ভয়াবহ যানজট জীবনের স্বাভাবিক গতিকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে
যানজটের কারণে ঢাকা শহরে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যানজট শুধু আমাদের অমূল্য সময়ই কেড়ে নিচ্ছে না, নাগরিক জীবনেও ডেকে আনছে নানা দুর্ভোগ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক, পথচারী সবাই আজ সর্বগ্রাসী যানজটের শিকার। এখন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
যানজটের কারণে গতি থমকে থাকলেও সময় থমকে থাকে না। কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছতে না পারার কারণে কাজের কাজ কিছুই হয় না। দশ মিনিটের রাস্তা পেরোতে লাগে এক ঘণ্টা। সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা, যখন-তখন, যেখানে-সেখানে যানজট। রাজপত, গলিপথ, ফুটপাত কোথাও স্বস্তি নেই। সর্বত্র ভিড় আর ভিড়, গাড়ির ভিড়, মানুষের ভিড়। যানজটের ভিড়ে একবার আটকে গেলে কখন তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তা বলা মুশকিল।
রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স যখন যানজটে আটকিয়ে পড়ে তখন ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, এমনকি পথিমধ্যে যানজটের কারণে রোগীর মৃত্যুও ঘটে। বর্তমানে নাগরিকের অপরিসীম ক্ষতি, ক্ষোভ ও বিরক্তির একটা বড় কারণ এ যানজট। এতে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে অগণিত শ্রমঘণ্টা। এর অর্থমূল্য নির্ণয় করা গেলে দেখা যেত প্রতিদিন কী বিশাল অঙ্কের অর্থের অপচয় হচ্ছে যানজটের কারণে। যানজট মোকাবিলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করার জন্য বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এতেও সমস্যার তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
সীমিত রাস্তাঘাটের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যাধিক্যই যানজটের প্রধান কারণ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত ও ভারসাম্যহীন নগরায়ন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে যানজট ও রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ সড়কগুলোর কার্যকর পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। আবাসন সংকট ও নগরায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাস্তাঘাটের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন হচ্ছে না। অপরিকল্পিতভাবে ওয়াসা, ডেসা, গ্যাস, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ ও বেসরকারি সংস্থা বিজ্ঞাপন বিলবোর্ডসহ নানা কারণে প্রায়ই জনবহুল রাস্তাসহ আবাসিক রাস্তাতেও খোঁড়াখুঁড়ি করে।
খোঁড়াখুঁড়ির পর পুনরায় রাস্তা মেরামত হয় না সময়মতো। রাস্তায় ওভারব্রিজের স্বল্পতা, ট্রাফিক আইন না মানা এবং রাস্তা পারাপারে নিয়ম মেনে না চলা, আধাপাকা ও কাঁচা রাস্তায় অতিরিক্ত মাল ও যাত্রীবোঝাই যানবাহন চলাচল করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা ইত্যাদির কারণে যানজট বেড়েই চলেছে। জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য ২৫% ফুটপাত থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। আবার যেটুকু আছে তার অধিকাংশ স্থান কলকারখানা, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফেরিওয়ালাদের দখলে। রাস্তার অনেকাংশে যত্রতত্র বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড ও টেম্পোস্ট্যান্ড দখল করে রেখেছে। এসব কারণে রাস্তা সংকীর্ণ ও অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
যানজট কমানোর জন্য কতকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন-
১। অবৈধ রিকশার দৌরাত্ম্য কমানো হবে;
২। যত্রতত্র গড়ে ওঠা বাজার, মার্কেট, বিপণিবিতান উচ্ছেদ করা;
৩। যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে লোক ওঠা-নামা না করা;
৪। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা; ৫। ফুটপাতগুলোকে হকারমুক্ত করা;
৬। বেশিরভাগ রাস্তাকে ওয়ানওয়ে করা ও ক্রসিং কমিয়ে দেওয়া;
৭। রাজধানীতে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির প্রতিযোগিতা বন্ধ করা;
৮। শহরের ব্যস্ত এলাকায় বাস টার্মিনাল উঠিয়ে দেওয়া;
৯। রাজধানীর অভ্যন্তরে শিল্প-কারখানাগুলোকে শহরের বাইরে নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করা;
১০। শহর থেকে কিছু হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া;
১১। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ও মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সর্বোপরি যানজট নিরসনের অন্যতম কৌশল হিসেবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
নাগরিক জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্য, সাবলীল ও গতিশীল করে তুলতে যানজট সমস্যার সমাধান অবশ্যই করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সকলের সদিচ্ছা ও সময়োপযোগী সুন্দর বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা ও তার দ্রুত বাস্তবায়ন।
প্রতিবেদক
কামরুল ইসলাম
মগবাজার, ঢাকা
০৭/০৫/২০২৪।
[এখানে পত্রিকার ঠিকানা সংবলিত খাম আঁকতে হবে]
0 Comments:
Post a Comment