বাংলা গল্প 'মমতাদি' -মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

[লেখক-পরিচিতি: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালে বিহারের সাঁওতাল পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। তাঁর পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর অঞ্চলের মালবদিয়া গ্রাম এবং মায়ের বাড়ি একই অঞ্চলের গাওদিয়া গ্রাম। ১৯২৬ সালে তিনি মেদিনীপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯২৮ সালে বাঁকুড়া ওয়েসলিয় মিশন কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। তারপর গণিতে অনার্স নিয়ে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে বি. এসসি ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে অতসীমামী নামক গল্প বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার নিয়তি নির্ধারিত হয়ে যায়।

এ সময় তিনি লেখা নিয়ে এতই মগ্ন থাকেন যে, অসাধারণ এই কৃতী ছাত্রের আর অনার্স পাস করা হয়নি। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি তাঁর বিখ্যাত দিবারাত্রির কাব্য রচনা করেন। এরপর তিনি লেখালেখিকেই জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেন। পদ্মা নদীর মাঝি ও পুতুল নাচের ইতিকথা লিখে তিনি বাংলা কথাসাহিত্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। পঞ্চাশটিরও অধিক উপন্যাস তিনি রচনা করেন। এর মধ্যে জননী, চিহ্ন, সহরতলী, অহিংস, চতুষ্কোণ তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ১৯৫৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর এই মহান লেখক মৃত্যুবরণ করেন।]

গল্পঃ
মমতাদি
শীতের সকাল। রোদে বসে আমি স্কুলের পড়া করছি, মা কাছে বসে ফুলকপি কুটছেন। সে এসেই বলল, আপনার রান্নার জন্য লোক রাখবেন? আমি ছোট ছেলে-মেয়েও রাখব।

নিঃসঙ্কোচ আবেদন। বোঝা গেল সঙ্কোচ অনেক ছিল, প্রাণপণ চেষ্টায় অতিরিক্ত জয় করে ফেলেছে। তাই যেটুকু সঙ্কোচ নিতান্তই থাকা উচিত তাও এর নেই। বয়স আর কত হবে, বছর তেইশ। পরনে সেলাই করা ময়লা শাড়ি, পাড়টা বিবর্ণ লাল।

মমতাদি গল্পের ভিডিও লিংক

সীমান্ত পর্যন্ত ঘোমটা, ঈষৎ বিশীর্ণ মুখে গাঢ় শ্রান্তির ছায়া, স্থির অচঞ্চল দুটি চোখ কপালে একটি ক্ষতচিহ্ন-আন্দাজে পরা টিপের মতো। মা বললেন, তুমি বঁধুনী? চমকে তার মুখ লাল হলো। সে চমক ও লালিমার বার্তা বোধহয় মার হৃদয়ে পৌছল, কোমল স্বরে বললেন, বোসো বাছা।

সে বসল না। অনাবশ্যক জোর দিয়ে বলল, হাঁ আমি রাঁধুনী। আমায় রাখবেন? আমি রান্না ছাড়া ছোট ছোট কাজও করব। মা তাকে জেরা করলেন। দেখলাম সে ভারি চাপা। মার প্রশ্নের ছাঁকা জবাব দিল, নিজে থেকে একটি কথা বেশি কইল না।

সে বলল, তার নাম মমতা। আমাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে জীবনময়ের গলি, গলির ভেতরে সাতাশ নম্বর বাড়ির একতলায় সে থাকে। তার স্বামী আছে আর একটি ছেলে। স্বামীর চাকরি নেই চার মাস, সংসার আর চলে না, সে তাই পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে এসেছে।

এই তার প্রথম চাকরি। মাইনে? সে তা জানে না। দুবেলা বেঁধে দিয়ে যাবে, কিন্তু খাবে না। পনের টাকা মাইনে ঠিক হলো। সে বোধহয় টাকা বারো আশা করেছিল, কৃতজ্ঞতায় দুচোখ সজল হয়ে উঠল। কিন্তু সমস্তটুকু কৃতজ্ঞতা সে নীরবেই প্রকাশ করল, কথা কইল না। মা বললেন, আচ্ছা, তুমি কাল সকাল থেকে এসো।

সে মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানিয়ে তৎক্ষণাৎ চলে গেল। আমি গেটের কাছে তাকে পাকড়াও করলাম। শোন। এখুনি যাচ্ছ কেন? রান্নাঘর দেখবে না? আমি দেখিয়ে দিচ্ছি এসো। কাল দেখবো, বলে সে এক সেকেন্ড দাঁড়াল না, আমায় তুচ্ছ করে দিয়ে চলে গেল।

ওকে আমার ভালো লেগেছিল, ওর সঙ্গে ভাব করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম, তবু, আমি ক্ষুন্ন হয়ে মার কাছে গেলাম। একটু বিস্মিত হয়েও। যার অমন মিষ্টি গলা, চোখে মুখে যার উপচে পড়া স্নেহ, তার ব্যবহার এমন রূঢ়!

