HSC সিরাজউদ্দৌলা নাটক (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র নাটক গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sirajuddaula Natok Srijonshil Question and Answer. Sirajuddoula Natok Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. HSC Sirajuddaula Natak (Srijonshil) creative questions answers pdf download.

বাংলা সহপাঠ নাটক
সিরাজউদ্দৌলা
সিকান্দার আবু জাফর

সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
ক. কোম্পানির ঘুষখোর ডাক্তার কে?
খ. ‘ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিক ভাব ধারণ করেছে মাত্র”- মূল্যায়ন কর।

১নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কোম্পানির ঘুষখোর ডাক্তার হলওয়েল।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাব সিরাজের কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি প্রশ্নের বক্তব্যে প্রকাশিত হয়েছে।

✍ সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তার আত্মীয় তথা কাছের মানুষগুলো তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে শুরু করে। তার সাথে যোগ দেয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা। প্রত্যেকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে নবাবের পতন কামনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় নবাবের খালা ঘসেটি বেগম, সেনাপতি মিরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ প্রমুখরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বোনে। এবং নবাবের পতনকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে স্ত্রীর কাছে নবাব সিরাজ উক্তিটি করেছেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ শেখ মুজিবুর রহমানের দেশপ্রেম নাটকের নবাব সিরাজের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ পিতা জয়নুদ্দিন ও মাতা আমিনা বেগমের জৈষ্ঠ্য পুত্র সিরাজ ছিলেন বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দি খাঁর নয়নের মণি। তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা, দৃঢ়চেতা ও দেশপ্রেমিক যুবক। প্রজ্ঞা ও কর্তব্যপরায়ণয়তা, তেজস্বীতা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে অনন্যতা দান করেছে।

✍ উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন দেশপ্রেমিক নেতা। দেশ ও দেশের মানুষকে তিনি অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি আজ স্বাধীন ভূ-খণ্ড পেয়েছে। এজন্যে দেশে যতদিন পদ্মা মেঘনা, যমুনা, গৌরী নদী প্রবাহিত হবে ততদিন বাঙালি জাতি তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। নাটকের নবাব সিরাজও ছিলেন এমনই একজন দেশপ্রেমিক নেতা। তিনি এদেশের মাটিকে, মানুষকে, প্রকৃতিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তিনি কোনো কিছুর বিনিময়ে স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিতে চাননি। বিদেশি ইংরেজরা প্রজাদের উপর পীড়ন করলে সেটা কঠোর হাতে দমন করেছেন। জীবনের শেষ বেলাতেও তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালির মঙ্গল কামনা করে গেছেন।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিক ভাব ধারণ করেছে মাত্র।” - কথাটি সত্যি।

✍ ঐতিহাসিক নাটকের চরিত্র চিত্রণে নাট্যকারের সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সিকান্দার আবু জাফর নীতিকে লঙ্ঘন না করে সিরাজ চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ শিল্প নৈপুণ্যে।

✍ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার প্রাণের পুরুষ। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি বাংলাকে স্বাধীন করেছে দখলদার পাকিস্তানিদের হাত থেকে। তিনি জীবনভর চেয়েছেন বাংলা ও বাঙালির সমৃদ্ধি। তাই তিনি মরে গিয়েও বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে আছেন। যতদিন পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান থাকবে ততদিন বাঙালি মহান দেশনেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধুর এই দেশপ্রেমের বিষয়টি নাটকের নবাব সিরাজের মাঝে উপস্থাপিত হয়েছে বটে তবে এটিই নাটকের একমাত্র দিক নয়।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি ঐতিহাসিক পটভূমিতে রচিত হলেও এখানে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও চেতনা সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। নাট্যকার এদেশের অতীত ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন তাঁর নাটকের মাধ্যমে। এখানে ইংরেজদের আচরণ, কৌশল ও শোষণ নীতি, নবাবের আত্মীয়দের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা, নবাবের পরাজয় ও করুণ মৃত্যু, ইংরেজদের পুতুল সরকার হিসেবে মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ বিষয় উঠে এসেছে যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। এজন্যে প্রশ্নের বক্তব্যটি সত্য বলে মনে হয়।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মনে হয় সিরাজ-চরিত্রের দুর্বলতাটুকু নাট্যকার জাতীয় বীরের চরিত্র থেকে সযত্নে বিসর্জন দিয়েছেন। সিংহাসন পাবার পর সিরাজ-চরিত্রের আমূল পরিবর্তন দেখা যায়। সেই পরিবর্তিত স্বাধীনতা পিয়াসী বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার চরিত্রই গিরিশচন্দ্র ঘোষ গভীর সহানুভূতি ও নিবিড় শ্রদ্ধার সঙ্গে অঙ্কিত করেছেন। ষড়যন্ত্র-লোলুপ ক্ষমতাপিপাসু অমাত্যবর্গের ঘৃণ্য মন্ত্রণা ও বিদ্রোহী মনোবৃত্তি সিরাজের অন্তর বিক্ষুব্ধ করে তুলল।
ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে প্রধান-অপ্রধান মিলে মোট কতটি চরিত্র রয়েছে?
খ. “সিরাজউদ্দৌলা’ একটি ঐতিহাসিক নাটক”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সিরাজ-চরিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের সমালোচনাটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নাট্যকারের কাছে পূর্ণতা পেয়েছে।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

২নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে প্রধান-অপ্রধান মিলে মোট ৪০টি চরিত্র রয়েছে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি ঐতিহাসিক, কারণ ইতিহাসকে আশ্রয় করে এটি রচিত হয়েছে।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ঐতিহাসিক সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। ইংরেজদের এদেশে আগমন, বাণিজ্যের প্রসারতা এবং এদেশের নবাবের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ, সিরাজের সিংহাসন আরোহণ, ষড়যন্ত্রের জালে আটক হওয়া, ইংরেজদের সাথে সংঘর্ষ এবং শেষ পর্যন্ত পরাজিত হওয়া নাটকের প্রধান বিষয়বস্তু। ইতিহাসের প্রতি নিষ্ঠা রেখে নাট্যকার নানা ঐতিহাসিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে এটি রচনা করেছেন। তাই এটিকে ঐতিহাসিক নাটক বলা যায়।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের সিরাজ চরিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পূর্ণভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, প্রজাবৎসল নেতা। তার চারিত্রিক দৃঢ়তা, মানবিক গুণাবলি, কর্তব্যনিষ্ঠা তাঁকে মহিমান্বিত করেছে। তাঁর পরাজয়ের সাথে সাথে প্রায় দুশো বছরের জন্যে বাংলার তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।

✍ উদ্দীপকের সিরাজ চরিত্রের বৈশিষ্ট্যে আমরা অবলোকন করি নাট্যকার তাঁর চরিত্রের সমস্ত দুর্বলতা বিসর্জন দিয়ে বীরের গুণাবলি দ্বারা ভরিয়ে তুলেছেন। তাঁকে স্বাধীনতাপিয়াসী দেশ নেতা হিসেবে অঙ্কিত করেছেন নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। সিকান্দার আবু জাফরও তার্ঁ নাটকে সিরাজ চরিত্রটিকে গভীর সহানুভূতি ও অসামান্য শিল্প সৌন্দর্যে অঙ্কিত করেছেন। একজন মহান বীরের যাবতীয় গুণাবলি তিনি সিরাজ চরিত্রে অঙ্কন করেছেন। উভয় ক্ষেত্রে এখানেই সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের সমালোচনাটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে পূর্ণতা পেয়েছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ “বিভিন্ন বাঙালি নাট্যকার বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে বিভিন্ন গুণ-বৈশিষ্ট্যে নায়ক চরিত্রে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর চরিত্রে একদিকে ঔদার্য ও কোমলতা অন্যদিকে বীরত্বব্যঞ্জক মনোভাবের সম্মিলন দেখা যায়।

✍ উদ্দীপকের সমালোচকের বর্ণনায় দেখা যায় নাট্যকার সিরাজ চরিত্রের ঐতিহাসিক দুর্বলতাটুকু সযত্নে বিসর্জন দিয়েছেন। সিংহাসন লাভ করার পরে সিরাজ চরিত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটান। তাঁকে স্বাধীনতাপিয়াসী বাংলার শেষ নবাব হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন নাট্যকার গভীর সহানুভূতি ও নিবিড় শ্রদ্ধার সঙ্গে। নাট্যকারের এই মনোভাবটি যেন পূর্ণতা পেয়েছে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নাট্যকার সিকান্দার আবু জাফরের কাছে।

✍ নাট্যকার সিকান্দার আবু জাফর সিরাজউদ্দৌলাকে বীরের মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। জাতীয় চেতনাকে নতুন খাতে প্রবাহিত করে তিনি চরিত্রটিকে মহিমান্বিত করে তুলেছেন তাঁর নাটকে। ইতিহাসের বিভ্রান্তি এড়িয়ে ঐতিহ্য এবং প্রেরণার উৎস হিসেবে সিরাজকে তিনি নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন। ধর্ম ও নৈতিক আদর্শে সিরাজের যে অকৃত্রিম বিশ্বাস, তার চরিত্রের দৃঢ়তা এবং মানবীয় গুণাবলিকেই নাট্যকার তাঁর নাটকে তুলে ধরেছেন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বাঙালি শুধু লাঠি দিয়েই দেড়শত বছর আগেও তার স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে চেষ্টা করেছে। আজ বাংলার ছেলেরা স্বাধীনতার জন্য যে আত্মদান করেছে, যে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, ইতিহাসে তা থাকবে স্বর্ণ-লেখায় লিখিত। বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান। হেথায় লক্ষ লক্ষ যোগী মুনি ঋষি তপস্বীর পীঠস্থান, সমাধি; সহস্র ফকির-দরবেশ-অলি- গাজির দরগা পরম পবিত্র। হেথায় গ্রামে হয় আজানের সাথে শঙ্খঘণ্টার ধ্বনি। এখানে যে শাসনকর্তা হয়ে এসেছে সেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। বাংলার আবহাওয়ায় আছে স্বাধীনতা-মন্ত্রের সঞ্জীবনী শক্তি। আমাদের বাংলা নিত্য মহিমাময়ী, নিত্য সুন্দর, নিত্য পবিত্র।
[সূত্র: বাঙালির বাংলা-কাজী নজরুল ইসলাম]
ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মোট কতটি দৃশ্য রয়েছে?
খ. ‘যুদ্ধ বন্ধ করবার আদেশ দিন, ক্যাপ্টেন ক্লেটন।’ ওয়ালী খান কেন যুদ্ধ বন্ধ করার অনুরোধ করেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন ভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. “উদ্দীপকটির ভাব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটিমাত্র ভাবকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র, সম্পূর্ণ ভাবকে নয়।” যথার্থতা বিচার কর।

৩নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মোট ২২টি দৃশ্য রয়েছে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ইংরেজদের পক্ষে লড়াইরত বাঙালি সৈনিক নবাব সৈন্যের ক্ষিপ্রতা ও ক্ষমতা আঁচ করতে পেরে যুদ্ধ বন্ধ করার অনুরোধ করেন।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন ইংরেজদের উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্যে। আক্রমণের তীব্রতায় ইংরেজদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এবং পরাজয় নিশ্চিত জেনে ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধরত বাঙালি সৈন্য ওয়ালী খান ক্যাপ্টেন ক্লেটনকে যুদ্ধ বন্ধ করার অনুরোধ করেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বর্ণিত বাঙালির স্বাধীনতাপিয়াসী চেতনা ও এদেশের অপার সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ বাংলার রূপ চিরন্তন। এদেশের প্রকৃতির মতোই এদেশের মানুষের হৃদয় কোমল। কিন্তু তারা যখন দেশমাতৃকার অসম্মান দেখে তখনই কঠিন হয়ে দেশের সম্মান রক্ষা করার জন্যে জেগে ওঠে। অসীম সাহসে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে।

✍ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে চিরন্তন বাংলা ও বাঙালির চেতনার কথা। বাঙালি শুধু লাঠি দিয়েই দেড়শত বছর আগে স্বাধীনতাকে রক্ষার চেষ্টা করেছে। দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে আত্মদান করেছে। উদ্দীপকের এই ভাবটি পরিলক্ষিত হয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথমেই। সেখানে বলা হয়েছে এক স্বাধীন বাংলা থেকে আর এক স্বাধীন বাংলায় আসতে বাঙালিকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নবাব সিরাজের জীবনের মর্মন্তুদ কাহিনী আমাদের আলোড়িত করে। যিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে জীবনে করুণ পরিণতির শিকার হন। এভাবটিই উদ্দীপকে উঠে এসেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটিমাত্র ভাবকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র, সম্পূর্ণ ভাবকে নয়।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ দেশমাতৃকার প্রশ্নে বাঙালি সবদিনই আপোষহীন। যে-কোনো মূল্যে দেশের সম্মান রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। বাঙালির অতীতের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস আমাদের এই তথ্যই প্রদান করে।

✍ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে বাংলার অপরিমেয় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সম্পদের কথা। আছে বাঙালির সাহসের কথা। এরা শুধু লাঠি দিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করেছে। এদেশের আবহাওয়ায় আছে স্বাধীনতা-মন্ত্রের সঞ্জীবনী শক্তি। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বাঙালির এই বৈশিষ্ট্য অঙ্কনের পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় অঙ্কিত হয়েছে।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বর্ণিত হয়েছে এদেশের সম্পদের মোহে ইংরেজদের আগমন, অবস্থান, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা, বাংলার নবাবের সাহসিকতা এবং ষড়যন্ত্রের ফলে আটকা পড়ে জীবনের করুণ পরিণতির কথা। এ বিষয়গুলোর শুধু বাংলার সম্পদ ও বাঙালির সাহসের দিকটি ছাড়া উদ্দীপকে অন্য সব বিষয় অনুপস্থিত। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কদমতলী ও শিমুলতলী গ্রাম দুটির মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাঁধে। কদমতলীর লোকজন অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও নিরীহ শিমুলতলী গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি লুট করতে আসে। শিমুলতলী গ্রামের লোকজন একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে কদমতলীর দখলদাররা সিংহের মতো হুংকার দিলেও প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। শিমুলতলীর আতা খাঁ মন্তব্য করেন কদমতলীরা সিংহ হয়ে এসে বিড়াল হয়ে পালিয়ে গেছে।
ক. কে দুর্গে সাদা নিশান ওড়াতে বলে গেল?
খ. ‘আমি সব খবর রাখি হলওয়েল’- সিরাজ এ উক্তিটি কেন করেছেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি খণ্ডাংশের ধারক মাত্র।” যথার্থতা বিচার কর।

৪নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ জর্জ দুর্গে সাদা নিশান ওড়াতে বলে গেল।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ইংরেজদের সব অপকর্মের কথা জানতে পেরেছেন নবাব সিরাজ কিন্তু হলওয়েল সেটা অস্বীকার করলে নবাব উক্ত উক্তিটি করেন।

✍ ইংরেজদের কাশিমবাজারে অস্ত্র আমদানি, প্রজাদের প্রতি অত্যাচার, নবাবের নির্দেশ অমান্য করা প্রভৃতি কারণে নবাব ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন এবং ইংরেজদের পরাজিত করেন। সেখানে উপস্থিত ইংরেজদের ঘুষখোর ডাক্তার হলওয়েলের কাছে এসব অপকর্মের কৈফিয়ত চাইলে সে নবাবের সামনে এসব অস্বীকার করে। জবাবে নবাব উক্ত কথাটি বলেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাবের সৈন্যের সাথে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ইংরেজদের যুদ্ধের ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ ইংরেজরা এদেশে ব্যবসা করার নাম করে আসলেও ক্রমে তারা তাদের আধিপত্যের জাল বিস্তার করার কাজে মনোনিবেশ করে এবং এক পর্যায়ে ছলে বলে কৌশলে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় দখলদার কদমতলী গ্রামবাসীর সাথে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিমুলতলী গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলে দখলদারদের গুটিয়ে দেয়। কদমতলীর লোকজন ক্ষমতার বড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়ে বিতাড়িত হয়। এমনই চিত্র দেখি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে যুদ্ধের সময় ইংরেজ সেনাদের অনেক বড়াই দেখি কিন্তু নবাব সৈন্যের ক্ষিপ্রতা ও শক্তির সামনে তারা দাঁড়াতে না পেরে পলায়ন করে জাহাজে আশ্রয় নেয়। উভয় স্থানে এই বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি খণ্ডাংশের ধারক মাত্র।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ইংরেজরা এদেশে বাণিজ্য করতে এসে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। নিজেদের ক্ষমতা লোভী মনোভাব আস্তে আস্তে প্রকাশ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা এদেশ শাসন করার স্বপ্ন দেখে এবং কালের বিবর্তনে তাদের সেই স্বপ্ন সফল হয়।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় ইংরেজদের দখলদারী চেহারার প্রতিরূপ কদমতলী গ্রামের লোকজনদের মাঝে। তারা শিমুলতলী গ্রামে হামলা চালায় লুটপাট করার জন্যে। এবং এক পর্যায়ে তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকের এই ঘটনাটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দখলদারী ইংরেজদের সাথে নবাব সেনাদের যুদ্ধের বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়।

