১৯৪৭ সাল, ১৪ আগস্টঃ পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন তারিখে লর্ড মাইন্ট ব্যাটেন ভারত বিভাগের নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতি অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘ভারত স্বাধীনতা আইন’ পাস হয়। এই আইনের ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। পূর্ববঙ্গ তখন পূর্ব পাকিস্তানরূপে পাকিস্তানের একপি প্রদেশে পরিণত হয়।
১৯৪৭ সাল, ২ সেপ্টেম্বরঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল কাশেম কর্তৃক ‘তমদ্দুন মজলিশ’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা।
১৯৪৮ সাল, ২৩ ফেব্রুয়ারীঃ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত। কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ কর্তৃক প্রথম --- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব।
১৯৪৮ সাল, ২ মার্চঃ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরষদ গঠিত হয়।
১৯৪৯ সাল, ২৩ জুনঃ পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক সম্মেলনে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা।
১৯৫০ সালঃ লিয়াকত আলী খানের ঘোষণা ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা’। পূর্ব বাংলার জমিদারী প্রথা রহিতকরণ।
১৯৫২ সাল, ২৬ জানুয়ারীঃ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১৯৫২ সাল, ২১ ফেব্রুয়ারীঃ ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে গিয়ে ৮ জন শহীদ হন।
১৯৫৩ সাল, ৪ ডিসেম্বরঃ যুক্তফ্রন্ট গঠিত। যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে। বিরোধী দলগুলো হচ্ছে- আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নিজাম-ই-ইসলাম ও বাম গণতন্ত্রী দল।
১৯৫৪ সাল, ২ এপ্রিলঃ যুক্তফ্রন্টের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত। মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ১৪ জন। পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্র হলেন এ কে ফজলুল হক।
১৯৫৬ সাল, ২৩ মার্চঃ ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন ও পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
১৯৫৬ সাল, ২৪ মার্চঃ শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন।
১৯৬০ সালঃ আইয়ুব খান কর্তৃক মৌলিক গণতন্ত্র চালু হয়।
১৯৬৫ সালঃ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু।
১৯৬৮ সালঃ শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।
১৯৬৯ সাল, ২৫ মার্চঃ আইয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগ ও ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা লাভ। এরপর সামরিক শাসন জারি করা হয়।
১৯৭০ সাল, ২৮ মার্চঃ জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
১৯৭০ সাল, ১২ নভেম্বরঃ পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। কয়েক লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে।
১৯৭০ সাল, ৭ ডিসেম্বরঃ জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ফলাফলঃ আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসন (১৬৯টির মধ্যে) পায়। পিপিপি পায় ১৩৮ টির মধ্যে ৮৮টি।
১৯৭১ সালঃ
১১ মার্চঃ পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা সর্বত্র উত্তোলন করা হয়।
২৫ মার্চঃ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন।
২৬ মার্চঃ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
১০ এপ্রিলঃ মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা এবং প্রবাসী/অস্থায়ী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।
১৭ এপ্রিলঃ অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
৩ ডিসেম্বরঃ পাকিস্তান কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।
৬ ডিসেম্বরঃ ভারত সরকার কর্তৃক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান।
১৬ ডিসেম্বরঃ ৯৩ হাজার সৈন্য ও অস্ত্রসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণ।
পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যঃ
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেঃ কেন্দ্রীয় সচিব, গভর্নর জেনারেল, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী সহ বড় পদগুলোতে আসীন প্রায় সবাই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানী।
প্রশাসনিক ক্ষেত্রেঃ প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্তদের বেশীর ভাগই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানী।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেঃ পূর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয়ের অর্ধেক ছিল।
সামরিক ক্ষেত্রেঃ সামরিক বাহিনীতে চাকুরী প্রদান, প্রতিরক্ষা ব্যয়, প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর স্থাপন, প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানকে অনেকবেশী প্রাধান্য দেয়া হত।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেঃ পাকিস্তানের ৫৬.৪ শতাংশ মানুষ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রভাষা ছিলো ঊর্দু।
ভাষা আন্দোলনের প্রথম-দ্বিতীয়-শেষ পর্যায়ঃ
১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ‘তমদ্দুন মজলিশ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। ‘তমদ্দুন মজলিশের’ উদ্যোগে ১৯৪৭ সালে অক্টোবর মাসে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে অন্যান্য ভাষার সাথে অন্যতম রাষ্টবাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি উত্থাপন করেন। লিয়াকত আলী খান, নাজিম উদ্দীন প্রমুখ মুসলিম লীগ নেতা তাঁর প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেন। ফলে ১৯৪৮ সালেল ২৬ ফেব্রুয়ারী ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে বাংলা ভাষার সমর্থনে শ্লোগান দিতে থাকে। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রি লিয়াকত আলী খান ঘোষনা করেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে’। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী খাজা নাজিম উদ্দীনও এক জনসভায় একই ঘোষণা দেন। এতে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবি মহলে দারুণ হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৪ ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় ‘রাষটভাসা সংগ্রাম পরিষদ’ একটি সভায় ২১ ফেব্রুয়ারী প্রদেশব্যাপী এক সাধরণ ধর্মঘটের এবং ঐ দিন ভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবস্থা অনুধাবন করে ঢাকায় জেলা ম্যাজিস্টেট ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে ৩০ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রীরা সমবেত হয়। ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে বেলা ৩ টার দিকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পুলিশ প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং সে গুলিতে বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ, মোট ৮ জন শহীদ হন এবং অনেকে হন আহত। এতে সারা পূর্ব বাংলায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