মমতাদি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখকঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

মা বললেন, পিছনে ছুটেছিলি বুঝি ভাব করতে? ভাবিস না, তোকে খুব ভালোবাসবে। বার বার তোর দিকে এমন করে তাকাচ্ছিলো! শুনে খুশি হলাম। রাঁধুনী পদপ্রার্থিনীর স্নেহ সেদিন অমন কাম্য মনে হয়েছিল কেন বলতে পারি না। পরদিন সে কাজে এল।

নীরবে নতমুখে কাজ করে গেল। যে বিষয়ে উপদেশ পেল পালন করল, যে বিষয়ে উপদেশ পেল না নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করল- অনর্থক প্রশ্ন করল না, নির্দেশের অভাবে কোনো কাজ ফেলে রাখল না। সে যেন বহুদিন এ বাড়িতে কাজ করছে বিনা আড়ম্বরে এমন নিখুঁত হলো তার কাজ।

কাজের শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতা দেখে সকলে তো খুশি হলেন, মার ভবিষ্যৎ বাণী সফল করে সে যে আমায় খুব ভালোবাসবে তার কোনো লক্ষণ না দেখে আমি হলাম ক্ষুন্ন।

দুবার খাবার জল চাইলাম, চার পাঁচ বার রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম, কিন্তু কিছুতেই সে আমায় ভালোবাসল না। বরং রীতিমতো উপেক্ষা করল। শুধু আমাকে নয় সকলকে। কাজগুলিকে সে আপনার করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকাল না।

মার সঙ্গে মৃদুস্বরে দু একটি দরকারী কথা বলা ছাড়া ছটা থেকে বেলা সাড়ে দশটা অবধি একবার কাশির শব্দ পর্যন্ত করল না। সে যেন ছায়াময়ী মানবী, ছায়ার মতোই স্লানিমার ঐশ্বর্যে মহীয়সী কিন্তু ধরাছোঁয়ার অতীত শব্দহীন অনুভূতিহীন নির্বিকার।

রাগ করে আমি স্কুলে চলে গেলাম। সে কি করে জানবে মাইনে করা রাধুনীর দূরে থাকাটাই সকলে তার কাছে আশা করছে না, তার সঙ্গে কথা কইবার জন্য বাড়ির ছোটকর্তা ছটফট করেছে!

সপ্তাহখানেক নিজের নতুন অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর সে আমার সঙ্গে ভাব করল।

বাড়িতে সেদিন কুটুম এসেছিল, সঙ্গে এসেছিল এক গাদা রসগোল্লা আর সন্দেশ। প্রকাশ্য ভাগটা প্রকাশ্যে খেয়ে ভাড়ার ঘরে গোপন ভাগটা মুখে পুরে চলেছি, কোথা থেকে সে এসে খপ করে হাত ধরে ফেলল।

রাগ করে মুখের দিকে তাকাতে সে এমন ভাবে হাসল যে লজ্জা পেলাম। বলল, দরজার পাশ থেকে দেখছিলাম, আর কটা খাচ্ছ গুনছিলাম। যা খেয়েছ তাতেই বোধহয় অসুখ হবে, আর খেয়ো না। কেমন?

ভৎসনা নয়, আবেদন। মার কাছে ধরা পড়লে বকুনি খেতাম এবং এক খাবলা খাবার তুলে নিয়ে ছুটে পালাতাম। এর আবেদনে হাতের খাবার ফেলে দিলাম।

সে বলল, লক্ষ্মী ছেলে। এসো জল খাবে। বাড়ির সকলে কুটুম নিয়ে অন্যত্র ব্যস্ত ছিল, জল খেয়ে আমি রান্নাঘরে আসন পেতে তার কাছে বসলাম। এতদিন তার গম্ভীর মুখই শুধু দেখেছিলাম, আজ প্রথম দেখলাম, সে নিজের মনে হাসছে।

আমি বললাম, বামুনদিসে চমকে হাসি বন্ধ করল। এমন ভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমি তাকে গাল দিয়েছি। বুঝতে না পেরেও অপ্রতিভ হলাম। কি হলো বামুনদি? সে এদিক ওদিক তাকাল। ডালে খানিকটা নুন ফেলে দিয়ে এসে হঠাৎ আমার গা ঘেঁষে বসে পড়ল। গম্ভীর মুখে বলল, আমায় বামুনদি বোলো না থোকা। শুধু দিদি বোলো। তোমার মা রাগ করবেন। দিদি বললে?

আমি মাথা নাড়লাম। সে ছোট এক নিঃশ্বাস ফেলে আমাকে এত কাছে টেনে নিল যে আমার প্রথম ভারি লজ্জা করতে লাগল।

তারপর কিছুক্ষণ আমাদের যে গল্প চলল সে অপূর্ব কথোপকথন মনে করে লিখতে পারলে সাহিত্যে হোক আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান লেখা হয়ে উঠত।

হঠাৎ মা এলেন। সে দুহাতে আমাকে একরকম জড়িয়েই ধরে ছিল, হাত সরিয়ে ধরা পড়া চোরের মতো হঠাৎ ব্রিত হয়ে উঠল, দুচোখে ভয় দেখা দিল। কিন্তু সে মুহূর্তের জন্য। পরক্ষণে আমার কপালে চুম্বন করে মাকে বলল, এত কথা কইতে পারে আপনার ছেলে।

তখন বুঝিনি, আজ বুঝি স্নেহে সে আমায় আদর করেনি, নিজের গর্ব প্রতিষ্ঠার লোভে। মা যদি বলতেন, খোকা উঠে আয়,- যদি কেবল মুখ কালো করে সরে যেতেন, পরদিন থেকে সে আর আসত না। পনের টাকার খাতিরেও না, স্বামীপুত্রের অনাহারের তাড়নাতেও না। মা হাসলেন। বললে, ও ওইরকম। সারাদিন বকবক করে। বেশি আস্কারা দিও না, জ্বালিয়ে মারবে।