✍ নাটকে এই ঘটনার চিত্র অঙ্কনের পাশাপাশি আরও অনেক চিত্র উঠে এসেছে। যেমন- পরাজয়ের পর ইংরেজদের কৌশলগত পরিবর্তন, নবাবের পরিজনদের সাথে সখ্যতা স্থাপন করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা, নবাব সেনাদের বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মীয়-পরিজনদের ষড়যন্ত্র, নবাবের পতন, বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের পুতুল নবাব হওয়া প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে যা উদ্দীপকে আলোচিত হয়নি। তাই বলা যায় উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি খণ্ডাংশের ধারক মাত্র। মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
নজীব্: তুমি বরাবরের মতোই অবুঝ! আর কি ফেরবার জো আছে, জরিনা? ঘরে বসে থাকবো কী করে? আমরা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি।
জরিনা: যুদ্ধ শুরু হবে কাল রাতে। আপনি আজ বেরুচ্ছেন কেন? . . . . . . . . . . .
নজীব: আমার নিজস্ব বাহিনীর একটু তদারক করা দরকার। . . . . . . . . .
জরিনা: অন্য কেউ যাক। আপনি আমার তদারক করুন। আমাদের জাগিয়ে রাখুন। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে যান। . . . . . . . .
নজীব: কী করতে বলো?
জরিনা: আমার কাছে থাকুন। আমার সামনে ঘুমোন। আমি বসে বসে দেখি।
[সূত্র: রক্তাক্ত প্রান্তর - মুনীর চৌধুরী।]
ক. ইংরেজদের পক্ষে কতজন সৈন্য ছিল?
খ. ‘সমস্ত দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে আমার কাছে দু একদিন বিশ্রাম করুন।’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের জরিনা চরিত্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের লুৎফার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিক ভাবের ধারক।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

৫নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ইংরেজদের পক্ষে তিন হাজার সৈন্য ছিল।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে তার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলার চারদিকে ষড়যন্ত্রের দেয়াল উঠেছে। আত্মীয় পরিজন এবং নিজের অমাত্যবর্গের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাস-ঘাতকতায় তিনি ক্লান্ত। তার চারদিকে বিপদ ঘনিয়ে এসেছে বুঝতে পেরে সিরাজ বিচলিত। নিজের সেনাপতিও তার পক্ষে যুদ্ধ করবে কিনা তিনি নিশ্চিত নন। তার এই বিচলিত ভাব দেখে তাকে দুশ্চিন্তা করতে দেখে তার প্রেমময়ী স্ত্রী লুৎফুন্নেসা তাকে উক্ত কথাটি বলেন। যাতে স্বামীর প্রতি সহানুভূতি, প্রেরণা এবং ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের জরিনা চরিত্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের লুৎফা চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ নারীর ভালোবাসা পুরুষকে উন্নত, মহান, মহিমান্বিত করে। কোনোদিন কোনো কালে পুরুষ একা কোনো কিছু করতে পারেনি। সেখানে প্রেরণা, সাহস, শক্তি দিয়েছে নারীরা।

✍ উদ্দীপকের জরিনা স্নেহময়ী প্রেমময়ী একজন নারী। যে স্বামীর অমঙ্গল চিন্তায় সদা চিন্তিত থাকেন। স্বামী যাবেন যুদ্ধে তার আগে বিশ্রাম নিতে অনুরোধ করেন তিনি। তিনি চান স্বামী তার কাছে থেকে সমস্ত ক্লান্তি দূর করেন। জরিনার এই মনোভাব লক্ষ করি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের লুৎফা চরিত্রে। তিনিও নবাবের দুশ্চিন্তার মুহূর্তে নবাবকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতে চান। তাইতো তিনি নবাবকে তার কাছে একটি রাত বিশ্রাম করার অনুরোধ করেন। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিকভাবে ধারক।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ পুরুষ ও নারী একে অন্যের পরিপূরক। তারা দুজনে মিলেই এই সৃষ্টিকে ধরে রেখেছে। এই মানব সভ্যতা নির্মাণে একে অন্যকে সাথে নিয়েই পূর্ণতা দান করেছে। সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা একাত্ম হয়ে জগৎ-সংসারকে মহিমান্বিত করেছে।

✍ উদ্দীপকের জরিনার স্বামীর প্রতি ভালোবাসা এবং সহমর্মিতার পরিচয় আমরা পাই। তিনি চান তার স্বামী তার কাছে থেকে সমস্ত ক্লান্তি দূর করেন। কাজের নতুন উদ্দীপনা পান। যুদ্ধের ময়দান থেকে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসেন। উদ্দীপকের এই ভাবটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি মাত্র দিক।

✍ এ দিকটি ছাড়াও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বর্ণিত হয়েছে উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমন, এদেশে তাদের স্বার্থের শিকড় গাঁথা, নবাবের বিরুদ্ধে তার আত্মীয় পরিজনদের ষড়যন্ত্র। স্ত্রীর প্রতি নবাবের ভালোবাসা, স্ত্রী লুৎফার স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রেম, পলাশী যুদ্ধ, সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা, সর্বোপরি নবাবের পরাজয় এবং নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ, বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ, ইংরেজদের সাথে সখ্যতা ইত্যাদি বিষয় অঙ্কিত হয়েছে। উদ্দীপকে শুধু নবাব সিরাজের প্রতি স্ত্রী লুৎফার ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহমর্মিতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কহিলা বীরেন্দ্র বলী, “ধর্মপথগামী
হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে
তুমি’ কোন ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি, -এ সকলে দিলা
জলাঞ্জলি? শাস্ত্রে বলে, গুণবান যদি
পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ
ক. মিরজাফর কোথা থেকে ভারতবর্ষে আসেন?
খ. ‘আপনাদের দেশে আবার শান্তি আসলো’-ক্লাইভ এ কথা কেন বলেছে?
গ. উদ্দীপকের রাক্ষসরাজানুজ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিক ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

৬নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ মিরজাফর পারস্য দেশ থেকে ভারতবর্ষে আসেন।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ মিরজাফর মসনদে বসার পর ক্লাইভ মিরজাফরকে খুশি করার জন্য উক্তিটি করে।

✍ অমাত্যবর্গ, সেনাপতি ও আত্মীয় পরিজনের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে নবাব সিরাজের পরাজয় ঘটে এবং বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মিরজাফর বাংলার মসনদে বসেন। নতুন নবাবকে উপঢৌকনসহ অভিবাদন জানাতে এসে সুচতুর ক্লাইভ বলে স্বৈরাচারী নবাবের পতনের পর নতুন শাসকের আগমনে বাংলায় আবার শান্তি ফিরে আসল।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের রাক্ষসরাজানুজ অর্থাৎ ‘বিভীষণ’ প্রতিনিধি।

✍ সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দ্বিধাবোধ করে না। তারা নরকের কীটেরও অধম। অথচ এমন মানুষেই জগৎ-সংসার ভরে আছে। পৃথিবী আজ তাদের পদভারে প্রকম্পিত।

✍ উদ্দীপকের রাক্ষসরাজানুজ অর্থাৎ ‘রামায়ণ’ কাব্যের বিভীষণকে কবি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উত্থাপন করেছেন। যিনি নিজের জ্ঞাতি, ভাই, জাতি সকল কিছুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে পরদেশি রাজের পক্ষে যোগ দেয়। এবং রামের বিজয়কে ত্বরান্বিত করে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মিরজাফরও একজন বিশ্বাসঘাতক। তিনি প্রধান সেনাপতি হয়েও যুদ্ধের ময়দানে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং নবাব সিরাজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁর পরাজয় ঘটান। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিক ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ মানুষ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকে। একে অন্যকে বিশ্বাস করে মানুষ স্বাভাবিকভাবে টিকে আছে। বিশ্বাস তাই মানুষের মহৎ গুণাবলির মধ্যে একটি। বিশ্বাসযোগ্য মানুষ সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে থাকেন। আর বিশ্বাস ভঙ্গকারীকে সবাই ঘৃণা করে।

✍ উদ্দীপকে একজন বিশ্বাসঘাতকের প্রতি ধিক্কার জানানো হয়েছে। তার কাছে জ্ঞাতি, ভ্রাতা, সর্বপোরি জাতির কোনো মূল্যায়ন হয়নি। নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে সে পরদেশি হানাদারদের পক্ষ নেয় এবং নিজ ভাইয়ের পরাজয়কে ত্বরান্বিত করে। উদ্দীপকের এই বিষয়টি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি দিককে নির্দেশ করে।

✍ নাটকে এই বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্রের বিষয়ের পাশাপাশি উঠে এসেছে এদেশে ইংরেজদের আগমন, তাদের উদ্দেশ্য, এদেশের মানুষের প্রতি অত্যাচার, নবাবের পারিষদ এবং আত্মীয়দের হাত করে ক্ষমতা লাভ, এবং একজন দেশপ্রেমিক শাসকের পরাজয় ও করুণ পরিণতি। উদ্দীপকে শুধু বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি ছাড়া অন্যান্য বিষয় অনুপস্থিত। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মোহনলাল: শুনলাম আজ এখানে ভারী জলসা হচ্ছে। বহু গণ্যমান্য লোক উপস্থিত আছেন। তাই খোঁজ নিতে এলাম।
মিরন: সেনাপতি মোহনলাল, আপনার দুঃসাহসের সীমা নেই। আমার প্রাসাদে কার অনুমতিতে আপনি প্রবেশ করেছেন?
মোহনলাল: প্রয়োজন মতো যে কোনো জায়গায় যাবার অনুমতি আমার আছে। সত্য বলুন এখানে গুপ্ত ষড়যন্ত্র হচ্ছিল কিনা?
মিরন: মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন সেনাপতি। জানেন এর ফল কী ভয়ানক হতে পারে? নবাবের সঙ্গে আব্বার সমস্ত গোলমাল সেদিন প্রকাশ্যে মিটমাট হয়ে গেল। নবাব তাঁকে বিশ্বাস করে সৈন্য পরিচালনার ভার দিয়েছেন। আর আপনি এসেছেন আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপবাদ নিয়ে। আমি এখুনি আব্বাকে নিয়ে নবাবের প্রাসাদে যাব।
মোহনলাল: প্রতারণার চেষ্টা করবেন না। (তরবারি কোষমুক্ত করল) আমার গুপ্তচর ভুল সংবাদ দেয় না। সত্য বলুন, কী হচ্ছিল এখানে? কে কে ছিল মন্ত্রণাসভায়?
ক. ‘আমার গুপ্তচর ভুল সংবাদ দেয় না।’ কথাটি কে বলেছেন?
খ. মোহনলাল কেন মিরনের জলসা ঘরে প্রবেশ করেন?
গ. উদ্দীপকের মোহনলাল এবং মিরনের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “সিরাজউদ্দৌলার আত্মীয় এবং পারিষদগণ মোহনলালের মতো বিশ্বাসী এবং দায়িত্বশীল হলে সিরাজকে অমন করুণ পরিণতির শিকার হতে হতো না।” মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৭নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কথাটি বলেছেন নবাবের অন্যতম বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলাল।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ তিনি খবর পেয়েছিলেন যে মিরন তার জলসা ঘরে বসে অন্যান্যদের সাথে ষড়যন্ত্র করছেন নবাবের বিরুদ্ধে তাই তিনি মিরনের জলসা ঘরে প্রবেশ করেন।

✍ মিরজাফরের পুত্র মিরন, মিরজাফর, ক্লাইভ, জগৎশেঠ প্রমুখ মিলে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কীভাবে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায় সেই ফন্দি তারা আটতে থাকে। গুপ্তচরের কাছে এই খবর পেয়ে নবাব সিরাজের অন্যতম বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলাল মিরনের জলসা ঘরে প্রবেশ করে তাদের ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া বানচাল করে দেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের মোহনলাল এবং মিরনের চরিত্রের ব্যাপক বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

✍ সুন্দর চরিত্র মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। বিশ্বস্ততা মানুষের সুন্দর চরিত্র গঠনের একটি অনিবার্য বিষয়। যে ব্যক্তি অপরের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারে না সে কখনোই সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হতে পারে না। বিশ্বাসঘাতককে কখনোই সুন্দর বা সুস্থ চরিত্রের লোক বলা যায় না।

✍ উদ্দীপকের মোহনলালের বিশ্বস্ততা আমাদের মুগ্ধ করে। নবাবের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। এজন্যে তিনি নবাবের কোনো ক্ষতি হতে দিতে চান না। তাই তিনি গুপ্তচরের মুখে খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন তার বিরুদ্ধে ঘটিত ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করতে। অপরপক্ষে মিরন একজন বিশ্বাসঘাতক মানুষ। সে এদেশের মানুষ হয়ে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ইংরেজদের সাথে হাত মেলায়। নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে আপন দেশের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিতে কুণ্ঠিত হন না এমনকি তার পিতার আশ্রয় দানকারীদের ধ্বংস করতে বুক কাঁপে না। উভয় চরিত্রের বৈসাদৃশ্য এখানেই।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “সিরাজউদ্দৌলার আত্মীয় পারিষদরা সেনাপতি মোহনলালের মতো বিশ্বাসী এবং দায়িত্বশীল হলে সিরাজকে এমন করুণ পরিণতির শিকার হতে হতো না।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ মানুষ যখন ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ হয় তখন নিজের অসীম সাহস বা শক্তি থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। তার বিপদ পদে পদে সংঘটিত হয়। এমনই অবস্থায় পতিত হতে দেখি সিরাজউদ্দৌলাকে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় নবাব সিরাজের পতনের জন্যে তাঁরই পারিষদরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলালকে এখানে দেখা যায় নবাবের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং দায়িত্ববোধে তিনি ছুটে আসেন ষড়যন্ত্রকারীদের মন্ত্রণাসভায়। মিরজাফরের পুত্র মিরন বিদেশি ইংরেজ এবং নিজ দেশের কিছু বিপথগামী মানুষদের নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন।

✍ মোহনলালকে দেখি তাদের সেই মন্ত্রণাসভাকে ভণ্ডুল করতে তরবারি হাতে ছুটে আসতে। তিনি প্রাণপণে চান নবাবের তথা এই দেশের কল্যাণ। এই মোহনলালের মতো বিশ্বাসী ও দায়িত্বশীল যদি নবাবের অন্যান্য পারিষদরা হতেন তবে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে এমন করুণ পরিণতি মেনে নিতে হতো না। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ এবং হুগলী নদীর উপর আধিপত্য বিস্তারের মধ্য দিয়ে সতের শতকের শেষ প্রান্তে ইংরেজ কোম্পানি এদেশে যে শক্তির ভিত রচনার স্বপ্ন দেখেছিল পলাশী যুদ্ধে বিজয় অর্জন ছিল তারই অযৌক্তিক পরিণতি। এর তাৎপর্য নিয়ে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করে পলাশীর পরাজয়কে জাতীয় গ্লানি মনে না করে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্যে মহিমান্বিত ‘সূর্য-উদয়কাল’ ভাবলেও ভাবতে পারেন।
ক. কে কলকাতার নাম আলীনগর রাখেন?
খ. নবাব সিরাজ প্রত্যেকটি ইংরেজের সমস্ত সম্পত্তি কেন বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিলেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের লেখক ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বর্ণিত ইংরেজদের নীতি ও কৌশলকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।” -মন্তব্যটি বিচার কর।

৮নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কলকাতার নাম আলীনগর রাখেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ এদেশের সাধারণ নাগরিকের উপর জুলুম, অত্যাচার এবং নবাবকে না জানিয়ে দুর্গে শক্তি বৃদ্ধির কারণে নবাব সিরাজ প্রত্যেকটি ইংরেজের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিলেন।

✍ কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ জয় করার পর নবাব সিরাজ সেখানে অবস্থানরত ইংরেজদের বন্দি করেন। ইংরেজদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ইংরেজদের অবস্থানগুলো কামানের গোলায় উড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেন। এবং এদেশের সাধারণ মানুষকে নির্দেশ দেন ইংরেজদের সাথে কোনো প্রকার সওদা না করার জন্যে। ফিরিঙ্গি পাড়ায় আগুন ধরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন এবং ইংরেজদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের এদেশে এসে বাণিজ্য করার নামে আধিপত্য বিস্তারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ ইংরেজ জাতি নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে যে কোনো কাজে তারা নামতে পারে। এটা তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে তাদের এই বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়ে। উদ্দীপক এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজ চরিত্রের এ ভাবটি আলোচিত হয়েছে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ইংরেজ জাতি সতের শতকে এদেশে শক্তির ভিত রচনা করে এদেশকে শাসন করার স্বপ্ন দেখে। এবং সেটা ত্বরান্বিত হয় পলাশী যুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে। উদ্দীপকের এই বিষয়টি উঠে এসেছে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। সেখানে দেখা যায় ইংরেজরা এদেশের বিভিন্ন দুর্গে শক্তি বৃদ্ধিপূর্বক এদেশের সাধারণ জনগণের উপর নানা প্রকার শোষণ নির্যাতন করতে করতে সবার মনে ভীতি সঞ্চার করে। এক সময় ছলে বলে কৌশলে এদেশের শাসন ব্যবস্থাকে হস্তগত করে যা উদ্দীপকের বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের লেখক ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বর্ণিত ইংরেজদের নীতি ও কৌশল তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ইংরেজরা এদেশে বাণিজ্য করার নাম নিয়ে আসলেও ক্রমে তারা এদেশে শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। এক পর্যায়ে এদেশ শাসনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তাদের নীতি ও কৌশল প্রয়োগ করে এদেশে তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়।

✍ উদ্দীপকে আলোচিত হয়েছে ইংরেজদের নীতি ও কৌশলের দিকটি। এখানে দেখা যায় প্রথমে হুগলী নদীর তীরে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণ, সেখানে শক্তি বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয় তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী করেছে এবং এদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে এখানকার মানুষকে লোভ দেখিয়ে ষড়যন্ত্র করে পলাশী যুদ্ধে জয়লাভ করে স্বপ্ন পূরণ করেছে। উদ্দীপকের এই ভাবটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের নীতি ও কৌশল তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।