ভাষা আন্দোলনের শহীদবৃন্দঃ
১. আবদুল জব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
২. আবুল বরকত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
৩. শফিউর রহমান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের ছাত্র এবং হাইকোর্টের কর্মচারী ছিলেন
৪. রফিক উদ্দিন, মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র
৫. আবদুস সালাম, পিয়ন।
৬. অহিউল্লাহ, শিশু শ্রমিক
৭. আবদুল আউয়াল, বালক (অনেকের মতে রিক্সা চালক)
৮. অজ্ঞাত বালক, অধিকাংশের মতে আখতারুজ্জামান বা আবদুর রহিম।
এক নজরে একুশে ফেব্রুয়ারীঃ
১. ভাষা সংগ্রামের উপর প্রথম কবিতা লেখেন কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী। প্রথম চরন-কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।
২. একুশের প্রথম নির্মিত শহীদ মিনারের নাম স্মৃতিস্তম্ভ।
৩. ভাষা আন্দোলনের সংকলন সম্পাদনা করেন হাসান হাফিজুর রহমান।
৪. আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি-এর রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, সুরকার- আলতাফ মাহমুদ।
৫. একুশের প্রথম নাটক কবর ১৯৫৩ সালের ৭ জুলাই মুনির চৌধুরী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাকালে রচনা করেন।
৬. একুশে কাহিনী অবলম্বনে প্রথম উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ রচনা করেন জহির রায়হান। Let there be lisht-প্রামান্য চিত্রের নির্মাতা তিনি।
৭. বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয় ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ২১ (৪) নং অনুচ্ছেদে।
৮. UNESCO ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
৯. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সেগুনবাগিচা, ঢাকায় অবস্থিত (২০০১ সালে তৈরী)।
১০. জীবন থেকে নেয়া-চলচ্চিত্রটি ভাষা আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
১১. জাতিসংঘ ২০০৮ সালের ০৫ জিসেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করে।
১২. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বর্ষ-২০০৮।
১৩. মোদের গরব-অখিল পাল (ভাষা শহীদদের ভাস্কর্য). অবস্থান-বাংলা একাডেমী।
পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ও রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ঃ
২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ পাকিস্তানের নতুন শাসনতন্ত্র গৃহীত হয়। ২৩ মার্চ ৫৬ শাসনতন্ত্র কার্যকর হয়। শাসনতন্ত্র অনুযায়ী পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। শাসনতন্ত্রে গভর্নর জেনারেলের পরিবর্তে প্রেসিডেন্টের শাসনবলবৎ করা হয়। এই সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। শেখ মুজিব ব্যতীত জাতীয় পরিষদের সকল সদস্য এ সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।
যুক্তফ্রন্ট গঠনঃ ১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক আইন পরিষদের মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২৩টি আসন লাভ করে।
পূর্ববাংলায় কেন্দ্রের শাসনঃ ১৯৫৪ সালের মে মাসে ৯২-ক ধারা অনুযায়ী পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয় এবং মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠানো হয়। হক সাহেব নিজ বাড়িতে অন্তরীণ হন। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন তারিখে ৯২-ক ধারা প্রত্যাহার করা হলে ফজলুল হকের মনোনীত প্রার্থী আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে নতুন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। মুসলিম লীগ ও যুক্তফ্রন্ট মিলিতভাবে চৌধুরী মুহম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১৯৫৫ সালের ১১ আগস্ট নতুন কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে।
আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলঃ ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি মৌলিক গণতন্ত্র নামে এক অভিনব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থামূলক ভোটে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান প্রণয়ন করে। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান বাধ্য হয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেন।
ছয় দফাঃ ১৯৬৬ সালে ৫-৬ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয়দফা উত্থাপন করেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারী মাসে শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে একটি মামলা দায়ের করে।
এগার দফাঃ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ১৯৬৯ সালের ৬ জানুয়ারী ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এগার দফা কর্মসূচী ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের ছয়দফা কর্মসূচী এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানঃ ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকের ধারাবাহিক ঘটনাবলি ১৯৬৯ সালের আন্দোলনকে একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয়। এ আন্দোলনে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামরিক অফিসার কর্তৃক নিহত হন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী ছাত্ররা শেখ মুজিবসহ আগরতলা মামলার সব আসামিকে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়াদী উদ্যান) এক গণসংবর্ধনা দান করে। ঐদিন তদানীন্তন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ জনতার পক্ষ থেকে শেখমুজিবকে ভূষিত করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন। ঐদিনই পাকিস্তানে জারি করা হয় সামরিক শাসন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনঃ ১৯৭০ সালের নিবৃঅচন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ও ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি (সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ) আসন লাভ করে।