বলে মা চলে গেলেন। তার দুচোখ দিয়ে দুটো দুর্বোধ্য রহস্য টপ টপ করে ঝরে পড়ল। মা অপমান করলে তার চোখ হয়তো শুকননাই থাকত, সম্মানে, চোখের জল ফেলল! সে সম্মানের আগাগোড়া করুণা ও দয়া মাখা ছিল, সেটা বোধহয় তার সইল না। তিন চার দিন পরে তার গালে তিনটে দাগ দেখতে পেলাম। মনে হয়, আঙ্গুলের দাগ।

মাস্টারের চড় খেয়ে একদিন অবনীর গালে যে রকম দাগ হয়েছিল তেমনি। আমি ব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন করলাম, তোমার গালে আঙ্গুলের দাগ কেন? কে চড় মেরেছে? সে চমকে গালে হাত চাপা দিয়া বলল, দূর! তারপর হেসে বলল, আমি নিজে মেরেছি!

কাল রাত্রে গালে একটা মশা বসেছিল, খুব রেগেমশা মারতে গালে চড়! বলে আমি খুব হাসলাম। সেও প্রথমটা আমার সঙ্গে হাসতে আরম্ভ করে গালে হাত ঘষতে ঘষতে আনমনা ও গম্ভীর হয়ে গেল। তার মুখ দেখে আমারও হাসি বন্ধ হয়ে গেল।

চেয়ে দেখলাম,ভাতের হাঁড়ির বুদবুদফাটা বাষ্পে কি দেখে যেন তার চোখ পলক হারিয়েছে, নিচের ঠোট দাঁতে দাঁতে কামড়ে ধরেছে, বেদনায় মুখ হয়েছে কালো। সন্দিগ্ধ হয়ে বললাম, তুমি মিথ্যে বলছো দিদি। তোমায় কেউ মেরেছে। সে হঠাৎ কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল, না ভাই, না। সত্যি বলছি না।

কে মারবে? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়ে আমাকে চুপ করে থাকতে হলো। তখন কি জানি তার গালে চড় মারার অধিকার একজন মানুষের আঠার আনা আছে! কিন্তু চড় যে কেউ একজন মেরেছে সে বিষয়ে আমার সন্দেহ ঘুচল না।

শুধু দাগ নয়, তার মুখ চোখের ভাব, তার কথার সুর সমস্ত আমার কাছে ওকথা ঘোষণা করে দিল। বিবর্ণ গালে তিনটি রক্তবর্ণ দাগ দেখতে দেখতে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। আমি গালে হাত বুলিয়ে দিতে গেলাম কিন্তু সে আমার হাতটা টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরল। চুপি চুপি বলল, কারো কাছে যা পাই না, তুমি তা দেবে কেন?

আমি অবাক হয়ে বললাম, কি দিলাম আমি? এ প্রশ্নের জবাব পেলাম না। হঠাৎ সে তরকারী নামাতে ভারি ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পিঁড়িতে বসামাত্র খোপা খুলে পিঠ ভাসিয়ে একরাশি চুল মেঝে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল কি একটা অন্ধকার রহস্যের আড়ালে সে যেন নিজেকে লুকিয়ে ফেলল।

রহস্য বৈকি। গালে চড়ের দাগ, চিরদিন যে ধৈর্যময়ী ও শান্ত তার ব্যাকুল কাতরতা, ফিসফিস করে ছোট ছেলেকে শোনানো; কারও কাছে যা পাই না তুমি তা দেবে কেন? বুদ্ধির পরিমাণের তুলনায় এর চেয়ে বড় রহস্য আমার জীবনে কখনো দেখা দেয়নি!

ভেবেচিন্তে আমি তার চুলগুলি নিয়ে বেণী পাকাবার চেষ্টা আরম্ভ করে দিলাম। আমার আশা পূর্ণ হলো সে মুখ ফিরিয়ে হেসে রহস্যের ঘোমটা খুলে সহজ মানুষ হয়ে গেল। বিকালে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা, তোমার বরের চাকরি হলে তুমি কি করবে? তুমি কি করতে বল? হরির লুট দেব? না তোমায় সন্দেশ খাওয়াব।

ধেৎ তা বলছি না। তোমার বরের চাকরি নেই বলে আমাদের বাড়ি কাজ করছ, তা তো চাকরি হলে করবে না? সে হাসল, করব। এখন করছি যে! তোমার বরের চাকরি হয়েছে। হয়েছে বলে সে গম্ভীর হয়ে গেল।

আহা স্বামীর চাকরি নেই বলে ভদ্রলোকের মেয়ে কষ্টে পড়েছে, পাড়ার মহিলাদের কাছে মার এই মন্তব্য শুনে মমতাদির বরের চাকরির জন্য আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠেছিলাম। তার চাকরি হয়েছে শুনে পুলকিত হয়ে মাকে সংবাদটা শুনিয়ে দিলাম। মা তাকে ডেকে পাঠালেন, তোমার স্বামীর চাকরি হয়েছে? সে স্বীকার করে বলল, হয়েছে।

বেশি দিন নয়, ইংরাজি মাসের পয়লা থেকে। মা বললেন, অন্য লোক ঠিক করে দিতে পারছ না বলে কি তুমি কাজ ছেড়ে দিতে ইতস্তত করছ? তার কোনো দরকার নেই। আমরা তোমায় আটকে রাখব না। তোমার কষ্ট দূর হয়েছে তাতে আমরাও খুব সুখী।

তুমি ইচ্ছে করলে এবেলাই কাজ ছেড়ে দিতে পার, আমাদের অসুবিধা হবে না। তার চোখে জল এল, সে শুধু বলল, আমি কাজ করব। মা বললেন, স্বামীর চাকরি হয়েছে, তবু? সে বলল, তাঁর সামান্য চাকরি, তাতে কুলবে না মা। আমায় ছাড়বেন না। আমার কাজ কি ভালো হচ্ছে না?