✍ নাটকে দেখা যায় ইংরেজরা এদেশে প্রথমে বাণিজ্য করতে এসে এখানে তাদের শক্তির ভিত রচনা করে বিভিন্ন দুর্গে শক্তি বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে। ক্রমান্বয়ে তারা এদেশের ক্ষমতালোভী মানুষের ভিতর ঢুকে তাদের দ্বারা নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিয়ে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং হত্যা করে। পূরণ হয় তাদের বহুদিন ধরে দেখে আসা স্বপ্নটি। নাটকের এই বিষয়টি উদ্দীপকের লেখক তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
এই পবিত্র বাংলাদেশ
বাঙালির- আমাদের
দিয়া প্রহারেণ ধনঞ্জয়
তাড়াব আমরা, করি না ভয়
যত পরদেশি দস্যু ডাকাত
রামাদের গামাদের।
বাংলা বাঙালির হোক! বাংলার জয় হোক। বাঙালির জয় হোক।
ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে কতটি অধ্যায় রয়েছে?
খ. সিরাজউদ্দৌলা কেন ইংরেজদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করলেন?
গ. উদ্দীপকের ‘পরদেশি দস্যু ডাকাত’ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে কাদের নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নাট্যকারের একটি খণ্ডিত চেতনাকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

৯নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মোট চারটি অধ্যায় রয়েছে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাবকে না জানিয়ে ইংরেজরা কাশিমবাজার দুর্গে অস্ত্র আমদানি, নানা ধরনের নিষিদ্ধ কাজ এবং নবাবের শত্রু কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে নবাব ইংরেজদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করলেন।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের আচরণের প্রতি রুষ্ট হয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন এবং ইংরেজদের পরাজিত করেন। ইংরেজদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেমন- কাশিমবাজার দুর্গে অস্ত্র আমদানি, এদেশের মানুষের প্রতি জুলুম, কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দান প্রভৃতি কারণে তাদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের ‘পরদেশি দস্যু ডাকাত’ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের ধারণ করে।

✍ যুগে যুগে এদেশের সম্পদের মোহে আবিষ্ট হয়ে নানা ভিনদেশি এসেছে এদেশের সম্পদ হস্তগত করার জন্যে। তাদের মধ্যে অনেকে এদেশে এসে শাসন শোষণ করেছে। লুট করেছে এদেশের সম্পদ। অবশেষে এদেশের মানুষের প্রতিরোধে তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে।

✍ উদ্দীপকের কবিতাংশে উঠে এসেছে এমনই চিত্র। আমাদের এই পবিত্র বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এখানে অনেক পরদেশি দস্যু ডাকাত হামলা করেছে। কিন্তু বাঙালি তাদের ভয় পায়নি। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে বিতাড়িত করেছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে দেখা যায় ভিনদেশি ইংরেজরা এদেশে এসেছে সম্পদের লোভে। তারা নানা রকম অত্যাচার করেছে এদেশের মানুষের উপর। নাটকের এই ভাবটি উঠে এসেছে উদ্দীপকের দস্যু ডাকাতদের বর্ণনার মাঝে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের একটি খণ্ডিত চেতনাকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ বাঙালিরা প্রকৃতিগতভাবে কোমল ও নিরীহ স্বভাবের। এরা পারতপক্ষে কারও সাথে বিবাদে জড়াতে চায় না। তবে কেউ যদি তাদের সম্মান নিয়ে টানাটানি করে তখন তারা রুখে দাঁড়ায়। বিতাড়িত করে তাদের শক্তি ও সাহস দিয়ে সে সব দুশমনদের।

✍ উদ্দীপকে ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশ ও বাঙালির চিরন্তন চেতনাকে। আমাদের এই পবিত্র বাংলাদেশে আমরা শান্তিপ্রিয় বাঙালি। কিন্তু পরদেশি দস্যু ডাকাতদের বাঙালি ভয় পায় না। প্রহারেণ ধনঞ্জয় বাঙালিরা তাদেরকে বিতাড়িত করে। উদ্দীপকের এই দস্যু ডাকাতদের খুঁজে পাই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। নাটকে অন্যান্য কৈফিয়তও উঠে এসেছে।

✍ নাটকে পরদেশি ইংরেজদের এদেশে আগমন ছলে বলে কৌশলে এদেশের শাসনভার হস্তগত করার বিষয়টি ছাড়াও নাটকে বহুমুখী বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে। এদেশে ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তারের কলাকৌশল, এখানকার কিছু বিপথগামী লোভী মানুষের সহায়তা নিয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয় এবং মৃত্যু, বাংলার মসনদে বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের অবস্থান ইত্যাদি বিষয় অঙ্কিত হয়েছে যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ইংরেজ জাতি প্রগতিশীলতার শীর্ষে অবস্থান করলেও তারা তাদের শোষণ নীতি অপরিবর্তিত রেখেছে। তাদের অতীত ইতিহাসও বলে দেয় তাদের এই হীন স্বার্থসিদ্ধির মনোভাবের কথা। পৃথিবীময় তাদের উপনিবেশ স্থাপন করার বাসনা নিয়ে তারা নানা দুঃসাহসিক অভিযানে নেমে পড়ে এবং স্বার্থসিদ্ধি করে।
ক. কিলপ্যাট্রিক কতজন সৈন্য নিয়ে হাজির হলেন?
খ. “লোকবল বাড়–ক আর না বাড়–ক আমাদের অংশীদার বাড়ল তা অবশ্য ঠিক।” ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটির সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকটিতে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাব উঠে আসেনি।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

১০নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কিলপ্যাট্রিক মাত্র আড়াইশ সৈন্য নিয়ে হাজির হলেন।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে হ্যারি এবং এই কথাটির মাধ্যমে ইংরেজদের শোচনীয় অবস্থার বিষয়টি উঠে এসেছে।

✍ ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের পতনের পর বিতাড়িত হয়ে ইংরেজরা ভাগীরথী নদীর উপর ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা চরম খাদ্য ও পানীয় সংকটে পড়ে। নবাব সেনাদের ভয়ে তারা কোনো খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। সেই মুহূর্তে কিলপ্যাট্রিক মাদ্রাজ থেকে আড়াইশ সৈন্য নিয়ে হাজির হয়। বিষয়টি সেখানে অবস্থানরত সৈনিকদের মনে হতাশার সৃষ্টি করে। হ্যারির প্রশ্নোক্ত উক্তিতে সেটা প্রমাণিত।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকটির সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ ইংরেজ জাতি সারা বিশ্বে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করেছে। যেখানে তারা শক্তিতে পারেনি সেখানে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে। এমনিভাবে সারা পৃথিবীতে দুর্বল জাতির উপর তাদের শোষণের স্টীম রোলার চালিয়েছে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে।

✍ উদ্দীপকে ইংরেজ জাতির প্রগতিশীল মানসিকতার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি তাদের শোষণ নীতির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। তাদের অতীত ইতিহাস সে কথাই বলে দেয়। প্রথমে তারা ভালো মানুষ সেজে প্রবেশ করলেও ক্রমে তাদের আসল রূপ গোচরে আসে। ইংরেজদের এই চিত্র দেখা যায় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে এদেশে এসে ক্রমে তারা শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে এবং এদেশ শাসন করার স্বপ্ন দেখে। এবং ছলে বলে কৌশলে তারা এদেশে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র করে তারা এদেশের কিছু বিশ্বাসঘাতকের সহায়তায় নবাবকে পরাজিত করে শাসনভার হস্তগত করে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটিতে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাব উঠে আসেনি” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ইংরেজ জাতির মধ্যে মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায় দূর করার আগ্রহ দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে তারা মানুষকে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করার চেষ্টা চালায়। সুচতুর ইংরেজরা শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্য যে কোনো ভাবে সফল করে যা উদ্দীপক এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে পাওয়া যায়।

✍ উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে ইংরেজ জাতির ঘৃণ্য মানসিকতার কথা। তারা প্রগতিশীলতার শীর্ষে অবস্থান করলেও সারা বিশ্বে তাদের শোষণ নীতি অপরিবর্তিত রেখেছে এবং দুর্বল জাতির উপর তাদের আধিপত্য খাটিয়ে শাসন শোষণ করে আসছে। উদ্দীপকের এই ভাবটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উপস্থাপিত হলেও এটি নাটকের অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে মাত্র একটি বিষয়।

✍ উদ্দীপকের বিষয়টি ছাড়া নাটকে আরও বর্ণিত হয়েছে এদেশের সাধারণ জনগণের উপর ইংরেজদের অত্যাচার, এদেশে ক্রমে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, নবাবের শত্রুদের সাথে হাত মেলানো, নবাবের পরিজনদের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা যার ফলে নবাবের পতন এবং স্বার্থান্বেষীদের স্বার্থ উদ্ধার, সিরাজের করুণ মৃত্যু, ইংরেজদের পুতুল সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
খান সেনাদের সাথে দু-তিন জন রাজাকার। তাদের একজন বলল, “অত কথায় কাজ কী? তালতলীতে বাঙ্কার তৈয়ার হইতাছে। সগগলরে ব্যাগার দিতে হইব।” . . . . . . . . . রহুল রেগে উঠে বলল, “এসব কী অন্যায্য কথা। তুমি পুবপাড়ার কলিমুদ্দি না? তুমি এই আকাম ধরছ?” কলিমুদ্দি গর্জে উঠল, মুখ সামলাইয়া কথা কইবেন। যাওন আপনাদের লাগবোই।
ক. ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজ কোন নদীতে আশ্রয় নিয়েছিল?
খ. ‘আমি চিরকাল ইংরেজদের বন্ধু’ - উমিচাঁদ এ কথাটি চিঠিতে কেন লিখেছেন?
গ. উদ্দীপকের কলিমুদ্দি চরিত্র এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উমিচাঁদের চরিত্রের সাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অনেকগুলো ভাবের মাঝে একটি ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র।” -মন্তব্যটি বিচার কর।

১১নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজ ভাগীরথী নদীতে আশ্রয় নিয়েছিল।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উমিচাঁদ চিঠির মাধ্যমে লেখা উক্ত কথাটি দ্বারা ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য ও তাদের সহযোগিতা করার ভাবটি ব্যক্ত করেছেন।

✍ কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের পতনের পর ইংরেজরা এদেশের দালালদের নিয়ে পুনরায় নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে যোগদান করে উমিচাঁদ, মিরজাফর, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ প্রমুখ বিশ্বাসঘাতক। উমিচাঁদ ইংরেজদের কাছে লেখা একটি চিঠিতে উল্লেখ করে যে সে চিরকাল ইংরেজদের বন্ধু এবং বিপদে আপদে তাদের পাশে থাকবে। ইংরেজদের বাণিজ্য করার জন্য মানিকচাঁদকে ১২ হাজার টাকা দিয়ে অনুমতি আদায় করেছে। মূলত উমিচাঁদ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে ইংরেজদের সাহায্য করেছেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের কলিমুদ্দি চরিত্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উমিচাঁদের বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারী বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি কখনোই মানুষের বন্ধু হতে পারে না। হিংস্র জানোয়ারকে বিশ্বাস করা গেলেও এদের বিশ্বাস করা বা এদের সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত নয়। তারা নিজের জন্মদাতা বা জন্মদাত্রীর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করতে ছাড়ে না। এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। উদ্দীপকের কলিমুদ্দি একজন বিশ্বাসঘাতক। সে দেশের সাথে, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দখলদার পাকিস্তানি জানোয়ারদের সাথে হাত মিলিয়েছে। বাঙালি হয়েও বাঙালির বিরুদ্ধে সে অস্ত্র ধারণ করে বাঙালিদের হত্যা করেছে। কলিমুদ্দির মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে নাটকের উমিচাঁদের ভিতর। সে পরদেশি ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে এই দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। যে ইংরেজরা এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, নবাবের সাথে ষড়যন্ত্র করেছে তাদেরই সাথে হাত মিলিয়েছে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অনেকগুলো ভাবের মাঝে একটি ভাবকে ধারণ করেছে মাত্র।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ স্বার্থচিন্তা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। যে ব্যক্তি নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে তার মাঝে মানবিক মূল্যবোধ থাকতে পারে না। নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে সে যে কোনো ঘৃণ্য কাজ করতে পারে। দেশের সাথে, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতাও করতে পারে। উদ্দীপক এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে এই বিষয়টি লক্ষ করা যায়।

✍ উদ্দীপকে আলোচিত হয়েছে দেশ ও জাতির সাথে প্রতারণা করার ঘৃণ্য চিত্র। কলিমুদ্দি এদেশের নাগরিক হয়েও ভিনদেশি দখলদারদের সাথে হাত মিলিয়ে এদেশেরই মানুষের উপর জুলুম, নির্যাতন, হত্যার মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়। নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। উদ্দীপকের এই ভাবটি নাটকের বহুমুখী ভাবের মাঝে একটি মাত্র দিক।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উদ্দীপকের বিষয়টির বর্ণনার পাশাপাশি আরও বর্ণিত হয়েছে ইংরেজদের এদেশে আগমন, এদেশের সাধারণ জনগণের উপর জুলুম, নির্যাতন, এদেশের শাসকের সাথে বিরোধ এবং শক্তি প্রয়োগ, নবাবের শত্রুদের সাথে সখ্যতা স্থাপন, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয় এবং নির্মমভাবে মৃত্যু প্রভৃতি বিষয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ভীত-সন্ত্রস্ত সোলেমান ‘জয় বাংলা’ শব্দ শুনে খাট থেকে গড়িয়ে নামে। আরো তিন পাক গড়িয়ে সে খাটের তলায় চলে যায়। সটান শুয়ে সে মিশে যেতে চায় মেঝের সাথে। মুক্তিবাহিনী নিশ্চয়ই ঘেরাও করেছে বাড়িটা।
সাতজন সশস্ত্র পাক সেনা ও দশ-বার জন অবাঙালির সাথে মিলিটারি ট্রাকে চড়ে গত রাতে যে ‘অপারেশন’-এ গিয়েছিল পথ দেখিয়ে সে-ই নিয়ে গিয়েছিল গোপীবাগ।
ক. ইংরেজরা পরাজিত হয়ে কোন জাহাজে আশ্রয় নেয়?
খ. ‘ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সোলায়মান চরিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কাদের প্রতিনিধিত্ব করছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “বিশ্বাসঘাতকদের কথা উল্লেখ থাকলেও উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করেনি।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

১২নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ইংরেজরা পরাজিত হয়ে ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজে আশ্রয় নেয়।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাবের সৈন্যের কাছে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ইংরেজদের পরাজয়ের পর পলায়ন করতে দেখে উমিচাঁদ উক্তিটি করেছেন।

✍ নবাবের সৈন্যের কাছে পরাজিত হয়ে ইংরেজরা দুর্গ থেকে পলায়ন করে। সার্জন হলওয়েলের কাছে বন্দি উমিচাঁদ যখন এ খবরটি শোনেন তখন ইংরেজদের প্রতি কটাক্ষ করে উক্তিটি করেন। ইংরেজদের কাপুরুষোচিত আচরণের প্রতি বিদ্রূপ করে উক্তিটি করা হয়েছে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের সোলায়মান চরিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বিশ্বাসঘাতকদের প্রতিনিধিত্ব করছে।

✍ বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। এরা দুমুখো সাপের মতো। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এরা যে কারো সাথে সখ্যতা স্থাপন করতে পারে আবার যে কোনো সময়ে বন্ধুর গলায় ছুরি ধরতে দ্বিধাবোধ করে না।

✍ উদ্দীপকে দেখা মেলে এমনই একজন বিশ্বাসঘাতকের সাথে। সে ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে বাঙালি নিধন যজ্ঞে মেতে ওঠে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকেও এমন অনেক বিশ্বাসঘাতক রয়েছে। উমিচাঁদ, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, মানিকচাঁদ, মিরজাফর প্রমুখ ব্যক্তি এদেশের নাগরিক হয়ে, নবাবের নিকটতম ব্যক্তি হয়ে নবাবের সাথে তথা দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এদের জন্যেই নবাব ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন। হারিয়ে যায় বাংলার স্বাধীনতা দুশ বছরের জন্যে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “বিশ্বাসঘাতকদের কথা উল্লেখ থাকলেও উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেনি।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ নিজ দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যে ব্যক্তি দেশকে ভালোবাসে না সে মানুষরূপী জানোয়ার। দুঃখের বিষয় হলেও সত্য এমন মানুষও আছে যারা দেশকে ভালোবাসে না। নিজের স্বার্থের জন্যে দেশের সম্মান বিকিয়ে দেয় ভিনদেশিদের কাছে।

✍ উদ্দীপকে উল্লেখ আছে এমনই একজন দেশদ্রোহীর কথা। যে দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দখলদারদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশ ও জাতির সর্বনাশ করেছে। উদ্দীপকের সোলায়মান সামান্য অর্থের বিনিময়ে দেশ ও জাতির যতবড় ক্ষতি করেছে এ অপরাধ ক্ষমারও অযোগ্য। উদ্দীপকের এই বিশ্বাসঘাতকের কথা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উল্লেখ থাকলেও এটি নাটকের একটি মাত্র দিক।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে এই বিশ্বাসঘাতকদের কথা বর্ণনার পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে। বাণিজ্যের নাম করে ইংরেজদের এদেশে আগমন, সাধারণ মানুষের উপর তাদের জুলুম, নবাবের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ, নবাবের শত্রুদের সাথে তাদের বন্ধুত্ব ও নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, নবাবের সেনাপতিসহ আত্মীয় পরিজনদের বিশ্বাসঘাতকতা, অবশেষে যুদ্ধ এবং নবাবের পরাজয়, তাঁর নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ, স্বার্থান্বেষীদের ক্ষমতা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
এইখানে প্রায় এক সপ্তাহকাল উভয় পক্ষ পরস্পরের আক্রমণের প্রতীক্ষায় বসিয়া আছে। . . . . . . . . . . সমস্ত রাত্রি আক্রমণের আয়োজন চলিতে লাগিল। রাজধর প্রস্তাব করিলেন, “দাদা, তোমরা দুইজনে তোমাদের দশ হাজার সৈন্য লইয়া আক্রমণ করো। আমার পাঁচ হাজার হাতে থাক। আবশ্যকের সময় কাজে লাগিবে।”
ইন্দ্রকুমার হাসিয়া বললেন, “রাজধর তফাতে থাকিতে চান।”
ক. নবাবের পক্ষে সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?
খ. ফরাসি সেনাপতি সাঁফ্রে কেন নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সমগ্র ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটির যৌক্তিকতা নিরূপণ কর।

