একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
💕 পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।
💕 শিখন ফল
☑️ উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কৃতিত্ব সম্পর্কে জানতে পারবে।
☑️ পৌরাণিক কাহিনী কাব্য, বাল্মীকি-রামায়ণের নবমূল্যায়ন সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
☑️ পৌরাণিক কাহিনী ও চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞাত হবে।
☑️ বাংলা ভাষায় প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যের ভাষা -ছন্দ সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
☑️ মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে অবগত হবে।
☑️ জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে।
☑️ সুজন ও পরজনের সংজ্ঞা এবং তাদের নীতিনৈতিকতা ও জীবনদর্শন সম্পর্কে জানতে পারবে।
☑️ মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিপ্রতিভা এবং পৌরাণিক কাহিনিবিন্যাস ও চরিত্র সৃষ্টিতে বিশেষ কৃতিত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত হবে।
💕 পাঠ-পরিচিতি
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’-র ‘বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। সর্বমোট নয়টি সর্গে বিন্যস্ত ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র ষষ্ঠ সর্গে লক্ষণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসীম সাহসী বীর মেঘনাদের। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ শত্রুর উপর্যুপরি দৈব-কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে পিতা রাবণ পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন।
যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার পূর্বেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে। মায়া দেবীর আনুক‚ল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায়, লক্ষণ শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশে সমর্থ হয়। কপট লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময় প্রকাশ করে। শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষণের অনুপ্রবেশ যে মায়াবলে সম্পন্ন হয়েছে, বুঝতে বিলম্ব ঘটে না তার।
ইতোমধ্যে লক্ষণ তলোয়ার কোষমুক্ত করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রার্থনা করে লক্ষণের কাছে। কিন্তু লক্ষণ তাকে সময় না দিয়ে আক্রমণ করে। এ সময়ই অকস্মাৎ যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারের দিকে চোখ পড়ে মেঘনাদের; দেখতে পায় বীরযোদ্ধা পিতৃব্য বিভীষণকে। মুহূর্তে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে। খুললতাত বিভীষণকে প্রত্যক্ষ করে দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র মেঘনাদ যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সেই নাটকীয় ভাষ্যই ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ অংশে সংকলিত হয়েছে।
এ অংশে মাতৃভ‚মির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে ঘৃণা। জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির গুরুত্বের কথা যেমন এখানে ব্যক্ত হয়েছে তেমনি এর বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে নীচতা ও বর্বরতা বলে।
উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাল্মীকি-রামায়ণকে নবমূল্য দান করেছেন এ কাব্যে। মানবকেন্দ্রিকতাই রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সারকথা। ঐ নবজাগরণের প্রেরণাতেই রামায়ণের রাম-লক্ষণ মধুসূদনের লেখনীতে হীনরূপে এবং রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদ যাবতীয় মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত। দেবতাদের আনুক‚ল্যপ্রাপ্ত রাম-লক্ষণ নয়, পুরাণের রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদের প্রতিই মধুসূদনের মমতা ও শ্রদ্ধা।
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশটি ১৪ মাত্রার অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রথম পঙ্ক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় পঙ্ক্তির চরণান্তের মিলহীনতার কারণে এ ছন্দ ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ নামে সমধিক পরিচিত। এ কাব্যাংশের প্রতিটি পঙ্ক্তি ১৪ মাত্রায় এবং ৮ + ৬ মাত্রার দুটি পর্বে বিন্যস্ত। লক্ষ করার বিষয় যে, এখানে দুই পঙ্ক্তির চরণান্তিক মিলই কেবল পরিহার করা হয়নি, যতিপাত বা বিরামচিহ্নের স্বাধীন ব্যবহারও হয়েছে বিষয় বা বক্তব্যের অর্থের অনুষঙ্গে। এ কারণে ভাবপ্রকাশের প্রবহমানতাও কাব্যাংশটির ছন্দের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে বিবেচ্য।
💕 কবি পরিচিতি
নাম : মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
জন্ম তারিখ : ২৫ জানুয়ারি, ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে।
জন্মস্থান : যশোর জেলার কেশবপুর থানাধীন সাগরদাঁড়ি গ্রাম।
পিতার নাম : মহামতি মুনশী রাজনারায়ণ দত্ত
মাতার নাম : জাহ্নবী দেবী
মাধ্যমিক : এসএসসি (১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে), জিলা স্কুল, বগুড়া।
কলকাতার লালবাজার গ্রামার স্কুল, হিন্দু কলেজ এবং পরবর্তীতে বিশপস কলেজে ভর্তি হন। তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেতে গিয়েছিলেন।
কর্মজীবন/ পেশা : প্রথম জীবনে আইন পেশায় জড়িত হলেও লেখালেখি করেই পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কাব্য : তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, মেঘনাদবধ কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি। তাছাড়া 'The Captive Ladie' I 'Visions of the past' তাঁর ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ।
নাটক : শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী, মায়াকানন।
প্রহসন : একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ।
ইংরেজি নাটক ও নাট্যানুবাদ : রিজিয়া, রত্নাবলি, শর্মিষ্ঠা, নীলদর্পণ।
গদ্য অনুবাদ : হেক্টর বধ।
মৃত্যু তারিখ : ২৯ জুন, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে।
সমাধিস্থান : কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোড।
💕 উৎস পরিচিতি
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র ‘বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে।
💕 বস্তুসংক্ষেপ
‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশটুকু ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র বধো (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। এতে বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা, লক্ষণকে সহায়তা এবং লক্ষণ কর্তৃক নিরস্ত্র মেঘনাদের ওপর আক্রমণের বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ অসহায় হয়ে পড়েন। ভাই কুম্ভকর্ণ এবং পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর রাবণ মেঘনাদের ওপর ভরসা করেন। ‘মেঘনাদ’ যুদ্ধযাত্রার পূর্বে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করেন। এমতাবস্থায় মায়াদেবীর আনুকূল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায় প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষণ সেই যজ্ঞাগারে প্রবেশ করেন।
হীন মানসিকতায় লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে তার সাথে যুদ্ধ করতে আহবান করেন এবং তরবারি কোষমুক্ত করেন। মেঘনাদ তখন যুদ্ধসাজ গ্রহণ করতে অস্ত্রাগারে প্রবেশ করতে চান, কিন্তু বিভীষণ অস্ত্রাগারের দ্বার আগলে রাখেন, তাকে কোনোভাবেই সেখানে ঢুকতে দেন না। এ সময় খুলতাত বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে নিরস্ত্র মেঘনাদ যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, সেই নাটকীয় ভাষ্যই ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ অংশে সংকলিত হয়েছে। রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর বিভীষণের এহেন আচরণ মেঘনাদকে বিস্মিত ও মর্মাহত করে। মেঘনাদের মনে প্রশ্ন জাগে- বিভীষণ কী করে এমন হীন কাজ করতে পারলেন। নিকষা যার মা, কুম্ভকর্ণ যার ভাই, সে কিনা শত্রুকে পথ চিনিয়ে ঘরে নিয়ে এলেন, চণ্ডালকে রাজকক্ষে স্থান দিলেন।