মা ব্যস্ত হয়ে বললেন, অমন কথা তোমার শত্রুও বলতে পারবে না মা। সেজন্য নয়। তোমার কথা ভেবেই আমি বলছিলাম। তোমার ওপর মায়া বসেছে, তুমি চলে গেলে আমাদেরও কি ভালো লাগবে? সে একরকম পালিয়ে গেল। আমি তার পিছু নিলাম। রান্নাঘরে ঢুকে দেখলাম সে কাঁদছে।

আমায় দেখে চোখ মুছল। আচমকা বলল, মিথ্যে বললে কি হয় খোকা? মিথ্যে বললে কি হয় জানতাম। বললাম, পাপ হয়। গুরুনিন্দা বাঁচাতে মিথ্যে বললে? এটা জানতাম না। গুরুনিন্দা পাপ, মিথ্যা বলা পাপ। কোনটা বেশি পাপ সে জ্ঞান আমার জন্মায়নি।

কিন্তু না জানা কথা বলেও সান্ত্বনা দেওয়া চলে দেখে বললাম, তাতে একটুও পাপ হয় না। সত্যি! কাঁদছ কেন? তখন তার চাকরির এক মাস বোধহয় পূর্ণ হয়নি। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরবার সময়। দেখলাম জীবনময়ের গলির মোড়ে ফেরিওয়ালার কাছে কমলা লেবু কিনছে।

সঙ্গে নেবার ইচ্ছে নেই টের পেয়েও এক রকম জোর করেই বাড়ি দেখতে গেলাম। দুটি লেবু কিনে আমাকে সঙ্গে নিয়ে সে গলিতে ঢুকল। বিশ্রী নোংরা গলি। কে যে ঠাট্টা করে এই যমালয়ের পথটার নাম জীবনময় লেন রেখেছিল! গলিটা আস্ত ইট দিয়ে বাঁধানো, পায়ে পায়ে ক্ষয় হয়ে গেছে।

দুদিকের বাড়ির চাপে অন্ধকার, এখানে ওখানে আবর্জনা জমা করা আর একটা দূষিত চাপা গন্ধ। আমি সঙ্কুচিত হয়ে তার সঙ্গে চলতে লাগলাম। সে বলল, মনে হচ্ছে পাতালে চলেছ, না? সাতাশ নম্বরের বাড়িটা দোতলা নিশ্চয়, কিন্তু যত ক্ষুদ্র দোতলা হওয়া সম্ভব।

সদর দরজার পরেই ছোট একটি উঠান, মাঝামাঝি কাঠের প্রাচীর দিয়ে দুভাগ করা। নিচে ঘরের সংখ্যা বোধহয় চার, কারণ মমতাদি আমায় যে ভাগে নিয়ে গেল সেখানে দুখানা ছোট ছোট কুঠরির বেশি কিছু আবিষ্কার করতে পারলাম না। ঘরের সামনে দুহাত চওড়া একটু রোয়াক, একপাশে একশিট করোগেট আয়রনের ছাদ ও চটের বেড়ার অস্থায়ী রান্নাঘর।

চটগুলি কয়লার ধোঁয়ায় কয়লার বর্ণ পেয়েছে। সে আমাকে শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে টুলে বসাল। ঘরে দুটি জানালা আছে এবং সম্ভবত সেই কারণেই শোবার ঘর করে অন্য ঘরখানার চেয়ে বেশি মান দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু জানালা দুটির এমনি অবস্থান যে আলো যদিও কিছু কিছু আসে, বাতাসের আসা-যাওয়া একেবারে অসম্ভব। সুতরাং পক্ষপাতিত্বের যে খুব জোরালো কারণ ছিল তা বলা যায় না। সংসারের সমস্ত জিনিসই প্রায় এঘরে ঠাঁই পেয়েছে। সব কম দামী শ্রীহীন জিনিস। এই শ্রীহীনতার জন্য সযত্নে গুছিয়ে রাখা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে বিশৃঙ্খলতার অন্ত নেই। একপাশে বড় চৌকি, তাতে গুটানো মলিন বিছানা।

চৌকির তলে একটি চরকা আর ভাঙ্গা বেতের বাস্কেট চোখে পড়ে, অন্তরালে হয়তো আরও জিনিস আছে। ঘরের এক কোণে পাশাপাশি রক্ষিত দুটি ট্রাংক- দুটিরই রঙ চটে গেছে, একটির তালা ভাঙ্গা। অন্য কোণে কয়েকটা মাজা বাসন, বাসনের ঠিক উর্ধ্বে কোনাকুনি টাঙ্গানো দড়িতে খানকয়েক কাপড়।