১৩নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাবের পক্ষে সৈন্য সংখ্যা ছিল পঞ্চাশ হাজার।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ইংরেজদের সাথে ফরাসিদের দ্বন্দ্ব চিরকালের। এজন্যেই ফরাসি সেনাপতি সাঁফ্রে নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করেন।

✍ ফরাসি আর ইংরেজরা যেখানেই গেছে সেখানেই তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ভারতবর্ষে ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়। একে অন্যকে সবসময় দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। যার ফলশ্রুতিতে যে কোনো জায়গায় যে কোনো মুহূর্তে একে অন্যের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ফরাসিরা যখন দেখলো ইংরেজরা নবাবের সাথে যুদ্ধ করেছে তখন নীতিগতভাবে ফরাসি সেনারা নবাবকে সমর্থন দেয়।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উপস্থাপিত পলাশী যুদ্ধের চিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উপস্থাপিত হয়েছে ইংরেজদের সাথে নবাবের বিভিন্ন যুদ্ধের চিত্র। এর মাঝে পলাশী যুদ্ধের চিত্রই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। উদ্দীপকেও অঙ্কিত হয়েছে এমনই একটা যুদ্ধের চিত্র।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় যুবরাজ ইন্দ্রকুমার প্রায় এক সপ্তাহকাল অপেক্ষা করে পরস্পর আক্রমণের প্রতীক্ষায়। সমস্ত রাত ধরে আক্রমণের আয়োজন চলে। উদ্দীপকের সৈন্যদের আনাগোনা, যুদ্ধের আয়োজন ইত্যাদি বিষয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের যুদ্ধের চিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নাটকেও দেখা যায় নবাব সৈন্য ও ইংরেজ সৈন্য জড়ো হয় পলাশীর প্রান্তরে। উভয়পক্ষের সৈন্যরা পরস্পরকে আক্রমণের প্রতীক্ষা করে। একদিকে সেনাপতি মোহনলাল, মিরমর্দান, সাঁফ্রে, অন্যদিকে ক্লাইভ, ক্লেটন প্রমুখ যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয়। উদ্দীপকের সাথে নাটকের এই বিষয়ের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সমগ্র ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্য আমার মতে যুক্তিযুক্ত নয়।

✍ পলাশী যুদ্ধ বাংলার তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই যুদ্ধে নবাব সিরাজের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রায় দুশ বছরের জন্যে হারিয়ে যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সাথে নবাবের যে যুদ্ধ সেটা তাই স্মরণীয় একটা মুহূর্ত।

✍ উদ্দীপকে অঙ্কিত হয়েছে একটি খণ্ডযুদ্ধের চিত্র। যেখানে যুবরাজ ইন্দ্রকুমার ও তার সৈন্যরা অপেক্ষা করে আছে পরের দিন প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্যে। উদ্দীপকের এ চিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের শুধু পলাশী যুদ্ধের বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছে। নাটকের অন্যান্য বিষয়গুলো এখানে একেবারেই অনুপস্থিত।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে একে একে বর্ণিত হয়েছে উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমনের চিত্র, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে যুদ্ধের চিত্র, সেখানে ইংরেজদের পরাজয় ও পলায়ন, নবাবের বিরুদ্ধে পুনরায় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া, এদেশের স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, তাদের সাথে ইংরেজদের সখ্যতা স্থাপন, নবাব সিরাজের আত্মীয় পরিজনদের ষড়যন্ত্র ও সেনাপতি মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা, পলাশীর যুদ্ধ এবং সেখানে নবাবের পরাজয়, ইংরেজদের সমর্থন নিয়ে কাপুরুষ মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ, নবাবের করুণ পরিণতি প্রভৃতি চিত্র যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই আমার মতে প্রশ্নের মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত নয়।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অতি প্রত্যুষেই অন্ধকার দূর হইতে না হইতেই যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার দুই ভাগে পশ্চিম ও পূর্বে মগদিগকে আক্রমণ করিতে চলিয়াছেন। সৈন্যের স্বল্পতা লইয়া রূপনারায়ণ হাজারি দুঃখ করিতেছিলেন। তিনি বলিতেছিলেন, আর পাঁচ হাজার সৈন্য থাকলে ভাবনা ছিল না। ইন্দ্রকুমার বলিলেন, ত্রিপুরারির অনুগ্রহ যদি হয় তবে এই কয় জন সৈন্য লইয়াই জিতিব।
ক. ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সিরাজের কে হন?
খ. সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে ঘসেটি বেগম কেন খুশি হবেন?
গ. উদ্দীপকের যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রদ্বয়ের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি বিষয়কে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

১৪নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সিরাজের খালা হন।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে ঘসেটি বেগমের স্বার্থ উদ্ধার এবং প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে তাই তিনি খুশি হবেন।

✍ নবাব সিরাজের খালা ঘসেটি বেগম কখনোই সিরাজের সিংহাসনারোহণ মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি স্বপ্ন দেখতেন বাংলার মসনদে বসবে তার পোষ্যপুত্র এবং তিনি দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্ন মাটি হয়ে যায় যখন দেখেন সিরাজকেই বাংলার মসনদের জন্যে মনোনীত করা হয়েছে। এর পর থেকেই তিনি মনে প্রাণে চাইতেন সিরাজের পতন। সিরাজের পতন হলেই তার এতদিনের লালিত স্বপ্ন সার্থক হবে। এজন্যে তিনি সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে খুশি হবেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার চরিত্রদ্বয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মোহনলাল এবং মিরমর্দান চরিত্রদ্বয়ের প্রতিনিধি।

✍ মোহনলাল এবং মিরমর্দান নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বস্ত দুজন সেনাপতি। মোহনলালের বাড়ি কাশ্মিরে এবং জাতিতে হিন্দু হলেও তিনি সিরাজের অতি বিশ্বস্ত ও প্রিয় ছিলেন। মিরমর্দানও সিরাজের অন্যতম সেনাপতি। তিনি সাহসের সাথে যুদ্ধ করে শহিদ হন।

✍ উদ্দীপকেও দেখি দুজন নির্ভীক যোদ্ধাকে। তাঁদের একজন যুবরাজ অন্যজন ইন্দ্রকুমার। তাঁরা তাঁদের বীরত্বেই যুদ্ধে জয়লাভ করতে চান। রূপনারায়ণ হাজারি সৈন্যের স্বল্পতা নিয়ে আক্ষেপ করলেও তার যে সেনা রয়েছে তাদের নিয়েই যুদ্ধে জয়লাভ করতে চায়। এই চিত্র দেখি নাটকের পলাশী প্রান্তরে। নবাবের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর যুদ্ধে অংশ না নিয়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মোহনলাল এবং মিরমর্দান তাদের যে সেনা রয়েছে তাদের নিয়ে যুদ্ধ করেই জয়ী হতে চান এবং বিপুল বিক্রমে অগ্রসর হন। উদ্দীপকের ভ্রাতৃদ্বয়ের সাথে নবাবের সেনাপতিদ্বয়ের মিল এখানেই পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি বিষয়কে আমাদের স্মরণ করিয়া দেয়।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ সাহস ও বীরত্ব একজন মানুষকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারে। ভীত মানুষ কখনোই কাজের শেষ পর্যন্ত যেতে পারে না। উদ্দীপকের যুদ্ধরত ভ্রাতৃদ্বয় এবং নাটকের সেনাপতিদ্বয় তাদের সাহস ও বীরত্ব নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। এজন্যে তাদের প্রতি আমাদের সমীহ জাগে।

✍ উদ্দীপকটিতে দেখা যায় যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থানরত দুজন সাহসী সেনাপতির শৌর্ষ বীর্যের চিত্র। যুবরাজ এবং ইন্দ্রকুমার তাদের বীরত্ব ও দুঃসাহসের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে। এ চিত্রটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের পলাশী প্রান্তরের যুদ্ধের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলেও নাটকের অন্যান্য দিকগুলো উপস্থাপন করে না।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটিতে বহুমুখী বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। উদ্দীপকের বিষয় ছাড়াও এখানে রয়েছে নবাব সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তার চিত্র, বেনিয়া ইংরেজদের নির্লজ্জ ও কপটাচারিতা, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, স্বার্থান্বেষীদের নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার লোভে অন্ধ বিপথগামী সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা, নবাবের পতন ও নির্মম মৃত্যু, মিরজাফরের কাপুরুষোচিত ক্ষমতা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে, যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থই হয়েছে।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে দখলদারদের বিতাড়িত করে বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনে।
ক. কার হুকুমে নবাব সিরাজকে হত্যা করা হয়?
খ. পলাশী যুদ্ধে নবাব কেন পরাজিত হলেন?
গ. উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য কোথায়? নির্ণয় কর।
ঘ. “বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো নবাব সিরাজের ডাকে দেশের জনগণ সাড়া দিলে পলাশী যুদ্ধের ফল বিপরীত হতে পারতো।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

১৫নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ মিরজাফরের পুত্র মিরনের হুকুমে নবাব সিরাজকে হত্যা করা হয়।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা এবং আত্মীয় পরিজনদের ষড়ষন্ত্রের ফলে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজ পারাজিত হলেন।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সিরাজের আত্মীয়-স্বজন, অমাত্যবর্গের এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় সুযোগ সন্ধানী ইংরেজরা। সিরাজের চারপাশের এই ষড়যন্ত্রের জাল থেকে তিনি কিছুতেই বের হতে পারেন না। পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সাথে তার যুদ্ধ বাঁধে। যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি মিরজাফর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে। ফলে নবাবের অবশিষ্ট সৈন্যরা ইংরেজদের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ফলে বাংলা হারায় তার স্বাধীনতা।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের চরিত্রের সাথে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

✍ একজন দেশনায়কের মাঝে থাকতে হয় চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা, দেশপ্রেম, দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জনের ক্ষমতা, সর্বোপরি নেতৃত্বের গভীরতা তবেই তিনি সত্যিকারের দেশনায়ক হতে পারেন। উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর মাঝে এসব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল।

✍ বঙ্গবন্ধু ছিলেন সত্যিকারের দেশনেতা। দেশের প্রতিটি মানুষ তাঁকে ভালোবাসতো। তিনি দেশের জন্যে নিজের জীবনের ন্যূনতম সুখটুকুও ত্যাগ করতে কুন্ঠাবোধ করতেন না। তিনি বাংলা ও বাঙালির মুক্তি চেয়েছেন। তাইতো তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ এই কাজটি পারেননি। তিনি জনগণের অন্তরের মাঝে মিশতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর মতো। তাইতো পলাশী যুদ্ধে এদেশেরই লোকজন নিজেদের স্বার্থের জন্যে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর এখানেই রয়েছে বৈসাদৃশ্য।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো নবাব সিরাজের ডাকে দেশের জনগণ সাড়া দিলে পলাশী যুদ্ধের ফল বিপরীত হতে পারতো।” মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার বিপদের সময় দেশের জনগণ, এমনকি নিজের আত্মীয় পরিজনদেরও পাশে পাননি। ফলে নিতান্ত অসহায়ভাবে তাকে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে। যার ফলে কোনো কাজের ফল তার পক্ষে যায় নি।

✍ উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশের আপামর জনগণ সাড়া দিয়েছে। দেশনেতার অমোঘ ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে হানাদার সৈন্যের বিরুদ্ধে। অসম সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে সংগ্রাম করে দেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো নবাব সিরাজের ডাক এদেশের জনগণের মাঝে সাড়া জাগাতে পারেনি। কারণ নবাব ও জনগণের মাঝে ছিল বিস্তর দূরত্ব।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ চেয়েছিলেন দেশের জনগণ তার পাশে থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখুক। কিন্তু দেশের জনগণতো দূরের কথা নিজের সেনাপতিই তার পক্ষে নেই। তিনি চেয়েছিলেন দেশের জনগণ তার পাশে এসে দাঁড়াক। লড়াই করুক বিদেশি দখলদারদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই মুহূর্তে কেউই তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো দেশের জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। ফলে কাউকেই তিনি বিপদের সময় পাশে পাননি। তাই বলা যায় বঙ্গবন্ধুর ডাকের মতো তার ডাকে যদি দেশের জনগণ সাড়া দিত তবে পলাশী যুদ্ধের ফল বিপরীত হতে পারতো।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সখীপুর গ্রামে আজ চরম সংকট উপস্থিত। সবাই চিন্তিত, ভীত সন্ত্রস্ত। আগামীকাল শক্তিশালী পরানপুর গ্রামের সাথে পূর্বঘোষিত ‘কাইজা’ হবে। এটা নিজ গ্রামের অস্তিত্ব রক্ষার সম্মান রক্ষার বিষয়। গ্রামপ্রধান আপামর জনসাধারণকে ডেকে আগামীকালের ‘কাইজা’ হবে। বিশ্বস্ততার সাথে, সাহসের সাথে পরানপুর গ্রামের মোকাবেলা করার অনুরোধ করেন। প্রায় সকলেই যার যার ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করে গ্রামের সম্মান রক্ষার্থে যদি জীবনও যায় তবু তারা পিছু হটবে না। কিন্তু পরদিন গ্রামপ্রধানসহ অনেকেই লক্ষ করে নকীব এবং গোলাম আলীসহ যারা কিনা ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে প্রতীজ্ঞা করেছিল তাদের অনেকেই অনুপস্থিত। কেউবা শত্রুপক্ষকে মদদ দিচ্ছে। ফলে সখীপুর গ্রামের চরম পরাজয় ঘটে।
ক. দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে কোন স্থানের কথা উল্লেখ আছে?
খ. ‘আজীবন নবাবের আজ্ঞাবহ হয়েই থাকব’- কথাটি কে, কেন বলেছে?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি নাটকের কোন ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের নকীব ও গোলাম আলীরা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর ও রায়দুর্লভ চরিত্রের প্রতীক” মন্তব্যটি যাচাই কর।

১৬নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে নবাবের দরবারের কথা উল্লেখ আছে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কথাটি বলেছে নবাব সিরাজের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে নবাবের বিশ্বাস অর্জন করার জন্যে।

✍ ইংরেজদের ধৃষ্টতায় ক্ষিপ্ত হয়ে এবং অমাত্যবর্গের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে নবাব সিরাজ দরবারে জরুরি সভা ডাকেন। সেখানে তিনি দেশের এই দুর্যোগের মুহূর্তে সমস্ত হিংসা বিদ্বেষ ভুলে সবাইকে তার পাশে দাঁড়াতে বলেন। তখন সেনাপতি মিরজাফর পবিত্র কোরান শরিফ স্পর্শ করে উক্ত ওয়াদা করেন। যার গভীরে ছিল শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতা।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের ঘটনাটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের পলাশী যুদ্ধের ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয়।

✍ পলাশী যুদ্ধ বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা। বাংলার কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের স্বার্থোদ্ধারের মানসিকতার জন্যে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটে এবং ইংরেজ বেনিয়ারা এদেশে তাদের শক্তির ভিত রচনা করার সুযোগ পায়। এদেশের জনগণ স্বাধীনতা হারায় দুশ বছরের জন্যে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে অস্তিত্ব ও সম্মান রক্ষার লড়াই বাঁধে। সখীপুর গ্রামের মানুষ গ্রামের সম্মান রক্ষা করার জন্যে ধর্মগ্রন্থ স্পর্শ করে পরস্পরের ওয়াদাবদ্ধ হয়। কিন্তু লড়াইয়ের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার কথা ভুলে তারা দখলদারদের মদদ দেয়। যা নাটকের পলাশী যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেখানেও দেখা যায় যুদ্ধের ময়দানে নবাবের সেনাপতিরা যুদ্ধ না করে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে শত্রু পক্ষকে সমর্থন জানানোর জন্য। তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য নবাবের পরাজয় ঘটে। পরাজয় ঘটে এই বাংলার মানুষের।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের নকীব ও গোলাম আলীরা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর ও রায়দুর্লভ চরিত্রের প্রতীক।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা একজন মানুষ বা একটি জাতিকে কতখানি ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বাংলা তথা ভারতবর্ষের ইতিহাস সে সাক্ষী প্রদান করে। শুধু বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। এমনই বিশ্বাসঘাতক উদ্দীপকের নকীব ও নাটকের মিরজাফররা।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় নকীব এবং গোলাম আলীদের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে সখীপুর গ্রামের চরম পরাজয় ঘটে। তাদের অস্তিত্ব এবং সম্মান ধ্বংস হয়ে যায়। যারা গ্রামের সম্মান রক্ষা করবে তারা যদি বিশ্বাসঘাতক, ভীরু হয় তবে সেখানে জয়ী হবার কোনো পথ খোলা থাকে না। এমনই বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজে পাওয়া যায় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। সেখানে মিরজাফর, রায়দুর্লভদের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবের পরাজয় ঘটে।