রামানুজকে শাস্তি দিতে অস্ত্রাগারে ঢুকতে দিচ্ছেন না আমাকে। তার মানে তিনি চান না যে মেঘনাদ স্বর্ণলঙ্কাকে শত্রুমুক্ত করে এর কালিমা মুছে ফেলুক। এ কাব্যাংশে মেঘনাদ বিভীষণকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন দ্বার ছেড়ে দাঁড়ানোর জন্য; কিন্তু বিভীষণ মেঘনাদের কোনো কথাতেই বিচলিত বা বিগলিত হন না। তিনি সকল, অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি কিছুতেই রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তখন মেঘনাদ আকাশের চাঁদ, রাজহংস, পঙ্কজকানন, শৈবালদল, সিংহ, শিয়াল প্রভৃতি অনুষঙ্গ ও উপমায় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বিভীষণকে তার বংশমর্যাদা ও আভিজাত্যবোধ, অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে লক্ষণকে সহায়তাদানের ভুল ভাঙাতে চান। কিন্তু বিভীষণ কিছুতেই তা মানতে চান না।
বলেন- দেবতারা সবসময় পাপমুক্ত, লঙ্কাপুরী ধ্বংস হতে চলছে, এ অবস্থার জন্য মেঘনাদ নিজেই দায়ী। এতে তার কোনো দোষ নেই। রামচন্দ্রের কাছে আশ্রয় লাভ করে ধন্য। মেঘনাদ তখন বিভীষণের নীচ মানসিকতা এবং লক্ষণের অন্যায় আক্রমণের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। এভাবে বিভীষণের প্রতি মেঘনাদের অনুরোধ, ক্ষোভ এবং স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশে।
💕 নামকরণের সার্থকতা যাচাই
নামকরণ : বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার পথিকৃৎ মাইকেল মধুসূদন দত্তের (১৮২৪-১৮৭৩) সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘মেঘনাদবধ’ -কাব্য (১৮৬১)। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘মেঘনাদবধ-কাব্য’ প্রথম সার্থক মহাকাব্য। নয়টি সর্গে বিভাজিত কাব্যটির মূল আখ্যায়িকা রামায়ণ হতে গৃহীত। রামানুজ লক্ষণ কর্তৃক রাবণপুত্র মেঘনাদ নিধনের কাহিনি কবি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচনা করেছেন। সুতরাং ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র এ অংশের নামকরণ ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ যথার্থ হয়েছে।
সার্থকতা : ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশটুকু ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র ‘বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে নেয়া হয়েছে। এখানে লক্ষণের হাতে অসীম সাহসী বীর মেঘনাদের মৃত্যুর বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। মেঘনাদের এই পরাজয় ও মৃত্যুর জন্য রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর বিভীষণ দায়ী। কারণ বিভীষণ এবং মায়াদেবীর সহায়তায় লক্ষণ শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করতে পেরেছেন। যেখানে মেঘনাদ ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে প্রস্তুত। সেই নিরস্ত্র অবস্থায় সশস্ত্র লক্ষণ তাকে যুদ্ধের আহবান করেন এবং আক্রমণ চালান। মেঘনাদ ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে প্রস্তুত। সেই নিরস্ত্র অবস্থায় সশস্ত্র লক্ষণ তাকে যুদ্ধের আহবান করেন এবং তার উপর আক্রমণ চালান।
মেঘনাদ যুদ্ধের সাজ গ্রহণের জন্য অস্ত্রাগারে প্রবেশ করতে চাইলে সেখানে পিতৃব্য বিভীষণ দ্বার আগলে রাখেন। এমতাবস্থায় বিস্মিত ও মর্মাহত হয়ে মেঘনাদ বিভীষণের অন্যায় আচরণ ও শত্রুর পক্ষ নেয়া যে মোটেই উচিত হয় নি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তার সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ করে দেন বিভীষণ। এখানে মেঘনাদ মূলত বিভীষণের প্রতিই তার আবেদন, নিবেদন, অনুরোধ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাজেই ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ নামকরণ সার্থক হয়েছে।
💕 শব্দার্থ ও টীকা
বিভীষণ = রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর। রাম-রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকারী। রামের ভক্ত।
‘এতক্ষণে’- অরিন্দম কহিলা = রুদ্ধদ্বার নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষণের অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ যে পথপ্রদর্শক বিভীষণ, তা অনুধাবন করে বিস্মিত ও বিপন্ন মেঘনাদের প্রতিক্রিয়া।
অরিন্দম = অরি বা শত্রুকে দমন করে যে। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।
পশিল = প্রবেশ করল।
রক্ষঃপুরে = রাক্ষসদের পুরীতে বা নগরে। এখানে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে।
রক্ষঃশ্রেষ্ঠ = রাক্ষুসকুলের শ্রেষ্ঠ, রাবণ।
তাত = পিতা। এখানে পিতৃব্য বা চাচা অর্থে।
নিকষা = রাবণের মা।
শূলীশম্ভুনিভ = শূলপাণি মহাদেবের মতো।
কুম্ভকর্ণ = রাবণের মধ্যম সহোদর।
বাসববিজয়ী = দেবতাদের রাজা ইন্দ্র বা বাসবকে জয় করেছে যে। এখানে মেঘনাদ। একই কারণে মেঘনাদের অপর নাম ইন্দ্রজিৎ।
তস্কর = চোর।
গঞ্জি = তিরস্কার করি।
রামানুজ = রাম+অনুজ = রামানুজ। এখানে রামের অনুজ লক্ষণকে বোঝানো হয়েছে।
শমন-ভবনে = যমালয়ে।
ভঞ্জিব আহবে = যুদ্ধ দ্বারা বিনষ্ট করব।
আহবে = যুদ্ধে।
ধীমান্ = ধীসম্পন্ন। জ্ঞানী।
রাঘব = রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এখানে রামচন্দ্রকে বোঝানো হয়েছে।
রাঘবদাস = রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ।
রাবণি = রাবণের পুত্র। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।
স্থাপিলা বিধুরে বিধি
স্থাণুর ললাটে = বিধাতা চাঁদকে আকাশে নিশ্চল করে স্থাপন করেছেন।
বিধু = চাঁদ।
স্থাণু = নিশ্চল।
রক্ষোরথী = রক্ষকুলের বীর।
রথী = রথচালক। রথচালনার মাধ্যমে যুদ্ধ করে যে।
শৈবালদলের ধাম = পুকুর। বদ্ধ জলাশয়।
শৈবাল = শেওলা।
মৃগেন্দ্র কেশরী = কেশরযুক্ত পশুরাজ সিংহ।
মৃগেন্দ্র = পশুরাজ সিংহ।
কেশরী = কেশরযুক্ত প্রাণী। সিংহ।
মহারথী = মহাবীর। শ্রেষ্ঠ বীর।
মহারথী প্রথা = শ্রেষ্ঠ বীরদের আচরণ-প্রথা।
সৌমিত্রি = লক্ষণ। সুমিত্রার গর্ভজাত সন্তান বলে লক্ষণের অপর নাম সৌমিত্রি।
নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার = লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থান। এখানে যজ্ঞ করে মেঘনাদ যুদ্ধে যেত। ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’ যুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে নিরস্ত্র মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা বৈশ্বানর বা অগ্নিদেবের পূজারত অবস্থায় লক্ষণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে নিহত হয়।
প্রগলভে = নির্ভীক চিত্তে।
দম্ভী = দম্ভ করে যে। দাম্ভিক।
নন্দন কানন = স্বর্গের উদ্যান।
মহামন্ত্র = বলে যথা
নম্রশিরঃ ফণী = মন্ত্রপূত সাপ যেমন মাথা নত করে।
লক্ষি = লক্ষ করে।
ভর্ৎস = ভর্ৎসনা বা তিরস্কার করছ।
মজাইলা = বিপদগ্রস্ত করলে।
বসুধা = পৃথিবী।
তেঁই = তজ্জন্য । সেহেতু।
রুষিলা = রাগান্বিত হলো।
বাসবত্রাস = বাসবের ভয়ের কারণ যে মেঘনাদ।
মন্ত্র = শব্দ। ধ্বনি।
জীমূতেন্দ্র = মেঘের ডাক বা আওয়াজ।
বলী = বলবান। বীর।
জলাঞ্জলি = সম্পূর্ণ পরিত্যাগ।
শাস্ত্রে বলে, ...পর
পরঃ সদা! = শাস্ত্রমতে গুণহীন হলেও নির্গুণ স্বজনই শ্রেয়, কেননা গুণবান হলেও পর সর্বদা পরই থেকে যায়।
নীচ = হীন। নিকৃষ্ট। ইতর।
দুর্মতি = অসৎ বা মন্দ বুদ্ধি।
💕 বানান সতর্কতা
লক্ষণ, নিকষা, রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, শূলিশম্ভুনিভ, কুম্ভকর্ণ, তস্কর, চণ্ডাল, গঞ্জি, পিতৃতুল্য, অস্ত্রাগারে, লঙ্গা, কলঙ্গ, ভঞ্জির, ধীমান, স্থাণু, রক্ষোরথি, পঙ্কজ, মৃগেন্দ্র কেশরী, সম্ভাষে, শূর, সম্বোধে, সৌমিত্রি, স্বচক্ষে, নিকুম্ভিলা, যজ্ঞাগার, প্রগলভ, দম্ভী, বিধাতঃ ভ্রাতৃপুত্র, নম্রশিরঃ, ফণী, রুষিলা, জীমূতেন্দ্র, বলী, রাক্ষসবাজানুজ, জ্ঞাতিত্ব, জলাঞ্জলি, শ্রেয়ঃ, রক্ষোবর।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
শপথ নিয়েও পলাশীর প্রান্তরে প্রধান সেনাপতি মিরজাফর যুদ্ধে অংশ নেননি। রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, জগৎ শেঠ যুদ্ধে অসহযোগিতা করেছেন। মোহনলাল ও মিরমদন বিশ্বাসঘাতক হননি। নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছেন। মির জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছে।
ক. কাকে রাবণি বলা হয়েছে?
