তারিখ: ২৬শে আগস্ট, ২০২৪
বরাবর
সম্পাদক
দৈনিক ইত্তেফাক
কারওয়ান বাজার,
ঢাকা-১২০৫।
জনাব,
আপনার বহুল প্রচারিত পত্রিকার ‘চিঠিপত্র’ কলামে প্রকাশের জন্য ‘দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাই’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাঠাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্ববহ এ বিষয়টির উপযোগিতা বিচার করে আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করবেন বলে আশা করছি।
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাই
দুর্নীতি যেকোনো দেশ ও জাতির উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা। শাসনব্যবস্থাকে ক্রমশ দুর্বল করে দেয় দুর্নীতি। দুরারোগ্যে ব্যাধির মতো দুর্নীতি ধীরে ধীরে গ্রাস করে নেয় সবকিছু। দেশের সকল স্তরে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। প্রতিটি মানুষ দুর্নীতির চক্রে পড়ে নাকাল হয়। উচ্চস্তরের কর্তাব্যক্তিরা দুর্নীতিকে আশ্রয় করে নিশ্চিত জীবনযাপনের প্রয়াস চালায়। কিন্তু তাদের বিলাসিতার চরম মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির লোকেরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করে না। নীরব দর্শকের মতো তারা চুপ করে সহ্য করে যায় শোষণ ও নিপীড়ন। প্রকাশ্যে হোক কিংবা অপ্রকাশ্যে বাড়তি উপার্জনের আশায় প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। মেধার চেয়ে বর্তমানে অর্থই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে সব ক্ষেত্রে। কালো টাকার দৌরাত্ম্যে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। দুর্নীতির এমন নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে। আমাদের জাতীয় অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে দুর্নীতির কারণে। আমাদের নিশ্চুপ ও নীরব অবস্থান দুর্নীতিকে প্রতিনিয়ত প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজরা তাই সমাজকে কলুষিত করেই চলেছে।
দুর্নীতি দমনে নিচে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করা দরকর-
১. দুর্নীতির সথে জড়িত সকল প্রাসঙ্গিক ইস্যু মূল্যায়ন এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্য দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ নাগরিকদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। টাস্কফোর্স দুর্নীতি দমনের একটি বিশদ কর্মসূচি সুপারিশ করবে।
২. দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বেশি প্রয়োজন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা থাকতে হবে। তাদের সৎ ও আদর্শবান হতে হবে। দুর্নীতিবাজদের দল থেকে বের করতে হবে। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে। প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
৩. দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্নীতি হ্রাস পাবে। এর জন্য দরকার স্বাধীন বিচার বিভাগ। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়- সমাজে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হলে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে দুর্নীতির পরিমাণ কমে যাবে।
৪. বেসরকারি, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে সুষম বেতন কাঠামো এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে হবে।
৫. দুর্নীতি রোধে স্বাধীন গণমাধ্যম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের তথ্য অনুসন্ধান এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে গণমাধ্যম দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকার ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক ও নৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। কেননা নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি কখনো দুর্নীতির আশ্রয় নিতে পারে না। আর এসব দিক বিবেচনায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সকলের দৃঢ় অবস্থানই পারে বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। দুর্নীতির চক্রকে ভাঙতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাই সকলকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
বিনীত নিবেদক-
কাজী মামুনুর রশীদ
কামতা, ফেনী।
[এখানে পত্রিকার ঠিকানাসংবলিত খাম আঁকতে হবে]
0 Comments:
Post a Comment