এই দুই কোণের মাঝামাঝি দেওয়াল ঘেঁষে পাতা একটি ভাঙ্গা টেবিল, আগাগোড়া দড়ির ব্যান্ডেজের জোরে কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলে কয়েকটা বই-খাতা, একটি অল্প দামী টাইমপিস, কয়েকটা ওষুধের শিশি, একটা মেরামত করা আর্সি, কয়েকটা ভাঁজ করা সংবাদপত্র, এই সব টুকিটাকি জিনিস।

টেবিলের উর্ধ্বে দেওয়ালের গর্তের তাকে কতকগুলি বই। ঘরে আর একটি জিনিস ছিল- একটি বছর পাঁচেকের ছেলে। চৌকিতে শুধু মাদুরের ওপরে উপুড় হয়ে শুয়ে সে ঘুমিয়ে ছিল। মমতাদি ঘরে ঢুকেই ব্যস্ত হয়ে ছেলেটির গায়ে হাত দিল, তারপর গুটানো বিছানার ভেতর থেকে লেপ আর বালিশ টেনে বার করল।

সন্তর্পণে ছেলেটির মাথার তলে বালিশ দিয়ে লেপ দিয়ে গা ঢেকে দিল। বলল, কাল সারারাত পেটের ব্যথায় নিজেও ঘুমোয়নি, আমাকেও ঘুমোতে দেয়নি। উনি তো রাগ করে-কই, তুমি লেবু খেলে না? আমি একটা লেবু খেলাম। সে চুপ করে খাওয়া দেখে বলল, মুড়ি ছাড়া ঘরে কিছু নেই, দোকানের বিষও দেব না, একটা লেবু খাওয়াতে তোমাকে ডেকে আনলাম!

আমি বললাম, আর একটা লেবু খাব দিদি। সে হেসে লেবু দিল, বলল, কৃতার্থ হলাম। সবাই যদি তোমার মতো ভালোবাসত।

ঘরে আলো ও বাতাসের দীনতা ছিল। খানিক পরে সে আমায় বাইরে রোয়াকে মাদুর পেতে বসাল। কথা বলার সঙ্গে সংসারের কয়েকটা কাজও করে নিল। ঘর ঝাঁট দিল, কড়াই মাজল, পানি তুলল, তারপর মশলা বাটতে বসল। হঠাৎ বলল, তুমি এবার বাড়ি যাও ভাই। তোমার খিদে পেয়েছে।

শব্দার্থ ও টীকা: বাছা- বক্স বা অল্পবয়সী সন্তান। পর্দা ঠেলে উপার্জন- এখানে নারীদের অন্তঃপুরে থাকার প্রথাভঙ্গ করে বাইরে এসে আয়-রোজগার করা বোঝাচ্ছে। অনাড়ম্বর জাঁকজমকহীন। বামুনদিব্রাহ্মণদিদির সংক্ষিপ্ত রূপ। আগে রান্না বা গৃহকর্মে যে ব্রাহ্মণকন্যাগণ নিয়োজিত হতেন তাদের। কথ্যরীতিতে বামুনদি ডাকা হতো। অপ্রতিভ- অপ্রস্তুত। পরদিন থেকে সে আর আসত না- না আসার কারণ আত্মসম্মান। মমতাদি টাকার জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ নিয়েছে সত্য কিন্তু তাকে অসম্মান করলে বা সন্দেহের চোখে দেখলে নিজে অপমান বোধকরে চাকরি ত্যাগের সাহস তার ছিল। হরির লুট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দান করা। সংকীর্তনের পর হরির নামে যেভাবে বাতাসা ছড়ানো হয়।

পাঠ-পরিচিতি: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরীসৃপ’(১৯৩৯) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘মমতাদি’ গল্প। এই গল্পে গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। স্কুল পড়ুয়া একটি ছেলে যখন দেখে তাদের বাড়িতে মমতাদি নামে এক গৃহকর্মী আসে, তখন সে আনন্দিত হয়। তাকে নিজের বাড়ির একজন বলে ভাবতে শুরু করে ছেলেটি। মমতাদির সংসারে অভাব আছে বলেই মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও তাকে অপরের বাড়িতে কাজ নিতে হয়। এই আত্মমর্যাদাবোধ তার সবসময়ই সমুন্নত ছিল। সে নিজে যেমন আদর ও সম্মানপ্রত্যাশী, তেমনি অন্যকেও স্নেহ ও ভালোবাসা দেবার ক্ষেত্রে তার মধ্যে দ্বিধা ছিল না। স্কুলপড়ুয়া ছেলেটি তাই মমতাদির কাছে ছোট ভাইয়ের মর্যাদা লাভ করে। তাকে নিজ বাসায় নিয়ে গিয়ে যথাসামর্থ আপ্যায়ন করে মমতাদি। সম্মান ও সহমর্মিতা নিয়ে মমতাদির পাশেও দাঁড়ায় স্কুলপড়ুয়া ঐ ছেলে ও তার পরিবার। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের গৃহকর্মে যারা সহায়তা করে থাকেন তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা জরুরি। আত্মসম্মানবোধ তাদেরও আছে। এই বোধকে মান্য করলে তারাও গৃহস্থের পরিবারকে নিজ পরিবার হিসেবে গণ্য করবেন।

অনুশীলনীঃ
কর্ম-অনুশীলনঃ
স্নেহ-ভালোবাসা ধনী-গরিবের সমান’-এ বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখ।