খ. ‘প্রফুল কমলে কীটবাস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার সঙ্গে যে দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আংশিকরূপায়ণ মাত্র।”- মূল্যায়ন কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ রাবণের পুত্র মেঘনাদকে রাবণি বলা হয়েছে।
খ. অনুধাবন
✍ ‘প্রফুল কমলে কীটবাস’ বলতে উঁচু বংশে জন্মগ্রহণ করেও বিশ্বাসঘাতকতা এবং হীন ব্যক্তিদের সাথে আঁতাত করার জন্য বিভীষণের হীন স্বভাবকে বোঝানো হয়েছে।
✍ ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতা। এখানে রামানুজ লক্ষণ কর্তৃক রাবণপুত্র মেঘনাদ নিধনের কাহিনী কবি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচনা করেছেন। রামচন্দ্র দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রমণ করলে সেখানকার রাজা রাবণ সম্মুখযুদ্ধে ভাই কুম্ভকর্ণ এবং পুত্র বীরবাহুকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। তখন অসীম সাহসী বীর পুত্র মেঘনাদকে সেনাপতি করে পরবর্তী দিনের যুদ্ধ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার আগে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করার জন্য মনস্থির করে। সেখানে মায়াদেবীর আনুকূল্যে এবং বিভীষণের সহায়তায় লক্ষণ প্রবেশ করে নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করে। মেঘনাদ তখন পিতৃব্য বিভীষণকে নানাভাবে বুঝিয়ে অস্ত্রাগারে যাওয়ার অনুমতি চাইল। কিন্তু বিভীষণ দ্বার ছেড়ে দাঁড়াল না। বরং সে যে রাঘবের দাস তা জানিয়ে দিল। তখন ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে মেঘনাদ আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
✍ স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষকে মহৎ করে। মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগে উৎসাহিত করে। মানবকল্যাণের ব্রত নিয়ে সৃষ্টিশীল মানুষ সমস্ত বাধা-বিঘœ অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে চলে। স্বদেশের স্বার্থে একজন দেশপ্রেমিক প্রয়োজনে প্রাণবিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত হয় না। যারা স্বদেশকে ভালোবাসে না, তারা বিশ্বাসঘাতক, দেশদ্রোহী।
✍ উদ্দীপকে ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশির আম্রকাননে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্তমিত হওয়ার মূল ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন লক্ষ করা যায়। এখানে মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা এবং মোহনলাল ও মিরমদনের স্বাদেশিকতার বিষয়টি প্রতিফলিত। উদ্দীপকে মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার দিকটি আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা এবং দেশদ্রোহিতার কারণেই মেঘনাদকে নিরস্ত্র অবস্থায় বধ করতে সক্ষম হয়েছিল রামানুজ লক্ষণ। অস্ত্রাগারে প্রবেশ করে যুদ্ধের সাজ গ্রহণের জন্য অনুরোধ সত্তে¡ও বিভীষণ দ্বার ছেড়ে দাঁড়ায়নি। সে জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি সবকিছুকেই জলাঞ্জলি দিয়েছে।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ মাত্র।”-মন্তব্যটি যথার্থ।
✍ উদ্দীপকের পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় এবং বাংলার স্বাধীনতা সূর্যের অস্তমিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে নবাবের সাথে মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা এবং ধনুকুবেরদের অসহযোগিতাকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ বিষয়টি ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্যে মায়াদেবীর দৈবকৌশল এবং বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতার সাথে একসূত্রে গাঁথা।
✍ ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা এবং লক্ষণের নির্মমতার এবং মেঘনাদের’ স্বদেশপ্রেম তুলে ধরা হয়েছে। স্বর্ণলঙ্কাপুরীকে রামচন্দ্রের হাত থেকে বাঁচাতে এবং যুদ্ধজয় নিশ্চিত করতে মেঘনাদ প্রস্তুত হয়। যুদ্ধে যাওয়ার আগে মেঘনাদ ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করার জন্য নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে। সেখানে মায়াদেবীর মায়াবলে এবং বিভীষণের সহায়তায় রামানুজ লক্ষণ উপস্থিত হয়। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে তার সাথে যুদ্ধ করার জন্য আহবান করে। মেঘনাদ অস্ত্রাগারে ঢুকে যুদ্ধের সাজ আর অস্ত্র নিয়ে আসতে চাইলে বিভীষণ তাকে বাধা দেয়।
✍ মেঘনাদ স্বর্ণলঙ্কাপুরী তার স্বদেশের প্রতি গভীর অনুরাগ আর ভালোবাসা প্রকাশ করে। বিভীষণকে তার শত্রুুর মোকাবিলা করার জন্য অনুরোধ করে দ্বার ছেড়ে দেয়ার। সুতরাং দেখা যায়, ঘটনাপ্রবাহে উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আংশিক রূপায়ণ মাত্র। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
স্বদেশের তরে নাহি যার মন/কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন। এটি মানুষকে ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে। একজন যথার্থ দেশপ্রেমিক নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখে। দেশপ্রেমিক তাঁর মেধায়, মননে,
চিন্তাচেতনায়, কথায় ও কর্মে দেশকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে স্থান দেন।
ক. মেঘনাদের অপর নাম কী?
খ. “তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে বনবাসী।” ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত মেঘনাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা একসূত্রে গাঁথা।” - মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ মেঘনাদের অপর নাম ইন্দ্রজিৎ।
খ. অনুধাবন
✍ “তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে বনবাসী।”- উক্তিটি মেঘনাদ করেছে তার পিতৃব্য বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে। এখানে লক্ষণকে বনবাসী হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে।
✍ রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আক্রান্ত হলে রাজা রাবণ শত্রুর উপর্যুপরি দৈব কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভাই কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে তিনি পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন। যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার আগেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করে। লক্ষণ মায়াদেবীর আনুক‚ল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তাপ্রাপ্তি হয় বলে মেঘনাদ দুঃখ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত জন্মভূমির প্রতি মেঘনাদের গভীর অনুরাগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
✍ জন্মভূমি প্রত্যেক মানুষের কাছেই পরম শ্রদ্ধার বস্তু। স্বদেশের মাটি, পানি, আলো-বাতাসেই মানুষ বেড়ে ওঠে। স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ছুটে বেড়ায় নানা দিকে। দিন শেষে পাখি যেমন ফিরে আসে তার শান্তির নীড়ে মানুষও তেমনি নানা দেশ ঘুরে স্বদেশের মাটিতেই শেষ আশ্রয় নিতে চায়।
✍ উদ্দীপকে স্বদেশের প্রতি মানুষের অনুরাগ ও ভালোবাসার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের জীবনের মহত্তম কাজের মধ্যে স্বদেশ অন্যতম একটি। মানব-কল্যাণের মূলেও স্বদেশের প্রতি গভীর মনোযোগ ও ভালোবাসাকেই নির্দেশ করা হয়। উদ্দীপকের লেখকের স্বদেশপ্রেমের বর্ণনা আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত, স্বদেশের প্রতি মেঘনাদ-এর অনুরাগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মেঘনাদ সেখানে রামানুজ লক্ষণকে হত্যা করে স্বর্ণলঙ্কার কলঙ্ক ও কালিমা মোচন করতে চেয়েছেন।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত মেঘনাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা একসূত্রে গাঁথা।-মন্তব্যটি যথার্থ।
✍ একজন মানুষের জীবনে তার মা যেমন পরিচিত, তেমনি স্বদেশও পরিচিত। মানুষের সাথে সন্তানের যেরূপ হৃদ্যতা গড়ে ওঠে, দেশের সাথেও তার অনুরূপ হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। একজন মানুষের সামগ্রিক জীবনের বিকাশে তার স্বদেশ প্রকৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই স্বদেশপ্রীতি রয়েছে।
✍ উদ্দীপকে স্বদেশের প্রতি মানুষের অনুরাগ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে তাতে স্বদেশানুরাগের গভীর চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। একজন দেশপ্রেমিক কীভাবে তার দেশের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারেন তা সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকের এই বক্তব্যের চেতনা আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত মেঘনাদের স্বদেশ চেতনার সাথে অভিন্ন ধারায় প্রবাহিত।
✍ মেঘনাদ অসীম সাহসী বীর। তিনি তার প্রিয় ভূমিকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। স্বর্ণলঙ্কাকে শত্রুর কালো থাবার ছায়া থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। এখানে মেঘনাদ তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রিয় জন্মভূমিকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখেছেন। এভাবে উদ্দীপকটির মূলভাব আলোচ্য কবিতায় প্রতিফলিত মেঘনাদের স্বদেশ প্রীতির সাথে একসূত্রে গাঁথা।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এদেশের বীর-সন্তানেরা। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে তারা অস্ত্র হাতে বীরদর্পে যুদ্ধ করেছে।
ক. ‘ধীমান’ শব্দের অর্থ কী?