✍ মিরজাফর এবং রায়দুর্লভ নবাবের অন্যতম দুজন সেনা। একজন সেনাপতি অন্যজন সাধারণ সৈনিক। এদের দুজনের বিশ্বাসঘাতকতা ও কুপরামর্শে নবাব সিরাজ মুর্শিদাবাদ যাওয়ার সময় যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে যান। সে সুযোগ গ্রহণ করে ইংরেজ সেনারা। এক প্রকার বিনা যুদ্ধে জয়লাভ করে তারা। এই দুই বিশ্বাসঘাতক চরিত্রের প্রতীক উদ্দীপকের নকীব ও গোলাম আলী চরিত্রদ্বয়।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আতা খাঁ: গুপ্তচর তার সবকিছু দেখাতে বাধ্য নয়। তোমাদের যাতে প্রয়োজন শুধু তাই দেখতে পাবে। নাও, এই দেখো, ভালো করে দেখো। সেনাপতির নিজ হাতের স্বাক্ষরযুক্ত ছাড়পত্র।
রহিম: (মশালের আলোতে উল্টে পাল্টে পাঞ্জাখানা দেখে) ঠিক আছে আপনাকে খামাখা তক্লিফ দিলাম। আপনি যেদিকে খুশি যেতে পারেন।
আতা খাঁ: যেদিকে খুশি। কিন্তু খুশিমতো চলে কি শেষে আরো কঠিন মুসিবতের মধ্যে পড়বো? দরকার নেই বাবা। তার চেয়ে যে পথে অন্যেরা চলে সে পথ দিয়ে এগুনোই ভালো। তা, সেপাই বাবাজীরা, একটু রাস্তা বাতলে দাও না। মানে মানে সরে পড়ি?
ক. সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৭ সালের কত তারিখে শহিদ হন?
খ. মোহাম্মদি বেগ মিরনের কাছে কেন দশ হাজার টাকা চাইল?
গ. উদ্দীপকের আতা খাঁ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি দিককে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, সম্পূর্ণ দিককে নয়।”- ব্যাখ্যা কর।

১৭নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৭ সালের ২রা জুলাই তারিখে শহিদ হন।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাব সিরাজকে হত্যা করার পারিশ্রমিক হিসেবে মোহাম্মদি বেগ মিরনের কাছে দশ হাজার টাকা চাইল।

✍ পলাশী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নবাব সিরাজ মিরজাফরের অনুসারী সৈন্যের হাতে ভগবানগোলার নিকট বন্দি হন এবং জাফরাগঞ্জ কয়েদখানায় নিক্ষিপ্ত হন। ক্লাইভের প্ররোচনায় মিরজাফরের পুত্র মিরন নবাবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে এক সময় সিরাজের পরিবারে আশ্রয় গ্রহণকারী মোহাম্মদি বেগকে নির্বাচন করে সিরাজকে হত্যা করার জন্যে। তখন মোহাম্মদি বেগ দশ হাজার টাকা চায় সিরাজকে হত্যার পারিশ্রমিক হিসেবে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের আতা খাঁ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের গুপ্তচর জুহালা চরিত্রের প্রতিনিধি।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ষড়যন্ত্রকারী বিশ্বাসঘাতকদের ভিড়ে রাইসুল জুহালা চরিত্র আমাদের মনে একটু হলেও ভালো লাগার সৃষ্টি করে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে এটি একটি কৌতুক চরিত্র কিন্তু তার দেশপ্রেম এবং নবাবের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা আমাদের চমৎকৃত করে।

✍ উদ্দীপকে আতা খাঁকে গুপ্তচর বৃত্তি করতে দেখা যায়। সে সেনাপতির ছাড়পত্র নিয়ে মুসলিম শিবির থেকে মারাঠা শিবিরে যায় গুপ্তচর বৃত্তি করার জন্যে। পথিমধ্যে রহিম নামে জনৈক সৈন্য তার পথ আগলালে সেনাপতির ছাড়পত্র দেখিয়ে আপন কাজে চলে যায়। এর সাথে সাদৃশ্য রয়েছে নাটকের রাইসুল জুহালা চরিত্রটির সাথে। নারান সিং তার আসল নাম। তিনি নবাবের বিশ্বস্ত ও প্রিয়ভাজন। রাইসুল জুহালা নাম ধারণ করে নর্তকীর বেশে যে ঘসেটি বেগমদের মন্ত্রণা সভায় প্রবেশ করে এবং সে তথ্য নবাবকে পাঠায়। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “ উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মাত্র একটি দিককে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে, সম্পূর্ণ দিককে নয়।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ দেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ, স্বদেশকে ভালোবাসে না এমন ব্যক্তি পশুর সমান। যে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে জাতি কোনোদিনই ক্ষমা করতে পারে না। উদ্দীপকের আতা খাঁ এবং নাটকের রাইসুল জুহালার মাঝে দেখা যায় এমনই দেশপ্রেম বা স্বাজাত্য প্রেমের চিত্র।

✍ উদ্দীপকের আতা খাঁ পানিপথের যুদ্ধের সময় মুসলিম শিবিরের গুপ্তচর। সে যায় রাতের অন্ধকারে মারাঠা শিবিরে তথ্য সংগ্রহ করতে। উদ্দীপকের এই গুপ্তচর বৃত্তির বিষয়টি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে বর্ণিত একটি মাত্র দিক। এছাড়াও নাটকে বহু বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে নানাবিধ ভাবের সমাবেশ যা উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে উপস্থাপিত হয়নি।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে উদ্দীপকের বিষয়টি ছাড়াও বর্ণিত হয়েছে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমন, এদেশে এসে কুঠি স্থাপন, ব্যবসার অজুহাতে নানারকম নিষিদ্ধ কার্যকলাপ, অবশেষে নবাবের রোষানলে পড়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এবং পরাজয়, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে যোগাযোগ এবং বন্ধুত্ব স্থাপন, সবাই মিলে নবাবের সাথে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা করা, নবাব সিরাজের চারিত্রিক দৃঢ়তা, ইংরেজ বেনিয়াদের শিক্ষা দেয়ার জন্যে যুদ্ধে অবতীর্ণ, সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় পরাজয় ও মৃত্যু প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে যা উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জমিদার আদিত্য নারায়ণ সারাক্ষণ সুরা, নারী নিয়ে মেতে থাকেন। আর প্রজাদের উপর নানা রকম কর চাপিয়ে উৎপীড়ন করে, জুলুম করে রাজ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করেন। প্রজারা তাকে একেবারেই ভালোবাসে না, শ্রদ্ধা করে না। তিনি শাসক হয়েও প্রজাদের সুখ দুঃখের খোঁজখবর রাখেন না এজন্যে প্রজারা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
ক. সিরাজউদ্দৌলার মায়ের নাম কী?
খ. সিরাজউদ্দৌলা একটি দিনের জন্যেও কেন সুখে নবাবি করতে পারেননি?
গ. উদ্দীপকের জমিদারের সাথে সিরাজের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি বিচার কর।

১৮নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ সিরাজউদ্দৌলার মায়ের নাম আমেনা বেগম।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ চারদিকে ষড়যন্ত্রের দেয়াল, নিজের অমাত্যবর্গের বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মীয়ের প্রতিহিংসার আগুন সব মিলিয়ে সিরাজ একদিনের জন্যেও সুখে নবাবি করতে পারেননি।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা মসনদে বসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা প্রকারের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তার সাথে যোগ দেয় সুযোগ সন্ধানী ইংরেজরা। যার কারণে নবাবকে সদা সতর্কভাবে চলতে হয়। হিসাব-নিকাশ করে পরিকল্পনামাফিক কাজে অগ্রসর হতে হয়। একেতো বয়সে তরুণ তার উপর ঘরের কোণেই ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের বসবাস। এজন্যে সারাটি সময় তাকে শঙ্কার মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়। এজন্যে নবাব সিরাজ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একটি দিনের জন্যেও সুখে নবাবি করতে পারেননি।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের জমিদারের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

✍ চরিত্র মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিকতা, মানবিকতা সুন্দর চরিত্র গঠনে অপরিহার্য। এসব গুণ লক্ষ করা যায় নবাব সিরাজের মাঝে। যা উদ্দীপকের জমিদারের মাঝে অনুপস্থিত।

✍ উদ্দীপকের জমিদার আদিত্য নারায়ণ একজন অনৈতিক চরিত্রের অধিকারী মানুষ। তিনি সারাক্ষণ সুরা নারী নিয়ে মশগুল থাকেন, আর প্রজাদের উপর নানা রকম কর, খাজনা চাপিয়ে তাদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন করেন। এজন্যে প্রজারা তাকে মোটেও ভালোবাসে না, শ্রদ্ধা করে না। চরিত্রের এই অনৈতিক দিকগুলি নবাব সিরাজের মাঝে অনুপস্থিত। তিনি সৎ, নীতিবান, দৃঢ়চেতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। প্রজাদের তিনি ভালোবাসেন। প্রজারাও তাকে ভালোবাসে। উভয় চরিত্রের মধ্যে বৈসাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি মোটেও যথার্থ নয়।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি বহুমুখীতায় ঋদ্ধ। নাট্যকার সচেতনভাবেই ইতিহাসকে আশ্রয় করে বিভিন্ন ভাবেই অবতারণা ঘটিয়েছেন নাটকের জমিনে। যেখানে উদ্দীপকে মাত্র একটি দিকই উপস্থাপিত হয়েছে যা নাটকের একটি মাত্র দিককে নির্দেশ করেছে।

✍ উদ্দীপকে একজন নীতিহীন লম্পট জমিদারের কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি সারাক্ষণ সুরা নারী নিয়ে মেতে থাকেন। প্রজাদের উপর নানা রকম খাজনা ও কর চাপিয়ে দিয়ে উৎপীড়নের মাত্রা বড়িয়ে দেন। প্রজারা এতে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। উদ্দীপকের এই ভাবটি শুধু প্রজাবৎসল নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রজাদরদী চেতনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে মনে করিয়ে দেয় মাত্র নাটকের অন্যান্য দিকের কোনো ভাব উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বহুমুখী ভাবের অবতারণা ঘটেছে। ইংরেজদের এদেশে আগমন ঘটে এদেশের ধন-সম্পত্তির লোভে। একে একে তারা এদেশে ক্ষমতার জাল বিস্তার করতে থাকে। এজন্যে তারা নবাবের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং প্রথমে পরাজিত হয়। আরও বর্ণিত হয়েছে নবাবের চারপাশের স্বার্থাম্বেষী মানুষের চক্রান্ত, আত্মীয়দের প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্র, সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় যুদ্ধে পরাজয় ও নবাবের নির্মম মৃত্যু প্রভৃতি। এসকল ভাবের একটিও উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়নি। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য একেবারেই অযৌক্তিক।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-১৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জোহরা : আর একদিন কি দুদিন। তারপরেই সে ঘোর সময় শুরু হবে। তুমি ফিরে এসো। আমার সঙ্গে ফিরে চলো।
কার্দি : যে ফিরে যাবে সে আমি হবো না। সে হবে বিশ্বাসঘাতক। সে হবে ইব্রাহিম কার্দির লাশ। তাকে দিয়ে তুমি কী করবে। . . . . . . . . আমার সংকটের দিনে যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, কর্মে নিযুক্ত করেছে, ঐশ্বর্য দান করেছে সে মারাঠাদের বিপদের দিনে আমি চুপ করে বসে থাকবো? পদত্যাগ করবো? দল ত্যাগ করবো? সে হয় না জোহরা।
ক. রায়দুর্লভের পিতার নাম কি?
খ. “এসেছ শয়তান। ধাওয়া করেছো আমার পিছু।” বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের কার্দি এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকের কার্দির মতো ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাবের সেনাপতি বিশ্বস্ত থাকলে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকতো।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

১৯নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ রায়দুর্লভের পিতার নাম জানকীরাম।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উক্ত কথাটি বলেছেন ঘসেটি বেগম সিরাজকে উদ্দেশ্য করে।

✍ সিরাজ নবাব হওয়ার পর থেকে তার খালা ঘসেটি বেগম প্রতিহিংসায় জ্বলতে থাকেন। তিনি কোনো ভাবেই সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণকে মেনে নিতে পারেন না। এজন্যে তিনি নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এ কথা সিরাজ জানতে পেরে খালাকে নজরবন্দি করে রাখেন। এতে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সিরাজ তাকে অনুসরণ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উক্ত উক্তিটি করেন। যাতে তার প্রতিহিংসা ও ঘৃণার ভাব প্রকাশিত হয়েছে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের কার্দি এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর চরিত্রের সাথে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

✍ জগৎ-সংসারে নানা ধরনের মানুষ রয়েছে। কেউ নিজের দায়িত্ব কর্তব্যকে জীবন দিয়ে হলেও পালন করে আবার কেউ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে বিপথে চালিত হয়।

✍ উদ্দীপকের কার্দি একজন দায়িত্বশীল বিশ্বস্ত সেনানায়ক। তিনি উপকারীর উপকার স্বীকার করেন তাইতো নিশ্চিত পরাজয় জেনেও একসময় সাহায্যকারীর পক্ষ তিনি কাপুরুষের মতো ত্যাগ করেননি। তার এই একনিষ্ঠ বিশ্বস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিপরীত রূপ দেখতে পাই নাটকের মিরজাফর চরিত্রে। তিনি হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এক সময়ের আশ্রয়দাতা তথা দেশের শাসকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন প্রধান সেনাপতি হওয়া সত্ত্বেও। তার এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। উভয় চরিত্রে বৈসাদৃশ্য এখানেই।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের কার্দির মতো ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের সেনাপতি বিশ্বস্ত থাকলে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকতো।” মন্তব্যটি সঠিক।

✍ কাছের মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করলে, ষড়যন্ত্র করলে তার পতন অনিবার্য। শত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে টিকে থাকতে পারবে না। ইতিহাস এই সত্যকেই প্রমাণ করে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।

✍ উদ্দীপকের কার্দি একজন বিশ্বস্ত দায়িত্বশীল সেনানায়ক। তাঁর একনিষ্ঠতা সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করে। তিনি জানেন আসন্ন যুদ্ধে তার বাহিনীর পরাজয় অবধারিত। তারপরেও তিনি কাপুরুষের মতো একসময়ের সাহায্যকারীর পক্ষ ত্যাগ করেননি। তার মতো এমন একজন বিশ্বস্ত সেনাপতি যদি থাকতো তবে বাংলার ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো।

✍ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের প্রধান সেনাপতি ছিলেন মিরজাফর। তিনি ছিলেন নীচ মানসিকতার অধিকারী। হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেন নবাবের সাথে, জাতির সাথে। যার জন্যে বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। যদি উদ্দীপকের ‘কার্দির মতো নবাবের সেনাপতি বিশ্বস্ত হতেন তবে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকতো’ মন্তব্যটি তাই যথার্থই বলা যায়।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শাকিলা ও নাজমা আহাদ সাহেবের জমজ দুই মেয়ে। দুবোন একই সাথে বেড়ে ওঠে। পরিণত বয়সে তাদের বিয়ে দেন। শাকিলার একটা ছেলে হলেও নাজমা নিঃসন্তান। আহাদ সাহেব তার সম্পত্তির সিংহভাগ অংশ শাকিলার ছেলের নামে উইল করে দেন। নাজমাকে দেন সামান্য অংশ। এতে নাজমা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। অনবরত শাকিলা এবং তার ছেলের ধ্বংস কামনা করে। অন্যের সাথে ষড়যন্ত্র করতে থাকে কীভাবে শাকিলা তার ছেলেকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা যায়।
ক. আমেনা বেগম ঘসেটি বেগমের সম্পর্কে কী হন?
খ. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজের ধ্বংস কামনা করেন?
গ. উদ্দীপকের শাকিলার সাথে‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের নাজমা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম চরিত্রের প্রতিভূ।” মন্তব্যটি বিচার কর।

২০নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ আমেনা বেগম ঘসেটি বেগমের ছোটবোন।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এবং বহুদিন লালিত প্রতিহিংসার কারণে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজের ধ্বংস কামনা করেন।

✍ নবাব আলিবর্দী খাঁ মৃত্যুর আগে তার দৌহিত্র সিরাজকে বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করে যান। এবং তার মৃত্যুর পর সিরাজ নবাব হন। যা তার আত্মীয় পরিজনরা, বিশেষ করে যারা মসনদের স্বপ্ন দেখতো তারা মোটেও মেনে নিতে পারছিল না। এমনকি তার বড় খালা ঘসেটি বেগম তার এই ক্ষমতা গ্রহণে যারপর নাই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এজন্যে তিনি সারাক্ষণ সিরাজের ধ্বংস কামনা করতেন। তিনি চাইতেন সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে। এজন্যেই তিনি সিরাজের ধ্বংস চাইতেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের শাকিলার সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আমেনা বেগমের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ ভাইবোনের সম্পর্ক দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্রতম। এই সম্পর্কের মধ্যেও যখন স্বার্থ এসে দাঁড়ায় তখন একে অপরের শত্রু হয়ে পড়ে। উদ্দীপকের শাকিলা ও নাজমা এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আমেনা ও ঘসেটি বেগমের মধ্যে বোনের সম্পর্ক থাকলেও ব্যক্তিস্বার্থ ও প্রতিহিংসা তাদের মধ্যে দেয়াল তুলে দিয়েছে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় আহাদ সাহেবের দুই মেয়ে শাকিলা ও নাজমা। এই শাকিলার ছেলেকে যখন আহাদ সাহেব তার সম্পত্তির সিংহভাগ দান করেন তখন শাকিলা এবং তার ছেলে নাজমার রোষানলে পড়ে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আমেনা বেগম অর্থাৎ নবাব সিরাজের মা এই একই পিরিস্থিতির স্বীকার হন। সিরাজকে যখন আলীবর্দী খাঁ বাংলার মসনদের জন্যে মনোনীত করেন তখন আমেনা বেগম এবং তার ছেলে সিরাজ ঘসেটি বেগমের রোষানলে পতিত হন। উদ্দীপকের শাকিলা চরিত্রের সাথে এখানেই আমেনা বেগম চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের নাজমা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম চরিত্রের প্রতিভূ।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ স্বার্থচিন্তা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। তখন আত্মীয় পরিজনের কথাও মনে থাকে না। সে সর্বক্ষণ চিন্তায় থাকে কীভাবে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করবে। উদ্দীপকের নাজমা বেগম এবং নাটকের ঘসেটি বেগম এ ধরনের মানসিকতার অধিকারী।