বহুনির্বাচনি প্রশ্নঃ
১। মমতাদির বেতন কত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল?
ক. ১০ টাকা
খ. ১২ টাকা
গ. ১৫ টাকা
ঘ. ১৮ টাকা

২। চড় খাওয়ার বিষয়টি দিদি কেন গোপন রেখেছিলেন?
ক. লজ্জা পেয়ে।
খ. আত্মসম্মানের জন্য
গ. বিপদের আশঙ্কা
ঘ. চাকরি যাওয়ার ভয়ে

নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
মা মারা গেলে নিরাশ্রয় কেষ্টা বৈমাত্রেয় বোন কাদম্বিনীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তার এই অনাকাঙ্ক্ষিত আগমন কাদম্বিনী ভালোভাবে নেয়নি বরং মনে মনে সে ভীষণ অখুশি। তাকে দিয়ে প্রতিনিয়ত সংসারের নানা কাজ করিয়ে নিচ্ছে। কারণে-অকারণে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রায়ই দুর্ব্যবহার করে। নিরুপায় কেষ্টা সবকিছু নীরবে সহ্য করে।

৩। যে বিচারে কেষ্টা ও মমতাদি একসূত্রে গাঁথা তা হলো-
i. দারিদ্র্য
ii. অসহায়ত্ব
iii. নিরাশ্রয়

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i. ও iii
ঘ. i, ii ও iii
 
এসএসসি (SSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড

সৃজনশীল প্রশ্নঃ
রাসেল ড্রাইভার হিসেবে যেমন দক্ষ তেমনি সৎ। প্রকৌশলী এমারত সাহেব তাকে ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেন। ইফতি, সনাম ও শিলাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসাই তার প্রধান কাজ। ঘরের সবাই ওকে ভীষণ ভালোবাসে। ইফতিরা ওকে ভাইয়া বলে ডাকে, একসাথে খায়, গল্প করে, বেড়াতে যায়। রাসেলের প্রতি সন্তানদের এই আচরণে এমারত সাহেব ভীষণ খুশি।
ক. মমতাদির বয়স কত ছিল?
খ. মমতাদির চোখ সজল হয়ে উঠেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে রাসেলের মাঝে বিদ্যমান মমতাদির বিশেষ গুণটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রাসেল ও মমতাদির প্রতি দুই পরিবারের আচরণের ফুটে ওঠা দিকটি সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে কতটুকু প্রভাব ফেলে? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
Share:

HSC বাংলা ১ম পত্র mcq প্রশ্ন ও উত্তর বোর্ড প্রশ্ন-০২

বোর্ড প্রশ্ন-২
এইচএসসি পরীক্ষা 
বিষয়: বাংলা ১ম পত্র 
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন-উত্তর 
বিষয় কোড: ১০১ 

সময়: ৩০ মিনিট                   পূর্ণমান: ৩০
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: সরবরাহকৃত বহুনির্বাচনি অভীক্ষার উত্তরপত্রের প্রশ্নের ক্রমিক নম্বরের বিপরীতে প্রদত্ত বর্ণসম্বলিত বৃত্তসমূহ হতে সঠিক/ সর্বোৎকৃষ্ট উত্তরের বৃত্তটি বল পয়েন্ট কলম দ্বারা সম্পূর্ণ ভরাট কর। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। প্রশ্নপত্রে কোনো প্রকার দাগ/ চিহ্ন দেয়া যাবে না।]

১. নেপোলিয়ন কোন দ্বীপে মৃত্যুবরণ করেন?
ক. ওয়েলিংটন
খ. ওয়াটারলু
গ. সেন্টহেলেনা
ঘ. আন্দামান
উত্তরঃ গ. সেন্টহেলেনা

২. “তিনি কোনোমতেই কারো কাছে ঠকিবেন না।” ‘তিনি’ বলতে ‘অপরিচিতা’ গল্পে কাকে বোঝানো হয়েছে?
ক. মামা
খ. শম্ভুনাথ 
গ. হরিশ 
ঘ. অনুপম
উত্তরঃ ক. মামা

৩. এক সময় কারা অসভ্য বর্বর ছিল?
ক. বাঙালি 
খ. ভারতবাসী
গ. ধনাঢ্য ব্যক্তি 
ঘ. চাষা
উত্তরঃ খ. ভারতবাসী

৪. ‘আহবান’ গল্পে বর্ণনাকারীর জন্য বুড়ির চাটাই বোনার কারণ কী?
ক. বর্ণনাকারী খেজুরের চাটাই পছন্দ করেন
খ. বুড়ি এটি বর্ণনাকারীর কাছে বিক্রি করবে
গ. বর্ণনাকারীর প্রতি বুড়ির সন্তান স্নেহ
ঘ. বুড়ি বর্ণনাকারীকে খেজুরের চাটাই উপহার দেবে
উত্তরঃ গ. বর্ণনাকারীর প্রতি বুড়ির সন্তান স্নেহ

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ pdf download বাংলা ১ম পত্র গাইড

৫. ‘মাসি-পিসি’ গল্পে মাসি ও পিসির এক দেহ এক মন হয়ে যাওয়ার কারণ কোনটি?
i. দুজনেই বিধবা
ii. আহ্লাদিকে দেখাশোনা
iii. নিজেদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii 
খ. i ও iii 
গ. ii ও. iii
ঘ. i, ii ও iii
উত্তরঃ গ. ii ও. iii