খ. নিজ গৃহ পথ, তাত, দেখাও তস্করে?/চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার কোন বিষয়টির সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার একটি বিশেষ ঘটনার বিপরীত চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।-বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ‘ধীমান’ শব্দের অর্থ ধীসম্পন্ন বা জ্ঞানী।
খ. অনুধাবন
✍ নিজ গৃহ পথ, তাত, দেখাও তস্করে?/চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে? উক্তিটি আত্মক্ষোভে মেঘনাদ বিশ্বাসঘাতক বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল। চণ্ডালে বলতে এখানে রামানুজ লক্ষণকে বোঝানো হয়েছে।
✍ ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্যে রামচন্দ্র ¯¦র্ণলঙ্কা আক্রমণ করলে রাজা রাবণ তাঁর দ্বীপ রাজ্য ¯¦র্ণলঙ্কা রক্ষার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হন, সে যুদ্ধে ভাই কুম্ভকর্ণ এবং পুত্র বীরবাহুর মৃত্যু হলে মেঘনাদকে সেনাপতি নির্বাচিত করেন। পরবর্তী দিন যুদ্ধে যাওয়ার আগে মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অগ্নিদেবের পূজা করতে মনস্থির করে। মায়াদেবীর দৈবকৌশলে এবং তার খুলতাত বিভীষণের সহায়তায় সেই যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে রামানুজ লক্ষণ সেখানে নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করে। মেঘনাদ অস্ত্রাগারে প্রবেশ করতে চাইলে বিভীষণ তাকে বাধা দেয় এবং দ্বার রোধ করে রাখে। এ অবস্থায় মেঘনাদ আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় নিরস্ত্র মেঘনাদের ওপর লক্ষণের সশস্ত্র আক্রমণের বিষয়টির সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
✍ যুদ্ধের সময় অন্যায়ভাবে শত শত বেসামরিক নিরস্ত্র লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্রহাতে বীরদর্পে তাদের প্রতিহত করেছে।
✍ উদ্দীপকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি খণ্ডচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলা হয়েছে। আর সেই বর্বর হানাদাার বাহিনীকে পরাজিত করে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকে এই অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবিলা এবং প্রিয় জন্মভূমিকে শত্রুমুক্ত করার যে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে তা আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মেঘনাদের ওপর লক্ষণের আক্রমণের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ, মেঘনাদ যখন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অগ্নিদেবের পূজা করতে গিয়েছেন তখন সেখানে নিরস্ত্র অবস্থায় তাকে আক্রমণ করা হয়। তিনি অস্ত্রাগারে গিয়ে যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হতে চাইলে তাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার একটি বিশেষ ঘটনার বিপরীত চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।
✍ যুদ্ধ মানুষের জন্য সার্বিক অকল্যাণ ডেকে আনে। যুদ্ধের ফলে মানুষ পৃথিবীতে অভিশপ্ত জীবনযাপন করে। আত্মস্বার্থ, লোভ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও অহংবোধই যুদ্ধের মূল কারণ।
✍ উদ্দীপকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি খণ্ডচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলা হয়েছে। আর সেই বর্বর হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকে এই অস্ত্র হাতে শত্রুর মোকাবিলা এবং প্রিয় জন্মভূমিকে শত্রুমুক্ত করার যে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে তা আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মেঘনাদের ওপর লক্ষণের আক্রমণের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ, মেঘনাদ যখন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে অগ্নিদেবের পূজা করতে গিয়েছিলেন তখন সেখানে নিরস্ত্র অবস্থায় তাকে আক্রমণ করা হয়। তিনি অস্ত্রাগারে গিয়ে যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হতে চাইলে তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি।
✍ আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় মেঘনাদ অস্ত্রধারণ করার সুযোগ পায়নি। কারণ নিরস্ত্র অবস্থায় মহারথী প্রথা ভেঙে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার এই বিশেষ বিষয়টির বিপরীত চিত্রকে প্রতিফলিত করেছে।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
এখানে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক বিন্যাস ও বৈচিত্র্য সৌন্দর্যের এক অপরূপ ছবি এঁকেছে। এমন রৌদ্রদীপ্ত উজ্জ্বল দিন আর জ্যোৎস্নালোকিত স্নিগ্ধ রাত্রি কোথায় পাব? এমন দিগন্তজোড়া শ্যামল শোভা আর ছায়াঘন বনরাজির তুলনা কোথায়? কোথায় মেলে এমন তরঙ্গভঙ্গে উদ্বেল পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, কপোতাক্ষ-কর্ণফুলি, সুরমা-গোমতী অথবা হাকালুকি হাওর, চলন বিল? কোথায় দৃষ্টি কাড়ে কাজলকালো বিল আর দিঘির জলে ফুটে থাকা অযুত শাপলার সৌন্দর্য, বাতাসে দোল খাওয়া সরষে ফুলের ফুলকিমালা? প্রকৃতি এখানে অকৃপণ, তার নানা উপাচারে ভরে দিয়েছে এদেশের মানুষের জীবন। গ্রামবাংলার প্রকৃতি নিটোল সৌন্দর্যের আধার।
ক. নন্দন কানন কী?
খ. “ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে/পাঠাইব রামানুজে শমন ভবনে,/লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।” ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মিল থাকলেও উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মূলভাব এক নয়।” মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নন্দন কানন হচ্ছে স্বর্গের উদ্যান।
খ. অনুধাবন
✍ “ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে/পাঠাইব রামানুজে শমন ভবনে,/লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।”-কথাগুলো মেঘনাদ বলেছেন বিশ্বাসঘাতক বিভীষণকে উদ্দেশ্য করে।
✍ ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ যুদ্ধযাত্রার আগে মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে মনস্থির করলেন। কিন্তু মায়াদেবীর আনুক‚ল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায় শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সেই যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে রামানুজ লক্ষণ। সেখানে লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে তার সাথে যুদ্ধের আহবান করে এবং তরবারি কোষমুক্ত করে আক্রমণ করে। সেই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মেঘনাদ অস্ত্রাগারে যাওয়ার জন্য বিভীষণকে অনুরোধ করেন। কারণ বিভীষণ অস্ত্রাগারের দ্বার রোধ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে মেঘনাদ বিভীষণকে আলোচ্য কথাগুলো বলেছেন।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার লঙ্কাপুরীর সৌন্দর্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
✍ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। তার রূপ সৌন্দর্যে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, জ্ঞানী-গুণী সকলেই মুগ্ধ। যুগ যুগ ধরে বিদেশি পর্যটকরা বাংলার অপরূপ রূপে মুগ্ধ হয়েছেন। যুদ্ধবিগ্রহের পরও বাংলাদেশ তার আপন সৌন্দর্যে অম্লান।
✍ উদ্দীপকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। এদেশের প্রকৃতি যেন বৈচিত্র্যময় মনোলোভা সৌন্দর্যের খনি। এর রৌদ্রময় উজ্জ্বল দিন, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নামাখা রাত, ছায়াঘন-বনবনানী, নদীর রুপালি ঢেউয়ের হাসি ইত্যাদির তুলনা নেই। এদেশের দিঘির জলে ফুটে থাকা অযুত শাপলার শোভা, মাঠে মাঠে হাওয়ার দোলা, সর্ষে ফুলের অফুরন্ত সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। উদ্দীপকের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আলোচ্য ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় প্রতিফলিত সৌন্দর্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “মিল থাকলেও উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মূলভাব এক নয়।” মন্তব্যটি যথার্থ।
✍ এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তুলনা নেই। বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য সম্পদের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনন্য অসাধারণ। এদেশের তরুলতা, নদ-নদী, আকাশের চাঁদ, পাহাড়-পর্বত, পাখ-পাখালি সবকিছু মানুষকে মুগ্ধ করে।
✍ উদ্দীপকে বাংলাদেশের রূপ-বৈচিত্র্যের বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। এই বর্ণনায় বাংলার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি উঠে এসেছে। বাংলার নদী-নালা, ফুল-ফল, পাহাড়-পর্বত সবকিছু কবিকে মুগ্ধ করে। এই মুগ্ধতার এত সহজ প্রকাশ ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় স্বর্ণলঙ্কার সৌন্দর্যের এমন সহজ প্রকাশ লক্ষ করা যায় না। কারণ সেখানে মুখ্য বিষয় রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য দখলের চেষ্টা এবং রাবণের তা প্রতিহত করার চেষ্টা। ফলে তাদের মধ্যে যুদ্ধ। অন্যদিকে উদ্দীপকে শুধু সৌন্দর্যের সহজ প্রকাশ স্পষ্ট, সেখানে যুদ্ধবিগ্রহের চিহ্ন নেই।
✍ বীরযোদ্ধা পিতৃব্য বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা, লক্ষণকে সহযোগিতা করে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিয়ে আসা এবং মেঘনাদকে অস্ত্রাগারে ঢুকতে না দেয়া ইত্যাদি ঘটনা আছে, যা আলোচ্য উদ্দীপকে নেই। এসব দিক বিবেচনা করে তাই বলা হয়েছে, মিল থাকলেও উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মূলভাব এক নয়।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
শরীফ ও সফিকের মধ্যে লড়াই চলাকালে শরীফ সফিককে দুইবার পরাস্ত করেও হত্যা করেন নি। কারণ ইরানের যুদ্ধনীতি অনুযায়ী তিনবার পরাস্ত না করে কাউকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু সফিক শরীফকে একবার পরাস্ত করেই বুকের ওপর তরবারি বসিয়ে দেন। শরীফ আর্তনাদ করে বলেন, তুমি অন্যায়ভাবে আমাকে হত্যা করছো।
ক. রাজহংস কোথায় কেলি করে?