৭ মার্চের ভাষনঃ শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন। তাঁর ভাষণ ছিল ১৮ মিনিটের। তিনি ভাষনে উল্লেখ করেন- “এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকঃ দেশের অচলাবস্থা নিরসনকল্পে ১৬ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠক কোন সমঝোতায় পৌছানো সম্ভব হয়নি।
অপারেশন সার্চ লাইটঃ ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেন। ঐদিনই শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয় এবং মধ্যরাতে ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা শুরু হয়। পাকিস্তানিদের এ গণহত্যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। ঐ দিন রাত ১১ টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রথম সেনা অভিযান শুরু হয়। আর প্রথম আক্রমণ করা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্বাধীনতার ঘোষণাঃ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তনি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার একটি লিখিত বাণী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ২৭ মার্চ শেখ মুজিবের পক্ষে মেজর জিয়া উক্ত স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতারঃ পাকবাহিনী ২৫ মার্চের ধম্যরাতে ঢাকা দখল করে নিলে ‘রেডিও পাকিস্তান’ এর ঢাকা কেন্দ্রও তাদের সম্পূর্ণ করতলগত হয়। এ পটভূমিতে চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাক সেনাবাহিনী ও ইপিআরের সশস্ত্র বাঙালি সদস্যর বিদ্রোহ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম শহর এবং কালুরঘাটে অবস্থিত এর আঞ্চলিক বেতারকেন্দ্রটি দখল করে নেন। এবং এর নাম দেয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতারকেন্দ্র’ এই বেতার কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন শামসুল হুদা চৌধুরী।
মুক্তিফৌজ ও মুক্তিবাহিনী গঠনঃ কর্ণেল এম. আতাউলগনি ওসমানীর নেতৃত্বে ৪ এপ্রিল সিলেটের তেলিয়াপাড়ার চাবাগানে মুক্তিফৌজ গঠন করা হয়। এটি ১৩ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত হয়, এর মধ্যে সামরিক সৈন্য ৫,০০০ জন। ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ মুক্তিফৌজকে মুক্তিবাহিনী নামকরণ করা হয়। মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম. এ. জি. ওসমানী (১২ এপ্রিল ঘোষণা দেয়া হয়।
অন্যান্য বাহিনীঃ
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীঃ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার মুজিব বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি মশস্ত্র বাহিনী গঠন করর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর-এর বাঙালি সৈনিকসহ শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনী গঠন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১১টি সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর পাশে থেকে বিভিন্ন জেলায় আক্রমণ পরিচালনা করে। (সেক্টর ও ফোর্স সম্পর্কে বিশদ জানতে হবে।)
বিএলএফ (মুজিব বাহিনী): ছাত্রনেতা শেখ জপলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে বিএলএফ (বেঙ্গল লিবারেশন ফ্রন্ট) নাম একটি রাজনৈতিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠে। বিএলএফ পরে মুজিব বাহিনী হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
কাদেরিয়া বাহিনীঃ বরিশালে গঠিত হয়েছিল হেয়ায়েত বাহিনী।
প্রবাসী সরকার গঠনঃ পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত অধিকাংশ সদস্য ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আগরতলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এ সরকারের সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল কুষ্ঠিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলারআম বাগানে এ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে এবং এম ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
পদবী ও নামঃ
রাষ্ট্রপতি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি: সৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী: তাজউদ্দিন আহ্মদ
অর্থমন্ত্রী: এম মনসুর আলী
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পূর্ণবাসনমন্ত্রী: এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান
পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী: মোশতাক আহম্মদ
মুক্তি বাহিনীর প্রধান: কর্ণেল আতাউল গানি ওসমানী
মুখ্যসচিব: রুহল কুদ্দুল
অপারেশন জ্যাকপটঃ বাংলাদেশের নৌপথে সৈন্য ও অন্যান্য সমর সরঞ্জাম পরিবহনের ব্যবস্থা বানচাল করার লক্ষ্যে জাহাজ ও নৌযান ধবংশ করাই ছিল অপারেশন জ্যাপটটের উদ্দেশ্য। ১৫ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের ২০ জনের নিয়ে জাহাজের তলদেশে লাগিয়ে দেয়। রাত ১-৪৫ মিনিটে বিকট শব্দে মাইনগুলো বিস্ফোরিত হলে সবগুলো জাহাজ ধবংশ হয়ে যায়।
মিত্রবাহিনী গঠনঃ ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী গঠিত হয় যার প্রধান ছিলেন লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডঃ পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরগণ দেশকে মেধামূন্য করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সৃতি সন্তানদের হত্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে নিরস্ত্র অবস্থায় বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে প্রথিতযশা ডাক্তার, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবিসহ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। এদের অধিকাংশকেই রায়েববাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়।
চুড়ান্ত বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জনঃ ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকবাহিনী বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে। এসময় যৌথবাহিনীও ঢাকার খুব কাছে চলে আসে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য ও অস্ত্রসহ যৌথবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোবার নিকট আত্মসমর্পণ কলে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ডেপুটি চীফ অব স্টাফ এয়ার কমোডর এ. কে. খন্দকার আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
Very nice
ReplyDelete