✍ উদ্দীপকের নাজমা ব্যক্তিস্বার্থে বিভোর একজন নারী। শাকিলা তার আপন বোন। সেই বোন এবং তার ছেলেকে তার পিতা সম্পত্তির সিংহভাগ যখন দান করে যান তখন সেটাকে সে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। প্রতিহিংসায় সবসময় নিজের ছোট বোনের এবং তার ছেলের সর্বনাশ কামনা করেন। অন্যের সাথে ষড়যন্ত্র করেন কীভাবে আপন ছোটবোন এবং ছেলেকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের সম্পত্তি হস্তগত করা যায়। এমনই একটি চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম। তিনিও ছিলেন আপন বোন এবং তার ছেলের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ।

✍ সিরাজউদ্দৌলাকে যখন নবাব আলীবর্দী খাঁ বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করে যান তখন থেকেই ঘসেটি বেগম সিরাজ এবং তার মা আমেনা বেগমের প্রতি ক্ষুব্ধ। আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর সিরাজ ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি প্রতিহিংসায় উন্মাদিনী হয়ে যান। কারণ তিনিও চেয়েছিলেন তার পোষ্যপুত্র সিংহাসনে বসুক এবং তিনি রাজ্য পরিচালনা করেন। এজন্যে তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। যেমনটি দেখা যায় উদ্দীপকের নাজমা চরিত্রের মাঝে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জমিদার: [সাহেবের পা জড়িয়ে ধরল] আমাকে বাঁচান হুজুর। আপনি আমার জন্মদাতা পিতা, আমি ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে কসম করছি, চিরদিন গোলাম হয়ে থাকব। . . . .
সাহেব: জমিদার মেরাজ আলী আমার পদ ছাড়–ন। উত্থান করুন . . . . . .
জমিদার: আমি আপনার অনুগত ভৃত্য হুজুর।
ক. ছোট-বড় মিলিয়ে নবাবের পক্ষে কতটি কামান ছিল?
খ. ‘বৃদ্ধ নবাবকে ছলনায় ভুলিয়ে সিংহাসন দখল করেছ” - ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের জমিদার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি সম্পর্কে তোমার মতামত উপস্থাপন কর।

২১নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ছোট-বড় মিলিয়ে নবাবের পক্ষে মোট দশটি কামান ছিল।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উক্ত কথাটি বলেছেন সিরাজের বড়খালা ঘসেটি বেগম, সিরাজের মা আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে।

✍ নবাব আলিবর্দী খাঁ সিরাজকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করার পর থেকে সিংহাসনের অন্যতম প্রার্থী ঘসেটি বেগম হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরতে থাকেন। এবং সিরাজ যখন বাংলার মসনদে বসেন তখন তিনি প্রতিনিয়ত সিরাজের ধ্বংস কামনা করতেন। আমেনা বেগমকে তিনি বলেন, সিরাজ নবাব হওয়াই তার সবচেয়ে বড় ক্ষতি। তার মতে বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী খাঁকে ছলনায় ভুলিয়ে সিরাজ ক্ষমতা দখল করে। আর এজন্যেই তার সমস্ত রাগ হিংসা ঘৃণা সিরাজ এবং তার মায়ের উপর।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের জমিদার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর চরিত্রের প্রতিনিধি।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নাট্যকার অতি সচেতনভাবে ইতিহাসকে ব্যবহার করেছেন। এখানে বাংলার স্বাধীনতা হারানোর জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছেন। তাদের চরিত্রের নেতিবাচকতা নাটকের নায়ক সিরাজকে আরও উজ্জ্বল ও বেগবান করেছে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় জমিদার মেরাজ আলী একজন ইংরেজদের পদহেলনকারী জানোয়ার। তার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই। নিজের অপকর্মকে ঢাকার জন্যে ইংরেজদের পা ধরে অনুরোধ করে এবং জন্মদাতা বলে স্বীকার করে। সে এতই নীচ মানসিকতার মানুষ যে বাঁচার জন্যে ধর্মকেও বিসর্জন দিতে চায়। ঠিক এ ধরনের মানসিকতা লক্ষ করি নাটকের মিরজাফর চরিত্রে। তার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই। নেই কোনো মানসিকতা বোধ। সেনাপতি হয়েও সে নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলার মসনদে বসে এবং ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে নবাবি চালায়। সে এতটাই ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ যে ইংরেজদের হাত ধরে ছাড়া মসনদে বসে না। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি আমার মতে যথার্থ নয়।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে রয়েছে বহুমুখী ভাবের সমাবেশ। সেখানে মাত্র একটি ভাবের দ্বারা নাটকের সম্পূর্ণ বিষয়কে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। প্লট বা কাহিনী অনুযায়ী আলোচনা বা বর্ণনা ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে কোনো বর্ণনা বা বিষয় উপস্থাপন করলে নাটকের মূলভাবকে প্রকাশ করা যায় না।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় মেরাজ আলী নামের এক অত্যাচারী লম্পট জমিদার তার অপকর্মকে চাপা দেয়ার জন্যে ক্ষমতাধর ইংরেজদের হাতে পায়ে ধরে। পিতা বলে পরিচয় দেয়। চিরদিন ইংরেজের গোলাম হয়ে থাকার কথা স্বীকার করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে। পা ধরে পড়ে থাকে। এটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বহুমুখী দিকের মধ্যে একটি মাত্র দিক। এর পাশাপাশি বিচিত্র সব ভাব ও বিষয়ের সমাবেশ ঘটেছে নাটকের জমিনে।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথমে দেখি বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ইংরেজরা এদেশে আসলেও ক্রমে তারা এদেশ শাসনের স্বপ্ন দেখে। এজন্যে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে। সাধারণ মানুষের প্রতি অত্যাচার করে, নাটকে আরও রয়েছে এদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের ইংরেজদের পক্ষে যোগদান এবং নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তার পতন ত্বরান্বিত করা, সেনাপতি ও পরিজনদের বিশ্বাসঘাতকতা, যুদ্ধে নবাবের পরাজয়, বন্দী হওয়া এবং নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা, ইংরেজদের হাতের পুতুল হিসেবে মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ ইত্যাদি যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই আমার মতে প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ নয়।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জমিদার: আমি জমিদার। প্রজারা বলে আমি হায়ওয়ান আলী।
২। সুন্দরবনের বাঘ। রক্ত ছাড়া খাদ্য নাই।
আবু: আমারে মাফ করে দেন, বাড়ি ঘর ছেড়ে দিলেম, কাল সকালে বৌ এর হাত ধরে যেখানে হয় চলে যাব।
জমিদার: চলে যাবি?
১। উঃ আবার বৌ নিয়ে। মগের মুল্লুক।
জমিদার: জামাল। ওর হাতে চৌদ্দপোয়া করে ইট চাপিয়ে দে। যতক্ষণ টাকা না দেয়, চাবুক চালাবি। গুদাম ঘরে বন্দী।
আবু: মালিক, ঘরে আমার বৌ একলা। আতঙ্কে জীবন দিয়ে দিবে।
ক. দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে কোন স্থানের কথা উল্লেখ আছে?
খ. ‘আমাকে শেষ করে দিয়েছে হুজুর’ - কে, কেন এ কথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকের আবু ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের জমিদারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী একটি চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ।” মন্তব্যটি বিচার কর।

২২নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে নবাবের দরবারের কথা উল্লেখ আছে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কথাটি বলেছে ইংরেজদের অত্যাচারে সর্বস্বান্ত উৎপীড়িত ব্যক্তি।

✍ ইংরেজরা এদেশে বাণিজ্য করতে এসে এদেশের সাধারণ জনগণের উপর নানা জুলুম অত্যাচার শুরু করে। নবাব সিরাজের কাছ থেকে লবণের ইজারা নিয়ে তারা লবণ উৎপাদন শুরু করে। তারা প্রজাদের দাদন দিয়ে লবণ উৎপাদন করায় এবং কম দামে লবণ কিনে মজুদ করে এবং এক সময় দশ গুণ বেশি দামে সেই প্রজাদের কাছেই বিক্রয় করে। কোনো প্রজা যদি লবণ না বিক্রয় করে তখন তাদের উপর অত্যাচার করা হয়। সেই রকম অত্যাচারে অত্যাচারিত এক ব্যক্তি উক্ত উক্তিটি করে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের আবু ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তির প্রতিনিধি।

✍ দুর্বলরা চিরদিনই সবলের কাছে নির্যাতিত হয়ে আসছে। বর্তমান সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগেও এই ধারার পরিবর্তন ঘটেনি। উদ্দীপকে দেখা যায় দুর্বল প্রজার উপর জমিদার এবং নাটকে ইংরেজরা সাধারণ জনগণের উপর অত্যাচার করছে।

✍ উদ্দীপকের চিত্রে দেখা যায় ‘আবু’ সাধারণ একজন চাষী। সে ঠিকমতো খাজনা দিতে না পারায় জমিদারের রোষানলে পড়ে। জমিদারের হুকুমে তাকে আটকে রাখা হয় এবং হাতে ইট দিয়ে দাঁড়িয়ে রেখে চাবুক মারার নির্দেশ দেয়া হয় যতক্ষণ না খাজনার টাকা দেয়। এরকম জঘন্য অত্যাচারের চিত্র রয়েছে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে। এদেশের সাধারণ চাষীরা ইংরেজদের কাছে নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচারিত হতো। যার বাস্তব প্রমাণ নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তি। সাহেবদের কাছে লবণ বিক্রি না করার অপরাধে ইংরেজরা তার ঘর জ্বালিয়ে দেয়। তার স্ত্রীকে হত্যা করে। এই উৎপীড়িত ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্য রয়েছে উদ্দীপকের আবুর চরিত্রের।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের জমিদার চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ নাট্যকার নতুন মূল্যবোধের তাগিদে, ইতিহাসের বিভ্রান্তি এড়িয়ে ঐতিহ্য ও প্রেরণার উৎস হিসেবে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রটি আবিষ্কার করেছেন। ইতিহাসের কাছাকাছি থেকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি পদক্ষেপে ইতিহাসকে অনুসরণ করে তিনি সিরাজ চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন।

✍ উদ্দীপকের জমিদারের চরিত্রে অঙ্কিত হয়েছে একজন অত্যাচারী, লম্পট, লোভী, দেশ শাসকের চিত্র। সে প্রজাদের উপর নিষ্ঠুর আচরণ করে। খাজনা দিতে না পারলে চাবুক চালায়। সে নিজেকে প্রজাদের রক্তখেকো বাঘ মনে করে। প্রজারা তাই তাকে বলে হায়ওয়ান আলী। জমিদারের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চরিত্র নাটকের সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রটি।

✍ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র নবাব সিরাজ। তিনি একজন সৎ, নির্ভীক, দেশপ্রেমিক প্রজাপালক দেশ শাসক। তিনি দেশকে ভালোবাসতেন, প্রজাদের ভালোবাসতেন। সুখে দুঃখে প্রজাদের খোঁজখবর নিতেন। নৈতিক আদর্শে বলিয়ান এ দেশনেতার চরিত্রে ছিল দৃঢ়তা এবং মানবীয় সদ্গুণাবলিতে পূর্ণ। এজন্যে তিনি দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, দেশের মানুষের কল্যাণের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শফিক সাহেবের কাছে এসে আশ্রয় চায় আট বছর বয়সী আকরাম। সে প্রায় বিশ বছর আগের ঘটনা। তখন থেকেই তিনি আকরামকে স্নেহ ভালোবাসায় বড় করে তোলেন। আকরাম শিক্ষিত হলেও তার মনটা ছোট। সে সুযোগ খোঁজে আশ্রয়দাতার সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করার। কোনো একদিন অস্ত্রের মুখে শফিক সাহেবকে তার সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিতে বাধ্য করে এবং নিজ হাতে আশ্রয়দাতাকে হত্যা করে।
ক. কোন কয়েদখানায় সিরাজকে বন্দি করে রাখা হয়?
খ. ক্লাইভ কেন সিরাজকে হত্যা না করা পর্যন্ত স্বস্তি পায় না?
গ. উদ্দীপকের আকরাম নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক সাহেব এবং নবাব সিরাজের করুণ পরিণতির কারণ একই।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

২৩নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায় সিরাজকে বন্দি করে রাখা হয়।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কারণ ক্লাইভ জানে প্রজারা সিরাজকে ভালোবাসে এবং যে কোনো সময় বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে। তাই তিনি তাড়াতাড়ি চান সিরাজকে হত্যা করতে।

✍ পলাশী যুদ্ধে সিরাজ পরাজিত হওয়ার পর পাটনা যাওয়ার পথে ভগবানগোলায় বন্দি হন। তাকে রাখা হয় জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায়। কর্নেল ক্লাইভ সিরাজকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না। সিরাজের মৃত্যু নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তার স্বস্তি নেই, কারণ সে জানে সিরাজ প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন। প্রজারাও তাকে ভালোবাসতো। তাই প্রজারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করার আগে সে সিরাজকে হত্যা করতে চায়।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের আকরাম ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মোহাম্মদি বেগ চরিত্রের প্রতিনিধি।

✍ যে উপকারীর উপকার স্বীকার করে না সে নরকের কীটেরও অধম। তার মাঝে মনুষ্যত্ব বলতে কিছু থাকে না। যে মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এ ধরনের জঘন্য কাজ করে সে কখনোই কারো ভালোবাসা পায় না। উদ্দীপকের আকরাম এবং নাটকের মোহাম্মদি বেগ এ ধরনের চরিত্রের মানুষ।

✍ উদ্দীপকের আকরাম ছোটবেলায় শফিক সাহেবের কাছে আশ্রয় চায়। দয়ালু শফিক সাহেব তাকে আশ্রয় দেন এবং তাকে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করে তোলেন। কিন্তু কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আকরামের হীন মানসিকতার জন্যে সে আশ্রয়দাতার সম্পদের লোভে তাকে হত্যা করে সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে এমনই একটা চরিত্র মোহাম্মদি বেগ। সে ছোটবেলা থেকে সিরাজের মায়ের স্নেহছায়ায় আশ্রয় লাভ ও বড় হয়েছে। সামান্য কিছু টাকার জন্যে সে সিরাজকে হত্যা করে। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের শফিক সাহেব এবং সিরাজউদ্দৌলার করুণ পরিণতির কারণ একই।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ অর্থ-সম্পদের লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। একবার সেদিকে দৃষ্টি গেলে মানুষের সমস্ত নৈতিকতা, মূল্যবোধ হারিয়ে যায়। মানুষ তখন অমানুষে পরিণত হয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সে তখন বিরাট পাপ কাজ করে বসে। সেই পরিস্থিতির স্বীকার হয় সমাজের নিষ্পাপ ভালো মানুষগুলো।

✍ উদ্দীপকের শফিক সাহেব এমনই একজন নরপশুর আক্রমণের শিকার। যাকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন সেই তার বুকে চরম আঘাত হানে। তার মৃত্যুর কারণ তার সম্পত্তি। এই সম্পত্তির লোভে তারই আশ্রিত এবং পালিত আকরাম তাকে হত্যা করে। এমনই পরিণতির শিকার হতে দেখি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে।

✍ সিরাজউদ্দৌলা নবাব হবার পর তার আত্মীয় পরিজন ক্ষমতা ও ধন সম্পত্তির লোভে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সম্পদ হস্তগত করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এর জন্যে তারা বিদেশি ইংরেজদের সাথে হাত মেলায়। এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যুদ্ধে তার পরাজয় ঘটে। শেষ পর্যায়ে তাদেরই আশ্রিত এবং তার মায়ের কাছে পালিত মোহাম্মদি বেগ টাকার লোভে তাকে হত্যা করে। তাই বলা যায় উভয়ের পরিণতির কারণ একই।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনে। তিনি বাংলার মানুষের শান্তির জন্যে, কল্যাণের জন্যে আজীবন কাজ করে গেছেন। অথচ দেশ স্বাধীন হবার পর এদেশেরই কিছু সেনা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
ক. নবাব সিরাউদ্দৌলাকে প্রথম কী দ্বারা আঘাত করা হয়?
খ. ‘নিশ্চিন্ত হোক বাংলার প্রত্যেকটি নরনারী’- বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতীক? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের পরিণতি একই” মন্তব্যটি বিচার কর।

২৪নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে প্রথম লাঠি দ্বারা আঘাত করা হয়।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উক্ত বাক্যটি দ্বারা নবাব সিরাজউদ্দৌলার গভীর দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার ভাবটি প্রকাশিত হয়েছে।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের সেনার হাতে বন্দি হয়ে জাফরাগঞ্জ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখাটা শত্রুপক্ষের কাছে ভীতিজনক হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু বন্দি হয়েও নির্ভিক সিরাজ অবিচল। তিনি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন এদেশের মঙ্গল কামনায়। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তিনি এদেশের জন্যে এদেশের জনগণের জন্যে মোনাজাত করেন। কারণ তিনি ছিলেন প্রজাদরদী দেশপ্রেমিক নেতা।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের প্রতীক।

✍ একজন যোগ্য নেতাই পারে জাতিকে রক্ষা করতে। সঠিক পথে চালনা করতে। দেশ ও জাতির দুর্যোগময় মুহূর্তে তার হাত ধরেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নাটকের নায়ক সিরাজ এমনই দেশনেতা।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় দেশনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহবানে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনে। তিনি এদেশের জন্যে এদেশের মানুষের জন্যে সারাজীবন নিরলস পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারই কতিপয় সেনার হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এমনই একটা চরিত্র নাটকের সিরাজউদ্দৌলা। তিনিও প্রজাবৎসল দেশপ্রেমিক নেতা। দেশের কল্যাণের জন্যে তিনি কখনও কারও সাথে আপোষ করেননি। অথচ এদেশের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে তিনি পরাজিত ও নিহত হন। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই লক্ষণীয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের পরিণতি একই”। মন্তব্যটি সার্থক।

✍ একজন সাহসী ও মহান নেতার হাত ধরেই একটি দেশ বা জাতি সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন এ ধরনেরই দেশনেতা। অথচ এদেশের বিপথগামী কিছু মানুষ তা না বুঝে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে।

✍ উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেতা। তাঁর হাত ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং জয় লাভ করে। অথচ হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে কতিপয় বাঙালি সেনার হাতেই নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়। এমনই পরিণতি বরণ করতে দেখি নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা এ দেশের জন্যে এদেশের মানুষের জন্যে কী না করেছেন। জীবনের সমস্ত আয়েস বিসর্জন দিয়ে নিরন্তর দেশের কল্যাণের চিন্তায় মশগুল থেকেছেন। তিনি বাস্তবেই ছিলেন প্রজাবৎবল দেশ শাসক। অথচ ক্ষমতার লোভে ও প্রতিহিংসায় এদেশের মানুষের ষড়যন্ত্রে আটকা পড়ে তার করুণ মৃত্যু ঘটে। নিজের সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি পরাজিত হন এবং আশ্রিত মোহাম্মদি বেগের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সাহেব: সো নেটিভ জমিদার, বিদায় হও। আমি তোমাকে রক্ষা করিব। নিদ্রা যাও আর মুখ দ্বারা নাসিকা গর্জন কর।
[জমিদার সেলাম করতে করতে বিদায় নিল]
লেডিস এ্যান্ড জেন্টলম্যান, লর্ড কর্নওয়ালিসের খুব বুদ্ধি ছিল। তিনি পারমানেন্ট সেটেলমেন্ট দ্বারা জমিদার করিলেন আর জমিদারগণ লেজ নাড়িতে লাগিল। আপনারা বলেন, কর্নেল ক্লাইভ যুদ্ধ করিয়া বঙ্গদেশ জয় করিলেন নো, নেভার। আই মাস্ট নট টক লাইক এ্যান ইডিয়ট। ইতিহাসকে মিথ্যা করিতে পারিব না। বাংলাদেশের মেরাজ আলীসকল আপন হস্তে ক্লাইভের পকেটে বাংলাদেশ ঘুষড়াইয়া দিলেন। সো লঙ লিভ মেরাজ আলী, লঙ লিভ জমিদার জাতি।
ক. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম বাণিজ্য কুঠি কোনটি?
খ. ইংরেজ জাতি ভারতবর্ষে কেন আসে?
গ. উদ্দীপকের সাহেব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রকে মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের সাহেবের মন্তব্যটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সত্য।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

২৫নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম বাণিজ্য কুঠি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ প্রাথমিকভাবে ইংরেজ জাতি বাণিজ্য করার জন্যে এলেও এদেশে উপনিবেশ স্থাপনই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।

✍ ভাস্কো-দা-গামার আবিষ্কৃত জলপথে ভারতবর্ষে ইংরেজদের আগমন ঘটে। প্রথমে তারা বাণিজ্য করার বাসনা নিয়ে আসলেও এদেশের সম্পদ দেখে এখানে উপনিবেশ স্থাপন করার স্বপ্ন দেখে। ক্রমে তারা শক্তি সঞ্চয় করে এবং ছলে বলে কৌশলে এদেশের মানুষকে হাত করে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের সাহেব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ক্লাইভ সাহেব চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।

✍ ইংরেজরা প্রগতিশীলতার শীর্ষে অবস্থান করলেও তারা মানুষকে শোষণ করার নীতি থেকে এক পাও সরে আসেনি। সারা পৃথিবীর দুর্বল কোনো জাতি তাদের আগ্রাসনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তাদের সেই স্বভাবের পরিচয় পাই উদ্দীপকে এবং নাটকে।

✍ উদ্দীপকের সাহেব চরিত্রে ইংরেজদের চরিত্রের সবটুকু ফুটে উঠেছে। সে জমিদারদের হস্তগত করে এদেশের সাধারণ জনগণকে শোষণের পথকে ত্বরান্বিত করে। তার বক্তব্যে ইংরেজদের চরিত্রের যাবতীয় নেতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে। এমনই একটা চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কর্নেল ক্লাইভ। সে প্রথমে দেশের ক্ষমতালোভীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে তাদের সাথে সখ্যতা স্থাপন করে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা হস্তগত করে। উভয় চরিত্রের এখানেই সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের সাহেবের বক্তব্যটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সত্য।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ এমন কোনো কাজ নেই যে কাজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে ইংরেজ জাতি করতে পারে না। তাদের মজ্জাগত স্বভাব হলো ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতা হস্তগত করা, শাসন শোষণ করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়া। উদ্দীপকের এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের এমন রূপেই দেখা যায়।

✍ উদ্দীপকের সাহেবের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে ইংরেজ জাতির প্রকৃত রূপটি। তার মতে কর্নেল ক্লাইভ যুদ্ধ করে বঙ্গদেশ জয় করেনি করেছে ছলনা ও চাতুরীর সাহায্যে। আর তাকে সাহায্য করেছে কিছু কাপুরুষ ক্ষমতালোভী এদেশের ঘৃণ্য চরিত্রের মানুষ। সাহেবের এই বক্তব্যটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সত্য।

✍ নাটকে দেখা যায় ইংরেজ জাতি প্রথমে বাণিজ্য করার নামে এদেশে এলেও ক্রমে তারা এদেশে ক্ষমতার শিকড় গভীরে প্রবেশ করাতে থাকে। এজন্যে তারা নানা চাতুরতা, ষড়যন্ত্র, শক্তি প্রয়োগ করতে থাকে। তাদের সাহায্য করে এদেশের কিছু ক্ষমতালোভী হীন চরিত্রের মানুষ। সে সুযোগ গ্রহণ করে ইংরেজরা এদেশের শাসন ব্যবস্থাকে নিজেদের করায়ত্ত করে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
রাজবল্লভ: আপনারা তর্কের ভেতর যাচ্ছেন আলোচনা শুরু করার আগেই। খুব সংক্ষেপে কথা শেষ করা দরকার। বর্তমান অবস্থায় এই ধরনের আলোচনা দীর্ঘ করা বিপজ্জনক।
জগৎশেঠ: কথা ঠিক। কিন্তু নিজের স্বার্থ সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়ে একটা বিপদের ঝুঁকি নিতে যাওয়াটাও তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাফ করবেন বেগম সাহেবা, আমি খোলাখুলি বলছি। অঙ্গীকার করে লাভ নেই যে, শওকতজঙ্গ নিতান্তই অকর্মণ্য। ভাংয়ের গেলাস এবং নাচওয়ালি ছাড়া সে আর কিছুই জানে না। কাজেই শওকতজঙ্গ নবাব হবে নামমাত্র। আসলে কর্তৃত্ব থাকবে বেগম সাহেবার এবং পরোক্ষে তাঁর নামে দেশ শাসন করবেন রাজবল্লভ।
রায়দুর্লভ: ঠিক এই ধরনের একটা সম্ভাবনার উল্লেখ করার ফলেই হোসেন কুলি খাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
জগৎশেঠ: আমি তা বলছিনে। তা ছাড়া এখানে সে কথা অবান্তর। আমি বলতে চাইছি যে, শওকতজঙ্গ নবাবি পেলে বেগম সাহেব এবং রাজা রাজবল্লভের স্বার্থ নির্বিঘ্ন হবে আমাদের তেমন আশা নেই। কাজেই আমাদের পক্ষে নগদ কারবারই ভালো।
ক. ক্লাইভ এবং ওয়াটস কী ছদ্মবেশ ধারণ করে?
খ. মিরজাফররা সিরাজের পতন চায় কেন?
গ. উদ্দীপকের রাজবল্লভ এবং জগৎশেঠ চরিত্রের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ষড়যন্ত্রকারীদের কারণেই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের নির্মম এবং করুণ পরিণতি ঘটে। ”মন্তব্যটি বিচার কর।

২৬নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ক্লাইভ এবং ওয়াটস মহিলাদের ছদ্মবেশ ধারণ করে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাব সিরাজের পতন হলে মিরজাফরসহ আরও অনেকের স্বার্থ উদ্ধার হবে এজন্যে তারা সিরাজের পতন চায়।

✍ মিরজাফর ইংরেজদের প্ররোচনায় ধীরে ধীরে বাংলার মসনদের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ক্ষমতার লোভে তার সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যার ফলে তিনি সিরাজের পতনের জন্যে অন্যান্যদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। কারণ তারাও চায় সিরাজের পতন হোক। রাজবল্লভ, উমিচাঁদ, মানিকচাঁদ, ঘসেটি বেগম প্রমুখ মনে করেন সিরাজের পতন হলে যে যার জায়গা থেকে লাভবান হবে। এই সুযোগ গ্রহণ করে ইংরেজরা। তারাও এই দলে যোগ দিয়ে সবাই মিলে নবাব সিরাজের পতনকে ত্বরান্বিত করে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের রাজবল্লভ ও জগৎশেঠ চরিত্রের মাঝে রয়েছে গভীর সাদৃশ্য।

✍ স্বার্থচিন্তা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। জাগতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্যে এরা মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে অন্যের সর্বনাশ করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। উদ্দীপকের রাজবল্লভ ও জগৎশেঠ এ ধরনের চরিত্রের দুজন মানুষ।

✍ রাজবল্লভ এবং জগৎশেঠ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। এরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। রাজবল্লভ বিক্রমপুরের লোক। সে ছিল বাঙালি বৈদ্য এবং জাহাজের কেরানি। হোসেন কুলি খাঁর মৃত্যুর পর ঢাকার দেওয়ান হয়। পরবর্তীতে ঘসেটি বেগমের সাথে মিলিত হয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। জগৎশেঠ হলো উপাধি। তার আসল নাম মহতাব চাঁদ। নবাব সরফরাজ খাঁকে হটিয়ে বাংলার মসনদে আলীবর্দী খাঁকে বসানোর পেছনে জগৎশেঠের হাত থাকলেও স্বার্থের জন্যে নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কেননা তিনি চেয়েছিলেন সিরাজকে তার হাতের মুঠোয় রাখতে। সেটা যখন পারলেন না তখন সিরাজের পতনের জন্যে অন্যান্যদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের ষড়যন্ত্রকারীদের কারণেই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের নির্মম ও করুণ পরিণতি ঘটে।” মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।

✍ সিরাজউদ্দৌলা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। কিন্তু তার সিংহাসনে বসার পর থেকেই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। উদ্দীপকের জগৎশেঠ ও রাজবল্লভ সেসব ষড়যন্ত্রকারীর মধ্যে অন্যতম।

✍ নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসেন। এই মসনদের অন্যতম দাবীদার ঘসেটি বেগম ও তার পালিত পুত্র বিষয়টি ভালোভাবে মেনে নিতে পারেন না। তাছাড়া নবাব স্বাধীনচেতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, সর্বোপরি প্রজাবৎসল হওয়ায় কিছু মানুষের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করে। যার ফলে তারা নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

✍ নবাব সিরাজ তারুণ্যের পূজারী ও নির্ভীক হওয়ায় অন্যায়কে কখনোই প্রশ্রয় দিতেন না। এদেশে ব্যবসার জন্যে আশা ইংরেজদের ধৃষ্টতা এবং চারপাশের লোকজনের স্বার্থান্বেষী কর্মকাণ্ডকে তিনি কঠোর হাতে দমন করতে চেয়েছিলেন। এজন্যে ক্রমে তার শত্রু বাড়তে থাকে। সঙ্গে ক্ষমতালোভী আত্মীয় পরিজনদের প্রতিহিংসা তার পতনের পথকে ত্বরান্বিত করে। একসময় তিনি ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে পড়েন। ষড়যন্ত্রকারীরা ছলে বলে কৌশলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বদ্ধপরিকর হয়। উদ্দীপকের রাজবল্লভ ও জগৎশেঠসহ খালা ঘসেটি বেগম, বেনিয়া ইংরেজরা, সেনাপতি মিরজাফর প্রমুখদের ষড়যন্ত্রের কারণে তার জীবনের নির্মম পরিণতি ঘটে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যুক্তিযুক্ত।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মাস্টার দা সূর্যসেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এ দেশের গণমানুষকে জাগিয়ে তুলতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। তাঁরই নির্দেশে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল হামলার পর ব্রিটিশ শাসকদের টনক নড়ে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে ১০,০০০/- টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। অর্থের লোভে জনৈক ব্যক্তি তার অবস্থান জানিয়ে দিলে তিনি ধরা পড়েন। অতঃপর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ক. সিরাজউদ্দৌলা কোন স্থানে বন্ধি হন?
খ. ‘এ-পীড়ন তুমি দেখলে না?’ - কে, কেন বলেছে এ কথা?
গ. উদ্দীপকের মাস্টার দা সূর্যসেন ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের সূর্যসেন এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা একই পরিণতির শিকার হয়েছেন।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

২৭নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা বন্দি হন ভগবানগোলা নামক স্থানে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কথাটি বলেছেন নবাব সিরাজ তার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার উপরে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে।

✍ নবাবকে বন্দি করে জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায় নিক্ষেপ করা হয়। তাকে হত্যা করার জন্যে মোহাম্মদি বেগকে নির্দেশ দেয় মিরজাফরের পুত্র মিরন। তার হুকুমে মোহাম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করতে যায়। সে প্রথমে সিরাজকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তিনি লুটিয়ে পড়েন। মাথা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন তিনি। তিনি স্খলিত কন্ঠে তখন বলে উঠেন লুৎফা, খোদার কাছে হাজার শুকরিয়া, এ-পীড়ন তুমি দেখলে না।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের মাস্টার দা সূর্যসেন ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের প্রতিনিধি।

✍ মাস্টার দা সূর্যসেন একজন স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী ছিলেন। এদেশের স্বাধীনতার জন্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। দেশের প্রতি অসীম ভালোবাসার তাগিদে তিনি নিজের সমস্ত কিছু উজাড় করেছেন।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় মাস্টার দা সূর্যসেন ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এজন্যে তারই নির্দেশে ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল হামলার পর ব্রিটিশ শাসকের টনক নড়ে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে ইংরেজরা পুরস্কার ঘোষণা করলে জনৈক লোভী ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি ধরা পড়েন ও নিহত হন। নাটকের নবাব সিরাজ এমনই দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বাধীনতা। তিনি এ দেশের মানুষের মুক্তি চেয়েছেন। এজন্যে তাকেও নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়। এখানেই রয়েছে উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের সূর্যসেন এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা একই পরিণতির শিকার হয়েছেন।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ দেশপ্রেমিকের কোনদিন মৃত্যু হয় না। সমস্ত দেশ ও জাতি তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। উদ্দীপকের মাস্টার দা সূর্যসেন ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা এমনই দেশপ্রেমিক পুরুষ। তাঁরা দেশের জন্যে নিজের জীবনের সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়েছেন। এজন্যে আজও তাঁরা জাতির চেতনাতে বেঁচে রয়েছেন।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় মাস্টার দা সূর্যসেন এদেশের দখলদার ব্রিটিশদের শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এদেশের জনগণকে জাগিয়ে তুলতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। তাঁরই নির্দেশে বিদ্রোহীরা চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল হামলা চালায়। এতে ব্রিটিশরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই একই ধরনের পরিণতিকে বরণ করতে দেখি নাটকের নবাব সিরাজকে।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজও চেয়েছেন দেশ ও দেশের জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীন রাখতে। তাই তিনি ইংরেজদের মোটেও সহ্য করতে পারতেন না। তিনি প্রাণপণে দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে তিনি করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তাই বলা যায় প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও সূর্যসেন ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা একই পরিণতির শিকার হয়েছেন। তাই বলা যায় মন্তব্যটি যথার্থ।

HSC সিরাজউদ্দৌলা নাটক (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (বাংলা সহপাঠ)

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
উড: শালা বড় হারামজাদা, দাফনের টাকা নিবি তুই. . . শালা বড় বজ্জাত (জুতার গুতা প্রহার) শ্যামচাঁদকা সাৎ মূলাকাৎ হোনেসে, হারামজাদ্কি সব ছোড় যাগা।
রাই: (সক্রোধে) ও দাদা, তুই চুপ দে, ঝা ন্যাকে দিতে চাচ্ছে ন্যাকে দে। ক্ষিদের চোটে নাড়ি ছিঁড়ে পড়লো, সারা দিনডে গ্যাল; নাতিও পালাম না খাতিও পালাম না।
আমিন: কই শালা ফৌজদারি করলি নে। (কানমলন)
রাই: (হাঁপাইতে) মরলাম, মাগো! মাগো!
উড: ব্লডি নিগার, মারো বাঞ্চৎকো। (শ্যামাচাঁদাঘাত)
ক. ‘আমার বৌকে ওরা খুন করে ফেলেছে হুজুর’- একথাটি কে বলেছে? ১
খ. ‘আমাকে শেষ করে দিয়েছে হুজুর- ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকের রাই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখা কর। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের উড ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনা এক সূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটি বিচার কর। ৪

২৮নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কথাটি বলেছে উৎপীড়িত ব্যক্তি।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ‘আমাকে শেষ করে দিয়েছে হুজুর’ কথাটি বলেছে ইংরেজ দ্বারা অত্যাচারিত জনৈক উৎপীড়িত ব্যক্তি।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে লবণ চাষের ইজারা দেন। ইজারা পেয়ে ইংরেজরা জোর করে সাধারণ মানুষের উপর জুলুম শুরু করে। কোম্পানির লোকেরা কম দামে চাষীদের কাছ থেকে লবণ কিনে আবার তাদের কাছেই বেশি দামে বিক্রয় করতো। তাদের নির্ধারিত দামে কোনো চাষী লবণ বিক্রয় করতে অস্বীকার করলে তাদের উপর চরম নির্যাতন চালাতো। যেমন চালিয়েছে উৎপীড়িত ব্যক্তির উপর। ইংরেজরা তার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এজন্যে উক্ত কথার মাধ্যমে নবাব সিরাজের কাছে তার মনবেদনা জানিয়েছে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের রাই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তির প্রতিনিধি।

✍ ইংরেজরা ভারতবর্ষে আসে বাণিজ্য করতে। ক্রমে তারা এদেশের ধন-সম্পদের লোভে উপনিবেশ গড়তে স্বপ্ন দেখে। এর জন্যে তারা প্রথমে আঘাত করে এদেশের জনগণের তথা শাসন ব্যবস্থার উপর। উদ্দীপকের এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় রাই ইংরেজদের দ্বারা চরমভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। সে দাদনের টাকা নিয়ে নীল চাষ কেন করেনি এজন্যে ইংরেজরা তাকে কুঠিতে ধরে এনে অত্যাচার করে। না খাইয়ে রাখে। চাবুক মারে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। রাইয়ের মতো অত্যাচারিত হতে দেখি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে জনৈক উৎপীড়িত ব্যক্তিকে। সে ইংরেজদের কাছে তাদের নির্ধারিত দামে লবণ বিক্রয় না করার জন্যে তারা তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তার স্ত্রীকে পাশবিক অত্যাচার করে হত্যা করে। এমনিভাবে সাধারণ প্রজারা ইংরেজদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়। রাই এবং নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তির এখানেই সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের উড এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনা এক সূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ইংরেজ বেনিয়ারা এদেশে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এলেও ক্রমে তারা এদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। ক্রমে ক্রমে এদেশের সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সচেষ্ট হয়।

✍ উদ্দীপকের ‘উড’ ইংরেজদেরই একজন প্রতিনিধি। তাকে দেখি নিজেদের ব্যবসায় সফলতা অর্জনের জন্যে এদেশের জনগণের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে। এখানে দেখি তারা এদেশের চাষীদের দাদন দিয়ে জোর করে নীল চাষ করতে বাধ্য করে। এ ক্ষেত্রে তাদের সকলেরই চেতনা একই ধারায় প্রবাহিত। যার প্রতিফলন লক্ষ করি নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনাগত বৈশিষ্ট্যে।

✍ নাটকের প্রথম থেকেই লক্ষ করি ইংরেজদের নির্লজ্জ অসামঞ্জস্য আচরণ। তারা নিজেদের স্বার্থে এদেশের সাধারণ মানুষের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে। দাদন দিয়ে লবণ চাষের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের উপর তাদের অত্যাচার শুরু করে। ক্রমে তারা এদেশের শাসন ব্যবস্থার দিকে হাত বাড়ায়। ছলে বলে কৌশলে তারা এদেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এখানেই উদ্দীপকের উড এবং নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনা এক সূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-২৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
রবীন্দ্রনাথের মতে সমগ্র ইংরেজ জাতটা এই ভারতবর্ষকে লইয়া সমৃদ্ধি সম্পন্ন হইয়া উঠিয়াছে। . . . . . . . কিন্তু প্রতিটি ইংরেজ জানে তারা এদেশের অধিবাসী নয়। বহু দূর থেকে তারা শাসনের নাম করে শোষণ করার জন্য এখানে এসেছে। এখানে তাদের বিচারক কেউ নেই। . . . . . . . . . ইংরেজরা জানতো ভারতবর্ষ তাদের ভাড়ার ঘর। . . . . . . . ভারতরাষ্ট্রীয় ও ইংরেজদের মাঝে ছিল এই হৃদয়ের ব্যবধান। তাই শোষক ও শোষিতের সম্পর্কই তাদের শেষ পরিচয় রয়ে গেল।
ক. নবাব সিরাজ কাকে আলিনগরের দেওয়ান নিযুক্ত করলেন?
খ. ‘শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্যই হাসিল হবে।’ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথের মতটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের স্বার্থান্বেষী মনোভাবকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি যাচাই কর।

২৯নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ নবাব সিরাজ মানিকচাঁদকে আলিনগরের দেওয়ান নিযুক্ত করলেন।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ ‘শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্যই হাসিল হবে’ কথাটি দ্বারা সিরাজের শত্রুদের স্বার্থান্বেষী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে।

✍ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয় যে কীভাবে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়। উমিচাঁদ, জগৎশেঠ, মানিকচাঁদ, রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ, মিরজাফর, ঘসেটি বেগম সবাই চান সিরাজের পতন। তারা মনে করে সিরাজের জায়গায় শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলেরই স্বার্থসিদ্ধি হবে। তাদের সকলের ইচ্ছা পূরণ হবে। এজন্যে বলা হয়েছে শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্য হাসিল হবে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকটির সাথে নবাব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের স্বার্থান্বেষী চেতনা ও শোষণনীতির বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ ইংরেজদের প্রগতিশীলতার অগ্রদূত হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিতি রয়েছে। দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য সকল ক্ষেত্রে তাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করা হলেও তাদের স্বার্থান্বেষী স্বভাবের কথাও কারো অজানা নয়। স্বার্থসিদ্ধির জন্যে তারা যে কোনো কাজ করতে পারে।

✍ উদ্দীপকে ইংরেজদের আচরণের নির্লজ্জ দিকটি আলোচনা করা হয়েছে। হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা ভারতবর্ষে ব্যবসা করতে এসে এদেশের মানুষের উপর শোষণনীতি গ্রহণ করে। শাসন ক্ষমতা হস্তগত করার পরে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এদেশের মানুষকে তারা কখনোই ভালোবাসেনি। এদের তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে ব্যবহার করেছে। উদ্দীপকের ইংরেজদের এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় নাটকের ইংরেজেদের চরিত্রে। তারা বাণিজ্যের নামে এদেশে প্রবেশ করলেও ক্রমে তারা এদেশের সাধারণ মানুষের তথা শাসন ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করে এবং কৌশলে তা হস্তগত করে। তারপর শুরু করে শোষণনীতি। উভয় ক্ষেত্রে এখানেই সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকের রবীন্দ্রনাথের মতটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের স্বার্থান্বেষী মনোভাবকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ইংরেজদের আচরণ উপর থেকে স্বাভাবিক, মানবিক মনে হলেও উপমহাদেশে তাদের উপস্থিতি এবং এদেশের মানুষের সাথে তাদের ব্যবহারই বলে তারা কতটা স্বার্থপর। সারা বিশ্বে তাদের উপনিবেশ প্রসারিত করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে তাদের জুড়ি নেই।

✍ উদ্দীপকের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ইংরেজদের সম্পর্কে এমনই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে ইংরেজ জাতি ভারতবর্ষে এসে সমৃদ্ধি সম্পন্ন হয়ে উঠেছে। তারা এদেশে শাসনের নামে শোষণ করে স্বার্থ হাসিল করেছে। তারা ভারতবর্ষকে মনে করতো ভাড়ার ঘর। তারা কখনোই এদেশের মানুষকে আপন ভাবেনি। ইংরেজদের এই স্বভাব পরিলক্ষিত হয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে।

✍ নাটকে ইংরেজদের এই ন্যাক্কারজনক চেহারা পরিলক্ষিত হয়। প্রথম থেকেই তাদের এই নির্লজ্জ চেহারাটা আমরা দেখতে পাই। তারা এদেশে বাণিজ্য করার জন্যে এসে এদেশের নবাবের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এদেশের স্বার্থান্বেষী মানুষদের সাথে হাত মিলিয়ে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করে এদেশের শাসন ব্যবস্থায় নিজেদের কর্তৃত্ব এবং শোষণনীতি প্রতিষ্ঠা করে। যা উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বক্তব্যে বলে গেছেন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-৩০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আবু: আমি তো বলেছি, ফসল উঠলেই খাজনা ওসুল করে দিব। তবু আমার বলদ জোড়া ধরে নিয়ে এল। আজ আমার এত
হেনেস্তা। আমিতো একটা মানুষ। আমার মাথার ওপরে আল্লাহ, পায়ের নিচে মাটি।
জমিদার: চোপরও হারামজাদা। আবতক হামারা সামনে মুখ খুলকে বাৎ করতা হায়। জামাল, হারামজাদসে পঞ্চাশ রূপেয়া জরিমানা আদায় কর।
আবু: পঞ্চাশ টাকা আমার নাই হুজুর।
জমিদার: নাই?
আবু: আল্লার কসম।
জমিদার: জানিস আমি কে?
আবু: আপনি গরিবের বাপ মা হুজুর।
ক. কলকাতার নাম আলিনগর কে রাখেন?
খ. ‘এ তো ডাকাতি’- কে, কেন একথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকের জমিদারের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটির যৌক্তিকতা নিরূপণ কর।

৩০নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ কলকাতার নাম আলিনগর রাখেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উৎপীড়িত ব্যক্তির প্রতি ইংরেজদের অত্যাচারের কারণ শুনে মিরজাফর উক্ত উক্তিটি করেছেন।

✍ নবাবের দরবারে ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে আসে উৎপীড়িত এক ব্যক্তি। সে একজন লবণ প্রস্তুতকারক। তার কাছে জানা যায় লবণের ইজারাদার কুঠিয়াল ইংরেজ স্থানীয় লোকদের তৈরি যাবতীয় লবণ তিন/চার আনা মণ দরে পাইকারী হিসেবে কিনে নেয়। তারপর এখানে বসেই এখানকার লোকদের কাছে সেই লবণ দুই টাকা লাড়াই টাকা মণ দরে বিক্রি করে। ঘটনাটি শুনে মিরজাফর উক্ত কথাটি বলেন।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের জমিদারের সাথে ‘সিরাজউদ্দৗলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

✍ জমিদারি আমলে প্রায় জমিদারই ছিলেন প্রজাপীড়ক। তারা সাধারণ মানুষের উপর নানাভাবে শোষণ, অত্যাচার করতো। সারাক্ষণ তারা সুরা, নারী নিয়ে মেতে থাকলেও সাধারণ মানুষের দুর্দশার অন্ত ছিল না। নানারকম খাজনা কর পরিশোধ করতে তারা হিমশিম খেত। তার পরেও তারা অত্যাচার থেকে রেহাই পেতো না।

✍ উদ্দীপকের জমিদার এই ধরনের চরিত্রের একজন মানুষ। তাকে দেখা যায় সাধারণ দরিদ্র প্রজার উপর নিপীড়ন করতে। খাজনা দিতে না পারায় তার উপর অত্যাচার করতে। তার জমি চাষের বলদ ধরে এনে তাকে সর্বস্বান্ত করেও তাকে নিস্তার দেয়নি, বৌ-ধরে এনে অত্যাচার করেছে। জমিদারের এই চরিত্রের বিপরীত চরিত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলা। তিনি ছিলেন একজন প্রজাদরদী শাসক। প্রজাদের তিনি খুব ভালোবাসতেন। প্রজাদের সুখ দুঃখের খোঁজ নিতেন। ইংরেজরা সাধারণ প্রজার উপর অত্যাচার চালালে তাদের শাস্তি দিতেও দেখা যায়। জমিদারের সাথে এখানে সিরাজের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি যথার্থ নয়।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ একটি ঐতিহাসিক নাটক। নাট্যকার সচেতনভাবে ইতিহাসকে আশ্রয় করে নাটকের প্লট নির্মাণ করেছেন। এখানে তিনি বহুমুখী ভাবের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। বাংলা ও বাঙালির জীবনাচরণ এতে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে শুধু তার একটি ভাবের প্রকাশ ঘটেছে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায় প্রজাপীড়ক জমিদার এবং অত্যাচারিত এক প্রজার জীবনাচরণের চিত্র। জমিদার খাজনা দিতে না পারায় দরিদ্র প্রজাটির চাষের সম্বল তার বলদ ধরে আনে। তারপরেও ক্ষান্ত হয় না সে। প্রজাটিকে ধরে এনে খাজনা আদায় করার জন্যে অত্যাচার করে। উদ্দীপকের এ ভাবটি শুধু নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রজাদরদী স্বভাবকে আমাদের মনে করিয়ে দেয় মাত্র অন্য কোনো ভাবের ইঙ্গিত এখানে নেই।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বহুমুখী বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে। সেখানে রয়েছে বেনিয়া ইংরেজদের এদেশে আগমন, এদেশে তাদের বাণিজ্যের প্রসারতা, সাধারণ মানুষের প্রতি অত্যাচার, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ, নবাবের পারিষদদের চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতা, এর ফলে নবাবের পরাজয় ও নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ, ইংরেজদের স্বার্থ উদ্ধার প্রভৃতি বিষয় যার রেশ উদ্দীপকের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক
সৃজনশীল প্রশ্ন-৩১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জমিদার বসন্ত রঞ্জন চৌধুরী তার পুত্র শরৎচন্দ্রকে একজন মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিলেন। লেখাপড়া শিখিয়ে একজন খাঁটি মানুষ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু শরৎ সে পথে হাঁটে নি। যৌবনে কুসঙ্গে পড়ে একেবারে বখে যায়। সারাক্ষণ জমিদারের বাগানবাড়ি পড়ে থাকে বাইজীদের সাথে। জলসা ঘরে বাইজরি নাচ গানের মধ্যে সারাক্ষণ ডুবে থাকে আর কীভাবে পিতাকে সরিয়ে জমিদারির সমস্ত ক্ষমতা হস্তগত করবে সে চক্রান্তের জাল বুনতে থাকে।
ক. মিরন কার ছেলে?
খ. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজকে হিংসা করতো?
গ. উদ্দীপকের শরৎচন্দ্র চরিত্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রের ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদৌলা’ নাটকের কতটুকু ভাব ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে? তোমার পক্ষে যুক্তি দাও।

৩১নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:
ক. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ মিরন মিরজাফরের ছেলে।

খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ সিরাজের জন্যে তার এতদিনের লালিত স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার কারণে ঘসেটি বেগম সিরাজকে হিংসা করেন।

✍ ঘসেটি বেগম সিরাজের বড় খালা। আলীবর্দী খাঁ’র জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি স্বপ্ন দেখতেন নবাবের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠপুত্র শওকত জঙ্গ বাংলার নবাব হবেন। কিন্তু সমস্ত ক্ষমতা থাকবে তার হাতে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় নবাব আলীবর্দী খাঁ’র সিদ্ধান্তে। তিনি দেখলেন তার চোখের সামনে দিয়েই ছোটবোন আমেনার পুত্র সিরাজ বাংলার মসনদে বসলেন। তারপর থেকে তিনি নবাব সিরাজকে হিংসা করতে শুরু করেন। কারণ সিরাজই তার সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।

গ. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ উদ্দীপকের শরৎচন্দ্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের পুত্র মিরনের চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ তৎকালীন জমিদার, বা রাজা বাদশাদের একটা অভ্যাস ছিল বাইজীদের নাচ দেখা, অনৈতিক জীবনযাপন করা। এসব বিষয় একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু কেউ কেউ এই ঘৃণ্য জীবনযাত্রা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, কেউ বা এটাকে জীবনের একমাত্র সম্বল বলে ধরে নিয়ে ধ্বংস হয়েছে।

✍ উদ্দীপকের শরৎচন্দ্র চরিত্রে দেখা যায় - দুশ্চরিত্র ব্যভিচারী জীবন কাটাতে। পিতা তাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলেও সে কুসঙ্গে পড়ে বখে যায়। সারাক্ষণ বাইজীদের নিয়ে মগ্ন থাকে এবং কীভাবে পিতার জমিদারির সর্বময় ক্ষমতা হস্তগত করা যাবে সে চক্রান্ত করে। এ ধরনের একটা চরিত্রের সন্ধান পাই ‘সিরাজউদৌল্লা’ নাটকে মিরন চরিত্রের মাঝে। নির্লজ্জ বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের ছেলে সে। সে দুশ্চরিত্র, ব্যভিচারী, নিষ্ঠুর এবং চক্রান্তকারী। তারই ষড়যন্ত্রে এবং ব্যবস্থাপনায় মোহাম্মদি বেগ নবাব সিরাজকে হত্যা করে। সেও সারাক্ষণ সুরা, নারী দিয়ে বাইজীর ঘরে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকতো। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরঃ
✍ আমার মতে, উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিক ভাব ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।

✍ বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ একটি ঐতিহাসিক নাটক। বাংলার রাজনীতির পট পরিবর্তন ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণ, চক্রান্তজালে আটকা পড়া, ইংরেজদের সাথে সংঘর্ষ এবং পরাজিত হওয়ার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

✍ উদ্দীপকটিতে প্রকাশিত হয়েছে একজন জমিদার পুত্রের ব্যভিচারী জীবনের ঘৃণ্য চিত্র। সে হলো শরৎচন্দ্র। সে সারাক্ষণ জলসা ঘরে বাইজীদের নিয়ে সময় কাটায় এবং পিতার সম্পত্তি বা জমিদারী কীভাবে হস্তগত করা যায় সে সম্পর্কে চক্রান্ত করতে থাকে। উদ্দীপকের এ ভাবটিতে নাটকের মাত্র একাংশের প্রতিফলন ঘটেছে। সেটা হলো মিরজাফর পুত্র মিরনের ব্যভিচারী ও চক্রান্তকারী ক্ষমতালোভী মনোভাবের প্রকাশের মাধ্যমে।

✍ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অভিযোজিত অনেকগুলো ভাবের মধ্যে এটি মাত্র একটি দিক। নাটকে আলোচিত হয়েছে নবাব সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইংরেজদের সাথে দ্বন্দ্ব। তাদের সাথে সংঘর্ষ, পরিজনদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত, সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা, বাংলার সাধারণ মানুষের উপর ইংরেজদের অত্যাচার, নবাবের চারিদিকের চক্রান্তের ফলে পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয়, মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ, নবাবের নির্মম মৃত্যু প্রভৃতি চিত্র যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। একটিমাত্র দিক ছাড়া কোনোটিই উদ্দীপকে উঠে আসেনি।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post