খ. লক্ষণকে দুর্বল মানব বলে অভিহিত করা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকের সফিক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় লক্ষণ কোন দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সফিক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার লক্ষণ, দু’জনেই বীর হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও বীরধর্মের অবমাননা করেছেন-মন্তব্যটির মূল্যায়ন কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ রাজহংস স্বচ্ছ সরোবরে কেলি করে।
খ. অনুধাবন
✍ অস্ত্রহীন মেঘনাদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করার কারণে লক্ষণকে দুর্বল মানব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
✍ রাক্ষসপুরীর পরাক্রমশালী বীর মেঘনাদের বক্তব্য অনুযায়ী লক্ষণ অতি দুর্বলচিত্তের মানব। কেননা, তিনি চোরের মতো লুকিয়ে যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে অস্ত্রহীন মেঘনাদকে যুদ্ধে আহবান জানিয়েছেন। অথচ বীরের ধর্ম হলো অস্ত্রহীন কারো সাথে সংগ্রামে লিপ্ত না হওয়া। লক্ষণের কাপুরুষোচিত বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাকে দুর্বল মানব হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
গ. প্রয়োগ
✍ দুর্বলকে অন্যায়ভাবে আঘাত করার দিক থেকে উদ্দীপকের সফিক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার লক্ষণ সাদৃশ্যপূর্ণ।
✍ বীরের ধর্ম হলো পৌরুষ প্রদর্শন করা। কূট-কৌশলে শত্রুকে পরাস্ত করা বীরধর্মের জন্য কলঙ্কজনক। আলোচ্য কবিতায় লক্ষণ যেভাবে নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করে হত্যা করে তা কাপুরুষোচিত কাজ।
✍ উদ্দীপকের শরীফ ও সফিক দুই যোদ্ধার পরিচয় পাওয়া যায়। এ দুই বীরের যুদ্ধে শরীফকে সফিক অন্যায়ভাবে হত্যা করেন। কারণ ইরানে যুদ্ধনীতি অনুযায়ী শত্রুকে তৃতীয়বার পরাস্ত করতে পারলেই হত্যা করা যাবে। কিন্তু সফিক এ নিয়ম ভঙ্গ করেন। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাতেও দেখা যায়, লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে আঘাত করেন, যা প্রকৃত বীরের ধর্মবিরুদ্ধ এবং যা উদ্দীপকের সফিকের চরিত্রের অনুরূপ।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকের সফিক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার লক্ষণ, দু’জনেই বীর হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও বীরধর্মের অবমাননা করেছেন-মন্তব্যটি যথার্থ।
✍ বীর মানেই যিনি অসীম সাহসী-যিনি যুদ্ধে অপকৌশলের পরিবর্তে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে শত্রুকে মোকাবিলা করেন। কিন্তু যারা পেছন দিক থেকে নির্মম আঘাত হানে তারা জিততে পারে হয়তো, কিন্তু বীর হিসেবে বিবেচিত হয় না।
✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, শফিক শরীফের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে যুদ্ধনীতি ভঙ্গ করেন। ইরানের য্দ্ধুনীতি অনুযায়ী শত্রুকে পরপর দিনবার পরাস্ত না করে হত্যা করা ছিল অবৈধ। সফিক সুযোগ পেয়ে শরীফকে হত্যা করেন। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায়ও দেখা যায়, লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করেন। এদিক বিবেচনায় দুজনের চরিত্রেই কূটকৌশল প্রকাশ পায়।
✍ ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় লক্ষণকে সুযোগসন্ধানী হিসেবে পাওয়া যায়। লক্ষণ যদিও বীর কিন্তু মেঘনাদকে আক্রমণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বীরত্বের পরিচয় দেননি। বরং যেকোনো উপায়ে শত্রুহননই তাঁর লক্ষ্য ছিল। উদ্দীপকের শফিকও যুদ্ধে যেকোনোভাবে জিততে চেয়েছেন। বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে বীরের মতো জিততে চাননি। এ দিকগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়-এ দু’জন বীর হিসেবে খ্যাতিমান হলেও কেউই প্রকৃত বীর নন। কারণ বীরের নীতির প্রতি তাঁদের বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ নেই, যা তাঁদের বীরধর্মকে খর্ব করেছে। এ বিষয়টিই প্রশ্নোলিখিত উক্তিটির যৌক্তিকতাকে ফুটিয়ে তুলেছে।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
‘স্বদেশের উপকারে নেই যার মন।
কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন’
ক. রাক্ষসরাজানুজ বলা হয়েছে কাকে?
