‘লালসালু’ উপন্যাসে আক্কাস খুব গুরুত্বপূর্ণ, সম্ভাবনাময় একটি চরিত্র। তবে তার সম্ভাবনার সবটুকু ঔপন্যাসিক কার্যকর করতে পেরেছেন এমন মনে হয় না।
উপন্যাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে আমরা আক্কাসের অনুপ্রবেশ লক্ষ করি। তার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য লেখক আমাদের দিয়েছেন, “মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস নাকি গ্রামে একটা স্কুল বসাবে। আক্কাস বিদেশে ছিল বহুদিন। তার আগে করিমগঞ্জে স্কুলে নিজে নাকি পড়াশোনা করেছে কিছু।
তরপর কোথায় পাটের আড়তে না তামাকের আড়তে চাকুরি করে কিছু পয়সা জমিয়ে দেশে ফিরেছে কেমন একটা লাটবেলাটে ভাব নিয়ে।.......বলে, স্কুল দেবে। কোত্থেকে শিখে এসেছে স্কুলে না পড়লে নাকি মুসলমানের পরিত্রাণ নেই। ...... আক্কাস যুক্তিতর্কের ধার ধারে না। সে ঘুরতে লাগলো চরকীর মতো।
স্কুলের জন্য দস্তুরমতো চাঁদা তোলার চেষ্টা চলতে লাগলো এবং করিমগঞ্জে গিয়ে কাউকে দিয়ে একটা জোরালো গোছের আবেদনপত্র লিখিয়ে এনে সেটা সিধা সে সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিল। কথা এই যে, স্কুলের জন্য সরকারের কাছে সাহায্য চাই।”
আক্কাস সম্পর্কে আরও অনেক কথা ঔপন্যাসিক আমাদের বলেছেন, আরও অনেক দীর্ঘ বর্ণনা উপন্যাসে আছে অথচ এই চরিত্রটিকে তিনি শেষ পর্যন্ত পূর্ণভাবে বিকশিত করতে পেরেছেন, এটা আমাদের মনে হয় না। তার কারণ এই যে, যে প্রবল প্রত্যয়ী ‘আক্কাস স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য এত কিছু করতে পারে, সেই আক্কাস ধর্মব্যবসায়ী মজিদের প্যাঁচে ঘায়েল হয়ে পিঠটান দেবে-এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়, বিশেষত যে আক্কাস ওই আমলে স্কুলে পড়েছে এবং বহুকাল বিদেশে কাটিয়েছে।
মহব্বতনগরের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারাটা সহজ ব্যাপার, কিন্তু স্কুল-পড়ুয়া, বিদেশ ফেরত আক্কাসকে নয়। “তোমার দাঁড়ি কই মিঞা” মজিদের এই কথার পালটা কথা কেবল নয়, মজিদ যে মিথ্যার বেসাতি ফেঁদে বসেছে তাদের এলাকায়-এই বলান: “-তয় স্কুলের কথাডা?”
ছেলের উত্তর লেখক দেয়ালেন বাবার মুখ থেকেই। “- চুপ কর ছ্যামড়া, বেত্তমিজের মতো কথা কইসনা।” তারপর আমরা দেখি, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বর্ণনা দিচ্ছেন, “আক্কাস আস্তে আস্তে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। কেউ কেউ দেখে না। কিন্তু তার চলে যাওয়াটা কারো মনে প্রশ্ন জাগায় না।”
সুতরাং, আক্কাস চরিত্রের মধ্যে যে অমিত সম্ভবনা ছিল, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার অতি ক্ষুদ্রাংশকেই কাজে লাগাতে সমর্থ হয়েছেন।
0 Comments:
Post a Comment