৬. গোপন ও নীরব সাধনা কার মধ্যে অভিব্যক্ত?
ক. বৃক্ষে
খ. নদীতে 
গ. মানুষে 
ঘ. ফুলে
উত্তরঃ ক. বৃক্ষে

৭. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে নজরুলের মতে পরাবলম্বন আমাদের কী করে তুলেছে?
i. নিষ্ক্রিয় 
ii. বিলাসী 
iii. দাস

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii 
খ. i ও iii
গ. ii ও iii 
ঘ. i, ii ও iii
উত্তরঃ খ. i ও iii

৮. ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাকে তাঁর সহকর্মীদের খবর দিতে বললেন?
ক. চায়ের দোকানের মালিক
খ. নৌকার মাঝি
গ. গাড়ির ড্রাইভার 
ঘ. মহিউদ্দীন
উত্তরঃ ক. চায়ের দোকানের মালিক

৯. ল্যুভ জাদুঘরটি কোথায় অবস্থিত?
ক. ফ্রান্স
খ. মিশর 
গ. ইংল্যান্ড 
ঘ. আমেরিকা
উত্তরঃ ক. ফ্রান্স

১০. ‘রেইনকোট’ গল্পে রেইনকোটটি কিসের প্রতীক?
i. প্রতিহিংসার
ii. দেশপ্রেমের
iii. মুক্তিযুদ্ধের

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii 
খ. i ও iii 
গ. ii ও. iii
ঘ. i, ii ও iii
উত্তরঃ গ. ii ও. iii

১১. গোয়ালার সুন্দরী কন্যা রাবেয়া স্বামীর অসচ্ছলতার কারণে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। উদ্দীপকের রাবেয়ার সাথে নিচের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. কল্যাণী 
খ. মাদাম লোইসেল
গ. মাদাম ফোরস্টিয়ার 
ঘ. জমিরন
উত্তরঃ খ. মাদাম লোইসেল

১২. ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পটিতে লেখক যা চেয়েছেন-
ক. পরিবেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা
খ. মানুষের নির্বুদ্ধিতাকে তুলে ধরা
গ. মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করা
ঘ. মানুষের উপর অন্য প্রাণীর প্রাধান্য দেওয়া
উত্তরঃ ক. পরিবেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা

১৩. “হায় তাত! উচিত কি তব এ কাজ?” মেঘনাদের এই উক্তির মধ্য দিয়ে বিভীষণের কোন কাজটি পছন্দ হয়নি?
ক. লক্ষণকে যজ্ঞাগারে প্রবেশে সাহায্য করা
খ. ভ্রাতুষ্পুত্রকে হত্যায় সহায়তা করা
গ. মাতৃ আজ্ঞা পালন না করা
ঘ. মাতৃভ‚মির জন্য যুদ্ধ না করা
উত্তরঃ ক. লক্ষণকে যজ্ঞাগারে প্রবেশে সাহায্য করা

১৪. ‘ঐকতান’ কবিতার প্রথম চরণ কোনটি?
ক. গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সে সর্বত্রগামী
খ. কাছে থেকে দূরে যারা তাহাদের বাণী যেন শুনি
গ. সে কবির বাণী-লাগি কান পেতে আছি
ঘ. বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি
উত্তরঃ ঘ. বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি

উদ্দীপকটি পড়ে ১৫ ও ১৬ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি
একই পৃথিবীর স্তন্যে-লালিত
একই রবি-শশী মোদের সাথী।

১৫. উদ্দীপকের সাথে নিচের কোন চরণটির মিল আছে?
i. এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই
ii. মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান
iii. নাই দেশ কাল পাত্রের ভেদ অভেদ ধর্ম জাতি 

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i 
খ. ii 
গ. iii
ঘ. i, ii ও iii
উত্তরঃ গ. iii

১৬. উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতার কোন ভাবটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে?
ক. মানুষে মানুষে সমতা 
খ. মানব হৃদয়ের গুরুত্ব
গ. মানুষের ধর্মভীরুতা 
ঘ. মানবতার জয়গান
উত্তরঃ ঘ. মানবতার জয়গান

১৭. ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় সন্ধ্যার বাতাসে কী উড়ে যায়?
ক. কাক 
খ. চিল 
গ. সুদর্শন
ঘ. শালিক
উত্তরঃ গ. সুদর্শন

১৮. “হে কবি, নীরব কেন? ফাগুন যে এসেছে ধরায়!” এ চরণটিতে ‘নীরব কেন’ বলতে কবির কেমন অবস্থা বোঝায়?
ক. জীবন সম্পর্কে উদাসীনতা
খ. ঘুমিয়ে থাকা
গ. কাব্য ও গান রচনায় সক্রিয় না হওয়া
ঘ. শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে থাকা
উত্তরঃ গ. কাব্য ও গান রচনায় সক্রিয় না হওয়া

১৯. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছেন এবং সম্ভ্রম হারিয়েছেন অসংখ্য মা-বোন। উদ্দীপকটির বক্তব্যের সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় বর্ণিত কোনটি সাদৃশ্যপূর্ণ?
i. লক্ষ লক্ষ মানুষের পঙ্গু-বিকৃত হওয়া
ii. ট্রয়নগরী বিধ্বস্ত হওয়া
iii. ফসলের মাঠে আগুন জ্বলা