খ. বিভীষণ নিজেকে রাঘবের দাস বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার কোন চরিত্রটিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মূলবক্তব্য উদ্দীপকের মূলবক্তব্যের প্রতিরূপ’- উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ রাক্ষসরাজানুজ বলা হয়েছে বিভীষণকে।
খ. অনুধাবন
✍ বিভীষণ রামের নৈতিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর আদর্শে নিজেকে সমর্পণ করেছেন বলে তিনি নিজেকে রাঘবের দাস বলেছেন।
✍ রাক্ষসরাজ রাবণ বিভীষণের বড় ভাই। রাবণ রামের সাথে যে অন্যায় করেছিলেন বিভীষণ তা সমর্থন করতে পারেন নি। রাবণের যে পাপে আজ সমস্ত লঙ্কাপুরী কলঙ্কিত সে দোষে বিভীষণ নিজে মরতে চান না। তাই রামের নৈতিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি তাঁর আজ্ঞাবহ হয়েছেন। আর তাই রাবণের ভাই হওয়া সত্তে¡ও তিনি নিজেকে রাঘবের দাস মনে করেন।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের চরিত্রটিকে নির্দেশ করে।
✍ দেশপ্রেম মানবজীবনের মহান বৈশিষ্ট্য। একজন মানুষ যতই ধনবান, গুণবান কিংবা জ্ঞানী হোক না কেন, তার মনে যদি দেশপ্রেম ও স্বজাতির প্রতি ভালোবাসা না থাকে তাহলে সে নরাধম, বর্বর ও পশুর তুল্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
✍ মানুষের গভীর মমত্ববোধই হলো দেশপ্রেমের উৎস, স্বজাতি প্রীতির বন্ধন। সকল মানুষের কাছেই নিজের জাতির স্বার্থ আগে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যার মধ্যে বর্তমান থাকে না, তাকে প্রকৃত মানুষ বলে অভিহিত করা যায় না। এমন ব্যক্তি পশুর মতো বিবেকহীন হয়ে থাকে। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় নিজের দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। মেঘনাদ যজ্ঞাগারে হঠাৎ লক্ষণকে দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কিন্তু পরক্ষণেই আপন পিতৃব্য বিভীষণকে দেখে বুঝতে পারেন যে, ঘরের শত্রু বিভীষণই লক্ষণকে যজ্ঞাগারের পথ দেখিয়ে দিয়ে এসেছেন। বিভীষণের সাথে মেঘনাদের বিতর্কের মধ্য দিয়ে এ সত্যটি প্রতীয়মান হয় যে, মহাকুলে জন্মগ্রহণ করেও নিজের জ্ঞাতি এবং দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিভীষণ পশুত্বের পরিচয় দিলেন। উদ্দীপকেও এ সত্যই উচ্চারিত হয়েছে।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মূলবক্তব্য উদ্দীপকের মূলবক্তব্যের প্রতিরূপ’-উক্তিটি যুক্তিসম্মত।
✍ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম না থাকলে সে মানুষ হয়েও পশুর সমান হিসেবে বিবেচিত হয়, ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মধ্যে এ বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
✍ স্বদেশ ও স্বজাতির উপকার সাধন মানুষের অন্যতম কর্তব্য। স্বদেশ ও স্বজাতির উপকার সাধনে যে দ্বিধাগ্রস্ত এবং তাদের বিপদে যার প্রাণ কাঁদে না, তাকে কখনোই মানুষ হিসেবে গণ্য করা যায় না। উদ্দীপক এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। জ্ঞাতিত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ ভুলে গিয়ে বিভীষণ তাদের শত্রু রামের সাথে হাত মেলান। আর লক্ষণকে নিয়ে আসেন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে মেঘনাদকে হত্যা করার জন্য। বিভীষণ স্বদেশ ও স্বজাতির কথা ভুলে হীনতার পরিচয় দেন। আর তাঁর আচরণের প্রেক্ষিতে মেঘনাদ উচ্চারণ করেন দেশপ্রেম ও স্বাজাত্যবোধের অমর বাণী। উদ্দীপকেও স্বদেশের প্রতি যার মমত্ববোধ নেই, তাকে মানুষের অধম বা পশুর তুল্য বলা হয়েছে।
✍ অতএব, উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার বক্তব্যের আলোকে বলা যায়, ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মূল বক্তব্যই উদ্দীপকের বক্তব্যে প্রতিভাত হয়েছে।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও দেশবৈরিতা বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণিত দিক। বিখ্যাত রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার খুবই বিশ্বাস করতেন ব্রুটাসকে। তিনি ছিলেন জুলিয়াস সিজারের ঘনিষ্ঠ পরিষদ। কিন্তু এই কুখ্যাত ব্যক্তি নিজের স্বার্থে দেশের সঙ্গে, রাজা সিজারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। অন্যান্য পরিষদদের সঙ্গে ব্রুটাসও সিজারের হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।
ক. রাবণ ও বিভীষণের সম্পর্ক কী?
খ ‘রাঘব দাস আমি’ কী প্রকারে তাঁর বিপক্ষে কাজ করিব’- বিভীষণ একথা কেন বলেছেন?
গ. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের সঙ্গে উদ্দীপকের ব্রুটাস চরিত্রের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘দেশদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক সকলের কাছেই ঘৃণিত।’-উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ রাবণ ও বিভীষণ পরস্পর সহোদর।
খ. অনুধাবন
✍ মেঘনাদের তিরস্কারের জবাবে বিভীষণ আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে প্রশ্নোলিখিত উক্তিটি করেছেন।
✍ বিভীষণের মতে, তিনি সত্য ও ন্যায়ের পথ অবলম্বন করার জন্য রামের পক্ষ নিয়েছেন। রাক্ষসরাজ রাবণ তাঁর পাপকর্মের কারণে লঙ্কার সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। তাই তিনি দেবতাদের অনুগ্রহপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ রামকে প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছেন। বিভীষণ বলেন যে, ন্যায়ধর্মের পথ অবলম্বন করার জন্য রামের দাসে পরিণত হয়েছেন তিনি, ফলে তাঁর পক্ষে আর রামের বিরুদ্ধাচরণ সম্ভব নয়।
গ. প্রয়োগ
✍ বিশ্বাসঘাতকতার দিক থেকে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের সাথে উদ্দীপকের ব্রুটাস চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
✍ কারো বিশ্বাসভাজন হওয়ার পর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার মতো ঘৃণ্য কাজ আর হয় না। দেশ ও জাতির সাথে এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত ঘৃণিত। এরকম বিশ্বাসঘাতকরা যুগে যুগে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয় তাদের জঘন্যতম অপকর্মের জন্য।
✍ উদ্দীপকে ব্রুটাস সম্রাট জুলিয়াস সিজারের বিশ্বাসভাজন ও ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। নিজ স্বার্থের নেশায় বুঁদ হয়ে ব্রুটাস দেশের সাথে, রাজার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। এমনকি তিনি সম্রাটের হত্যাকাণ্ডেও যুক্ত ছিলেন। ব্রুটাসের মতো বিভীষণও দেশ ও জাতির সাথে একই রকমভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করে। বিভীষণ রামের দাসত্ব বরণ করে লক্ষণকে পথ দেখিয়ে রাক্ষসপুরীতে নিয়ে আসে। নিজ ভ্রাতা রাবণের পরাজয় নিশ্চিতকরণে সকল প্রকার কাজ করেন বিভীষণ। নিজ জাতির সঙ্গ ত্যাগ করে, নিজের দেশকে অন্যের করতলগত করতে সহায়তা করার মতো ঘৃণিত কাজ করে এবং মেঘনাদকে হত্যার জন্য লক্ষণকে রাক্ষসপুরীতে নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের সঙ্গে উদ্দীপকের ব্রুটাস চরিত্রের সাদৃশ্য প্রতীয়মান হয়।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘দেশদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক সকলের কাছেই ঘৃণিত’-উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে যথার্থ।
✍ সভ্য মানুষের কাছে দেশ হচ্ছে মায়ের মতো। যে মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তার পক্ষে যেকোনো জঘন্যতম কাজ করা সম্ভব। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় দেশদ্রোহিতার মতো জঘন্যতম কাজের প্রমাণ পাওয়া যায়।
✍ উদ্দীপকে ব্রুটাস রাজা সিজারের বিশ্বাস ভঙ্গ করে তাঁর হত্যাকারীদের সহায়তা করেন। তিনি সিজারের একান্ত ঘনিষ্ঠজন হয়েও এই রকম জঘন্যতম কাজে সহায়তা করেন শুধু নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ রাজার সাথে ব্রুটাসের এই আচরণকে ঘৃণাভরে স্মরণ করে। তেমনি বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতাতেও এই একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বিভীষণ রাক্ষসরাজা রাবণের ভাই হয়েও রামের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজ মাতৃভূমির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এমনকি রাক্ষসদের বীরযোদ্ধা মেঘনাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে লক্ষণকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে বিভীষণ। বিভীষণের এই হীন আচরণ মেঘনাদের কাছে ধরা পড়ার পর মেঘনাদ তাকে বিভিন্নভাবে ভর্ৎসনা করে।
✍ পুরাণের এ ঘটনা কালক্রমে এখনো মানুষ মনে রেখেছে এবং বিভীষণকে ঘরের শত্রু বলে ঘৃণা প্রকাশ করে। তাই দেখা যায় যে, উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে দেশদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক সকলের কাছেই ঘৃণিত উক্তিটি যথার্থ।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। এ যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ শহিদ হন। আর এ কাজে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল রাজাকার, আলবদরসহ তাদের এদেশীয় দোসররা। যদিও ‘যুদ্ধ আইনে’ নিরস্ত্র মানুষ হত্যা কাপুরুষোচিত।
ক. লক্ষণ কোন যজ্ঞাগারে প্রবেশ করেন?
খ. মেঘনাদ লক্ষণকে ‘ক্ষুদ্রমতি নর’ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের হানাদার বাহিনী এবং লক্ষণ চরিত্রের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালানো কাপুরুষোচিত’- উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে উক্তিটি বিচার কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ লক্ষণ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করেন।
খ. অনুধাবন
✍ নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধে আহবান করার কারণে মেঘনাদ লক্ষণকে ক্ষুদ্রমতি নর বলেছেন।
✍ কপটতার আশ্রয় নিয়ে লক্ষণ মেঘনাদের যজ্ঞাগারে প্রবেশ করেন। এছাড়াও লক্ষণ নিরস্ত্র মেঘনাদকে যুদ্ধে আহবান জানান। যুদ্ধসাজে সজ্জিত লক্ষণ অস্ত্রহীন মেঘনাদের সাথে যে আচরণ করেছেন তা মোটেও বীরের কাজ নয়। তাই মেঘনাদ লক্ষণকে ক্ষুদ্রমতি নর বলেছেন।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের হানাদার বাহিনী এবং লক্ষণ চরিত্রের মধ্যে সাদৃশ্য হলো উভয়েই নিরস্ত্র মানুষের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে।
✍ অতর্কিত আক্রমণকারী হিসেবে লক্ষণ চরিত্র এবং উদ্দীপকের হানাদার বাহিনীর মধ্যে মিল বর্তমান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বরোচিত কাজ করেছিল নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে। তেমনি লক্ষণও কপটতার মাধ্যমে লঙ্কায় প্রবেশ করে নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন।
✍ পাকিস্তানিরা এদেশের কিছু মানুষের সহায়তায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। লক্ষণ সরাসরি দেবতাদের সহযোগিতা নিয়ে মায়া বিস্তার করে মেঘনাদের যজ্ঞালয়ে প্রবেশ করেন। মেঘনাদ লক্ষণকে স্মরণ করিয়ে দেন, সে নিরস্ত্র শত্রুকে বধ করতে চান। দেবতাদের আনুুক‚ল্যপ্রাপ্ত লক্ষণের এই হীন আচরণ কোনোক্রমেই মেনে নেয়া যায় না এবং এখানেই হানাদার বাহিনীর সাথে তাঁর চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালানো কাপুরুষোচিত” উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে এই উক্তিটির যথার্থতা বিদ্যমান।
✍ নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালালে ওই নিরস্ত্র মানুষটির মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে দুই প্রতিপক্ষকেই সমান হতে হয়। একপক্ষ যদি অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত হয় আর অপরপক্ষ যদি অস্ত্রহীন হয় তাহলে সেখানে সমতা হয় না, হয় অন্যায়। আর অস্ত্রহীন মানুষের ওপর হামলা চালানো কোনো বীরোচিত কাজ নয়।
✍ উদ্দীপকে দেখা যায় যে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের কিছু বিশ্বাসঘাতকের সহায়তায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালায়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে পাকিস্তানিরা বাঙালির কাছে পরাজিত হয়েছিল। যদি তারা নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা না চালাত তাহলে হয়তো ৩০ লক্ষ মানুষকে শহিদ হতে হতো না। প্রায় একই পরিস্থিতি দেখা যায় ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায়। মেঘনাদ রাক্ষসদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বীর। রাম এবং রাবণের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে বিজয়লাভের জন্য মেঘনাদ দেবতার আরাধনা করতে যজ্ঞালয়ে যান।
✍ উদ্দীপকেও বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধ আইন’ অনুযায়ী নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা কাপুরুষোচিত কাজ। সুতরাং প্রশ্নোলিখিত উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে যথার্থ।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
মুক্তিযুদ্ধের সময় চৌধুরী পরিবারের ফুরকান চৌধুরী মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। অন্যদিকে, তার ভাই ফিরোজ চৌধুরী যোগ দেন রাজাকার বাহিনীতে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ফুরকান একদিন বাসায় এলে ফিরোজ তাকে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়।
ক. বিভীষণের মায়ের নাম কী?
খ. ‘চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে’-ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ফিরোজ চৌধুরীর মধ্যে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার কোন প্রবণতাগুলো লক্ষণীয়? আলোচনা কর।
ঘ. ‘কোন ধর্মমতে, কহ দাসে, শুনি, জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব জাতি-এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি’- উদ্দীপকের আলোকে এ পঙ্ক্তির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ বিভীষণের মায়ের নাম নিকষা।
খ. অনুধাবন
✍ ‘চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে’- লাইনটি দ্বারা অধমকে উত্তম স্থানে আসীন করানোকে বোঝানো হয়েছে।
✍ বিভীষণ রামের অনুগত ছিলেন। রামের আদর্শানুসারী হওয়ায় রাক্ষসকুলের বীর মেঘনাদ বিভীষণকে ভর্ৎসনা করেন। মেঘনাদের মতে, রাম তুচ্ছ ও হীন চরিত্রাধিকারী। তাঁকে আদর্শ হিসেবে বিভীষণ অনুসরণ করার মাধ্যমে মূলত চণ্ডালকে তথা হীনকে রাজার আসনে বসিয়েছেন।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের ফিরোজ চৌধুরীর মধ্যে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার স্বজাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং শত্রুকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়।
✍ মানুষ কখনো মানসিক নীচতার কারণে শত্রুর সাথে আঁতাত করে। আবার কখনো আদর্শগত দ্ব›েদ্বর কারণেও শত্রুর পক্ষ অবলম্বন করে।
✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ফুরকান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ছিলেন, যাকে তার ভাই ফিরোজ চৌধুরী রাজাকারের হাতে তুলে দিয়ে স্বজাতির সাথে বৈরিতার পরিচয় দেয়। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাতেও দেখা যায়, বিভীষণ লঙ্কার অধিবাসী হয়েও শত্রুপক্ষ তথা রামের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন, যা স্বজাতির সাথে বৈরিতার পরিচায়ক। আর এখানেই উদ্দীপকের ফিরোজ চরিত্রের প্রবণতার সঙ্গে ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ কোন ধর্মমতে, কহ দাসে, শুনি, জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব জাতি- এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি’- এ উক্তিটি উদ্দীপকের ক্ষেত্রেও তাৎপর্য বহন করে।
✍ স্বজাতি, জাতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন এবং এ ভালোবাসা প্রদর্শন বাঞ্ছনীয়। কিন্তু অনেক সময় মানুষ ধন ও যশের লোভে অথবা আদর্শের কারণে স্বজাতির প্রতি দ্বেষভাব প্রকাশ করে, যা সত্যিই গর্হিত কাজ। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় বিভীষণের আচরণ এ কারণেই গর্হিত।
✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, ফিরোজ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করে স্বজাতির সাথে বেইমানি প্রদর্শন করে। এমনকি আপন মুক্তিযোদ্ধা ভাইকে শত্রুর হাতে তুলে দেয়। স্বজাতির বিরুদ্ধাচরণ করার এ প্রবণতা ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের চরিত্রেও পাওয়া যায়, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি মেঘনাদের। এ উক্তিতে বিভীষণের কৃতকর্মের প্রতি প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে। যে আদর্শের কারণে বিভীষণ শত্রুর সাথে মিত্রতা করেছেন, সে আদর্শ বা নীতিধর্মের প্রতিও প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে। মূলত বিভীষণ তাঁর ভাই রাবণের অন্যায় কাজ মেনে নিতে পারেননি বলেই তাঁর আদর্শগত বিশ্বাসের কারণে এ বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হন। কিন্তু উদ্দীপকের ফিরোজ চৌধুরী শুধুই মানসিক নীচতার কারণে স্বদেশের সাথে বৈরিতা করেছে এবং আপন ভাইকে শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছে।
✍ আদর্শগত পার্থক্য থাকা সত্তে¡ও উদ্দীপকের ফিরোজ চৌধুরী আর কবিতার বিভীষণ স্বজাতির প্রতি সমান আচরণ প্রদর্শন করেছে। বিভীষণের এ আচরণ গর্হিত হলে ফিরোজ চৌধুরীর আচরণকে বিবেচনা করতে হবে নিকৃষ্টতম হিসেবে। এখানেই উক্তিটির তাৎপর্য নিহিত।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বিখ্যাত গ্রিক কবি হোমারের ‘ইলিয়ড’ মহাকাব্যের চরিত্র হেক্টর ট্রয় রাজ্যের যুবরাজ। ট্রয় যুদ্ধে তিনি অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দেন। স্বাজাত্যবোধ, সত্যনিষ্ঠা, দেশপ্রেম তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ট্রয় নগরকে রক্ষার জন্য তিনি প্রাণ বিসর্জন দিতেও পিছপা হননি।
ক. অরিন্দম বলা হয়েছে কাকে?
খ. মেঘনাদ কীভাবে লঙ্কার কলঙ্ক মোচন করতে চেয়েছেন?
গ. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মেঘনাদ ও উদ্দীপকের সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. ‘স্বাজাত্যবোধ ও দেশপ্রেম প্রকৃত বীরের স্বভাবধর্ম’-উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ অরিন্দম বলা হয়েছে মেঘনাদকে।
খ. অনুধাবন
✍ মেঘনাদ লক্ষণকে হত্যা করে লঙ্কার কলঙ্ক মোচন করতে চেয়েছেন।
✍ লঙ্কা রাক্ষসদের রাজ্য। সেখানে কোনো গুপ্তচর বা শত্রু প্রবেশের সাহস পায় না কিংবা প্রবেশের ক্ষমতাও রাখে না। অথচ লক্ষণ সবার চোখে ধুলো দিয়ে লঙ্কায় প্রবেশ করে রাজ্যের কলঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। তাই লক্ষণকে হত্যা করে মেঘনাদ লঙ্কার কলঙ্ক মোচন করতে চেয়েছেন।
গ. প্রয়োগ
✍ ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মেঘনাদ ও উদ্দীপকের হেক্টরের চরিত্র, বীরত্ব ও স্বদেশপ্রেমের দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ।
✍ মাতৃভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর যখন এ ভালোবাসা কোনো বীরের চরিত্রে ফুটে ওঠে, তখন সেটা আলঙ্কারিক হয়ে পড়ে। বস্তুত, কালে কালে সেরা বীরেরা স্বদেশের জন্যই লড়াই করে প্রাণ দিয়েছেন।
✍ উদ্দীপকে হেক্টরের বীরত্বের কথা পাওয়া যায়। ট্রয় নগরের এ বীর গ্রিকদের সাথে যুদ্ধের সময় স্বদেশপ্রেমের যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন তা ইতিহাসে বিরল। স্বদেশপ্রেমের এই নিষ্ঠা ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মেঘনাদের চরিত্রেও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মূলত বিভীষণের সাথে কথোপকথনের সময় তার স্বদেশপ্রেমের গভীরতা প্রকাশ পায়, যা উদ্দীপকের হেক্টর চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্য রচনা করেছে।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘স্বজাত্যবোধ ও দেশপ্রেম প্রকৃত বীরের স্বভাবধর্ম’- উদ্দীপক ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে উক্তিটি যথাযথ।
✍ স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা মানুষের উচ্চতর বৃত্তি। স্বদেশের আলয়ে মানুষ আপনার অস্তিত্বকে বিকশিত করে, ভালোবাসার বিস্তার ঘটায়, স্বপ্নের সাধন করে। ফলে, স্বদেশের প্রতি যার ভালোবাসা নেই সে পশুর চেয়েও অধম বিবেচিত হয়। যুগে যুগে বীরেরা দেশপ্রেমের টানেই বীরধর্মকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
✍ উদ্দীপকে হেক্টরের স্বদেশপ্রেমের কথা পাওয়া যায়। ট্রয় নগরের মহাবীর হেক্টরের স্বদেশপ্রেমের কথা পাওয়া যায়। হেক্টর স্বদেশ রক্ষায় জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায়ও স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে মেঘনাদের পরিচয় পাওয়া যায়। স্বদেশের মান রক্ষায় মেঘনাদ প্রাণ বাজি রাখতেও সর্বদা প্রস্তুত। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার মেঘনাদ এবং উদ্দীপকের হেক্টর দু’জনেই বীর। তাঁরা বীরত্বের যে নির্যাস, তা স্বদেশের সার্বভৌমত্ব ও সম্মান রক্ষায় ব্যয় করেছেন। আপনার ক্ষুদ্র কার্যের প্রতি লালায়িত হননি।
✍ হেক্টর ও মেঘনাদ এ দুই বীরের মতো কালে কালে যত বীর ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন প্রত্যেকেই স্বদেশের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন এবং প্রয়োজনে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, যা প্রশ্নোক্ত উক্তির সত্যতা নিশ্চিত করে।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সৃজনশীল প্রশ্ন-১১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফরকে বিশ্বাস করে সেনাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু, মিরজাফর নিজের স্বার্থে জাতির ও দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেন। তিনি ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান। বলা যায়, তার বিশ্বাসঘাতকতায় বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়।
ক. রাঘব দাস কে?
খ. ‘হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে! রাঘবের দাস তুমি’-উক্তিটিতে মেঘনাদ কী বুঝিয়েছেন?
গ. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের সঙ্গে উদ্দীপকের মিরজাফরের তুলনা কর।
ঘ. ‘বিভীষণ ধর্মের জন্য এবং মিরজাফর স্বার্থের জন্য স্বাজাত্যবোধকে বিসর্জন দিয়েছেন।’ তা উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
১১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ রাঘব দাস হলেন বিভীষণ।
খ. অনুধাবন
✍ ‘হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে! রাঘবের দাস তুমি’ -উক্তিটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে-বিভীষণও রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ হয়েছে তা শুনে মেঘনাদ ক্ষোভে, দুঃখে, যন্ত্রণায় তাঁর চাচাকে বলে যে, এ কথা শুনে তার মরে যেতে ইচ্ছে হয়।
✍ মেঘনাদ যুদ্ধে যাবার আগে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজা দিতে প্রবেশ করে। হঠাৎ সেখানে লক্ষণকে দেখে সে অবাক হয়, কিন্তু সাথে বিভীষণকে দেখে ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে কাকাকে যথেষ্ট ভর্ৎসনা করে। তাদের কুলগৌরব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নানা উপমা দেয়। রাক্ষসকুলে জন্ম নিয়ে বিভীষণ কীভাবে রাঘবের পক্ষ নেয় তা শুনে মেঘনাদের মরে যেতে ইচ্ছা করে।
গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে মিরজাফর যেমন বিশ্বাসঘাতক, ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় বিভীষণও তেমনি বিশ্বাসঘাতক।
✍ দেশ ও স্বজাতির স্বার্থে যারা নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে না তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। নিজের স্বার্থের জন্য তারা বড় কোনো ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না। উদ্দীপকে প্রকাশিত চরিত্র মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার চিত্রটিই ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় বিভীষণের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
✍ উদ্দীপকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফরকে বিশ্বাস করে সেনাপতির দায়িত্ব দেন। কিন্তু মিরজাফর ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে যুদ্ধে নবাবের পরাজয় ঘটিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দেয়। মূলত উদ্দীপকের মিরজাফর চরিত্র এবং ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার বিভীষণের চরিত্রের মজ্জাগত কোনো পার্থক্য নেই। বিশ্বাসঘাতকতার জন্য বিভীষণ ও মিরজাফর দুজনই ইতিহাসে নিকৃষ্ট চরিত্রের উদাহরণ হিসেবে পরিচিত।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘বিভীষণ ধর্মের জন্য এবং মিরজাফর স্বার্থের জন্য স্বজাত্যবোধকে বিসর্জন দিয়েছে’- উক্তিটি উদ্দীপকের বক্তব্য ও ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতার আলোকে যথার্থ।
✍ উদ্দীপকে মিরজাফর এবং আলোচ্য রচনায় বিভীষণ দুজনেই শত্রুদের পক্ষ নিয়েছে। উভয়ের মজ্জাগত বিষয় ছিল বিশ্বাসঘাতকতা। এ স্বার্থকে চরিতার্থ করতে গিয়ে আজ দুজনেই ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।
✍ পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফরকে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দিয়ে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। কিন্তু মিরজাফর নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে যুদ্ধে নবাবকে পরাজিত করে। ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় বিভীষণকেও একই রূপে দেখা যায়। বিভীষণ রাম-রাবণের যুদ্ধে ধর্মীয় আদর্শের কথা বলে রামের দাসত্ব স্বীকার করে নেয় এবং স্বজাতির শত্রুকে সহযোগিতা করেন। বিভীষণ শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশদ্রোহিতা ও জাতিদ্রোহিতার পরিচয় দেন।
✍ উদ্দীপক ও আলোচ্য রচনার বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মিরজাফরের নবাবকে ঠকানোর একমাত্র কারণ বাংলার মসনদ দখল করা। অন্যদিকে বিভীষণ রামের ধর্মীয় আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে সে মেঘনাদের শত্রুপক্ষ রাম-লক্ষণের সাথে হাত মেলান। তাই বলা যায়, মিরজাফর স্বার্থের জন্য আর বিভীষণ ধর্মের জন্য স্বজাত্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করতেও দ্বিধাবোধ করেনি।
Helpful
ReplyDeleteআমি কি ভাবে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো জানি না। আপনি আমার অনেক বড় সাহায্য করছেন। এই সৃজনশীল প্রশ্ন গুলে আমি খুঁজতেছিলাম পাচ্ছিলাম না আপনার আইডি থেকে পেলা অবশেষে ধন্যবাদ আপনাকে🥰।
ReplyDelete