য এটাই প্রমাণ করে যে, নারীর পূর্ণ অধিকারের ব্যাপারটি কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে এই দিনটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়।

জাতি গঠনে নারীর ভূমিকা: জাতি গঠনে নারী সমাজের দায়িত্ব পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জাতীয় জীবনে সচলতা, জ্ঞান, কর্ম ও প্রাণ-চাঞ্চল্যের সৃষ্টি না হলে জাতি অচল হয়ে যায়। নারীরা যেহেতু পুরুষের মতোই সমাজের একটা অংশ, তাই পুরুষের মতো নারী সমাজকেও জাতি তথা সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হয়।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

উন্নত দেশসমূহে নারী জাগরণের ফলে দেশের সমৃদ্ধি এসেছে, সমাজজীবন সচল ও গতিশীল হয়েছে। আমাদের দেশের নারীরা সমাজগঠনে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এলে সমাজ যে উন্নতির পথে অগ্রসর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু সেবা ও গৃহকর্মের মধ্যে নারীকে সীমাবদ্ধ না রেখে নারীকে জাতীয় ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি সব স্তরে কর্মময় জীবনের অধিকারিণী করে তুলতে পারলে দেশের সমৃদ্ধি ও জাতির মঙ্গল ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশে নারীর বর্তমান অবস্থান: মানবজাতির অর্ধেক অংশ হয়েও নারীরা আজ বৈষম্যের শিকার। আমাদের দেশে প্রচলিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুশাসনের জালে আবদ্ধ নারীসমাজ। শিক্ষা, কর্মসংস্থান সর্বোপরি সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানারকম সুযোগ-সুবিধা থেকে নারীরা বঞ্চিত। বর্তমানে দেশে নারীর অবস্থানে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি।

প্রতিনিয়ত এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ আর যৌতুকের শিকার হচ্ছে অসংখ্য নারী। গৃহ পরিচারিকার ওপর অমানুষিক নির্যতানের খবরও পত্রিকার পাতায় হরহামেশাই আসছে। তবে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীসমাজের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আমাদের অন্যতম প্রধান রপ্তানি-খাত গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করছে অগণিত নারী শ্রমিক। পরীক্ষার মেধা তালিকায় চোখ বুলালেও দেখা যায় মেয়েদের প্রাধান্য। তারপরও সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় না।

চলার প্রতিটি পদক্ষেপেই নারী অসাম্যের মুখোমুখি হয়। বাবার সম্পত্তিতে ছেলে ও মেয়ের অসম অধিকার, পারিবারিক আইনে নারীর অসম অধিকার, জাতীয় সম্পদে নারীর অসম অধিকার, যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীকে উপেক্ষা- রাষ্ট্রের আয়নায় এখনও নারীর অমর্যাদার প্রতিচ্ছবিই তুলে ধরে।

নারী উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা: নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে মানবজাতির কল্যাণের প্রশ্ন জড়িত। দেশে নারীর মর্যাদা আর অবস্থান থেকেই অনুধাবন করা যায় একটি দেশ কতখানি উন্নত বা সভ্য। তাই নারীকে পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দেওয়ার জন্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, পেশা-শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের গণতান্ত্রিক সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নারীকে দিতে হবে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক, যথাযথ মর্যাদা। মনে রাখতে হবে বিশ্বের মেধা, দক্ষতা, প্রতিভার অর্ধেক ভাণ্ডার সঞ্চিত রয়েছে নারীর কাছে। এই অব্যবহৃত বা স্বল্প ব্যবহৃত মানব-সম্পদের সদ্ব্যবহার পুরো মানবজাতির স্বার্থেই জরুরি।

নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার করণীয়: সারা পৃথিবীতে এখনও নারীকে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নানা ক্ষেত্রে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। নারীর কাছ থেকে মঙ্গলজনক কোনো কিছু আশা করতে হলে সর্বপ্রথম তাকে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-গরিমায় অধিকার অর্পণ করতে হবে। সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি যত তাড়াতাড়ি বদলানো যাবে ও নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দেওয়া যাবে পরিবার তথা সমাজ ও দেশের জন্য ততই কল্যাণকর।

যে কোনো সমাজ তথা দেশ নারীর কাছ থেকে উন্নয়নমূলক ও সৃষ্টিশীল কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতে পারে। তবে তা চাইলে সর্বাগ্রে ফিরিয়ে দিতে হবে নারীর অধিকার। প্রতিযোগী নয় বরং নারীকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করতে হবে সকল ক্ষেত্রে। নারী নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি নারীর জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার: দেশে নারী যতদিন তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে ততদিন আমরা সমৃদ্ধ জাতি গঠন করতে পারব না। দেশের অর্ধেক জনশক্তিকে অবমূল্যায়ন করে কখনো কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না।

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা | রচনা

সামাজের প্রচলিত কুসংস্কার, অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং নারীর প্রতি হীনদৃষ্টি দূর করতে পারলেই আমরা জাতীয় জীবনে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারব।
Share:

0 Comments:

Post a Comment

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি

HSC Exam Routine

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইডসমূহ
(সকল বিভাগ)
বাংলা ১ম পত্র ১ম পত্র গাইড | বাংলা ২য় পত্র গাইড | লালসালু উপন্যাস গাইড | সিরাজুদ্দৌলা নাটক গাইড | ইংরেজি ১ম পত্র গাইড | ইংরেজি ২য় পত্র গাইড | আইসিটি গাইড | হিসাব বিজ্ঞান ১ম পত্র গাইড | হিসাব বিজ্ঞান ২য় পত্র গাইড | জীববিজ্ঞান ১ম পত্র গাইড | জীববিজ্ঞান ২য় পত্র গাইড | ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র গাইড | ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২য় পত্র গাইড | রসায়ন ১ম পত্র গাইড | রসায়ন ২য় পত্র গাইড | পৌরনীতি ১ম পত্র গাইড | পৌরনীতি ২য় পত্র গাইড | অর্থনীতি ১ম পত্র গাইড | অর্থনীতি ২য় পত্র গাইড | ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা ১ম পত্র গাইড | ফিন্যান্স ব্যাংকিং ও বীম ২য় পত্র গাইড | ভুগোল ১ম পত্র গাইড | ভুগোল ২য় পত্র গাইড | উচ্চতর গণিত ১ম পত্র গাইড | উচ্চতর গণিত ২য় পত্র গাইড | ইতিহাস ১ম পত্র গাইড | ইতিহাস ২য় পত্র গাইড | ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র গাইড | ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র গাইড | কৃষি শিক্ষা ১ম পত্র গাইড | কৃষি শিক্ষা ২য় পত্র গাইড | যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র গাইড | যুক্তিবিদ্যা ২য় পত্র গাইড | মনোবিজ্ঞান ১ম পত্র গাইড | মনোবিজ্ঞান ২য় পত্র গাইড | পদার্থ বিজ্ঞান ১ম পত্র গাইড | পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র গাইড | উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণ ১ম পত্র গাইড | উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণ ২য় পত্র গাইড | সমাজকর্ম ১ম পত্র গাইড | সমাজকর্ম ২য় পত্র গাইড | সমাজবিদ্য ১ম পত্র গাইড | সমাজবিদ্যা ২য় পত্র গাইড | পরিসংখ্যান ১ম পত্র গাইড | পরিসংখ্যান ২য় পত্র গাইড | ইংরেজি শব্দার্থ VOCABULARY

Admission Guide