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii 
গ. iii 
ঘ. i, ii ও iii
উত্তরঃ 

২০. “আমাদের তরুণরাই দেশ ও জাতির চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়াক।” এই প্রত্যাশার প্রতিফলন ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার কোন চরণটিতে ঘটেছে?
ক. আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা
খ. এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো
গ. এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে
ঘ. এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে
উত্তরঃ ঘ. এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে

২১. ‘ফেব্রæয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় কৃষ্ণচুড়া ফুলকে কবির কাছে কেমন মনে হয়?
ক. রক্তে রঞ্জিত বর্ণমালা 
খ রক্তে রঞ্জিত জামা
গ. পতাকার লাল রং
ঘ. শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ
উত্তরঃ ঘ. শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ

২২. তার পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল- এই চরণটিতে কার পিঠের ক্ষতকে নির্দেশ করা হয়েছে?
ক. কবির পূর্বপুরুষের
খ. বাংলার কৃষকদের
গ. মুক্তিযোদ্ধাদের 
ঘ. কবির পিতার
উত্তরঃ ক. কবির পূর্বপুরুষের

২৩. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতায় বর্ণনা করা হয়েছে?
ক. একজন সংগ্রামী মানুষের জীবন
খ. এদেশের মানুষের সুখ, শান্তি ও প্রাচুর্য
গ. বাংলার রূপবৈচিত্র্য
ঘ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা
উত্তরঃ ক. একজন সংগ্রামী মানুষের জীবন

২৪. “আমাকে সেই অস্ত্র ফিরিয়ে দাও” এখানে কবি কোন অস্ত্রের কথা বলেছেন?
ক. ভালোবাসা
খ. প্রাচীন
গ. পারমাণবিক 
ঘ. আধুনিক
উত্তরঃ ক. ভালোবাসা

২৫. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাশিমবাজার কুঠির প্রধান কে?
ক. রবার্ট ক্লাইভ 
খ. উইলিয়াম ওয়াটসন
গ. রজার ড্রেক 
ঘ. কিলপ্যাট্রিক
উত্তরঃ খ. উইলিয়াম ওয়াটসন

বাংলা ১ম পত্র বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

২৬. জামিল সাহেব রায়হানকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে লালন-পালন করেন। লেখাপড়া শেখান। জামিল সাহেব নিজের সন্তানের মতোই তাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু জামিল সাহেব মারা যাওয়ার পর রায়হান সম্পত্তির লোভে জামিল সাহেবের ছেলেকে হত্যা করে। উদ্দীপকের রায়হান নিচের কোন চরিত্রের সাথে তুলনীয়?
ক. মোহাম্মদি বেগ
খ. মিরজাফর
গ. মোহনলাল 
ঘ. মিরন
উত্তরঃ ক. মোহাম্মদি বেগ

২৭. ‘আমার নালিশ আজ আমার নিজের বিরুদ্ধে’ সিরাজের এই উক্তির কারণ, তিনি
ক. যুদ্ধবিদ্যায় অদক্ষ
খ. শাসন পরিচালনার অযোগ্য
গ. প্রজাসাধারণের নিরাপত্তা বিধান করতে পারেননি
ঘ. ইংরেজদের মোকাবিলা করতে পারেননি
উত্তরঃ গ. প্রজাসাধারণের নিরাপত্তা বিধান করতে পারেননি

২৮. মহব্বতনগরে আগমনের পূর্বে মজিদ কোথায় ছিল?
ক. আওয়ালপুরে 
খ. গারো পাহাড়ে
গ. নোয়াখালীতে 
ঘ. করিমগঞ্জে
উত্তরঃ খ. গারো পাহাড়ে

২৯. ভেতরে ক্রোধের আগুন জ্বলছে বাইরে যত ঠান্ডা থাকুক না কেন- কার ভেতরে ক্রোধের আগুন জ্বলছে?
ক. আক্কাসের 
খ. খালেক ব্যাপারীর
গ. মজিদের 
ঘ. তাহের-কাদেরের বাপের
উত্তরঃ ঘ. তাহের-কাদেরের বাপের

৩০. “জনগণে যারা জোঁকসম শোষে, মহাজন তারে কয়।” উদ্দীপকে এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসে মহাজনদের বৈশিষ্ট্য কী?
i. শোষক
ii. স্বার্থপর
iii. মানবতাবিরোধী

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii 
খ. ii ও iii 
গ. i ও iii 
ঘ. i, ii ও iii
উত্তরঃ ঘ. i, ii ও iii

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের অন্যান্য বহুনির্বাচনি প্রশ্নাবলীঃ
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : লোক-লোকান্তর
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : রক্তে আমার অনাদি অস্থি
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : নূরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : আঠারো বছর বয়স
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : সেই অস্ত্র
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : তাহারেই পড়ে মনে
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : সাম্যবাদী
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : ঐকতান
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : বিলাসী
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : রেইনকোট
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : অপরিচিতা
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : মাসি-পিসি
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : জীবন ও বৃক্ষ
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : চাষার দুক্ষু
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : বিড়াল
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : বায়ান্নর দিনগুলো
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : আমার পথ
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : আহবান
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : নেকলেস
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : মহাজাগতিক কিউরেটর
💘 বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর : জাদুঘরে কেন যাব

আরো পড়ুন....
💝 একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

Share: